কাশী কবিরাজের গল্প

কাশী কবিরাজের গল্প

আমার উঠোন দিয়ে রোজ কাশী কবিরাজ একটা ছোটো ব্যাগ হাতে যেন কোথায় যায়। জিজ্ঞেস করলেই বলে— এই যাচ্চি সনেকপুর রুগি দেখতে, ভায়া—

একদিন বললে— নৈহাটি যাচ্চি রুগি দেখতে, সেখান থেকে শ্যামনগর যাবো।

—সেখানে আপনার রুগি আছে বুঝি?

—সব জায়গায়। কলকাতায় মাসে দু-বার যাতি হয়।

আমার হাসি পায়। কাশী কবিরাজ আমাদের গ্রামে বছর খানেক আগে পাকিস্তান থেকে এসে বাসা করেছে। জঙ্গলের মধ্যে একখানা দোচালা ঘর। আমগাছের ডালপালায় ঢাকা। দিনে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। ছেঁড়া কাপড় পরে কাশী কবিরাজের বউকে ধানসেদ্ধ করতে দেখেছি। এত যদি পসার, তবে এমন অবস্থা কেন?

একদিন আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি আকাশে ঘন মেঘ এসে জমল। বৃষ্টি আসে আসে। কাশী কবিরাজ দেখি আমার উঠান দিয়ে হনহন করে চলেছে ব্যাগ হাতে।

ডেকে বললাম— ও কবিরাজমশাই, শুনুন শুনুন, কোথায় চললেন? বৃষ্টি আসছে। কাশী কবিরাজ আমার চণ্ডীমণ্ডপে এসে উঠে বসল।

বললে— একটু রাণাঘাট যেতাম এই ট্রেনে, রুগি ছেলো।

—কে রোগী?

—একজন মাদ্রাজি। পা ফুলে বিরাট হয়েচে, সব ডাক্তার জবাব দিয়েচে। তিন বার একসরা কত্তি গিয়েলো। আমি বলিচি, ওসব একস-রা টেকস-রা আমার সঙ্গে লাগবা না। আমার মুখই একস-রা—

আমার হাসি পেল। নিজের যদি এত গুণ, তবে দোচালায় বাস করো কেন জঙ্গলের মধ্যে? লম্বা-লম্বা কথা বললেই কি লোকে তোমাকে বড়ো কবিরাজ ভাববে?

—একটু চা খান দাদা—

—তা খাওয়াও ভাই, বৃষ্টি এল। একটু বসেই যাই—

—আপনার পসার তাহলে বেশ বেড়েচে?

—বাড়বে কী ভায়া, বরাবর আছে। আমি তান্ত্রিক কবিরাজ। যা কেউ সারাতি পারবে না, তা আমি সারাব।

—বলেন কী!

—এই জন্যেই তো আমার পসার। শুধু ঝাড়ানো-কাড়ানো—

—ঝাড়িয়ে রোগ সারিয়েছেন?

—আরে এ পাগল বলে কী? বড়ো-বড়ো রোগ ঝাড়িয়ে সারিয়েচি!

—বটে!

—তোমরা ইংরাজি লেখাপড়া জানো কিনা, সমস্ত অবিশ্বাস করো, জানি। ভূত মানো?

এই রে! ঝাড়ফুঁক থেকে এবার ভূতপ্রেতে এসে পৌঁছুল! কাশীনাথ কবিরাজ অনেক কিছু জানে দেখছি। বললাম— যদি বলি মানিনে?

—তা তো বলবাই, ইংরাজি পড়াতে তোমাদের ইহকালও গিয়েচে, পরকালও গিয়েচে। রাগ করো না ভায়া, যা সত্যি তাই বললাম। চা এসেচে? তাহলি একটা গল্প শোনো বলি। আমার নিজের চোখে দেখা।

খুব বৃষ্টি এসে পড়ল, চারিদিক অন্ধকার করে এল। কাশীনাথ কবিরাজ তার গল্প আরম্ভ করল।

কাশীনাথ কবিরাজ তান্ত্রিক-মতে চিকিৎসা করে বলে অনেক দূর দূর থেকে তার ডাক আসে। আজ থেকে বছর দশেক আগে হরিহরপুরের জমিদার শিবচন্দ্র মুখুজ্যের বাড়ি থেকে তাঁর ছেলের চিকিৎসার জন্যে কাশীনাথের ডাক এল।

আমি বললাম— আগে কখনো সেখানে গিয়েছিলেন আপনি?

—না।

—নাম জানতেন?

—খু—ব। আমাদের ওদেশে হরিহরপুরের জমিদারের নাম খুব প্রসিদ্ধ।

—যখন গিয়ে পৌঁছলেন, তখন বেলা কত?

—সন্ধের কিছু আগে। তারপর শোনো—

কাশীনাথ ওদের বাড়ি দেখে অবাক হয়ে গেল। সেকেলে নামকরা জমিদার, মস্তবড়ো দেউড়ি, দু-তিন মহলা বাড়ি। দেউড়ির পাশে বৈঠকখানা ঘর, তার পাশে একটা বড়ো বারান্দা। ওদিকে ঠাকুর-দালান, বাইরে রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ। তবে এ সবই ভগ্নপ্রায়; পূর্বের সমৃদ্ধি ঘোষণা করে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র। বড়ো বড়ো বট-অশ্বত্থের গাছ গজিয়েছে বাড়ির গায়ে। মন্দিরের চুড়োর ফাটলে বন্য শালিখের গর্ত, কাঠবিড়ালির বাসা। সামনে বড়ো একটা আধ-মজা দিঘি পানায় ভরতি।

সন্ধ্যার কিছু আগে সেই মস্তবড়ো পুরোনো ভাঙা বাড়ি দেখে কাশীনাথের মনে কেমন এক অপূর্ব ভাব হল।

আমি বললাম— কী ভাব?

—সে তোমারে বলতে পারিনে ভায়া। ভয়ও না, আনন্দও না। কেমন যেন মনে হল, এ বড্ড অপয়া বাড়ি— এ-ভিটেতে পা না-দেওয়াই ভালো আমার পক্ষি। তোমার হবে না, কিন্তু আমার হয় বাপু এমনি।

—অন্য কোথাও হয়েছে?

—আরও দু-একবার হয়েচে এমনি। কিন্তু সে-কথা এখন আনবার দরকার নেই। তারপর বলি শোনো না—

তারপর কাশী কবিরাজ সেখানে গিয়ে রোগী দেখল। দশ বৎসর বয়সের একটির ছেলের টাইফয়েড জ্বর, খুব সংকটাপন্ন অবস্থা। কাশী কবিরাজ গিয়ে তান্ত্রিক প্রণালীতে ঝাড়ফুঁক করে শেকড়-বাকড়ের ওষুধ বেটে খাওয়াল। রোগী কথঞ্চিৎ সুস্থ হয়ে উঠল।

অনেক রাত্রে কাশী খাওয়া-দাওয়া সেরে দেউড়ির পাশে বৈঠকখানা ঘরে এসে দেখল, সেখানে তার জন্যে শয্যা প্রস্তুত। উৎকৃষ্ট শয্যা, দামি নেটের মশারি, কাঁসার গেলাসে জল ঢাকা আছে, ডিবের বাটিতে পান— সব ব্যবস্থা অতি পরিপাটি।

আমি বললাম— বড়োলোকের বাড়ির বন্দোবস্ত—

—হাজার হোক, বনেদি ঘর তো? যতই অবস্থা খারাপ হোক, পুরোনো চালচলন যাবে কোথায়?

—তারপর?

কাশী কবিরাজ বেশিক্ষণ শোয়নি, এমন সময় সে দেখল ঘোমটাপরা একটি বউ হনহন করে মাঠের দিক থেকে এসে দেউড়ির মধ্যে দিয়ে জমিদার বাড়ি ঢুকচে। কাশী খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। এত রাত্রে বাইরের মাঠ থেকে এসে বাড়ি ঢুকল কে, ভদ্রলোকের ঘরের সুন্দরী বধূ বলেই মনে হল, যতটুকু দেখেছে তা থেকেই।

যাক। সে এসেছে কবিরাজি করতে, অতশত খোঁজে তার কী দরকার? যে যা ভালো বোঝে করুক।

আমি বললাম— রাত তখন কত?

—রাত একটার কম নয়, বরং বেশি।

—যেদিক থেকে এল, সেদিকে কোনো লোকালয় নেই?

—না মশাই। ফাঁকা মাঠ অনেকখানি পর্যন্ত, তারপর কোদালে নদী। কোদালে নদীতে গরমকালে জল থাকে না, হেঁটে পার হওয়া যায়; তার ওপারে বলরামপুর গ্রাম।

—আপনি কী করে বুঝলেন ভদ্রবংশের মেয়ে?

—হাত-পায়ের যতটুকু খোলা, ধবধবে ফরসা। আধ-জ্যোৎস্না রাত, আমি দিব্যি টের পাচ্চি— মুখখানা অবিশ্যি ঘোমটায় ঢাকা ছেলো।

—বাড়ির মধ্যে ঢুকে যাবার সময় অন্য কোনো লোক সেখানে ছিল?

—না।

—আপনাকে টের পেয়েছিল?

কোনোদিকে না-চেয়ে হনহন করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল।

কাশী কবিরাজ নির্বিরোধ ভালো লোক, সে জলের গেলাস তুলে খানিকটা জল খেয়ে মশারি খাটিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু নানা চিন্তায় ঘুম আর আসে না, বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। লোকে বাড়িতে চিকিৎসক ডাকে ঘুমুবার জন্যে নয়, কাশী কবিরাজ অভিজ্ঞ লোক, দায়িত্ববোধ তার যথেষ্ট, সে অবস্থায় তার চোখে ঘুম আসে কী করে?

মিনিট খানেক পরে কাশী হঠাৎ দেখল, সেই বউটি তার পাশের দেউড়ি দিয়ে আবার বার হয়ে যাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে সে তড়াক করে উঠে পড়ল। বউটি ক্রমে দূর মাঠের দিকে চলে যাচ্ছে। জ্যোৎস্নায় তার সাদা কাপড় দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

আমি বললাম— মাঠের দিকে গেল একা?

—একদম একা! আর অত রাত!

—আপনি কী ভাবলেন?

—আমি আর কী ভাববো মশাই, একেবারে অবাক। এত রাতে একটি সোন্দরী মেয়ে এমনভাবে যে নির্জন মাঠের দিকে চলে যেতে পারে, তা কখনোই দেখিওনি।

কাশী কবিরাজ সাত-পাঁচ ভাবছে, এমন সময়ে বাড়ির মধ্যে থেকে একজন ছুটে এসে বললে— শীগগির আসুন, কবিরাজমশাই, রোগী কেমন করচে!

কাশী গিয়ে দেখে, রোগীর অবস্থা সত্যই খারাপ। কিন্তু হঠাৎ এত খারাপ হওয়ার কথা তো নয়! যাহোক, তখনকার মতো ব্যবস্থা করতে হল। অনেকক্ষণ খাটুনির পরে রোগী খানিকটা সামলে উঠল। তখন আবার এসে শুয়ে পড়ল কাশীনাথ বাইরের দেউড়ির ঘরে।

পরের দিনমানে রোগীর অবস্থা ক্রমশ ভালোর দিকেই চলল। জমিদারবাবুর মন বেশ ভালো; প্রথম দিন বড়োই যেন মুষড়ে পড়েছিলেন। এমনকী কবিরাজের সঙ্গে বসে দুপুরের পর খানিকক্ষণ পাশাও খেললেন। কবিরাজকে তাঁদের বড়ো দিঘিতে একদিন মাছ ধরতে যাবার আমন্ত্রণও জানালেন। খাওয়ার ব্যবস্থাও দুপুরে বেশ ভালোই হল— মাছের মুড়ো, দই, দুধ, সন্দেশ ইত্যাদি। কবিরাজ খুব খুশি…। জমিদারবাবু বেশ প্রফুল্ল।

সেই রাত্রে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। এমন ধরনের ব্যাপার কাশী কবিরাজ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

রোগীর অবস্থা ভালো থাকার দরুন সেদিন আর বেশি খাটুনি ছিল না। সকাল সকাল খেয়েদেয়ে শয্যা আশ্রয় করল, কিন্তু ঘুম আসতে দেরি হতে লাগল। কোথাকার ঘড়িতে একটা বেজে গেল ঢং করে। ঠিক সেই সময়ে দেখল কাশী কবিরাজ, সেই ঘোমটাপরা বউটি দেউড়ি দিয়ে ঢুকে অন্দরের দিকে চলেছে।

বলতে কী কাশী কবিরাজের বড়ো বিস্ময়বোধ হল। কী সাহস মেয়েটার! এত রাতে মাঠের মধ্যে দিয়ে চলে আসতে ভয়ও কি করে না?

মিনিট পনেরো কেটে গেল, কী বিশ মিনিট— তারপর কাশী কবিরাজকে আশ্চর্য স্তম্ভিত করে দিয়ে সেই বউটি ওর ঘরে এসে ঢুকল।

আমি বললাম— আপনার ঘরে?

—হ্যাঁ, একেবারে আমার সামনে।

—ঘরে আলো ছিল?

—বাড়িতে রোগী থাকার দরুন আমার ঘরে সারারাতই একটা হ্যারিকেন জ্বলে। ঘরে ঢুকে মেয়েটি মুখের ঘোমটা অনেকখানি তুলে কবিরাজের দিকে চাইল। বেশ সুন্দরী মহিলা। দেখলে সম্ভ্রমের উদ্রেক হয়, এমনি চেহারা। কাশী কবিরাজকে বললে— তুমি এখানে থেকো না, চলে যাও এখান থেকে।

বিস্মিত ও স্তম্ভিত কাশী কবিরাজ মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে বললে— আপনি কে মা?

—আমি যেই হই, তুমি এখান থেকে যাবে কিনা?

—মা, আমি চিকিৎসক। রুগি দেখতে এসেচি। আমার কাজ না-সেরে আমি কী করে যাবো?

—তুমি এ রুগি বাঁচাতে পারবে না। কাল সকালে তুমি চলে যাও এখান থেকে—

—কী করে আপনি জানলেন রুগি বাঁচবে না?

—আমি ওর মা। ওর সৎমা ওকে খুব কষ্ট দিচ্চে, সে-কষ্ট আমি দেখতে পারচিনে; আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেচি— নিয়ে যাবোই। তুমি তাকে কিছুতেই রাখতে পারবে না—

কাশীনাথ কবিরাজ তখন ব্যাপারটা ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি। সে আমতা-আমতা করে বললে— আপনি কোথায় থাকেন?

—আমি মারা যাওয়ার পর আজ চার বছর হল ওর বাবা আবার বিয়ে করেচে। আমার সেই সতিন ওকে বড়ো যন্ত্রণা দিচ্চে। আমি সেখানে শান্তিতে থাকতে পারি না। খোকা আপন মনে কাঁদে, আমি শুনতে পাই— ওকে আমি নিয়ে যাবোই। তুমি কেন অপযশ কুড়োবে! ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও—

কাশীনাথের সমস্ত শরীর হিম হয়ে গিয়েছে যেন! কী ব্যাপারটা সামনে ঘটচে, তার যেন কোনো ধারণাই নেই। তবুও সে হাতজোড় করে বললে— মা, একটা কথা। আমি জমিদারবাবু, আপনার স্বামীকে সব বলি। তিনি তাঁর ছেলেটিকে বড়ো ভালোবাসেন। ছেলেটিকে আপনি নিয়ে গেলে তাঁর কী অবস্থা হবে, সেটা তো আপনার বিবেচনা করা উচিত।

বউটি বললেন— তাঁর এ-পক্ষের ছেলেমেয়ে হবে। তাঁদের নিয়ে থাকবেন তিনি—

—ও কথা বলবেন না, মা। আপনি তাঁর কথা চিন্তা না-করলে কে চিন্তা করবে? সব দিক বুঝুন। তাঁর কথা ভাবতে হবে আপনাকেই। আমি আজই সব বলচি তাঁকে খুলে। যদি তিনি তাঁর এ-পক্ষের স্ত্রীকে বলে ছেলেটির ওপর অত্যাচার নিবারণ করতে পারেন, তবে আপনি আমাকে কথা দিন, ছেলেটিকে আপনি নিয়ে যাবেন না? আমি সে চেষ্টা করি, মা?

—করো।

বলেই মূর্তি অদৃশ্য হল না কিন্তু। ঘর থেকে বার হয়ে, দেউড়ি দিয়ে বার হয়ে, মাঠের দিকে চলে গিয়ে, নিশীথ-রাত্রির শুভ-জ্যোৎস্নার কুয়াশায় মিলিয়ে গেল।

আমি জিজ্ঞেস করলাম— বলেন কী!

—হ্যাঁ মশাই।

—আচ্ছা, এ-মূর্তির কোনো অংশ অস্পষ্ট নয়?

—দিব্যি মানুষের মতো। কোনো অস্বাভাবিকত্ব নেই কোথাও। কথাবার্তা বললাম, আমার কোনো ভয় হল না। একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলচি, তেমনই মনে হল। মূর্তিটি অদৃশ্য হওয়ার খানিক পরেই বাড়ির মধ্যে থেকে কাশীকে ডাকতে এল। রুগির অবস্থা খুব খারাপ। অথচ সমস্ত দিন এমন ভালো ছিল! তখনকার মতো সুব্যবস্থা করে ভোরের দিকে কাশী কবিরাজ জমিদারবাবুকে বললে— আপনার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে, বাইরে চলুন।

আমি বললাম— বাইরে এসে সব কথা বললেন নাকি?

—হ্যাঁ, গোড়া থেকে। বললাম, এই আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন আপনার প্রথম পক্ষের স্ত্রী কিছুক্ষণ আগে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

—বিশ্বাস করলেন?

—কেঁদে ফেললেন। বললেন— আমি জানি। আমি এই অসুখের সময় একদিন ওকে শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেচি।

তার পরের ইতিহাস খুব সংক্ষিপ্ত।

জমিদার বললেন, আমি জানি, ওর সৎমা ওর ওপর খুব সদয় নয়; তবে এতটা আমি জানতাম না। আমি কথা দিচ্চি, খোকা সেরে উঠলে ওর মামারবাড়িতে রেখে লেখাপড়া শিখাব। এ-সংস্রবে আর আনব না। আমার এ-স্ত্রীকেও আমি শাসন করচি। আপনি তাঁকে জানাবেন।

রাত ভোর হয়ে গেল।

রোগীর অবস্থা ক্রমশ ভালো হয়ে উঠতে লাগল। এগারো দিনের পর কাশী কবিরাজ পথ্য দিলেন তাঁর রোগীকে।

বললাম— ওর মাকে আর দেখেননি? আসেননি আপনার কাছে?

—না।

আশ্বিন ১৩৫৮, অভিষেক

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *