রহস্য

রহস্য

আমার বন্ধুর মুখে শোনা এ গল্প। বন্ধুটি বর্তমানে কলকাতার কোনো কলেজের প্রফেসার। বেশ বুদ্ধিমান, বিশেষ কোনোরকম অনুভূতির ধার ধারেন না, উগ্র বৈষয়িকতা না থাকলেও জীবনকে উপভোগ করার আগ্রহ আছে, সে কৌশলও জানা আছে।

সেদিন রাত্রে ঝম-ঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল। নানারকম গল্প হচ্ছিল গরম চা ও আনুষঙ্গিক খাদ্যের সঙ্গে মজিয়ে। অবিশ্যি ভূতের গল্পই হচ্ছিল। আমার বন্ধু একটা গল্প বললেন, আশ্চর্য লাগল গল্পটা। একজন বিজ্ঞানের অধ্যাপক যখন এই গল্পটা করলেন তখন এর একটা মূল্য আছে ভেবেই এই গল্পটা বলছি। তাঁর নিজের কথাতেই বলি —

সেবার আমি বিএ পরীক্ষা দিচ্ছি, অনার্স পরীক্ষা হয়ে যাবার পর দিন চার-পাঁচ ছুটি পাওয়া গেল। কীসের ছুটি তা আমার এতকাল পরে মনে নেই। ভবতারণ ঘোষাল বলে আমার এক বন্ধু ছিল, ওর বাড়ি ছিল বেলঘরেতে। ভবতারণ ক্লাসে খুব পান খেত, ক্লাসের বাইরে ঘন-ঘন সিগারেট খেত, অশ্লীল কথাবার্তা বলত, লম্বা-লম্বা কথা বলত, চালবাজির অন্ত ছিল না। তার আমার সঙ্গে খুব বনত এইজন্যে যে, আমি নিজেও একজন দস্তুরমতো চালবাজ ছেলে ছিলাম তখন। এখন সেসব কথা ভাবলে হাসি পায়। তারপর যা বলছিলাম।

অনার্স পরীক্ষা শেষ হবার দিন ভবতারণ আমায় টেনে নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে। যাবার সময় ট্রেনে গেলুম। কিন্তু ট্রেন থেকে নেমে অনেকটা হাঁটতে হল, কারণ ওদের বাড়িটা প্রায় গঙ্গার ধারের কাছে। কিছুক্ষণ ওর বাড়ি থাকার পর হঠাৎ কী-একটা বিষয়ে ঘোর তর্কাতর্কি হল ওর আর আমার মধ্যে। এমন চরমে উঠল সে তর্ক যে দু-জনের মধ্যে হাতাহাতি হবার উপক্রম। হায়রে সেসব দিন! এ-রোদ-এই মেঘ— তখনকার জীবনে তাই ছিল স্বাভাবিক।

যাই হোক, আমি ভয়ানক রেগে ওদের বাড়ি থেকে সেই সন্ধ্যা বেলাই বেরিয়ে পড়লুম। এমন জায়গায় ভদ্রলোকের থাকতে আছে?

ব্যারাকপুর ট্র্যাঙ্ক রোড বেয়ে হন-হন করে হাঁটছি কলকাতা-মুখে। দিব্যি ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাত। মাঝে মাঝে এক-আধখান মোটর দ্রুতবেগে চলেছে কলকাতার দিকে। সম্পূর্ণ নির্জন রাস্তা, একবার একটা মাতাল কুলি ছাড়া আর কোনো লোকের দেখা পাইনি।

হঠাৎ আমার মনে হল এতটা রাস্তা একটানা হাঁটতে পারব না, একটু বিশ্রাম দরকার। ডাইনে-বাঁয়ে চাইতে কিছুদূর গিয়ে একটা বাগানবাড়ি দেখে তার মধ্যে ঢুকে পড়লুম। বাইরে থেকেই আমার মনে হয়েছিল, এ বাগানবাড়িতে লোকজন কেউ থাকে না; আছে হয়তো একটা-আধটা উড়ে মালি, তাকে দু-চারটি পয়সা দিলে বাগানের মধ্যে বসে একটু বিশ্রাম করতে দেবে এখন। নিশ্চয় একটা পুকুর আছে বাগানে, নিশ্চয় তার ঘাট বাঁধানো। এমন গ্রীষ্মের দিনে জ্যোৎস্না রাত্রে পুকুরের বাঁধা-ঘাটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করবার আনন্দ অনেকদিন পরে হয়তো কপালে জুটে যাবে।

বাগানের মধ্যে ঢুকে মনে হল এ-বাগানে লোকজন কেউ বাস করে না। ঘন-ঘন কেউ আসেও না। লাল কাঁকরের পথগুলোর ওপরে এক হাত লম্বা উলু ঘাস, ফুলের খেত আর আগাছার জঙ্গলে ভরতি। আরও একটু অগ্রসর হয়ে মনে হয়েছিল এ বাগানবাড়ি খুব বড়োলোকের, অন্তত যে সময়ে এ বাগানবাড়ি তৈরি হয়েছিল, সে সময়ে মালিকের অবস্থা ছিল খুব ভালো। শৌখিন পরিচয় আছে এর প্রত্যেকটি গাছপালায়, প্রত্যেকখানি ইটে-পাথরে। আগাছাভরা ফুলের খেতের মাঝে মাঝে এখানে-ওখানে পাথরের অপ্সরি মূর্তি। দু-একটার হাত ভাঙা, নাক ভাঙা, অনেক এমন অপ্সরি মূর্তি আছে বাগানের এদিকে-ওদিকে। কোনোটার পিঠ দেখা যাচ্ছে, কোনটার মুখ ঝোপের আড়ালে-আড়ালে। একটু দূরে গিয়ে বাঁ-দিকের চওড়া পথ ধরলুম, পুকুরে গিয়ে পথটা শেষ হয়েছে। তবে, যে-ধরনের পুকুর আশা করেছিলাম— এ তা নয়। অনেক কালের পুরোনো পুকুর, বাঁধা-ঘাট এক সময় ছিল। এখন তার মাঝামাঝি প্রকাণ্ড বড়ো ফাটল ধরেছে, রানার দু-পাশে বট অশ্বত্থের গাছ গজিয়েছে, সে ঘাটে নামাও যায় না সিঁড়ির সাহায্যে। এ রাত্রে তো সাপের ভয়ে সেদিকে যেতেই আমার সাহস হল না।

ঘাটের থেকে কিছু দূরে একখানা বেঞ্চি পাতা। ক্লান্ত শরীরে বেঞ্চির ওপরে শুতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানি না। আমার তন্দ্রা যখন ছুটে গেল, তখন অনেক রাত। সামনের দিকে চাইতেই একটা অদ্ভুত সন্দেহ হল আমার মনে।

আমার বেঞ্চিখানা থেকে কিছু দূরে যে অপ্সরি মূর্তি আমার দিকে পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে আছে, সেটার দিকেই ঘুম ভেঙে আমার চোখ পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে মনে হল, এতক্ষণ সে মূর্তিটা অন্য কী কাজ করছিল বা অন্যদিকে অন্যভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, আমাকে জাগতে দেখেই সেটা চট করে যেন নিজেকে সামলে নিয়ে আবার পূর্ববৎ ভঙ্গিতে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

আমি অবাক হয়ে সোজা হয়ে বসলাম, চোখ মুছলাম ভালো করে। ঘুমের ঘোর? কিন্তু তা বলে তো মনে হল না! আমি ঘুম ভেঙে স্পষ্টই দেখেছি, ও পুতুলটা কী একটা করতে যাচ্ছিল, আমার সাড়া পেয়ে সামলে নিয়েছে।

সমস্ত শরীর যেন অবশ, ভারী। ঘুমের ঘোর ভালো কাটেনি। রাস্তা হাঁটবার ইচ্ছে নেই মোটে। আবার সেই বেঞ্চিখানাতে শুয়ে পড়লাম। শোয়ামাত্র আবার কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম আসবার পূর্ব পর্যন্ত কিন্তু একটা কৌতূহল আমার মনে বার বার উঁকি দিয়েছে। পুতুলটা কী করতে যাচ্ছিল? আমার ঘুম ভেঙে উঠতে দেখে কী করতে করতে ও সামলে গেল?

অনেক রাতের ঠান্ডা ফিরফিরে হাওয়ায় আমি গাঢ় ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। আবার যখন ঘুম ভাঙল, তখন চাঁদ ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশের গাছপালার পেছনে। ফুট-ফুট করছে জ্যোৎস্না। তবে পশ্চিম দিক থেকে লম্বা লম্বা গাছের ছায়া পড়েছে ফুলের খেতে, আগাছার জঙ্গলে।

ঘুম ভেঙে উঠেই আমার মনে হল আমি প্রথম যখন এ-বাগানে ঢুকি, তখন বাগানে যা ছিল এখন তা নেই। কোথায় কী একটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে বাগানের। ঘুমের ঘোর যতই ভাঙতে লাগল, আমার মনে এ ধারণা ততই বদ্ধমূল হতে লাগল। আগে যা ছিল, তা এখন যেন নেই। কী একটা বদলে গিয়েছে। অথচ কী, সেটা বুঝতেও পারছিনে। কী বদলে গেল কোথায়? হঠাৎ আমার চোখ পড়ল সামনে। চোখ ভালো করে মুছলাম। পরিবর্তন ওখানেই হয়েছে যেন। আগে যা ছিল এখন তা নেই।

কিন্তু কী পরিবর্তন? কী বদলে গেল? এক মিনিট কী দেড় মিনিট কেটে গেল। সঙ্গেসঙ্গে সারা দেহে বিদ্যুতের স্রোতের মতো বয়ে গিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ আড়ষ্ট ও অবশ করে দিয়ে আসল সত্যটি আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল।

ওই উচ্চ বেদিকার ওপর বসানো সেই অপ্সরি পুতুলটা কোথায় গেল? বেদিকা খালি পড়ে আছে। পুতুলটা নেই।

প্রথমটা যেন বিশ্বাস হল না। সত্যিই কী ওখানে অপ্সরি মূর্তিটা ছিল। অন্য জায়গায় ছিল হয়তো। আমি ভুল দেখেছিলাম। তা কী কখনো হয়? পাথরের অত বড়ো পুতুলটা গভীর রাত্রে কে নিয়ে যাবে? আমারই ভুল।

কিন্তু এই অপ্সরি মূর্তিই তো অন্যদিকে চেয়ে কী একটা করতে যাচ্ছিল, আমি ঘুম ভেঙে দেখেছিলাম। এই বেদিকার ওপরেই সেই পুতুলটা ছিল। না থাকলে আমি এই বেঞ্চিতে শুয়ে দেখলাম কী করে? বেশ মনে আছে, প্রথমে এই বেঞ্চিতে শুয়ে পুতুলটা প্রথম আমার চোখে পড়েছিল। আমার দিকে ওর পাশ ফেরানো ছিল। এও ভাবলাম, আমার মনে আছে, এ ধরনের পুতুল কি ইটালি থেকে আসে? না, এ দেশে তৈরি হয়?

এত সব একেবারে ভুল হয়ে যাবে? কিন্তু তা যদি না-হয়, তবে সে অপ্সরি মূর্তিই বা যাবে কোথায়? এত রাত্রে কে উঠিয়ে নিয়ে গেল মূর্তিটা? চোরে নিয়ে গেল?

তাই যদি হয়, এতকাল এ-বাগান অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে, এতদিন কেউ চুরি করলে না, আর একজন জলজ্যান্ত মানুষ শুয়ে আছে সামনের বেঞ্চিতে, আজই চোর এসে এত বড়ো ভারী মূর্তিটা চুরি করে নিয়ে যাবে?

না। তাও সম্ভব বলে মনে হয় না।

কেন জানি না, আমার কেমন ভয় হল। গা ছম-ছম করতে লাগল। রাত আর বেশি নেই। এ বাগানে শুয়ে থাকার দরকার নেই। আস্তে আস্তে কলকাতামুখো হাঁটা দি।

যেমন একথা মনে আসা, অমনি আমি বেঞ্চি থেকে উঠে পড়লাম। পুকুরের ঘাটে নেমে চোখে-মুখে জল দিয়ে নেব বলে ঘাটের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় আবার অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

বাঁধা-ঘাটের ঠিক ওপরেই আমলকী তলায় যে স্টাচু-টা ছিল, সেটাই বা কই? সেটার হাত ভাঙা ছিল বলে আরও বেশি করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ওই তো তার শূন্য বেদিটা পড়ে আছে।

মনে কেমন সন্দেহ হল। বাগানের চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখলুম। কত পুতুল ছিল এখানে-ওখানে। বনের ঝোপের মধ্যে, আড়ালে-আড়ালে। সাদা পাথরের পুতুলগুলো ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় ঝক-ঝক করছিল। এখানে তেমনি সাদা জ্যোৎস্না বাগানের সর্বত্র, কিন্তু কই সে অপ্সরি পুতুলগুলো? একটাও তো নেই!

এক রাত্রে কি বাগানের সব পুতুল চুরি গেল? এই রাত্রিটার জন্যেই কি চোরেরা ওত পেতে বসে ছিল?

আশ্চর্য। বোকার মতো চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম। এতক্ষণে বুঝলাম, ঘুম ভেঙে উঠে যে ভাবছিলাম বাগানের কোথায় কী পরিবর্তন হয়েছে, সে হল এই পরিবর্তন। বাগানময় এই মস্ত পরিবর্তনটা সাধিত হয়েছে আমার ঘুমের মধ্যে।

ততক্ষণে পায়ে পায়ে আমি গিয়ে পুকুরের বাঁধা-ঘাটের ওপরটাতে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ পুকুরের জলের দিকে চাইতে আমার কেমন যেন হয়ে গেল। সারা শরীর দোল দিয়ে উঠল ভয়ে, বিস্ময়ে!

বাগানের সব অপ্সরি পুতুলগুলো জলে নেমে সাঁতার দিচ্ছে, দিব্যি সাঁতার দিচ্ছে, এপার-ওপার যাচ্ছে; কিন্তু একটা জিনিস আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম, সেগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠেনি। আড়ষ্টভাবেই, পুতুলরূপেই সাঁতার দিচ্ছে!

এইখানে আমাদের মধ্যে বন্ধুকে কে প্রশ্ন করলে— আপনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন?

অধ্যাপক বন্ধুটি আমাদের মুখের দিকে চেয়ে বললেন— অনেক দিনের কথা হয়ে গেল বটে, কিন্তু আমি আজও ভুলিনি সে-রাত্রের কথা। সে দৃশ্য আজও দেখছি চোখের সামনে। মাঝে মাঝে যেন দেখি। বিশ্বাস করা না-করা অবিশ্যি আপনাদের ইচ্ছে। আমি কাউকে বলিওনে বিশ্বাস করতে।

আমি বললাম— সিদ্ধি খেয়েছিলেন, বন্ধুর বাড়ি বেলঘরেতে? বা—

—আমি ওসব ছুঁতাম না তখন, এখনও তাই। বিশ্বাস করুন এ-কথাটা—

সকলে রুদ্ধ নিশ্বাসে শুনছিলাম। আমরা বললাম— তারপর?

বন্ধু বলতে আরম্ভ করলেন আবার —

তারপর চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম একদৃষ্টে সেদিকে চেয়ে। আমার মনে হল আমি পাগল হয়ে গিয়েছি, কিংবা আমার কোনো শক্ত রোগ হয়েছে। যা দেখছি এসব কী? বেশ মনে আছে পশ্চিম দিকের পাঁচিলের গায়ে একটা তাল কী নারকেল গাছ ছিল। চাঁদ তখন গাছটার ঝাঁকড়া মাথার ঠিক আড়ালে। সে-ছবিটা বেশ মনে আছে আমার। আবার তখনই চোখ নামিয়ে পুকুরের দিকে চাইলাম— সেখানে সেই অদ্ভুত, অস্বাভাবিক দৃশ্য। সব সাদা সাদা বড়ো মর্মর মূর্তিগুলো জীবন্তের মতো জলকেলি করছে পুকুরের জলে। আমার মাথা ঘুরে গেল যেন। নিজের ওপর কেমন একটা অবিশ্বাস হল। সেখান থেকে মারলাম টেনে ছুট— একেবারে সোজা দৌড় দিয়ে ফটকের কাছে এসে যখন পৌঁছেছি তখন আমার মনে হল— অবিশ্যি হলপ করে বলতে পারব না সত্য কি না; তবে আমার মনে হল, যেন অনেকগুলো মেয়ে খিল-খিল করে একযোগে হেসে উঠল। হাসির একটা ঢেউ যেন আমার কানে এসে পৌঁছল। পরক্ষণেই আমি একেবারে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের ওপরে এসে পড়লাম।

এবার আপনারা যে প্রশ্ন করবেন তা আমি জানি। সেখানে আর আমি গিয়েছিলাম কি না? পরদিনই গিয়েছিলাম, একা নয়, তিনটি বন্ধু সঙ্গে করে। গিয়ে দেখলাম, পুরোনো ভাঙা বাগানবাড়ি। আগাছার জঙ্গলে ভরা ফুলের খেত। কতকগুলো হাত-ভাঙা, নাক-ভাঙা অপ্সরি পুতুল এদিকে-ওদিকে বনজঙ্গলের আড়ালে পাথরের বেদির ওপরে দাঁড় করানো। কোথাও কোনোদিকে অস্বাভাবিকতার কোনো চিহ্ন নেই।

হঠাৎ আমার এক বন্ধু আমাকে ডাক দিলে। ঘাটের ওপরে আমলকী তলায় যে হাতভাঙা পুতুলটা দাঁড়িয়ে আছে, একটা মোটা বিছুলিলতা মাটি থেকে গজিয়ে উঠে সেটার দু-খানা পা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে— অন্তত এক বছরের পুরোনো লতা। গত বর্ষায় এ-বিছুটিলতা গজিয়ে উঠেছিল এমনও মনে হয়।

লতাটার কোথাও ছেঁড়া নেই ভালো করে পরীক্ষা করে দেখা গেল।

অথচ আমি হলপ করে বলতে পারি এ পুতুলটাও কাল জলে নেমেছিল, অন্তত এ-বেদিটা আমি কাল খালি দেখেছি। এই ঘাটের ধারেই তো দাঁড়িয়ে ছিলাম।

বন্ধুরা বললেন— তাহলে বিছুটিলতাটা এমন করে থাকে কী করে? এই জড়ানো তো এক বছরের জড়ানো। রাতারাতি গাছটা গজায়নি!

ওদের যুক্তি অকাট্য।

কী উত্তর দেব ওদের? আমার নিজেরই যখন ক্রমশ অবিশ্বাস হচ্ছে আমার নিজের ওপর!

আশ্বিন ১৩৫১, মৌচাক

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *