০১৭. প্ৰদ্যুম্নির সহিত শাল্বের যুদ্ধ

১৭শ অধ্যায়

প্ৰদ্যুম্নির সহিত শাল্বের যুদ্ধ

শ্ৰীকৃষ্ণ কহিলেন, “রুক্মিণীনন্দন প্ৰদ্যুম্ন বর্ম্মিত [বর্ম্মাচ্ছাদিত—অঙ্গরক্ষণীদ্বারা আবৃত] অশ্বগণযুক্ত কাঞ্চনরথে আরোহণপূর্ব্বক ব্যায়তানন [মুখব্যদানপূর্ব্বক আগত] শমনের ন্যায় মকরধ্বজ উত্তোলন করিয়া শক্রসমক্ষে গমন করিল। খড়্গবূণধারী, বদ্ধগোধাঙ্গুলিত্ৰ [গোধাচর্ম্মনির্ম্মিত অঙ্গুলিত্রাণ— দস্তানা], মহাবীর প্রদ্যুম্ন বিদ্যুতের ন্যায় প্রভাসম্পন্ন চাপ আস্ফালন ও তাঁহাতে টঙ্কার প্রদানপূর্ব্বক সৌভবাসী সমস্ত দৈত্যদলকে মোহিত করিল। প্ৰদ্যুম্ন তখন এরূপ চতুরতাসহকারে শক্ৰগণের প্রতি বাণবর্ষণ ও শরাসনে শরসন্ধান করিতে লাগিল যে, কেহই তাহার ভেদ [অবকাশ-বিরাম] বোধ করিতে পারিল না। তৎকালে তাহার মুখবর্ণ-ব্যত্যয় বা গাত্ৰচালনা কিছুই লক্ষিত হয় নাই; কেবল তাহার সিংহের ন্যায় গভীর গর্জ্জন-শ্রবণে অদ্ভুত বীৰ্য্য প্রকাশ পাইতে লাগিল। কাঞ্চনময় ধ্বজযষ্টির অগ্রভাগে বিরাজমান, ব্যায়তানন, সমস্ত জলজন্তু অপেক্ষা ভয়ানকাকার কৃত্রিম মকরসন্দর্শনে শাল্বরাজের সৈন্যসকল সাতিশয় সন্ত্রন্ত হইল।

“তখন অরতিনিপাতন প্ৰদ্যুম্ন যুদ্ধাভিলাষে শাল্বের সমীপে সত্বরে সমুপস্থিত হইল। মদমত্ত শাল্ব প্ৰদ্যুম্নের আগমনে নিতান্ত অসহিষ্ণু হইয়া ক্ৰোধাভরে কামচারী সৌভপুর হইতে অবরোহণপূর্ব্বক তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে আরম্ভ করিল। পূর্ব্বে বলির সহিত ইন্দ্রের যেরূপ যুদ্ধ হইয়াছিল, এক্ষণে মহাবীর শাল্ব ও প্ৰদ্যুম্নের তদ্রূপ তুমুল সংগ্রাম হইতে লাগিল। মহাবলপরাক্রান্ত শাল্ব মায়ানির্ম্মিত সুবর্ণময় ধ্বজপতাকাশালী রথে আরোহণপূর্ব্বক প্ৰদ্যুম্নের উপর শরনিক্ষেপ করিলে প্ৰদ্যুম্নও তাঁহাকে পরাভব করিবার বাসনায় বেগে বাণবর্ষণ করিতে লাগিল। সৌভরাজ সেই সকল শর অনায়াসে সহ্য করিয়া আমার পুত্ৰ প্ৰদ্যুম্নের উপর অগ্নিসদৃশ প্রদীপ্ত বাণ-সমুদয় নিক্ষেপ করিল। প্ৰদ্যুম্ন অনায়াসে সেই সমস্ত শর ছেদন করিলে শাল্ব পুনরায় বাণবৰ্ষণ করিতে লাগিল। তখন রুক্মিণীনন্দন প্ৰদ্যুম্ন শাল্বরাজের শরে সমুদ্বেজিত হইয়া সত্বর তাহার উপর এক মর্ম্মভেদী বাণ নিক্ষেপ করিল। অননন্তর মর্ম্মভেদী শর সত্বর বর্ম্মভেদ করিয়া শাল্বরাজের হৃদয়ে প্রবিষ্ট হইবামাত্র সে মূর্চ্ছিত ও নিপতিত হইল। শাল্বরাজ বিচেতন হইয়া নিপতিত হইলে অন্যান্য দানবেন্দ্ৰগণ পদাঘাতে বসুন্ধরাকে বিদীর্ণ করিয়া বেগে রণস্থল হইতে পলায়ন করিতে লাগিল এবং সৈন্যগণ হাহাকার করিয়া উঠিল। মহাবল পরাক্রান্ত শা্রল্ব কিয়ৎক্ষণ পরে চেতনাপ্রাপ্ত হইয়া গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক প্ৰদ্যুম্নের জক্ৰদেশে [চিবুকের নিম্ন অংশ] তীক্ষ্ন শর-সমুদয় নিক্ষেপ করিতে লাগিল। মহাবাহু প্ৰদ্যুম্ন শাল্বের বাণে জর্জ্জরিত ও মূর্চ্ছিতপ্রায় হইল। সৌভাধিপতি তাহার অবস্থা-সন্দর্শনে সাতিশয় প্রফুল্ল হইয়া দিগন্তব্যাপী ঘোরতর সিংহনাদপূর্ব্বক পুনরায় সত্বর তাহার উপর তীক্ষ্ন বাণসকল নিক্ষেপ করিল। প্ৰদ্যুম্ন সমরাঙ্গনে শাল্বের শরে অনবরত আহত হইয়া একেবারে নিশ্চেষ্ট ও মোহিত হইয়া পড়িল।”