1 of 2

দ্য আর্ট দ্য ম্যান

দ্য আর্ট দ্য ম্যান

র‍্যাটলবরো রহস্য!

এ রহস্যভেদের ব্যাপারে আমি ঈডিপাস-এর ভূমিকা গ্রহণ করব, আগেই বলে রাখছি।

সেটা ছিল আঠারো সালের গ্রীষ্মের একটা দিন। সে বিশেষ দিনেই রহস্যজনক ঘটনাটা ঘটেছিল।

আমি দুঃখের সঙ্গেই বলে রাখছি যে, রহস্যজনক ঘটনাটার কথা আমি হালকা ভাবেই তুলে ধরছি। সেবার গ্রীষ্মে নগরের সেরা ধনকুবের এবং সম্মানীয় অধিবাসী মি. বার্ণাবাস শাটলওয়াদি সন্দেহজনকভাবে নিরুদ্দেশ হলেন।

এক শনিবার খুব ভোরের কথা মি বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি ঘোড়ার পিঠে চেপে র‍্যাটলবরো থেকে প্রায় পনেরো মাইল দূরবর্তী পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়া হয়েছিলেন। শহরের কাম-কাজ মিটিয়ে সেদিন মাইল রাতেই বাড়ি ফিরবেন বলে গেছেন।

কিন্তু হায়! বাড়ি থেকে রওনা হবার মাত্র দুঘণ্টা পরেই মনিবকে ছাড়াই কেবলমাত্র ঘোড়াটা ফিরে এলো। মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি সঙ্গে করে, ঘোড়ার পিঠে জিনের সঙ্গে যে বস্তাগুলো বেঁধে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন, সেগুলো ছাড়াই ঘোড়াটা হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ির দরজায় হাজির হল।

ঘোড়াটা বাড়ি ফিরেছে বটে, কিন্তু দারুণভাবে আহত। ফোঁস ফোঁস করে হাঁপাচ্ছে, আর মুখ দিয়ে অনবরত ফেণা ঝড়ছে। আর সর্বাঙ্গে কাদায় মাখামাখি। এসব ব্যাপারকে কেন্দ্র করে বেপাত্তা হয়ে যাওয়া মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনের মনে যারপরনাই সন্দেহের বীজ দানা বেঁধে ছিল।

পরদিন, অর্থাৎ রবিবার সকালেও তার পাত্তা না পাওয়ায় শহরের প্রতিটা মানুষ তার খোঁজ পাওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। আর এটাই তো স্বাভাবিক। ভদ্রলোক বাড়ি থেকে রওনা দিতে না দিতেই কর্পূরের মতো উবে গেলেন এটাও তো ভাবা যায় না।

শি: চালর্স গুডফেলো মি. বর্ণাবাস শাটলওয়ার্দির অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। নিরুদ্দেশ বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দিও খোঁজ করার কাজে আগ্রহ মি. চার্লস গুডফেলোর আগ্রহই দেখা গেল সবচেয়ে বেশি। বন্ধুর জন্য তার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হওয়া হওয়াটা তো স্বাভাবিক।

মি. চার্লস গুডফেলো পরিচিত মহলের কাছে বুড়ো চার্লি গুডফেলো বা চার্লি গুডফেলো বলে পরিচিত। অনেকে এদের কোনো একটা বলে সম্বোধন করে।

কিন্তু আসলে ব্যাপারটা খুবই অবাক হবার মতোই বটে। এমনও হতে পারে ‘চার্লি’ নামটার গুণেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, আজ অবধি ‘চার্লি’ নামধারী কোনো ব্যক্তিই আমার চোখে পড়েনি যিনি সদাচারী, সাহসি, মন-খোলা, উদারচেতা আর মিষ্টি-মধুর কণ্ঠস্বরের অধিকারী নন। হয়তো বা চার্লি’ নামটার গুইে এমনটা হয়ে থাকে।

বর্তমানে চার্লি গুডফেলো ব্যাটলবরো শহরে ছয় মাসের বেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আর এখানে এসে বসতি গড়ে তোলার আগে তিনি কোথায় থাকতেন আর কি করতেন এসব কথা কারোই জানা নেই। সত্যি কথা বলতে কি, এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথাও নেই। মাত্র তো দুটা মাস, অথচ এ অত্যল্পকালের মধ্যেই শহরের সব প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানীয় মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হতে ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি।

আর বর্তমানে? বর্তমানে তার মুখের একটামাত্র কথাই হাজার কথার সমান গণ্য হয়। শুধু কি এ-ই? মেয়ে মহলে তিনি একজন রীতিমত চোখের মণি। মেয়েরা তো তার নামে একেবারে অজ্ঞান। তারা একবার তার প্রশংসা শুরু করলে থামতেই চায় না।

গোড়াতেই তো বলেছি মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি শহরের ধনকুবেরদের শিরোমণি আর মান সম্মানও সবচেয়ে বেশি। আর তার সঙ্গে বুড়ো চার্লি গুডফেলোর এমন গলায় গলায় ভাব যে, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় তারা বুঝি সহোদর–এক মায়ের পেটের ভাই।

মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি আর বুড়ো চার্লি গুডফেলো পাশাপাশি, একেবারে লাগোয়া বাড়িতে বসবাস করেন। তবে এও সত্য যে মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি বুড়ো চার্লি গুডফেলোর বাড়িতে খুব কমই যাতায়াত করেন, আর তার বাড়িতে কোনোদিন কিছু মুখে দেন না। তা সত্ত্বেও দুই বন্ধুর, আন্তরিকতা ও ঘনিষ্ঠতায় কোনো ঘাটতি কোনোদিনই লক্ষিত হয়নি।

দুই বন্ধুর মধ্যে হৃদ্যতায় ঘাটতি না হওয়ার অন্য কারণগুলো ছাড়া আসল যেটা তা হচ্ছে, বুড়ো চার্লি গুডফেলো দিনে তিন-চারবার প্রতিবেশী মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির বাড়ি গিয়ে তার খবরাখবর নেন, আর সকালে চা-জল খাবারের ব্যাপারটা সাড়েন। রাতে খাবার নিয়মিত সেখানেই সাড়েন। আহারাদি সারার পর দুই বুড়ো রঙ্গরসিকতা করতে করতে কয় পেয়ালা মদ যে গেলেন তার হিসাব থাকে না।

‘শাতু মার্গো নামক মদ বুড়ো চার্লি গুডফেলো-র খুবই প্রিয়। আর সহজ-সরল সাদামনের মানুষ মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির সব সময় নজর থাকে প্রাণের বন্ধুটি যাতে সাধ মিটিয়ে তার ভালোলাগা মদ গিলে তৃপ্তি লাভ করেন।

এক সন্ধ্যায় দুই বুড়ো টেবিলে মুখোমুখি বসে একের পর এক গ্লাস গলায় ঢেলেই চলেছেন। হিসেবের বাইরে মদ পেটে পড়ায় গৃহকর্তা বুড়ো বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র জ্ঞান বুদ্ধি মদের পরিমাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভোতা হয়ে গেল। তিনি যেন নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে বসলেন। ব্যস, আবেগভরে বন্ধুবর বুড়ো চার্লি গুডফেলোর কাঁধে আচমকা এক থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন–‘শোন বুড়ো চার্লি আসল কথাটা তোমাকে বলেই ফেলছি–জন্মের পর থেকে আপনার মতো এমন ফুর্তিবাজ মানুষ আর দ্বিতীয়টা পাইনি।’

মদের নেশায় অভিভূত বুড়ো চার্লি গুডফেলো আবেগ ভরে বলে উঠলেন–আমিও একই কথা বলতে চাইছি। আপনার মতো এমন বন্ধু হিতৈষী–’

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি বলে ছিলেন– ‘আমাদের বন্ধুত্বের খাতিরে–এ মদটা যখন আপনার এতই প্রিয় তখন শাতু মাগো মদের একটা বড় পেটি আপনাকে উপহার দেব, ঠিক করেছি–মানে উপহার অবশ্যই দেব।’

মুখে খুশির ঝিলিক ফুটিয়ে তুলে বুড়ো চার্লি গুডফেলো সকৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালেন।

মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি বলে চললেন–আপনি আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে নেবেন, আজই শাতু মার্গো-র একটা ডবল পেটির অর্ডার আমি শহরে পাঠিয়ে দেব।’

বুড়ো বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির এ বক্তব্যটার উল্লেখ করার উদ্দেশ্যে, মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির উদারতা ও বন্ধু-প্রীতির পরিচয় প্রদান করা তার দুই বুড়ো বন্ধুর ঘনিষ্ঠতা ও নির্ভেজাল আন্তরিকতার কিছুটা প্রমাণ দেওয়া।

পরের রবিবার সকালে যখন শোনা গেল মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি কোনো চরমতম বিপদে পড়েছেন তখন শোকে সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়লেন তার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু বুড়ো চার্লি গুডফেলো।

বন্ধুবর বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির নিরুদ্দেশের খবরটা শোনামাত্র তার মুখটা মুহূর্তে চকের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার মুখে এমন শোকের ছায়া নেমে এলো যে, নিরুদ্দিষ্ট বুড়োটি যেন তার বাবা-দাদা বা এমনই কোনো নিকট আত্মীয়।

সত্যি কথা বলতে কি, বুড়োর সর্বাঙ্গ এমন থর থর করে কাঁপতে লাগল যেন তিনি হঠাৎ কালা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

বন্ধুর নিরুদ্দেশে বুড়ো চার্লি গুডফেলো শোকে এতই মুষড়ে পড়লেন যে, বন্ধুবরের জন্য কিছু করা বা গভীর মনোযোগ সহকারে কিছু ভাবাই তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র এ কারণেই বন্ধুবর নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন অন্য কাউকে কোনোভাবেই কিছু করতে দিলেন না।

প্রতিবেশী নিরুদ্দিষ্ট মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির খোঁজ করার জন্য নানা রকম প্রস্তাবই বুড়ো চার্লি গুডফেলোর কাছে রাখল। তিনি তাদের উৎসাহ দেওয়ার বদলে দমিয়ে দিতে গিয়ে বললেন ‘শোন এমন ব্যস্ত হয়ে কোনোকিছু করতে যাওয়া বোকামিই হবে। এ পরিস্থিতিতে খোঁজ খবরের চেষ্টা না করে বরং দিন কয়েক মানে দুএক দিন, দুএক সপ্তাহ বা দু এক মাস ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো। দেখাই যাক না শেষপর্যন্ত কি দাঁড়ায় বন্ধুবর মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি নিজে থেকে ফিরে আসেন কি না। আর তিনি নিজেই তার নিরুদ্দেশের ব্যাপার স্যাপার আমাদের কাছে খোলসা করে কিছু বলেন কি না। আমার ভালোই জানা আছে, শোক, তাপ খুবই অসহনীয় হয়ে গেলে অনেকেই এমন অজুহাত খাড়া করে সময় কাটাতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। বুড়ো চার্লি গুডফেলোর ক্ষেত্রেও সময় কাটানোর ব্যাপারটাই প্রাধান্য পেয়েছে।

র‍্যাটলবরোর অধিবাসীরা বুড়ো চার্লি গুডফেলোর ওপর বড়ই আস্থাবান। তাই প্রায় প্রত্যেকেই তার প্রস্তাবটাকে নির্দিধায় মেনে নিল।

শহরের সবাই তার প্রস্তাবটাকে স্বাগত জানালেওনিখোঁজ মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির দুশ্চরিত্র বখাটে ভাইপো কিন্তু কিছুতেই তার প্রস্তাব মেনে হাত-পা গুটিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে মোটেই রাজি নয়। তার একান্ত ইচ্ছা মৃত কাকার খোঁজ করা হোক তার গুণবান এ ভাইপোর নাম পেনিফেদার।

সে বুড়ো চার্লি গুডফেলোর এমন নীরবতার কারণ সম্বন্ধে বলল, গত তিন মাস যাবৎ তার কাকার সঙ্গে বুড়ো চার্লির মতবিরোধ চলছিল। একদিন বুড়ো চার্লি তার কাকার বাড়িতে এসে এমন হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়েছিলেন যে, পালিফেদার দুম করে একটা ঘুষি বসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। ব্যস, বুড়ো মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে গোঙাতে শুরু করেছিলেন।

বন্ধুর ভাইপোর হাতে মার খেয়ে ব্যাপারটাকে কিন্তু হজম করে নিলেন। যাতে সেখানেই ব্যাপারটা চাপা পড়ে যায় সে চেষ্টাই করেন, আর ঘটনাটার ইতিও সেখানেই ঘটে যায়। তবে বন্ধুর বাড়ি ছেড়ে যাবার সময়, পরে দেখে নেব বলে তর্জন গর্জন করতেও ছাড়েননি।

ব্যাটবরোর অধিবাসীরা নিরুদ্দিষ্ট মি. বার্ণাবাস শ্যাটলওয়ার্দি-র ভাইপো পেনিফেদারের পীড়াপীড়িতে সাব্যস্ত করল–কয়েকটা দলে বিভক্ত হয়ে তল্লাসি চালাবে।

শেষপর্যন্ত দেখা গেল বুড়ো চার্লি গুডফেলো অনুসন্ধানকারীদের আগে আগে চলেছেন। আসলে পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে তিনি রাতারাতি মতো পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে এ-কথা খুবই সত্য যে, এ কাজে বুড়ো চার্লি গুডফেলো-র চেয়ে যোগ্য পথপ্রদর্শন অন্য কেউ তো হতেও পারে না। তার চোখ দুটো যে বন বিড়ালের মতো জ্বল জ্বল করে এ কথা কার না জানা আছে?

কিন্তু হায়! পুরো একটা সপ্তাহ ধরে বাইরের আনাচে কানাচে তন্ন তন্ন করে তল্লাসি চালিয়েও ফায়দা কিছু হলো না, নিরুদ্দিষ্ট মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দিকে কোথাও পাওয়া গেল না। তবে তার চলে যাওয়ার পথে কিছু কিছুনিদর্শন পাওয়া গেল যা। অনুসন্ধানকারীদের মনে আশার সঞ্চার করল। কিন্তু কি সেনিদর্শন, তাই না? ঘোড়ার ক্ষুরের ছাপ, যা অনুসরণ করে তারা তিন মাইল পথ চলে গিয়েছিল।

তিন মাইল দূরবর্তী একটা অঞ্চলে পৌঁছে অনুসন্ধানকারীরা থমকে গেল। কারণ সেখান থেকে একটা সরু রাস্তা বেরিয়ে সোজা জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রায় আধমাইল এগিয়ে সরু রাস্তাটা আবার একটা সদর বাজারের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তারা সরু পথটা ধরে ঘোড়ার পায়ের ছাপ অগ্রসর হয়ে একটা জলাভূমির ধারে উপস্থিত হল। জলাভূমিটার বিপরীত পাড়ে ঘোড়ার ক্ষুরের চিহ্নমাত্রও কারো নজরে পড়ল না।

অনুসন্ধানকারী দলটা খোঁজাখুজি করতে করতে এমন একটা জায়গায় হাজির হলো যেখানে নরম মাটির ওপরে লড়াই–দাপাদাপির চিহ্ন দেখতে পেল। আর এও বুঝতে পারল মানুষের চেয়েও বড় আর ভারী কোনো বস্তুকে নরম মাটির ওপর দিয়ে টেনে হিঁচড়ে জলাশয়টার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পানি পর্যন্ত যাওয়ার পর আর কোনো চিহ্নের তো প্রশ্নই ওঠে না।

অনুসন্ধানকারী দলটা আবার নতুন উদ্যমে খোঁজাখুঁজি শুরু করল। দু-দুবার চিরুণি তল্লাসি চালিয়েও কোনোকিছুরই চিহ্ন খুঁজে না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। ঠিক তখনই স্বয়ং ঈশ্বরই যেন বুড়ো চার্লি গুডফেলোর কানে কানে বললেন জলাশয়টার সবটুকু পানি সেঁচে ফেল।

বুড়ো চার্লি গুডফেলোর দলের অন্যান্যদের কাছে প্রস্তাবটা পাড়ামাত্র সবাই সঙ্গে সঙ্গে লুফেনিল। ব্যস, আর দেরি নয়। কোদাল ও বেলচা প্রভৃতি নিয়ে জোর কদমে নালা কাটার কাজ শুরু করে দিল। নালাপথে পানি বেরিয়ে যেতেই কাদাজলে একটা ওয়েস্টকোট নজরে পড়ল। সবাই নিঃসন্দেহ হলো সেটা পেনিফেদারের সম্পত্তি, ওয়েস্ট কোটটা তুলে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেল, সেটার বেশ কিছুটা জায়গা ছিঁড়ে ফেঁসে গেছে আর বেশ কয়েক জায়গায় চাপ চাপ রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে।

ব্যাপারটাকে দলের অনেকেই স্বীকার করেনিল, মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি সেদিন ভোরে শেষবারের মতো বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিলেন তখন এ ভেলেভেটের কোটটা তার গায়েই দেখেছিল। আর মৃতের ভাইপো মি. পেনিফেদারের গায়ে বিশেষ ভোরের পর এ ওয়েস্ট কোটটাকে কেউ দেখতে পায়নি। অথবা তার কাকা নিরুদ্দেশ হবার পর এ ওয়েস্ট কোটটা ভাইপোর গায়ে দেখেছিল এ-কথাও কেউ দৃঢ়স্বরে বলতে পারল না।

মুহূর্তের মধ্যেই মি. পেনিফেদারের মুখটা যখন চকের মতো ফ্যাকাশে হয়ে উঠতে দেখা গেল ঠিক তখনই ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে উঠল।

ব্যাপারটা সম্বন্ধে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে তার মুখ দিয়ে টু শব্দটিও বের হলো না। আর এ কারণেই, দুশ্চরিত্র লম্পট হওয়া সত্ত্বেও যে কয়জন বন্ধু তার পিছন পিছন ঘুর ঘুর করত তারাও এক এক করে তার সংস্রব ত্যাগ করে গেল।

এবার তার বন্ধু ও শত্রুরা একাট্টা হয়ে তাকে কারাগারেনিক্ষেপ করার জন্য জোরদার দাবি জানাতে লাগল। তুমুল হৈ চৈ বাধিয়ে দিল।

আবার অন্যদিকে বুড়ো চার্লি গুডফেলো অধিকতর ভালো-মানুষে পরিণত হয়ে গেলেন। অনেকেই তাকে মহান গুডফেলো বলে সম্বোধন করতেও ছাড়ল না। তিনি নিজে কিন্তু যুবক পেনিফেদারকে সমর্থন করলেন। তিনি জনগণের সন্দেহটাকে আমল দেওয়া তো দূরের ব্যাপার বরং সন্দেহের তীব্রতাকে হ্রাস করার জন্য সর্বতভাবে চেষ্টা চালাতে লাগলেন।

মি. চার্লি গুডফেলোর প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মি. পেনিফেদারের পক্ষ অবলম্বন করে দীর্ঘ ভাষণ দিলেন। এতে তার প্রতিভা এবং মন দুয়েরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখলেও শহরবাসীদের মনে তেমন দাগ কাটতে পারলেন না। তারা এতটুকুও নরম তো হলই না উপরন্তু তাদের বুকে সন্দেহের আগুন যেন বাতাস পেয়ে দ্বিগুণতর করে জ্বালিয়ে দিল।

বুড়ো চার্লি তার বক্তব্যে তিনি একাধিকবার বললেন, ‘যুবক মি. পেনিফেদারে মি. গুডফেলোর উত্তরাধিকারী ব্যস, এতেই তিনি মারাত্মক ভুলটা করে বসলেন। শহরের পরিচিত জনেরা এরকম কোনো কথা স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবেনি। বরং তারা শুধু এটুকুই জানত, এ কুলাঙ্গার ভাইপো ছাড়া নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তির অন্য কোনোই জীবিত আত্মীয় পরিজন নেই আর গত দু বছর আগে তিনি এক নিজের বিষয় আশয় থেকে বঞ্চিত করবেন বলে শাসিয়ে ছিলেন। তবে ইতিমধ্যে তাদের বিবাদ বিসম্বাদ মিটে গেছেই বলে তারা নিঃসন্দেহ হয়েছিল।

বুড়ো চার্লির বক্তব্য তাদের বিশ্বাসে আঘাত হানল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, তবে কিনিরুদ্দিষ্ট বুড়ো কেবলমাত্র লোক দেখানোর জন্যই ওসব কথা বলতেন? ব্যস, এটুকুই? এমন একটা প্রশ্ন সবার মনে টক্কর মারতে লাগল, এ আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে লাভবান কে হবে? কুই বোনো? এ প্রশ্নটাই বুঝি যুবক মি. পেনিফেদারের কপালে অপরাধের ছাপ এঁকে দিল যাকে ওয়েস্টকোটটার চেয়েও এ মুহূর্তে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

যুবকটার কাকা মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি তার নামেই উইল করে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ভয় দেখিয়েছলেন। বোধহয় ভয়টাকে বাস্তবায়িত করতে উইলটাকে আর পরিবর্তন করা হয়ে ওঠেনি। পরিবর্তন করা হলে যুবকটার দিক থেকে সম্ভাষিত হত্যাকান্ডের একমাত্র উদ্দেশ্য হত বদলা নেবার আকাঙ্ক্ষা। তবে এক্ষেত্রেও কিন্তু কাকার মন জয় করে নিজের স্বার্থরক্ষার প্রত্যাশা অবশ্যই থাকত।

এখন ব্যাপার হচ্ছে উইলটা অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও পরিবর্তনের আশঙ্কা ভাইপোর মনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। আর এটাই খুনের আগ্রহটাকে জোরদার করে তুলল।

এবার ব্যাটবরো শহরের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান নাগরিকরা ভাইপোকেই খুনের ব্যাপারে দায়ী করল। ফলে যুবক মি. পেনিফেদারকে হাতকড়া পড়িয়ে কারাগারে চালান করে দেওয়া হল। এবার আরও কিছুক্ষণ ধরে সে অঞ্চলটাতে চিরুণি তল্লাসি চালিয়ে হতাশ হয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

সন্দেহটা আরও অনেকাংশে বেড়ে গেল।

বুড়ো চার্লি গুডফেলো আগে আগে হাঁটছেন। হঠাৎ উপুড় হয়ে ঘাসের উপর থেকে তিনি যেন কি বস্তু কুড়িয়ে নিলেন। আরও লক্ষ্য করা গেল, সেটাকে উৎসাহের সঙ্গে মুহূর্তের জন্য দেখে নিয়েই ঝটপট কোর্টের বুক-পকেটে চালান করে দিয়ে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলেন।

ব্যাপারটা সবার নজরে পড়ে যাওয়ায় সেটা তাকে লুকিয়ে ফেলতে বাধা দিল। ব্যাপারটা এবার সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, ঘাসের ওপর থেকে অতর্কিতে তুলে নেওয়া বস্তুটা একটা ছুরি–স্পেনীয় ছুরি। আর কম হলেও ডজনখানেক লোক চিনে ফেলল, ছুরিটার মালিক যুবক পেনিফেদার। আর অস্বীকার করার উপায়ও তো নেই, সেটার হাতলে তার নামের আদ্যক্ষরগুলো যে জ্বল জ্বল করছে। আর ছুরির ফলাটা পুরোপুরি খোলা, সেটার গায়ে শুকনো রক্তও সবার চোখে পড়ল।

নিরুদ্দিষ্ট বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির সুযোগ্য ভাইপোর অপরাধ সম্পর্কে কারো মনে আর তিলমাত্র সন্দেহও রইল না। উপযুক্ত তদন্তের জন্য তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হল। এখানেই প্রমাণ হয়ে যাবে সে দোষী, কি নির্দোষ।

এবার ঘটনাটা আরও একটা বিশেষ দিকে খুব বেশি মোড় নিল। মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি নিরুদ্দেশ হওয়ার দিন সকালে মি. পেনিফেদার কোথায় ছিল জিজ্ঞাসা করা হল। সে আমত আমতা করে হলেও জবাব দিতে গিয়ে সাফ সাফ জবাব দিল, জলাশয়টার যেখানে বুড়ো চার্লি গুডফেলোর অবর্ণনীয় বুদ্ধির ফলে রক্তাপ্লুত ওয়েস্টকোটটা যেখানে কাদা-মাখামাখি অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেখানে বন্দুক নিয়ে হরিণ শিকার করতে গিয়েছিল আর খুব ভোরেই বাড়ি ছেড়েছিল।

বুড়ো চার্লি গুডফেলোর ব্যাপারটাকে চাপা রাখতে উৎসাহি নন। পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে তাতে এ অপচেষ্টা করতে গেলে ফেঁসে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।

বুড়ো চার্লি গুডফেলো এবার বলতে লাগলেন–‘আমার বন্ধুবর মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি নিরুদ্দেশ হবার আগের বিকেলে তার ভাইপো মি. পেনিফেদারকে বলেছিলেন, আমি নিজের কানে শুনেছি শোন, আগামীকাল তিনি শহরে যাবেন। যেখানে তিনি ‘ফার্মারস অ্যান্ড মেকানি’ ব্যাঙ্কে অনেকগুলো ফ্র জমা দেবেন। আর ভাইপোকে স্পষ্টই জা নিয়ে দেন যে, মূল উইলটার পরিবর্তন করতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আর যে নতুন উইল করবেন তাতে একটা শিলিংও তাকে দেবেন না।

ম্যাজিস্ট্রেট এবার আসামি মি. পেনিফেদারকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সাক্ষী চার্লি গুডফেলো তার সাক্ষ্যে যা-কিছু বলেছেন তা কী সত্য?

আসামি সবাইকে অবাক করে দিয়ে, কিছুমাত্রও দ্বিধা না করে স্পষ্টভাষায় বললেন–‘সত্য! সবই সত্য!

ম্যাজিস্ট্রেট এবার মৃত বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির বাড়িতে আসামী-পেনিফেদারের থাকার ঘরটা তল্লাসি করার জন্য দুজন পুলিশকে পাঠালেন।

কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ দুজন, গেরুয়া রঙের, লোহা বাঁধানো খুবই পরিচিত একটা ডায়েরী নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফিরে এলো। মৃত বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি বাহু ধরে এটাকে সঙ্গে সঙ্গে রাখতেন। সেটার ভেতরে মূল্যবান যা-কিছু ছিল সবই আগেভাগেই লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেট বহু চেষ্টা করেও বন্দির কাছ থেকে সেগুলো সম্বন্ধে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য বের করতে পারলেন না। আর তিনি পুরো ব্যাপারটাকে বেশ জোর দিয়েই অস্বীকার করল।

পুলিশ দুজন, মৃত বৃদ্ধ বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির বিছানার তলা থেকে উদ্ধার করে আনা একটা জামা আর গলায় জড়াবার রুমাল যার গায়ে তার নামের আদ্য অক্ষরগুলো। লেখা রয়েছে আর দুটোতেই মৃতের শুকনো রক্ত মাখা রয়েছে।

এমন সব ঘটনা যখন ঘটে চলেছে ঠিক তখনই একদিন প্রচার হল, মৃত বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র ঘোড়াটা আঘাতজনিত কারণে মারা গেছে।

ঘোড়াটার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ামাত্র মৃত ব্যাক্তির বন্ধু বুড়ো চার্লি গুডফেলো বললেন–‘ঘোড়াটার পোস্ট-মর্টাম করানো দরকার।’

তার আগ্রহে ঘোড়াটার পোস্টমর্টেম করানো হল। হয়তো আসামির অপরাধ সম্বন্ধে কারো মনে যাতে কোনো দ্বিধা না থাকে, আসামীর অপরাধ প্রমাণ করানোর অত্যুগ্র আগ্রহের জন্যই তিনি যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ঘোড়াটার বুকের ভেতর থেকে অসম্ভব একটা কার্তুজ বের করলেন।

এবার মৃতের ভাইপো মি. পেনিফেদারের বন্দুকের সঙ্গে কার্তুজটা মিলিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল সেটা ঠিক মাপে মাপে মিলে যাচ্ছে। আর এও দেখা গেল শহরের অন্য সবার বন্দুকে ব্যবহৃত কার্তুজের তুলনায় অনেক বড়।

ঘোড়ার বুক থেকে কার্তুজটা পাবার পর তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট অন্য কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য না নিয়েই আসামীকে বিচারের জন্য আদালতের কাঠগড়ায় তোলার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। যারা তার জামিনের জন্য এগিয়ে এলো তাদের কোনো কথা কানেই তুললেন না।

এদিকে মৃতের বন্ধু বুড়ো চার্লি গুডফেলো কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসামির জামিনের জন্য সাধ্যাতীত প্রয়াস চালাতে লাগলেন। যে কোনো পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তিনি নিজে জামিন থাকতে সম্মতি জানালেন।

কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত সহানুভূতির জন্য বুড়ো চার্লি গুডফেলো-র মন থেকে মুছেই গেল যে, এক ডলার মূল্যের সম্পত্তিও পৃথিবীর কোথাও তার নেই।

বিচার শুরু হল। বিচারের ফলাফল কি হতে পারে সে সম্বন্ধে আগেই ধারণা করা গিয়েছিল। সাক্ষ্য প্রমাণগুলো এতই জোরদার যার ফলে জুরিরা সহজেই একমত হয়ে রায় দিলেন অভিযুক্ত মি. পেনিফেদার দোষী–হত্যার দায়ে অপরাধী।

একটু পরেই বেচারা যুবক মি. পেনিফেদারের প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে গেল। কাঠগড়া থেকে নামিয়ে অনমনীয় আইন কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত অধীর প্রতীক্ষায় দিন গণনার জন্য তাকে কাউন্টি জেলে চালান করে দেওয়া হল।

বুড়ো চার্লি গুডফেলো এমন একটা মহৎ কাজ সম্পন্ন করার জন্য শহরের মানুষদের মাথার মণিতে পরিণত হয়ে গেলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে তুঙ্গে উঠে গেল।

শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বুড়ো চার্লি গুডফেলোকে আমন্ত্রণ জানাতে লাগল। আবার তিনি কার্পণ্য ভুলে গিয়ে অনেককে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জা নিয়ে মনের অন্তহীন আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলেন।

কিন্তু বুড়ো চার্লি গুডফেলো যখন শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে অনাবিল আনন্দের স্রোতে গা-ভাসিয়ে দিয়েছেন ঠিক তখনই একটা ঠিকানা হাতে পেলেন যা তার মধ্যে অভাবনীয় বিস্ময় উৎপাদন করল। ঠিকানাটা হচ্ছে–চার্লস গুডফেলো, এস্কোয়ার, ব্যাটলবরো–প্রেরক–এইচ. এফ. বি. অ্যান্ড কোং শাত, সার এ-নং ১-৬ ডজন বোতল (১/২ গ্রাম)।

সুপ্রিয় চার্লস গুডফেলো, এস্কোয়ার,

মহাশয়,

আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন পত্ৰলেখক মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি প্রায় দুমাস আগে যে অর্ডার পাঠিয়েছিলেন সে অনুযায়ী আজ সকালে হরিণচিহ্নসমেত ও বেগুনি সিলমোহর অঙ্কিত শাতুমার্গো-র একটা ডবল পেটি আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম। সেটির নম্বর আর চিহ্ন নিচে উল্লেখ করা হল।

আপনার বিশ্বস্ত
হগস ফ্লস বগস অ্যান্ড কোং
টাউন, ২১ জুন, ১৮

পুঃ এ চিঠিটা আপনার হাতে পৌঁছাবার পরদিন পেটিটা মালগাড়িযোগে আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। মি. শাটলওয়ার্দিকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাবেন।

এইচ. এফ. বি. অ্যান্ড কোং।

সত্যি কথা বলতে কি, বুড়ো চার্লি গুডফেলো মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র আকস্মিক মৃত্যুর পর তার প্রতিশ্রুতি শাতু মার্গোর পেটি পাবার আশা মন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলে দিয়েছিলেন। অতএব এরকম ধারণার বশবর্তী হওয়ার জন্যই তিনি হগস ফ্রগর্স হগস অ্যান্ড কোম্পানির চিঠিটাকে একটা বিশেষ কৃপার ব্যাপার প্রতীক হিসেবেই জ্ঞান করলেন।

শাতুমাগোর ডবল পেটি হস্তগত হওয়া উপলক্ষে তিনি আনন্দে এতই অভিভূত ও উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়লেন যে, নিজেকে সামাল দিতে না পেরে পরদিন ভোর হতে না হতেই ইয়ার দোস্তদের সান্ধ্য-ভোজসভায় যোগদানের জন্যনিমন্ত্রণ করতে মেতে গেলেন। আসলে বন্ধুবর বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র উপহারস্বরূপ প্রদত্ত মদগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার করাই তার এ আকস্মিক ভোজসভার আয়োজন। তবে এও সত্য যে, আমন্ত্রণলিপিতে তিনি কিন্তু ভুলেও এ-কথাটা উল্লেখ করলেন না। কিন্তু কেন যে তিনি প্রসঙ্গটা চেপে গেছেন, দীর্ঘসময় ধরে ভাবনা-চিন্তার মাধ্যমেও আমার পক্ষে তার কারণ বের করা সম্ভব হলো না।

রাত কাটল। পূর্ব আকাশে ভোরের আলো ফুটে উঠল। এলো পরদিনের সকাল–বহু প্রতীক্ষিত সকাল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী মি. চার্লি গুডফেলোর বাড়ির সদর দরজায় ছোট-বড় বহু গাড়ি এক এক করে জড়ো হতে আরম্ভ করল। সেগুলো থেকে নেমে এলেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সত্য গোপন করব না, নিমন্ত্রিত শহরের অর্ধেক অতিথির মধ্যে আমিও তার বাড়িতে আসন লাভে ধন্য হলাম।

কিন্তু শাতু মার্গোর পেটিটা গৃহকর্তাকে খুবই অস্বস্তি ও বিব্রতের মধ্যে ফেলে এক ঘণ্টা দেরি করে তার বাড়িতে এলো। তবে শেষ-মেষ সেটাকে বাহকেরা বাড়ির দরজায় নামাল সেটা বিশাল একটা পেটি।

পেটিটা দেখামাত্রইনিমন্ত্রিত অতিথিদের পুরো দলটাই ধরতে গেলে আনন্দে উচ্ছ্বাসে নাচানাচি জুড়ে দিলেন।

আলোচনার মাধ্যমে সবার মতো অনুযায়ী স্থির হলো পেটিটাকে খাবারের টেবিলের ওপর তুলে তার ভেতর থেকে মদের বোতলগুলোকে টেবিলে সাজিয়ে ফেললেই ভালো হবে। এতে পরিবেশনের সুবিধা যে হবে এতে কোনো সন্দেহই নেই।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই কাজ শুরু করা হল। আমিও অন্য সবার সঙ্গে কাজে মেতে গেলাম।

অনেক কষ্টে চাঙা করে তুলে পেটিটাকে খাবারের টেবিলের ওপর তুললাম।

ইতিমধ্যেই বুড়ো চার্লি গুডফেলোর মদের নেশা রীতিমত চড়ে গেছে। মুখটা অস্বাভাবিক লাল হয়ে উঠেছে। তিনি একটা ডিফেন্টারকে টেবিলের ছাউনির ওপর সজোরে ঠুকতে ঠুকতে বললেন–‘পেটি থেকে বোতলগুলো বের করার সময় সবাই ধৈর্য্য ধরে হৈ হট্টগোল না করে মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন।’

পেটিটার ডালা খোলার দায়িত্ব আমার ওপর বর্তাল বলে আমি ভেতরে ভেতরে খুবই খুশি হয়ে কাজ শুরু করলাম।

একটা বাটালি পেটিটার গায়ে বসিয়ে হাতুড়ি দিয়ে মাত্র কয়েক ঘা দিতেই দুম্ করে ডালাটা খুলে ছিটকে মেঝেতে গিয়ে পড়ল। ঠিক সে মুহূর্তেই পেটিটার ভেতরে অতর্কিতে যন্ত্রচালিতের মতো এক লাফে উঠে গৃহকর্তার মুখোমুখি বসে পড়ল মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র রক্তাপুত, ক্ষত-বিক্ষত প্রায় গলিত মৃতদেহটা। আর তার মুমূর্ষ, অচঞ্চল চোখের মণি দুটো মেলে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে বুড়ো চার্লি গুডফেলারের দিকে তাকালেন। গম্ভীর, অথচ স্পষ্ট স্বরে ধীর-স্থির গলায় বললেন–‘তুমিই সেই লোক! তুমিই সে লোক!’

ব্যস, আর কোনো কথা নেই। পর মুহূর্তেই তিনি পেটিটার পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ার মতো উঠে টেবিলটার ওপর পরম তৃপ্তিতে সটান শুয়ে পড়লেন। তার হাত-পা গুলো–সর্বাঙ্গ অস্বাভাবিক রকম কাঁপতে লাগল।

এবার যে ঘটনা ঘটল তা ভাষায় বর্ণনা করা নিতান্তই সাধ্যাতীত। ঘরের ভেতরে নিমন্ত্রিত অতিথি অভ্যাগতরা দরজা-জানালা দিয়ে ঘর ছেড়ে যাবার জন্য এমন ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি জুড়ে দিল, যাকে একমাত্র দক্ষযজ্ঞের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। জনাকয়েক মোটাসোটা লোক তো আতঙ্কে সংজ্ঞা হারিয়ে মেঝেতে পড়ে মৃগী রোগীর মতো গোঙাতে শুরু করে দিল।

হৈ-হট্টগোল চিল্লাচিল্লির প্রথম ধাক্কাটা সামলে নেবার পর কিছুটা প্রকৃতিস্থ হবার পর এবার সবার দৃষ্টি গেল গৃহকর্তা বুড়ো চার্লি গুডফেলোরের দিকে। একটু আগে যার মুখে জয়ের অফুরন্ত আনন্দ আর মদের নেশায় সুস্পষ্ট রক্তিম ছোপ বিরাজ করছিল, এখন তা-ই জমাটবাধা আতঙ্কে চকের মতো ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে, মৃত্যুর চেয়েও অনেক, অনেক যন্ত্রণার ছাপ প্রকট হয়ে পড়েছে। তার মুখের আকস্মিক পরিবর্তনটুকু হাজার বছর পৃথিবীতে বেঁচে থাকলেও আমার পক্ষে ভোলো সম্ভব হবে না।

মিনিট কয়েক তিনি পাথরের মূর্তির মতো এমন নিশ্চল-নিথরভাবে বসে রইলেন যে, তিনি যেন নিজেরই খুনি আত্মার ধ্যানে মগ্ন। আকস্মাৎ বিদ্যুতের চমকের মতো তার মনের ভাবটা সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে গেল। তিনি অতর্কিতে টেবিলের ওপর উঠে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর দ্রুতকণ্ঠে সে নির্মম-নিষ্ঠুর জঘন্যতম অপরাধের স্বীকারোক্তি ব্যক্ত করতে লাগলেন যার জন্য অভিযুক্ত হয়ে বেচারা যুবক মি. পেনিফেদার অন্ধকার কারাকক্ষে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে চলেছে।

বুড়ো চার্লি গুডফেলো স্বতঃউৎসারিত কণ্ঠে যে স্বীকারোক্তি দিলেন তা সংক্ষেপে মোটামুটি এরকম–বুড়ো চার্লি গুডফেলো সেদিন তার বন্ধু মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি পিছন পিছন জলাভূমিটা পর্যন্ত যান। সেখানে পৌঁছেই অতর্কিতে তার ঘোড়াটাকে গুলিবিদ্ধ করেন। তারপর অশ্বারোহীকে বন্দুকের কুঁদোর আঘাতে আঘাতে খতম করে দেন। তার পকেট থেকে ডায়েরিটা বের করে আত্মসাৎ করেন।

তারপর ঘোড়াটা মারা গেছে মনে করে সেটাকে শরীরের সর্বশক্তি নিয়োগ করে টানতে টানতে ঝোঁপটা পর্যন্ত নিয়ে যান। এবার মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি-র লাশটাকে নিজের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখলেন।

মৃতদেহটার তল্লাশি চালাতে গিয়ে রক্তমাখা ছুরি, ওয়েস্টকোট, বুলেট আর ডায়েরি যেটা, সেখানে পাওয়া গেছে তিনিই সেগুলোকেই গোপনে যথাস্থানে রেখেছেন। তার এ কাজের উদ্দেশ্য একটাই ছিল যুবক মি. পেনিফেদারের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে মনের ঝাল মেটানো।

আর রক্তাপ্লুত জামা আর রুমালটাকে আবিষ্কারও তো তিনি নিজেই করেছেন।

বুক-কাঁপানো খুনের বর্ণনাটা দিতে গিয়ে বেচারা খুনির কণ্ঠস্বরটা মাঝে-মাঝেই বন্ধ হয়ে আসতে চায়, কোনো অদৃশ্য হাত যেন কণ্ঠটা থেকে চেপে ধরে। খুনের ঘটনাটার আদ্যোপান্ত বিবরণ দেবার পর তিনি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। কাঁপা-কাঁপা পায়ে টেবিলটা থেকে সামান্য পিছিয়ে যেতেই আচমকা মেঝেতে আছড়ে পড়লেন। ব্যস, তার মৃত্যু হল।

তার মুখ থেকে যে উপায় অবলম্বন করে সময়মত স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়, তা নেহাৎই সহজ-সরল।

সত্যি কথা বলতে কি, বুড়ো চার্লি গুডফেলোর মাত্রাতিরিক্ত উদারতা গোড়া থেকেই আমার মনে সন্দেহের সঞ্চার করেছিল।

আমার উপস্থিতিতেই যুবক পেনিফেদার তাকে আঘাত হেনেছিল। তখন তার মুখে মুহূর্তের জন্য হলেও যে শয়তানীর ছাপটা সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছিল, তা লক্ষ্য করেই আমার মধ্যে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মেছিল, যে প্রতিহিংসার হুমকি তিনি দিলেন তখন একটু মওকা পেলেই তিনি তাকে বাস্তবায়িত করবেনই করবেন। তাই শহরের ভালো-মানুষ বুড়ো চার্লি গুডফেলো-র প্রতিটা পদক্ষেপের দিকে আমি কড়া নজর রেখে চলতে লাগলাম। তাই আমার চোখে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যা-কিছু ধরা পড়ল, সবকিছুর মূলে যে তিনি নিজেই তা লক্ষ্য করলাম।

কিন্তু সবচেয়ে বেশি করে যে ঘটনাটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল, তা হচ্ছে ঘোড়ার বুক থেকে উদ্ধার করা বন্দুকের কার্তুজটা।

র‍্যাটলবরো শহরের মানুষ ভুলে গেলেও আমার মাথা থেকে কিন্তু মুহূর্তের জন্যও মুছে যায়নি আহত ঘোড়াটার গায়ে একটা গর্ত ছিল। বন্দুকের কার্তুজের গর্ত। সে গর্তটার বিপরীত দিকেও আর একটা গর্ত ছিল। কাতুর্জটা বেরিয়ে যাওয়ার গর্ত। কিন্তু সেই বেরিয়ে যাওয়া কার্তুজটাই আবার ঘোড়াটার বুক থেকে পাওয়া গেল, তখন নিঃসন্দেহ হলাম, আহত ঘোড়াটার আবিষ্কর্তা নিজেই উদ্যোগি হয়ে গোপনে সেটাকে ঘোড়াটার ক্ষতস্থানে গুঁজে দিয়েছিলেন।

কার্তুজের ব্যাপারটাই রক্তাপ্লুত জামা আর রুমালের দিকে আমার দৃষ্টিকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করল। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিঃসন্দেহ হলাম, সেগুলো রক্ত অবশ্যই নয়, নিছকই লাল মদ।

এবার এরকম সব চিন্তা-ভাবনা মাথায় নিয়ে যখন কৃপণ বুড়ো চার্লি গুডফেলো দরাজ হাত, অর্থাৎ অকৃপণ হাতে দান ধ্যান শুরু করে দিয়েছেন দেখলাম, ঠিক তখনই আমার মনে সন্দেহটা আরও বদ্ধমূল হয়ে উঠল।

আমি এবার তলে তলে মৃত বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দির মৃতদেহটা তল্লাস করতে জোর মেতে গেলাম। কোথায়, কোনোদিকে তল্লাসির কাজে বেশি জোর দিলাম, তাই না? বুড়ো চার্লি গুডফেলোক সে দিকে আর অনুসন্ধানকারী দলকে নিয়ে যাননি, সে দিকে, তৎপরতার সঙ্গে তল্লাসি চালাতে চালাতে কয়েক দিন পরেই একটা শুকনো কুয়া আমার চোখে পড়ল। দেখলাম, সেটার মুখটা ঝুলে-পড়া ডালপালায় চাপা পড়ে প্রায় চোখের আড়ালে পড়ে রয়েছে। কেমন যেন সন্দেহ হল। ডালপালা সরিয়ে কুয়াটার ভেতরের দিকে চোখ ফেলতেই আমি রীতিমত যন্ত্রচালিতের মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখলাম, কুয়োর ভেতরে ক্ষত-বিক্ষত বীভৎস ও রক্তাপ্লুত একটা মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। সেটা এতই ভয়ালদর্শন হয়ে পড়েছে যে, এক ঝলকে দেখামাত্রই আমার শরীরের সবকটা স্নায়ু একই সঙ্গে ঝনঝ নিয়ে উঠল। সর্বাঙ্গ থর থরিয়ে কাঁপতে লাগল। যাক, আমার বাঞ্ছিত মৃতদেহটা হাতের মুঠোয় পেয়ে যাওয়ায় আমি খুবই আশান্বিত হলাম।

আর কয়টা দিন আগে ঘটনাচক্রে দু-বুড়োর কিছু কথাবার্তা আমার কানে এসেছিল। আলাপ-আলোচনার ফাঁকে বুড়ো চার্লি গুডফেলো গৃহকর্তা বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দিকে খুশি করতে গিয়ে দুম করে একটা ডবল পেটি শাতুমার্গো উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেন আমি তা স্পষ্ট শুনেছিলাম। সে কথাটাকে বাস্তবায়িত করে আমার উদ্দেশ্যসিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে নিলাম।

এবার আমার কাজ হলো মাছের একটা বড়সড় ও শক্ত তিমির হাড় জোগার করা। সহজেই পেয়েও গেলাম। এবার সেটাকে মৃতদেহটার গলা দিয়ে ঢুকিয়ে দিলাম। তারপর মদের একটা পুরনো ডবল পেটির ভেতরে মৃতদেহটাকে ভাঁজ করে এমনভাবে পেটিটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম যাতে ডালাটা আলগা হওয়ামাত্র তিমির হাড়টার সঙ্গে মৃতদেহটাও স্প্রিংয়ের মতো তড়া করে সোজাভাবে বসে পড়ে। এবার পেরেক দিয়ে ডালাটা এঁটে দিলাম।

ব্যাপারটা যে এমন ঘটবে, পেটির ডালাটা আলগা হওয়ামাত্র মৃতদেহটাও সোজা হয়ে বসে পড়বে, আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম। কার্যত হয়ও ঠিক তাই।

যা-ই হোক, পেটিটার মধ্যে মৃতদেহটা ভাঁজ করে ঢুকিয়ে ডালাটা বন্ধ করে দিলাম। তাতে চিহ্ন আঁকলাম, নম্বর লিখলাম আর স্পষ্টাক্ষরে ঠিকানাটাও লিখে ফেললাম। এবার মৃত মি. বার্ণাবাস শাটলওয়ার্দি নিয়মিত মদ কেনেন, এমন একটা দোকানের নামে একটা চিঠি লিখে আমার চাকরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করে রাখলাম, আমার সবুজ সঙ্কেত পাওয়ামাত্র সে যেন একটা ঠেলাগাড়ি ভাড়া করে পেটিটাকে মি. চার্লি গুডফেলোর বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছে দেয়।

তবে এও সত্য যে, মৃতদেহের মুখ দিয়ে যে সব কথা আমি উচ্চারণ করাব বলে মনস্থ করেছিলাম তার জন্য আমাকে নিজেরই কণ্ঠস্বর উচ্চারণের ওপর নির্ভর না করে উপায় ছিল না।

আর বেচারা হত্যাকারীর বিবেকের ওপর তার ফলাফলের জন্য আমাকে নির্ভর করতে হয়েছিল। এভাবে আমি পুরো ব্যাপারটাকে একের পর এক ধাপে বিভক্ত করে নিলাম।

আমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়ে গেল অদৃষ্টবিড়ম্বিত মৃতের ভাইপো যুবক মি. পেনিফেদারের মুক্তির ব্যবস্থা করলাম। সে তার হকের পাওনা উত্তরাধিকাসূত্রে তার কাকার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হল। সে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পথে জীবনযাত্রা শুরু করল। এবার, থেকে সে সুখ-শান্তিতে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাত্রানির্বাহে মন দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *