১২০. চারশ পাউন্ডের দানব জাব্বা

অধ্যায় : ১২০

চারশ পাউন্ডের দানব জাব্বা মাথায় হাত দিয়ে অবিশ্বাসে তাকিয়ে আছে সামনে।

এখন জোর কাজে লেগে গেলেও বিশ মিনিট সময় পেয়ে যাবে হাঙরেরা। হাই স্পিড মডেম থাকলে আর কথা নেই। ডাউনলোড করে ফেলবে দেদার তথ্য।

শোশি পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে আসছে নতুন প্রিন্ট আউট নিয়ে। আমরা কিছু একটা পেয়েছি স্যার। অরফ্যানস ইন দ্য সোর্স! আলফা গ্রুপিং হচ্ছে সবখানে।

জাব্বা নড়ছে না। আমরা সংখ্যার খোঁজে আছি, ড্যামইট! কোন আলফার খোঁজে না! কিল কোডটা সংখ্যাভিত্তিক!

কিন্তু আমাদের অর্ফান আছে। টানকাডো অফান রেখে যাবে তা বিশ্বাস্য নয়। আর এত পরিমাণে!

অফান মানে বাড়তি লাইন। প্রোগ্রামিংয়ের বাড়তি লাইন।

জাব্বা প্রিন্টআউটটা নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

ফন্টেইন একেবারে চুপ।

সুসান অবাক হয়ে গেছে, আমরা টানকাভোর একটা রাফ কাজের মাধ্যমে এ্যাটাকে পড়েছি!

পলিশ করা থাক আর না থাক, বলল জাব্বা, এটা আমাদের পশ্চাৎদেশে কষিয়া আঘাত হানিতেছে।

আমি ব্যাপারটা মানতে পারি না, বলল সুসান, টানকাডো একটা বাড়তি অক্ষরও লিখবে না। সে আমাদেরচে অনেক বেশি কষ্ট করে লিখত প্রোগ্রাম। হাতের আঙুলের কথা ভুলে গেলে চলবে না। প্রোগ্রামে:বাগ থাকবে, অসম্ভব!

অনেক আছে, বলল শোশি, দেখুন!

তাকাল সুসান। আছে। প্রতি বিশ লাইনের মত প্রোগ্রামিংয়ের পর চার ক্যারেক্টার ফ্রি ফ্লোট করছে। সুসান দ্রুত স্ক্যান করে নেয় সেগুলোকে।

PFEE
SESN
RETM

ফোর বিট আলফা গ্রুপিং, ধাঁধায় পড়ে গেল সে, এগুলো অবশ্যই প্রোগ্রামিংয়ের অংশ নয়!

ভুলে যান, জাব্বা তড়পাচ্ছে, এখন খড়কুটো আকড়ে ধরছেন আপনি।

হয়ত না। বলল সুসান, অনেক এনক্রিপশনে ফোর বিট গ্রুপিং আছে। এটা কোন কোড় হতে পারে।

ইয়াহ্! জাব্বা গজগজ করে, এটা বলছে, হা-হা, তোমাদের ইয়ে করে দেয়া হয়েছে। তাকায় সে ভি আরের দিকে, আব মাত্র ন মিনিট।

শোশির দিকে তাকায় সুসান, কতগুলো অরফ্যান আছে এখানে?

শ্রাগ করল শোশি।

সবগুলো ক্যারেক্টার টাইপ করল সে স্ক্রিনে। তারপর তাকিয়ে থাকল সেদিকে।

PFEE SESN RÉTM MFHA IRWE OOIG MEEN NRMA
ENET SHAS DCNS IIAA IEER BRNK FBLE LODI

একা সুসানই হাসছিল। একেবারে পরিচিত লাগছে। চারটার ব্লক। এনিগমার মত।

নড় করল ডিরেক্টর। এনিগমা ইতিহাসের সবচে বিখ্যাত কোড রাইটিং মেশিন। নাজিদের বারো টোন এনক্রিপশন জানোয়ার।

গ্রেট, বিড়বিড় করল সে, আপনার আশেপাশে নিশ্চই কোন এনিগমা নেই, আছে নাকি?

কথা সেটা নয়, বলল সুসান, পয়েন্ট হল, এটা একটা কোড। টানকাভো আমাদের হাতে একটা কু দিয়ে রেখেছে!

আজেবাজে কথা! হাত নাড়ল জাব্বা, টানকাভো আমাদের হাতে শুধু একটা জিনিস রেখেছে। ট্রান্সলেটারকে নষ্ট করে দিতে হবে। আমরা সরিয়ে ফেলেছি।

আমিও একমত, বলল ফন্টেইন, সে কিছুতেই ছুটে যাবার কোন পথ রাখতে পারে না।

নড করল সুসান।

টানেল ব্লকের অর্ধেক চলে গেছে! জোর আওয়াজ তুলল একজন।

ভি আরে বাকি থাকা দুটা ব্লকের কাছে চলে গেছে: ঝাক ঝাক দাগ।

ডেভিড এতক্ষণ চুপ করে থেকেছিল। মুখ খুলল সে। সুসান। আমার একটা আইডিয়া আছে। লেখাটা কি চারের ষোলটা প্র?

ওহ, ফর ক্রাইস্টস সেক! আর সহ্য হচ্ছে না জাব্বার, এবার সবাই খেলতে চাচ্ছে!

হ্যাঁ। ষোল।

স্পেসগুলো সরিয়ে ফেল।

ডেভিড, মনে হয় না তুমি বুঝতে পারছ। চারের গ্রুপগুলো–

সরিয়ে ফেল স্পেসগুলো।

সুসান একটু ইতস্তত করে নড করল শোশির দিকে। শোশি সরিয়ে ফেলল স্পেস।

PFEESESNRETMMFHAIRWEOOIGMEENNRMA ENETSHASDCNSIIAAIEERBRNKFBLELODI

এবার বিস্ফোরিত হল জাব্বা, এনাফ। খেলার সময় শেষ! এখন জিনিসটা দ্বিগুণ গতিতে কাজ করছে। আমরা সংখ্যা খুজছি, কোন শব্দের ভগ্নাংশ নয়!

ফোর বাই সিক্সটিন, বলল ডেভিড শান্তভাবে, অংকটা করে ফেল, সুসান।

অংকটা করে ফেল! সে অংক কতটা জানে? ভার্বের জিনিসগুলো জেরক্স মেশিনের মত মনে রাখতে পারে বেকার, কিন্তু অংক? …।

মাল্টিপ্লিকেশন টেবিল, বলল বেকার। মাল্টিপ্লিকেশন টেবিল! কী বলছে সে!

ফোর বাই সিক্সটিন! আবার বলল প্রফেসর, ফোর্থ গেঁড়ে পড়ার সময় নামতা মনে রাখতে হত আমাকে।

সিক্সটি ফোর। তাতে কী?

চৌষট্টিটা অক্ষর…

হ্যাঁ। কিন্তু সেগুলো—

জমে গেল সুসান।

চৌষট্টিটা অক্ষর। রিপিট করল বেকার।

সুসান বাতাসের জন্য হাসফাস করল, ও মাই গড! ডেভিড! তুমি একটা জিনিয়াস!

অধ্যায় : ১২১.

সাত মিনিট! চিৎকার করে উঠল এক টেকনিশিয়ান।

আটটার আট সারি। পাল্টা চিৎকার করল সুসানও।

টাইপ করল শোশি। ফন্টেইন তাকিয়ে আছে চুপচাপ। দ্বিতীয় শিন্ডটাও চিকণ হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। একটু একটু করে।

চৌষট্টিটা অক্ষর! পারফেক্ট স্কয়ার! নিয়ন্ত্রণে আছে সুসান।

পারফেক্ট স্কয়ার? প্রশ্ন করল জাব্বা, তাতে কী? স্ক্রিনের র‍্যান্ডম লেটারগুলো তুলে ফেলেছে শোশি দশ সেকেন্ডের মধ্যে

P F E E S E S N
R E T M P F H A
U R W E 0 0 1 G
M E E N N R M A
E N E T S H A s
D C N S I T A A
I E E R B R N _K
F B L E L 0 D I

ক্লিয়ার এ্যাজ শিট! জাব্বা রীতিমত গর্জাচ্ছে।

মিস ফ্লেচার, আপনার ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করুন। বলল ডিরেক্টর।

টেক্সেটের দিকে তাকিয়ে থেকে সে তাকায় ডেভিডের দিকে। তারপর নড় করে হেসে ফেলে। ডেভিড, আমি আর একটু হলেই ভেঙে পড়েছিলাম।

পোডিয়ামের আর সবাই অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।

চৌষট্টি অক্ষর! আবার জুলিয়াস সিজারের ট্রিক: বলল ডেভিড ছোট্ট ক্রিনের দিকে তাকিয়ে।

মিজ বিভ্রান্ত দৃষ্টি হানল, কী বলছেন আপনার?

কাইজারের বক্স। বলল সুসান; উপর থেকে নিচে পড়ন। টানকাভো আমাদের একটা মেসেজ পাঠাচ্ছে।

অধ্যায় : ১২২

ছ মিনিট! চিৎকার করে উঠল এক টেকনিশিয়ান।

আদেশ দিল সুসান, নিচের দিকে রিটাইপ করুন। নিচের দিকে পড়ন, পাশাপাশি নয়!

শোশি ঝড় তুলছে কি বোর্ডে।

জুলিয়াস সিজার এ পদ্ধতিতে কোড পাঠাত! বলল সুসান, তার অক্ষরগুলো সব সময় নিখুঁত বর্গ।

ডান! চিৎকার করল শোশি।

ওয়াল স্ক্রিনের একক লেখাটার দিকে চলে গেছে সবার চোখ।

এখনো গারবেজ! বলল জাব্বা, দেখুন, অক্ষরের কী ছিরি! আর–

আর তার পরই গলা দিয়ে বাকি কথাটা কোৎ করে গিলে ফেলে সে, ও… ও মাই…

ফন্টেইনও দেখেছে ব্যাপারটা। ধনুকের মত বাকা হয়ে গেছে তার ভ্রু।

মিজ আর ব্রিঙ্কারহফ দুজনেই একই সাথে পড়ল এবং গিলে ফেলল অনুভূতিটা, হোলি… শিট!

চৌষট্টি অক্ষর দেখাচ্ছেঃ

PRIMEDIFFERENCEBETWEENELEMENTSRESPONSIBLEF ORHIROSAHIMAANDNAGASHAKI

স্পেস দিয়ে দিন, অর্ডার করল সুসান, আমাদেরকে একটা পাজলের শেষ দেখে ছাড়তে হবে।

অধ্যায় : ১২৩

এবং তখন টেকনিশিয়ান পোডিয়ামে এল হন্তদন্ত হয়ে, টানেল ব্লক চলে যাচ্ছে!

ডি আর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে জাব্বা।

সুসান চারপাশের শব্দ সরিয়ে দিয়ে টানকাডোর মেসেজটা পড়তে লাগল বারবার।

PRIME DIFFERENCE BETWEEN ELEMENTS RESPONSIBLE FOR HIROSAHIMA AND NAGASHAKI

এটা তো কোন প্রশ্নও না! কেঁদে ফেলবে ব্ৰিষ্কারহফ এবারো, এর জবাব থাকবে কী করে?

আমাদের একটা নাম্বার প্রয়োজন, বলল জাব্বা, কিল কোডটা নিউমেরিক।

সাইলেন্স! এবার তেতে উঠল ফন্টেইন। ঘুরে সুসানকে উদ্দেশ্য করল সে, মিস ফ্লেচার, আপনি আমাদের এতদূরে নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার ধারণা জানতে চাই।

ভাল করে শ্বাস নিল সুসান, সঠিক নাম্বারের কু আছে এখানে, আমার ধারণা। হিরোশিমা আর নাগাসাকির কথা আছে এখানে। দুটা নগরীই পারমাণবিক বোমার আঘাতে ধ্বসে পড়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। হয়ত নাম্বারটার সাথে মৃত মানুষের সংখ্যা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের মিল আছে… একটু থেমে যায় সে, ডিফারেন্স শব্দটার গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে। প্রাইম ডিফারেন্স বিটুইন নাগাসাকি এ্যান্ড হিরোশিমা। টানকাডো এমন কিছু বোঝায় যা দিয়ে এ দুটার মধ্যে তুলনা চলে।

কোন আশার ঝলকানি নেই ফন্টেইনের চোখে।

বোঝা যাচ্ছে, দুটা বিশাল সিটিতে হওয়া বোমা হামলার সমস্ত খুটিনাটি জানতে হবে, তারপর তাকে। পরিণত করতে হবে সংখ্যায়।

পুরো কাজটা করতে হবে পরবর্তী পাঁচ মিনিটের মধ্যে।

অধ্যায় : ১২৪

ফাইনাল শিল্ড আন্ডার এ্যাটাক

কোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কালো দাগগুলো। এগিয়ে যাচ্ছে শেষ বাধার দিকে।

সবাই একমনে কোডটা ভাঙার চেষ্টা চালায়। চেষ্টা চালায় ডেভিড আর দু এজেন্ট। স্পেনে বসে।

PRIME DIFFERENCE BETWEEN ELEMENTS RESPONSIBLE FOR HIROSAHIMA AND NAGASHAKI

শোশি চিন্তা করছে জোরে জোরে, হিরোশিমা আর নাগাসাকির জন্য দায়ি এলিমেন্ট… পার্ল হারবার? হিরোহিটোর অস্বীকৃতি…

আমাদের একটা নাম্বার দরকার! জাব্বার পুরনো সুর, পলিটিক্যাল থিওরি নয়! কথা বলছি গণিত নিয়ে ইতিহাস নিয়ে নয়।

চুপ করে গেল শোশি সাথে সাথে।

পে লোডের ব্যাপার? সাধ্যমত সহায়তা করতে চাচ্ছে ব্রিঙ্কারহফও, ক্যাজুয়ালটি? ডলার ড্যামেজ?

আমরা ঠিক ঠিক ফিগারের খোঁজ করছি! বলল সুসান। ড্যামেজের সাথে সার্ভের একটা যোগসূত্র আছে। এলিমেন্টগুলোর…

ডেভিড বেকারের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল সাথে সাথে। ভাষা নিয়ে তার কাজ। এলিমেন্টস!

মানে? প্রশ্ন তুলল ডিরেক্টর।

টানকাড়া আমাদের সাথে খেলছে। এলিমেন্ট শব্দটার অনেক মানে।

যেমন?

আর্থ সামাজিক বা রাজনৈতিক এলিমেন্ট যেমন আছে, তেমনি আরেকটা এলিমেন্টও আছে।

রাসায়নিক?

রাসায়নিক। রাসায়নিক পদার্থ। মৌল। পর্যায় সারণী! ফ্যাটম্যান এ্যান্ত লিটল বয় দেখেননি কেউ? ম্যানহাটান প্রজেক্ট নিয়ে বানানো?

তো?

আণবিক বোমা দুটা ভিন্ন ধরনের। তাদের ফুয়েল ভিন্ন, ভিন্ন এলিমেন্ট!

শোশি এবার হাততালি দিয়ে উঠল, তার কথাই ঠিক। এক বোমাতে ছিল প্রটোনিয়াম, আরেকটায় ইউরোনিয়াম।

ঘরে আবার নিরবতা নেমে এল।

কামঅন! বলল জাব্বা, আপনারা কেউ কখনো কলেজে যাননি? কেউ একজন! যে কেউ! আমি পুটোনিয়াম আর ইউরোনিয়ামের মধ্যে পার্থক্যটা চাই!

চারদিকে শূণ্য দৃষ্টি।

শোশির দিকে ফিরল সুসান, ওয়েবে ঢুকতে হবে আমাকে। এখানে কোন ব্রাউজার আছে?

নড করল শোশি, নেটস্কেপ সবচে ভাল।

হাত ধরে ফেলল সুসান খপ কবে, আসুন! আমাদের কপালে অনেক ভোগান্তি আছে।

অধ্যায় : ১২৫

কতক্ষণ? প্রশ্ন তুলল জাব্বা পোডিয়াম থেকে।

পিছনের টেকনিশিয়ানরা কোন জবাব দেয় না। ভি আরের দিকে দৃষ্টি। শেষ ধাপটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত।

সুসান আর শোশি তাকিয়ে আছে রেফারেন্সের দিকে। ছশো সাতচল্লিশটা রেফারেন্স এসেছে। কোনটা দেখতে হবে ভেবে পায় না তারা।

একটা খুলল।

.

এখানে দেখানো তথ্যগুলো শিক্ষার জন্য ব্যবহার্য। কেউ যদি ব্যবহারিক করতে গেলে রেডিয়েশন ও আপনা আপনি বিস্ফোরণের সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

.

আপনা আপনি বিস্ফোরণ! শোশি আৎকে উঠল, জিসাস!

সার্চ কর। দেখা যাক কী পাই।

ডায়নামাইটেরচে দশগুণ বিস্ফোরণ ক্ষমতার কথা বলা আছে সেখানে। বলা আছে আরো অনেক কথা।

পুটোনিয়াম ও ইউরোনিয়াম, বলছে জাব্বা, লেটস ফোকাস।

গো ব্যাক, অর্ডার করল সুসান, ডকুমেন্টটা খুব বেশি বড়। সূচি বের কর।

এগিয়ে গেল শোশি স্ক্রল করে। পেয়ে গেল সেটা।

১. আণবিক বোমার মেকানিজম

ক. অল্টিমিটার খ. এয়ার প্রেশার ডেটোনেটর গ. ডোটানেটিং হেড ঘ. এক্সপ্লোসিভ চার্জ ঙ. নিউট্রন ডিফ্লেক্টর। চ. ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম ছ. লেড শিল্ড জ. ফিউজ

২. নিউক্লিয়ার ফিশন/ নিউক্লিয়ার ফিউশন

ক. ফিশন (এ-বোমা) ও ফিউশন (বি-বোমা) খ. U-235, U-238 ও প্লুটোনিয়াম

৩. আণবিক বোমার ইতিহাস…

দু নম্বরে দেখ! চিৎকার করে উঠল সুসান, ইউরেনিয়াম আর পুটোনিয়াম! গো!

সবাই অপেক্ষা করছে। এগিয়ে আসছে সেকশনটা। নিমিষেই।

এইতো! বলল সে, হোল্ড অন, চোখ বুলিয়ে নিল ডাটাতে, অনেক ইনফরমেশন! পুরো চার্ট! কী করে জানব কোন পার্থক্যটা চাই আমরা? একটা প্রাকৃতিকভাবে হয়, অন্যটা মানুষের বানানো… পুটোনিয়াম প্রথম আবিষ্কৃত হয়…

একটা নাম্বার, হিসহিস করছে জাব্বা, আমরা একটা নাম্বার খুঁজছি!

থাম! উজ্জ্বল হয়ে উঠল সুসানের চোখ, এখানেও খেলা খেলেছে টানকাডো। ডিফারেন্স মানে সাট্রাকশন।

ইয়েস! অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠল বেকার, হয়ত মৌলগুলোয় ভিন্ন সংখ্যক প্রোটন আছে

তার কথাই ঠিক, কেড়ে নিল কথাটা জাব্বা, সেখানে, মানে চার্টে কোন নাম্বার আছে? প্রোটন কাউন্ট? হাফ লাইফ?।

তিন মিনিট! বলল আরেক টেকনিশিয়ান।

সুপারক্রিটিক্যাল মাস নয়ত? শোশি বলল, প্লুটোনিয়ায় সুপারক্রিটিক্যাল মাস ৩৫.২ পাউন্ড।

আর ইউরেনিয়াম?

একশো দশ পাউন্ড।

পার্থক্য কত হল?

সেভেন্টি টু পয়েন্ট এইট, বলল সুসান, কিন্তু আমার মনে হয় না–

আমার পথ থেকে সরে যান! গর্জে উঠল জাব্বা, এটাই কিল কোড! দুটার ক্রিটিক্যাল মাসের পার্থক্য। বাহাতুর দশমিক আট!

থামুন! চিৎকার করল সুসান, এখানে আরো অনেক আছে! পারমাণবিক ভর, নিউট্রনের সংখ্যা, এক্সট্রাকশন টেকনিক; কোনটা কীসে কীসে বিভক্ত হয়…

আমাদের সবচে কমনটা ধরে নিতে নিতে হবে। প্রাইমারি… বলছে মিজ।

প্রাইমারি বলতে কোনটা ধরে নিয়েছে টানকাডো আল্লা মালুম।

এবারো কথা বলে উঠল বেকার, আসলে সংখ্যাটা প্রাইম, প্রাইমারি নয়।

সুসানের চোখটা ছানাবড়া হয়ে গেল, প্রাইম চিৎকার জুড়ে দিল সে, কিল কোডটা প্রাইম নাম্বার! ভেবে বের করুন!

জাব্বা জানে, তার কথাই ঠিক। এনসেই টানকাভো তার ক্যারিয়ার গড়েছে প্রাইম নাম্বারের উপর। এ থেকেই কোডিংয়ের শুরু।

শোশি এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল, প্রাইম! জাপানের সব ব্যাপারই প্রাইম। জাপানিরা প্রাইম খুব পছন্দ করে। হাইকো প্রাইম ব্যবহার করে। পাঁচ সাত পাঁচ। কয়োটোর টেম্পলে-

এনাফ! জাব্বা আর সহ্য করতে পারছে না, প্রাইম হলেই বা কী? অসংখ্য প্রাইম নাম্বার আছে।

শূণ্য থেকে মিলিয়নের মধ্যে শতুর হাজার প্রাইম নাম্বার আছে। কে জানে কত বড় প্রাইম ব্যবহারের কথা চিন্তা করছিল টানকাডো!

এটা বিশাল হবে! আবার কথা বলে জাব্বা, আকারে হবে বিশাল দানবের মত!

দুই মিনিট ওয়ানিং!

আমি ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখছি, বলল সুসান, ইউরেনিয়াম আর পুটোনিয়ামের মধ্যে সমস্ত ব্যবধানের একটা হবে প্রাইম নাম্বার। সেটাই আমাদের টার্গেট।

জাব্বা তাকায় ইউরেনিয়াম/পুটোনিয়াম চার্টের দিকে। সেখানে কমসে কম একশো এন্ট্রি আছে! সবগুলোকে খুটিয়ে দেখে প্রাইম বের করা চাট্টিখানি কথা নয়।

অনেক এন্ট্রিই নন নিউমারিক। বলল সুসান, আমরা সেগুলোকে সরিয়ে দিতে পারি। ইউরেনিয়াম প্রাকৃতিক, প্রটোনিয়াম মানুষের বানানো। ইউরেনিয়ামে ব্যবহার হয় গান ব্যারেল ডেটোনেটর, পুটোনিয়ামে ইমপ্লোশন। এগুলো নাম্বার নয়, ঝেড়ে ফেলতে পারি আমরা।

ডু ইট! বলল ফন্টেইন। চোখ পর্দায়। শেষ ধাপটাকে টপকে যেতে চায় ঝাক ঝাক হাকারের হাত।

ভ্রু নামাল জাব্বা, অলরাইট। ভাগ করে না নিলে আর শেষরক্ষা হবে না। আমি উপরেরগুলো নিচ্ছি। সুসান, তোমার ভাগে মাঝেরগুলো। বাকিরা অন্যগুলো ভাগ করে নাও। আমরা একটা প্রাইম ডিফারেন্সের খোঁজে আতিপাতি করছি। কামঅন, গাইস।

কয়েক সেকেন্ডে জেনে গেল তারা, তবুও পারবে না। সংখ্যাগুলো বিশাল। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিট মিলছে না।

আপেল আর কমলার মধ্যে মিল করতে হচ্ছে রে বাবা! জাব্বার মুখ ফলগুলোর তিক্ত স্বাদে কটু হয়ে আছে, গামা রের বিপরীতে কাজ করাতে হবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালসের! ফিশনেবল বনাম আনফিশনেবল। কোনটা পিউর, কোনটা পার্সেন্টেবল। দুনিয়ার ঝামেলা।

এটা এখানেই আছে, বলল সুসান দৃঢ়ভাবে, ভাবতে হবে আমাদের। পুটোনিয়াম আর ইউরেনিয়ামের মধ্যে এমন কিছু পার্থক্য আছে যেটা চোখে পড়ছে সহজে। খুব সহজ কিছু!

আহ… গাইস? শোশি ভাবছে কী যেন।

কী ব্যাপার? ফন্টেইন জানতে চায়, পেলে কিছু?

উ, সম্ভবত। মনে আছে, বলেছিলাম নাগাসাকিরটা পুটোনিয়াম বোমা?

হু। এক স্বর সবার।

আসলে, বলল সে আমতা আমতা করে, মনে হয় কোন ভুল করে বসেছি আমি।

কী! জাব্বার চোয়াল জায়গামত থাকল না আর, আমরা ভুল জিনিসের পিছুধাওয়া করছি?

স্ক্রিনে দেখাল শোশি। সবাই গাদাগাদি করে টেক্সটটা পড়ার চেষ্টা করল।

.

… সাধারণ একটা ভুল ধারণা হল, লোকে মনে করে নাগাসাকির বোমাটা পুটোনিয়ামের। আসলে তাতে ইউরেনিয়াম ছিল। হিরোশিমায় ফেলা সিসটার বোমাটার মতই।

.

কিন্তু– সুসান খেই পেল না, দুটাই যদি ইউরেনিয়াম হয় তাহলে ফারাকটা কোথায়?

হয়ত টানকাভো ভুল করেছে, ফন্টেইন বলল ফাঁকা সুরে, হয়ত সে জানত না দুটাই এক জিনিস।

না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুসান, সে ঐ বোমার জন্যই প্রতিবন্ধী। ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারগুলো জানা থাকার কথা তার।

অধ্যায় : ১২৬

এক মিনিট!

ভি আরে চোখ পড়ল জাব্বার। পি ই এম অথোরাইজেশন উবে যাচ্ছে দ্রুত। প্রতিরক্ষার শেষ ধাপ। দরজায় হামলে পড়েছে মিছিল।

ফোকাস! কমান্ড করল ফন্টেইন।

ওয়েব ব্রাউজারের সামনে বসে থেকে শোশি জোরে জোরে পড়তে শুরু করল।

.

… নাগাসাকি বোমায় প্রটোনিয়াম ছিল না বরং দায়ি মৌলটা কৃত্রিমভাবে বানানে নিউট্রন-স্যাচুরেটেড আইসোটোপ অব ইউরেনিয়াম ২৩৮।

.

ড্যাম! ব্রিঙ্কারহফ কথা বলে উঠল অনেকটা সময় চুপ করে থেকে, দুটা বোমাতেই ইউরেনিয়াম ছিল। এলিমেন্টস রেসপনসিবল ফর হিরোশিমা এ্যান্ড, নাগাসাকি ওয়ার বোথ ইউরেনিয়াম। কোন পার্থক্য নেই!

মরে গেছি! বলল মিজ।

এক মিনিট! সুসানের চোখে পড়েছে একটা ব্যাপার, শেষ ধাপটা পড় আর একবার।

শোশি পড়ল। … কৃত্রিমভাবে বানানে নিউট্রন-স্যাচুরেটেড আইসোেটাপ অব ইউরেনিয়াম ২৩৮।

২৩৮? আমরা কি একটু আগে ইউরেনিয়ামের আরেকটা আইসোটোপের কথা পড়লাম না হিরোশিমার ক্ষেত্রে?

শোশির চোখ কপালে উঠে গেল, ইয়েস! এখানে লেখা আছে, হিরোশিমায় অন্য আইসোটোপ ব্যবহার করেছিল।

মিজ অবাক হয়ে গেল। বিজ্ঞানে তার ধারণা একটু কম, তারা দুজনেই ইউরেনিয়াম কিন্তু তাদের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে!

দুটাই ইউরেনিয়াম? জাব্বার মন খুশি হয়ে উঠছে যেন, আপেল বনাম আপেল?

কীভাবে আইসোটোপগুলো আলাদা রকমের? ফন্টেইন জানতে চায়, অবশ্যই কোন বেসিক পার্থক্য থাকবে।

শোশি স্ক্রল করলে, হোল্ড অন… মনে হচ্ছে… ওকে…

সুসান তাকায় ভি আরের দিকে। লাইনটা হারিয়ে যাচ্ছে।

পাওয়া গেছে! শোশির চিৎকারে কান পাতা দায়।

পড়ে ফেল! বলল জাব্বা, ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যেতে যেতে, পার্থক্যটা কী? দুটার মধ্যে কোন না কোন পার্থক্য থাকতে বাধ্য!

ইয়েস! বলল শোশি, লুক!

লেখাটা পড়ল তারা সবাই।

.

… বোমা দুটায় ভিন্ন দু ধরনের ফুয়েল ব্যবহার করা হয়েছে… কোন সাধারণ রাসায়নিক পরীক্ষায় আইসোটোপ দুটাকে আলাদা করা যাবে না। তাদের পার্থক্যটা ভরে। সামান্য ভরের পার্থক্য।

.

পারমাণবিক ভর! পাগলের মত চিৎকার করে ওঠে জাব্বা, দ্যাটস ইট! পার্থক্য শুধু ভরে। তাদের ভরটা জানিয়ে দাও আমাকে। আমরা নির্যাসটা বের করে নিব মুহূর্তে।

হোন্ড অন, বলল শোশি, এখনো স্কুল করছে, চলে এসেছি প্রায়! ইয়েস!

প্রত্যেকে পড়ে ফেলল টেক্সটটা।

.

… ভরের পার্থক্য খুব সামান্য…

… পৃথক করতে হলে গ্যাসীয় দিক দিয়ে আলাদা করতে হবে…

… ১০,০৩২৪৯৮x১০^১৩৪ এর সাথে তুলনা করতে হবে ১৯,৩৯৪৮৪x১০^২৩**

.

এইতো! জাব্বার কথা সচকিত করল সবাইকে, এটাই ভর।

ত্রিশ সেকেন্ড!

গো! বলল ফন্টেইন, সাট্রাক্ট দেম। দ্রুত।

জাব্বা ক্যালকুলেটর হাতে তুলে নিয়েই নাম্বার বসাতে শুরু করে।

এস্টেরিস্কটা কী? জানতে চাইল সুসান, ফিগারগুলোর শেষে একটা এস্টেরিস্ক আছে।

জাব্বা উপেক্ষা করল তাকে ক্যালকুলেটরে দ্রুত কাজ করছে সে।

কেয়ারফুল! বলল শোশি, আমরা একটা নিশ্চিত সংখ্যা চাই।

তারকা চিহ্নটা দেখ, বলল সুসান আগের মতই, সেখানে একটা ফুটনোট আছে।

প্যারাগ্রাফের নিচে চলে গেল শোশির ক্লিক।

সুসান ব্যাপারটা পড়ে নিয়ে সাদা হয়ে যায়, ওহ… ডিয়ার গড!

চোখ তুলল জাব্বা, কী ব্যাপার?

ছোট্ট পাদটিকার দিকে চোখ গেল সবার।

.

**ভুলের ১২% সম্ভাবনা থাকে। ল্যাব থেকে ল্যাবে ফিগারটায় হেরফের হয়।

অধ্যায় : ১২৭

সবাই থমকে গেছে মুহূর্তে।

প্রাণের সাড়া নেই কোথাও। শেষ বাধাটা ভেঙে গেছে প্রায়। ঢুকে পড়বে হ্যাকাররা দলে দলে। আর একটু পরই।

সুসান জানে, চায়নি টানকাডো। চায়নি এ কাজটা হোক।

সেভিলের গনগনে সূর্যের নিচে হাত তুলে দিয়েছিল সে উপরের দিকে। চেষ্টা করেছিল কিছু একটা বলার। কী, তা আর কখনো জানা যাবে না। ক্লিপটা আবার ভেসে উঠল মনের পর্দায়। খুব সাধারণ কোন ভুল হয়ে গেছে।

ভ্যানে বসে মাথায় হাত গুঁজে পড়ে আছে এজেন্ট দুজন। ডেভিড বেকারের মনে কী যেন ধরা পড়ছে না। কী বলল ইউরেনিয়াম আইসোটোপের নামগুলো? ইউ-২৩৮ আর একটা? ইউ- কত?

কী আর এসে যায়? সে কোন পদার্থবিদ নয়, ভাষার শিক্ষক।

ইনকামিং লাইনগুলো আসল পথ পেয়ে যেতে প্রস্তুত!

জিসাস! জাব্বা নামিয়ে আনে মুখ, আইসোটোপগুলোয় এত বড় পার্থক্য দেখা দিল কী করে?

জবাব নেই কোন।

দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আবার গলা ছাড়ে সে, কোথায় নিউক্লিয়ার ফাকিং ফিজিসিস্ট প্রয়োজনের সময়?

.

কোম্পানি চলে এসেছে।

জাব্বা নিজেকে সামলে নেয়। সময় শেষ।

কোরের চারপাশে কালো হ্যাকারের দঙ্গল বোঝাই। মুখ ঘুরিয়ে নিল মিজ। ফন্টেইনের চোখমুখ শক্ত। ব্রিঙ্কারহফ অসুস্থ হয়ে যাবে যে কোন সময়।

দশ সেকেন্ড।

সুসানের চোখ কখনোই টানাডোর চেহারার আফসোস আর কষ্টটা ভুলতে পারবে না। জানাতে চায় সে কিছু একটা। বেপরোয়া হয়ে।

কী সেটা?

অন্যদিকে ডেভিড গভীর চিন্তায় মগ্ন। পার্থক্য, বলছে সে, ইউ-২৩৮ আর ইউ ২৩৫ এর মধ্যে পার্থক্যটা একেবারে সরল কিছু একটা হবে।

পাঁচ! চার। তিন!

তিন পার্থক্যটা তিন! নেচে ওঠে বেকারের মন। ইউ-২৩৫ আর ইউ-২৩৮ এর মধ্যে পার্থক্য মাত্র তিন। ভর পৃথক, কিন্তু সেই ভর পৃথক হবার কারণ কেন্দ্রকণা। সেগুলোতেও গরমিল আছে। মাত্র তিনটা এদিক সেদিক। তিন, একেবারে সহজ এক প্রাইম নাম্বার। মাইক্রোফোনের দিকে এগিয়ে যায় বেকারের হাত…

ঠিক সে মুহূর্তে টানকাভোর হাতের রহস্য ধরে ফেলে সুসান ফ্লেচার। আঙটির দিকেই নজর ছিল সবার। কিন্তু আঙটি পরা হাতটায় আছে কয়েকটা আঙুল। উপরের দিকে তোলা… তিনটা আঙুল।

টানকাড়ো কিছু বলছিল না তাদের। দেখাচ্ছিল আঙুল তিনটা। সুসান অপেক্ষা করে একটু। তারপর প্রার্থনা করতে করতে তাকায় সবার দিকে।

তিন। ফিসফিস করে সে।

তিন! চিৎকার করে ওঠে বেকার স্পেন থেকে ঠিক সে মুহূর্তেই।

কিন্তু ঝামেলার মধ্যে কেউ যেন শুনতে পাচ্ছে না।

আমরা নেমে গেছি! এক টেকনিশিয়ান আরো জোরে বলে উঠল।

কোর ভেঙে গেছে। সাইরেন বাজছে সবখানে।

আউটব্যাক ডাটা! সব সেক্টরে হাই স্পিড টাই-ইন! স্বপ্নের ঘোরে যেন সুসান এগিয়ে যাচ্ছে জাব্বার কি বোর্ডের দিকে। স্পেন থেকে চিৎকার ছুড়ছে বেকারও।

তিন! ২৩৫ আর ২৩৮ এর মধ্যে পার্থক্য তিন!

ঘরের প্রত্যেকে চোখ তুলল এবার।

তিন! চিৎকার করে উঠল সুসানও।

এবার তাকায় অনেকেই ফ্রিজ করে রাখা দৃশ্যটার দিকে। টানকাভোর তিনটা আঙুল উঠে আছে শূণ্যে।

জাব্বা স্থবির হয়ে গেছে, ওহ মাই গড!

তিন প্রাইম! পাল্টা বলে ওঠে শোশি, তিন একটা প্রাইম নাম্বার!

ফন্টেইনের চোখ এখনো ঘোলাটে, ব্যাপারটা কি এত সহজ হতে পারে?

আউটবাউন্ড ডাটা! অন্যদিকে হল্লা করছে এক টেকনিশিয়ান, দ্রুত হামলে পড়ছে সবাই!

মুহূর্তেই পোডিয়ামের সবাই চলে গেল টার্মিনালের দিকে। হাত বাড়ানো। কিন্তু সবার আগে তিনের উপর হাত চলে গেল সুসানের। চাপ দিল সে।

চোখ উঠে গেল বিশাল স্ক্রিনে।

.

এন্টার পাস কি? ৩

.

ইয়েস! কমান্ড করল ফন্টেইন, এখনি!

সুসানের হাতটা এন্টার কির উপর চাপ দিল। মৃদু। বিপ করে উঠল কম্পিউটার।

নড়ছে না কেউ।

তিনটা যন্ত্রণাময় সেকেন্ড পেরিয়ে গেলেও হল না কিছুই। সা

ইরেন বাজছে এখনো। পাঁচ সেকেন্ড। ছ সেকেন্ড।

আউটবাউন্ড ডাটা!

সুযোগ নেই কোন!

তারপর হঠাৎ পাগলের মত উপরে হাত তুলল মিজ, দেখুন!

এর উপর একটা মেসেজ চলে এসেছে।

কিল কোড কনফার্মড।

ফায়ারওয়াল আপলোড কর! আদেশ দিল জাব্বা তৎক্ষণাৎ।

কিন্তু এক পা আগে ছিল শোশি। সে এর মধ্যেই আদেশটা দিয়ে দিয়েছে।

আউটবাউন্ড ইন্টারাপ্ট! এখনো হাক ছাড়ছে এক টেকনিশিয়ান।

টাই-ইন সার্ভ করা হয়ে গেছে!

মাথার উপরের ভি আরে প্রথম বাধাটা গড়ে উঠছে আস্তে আস্তে। কোরে আঘাত করা কালো রেখাগুলো সরে গেছে সাথে সাথেই।

ফিরে আসছে! বলছে জাব্বা আমুদে সুরে, মরার জিনিসটা ফিরে আসছে!

অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অনেকে, যেন যে কোন মুহূর্তে ধরা পড়ে যাবে, এটা একটা কুহক। দ্বিতীয় ফায়ারওয়াল গঠন শুরু হবার সাথে সাথে ছানাবড়া হয়ে গেল সবার চোখ। তৃতীয়টার সময় উঠে গেল কপালে, চতুর্থটার সময় শোরগোল। আস্তে আস্তে রিরিপেয়ার্ড হয়ে গেল সমস্ত প্রতিরক্ষা।

ডাটাব্যাঙ্ক এখন পুরোপুরি সিকিউর্ড।

টেকনিশিয়ানরা ছুঁড়ে দিল প্রিন্টআউটগুলোকে শূণ্যে, ব্রিঙ্কারহফ যে শক্তি দিয়ে ধরেছে মিজকে, ছিঁড়েই যাবে তার হাত বসে পড়ল জাব্বা বিশাল শরীরটা দিয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়ল শোশি।

জাব্বা, কাজের কথায়, এল ডিরেক্টর, কতটুকু নিতে পেরেছে তারা?

খুব সামান্য, খুবি সামান্য। কোনটাই নিয়ে শেষ করতে পারেনি।

খুব ধীরে একটা নির্মল হাসি ফুটল ফন্টেইনের মুখে।

চারদিকে তাকাল সে। সুসান কোথায়? এগিয়ে যাচ্ছে সুসান দেয়ালজোড়া বিশাল ক্রিনের দিকে। সেখানে ডেভিড বেকারের মুখ।

ডেভিড?

হেই, গর্জিয়াস!

কাম হোম। কাম হোম রাইট নাউ।

দেখাটা কি স্টোন ম্যানোরে হবে?

ডিল।

ফন্টেইন তাকাল সেদিকে, এজেন্ট স্মিথ?

বেকারের পিছনে স্মিথ দেখা দিল, ইয়েস, স্যার?

মনে হচ্ছে মিস্টার বেকারের একটা ডেট আছে, তোমার তো দায়িত্ব বেড়ে গেল!

যে কোন সময়, স্যার। আপনার জন্য।

দ্রুত পৌঁছে দিতে হয় যে তাকে।

আমাদের জেটটা মালাগায় অপেক্ষা করছে। বেকারের কাঁধে হাত রাখল সে, আপনাকে একটু কষ্ট করে উঠতে হবে, প্রফেসর। কখনো লিয়ারজেট সিক্সটিতে উড়েছেন?

হাসল বেকার, কালকের আগে নয়।

অধ্যায় : ১২৮

জেগে উঠেছে সুসান। ঝলমল করছে সূর্যটা। বিছানায় খেলা করছে নরম কীরন। ডেভিডের জন্য হাত বাড়ায় সে। স্বপ্ন দেখছি নাতে? শরীরটা নড়তে চাচ্ছে না। এখনো স্বপ্নটার ভাব চোখেমুখে।

ডেভিড?

কোন জবাব নেই। চোখ খুলল সে। পাশের ম্যাট্রেস ঠান্ডা। অনেক আগেই উঠে গেছে ডেভিড।

স্বপ্ন দেখছি আমি। ভাবে সুসান। রুমটা ভিক্টোরিয়ান। সবদিক লেস আর এ্যান্টিকে মোড়া। স্টোন ম্যানোরের সবচে ভাল স্যুট। তার জিনিসপত্র পড়ে আছে শক্ত কাঠের মেঝেতে।

ডেভিড কি আসলেই এসেছে? শরীরের স্পর্শ, কোমল চুমু, এসবই কি কল্পনা?

উঠল সে। পাশেই, টেবিলের উপর পড়ে আছে একটা শ্যাম্পেনের খালি বোতল, দুটা গ্লাস।

নগ্ন শরীরে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে চারপাশে তাকায় সে।

একটা মেসেজ পড়ে আছে পাশে।

ডিয়ারেস্ট সুসান,
ভালবাসি তোমাকে।
উইদাউট ওয়াক্স, ডেভিড।

নোটটা নেয় সুসান। এখনো একটা কোড ভাঙা বাকি। উইদাউট ওয়াক্স।

অন্য পাশে, চুপচাপ বসে আছে একজন। তার বিস্ময় দেখছে। শান্তভাবে।

এগিয়ে গেল সুসান। টেনে আনল তাকে।

উইদাউট ওয়াক্স? প্রশ্ন করে সে।

উইদাউট ওয়াক্স। হাসল ডেভিড।

গভীর একটা চুমু দিল সে, অর্থটা বলে দাও এবার ভালয় ভালয়।

কোন সুযোগ নেই, মোহময় ভঙ্গিতে হাসল সে, জোড়াদের মধ্যে গোপনীয়তা থাকতে হয়। আকর্ষণ বজায় থাকে তাহলে।

হাসল সুসানও, কাল রাতেরচে ইন্টারেস্টিং কিছু হলে আমি হাঁটাই ছেড়ে দিব।

ডেভিড পাশে নিল তাকে। হাল্কা। কাল রাতে মারা যাচ্ছিল তারা, আর আজকের মত জীবিত ভাব ছিল না কখনোই।

ডেভিড, দয়া করে উইদাউট ওয়াক্স এর ব্যাপারটা খুলে বল। তুমি কিন্তু ভালভাবেই জান, যে কোড ভাঙতে পারি না সেগুলোকে কী প্রচন্ড রকমের ঘৃণা করি।

চুপ করে থাকল ডেভিড।

বল, নাহয় আর কখনো পাবে না আমাকে।

মিথ্যুক!

কাতুকুতু দিল সুসান, বল! এক্ষুনি!

কিন্তু ডেভিড জানে, কখনোই বলবে না সে কথাটা। উইদাউট ওয়াক্স এর ভিতরে খুব মিষ্টি কিছু কথা লুকিয়ে থাকে। এর শুরুটা খুব পুরনো। রেনেসাঁর সময়কার কথা। স্প্যানিশ ভাষ্কররা যখন কোন পাথর কুঁদতে গিয়ে ভুল করে বসত, দামি মার্বেলে কোন সমস্যা দেখা দিত, তখন সেরা দিয়ে সে খুতটা সারিয়ে নিত। সেরা- মোম। কোন ভাষ্কর্যে যদি মোমের প্রয়োজন না পড়ত একটুও, সেটার দাম ছিল খুব বেশি। বলা হত স্কাল্পচার সিন সেরা। স্কাল্পচার উইদাউট ওয়াক্স। পরে আস্তে আস্তে নিখাদ খাঁটি যে কোন কিছু বোঝাতেই ফ্রেজটাকে কবহার করা শুরু হয়। ইংরেজি সিনসিয়ার শব্দটা এসেছে স্প্যানিশ সিন সেরা থেকে। মোম ছাড়া! ডেভিডের গোপন কোডটায় অনেক গোপন একটা ব্যাপার ছিল। সে সব সময় সিনসিয়ারলি লিখে চিঠিগুলো শেষ করত। এ সাধারণ কথায় সুসানের মন ভরবে না, জানে সে।

তুমি শুনে খুশি হবে, বলছে ডেভিড, ফ্লাইটে আসার সময় ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টকে কল করেছিলাম।

আমাকে জানাও যে তুমি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারটা ছেড়ে দিচ্ছ।

নড করল ডেভিড, পরের সেমিস্টার থেকেই ক্লাসরুমে ফিরে যাচ্ছি আমি।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সুসান, প্রথমে যেখানেই তোমাকে মানায়।

হ্যাঁ। আসলে স্পেন আমাকে সে কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছিল।

যাক, আমার ম্যানুস্ক্রিপ্ট লেখার কাজে সহায়তা করতে পারবে।

অবাক হল ডেভিড, ম্যানুস্ক্রিপ্ট।

হ্যাঁ। আমি প্রকাশ করার চিন্তা ভাবনা করছি।

 প্রকাশ করবে? কী প্রকাশ করবে?

কোয়াড্রাটিক রেডিডিউ আর ফিল্টার প্রটোকলের ব্যাপারে আমার কিছু ধারণা। আছে, সেগুলো।

মাথা ঝাঁকাল ডেভিড। জায়গামত ঠিক ঠিক বেস্ট সেলার হয়ে যাবে।

হাসল সুসানও। হ্যাঁ। পিলে চমকে যাবে তোমার।

ডেভিড বাথরোবের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা জিনিস নিয়ে নিল মুঠোয়।

চোখ বন্ধ কর। তোমার জন্য কিছু একটা আছে আমার তরফ থেকে।

চোখ বন্ধ করল সুসান বিনা বাক্যব্যয়ে, আন্দাজ করতে দাও আমাকে একটা সোনার আঙটি, তার চারপাশে ল্যাটিন অক্ষর কুদে দেয়া?

না। হাসল ডেভিড, আমি ফন্টেইনকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি সেটাকে। টানকাডোর এস্টেটে।

মিথ্যাবাদী! হাসল সুসানও, তার আঙুলে একটা আঙটি পরিয়ে দিয়েছে ডেভিড।

তারপর চোখ খুলেই উবে গেল তার হাসি। আঙটি একটা আছে সত্যি, সোনার নয়, প্লাটিনামের উপর চমৎকার এক হিরা বানো।

অবাক হয়ে গেছে সে।

ডেভিড চোখ পাকায়। বিয়ে করবে আমাকে?

শ্বাস থেমে গেছে সুসানের। একবার তাকায় সে ডেভিডের দিকে তাকায় আঙটিটার দিকে। এরপর বলে উঠল, ও, ডেভিড… আমি জানি না কী বলব!

বল, ইয়েস।

ঘুরে গেল সুসান। কোন কথা বলল না।

অপেক্ষা করছে ডেভিড়। সুসান ফ্লেচার, ভালবাসি তোমাকে। ম্যারি মি!

মাথা তুলল সুসান। অশ্রু টলমল করছে চোখে। আমি দুঃখিত, ডেভিড, কান্না সামলাছে সে, আমি… আমি পারব না।

শক পেয়ে তাকিয়ে আছে ডেভিড। সু.. সুসান! বুঝলাম না আমি।

পারব না। পারব না তোমাকে বিয়ে করতে।

কিন্তু সুসান, আমি মনে করেছিলাম…।

বললাম তো, পারব না আমি! হাসল সুসান, যে পর্যন্ত উইদাউট ওয়াক্স ব্যাখ্যা না করছ সে পর্যন্ত আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পাগল করে দিচ্ছ আমাকে!

পরিশিষ্ট

তারা বলে, মৃত্যুর মুহূর্তে নাকি সব ফিরে আসে। পুরো ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। টকোগেন নুমাটাকা এখন জানে, কথাটা সত্যি। ওসাকা কাস্টমস অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। এমন এক তিক্ত স্বাদ, এমন এক কষ্ট তার বুকে দানা বাঁধছে যেটার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি।

লোকে বলে, চক্র পূর্ণ হয়। ধর্ম বলে, সবশেষে আবার শুরু ফিরে আসে। বলে, ঘটনার পরম্পরায় ফিরে আসে আগের ইতিহাস। পূর্ণ হয় চক্র। কিন্তু টকোগেন নুমাটাকার কাছে ধর্মের জন্য কোন সময় নেই।

কাস্টমস অফিসাররা তার হাতে দত্তক নেয়ার কাগজপত্র আর বার্থ সার্টিফিকেট সহ একটা খাম তুলে দিয়েছে। আপনিই শিশুটার একমাত্র জীবিত আত্মীয়। বলেছিল তারা, খুঁজে বের করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে।

নুমাটাকার মন উড়ে চলে। উড়ে চলে বত্রিশ বছর আগের সেই বৃষ্টিভেজা রাতে। সেই হাসপাতালের ওয়ার্ডটা খালি ছিল। তার মৃত্যপথযাত্রী স্ত্রী আর প্রতিন্ধী শিশু ছাড়া আর কেউ ছিল না সেখানে। মেনবুকোর নামে সে কাজটা করেছিল মেনবুকো- সম্মান- যে ব্যাপারটার কোন মূল্য নেই এখন আর। শুধু শূণ্য একটা ছায়া।

কাগজের সাথে একটা সোনার আঙটি। কী কথা আছে সেখানে বোঝ না সে। এতে কিছু এসে যায় না- শব্দগুলোর কোন মানে নেই আর নুমাটাকার কাছে। একমাত্র সন্তানকে সে ছেড়ে গিয়েছিল। আর এখন, সবচে নিষ্ঠুর ভাগ্যের খেলা

এগিয়ে এসেছে তার কাছে।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *