1 of 2

মেজেংগারস্টিন

মেজেংগারস্টিন

বিভীষিকা!

বিভীষিকা আর ভবিতব্যতা সত্যি যদি সবকালে সমানভাবে চলেই থাকে তবে আমি এখন যে গল্প ফাঁদতে চলেছি তার তারিখ উল্লেখ করার প্রয়োজন কি, বুঝছি না তো। আর কেনই বা আমি এ-কাজে উৎসাহি হব?

আমি যা বুঝেছি তা হচ্ছে, কেবলমাত্র এ-কথা উল্লেখ করলেই তো যথেষ্ট যে, আমি বর্তমানে যে সময়ের কথা বলছি তখন হাঙ্গেরির মাঝামাঝি এক অঞ্চলের মানুষের মনে জন্মান্তরবাদের একটা দৃঢ়বিশ্বাস জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। তবে সে বিশ্বাসটা যতই নিশ্চিত হোক না কেন গোপনও ছিল বটে। তবে একটা কথা গোড়াতেই বলে রাখছি, সে মতবাদ–মানুষের মনের নিশ্চিত অথচ গোপন সে বিশ্বাস মিথ্যা বা আদৌ সম্ভাব্য কি না, সে প্রসঙ্গে আমি হ্যাঁ বা না কোনো বক্তব্যই পেশ করতে নারাজ–করবও না। অর্থাৎ আমি শুধুমাত্র ঘটনাটাকে আপনাদের সামনে সাধ্যমত সহজ সরল ভাষায় খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করব। ব্যস, এর বেশি কিছুই নয়।

কুসংস্কার!

তবে এও সত্য যে, হাঙ্গেরির সে কুসংস্কারের মধ্যে এমন কোনো বক্তব্যই ছিল না যা যুক্তিবিরুদ্ধ অসঙ্গতির দিকে যারপরনাই দ্রুততালে এগিয়ে যাচ্ছিল।

তবে আমি এ-কথাও বলতে পারি যে, এ প্রসঙ্গে প্রাচ্যের পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতামতের সঙ্গে হাঙ্গেরিয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের বহুদিক থেকে মূলগত পার্থক্য বর্তমান। আর সে পার্থক্য কিন্তু একটু-আধটুই নয়, অনেক বেশিই ছিল।

আজ থেকে নয়, বেশ কয়েক শতক ধরেই মেজেংগারস্টিন আর বার্লিংকেজিং পরিবার দুটোর মধ্যে শক্ততা চলছে। পরিবার দুটোর মধ্যে শত্রুতা বর্তমানে যেমন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে, আগে কিন্তু এত প্রকট ছিল না।

পরিবার দুটোর মধ্যে শত্রুতার প্রকৃত কারণ এবং উৎস খুঁজতে গেলে আমাদের বহুদূরে পিছিয়ে যেতে হবে। দেখা যাবে, একটা প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীতে তাদের শত্রুতার উদ্ভবের প্রকৃত কারণ লুকিয়ে রয়েছে।

সে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণীটা হচ্ছে–‘ঘোড়সওয়ারে জয় যেমন তার ঘোড়ার ওপর নির্ভর করে, ঠিক একই রকমভাবে বার্লিংকজিং পরিবারের অমরত্বের ওপর যখন মেজংগারস্টিন পরিবারের মরণশীলতা জয়ী হবে, তখনই একটা সহজ নামের মারাত্মক পতন ঘটে যাবে।’

বিচার বিবেচনা করে দেখলে আসলে কিন্তু এসব কথা তিলমাত্রও অর্থবহ ছিল না। তবে? তবে বহুদিন আগের কয়েকটা খুবই সামান্য কারণ থেকেই এরকম কিছু ঘটনার উদ্ভব ঘটেছিল, খুবই সত্য। আর যে কারণ ছিল তা হচ্ছে, জমিদারি দুটোর কাছাকাছি, পাশাপাশি অবস্থানও এর জন্য কম দায়ী নয়। তাদের পাশাপাশি অবস্থানের। জন্য তাদের শাসনকার্য পরিচালনা এবং অন্যান্য কাজের দিক থেকেও উভয়পক্ষের মধ্যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মানসিকতার সূত্রপাত হয়। আর তা তিলে তিলে বাড়তে বাড়তে বর্তমানের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নেয়।

শুধু কি এই? আরও আছে। তার ওপর বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিকট প্রতিবেশীরা খুব কম ক্ষেত্রেই বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে থাকে।

আর দেখা গেছে বালিংকেজিং দুর্গের অধিবাসীরা তাদের প্রাসাদের খুবই উঁচু জানালা থেকে চারদিকে ভালোভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারত। তাই বংশপরম্পরা হিংসা ও বিদ্বেষের বিষ বুকে নিয়ে দিনাতিপাতের মাধ্যমে বিবাদের ফলে পরিবার দুটো যখন আগে থেকেই বিবাদে লিপ্ত ছিল তখন ভবিষ্যদ্বাণীর বক্তব্য যে তাদের আরও অনেক অনেক বেশি রেষারেষিতে অনুপ্রাণিত করবে, আরও বেশি দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে, তাতে আর অবাক হবারই বা কি থাকতে পারে?

এখন কথা উঠতে পারে, ভবিষ্যদ্বাণীটার অর্থ কি? প্রকৃতপক্ষে যদি তা অর্থবহ হয়ে থাকে অর্থাৎ এর যদি কোনো অর্থ থাকে তবে তা শেষাবধি জয়লাভ করবে। আর এ কারণেই স্বল্প প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ও দুর্বলতর পক্ষই পরিবার দুটোর তিক্ততার শত্রুতাকেই অন্তরের অন্তরতম কোণে পোষণ করে চলেছে।

বার্লিকেজের কাউন্ট উইলহেলম তিনি উচ্চ কুলোদ্ভব হয়েও এ কাহিনীর সময়ে তিনি ছিলেন বার্ধক্যের ভারে জর্জরিত অথর্ব, পঙ্গু এক বৃদ্ধ।

শত্ৰু পরিবারের প্রতি অস্বাভাবিক শত্রুতা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধ কাউন্টের মধ্যে ছিল না। আর এ শত্রুতা তিনি দীর্ঘদিন যাবত্র অন্তরের অন্তরতম কোণে সযত্নে পোষণ করে চলেছেন। তবে স্বীকার না করে উপায় নেই যে, ঘোড়ায় চড়া আর শিকারের প্রতি উৎসাহ তার এত বেশি মাত্রায় ছিল যে বার্ধক্য, অথর্ব-প্রায় পঙ্গু শরীর আর মানসিক অসমতা সত্ত্বেও তিনি রোজই শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তেন। এটাকে নিতান্তই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কি-ই বা বলা যেতে পারে?

হ্যাঁ, অদম্য উৎসাহে শিকারের ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধ কাউন্ট রোজ সকালেই প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়তেন।

অন্যদিকে মেজেংগারস্টিন পরিবারের ব্যারনের নাম ফ্রেডারিক। তার বয়স তেমন বেশি নয়। তার বাবা ছিলেন মন্ত্রী। যৌবনকালেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করে অনন্ত সুন্দরের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তার মা ছিলেন লেডি মেরি। তিনিও অচিরেই তাকে অনুসরণ করেন, ইহলোক ত্যাগ করে যান।

যখন মা-বাবাকে হারান তখন ফ্রেডারিকের বয়স ছিল আঠারো বছর। আঠারো বছর একটা শহরে জীবন-যাপন করার ক্ষেত্রে কিন্তু মোটেই বেশি নয়। তার ওপর বয়সটাও যদি থাকে ভরা যৌবন। কিন্তু অঞ্চলটা যদি শহর তো দূরের ব্যাপার বড়সড় কোনো গ্রাম না হয়ে অখ্যাত অজ্ঞাত এক অঞ্চল হয়–সে পুরানো অঞ্চলে খুবই জনহীনতার মধ্যে ঘড়ির দোলকের টিক্ টিক্ শব্দও সেখানে গভীরতর অর্থবহ হয়ে ওঠে। অতএব এরকম একটা অজ পাড়াগাঁয়ে সময় তো বোঝা হয়ে উঠতে বাধ্য।

বাবা পরলোক পাড়ি জমানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যারন ফ্রেডারিক কতকগুলো বিশেষ কারণের জন্য তার জমিদারির মালিক বনে গেলেন। জমিদার একজন সত্যিকারের জমিদার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই।

সত্যি কথা বলতে কি, ফ্রেডারিকের আগে অন্য কোনো সম্মানীয় ব্যক্তি এত বড় জমিদারির মালিক হতে পারেননি।

জমিদার ফ্রেডারিকের দুর্গ ছিল অসংখ্য। মেজেংগারস্টিন প্রাসাদের জাঁকজমকের কথা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা না করাই ভালো। আর আকারের দিক থেকেও দ্বিতীয় কোনো নজির চোখের সামনে ছিল না যাকে মেজেংগারস্টিনের পাশাপাশি দাঁড় করানো যেতে পারে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে সে আসলে মেজেংগারস্টিন প্রাসাদই ছিল নিকট ও দূরবর্তী অঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। আর একটা কথা, তাঁর জমিদারি ছিল এতই বিশাল যে, জমিদারির সীমানা কোনোদিনই সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, করা সম্ভবই হয়নি। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে যদি তার পার্কটার কথাই বিবেচনা করা যায় তবে দেখা যাবে, পঞ্চাশ মাইল অঞ্চল ব্যাপী ছিল তার ব্যাস।

জমিদারির মালিক সুপরিচিত চরিত্রের যুবক। ফ্রেডারিক যখন উত্তরাধিকার সূত্রে এমন বিশাল একটা সম্পত্তির মালিক তখনই তাকে ঘিরে চারদিকে কানাঘুষো শুরু হয়ে গেল। কীসের কানাঘুষা? কেন কানাঘুষা? তার ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রা–আচার আচরণ কেমন হবে এ নিয়েই কানাঘুষা। সত্যি কথা বলতে কি, দু-চারজন এক সঙ্গে হলেই ফ্রেডারিককে নিয়ে ফিসফিসানি শুরু করে দেয়।

সত্যি কথা বলতে কি, তিনটি দিন না যেতেই জমিদারির নতুন যুবক মালিকটির আচার-ব্যবহার হেরডকেও পিছনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলল। আরও আছে। আচার ব্যবহার তাঁর হিতাকাঙ্খী বন্ধু-বান্ধবদের প্রত্যাশাকে দ্রুত ছাড়িয়ে গেল।

তার নিজস্ব বল্গাহীন ব্যাভিচার চরমতম বিশ্বাসঘাতকতা আর অবর্ণনীয় ও অভূতপূর্ব অন্যায় উৎপীড়ন তার ভীত-সন্ত্রস্ত প্রজাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝিয়ে দিল যে, তারা যতই তার বশ্যতা স্বীকার করুক না কেন, তার নিজের বিবেক যতই সাফ সুতরা হয়ে উঠুক না কেন, কোনো প্রয়াসই এ সহজ-সরল আর অতি সাধারণ মাপের মানুষগুলোর নির্মম-নিষ্ঠুর আঘাত থেকে রেহাই দিতে পারবে না।

এভাবে নানা জল্পনা-কল্পনা আর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে তিনটি দিন কেটে গেল।

চতুর্থ দিনের রাত এলো। সে রাতেই হঠাৎ দেখা গেল বার্লিংকিজিং দুর্গের আস্তাবলের মাথা দিয়ে আগুনের হলকা বের হচ্ছে। অতর্কিত আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।

এমন নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনাটার কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে আশপাশের মানুষগুলোর মোটেই অসুবিধা হলো না। আর এ ব্যাপারে ছোট বড় সবাই একমত, ব্যারন অর্থাৎ ফ্রেডারিক এই দুষ্কর্মের জন্য দায়ী। আর তার ভয়ঙ্কর সব দুর্ব্যবহারও নির্মম নিষ্ঠুর। কাজের সংখ্যার সঙ্গে আস্তাবলের অগ্নিসংযোগের অপরাধটাকে জুড়ে দিয়ে আরও একটা সংখ্যা বাড়িয়ে দিল। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষগুলো আড়ালে-আবডালে ছি ছি করতে লাগল।

তবে ব্যাপারটা কিন্তু এত সহজে মিটল না। ব্যাপারটাকে নিয়ে যখন সে অঞ্চলের সর্বত্র রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হলো তখন যুবক জমিদার ফ্রেডারিক মেজেংগারস্টিন প্রাসাদের দোতলার একটা নির্জন কক্ষে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো গুম্ হয়ে বসে রইলেন।

দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে জীর্ণ হয়ে-আসা মূল্যবান পর্দাগুলো দেওয়ালের গায়ে হালকা বাতাসে বার বার উড়ে বেড়াচ্ছে। আর তারই ওপরে অবস্থান করছে বহু খ্যাতিমান পূর্বপুরুষদের ফ্যাকাশে হয়ে পড়া সুবিশাল প্রতিকৃতিগুলো।

কোনো একটা ছবিতে হয়তো চিত্রশিল্পী তার নিপুন তুলির টানে ফুটিয়ে তুলেছেন পশমের বহুমূল্য পোশাকে সুসজ্জিত মহামান্য পোপ আর যাজকদের পদস্থ কর্মচারীরা স্বেচ্ছাচারী জমিদারের কাছাকাছি পাশাপাশি বসে কোনো এক রাজার বাসনাকে বানচাল করে দিচ্ছে।

আর একটা ছবিতে হয়তো ব্যক্ত করা হয়েছে, মহামান্য পোপনিজ ক্ষমতাবলে নির্দেশ জারির মাধ্যমে পরম শত্রু বিদ্রোহী রাজাকে সংযত করছেন। আবার অন্য আর একটি ছবিতে আঁকা হয়েছে, মেজেংগারস্টিন রাজা রাজরাদের অতিকায় সব প্রতিকৃতি। তাদের বলবান যুদ্ধের ঘোড়াগুলোর খুরের চাপে মৃত সৈন্যদের শবদেহ। এগুলোতে চিত্রশিল্পী এমন সব দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন যা চোখের সামনে দেখলে ঘনিষ্ঠ স্নায়ুর অধিকারী ব্যক্তিও স্তম্ভিত হয়ে পড়তে বাধ্য। আর একটা ছবিতে শিল্পী অতীতকালের বিলাসপরায়ণা রূপসিদের ভাবভঙ্গি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এতে দেখানো হয়েছে তারা দলবদ্ধভাবে নাচতে নাচতে অবিশ্বাস্যভাবে ক্রমে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে মহামান্য জমিদার ফ্রেডারিক যখন বার্লিংকিজিং-এর আস্তাবল থেকে উদ্ভুত ক্রমেই বেড়ে চলা হৈ-হট্টগোল শুনছিল বা শোনার বাহানা করছেন বা নতুনতর কোনো নষ্টামিতে নিজেকে লিপ্ত করার কথা ভাবছেন, তখন নিজের অন্যমনষ্কতার মধ্যেই সম্পূর্ণ নিজের অজান্তেই হঠাই তার নজর গেল তুলির টানে অস্বাভাবিক রং আর কৌশলে আঁকা অতিকায় একটা ঘোড়ার ছবির দিকে।

সে ঘোড়াটাকে পর্দার ওপরে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেন সেটা চিরশত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী আরবি পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি। বাস্তবিকই অদ্ভুত ভঙ্গিতে সেটা দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ছবিটার সামনের দিকটায় ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে রয়েছে অবিকল পাথরের মূর্তির মতোই নিশ্চল-নিথরভাবে। সত্যি সেটা যেন এতটুকুও নড়াচড়াও করছে না।

আরও আছে। ঘোড়াটার ঠিক পিছনেই দেখা যাচ্ছে মেজেংগারস্টিন পরিবারের কোনো সৈনিকের ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তার হতভাগ্য পরাজিত মৃত সওয়ার। রক্তে তার পোশাক পরিচ্ছদই কেবল নয়, সবুজ তৃণভূমির বেশ কিছু অংশও ভিজে গেছে।

নিজের অজান্তে দৃষ্টি কোথায়, কীসের ওপর পড়েছিলেন ফ্রেডারিক তা বুঝতে পারার ফলেই তার মধ্যে ধূর্ত ভাবে জগে উঠেছিল। কিন্তু বুঝতে পেরেও তিনি সেদিকে আর চোখ ফেরালেন না। তিনি চোখ ফেরালেন তো না-ই বরং তিনি কিছুতেই বুঝতে পারলেন না তার মধ্যে অন্তহীন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আর তা ইন্দ্রিয়গুলোকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে তুলছে।

সে দৃশ্যটার দিকে তিনি যতবার, যতভাবেই তাকাতে লাগলেন ততবারই বেশি করে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়তে লাগলেন। আর এ-কারণেই তাঁর পক্ষে পর্দার আকর্ষণ থেকে নিজের চোখ দুটোকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ইতিমধ্যে বাইরের হৈ হট্টগোল বাড়তে বাড়তে এমন এক চরম সীমায় পৌঁছে যাওয়ার ফলে তিনি জোর করে মনকে জ্বলন্ত আস্তাবলটার ওপর থেকে ফিরিয়ে আনলেন। সেখান থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তিনি ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে চলে আসা অত্যুজ্জ্বল আলোটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন।

তবে সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে তার পক্ষে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হলো না। নিজে থেকেই দৃষ্টি ঘুরে গেল। এবার দৃষ্টি গিয়ে পড়ল দেওয়ালের ওপর।

তার মধ্যে আকস্মিক ভীতির সঞ্চার ঘটল, বিস্মিতও কম হলেন না। এবার চোখের তারায় ভীতি মিশ্রিত বিস্ময়ের ছাপ এঁকে তিনি অতিকায় ঘোড়াটার মাথার দিকে তাকালেন। বিস্ময়ে তার কপালের চামড়ায় পর পর কয়েকটা ভাঁজ আঁকা হয়ে গেল। তিনি লক্ষ্য করলেন, ঘোড়ার মাথাটার অবস্থান যেন ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। এরকম অভাবনীয় পরিবর্তনটা তার মধ্যে এমনই ভীতির সঞ্চার করল যা তিনি একটু আগেও কল্পনা করতে পারেননি।

একটু আগেই তিনি যে দৃশ্য দেখেছিলেন তা হচ্ছে, ঘোড়ার মাথাটা যেন সহানুভূতিতে আপ্লুত হয়ে ঘাড়টাকে বাঁকিয়ে কাত হয়ে ঝুলে পড়েছে। আর সেটা ঝুলে পড়েছে নিজের প্রভুর এলিয়ে পড়ে-থাকা দেহটার ওপর।

আর এখন? এখন দেখছেন, সে ঘোড়াটা জমিদার ফ্রেডারিকের দিকে কিছু এগিয়ে এসেছে। আর কয়েক মুহূর্ত আগেও যে চোখ দুটো নজরের আড়ালে অবস্থান করছিল, এখন তাতে লক্ষিত হচ্ছে এক মানবিক ভাবের অভিব্যক্তি। চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুনের শিখা জ্বল জ্বল করছে। চোখের মণি দুটো রীতিমত ঝিকমিক করছে।

আরও আছে, ক্রোধোন্মত্ত ঘোড়াটার বিস্ময়ে বিস্ফারিত মোটা-সোটা ঠোঁট দুটোর ফাঁক দিয়ে বিরক্তিকর দাঁতের পাটি দুটো পুরোপুরি এবং স্পষ্ট নজরে পড়ছে।

যুবক জমিদার আকস্মিক ভয় ভীতিতে কর্তব্য হারিয়ে ফেললেন। তিনি কি করবেন স্থির করতে না পেরে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। তার পা দুটো রীতিমত কাঁপছে। সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকাই যেন তার পক্ষে মহা সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে দরজার পাল্লাটায় ধাক্কা দিলেন। সামান্য চাপ পড়তেই দরজাটা দুম্ করে খুলে গেল।

দরজাটা খুলে দেওয়ামাত্র লাল একটা আলোকরশ্মি ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। আলোকরশ্মিটা ঢুকে পড়ামাত্র ঝুলন্ত পর্দার ওপর নিজের ছায়াটা শিল্পীর আঁকা হালকা ছবির মতো ভেসে উঠল।

তবে এও সত্য যে, তিনি তখনও পুরোপুরি ঘরের ভেতরে না ঢুকে দরজার চৌকাঠের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবু তার যেন মনে হলো যেখানে আরবি বার্লিংকিজিং-এর নির্মম নিষ্ঠুর ঘাতকের মূর্তি আঁকা আছে ঠিক সে জায়গাটায়ই গিয়ে পড়েছে। তিনি একই জায়গায় স্থবিরের মতো দাঁড়িয়েই সবিস্ময়ে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

জমিদার অস্বাভাবিক অস্থিরতার মধ্যে কয়েক মুহূর্ত পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ তার পক্ষে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না। নিদারুণ অস্থিরতা তার মধ্যে ভর করল।

কিন্তু বেশিক্ষণ তার পক্ষে সে-চাপ সহ্য করা সম্ভব হলো না। তিনি উদ্রান্তের মতো সেখান থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে খোলা বাতাসে দাঁড়ালেন।

প্রাসাদের প্রধান ফটক ডিঙিয়ে বাইরে যাবার আগেই অশ্বপালের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল। তারা প্রহরায় নিযুক্ত।

অশ্বপালকরা একটা ঘোড়াকে বশে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুবিশাল একটা বেয়াড়া ঘোড়া। তাকে সহজে বাগ মানানোই সমস্যার ব্যাপার। তাই তারা দীর্ঘসময় ধরে বহু পরিশ্রম ও কষ্টের মাধ্যমে কোনোরকমে তাকে তীব্র উত্তেজনায় বার বার লাফিয়ে ওঠা থেকে বিরত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুবক জমিদার কয়েক মুহূর্ত প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে বেয়াড়া ঘোড়াটা এবং অশ্বপালকদের কাণ্ডকারখানা দেখলেন। এবার তার কাছে পর্দার গায়ে দেখা ঘোড়ার ছায়াটার রহস্য খোলসা হল। নিঃসন্দেহ হলেন। ঘরের পর্দার গায়ে দেখা সে ছায়াটা যে চোখের সামনে দেখা হিংস্র ঘোড়াটারই প্রতিকৃতি।

এবার তিনি দুপা এগিয়ে গিয়ে অশ্বপালকদের বললেন–‘কি ব্যাপার হে।

অশ্বপালকদের একজন কাজ থামিয়ে বললেন–হুঁজুর, হতচ্ছাড়া ঘোড়াটা এমন বেয়াড়া যে, তাকে বাগে আনতে আমরা তিন তিনজন লোক রীতিমত হিমসিম খাচ্ছি।

‘হ্যাঁ, সে তো নিজের চোখেই দেখছি। কিন্তু ঘোড়াটা কার? এটাকে কোথায় পেলে তোমরা?

‘হুজুর এটা আপনারই সম্পত্তি, আপনারই সম্পত্তি।

‘আমার? আমার ঘোড়া?’

‘হ্যাঁ, ঠিক তাই। অন্য কেউ অন্তত এটাকে আগে দাবি করেনি, আজও দাবি করবে না।’

‘সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু এটাকে পেলে কোথায়?

‘এ-পথে দৌড়ে যাবার সময় আমরা একে ধরে ফেলেছি।

‘দৌড়ে যাচ্ছিল? কিন্তু কোথা থেকে আসছে, অনুমান করতে পারছ কিছু?

‘আমরা অনুমান করছি, বার্লিকিজিং দুর্গের জ্বলন্ত আস্তাবল থেকে কোনোক্রমে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে এসেছে।

‘বার্লিকিজিং দুর্গ?

‘তাই অনুমান করছি। হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, ঘোড়াটা উন্মাদের মত দৌড়াতে দৌড়াতে এ-পথ দিয়ে যাবার সময় আমরা বহু চেষ্টা করে ধরে ফেলেছি। তারপরের দৃশ্য আপনি তো নিজের চোখেই দেখছেন হুজুর।

অন্য আর একজন অশ্বপালক বলল–‘আমরা যখন এটাকে প্রথম দেখতে পাই তখন এর সর্বাঙ্গ প্রচণ্ড ক্রোধে কাঁপছিল। আর শরীর ফেনায় মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল।

আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, বুড়ো কাউন্ট এর মালিক। আর কোনো বিদেশি ঘোড়ার মালিক। তাই আমরা এটাকে ধরে জোর করে তার আস্তাবলেই ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

‘তাই নাকি? তারপর?

‘তারা কিন্তু কিছুতেই এটাকে তাদের ঘোড়া দাবি করল না।

‘হুম!

‘ব্যাপারটায় আমরা খুবই অবাক হলাম।’

‘কেন?’

‘কারণ, ঘোড়াটা যে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে কোনোক্রমে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এসেছে এরকম বহু চিহ্নই তার গায়ে দেখা যাচ্ছে। হুজুর একটু লক্ষ্য করলে আপনিও আমাদের কথার সত্যতার প্রমাণ পাবেন।’

‘হ্যাঁ, আমিও তো তাই দেখছি।

ঘোড়াটার কপালের দিকে আঙুল নির্দেশ করে।

প্রথম অশ্বপালক এবার বলল–‘হুজুর, এই যে দেখুন, এর কপালে দাগিয়ে ডব্লউ ভি বি অক্ষরগুলো খুবই স্পষ্টভাবে লিখে দেওয়া হয়েছে।’

‘হুম।

পুর্ব প্রসঙ্গের জের টেনে প্রথম অশ্বপালক বলে চলল ‘হুজুর, আমি তাই ভেবেছিলাম। যে অক্ষরগুলোর কথা বললাম, সেগুলো ‘উইলহেলম্ ভন্ বার্লিকিজিং নামের আদ্যক্ষর।’

‘হুম।

‘কিন্তু হুজুর, ঘোড়াটাকে দেখে দুর্গের সবাই পরিষ্কার জা নিয়ে দিয়েছে, ঘোড়াটা তাদের তো নয়ই এমনকি তারা ঘোড়াটাকে চেনে না, দেখেওনি কোনোদিন।

যুবক জমিদার–‘অদ্ভুত কথা তো! বড়ই আশ্চর্যজনক ব্যাপার।

‘আমরাও তো তাই বলাবলি করছিলাম হুজুর।

‘আর একটা কথা, ঘোড়াটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই তিনি এবার বললেন– ‘হ্যাঁ, তোমাদের কথা শতকরা একশো ভাগই সত্য।

‘কোন্ কথা? কীসের ইঙ্গিত দিতে চাইছেন হুজুর?

‘ওই যে বললে অদ্ভুত ঘোড়া, বাস্তবিকই ঘোড়াটা খুবই অসাধারণ! আবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটা সন্দেহজনকই বটে।

‘হ্যাঁ হুজুর। ব্যাপারটা সন্দেহজনক তো অবশ্যই।

তবে ঘোড়াটা এবার থেকে আমারই হোক।

মুহূর্তের জন্য ঘোড়াটার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে তিনি এবার বললেন– ‘ঘোড়াকে দেখে আমি যা বুঝলাম, হয়তো ফ্রেডারিক মেজেংগারস্টিনের মতো একজন সুদক্ষ ব্যক্তির পক্ষে পাজি ঘোড়াটাকে বশ করা কোনো সমস্যাই হবে না।’

‘হুজুর, অপরাধ নেবেন না, আপনার হয়তো ভুল হচ্ছে।

‘ভুল? মানে আমি ভুল করছি?

‘আমাদের মনে হচ্ছে আপনার ভুলই হচ্ছে। হুজুর, আমরা তো বলছিই, ঘোড়াটা কাউন্টের আস্তাবল থেকে আসেনি। আর তাই যদি হয়ে থাকে তবে তো ঘোড়াটাকে অবশ্যই আপনার বা আপনার পরিবারের কারো কাছে হাজিরই করতাম না। হুজুর, আপনি কি আমার সঙ্গে একমত হচ্ছেন?

‘হ্যাঁ, কথাটা অবশ্য ঠিকই বলছ’ যুবক জমিদার আমতা আমতা করে বললেন।

তার কথাটা শেষ হতে না হতেই অদূরবর্তী শোবার ঘর থেকে বাহক ভৃত্যটা লম্বা লম্বা পায়ে প্রাসাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।

জমিদার ভৃত্যের ব্যস্ততা লক্ষ্য করে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালেন।

সে মন্দিরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে অনুচ্চ কণ্ঠে, প্রায় কানে কানে বলল– ‘হুজুর, একটা জরুরি কথা বলার জন্য আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি।’

চোখে মুখে উকণ্ঠার ছাপ এঁকে জমিদার জিজ্ঞাসা করলেন–‘জরুরি কথা! এমনকি জরুরি কথা যে তুমি এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছ?

‘হুজুর, প্রাসাদের হলঘরটার পর্দার ছোট্ট একটা অংশ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে।

‘পর্দা? পর্দার অংশ অদৃশ্য হয়ে গেছে?

‘তবে আর বলছি কি হুজুর! কি করে যে সেটা একেবারে বেপাত্তা হয়ে গেল, তা তো আমার মাথাই আসছে না।’

জমিদারের মুখে উকণ্ঠার ছাপ ফুটে উঠল। তিনি কপালের চামড়ায় পরপর কয়েকটা ভাঁজ এঁকে নীরবে ভৃত্যটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

উভয়ের মধ্যে অনুচ্চ কণ্ঠে কথাগুলো হলেও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী অশ্বপালকরা প্রায় সব কথাই শুনতে পেল।

যুবক ফ্রেডারিকের বিভিন্ন আবেগ ভিড় করল। আবেগ-উচ্ছ্বাসে অভিভূত হয়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু সে উত্তেজনাকে প্রকাশ করলেন না। মুহূর্তের মধ্যেই বহু কষ্টে সেটাকে সামলে নিলেন।

পরমুহূর্তেই তার চোখে মুখে বিদ্বেষের ছাপ ফুটে উঠল।

নিজের মনকে শক্ত করে তিনি এবার হুকুম দিলেন–ওই হলঘরটাকে এ-মুহূর্তে যত শীঘ্র সম্ভব তালা বন্ধ করে দাও।’

‘হুজুরের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে।

‘আর একটা কথা, তালাবন্ধ করে চাবিটা এনে আমার হাতে তুলে দেবে, মনে থাকবে তো?

‘তাই হবে হুজুর।

ভৃত্য মনিবের নির্দেশ পালন করার জন্য আবার প্রাসাদের ভেতরে চলে গেল।

ভৃত্য সেখান থেকে চলে যাবার পরই যুবক ফ্রেডারিক বড়সড় বেয়াড়া ঘোড়াটাকে নিজের বলে গ্রহণ করার পরই সেটা আবার আগের মতোই লাফালাফি দাপা দাপি শুরু করে দিল। মনে হলো সে যেন একেবারে উন্মাদদশাপ্রাপ্ত হয়েছে।

আর মেজেংগারিস্টন প্রাসাদ থেকে তাদের আস্তাবল পর্যন্ত দীর্ঘ সম্পূর্ণ রাস্তাটায় ছুটোছুটি লাফালাফি করতে আরম্ভ করল।

ঘোড়াটার রকম সকম দেখে ফ্রেডারিকের এক সামন্ত মন্তব্য করল–‘হুজুর, একটা দুঃসংবাদ আছে।

ফ্রেডারিক সচকিত হয়ে বলে উঠলেন–‘দুঃসংবাদ? কী সে দুঃসংবাদ?

‘বৃদ্ধ শিকারি বার্লিকিজিং-এর মর্মান্তিক মৃত্যু

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই তিনি বলে উঠলেন–‘মৃত্যু? কি বললেন, বৃদ্ধ শিকারি বার্লিংকিজিং মারা গেছেন।

‘সত্যি বলছি, তিনি মারা গেছেন। আর এ মৃত্যু সংবাদটা আশা করি আপনার কাছে দুঃখজনক নয়।’

ফ্রেডারিকের মুখে মুহূর্তের মধ্যে অভাবনীয় একটা হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।

মনের আকস্মিক আনন্দটুকু চেপে রেখে তিনি এবার বললেন–‘কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, কিছু জানতে পেরেছ?

‘হ্যাঁ, তা জানতে পেরেছি বটে।

‘কিভাবে বল তো?

‘শুনেছি তিনি নিজেরই একটা শিকারি ঘোড়াকে উদ্ধার করতে গিয়ে বোকার মতো ছুটোছুটি করছিলেন। তখনই আচমকা আগুনের মধ্যে পড়ে যান। আর তাতেই তার মৃত্যু হয়।

‘আগুন! শিকারি ঘোড়া!

‘হ্যাঁ হুজুর। আগুনে পুড়েই তিনি মারা গেছেন।’

ব্যারণের মধ্যে এমন একটা ভাব লক্ষ্য করা গেল যেন তিলে তিলে উত্তেজক ধারণার সত্যতাকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

বৃদ্ধ সামন্ত আবার বললেন–‘হুজুর, আমার কথাটা কিন্তু প্রকৃতই সত্য।

‘অবাক কাণ্ড তো! সত্যি অবাক হবার মতো ব্যাপারই বটে।

স্বাভাবিক কণ্ঠে কথাটা বলতে বলতে যুবক ফ্রেডারিক প্রাসাদের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন।

এবার থেকে উদ্দাম-অসংযত চরিত্রের যুবক ফ্রেডারিক ভন মেজেংগারস্টিনের চলাফেরা আচার আচরণের আমূল পরিবর্তন ঘটতে লাগল। যাবতীয় প্রত্যাশাকে তার ব্যবহার যারপরনাই নিরাশ করে দিল। বস্তুত দেখা গেল, কারো মতামতের সঙ্গেই তা আর মিলল না। আর একটা কথা উল্লেখ করতেই হয়, প্রতিবেশী ভদ্র পরিবারগুলোর সঙ্গে তার আচরণ কেবলমাত্র সুখকরই নয়, শোভনও ছিল না।

সম্প্রতি যুবক ফ্রেডারিকের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, নিজের জমিদারির এলাকার বাইরে তাকে আর দেখা যায় না বললেই চলে। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ইদানিং প্রাসাদের বাইরে, বিশেষ করে। জমিদারির বাইরে যান না বললেই চলে।

প্রাসাদের ভেতরে কাজকর্মের মধ্যে লিপ্ত থাকার ফলে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়ল যে, এত সামাজিক পরিবেশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে নিতে তিনি একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন। তবে এ-কথা যদি সত্য হয় যে, ওই উদ্দ্যাম, চঞ্চল, আর বাগ না মানা ঘোড়াটা, বর্তমানে তিনি যখন তখন যার পিঠে চাপেন, যদি কোনো রহস্যময় অধিকারে তার বন্ধুত্বের দাবি করতে পারেন সেটা অবশ্য অন্য কথা। সব মিলিয়ে বলতেই হয় যুবক জমিদার ফ্রেডারিকের চরিত্র যেন রাতারাতি এমন বদলে গেল, যা উৎসাহ করতেও ভরসা পাওয়া যায় না।

এদিকে প্রতিবেশীদের বাড়িতে তো মাঝে মাঝেই আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তারা যুবক জমিদার ফ্রেডারিককে স্বাভাবিকভাবেই আমন্ত্রণ জানায়–‘মহামান্য জমিদার কি উপস্থিত হয়ে আমাকে আনন্দিতও সম্মানিত করবেন?

আবার কেউ বা আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে বললেন–‘মহামান্য জমিদার মশাই কি আমাদের শূকর-শিকার অনুষ্ঠানে যোগদান করে বাধিত করবেন?

জমিদার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে কাউকে লোক মারফত লিখিতভাবে জানিয়ে দিতেন–মেজেংগারস্টিন উৎসব অনুষ্ঠান পছন্দ করেন না, ‘মেজেংগারস্টিন শিকার পছন্দ করেন না। এভাবে উদ্যত ও সংক্ষিপ্ত জবাবের মাধ্যমে তিনি প্রতিবেশী সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে প্রাসাদের চার-দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখতেন।

যুবক জমিদার কর্তৃক বার বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধত প্রতিবেশী সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো এরকম অপমানকে স্বাভাবিক বলে মনে নিতে পারল না। মেনে নেওয়া সম্ভবও নয়। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে লাগল। দিনের পর দিন এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটতে ঘটতে এক সময় দেখা গেল এরকম আমন্ত্রণের সংখ্যা ক্রমে কমে আসতে আসতে এক সময় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল।

ব্যাপার যা-ই থাক না কেন, সদ্য জোগাড়-করা বেয়াদপ উদ্ধত প্রকৃতির ঘোড়ার প্রতি যুবক ফ্রেডারিকের অনুরাগ বিচক্ষণ ব্যক্তিরা শেষপর্যন্ত কুৎসিত এবং অস্বাভাবিক আসক্তি বলে মনে করতে লাগল। তারা কানাঘুষো করতে লাগল এর মধ্যে কোনো কুৎসিৎ ভাবনা না থাকলে অনুরাগ কিছুতেই এমন গম্ভীর হওয়া সম্ভব নয়।

প্রতিবেশীদের মনে এমন এমন অস্বাভাবিক ধারণা দানাবাধার পিছনে যুক্তিও আছে যথেষ্টই। কারণ, দুপুরের গা-জ্বালা-করা রোদে, গভীর রাতের নিস্তব্ধতায়, রোগাক্রান্ত বা সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রচণ্ড ঝড়-তুফানের মধ্যে বা শান্ত আবহাওয়ায় যে কোনো পরিস্থিতিতে যুবক ফ্রেডারিককে দেখা যেত ঘোড়াটার পিঠে চেপে কোথায় যেন ছুটে চলেছেন। কোনোদিকেই তাঁর ভ্রূক্ষেপমাত্র নেই। কিন্তু কোথায়? কেনই বা তিনি কোনোকিছুকে তোয়াক্কা না করে ছুটে যান? অতএব তারা ঘোড়াটার বেয়াদপির সঙ্গে তার নিজের চরিত্রের সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করে। তবে তেমন উল্লেখযোগ্য। কোনোকিছুর সন্ধান না করতে পেরে কানাঘুষো করতে থাকে ‘নির্ঘাৎ এর পিছনে এমন কোনো গোপন রহস্য জড়িয়ে আছে যার হদিস আমরা পাচ্ছি না। তবে এ রহস্যভেদ করতেই হবে।’

আর একটা লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, যুবক জমিদার ফ্রেডারিকের অশ্বশালায় যত ঘোড়া রয়েছে প্রত্যেকেরই এমন একটা করে নাম রয়েছে যা কোনো-না-কোনো অর্থবহ। কিন্তু সদ্য সংগৃহীত এ ঘোড়াটার কোনো নামকরণই তিনি করেননি। কেন? এর পিছনে এমন কোন অন্তর্নিহিত কারণ লুকিয়ে রয়েছে?

আরও ব্যাপারের দিকে সবার দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হল–এ ঘোড়াটার জন্য আলাদা একটা আস্তাবল তৈরি করা হয়েছে? আর সেটার অবস্থান অন্য সব ঘোড়ার আস্তাবলের চেয়ে বেশ কিছুটা দূরে। আরও আছে, অন্য ঘোড়াগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পালক নিযুক্ত রয়েছে। তারাই সেগুলোর যাবতীয় পরিচর্যা করে। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ, এমনকি দলাই মলাই পর্যন্ত যুবক জমিদার নিজেই করেন কেন? কেন এ-কাজ অন্যের ওপর দিলেন না?

কেবলমাত্র পরিচর্যার ব্যাপার স্যাপারের কথাই বা বলি কেন? তার আস্তাবলে তিনি নিজে ছাড়া অন্য কারো প্রবেশাধিকার পর্যন্ত ছিল না।

উপরোক্ত কারণ ছাড়া আরও একটা ব্যাপার নজরে পড়ে। ব্যাপারটা হচ্ছে, বার্লিকিজিং-এর আস্তাবলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে সেটা থেকে প্রাণ রক্ষা করার জন্য। ঘোড়াটা সেদিন দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে যায়। তার যে তিনজন অশ্বপালক সে উদ্ধত প্রকৃতির ঘোড়াটাকে ধরে ফেলেছিল, তারা সে সময় যে লাগাম আর ফাস ব্যবহার করেছিল তা ছিল মোটা শেকলের তৈরি। অথচ সে তিনজন অশ্বপালকের মধ্যে একজনের পক্ষেও বলা সম্ভব নয় যে তথন বা তার পরেও যুবক ফ্রেডারিক কোনোসময় ভুলেও তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেছেন। ব্যাপারটা বাস্তবিকই গোলমেলে।

জমিদার ফ্রেডারিকের অনুচরদের মধ্যে এমন একজনও ছিল না যে এ ঘোড়াটার প্রতি যুবক ফ্রেডারিকের অতিমাত্রায় ভালোবাসার ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করত, অন্তত একমাত্র ওই কদাকার ভৃত্যটা ছাড়া অন্য কারোরই সন্দেহের প্রশ্নই ওঠে না।

ভৃত্যটা কদাকার খুবই সত্য। তার শারীরিক বিকৃতি নিয়ে নানাজন বহুরকম কথা বলে থাকে। কেউ বা আড়ালে আবার কেউ বা সামনাসামনিই তার চেহারা নিয়ে নানা রকম মন্তব্যের ম্যধ্যমে হাসিঠাট্টা করে। তার কথা নিয়ে কেউ মাথা তো ঘামাই না, এমনকি তিলমাত্র পাত্তাও কেউ করে না। মোদ্দা কথা, তার কোনো গুরুত্ব আছে বলে ছোট-বড় কেউ-ই মনে করে না।

কেই বা বলতে পারে, সে-ই দুঃসাহসে ভর করে বলেছিল, তার মনিব যখনই সে ঘোড়াটার সওয়ার হলো না কেন তখনই তিনি নিতান্ত অহেতুক সচকিত হয়ে পড়েন, শরীর বার বার শিউরে ওঠে।

আরও আছে, সে এও বলেছিল তার মনিব যতবারই ঘোড়াটার সওয়ার হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসেন, ততবারই তাঁকে অতিমাত্রায় হাসিখুশি দেখায়। সত্যি কথা বলতে কি, তার মনে হয় মনিব বুঝি এমন কোনো কাজ হাসিল করে এসেছেন, যা রাজ্য জয়ের সমানই আনন্দদায়ক।

এক মধ্যরাতের কথা। তখন ভয়ানক ঝড় উঠেছে। প্রলয়ঙ্কর ঝড়। মেজেংগারস্টিন তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ-ই তার ঘুম ভেঙে যায়। উদ্রান্তের মতো খাট থেকে নেমে এলেন। দুই লাফে দরজার কাছে ঝট করে সিটকিনিটা খুলে ফেললেন। বদ্ধ উন্মাদের মতো দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসলেন।

তারপর একই রকম ব্যস্ততার সঙ্গে সোজা আস্তাবলে ঢুকে গেলেন। ঘোড়াটার দড়ি খুলে বাইরে নিয়ে এলেন।

ব্যস, আর মুহূর্তমাত্রও সময় নষ্ট না করে এক লাফে ঘোড়ার পিঠে চেপে তাকে বনের দিকে ছুটিয়ে দিলেন। চোখের পলকে অতিকায় তেজি ঘোড়াটা বনের মধ্যে ঢুকে গাছগাছালির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরকম ঘটনা আজ নতুন নয়, বরং প্রায়ই ঘটে বলা যেতে পারে। তাই ব্যাপারটা নিয়ে কেউ মাথা তো ঘামানই না এমনকি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখারও দরকার মনে করল না।

মেজেংগারস্টিন ঘোড়াটার পিঠে অন্য দিনের মতোই প্রাসাদ ছেড়ে যাবার ব্যাপারটা তেমন কেউ লক্ষ্য না করলেও তার বাড়ি ফিরতে অস্বাভাবিক দেরি হওয়ায় প্রাসাদের সবাই খুবই চিন্তায় পড়ে গেল।

এক ঘণ্টা-দুঘণ্টা করে ক্রমে বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাবার পর এক অভাবনীয় কাণ্ড ঘটতে দেখা গেল। হঠাৎ দেখা গেল, মেজেংগারস্টিন প্রাসাদের ছাদের মনোহরী প্রাচীরগুলো ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকাণ্ডের ফলে দুম দুম্ শব্দে ভেঙে পড়তে আরম্ভ করেছে, আর এরই ফলে প্রাসাদটার ভীত পর্যন্ত বার বার কেঁপে উঠছে। সে-কী প্রলয়ঙ্কর কাণ্ড শুরু হয়ে গেল তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

আগুনের হল্কা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। আর সে আগুনের শিখা যখন ক্রমে বাড়তে বাড়তে যখন চরম পর্যায়ে গেল তখন বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারটা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল।

অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারটা নজরে পড়ামাত্র প্রাসাদের বিশেষ একটা ঘটনাকে রক্ষা করার জন্য বহু চেষ্টা করা সত্ত্বেও সবই ব্যর্থ হল।

সে অঞ্চলের মানুষগুলো, প্রতিবেশীরা ব্যাপারটা দেখে বিস্ময়বোধ করলেও সহানুভূতিহীন চোখে নীরব দর্শকের মতো দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগল। কেউই বাড়িটাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে তো এলোই না, এমনকি এতটুকুও আহা-উঁহু পর্যন্ত করল না।

তবে নতুন আর ভয়ঙ্কর কিছু অল্পক্ষণের মধ্যেই সে দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হল।

দূরবর্তী বন থেকে মেজেংগারস্টিন প্রাসাদের প্রধান ফটক পর্যন্ত ওক গাছের ছায়ায় ছায়ায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঝড়ের গতিকেও ছাড়িয়ে একটা ঘোড়া উদ্রান্তের মত ছুটে আসছে। তার পিঠে অবস্থানরত সওয়ারের মাথায় টুপিটা পর্যন্ত নেই। আর সে রীতিমত বিপর্যস্ত।

ব্যাপারটা দেখে স্পষ্টই মনে হয়, ঘোড়সওয়ার যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মতো দ্রুতগতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এসেছে সে বিষয়ে সন্দেহের কিছুমাত্র অবকাশও নেই। তার চোখে-মুখে দুঃখ যন্ত্রণার ছাপ। অমানুষিক পরিশ্রম আর সর্বাঙ্গের ক্লান্তি অবসাদের ছাপ অস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। তবে একটামাত্র আর্তস্বর তার রক্তাপুত ঠোঁট দুটো দিয়ে আর কোনো শব্দই বের হলো না। আর মুখটা যেন একেবারে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েছে।

তার মুখের এ-দশা কেন হল? আকস্মিক তীব্র আতঙ্কই এর একমাত্র কারণ। অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হয়ে সে ঠোঁট দুটোকে দাঁতে চেপে ধরেছিল। তীক্ষ্ণ দাঁতগুলোর চাপে ঠোঁট কেটে গিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে।

মুহূর্তের ব্যাপার। হ্যাঁ একটামাত্র মুহূর্ত! ঝড়ের শোঁ-শোঁ শব্দ আর আগুনের লেলিহান শিখাকে ছাপিয়ে ঘোড়ার খুরের খটখট শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যেই উদ্ৰান্ত তেজি ঘোড়াটা প্রাসাদের ধসে-পড়া সিঁড়িটার ওপর হাজির হয়ে পড়ল। তারপরই পিঠের অবস্থানরত সওয়ারটাকে নিয়ে লম্বা একটা লাফ দিয়ে আগুনের রাজ্যে গিয়ে পড়ল। আর ঠিক সে মুহূর্তেই ঝড় থামা শুরু হয়ে গেল। আর তা থামতে থামতে একেবাওে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সেখানে নেমে এলো মৃত্যুর স্তব্ধতা।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সাদাটে আগুন শবাচ্ছাদনের মতো বাড়িটাকে ঢেকে ফেলল।

আর পরমুহূর্তেই অভাবনীয় একটা আলোকরশ্মি দূর থেকে দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ল। ক্রমেই তা দূর থেকে দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

অচিরেই আকাশের গায়ে দেখা দিল ঘন কালো এক টুকরো মেঘ। ক্রমে সেটা এগিয়ে আসতে আসতে প্রাসাদের ছাদের ওপর ভিড় করল। আর সেটা থেকেই মুহূর্তের মধ্যেই সৃষ্টি হলো অতিকায় একটা মূর্তি-সুবিশাল একটা ঘোড়া, ঘোড়ার মূর্তি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *