০৮০. সুইটহার্টকে পেয়ে গেছি

অধ্যায় : ৮০

হেল মাথাটা নামিয়ে আনল। তারপর উঁচু করে চিৎকার করল, কমান্ডার, আমি তোমার সুইটহার্টকে পেয়ে গেছি। এবার আমার বেরিয়ে যাবার পালা!

কোন জবাব নেই।

আরো শক্ত হয়ে উঠল বাধন। আমি তার গলাটা ভেঙে দিব।

একটা গান তাদের ঠিক পিছনে কক করে উঠল, লেট হার গো!

অসম্ভব। আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন।

আমি কাউকে মারতে যাচ্ছি না।

ও, তাই নাকি? কথাটা চার্ট্রাকিয়ানকে বলুন গিয়ে।

সামনে চলে এল স্ট্র্যাথমোর, চার্ট্রাকিয়ান মারা গেছে।

নো শিট! আপনিই তাকে খুন করেছেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি!

হাল ছেড়ে দাও, গ্রেগ! শান্তকণ্ঠ স্ট্র্যাথমোরের।

মাথা নামিয়ে আনল সে, স্ট্র্যাথোর মেরে ফেলেছে চার্ট্রাকিয়ানকে। খোদার কসম!

তোমার ডিভাইড এ্যান্ড কনকোয়ার পদ্ধতির কাছে আসবে না সে।

কোন কথা নেই।

ছেড়ে দাও তাকে!

অন্ধকারে হিসহিস করল হেল, চার্ট্রাকিয়ান একেবারে বাচ্চা ছেলে ছিল! ফর ক্রাইস্টস সেক! কেন তুমি কাজটা করলে? তোমার ছোট রহস্যটা রক্ষার জন্য?

শান্ত রইল স্ট্র্যাথমোর, আর সেই ছোট রহস্যটা কী?

তুমি ভাল করেই জান কী সেই সিক্রেট! (একটা চরম পর্যায়ের গালি দিল হেল) ডিজিটাল ফোর্ট্রেস!

মাই মাই! হাসার চেষ্টা করছে যেন স্ট্র্যাথমোর, তাহলে তুমি ডিজিটাল ফোট্রেসের কথাও জান! আমার মনে হল তুমি সেটা অস্বীকার করবে।

গালি।

ভাল ডিফেন্স।

তুমি একটা গর্ধভ, থুথু ঝাড়ল হেল, ফর ইউর ইনফরমেশন, ট্রান্সলেটার ওভারহিট হচ্ছে।

আসলেই? হাসল স্ট্র্যাথমোর, আন্দাজ করতে দাও- আমি কি এখন দরজা খুলে সিস-সেকদের ডেকে আনব?

ঠিক তাই। কাজটা না করলে তুমি বোকাদের দলে পড়ে যাবে।

এবার জোরে হেসে ফেলল স্ট্র্যাথমোর, এটাই তোমার আসল চাল? ট্রান্সলেটার গরম হয়ে যাচ্ছে, তো দরজা খুলে আমাকে বেরুতে দাও?

আমি নিচে ছিলাম ড্যাম ইট! অক্স পাওয়ারে বাড়তি ফ্রেয়ন আনা যাচ্ছে না।

টিপের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ট্রান্সলেটারে অটোম্যাটিক শাটডাউনের ব্যবস্থা আছে।

তুমি একেবারেই জ্ঞানহীন! আরে, ট্রান্সলেটার আছে কি নেই তা দিয়ে আমার কী? মেশিনটাকে আউটলড করতে হবে।

ছোট্ট করে শ্বাস ফেলল স্ট্র্যাথমোর, চাইল্ড সাইকোলজি শুধু বাচ্চাদের উপর কাজ করে, হেল। ছেড়ে দাও তাকে!

যেন তুমি আমাকে শুট করতে পার?

আমি তোমাকে শুট করতে যাচ্ছি না। আমি শুধু পাস কি টা চাই।

কোন পাস কি?

টানকাডোর দেয়াটা।

কী বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।

মিথ্যুক! এবার কথা বলে উঠল সুসান, আমি তোমার কম্পিউটারে টানকাডোর ই-মেইল পেয়েছি।

হেল শক্ত হয়ে গেল। ঘুরিয়ে আনল সুসানকে। তুমি আমার এ্যাকাউন্টে গিয়েছিলে?

এবং তুমি আমার ট্রেসার এ্যাবোর্ট করেছ?

হেলের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেল যেন। মনে করেছিল সমস্ত প্রমাণ মুছে গেছে। কেউ সন্দেহ করবে না। টের পায় হেল, আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে চারপাশের দেয়াল। কানের কাছে মুখ নিয়ে গেল সে আবার, সুসান স্ট্র্যাথমোর মেরে ফেলেছে চট্রাকিয়ানকে।

ছেড়ে দাও তাকে, সে তোমার কোন কথা:বিশ্বাস করে না।

কেন করবে? পাল্টা গুলি ছুড়ল হেল, ইউ লাইং বাস্টার্ড! ভাল ব্রেনওয়াশ করতে জান তুমি। সে কি সত্যি সত্যি জানে ডিজিটাল ফোর্ট্রেস নিয়ে করা পরিকল্পনার কথা?

আর সেই পরিকল্পনাটা কী?

একটু চুপ করে থাকে সে। তারপর ভাবে, এ কথাটাই এখান থেকে বেরিয়ে যাবার পথ করে দিতে পারে। তুমি ডিজিটাল ফোট্রেসে একটা ব্যাক ডোর রাখার চিন্তা করছ।

সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল চারদিক। হেল জানে, মোক্ষম চালটা চেলে ফেলেছে সে।

কে বলেছে তোমাকে সে কথা?

আমি পড়েছি। তোমার একটা ব্রেইনস্টর্মে।

অসম্ভব! আমি কখনো কোন ব্রেইনস্টর্ম প্রিন্ট করি না!

আমি জানি। তোমার এ্যাকাউন্টে সরাসরি চোখ রাখি আমি।

বিশ্বাস করতে পারছে না স্ট্র্যাথমোর, তুমি আমার অফিসে গেছ?

না। আমি তোমার ভিতরে ঢুকেছি নড় থ্রির মাধ্যমে।

হাসার চেষ্টা করল হেল। জানে সে, মেরিন থেকে শিখে আসা নেগোসিয়েশনের সমস্ত ক্ষমতা খেলাতে হবে তাকে এখানে, ক্রিপ্টো থেকে বেরিয়ে যেতে হলে।

আমার ব্যাকডোরের কথা কী করে জাম তুমি?

বললাম না, তোমার এ্যাকাউন্টে টু মারি? অসম্ভব!

সবচে ভালদেরকে হায়ার করার আরেক সমস্যা, স্ট্র্যাথমোর। তোমারচে ভাল কাউকে নিয়োগ দিলে আখেরে তুমি পস্তাবেই।

ইয়ং ম্যান! সামলে নিল স্ট্র্যাথমোর, জানি না কোথায় তুমি এ ইনফরমেশন পেয়েছ। এখন তুমি একটা কাজ করবে। সোজা ছেড়ে দিবে মিস ফ্লেচারকে নাহয় সিকিউরিটিকে ডাকব আমি। জেলে পস্তাবে সারা জীবন।

এ কাজ কখনোই করবে না তুমি। প্ল্যান ভেস্তে যাবে যে! তাদের ডাক, সব বলে দিব। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিলে আর কোন কথা কেউ জানবে না।

নো ডিল। আমি পাস কি টা চাই।

আমার কোন ইয়ের পাস কি নেই।

অনেক মিথ্যাচার হয়েছে। কোথায় সেটা?

আরো চাপ বাড়ায় হেল সুসানের মাথায়, বেরিয়ে যেতে দাও আমাকে। নাহয় মারা পড়বে বেচারি বেঘোরে।

.

বিপদ নিয়ে খেলে জীবন কাটিয়েছে ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর। সে জানে, এখন পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। হেল কিছুতেই হাল ছাড়বে না। তার মাথারও ঠিক থাকার কথা নয়। যে কোন সময় যে কোন কিছু করে বসতে পারে। কোণঠাসা শত্রু সবচে বড় শত্রু। জানে, এরপর যে পদক্ষেপ নিবে সেটাই হবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ। সুসানের জীবন নির্ভর করছে এর উপর, নির্ভর করছে ডিজিটাল ফোট্রেসের আখের।

আগে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

ওকে, গ্রেগ। জিতে গেলে তুমি। এখন কী চাও?

একটু চুপ করে থাকে হেল।

ও- ওয়েল, আগে তুমি আমার হাতে গানটা তুলে দিচ্ছ। তারপর দুজনেই যাচ্ছ সাথে সাথে।

হোস্টেজ? অবাক হবার ভান করল স্ট্র্যাথমোর, গ্রেগ, তুমি ভাল করেই জান যে এখান থেকে পার্কিং পর্যন্ত অন্তত এক ডজন গার্ড আছে।

আমি তেমন বোকা নই। সোজা তোমার এলিভেটর ধরব। সাথে আসবে সুসান।

কিন্তু পাওয়ার তো নেই!

বুলশিট! সেটা অন্য কোথাও থেকে পাওয়ার নিয়ে চলে।

আমরা আগেই চেষ্টা করে দেখেছি, বলল সুসান, কিন্তু পারিনি। বিকল।

তোমরা দুজনেই দেখছি ভাল বোকা! আমি তাহলে ট্রান্সলেটারকে অফ করে পাওয়ার ফিরিয়ে আনব।

চালে ভুল করে ফেলল সুসান, এলিভেটরে একটা পাসওয়ার্ড আছে।

ভাল! হাসল হেল, কমান্ডার আমার সাথে সেটা শেয়ার করবে, তাই না, স্ট্র্যাথমোর?

আর কোন উপায় নেই।

তাহলে, বুড়ো হাবড়া, জেনে রাখ। এটাই ডিল। তুমি আমাকে আর সুসানকে বের হতে দিবে। আমরা কয়েক ঘন্টা ড্রাইভ করব। এরপর ছেড়ে দিব তাকে।

রাগ উঠছে শিরশির করে। সেই সুসানকে এখানে টেনে এনেছে। এখন তা নিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে। আর ডিজিটাল ফোর্ট্রেস?

হেল হাসল, তোমার ব্যাকডোরটা লিখে নিতে পার, আমার কিছু এসে যায় না। কিন্তু যেদিন আমি বুঝতে পারব তোমরা পিছনে লেগেছ তখনি আমি পুরো কাহিনী পৃথিবীর সামনে ফাস করে দিব।

অফারটা ভাল লাগল স্ট্র্যাথমোরের। সব পাওয়া যাবে। সুসানকে, ডিজিটাল ফোর্ট্রেস, সব। পরে প্রয়োজনে সরিয়ে দেয়া যারে হেলকে।

মনস্থির করে নাও, বুড়ো। আমরা যাচ্ছি নাকি যাচ্ছি না?

স্ট্র্যাথমোর জানে, এখন সিকিউরিটি কল করলে ফেসে যাবে হেল। কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমি যদি কাজটা করি, ভাবে সে, তাহলে ভেস্তে যাচ্ছে পরিকল্পনাটা।

আরো চাপ বাড়ায় হেল।

চিৎকার করে ওঠে সুসান।

কী ডিল হল? দাবি করে হেল, আমি কি তাকে খুন করে ফেলব?

এখন কী করবে সে? সুসানকে নিয়ে কোন বনের ধারে গিয়ে খুন করে বসতে পারে সে। কিন্তু সিকিউরিটি ডাকলে লাভের লাভ একটাই, কোর্টে সবার সামনে ফাস করে দিবে সে সব কথা। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস নিয়ে দেখা স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। কী করব আমি?

ডিসাইড!

সুসান ফ্লেচার এমন এক দাম যেটা দিতে চায় না স্ট্র্যাথমোর।

সুসানের হাত পিছনে বাকা করে ঘাড়টা ধরে আছে এক্স মেরিন, এটাই তোমার শেষ সুযোগ, বুড়ো। গানটা তুলে দাও আমার হাতে।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা না একটা পথ বের করার চেষ্টা করল স্ট্র্যাথমোর। কোন না কোন উপায় তো আছেই। কী সেটা?

না, হেল। আমি দুঃখিত। তোমাকে বের হতে দেয়া যাচ্ছে না।

কী?

আমি সিকিউরিটি ডাকছি।

কমান্ডার! নো! বলল সুসান।

আরো শক্ত করল হেল হাতের চাপ, তুমি সিকিউরিটি কল করবে আর মারা পড়বে বেচারি বেঘোরে।

গ্রেগ, তুমি ব্লাফ মারছ।

 তুমি কখনোই কাজটা করবে না! চিৎকার করল হেল। আমি কথা বলব। আমি তোমার পরিকল্পনা ভেস্তে দিব। স্বপ্ন থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে আছ তুমি! কোন ট্রান্সলেটারের প্রয়োজন নেই, সারা পৃথিবীর সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবে মুহূর্তে। জীবনে এমন সুযোগ জীবনে দুটা আসে না।

ওয়াচ মি!

কিন্তু সুসানের কী হবে? বলল হেল অবাক হয়ে, তুমি সিকিউরিটি কল করেছ আর সে মারা পড়ছে সাথে সাথে।

স্ট্র্যাথমোর হাল্কা গলায় বলল, এ সুযোগটা আমি নিতে চাই।

বুলশিট! তোমাকে চিনি আমি। কোন ঝুঁকি নিবে না তুমি ডিজিটাল ফোট্রেস হারানোর।

ইয়াংম্যান, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ? বলল লৌহকঠিন সুরে স্ট্র্যাথমোর, তুমি আমার কর্মচারীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে চলে যাবে আর আমি সেটা দেখব তা হবে না।

আঙুলে কয়েকটা বাটন টিপল স্ট্র্যাথমোর, সুইচবোর্ড, সিকিউরিটিতে দাও!

সুসানের মাথা নাড়াতে শুরু করল হেল, আমি তার ঘাড় মটকে দিব, খোদার কসম!

এমন কোন কাজ করবে না তুমি। একটা মাত্র কাজে পুরো জীবনটা সংশয়ে পড়ে যাবে… হ্যাঁ, সিকিউরিটি! ক্রিপ্টোতে একটা হোস্টেজ সিচুয়েশন হয়েছে। কিছু লোক পাঠাও এখানে। ইয়েস! এখনি, গডড্যাম ইট! পাওয়ারও চলে গেছে। সব এক্সটারনাল সোর্স থেকে পাওয়ার রুট চাই। এখানে সব পরিস্থিতি ঠিক চাই পাঁচ মিনিটের মধ্যে। গ্রেগ হেল আমাদের এক সিস-সেককে মেরে ফেলেছে। ক্রিপ্টোর সিনিয়র একজনকে হোস্টেজ করেছে। প্রয়োজনে ইচ্ছামত টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করতে পার। যদি মিস্টার গ্রেগ হেল কাজে না আসে তাহলে স্নাইপার নিয়ে মেরে ফেল তাকে। পুরো দায় আমার। এখনি কর কাজটা!

তাকায় স্ট্র্যাথমোর গ্রেগ হেলের দিকে।

তোমার পালা, গ্রেগ।

অধ্যায় : ৮১

চোখের সামনে তুলে ধরে ডেভিড বেকার আঙটিটাকে। ফোনবুথের সামনে। আঙুলে পরা এই ছোট্ট জিনিসটা জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার কী করে হয় বুঝতে পারে না সে। সেখানে অনেক ছোট ছোট অক্ষর আছে। একটা কিউ, একটা জিরো কিম্বা ও। বাকিটা পড়া যাচ্ছে না।

ফোন করতে গিয়ে শুনতে পেল সে, ফোন নামিয়ে রেখে আবার চেষ্টা করতে হবে। স্পেনে বাইরে ফোন করা আর জুয়া একই রকম। কখন পাওয়া যাবে কেউ জানে না।

চোখ জ্বলছে। মেয়েটা বলেছে আর দলাই মলাই করা যাবে না। তাতে আরো জ্বলবে। আগুন ধরা চোখটায় হাত রেখে টের পায় সে, অপেক্ষা করার কোন মানে নেই। আগে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখ। এগিয়ে যায় সে দরজার কাছে।

পুরুষদের রুমের সামনে এখনো একটা ক্লিনিং সাইন লাগানো। মেয়েদেরটায় এগিয়ে গেল সে।

হোলা?

নিরবতা।

হয়ত মেগান। প্লেনের আরো পাঁচ ঘন্টা বাকি। সে চলে যাবে, ধুয়ে ফেলবে হাতটা।

মেগান? হোলা?

কোন সাড়া নেই। এগিয়ে গেল সে সিঙ্কের দিকে। আজলা ভরে পানি নিয়ে ধুয়ে ফেলল চোখের মরিচটুকু। দেখে মনে হবে অনেক ঘন্টা ধরে কাঁদছে।

এবং হঠাৎ করেই ব্যাপারটা চোখে পড়ে গেল তারা কোথায় সে? এয়ারপোর্টে। আর সেভিল এয়ারপোর্টের কোন এক হ্যাঁঙ্গারে অপেক্ষা করছে বিমানটা তার জন্য।

সেখানে রেডিও আছে। যখন খুশি জানানো যাবে স্ট্র্যাথমোরকে।

নিজের মনে হাসতে হাসতে বেকার আয়নার দিকে তাকিয়ে ঠিক করে নেয় টাইয়ের নটটা।

পিছনে কী যেন আছে, টের পায় সে। ঘুরে দাঁড়ায় সাথে সাথে।

মেগান? তুমি নাকি?

চলে যায় সে বাথরুমের দিকে। তারপর একটা দরজা খুলে ভিতরে তাকায়। যা দেখতে পায় তাতে কোনক্রমে চিৎকার ঠেকানো গেল।

মেগান বসে আছে এক হাই কমোডে। চোখদুটা উপরে উঠানো। কপালের ঠিক মাঝখানে একটা লাল গর্ত। রক্তিম তরল চুঁইয়ে পড়ছে সারা চোখে।

ওহ জিসাস! অজান্তেই বেরিয়ে এল স্বর।

শিজ ডেড! হিসহিস করল পিছনের এক কণ্ঠ।

যেন কোন দুঃস্বপ্ন চলছে। ঘুরে দাঁড়াল বেকার।

সিনর বেকার? অদ্ভুত কণ্ঠটা প্রশ্ন তুলল।

লোকটার দিকে তাকায় সে। কেন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে।

সয় হুলোহট। বলল খুনি, আমি হুটোহট। হাত বাড়াল সে প্রাপ্য বুঝে নেয়ার ভঙ্গিতে, এল এনিলো। দ্য রিঙ।

শূণ্য চোখে তাকায় বেকার।

এটা জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার। এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এটা জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার।

পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে সে। বেকারের মাথায় ইপনটা তাক করে বিনা দ্বিধায়।

এল এনিলো।

কী করে যেন কী হয়ে গেল। বেকার আদিম এক তাড়নায় আত্মরক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল একদিকে। পড়ে গেল মেগানের গায়ে।–

একটা বুলেট ছুটে গিয়ে গর্ত করে ফেলল বাথরুমের দেয়ালে।

মিয়ের্ডা! হুলোহট বিকৃতভাবে বলল। এগিয়ে এল খুনি।

প্রাণহীন টিনএজারের কাছ থেকে শরীরটা তুলে ধরল বেকার। পদশব্দ এগিয়ে আসছে আরো আরো কাছে।

পিছনে। কক করার শব্দ উঠল একটা।

এডিয়োস। কালোচিতার মত দম ছাড়ল লোকটা। আবার তুলছে গানটা।

সরে গেল অস্ত্র। লাল আলোর একটা ঝলকানি। রক্ত নয়। অন্য কিছু। কিছু একটা শূণ্য থেকে যেন চলে এল। চলে এল খুনির বুক বরাবর। মেগানের পার্স।

ছুটে গেল বেকার। হামলে পড়ল খুনির উপর। টেনে নিল তাকে সিঙ্কের দিকে। হাড় ভাঙার শব্দ উঠল। ভেঙে পড়ল একটা আয়না। পড়ে গেল অস্ত্র। ফ্লোরে পড়ে গেল দুজনেই। নিজেকে টেনে তুলে চলল এক্সিটের দিকে।

মুহূর্তে গানটার জন্য হাত বাড়ায় এ্যামসিন। তুলেই ফায়ার করে। ছুটে যায় সেটা দরজার দিকে। আঘাত করে সেদিকে।

একেবারে খালি কোন মরুভূমির মত সামনে ঝলকাচ্ছে এয়ারপোর্টের বিশাল খালি এলাকা। পা যে এত দ্রুত ছুটতে পারবে আগে জানা ছিল না তার।

ছুটে আরো খানিকটা চলে গেল সে। পিছনে স্বাপদের মত এগিয়ে আসছে খুনি। আর একটু। আর একটু। সামনেই কাঁচের দরজা। এগিয়ে যাচ্ছে বেকার। একটা গুলির শব্দ উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চুরমার হয়ে ভেঙে পড়ল কাঁচের দেয়াল।

ছুটছে বেকার। এক্সিট পেরিয়েই সামনে পেল একটা ট্যাক্সি।

ডিজামে এন্ট্রার। লক করা ডোরের সামনে হাপাচ্ছে সে। লেট মি ইন!

না। ওয়্যার রিম. পরা লোকটা অপেক্ষা করতে বলেছিল ড্রাইভারকে।

ছুটে আসছে খুনি। হুলোহটের হাতে উদ্যত গান। চোখ পড়ল ভেসপার উপর।

আই এ্যাম ডেড! ভাবল বেকার।

পা দিয়ে আঘাত করছে বেকার। চালু করার চেষ্টা করছে দ্বিচক্রযানটাকে। হাসল হুলোহট। সময় নিয়ে এইম করল।

গ্যাস ট্যাঙ্কের দিকে পা বাড়ায় সে। আবার চেষ্টা করে মরা জিনিসটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কোন কাজে লাগে না চেষ্টাটা। একটু কেশে উঠেই মরে যায় ভেসপা।

এল এনিলো। দ্য রিঙ কাছে চলে এসেছে কণ্ঠটা।

চোখ তুলে তাকায় বেকার। গানের ব্যারেলটা চোখে পড়ে। ঘুরছে চেম্বার। স্টার্টারে আরো একবার পা চাপায় সে অস্থিরভাবে।

গুলি করল হুলোহট। ভেবেচিন্তে। মাথা লক্ষ্য করে। একই মুহূর্তে ছোট বাইকটা জীবন ফিরে পেয়ে গর্জে উঠল। একটুর জন্য মিস হয়ে গেল গুলি। মাথা নুইয়ে শুয়ে পড়ল বেকার সেটার উপর। এগিয়ে যাচ্ছে যানটা সামনে। সাইড়ওয়াক ধরে।

রেগেমেগে এগিয়ে যায় হুলোহল অপেক্ষমান ট্যাক্সির দিকে। এক মুহূর্ত পর ড্রাইভার অবাক হয়ে দেখে তার ট্যাক্সিটা ধুলোর আস্তরণে ঢাকা পড়ে গেছে।

অধ্যায় : ৮২

এখনো বুঝে উঠতে পারছে না হেল। সুসানকে ধরে রাখার শক্তিটা যেন কমে গেল। স্ট্র্যাথমোর সিকিউরিটিকে ডাকছে। সে ডিজিটাল ফোর্ট্রেসকে স্যাক্রিফাইজ করছে! অবিশ্বাস্য!

লেট মি গো! চিৎকার করে উঠল সুসান! তার কণ্ঠ ধ্বণিত প্রতিধ্বণিত হচ্ছে চারপাশে।

মাথা ঘুরছে যেন হেলের। চারপাশে স্ট্র্যাথমোরের পাঁচ মিনিটের মধ্যে আলো চলে আসবে। খুলে যাবে দরজা। ঢুকে পড়বে সোয়াট টিম।

তুমি ব্যথা দিচ্ছ আমাকে! চিৎকার করে উঠল সুসান। বাতাসের জন্য হাসফাস করছে।

এগিয়ে আসছে নানা চিন্তা। সুসানকে ছেড়ে স্ট্র্যাথমোরের এলিভেটরের দিকে এগিয়ে যাবে কি? সোজা আত্মহত্যা। এখন এখান থেকে বেরুনোর কোন পথ নেই। লোটাস নিয়ে বেরিয়ে পড়লেও এন এস এর হেলিকপ্টার বহর ঠিক ঠিক পেড়ে ফেলতে পারবে তাকে। কোন উপায় নেই। সুসানই আমার তুরুপের তাস।

সুসান! সিঁড়ির দিকে টেনে নিল সে মেয়েটাকে। এদিকে এস আমার সাথে। আমি তোমাকে কোন আঘাত করব না। স্যয়ার ইট!

একটা ব্যাপার হেলের মনে স্পষ্ট। এখন সারাটা পথ ঝামেলা করবে এই হোস্টেজ। কিছুতেই তাকে বাগে আনা যাবে না। যদি স্ট্র্যাথমোরের এলিভেটরে যায়ও, তার একটাই গন্তব্য, ভূগর্ভের বিশাল গোলকধাঁধা। সেখান দিয়ে এন এস . এর হর্তাকর্তারা যাতায়ত করে। মরণফাঁদ। চেনে না সে। যদি বেরও হতে পারে, সুসানকে নিয়ে পার্কিং লট পেরুবে কী করে, কী করে ড্রাইভ করবে?

মেরিনের একজন সামরিক ইন্ট্রাক্টর এর জবাব দিয়েছিল অনেকদিন আগে। তার চাকরির সময়।

কাউকে ধরে জোর খাটাও, সে সব সময় তোমার বিপক্ষে যাবে। তার যা ভাবা উচিৎ বলে মনে কর সেটা ভাবাও, সাথে সাথে তুমি একজন বন্ধু পেয়ে যাবে।

সুসান, স্ট্র্যাথমোর একজন খুনি! তুমি এখানে বিপদে আছ!

কান দিল না সে। জানে, স্ট্র্যাথমোর তাকে ছুঁয়েও দেখবে না।

হেল অন্ধকারে চোখ মেলে। কোন শব্দ করছে না স্ট্র্যাথমোর। ভয়ের একটা শিহরন খেলে গেল হেলের সারা গায়ে। এবং প্রচন্ড ভয় পেলে মানুষ ভুল করে।

কজি ধরল হেল। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সুসানকে। উপরে। সেখানে স্ট্র্যাথমোরের কম্পিউটারের আলো।

আগে সুসান গেলে স্ট্র্যাথমোর গুলি করার একটা সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই পিছনে আছে সুসান। মানব বর্ম ব্যবহার করছে হেল।

তিনভাগের একভাগ যাবার পর সামনে আওয়াজ উঠল। কী করে স্ট্র্যাথমোর সেখানে গেছে ভেবে পেল না সে।

চেষ্টাও করোনা কমান্ডার। মেয়েটাকে মেরে ফেলবে তুমি!

কোন আওয়াজ নেই। শুধুই কল্পনা? হোক। স্ট্র্যাথমোর কখনোই সুসানের প্রাণের ঝুঁকি নিবে না।

একটু পরই টের পায় সে, স্ট্র্যাথমোর জায়গা বদল করেছে। সে এখন হেলের পিছনে। সরে আসে হেল। নেমে যায় নিচে। চিৎকার করে ওঠে, বারবার বলছি কমান্ডার, চেষ্টাটা বাদ দাও। আমি তার ঘাড়-

খুব দ্রুত বেরেটার বাট নেমে এল হেলের খুলিতে।

পিছলে গেল হাত। ছুটে এল সুসান একদিকে। তারপরই তার হাতটা খুপ করে ধরে ফেলল কেউ একজন।

আৎকে উঠল সুসান।

শ-শ! আমি। শব্দ করোনা সুসান।

কম- কমান্ডার, আমি মনে করেছিলাম আপনি উপরে আছেন।

শান্ত হও। ফিসফিস করল স্ট্র্যাথমোর, উপরে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম আমি একটা জিনিস।

একই মুহূর্তে টের পেল সুসান, হাসতে হাসতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে সে। কমান্ডার তাকে সবচে মূল্যবান দামের বিনিময়ে বাঁচিয়েছে।

ধন্যবাদ কমান্ডার, আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত।

কীজন্য?

আপনি আমার জন্য ডিজিটাল ফোট্রেসের স্বপ্ন ছেড়েছেন

কক্ষনো না।

মানে?

এখনো কিছুই হারায়নি। পৃথিবীর সবটুকু সময় আমাদের হাতে।

কিন্তু আপনিতে সিকিউরিটিকে ডেকেছেন।

সবচে প্রাচীন পদ্ধতি। কাউকেই ডাকিনি।

অধ্যায় : ৮৩

বেকারের এই যানটার মত ছোট কোন জিনিস সেভিল রানওয়েতে কখনো যায়নি, এটা নিশ্চিত। মাত্র পঞ্চাশ মাইল পার আওয়ারে এটা আওয়াজ করছে একেবারে চেইন সর মত। কোন মোটর বাইকের মত নয়।

মাত্র আধমাইল দূরে হ্যাঙার। সেখানে পৌঁছতে পারবে কিনা ট্যাক্সিটা আসার আগে, জানা নেই তার। গতি বেড়ে যাচ্ছে সেটার প্রতি সেকেন্ডে। সুসান হলে মুহূর্তে হিসাবটা কষে ফেলত। হঠাৎ এমন ভয়ের অনুভূতি হল তার যেটার সাথে কোন কিছুর তুলনা নেই।

দ্বিগুণ গতিতে ছুটে আসছে ট্যাক্সিটা। মাথা নোয়ায় বেকার। মিশিয়ে ফেলে নিজেকে বাইকের সাথে। সেটার আওয়াজ শুনেই বোঝা যায় এরচে বেশি গতি লাথি কষালেও বের হবে না।

একটা বুলেট ছুটে এল তার দিকে। মাত্র কয়েক গজ দূরের রানওয়েতে গিয়ে ঠেকল সেটা।

দূরের তিনটা হ্যাঙারের মাঝেরটা। গড হেল্প মি। জানি আর পারব না।

খুনি উঠে এসেছে জানালায়। বের করে দিয়েছে শরীরের অর্ধাংশ।

আলোকিত হয়ে উঠছে আশপাশ ট্যাক্সির হেডলাইটের কারণে। আর মাত্র কিছুদূর। পারা যাবে না। আবার গুলি। লাগল বাইকের গায়ে। লিয়ারজেটের কাছে পৌঁছতে পারব কি? ভাবে সে, পাইলটের কাছে কোন উইপন আছে? সময় মত সে কেবিন ডোর খুলবে?

সামনে এসে মূক হয়ে গেল সে। কোথাও লিয়ারজেটের নিশানা নেই।

এসে পড়েছে সে। কোন প্লেন নেই। হ্যাঙারের পিছনদিকটা কংক্রিটের। দুপাশে করোগেটেড টিন। পালানোর পথ নেই কোথাও।

ঘ্যাচ করে পাশে চলে এল ট্যাক্সিটা। হুলোহট রিভলভারটা তাক করছে আস্তে ধীরে, সময় নিয়ে।

নুইয়ে দিল বেকার ভেসপাটাকে। হ্যাঙারের মেঝে তেল চিটচিটে। পিছলে গেল যানটা। পাশে চলে আসছে ট্যাক্তি। তৈলাক্ত মেঝেতে পিছলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। বিকট শব্দ তুলছে ফাঁকা জায়গাটায়।

তীব্র গতিতে পিছলে যাচ্ছে যান দুটাই। সাপের মত একেবেকে এগুচ্ছে ট্যাক্সি। সোজা পিছলে যাচ্ছে ভেসপা। সামনে করোগেটেড স্টিল। বেকার প্রাণপণে চেপে ধরল ব্রেক। কাজ হচ্ছে না। থামছে না কিছুতেই। শেষ মুহূর্তে চোখ বন্ধ করল বেকার। অপেক্ষা করছে দুর্ঘটনায় মারা যাবার জন্য।

কিছুই অনুভব করল না সে।

অবাক হয়ে চোখ খুলে দেখল, এখনো ছুটে চলেছে ভেসপা। একটা ঘাসে মোড়া মাঠ ধরে। পিছনে ট্যাক্সি। ট্যাক্সির গায়ে লেগে আছে করোগেটেড শিট।

রাতের অন্ধকারকে অবলম্বন করে হারিয়ে যেতে চাচ্ছে বেকার।

অধ্যায় : ৮৪

হাতের কাজটা শেষ করে মুখ থেকে পেন্সিল লাইট নামিয়ে অন্ধকারেই আয়েশ করে বসে পড়েছে সে মেইনফ্রেমের ভিতর। ভেবে পাচ্ছে না মানুষ কেন আরো আরো ছোট মেশিন বানাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এমন সময় পা ধরে টান দিল কে যেন।

জাব্বা! বেরিয়ে এস বলছি! মহিলা কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।

মিজ আমাকে পেয়ে গেছে! চুল ছিঁড়বে কিনা ভেবে পায় না জাব্বা।

জাব্বা! বেরিয়ে এস!

ফর দ্য লাভ অব গড, মিজ, আমি অবাক চোখ তুলল জাব্বা, শোশি?

শোশি কুটা নব্বই পাউন্ডের চলাফেরা করা জীবন্ত তার। এম আই টি থেকে ডিগ্রি নিয়ে জাব্বার ডানহাত হিসাবে কাজ করছে। সে মাঝে মাঝে জাব্বার সাথে

অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করে।

কোন মরার কারণে তুমি আমার ফোনের বা পেজের জবাব দাওনি?

তোমার পেজ? আমি মনে করলাম—

কোন ব্যাপার না। মূল ডাটাব্যাঙ্কে কিছু একটা গন্ডগোল চলছে।

স্ট্রেঞ্জ! চোখ মটকাল জাব্বা, আর একটু স্পষ্ট করে বলবে? দু মিনিট পর জাব্বা হন্তদন্ত হয়ে ছুটছিল হলওয়ে ধরে। ডাটাব্যাঙ্কের দিকে।

অধ্যায় : ৮৫

নড থ্রির লেজার প্রিন্টারের বার গজ ফিতা দিয়ে অষ্টেপৃষ্টে বেধে রাখা হয়েছে গ্রেগ হেলকে নড থ্রির মেঝেতে।

কোলের উপর বেরেটা রেখে বসে আছে স্ট্র্যাথমোর। সার্চ করছে সুসান। মাঝে মাঝে চোখ চলে যায় মেঝেতে পড়ে থাকা ক্রিপ্টোগ্রাফারের দিকে। ভারি শ্বাস ফেলছে সে প্রতি মুহূর্তে।

কোন লাভ নেই, সার্চ করে করে হয়রান হয়ে গিয়ে বলল সুসান, আমরা কি ডেভিডের জন্য অপেক্ষা করব?

যদি ডেভিড না পারে আর টানকাডোর কপিটা কোন ভুল হাতে গিয়ে পড়ে…।

যে পর্যন্ত স্ট্র্যাথমোরের ডিজিটাল ফোর্ট্রেস ইন্টারনেটে রিপ্লেস না হচ্ছে সে

পর্যন্ত কোন শান্তি নেই। বোঝে সুসান।

আগে আমরা কাজটা শেষ করে নিই। তারপর কেয়ার করি না কত পাস কি ঘুরে ফিরছে আশপাশে। যত বেশি তত খুশি। বলল স্ট্র্যাথমোর।

কেমন গমগমে শব্দ উঠল সাবলেভেল থেকে তখনি।

কী ব্যাপার? অবাক হয়ে তাকাল সুসান।

ট্রান্সলেটার। হয়ত হেলের কথাই ঠিক। অক্স পাওয়ার ঠিকমত ফ্রেয়ন তুলতে পারছে না।

মাথার উপর হলুদ ওয়ার্নিং জ্বলছে।

অটো শাটডাউনের কথা সত্যি?

সত্যি। কিন্তু কখনো তা হয়নি।

আপনার বরং এ্যাবোর্ট করা উচিত।

শঙ্কিত হয়ে তাকায় স্ট্র্যাথমোর। তিন মিলিয়ন সিলিকন চিপ গলে গেলে কী হবে আগে থেকে বলা যায় না। হয়ত বাইরের কারো নজরে পড়ে যাবে। তার আগেই যা করার করতে হবে। এ্যাবোর্ট করতে হবে ট্রান্সলেটারকে, ডিজিটাল ফোট্রেসের দাপট কমাতে হবে।

ফিরে আসব এখুনি। তুমি কি টা বের কর।

.

মাথার উপর হলুদ আলো। যেন কোন মিসাইল লঞ্চ হবে।

সুসান দাঁড়িয়ে আছে সদ্য হুশ ফেরা হেলের দিকে বেরেটা তাক করে।

চোখ খুলল হেল আড়মোড়া ভেঙে। ক্‌-কী হয়েছে?

পাস কি টা কোথায়?

কী হয়েছে?

তুমি এটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছ। এই হয়েছে। এখন, পাস কি টা কোথায়?

নড়েচড়ে টের পায় হেল। বেধে রাখা হয়েছে তাকে। লেট মি গো!

আই নিড দ্যা পাস কি।

আমার কোন পাস কি নেই। ছেড়ে দাও।

তুমি নর্থ ডাকোটা আর এনসেই টানকাডো তোমাকে একটা পাস কি দিয়েছে। এখন আমি সেগুলো চাচ্ছি।

পাগল নাকি! আমি নর্থ ডাকোটা নই।

আমার কাছে মিথ্যা বলোনা! তুমি নর্থ ডাকোটা না হলে তোমার এ্যাকাউন্টে তার চিঠি কেন?

আগেই বলেছি তোমাকে! আমি স্ট্র্যাথমোরের এ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারি! সেখানেই এগুলো ছিল।

বুলশিট! তুমি কখনো কমান্ডারের ই-মেইলে ঢু মারতে পারবে না।

তুমি বুঝতে পারছ না! চিৎকার করে উঠল হেল, আগে থেকেই স্ট্র্যাথমোরের এ্যাকাউন্টে একটা টেপ ছিল! অন্য কেউ সে টেপটা রেখেছিল সেখানে! সম্ভবত ডিরেক্টর ফন্টেইন। অমি শুধু সুযোগটা নিয়েছি! আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। আমি সেভাবেই জানতে পারি ডিজিটাল ফোর্ট্রেস রিরাইট করার কথা। তার ব্রেইনস্টর্ম পেয়েছি।

ব্রেইনস্টর্ম? স্ট্র্যাথমোর নিশ্চই ডিজিটাল ফোর্ট্রেস নিয়ে করা পরিকল্পনাটা কাজে লাগিয়েছে ব্রেইনস্টর্ম সফটওয়্যারে। কেউ যদি কমান্ডারের এ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে তাহলে সব খবরাখবর চলে আসবে….

ডিজিটাল ফোর্ট্রেস রিরাইট করার চিন্তাও অসুস্থতা! বলল হেল, এর জন্য পুরো এন এস এ কে মাঠে নামতে হবে। জান তুমি ভাল করেই! এজন্য কেউ নিজের ঘাড়ে দায় নিবে বলে মনে কর তুমি? মনে কর তোমরা মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করছ? আরে, এ টেকনোলজি চিরদিনের!

ছুটে আসার চিন্তায় গা নাড়াতে নাড়াতে বলল হেল আবার, স্ট্র্যাথমোরকে থামাতে হতই! আমি এ কাজটাই সারাদিন করি এখানে। তার উপর নজরদারি  করি। আমার শুধু প্রমাণ প্রয়োজন ছিল। জানা প্রয়োজন ছিল যে সে সত্যি সত্যি একটা ব্যাক ডোর লিখবে। তথ্যটা নিয়ে প্রেসের কাছে যাবার ইচ্ছা ছিল আমার!

সারা পৃথিবীতে বোমা পড়বে, জানে সে। জানে, সবখানে ছি ছি রব উঠবে।

সংবাদপত্রের হেডলাইন কল্পনা করতে পারেঃ সারা পৃথিবীর ডিজিটাল ডাটা নিয়ন্ত্রণের আমেরিকান ষড়যন্ত্রের কথা ফাস করে দিলেন ক্রিপ্টোগ্রাফার গ্রেগ হেল!

দ্বিতীয়বারের মত স্কিপজ্যাককে বিকল করে দিলে হেল পাগলাটে স্বপ্নেরচেও বেশি খ্যাতি অর্জন করে বসবে। ডুবে যাবে এন এস এ। কিন্তু একবার চিন্তাটা মাথায় এল তার। হেল কি সত্যি কথা বলছে? না। অবশ্যই না।

হেলের কথা চলছেই, আমি তোমার ট্রেসার এ্যাবোর্ট করেছি কারণ মনে করেছিলাম আমার উপর হামলা করবে। মনে করেছিলাম তুমি জানতে পেরেছ

স্ট্র্যাথমোরের এ্যাকাউন্টে সিদ কাটার কথা।

তাহলে কেন চার্ট্রাকিয়ানকে খুন করলে তুমি?

আমি করিনি! সব শব্দ ছাপিয়ে হেলের কণ্ঠ শোনা যায়, স্ট্র্যাথমোর তাকে ধাক্কা মেরেছে। সিঁড়ি থেকে সবটা দেখেছি আমি। চার্ট্রাকিয়ান আর একটু হলেই সিস-সেকদের ডেকে ভেস্তে দিত সমস্ত পরিকল্পনা!

হেল দারুণ! ভাবে সুসান। সে সব কিছুর পিছনে একটা যুক্তি দাঁড় করাতে ওস্তাদ।

ছেড়ে দাও আমাকে! মিনতি ঝরে পড়ল হেলের কণ্ঠে, আমি কিছুই করিনি!

কিছুই করনি? তুমি আর টানকাডো মিলে এন এস এ কে পণবন্দি করে রেখেছ! অন্তত তুমি তার সাথে ডাবল ক্রস করেছ। সত্যি করে বলতো, টানকাডো হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে? নাকি তোমার দোসররা তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে ওপাড়ে?

তুমি একেবারে বোকা! দেখতে পাচ্ছ না আমি এর সাথে যুক্ত নই? খুলে দাও আমাকে, সিকিউরিটি এসে পড়বে যে কোন মুহূর্তে।

সিকিউরিটি আসছে না।

কী?

মিথ্যা কল করেছে স্ট্র্যাথমোর।

কী! মেরে ফেলবে আমাকে। মেরে ফেলবে স্ট্র্যাথমোর। আমি খুব বেশি জানি! মেরে ফেলবে আমাকে!

ইজি, গ্রেগ।

কিন্তু আমি নির্দোষ!

তুমি মিথ্যা কথা বলছ! আর আমি সেটা জানি ভাল করেই। যে ট্রেসারটা এ্যালবার্ট করেছ সেটার কথা মনে পড়ে? আমি আবার সেটাকে পাঠিয়েছি। আমরা কি সেটাকে চেক করে দেখব?

ব্লিঙ্ক করছে কম্পিউটার টার্মিনাল। আমি জানি, হেলের ভাগ্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। সে মারা পড়বে বেঘোরে এ প্রমাণের পর।

খুলে দেখছে সুসান মেইলটা। এবং অবাক হয়ে গেল সে সাথে সাথে।

কোন না কোন ভুল হয়েছে নিশ্চই। ট্রেসারটা অন্য কারো কথা বলছে। খুব অপ্রত্যাশিত কারো কথা। ভুল হয়েছে। মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে কোথাও।

স্ট্র্যাথমোর যে ডাটা পেয়েছিল সেটাই দেখা যাচ্ছে এখানে। মনে হয়েছিল ভুল করেছে কমান্ডার। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে সে ঠিকই পাঠিয়েছিল।

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুসান।

[email protected]ų

ইটি? এনসেই টানকাড়োই নর্থ ডাকোটা?

মাথার উপর হলুদ আলো ঘুরছে। এখনো কেন স্ট্র্যাথমোর বন্ধ করে দিচ্ছে না মেশিনটাকে?

এনসেই টানকাডোই যদি নর্থ ডাকোটা হয় তাহলে সে চিঠি চালাচালি করেছে নিজের কাছেই। নর্থ ডাকোটা বলতে কেউ নেই!

দারুণ চাল। স্ট্র্যাথমোর টেনিসবল খেলার একপাশ দেখেছে। একপাশ দেখেই মনে করেছে অন্য পাশে কেউ আছে কারণ সেখান থেকেও জবাব আসছিল। কিন্তু টানকাডো খেলছিল একটা দেয়ালের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বলতো ফিরে আসবেই!

এখন সব খোলাসা হয়ে যাচ্ছে। টানকাডো চাচ্ছিল তার মেইল পড়ে দেখুক কমান্ডার। এনসেই টানকাডো কাউকে বিশ্বাস না করেই একটা কল্পনার অবয়ব বানিয়ে নিয়েছে।

এনসেই টানকাডো একটা ওয়ান ম্যান শো।

হঠাৎ হাত পা গুটিয়ে গেল সুসানের। কী কারণে তারা বিশ্বাস করেছে যে টানকাডো একটা আনব্রেকেবল কোড তৈরি করেছে তার এসব ই-মেইলের উপর নির্ভর করেই? যদি তাই হয়… ট্রান্সলেটারকে বিশ ঘন্টা ধরে বিজি রাখছে কী? আনব্রেকেবল কোড়, নাকি অন্য কিছু?

সুসান জানে, আনব্রেকেবল কোড বানানোরচে অনেক সহজ আরেকটা জিনিস বানানো যা ব্যস্ত রাখবে কম্পিউটারকে বিশ ঘন্টা ধরে।

ভাইরাস।

সারা শরীর শিরশির করে উঠল তার।

কিন্তু কোন ভাইরাস কী করে ঢুকবে ট্রান্সলেটারে?

যেন কববের ভিতর থেকে ফিল চার্ট্রাকিয়ানের কণ্ঠ ভেসে এল। স্ট্র্যাথমোর গান্টলেটকে বাইপাস করেছে!

চিন্তাগুলো দ্রুত চলে এল সুসানের মাথায়। স্ট্র্যাথমোর ডাউনলোড করেছে প্রোগ্রামটা। গান্টলেট নিবে না, তার কারণ সেখানে মিউটেশন স্ট্রিং আছে। স্ট্র্যাথমোর ঘাবড়ে যেত। কিন্তু সে টানকাডোর মেইল পড়েছে। মিউটেশন স্ট্রিং দিয়েই কাজটা করা হয়েছিল। স্ট্র্যাথমোর ধরেই নিয়েছে প্রোগ্রামটা সেফ। বাইপাস করেছে গান্টলেটকে।

দেয়ালে ক্লান্তভাবে হেলান দেয় সুসান, ডিজিটাল ফোর্ট্রেস নামের কোন প্রোগ্রাম আদৌ নেই।

এন এস একে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে এনসেই টানকাডো। আস্তে আস্তে দুর্বলভাবে টার্মিনালে ঝুঁকে আসে সে।

তারপর, উপরতলা থেকে একটা বিকট চিৎকার ভেসে আসে।

স্ট্র্যাথমোরের চিৎকার।

অধ্যায় : ৮৬

সুসান দাঁড়িয়ে আছে স্ট্র্যাথমোরের পিছনে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে কমান্ডার তার মনিটরের দিকে। তার দু চোখে অশ্রু।

কমান্ডার, ট্রান্সলেটারকে শাটডাউন করতে হবে।

কোন জবাব নেই।

এখুনি।

সে আমাদের বোকা বানিয়েছে, বলল স্ট্র্যাথমোর, এনসেই টানকাডো বোকা বানিয়েছে আমাদের…।

টানকাডো সমস্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে আস্তে আস্তে। সে ধ্বংস করে দিয়েছে অনেক কিছু। কতকিছু, তা কেউ জানে না।

মিউটেশন স্ট্রিং কথা বলতে পারছে না স্ট্র্যাথমোর।

আমি জানি।

যে ফাইলটা আমি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছি সেটা আসলে…

সুসান জানে, কোন আনব্রেকেবল কোড নেই পৃথিবীতে। কোনকালে থাকবে না। ছিল না। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস আসলে একটা এনক্রিপ্টেড ভাইরাস। হয়ত কোন জেনেরিক দিয়ে সিল করা। হয়ত এভাবেই তৈরি করা যাতে আর কোথাও তা এ্যাকটিভ হবে না এন এস এ ছাড়া।

মিউটেশন স্ট্রিংগুলো নাকি এ্যালগরিদমের পার্ট! কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না স্ট্র্যাথমোর।

জানে সুসান। এন এস এ যত পদক্ষেপ নিয়েছে সবকিছুর পিছনে ছিল টানকাডোর চাল। সে পিছন থেকে সুতা নেড়েছে শান্তভাবে।

আমি গান্টলেট বাইপাস করেছি।

জানতেন না আপনি।

জানা উচিত ছিল। আমি কোডিংয়ের জগতে বাস করছি। শাসন করছি কোডিং।

মানে?

তার নাম! সেটা একটা গডড্যাম এ্যানাগ্রাম!

এ্যানাগ্রাম?

অক্ষরগুলোকে পাল্টে দেখ।

এনডাকোটা এ্যানাগ্রাম? NDakota… Kado-tan… Oktadan… Tandoka…

TANKADO

হাটু ভেঙে পড়ল সুসানের। নর্থ ডাকোটা নয়। আমেরিকান কোন স্টেট নয়। টানকাডো। সে স্বয়ং টানকাড়ো। কিন্তু পৃথিবীর সেরা কোড ব্রেকাররা সেটা ধরতে পারেনি।

টানকাডো আমাদের মাথার উপর… স্ট্র্যাথমোর কথা শেষ করতে পারছে না।

ট্রান্সলেটারকে এ্যাবোর্ট করতে হবে।

দেয়ালের দিতে শূণ্য চোখে তাকিয়ে আছে স্ট্র্যাথমোর।

কমান্ডার! শাট ইট ডাউন! সেখানে কী হচ্ছে একমার ঈশ্বর জানো।

চেষ্টা করেছি।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সুসান।

মানে?

স্ক্রিনটা সরিয়ে দিল স্ট্র্যাথমোর সুসানের দিকে।

SORRY. UNABLE TO ABORT
SORRY. UNABLE TO ABORT SORRY.
UNABLE TO ABORT

তাহলে এ কাজই করেছে টানকাডো? সব সময় বলে চলেছে ট্রান্সলেটারের কথা। বিশ্বাস করেনি কেউ। যারা করেছে তাদের দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু মানুষের একত্বে বিশ্বাস করে সে। বিশ্বাস করে, মানুষের নিজস্বতা থাকবে। কোন দানব ট্রান্সলেটারের ক্ষমতা নেই সেটা ভঙ্গ করার। জীবন দিয়ে ট্রাম্বুলেটারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার স্রষ্টাদের একজন!

নিচে সাইরেন আরো শব্দ করে জানান দিচ্ছে ভয়াবহতার কথা

এখনি সব পাওয়ার কি করতে হবে। এখনি। সুসান দাবি করে।

পুলিং দ্য প্লাগ নামের একটা সিস্টেম আছে: এন এস এ তে। নিরাপত্তার আর এক উপায়। সব পাওয়ার অফ করার বা যে কোন কম্পিউটার বন্ধ করার ম্যানুয়াল উপায়।

ক্রিপ্টোর সব পাওয়ার অফ করে দিলে ট্রান্সলেটারের চলা থামিয়ে দেয়া যাবে। পরে ভাইরাস নষ্ট করা যাবে ট্রান্সলেটারকে রিফরমেটিং করে। রিফরমেট করা হলে হার্ড ড্রাইভ থেকে সব চলে যাবে, ডাটা, প্রোগ্রাম, ভাইরাস- সব। সাধারণত রিফরম্যাট করার ফলে হাজার হাজার ফাইল হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় অনেক বছরের কাজ। অনেক বছরের শ্রম। কিন্তু ট্রান্সলেটারের ব্যাপারটা ভিন্ন। এটা রিফরম্যাট হবে কোন ক্ষতি ছাড়াই। প্যারালাল প্রসেসিং মেশিনগুলো ভাবতে জানে। মনে রাখতে জানে না শুধু। আসলে ট্রান্সলেটারের ভিতরে কোন কিছুই স্টোর করা হয় না। এটা শুধুই কোড ভাঙে ভেঙেই সে ডাটাটা পাঠিয়ে দেয় মূল ডাটাব্যাঙ্কে

থমকে গেল সুসান। মাথায় যেন বাজ পড়েছে। মূল ডাটাব্যাঙ্ক-

ইয়েস, সুসান। মূল ডাটাব্যাঙ্ক…

নড করল সুসান শূণ্য চোখে। টানকাড়ো ট্রান্সলেটারকে ব্যবহার করে মূল ডাটাব্যাঙ্কের সর্বনাশ করছে।

অসুস্থের মত স্ট্র্যাথমোর ঘুরিয়ে দিল মনিটরটা আবার। চোখ রাখল সুসান সেখনে নিচের কোণায় ডায়ালগ বক্সটায়।

পৃথিবীকে ট্রান্সলেটারের অস্তিত্বের কথা জানিয়ে দিন।
ওনলি দ্য টুথ উইল সেভ ইউ নাউ…

হিমহিম লাগছে সুসানের। জাতির সবচে গোপনীয় ব্যাপারগুলো জমা আছে এই এন এস এ তে। সব। মিলিটারি ক্যুনিকেশন প্রটোকলস, সিগনিট কমফার্মেশন কোড, বিদেশি গুপ্তচরদের পরিচয়, এ্যাডভান্সড অস্ত্রশস্ত্রের পরিকল্পনা, ডিজিটাইজড ডকুমেন্ট, ব্যবসায়িক চুক্তি- সব। লিস্টের কোন শেষ নেই।

টানকাড়ো একটুও ভয় পেল না একটা দেশের সব তথ্য নষ্ট করে দিতে গিয়ে? ভেবে পায় না সুসান।

আবার তাকায় সে মেসেজটার দিকে।

ওনলি দ্য টুথ উইল সেভ ইউ নাউ…

দ্য টুথ? কোন বিষয়ের ঐথ?

ট্রান্সলেটার। ট্রান্সলেটারের টুথ।

নড করল সুসান। দিবালোকের মত স্পষ্ট। ব্লাকমেইলিং। হয় পৃথিবীকে জানিয়ে দাও ট্রান্সলেটারের কথা, নয়ত ডাটাব্যাঙ্ক হারাও। স্ক্রিনের দিকে তাকায় সে। সেখানে একটা কথা জ্বলজ্বল করছে।

এন্টার পাস কি

 সামনের অক্ষরগুলোর দিকে তাকিয়ে জানতে পারে সুসান, সেই আঙটিতে লুকিয়ে আছে আমেরিকান সভ্যতার প্রাণ ভ্রমর। এটা কোন আনব্রেকেবল কোডের পাস কি নয়। ভাইরাস সরানোর পাস কি। এমন ভাইরাসের কথা আগেও শুনেছে সুসান। ভাইরাসের ভিতরেই প্রতিষেধক লুকানো। একটা মাত্র পাস কি।

টানকাডো কখনো চায়নি আমাদের ডাটাব্যাঙ্ক নষ্ট হয়ে যাক। সে শুধু চেয়েছে ট্রান্সলেটারের কথাটা জানিয়ে দিতে।

বুঝতে পারছে সুসান, টানকাডোর প্ল্যানে মারা যাবার ব্যাপারটা ছিল না। সে আয়েশ করে কোন স্প্যানিশ বারে বসে সি এন এন এ একটা প্রেস কনফারেন্স দেখতে চেয়েছে যেখানে বলা হবে ট্রান্সলেটারের অস্তিত্বের কথা। বলা হবে এ বিষয়ে সব। সবিস্তারে। এরপর সে সেখান থেকে স্ট্র্যাথমোরকে কল করে হাতের আঙটি থেকে পাস কিটা জানিয়ে দিবে। হয়ে যাবে ই এফ এফ হিরো।

সুসান টেবিলে হাত চাপড়ায়। আমাদের সেই আঙটিটা পেতে হবে। সেখানেই আছে পাস কি! জানে, নর্থ ডাকোটা নেই। নেই কোন সেকেন্ড পাস কি। এখন টানকাডোও নেই যে একটা প্রেস কনফারেন্সের পর কোডটা দিয়ে দিবে।

চুপ করে আছে স্ট্র্যাথমোর।

পরিস্থিতির কথা যা ভেবেছিল সুসান আসলে তা আরো বেশি জটিল। সবচে ভয়ানক ব্যাপার হল, টানকাডো ব্যাপারটাকে এতদূর গড়াতে দিয়েছে। সে জানে, এন এস এ আঙটিটা না পেলে কী হবে। জেনেও সে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আঙটিটা দিয়ে দিয়েছে অন্য কারো হাতে। কিন্তু সে আর কী করত? নিজের কাছেই রেখে দিত আঙটিটা, এ জেনেও যে সেটার জন্যই তাকে মেরে ফেলছে এন এস এ?

এখনো সুসানের বিশ্বাস হয় না টানকাডো এ কাজ করতে পারে। সে শুদ্ধবাদী। ধ্বংস কখনোই কাম্য ছিল না তার কাছে। সে শুধু সব কাজ সোজা করে দিতে চায়। বার গোপনীয়তা রক্ষার ইচ্ছাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল তখন। কিন্তু ডাটাব্যাঙ্কের সব তথ্য ডিলিট করার মত কাজ করতে পারে না সে কখনোই

তাকায় সুসান কমান্ডারের দিকে। পড়ে ফেলতে পারে তার মনের কথা। স্ট্র্যাথমোর এখন শুধু তার ব্যাকডোরের আশায় হতাশ হয়নি, বরং খামখেয়ালির জন্য পুরো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচে বড় ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে তারা তথ্যের দিক দিয়ে।

কমান্ডার, এটা আপনার দোষ নয় : সুর্দি টানকাডো মারা না যেত তাহলে আমাদের কথা বলার সুযোগ থাকত, আমরা দর কষাকষি করতে পারতাম। পরিস্থিতি বদলে গেছে।

কিন্তু কমান্ডার ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর কোন কথাতেই কান দিচ্ছে না। তার জীবনটা ধ্বসে গেছে। ত্রিশ বছর ধরে সে এ দেশের জন্য কাজ করল, এ মুহূর্ত হওয়া উচিত ছিল পৃথিবীর সবচে বড় এনক্রিপশন স্টান্ডার্ডের পিছনে দরজা রেখে দেশের জন্য চূড়ান্ত কাজ করার মুহূর্ত। কিন্তু তার বদলে এই বিদগ্ধ বিজয়ী ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির তথা দেশের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ডাটাব্যাঙ্কে একটা ভাইরাস পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আর কোন উপায় নেই। পুরো কম্পিউটার বন্ধ করে দিতে হবে। মুছে ফেলতে হবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বাইট তথ্য। শুধু আঙটিটা তাদের রক্ষা করতে পারত, আর ডেভিড যদি এখনো আঙটিটা না পেয়ে থাকে…

ট্রান্সলেটারকে ব করতে হবে আমার। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে সুসান, সাবলেভেলে চলে যাচ্ছি। নামিয়ে দিচ্ছি সার্কিট ব্রেকার।

আমি করব কাজটা।

না। আমি যাচ্ছি।

ওকে। বটম ফ্লোর। ফ্রেয়ন পাম্পের পাশে।

অর্ধেক পথ গিয়ে গলা ছাড়ল সুসান, কমান্ডার, খেলা শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের এখনো ধসিয়ে দেয়া যায়নি। ডেভিড যদি সময় মত আঙটিটা পেয়ে যায়, ডাটাব্যাঙ্ক রক্ষা করব আমার তখনি।

কোন কথা বলল না স্ট্র্যাথমোর।

ডাটাব্যাঙ্ককে কল করুন, আদেশ করল সুসান, তাদেরকে জানিয়ে দিন ভাইরাসের কথাটা। আপনি এন এস এর ডেপুটি ডিরেক্টর! আপনি এ সংস্থার একজন কান্ডারি!

ধীরে ধীরে চোখ তুলল স্ট্র্যাথমোর। যেন জীবনের আসল সিদ্ধান্তটা নিবে সে এখন। মন খারাপ করা একটা নড় করল সে সুসানের দিকে তাকিয়ে।

শক্ত মনে অন্ধকারে চলে গেল সুসান।

অধ্যায় : ৮৭

এক রাস্তায় চলে এসেছে ভেসপাটা। ভোর হয় হয়। রাস্তায় নেমে গেছে ব্যস্ত মানুষদের যানগুলো। নবযৌবনা সেভিল নতুন করে শুরু করছে তার কাজ। পাশ দিয়ে তরুণ কয়েকটা ছেলের ভ্যান চলে গেল ছুটে। বেকারের ভেসপাটাকে খেলনার মত লাগছে।

কোয়ার্টার মাইল দূরে, একটা ট্যাক্সি পাগলা ঘোড়ার মত এগিয়ে আসছে ঘাস মাড়িয়ে।

ফ্রিওয়ে মার্কারে চোখ পড়ল বেকারের সেভিলা সেন্ট্রো- ২ কিলোমিটার। ডাউনটাউনের আড়ালে একবার চলে যেতে পারলে একটা সুযোগ পাওয়া যেতে পারে, জানে সে। স্পিডোমিটারে ষাট কিলোমিটার গতি দেখাচ্ছে। বেরিয়ে যেতে আর দু মিনিট। জানে, এতটা সময় নেই হাতে। পিছনে কোথাও ট্যাক্সিটা গতি বাড়াচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সামনে ডাউনটাউনের বর্ণিল আলো। আশা একটাই, জীবিত অবস্থায় সেখানে যেতে পারলেই হল।

অর্ধেক পথ পেরিয়ে যাবার পর পিছনে ধাতব কর্কষ আওয়াজ উঠল। এগিয়ে আসছে ক্যাবটা। এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে বেকার। একটা গুলির আওয়াজ উঠল পিছন থেকে। সাপের মত একেবেকে গুলি কাটানোর চেষ্টা তার। কোন কাজে আসবে না। তিনশ গজ দূরে এক্সিট চলে এসেছে যখন মাত্র কয়েক গাড়ি দূরে আছে ট্যাক্সিটা। মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময়। হয় তাকে পিষে মারা হবে, নয়ত নামিয়ে ফেলা হবে গুলি করে। যে কোন সম্ভাব্য পথের জন্য আশপাশে তাকায় সে। দু পাশেই উঁচু পাড়।

আরো একটা গুলি ছুটে এল। সিদ্ধান্ত নিল বেকার।

রাবার আর ধাতুর ঘর্ষণের আওয়াজ তুলে ডানে মোড় নিল পাগলের মত। উঠে গেল একপাশে। মাটি কামড়ে এগিয়ে যাবার জন্য ঘরঘর করছে দুর্বল ইঞ্জিন। পিছনে তাকানোর সাহস নেই। বেকার জানে, যে কোন মুহূর্তে থেমে যাবে ট্যাক্সি। তারপর আয়েশ করে পাখির মত শিকার করা হবে:তাকে।

কিন্তু বুলেট ছুটে এল না।

মাটিতে ঠাসা পাহাড় সামনে। সেটার উপর দিয়েই উঠে যাচ্ছে বাইক। যে কোন মুহূর্তে গুলি ছুটে আসতে পারত। কিন্তু উপরে উঠেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল বেকারের। সামনে আলোকিত, তারায় ভরা আকাশের মত দেখা দিয়েছে সেন্ট্রো। সেভিল মহানগর। নেমে যাবার সময় গতি ফিরে পেল ভেসপা। এ্যাভিন লুই মন্টেটো দ্রুত চলে আসছে টায়ারের নিচে। বা পাশ দিয়ে ছুটে গেল সকার স্টেডিয়াম।

একেবারে পরিষ্কার পথে দাঁড়িয়ে আছে সে।

এরপরই আবার পরিচিত ধাতব শব্দটা শুনতে পেল। একশো গজ দূরে এগিয়ে আসছে ট্যাক্সি। লুই মন্টেটোতে পড়েই খ্যাপা ষাড়ের মত এগিয়ে এল তার দিকে।

বেকার জানে, আতঙ্কের একটা ধারা বয়ে যাবার কথা শরীর বেয়ে। তেমন কিছুই হল না। জানে কোথায় যাচ্ছে। চট করে মোড় নিল মেনেন্দেজ প্লোয়োতে। চিকন ওয়ান ওয়েটা চলে গেছে ব্যারিও সান্তা ক্রুজের দিকে।

আর একটু, ভাবে সে।

ট্যাক্সিটা আরো এগিয়ে আসছে জোরে জোরে শব্দ করতে করতে। সান্তা ক্রুজের চিকন রাস্তা ধরে আসছে ট্যাক্সি। সাইড মিরর ভেঙে গেছে দু পাশে আচড় খেয়ে। বেকার জানে, জিতেছে সে। সান্তা ক্রুজ সেভিলের সবচে প্রাচীন রাস্তা। বিল্ডিংগুলোর মধ্যে কোন ফাঁকা নেই। রোমান শাসনামলে বানানো চিকন চিকন পায়ে চলা পথ আছে শুধু। এই চিকন পথে একবার হারিয়ে গিয়েছিল বেকার। কয়েক ঘন্টার জন্য।

সামনে উঠে এল সেভিলে একাদশ শতকের গথিক ক্যাথেড্রাল। দেয়ালের মত। তার পাশেই গেরাল্ডা টায়ার উঠে গেছে সোজা চারশ উনিশ ফুট উপরে। এই হল সান্তা ক্রুজ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাথেড্রালের এলাকা। সেভিলের সবচে পুরনো সবচে ধার্মিক ক্যাথলিক পরিবারগুলো এখনো এখানে বাস করে।

পাথুরে স্কয়ারে গাড়ি চালিয়ে দিল বেকার। একটা গুলি এগিয়ে এল এবার। অনেক দেরিতে। বেকার আর তার মোটরসাইকেল একটা চিকন পথ ধরে বেরিয়ে গেছে।

ক্যালিটা ডি লা ভার্জেন।

অধ্যায় : ৮৮

চিকন প্যাসেজওয়েতে ভেসপার স্নান হেডলাইটের আলো পড়ছে। মুখ খিঁচিয়ে খিস্তি করছে যেন আদ্যিকালের ভবনগুলো। চুনকাম করা বিল্ডিংগুলোর সরু গলিপথ ধরে ভ্যাটভ্যাট শব্দ করতে করতে ছুটেছে ঝরঝরে বাইকটা। সান্তা ক্রুজের লোকগুলোকে রোববারের সকালে অযাচিত আওয়াজ তুলে ঘুম ভাঙানোর পায়তাড়া কষছে যেন।

ত্রিশ মিনিটও হয়নি এয়ারপোর্ট ছেড়েছে বেকার। ভেবে পায় না কে তাকে খুন করতে চায়। এই আঙটির রহস্যটা কী? এন এস এর লিয়ারজেট কোথায়?

স্টলে মেগানের লাশটা পড়ে থাকার কথা মনে হল তার। কোত্থেকে যেন ঘৃণার একটা ঢেউ আছড়ে পড়ল তার উপর।

গোলকধাঁধায় ভরা সরু পথের সান্তা ক্রুজে এলোমেলো চলছে বেকার। কোথায় গিরাল্ডার টাওয়ার সেটা দেখে এগিয়ে যাবে। কিন্তু আশপাশের ঘন সন্নিবিষ্ট ভবনগুলো এত উঁচু যে উপরে এক চিলতে আকাশ ছাড়া কিছু দেখা যায় না।

খুনি এখন কোথায়? পায়ে হাটা দেয়নি তো? যদি তাই হয়, আওয়াজ তোলা ভেসপাটা খুবই সহজ টার্গেট। এখন একটাই সুবিধা। স্পিড। অপর প্রান্তে যেতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

অনেক গলি তস্য গলি তস্য তস্য গলি পেরিয়ে বেকার অবাক হয়ে গেল। তিন মাথার মোড়ে চলে এসেছে। আগের মতই। একই জায়গায়। কোনদিকে যাবে ঠিক করার আগেই একটু কেশে নিয়ে থেমে গেল ইঞ্জিন। গ্যাস ইন্ডিকেটর ভ্যাসিও দেখাচ্ছে।

তারপর, একটা ছায়া উঠে এল তার পিছনে।

পৃথিবীর সবচে সেরা কম্পিউটারের নাম মানুষের মত। এক পলের মধ্যে ছায়ায় চশমার ওয়্যার দেখতে পেল সে। মেমোরি: ঘেটে জেনে ফেলল এটাই সে লোক। উদ্বিগ্ন হল। সিদ্ধান্ত নিল, পালাতে হবে।

অকেজো বাইকটা নামিয়ে রেখে সর্বশক্তিতে একটা দৌড় দিল বেকার।

বেকারের কপাল মন্দ, হুলোহট এখন আর কোন চলন্ত ট্যাক্সিতে নেই। সে সলিড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে তুলে আনল গানটা। আস্তে করে চাপ দিল ট্রিগারে।

শুলিটা লাগল বেকারের হিপে। প্রথমে মনে হল সাধারণ কোন মাসল পুল। পেশির খিচ। এরপর কোন অনুভূতি নেই। নেই ব্যথা বা বেদনা। হাত তুলে আনল বেকার সেখান থেকে। তাজা রক্ত।

সামনে সান্তা ক্রুজের অনন্ত গোলকধাঁধা। এগিয়ে চলছে বেকার অন্ধের মত।

.

হুলোহট ব্যর্থ হয়েছে। সে বুদ্ধিমান। মাথা লক্ষ্য করাই তার টার্গেট, কিন্তু চলন্ত অবস্থায় মাথা কষ্টকর। দৈর্ঘ আর প্রস্থের মাঝামাঝি অবস্থানটা বেছে নিয়েছে সে। হিপ। আয়েশ করে সেখানটায় একটা বুলেট নামিয়ে আনবে এমন সময় মোড় ঘুরল বেকার। একটুর জন্য মাঝামাঝি না লেগে পাশে লেগে গেছে। কিন্তু হুলোহটের অন্য উদ্দেশ্য সফল।

আনন্দ হচ্ছে তার। কেমন যেন আনন্দ। ইঁদুর বিড়াল খেলা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

.

সামনে ছুটছে বেকার অন্ধের মত। ঘুরছে, ছুটছে, পাক খাচ্ছে চড়কির মত। এড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিটা সোজা রাস্তা।

পিছনের পদশব্দটার যেন কোন অন্ত নেই।

ফাঁকা হয়ে গেছে বেকারের মন। কে সে, কে তাকে তাড়া করে ফিরছে- সব হারিয়ে গেছে মন থেকে। আছে শুধু অচেনা এক সচেতনতা। ব্যথা নেই। ভয় নেই। শুধু তাজা শক্তি।

মাথার পাশ দিয়ে একটা বুলেট ছুটে গিয়ে কাঁচকে শতধা বিভক্ত করে দিয়েছে। মোড় নিল বেকার। আরেক গলি ধরল। টের পেল, সাহায্যের জন্য মুখ খুলেছে। বিড়বিড় করে সহায়তা চাইছে কারো কাছে। পিছনে পায়ের শব্দ। নিজের পায়ের নিচে পায়ের শব্দ। এ ছাড়া রোববার সকালের সান্তা ক্রুজ স্তব্ধ। একেবারে নিষ্ঠুরের মত স্তব্ধ।

এবার আস্তে আস্তে যেন আগুন ধরে গেল বেকারের একপাশে ছুটছে সে। কোথায়, কেন, কীভাবে, জানে না। ছুটছে। সামনে হোয়াইটওয়াশ করা পথ। পথের দুপাশ কি রক্তিম?

কোন জানালা খোলা নেই। খোলা নেই একটা দরজা।

সকোরো! তার শব্দ বেরোয় না মুখ থেকে মোটেও। হেল্প!

পথটা সরু হয়ে উঠছে প্রতি মুহূর্তে। দু পাশে নির্মম বন্ধ দরজা। সরু। বন্ধ দরজা। আরো আরো সরু। পিছনের পদশব্দ এগিয়ে আসছে আরো আরো। সোজা পথে ছুটছে সে।

আচমকা পথটা উপরে উঠে যেতে শুরু করল। উঠছে বেকার। শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসছে প্রতি মুহূর্তে। আস্তে আস্তে থেমে যাচ্ছে সে।

এবং চলে এসেছে সে।

হঠাৎ দেখা গেল এটা কানাগলি। সামনে বিরাট উঁচু একটা দেয়াল। একটা কাঠের বেঞ্চি। আর কিছু নেই। চারপাশে তাকায় বেকার। তিনতলা ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে।

সামনে যাবার চেষ্টা করে সে। যায় কিছুটা। তারপর থেমে যায় হঠাৎ করে।

সিঁড়ির ধাপে একটা গড়ন দেখা দিল। লোকটা এগিয়ে আসছে বেকারের দিকে। সুস্থির পদক্ষেপে। হাতে একটা বিশাল গান। সূর্যের প্রথম আলোয় ঝিকিয়ে উঠল সেটার ব্যারেল।

চারপাশে আরেকবার তাকায় বেকার। তারপর ব্যথা করা পাশটায় হাত দেয়। হাত দিয়ে চোখের সামনে এনে বুঝতে পারে, রক্ত পড়ছে। রক্ত কেন পড়ছে মনে করতে পারে না। হাতেই এনসেই টানকাডোর আঙটিটা। মনে ছিল না এটা হাতেই পরা ছিল। কেন সেভিলে এসেছে সে, মনে পড়ছে না কিছুতেই। একটা গড়ন এগিয়ে আসছে আরো আরো কাছে।

আঙটির দিকে তাকায় বেকার। এজন্যই কি মেগানকে জীবন দিতে হল?  এটার জন্যই কি তাকেও হারাতে হবে এ জীবনটা?

এগিয়ে আসছে আরো গড়নটা। চারপাশে বোবা দেয়াল। দু পাশে সামান্য কয়েকটা গেট। সাহায্যের জন্য ভাক ছাড়ার আর সময় নেই।

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল বেকার। আস্তে আস্তে নিচু হয়ে যাচ্ছে। পুরো অতীতের সবটুকু উঠে আসছে একে একে… তার বাল্যকাল, বাবা-মা… সুসান।

ওহ গড! সুসান!

সেই ছেলেবেলার পর প্রথমবারের মত প্রার্থনা করল ডেভিড বেকার। মারা যাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য নয়। ভোজবাজিতে বিশ্বাস করে না সে। বরং প্রার্থনা এমন এক মেয়ের জন্য যাকে সে পিছনে ফেলে রেখে এসেছে। সে যেন মনে রাখে ভালবাসা পেয়েছিল কারো কাছ থেকে। ভালবাসা হয়েছে তাকে।

চোখ বন্ধ করল সে। স্মৃতিগুলো ঝড়ের বেগে চলে আসছে মনের গহীন থেকে। ডিপার্টমেন্টের কাজ আর ইউনিভার্সিটির ঝক্কি ঝামেলা নিয়ে, পড়ালেখা নিয়ে জীবনের নব্বইভাগ সময় কাটিয়েছে সে, সেসব এল না মোটেও।

তার সাথে থাকার স্মৃতিগুলো উঠে আসছে। সামান্য সব স্মৃতি। চপস্টিক বানাতে সাহায্য করছে, খুনসুটি করছে শুধুশুধু…

আই লাভ ইউ… চিরদিনের জন্য….

যেন জীবনের সমস্ত প্রতিরোধ, সমস্ত বাধা, সবটুকু ক্ষমতা চলে গেছে। নিঃশেষ হয়ে গেছে। নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে ঈশ্বরের সামনে। আমি একজন মানুষ। ভাবে সে।

চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ওয়্যার রিম পরা লোকটা। কাছেই কোথাও একটা ঘন্টি বাজতে শুরু করল। বেকার অন্ধকারে এমন এক শব্দের জন্য অপেক্ষা করছে যেটা তাকে শেষ করে দিবে।

অধ্যায় : ৮৯

সকালের সূর্য উঠে এসেছে স্পেনের উঁচু উঁচু ছাদের উপরে আলো ছড়াতে ছড়াতে। গিরান্ডার ঘন্টা গমগমে ধ্বনি তুলল। এর জন্যই অপেক্ষা। হুটহাট খুলে গেল প্রাচীন নগরীর দরজাগুলো। বেরিয়ে এল মানুষ সপরিবারে। ছোট ছোট সব গলিপথে। মুখরিত হয়ে উঠল জায়গাটা।

যেন বিশাল কোন হৃদপিন্ড এ পুরনো নগরী। এর শিরা-উপশিরা গলিপথগুলো। মানুষ রক্তকণিকা। ছুটে যাচ্ছে সবাই যেন। ছুটে যাচ্ছে সান্তা ক্রুজের লোকজন তাদের আরাধ্যের কাছে। ধার্মিক মানুষের পদধ্বণিতে কল্লোলিত চারপাশ।

বেকারের মনের কোন অচেনা কুঠুরিতে যেন বেজে যাচ্ছে একটা ঘন্টা। মারা গেছি আমি? চোখ খুলল সে। প্রথম আলোয় নেয়ে গেল চোখ। জানে, কোথায় আছে সে। চারপাশে চোখ বুলায়। নেই। কোথাও নেই ওয়্যার রিমের খুনি। অবাক কান্ড, চারপাশে মানুষ নেমে আসছে। সুন্দর পোশাকে আবৃত। হাসছে। কথা বলছে প্রাণ খুলে।

.

গলির শেষ মাথায় হুলোহট আপন ভাগ্যকে অভিশাপ দেয়ায় ব্যস্ত। প্রথমে দুজন বেরিয়ে এল। জানে, সরে যাবে তারা। কিন্তু কিছুই হল না। ঘন্টা বাজছে ঢং ঢং। আরো দুজন এল। কথা বলছে তারা নিজেদের মধ্যে। তারপর আরো মানুষ বেরিয়ে এল। এবার আর হাল ছেড়ে দেয়ার সময় নেই। বাড়তে থাকা মানুষের ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায় সে ডেভিড বেকারের কাছে।

এগিয়ে যায় সে সবাইকে ছাড়িয়ে। চারপাশে গিজগিজে মানুষ। সবাই কালো পোশাকে আবৃত। সবাইকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে শিকারের কাছে। কাজ শেষ করতে হবে তাকে। তারপর কী হয় সেসব নিয়ে কোন পরোয়া নেই তার।

অস্ত্র উদ্যত করে গিয়েই অবাক হয়ে গেল।

নেই। ডেভিড বেকার নেই।

.

মানুষের সাথে চলছে বেকার। ফলো: দ্য ক্রাউড। তারা জানে বেরুবার পথটা কোন দিকে। গলি প্রশস্ত হয়ে যাচ্ছে। আরো আরো মানুষ বেরিয়ে আসছে প্রতি মুহূর্তে।

উচ্চকিত হচ্ছে ঘন্টাধ্বনি।

বেকারের পাশটা এখনো জ্বলছে কিন্তু রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে কোন এক অজানা কারণে। তার পিছনে কোথাও এক লোক গান নিয়ে এগিয়ে আসছে দ্রুত।

চার্চে যেতে থাকা মানুষের ভিড়ে মাথা নিচু করে চলছে বেকার। আর বেশি দূর নয়, টের পায় সে। মানুষের গভীরতা বেড়ে যাচ্ছে। এখন আর পথটা ছোট গলি নেই। মূল নদী যেন। তারপর হঠাৎ চোখের সামনে দেখা গেল গিরা টাওয়ার।

সবাই যাচ্ছে চার্চের কাছে। ম্যাথিয়ুস গিগোর দিকে যাবার ইচ্ছা তার। কিন্তু ফাঁদে পড়ে গেছে সে। সবার কাঁধে কাধ। পায়ে পা। স্পেনিয়ার্ডদের সাথে বাকি পৃথিবীর একটা তফাৎ আছে। তারা ভিড়ে কাছাকাছি হয়ে যেতে পছন্দ করে।

বেকার দুজন ইয়া মোটা মহিলার চাপে পড়ে ভর্তা হয়ে যাচ্ছে। দুজনের চোখই বন্ধ। মানুষ তাদের ঠেলে নিয়ে যাবে, এ সহজ ব্যাপারটা মেনে নিয়েই হাল ছেড়ে আয়েশ করছে তারা।

বিশাল পাথুরে স্কয়ারটার কাছে চলে আসার পর বেকার আবার বায়ে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু স্রোত এখানে আরো উত্তাল। সবাই প্রত্যাশায় এগিয়ে যাচ্ছে স্রষ্টার কাছে। চোখ বন্ধ অনেকেরই। প্রার্থনা করছে। আবার ঠেলে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কোন কাজে আসবে না। তীব্র পাহাড়ি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার চেষ্টা করার কোন মানে আছে কি?

ডেভিড বেকার হঠাৎ বুঝতে পারে সে গির্জায় যাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *