ছায়াশরীর – অরুণ কুমার বিশ্বাস

ছায়াশরীর

একতারিনা টেই আমার সঙ্গে পড়ে। লণ্ডন স্কুল অভ বিজনেস, মানব-সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএস করছি। মেয়েটা বুদ্ধিতে স্প্যানিশ, মেজাজে আইরিশ, আর দেখতে ইণ্ডিয়ানদের মত। ভীষণ রগচটা একতারিনা। আমি তাকে কখনও একতা, আবার কখনও বা রিনা নামে ডাকি। ও ফিক ফিক করে হাসে। জানতে চায়, একতা বা রিনা নামে আমার কোনও গার্লফ্রেণ্ড আছে কি না।

একতা বা রিনাকে ক্লাসে কেউ তেমন পছন্দ করে না। কারণ ও আইরিশদের মত গোঁয়ার। রেগে গেলে বদলে যায় ওর মুখচ্ছবি। যেন ঠেলে বেরিয়ে আসে লালমুখো মেয়েটার চোখের মণিদুটো। এত বেশি রেগে যায় যে, ওর গলা থেকে যা বেরোয়, তাকে মোষের গাঁক-গাঁক বা বাঘের হক বলেও ঠিক বোঝানো যাবে না। তবে আমি জানি, একতা মেয়েটা নেহায়েত মন্দ নয়। সহপাঠী হিসেবে ও আমাকেই যা একটু মান্যিগণ্যি করে। ক্লাস মিস গেলে আমার কাছে হেল্প চায় একতারিনা।

ওর গায়ের রঙ সাহেব-সুবোদের মত উজ্জ্বল নয়। বরং এশীয়দের মত খানিক শ্যামলিমা আর হরিদ্রাভের মিশেল আছে। হঠাৎ একদিন একখানা ফ্যামিলি ছবি এনে একতা বলল, দেখো তো, নীল, এই ছবিতে কজন মানুষ দেখা যাচ্ছে? ভাল করে, খুব মনোযোগ দিয়ে দেখবে। ব্যাপারটা সিরিয়াস।

পুরুষানুক্রমে ধনী পরিবারের মেয়ে একতা। যখন যা মন চায়, তখনই তা পেয়ে যায় সে। একতা সেদিন আমাকে ইউনি থেকে ওর স্ব-চালিত বিএমডব্লিউতে তুলে নিয়ে সেন্ট্রাল লণ্ডনের গ্রিনপার্কে এনে ফেলল। খেয়ালি মেয়েটার যখন রোখ চাপে, তখন কারও কথা খুব একটা কানে তোলে না। সত্যি কথা বলতে, মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হলেও ওর দুচোখে নিপাট সারল্য আমাকে আবিষ্ট করে। তাই সব মুখ বুজে সয়ে যাই। আপনারা একে যদি বন্ধুত্ব বলেন, তবে বন্ধুত্ব, প্রেম বললে প্রেম। আসলে একতাকে আপাতত প্রশ্রয় না দিয়ে বুঝি আমার নিস্তার নেই। আর এই ছায়াসঙ্গিনীর মূল রহস্যও সেখানেই।

শীতের শুরুতে হরদম পাতা ঝরছে গ্রিনপার্কে। আবার মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ছাতিম গাছের মত দেখতে লণ্ডন প্লেনের নিচে বসে ছবিটা দেখছি। একতা নন-স্টপ ওয়াকার্স চিপস চিবাচ্ছে। সঙ্গে ঢকঢক করে গিলছে ব্লুবেরি ফলের জুস।

আমি ছবিতে বুদ। একতা যখন বলছে সিরিয়াস, তখন গম্ভীর না হয়ে উপায় নেই। যথাযথ গুরুত্ব না দিলে রেগে গিয়ে হয়তো আমার মাথায় মারবে গাট্টা। ছবিতে দুজন মাত্র মানুষ, ব্যাকগ্রাউণ্ডে শহরের কোনও গ্রেভইয়ার্ডের ছবি। বেশ পুরনোই মনে হয়। ছবি ও শশ্মশান-দুটোই পুরনো।

জায়গাটা কোথায়? একতার চোখে চোখ রাখলাম আমি।

অনুমান করো। অনেক দিন হয় তুমি লণ্ডনে আছ, নীল। ইউ মে গেস! উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ল একতারিনা।

বেকুবের হাসি হাসলাম। কারণ লণ্ডনে পড়তে এসে আর যাই হোক, কবরখানার ব্যাপারে মোটেও উৎসাহ বোধ করিনি। রহস্য ভালবাসি এ কথা ঠিক। জানি না, তুমি বলো, আমি হার স্বীকার করে নিলাম।

একতা তাও সঠিক উত্তর দিল না। বলল, ছবির পটভূমি কোন্ গ্রেভইয়ার্ড, ওটা তোমার গবেষণার বিষয় নয়, নীল। দয়া করে বলল, এই ছবিতে কটা মানুষের অবয়ব দেখছ।

কেন, দুজন! একজন পুরুষ, অপরজন মহিলা। এ নিয়ে গবেষণার কী আছে! ক্রমশ আমার স্বরে উত্তাপ বাড়ছে। মেয়েটা পেয়েছে কী! বাঙালি বলে আমার মেজাজ-মর্জি খুব যে শীতল, তা কিন্তু নয়।

বর্ণময় লণ্ডন প্লেনের একটা পাতা সহসাই খসে পড়ল একতার চুলে। যেন ঠিক। প্রজাপতির মত। মেয়েটা হেঁয়ালিমাখা হাসি উপহার দিল। সত্যি, বিলেতি বিকেলে বড় মোহময় লাগে মেয়েটাকে। একতা সুন্দর, অপাপবিদ্ধ চাহনি ওর। একতার সব ভাল, শুধু ওই আইরিশ মেজাজটা ছাড়া।

ও শ্লেষের সুরে বলল, তুমিও পারলে না! ভেবেছিলাম তুমি পারবে। কারণ তুমি বাঙালি, তোমরা বুদ্ধিমান। এখন দেখছি তুমিও গড়পড়তা মানুষের মত। তলিয়ে দেখার ক্ষমতা বা চোখ তোমার নেই। তুমি হেরে গেলে, নীল, তুমি অ্যাভারেজের দলে।

কথাটায় খোঁচা আছে, বেশ বুঝতে পারি। কিন্তু অসহায়ের মতো কিল খেয়ে কিল চুরি করতে হলো। কারণ ছবিতে দুজন মানুষের ছবি ছাড়া সত্যি আর কিছু দেখতে পাইনি যে! ছবিটা খানিক আবছাও। যদূর মনে হয়, কোনও এক শহুরে কবরখানায় সাঁঝের মুখে উবু হয়ে বসে আছে দুজন মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ। পটভূমি আবছা, তাই ভাল বোঝা যায় না।

এরা কারা, চিনতে পারো? একতার পরবর্তী প্রশ্ন।

সম্ভবত তোমার কোনও রিলেটিভ, সেফ সাইডে থেকে উত্তর দিলাম। নতুন করে অ্যাভারেজ মার্কস পেতে চাইনি।

এটা কোনও উত্তর হলো না। বি মোর স্পেসিফিক। নইলে ফুল মার্কস পাবে না।

তোমার বাবা-মা, কিছু না বুঝেই বললাম।

হলো না। তুমি একটা বুন্ধু। গ্রেভইয়ার্ডের ক্রুশচিহ্ন বা দেয়ালের গায়ে সাঁটা মার্বেলের স্থাপত্য লক্ষ করেছ! ওটা অন্তত এক শ বছরের পুরনো। এ জাতীয় মার্বেল এখন আর বাজারে নেই। সময়ের বিবেচনায় কী করে ছবিটা আমার বাবা-মায়ের হবে!

তা হলে তোমার গ্র্যানি-গ্র্যানপার নিশ্চয়ই, আমি একের পর এক আঁধারে ঢিল ছুঁড়ে যাচ্ছি।

ইয়েস, নীল, ওটা আমার দাদা-দাদির ছবি। আর কবরে শুয়ে আছেন সম্ভবত আমার গ্রেট-এ্যানি।

ইচ্ছে করেই সম্ভবত শব্দটার উপর বিশেষ জোর দিয়েছে একতা। আমি এর কারণ জানতে চাইলে ও যা বলল, সেটা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সত্যি কঠিন। কারণ পুরোপুরি একজন ডাউন-টু-আর্থ অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তববাদী মানুষ আমি। কোনও রকম, হেঁয়ালি বা অবাস্তবতা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।

একতা জানাল, ছবিটার ওই কবরে আদৌ আমার গ্রেট এ্যানি (দাদিমার মা) শুয়ে আছেন কি না, কেউ জানে না। তুমি বরং ছবিটা নিয়ে যাও। সময় নিয়ে ভাল করে দেখো। তা হলেই বুঝবে আমি কী বলতে চেয়েছি।

একটু রাগত স্বরেই জানিয়ে দিই আমি, সে না হয় দেখব। তুমি শুনে রাখো, একতা, আমি কিন্তু ভূত-ফুত কোনও কিছুতে বিশ্বাস করি না। তাই আমাকে প্লিজ গাঁজাখুরি গপ্পো শোনাতে এসো না। তাতে লাভ হবে না কিছু।

এর উত্তরে একতা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, যেন মারাত্মক ভুল কিছু বলেছি। চরম অন্যায় করেছি। এবং এর ফল আমাকে হাতেনাতে পেতে হবে।  

একতা কষ্ট পেয়েছে ঠিক, কিন্তু তাতে আমার বয়েই গেল! সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে এখানে এসেছি একটু এগিয়ে যেতে, ভূত-প্রেতের বিশিষ্ট গবেষক হিসেবে নিজেকে বিশ্বদরবারে হাস্যকর করার জন্য নয়। আমি যথারীতি ডেরায় ফিরলাম। একতার বিএমডব্লিউ আমাকে ড্রপ করে দিল। এর ঠিক দুদিনের মাথায় দুটো ঘটনা ঘটল। দুটোই আকস্মিক এবং যারপরনাই অবাস্তব।

সানডে টাইমস ট্যাবলয়েডে খবর বেরোল, ইউকের অন্যতম শরিক দেশ ওয়েলসের এক শহরে গরিক কাসল নামে একটি জায়গা আছে। সেই পুরনো দুর্গে কাল রাতে মহিলা ভূত বা প্রেতিনী দেখা গেছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষ করেছে এই ঘটনা। এ খবরের পুরোটাই সত্যি, একটুও মিথ্যের মিশেল নেই।

এই অব্দি ঠিক ছিল। এ কথা কে না জানে, ভূত-প্রেত বিষয়ক গালগপ্পোর আদি নিবাস তথাকথিত পশ্চিমা বিশ্ব। ইউরোপিয়ানরা ভূতের গপ্পো পেলে স্ত্রীকে আদর করতে ভুলে যায়। গপ্পে যথেষ্ট রস পেলে পেটের খিদেও থাকে না। বিলিতিরা ভূত দেখবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! কিন্তু সানডে টাইমস্ সবিস্তারে লিখেছে, উইলি কেভিন নামের সেই ভদ্রলোক (নাকি ভূতলোক) প্রেতিনী দেখে তার ছবিও তুলেছেন। সেই তরতাজা ভৌতিক ছবি ছেপেছে পত্রিকাটি। ক্ষণভঙ্গুর গরিক কাসলের জরাজীর্ণ কার্নিশে দেখা যাচ্ছে এক অল্পবয়সী মেয়ের ছবি। দেখতে অবশ্য সাধারণ মানুষের মত নয়, মেয়েটির ঠোঁটে কাঁচা-রক্তের আভাস আছে। ব্যস, তামাম গ্রেট ব্রিটেন এই খবরে পপকর্নের মত সোৎসাহে ফুটতে শুরু করেছে। সবার আগে ব্যাপারটা আমার নজরে : আনল মিস একতারিনা, আমার বন্ধু।

কী, এবার বুঝলে, নীল, তোমার-আমার হিসেবের বাইরেও কিছু আছে! সানডে টাইমস্ তো আর ভুল ছাপেনি! একতার কণ্ঠে স্পষ্ট ব্যঙ্গ।

বিলক্ষণ! সানডে টাইমস্ কখনও ভুল ছাপতে পারে না। কিন্তু ওই ফটোগ্রাফার উইলি কেভিন নামের লোকটা তোমার কোনও আত্মীয় বুঝি! তুমি চাইলে আর অমনি সে একখানা জলজ্যান্ত ভূতের ছবি তুলে ছেপে দিল! ইচ্ছে করেই একতাকে খানিক খোঁচালাম।

তুমি কী বলতে চাও, নীল! আমাদের পত্রিকাঅলারা স্রেফ স্টান্টবাজি করে চলে? দে হ্যাভ রিয়েলি সামথিং টু শেয়ার উইদ আস!

অফকোর্স। খবরটা মিথ্যে, তা তো আমি বলিনি। জাস্ট বলতে চাইছি, বেচারা কেভিন ক্যামেরা নিয়ে সেজেগুজে কী করে ভূতের দেখা পেল! ভূতের সঙ্গে আগে থেকেই তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বুঝি!

ব্যস, এতেই খেপে ঝাল বেচারা একতারিনা। বগুড়ার ধানিলঙ্কা চিবানোর মত ফুঁসতে লাগল। আমি নাকি ওদের দেশের ভূতদের অপমান করেছি। এ অপরাধ নাকি ক্ষমার অযোগ্য। ওর বক্তব্য, এ অন্যায়ের কোনও রেয়াত হয় না। যাঁদের আমি অপমান করেছি, সেই ভূতগণ নিজেরাই আমাকে। চরম শিক্ষা দেবে।

এর পরের ঘটনাটা একটু অন্যরকম।

হাস্যকর নয়, ভয়ঙ্কর।

ভূতের ভুয়োমির বিষয়ে আমি এতকাল মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম। রাতের ব্যাপারটা আমাকে বড় কাহিল করে দিয়েছে। রাত তখন বোধ হয় একটা-দেড়টা হবে। লণ্ডনের বাঙালি এলাকা ব্রুকলেনের পেটিকোট মার্কেট থেকে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে আজ। সন্ধ্যায় ভারী নাশতা করেছি, তাই ডিনারের তাড়া নেই। তা-ও বাসায় ফিরে শুতে যাবার আগে কফিসহযোগে মেক্সিকান টোস্ট খেলাম। বাইরে শীতের প্রাবল্য, তাই শহর লণ্ডন আজ আগেভাগেই সুনসান হয়ে গেছে। ঠাণ্ডায় জবুথুবু, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য। রেডিয়েটরের তাপ-নিয়ন্ত্রক চাবিটা খানিক চাগিয়ে দিলাম। তারপর বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসলাম একতার দেয়া ছবিটা নিয়ে। দেখিই না এতে কী আছে!

ছবি যেন শুধু ছবি নয়!

আশ্চর্য! দিনের বেলা যা চোখে পড়েনি, এখন তা দিব্যি স্পষ্ট ধরা দিল! ..

শেড়অলা টেবল-ল্যাম্পের মরা আলোয় ছবিটা যেন অন্যরকম মনে হলো! একতা বারবার জানতে চাইছিল দুজন মানুষের বাইরে ছবিতে আর কিছু দেখা যায় কি না! ছবিটা খুব স্পষ্ট নয়, আগেই বলেছি। বরং বেশ হেইজি! কিন্তু তা-ও বুঝতে অসুবিধা হয় না, ছবিতে দুজন মানুষের ঠিক পেছনে আরও একজন। একটা অবয়ব যেন উঁকি দিচ্ছে। এই তৃতীয় মানুষটি কে!

এক থুথুরে বৃদ্ধার ছবি বলে ভ্রম হলো। ভ্ৰম, নাকি সত্যি! শীর্ণ দেখতে, লোলচর্ম। বয়স আন্দাজ করা যায়, অন্তত নব্বই। একতা বলেছিল, তার গ্রেট-এ্যানি মারা যান বেশ বয়সে। কেমন করে মারা গেছেন, বা তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল কি না, তা সে বলেনি। এমনও হতে পারে, একতা সে কথা জানেই না।

কবরখানায় ভোলা ছবিটায় এই তৃতীয় ব্যক্তির অস্তিত্ব ক্রমশ প্রকট হলো। তিনি যে একতার পূর্বসুরি, বুঝতে অসুবিধা হলো না। চেহারায় মিল আছে। কেমন এক অদ্ভুত নেশার ঘোরে বারবার ছবির দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম। ছবি থেকে চোখ সরাতে পারছি না। সহসা ব্ল্যাক-আউট, লণ্ডনে যা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। নাকি আমার টেবল-ল্যাম্পের ফিউজ কেটে গেল! চারপাশে প্রগাঢ় আঁধার, অপলক চেয়ে থাকি একতার দেয়া ছবিটার পানে।

সে কী! আমার আশপাশে টের পাই কারও অস্তিত্ব। পায়ের আওয়াজ, নিঃশ্বাসের শব্দ, কিংবা মৃদু অথচ অনুভবযোগ্য আনাগোনা! ভুল শুনছি না তো! সহসাই মনে পড়ল সানডে টাইমসে পড়া গরিক কাসলের সেই প্রেতিনীর কথা। চোখের পাতে কারও ছায়া ভাসছে বুঝি! একতার ছবিতে ছায়াবয়ব আর ওয়েলসের গরিক দুর্গের কার্নিশে ঝুলে থাকা অশুভ অস্তিত্ব আমার সামনে নিমিষেই একাকার হয়ে গেল। বুঝলাম না, আমি সত্যি জেগে আছি, নাকি স্বপ্ন দেখছি কোনও!

অথচ ছবির পেছনের ওই ছায়াশরীরের সঙ্গে একতার চেহারার দারুণ মিল। মনে হয় যেন ওটা একতার ভবিষ্যৎ অবয়ব। আরও বয়স হলে ও দেখতে এমনই হবে।

মনে হলো, একতাকে সেলফোনে ট্রাই করি। জানতে চাই, ওর গ্রেট-এ্যানি দেখতে ঠিক কেমন ছিলেন! একটু আগে যেমন দেখলাম, সে-রকম কি না! বা আদৌ কাউকে দেখেছি কি! পুরোটাই বিভ্রান্তি নয় তো! সন্ধের নাশতাটা বেশ ভারি হয়ে গিয়েছিল আজ! ঝলসানো হরিণের মাংস আর পেশোয়ারি পরোটা। তারপর ভরপেট সফ্ট ড্রিঙ্কস, ক্যাডবেরি চকলেট ডজনখানেক। চকলেট এখানে ভারি সস্তা।

এর পরের ঘটনা বিশ্বাসের অতীত, বলা যায় ঐন্দ্রজালিক। কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে না, কারণ আমি নিজেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তবে ঘটনাটা ঘটেছে, আমার চোখের সামনেই। সিইং ইয বিলিভিং। বিশ্বাস না করে উপায় কী!

পরদিন আলো ফুটতেই একতার ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টেডের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। সেন্ট্রাল, সার্কেল ও মেট্রোপলিটন-তিনখানা টিউবলাইন বদল করে অনেকটা পথ গেলে একতার বাসা। এখানেই থাকতেন বিখ্যাত রোমান্টিক কবি জন কিট্‌স্। হ্যাম্পস্টেড হিথের বাড়িতেই এক উইলো  গাছের নিচে বসে কিটস্ লিখেছেন তাঁর মোস্ট ফেমাস গীতিকবিতা: অড টু নাইটিঙ্গেল। এসব কথা এমন আমাকে বলেছে। ওর দাদার সঙ্গে কিটসের বাবার খুব খাতির ছিল শোনা যায়। শুনে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। জন কিটস্ কত বড় মাপের কবি! তিনি লিখেছেন, বিউটি ইয টুথ, টুথ ইয বিউটি। কিংবা আ থিং অভ বিউটি ইয জয় ফরএভার। বিশ্ব-সাহিত্যে সত্য ও সুন্দরের এমন বিশ্বস্ত উপাসক আর হয় না।

একতা বাড়িতে নেই, আমি হতাশ। ভোরে নাকি বেরিয়ে গেছে। কখন ফিরবে, কেউ বলতে পারে না। অথচ একটা প্রশ্ন তাকে আমার করতেই হবে। উত্তর না জানা অব্দি শান্তি নেই। ওর সেলফোন বন্ধ, নরমালি যেমন থাকে। এমন বিরক্তিকর মেয়ে আর হয় না। মেজাজ-মর্জি কখন বিগড়াবে, বোঝার উপায় নেই।

একটা চিরকুট রেখে এলাম একতার বাসায়। এসেই যেন আমাকে কনট্যাক্ট করে। ব্যাডলি নিডেড। কিন্তু তাতেও মনের শান্তি নেই। পাশেই টেকো এক্সপ্রেস থেকে টিউনা স্যাণ্ডউইচ ও কন্টিনেন্টাল বিনস দিয়ে নাশতা সারলাম। তারপর নিরন্তর প্রতীক্ষা। জানতেই হবে, একতার দেয়া। ছবিতে যে গ্রেভইয়ার্ড দেখা যাচ্ছে, ওটা কোথায়। আই নিড টু ভিযিট দ্য প্লেস! আরজেন্টলি। কে সে, কাল গভীর রাতে যে আমার বেডরুমে প্রবেশ করেছিল!

অবশেষে একতাকে যখন পাওয়া গেল, তখন নেমেছে। রাত। শীতের দাপট আজ আরও বেশি। ঠাণ্ডায় দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। হাঁটুও যেন কথা শুনছে না। পা পিছলে যাচ্ছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা। ডিসেম্বরের শেষ দিকে লণ্ডন শহর স্রেফ দোজখ। বিশেষত শীতকাতুরে এশীয়দের জন্য। বলা বাহুল্য, আমি তাদের দলে।

মধ্য লণ্ডনের ওয়ারেন স্ট্রিটে একতারিনার সঙ্গে মোলাকাত হলো আমার। ও তখন ঝোড়ো কাক। এই মেয়েকে আমি চিনি না। চোখ বসে গেছে, ঘোলাটে, চাহনি, কণ্ঠস্বরও বদলে গেছে। ও বলল, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, নীল। ভাল, তুমি এসে পড়েছ।

কেন, বলো তো?

আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে। তুমি যাবে আমার সঙ্গে? আশা করি আমাকে নিরাশ করবে না, নীল, একতার কণ্ঠে অনুনয়।

জেদি গলায় আমি বললাম, আমিও একখানে যেতে চাই যে! আজই, এক্ষুণি। আমার যে আর কোনও উপায় নেই। এই রহস্য ভেদ না হলে আমার চোখে ঘুম আসবে না।

কোথায় যাবে?

তোমার দেয়া ছবির পটভূমি, সেই কবরখানায়, হিস হিস করে বললাম।

শুনে ও এমন চমকাল, বলার নয়!

অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল একতা। বলল, কী আশ্চর্য! আমিও যে গ্রেভইয়ার্ডের কথাই ভাবছিলাম। ইনফ্যাক্ট, সারাটা দিন আমি ওখানেই ছিলাম।

ফিরে এলে কেন তবে?

কারণ তোমাকেও সঙ্গে চাই। রাতটা বড় নিরাপদ নয়।

তার মানে তুমি ভয় পাচ্ছ, তাই না, একতা! মওকা পেয়ে জবরদস্ত খোঁচা দিয়ে ফেললাম। প্রতিটি পুরুষ জীবনে একবার অন্তত তার অপমানের বদলা নিতে চায়। আমিও সুযোগটা লুফে নিলাম। তখনও জানতাম না, কী ভয়ঙ্কর চমক অপেক্ষা করছে আমার সামনে।

একতা এসব গায়ে মাখেনি। বরং কঠিন নৈর্ব্যক্তিক সুরে বলল, আমাকে সেখানে যেতে হবে। তুমি যাবে কি না বলো। না গেলে আমি একাই যাব। যাবই।

ওর কণ্ঠের কাঠিন্য আমাকে তাড়িত করল। কেন যেন মনে হলো, কোনও সর্বনেশে পথে এগোচ্ছি আমরা। আমি ও একতা এক অমোঘ নির্দেশে ছুটে চলেছি নিরুদ্দেশের দেশে।

কবরখানা কোথায়, জানতে পারি?

জেনে কী লাভ! তামাম লণ্ডনের কতটুকু তুমি চেন! তা ছাড়া, জায়গাটা শহরের চৌহদ্দির ভিতরে নয়, বলা যায় শহরতলী, বা খানিক গ্রামের দিকে।

তাও বলো, জানা থাকলে ক্ষতি কী!

একতা দুর্বোধ্য সুরে বলল, ককফস্টার ফার্মহাউস। ওখানে বক্সহিল বলে একটা জায়গা আছে। একটা পাহাড়, দেখতে বাক্সের মত চৌকো। খুব নিরিবিলি আর সুনসান। যেন কোনও ফিউনেরাল অনুষ্ঠানে বাইবেল পড়ে শোনাচ্ছে।

কখন যাচ্ছি আমরা?

এখনই। নো ওয়েস্ট অভ টাইম। একতার যেন আর তর সইছে না।

লীলায়িত বিএমডব্লিউ চেপে আমরা যখন রওনা হলাম, তখন নেমেছে রাত। লাল-নীল হাজারো রঙে সয়লাব শহর লণ্ডনের অলিগলি। এই শহরের কিছু কিছু রাস্তা এত চাপা, গলি বলেও ঠিক বোঝানো যায় না। এখানে গাড়ির গতি সীমিত। মাখনের মত গলে বেরিয়ে যায় গাড়ি, সড়ক দুর্ঘটনার কেস নেই বললেই চলে।

লণ্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা কিউ গার্ডেনের ছায়াসুনিবিড় বুনোপথ ধরে সামনে এগোই।

একতারিনা গাড়ি ভালই চালায়। অটো গিয়ার, সুদলি সাঁই-সাঁই করে বাতাস কেটে পেরিয়ে যায় মাইলের পর মাইল। আমাদের দেশের হাইওয়েকে এখানে বলে মোটরওয়ে। কোনও ঝাঁকুনি নেই, কারণ এখানে হাডে পারসেন্ট কাজ হয়। ঠিকাদাররা ঠকবাজি করে না। তাদের বাড়তি পারসেন্টেজ গুনতে হয় না।

প্রায় ঘণ্টা দেড়েক যাবার পর থামল একতা। গাড়ি পার্ক করল বুনো রাস্তার ধারে।

কী ব্যাপার, থামলে কেন! এসে পড়েছি বুঝি?

নো, ডিয়ার! সবে সন্ধে। এখনও অনেকটা বাকি।

চলো তা হলে, এগোই।

যাবো তো। তবে তার আগে গলাটা একটু ভিজিয়ে নেয়া দরকার। হেভি টেনশান হচ্ছে। গাড়ির খাবার পেট্রলও নিতে হবে।

রোডসাইড ইন।

বা ওটাকে পাব বলতে পারেন। নামখানা জবরদস্ত, ফ্যান্টম বারমেড। গা-ছমছমে পরিবেশের সঙ্গে খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে। মানে করলে দাঁড়ায়: ছায়াশরীরী মদ্যপরিবেশনকারিণী।

ওসব হার্ড-ড্রিঙ্কস্ গেলা আমার ঠিক আসে না। আমি কিলোখানেক কোক নিয়ে, নিলাম। পানির মত ঢকঢক করে হুইস্কি গিলছে একতা। একেবারে খাঁটি, কিচ্ছু মেশায়নি সঙ্গে।

কফস্টার ফার্মহাউসে গাড়ি থামল রাত একটার কিছু পরে। এখানে বিজলিবাতির কোনও কারসাজি নেই। বোঝা যায়, এলাকাটা নিপাট গ্রাম বা বিরান ভূমি। প্রচণ্ড শীতে গাড়ি থেকে নামতে সাহস হচ্ছে না। যদিও আমরা দুজনেই শরীরের আগাপাছতলা সব মুড়ে নিয়েছি ভেড়ার লোমে তৈরি ওভারকোট, মোটা উলেন র‍্যাপার আর বাঁদুরে টুপিতে। যেন। নতুন কোনও চন্দ্রযানে চেপে চাঁদের বুকে বাড়ি বানাতে যাচ্ছি। আমরা।

এবার হাঁটতে হবে আমাদের। সামনে ওই যে পাহাড় দেখছ, ওটাই বক্সহিল। ওই পাহাড়ের ওপারের ঢালে সেই গ্রেভইয়ার্ড। ওখানেই হয়তো শুয়ে আছেন আমার সার্কাস লেড়ি প্রমাতামহী।

ওঁর নাম কী ছিল? নেহাত বোকার মত প্রশ্ন করি আমি। পরে মনে হলো, এ প্রশ্নের আদতেই কোনও মানে নেই। এক শ বছর আগে যে মরেছে, তার নামে কী এসে যায়!

একতা বলল, ওঁর নাম সিলো সিম্পসন। অ্যাংলো স্প্যানিশ মহিলা, সার্কাসের দলে কাজ করতেন!

রিয়েলি! সার্কাসে কাজ করতেন মানে, নাচতেন বুঝি?

না, নাচাতেন। মায়ের মুখে শুনেছি তিনি সার্কাসের দলে হিংস্র বাঘেদের নাচাতেন। ওঁর কণ্ঠে নাকি জাদু ছিল। তাবৎ পুরুষেরা ওঁর প্রেমে হাবুডুবু খেত। তবে সিলোর জীবনের শেষটা ছিল বড় করুণ।

মানে! কী হয়েছিল ওঁর?

মানে, স্বাভাবিক হয়নি ওঁর মৃত্যুটা। অনেকে অনুমান করেন, যে সার্কাস টিমে তিনি কাজ করতেন, সেই টিমের মালিক আর চিফ ম্যানেজারের লালসার বলি হন সিলো। এদের কেউ একজন দাদিমার মাকে গলা টিপে বা বিষ খাইয়ে হত্যা করে।

সো স্যাড! আমি যুগপৎ দুঃখ ও বিস্ময় প্রকাশ করি। এটা ইংরেজ কেতা। মানতে হয়। হাঁটতে হাঁটতে আমরা প্রায় বক্সহিলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। শীত এখন আর তত লাগছে না। সয়ে গেছে। বিড়ালের মত সাবধানে পা ফেলে চলতে হচ্ছে, কারণ বক্সহিল এলাকাটা পাথুরে। মাঝে মাঝে অমসৃণ পাথরের চাই মুখ উঁচিয়ে আছে। এর সামান্য ঘষা বা খোঁচা অ্যাডিডাস ব্র্যাণ্ডের কেডস ফুটো করার জন্য যথেষ্ট।

এর পরের ঘটনা বর্ণনাতীত ও ভয়াবহ। বর্ণনাতীত এই কারণে যে, পুরো দৃশ্যপট আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি, আবার মোটা দাগে বলতে গেলে, তা উপলব্ধিরও বাইরে। বক্সহিল গ্রেভইয়ার্ডের পাশে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো, আমি এখানে কেন এসেছি! আমার তো কোনও উপলক্ষ নেই! একতাই বা কেন এল! শখানেক বছর আগে ওর প্রমাতামহী সার্কাস দলের নৃশংসতার শিকার হয়েছে, তাতে এত দিন বাদে মাঝরাতে তার কবর জেয়ারতের কী যুক্তি থাকতে পারে!

আসলে মানুষ যখন ভুল করে, যুক্তি-বুদ্ধির ধার ধারে না বলেই তা করে। আমরা এখন বক্সহিল কবরখানার ঠিক দশ গজের ভিতরে অবস্থান করছি। বিশাল এলাকা জুড়ে কবরখানায় শয়ে শয়ে মানুষের কঙ্কাল নিথর শুয়ে আছে। কার কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, কে জানে!

আমাকে চমকে দিয়ে চোখের পলকে কবরের কাছে ছুটে গেল একতারিনা। কবরটা একটু ভিতরের দিকে, একতা হাত তুলে ইশারায় ডাকল আমাকে। আকাশে পানসে চাঁদ ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। আমি আবছা আঁধারে তড়িতাহতের মত চেয়ে দেখছি, পাগলের মত দুহাতে কবরের মাটি খুঁড়ছে একতা। পাশেই উঁচু হয়ে আছে বৃহদাকার ক্রুশ চিহ্ন।

তারপর গলা চড়াল একতা। নীল, এদিকে এসো।

বক্সহিলের চারদিকে পাহাড়ের বেষ্টনীতে বাধা পড়ল। একতার কণ্ঠ। অনুরণিত হলো, নী-ই-ই-ল, এ-স্-স্-সো!

আমি ভয় পাচ্ছি। আমার শরীর ঘামতে শুরু করেছে। কানের ফুটো দিয়ে বেরোল গরম হলকা। ভুল দেখছি?

তারপর মুহূর্ত মাত্র। একতাকে আর দেখা গেল না। সেখানে মাথা তুলল অদ্ভুত এক জিনিস! মুণ্ডহীন কঙ্কাল।

আমি ভুলে গেলাম চোখের পলক ফেলতে। কিংবা ভয়ে। বন্ধ করে ফেলেছি চোখ। একতার দেয়া ছবিতে যাকে দেখেছি, সেই ছায়াশরীর কফিনের পাল্লা খুলে বেরিয়ে এসেছে। একতা পাশে নেই। বা আছে ও নেই-এর মাঝামাঝি কোথাও বিরামহীন দুলছে।

কঙ্কালের দাঁতে তাজা রক্ত। দশ গজ খুব বেশি দূরে নয়, তাই বেশ দেখলাম, একতা তখনও দুলছে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মত। তারপর?

বিভ্রান্ত হলাম, বুঝলাম না আমার ছুটে পালানো উচিত কি না। তবে আমার বিভ্রান্তি বা অনিশ্চয়তা কেটে গেল খুব তাড়াতাড়ি। কারণ সেই রক্তমুখো ছায়াশরীর ক্রমশ এগিয়ে এল আমার দিকে। আমার বন্ধু একতা নিমিষে ভ্যানিশ! নাকি ডুবে গেল সদ্যখোঁড়া কফিনের ভেতর! ওর প্রমাতামহীর কঙ্কাল বুঝি আর কবরে থাকবে না। মিশে যেতে চাইছে লোকালয়ে, জনারণ্যে। আতঙ্কের ঠাণ্ডা স্রোত নামল আমার শিরদাঁড়া বেয়ে। দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। আমি বোধ হয় জ্ঞান হারাচ্ছি।

নিমিষে মনে হলো, চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা। নিতান্ত স্বার্থপরের মত একতাকে ফেলে ছুট দিলাম। অচেনা পথে যেদিকে পারি দৌড়ালাম। বারকয়েক পাথরের চাইয়ে ঠোক্কর খেয়ে পড়লাম মুখ থুবড়ে। তবুও থামলাম না। কারণ, জান বাঁচানো ফরজ।

ভাগ্যিস বিলেতে আসার আগে ড্রাইভিংটা শিখেছি। এবার কাজে লেগে গেল। একতার, বিএমডব্লিউতে চেপে সোজা মোটরওয়ে। তারপর…আর কিছুই মনে নেই।

এ কাহিনীর এখানেই শেষ। তবে কিঞ্চিৎ এপিলগ এখনও বাকি। পরদিন সানডে টাইমস্ লিখল, বক্সহিল গ্রেভইয়ার্ড থেকে কফিন উধাও! এক শ বছর আগের সার্কাস লেডি মিস সিলো সিম্পসনের কফিনে অতর্কিত হামলা। এর পরের খবর সানডে টাইমস জানে না, আমি জানি। আমার প্রিয় বান্ধবী একতারিনাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাবে না কখনও। সম্ভবত ছায়াশরীর হাপিস করে দিয়েছে তাকে।

অরুণ কুমার বিশ্বাস

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *