1 of 2

দ্য টেল-ট্যালি হাট

দ্য টেল-ট্যালি হাট

সত্যি!

সম্পূর্ণ সত্যি কথা বলছি। আমি খুবই সামান্যই বিচলিত হয়েছিলাম, আর এখনও সে অবস্থাতেই রয়েছি।

আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে; আমি পাগল হয়ে গেছি, এ-কথা তোমরা কেন বলবে?

রোগটা আমার মধ্যে আশ্রয়গ্রহণ করে আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে প্রখর করে তুলেছে। তবে এও অবশ্যই সত্য যে, রোগটা কিন্তু আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে বরবাদ করে দেয়নি– ভোঁতাও করে দেয়নি।

সর্বাধিক লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, আমার শ্রবণেন্দ্রিয় হয়ে উঠেছিল তীক্ষ্ম, আমি স্বর্গলোক ও মর্ত্যলোক–উভয়লোকের কথাবার্তাই পরিষ্কার শুনতে পেতাম।

অনেকের মুখে আমার নাকটা সম্বন্ধেও বহু কথা শুনতাম। তবে? তাই যদি হয়, তবে আমি কি করে পাগল হলাম, বল তো? উত্তর্ণ হয়ে শোন! ধীর স্থিরভাবে লক্ষ্য কর! কতই না শান্ত-ধীর স্থিরভাবে সম্পূর্ণ কাহিনীটা তোমাদের দরবারে পেশ করতে পারছি; একটাবার ভেবে দেখ তো?

এরকম ধারণাটা কি করে যে আমার মাথায় প্রথম ভর করেছিল তা সঠিকভাবে বলা আমার পক্ষে মুশকিল। তবে কোনোরকমে একবার মাথায় আসামাত্র আমাকে রাত দিন অনবরত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতে লাগল। সত্যি কথা বলতে কি, আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও টিকতে দিত না।

কোনোরকম আবেগ-উচ্ছ্বাস তো ছিলই না, এমনকি কোনো বস্তুও ছিল না। মোদ্দা কথা, বুড়োটাকে আমি ভালোবাসতাম। অন্তরের সবটুকু ভালোবাসানিঙড়েই তাকে আমি ভালোবাসতাম।

স্বীকার করতেই হবে, সে কোনোদিন ভুলেও আমার এতটুকু অনিষ্ট করেনি। আমার ওপর অন্যায়-অবিচার করেনি। এমনকি কোনোদিন আমাকে অপমান তো করেইনি, অপমান করতে পারে এমন কোনো লোককে এতটুকুও প্রশ্রয় দেয়নি।

সে বুড়ো ছিল প্রচুর সোনাদানার মালিক। কিন্তু তার সে সোনার ওপর আমার এতটুকুও লোপ ছিল না। অর্থাৎ সে দিকে আমর এতটুকু নজরও ছিল না।

তবে? তবে কেন বুড়োটাকে আমি এখন মনে-প্রাণে ভালোবাসতাম?

আমার ধারণা, আসল জিনিসটা হচ্ছে, তার চোখ দুটো-না, দুটো নয়, বিশেষ করে একটা চোখের কথা বলছি।

কেন? তার সে বিশেষ চোখটার বিশেষত্ব কি ছিল যার ফলে সেটা আমার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল? হ্যাঁ, ঠিকই বলছি–শতকরা একশো ভাগ সত্যি।

তার একটা চোখ ছিল শকুনের মতো, অবিকল শকুনের একটা চোখ উপড়ে নিয়ে এসে বুঝি বা তার চোখের কোটরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্যাকাশে নীল চোখ। তার ওপর স্বচ্ছ আবরণ।

সে চোখে আমার দিকে তাকালেই আমার বুকের ভেতরে ঢিবঢিবানি শুরু হয়ে যেত, আর গায়ের রক্ত হিম হয়ে যেত।

সে জন্যই তো আমার চরমতম আতঙ্কের কারণ সে বুড়োটাকে চিরদিনের মতো শেষ করে দেবার জন্য আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বসলাম। আর তার মৃত্যুর মাধ্যমেই আমি সে চোখের ভয়ঙ্কর দৃষ্টি থেকে চিরদিনের মতো অব্যাহতি পেয়ে যাব। হ্যাঁ, তাকে প্রাণে মারার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই আমি নিয়ে নিলাম।

আর এটাই আসল বক্তব্য।

তোমরা তো নিশ্চিত যে, আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে, আমি পাগলই হয়ে গেছি। পাগলরা তো কিছুই জানে না। আরে বাবা, তোমরা তো আমাকে দেখেছ। আর এও তো অবশ্যই দেখেছ, কেমন বিজ্ঞের মতো আমি দৃঢ়ভাবে কতই না সতর্কতার সঙ্গে আমি অগ্রসর হয়েছি, কত দৃঢ় দৃষ্টির সঙ্গেই না প্রতিটা ধাপ অগ্রসর হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কতখানি কপটতার সঙ্গে কাজে লেগে রয়েছি।

আমি তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নিয়ে নিয়েছি, বুড়ো লোকটাকে খতম করে দেবার আগে পুরো সপ্তাহটা ধরে তার প্রতি আমি যতটা সদয় ব্যবহার করেছি, মমত্ববোধের পরিচয় দিয়েছি, সেরকম তো ইতিপূর্বে কোনোদিনই করিনি।

প্রতি রাতে, প্রায় মধ্য রাতে, তার দরজার সিটকিনিটা খুবই যত্নের সঙ্গে, কৌশলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেটাকে খুলেছি। কত যে সতর্কতার সঙ্গে, কতই না ধীরে ধীরে সেটাকে আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব হয়েছিল, উফ! কী পরিস্থিতিতে যে আমাকে কাজটা সারতে হয়েছিল, তা আমি ছাড়া কেউই জানে না, কাউকে বলে বোঝানোও যাবে না।

সিটকিনিটা কোনো রকমে খোলার পর যখন মাথাটাকে ভেতরে গলিয়ে দেবার উপযুক্ত একটা ফাঁক তৈরি করা সম্ভব হলো তখন পুরোপুরি ঢাকা অন্ধকার একটা লণ্ঠন ওই ফাঁকটা দিয়ে ঘরের ভেতরে গলিয়ে দিলাম। পুরোপুরি ঢাকা অন্ধকার লণ্ঠন ব্যবহার করার উদ্দেশ্য যাতে এতটুকু আলোও বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারে।

হ্যাঁ, উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে। এবার দরজার ওই ফাঁক দিয়ে খুবই সন্তর্পণে আমার মাথাটাকে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম।

উফ! মাথাটাকে ভেতরে ঢোকাতে গিয়ে কী পরিমাণ কসরৎ আর কত যে বুদ্ধি খরচ করতে হয়েছিল, তা আর কারো কাছে বলার মতো না। আর আমার সে কাণ্ডকারখানা দেখলে হাসতে হাসতে তোমাদের পেটে খিল ধরে যেত।

কিভাবে, কোন্ কৌশল অবলম্বন করে আমি দরজার ফাঁক দিয়ে নিজের মাথাটাকে ভেতরে গলিয়ে দিয়েছিলাম, তাই না? বলছি শোন, খুবই সন্তর্পণে, ধীরে ধীরে মাথাটাকে দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে গলিয়ে দিলাম। খুবই সন্তর্পণে, যাতে বুড়ো লোকটার ঘুম ভেঙে না যায়। অর্থাৎ কিছুমাত্রও টের না পায়।

ওই ফাঁকা দরজাটা দিয়ে সম্পূর্ণ মাথাটাকে গলিয়ে দিতে আমার একটা ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল।

আর এও সত্য যে, খাটের ওপর এলিয়ে শুয়ে-থাকা অবস্থায় তাকে ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছিলাম।

আহা! কোন বিকৃত মস্তিষ্ক কোনো পাগলের পক্ষে কি এমন বিচক্ষণতা ও সতর্কতার সঙ্গে এমন একটা কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব? কোনো পাগলের মাথায় কি এমন পাকা বুদ্ধি থাকা সম্ভব?

তারপরের ব্যাপার স্যাপার বলছি, শোন–আমার মাথাটা যখন দরজার ওই ফাঁকটা দিয়ে ঘরের ভেতরে অনেকখানি ঢুকে গেল, তখন খুবই সাবধানতার সঙ্গে লণ্ঠনটা খুলে দিলাম। উফ্! সে যে কী সতর্কতার সঙ্গে কাজটা করতে হয়েছিল, তা কিভাবে তোমাদের বোঝাতে পারব, ভেবে পাচ্ছি না।

কেন এত সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম? কারণ তো অবশ্যই ছিল। সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, দরজার কজাগুলো কাঁচ-কাঁচ আওয়াজ করে ছিল।

লণ্ঠনটাকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে ঠিক এতটুকুই ফাঁক করেছিলাম, যাতে একটামাত্র ক্ষীণ আলোর রেখা শকুন-চক্ষু বুড়োটার ওপর গিয়ে পড়তে পারে।

এক বা দুরাত নয়, দীর্ঘ সাত-সাতটা রাত ধরে আমি ওই কাজটা করেছিলাম। আর প্রতিটি রাতেই ঠিক মধ্যরাতে আমি কাজটা করতাম–কিন্তু রোজই তার সে ভয়ঙ্কর চোখটাকে বোজা অবস্থাতেই দেখতাম, অর্থাৎ সে ঘুমে বিভোর থাকত।

চোখটা বোজা থাকলে তো আর আমার উদ্দেশ্যটা সিদ্ধ করা সম্ভব নয়। আর বুড়ো মানুষটা তো আর আমার শত্রু নয়। বিরক্তির উদ্রেক করে না। আমার যা বিরক্তির কারণ তো তার ওই শকুন-চোখটা। আমার দুচোখের বিষ ওই স্বচ্ছ আবরণে ঢাকা বিবর্ণ নীল চোখটা।

আর রোজ ভোরের আলো ফুটলে আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে গুটি গুটি তার ঘরে ঢুকতাম। আদর করে তার নাম ধরে সম্বোধন করতাম। সুপ্রভাত জানাতাম। ভালো ভালো কথা বলে তার সন্তোষ উৎপাদনের চেষ্টা করতাম। মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম, রাতটা কিভাবে কাটিয়েছে–এরকম আরও কতসব ভালো ভালো কথা বলে তার সঙ্গে সুখালাপ করতাম।

অতএব আশা করি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, বুড়ো মানুষটা প্রখর বুদ্ধি ছিল? প্রমাণ কি? এর আর প্রমাণের দরকার আছে কি? কারণ, তার মনে তো সন্দেহ দানা বেঁধেছিল যে, রোজ রাত ঠিক বারোটায় সে যখন ঘুমে বিভোর থাকত তখন আমি তার ওপর কড়া নজর রাখতাম। আর সে নজর রাখতাম খুবই সতর্কতার সঙ্গে।

হতাশা আর ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে এক-এক করে সাতটা রাত কেটে যাবার পর এলো অষ্টম রাত। সে রাতে দরজার পাল্লা খুলতে গিয়ে আমি অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করলাম। মোদ্দা কথা, সতর্কতার চূড়ান্তও বলা চলে। সত্যি কথা বলতে কি, ঘড়ির মিনিটের কাঁটাও বুঝি আমার চেয়ে দ্রুত গতিতে চলে।

অষ্টম রাতের আগে পর্যন্ত আমার নিজের শক্তি কতখানি, আমার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা কতখানি তীক্ষ্ণ হতে পারে, তা আমার নিজেরই ভালো জানা ছিল না।

সত্যি কথা বলতে কি, নিজের বিচক্ষণতায় আমি যারপরনাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই জয়ের আনন্দ উচ্ছ্বাসকে আমার নিজের পক্ষেই চেপে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ব্যাপারটা একবার গভীরভাবে ভেবে দেখ, আমি খুবই সতর্কতার সঙ্গে অল্প অল্প করে দরজার পাল্লা দুটো ফাঁক করছি। কিন্তু আমার এ অত্যন্ত গোপন কাজ বা পরিকল্পনাটার কথা সে ঘুণাক্ষরেও কিছু ভাবছে না। তার সম্বন্ধে এ কথাটা ভাবতে গিয়েই আমি হয়তো একটু হেসে ফেলেছিলাম। আর সে হাসির শব্দটুকু হয়তো বা তার কানে গিয়েছিল। কেন এ-কথা বলছি? কারণ, তাকে খাটে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ সামান্য নড়েচড়ে উঠতে দেখে ছিলাম।

এরকম পরিস্থিতির কথা অনুমান করে তোমরা হয়তো ভেবেই নেবে যে, আমি হঠাৎ সেখান থেকে সরে গিয়েছিলাম–আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়।

ডাকাতের ভয়ে অন্যদিনের মতোই তার ঘরের খড়খড়ি বন্ধ করে রাখা ছিল। আর এরই ফলে তার ঘরে অন্ধকার বিরাজ করছিল। অতএব আমার ভালোই জানা ছিল– নিঃসন্দেহই ছিলাম যে, দরজা ফাঁক-করা বা খোলার ব্যাপারটা অবশ্যই তার নজরে পড়বে না। এরকম ধারণার বশবর্তী হয়ে আমি দরজার পাল্লা দুটোতে অল্প অল্প করে ধাক্কা দিতে আরম্ভ করলাম। এত বেশি সতর্কতা অবলম্বনের কারণ তো আগেই বলেছি, দরজার পাল্লা খোলার সময় কাঁচ্-কাঁচ্ আওয়াজ করে।

দরজার সিটকিনিটা খুলে, পাল্লা দুটোকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে ফাঁক করে ধীরে ধীরে মাথাটা ভেতরে গলিয়ে দিলাম। এবার যেই না লণ্ঠনটা খুলতে যাব অমনি সামান্য অসাবধানতাবশত আচমকা সেটার গায়ে আমার বুড়ো আঙুলটার ধাক্কা লাগল।

ব্যস, ঠিক সে মুহূর্তেই বুড়ো মানুষটা যন্ত্রচালিতের মতো তড়াক করে লাফিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। আর সঙ্গে সঙ্গে গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল–কে? কে?

আমি মুখে কলুপ এঁটে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। টু-শব্দটাও না। পুরো একটা ঘণ্টার মধ্যে একটা মাংসপেশীও নাড়লাম না।

আমি নিশ্চল-নিথর পাথরের মূর্তির মতো বুড়োর গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগলাম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার! এতটা সময়ের মধ্যে সে যে আবার শুয়ে পড়েছে, এরকম শব্দও আমি শুনতে পেলাম না। আসলে সে বসেই আছে, নাকি শুয়ে পড়েছে তাই বোঝা সম্ভব হলো না।

আমি অনুমানে বুঝতে পারলাম, বুড়ো মানুষটা তখন বিছানায় বসে উৎকর্ণ হয়েছিল। আমি যেমন দেওয়ালের মৃত্যু-ঘড়ির দিকে কান পেতে একের পর এক রাত। কাটাই ঠিক তেমনিভাবেই সে-ও খাটের ওপর বসে কাটাচ্ছিল।

মুহূর্তকালের মধ্যে আমার কানে মৃদু একটা আওয়াজ এলো। একজন মানুষ বিছানায় পড়ে কাতরালে যেমন আওয়াজ হয়, ঠিক সে রকমই একটা আওয়াজ! আর কেউ অকস্মাৎ অস্বাভাবিক ভয় পেয়ে গেলে যেমন করে কাতরায় ঠিক সেরকমই একটা আওয়াজ। আতঙ্কের কাতরানি, মোটেই কোনো ব্যথা-বেদনার বা শোক সন্তাপের কাতরানি নয়। আকস্মিক তীব্র আতঙ্কের শিকার হয়ে পড়লে তার বুক থেকে যেমন ভয়ঙ্কর আর্তস্বর বেরিয়ে আসে, যেমন অস্থিরতা ভর করে ঠিক তেমনি অবস্থায় সে পড়েছে।

সে আর্তস্বর আমার খুবই পরিচিত।

ঠিক মধ্যরাতে পৃথিবীর মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঠিক তখনই সে আর্তস্বর আমার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে।

তখন সে আতঙ্কের ভয়ঙ্করতা আমার ভয়-ভীতিকে আরও অনেক, অনেক বেশি গভীর করে তোলে।

অসহনীয় সে আতঙ্কে আমি কেমন যেন অস্থির হয়ে পড়ি। তাই তো আমি আগেই বলেছি, সে আওয়াজটার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে–ভালোই পরিচয় আছে।

স্বীকার না করে পারছি না, বুড়ো লোকটার প্রতি যে আমার মধ্যে কিছুমাত্রও মমত্ববোধ ছিল না, তা-ও কিছু সত্য নয়। তার তখনকার অনুভূতিটাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে আমি যে আনন্দ পেতাম, খুবই সত্য কিন্তু তার সে পরিস্থিতির জন্য আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে দয়ামায়াও কম হতো না।

একটা ব্যাপার আমি এখন অনুমান–না, অনুমান বলা ঠিক হবে না, বরং বুঝতে পারছি বলাই ঠিক হবে–বুড়ো লোকটা প্রথমবার শব্দটা শোনামাত্রই জেগে ওঠে, ঘুম। চটে যায়। ব্যস, তারপর থেকেই সেনিঘুম অবস্থায় মড়ার মতো বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকে। এমন কোনো ভাবই তার মধ্যে প্রকাশ পায় না যাতে মনে হতে পারে, সে জেগে ঘুমের ভান করে পড়ে রয়েছে।

আর তার সে আতঙ্ক দিনের পর দিন ক্রমেই উৰ্দ্ধমুখি হচ্ছে। তা বাড়তে বাড়তে তার মধ্যে অস্থিরতার সঞ্চার করছে।

এ রকম পরিস্থিতিতেও সে মাঝে-মধ্যে নিজের মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতেও চেষ্টা করে। মনকে প্রবোধ দিতে চেষ্টা করত, নিতান্ত অহেতুকই সে এমন আতঙ্কের শিকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু সে পারত না। সে নির্মমভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়ত, নিরবচ্ছিন্ন হতাশা আর হা-হুঁতাশের শিকার হয়ে আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়ত।

বুড়ো লোকটা নিজেকে প্রবোধ দিতে গিয়ে আপমন মনে বলত–‘আরে ধৎ! ওই–আওয়াজটা নিয়ে আমি মিছেই ভেবে মরছি। ওটা প্রকৃতপক্ষে চিমনিটার কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। ইদানিং চিমনির বাতাস এমন মিশ্রি আওয়াজ করে বেরোচ্ছে যা আমার মধ্যে অকারণে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। হ্যাঁ, নির্ঘাৎ চিমনির আওয়াজই বটে।

নিতান্তই যদি চিমনির আওয়াজ না হয়ে থাকে তবে ইঁদুরের ব্যাপার স্যাপার হওয়াও কিছুমাত্রও আশ্চর্যের নয়। ইঁদুর মেঝের ওপর দিয়ে ছুটোছুটি করলেনিস্তব্ধ গভীর রাতে এমন আওয়াজ শোনা যায়। আর তা-ও যদি না হয়, ঝিঁঝি পোকার ডাকও হতে পারে। তারা যখন প্রথম মৃদুস্বরে ঝিঁঝি করে ডাকতে আরম্ভ করে।

খুবই সত্য বটে, সে এমন সব অনুমান-নির্ভর কারণ খতিয়ে খতিয়ে নিজেকে প্রবোধ দিতে চেষ্টা করে।

কিন্তু হায়! তার সব চেষ্টাই বৃথা। নিতান্তই নিষ্ফল চেষ্টা। কেন? কেননিঙ্খল চেষ্টা? কারণ কি? কারণ খুবই স্বাভাবিক। যমরাজ স্বয়ং সে বুড়ো লোকটার দিকে এগোতে এগোতে সামনে কালো ছায়া বিস্তার করেছে। সে ঘন কালো ছায়া দিয়ে নিজের শিকারকে ঢেকে দিয়েছে।

ছায়া! ঘন কালো ছায়া। যমরাজের সৃষ্ট সে ঘন কালো অপ্রত্যক্ষ ছায়ার শোকাবহ প্রভাবের কারণেই নিজের চোখে ভীতি সঞ্চারকারী কিছু না দেখেও, নিজের কানে কিছু না শুনেও বুড়োটা যেন ঘরের ভেতরে আমার মাথাটার উপস্থিতি অনুমান করতে অনুমান নয়, স্পষ্ট বুঝতেই পারত। এ যে কী সমস্যা তা সে নিজে ছাড়া অন্য কারো পক্ষে কিছুমাত্রও ধারণা করা সম্ভব নয়।

আমি এভাবে, নিশ্চল-নিথর-নির্বাক পাথরের মূর্তির মতো দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করার পরও যখন তার নড়াচড়া, অর্থাৎ শুয়ে পড়ার কোনো আওয়াজই কানে এলো না। তখন ভেবে-চিন্তে স্থির করে ফেললাম, লণ্ঠনের ছোট ফাঁকটাকে আরও কিছুটা বড় করে দেব। কিন্তু কাজটা সঙ্গত হবে কি না, আর তাতে কোনো ফল পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে আবারও একটু ভাবলাম।

শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলাম, খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে লণ্ঠনের ফাঁকটা কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বুড়ো লোকটার পরিস্থিতিটা নিজের চোখে পরখ করে নেব।

শেষপর্যন্ত করলামও তাই। কিন্তু কত সন্তর্পণে, কত চুপি চুপি যে আমি কাজটা সম্পন্ন করেছি, তা তোমাদের পক্ষে ধারণা করাও সম্ভব নয়।

এক সময় মাকড়শার জালের সূতোর মতোই সূক্ষ্ম একটা আলোর রেখা লণ্ঠনটার বর্ধিত ফাঁকটা দিয়ে বেরিয়ে এলো।

লণ্ঠনাটাকে সামান্য ঘোরাতেই আলোর রেখাটা বুড়ো লোকটার শকুন-চোখের ওপরে গিয়ে পড়ল। আমি যা চেয়েছিলাম কার্যত ঘটলও ঠিক তাই।

লণ্ঠনের আলোয় আমি দেখতে পেলাম, বুড়োর সে বিশেষ চোখটা খোলা সম্পূর্ণ খোলা। ঢ্যাবা-ঢ্যাবা চোখে সে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

তার খোলা-চোখটার দিকে নজর যেতেই আমার মাথায় খুন চেপে যাওয়ার জোগাড় হলো। আমি রাগে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে লাগলাম। উপায়ন্তর না পেয়ে মনে মনে তার চৌদ্দ-পুরুষ উদ্ধার করতে লাগলাম।

আর করব না-ই বা কেন, বলতে পার? লণ্ঠনের আলোর রেখাটার দৌলতে আমি একেবারে স্পষ্টই দেখতে পেলাম, চোখটার নীল মনিটার ওপরে হালকা একটা আবরণ। ভয়ঙ্কর সে আবরণটা তার শকুন-চোখটাকে আরও অনেক, অনেক বেশি বীভৎস করে তুলেছে।

বীভৎস সে চোখটার ওপরে আমার চোখ পড়তেই আমার হাড়ের ভেতরের মজ্জা পর্যন্ত জমে বরফ হয়ে যাবার উপক্রম হলো।

ব্যস, কেবলমাত্র সে চোখটা ছাড়া বুড়োর শরীরের অন্য কোনো অংশই আমার নজরে ধরা পড়ল না, পড়ার কথাও নয়। কারণ, লণ্ঠনের আলোর রেখাটা যে খুবই ক্ষীণ। আবার এমনও তো হতে পারে, আমি নিজের প্রবৃত্তির শিকার হয়েইনিতান্ত তৎপরতার সঙ্গে আলোর রেখাটাকে তার বীভৎসবুক-কাঁপানো শকুন-চোখটার ওপর ফেলেছিলাম। তা যদি না-ই হতো তবে আমি কেনই বা এমনটা করতে যাব?

আমি তো তোমাদের আগেই বলে রেখেছি, তোমরা আমার এ আচরণকে মস্তিষ্ক বিকৃতির ফল, নিছকই আমার পাগলামি বলে ভুল করছ, আসলে কিন্তু তা নিছকই আমার ইন্দ্রিয়গুলোর অতি তীক্ষ্ণতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

এখন আমি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করছি, ঠিক সে মুহূর্তে, অর্থাৎ সেই মুহূর্তে আমি লণ্ঠনের আলোর রেখাটাকে বুড়োটার বীভৎস খোলা-চোখটার ওপর ফেলেছিলাম ঠিক সে মুহূর্তেই একটা মৃদু, একঘেয়ে, খুবই দ্রুততালে একটা শব্দ আমার কানে এলো, তুলা চাপা দেওয়া কোনো ঘড়ি থেকে যেমন শব্দ বেরিয়ে আসে!

উত্তর্ণ হয়ে সে আওয়াজটা শুনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আর দরকার হলো না। আসলে এ আওয়াজটা আমার কাছে নতুন তো নয়ই, বরং খুবই পরিচিত। কীসের সে আওয়াজ, তাই না? কোথা থেকেই বা তার উৎপত্তি? বুড়ো লোকটার হ্রদযন্ত্র থেকে। হ্যাঁ, তার হৃদযন্ত্রটানিঙড়ে সে শব্দটা যে বেরিয়ে আসছে তা আমি সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ।

বুড়োটার হৃদযন্ত্রের আওয়াজটা আমার ক্রোধকে দ্রুত একেবারে তুঙ্গে তুলে নিয়ে গেল।

তা সত্ত্বেও আমি মুখে কলুপ এঁটেই রইলাম। টু-শব্দটিও করলাম না। জোওে নিশ্বাস পর্যন্ত ফেলতে ভরসা হলো না।

আমার হাতের লণ্ঠনটা থেকে আগের মতোই ক্ষীণ আলোর রেখা বিচ্ছুরিত হতে লাগল। নিষ্কলঙ্ক আলোর রেখা।

আমি যথাসাধ্য প্রয়াস চালাতে লাগলাম, যাতে আলোর রেখাটা আগের মতোই স্থিও নিবন্ধ থাকে।

এদিকে হৃদযন্ত্রের নারকীয় টিক্ টিক্ আওয়াজ-ধুকপুকানি ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে লাগল। প্রতি মুহূর্তেই সেটা অধিকতর দ্রুত হচ্ছে, স্পষ্টতরও হচ্ছে বটে।

আমি বুড়ো লোকটার চোখ-মুখের ওপর দৃষ্টিনিবন্ধ রেখে ভাবতে লাগলাম,নির্ঘাৎ তার আতঙ্ক চরম থেকে চরমতর হয়ে উঠছে। হ্যাঁ, আমি বলছি, সেটা চরম, অপেক্ষাকৃত চরম, প্রতিটা মুহূর্তে আরও চরমে উঠে চলেছে!

কি, আমার দিকে ভালো করে নজর রাখছ তো? আমি তো আগেই বলেছি, আমার স্নায়ু দুর্বল–খুবই দুর্বল। আর তা এতই দুর্বল যে, কাউকে বলে বুঝাতে পারব না, সম্ভবও নয়। সত্যি-সত্যি ঠিক তাই।

আর এখন? রাত শেষ প্রহরে পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িটার ভয়ঙ্করনিস্তব্ধতার মধ্যে, এমন অদ্ভুত, একেবারেই বিচিত্র ধরনের একটা শব্দ আমার কানে আসার ফলে আমার আতঙ্ক যে কোথায় গিয়ে পৌঁছল, তার পরিমাপ করা, কারো কাছে সঠিকভাবে ব্যক্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

তা সত্ত্বেও আমি সেখান থেকে একটা পা-ও নড়তে পারলাম না। ফলে নিতান্ত নিরুপায় হয়েই আমি আরও মিনিট-কয়েক সেখানে স্থির মতো নিশ্চল-নিথর ও নির্বাকভাবে দাঁড়িয়েই রইলাম।

হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি তো এতটুকু কমলই না বরং ক্রমেই বেড়ে চলল। আর সে শব্দটাও হয়ে চলল ক্রমেই উৰ্দ্ধমুখি।

এতক্ষণ তা-ও একরকম ছিলাম, এবার নতুনতর একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আমার মধ্যে ভর করল। চাপা দীর্ঘ শ্বাস আমার ফুসফুস নিঙড়ে বেরিয়ে এলো। আপন মনে বলে উঠলাম–উফ্! এ কী হতে চলেছে! এ শব্দটা যে কেবলমাত্র আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে কি না তাই বা কে বলতে পারে? প্রতিবেশীদের কানেও তো এ শব্দটা যেতে পারে! তবে? তাই যদি সত্যি হয় তবে তো কেলেঙ্কারির চূড়ান্তই হয়ে যাবে। বুড়োটার সময় তো এমনিতেই ঘনিয়ে এসেছে।

আমার পক্ষে আর নিজেকে সামলে-সুমলে রাখা সম্ভব হলো না। অব্যক্ত একটা যন্ত্রণা, অবর্ণনীয় এমন একটা অস্থিরতা আমার মধ্যে ভর করল যা সহ্য করা আমার পক্ষে নিতান্তই অসম্ভব হয়ে উঠল।

আমি অকস্মাৎ গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম। যন্ত্রচালিতের মতো দ্রুত লণ্ঠনটা খুলে ফেললাম। চোখের পলকে লম্বা একটা লাফ দিয়ে একেবারে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়লাম।

মুহূর্তের মধ্যেই বুড়ো লোকটা বিকট চিৎকার করে লাফিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। একবার, মাত্র একবারই সে চিৎকার করে উঠল।

আমি আর একটা লম্বা লাফ দিয়ে একেবারে তার খাটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আচমকা একটা হেঁচকা টান দিয়ে তাকে বিছানা থেকে মেঝের ওপর ফেলে দিলাম। তারপর যন্ত্রচালিতের মতো ভারী বিছানাটা খাটের ওপর থেকে নামিয়ে তার ওপর চাপা দিয়ে দিলাম। এবার বিছানাটা টানাটানি করে তার আপাদমস্তক ঢেকে দিলাম।

কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারায় আমার মধ্যে খুশির জোয়ার খেলে গেল। মুখেও ফুটে উঠল হাসির রেখা।

বুকের ধুকধুকানি কিন্তু থামল না। বুড়োটাকে বিছানা-চাপা দেবার পরও মিনিট কয়েক ধরে হৃদযন্ত্রের মৃদু শব্দটা অনবরত চলতেই লাগল। তবে এও সত্য যে, এতে কিন্তু আমি এতটুকুও বিরক্ত হলাম না।

আর এও চিন্তা করলাম, তার বুকের ধুকপুকানির শব্দটা অনবরত চলতে থাকলেও আর যা-ই হোক, সেটা দেওয়ালটা ভেদ করে অবশ্যই ওপরে যেতে পারবে না।

এক সময় বুকের অবাঞ্ছিত শব্দটা থেমে গেল। বুড়োটার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল। সে মারা গেল।

এবার হাত বাড়িয়ে তার গা থেকে বিছানাটা সরিয়ে ফেললাম। তার ওপরে সামান্য ঝুঁকে সে সত্যি সত্যি মারা গেছে কি না বোঝার চেষ্টা করলাম। হাত দিয়ে তার গা-টা পরীক্ষা করলাম। ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আর সর্বাঙ্গ ক্রমেই শক্ত হয়ে পড়ছে, বুঝতে পারলাম। নিঃসন্দেহ হলাম, বুড়োটা সত্যি সত্যি মারা গেছে।

বুড়োটা মারা গেছে। তা সত্ত্বেও তার বুকের ওপর আলতো করে হাতটা রাখলাম। বেশ কয়েক মিনিট ধরে হাতটা সেখান থেকে সরালাম না, রেখেই দিলাম। না, বুকের ওঠা-নামা সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে গেছে। আর কেনই বা তা হবে? তার আত্মা যে অনেক। আগেই দেহটা ছেড়ে গেছে। তার দেহটা সত্যি সত্যি পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে।

আমি এবার নিশ্চিত যে, তার ভয়ঙ্কর চোখটা আর কোনোদিন মুহূর্তের জন্যও আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না, কোনোদিনই না।

এতকিছু শোনার পরও তোমাদের মনে যদি সন্দেহ থাকে, আমি পাগল হয়ে গেছি, তবুও মৃতদেহটাকে গায়েব করে ফেলার জন্য আমি যে সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কওে, যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছি, সে কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার পর কিন্তু আমার ওপর তোমাদের ধারণাটা পাল্টে যাবে। অর্থাৎ তখন আর অবশ্যই তোমরা মনে করবে না, আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।

রাত প্রায় পোহাতে চলেছে। আমিও মুখ বুজে যতটা দ্রুত হাতে কাজ সারতে আরম্ভ করলাম।

আমার প্রথম কাজ হলো বুড়োর মৃতদেহটা কাঁচি দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে কেটে ফেলা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজটা সেরে ফেলতে পারলাম। গোড়াতেই তার মাথা আর হাত-পাগুলোকে কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলাম। তারপর দেহকাণ্ডটা কুঁচোতে মেতে যাই।

এবার মাংসের টুকরোগুলোকে গায়েব করে ফেলার কাজে হাত দিলাম। গোড়াতেই ঘরটার মেঝেয় একটা একটা করে তিনটা গর্ত খুড়ে ফেললাম। এবার বুড়োর দেহের টুকরোগুলোকে তার মধ্যে চালান করে দিলাম। তারপর ওগুলোকে আবার একটা একটা করে যথাস্থানে বসিয়ে মেঝেটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলাম। নিখুঁত-কাজটা সম্পূর্ণ নিখুঁত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য অনুসন্ধিসু চোখে বার বার সে বিশেষ জায়গাটা দেখতে লাগলাম। দীর্ঘসময় ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর নিঃসন্দেহ হলাম, কোনো মানুষের চোখে, এমন কী তার চোখেও কিছু সন্দেহ করার মতো কিছুই ধরা পড়বে না।

এমনকি ধুয়ে-মুছে সাফসুতরা করার মতো কিছু চোখে পড়ল না। কোনো দাগ মানে সামান্যতম রক্তের দাগও নেই, যে ধোয়াধুয়ি করতে হবে। আসলে আমি তো গোড়া থেকেই প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে যারপরনাই সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম, যার ফলে এমন কোনো চিহ্নই সৃষ্টি হয়নি যে, ধোয়ামোছা করার দরকার পড়তে পারে।

আসলে একটা বালতি আনতে গেলেই যে ধরা পড়ে যেতে হতো। ব্যস, আমার কর্মযজ্ঞের ব্যাপার-স্যাপার ফাঁস হয়ে পড়ত। কিন্তু পাকা হাতে হা! হা! হা! কার বাপের সাধ্য যে আমার–

আমি ব্যস্ত হাতে কাজটার একের পর এক ধাপ সেরে যখন পুরোপুরি মিটিয়ে ফেললাম, তখন ঘড়িতে চারটি বাজে। তখনও অন্ধকার রয়েছে, মধ্যরাতের গাঢ় অন্ধকার।

ঢং-ঢং করে চারটার ঘণ্টা বাজল। ঘণ্টা বাজতে না বাজতেই রাস্তার দিকের দরজায় টোকা পড়ল। ঠক্ ঠক্ ঠক্‌! শব্দ আমার কানে এলো।

দরজা খোলার জন্য হালকা মনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম, দরজাটা খুলে দেওয়ার জন্য। ভয়? না, কাজ তো সুষ্ঠুভাবেই মিটিয়েই ফেলেছি, ভয় কীসের?

আমি দরজা খুলতে না খুলতেই হুড়মুড় করে তিন তিনজন ঘরে ঢুকে এলো।

আগন্তুক তিনজন নিজেদের পুলিশ-অফিসার বলে পরিচয় দিল। রাতে কোনো এক প্রতিবেশী তীব্র আর্তস্বর শুনতে পেয়েছিল। একটা অসৎ কাজ সম্পাদনের সন্দেহ করছে।

সন্দেহজনক ব্যাপারটা সম্বন্ধে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ দপ্তর এ তিনজন পুলিশ অফিসারকে ব্যাপারটার তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে। তারা বাড়িটাতে চিরুণি তল্লাসি চালাবার জন্য বদ্ধ পরিকর।

ব্যাপারটার কথা শুনে আমি আপন মনে হেসে উঠলাম। ভয়? আমার ভয়? আমার আর ভয় কীসের?

আমি দরজা খুলে আগন্তুকদের স্বাগত সম্ভাষণ জানালাম। পুলিশ অফিসারদের প্রশে।নর উত্তরে আমি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে স্বাভাবিক কণ্ঠেই জবাব দিলাম–আরে ধৎ! ব্যাপার কিছু নয়। আমিই আর্তনাদ করেছিলাম।’

‘আপনি? বলছেন কি, আপনি আর্তনাদ করেছিলেন?

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। আমিই ঘুমের ঘোরে হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠেছিলাম।

‘বুড়ো লোকটা কোথায়?

‘এখানে নেই।’

‘নেই? এখানে নেই? এ কী কথা–‘

‘ঠিকই বলছি, তিনি বহুদিনই এখানে নেই।

আমি পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাড়িটা দেখালাম।

তারা অনুসন্ধিৎসু চোখে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। আমিও বললাম–‘দেখুন, সব জায়গা ভালো করে দেখেনিন।

তারা আগ্রহের সঙ্গে সর্বত্র তন্ন তন্ন করে তল্লাসি চালাল। খাটের তলা আর প্রতিটা আনাচে কানাচে উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখল। হতাশ হলো। সন্দেহজনক কিছুই পেল না।

আমি এবার তাদের নিয়ে তার ঘরে গেলাম। বাক্স পেটরা আর আলমারি দেখালাম। তারা দেখল, টাকা পয়সা, দলিল আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবই ঠিক-ঠাক আছে। সেগুলো আত্মসাৎ করা তো দূরের কথা কেউ হাত দিয়েছে বলেও মনে করল না।

এবার আমি আত্মবিশ্বাসের অত্যুগ্র বিশ্বাসে টানাটানি করে তিনটি চেয়ার এনে ঘরের মাঝখানে রাখলাম। তাদের অনুরোধ করলাম কিছু সময় বিশ্রামের মাধ্যমে ক্লান্তি অবদমন করে নিতে। আর মাত্রাতিরিক্ত চাতুর্যের মাধ্যমে চেয়ারটাকে টেনে এনে সে জায়গাটায় পাতলাম, যেখানে আমারই হাতেনিহত বুড়োকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আমার মনটা বিজয় উল্লাসে উথাল পাথাল করছে। এমন একটা কাজনির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারলে অন্তরের অন্তঃস্থলে খুশির জোয়ার বয়ে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। হ্যাঁ, ঠিক সে জায়গাটার ওপরেই আমার চেয়ারটাকে পেতে দিলাম।

পুলিশ অফিসাররা সবকিছু দেখে, দীর্ঘসময় ধরে তল্লাসি চালিয়ে যারপরনাই খুশি। আমার আচার ব্যবহার কথাবার্তায় তারা খুবই প্রীত। তার ওপর এতক্ষণ যে হেসে হেসে সহজ সরল ভঙ্গিতে কথা বললাম, এতে তো কারো মনে এতটুকু সন্দেহ দানা বাধার কথাও নয়।

আমার সনির্বন্ধ অনুরোধে তারা চেয়ার টেনে বসল। তারা আসন গ্রহণ করলে আমিও নিজের জন্য রক্ষিত চেয়ারটা টেনে তাদের মুখোমুখি বসলাম।

তারা আমাকে এক-এক করে বহু প্রশ্নই করল। আমি ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের সন্তোষ উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম।

তারা এবার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ জমাতে শুরু করল।

আশ্চর্য ব্যাপার! আমি যেন ক্রমেই মিইয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়তে লাগলাম। বার বারই মনে হতে লাগল, তারা আরও দেরি করছে কেন, কাজ তো মিটিয়েই ফেলেছে। এখন এখান থেকে কেটে পড়ক। কেন অহেতুক এখানে বসে থেকে আমাকে এভাবে বিব্রত করছে!

আমার মাথার ভেতরে ঝিমঝিমানি শুরু হয়ে গেল। তারপর শুরু হলো মাথার যন্ত্রণা। ক্রমে তা বাড়তে বাড়তে অসহ্য হয়ে উঠল। কানের লতি দুটো গরম হয়ে গেল। তারপর কানের মধ্যে বোঁ-বো করতে লাগল।

আশ্চর্য ব্যাপার! আশ্চর্যই কেবল নয়, ব্যাপারটা যারপরনাই বিরক্তিকরও বটে। পুলিশ অফিসারগুলো বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তো দূরের ব্যাপার সামান্য নড়াচড়াও করল না। চেয়ার আঁকড়ে বসেই রইল। আর কথা? একের পর এক প্রসঙ্গ টেনে এনে অনর্গল কথা বলে যেতে লাগল।

আর এদিকে আমার কানের ভেতরের বোঁ-বোঁ শব্দটা ক্রমেই বাড়তে বাড়তে চরম পর্যায়ে উঠে যেতে লাগল। অসহ্য! আমি আপন মনে বিরক্তভাবে বলে উঠলাম–‘উফ! কী ঝকমারিতেই না পড়া গেল রে বাবা!

কানের বিরক্তিকর ভাবটাকে ভুলে থাকার জন্য আমি জোর করে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে হেসে হেসে স্বাভাবিকতার ভান করে তাদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম।

‘কিন্তু হায়! এ কী মহা সমস্যায় পড়া গেল! কানের ভেতরের শব্দটা ক্রমে যে বেড়েই চলেছে। আর তা ক্রমে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে পড়তে লাগল।

হঠাৎ, হা হঠাই আমার যেন মনে হলো বো-বো শব্দটা আমার কানের ভেতরে হচ্ছে না। একটু নীরবতার মধ্যে দিয়ে গভীরভাবে লক্ষ্য করলাম। হ্যাঁ আমার অনুমান। অভ্রান্তই বটে। শব্দটা অবশ্যই আমার কানের ভেতরে হচ্ছে না। তবে?

ইতিমধ্যেই আমার মুখ যে ফ্যাকাশে, চকের মতো ফ্যাকাশে হতে শুরু করেছে। এতে এতটুকুও সন্দেহের অবকাশ নেই।

আমার চোখ-মুখের বিবর্ণ ভাব, ক্রমেই মিইয়ে-যাওয়া অবস্থাটা যাতে পুলিশ অফিসারদের নজরে না পড়ে, তার জন্য আমি অনর্গল কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম। আর গলা ক্রমশ চড়াতেও ভুললাম না।

তবু শব্দটা কমার কোনো লক্ষণ তো দেখলামই না, বরং ক্রমে বেড়েই চলল। এর জন্য আমার আর কী-ই বা করার থাকতে, পারে? আমি যে পরিস্থিতির চাপে পড়ে নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়েছি।

তবে শব্দটা খুবই মৃদু আর দ্রুতগতিতে হয়ে চলেছে। কোনো ঘড়িকে তুলা-চাপা দিয়ে রাখলে যেমন মৃদু শব্দ নির্গত হয় ঠিক তেমনই একটা টি-টি শব্দ অনবরত হয়েই চলেছে। এতটুকু হ্রাস-বৃদ্ধি নেই, বিরামও নেই মুহূর্তের জন্যও।

আমার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলল। আমি হাঁপাতে শুরু করলাম। একনাগাড়ে হাঁপিয়েই চলেছি। আমার এ আকস্মিক পরিবর্তনটুকু পুলিশ অফিসারদের নজরে পড়ল না, কিছু শুনতেওপেল না।

আমি আরও গলা চড়িয়ে, বেশ জোরে জোরে কথা বলতে লাগলাম। চেষ্টা করলাম, যাতে মুহূর্তের জন্যও আমাকে কথা বলা বন্ধ করতে না হয়।

অবাঞ্ছিত শব্দটা নিরবচ্ছিন্নভাবে হয়েই চলল। আর তা বাড়তে বাড়তে চরম পর্যায়ের দিকে এগিয়ে চলল।

আমি অন্যন্যোপায় হয়ে সামান্য প্রসঙ্গ নিয়ে সাধ্যমত গলা চড়িয়ে জোর তর্ক জুড়ে দিলাম আর গলা চড়িয়ে অদ্ভুতভাবে অঙ্গভঙ্গি করতে লাগলাম। মোদ্দা কথা, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমি নিতান্তই অহেতুক পরিবেশটার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

তবু হায়! এ কী অবিশ্বাস্য কাণ্ড! শব্দটা যে ক্রমেই উৰ্দ্ধমুখি হয়ে চলেছে। থামার কোনো লক্ষণই দেখলাম না। কিন্তু কেন–শব্দটা থামছে না কেন? এর উৎসই বা কোথায়?

আমার অস্থিরতা আরও অনেকাংশে বেড়ে গেল। কর্তব্য স্থির করতে না পেরে আমি মেঝেতে জোরে জোরে পা ঠুকে হাঁটাহাটি শুরু করলাম। যাকে বলে, ঘরময় অস্থিরভাবে পায়চারি করা।

কিন্তু হায়! এ কী তাজ্জব ব্যাপার! শব্দটা যে একই গতিতে অনবরত বেড়েই চলল।

আমি আপন মনে আর্তনাদ করে উঠলাম–‘হায়! হায় ঈশ্বর! এ কী অদ্ভুত কাণ্ড! আমি এখন কি করব!

আমি উন্মাদের মতো অনর্গল বকতে লাগলাম। একে অর্থহীন প্রলাপও বলা চলে। অকারণে বার বার দিব্যি কাটতে লাগলাম। অনর্গল বকবক করার ফলে আমার মুখ দিয়ে ফেনা ঝরতে আরম্ভ করল।

আমি উন্মাদের মতো ঘরময় দাপাদাপি করতে করতে এক সময় আমার জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারটার সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বকবকানি কিন্তু চালিয়েই যেতে লাগলাম। এবার ঝট করে চেয়ারের হাতল দুটো শক্ত করে ধরে মাথার ওপরে তুলে নিলাম। পরমুহূর্তেই সেটাকে উন্মাদের মতো আবার তক্তার ওপর দুম করে শব্দ করে বসিয়ে দিলাম।

আমার এ আকস্মিক পরিবর্তনের দিকে পুলিশ অফিসারদের কোনো খেয়াল নেই। তারা আগের মতোই চুটিয়ে গল্প করে চলেছে। কথাবার্তা, হাসাহাসি আর আনন্দ সমান তালেই চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুটা স্বস্তি পেলেও নিশ্চিন্ত অবশ্যই হতে পারলাম না।

আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। পুলিশ অফিসারদের আচরণে আমি সত্যি সত্যি খুবই অবাক হলাম। কারণ, আমি এতক্ষণ ধরে যে নিরবচ্ছিন্ন শব্দটা শুনছি। সে অবাঞ্ছিত শব্দটা আমার মধ্যে উন্মাদনার সঞ্চার করেছে, আমাকে উন্মাদ করে তুলেছে, তারা তিন-তিনটি প্রাণীর মধ্যে কেউই শব্দটা শুনতে পাচ্ছে না। এমনটা কি কখন হতে পারে, নাকি বিশ্বাস করতে উৎসাহ পাওয়া যায়।

হায় পরমপিতা! হায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। না, অবশ্যই না, এটা হতেই পারে না। তবে কি তারা শুনতে পেয়েছে? শুনতে পেয়েছে অবাঞ্ছিত সে শব্দটা? তবে কি তারা সন্দেহ করছে! এও কোনোদিন হতে পারে! তারা শুনেছে! শুনতে পাচ্ছে! তারা সন্দেহ করছে! নীরবে লক্ষ্য করছে! তারা জেনে ফেলেছে!

তবে? তবে কি তারা আমার মধ্যে উদ্ভুত আতঙ্কটা নিয়ে মস্করায় মেতেছে। মজা করছে আমাকে নিয়ে।

আমি এরকমই ভেবেছি। এখনও একই ভাবনা আমার বুকের ভেতরে খস্ খস্ করে চলেছে।

উফ্! কী যন্ত্রণা! নিরবচ্ছিন্ন যন্ত্রণায় আমি দগ্ধে মরছি। হায় ঈশ্বর। এ কী যন্ত্রণা যাঁতাকলে আমাকে পিষে মারছ! এরকম অসহ্য যন্ত্রণায় তিলে তিলে দগ্ধে মরার চেয়ে অন্য যে কোনো পরিস্থিতি এর চেয়ে অনেক, অনেক ভালো ছিল। সুতীক্ষ্ম অস্ত্রের আঘাতের চেয়েও অসহনীয় বিদ্রূপ আমাকে দগ্ধে মারতে লাগল। উফ্! এ বিদ্রুপের পরিবর্তে অন্য যা-কিছু যন্ত্রণা সবই সহনীয়?

না, আর সহ্য করতে পারলাম না! গায়ে জ্বালা-ধরা কপট হাসি আমার পক্ষে আর এক মুহূর্তও বরদাস্ত করা সম্ভব হলো না! আমি গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠব, আর তা যদি না হয় তবে অনিবার্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব। মরেই যাব আমি!

আবারও ওই যে, আবার! ওই শোন! জোরে আরও জোরে আরও, আরও জোরে।

আমার মধ্যে চূড়ান্ত অস্থিরতা ভর করল। আমি গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম–‘হতচ্ছাড়া! নচ্ছাড়গুলো! ছলচাতুরী বন্ধ কর! আমি অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি

হ্যাঁ, আমিই কাজটা করেছি।’

উন্মাদের মতো ঘরময় দাপাদাপি করতে করতে আমি আবার গলাছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম–‘নচ্ছারগুলো, এ তক্তাগুলো উঠিয়ে ফেল। এখানে এই যে, এ তক্কাগুলো। হ্যাঁ, এ তো তারই হৃদযন্ত্রের স্পন্দন। ওই, ওই শোন–‘

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *