১১০. পাওয়ার কিল করতে হবে

অধ্যায় : ১১০

ডিরেক্টর, আমাদের আর কোন উপায় নেই। পাওয়ার কিল করতে হবে।

অসম্ভব। ফলাফল খুব খারাপ হবে। নিশ্চিত।

জানে জাব্বা, কথাটা সত্যি। তিন হাজার আই এস ডি এন কানেকশন দিয়ে সারা পৃথিবী থেকে ডাটাব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। প্রতিদিন মিলিটারি কমান্ডাররা স্যাটেলাইট ছবির দিকে চোখ রাখে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা চোখ রাখে অস্ত্রের ব্লু প্রিন্টে। ফিল্ড অপারেটিভরা মিশন অবজেকটিভ ঘাটে। আমেরিকার হাজার হাজার সরকারি অপারেশনের মেরুদন্ড এই এন এস এ ডাটাব্যাঙ্ক।

বন্ধ হয়ে গেলে সারা পৃথিবীতে জীবন মরণ সমস্যা দেখা দিবে।

আমি সমস্যার কথা জানি, স্যার। কিন্তু আমাদের কোন উপায় নেই।

নিজের কথা ব্যাখ্যা কর।

বড় করে শ্বাস নিল জাব্বা, আবার মুছে ফেলল।

এই ওয়ার্ম, শুরু করল সে, এটা কোন সাধারণ ডিজেনারেটিভ সাইকেল নয়। সিলেক্টিভ সাইকেল। অন্য কথায়, এ পোকাটার জিহ্বায় স্বাদ আছে।

মুখ খুলল ব্রিঙ্কারহফ কথা বলার জন্য। ফন্টেইন থামিয়ে দিল তাকে।

বেশিরভাগ ধ্বংসাত্মক ওয়ার্ম ডাটাব্যাঙ্ককে ক্লিন করে দেয়। কিন্তু এর পদ্ধতি আরো জটিল। এটা শুধু সে ফাইলগুলো সরিয়ে দিবে যেগুলো নির্দিষ্ট কাজের মধ্যে পড়ে।

তার মানে পুরো ডাটাব্যাঙ্ক এ্যাটাক করবে না? আশার ঝলক দেখায় ব্রিঙ্কারহফ, ভাল খবর।

না। চিৎকার ছেড়ে জাব্বা পাল্টাপাল্টি, এটা খারাপ। খুবি ইয়ের খারাপ।

কুল ইট! আবার আদেশ দিল ফন্টেইন, কোন প্যারামিটারের জন্য কাজ করছে এ ওয়ার্ম? মিলিটারি? কভার্ড অপারেশন?

মাথা নাড়ল জাব্বা। স্যার, আপনি জানেন, বাইরে থেকে যে-ই ঢোকার চেষ্টা করুক না কেন তাকে কয়েকটা সিরিজ পেরিয়ে ঢুকতে হয়।

নড করল ফন্টেইন।

ডাটাব্যাঙ্কের হায়ারার্কি খুবই ভালভাবে বানানো। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক লোকগুলো ডায়াল করতে পারবে। পারমিশনের উপর ভিত্তি করে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ঢুকতে পারবে।

যেহেতু আমরা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, বলছে জাব্বা, হ্যাকার, বিদেশি সরকার, ই এফ এফ এর হাঙরগুলো এ ডাটাব্যাঙ্কের চারধারে চব্বিশ ঘন্টা ঘুরপাক খায় এ্যাকসেস পাবার জন্য।

হ্যাঁ। আর দিনে চব্বিশ ঘন্টা তোমার সিকিউরিটি ফিল্টার সেগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করে। তোমার পয়েন্টটা কী?

আমার পয়েন্ট হল, টানকাডোর ওয়ার্ম আমাদের ডাটার কিছু করছে না। টার্গেট করছে সিকিউরিটি ফিল্টারগুলোকে।

এবং ফিল্টার না থাকলে সমস্ত ডাটা সারা পৃথিবীর কাছে খোলাসা হয়ে যাবে।

উই নিড টু শাট ডাউন। আবার বলল জাব্বা, এক ঘন্টার মধ্যে থার্ড গ্রেডেড যে কোন লোক, হাতে মডেম থাকলেই হল, আমেরিকার টপ সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাবে।

ফন্টেইন দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়। কোন কথা বলে না।

তাকায় জাব্বা শোশির দিকে।

শোশি! ভি আর! এখনি!

বুলেটের মত ছুটে যায় শোশি।

বেশিরভাগ কম্পিউটারেই ভি আর মানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। কিন্তু এখানে ভি আর মানে ভিজরিপ- ভিজুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন। এ পৃথিবীতে নানা কাজের নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা। একটা ভি আর এক রেখায় দেখিয়ে দিতে পারে সবকিছু।

শোশি নিচের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, ভি আর!

একটা কম্পিউটার জেনারেটেড ডায়াগ্রাম উটে এল দেয়ালে। সবাই জাব্বার সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে।

ভি আরটা বুলস আই। ভিতরের লাল বৃত্তটা ভাটা। তার চারপাশে পাঁচটা গোল আঙটি। প্রতিটার রঙ ভিন্ন। বাইরের বৃত্তটা হালকা হয়ে গেছে। প্রায় অদৃশ্য।

আমাদের ডিফেন্সের পাঁচটা ধাপ আছে। ব্যাখ্যা করছে জাব্বা। প্রাইমারি ব্যাসন হোস্ট, দু সেট প্যাকেট ফিল্টার- এফ টি পি আর এক্স ইলেভেনে তৈরি, একটা টানেল ব্লক, সবশেষে পি ই এম নির্ভর অথোরাইজেশন উইন্ডো। ট্রাফল প্রজেক্টে। বাইরের বৃত্তটা হারিয়ে যাচ্ছে, এক ঘন্টার মধ্যে বাকি চারটাও শেষ হয়ে যাবে। প্রতি বাইট এন এস এ ডাটা হয়ে যাবে পাবলিক ডোমেইন।

ফন্টেইন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে ডাটার দিকে।

এটা যুদ্ধাবস্থা। বলল ডিরেক্টর ধীরে ধীরেভ।

মাথা নাড়ল জাব্বা সায় দিয়ে, আমার মনে হয় না টানকাডো এতটা চেয়েছিল। সে এর মধ্যেই থামিয়ে দিতে চেয়েছিল ব্যাপারটাকে।

হারিয়ে গেছে পঞ্চম বাধাটা।

ব্যাসন হোস্ট টোস্টেড। চিৎকার করল এক টেকনিশিয়ান, সেকেন্ড শিল্ড ধ্বসে পড়ছে।

এখনি শাটডাউন শুরু করতে হবে, যুক্তি দেখাল জাব্বা, ভি আরে দেখা যাচ্ছে হাতে পয়তাল্লিশ মিনিট সময় বাকি। শাটডাউনটা খুবি জটিল প্রক্রিয়া।

সত্যি কথা। এন এস এ ডাটাব্যাঙ্ক কখনো শাটডাউনের জন্য তৈরি হয়নি। অনেক অনেক পাওয়ার সাপ্লাই আছে তার। আছে অনেক ফেইল সেফ। আছে মাল্টিপল এ্যাকসেস প্রক্রিয়া।

আমাদের হাতে সময় আছে, যদি চেষ্টা করি, বলল জাব্বা, ম্যানুয়াল শাটডাউনে ত্রিশ মিনিট সময় লাগবে।

তাকিয়ে আছে ডিরেক্টর ভি আরের দিকে।

ডিরেক্টর, পৃথিবীতে আমেরিকার গোপন বলে কিছু থাকবে না আর একটু পরেই। শাটডাউন করতে হবে আমাদের।

অন্য কোন না কোন পথ অবশ্যই আছে।

আছে। কিল কোড। কিন্তু এর মালিক মৃত।

ব্রুট ফোর্সের ব্যাপারে কী হবে? প্রশ্ন তুলল ব্রিঙ্কারহফ, আমরা কি কিল কোডটা আন্দাজ করতে পারি না?

ফর ক্রাইস্টস সেক! কিল কোড এনক্রিপশন কোডের মতই! র‍্যান্ডম! ধারণা করা অসম্ভব! আপনি যদি ছশো ট্রিলিয়ন এন্ট্রি করাতে পারেন আগামি পয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে, স্বাগতম!

কিল কোডটা স্পেনে। দুর্বলভাবে বলল সুসান।

সবাই তাকাল তার দিকে।

চোখ তুলে তাকায় সুসান, মারা যাবার সময় টানকাডো সেটাকে সরিয়ে ফেলে। দিয়ে দেয় আরেকজনের কাছে।

সবাই আরো বিমূঢ় হয়ে পড়ল।

পাস কি…বলল সে, কমান্ডার সেটা আনতে পাঠিয়েছে।

আর? স্ট্র্যাথমোরের লোকজন পেয়েছে সেটাকে? প্রশ্ন করল জাব্বা।

ইয়েস। আই থিঙ্ক সো।

অধ্যায় : ১১১

কন্ট্রোল রুমে আরো একটা চিৎকার উঠে এল। শোশি। শার্কস!

ভি আরের দিকে ঘুরে গেল জাব্বা। বাইরের লাইনের পাশে দুটা চিকন রেখা দেখা দিল। যেন কোন ডিম্বকে ঢুকে পড়ছে স্পার্ম।

পানিতে রক্ত, ফোকস, বলল জাব্বা, হয় এখনি শাটডাউন শুরু করতে হবে, নয়ত কখনো না। এ দু পক্ষ যখনি দেখবে ব্যাসন হোস্ট নেই, যুদ্ধের হুঙ্কার দিবে তারা।

ডিরেক্টর তাকিয়ে আছে সুসানের দিকে। চেয়ারে বসে পড়েছে সুসান। ভেঙে গেছে একদম।

আই নিড এ ডিসিশন! চিৎকার করছে জাব্বা, নাই!

চোখ তুলে তাকায় ফন্টেইন, ওকে, তোমাকে দেয়া হল। আমরা শাটডাউন করছি না। অপেক্ষা করছি।

কী! কিন্তু-।

জুয়া। বলল ফন্টেইন, জুয়াটা জিতেও যেতে পারি। জাব্বার সেলুলার তুলে নিল সে, মিজ, লেল্যান্ড ফন্টেইন বলছি। মন দিয়ে শোন…

অধ্যায় : ১১২

আপনিই ভাল জানেন কী করছেন, ডিরেক্টর! আমরা শাটডাউনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি।

কোন জবাব নেই ফন্টেইনের পক্ষ থেকে।

দরজা খুলে গেল। এগিয়ে এল মিজ। ডিরেক্টর! সুইচবোর্ডে প্যাচিং হচ্ছে। এখনি!

প্রত্যাশা চোখে নিয়ে ফন্টেইন তাকায় স্ক্রিনের দিকে। পনের সেকেন্ড পর জীবন ফিরে পায় স্ক্রিনটা।

স্ক্রিনে দৃশ্যটা তুষারমোড়া। কুইকটাইম ডিজিটাল ট্রান্সমিশন- সেকেন্ডে মাত্র পাঁচটা ফ্রেম। ইমেজে দুজন মানুষ। একজন ফ্যাকাশে, অন্যজন ব্লন্ড। দুজনেই আমেরিকান। যেন দুজন নিউজকাস্টার অন দ্য এয়ার হবার জন্য অপেক্ষা করছে।

এটা আবার কী? প্রশ্ন তুলল জাব্বা।

সিট টাইট। আদেশ করল ফন্টেইন সাথে সাথে।

মানুষটা মনে হয় কোন ভ্যানের ভিতরে। চারপাশে ইলেক্ট্রনিক ক্যাবলিং। অডিও কানেকশন জীবিত হয়ে উঠল। শোনা যাচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েস।

ইনবাউন্ড অডিও, বলল এক টেকনিশিয়ান পিছন থেকে, বোথওয়ে হতে আরো পাঁচ সেকেন্ড সময় লাগবে।

এরা কারা? প্রশ্ন করল ব্রিঙ্কারহফ।

আকাশে চোখ রাখ। জবাব দিল ফন্টেইন। স্পেনে পাঠানো দুজনের দিকে দৃষ্টি তার।

পাঠিয়েছে সেই। স্রাথমোরের সব পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন আছে তার। কিন্তু হুলোহটকে ব্যবহার করা কেন? সে একজন মার্সেনারি। যদি প্রয়োজন হয় লোক পাঠিয়েছে সে স্পেনে।

অধ্যায় : ১১৩

অসম্ভব! ক্যামেরায় কথা বলে উঠল লোকটা, আমাদের উপর আদেশ আছে। আমরা কাজ করছি লেল্যান্ড ফন্টেইনের পক্ষ থেকে, জবাব দিব শুধু তার কাছে।

ফন্টেইন মুখ খুলল আমুদে ভঙ্গিতে, তোমরা জান না আমি কে, জান নাকি?

তাতে কিছু এসে যায় না।

আমাকে ব্যাখ্যা করতে দাও। ব্যাখ্যা করতে দাও একটা ব্যাপার।

দু সেকেন্ড পর লোক দুজন লাল মুখো হয়ে গেল। শরীর সোজা করে বলা শুরু করল, ডি-ডিরেক্টর, ব্লন্ড লোকটা কথা বলছে, আমি এজেন্ট কলিয়ান্ডার, দিস ইজ এজেন্ট স্মিথ।

ফাইন, বলল সে, আমাদের ব্রিফ কর।

.

পিছনে মাথা গুঁজে কাঁদছিল সুসান। চোখ তুলে তাকায়।

পোডিয়ামের লোকজন কথা শুনছে। এজেন্ট শুরু করেছে তার ব্রিফিং।

আপনার আদেশ অনুযায়ী, ডিরেক্টর, বলছে লোকটা, আমরা এখানে দুদিন ধরে আছি। সেভিলে। স্পেনে। ফলো করছি এনসেই টানকাডোকে।

আমাকে খুনের ব্যাপারে বল। অধৈর্য হয়ে কথা বলে উঠল ফন্টেইন।

নড করল স্মিথ। আমরা ভিতর থেকেই দেখতে পেলাম হুলোহট মুথলি শেষ করে দিল এনসেই টানকাড়োকে। আশপাশের লোকজন চলে এল। হুলোহট আর পায়নি জিনিসটাকে।

নড করল ফন্টেইন। দক্ষিণ আমেরিকায় থাকার সময় এজেন্ট বলেছিল কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে। ডিরেক্টর চলে এসেছে সাথে সাথে।

কলিয়ান্ডার কথা বলে উঠল, আমরা আপনার আদেশ অনুযায়ী হুলোহটের সাথে সাথেই ছিলাম কিন্তু সে কখনোই সেভিল মর্গে যায়নি। তার বদলে আরেক লোকের পিছু নেয় সে। দেখে মনে হয় সাধারণ। কোট এবং টাই পরা। প্রাইভেট।

প্রাইভেট হাসল ফন্টেইন। স্ট্র্যাথমোর এন এস এ কে খেলা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

এফ টি পি ফিল্টার ফেইলিং! জোর শব্দ তুলল এক টেকনিশিয়ান।

জিনিসটা দরকার, বলল ডিরেক্টর, কোথায় হুলোহট?

পিছতে তাকায় স্মিথ। সে আমাদের সাথেই আছে… স্যার।

কোথায়?

লেন্স এ্যডজাস্ট করল লোকটা। পিছনে দুটা দেহ পড়ে আছে। একজন ওয়্যার রিমের গ্লাস পরা, অন্যজন সাদা শার্টের কালো চুলের লোক। শার্ট রক্তে ভিজা।

বা পাশের লোকটা হুলোহট।

মারা গেছে?

ইয়েস, স্যার।

এজেন্ট স্মিথ, আইটেমটা আমাদের দরকার।

আমাদের এখনো কোন স্থির ধারণা নেই আইটেমটা কী। চেষ্টা চালাচ্ছি।

অধ্যায় : ১১৪

তাহলে আবার দেখ! ঘোষণা করল ফন্টেইন।

রান্ডম নাম্বারে খোঁজে আবার দেহ দুটা তল্লাশী করল এজেন্ট দুজন।

জাব্বা ফ্যাকাসে হয়ে গেল, মাই গড! ওরা পাবে না!

এফ টি পি ফিল্টার হারাচ্ছি আমরা! পিছন থেকে বলল এক টেকনিশিয়ান, তৃতীয় শিল্ড বেরিয়ে গেছে।

 স্যার, কোথাও পাস কি নেই। সব দেখেছি আমরা। সব। হুলোহট একটা মনোকল কম্পিউটার পরে আছে। সেখানেও দেখেছি। সে কোনকিছু ট্রান্সমিট করেনি। শুধু খুনের কয়েকটা লিস্ট।

ড্যামইট! সেখানেই থাকার কথা! খুজতে থাক!

জাব্বা অনেক দেখেছে। এবার নিয়ন্ত্রণ নিল সে। ডিরেক্টরের তোয়াক্কা না করে কমান্ড করল, এ্যাকসেস অক্সিলারি কিল করছে! শাট ইট ডাউন! নাউ!

আর পারব না! চিৎকার করল শোশি, আধঘন্টা লাগবে। দেরি হয়ে যাবে ততক্ষণে।

জাব্বা কিছু বলতে যাচ্ছিল, পিছন থেকে একটা আওয়াজ উঠে এল।

পাগলের মত চিৎকার করছে সুসান। উঠে দাঁড়িয়ে ফ্রিজ হয়ে থাকা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে ছুটে আসছে।

তোমরা খুন করে ফেলেছ তাকে খুন করে ফেলেছ!

এগিয়ে আসছে সে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুসানের দিকে।

ডেভিড! ও মাই গড! ডেভিড!

কাঁপছে সে। ফোপাচ্ছে। তড়পাচ্ছে পাগলের মত। উদভ্রান্ত সৃষ্টি তার। ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসলেও কেউ এভাবে কষ্ট পায় না, সামনের দৃশ্য দেখে যেভাবে দাপাচ্ছে সুসান।

ভ্যানের পিছনদিকে পড়ে আছে লাশটা সাদা শার্ট লাল হয়ে আছে রক্তে। পরিপাটি চুল পড়ে আছে ডেভিড বেকারের লাশ।

আপনি তাকে চেনেন? ফন্টেইন জিজ্ঞেস করল।

কোন জবাব দিল না সুসান। বারবার নামটা বলছে সে, যে মানুষটাকে ভালবাসে তার নাম।

অধ্যায় : ১১৫

ডেভিড বেকারের মনে শূণ্যতা। আমি মারা গেছি। এবং দূরে, বহুদূরে কোন এক কণ্ঠ ডাকছে তাকে। পরিচিত। খুব পরিচিত…

ডেভিড!

হাতের নিচে হালকা জ্বালা। রক্তে আগুন। এখন আর আমার মানুষটা আমার। নেই। তবু তার কণ্ঠ ভেসে আসছে কোত্থেকে? মৃদু, দূরাগত শব্দ। তার অংশ কণ্ঠটা।

আরো অনেক কষ্ঠ আছে আশপাশে। সে সেসব কণ্ঠকে সরিয়ে দেয় দূরে। র্দু একটা কষ্ঠ প্রয়োজন তার।

ডেভিড…

আলোর একটা ঝলক। মৃদু। তীব্র। বাড়ছে। নড়ার চেষ্টা করে বেকার। ব্যথা। কথা বলার চেষ্টা করে।

কণ্ঠটা এখনো ডেকে চলেছে আগের মতই।

কাছেই আছে কেউ একজন। উঠিয়ে আনছে তাকে। কণ্ঠের দিকে ফিরে গেল বেকার। নাকি নাড়ানো হয়েছে? ডাকছে তাকে। চোখ খুলে তাকায় সে। উজ্জ্বল ইমেজের দিকে। এক মহিলার ইমেজ। তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি আমাকে মারা যেতে দেখছে?

ডেভিড…

পরিচিত কণ্ঠ। নেমে এসেছে একজন দেবী। কথা বলছে দেবী তার প্রতি। ডেভিড! ভালবাসি। ভালবাসি তোমাকে!

মুহূর্তে বাকিটা বুঝে ফেলে সে।

সুসান স্ক্রিনের কাছে এসে পাগলের মত চিৎকার করছে। লাফাচ্ছে। দুহাতে মুছে ফেলছে অনেক অনেক কষ্টের অশ্রু। ডেভিড… আমি… আমি মনে করেছিলাম…

ফিল্ড এজেন্ট স্মিথ বুঝে নিল বাকিটা। সেই তুলে এনেছে তাকে। বসিয়ে দিচ্ছে সামনের সিটে। তিনি একটু ঘোরের মধ্যে আছেন, ম্যাম। সময় দিন কিছুটা।

কি-কিন্তু, বলছে সুসান, আমি একটা ট্রান্সমিশন দেখেছিলাম—

আমরাও দেখেছি ম্যাম। হুলোহট আগেই ট্রান্সমিট করে দিয়েছে লেখাটা।

কিন্তু রক্ত!

মাংসে আঘাত। কোন সমস্যা নেই। গজ বেঁধে দিয়েছি।

কথা বলতে পারছে না সুসান।

এজেন্ট কলিয়ান্ডার সরিয়ে নিল ক্যামেরা। আমরা তাকে নতুন জে টু থ্রি লঙ এ্যাকটিং স্টান গান দিয়ে গুলি করেছি। দোজখের মত জ্বলার কথা। কিন্তু তাকে পথ থেকে সরিয়ে আনতে পেরেছি।

ভাববেন না, ম্যাম, বলল স্মিথ, ঠিক হয়ে যাবেন তিনি।

ডেভিড বেকার তাকিয়ে আছে টিভি স্ক্রিনের দিকে। মাথা ফাঁকা। চিন্তা ঘোলাটে। ইমেজটা একটা ঘরের। বিচ্ছিন্নতা আর গোলযোগের ঘর। সুসান সেখানে। দাঁড়িয়ে আছে ভোলা মেঝেতে। তাকিয়ে আছে তার দিকে।

হাসছে এবং চিৎকার করে কাঁদছে সুসান, ডেভিড! থ্যাঙ্ক গড়! আমি মনে করলাম হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে!

সামনে এগিয়ে গুজনেক মাইক্রোফোনটা নিজের দিকে আনে সে, সুসান?

যেন বজ্রপাত হল ঘরের ভিতরে। চোখ তুলল সুসান।

সুসান, তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।

পুরো ডাটাব্যাঙ্ক থমকে গেছে। তাকিয়ে আছে সবাই।

সুসান ফ্লেচার, বলল ডেভিড বেকার থমকে থমকে, উইল ইউ ম্যারি মি?

কার হাত থেকে যেন একটা পেন্সিল পড়ে গেল। ছলকে পড়ল কফি গায়ের উপর। কোন হুশ নেই কারো।

ডে-ডেভিড, বিমূঢ় সুসান জিজ্ঞেস করল, তুমি তো পাঁচ মাস আগেই প্রশ্নটা করেছিলে। মনে পড়ে?

পড়বে না কেন? কিন্তু এবারের কথাটা ভিন্ন।

মানে?

এবার আমার সাথে একটা আঙটি আছে।

অধ্যায় : ১১৬

রিড ইট, মিস্টার বেকার! আদেশ করল ফন্টেইন।

জাব্বা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে কি বোর্ডে হাত রেখে। ইয়েস, বলল সে, আশীর্বাদের অক্ষরগুলো বলেই দিন।

তাদের সাথেই আছে সুসান ফ্লেচার। হাটু দুর্বল। কাঁপছে। পর্দা জুড়ে প্রফেসর ডেভিড বেকার। হাতের আঙটিটা ঘুরিয়ে লেখাগুলো বোঝার চেষ্টা করে সে।

আর সাবধানে পড়বেন! কমান্ড করছে জাব্বা, একটা টাইপো মিস বা ভুল, আমরা এমন গ্যাড়াকলে ফেসে যাব!

রাগে তাকায় ফন্টেইন জাব্বার দিকে। এ টেনশনে আরো প্রেশার দেয়ার কোন মানে হয় না।

রিল্যাক্স, মিস্টার বেকার। আমরা সাবধানে পড়ব লেখাটা। ভুল হলে ক্ষতি নেই খুব। আবার দেখা যাবে।

ভুল উপদেশ, মিস্টার বেকার, প্রতিবাদ করে জাব্বা জোর গলায়, প্রথমেই সঠিকটা পড়ে ফেলুন। কিল কোডগুলোর মধ্যে সাধারণত পেনাল্টি ক্লজ থাকে। চেষ্টা করে যেন ভাঙা না হয় সেজন্য। একটা ভুল হলে সাইকেল বেড়ে যাবে। দু বার ভুল হলে আর মাফ নেই। গেম ওভার

ডিরেক্টর একটা তীব্র ভ্রুকুটি হেনে আবার তাকায় স্ক্রিনে। মিস্টার বেকার? আমার ভুল। কেয়ারফুলি পড়ন। যথা সম্ভব কয়ারফুলি।

কিউ… ইউ… আই… এস… স্পেস… সি…।

জাব্বা আর সুসান সাথে সাথে কথা বলে উঠল, স্পেস? সেখানে একটা স্পেস আছে?

শ্রাগ করল বেকার। আছে। অনেকগুলো।

কোন কিছু মিস করছি আমি? ফন্টেইন দাবি করল, কীসের জন্য অপেক্ষা, এ্যা?

স্যার, বলল সুসান, ব্যাপারটা ব্যাপারটা ঠিক…

আমিও তাই বলছি, বলল জাব্বা, ব্যাপারটা বিচিত্র। পাসওয়ার্ডে কখনো স্পেস থাকে না।

ব্রিঙ্কারহফ কোনক্রমে গিলল কথাটা, তাহলে আপনি কী বলেন?

তিনি বলছেন, বলল সুসান, এটা সম্ভবত কোন কিল কোড নয়।

এবার কান্নার মত হয়ে গেল ব্রিঙ্কারহফের চোখমুখ, অবশ্যই! এটাই কিল কোড! আর কী হতে পারে? আর কী কারণে টানকাডো এটাকে সরিয়ে দিবে? কোন পাগলে আঙটিতে এলোমেলো অক্ষর কুদে দেয়?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গেঁথে দিল ফন্টেইন ব্রিঙ্কারহফকে।

আহ, ফোকস, গলা খাকারি দিল বেকার, আপনারা বারবার এলোমেলো অক্ষরের কথা বলছেন। এখানে লেখাটা মোটেও এলোমেলো নয়।

কী!

বেকারকে অপ্রস্তুত দেখায়। আসলে এখানে সুস্পষ্ট শব্দ আছে। সেগুলো অনেক কাছে কাছে ঠাসা। প্রথমে র‍্যান্ডম মনে হবে। কিন্তু ভালভাবে তাকালে দেখা যাবে এটা আসলে ল্যাটিন।

জাব্বা বাতাস টানল, ইউ আর শিটিং মি!

মাথা নাড়ল বেকার। কুইস কাস্টোডিয়েট ইপসোস কাস্টোডস। এর মানে হল–

এর মানে, হু উইল গার্ড দ্য গার্ডস! বাধা দিল সুসান।

বেকার অবাক হল, সুসান, আমার জানা ছিল না তুমি–

এটা স্টায়ার্স অব জুভেনাল থেকে নেয়া, অবাক হয়ে গেছে সুসানও, হু। উইল গার্ড দ্য গার্ডস? আমরা যখন পৃথিবীকে গার্ড দিই, এন এস এস কে পাহারা দিবে কে? এটা টানকাডোর প্রিয় কথা।

তো? আসল কথায় এল মিজ, এটা কিল কোড কিনা!

এটা অবশ্যই পাস কি! ঘোষণা করল ব্রিঙ্কারহফ।

ফন্টেইন চুপ করে আছে। পুরো ব্যাপারটা খেলছে তার মাথায়।

জানি না এটাই কি কিনা, বলল জাব্বা, আমার কাছেও ব্যাপারটা বেখাপ্পা লাগে। টানকাডো র‍্যান্ডম কি ব্যবহার নাও করতে পারে।

শুধু স্পেসগুলো সরিয়ে দিন! উত্তেজনায় লাফাচ্ছে ব্রিঙ্কারহফু, তারপর টাইপ করে দিন পুরো লেখাটা।

ফন্টেইন,সুসানের দিকে তাকায়। আপনার কী মত, মিস ফ্লেচার?

টানকাভোর ব্যাপারে ভাবে সুসান। কিছু একটা মিলছে না। সব ব্যাপারে টানকাড়ো সরল। সোজা। প্রোগ্রামিংয়েও।

আমার মনে হয় না এটা পাস কি।

মিসেস ফ্লেচার, আপনার মন কী বলে, এটাই যদি পাস কি না হয়, তাহলে টানকাডো মারা যাবার সময় কেন এটাকে সরিয়ে দিবে?

নতুন একটা কণ্ঠ ঢুকে পড়ল কথাতে, আহ- ডিরেক্টর?

সেভিল থেকে এজেন্ট কলিয়ান্ডার বলছে। বেকারের কাঁধের পিছন থেকে। যাই হোক না কেন, আমি ঠিক নিশ্চিত নই মিস্টার টানকাডো মারা যাবার সময় জানতেন তিনি মারা যাচ্ছেন।

আই বেগ ইউর পারড়ন?

হুলোহট একজন পাকা বা ঘুঘু, স্যার। পঞ্চাশ মিটার দূর থেকে সে খুন হয়ে যাওয়া দেখে। সব প্রমাণে দেখা যায় টানকাডো ব্যাপারটা জানত না।

প্রমাণ? কোন প্রমাণ? দাবি করল ব্রিঙ্কারহফ, টানকাড়ো আঙটিটা দিয়ে দিয়েছে, এটাই কি যথেষ্ট নয়?

এজেন্ট স্মিথ, জলদগম্ভীর কণ্ঠ ফন্টেইনের, কী দেখে তোমার মনে হল যে মারা যাবার সময় টানকাডো ব্যাপারটা জানত না?

গলা পরিষ্কার করে নিল স্মিথ, এন টি বি দিয়ে তাকে খুন করে হুলোহট। ননইনভেস্টিভ ট্রমা বুলেট। এ রাবার পোডটা বুকে আঘাত করে ছড়িয়ে পড়ে। নিরবে। খুব পরিষ্কার। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে যাবার আগে মিস্টার টানকাডো হয়ত খুব তীক্ষ্ণ কোন অনুভূতি পায়, এরচে বেশি কিছু না।

ট্রমা বুলেট! বলল বেকার, এতেই বাকিটা স্পষ্ট হয়ে যায়!

সন্দেহ আছে যে, স্মিথ বলছে, ব্যাপারটার সাথে গানম্যানের যোগসাজস নিয়ে ভাববে না সে।

আর তার পরও সে আঙটিটা সরিয়ে দিয়েছে! বলল ফন্টেইন।

সত্যি, স্যার। কিন্তু সে একবারের জন্যও আশপাশে তাকায়নি। গুলি খাবার পর সব সময় ভিকটিম তার খুনির খোঁজ আশপাশে তাকায়। এটাই ইনস্টিঙ্কট।

সে তাকায়নি হুলোহটের খোঁজে?

না। ফিল্মে আছে।

এক্স ইলেভেন ফিল্টার চলে যাচ্ছে! গলা উঁচু করল এক টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ম অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে এর মধ্যেই।

ফিল্মের কথা ভুলে যান, দৃপ্তকণ্ঠ ব্রিঙ্কারহফের, কোড টাইপ করে মেরে ফেলুন পোকাটাকে!

ভুল কোড দেয়া যাবে না। ডিরেক্টর বলল।

ঠিক। বলল জাব্বা।

হাতে কতক্ষণ সময় আছে?

বিশ মিনিট। আশা করি সেটা ভালভাবে কাজে লাগানো হবে।

ওকে, ফিরল ডিরেক্টর, রান দ্য ফিল্ম।

অধ্যায় : ১১৭

ট্রান্সমিটিং বলল এজেন্ট স্মিথ।

শটটা যেন কোন পুরনো দিনের ছায়াছবির। ছবিটা ঝাঁকিয়ে উঠছে। সাদাকাল। পার্কের সাদামাটা দৃশ্য। ট্রান্সমিশনের বদৌলতে ডিগবাজি খাচ্ছে ফ্রেম।

পার্কটা শূণ্য। গাছের মেলা চারপাশে।

এক্স ইলেভেন ডাউন! আবার হাক ছাড়ল আরেক টেকনিশিয়ান, দিস ব্যাড বয় ইজ হাঙরি!

***

স্মিথ ব্যাখ্যা করছে।

এটা ভ্যানের শট। কিল জোন থেকে পঞ্চাশ মিটারের মত দূরে। ডানপাশ থেকে আসছে টানকাড়ো। বা পাশের গাছের আড়ালে আছে হুলোহট।

এখানে বাড়তি দৃশ্য দেখাচ্ছ কেন! সময় খুব কম। আসল কাজে যাও। বলল ডিরেক্টর।

কয়েকটা বাটন চাপল এজেন্ট কলিয়ান্ডার। সরে গেল দৃশ্যগুলো।

এসে বসল টানকাডো একটা বেঞ্চে। মাথার উপর থেকে সূর্যকে আড়াল। করার জন্য হাত দিয়ে চোখ ঢেকে তাকাল গাছের সৌন্দর্যের দিকে।

এইতো! বলল স্মিথ, এখানেই হুলোহট প্রথম খোলা শটটা নেয়।

গাছের পিছন থেকে, স্ক্রিনের বা পাশ থেকে আলোর একটা ঝলক খেলে গেল। সাথে সাথে বুক চেপে ধরল টানকাডো। এক মুহূর্তের জন্য থমকে থাকল। ক্যামেরা তার উপর জুম করছে। অস্থির, জুম। কখনো ফোকাস ঠিক, কখনো বেঠিক।

ফুটেজ চলে যাচ্ছে তীব্র গতিতে স্মিথ তার বয়ান করে যাচ্ছে, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, টানকাডো সাথে সাথে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে পড়ে গেল।

সুসান অসুস্থের মত দেখছে দৃশ্যটা।

টানকাডো দুর্বল আঙুলগুলো তোলে বুকের কাছে। চেহারায় আতঙ্ক ভর করেছে।

আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, সে তাকিয়ে আছে নিজের দিকে—

ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ? প্রশ্ন তুলল জাব্বা।

অবশ্যই! একটু সন্দেহ করলে চারদিকে তাকাত সে।

এখনো বুক আকড়ে আছে। হাটু গেড়ে বসে গেল টানকাডো। মারা যাচ্ছে। একা একা।

ব্যাপারটা বিচিত্র, বলল স্মিথ, সাধারণত ট্রমা পড় এত দ্রুত কাজ করে না। বড় টার্গেট হলে আদৌ মারা নাও যেতে পারে।

দুর্বল হার্ট। বলল কমান্ডার।

তাহলে অস্ত্রের দারুণ ব্যবহার।

এদিকে পড়ে গেছে টানকাডো। ফল বাগান থেকে ওয়্যার রিম পরা এক লোক বেরিয়ে এল। হাতে ওভারসাইজের ব্রিফকেস। আঙুলে আঙুলে ঠোকাঠুকি করছে সে। আঙুলগুলোতে কী যেন লাগানো।

সে মনোকল নিয়ে কাজ করছে, বলল স্মিথ ঘোষণার সুরে, মেসেজ পাঠাচ্ছে। দেখুন, মৃত্যুর আগেই খবর পাঠানোর একটা অভ্যাস আছে তার।

এগিয়ে যাচ্ছে সে ভিকটিমের দিকে এমন সময় কাছে কোথাও থেকে এক বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এল। ধীর হয়ে গেল হুলোহট। একটু পর আরো দুজন হাজির হল কান্ট্রিইয়ার্ড থেকে। মোটা এক লোক। সাথে লাল চুলো মেয়ে। তারাও চলে এসেছে টানকাডোর পাশে।

ভুল জায়গা বেছে নিয়েছে হুলোহট। সে ভেবেছিল এখানে একা পাবে লোকটাকে। বলছে স্মিথ।

একটু সময় অপেক্ষা করে হুলোহট। তারপর ঝট করে চলে যায় গাছের আড়ালে। আরো কিছুটা দেখবে সে।

এবার আসল ব্যাপারটা আসছে, বলল সে, আমরা প্রথমে দেখতেই পাইনি। মানে খেয়াল করিনি।

আশপাশের মানুষের কাছে কিছু বলার চেষ্টা করছে টানকাড়ো। হাসফাস করছে বাতাসের জন্য। বেপরোয়া হয়ে বা হাতটা ছুঁড়ে দিল সামনে। আর একটু হলেই বুড়ো লোকটার গায়ে লাগত। বৃদ্ধের চোখের সামনে মেলে ধরেছে সেটা। টানকাডোর আঙুল তিনটার উপর স্থির হল ক্যামেরা। তাদের একটার মধ্যেই সেই আঙটি। আবার উপরের দিকে হাত ছুঁড়ে দেয় টানকাভো। বুড়ো লোকটা অবাক হয়। এবার মহিলার দিকে ফিরে তাকায় টানকাডো। বিকৃত আঙুল তিনটা মেলে ধরে। মহিলা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবার শেষ চেষ্টা। হাত বাড়ায় সে মোটা লোকটার দিকে। চেষ্টা করে শেষ বারের মত।

বুড়ো লোকটা উঠে আসছে। চারপাশে তাকাচ্ছে সাহায্যের জন্য। টানকাডো দুর্বল হয় প্রতি মুহূর্তে। চোখের সামনে মেলে ধরে আঙুল। মোটা লোকটা এগিয়ে এসে হাত ধরে সাপোর্ট দেয়ার ভঙ্গিতে। টানকাড়ো একবার তাকায় নোটার চোখে চোখে, তারপর তাকায় আঙটির দিকে। মারা যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে এনসেই টানকাডো একটা নড় করে লোকটার দিকে তাকিয়ে।

সায় দেয়।

এবং মারা যায়।

জিসাস! জাব্বা গুমরে উঠল।

হঠাৎ ক্যামেরা চলে গেল হুলোহটের দিকে। নেই সে। সাইরেনের শব্দ তুলে এগিয়ে আসছে একটা পুলিশ মোটরসাইকেল। ক্যামেরা চলে এল টানকাভোর দিকে। তড়িঘড়ি করে চলে গেল লোক দুজন। বৃদ্ধ এখনো তার পাশে। হাতের আঙটি নেই।

অধ্যায় : ১১৮

এটাই প্রমাণ, বলে ওঠে ডিরেক্টর, টানকাডো আমাদের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য দিয়ে দিয়েছে আঙটিটা।

কিন্তু ডিরেক্টর, সুসান যুক্তি দেখাল, যদি সে মারা যাবার কথা নাই জানে তাহলে কেন দিয়ে দিবে আঙটিটা?

আমিও একমত, বলল জাব্বা, বাচ্চাটা খেলতে জানে। সে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে যে ট্রান্সলেটার এক জিনিস আর ডাটাব্যাঙ্ক অন্য জিনিস।

ফন্টেইন তাকিয়ে আছে অবিশ্বাসে। তুমি মনে কর টানকাডো মারা যাবার সময়টাতেও এন এস এর কথা ভেবেছে? ওয়ার্মটাকে থামানোর কথা ভেবেছে?

টানেল ব্লক করোডিং, বলছে একজন টেকনিশিয়ান, সর্বোচ্চ পনের মিনিটের মধ্যে পরিপূর্ণ আক্রমণ আসবে।

 আমি বলছি ব্যাপারটা, ঘোষণা করল ডিরেক্টর, নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে, আর পনের মিনিটের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটা দেশ জেনে যাবে কী করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল বানাতে হয়। এই ঘরের কেউ যদি মনে করে এ আঙটিরচে ভাল কোন প্রতিযোগি আছে কিল কোডের ব্যাপারে, আমি তার মতকে প্রাধান্য দিব।

থামল ডিরেক্টর। কোন কথা নেই। জাব্বার দিকে তাকায় সে, বলে, টানকাডো আঙটিটাকে কোন এক কারণে সরিয়ে দিয়েছিল, জাব্বা। সে এটাকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে চায় নাকি মোটা লোকটাকে দিয়ে আমাদের ফোন করাতে চায় সেসব নিয়ে আমি কেয়ার করি না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি… কোডটা মুকাচ্ছি আমরা। এখন।

জাব্বা লম্বা করে একটা শ্বাস নেয়। জানে- ফন্টেইনের কথা সত্যি। এর বাইরে আর কোন অপশন নেই। বসে পড়ে সে।

মিস্টার বেকার, লেখাগুলো, প্লিজ।

ডেভিড বেকার পড়ল। লিখে ফেলল জাব্বা সাথে সাথে দুবার তাকিয়ে থেকে তারপর সরিয়ে ফেলল সবগুলো স্পেস। ভিউ ওয়ালের সেন্টার প্যানেলে, উপরের দিকে, একটা লেখা দেখা দিল।

QUISCUSTODIETIPSOSCUSTODES

আমার কাছে ব্যাপারটা ভাল লাগছে না। বলল সুসান, ঠিক ক্লিন নয়।

এন্টার কির উপর ইতস্তত করছে জাব্বা।

ডু ইট! কমান্ড করল কন্টেন।

কিতে চাপ দিল জাকা সাথে সাথে।

কয়েক সেকেন্ড পরই পুরো কামরার মানুষ জানতে পারল ব্যাপারটা ভুল হয়ে গেছে।

অধ্যায় : ১১৯

এটা এ্যাক্সিলারেট করছে! পিছন থেকে চিৎকার করে উঠল শোশি, ভুল কোড।

সবাই আতঙ্কে জমে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।

স্ক্রিনে এরর ম্যাসেজ দেখাচ্ছে।

ইল্যিগাল এন্ট্রি। নিউমেরিক ফিল্ড ওনলি।

ড্যামইট! চিৎকার করে উঠল জাব্বা, নিউমেরিক অনলি! আমরা এ আঙটি নিয়ে কী না করলাম! হায়রে!

ওয়ার্মের গদি দ্বিগুণ হয়ে গেছে! সাবধান করল শোশি, পেনাল্টি রাউন্ড!

ভি আরে বিভীষিকা। ম্লান হয়ে যাচ্ছে তৃতীয় ফায়ারওয়াল। আধ ডজনেরও বেশি.কার মূল ডাটার কাছে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তাদের সংখ্যা বড়।

বাক্য বিনিময় হল তাদের মধ্যে। টেকনিশিয়ানরা চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।

সুসান বারবার কল্পনার চোখে দেখে নেয় একটু আগে দেখা দৃশ্যটা। টানকাডো পড়ে যাচ্ছে বুক চেপে ধরে। কোন অর্থ বের করতে পারে না সে।

স্ক্রিনে হ্যাকারদের সংখ্যা বেড়ে গেছে আরো। হ্যাকাররা একটা পরিবার। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।

লেল্যান্ড ফন্টেইন অনেক দেখেছে। শাট ইট ডাউন! শাট দ্য ড্যাম থিং ডাউন!

ডুবন্ত জাহাজের কাপ্তানের মত সামনে দৃষ্টি জাব্বার। অনেক দেরি হয়ে গেল, স্যার। আমরা ডুবে গেছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *