০৭০. সার্চ ইজ ওভার

অধ্যায় : ৭০

ডেভিড বেকার স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে আছে। চোখ পড়ে আছে মেয়েটার দিকে। জানে সে, সার্চ ইজ ওভার। চুল ধুয়ে ফেলেছে মেয়েটা, বদলে ফেলেছে পোশাক হয়ত আঙটিটাকে আরো ভাল দামে বিক্রি করার জন্য। কপাল ভাল, এখনো সে নিউ ইয়র্কের পথ ধরেনি।

নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বেকার। জানে, কষ্টকর যাত্রার এখানেই শেষ। আঙুলে চোখ চলে যাচ্ছে বারবার। আর চোরাদৃষ্টি না দিয়ে সরাসরি তাকায় সে। এখানেই থাকার কথা জিনিসটার। এখানেই থাকবে।

হাসল সে মুখে একটা মৃদু ভাব বজায় রেখে, ব্যাপারটার ভাব ভাল নয়। মনে হয় তুমি আমাকে এমন কিছু দিতে পার।

ও? হঠাৎ আনমনা হয়ে যায় মেগান।

বেকার হাত ঢোকায় ওয়ালেটে, অবশ্যই, আমি তোমাকে হেল্প করতে পারলে খুশি হব।

মেগান ভীত চোখে তাকায় বেকারের কান্ড কারখানার দিকে। তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে। এখনি চোখে চোখে মেপে নিয়েছে মূল দরজার দূরত্ব। এখান থেকে পঞ্চাশ গজ হবে বড়জোর।

আমি তোমাকে বাসায় ফিরে যাবার মত যথেষ্ট টাকা দিতে পারি যদি তুমি

আর বলা লাগবে না। নিচু হয়ে গেল মেগান, আমি ঠিক ঠিক জানি কী চাই আপনার–

আশার একটা ঝলক খেলে গেল বেকারের চোখেমুখে। তাহলে ধরতে পেরেছে! আঙটিটা আছে তার কাছেই! সে ঠিক জানে না কী করে মেয়েটা বুঝে ফেলল। এসব নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই তার। জানে, আঙটিটা পেতে দেরি, তারপরই বাকি কাজগুলো সমাধা হয়ে যাবে। চলে যাবে সে স্টোন মানোরের বিশাল ক্যানোপি বেডে। আয়েশ করে এত সময়ের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিবে।

অবশেষে পেয়ে গেল সে। পিপার গার্ড। মেসের পরিবেশুবান্ধব বিকল্প। বের করেই এক মুহূর্তে স্প্রে করে দিল বেকারের চোখে। আর অপেক্ষা নেই। সোজা ছুটে গেল দরজার কাছে।

ছুটতে ছুটতেই দেখতে পেল লোকটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে চোখে হাত রেখে।

অধ্যায় : ৭১

টকোগেন নুমাটাকা, তার চতুর্থ সিগার শেষ করতে করতে পায়চারি করছিল। দ্রুতপায়ে।

ফোন নাম্বারটা পাবার কোন সম্ভাবনা? জিজ্ঞেস করল সে অপারেটর কিছু বলে ওঠার আগেই।

কোন খবর নেই, স্যার। একটু বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। কলটা এসেছিল সেলুলার থেকে।

সেলুলার? অবাক হয় সে।

বুস্টিং স্টেশন, বলছে অপারেটর, এরিয়া কোড দুশ দুইয়ের। এখনো কোন নাম্বার পাইনি।

দুশ দুই? কোথায়? আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলের কোথায় আছে তারা? বা

ওয়াশিংটন ডিসির কাছে কোথাও, স্যার।

ভ্রূ ধনুকের মত বাকা করে ফেলল সে, কোন নাম্বার পাবার সাথে সাথে আমাকে কল করবে।

অধ্যায় : ৭২

স্ট্র্যাথমোরের ক্যাটওয়াকের দিকে দ্রুত যাচ্ছে সুসান ফ্লেচার। হেলের কাছ থেকে সরে যেতে চায় সে। যত দ্রুত সম্ভব। মাজারের কমপ্লেক্স অফিসটা প্রায়ান্ধকার।

ক্যাটওয়াকের ধাপগুলো পেরিয়ে গিয়েই দেখতে পায় ভিতরে মনিটরের আলো আছে শুধু।

কমান্ডার? প্রশ্ন করার মত করে বলে সে। কমান্ডার!

কোন জবাব নেই।

কমান্ডার!

হঠাৎ মনে পড়ে যায়, স্ট্র্যাথমোর এখানে থাকবে না। থাকবে সিস-সেক ল্যাবে। এখন আর অন্য কোন চিন্তা তার মাথায় নেই। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস থাক চাই না থাক, সেসব নিয়ে আর ভাবার সময় নেই। নরক ভেঙে পড়েছে ক্রিপ্টোতে। এখান থেকে মুক্তি চাই তার। ট্রান্সলেটারকে এ্যালবার্ট কর। তারপর চম্পট। সঠিক কমান্ড উইন্ডোতে গিয়ে টাইপ করল সুসান

এ্যাবোর্ট রনি

এন্টার কির উপর ঘুরছে হাতটা।

সুসান! দরজার কাছ থেকে একটা কণ্ঠ চিৎকার করে উঠল।

পাঁই করে ঘুরল সুসান। হৃদপিন্ড ধ্বক ধ্বক করছে। গ্রেগ হেল? কিন্তু সে নয়। দাঁড়িয়ে আছে স্ট্র্যাথমোর। একেবারে ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে আছে সে। হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং অন?

কম… কমান্ডার! হেল নড থ্রি-তে। আমাকে এ্যাটাক করেছিল!

কী! অসম্ভব! হেল সাবলেভেলে আটকে আছে–

না, সেখানে নেই! বেরিয়ে এসেছে। এখনি এখানে সিকিউরিটি দরকার। ট্রান্সলেটারকে এ্যাবোর্ট করছি আমি

স্পর্শ করোনা! বিকট চিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেল কমান্ডার। সুসানের হাত সরিয়ে নিল সাথে সাথে।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সে কমান্ডারের দিকে। দিনে দ্বিতীয়বারের মত মনে হল চিনতে পারছে না লোকটাকে। একা লাগছে তার। ভীষণ একা।

.

স্ট্র্যাথমোর খেয়াল করল শার্টে লেগে থাকা রক্তের দাগটা।

জিসাস! সুসান, ঠিক আছতো তুমি?

কোন জবাব দিল না সে।

এগিয়ে গেল সে সুসানের দিকে। হামলে পড়ল তার উপর। মনে অনেক ব্যাপার চলছে যেসব কথা জানে না কেউ। আশাও করে না কেউ জানবে।

আই এ্যাম স্যরি, বলল সে, কী হয়েছে বলতো খুলে!

ঠিক আছে সব। রক্তটা আমার নয়। এখান থেকে বের করে আনুন আমাকে।

তুমি আহত? কাঁধে একটা হাত রাখল স্ট্র্যাথমোর। সাথে সাথে রিয়্যাক্ট করল সুসান। কাধ থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকাল। যখন সুসানের দিকে তাকাল সে, অবাক হল। তাকিয়ে আছে সে দেয়ালের দিকে।

সেখানে, অন্ধকারে, একটা কিপ্যাড জ্বলজ্বল করছে। সেদিকে তাকিয়ে ভ্র কোচকায় স্ট্র্যাথমোর। আশা করেনি সুসান খেয়াল করবে। উজ্জ্বল কিপ্যাডটা দিয়ে তার প্রাইভেট এলিভেটর দেখানো হচ্ছে। স্ট্র্যাথমোর আর তার বড় বড় সঙ্গিরা এখান দিয়ে ক্রিপ্টোতে যাতায়ত করে কাউকে না জানিয়ে। পঞ্চাশ ফুট নিচে চলে গিয়ে এটা একশো নয় গজ সামনে এগোয়। চলে আসে রিইনফোর্স আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল দিয়ে মেইন এন এস এ কমপ্লেক্সের নিচে। ক্রিপ্টো আর এন এস এর যোগসূত্র এই এলিভেটরটার পাওয়ার আসে মূল কমপ্লেক্স থেকে।

স্ট্র্যাথমোর আগে থেকেই এটার অস্তিত্বের কথা জানে, জানে পাওয়ার সোর্সের কথা। কিন্তু সুসান বাইরে বেরোনোর জন্য অনেক চেষ্টা করা সত্বেও কথাটা ফাস করেনি কমান্ডার। এখনি সুসানকে বের করে দিতে চায় না সে। জানে না কতটা বললে সুসান এখানটায় থাকতে রাজি হবে।

স্ট্র্যাথমোরকে পাত্তা না দিয়ে সুসান চলে গেল ব্যাক ওয়ালের দিকে। আলোকিত বাটনগুলোর দিকে হামলে পড়ল সে সর্বশক্তিতে।

প্লিজ! ভিক্ষার সুরে বলল সে। কিন্তু খুলল না দরজা।

সুসান, লিফটে একটা পাসওয়ার্ড দিতে হয়।

পাসওয়ার্ড?

তাকায় সে প্যাডের দিকে। মূল বাটনগুলোর নিচে সেকেন্ডারি আরেকটা প্যাড আছে। প্রতিটা বাটনে একটা করে অক্ষর।

পাসওয়ার্ডটা কী?

হ্যাভ এ সিট।

লেট মি আউট! কমান্ডারের খোলা দরজার দিকে তাকায় সে।

আতঙ্কিত সুসান ফ্লেচারের দিকে তাকায় কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর। অফিসের দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে শান্তভাবে। দরজা পেরিয়ে এগিয়ে যায় সে অন্ধকারের দিকে। তাকায় সেখানে। হেলকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ভিতরে পা রেখে দরজা বন্ধ করে দিল স্ট্র্যাথমোর। দরজায় একটা চেয়ার ঠেকা দিয়ে চলে এল নিজের ডেস্কে। সেখান থেকে বের করল কিছু একটা। অন্ধকার অবস্থায় তাকায় সুসান হাতের দিকে। সেখানে একটা গান ধরা।

ঘরের মাঝামাঝি দুটা চেয়ার টেনে আনে স্ট্র্যাথমোর। বন্ধ দরজায় সে দুটাও লাগিয়ে দেয় সে। হাত থেকে বেরেটাটা নিয়ে স্থির করে লক্ষ্য। তাক করে হাল্কা খোলা দরজার দিকে। তারপর নামিয়ে রাখে কোলের উপর।

এরপর হাল্কা সুরে বলে, সুসান, আমরা এখানে নিরাপদ। কথা বলা দরকার। যদি গ্রেগ হেল ঐ দরজা ধরে আসে… কথাটাকে ঝুলে থাকতে দেয় সে।

কোন কথা যোগায় না সুসানের কণ্ঠে।

একবার তাকায় স্ট্র্যাথমোর তার দিকে, আরেকবার অন্ধকার অফিসের চারপাশে। পাশের সিটটা দেখায়। সুসান, বস। আমি তোমাকে কিছু বলব।

নড়ে না সুসান।

যখন আমার কথা শেষ হয়ে যাবে, এলিভেটরের পাসওয়ার্ডটা দিয়ে দিন তোমাকে। তুমিই সিদ্ধান্ত নিবে কী করতে হবে আর কী করতে হবে না।

অনেকক্ষণ নিরবতা চারধারে।

অন্ধকারেই সুসান এগিয়ে গেল স্ট্র্যাথমোরর পাশে। বসে পড়ল।

সুসান, আমি তোমার সাথে পুরোপুরি সত্যি কথা বলিনি।

অধ্যায় : ৭৩

ডেভিড বেকারের মনে হয় চোখে তারপিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকায় সে অনেক কষ্টে। মেয়েটা চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে হারিয়ে। তার পিছনটাই দেখা যায় শুধু। অর্ধেক পথ এখনো বাকি। তাকে কিছুতেই হারানো যাবে না।

চিৎকার করার চেষ্টা করে সে। কোনমতে বলে, নো!

কিন্তু আওয়াজটা গলা ছেড়ে বেরুতে পারছে না।

বেকার জানে, একবার দরজাটা পেরিয়ে যেতে পারলেই কর্ম সারা। আর কখনো তাকে ফিরে পাওয়া যাবে না। আবারো ডাক ছাড়ার চেষ্টা করে সে। এবারো কোন আওয়াজ ফোটে না।

. রিভলভিং ডোরের কাছে চলে গেছে মেয়েটা। পায়ের উপর ভর দিয়ে উঠে আসে বেকার। কোনক্রমে টলতে টলতে দাঁড়ায়। ছুটে যায় পিছনে পিছনে। বিশ গজ পিছনে সর্বশক্তি দিয়ে বেকার ছুটছে।

থাম! বলল সে, ওয়েট!

দরজায় চাপ দিচ্ছে মেয়েটা। সর্বশক্তি দিয়ে। বেশি জোর দেয়ার জন্য নাকি কে জানে, জ্যাম হয়ে গেল দরজাটা।

পিছনে এগিয়ে আসছে লোকটা।

আরো জোর দেয় সে। হাটু গেড়ে বসে সর্বশক্তিতে চাপ দেয়।

ডেভিড আরো জোরো ছুটছে। আস্তে আস্তে ঘুরছে রিভলভিং ডোরটা। মাত্র কয়েক গজ দূরে বেকার, এমন সময় চট করে আবার ঠিক হয়ে গেল দরজা। মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছে। তার জামার লাল বাড়তি অংশটা খুব দূরে নয়। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। এবং হারিয়ে গেল আঙুলটা। সেখানে কোন জামা ছিল না এক মুহূর্ত পরে।

মিস করেছে বেকার।

মেগান! চিৎকার করে উঠল সে, মেঝেতে পড়তে পড়তে। চোখের উপর যেন কেউ তীক্ষ্ণ সুই ফুটিয়ে দিয়েছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাত্রাতে থাকে সে এবার।

অন্ধকারে প্রতিধ্বণিত হচ্ছে আওয়াজটা। মেগান!

.

মাথার উপর ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের গুমগুম আওয়াজ শুনে মাথা তুলল সে। জানে না কতক্ষণ ধরে পড়ে আছে। আর সব আগের মতই। অন্ধকার আর নিরবতা চিরে দিয়ে একটা কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। মেঝে থেকে মাথাটা তোলার চেষ্টা করে। শব্দটা ভাজে ভাজে মিলে যাচ্ছে। যেন পানির কলকল আওয়াজ।

আবারো সেই কষ্ট।

মাথা তুলল সে। বিশ গজ দূর থেকে কেউ একজন ডাকছে তাকে।

মিস্টার?

কণ্ঠটা চিনতে পারে বেকার। সেই মেয়েটা। কনকোর্সের নিচে দাঁড়িয়ে আর এক দরজার পাশে থেকে কথা বলছে সে। এখন তাকে আগেরচে অনেক বেশি আতঙ্কিত মনে হয়।

মিস্টার? প্রশ্ন তুলল সে। কষ্ঠ কাঁপছে, আমি কখনো নামটা জানাইনি আপনাকে। কীভাবে আমার নাম জানলেন?

অধ্যায় : ৭৪

ডিরেক্টর লেল্যান্ড ফন্টেইন একেবারে পাহাড়ের মত মানুষ। তেষট্টি বছর বয়স। খুলি কামড়ে আছে মিলিটারি ছাটের চুল। কুকুতে চোখজোড়া আরো কালো হয়ে। যায় যখন সে বিরক্ত। আর বিরক্ত থাকে বেশিরভাগ সময়। এন এস এর সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে উঠে এসেছে সে যোগ্যতাবলে। একটু একটু করে। উপরের মানুষগুলোর আস্থাভাজন হয়ে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিতে সেই প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান ডিরেক্টর। কেউ কখনো সে কথাটা তুলবে না কারণ তার। রাজনীতি বর্ণান্ধ।

গুয়েতেমালান জাভা বানাতে এগিয়ে যায় সে। দাঁড় করিয়ে রাখে মিজ আর ব্রিঙ্কারহফকে। এরপর সে এসে বসবে। দাঁড়িয়ে থাকবে বাকি দুজন। এবার প্রশ্ন করবে তাদের সেভাবে, যেভাবে কোন স্কুলের বাচ্চাকে জেরা করে প্রিন্সিপাল।

মিজ কাজটা হাতে নিল। সেই সব সবিস্তারে খুলে বলল। দু একটা বিশেষ স্পর্শকাতর ব্যাপার বাদ দিল সেইসাথে।

ভাইরাস? আরো থমকে গিয়ে আরো ঠান্ডা সুরে বলল সে, তোমরা মনে করছ আমাদের উপর হামলে পড়েছে একটা ভাইরাস?

ঢোক গিলল ব্রিঙ্কারহফ।

ইয়েস, স্যার। সতেজে জবাব দিল মিজ।

কারণ স্রাথমোর গান্টলেটকে বাইপাস করেছে? সামনের প্রিন্টআউটের দিকে তাকায় সে।

জ্বি। এমন একটা ফাইল আছে সেখানে যেটাকে গত বিশ ঘন্টায় ভাঙা যায়নি!

ভ্রুকুটি করল ফন্টেইন, কিম্বা তোমাদের ডাটা বলছে এ কথা।

মিজ খেই হারাল না। ক্রিপ্টোতে ব্ল্যাকআউট চলছে।

এবার চোখ তুলল ফন্টেইন। বিস্মিত।

ছোট নড দিয়ে ব্যাপারটা কনফার্ম করল মিজ। সব পাওয়ার ডাউন হয়ে গেছে। জাব্বার মনে হল–

তোমরা জাব্বাকে কল করেছ?

ইয়েস, স্যার। আমি—

জাব্বা? এখনো ভেবে পায় না সে, কোন দুঃখে স্ট্র্যাথমোরকে কল করনি?

করেছি! আত্মরক্ষা করছে মিজ, বললেন সব ঠিক আছে।

উঠে দাঁড়ায় এবার ডিরেক্টর, তাহলে তার উপর সন্দেহ করার মত কোন কারণই নেই। কফিতে একটু চুমুক দেয় সে, এখন, ইফ ইউ উইল এক্সকিউজ মি, আমার কিছু কাজ করতে হবে।

মিজের চোয়াল স্কুলে পড়ল, আই বেগ ইউর পারডন?

ব্রিঙ্কারহফ এর মধ্যেই চোরের মত দরজার দিকে এগিয়ে গেছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মিজ।

আমি বলেছি গুডনাইট, মিস মিল্কেন, বলল ফন্টেইন, তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু–কিন্তু স্যার, আমাকে প্রতিবাদ করতে হবে। আমার মনে হয়

তুমি প্রতিবাদ করবে? দাবি করল ডিরেক্টর, কফির মগ নামিয়ে রেখে, প্রতিবাদটা আমি করছি। আমি প্রতিবাদ করছি আমার অফিসে তোমাকে ঢুকতে দেখে। তোমার আন্দাজ দেখে আমি প্রতিবাদ করছি। এ প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টর মিথ্যা বলছে এমন কথা বলেছ দেখে। আমি প্রতিবাদ

আমাদের একটা ভাইরাস আছে স্যার। আমার ইনস্টিংকট বলছে

যাক, তোমার ইনস্টিংকট ভুল, মিস মিল্কেন! একবারের জন্য তারা ভুল করছে!

কিন্তু স্যার, কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর গান্টলেটকে বাইপাস করেছেন!

উঠে দাঁড়িয়ে রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে এবার ডিরেক্টর। সেটা তার অধিকার। সেটা তার কাজ। আমি আপনাকে পে করি এ্যানালিস্ট আর সার্ভিস এমপ্লয়িদের উপর নজরদারি করার জন্য- ডেপুটি ডিরেক্টরের উপর স্পাইগিরির জন্য নয়। সে কাজে না নামলে আমরা এখনো পেন্সিল আর রাবার নিয়ে কোড ব্রেক করতাম! নাউ লিভ মি!

দরজার দিকে ফ্যাকাসেভাবে কাঁপতে থাকা ব্রিঙ্কারহফের দিকেও তাকায় সে, তোমাদের দুজনেই।

উইথ অল ডিউ রেসপেক্ট স্যার, মিজ বলল, আমি আপনাকে বলতে চাই একটা সিস-সেক টিম পাঠানো উচিত ক্রিপ্টোতে শুধু এ ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার জন্য যে–

আমরা এমন কোন কাজ করব না।

একটু চুপ করে থেকে মিজ বলল, ভেরি ওয়েল। গুড নাইট।

ফন্টেইন ঠিক ঠিক বুঝতে পারে তার কোন ইচ্ছাই নেই ব্যাপারটার পিছু ছাড়ার।

ব্রিঙ্কারহফ অবাক চোখে আর একবার তাকায় ডিরেক্টরের দিকে। অবাক চোখে। এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না এতবড় গরমিলের খবর পেয়েও শান্ত আছে ডিরেক্টর। এ তার ডিরেক্টর নয়। একেবারে আগাগোড়া খুটিয়ে দেখে লোকটা। মিলছে না।

ব্রিঙ্কারহফ জানে, ডিরেক্টর কিছু না কিছু লুকাচ্ছে। কী লুকাচ্ছে বোঝা যায় না। কিন্তু তাকে পে করা হয় এ্যাসিস্টের জন্য, প্রশ্ন করার জন্য নয়। আফসোসের কথা, মিজকে টাকা দেয়া হয় প্রশ্ন করার জন্য, এ কাজটা করতেই ক্রিপ্টোর দিকে যাচ্ছে সে।

দরজার দিকে যেতে যেতে মনে মনে বলে সে, রেজুমে বের করার সময় চলে এসেছে।

চ্যাড! পিছন থেকে খ্যাক করে উঠল ডিরেক্টর। ফন্টেইন দেখেছে মিজের চোখের ভাষা। আমাকে এ স্যুট থেকে বেরিয়ে যেতে দিও না।

নড করল ব্রিঙ্কারহফ। ছুটল মিজের পিছনে পিছনে।

.

. দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফন্টেইন মাথায় হাত গুজল। চোখদুটা ভারি। খুবি বড় একটা যাত্রা করে ফিরে এসেছে সে। অপ্রত্যাশিতভাবে। গত মাসটা লেল্যান্ড ফন্টেইনের কাছে অনেক প্রত্যাশায় ভরা ছিল। এন এস এ তে এসব ব্যাপার হচ্ছিল যা ইতিহাস পাল্টে দিতে পারে।

তিন মাস আগে জানতে পারে সে, কমান্ডার স্ট্র্যাথমোরের স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাচ্ছে। আরো জানতে পেরেছে, কাজ করছে কমান্ডার। অতিরিক্ত। ভেঙে পড়তে পারে সে যে কোন সময়। মতের অমিল হয়েছে অনেকবার, তবু ডিরেক্টর জানে, এন এস এর সবচে মেধাবী মানুষদের একজন এই স্ট্র্যাথমোর। অন্যদিকে স্কিপজ্যাকের ফাস হয়ে যাবার পর সে অনেক বেশি কষ্টে কাটায় সময়। এন এস এ তে স্ট্র্যাথমোরের অনেক চাবিকাঠি আছে চারপাশে, আর ডিরেক্টরকে একটা  সংস্থার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে।

এখন চোখ রাখার সময় এসেছে তার উপর আবার স্ট্র্যাথমোর অনেক বেশি ক্ষমতাবান। তার ক্ষমতার পাল্লা হাল্কা না করে সুরদিকে চোখ রাখতে হবে।

ফন্টেইন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্ট্র্যাথমোরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই, চোখ রাখার দায়িত্বটা স্বয়ং তাকে নিতে হবে। কমান্ডার স্ট্র্যাথমোরের ই-মেইলে একটা অদৃশ্য টেপ আছে। যদি কমান্ডার ভেঙে পড়ে তাহলে আগেভাগেই খবর পেয়ে যাবে ডিরেক্টর। কিন্তু তেমন কোন লক্ষণ নেই। আরো যেন কর্মঠ হয়ে উঠছে স্ট্র্যাথমোর।

সিদ্ধান্ত নেয় ডিরেক্টর, কাজ করছে স্ট্র্যাথমোর ১১০ পার্সেন্ট। আগের মতই স্মার্ট, চতুর, ধুরন্ধর, মেধাবী। এখন শুধু খেয়াল রাখার সময়। স্ট্র্যাথমোর একটা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এমন এক প্ল্যান, যেটায় নাক গলানোর কোন ইচ্ছা নেই ফন্টেইনের।

অধ্যায় : ৭৫

কোলের উপর রাখা বেরেটায় হাত বুলিয়ে নেয় স্ট্র্যাথমোর। রাগে রক্ত টগবগ কর ফুটছে। শান্ত থাকার জন্য প্রোগ্রাম করা আছে যেন তাকে। তবু শান্ত স্ট্র্যাথমোর। সুসান ফ্লেচারের উপর আঘাত করেছে গ্রেগ হেল, ব্যাপারটায় তার যতটা খারাপ লাগছে তারচে বেশি খারাপ লেগেছে নড় থ্রিতে সেই যেতে বলেছিল তা ভেবে। কম্পিউটারের মত শান্ত করে নেয় সে নিজেকে। সে এন এস এর ডেপুটি ডিরেক্টর অব অপারেশন। আজকের মত কঠিন দায়িত্ব এর আগে কখনো আসেনি।

শ্বাসটা গিলে ফেলে তাকাল সে, সুসান, তুমি কি হেলের ই-মেইল ডিলিট করে দিয়েছ?

না।

পাস-কিটা জানা নাছে?

মাথা নাড়ল সে।

ঠোঁট ঢিবিয়ে কোটায় স্ট্রামোর। ছুটে চলেছে মনটা বাজির ঘোড়ার মত। সে খুব সহজেই এলিভেটরের পাসওয়ার্ড দিয়ে চলে যেতে দিতে পারে সুসানকে। কিন্তু এখানে তাকে দরকার। খুব দরকার। এখন তাকে দিয়েই পাস কিটা পাওয়া সম্ভব। এটা আর প্রাতিষ্ঠানিক কোন ব্যাপার নয়। ট্রেসার পাঠাতে গিয়ে এর মধ্যেই নাকানি চুবানি খেয়েছে সে। আর কোন বিপদে পড়তে চায় না।

সুসান, আমি তোমার সহায়তা চাই। চাই তুমি হেলের পাস কি টা এনে দাও আমাকে।

কী?

মানুষের সাথে দর কষাকষির ব্যাপারে রীতিমত ট্রেনিং নিয়ে বিশেষজ্ঞ করে তোলা হয় এস এস এর মাথাদের। কিন্তু এখন যেন বেয়াড়া মেয়েটা কোন কথাই মানবে না।

সুসান, বসে পড়।

কায় কোন পরোয়া নেই।

বস! এবার আদেশ এল।

সুসান এখনো বসেনি, কমান্ডার, আপনার মনে যদি টানকাডোর কাজটা খতিয়ে দেখার কোন ইচ্ছা থাকে এখনো, সেটা আপনি নিজে করবেন। আমি এসবে আর নেই। বাইরে যেতে চাই, ব্যস।

মাথা একটু নামিয়ে রেখে ভাবে স্ট্র্যাথমোর। তাকে কোন না কোন ব্যাখ্য দিতে হবে এখন ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিল সে- সুসান ফ্লেচারকে সব জানাতে হবে।

সুসান, ব্যাপারগুলো এমন হবার কথা ছিল না। তোমাকে এমন কিছু বলতে হবে যা আগে বলিনি। কখনো কখনো আমার পজিশনের মানুষ… যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সে। কী করে নিজের দোষের কথা বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কখনো কখনো আমার পজিশনের মানুষ প্রিয়জনের কাছে মিথ্যা কথা বলে বাধ্য হয়ে। আজ তেমনি এক দিন। কষ্টের চোখ নিয়ে তাকায় সে, আমি যা তোমাকে বলছি, সেটা বলার কোন কারণ কখনো ছিল না। কারো কাছে বলার ছিল না সে কথাটা। কখনোই না।

কী কারণে যেন, সুসানের ভিতরে একটা শিতল ধারা বয়ে গেল। কমান্ডারের চোখেমুখে প্রচন্ড সিরিয়াস ভঙ্গি।

বসে পড়ল সুসান।

সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থেকে কথা শুছিয়ে নেয় স্ট্র্যাথমোর, সুসান, ভাঙা কন্ঠে বলে ওঠে সে, আমার কোন ফ্যামিলি নেই। এবার চোখ চলে গেল সুসানের দিকে, আমার এমন কোন জীবনসঙ্গি নেই যার সাথে সব শেয়ার করা যায়। আমার জীবনটা পরিণত হয়েছে এ দেশের জন্য ভালবাসায়। জীবন বলতে আমি বুঝি এন এস এসর জন্য কাজ করা।

একেবারে চুপ করে শুনে যাচ্ছে সুসান।

যতটা মনে হয় তুমি আন্দাজ করে নিয়েছ, বলে চলেছে সে, আমি খুব দ্রুত রিটায়ার করব। কিন্তু সেই অবসরটা নিতে চাচ্ছি গর্বের সাথে। অবসরটা তখনি নিব যখন দেখতে পাব যে একটা ফারাক গড়ে দিতে পেরেছি।

কিন্তু আপনি একটা ফারাক এর মধ্যেই গড়ে দিয়েছেন। সুসান টের পায়, বলছে সে, এর মধ্যেই জন্ম দিয়েছেন ট্রান্সলেটারকে।

যেন শুনতে পায়নি স্ট্র্যাথমোর, গত কয়েক বছর ধরে এখানে, এন এস এ তে আমাদের কাজগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এমন সব শত্রুর মুখোমুখি হয়েছি আমরা, এমন সব শত্রুর মোকাবিলা করেছি যাদের কথা চিন্তাও করিনি কয়েক তার বছর আগে। আমাদের নিজস্ব মানুষদের কথা বলছি। লইয়ার, সিভিল রাইট ফ্যানাটিক, ই এফ এফ- তারা সব সময় একটা কাজে লেগেছে আমাদের পিছনে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য কোথাও। মানুষ, সাধারণ মানুষ। তারা বিশ্বাস হারিয়ে বসেছে। কেমন যেন পাগলাটে হয়ে গেছে। হঠাৎ করে তাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে আমরা তাদের শত্রু। আমার তোমার মত সাধারণ সব মানুষ আমাদের পিছনে লেগেছে আদাজল খেয়ে। দেশটাকে রক্ষা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছে আমাদের। আমরা আর এখন পিসকিপার নই। এখন আমরা পিপিং টম, এখন আমরা চোর, মানুষের অধিকারের উপর নজর রাখা একটা সংস্থা। বড় করে একটা দম ফেলল স্ট্র্যাথমোর, এমন মানুষ ছড়িয়ে আছে পুরো দুনিয়ায়। তারা জানেও না আমরা না থাকলে পৃথিবী আস্তাকুরে পরিণত হতে পারত যে কোন সময়। বেধে যেতে পারত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাদের নিজেদের এই বিচিত্র ব্যাপার থেকে সেভ করার দায়িত্ব আমাদের উপরেই।

সুসান অপেক্ষা করছে মূল কথাটার জন্য।

ফ্লোরের দিকে আনতনয়নে তাকিয়ে থেকে চোখ তুলল ডিরেক্টর, সুসান, আমার কথাটা শুনে রাখ। তুমি আমাকে থামানোর চেষ্টা করবে কিন্তু আগে আমার কথাটুকু শুনে নাও। গত দু মাস ধরে আমি টানকাডোর ই-মেইল এনক্রিপ্ট করছি। বুঝতেই পারছ, যেদিন প্রথম নর্থ ডাকোটার কাছে পাঠানো ই-মেইলে ডিজিটাল ফোট্রেসের কথা পড়লাম তখন আমার অবস্থা কী হয়েছিল! প্রথমে আমি বিশ্বাসই করিনি। তারপর আস্তে আস্তে প্রতিটা চিঠিতে আরো খোলাসা হয়ে গেল ব্যাপারটা। আরো বিশ্বাস করতে লাগলাম আমি। যখন শুনলাম একটা রোটেটিং কি এ্যালগরিদমের জন্য সে মিউটেশন স্ট্রিং বানাচ্ছে তখন বুঝতে পারলাম সে আমাদেরচে অনেক আলোকবর্ষ দূরে। এ এমন এক কাজ যেটার চেষ্টা কেউ কখনো করেও দেখেনি।

কেন সে চেষ্টা করব আমরা? এ তো নেহাত পাগলামি।

উঠে দাঁড়াল স্ট্র্যাথমোর, পায়চারি করছে দরজার দিকে চোখ রেখে, কয়েক সপ্তাহ আগে আমি ডিজিটাল ফোট্রেসের কথা শুনলাম বাইরে। মেনে নিলাম, টানকাডো সিরিয়াস। জেনে গেলাম, যদি সে কোন জাপানি কোম্পানির কাছে সেটা বেচে দেয় তাহলে তল্পিতল্পা সহ ডুবে গেছি আমরা।

তাকে মেরে ফেলার কথাটা মনে আসেনি তা নয়। কিন্তু সে তখন হ্যাকারদের ধর্মগুরু। জাপানিদের গর্ব। সারা দুনিয়ায় ট্রান্সলেটারের ব্যাপারে কথা বলে বলে কানের পোকা বের করে দিয়েছে। এন এস এ কে একটা দানব হিসাবে উপস্থাপন করেছে। সবাই জানে, আমেরিকান এ সংস্থাটার শত্রু সে। সবাই জানে, এর পথ রুদ্ধ করে দেয়ার জন্যই সে ডিজিটাল ফোট্রেসের জন্ম দিচ্ছে। আমরা ফেসে যেতাম খুনের দায়ে। তুখনি আমার মাথায় চিন্তাটা এল। থামল সে, মনে হল, ডিজিটাল ফোট্রেসের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

সুসান তাকিয়ে আছে তার দিকে। হারিয়ে গেছে অন্য কোথাও।

বলে চলল স্ট্র্যাথমোর, তখনি আমার মনে হল ডিজিটাল ফোট্রেস হল সারা জীবনের সাধনা। আমার উপর ভূতের মত চেপে বসল চিন্তাটা। এ এক মহান আবিষ্কার। মাত্র কয়েকটা পরিবর্তন এনে নিলেই এ অনন্য প্রোগ্রাম আমাদের পক্ষে কাজ করবে, আমাদের বিরুদ্ধে নয়।

সুসান কখনো এমন আজব কথা শোনেনি। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস তাদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

যদি… যদি আমি সেই এ্যালগরিদমটায় একটু কাজ করতে পারি, রিলিজের আগেই…

চোখে চোখে আরো কী যেন বলার চেষ্টা করল সে সুসানকে।

এক মুহূর্তে বাকিটা পরিষ্কার হয়ে গেল।

সুসানের চোখের অবিশ্বাস্যতা দেখে সে আবার কথা বলে উঠল, আমরা যদি একবারের জন্য পাস-কিটা পাই, তাহলেই ছোট একটা মডিফিকেশনের সুযোগ চলে আসবে হাতের মুঠোয়।

এ ব্যাক ডোর। বলল সুসান। ভুলে গেল কমান্ডার তার সাথে মিথ্যা কথা বলেছিল। ঠিক স্কিপজ্যাকের মত।

নড় করল স্ট্র্যাথমোর, তখন আমরা ইন্টারনেট থেকে টানকাডোর পাঠানো কপিটাকে সরিয়ে দিয়ে আমাদেরটা বসিয়ে দিতে পারব সহজেই। যেহেতু ডিজিটাল ফোর্ট্রেস জাপান এ্যালগরিদম, কেউ আশাও করবে না এর পিছনে আমেরিকার কোন হাত আছে। আমেরিকা এখানে কোন ব্যাকডোর রেখেছে। আমাদের শুধু একটা সুইচ বানাতে হবে।

সুসান বুঝতে পারে, পরিকল্পনাটা দারুণ। ইউনিক। স্ট্র্যাথমোর এমন এক আনব্রেকেবল এ্যালগরিদম পাঠানোর পরিকল্পনা করছে পুরো পৃথিবীর বুকে যেটাকে মানুষ বিশ্বাস করবে যুগযুগ ধরে, যেটা বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করবে সবাই, যেটা দিয়ে এন এস এ সব কোড ভেঙে ফেলতে পারবে।

ফুল এ্যাকসেস, বলছে স্ট্র্যাথমোর, এক রাতেই সারা পৃথিবীর এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হবে ডিজিটাল ফোর্ট্রেস।

একরাতে? অবাক হল সুসান, কী করে আপনি আশা করেন যে এক রাতেই সারা পৃথিবীর মানুষ এটাকে ব্যবহার করবে? সবাই পেয়ে গেলেও আগে ব্যবহার করবে আগের পুরনো এ্যালগরিদম। কেউ নিজের অভ্যাস থেকে সরে আসতে চায় না। কী করে সবাই ডিজিটাল ফোট্রেসের কাছে চলে আসবে?

খুব সোজা। আমরা খুব সূক্ষভাবে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিব ট্রান্সলেটার নামে একটা কম্পিউটার আছে।

ঝুলে পড়ল সুসানের চোয়াল।

খুবি সাধারণ, সুসান। সত্যটাকে সবার সামনে একেবারে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে তুলে ধরব। জানিয়ে দিব যে এমন এক কম্পিউটার আছে এন এস এর যা। ডিজিটাল ফোট্রেস ছাড়া আর সব এ্যালগরিদমের বারোটা বাজাতে জানে।

তাহলে সবাই উঠে পড়বে-।

ডিজিটাল ফোট্রেসের নৌকায়। স্যরি, তোমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছিলাম। ডিজিটাল ফোর্ট্রেসকে রিরাইট করা অনেক ঝামেলার কাজ। অসম্ভবের কাছাকাছি। এক কাজে হাত দেয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার।

আ… আমি বুঝতে পারছি। আপনি খুব খারাপ কোন মিথ্যাবাদী নন।

এতক্ষণে মুখে হাসি ফুটল, বহু বছরের প্র্যাকটিস। মিথ্যা এমন এক ব্যাপার যা তোমাকে অনেক বড় বড় সমস্যার হাত থেকে বাঁচাবে।

আর কত বড় সমস্যা এটা?

দেখেই বুঝতে পারছ।

ভয় হচ্ছিল এ কথাটাই বলবেন আপনি।

শ্রাগ করল স্ট্র্যাথমোর, একবার ডিজিটাল ফোর্ট্রেসকে জায়গামত রেখে দিতে পারলেই জানাব ডিরেক্টরকে।

সুসান অবাক হল। স্ট্র্যাথমোর এক বিচিত্র পথে পৃথিবীর বুকে এমন বিপ্লব করে ফেলবে যেটার কথা জানে না আর কেউ। কল্পনাও করতে পারবে না। একা একা বিপ্লব! এখন আর তেমন কোন কাজ বাকি নেই। টানকাড়ো মারা গেছে। তার বন্ধু ধরা পড়ে গেছে পড়ে আছে ইঁদুরের ফাঁদে। আহত।

থামল সুসান।

টানকাডো মারা গেছে। আবার মনে পড়ে গেল তার, স্ট্র্যাথমোর খুব দক্ষ এক মিথ্যাবাদী। চোখ তুলল সে কমান্ডারের দিকে, আপনি এনসেই টানকাড়োকে মেরে ফেলেছেন?

অবাক হল স্ট্র্যাথমোর। মাথা নাড়ল সাথে সাথে। অবশ্যই না! তাকে মেরে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি সে বেচে থাকলে আরো ভাল। মৃত্যুর পর মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে ডিজিটাল ফোট্রেসের উপর। মূল পরিকল্পনা হল, প্রথমে সুইচ করে তারপর টানকাড়োকে সেটা বিক্রি করতে দেয়া।

সুসান না মেনে পারল না যে এ কথার যথেষ্ট মূল্য আছে। তার সন্দেহের কোন কারণ নেই যে ইন্টারনেটের ডিজিটাল ফোট্রেস বদলে যাবে। সে আর নর্থ ডাকোটা ছাড়া আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। পুরো প্রোগ্রামটাকে খতিয়ে দেখার আগে জানতেও পারবে না যে সেখানে একটা ব্যাকডোর থাকা সম্ভব। এত বেশি সময় ধরে সে এটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে যে সম্ভব হলে আর কখনো সে কাজ করবে না।

কমান্ডারের গোপনীয়তা আর কাজের ক্ষেত্রে কতট স্বাধীনতা দরকার তাও বুঝে ফেলল সে মুহূর্তে।

এবার বুঝতে পারছে কেন সে এতক্ষণ চালাল ট্রান্সলেটারকে। যদি ডিজিটাল ফোট্রেস সত্যি সত্যি এন এস এর নতুন বেবি হয় তাহলে সেটা আসলেই আনব্রেকেবল কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

এখনো বেরিয়ে যেতে চাও?

চোখ তুলে তাকাল সুসান। গ্রেট ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর বসে আছে সামনে, এ প্রায়ান্ধকার ঘরে। কেন যেন ভয়টা চলে গেল মন থেকে। একটা হাসি দিল সে চোখে চোখে তাকিয়ে। আমাদের পরবর্তী কাজটা কী?

থ্যাঙ্কস। আমরা দুজনেই নেমে যাব নিচে। তুমি হেলের টার্মিনালটা সার্চ করে দেখবে। আমি তোমাকে কাভার দিব।

আমরা কি টানকাডোর কপি সহ ডেভিডের কলের জন্য অপেক্ষা করব না?

মাথা নাড়ল স্ট্র্যাথমোর, যত দ্রুত আমরা কাজে নামছি তত ভাল। ডেভিড যে অন্য কপিটা পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সেখানে যদি আঙটিটা কোন ভুল হাতে পড়ে যায় তাহলেই দফারফা। আমরা এর মধ্যেই এ্যালগরিদমটার মুখ খুলে ফেলতে পারলে ভাল হয়। এরমধ্যে যারা ডিজিটাল ফোর্ট্রেস ডাউনলোড করবে তারা নিবে আমাদের কপি। হাতের গানটাকে নাড়ায় সে, আমাদেরকে আগে হেলের কপি পেতে হবে।

সুসান একেবারে চুপ করে থাকে। কমান্ডারের পয়েন্ট আছে সন্দেহ নেই। হেলের পাস-কি দরকার। যে কোন সময় হারিয়ে যেতে পারে সেটা। পেতে হবে এখনি।

সুসান উঠে দাঁড়ানোর সময় পা নড়বড় করছিল। আরো জোরে হেলকে আঘাত করতে পারলে ভাল হত। স্ট্র্যাথমোরের গানটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন তোলে, আপনি সত্যি সত্যি গ্রেগ হেলকে শুট করবেন?

না। বলল স্ট্র্যাথমোর, কিন্তু প্রার্থনা করা যাক সে যেন সেটা জানতে না পারে।

অধ্যায় : ৭৬

সেভিল এয়ারপোর্ট টার্মিনালের বাইরে একটা ট্যাক্সি বসে আছে নিথর হয়ে। মিটার চলছে এখনো। উজ্জ্বল টার্মিনালের ভিতরের দিকে তাকিয়ে আছে ওয়্যার রিম পরা প্যাসেঞ্জার। ভিতরটা দেখা যাচ্ছে। বিশাল বিশাল কাঁচ দেখা যায় এ পাশ থেকে। সময়মত এসেছে সে, জানে সেটা।

একটা ব্লন্ড মেয়েকে দেখেছে। চেয়ারে উঠিয়ে বসাচ্ছে মেয়েটা ডেভিড বেকারকে। বেকারের যে শারীরিক যন্ত্রণা হচ্ছে তা বোঝা যায় সহজেই। সে এখনো যন্ত্রণা কাকে বলে তা জানে না। ভাবে ট্যাক্সির যাত্রি।

মেয়েটা পকেট থেকে ছোট একটা কী যেন বের করে দিয়ে দিল তার হাতে। বেকার তুলে নিল সেটা। আলোয় ভাল করে দেখে নিল। তারপর পরিয়ে দিল আঙুলে। পকেট থেকে একতাড়া নোট বের করে দিয়ে দিল মেয়েটার হাতে। আরো কয়েক মিনিট কথা বলল তারা। তারপর হঠাৎ করেই মেয়েটা জড়িয়ে ধরল বেকারকে। চলে গেল সে দূরে কোথাও। অবশেষে, ভাবে লোকটা ট্যাক্সিতে বসে বসে, অবশেষে।

অধ্যায় : ৭৭

স্ট্র্যাথমোর নেমে এসেছে অফিস থেকে। গানটা ধরা সামনের দিকে। সুসান পিছনে পিছনে আসছে। ভেবে পায় না এখনো হেল টার্মিনালে আছে কিনা।

পিছনে মনিটরের আলো আলোকিত করে তুলেছে একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার ক্রিপ্টো ফ্লোরের বুককে, আংশিকভাবে। সেখানে বিশাল ছায়া পড়ছে দুজনের। সুসান আরো কাছে চলে আসে।

দরজা থেকে সরে যেতেই আলো ফিকে হয়ে এল। একেবারে অন্ধকার এসে গ্রাস করল তাদের। এখন আর কমান্ডারের মনিটরের আলো নেই। নিভে গেছে সেটা। ক্রিপ্টো ফ্লোরের আলো আসছে এখন মাথার উপরের নক্ষত্রমালা থেকে। ক্ষীণ আলো আসছে নড় থ্রি থেকে।

নেমে যাবার সময় বা হাতে নিয়ে নেয় স্ট্র্যাথমোর অস্ত্রটাকে। ধাপগুলো আন্দাজে না পেরিয়ে ডান হাতে রেলিং ধরে নামা অনেক ভাল। তার রিটায়ারমেন্ট পরিকল্পনার মধ্যে কোন হুইলচেয়ারের কথা নেই। ] ক্রিপ্টো ডোমের অন্ধকারে একেবারে অন্ধ হয়ে গেছে সুসানও। স্ট্র্যাথমোরের কাঁধে একটা হাত রাখে সে। দু ফুট দূর থেকেও কমান্ডারের আউটলাইন দেখা যাচ্ছে না। প্রতিটা ধাতব ট্রেডে যেতে যেতে সে প্রান্তসীমার জন্য পা বাড়ায়। এক একবার ভাবে সে, এখনি যাবে না নড থ্রিতে। কমান্ডার বলেছে হেল সাহস পাবে

কিছু করার। কিন্তু সুসান অতটা নিশ্চিত নয়। তার এখন দুটা মাত্র অপশন আছে- ক্রিপ্টো থেকে পাততাড়ি গুটানো নয়ত জেলে পচে মরা।

একটা কণ্ঠ মনের গহীন থেকে বারবার বলছে যে তাদের অপেক্ষা করা দরকার। ডেভিড কপিটা নিয়ে এলে, তা নিয়েই কাজ করা দরকার। কেন সে এত দেরি করছে? ভাবনা আর বাড়তে দিল না সে। চলে এল স্ট্র্যাথমোরের পিছনে।

এরপর আর মাত্র একটা ধাপ। নেমে এল তারা। টক করে আওয়াজ উঠল মেঝেতে। ডেঞ্জার জোনে চলে এসেছে তারা যে কোন জায়গায় থাকতে পারে হেল। যে কোন জায়গায়।

দূরে, ট্রান্সলেটারের পিছনে সেই জায়গা। নড় থ্রি। সুসান আশা করে এখনো হেল সেখানেই আছে। কুকুরের মত শুয়ে শুয়ে কুই কুই করছে।

অন্ধকারে ডান হাতে নিয়ে নিল স্ট্র্যাথমোর অস্ত্রটা। সামনে বাড়ল আরো জোরে। জোর খাটাল সুসানও। এখন যদি দূরে চলে যায় তাহলে কথা বলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাতে গ্রেগ হেল জেনে যেতে পারে তাদের। পজিশনের কথা।

পুরো বিশাল সমুদ্রটায় শুধু একটা আওয়াজ উঠছে। নিচের ইঞ্জিনের আওয়াজ। সাবধানে এগিয়ে যায় তারা। সুসান সর্বত্র শুধু মুখ দেখতে পায়।

ট্রান্সলেটারের দিকে অর্ধেক পথ পেরিয়ে যাবার পরই নিরবতা ভেঙে গেল। মাথার উপরে কোথাও কী যেন বিপ করে উঠল। সাথে সাথে সরে গেল স্ট্র্যাথমোর। সরে গেল সুসানও, কিন্তু আর পেল না কমান্ডারকে। সেখানে শুধুই বাতাস একটু আগেও যেখানে কমান্ডারের অস্তিত্ব ছিল।

বিপিংয়ের আওয়াজটা চলছেই। কাছে কোথাও। অন্ধকারেই ঘুরে যায় সুসান। কাপড়চোপরের আওয়াজ উঠল। থেমে গেল বিপিং। থামল সুসানও। এক মুহূর্ত পর, অন্ধকারের বুক থেকে একটা দৃশ্য উঠে এল; যেন তার ছেলেবেলার দুঃস্বপ্ন। তার সরাসরি সামনে একটা মুখ। ভূতুড়ে এবং সবুজ। অকল্যানের প্রতিমূর্তি যেন। নিচ থেকে কেমন একটা সবজে আলো আসছে।

লাফ দিল সুসান। সরে গেল অনেকটা।

নড়োনা! আদেশ দিল কণ্ঠ।

এক মুহূর্ত মনে হল, সে দেখছে গ্রেগ হেলকে ঐ চোখগুলোর ভিতরে। কিন্তু কণ্ঠটা হেলের নয়। স্পর্শটা একেবারে আলতো। স্ট্র্যাথমোর। পকেট থেকে বের করে কী দিয়ে যেন সে এ আলোটা তৈরি করেছে। স্ট্র্যাথমোরের হাত থেকে ইলেক্ট্রনিক একটা কিছু উঠে এসেছে। লেড থেকে আলো আসছে।

.

ড্যাম! আওয়াজ তুলল স্ট্র্যাথমোর, আমার নতুন পেজার।

হাতের তালুতে নতুন পেজারটায় চাপ দিল সে। সাইলেন্ট অপশনটা দিতে ভুলে গিয়েছিল। সামনের একটা দোকানে চলে গিয়ে ভাল টাকা দিয়ে এটাকে এ্যানোনিমাস করে কিনে এনেছিল সে কয়েকদিন আগে। সবাই জানে কী করে এন এস এ তাদের নিজেদের উপর চোখ রাখে। আর স্ট্রাগমোর তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোকে সরিয়ে রাখতে চায়।

সুসান চারপাশে তাকায় যেন এতক্ষণ হেল জানত না তাদের আসার কথা এবং এখন জানে।

কয়েকটা বাটনে চাপ দিয়ে স্ট্র্যাথমোর নতুন মেসেজটা দেখে। সেখানে আরো খারাপ একটা খবর এসেছে স্পেন থেকে। ডেভিড বেকারের কাছ থেকে নয়। সেভিলে সে আরেক যে পার্টিকে পাঠিয়েছে তার কাছ থেকে।

.

তিন হাজার মাইল দূরে। একটা মোবাইল সার্ভেল্যান্স ভ্যান অন্ধকার সেভিলের পথ ধরে ছুটে যাচ্ছে তীব্রবেগে। রোটার একটা মিলিটারি বেস থেকে আম্রা সিক্রেসিতে এটাকে এস এস এর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। ভিতরের দুজন খুবই উদ্বিগ্ন। তারা যে এই প্রথম ফোর্ট মিডাস থেকে আদেশ পাচ্ছে তা নয়। কিন্তু এত উপরের লেভেল থেকে এর আগে কোন আদেশ আসেনি।

হুইল ধরে থাকা এজেন্ট ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, আমাদের লোকটার কোন চিহ্ন?

ছাদ থেকে চোখ ফেরায় না দ্বিতীয়জন। না। ড্রাইভ করতে থাক।

অধ্যায় : ৭৮

কেবলের বিশাল জঞ্জালের নিচ থেকে জাব্বা ঘেমে নেয়ে একাকার হচ্ছে। মুখে একটা পেনলাইট ধরে গলদঘর্ম হচ্ছে সর্বক্ষণ।

আর মাত্র কয়েক ইঞ্চি। বলে সে নিজেকে। বন্ধের দিনেও এন এস এ তে তাকে প্রায়ই কাজ করতে হয়। এতটা সময় লাগবে ভাবেনি সে।

ধাতব জিনিসটাকে নামিয়ে আনবে সে এমন সময় হাতের সেলুলারটা বেজে ওঠে। ছলকে পড়ে কিছু গলিত সীসা।

লাফিয়ে ওঠে সে।

শিট! চিৎকার জুড়ে দেয়, শিট! শিট! শিট!

যে চিপটাকে সে ঠিক করার চেষ্টা করছিল সেটাই দড়াম করে আছড়ে পড়ে মাথার উপর।

গডড্যাম ইট!

ফোন এখনো বাজছে। কোন ভ্রূক্ষেপ নেই তার।

মিজ! বলে সে সেদিকে তাকিয়ে। ড্যাম ইউ! ক্রিপ্টো ভালই আছে!

মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে ফোনটা। থামবে না যেন কোনকালেও। এক মিনিট পর চিপটা জায়গামত বসিয়ে দেয়া হল। এখনো বেজে চলেছে সেটা আগের মতই।

ফর ক্রাইস্টস সেক, মিজ! ছেড়ে দাও ব্যাপরটাকে!

আরো পনের সেকেন্ড চেঁচামেচি করে থেমে গেল ফোনটা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল জাব্বা।

ষাট মিনিট পর মাথার উপরে ইন্টারকম তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। চিফ সিস-সেক কি দয়া করে মেইন সুইচবোর্ডের সাথে যোগাযোগ করবেন একটা মেসেজের জন্য?

অবিশ্বাসে চোখ মটায় জাব্বা। সে কিছুতেই হাল ছাড়ে না। ছাড়ে নাকি?

পেজটাও একেবারে অবহেলা করল সে।

অধ্যায় : ৭৯

স্ট্র্যাথমোর পকেটে স্কাই পেজারটা চালান করে দিয়ে এগিয়ে গেল নড থ্রির দিকে।

সুসানের হাতে চলে গেছে তার হাত, কাম অন।

কিন্তু সেই আঙুলগুলো আর কখনোই ছোয়নি তাকে।

অন্ধকার চিরে বীভৎস এক আওয়াজ উঠল। কোত্থেকে যেন এগিয়ে এল একটা ছায়ামূর্তি। এক ধাক্কায় ফেলে দিল কমান্ডারকে। পিছলে অনেকটা দূরে সরে গেল স্ট্র্যাথমোর। ক্রিপ্টো ফ্লোরে তার ঘষটে যাবার আওয়াজ ঠিক ঠিক শুনতে পেল সুসান।

পড়ে গেছে বেরেটা। সরে যাচ্ছে দূরে কোথাও।

সুসান নিথর দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর অন্ধকারেই মনটা বারবার বলল, সরে যাও। সরে যাও। রক্ষা কর নিজেকে।

চলে যেত, কিন্তু লিফটের পাসওয়ার্ড জানে না সে।

স্ট্র্যাথমোরকে সহায়তা করতে হবে। কীভাবে? দাঁড়িয়ে থেকেই এক সময় মৃদু শব্দ করল সুসান।

কমান্ডার?

এবং ভুলটা করল তখনি। কয়েক মুহূর্ত পর পিছনে একটা বিকট গন্ধ টের পেল সে। হেলের গায়ের গন্ধ।

জাপ্টে ধরল তাকে লোকটা। তার বুকে মাথা ঠেকিয়ে পিষে মারতে চাচ্ছে। একটুও শব্দ না করতে হলে এ পদ্ধতি দারুণ কার্যকর।

মাই বলস আর কিলিং মি! বলল হেল কানে কানে।

হাটু ভেঙে পড়ছে সুসান। মাথার উপর ঘুরছে ক্রিপ্টোডোম পেরিয়ে আসা নক্ষত্রলোকের আলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *