পাশবিক

পাশবিক

ব্ল্যাকওঅটর রিজ। লস্ট ক্রিক, কলোরাডো।

জঙ্গলের মধ্যে ফাঁকা একটা জায়গা বেছে নিয়ে তাঁবু ফেলা হয়েছে এক জোড়া। ক্যাম্পফায়ারের উষ্ণতার ঘেরের মধ্যে বসে সাপার শেষ করেছে মানুষগুলো, এরপর গিয়ে ঢুকেছে তাঁবুতে। অদূরে জ্বলছে এখনও আগুনটা, তবে ক্রমে তেজ কমে আসছে ওটার।

সন্ধ্যা থেকে সেই যে রাতের রাগিণী ধরেছে ঝিঁঝিরা, থামাথামির নাম নেই। একঘেয়ে আওয়াজ হলেও বিরক্তি আসে না তাতে এক রত্তি। কারণ, শব্দটা প্রাকৃতিক।

সব মিলিয়ে তিনজন ওরা- ফ্লয়েড, টিম আর ম্যাডি। তরুণ বয়সী তিন বন্ধু। একটায় রয়েছে টিম আর ফ্লয়েড, অন্য তাঁবুটায় ম্যাডি।

হ্যাণ্ডহেল্ড ভিডিয়ো-গেমস খেলছে দুই বন্ধু। জয়স্টিকের উপরেই গেমের ডিসপ্লে। ব্লু-টুথ সিসটেম রয়েছে যন্ত্রে, সেজন্য আলাদা-আলাদা সেট নিয়েও পার্টিসিপেট করতে পারছে একই গেমে।

ওরে, শালা! হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ফ্লয়েড। একের পর এক ফাউলই করছিস শুধু…

তোর মতন আনাড়ি তো বলবেই এ কথা,  মুখ ঝামটে জবাব দিল টিম।

ম্যাডি ওদিকে ভিডিয়ো-সেলফি রেকর্ড করছে ফোনে।

হাই, ডেইজি। হাই, রনি। ভাই-বোনের উদ্দেশে হাত নেড়ে হাই করল ম্যাডি। বোকাটে একটা হাসি ধরে রেখেছে। মুখে। কী অবস্থা? এক হপ্তা পুরল আজ আমাদের ক্যাম্পিং এর। ব্ল্যাকওঅটর রিজের কাছাকাছি রাত কাটাচ্ছি এখনও…

কালো একটা ছায়া খেলে গেল ছেলেটার পিছনে, তাঁবুর গায়ে। এত দ্রুত সরে গেল ছায়াটা যে, ঠাহরই করা মুশকিল, ঠিক কী ছিল ওটা। তবে অস্বাভাবিক কিছু যে, কোনও সন্দেহ। থাকতে পারে না এতে। মুহূর্তটা বন্দি হয়ে গেল ম্যাডির সেলফোনে। কিন্তু ও টের পায়নি কিছু। বা পেলেও রাতের জঙ্গলের হাজারও ছায়ার নড়চড় ছাড়া ভিন্ন কিছু মনে হয়নি ওর কাছে।

ভালোই আছি আমরা, রেকর্ডিং চালিয়ে যাচ্ছে ম্যাডি। নিরাপদে আছি। কাজেই, একদম চিন্তা করবে না, কেমন? কালকে আবার কথা হবে। টেক কেয়ার। বাই। এবার হাত নেড়ে বাই করল। তারপর স্টপ টিপে বন্ধ করে দিল রেকর্ডিং। দু -চারবার এখানে-ওখানে টেপাটেপি করে সেণ্ড করে দিল মেসেজটা। বা অন্য তাঁবুতে তখন গেম-সেটটা এক পাশে ছুঁড়ে ফেলেছে। ফ্রয়েড

ওই, ওই! হই-হই করে উঠল টিম। যাস কই? জিতছি দেখে পালাচ্ছিস, না?

ততক্ষণে টেন্টের জিপার খুলতে শুরু করেছে ফ্লয়েড।

ন-না, ঘাড় ফিরিয়ে জবাব দিল।

তা হলে?

ডাক দিয়াছে প্রকৃতি মোরে… সুর করে বলল ফ্লয়েড।

রইব না আমি কিছুক্ষণ তোদের মাঝারে… হায়, রে, ডাক দিয়াছে প্রকৃতি মোরে…

দূর, শালা, হারু পাটি! আপত্তির ভঙ্গিতে মুখ খিচাল টিম। চলবে না এসব এক্সকিউজ।

ফিচেল হেসে মুখ ভেঙচাল ফ্লয়েড।

বাইরে বেরিয়ে চেইন টেনে দিল আবার।

মিহিন হাওয়া পরশ বোলাচ্ছে গায়ে। নিজেকে হালকা করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল একটু দূরের পুরানো এক সাইপ্রেসের বিপরীতে। ভূতের মতো চেহারার সুউচ্চ এই জাতের গাছের আধিক্য এদিকটায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগের আবহ এনে দিয়েছে জঙ্গলে।

পট-পট আওয়াজে আগুনে পুড়ছে কাঠ। রাতের স্তব্ধ পরিবেশে কানে ধরা দিচ্ছে স্পষ্ট।

প্যান্টের চেইন খুলে জিনিসটা বের করতেই মট করে শব্দ হলো একটা। মাটিতে পড়ে থাকা গাছের ডাল মাড়িয়েছে। যেন কোনও কিছুতে।

শব্দের উৎসের দিকে ঝট করে ঘাড় ঘুরে গেল ফ্লয়েডের। আঁধারে গাছের পাতার ভৌতিক ঝিরিঝিরি ছাড়া কিছুই পড়ল।

নজরে। হঠাৎই খেয়াল হলো, কখন যেন থেমে গেছে। ঝিঁঝিদের কলরব।

তা হতেই পারে। মাথা ঝাঁকিয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের দিকে মনোযোগ দিল ফ্লয়েড।

পিশাবের মাঝখানেই চাপতে হলো আবার। কী রকম যেন একটা আওয়াজ ঢুকেছে কানে। শ্লেষ্ম জড়ানো গলায় গড়গড়া করছে কেউ যেন!

আওয়াজটার পীড়াদায়ক কাঠিন্য চমকে দিল ওকে। কোত্থেকে আসছে ওটা? উপর

সময়ই পেল না আর ভাববার। বিকট এক গর্জন তালা লাগিয়ে দিল দুই কানে।

মিস্টি গ্রিফিন-এর টিয়ারস অভ দ্য সাইলেন্সড পড়তে ধরেছিল ম্যাডি, গর্জনটা- সেই সঙ্গে কানে এসে ধাক্কা মারল ফ্রয়েডের আতঙ্কিত চিৎকার। মাঝপথেই গলা টিপে থামিয়ে দেয়া হলো যেন আওয়াজটা।

টিমেরও আত্ম চমকে গেছে পর-পর দুটো দু রকম আওয়াজ শুনে। বন্ধুর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বিছানা থেকে উঁচু হলো ও গড়ান দিয়ে।

ফ্লয়েড! টিম! নিজের তাঁবু থেকে হাঁক ছুঁড়ল ম্যাডি।

হচ্ছেটা কী, বল তো! ঠিক আছিস তো তোরা?

আছি-ই! অনিশ্চিত গলা শোনা গেল টিমের।

ভয়ে ভয়ে মাথা বের করল ও তাঁবুর চেইন খুলে। পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ডটা। সতর্ক চোখে জরিপ করে নিল ইতিউতি তাকিয়ে। কই, স্বাভাবিকই তো মনে হচ্ছে সব কিছু!

তারপর একটা গরগরানির আওয়াজ কানে যেতে মুখ তুলে চাইল উপরে।

হেঁচকা টান দিয়ে তুলে নেয়া হলো ওকে তাঁবু থেকে। হতভাগ্য টিমের তীব্র আর্তনাদ দ্বিতীয় বারের মতো ফালা ফালা করে দিল রাতের শরীর।

জ্বলতে থাকা লণ্ঠনটা তড়িঘড়ি করে নিভিয়ে দিল ম্যাডি। ঢোক গিলছে ঘন ঘন। সৎ করে-করে তাঁবুর বাইরে সরে যাচ্ছে বিচিত্র ছায়াকাঠামো। আগুনের আভায় ওটাকে অনুসরণ করার চেষ্টায় এদিক থেকে ওদিক সরছে ওর ভয়ার্ত চোখ দুটো।

আচমকাই থেমে গেল গুরুগম্ভীর গরগরানি। নেমে এল স্নায়ু-বিধ্বংসী নীরবতা। কেবল একটা সেকেণ্ডের জন্য।

ধারাল নখরযুক্ত একটা থাবা ফড়াত করে চিরে দিল তাঁবুর দেয়াল।

নিখাদ আতঙ্কে গলা ফাটাল ম্যাড়ি।

দুই

ধড়মড় করে জেগে উঠল আয়মান। উঠেই খেয়াল করল, ধূসর মেঘে মরে এসেছে দিনের আলো। কেমন ঘুম ধরানো স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। বিষণ্ণ প্রভাব ফেলে মনের উপরে। রওনা হওয়ার সময় এমনটা ছিল না। স্বর্ণালি রোদ ঝলমল করছিল তখন। [ পিটপিট করল ও চোখ দুটো। রগড়ে নিল ডান হাতের তর্জনি আর বুড়ো আঙুলের সাহায্যে। ঘুমের রেশ আঠার মতো লেগে রয়েছে যেন মগজের ভিতরটায়।

ও যে সিটটায় বসেছে, শটগান সিট বলে সেটাকে। পাশে গাড়ি চালাচ্ছে আয়ান। সাউণ্ড-সিসটেমে বাজছে: এসো নীপবনে… ছায়াবীথিতলে… এসো করো স্নান নবধারাজলে… এসো নীপবনে… ছায়াবীথিতলে…

বাঙালি ওরা। যমজ। আয়ানের দেড় মিনিটের ছোট আয়মান। উনিশ শ নব্বইয়ের দশকে গ্রিন কার্ড নামের সোনার হরিণের দেখা পান ওদের বাবা আমান ইকরামুল্লাহ। সপরিবারে থিতু হন আমেরিকায়। আয়ান-আয়মান তখনও বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখেনি। এরপর ক্যানসাসের উপর দিয়ে কত মেঘই এল, গেল। সেদিনের ছোট্ট সেই মানিকজোড় এখন তেইশ বছরের টগবগে দুই সুদর্শন তরুণ।

ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকাল আয়ান। নাইটমেয়ার?

চকিতে বড় ভাইকে দেখল আয়মান। কৌতূহলী মনে হচ্ছে আয়ানকে।

ডে-মেয়ার বলা উচিত, স্বভাবসুলভ রসিকতায় মাতল ছোটজন, মনটা ভার হয়ে আছে যদিও।

খেক।

কিছুক্ষণ চুপচাপ ড্রাইভ করল আয়ান। তারপর জিজ্ঞেস করল: কী দেখলি?

উম? ওহ… দেখলাম, ফুল দিতে গেছি জানি কার কবরে। যেই না নামিয়ে রেখেছি তোড়াটা, অমনি একটা কঙ্কালের-হাত কবর ফুড়ে বেরিয়ে এসে চেপে ধরল আমার কবজি…

গলা খাঁকারি দিল আয়ান। সি-গ্রেড হরর ফিল্মের দৃশ্য।

ভয়টা কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস, কথার পিঠে বলে উঠল আয়মান।

তা হলে তো কথাই নেই, হালকা চালে মন্তব্য করল আয়ান। ছবি যেমনই হোক, ভয় পেলেই পুরো উসুল পয়সা।

গাড়ি রাখ। এমন ভাবে বলল আয়মান, যেন নেমে যাবে গাড়ি থেকে।

কেন? বিপন্ন দৃষ্টিতে তাকাল বড়জন।

আমি চালাব।

জায়গা বদল করার পর জিজ্ঞেস করল আয়মান: অলরাইট… কোথায় আছি এখন?

ড্যাশবোর্ডের উপরে রাখা ম্যাপটা তুলে নিল আয়ান। ভাঁজ করা আছে ওটা। দেখে বলল: মাত্র বেরিয়েছি গ্র্যাণ্ড জংশন থেকে।

কলোরাডোর যে অংশটায় চোখ বোলাচ্ছে ও, লাল কালিতে বড় একটা ক্রস দেয়া ওখানটায়।

ইট স উইয়ার্ড, ম্যান! মন্তব্য করল একটু পরে।

কী?

এই যে, ব্ল্যাকওঅটর রিজ…

কী রকম?

জঙ্গল ছাড়া কিছু নেই ওখানে। ম্যাপটা রেখে দিল আয়ান। মিডল অভ নোহোয়্যারে চলেছি আমরা।

একটা সাইনবোর্ডের পাশ কাটাল ওদের ইমপালা। বোর্ডে লেখা:

কলোরাডোর হারানো খাঁড়িতে স্বাগতম।

তিন

রেঞ্জার স্টেশন
লস্ট ক্রিক ট্রেইল
লস্ট ক্রিক ন্যাশনাল ফরেস্ট

সাইনটার পাশে। ধূসর ইমপালাটাকে পার্ক করাল আয়মান। আকাশের মুখ তখনও গোমড়া।

স্টেশনে ঢুকে একটা লোককেও দেখতে পেল না ওরা। বোধ হয় আছে ভিতরের রুমে। ক ন্যাশনাল ফরেস্টের ত্রিমাত্রিক একখানা মানচিত্রের দিকে নজর দিল আয়ান ইকরামুল্লাহ। আয়মান চোখ বোলাতে লাগল কামরার চারদিকে।

ক্যানিয়ন… রুক্ষ প্রান্তর… জঙ্গল আর সোনা-রুপার খনি নিয়ে অঞ্চলটা, ম্যাপ দেখতে দেখতে মন্তব্য করল আয়ান।

ভাই… ডাকল আয়মান। তাকাল ওর দিকে বড় ভাই।

সাইজটা দেখ ভালুক মিয়ার! ভয় লাগে না?

ফ্রেমবন্দি এক দেয়ালের-ফোটোগ্রাফের দিকে নির্দেশ করছে আয়মান। মাটিতে শোয়া অতিকায় এক ভালুকের পিছে দাঁড়িয়ে এক লোক, কাঁধের উপরেশটগান।

জুনিয়রের পাশে এসে দাঁড়াল আয়ান। পড়ল ছবির নিচের ক্যাপশনটা।

এক ডজনেরও বেশি গ্রিজলি আছে এই এলাকায়… আওড়াল বিড়বিড় করে। সিনসিনারি দেখতে দেখতে ঘোরাফেরা করা যাবে না… বুঝলাম।

নিঃশব্দে ওদের পিছনে উদয় হলো এক ফরেস্ট রেঞ্জার। হাতে কফির কাপ। ধোঁয়া উঠছে কাপ থেকে।

লোকটা যখন কথা বলে উঠল, একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াল আয়ান আর আয়মান।

তোমরা নিশ্চয়ই ব্ল্যাকওঅটর রিজের আশপাশে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছ না- বাই এনি চান্স?

ওহ, নো, স্যর,  তাড়াতাড়ি বলল আয়ান। ইউসি বোল্ডার থেকে আসছি আমরা। এনভায়রনমেন্টাল স্টাডির উপরে মেজর করছি। একটা রিসার্চের জন্য… হাসল ও বাকিটা শেষ না করে। ভাইয়ের দিকে এক ঝলক তাকাল আয়মান। লস্ট ক্রিকের পাথর নিয়ে গবেষণা করব আমরা। রিজের দিকে যাবই না,  যোগ করল নিজে।

সন্দেহ গেল না রেঞ্জারের চেহারা থেকে। আমার অনুমান যদি ভুল না হয়… ডেইজি মেয়েটার বন্ধু তোমরা, ঠিক না? তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটা। সাত ঘাটের পানি খাওয়া মাল।

মাইণ্ড রিডার নাকি? ভাবল আয়ান। মুখে বলল: জি জি… ঠিকই ধরেছেন…

আসলে, ডেইজি গার্ডনারকে চেনেই না ওরা। মেয়েটা আসলে ওদের এক ফ্রেণ্ডের পরিচিত। দুই ভাই-ই যে রহস্যের পাগল, জানে ওই বন্ধুটি। সেজন্য তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছে আয়ান আর আয়মানকে। তার ধারণা, বিপদে পড়েছে ডেইজি।

ওয়েল,  বলল বয়স্ক লোকটি। ওকে যেটা বলেছি, ঠিক সেটাই বলছি তোমাদের। ক্যাম্পিং-এর অনুমতি নেয়ার সময় ফর্মে লিখেছিল ম্যাডি: চব্বিশ তারিখের আগে ব্ল্যাকওঅটর থেকে ফিরছে না ও। আজকে দশ চলছে। তার মানে, এই মুহূর্তে নিখোঁজ হিসাবে ধরা যায় না ওকে, তা-ই না?

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল আয়ান।

অযথা দুশ্চিন্তা করতে মানা কোরো তোমরা মেয়েটাকে। আমার ধারণা, ভালোই আছে ম্যাডি… তারুণ্যের পাগলামিতে পেয়েছে হয়তো।

বলব, স্যর। অফিসারের নেমট্যাগটা পড়ল আয়ান। স্যাণ্ডলার। অনুমতিপত্রটার কপি যদি দেখানো যেত ওকে, তা হলে হয়তো শান্ত হতো মেয়েটা…

.

পাঁচ মিনিট পর ফর্মের ফোটোকপি নিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল ওরা। ডেইজিকে দেখানো-টেখানো বাজে কথা, নিজেদের দেখাটাই ছিল উদ্দেশ্য।

সোজা অকুস্থলে রওনা হই না কেন? প্রস্তাব করল আয়মান।

তা তাড়া কীসের এত?

না… ব্ল্যাকওঅটরের কো-অরডিনেটস তো জানি। দেরি না করে রওনা হয়ে গেলে ভালো না? নাকি ভাবছিস, ডেইজির সাথে কথা বলে নিলে লিড পাওয়া যাবে কিছু?

ঠিক তা-ই ভাবছি আমি।

চার

গার্ডনার হাউসের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ওরা। বেল বাজাল

আয়মান। ২ মিনিট খানেক পর খুলে গেল দরজা। জি?

আপনি নিশ্চয়ই ডেইজি… মানে, মিস গার্ডনার? মেয়েটাকে মাথা নাড়তে দেখে যোগ করল, আমার নাম আন্দালিব উন্ন। আর ও হচ্ছে আন্দালিব গুড়। পার্ক সার্ভিস থেকে আসছি আমরা। রেঞ্জার স্যাণ্ডলার পাঠিয়েছে। আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন ছিল কিছু।

ইতস্তত করছে ডেইজি। দ্বিধা ঝেড়ে বলল, আইডি দেখান আপনাদের।

দেখাল ওরা। তদন্তে লাগতে পারে ভেবে আগেভাগেই বানিয়ে এনেছে কার্ডগুলো। ডিজাইনের আইডিয়া পেয়েছে ইন্টারনেট থেকে। ওরা যে আসছে, সে-ব্যাপারে ডেইজিকে কিছু না জানানোর অনুরোধ করেছিল বন্ধুটিকে। ওদের আসল পরিচয় যত কম লোক জানে, ততই ভালো।

আসুন। সন্তুষ্ট ডেইজি পুরো মেলে ধরল দরজা।

ধন্যবাদ।

কাজ করছিল, সোজা কিচেনে নিয়ে এল মেয়েটা নকল রেঞ্জারদের। সেখানে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছে আরেক জন। রনি।

তো, মিস্টার গার্ডনার যদি দু-চারদিন না ফেরেন, কী করে বুঝতে পারেন আপনারা, কিছু একটা ভজকট হয়েছে? শুরু করল আয়মান।

চুলা থেকে নামিয়ে কিচেন-টেবিলের উপরে একটা বাউল রাখল ডেইজি। সব সময় যোগাযোগ রাখে ও। মেইল করে… ছবি পাঠায়… আর ছোট ছোট ভিডিয়ো-মেসেজ। গত তিন দিন ধরে খবর পাচ্ছি না কোনও। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল মেয়েটার কপালে।

এমনও তো হতে পারে… যেখানে আছেন, ফোনের নেটওঅর্ক নেই সেখানে, বাতলাল আয়ান।

উঁহু… স্যাটেলাইট ফোন আছে ওর কাছে, সম্ভাবনাটা নাকচ করে দিল ডেইজি।

আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না, দু দিনের জন্য সমস্ত নেটওঅর্কের বাইরে থাকার ইচ্ছে জাগল ওঁর? প্রশ্ন। আয়মানের।

না, কক্ষনো করবে না এটা, বোনের হয়ে জবাব দিল রনি।

এত শিয়য়ার হচ্ছেন কীভাবে?

আমি বলছি,  বলল ডেইজি। ছোট বেলায় বাপ-মাকে হারিয়েছি আমরা। তারপর থেকে একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছে আমাদের কক্ষনো টেনশনে রাখব না অন্যদের।

হুম। …ওঁর পাঠানো ছবিগুলো কি দেখতে পারি?

অবশ্যই।

ল্যাপটপ-ফোল্ডারে রাখা ছবিগুলো ওপেন করে দেখাতে লাগল রনি। এরপর ক্লিক করল একটা ভিডিয়ো-ফাইলে। চলতে আরম্ভ করল সর্বশেষ পাঠানো ভিডিয়ো-বার্তা।

হাই, ডেইজি। হাই, রনি। কী অবস্থা? এক হপ্তা পুরল আজ আমাদের ক্যাম্পিং-এর। ব্ল্যাকওঅটর রিজের কাছাকাছি রাত কাটাচ্ছি এখনও। …ভালোই আছি আমরা। নিরাপদে আছি। কাজেই, একদম চিন্তা করবে না, কেমন? কালকে আবার কথা হবে। টেক কেয়ার। বাই। ( ছবি আর ভিডিয়োগুলো ফরওঅর্ড করে দিন তো আমাকে! চাইল আয়মান। নাকি আপত্তি আছে?

না-না, আপত্তি কীসের? বলল ডেইজি।

ওরা যখন বেরিয়ে আসছে, জানাল মেয়েটা: শুরুতে গা করছিলেন না আপনারা, নিজেই সেজন্য ভাড়া করেছি একজনকে। কাল সকালে আসার কথা। আর তো দেরি করা যায় না।

বুঝতে পারছি আপনাদের অবস্থাটা, সহানুভূতি প্রকাশ করল আয়মান।

পাঁচ

সন্ধ্যা।

একটা রেস্তোরাঁয় কিছু পেটে দিতে এসেছে ইকরামুল্লাহ ভাইয়েরা। দখল করেছে অপেক্ষাকৃত নির্জন এক টেবিল।

পেপসি হাতে, সুন্দরী এক ওয়েইট্রেস ওদের পাশ কাটাতেই স্থানীয় একটা জার্নাল খুলল আয়ান। যা বুঝলাম… লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই রিজটায়। যারা যায়, বেশির ভাগই স্থানীয় ক্যাম্পার। এপ্রিল মাসে দু জন হাইকার নিখোঁজ হয়েছে ওখানে।

তদন্ত হয়নি?

হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত।

দুঃখজনক। আচ্ছা, এরকম ঘটনা কি আরও আছে?

হ্যাঁ, উনিশ শ বিরাশি সালে জার্নালের ভাজ থেকে পেপার কাটিং-এর একখানা ফোটোকপি বের করল আয়ান।

তুই যখন এদিক-ওদিক খোঁজখবর করছিলি, লাইব্রেরি থেকে জোগাড় করেছি এটা। আটজন মানুষ হারিয়ে গিয়েছিল ওই বছর। গ্রিজলি অ্যাটাক- এমনটাই ভাষ্য কর্তৃপক্ষের। ভাইকে দেখতে দিল ও কাগজটা।

লস্ট ক্রিক গেজেট-এর লেখাটায় চোখ বোলাল আয়মান। ১ এ ছাড়া উনষাট আর ছত্রিশ সালেও আছে এরকম ঘটনা,  তথ্য দিল আয়ান। প্রতি তেইশ বছর পর-পর একটা করে অঘন। ঠিক যেন ক্যালেণ্ডার ধরে!

ভাবনায় ডুবে গেছে আয়মান। খুলল ও টেবিলে রাখা ল্যাপটপটা। চালিয়ে দিল ম্যাডির রেকর্ড করা বার্তা। ভিডিয়ো শেষ হতে বলল, দেখেছিস?

কী?

বুঝিসনি? আচ্ছা, স্লো মোশনে চালাচ্ছি এবার।

দেখল আয়ান মনোযোগ তীক্ষ্ণ করে। চমকে উঠল ও। আরে-আরে! একটা ছায়া সরে গেল না পিছনে?

পেরেছিস এবার। হ্যাঁ। সেকেণ্ডেরও কম সময়ে রেকর্ড হয়েছে। বুঝতে পারছিস, জিনিসটা কী?

চালা তো আরেক বার!

একবার না, বার কয়েক দেখেও বোঝা গেল না, ঠিক কী জিনিস ওটা। তবে মানুষ যে না, এ ব্যাপারে একমত হলো দু জনে। গ্রিজলি বলেও মনে হলো না। প্রশ্ন হচ্ছে: ম্যাডির যদি কিছু হয়েই থাকে, সেজন্য কি ওটাই দায়ী?

আমি কিন্তু আরেকটা জিনিস পেয়েছি,  জ্বলজ্বল করছে। আয়ানের মুখের চেহারা।

কী?

ইনফর্মেশন। তথাকথিত ওই গ্রিজলির কবল থেকে ফিফটি-নাইনে বেঁচে ফিরেছিল এক ভাগ্যবান। এক কিশোর ছেলে।

বেঁচে আছে এখনও?

সেটাই জানতে হবে আমাদের।

ছয়

দেখো, ছেলেরা… জানি না, কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছ। এসব। আমার যা বলার, অসংখ্য বার বলেছি তা নানান। জায়গায়। খুঁজলেই পেয়ে যাবে রেকর্ড। মিস্টার কিলমারের ঠোঁটে ঝুলছে সিগারেট। চোপসানো মুখে এক গাল দাড়ি। পেকে গেছে সব।

ব্যাপারটা হচ্ছে- আমরা বিশ্বাস করছি না, গ্রিজলি ছিল। সেটা, দৃঢ় গলায় বলল আয়ান।

রুক্ষ চোখে তাকিয়ে আছে বুড়ো। সিগারেটে টান দিল। কষে।

কেন? কীসের সন্দেহ? জিজ্ঞেস করল খরখরে গলায়।

কারণ, হামলাগুলো হয়েছে একটা প্যাটার্ন ধরে। কে কবে শুনেছে, তেইশ বছর পর-পর অ্যাটাক করে গ্রিজলি!

অদ্ভুত দ্যুতি ফুটে উঠল বৃদ্ধ লোকটির চোখে। ধরে ফেলেছ? কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, না, গ্রিজলি ছিল না ওটা!

তা হলে কি মিথ্যে বলেছেন সবার কাছে? কেন বললেন?

কী হতো সত্যিটা বললে? কেউই তো বিশ্বাস করত না!

আমরা করব।

কী দেখেছিলেন আপনি, মিস্টার কিলমার? জবাব চাইল আয়মান।

চুপচাপ সিগারেট টানতে লাগল বৃদ্ধ। কিছুই না,  বলল শেষমেশ। এত দ্রুত নড়তে পারে ওটা, কিছুই বোঝার উপায় নেই। তবে আওয়াজ শুনেছি… গর্জন। মানুষ কিংবা আমার জানা কোনও জানোয়ারে করতে পারে না ওরকম।

ঘটনাটা বলুন, প্লিজ।

রাতের বেলা হানা দিয়েছিল আমাদের কেবিনে। ওটা যখন এল, ফায়ারপ্লেসের সামনে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলাম আমি। না, জানালা কিংবা দরজা ভেঙে ঢোকেনি, খুলে ঢুকেছে। ভালুকে করতে পারে এরকম? মা-বাবার চিৎকার শোনার আগপর্যন্ত টেরও পাইনি কিছু।

ওটা মেরে ফেলেছিল ওঁদেরকে? জিজ্ঞেস করল আয়ান।

মিস্টার কিলমারের চোখ জোড়া ছলছল করছে। মাথা দোলালেন। …আর আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গলে। কেন মারেনি, সেদিন থেকে জিজ্ঞেস করে চলেছি নিজেকে।

উদ্ধার পেলেন কীভাবে?

জ্ঞান হারিয়েছিলাম। চেতনা ফিরতেই জঙ্গলে আবিষ্কার করি নিজেকে। অনেক কষ্টে ফিরে আসি সেখান থেকে।

কলারের কাছে হাত চলে গেল বৃদ্ধের। লম্বা তিনটে আঁচড় দেখাল কাপড় সরিয়ে।

কিছু কি বোঝা যায়?

ঠিক বুঝতে পারছি না, স্বীকার করল আয়ান।

আয়মানও মাথা নাড়ল।

ভয়ঙ্কর কিছু একটা বাস করে ওই জঙ্গলে, নিজের ধারণা জানিয়ে দিল কিলমার। কোনও ধরনের পিশাচ-টিশাচ ওটা।

.

পরে, মোটেলের বিছানায় শুয়ে যখন নানা রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে দুই ভাই, বলল আয়ান, ভূতপ্রেত হলে তো দরজা খোলার দরকার পড়ে না। চাইলেই ঢুকতে পারে দেয়াল ভেদ করে।

এটা বোধ হয় অন্য কিছু… কর্পোরিয়েল।

কর্পোরিয়েল?

দেহধারী ভূত আর কী।

থাবার আঁচড়, দ্রুত গতি- এসব দেখে আমার কিন্তু একটা কথাই মনে হয়।

কী সেটা?

মায়ানেকড়ে!

সাত

পরদিন।

আমি কিন্তু এখনও মনে করছি না যে, আসাটা উচিত হচ্ছে ওর। রনিকে–

দেখুন, মিস্টার কনরয়–

জানি, কী বলবে। টাকা দিয়েছ আমাকে। কিন্তু তোমাদের নিরাপত্তার দিকটা–

দৃশ্যপটে একটা গাড়ি ঢুকে পড়ায় এবারও শেষ করতে পারল না কনরয়।

আয়ান-আয়মান নেমে এল গাড়ি থেকে।

ভালোই হলো, বেরিয়ে পড়েননি,  এক গাল হেসে বলল আয়মান। রওনা হচ্ছিলেন বুঝি? চলুন তা হলে, যাওয়া যাক।

আপনারাও যাচ্ছেন নাকি? অবাক হয়েছে ডেইজি, খুশিও।

কে এই ছেলেগুলো? জানতে চাইল রয়।

পার্ক সার্ভিস, নিজেদের পরিচয় দিল আয়মান।

তার মানে, রেঞ্জার?

দ্যাটস রাইট।

এই পোশাকে হাইক করবেন? বিস্মিত দেখাল ডেইজিকে।

নিজের দিকে তাকাল আয়মান। বাইকার বুট আর জিনস ওর পরনে। অন্য দিকে খাকি শর্টস পরেছে মেয়েটা।

ইয়ে… আমতা আমতা করল আয়মান। শর্টসে আনইজি লাগে আমার!

.

জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে দলটা। সবার আগে রয়েছে রয়। তারপর আয়ান, ডেইজি, রনি আর সব শেষে আয়মান।

শিকারের কী রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার? হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল আয়ান।

প্রচুর,  পিছনে তাকিয়ে জবাব দিল কনরয় গম্ভীর মুখে। অল্প বয়সী দুটো ছোকরা দলে জুটে যাওয়ায় যার-পর-নাই বিরক্ত ও।

অ। তা, কী ধরনের জানোয়ার শিকার করেছেন এ পর্যন্ত?

হরিণ। কখনও কখনও ভালুকও। ।

লোকটাকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেল আয়ান। পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, পিছন থেকে হামলার শিকার হয়েছেন কখনও?

জবাব না দিয়ে খপ করে ছেলেটার কাধ আঁকড়ে ধরল, রয়। চোয়ালে ভর করল কাঠিন্য।

কী হয়েছে? থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল আয়ান। আটকালেন কেন?

মাটি থেকে একটা ডাল তুলে নিল কনরয়। খোঁচা মারল শুকনো পাতার বিছানায়। সঙ্গে সঙ্গে খট করে বন্ধ হয়ে গেল পাতার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা ভালুক-ফাঁদের হাঁ। আরেকটু হলেই পা দিতে যাচ্ছিল ওতে আয়ান।

রেঞ্জার, না? মুখ বাঁকিয়ে হাসি দিল শিকারি। ডালটা ছুঁড়ে ফেলে আগে বাড়ল।

.

ব্ল্যাকওঅটর রিজের কাছাকাছি পৌঁছে ঘোষণা করল কনরয়, আশপাশটা রেকি করে আসতে যাচ্ছে ও। ওরা যেন কোথাও না যায়।

একা যাওয়া উচিত হচ্ছে না আপনার,  কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে বলল আয়ান।

দ্যাট স সুইট অভ ইউ। এই প্রথম স্বাভাবিক হাসি দেখা, গেল লোকটার মুখে। নিজেদের খেয়াল রেখো তোমরা।

আমি ঠিকই থাকব।

.

রনি! ডেইজি! এদিকে! শোনা গেল কনরয়ের উত্তেজিত কণ্ঠ।

দৌড় দিল ওরা। আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল যেন অদৃশ্য দেয়ালে বাধা পেয়ে।

ওহ, মাই গড! ঈশ্বরের নাম জপল ডেইজি।

ম্যাডিদের ক্যাম্পসাইট খুঁজে পেয়েছে কনরয়। ঝড় বয়ে গেছে যেন জায়গাটার উপর দিয়ে। তাঁবু, রসদ- সব লণ্ডভণ্ড রক্তের চিহ্ন চতুর্দিকে।

ম্যাডি! ডুকরে উঠল ডেইজি। ব্যাকপ্যাকটা ফেলে দিল কাঁধ থেকে। ম্যাডি!

শ্‌শ্‌শ্‌! ডেইজির কাঁধে চাপ দিল আয়মান। ধারেকাছে। থাকতে পারে ওটা।

ডুগ্‌গু!

ভাইয়ের উদ্দেশে পা চালাল আয়মান। গোড়ালিতে ভর দিয়ে বসল ও পাশে। মাটির দিকে দৃষ্টি।

হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল শিকারকে, বিস্মিত গলায়। বলল আয়ান। কিন্তু এখানটায় দেখ… আচমকাই গায়েব হয়ে গেছে ট্র্যাকটা। অদ্ভুত না?

উঠে দাঁড়াল দু জনে।

কী বলবি? শিকার সুদ্ধ অদৃশ্য হওয়ার কায়দা জানে। হারামিটা? নাকি অন্য কোনও ডাইমেনশন থেকে এসেছে?

গাছ বাইতে পারে খুব সম্ভব। উপর দিকে চোখ বোলাচ্ছে আয়মান।

বাঁচাও! বাঁচাও!! আচমকা চেঁচিয়ে উঠল কে যেন।

সকলেই ছুটল বিপন্ন মানুষটার সাহায্যে।

এদিক থেকেই এসেছে না চিৎকারটা? একটু পরে। বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে ডেইজিকে।

কেউ কোনও জবাব দিল না। চুপচাপ কান পেতে রয়েছে। বাতাসে।

শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল আয়মান: চলুন, ফিরি।

বিশাল এক ধাক্কা খেল ওরা ক্যাম্পে ফিরে। উধাও হয়ে গেছে সমস্ত সাপ্লাই!

হায়-হায়, আমাদের ব্যাগগুলো! আঁতকে উঠল ডেইজি।

আমার জিপিএস আর স্যাটেলাইট ফোনটাও গেছে! কাঁচকলা-মার্কা চেহারা হয়েছে রয়ের।

চালাক… খুব চালাক! বিড়বিড় করল আয়ান। চেয়েছে, যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি আমরা… বাইরের সাহায্য চাইতে না পারি।

কী বলতে চাও? মানুষের হাত আছে এর পিছনে?

গুড়ু, চাপা গলায় বলল আয়মান। আয় তো একটু। কথা আছে তোর সাথে।

কিছুটা দূরে এসে দাঁড়াল ওরা অন্যদের থেকে।

প্যান্টের পকেট থেকে ছোট একটা নোটবুক বের করল। আয়মান। খুঁজে বের করল বিশেষ একটা পাতা। একটা ফিগার আঁকা রয়েছে পৃষ্ঠাটায়। বহু পুরানো ইনডিয়ান ড্রইং।

ওহ, কাম অন! অবিশ্বাসী গলায় চেঁচিয়ে উঠল আয়ান। এগুলো তো মিনেসোটার জঙ্গলে দেখা যায় বলে গুজব রয়েছে… কিংবা নর্দার্ন মিশিগানে! এত দূরের পশ্চিমে এদের কথা শুনিনি আমি কখনও।

কিন্তু ভেবে দেখ, ভাইয়া… মিলে যাচ্ছে সূত্রগুলো! থাবার আঁচড়… তারপর যেভাবে মানুষের গলা নকল করল!

হঠাৎ করে যেন চিন্তায় পড়ে গেছে আয়ান। ভাইকে শুধাল, বলবি ওদেরকে?

বলা উচিত না? পালটা প্রশ্ন করল আয়মান।

শুনে পাগল আখ্যা দিল ওদের রয়। আর ডেইজি জানিয়ে দিল, যা-ই হোক না কেন জিনিসটা, ভাইয়ের হদিস না নিয়ে বাড়ি ফিরছে না ও।

আট

পরিত্যক্ত ক্যাম্পসাইটে জ্বালানো হয়েছে আগুন।

আগুনের চারপাশ ঘিরে কী আঁকলেন আপনি? খোঁচাতে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলল ডেইজি।

অ্যানাসাজি সিম্বল, বলল আয়মান। ইনডিয়ানদের বিশ্বাস, চক্রব্যুহের কাজ করে এটা। পিশাচ-দানব ভাঙতে পারে না এই বৃত্ত।

বন্দুকটাকে ঘাড়ের উপরে বিশ্রাম দিচ্ছে রয়, যুক্তি শুনে বিকট এক ভেটকি দিল।

হেল্প! হেল্প মি! আবার মানুষের গলায় আর্তি জানাল ওটা ওদেরকে চমকে দিয়ে।

তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল কনয়।

অন্ধকারে কী যেন ছুটে গেল বিদ্যুদ্গতিতে। ঝোঁপের মধ্যে উঠল আলোড়ন।

. শটগানটা তাক করে গুলি করল রয়। তারপর আরেকটা।

ইয়াহু! লাগিয়েছি! ছাড়ল উল্লসিত চিৎকার। কীসে। লাগিয়েছে, দৌড় দিল দেখার জন্য।

রয়! না! রয়! লোকটা ম্যাজিক-সার্কেলের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে হাহাকার করে উঠল আয়মান।

নয়

বিভীষিকার আঁধার পেরিয়ে এল নতুন এক দি

সারা রাত জেগেছে ওরা। ঘুমায়নি এক ফোঁটাও। না, বাহাদুর রয় আর ফেরেনি। কী যে হয়েছে ওর, খোদা মালুম। ওকে খুঁজতে যাওয়ার সাহস হয়নি কারও।

এই ধরনের জিনিস… আই মিন… এগুলো তো সত্যি হতে পারে না, ফাপা গলায় বলল ডেইজি। চোখমুখ ফুলে গেছে ওর। রাত জাগার অভ্যাস নেই।

ভালো হতো, যদি আপনার সাথে একমত হতে পারতাম,  মলিন গলায় বলল আয়মান। ফোপরা এক গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসেছে ও। হাতে নোটবক। ইতোমধ্যে দেখিয়েছে ইনডিয়ানদের আঁকা ড্রইং।

ক্রি ইনডিয়ান ভাষার শব্দ এই ওয়েনডিঙ্গো, জ্ঞান জাহির করল আয়ান। মানেটা হচ্ছে: গোগ্রাসে গেলা শয়তান।

শত শত বছর ধরে টিকে রয়েছে ওরা,  বলল আয়মান। সেরকমই বলা হয় আর কী কিংবদন্তিতে। মানুষই ছিল একটা সময়। কেউ ইনডিয়ান, ফ্রন্টিয়ারম্যান কিংবা মাইনার কেউ, কেউ-বা ছিল শিকারি।

মানুষ হলে এই হাল হলো কেন? ডেইজির প্রশ্ন।

মাটি থেকে কী জানি কুড়িয়ে তুলল আয়ান। ফেলেও দিল আবার। ওয়েল। করুণই বলা যায় গল্পটা। কোনও এক দুর্যোগপূর্ণ শীতে খাবারের অভাবে ধুকছিল এক দল মানুষ। রসদ ফুরিয়ে গিয়েছিল ওদের। কারও সাহায্য পাওয়ারও উপায় ছিল না। বাঁচার তাগিদে নরমাংস খেতে বাধ্য হয়…

কী! চোখ কপালে উঠেছে ডেইজির। কাদের খেয়েছিল?!

ইনডিয়ানরা খেয়েছিল হয়তো গোত্রের অন্যদের, অনুমান, করল আয়মান। অন্য কেউ হলে বলব- বন্ধু, সহকর্মী কিংবা পরিবারের সদস্যদের।

ডোনার পার্টির মতো, নির্জীব গলায় মন্তব্য করল মুখচোরা রনি।

অবাক হয়ে দেখল ওকে আয়ান। দৃষ্টিতে প্রশংসা। সায় দেয়ার ভঙ্গিতে ঝাঁকাল মাথাটা। ওরাও জানে গল্পটা। আমেরিকান পাইয়োনিয়ারদের একটা দল এই ডোনার-রিড। পার্টি, যার নেতৃত্বে ছিল জর্জ ডোনার আর জেমস রিড। আঠারো শ ছেচল্লিশ সালের মে মাসে ওয়াগেন-যাত্রা করেছিল ওরা ক্যালিফোরনিয়ার উদ্দেশে। নানান কারণে পথিমধ্যে বিঘ্নিত হয় যাত্রা। আর এরই মধ্যে এসে পড়ে শীত। সিয়েরা নেভাডায় তুষারবন্দি হয়ে পড়ে দলটা। ক্রমে ফুরিয়ে যায় খাবার। খিদের জ্বালায় তখন একে অপরকে খেতে বাধ্য হয় দলের সদস্যরা।

দুনিয়ার নানান দেশের গল্পগাথায় প্রচলিত আছে, মানুষের মাংস খেলে নাকি বিশেষ কিছু ক্ষমতা জন্মায়,  বলল আয়ান। গতি, শক্তি, অমরত্বের কাছাকাছি দীর্ঘ জীবন। বছরের পর বছর যদি খান, একটা সময় পরিণত হবেন। মানুষরূপী জানোয়ারে। সব সময় ক্ষুধার্ত থাকবেন তখন।

সেরকম হলে তো বাঁচার কথা না ম্যাডির! আশঙ্কা ডেইজির।

তা-ও বলব, সম্ভাবনা আছে।

কীভাবে?

ওয়েনডিঙ্গোরা জানে, দীর্ঘ শীতে কীভাবে খাবার ছাড়া টিকে থাকা যায়। টানা কয়েক বছর হাইবারনেট করতে পারে ওরা। এ ক্ষেত্রে তেইশ বছর পর-পর জেগে উঠছে ওটা। …তো, সব শিকারকে মারে না ওরা, কাউকে কাউকে স্টোর করে রাখে জ্যান্ত… পরে যাতে খেতে পারে। জ্যান্ত খাবার ছাড়া অন্য কিছুতে রুচি নেই ওদের। আপনার ভাই যদি বেঁচে থাকেন, নিশ্চিত, ওঁকে অন্ধকার কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।

দশ

চারজনের দলটার নেতৃত্ব দিয়ে জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলেছে আয়ান, ওর বাঁ হাতে একটা মলোটভ ককটেল। বিয়ারের বোতলে কেরোসিন ভরে তৈরি করেছে ওটা। সলতে বানিয়েছে ক্যাম্পারদের কাপড় ছিঁড়ে। কেরোসিন-ভেজানো কাপড়টার কিছু অংশ বোতলের বাইরে রেখে শক্ত করে এঁটে দেয়া হয়েছে ছিপি। সহজ-কি-কার্যকর আগুনে-বোমা।

ধারাল নখের চিহ্নঅলা একাধিক গাছ পড়ছে পথে। মাটিতে, গাছের গায়ে রক্তের দাগ। এ ছাড়া ভাঙা ডাল পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। নির্জলা ট্র্যাক, যাকে বলে।

অবশেষে ভেসে এল একটা গর্জন।

পাই করে ঘুরে গেল ওরা আওয়াজ লক্ষ্য করে। স্তব্ধ ক টা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল। কিন্তু আর হলো না আওয়াজটা। আধা-মানুষ, আধা ওই জানোয়ারটারও চেহারা দেখতে হলো না।

এ গাছের পাতায় মর্মর তুলে বয়ে চলেছে বাতাস। কেমন একটা নোনতা গন্ধ পরিবেশে। স্বস্তি দেয় না একদম।– গর্জনটা শোনার পর এগোতে আর ভরসা পাচ্ছে না; যেখানটায় থেমেছিল, ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা আশপাশে। একটা গাছের গায়ে হেলান দিতেই উপর থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়ল ডেইজির শার্টে। জান্তব ভয়ে সরে এল ও ব্যাপারটা টের পেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে ধপাস করে নিচে পড়ল কনরয়ের নিথর শরীর- ঠিক যেখানটায় মুহূর্ত আগে দাঁড়িয়ে ছিল ডেইজি!

মেয়েটার কান ফাটানো চিৎকারে ছুটে এল বাকি তিনজন।

ইউ ওকে?

আয়মানের বুকে মুখ লুকাল ডেইজি। বাচ্চাদের মতো ফেঁপাচ্ছে মেয়েটা। কাঁপছে থরথর করে।

গোড়ালির উপরে বসে কনরয়কে পরীক্ষা করছে আয়ান।

আয়মানের প্রশ্নবোধক দৃষ্টির জবাবে জানাল: ঘাড়টা ভাঙা।

এসময় শোনা গেল আরেকটা গর্জন। খুব কাছেই যেন।

দৌড়ান! দৌড়ান! গো! গো! গো! জরুরি ব্যস্ততায় চেঁচিয়ে উঠল আয়ান-আয়মান।

দুদ্দাড় ছুটল সবাই। যেদিক থেকে এসেছে আওয়াজটা, তার উলটো দিকে।

ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে ওরা, আছাড় খেল অনেকটা পিছিয়ে থাকা রনি।

দাঁড়ান! চেঁচিয়ে উঠল মরিয়ার মতো।

ছোটার উপরেই পিছন ফিরে তাকাল আয়ান। তিন নম্বরে দৌড়াচ্ছিল ও। অসহায়ের মতো সামনে একবার তাকিয়ে ফিরে এল সাহায্য করার জন্য।

ও যখন রনির কাছে পৌঁছল, ততক্ষণে একটা বাকের আড়ালে হারিয়ে গেছে আয়মান আর ডেইজি।

এগারো

সামান্য খোঁড়াচ্ছে রনি। আয়মানদের হারিয়ে ফেলার পর দৌড়ানোর আর প্রয়োজন বোধ করেনি আয়ান। বরঞ্চ মন দিয়েছে ওদের ট্র্যাক খোঁজায়।

খুঁজতে খুঁজতে হাজির হলো এসে এক খনিমুখের কাছে।

বিপজ্জনক লেখা একটা সাইনবোর্ড পেরেক মেরে দেয়া। হয়েছে প্রবেশমুখটার পাশে। অন্য পাশটায় লেখা: প্রবেশ নিষেধ।

শ্রাগ করল আয়ান। রনিকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভিতরে।

.

ভাগ্যিস, সঙ্গে ছিল ফ্ল্যাশলাইটটা। পথের উপরে আলো ফেলে চলতে পারছে সেজন্য। মূল সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়েছে অসংখ্য শাখা-টানেল।

হঠাৎ বিশ্রী আওয়াজে ককিয়ে উঠল পায়ের নিচে কাঠের তক্তা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাটাতন ভেঙে নিচে পড়ে গেল দু জনে। না চাইতেও গলা ফুড়ে বেরিয়ে এল চিৎকার।

ঝপাস করে একটা স্কুপের উপরে পড়ল দেহ দুটো। আর সেটাই বাঁচিয়ে দিল ওদেরকে ব্যথা পাওয়া থেকে।

ধাতস্থ হতেই বুঝতে পারল, কীসের উপরে পড়েছে। অসংখ্য হাড় আর খুলির স্তূপ! বোটকা, পচা গন্ধ বাতাসে।

আঁতকে উঠে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল রনি। বেকায়দা ভাবে গড়িয়ে নেমে এল স্তূপটা থেকে। নেমেই হতবাক। সামনের দেয়ালে গাঁথা একটা আংটা থেকে ঝুলছে ওর বোনটা!

ডেইজি! বলে ছটে গেল রনি।

পাশেই একই ভাবে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে কবজি-বাঁধা আয়মানকে। জ্ঞান নেই কারোরই।

ডেইজি! ডেইজি! চোখ খোলো! বোনের গালে চাপড় মারতে লাগল রনি।

ডুগ্‌গু! ডুগ্‌গু! ওয়েক আপ! এত উত্তেজনার মধ্যেও ছদ্মপরিচয় ভোলেনি আয়ান। ঝাঁকাতে লাগল ভাইকে ধরে।

অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকাল আয়মান।

থ্যাঙ্ক, গড! ঠিক আছিস তো তুই?

যন্ত্রণায় কুঁচকে উঠল ডুম্বু ওরফে আয়মানের কপাল।

হ্‌-হ্যাঁহ! বলল কোনও রকমে।

আয়ানের সুইস আর্মি-নাইফ দিয়ে দড়ি কেটে নামানো হলো দু জনকে বাঁধনমুক্ত হতেই দেহ দুটো নেতিয়ে পড়ল। মেঝেতে। যন্ত্রণাকাতর শব্দ বেরিয়ে এল আয়মানের মুখ দিয়ে।

ওয়েনডিঙ্গো… ওটাকে দেখেছিস তোরা? জানতে চাইল আয়ান।

জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল জুনিয়র।

কোথায় ওটা?

বলতে পারব না। তারা দেখিসনি?

না।

ইতোমধ্যে চেতনা ফিরতে শুরু করেছে ডেইজির। ওর ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে এদিক-ওদিক তাকাল রনি। ধড়াস করে লাফ মারল ওর হৃৎপিণ্ড। ওই তো, ওই কোনায় ঝুলছে ম্যাডি!

স্পর্শ করতেই ঝটকা দিয়ে উঠল ম্যাডির মাথাটা। এতক্ষণ অচেতন ছিল সে-ও।

ভাইয়া! ভাইয়া!

রনি! ভাই আমার! কেঁদে ফেলল ম্যাডি।

আর-দু জন কোথায়? ফ্লয়েড ভাইয়া… টিম ভাইয়া?

নেই! নেই ওরা!

বাঁধন কেটে নামিয়ে আনা হলো ম্যাডিকে।

চুরি যাওয়া মালামালগুলোও পাওয়া গেল একখানে গাদা করা অবস্থায়। খোয়া যাওয়া ডাফল ব্যাগটা থেকে ফ্লেয়ার গানটা বের করে নিল আয়ান। মলোটভটা কখন হারিয়ে ফেলেছে, টেরই পায়নি।

বেরিয়ে এল ওরা ভূ-গর্ভস্থ কামরাটা থেকে।

টানেল ধরে এগিয়ে চলেছে, ওয়েনডিঙ্গোর গর্জনে কেঁপে উঠল খনি। সামনে কোথাও থেকে এসেছে আওয়াজটা।

মরিয়ার মতো এপাশ-ওপাশ তাকাল আয়ান। দেখতে পেল আশার আলো। রনিকে ডেকে বলল, শাখা-টানেলটা দেখুন। অন্ধকার কম এটাতে। সম্ভবত বেরোনো যাবে এদিক দিয়ে। চলতে থাকুন আপনারা চারজন!

আর তুই? আকুল হয়ে বলল আয়মান।

দাঁত কেলিয়ে হাসল আয়ান। শো-টাইম! ট্র্যাজিক হিরোর অন্তিম বাক্যের মতো শোনাল কথাটা।

মানে?

ডাইভারশন তৈরি করতে যাচ্ছি আমি। ব্যস্ত রাখব হারামিটাকে। এই ফাঁকে নিরাপদে সরে পড়বি তোরা!

না-না, ভাইয়া! এটা পাগলামি! প্রবল আপত্তি জানাল আয়মান।

ডেইজি আর রনিও মাথা নাড়ছে।

যা বলছি, কর! কঠিন গলায় ভাইকে বলল আয়ান। এটাই এক মাত্র সমাধান! যা! কুইক!

বলেই আর দাঁড়াল না। ফ্ল্যাশলাইট আর গানটা নিয়ে ছুট লাগাল গর্জন লক্ষ্য করে।

ভাইয়াহ! শেষ একবার ব্যর্থ চেষ্টা করল আয়মান ভাইকে ফেরানোর।

চলুন! তাগাদা দিল রনি।

ভাইয়ের গমনপথের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়মান। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পা বাড়াল শাখা-সুড়ঙ্গটার দিকে।

বারো

এ কোন জানোয়ার!

ভাবতেও পারেনি, এতটা কাছে রয়েছে! আরেকটু হলেই পড়ত গিয়ে ওটার গায়ের উপরে!

কম করেও সাত ফুট লম্বা হবে! একটা রোমও নেই গায়ে। সামনের দিকে কুঁজো হয়ে রয়েছে নীলচে-ধূসর অর্ধ মানুষটা। বড় বড় চোখ। ধকধক করছে হিংস্র দৃষ্টি। নরক থেকে উঠে আসা পিশাচ যেন।

শুট করল আয়ান। আগুন পুরে দিল পিশাচটার রাক্ষুসে পেটে। বিশাল হাঁ করে এবড়োখেবড়ো চোখা দাঁতের সংগ্রহ দেখিয়ে দিল ওয়েনডিঙ্গো। যন্ত্রণায় মোচড়ামুচড়ি করছে শরীরটা। ভয়াবহ গোঙানি বেরিয়ে আসছে গলার ভিতর থেকে।

আধ মিনিটেই আগুনের শিখা প্রায় গ্রাস করে ফেলল ওটাকে।

জানোয়ারটা মুখ থুবড়ে পড়তেই বিশাল এক হাঁফ ছাড়ল আয়ান। উলটো ঘুরে ছুটল সভ্য জগতের উদ্দেশে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *