০১৪. দূতে কৃষ্ণের অনুপস্থিতি-হেতুনির্দেশ— শাল্বের সৌভনগর বিনাশ

১৪শ অধ্যায়

দূতে কৃষ্ণের অনুপস্থিতি-হেতুনির্দেশ— শাল্বের সৌভনগর বিনাশ

রাজা যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে যদুবংশাবতংস! তুমি কি নিমিত্ত আনর্ত্তদেশে অনুপস্থিত ছিলে ও কোন্‌ স্থানেই বা প্রবাস করিয়া কি কি কাৰ্য্য সাধন করিলে?” কৃষ্ণ কহিলেন, “হে ভরতশ্রেষ্ঠ! শাল্বের সৌভনগর বিনাশ করিবার নিমিত্ত গমন করিয়াছিলাম, সেই কামচারী নগর উৎসন্ন করিয়া আসিতেছি। এক্ষণে তাহার কারণ শ্রবণ করুন। আপনি রাজসূয়-যজ্ঞে আমাকে অর্ঘ্যদান করিলে, অতি-তেজস্বী দমঘোষনন্দন শিশুপাল রোষপরবশ হইয়া তাহা সহ্য করিতে না পারাতে আমি তাহাকে তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট করিয়াছিলাম। আমি খাণ্ডবপ্রস্থে থাকিতে থাকিতেই সৌভরাজ শাল্ব শিশুপালবধবার্ত্তা শ্রবণ করিয়া সাতিশয় রোষাবেশে অধীশ্বর-শূন্য দ্বারকানগরী আক্রমণ করিলে বৃষ্ণিবংশীয় কুমারগণ তাহার সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল; কিন্তু নৃশংস শাল্ব সেই সকল তরুণবয়স্ক বৃষ্ণিবীরগণের প্রাণসংহারপূর্ব্বক নগরীস্থ সমস্ত উপবন ছিন্নভিন্ন করিয়া কহিয়াছিল, “হে আনর্ত্তবাসিগণ! তোমরা সত্য করিয়া বল, সেই বৃষ্ণিকুলাধম মূঢ়াত্মা বাসুদেব কোথায় ? সে যেখানে আছে, আমি সেইখানে গমন করিয়া যুদ্ধে সেই যুদ্ধার্থীর দর্পচূৰ্ণ করিব। আমি প্রতিজ্ঞাপূর্ব্বক আয়ুধ গ্রহণ করিয়া কহিতেছি, আজি সেই কংসকেশিনিসূদন দুষ্ট মধুসূদনকে বিনষ্ট না করিয়া বিনিবৃত্ত হইব না। শিশুপাল-বধ হইয়াছে শুনিয়া আমার ক্ৰোধানল প্ৰজ্বলিত হইয়া উঠিয়াছে; অতএব আমি সেই পাপকর্ম্মা বিশ্বাসঘাতী বাসুদেবকে অদ্যই প্ৰদীপ্ত হুতাশনে আহুতি প্ৰদান করিব। সে সংগ্ৰাম না করিয়া অনভিজ্ঞ, বালক, ভ্ৰাতা শিশুপাল মহীপালকে বধ করিয়াছে, আমি তাহাকে নষ্ট করিয়া অবশ্যই বৈরানিৰ্য্যাতন করিব।” এইরূপ বহুবিধ কটুক্তিসহকারে পুনরায় ‘সে কোথায়? সে কোথায়?’ বলিয়া আমার সহিত রণবাসনায় ইতস্ততঃ ধাবমান হইতে লাগিল; অনন্তর আমাকে ভৎসনা করিয়া কামচারী সৌভ [আকাশযান বিমান—বর্ত্তমানকালের এয়ারোপ্লেন]-নগরের সহিত আকাশে আরোহণ করিল। আমি আগমন করিয়া সেই দুরাত্মার যথাবৎ সমস্ত বৃত্তান্ত শ্রবণ করিলাম। আনর্ত্তদেশের প্রতি উপদ্রব, আমার ভৎসনা ও সেই পাপাত্মার অসহ্য অহঙ্কারের বিষয় অবগত হইয়া আমি রোষাকুলিতচিত্তে তাহার প্রাণসংহারে কৃতসঙ্কল্প হইয়া তাহাকে অন্বেষণ করিতে করিতে সাগরাবর্তে দৃষ্টিগোচর করিয়া পাঞ্চজন্য শঙ্খনাদ্যদ্বারা সমরে আহ্বান করিলাম। তথায় দুরন্ত দানবগণের সহিত মুহূর্ত্তমাত্র আমার যুদ্ধ হইলে তাহারা তৎক্ষণাৎ পরাভূত ও নিপাতিত হইল। হে আৰ্য্য! আমি এই অবশ্যকর্ত্তব্য কাৰ্য্যের অনুরোধে তৎকালে উপস্থিত হইতে পারি নাই; অনস্তর অবিনয়জনিত দূতক্রীড়ার বিষয় অবগত হইয়া আপনাদের দর্শনমানসে সত্বর এখানে আসিয়াছি।”