1 of 2

এ টেল অব জেরুজালেম

এ টেল অব জেরুজালেম

৩৯৪১ বিশ্বাব্দ!

সে বছরেরই তামুজা মাসের দশ তারিখে আবেশ ফিস্তি বুজি-বেন-লেভি আর ফ্যারিসীয় সাইমিয়নকে বলল–চল, আমরা যতশীঘ্র সম্ভব এখান থেকে কেটে পড়ি।

চোখে-মুখে জিজ্ঞাসার ছাপ এঁকে বুজি-বেন-লেভি আর ফ্যারিসীয় সাইমিয়ন সমস্বরে বলে উঠল– কোথায়? কোথায় কেটে পড়তে চাইছ?

বৈনামিন সদর দরজার গায়ের দুর্গপ্রাকারে। সেখানে ডেভিড শাসনাধীন। আর সেখান থেকে কায়েরদের শিবির অদূরে দেখাও যায়। এটাই সূর্যোদয়ের মুহূর্ত–চতুর্থ প্রহরের শেষ ঘণ্ট। পৌত্তলিকরা পম্পের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অবশ্যই আমাদের জন্য কুরবানির ভেড়া নিয়ে অধীর অপেক্ষায় প্রতিটা প্রহর কাটাচ্ছে।

বুজি-বেন-লেভি, সাইমিয়ান, আবেশ আর ফিস্তিম তিনজনই সুপবিত্র শহর জেরুজালেমের কুরবানির উপ-সংগ্রহে নিযুক্ত।

এবার ফ্যারিসীয় বলল–আর এক মুহূর্তও দেরি করা মোটেই সমিচিন নয় বলেই আমি মনে করছি। চল, যতশীঘ্র সম্ভব এ জায়গা ছেড়ে চল। কারণ, উদারচেতা নয় বলে এ-পৌত্তলিকদের অখ্যাতি রয়েছে।

হুম্! বুজি-বেন-লেভি প্রায় অক্ষু স্বরে উচ্চারণ করল।

ফ্যারিসীয় বলে চলল–আর জানোই তো বাস-পূজারীদের পক্ষে তো চপল মতিত্ব অবশ্যই বিশেষ একটা গুণ বলে গণ্য হয়।

তারা চপলমতিই কেবল নয়, বিশ্বাসঘাতকও বটে।

তবে?

তবে তারা কেবলমাত্র এডোনাইয়ের লোকদের ব্যাপারেই তারা বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়ে থকে। এমোনটারা সেনিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে সদা সতর্ক নয় এমন কথা কে, কবে শুনেছে বলতে পার?

বটে!

আমার কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের হাতে গোটা কয়েক ভেড়া আল্লাতাল্লার বেদির জন্য তুলে দিয়ে আর প্রতিটা মাথার বিনিময়ে ত্রিশ সেকেল রোজগার করে। নেওয়াটাকে উদার মনোভাবের পরিচায়ক বলে মনে করা যেতে পারে কি?

বেন লেভি, তোমার কিন্তু ভুল হচ্ছে, মানে তুমি ভুলে যাচ্ছ এভাবে আল্লাতালার বেদির জন্য খরিদ করা ভেড়াগুলোকে আমাদের পেটের জ্বালা নেভানোর কাজে ব্যবহার করব না, তার কোনো নিশ্চয়তা কিন্তু আমাদের দিক থেকে রোমক পস্পেকে দেওয়া হয়নি, ঠিক কি না?

হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিকই।

এবার ফ্যারিসীয় গলাছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল–আমার কথা শোন, মোল্লা হিসেবে যে আমার পক্ষে দাড়ি-গোঁফ কামানো নিষিদ্ধ তার পাঁচটা কোন্টের দোহাই।

একটু নীরবতার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে সে আবার বলল–তবে কি আমরা সে বিশেষ দিনটার অপেক্ষায়ই বেঁচে রয়েছি, রোমের এক পাপাত্মা নরাধম, পৌত্তলিক বাদশা যেদিন হঠাৎই আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে বসবে যে, সে সব পবিত্র বস্তুকে আমরানিজেদের দেহের ক্ষিদে, পেটের জ্বালা নেভানোর জন্য আত্মসাৎ করব? সেদিনটার অপেক্ষাই কি আমরা পৃথিবীতে টিকে রয়েছি, যেদিন

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আবেশ কিস্তিম বলে উঠল-থাক, আর বলতে হবে না, বুঝতে পেরেছি। আমার কথা শোন, আমরা ফিলিস্তিমির অভিপ্রায়ের ব্যাপারে একটাও প্রশ্ন করব না, কোনো প্রশ্নই না।

সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু কারণটা জানতে পারি কী?

হ্যাঁ, কারণ তো অবশ্যই কিছু না কিছু আছে।

কী সে কারণ?

কারণটা হচ্ছে, আমরা তার লিলা বা উদারতার দ্বারা আজই প্রথম লাভবান হচ্ছি না।

বুঝলাম।

যাক, পা চালাও। আমরা দ্রুত পা চালিয়ে হেঁটে যত শীঘ্র সম্ভব মসজিদের কাছে পৌঁছে যাই। যাতে সে মসজিদটার জন্য প্রয়োজনীয় ভোজ্যদ্রব্যের অভাব না ঘটে। যার জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ থেকে বৃষ্টি দিয়ে নেভানোর ক্ষমতা রাখে না। কোনো ঝড় ঝাঁপটা যার ধোঁয়ার কুণ্ডলিকে স্থানচ্যুত করে দিতে পারে না।

নগরের যেখানে আমাদের উপযুক্ত গিকারিমটা গিয়ে দাঁড়াল, সে স্থানটার সঙ্গে দোণ্ড প্রতাপশালী স্থাপিত রাজা ডেভিডের নাম জড়িত রয়েছে, তাকেই জেরুজালেমের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও নিরাপদ অঞ্চল মনে করা হয়।

তাই বুঝি? এ রকমটা মনে করার কারণ কী বল তো?

হ্যাঁ, কারণ তো অবশ্যই আছে। যাক, কারণটা বলছি, তবে ধৈর্য ধরে শোন কারণ, জায়গাটা অনেক উঁচুতে অবস্থিত, আর তার অবস্থান খাড়া জিরম পাহাড়টার শীর্ষদেশে। এখানে পাথর খোদাই করে করে গভীর পরিখা তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেটাকে আরও খোদাই করে অধিকতর সুরক্ষিত করে তোলা হয়েছে। তার ভেতরের মালের ওপর সোজা ও লম্বা প্রাচীর গেঁথে। আর সেটার উচ্চতাও অবশ্যই লক্ষণীয়, যার ফলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার হয়ে উঠেছে। শুধু কী এই? শ্বেতপাথরের বেশ কয়েকটা চৌকোনা গম্বুজ তৈরি করে সে প্রাচীরটার মাঝে মাঝে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম উচচতাবিশিষ্ট গম্বুজটার উচ্চতা ষাট হাত আর সবচেয়ে উঁচুটা একশো বিশ হাত। সব জেরুজালেমের সবচেয়ে উঁচু গম্বুজটার নাম এডম-বেজেক।

সাইমিয়ন তার সঙ্গি সাথীদের নিয়ে যখন এডুমি-বেজেক গম্বুজটার শীর্ষদেশে উপস্থিত হলো তখন তারা যে উচ্চতম স্থানটা থেকে নিচে অবস্থানরত শত্ৰু ছাউনিগুলোর দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করতে আরম্ভ করল, সেটার উচ্চতা কিয়সের পিরামিডের চেয়ে অনেক অনেক ফুট ওপরে অবস্থিত, আর বেলুস মন্দিরটার চেয়ে ফুট কয়েক বেশি উঁচু। অতএব সেটার উচ্চতা সম্বন্ধে অনায়াসেই ধারণা করে নেওয়া সম্ভব।

নিচের দিকে তাকালে মাথা ঘুরে-যাওয়া উচ্চতা থেকে নিচে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে ফ্যারীসয় চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল–হ্যাঁ, কথাটা খুবই সত্য যে, কাফেররা তো এক-একজন সমুদ্র উপকূলের এক-একটা বালির কন্টার সমতুল্য। অন্যভাবে বললে, সুবিশাল প্রান্তরে পঙ্গপাল যেমন অবস্থান করে ঠিক তেমনি তারাও হাজারে হাজারে লাখে-লাখে ছড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে রাজার উপত্যকা তো আর রাজার নিজের উপত্যকা নেই।

এ কী কথা! রাজার উপত্যকা তবে এখন কাদের?

আরে কথাটা অবাক হবার মতো শোনালেও খুবই সত্য।

ভালো কথা, রাজার উপত্যকা এখন কাদের দখলে গেছে?

এডমিন-এর উপত্যকায় পরিণত হয়ে গেছে।

তার কথা শেষ হতে-না-হতেই একজন যুদ্ধের সাজে সজ্জিত রোম সৈন্যের গলা শোনা গেল। সে রীতিমত কর্কশ ও হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে বলতে লাগল–রৌপ্য সেকালের ঝুড়ি, এখনও ওপরে রেখে দিয়েছ কেন?

তার কথার কোনো উত্তরই কেউ দিল না।

সে আবার একই সরবে চেঁচিয়ে বলল–ওই রৌপ্য সেকেলের ঝুড়িটাকে নিচে, এখানে নামিয়ে নিয়ে এসো।

মুহূর্তের জন্য থেকে কোনো উত্তর তার উদ্দেশ্যে ভেসে আসে কিনা লক্ষ করে নিয়ে রোমক সৈন্যটা পূর্বপ্রসঙ্গে জের টেনে আবার বলতে আরম্ভ করল রোমক মহাপুরুষ যে মুদ্রার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার যোগাড় হয়েছিলেন, চোয়াল বেঁকে যাওয়ার জো সে অভিশপ্ত মুদ্রাগুলোসমেত ঝুড়িটাকে ওপর থেকে এখানে নামিয়ে নিয়ে এসো। তোমাদের আচরণে আমি স্তম্ভিত হচ্ছি। আমাদের প্রভু পম্পেসুসের অনুগ্রহের প্রতিদান কি তোমরা এমনভাবেই দিতে চাচ্ছ? ভুলে যেও না আমাদের প্রভু যে অসীম কৃপাবশত তোমাদের পৌত্তলিক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এবং প্রার্থনা শুনতে সম্মত হয়েছেন, তার বিনিময়ে তোমরা এভাবেই কৃতজ্ঞতা জানাতে উৎসাহি?

মুহূর্তের জন্য থেমে একটু দম নিয়ে সে আবার মুখ খুলল–শোন, এখন যা বলছি মন দিয়ে শোন–সত্যিকারের দেবতা ফিবুস এক ঘণ্টা রথে চেপে। পূর্ব আকাশে সূর্যদেব উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দূর্গ-প্রাকারে জড়ো হওয়া কি তোমাদের উচিত ছিল না? ঈডিপোল! তোমাদের আচরণে আমি যারপরনাই অবাক না হয়ে পারছি না। একটা কথা, তোমাদের কি ধারণা পৃথিবীবাসী কুকুরগুলোর সঙ্গে আদান প্রদান চালাবার জন্য প্রত্যেক কুকুর শালার ভাঙ বেড়ার গালে মু থুবড়ে পড়ে থাকা ছাড়া তোমাদের কি আর কোনোই করণীয় নেই? আমার তো মনে হচ্ছে, এটাই সত্যি। কি হল, সবাই যে নীরবে হাত গুটিয়ে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলে! যাও–ওই সেকেলে ঝুড়িটাকে নিচে নামিয়ে দাও। আমি তোমাদের বলছি, নামিয়ে দাও। আর একটা কথা, তোমাদের আজে-বাজে জিনিসগুলোর রং যেন লোভনীয় হয়, আর ওজনের দিকেও নজর রেখো, ঠিকঠাক থাকে যেন।

এল এলোহিম! এল এলোহিম! আবেগ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কথাটা পর পর দুবার উচ্চারণ করেই ফ্যারিসীয় সংজ্ঞা হারিয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ল। পরমুহূর্তেই সংজ্ঞাহীন আবস্থাতেই বার দুই কাতরে মন্দিরের দেওয়ালের গায়ে গিয়ে থামল।

এলো এলোহিম! দেবতা জবুখ কে? কার কথা বলছে ওই পাপাত্মাটা! কে সে? তুমি বুঝি বেন লেভি, জেন্টিলদের গ্রন্থগুলো তো তুমি পড়েছ, ঠিক কি না? আর টেরাফিমদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছ। কিন্তু ওই পৌত্তলিক কী বলছে, বলতে পার? সে কি নেরুগালের সম্বন্ধে বলছে? তা যদি নাই হয় তবে কী আসিমাহ সম্বন্ধে। তা না হলে নির্ভজ অথবা টাটকির কথা। তা না হলে এড্রামালে? তা না হলে এনামালেক? তা না হলে সুকোথ বেনিথ? তা না হলে ড্রাগন? তা না হলে বেলিয়াল? তা না হলে বালপিওর? আর এদের কথা না-ই হয়ে থাকে তবে কি বলজিবাবের কথা বলছে?

না, এদের কারো কথাই না। অবশ্যই এদের কথা বলতে চাইছে না। তবে খুবই সাবধান! সাবধান! করছ কী! দড়িটাকে আঙুলের ফাঁকে এত দ্রুত, এত বেশি পরিমাণে ছাড়ছ! কেন? অসুবিধা কি? অসুবিধা তো আছেই। দ্রুত নেমে আসা ঝুড়িটা যদি ওই মাথা বেরিয়ে থাকা পাথরগুলোর গায়ে ধাক্কা মারে তবেই সর্বনাশের চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ঝুড়ির যাবতীয় পবিত্র মালপত্র দুম দুম করে নিচে পড়তে আরম্ভ করবে। এক সময় দেখা যাবে খালি আর ভাঙা ঝুড়িটা নিচে নেমে এসেছে।

এক সময় নিচে অবস্থানরত জনসাধারণের মাঝখানে অতিকায় ও ভারী ঝুড়িটাকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হলো। বেশ বড়সড় যন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির বুকে কুয়াশা এমন গাঢ় হয়ে জমেছিল যার জন্য গায়ে কাটা দেওয়া কাজকর্ম কারো পকেই দেখা সম্ভব হলো না। এতে সবার মনেই কিছু না কিছু আক্ষেপ তো থেকেই গেল।

এক মিনিট দুমিনিট করে এসে আধঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেল।

ফ্যারিসীয় বহু নিচে অবস্থানরত স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে কয়েক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়িয়ে রইল।

এক সময় চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্যারিসীয় বলল–এ যে দেখি বহু সময়ের ব্যাপার। আমাদের অনেক দেরি হয়ে যাবে। শেষপর্যন্ত কাঠোলিস আমাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেবে দেখছি!

তার কথা সমর্থন করে আবেল ফিত্তিম বলল–দেশে ফিরে আমাদের উপোষ করেই কাটাতে হবে দেখছি। পেটের ভাত যোগাড় করার কোনো সুযোগই থাকবে না। দাড়িতে আতর মাখা বন্ধ হয়ে যাবে, আর মন্দিরে গিয়ে সূক্ষ্ম বস্ত্র কোমরে জড়ানো পাটও ঘুচে যাবে। কী সমস্যার মুখোমুখিই যে আমাদের হতে হবে তা বে কিনারা পাচ্ছি না।

বেন-লেভি এতক্ষণ নিজেকে কোনোরকমে সামলে সুমলে রেখেছিল। এখন আর নিজেকে সামলে রাখা তার পক্ষ সম্ভব হলো না। শেষপর্যন্ত সে গালমন্দই করে বসল এক্কেবারে যাচ্ছেতাই কাণ্ড শুরু হয়ে গেছে দেখছি! অপদার্থ, বিশ্ব বখাটে! তারা কি আমাদের মালকড়ি, মানে টাকা পয়সা হজম করে দেওয়ার ধান্ধায় আছে নাকি?

আবেশ ফিত্তিম গম্ভীর মুখে প্রায় অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল–হুম! বেন- লেভি থামল না, বলেই চলল মালকড়ি মেরে দেবার ধান্ধা যদি নাও থাকে, হায় পবিত্র মোজেস!

কিছু সময় উত্তর্ণ হয়ে লক্ষ্য করে সে আবার মুখ খুলল–হায় পবিত্র মোজেস! তারা কি তবে গীর্জার শেঁকলগুলো ওজন করতে লেগে গেছে?

ফ্যারিসীয় এবার আরনিজেকে সংযত রাখতে না পেরে শেষে গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল–কী আশ্চর্য! কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তারা শেষপর্যন্ত কোন্ ইঙ্গিত দিচ্ছে।–আর তুমি বুঝি বেন লেভি, –তুমিও টান?

এবার গিজকরিম টানতে আরম্ভ করল। টানের চোটে ক্রমে গাঢ় হয়ে জমতে থাকা কুয়াশা ভেদ করে ভারী বোঝাটা এদিক-ওদিক দোল খেতে খেতে ওপরের দিকে উঠে যেতে লাগল।

এক সময় এক ঘণ্টা পরে দড়িটার বিপরীত প্রান্তে কোনো একটা বস্তুকে দেখতে পাওয়া মাত্র বেন লেভি আচমকা সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল।

বুশোহ্ হে! বুশোহ্ হে! বুশোহ্ হে!

বুশোহ্ হে! ইস্ কী লজ্জার কথা! কী লজ্জার কথা! কিন্তু এ যে দেখছি এঙ্গোড়ির বনাঞ্চল থেকে নিয়ে আসা একটা অতিকায় ভেড়া। আর এটা জোহসোকাটি উপত্যকার মতো লোমশ ভেড়া। ঘাড় কাৎ করে ভালোভাবে দেখে নিয়ে আবার একই স্বরে সে বলে উঠল–হ্যাঁ, সে রকম লোমশ ভেড়াই বটে না।

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আবেশ ফিত্তিম বলে উঠল–আরে এটা তো বুড়ো ধাড়ি ভেড়া নয়, বাচ্চা একেবারেই কম বয়স। তার পায়ের ভাঁজ আর ঠোঁট বাঁকানোর রকম সকম দেখেই আমি নিঃসন্দেহ হতে পারছি–নিতান্তই একটা বাচ্চা ভেড়া।

হুম্! ফ্যারিসীয় প্রায় অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল। আবেশ ফিত্তিম পূর্ব প্রসঙ্গের জের টেনে বলে চলল–এরচোখ দুটো কী সুন্দর। একমাত্র পেক্টোরলের মুক্তার সঙ্গেই এর তুলনা চলতে পারে। না, ঠিক বলা হলো না। পেক্টোরালের মুক্তোর চেয়েও সুন্দর–অনেক বেশি সুন্দর। আর মাংসের সাদ অবশ্যই হেনের মধুর মতোই সুস্বাদু আর উপাদেয়ও বটে।

ফ্যারিসীয় এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। সে বলল– এটাকে বালনের চারণভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যাক, যে কথা বলতে চাইছি– পৌত্তলিকরা কিন্তু আমাদের সঙ্গে খুবই ভালো ব্যবহার করেছে, অস্বীকার করতে পারব না।

মুহূর্তকাল নীরব থকে ফ্যারিসীয় এবার বলল–এক কাজ করা যাক। আমরা সমস্বরে মন্ত্র পাঠ করি, আপত্তি আছে?

মন্ত্র, অর্থাৎ স্তোত্র পাঠে কারোরই তো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইতিমধ্যে গিজবারিম থেকে ফুট কয়েক নিচে ঝুড়িটা পৌঁছে গেল। ব্যস, ঠিক সে মুহূর্তে সচকিত হয়ে সবাই সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে দাঁড়িয়ে রইল। পরমুহূর্তেই সবাই দেখতে পেলঝুড়িটায় একটা শুয়োরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ বড়সড় আর নাদুস নুদুস একটা শুয়োরের বাচ্চা।

ব্যাপারটা দেখামাত্র তিনজনেরই চোখ ট্যারা হয়ে যাবার যোগাড় হলো। সবাই প্রায় সমস্বরেই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল–এবার এল এমনু! এবার এল এমনু!

তিনজনই একই সঙ্গে কথাটা বলেই হাতের দড়ির প্রান্তটা দুম করে ছেড়ে দিল।

ব্যস, দড়িটা আল্গা হওয়া মাত্র শুয়োরের বাচ্চাটা তর তর করে সোজা নেমে গিয়ে ফিলিস্থিনদের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।

এল এমনু! এল এমনু!–হে পরম পিতা, তুমি আমাদের সহায় হও! হায়! এ কী কেলেঙ্কারী ব্যাপার! উফ শুয়োর! শুয়োরের মাংস! এ মাংস যে আমাদের পক্ষে জিভে ঠেকানোও সম্ভব নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *