০৫০. ক্রিপ্টো সাবলেভেলস

অধ্যায় : ৫০

ট্রান্সলেটারের হালের মাত্র কয়েক গজ দূরে, ফিল চার্ট্রাকিয়ান একটা সাদা লেখার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ক্রিপ্টো সাবলেভেলস
অপোরাইজড পার্সোনেলস অনলি

সে জানে, সে আর যাই হোক, অথোরাইজড পার্সোনেল নয়। স্ট্র্যাথমোরের অফিসের দিকে একবার চকিতে তাকিয়ে নেয়। এখনো ঢাকনা নামানো। সুসান ফ্লেচারকে যেতে দেখেছে বাথরুমে। জানে, সুসান ঝামেলা পাকাতে পারবে না। একমাত্র চিন্তা গ্রেগ হেলকে নিয়ে। কে জানে ক্রিপ্টোগ্রাফার দেখছে কিনা!

আগের গালিটা ঝাড়ল সে।

নিল ডাউন করল সে। ফ্লোরে ঢুকিয়ে দিল চাবিটা। ঘুরিয়ে দিল। ক্লিক করে উঠল নিচের বোল্ট। কাঁধের উপর দিয়ে আরেকবার চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে টেনে ধরল দরজা। প্যানেলটা ছোট। তিন ফুট বাই তিন ফুট। খুব ভারি। খুলে যাবার পর সরে এল সিস-সেক।

মুখেচোখে গরম বাতাসের হল্কা এসে লাগে। সেইসাথে ফ্রেয়ন গ্যাসের তীব্র ঝাঁঝ। নিচের লাল ইউটিলিটি লাইট জ্বলে উঠেছে সাথে সাথে। উঠে দাঁড়াল চট্রাকিয়ান। কম্পিউটারের সার্ভিস এন্ট্রান্স বলে মনে হচ্ছে না পথটাকে। যেন জাহান্নামের চৌরাস্তা। প্ল্যাটফর্ম থেকে নিচের ফ্লোরে চলে গেছে একটা সরু মই। তার নিচে সিঁড়ির ধাপ। কিন্তু ভিতরে শুধু ঘুর্ণায়মান কুয়াশা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।

.

নড থ্রির ওয়ান ওয়ে গ্লাসের অপর প্রান্ত থেকে উঠে দাঁড়াল গ্রেগ হেল। সাবলেভেলের দিকে চার্ট্রাকিয়ানকে চলে যেতে দেখেছে সে।

দারুণ কাজতো! হেল মুখ ভেংচে দেয়। জানে, কোথায় গেছে চার্ট্রাকিয়ান। ট্রান্সলেটারের ইমার্জেন্সি ম্যানুয়াল এ্যাবোর্ট করা যায় শুধু ভাইরাসের আক্রমণ এলে। ইমার্জেন্সি এ্যাকশন উঠে এসেছে মেইন সুইচবোর্ডে। একজন সিস-সেক সেখানে যাবে সে ব্যাপারটা মানতে পারে না হেল।

নড থ্রি থেকে বেরিয়ে আসে হেল। এগিয়ে যায় ট্র্যাপডোরের দিকে। থামাতে হবে চার্ট্রাকিয়ানকে।

অধ্যায় : ৫১

জাব্বা যেন একটা দানর। নাটকীয় আকৃতির জন্য তাকে এ নাম দেয়া হয়েছে। এন এস এর রেসিডেন্ট গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেল সে। প্রতিষ্ঠানের সব কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তার উপরে।

ডিপার্টমেন্ট থেকে ডিপার্টমেন্টে, করিডোর থেকে করিডোরে ঘুরে বেড়ায় সে। ঘুরে বেড়ায় করিডোর থেকে করিডোরে। একটাই নীতি তার চিকিৎসা থেকে পূর্ব সাবধানতা ভাল। জাব্বার আমলে কোন এন এস এ কম্পিউটার ইনফেক্টেড হয়নি। ব্যাপারটাকে সে এমনি রাখতে চায়।

জাব্বার হোম বেসটা আসলে একটা ওয়ার্কস্টেশন। এন এস এ আন্ডারগ্রাউন্ডে একটা আল্টা সিক্রেট ডাটাব্যাঙ্ক। কোন ভাইরাস এলে সেখানেই আগে আক্রমণ হবে। বেশিরভাগ সময় সেখানেই ব্যয় হয় তার। এন এস এর সারা রাতের কমিশারিতে একটু খাবার চেখে দেখছে জাব্বা, নিয়েছে একটু বিরতি। সেলুলার ফোনটা বেজে ওঠার সময় সে তৃতীয় দফা খেতে বসেছিল।

গো। বলল সে, চিবাতে চিবাতে।

জাব্বা, মিজ বলছি।

ডাটা কুইন! বিশালদেহী লোকটা চিৎকার করে উঠল। মিজ মিল্কেনের জন্য তার মনে সব সময় একটু কোমল ভাব খেলা করে। সে খুব শার্প। আর জাব্বার সাথে তাল দেয় এমন কোন মহিলা নেই এক মিজ ছাড়া। হাউ দ্য হেল আর ইউ?

কোন আপত্তি নেই।

মুখ মুছে ফেলল জাব্বা, তুমি কাজে আছ?

ইয়াপ।

আমার সাথে একটা ক্যালজোন নিয়ে জয়েন করতে চাও?

জাব্বার ভাল লাগবে। কিন্তু আমি এখানে অন্য মাছি মারছি।

আসলেই? আমি যদি তোমার সাথে জয়েন করি মাইন্ড করবে নাতো?

তুমি খারাপ।

তোমার কোন ধারণাই নেই–

তোমাকে পেয়েছি, কপাল ভাল, বলল মহিলা, কিছু উপদেশ দরকার আমার।

ডক্টর পিপার গিলতে গিলতে বলল, শুট।

হয়ত কিছুই না। আবার অনেক কিছু হতে পারে। ক্রিপ্টোর স্ট্যাটে আজব ব্যাপার দেখা যাচ্ছে। আশা একটাই, তুমি হয়ত কিছুটা আলোকপাত করতে পারবে।

কী পেয়েছ?

একটা রিপোর্ট। ট্রান্সলেটার আঠারো ঘন্টা ধরে একই ফাইল চালাচ্ছে এবং এখনো ক্র্যাক করতে পারেনি।

সাথে সাথে গায়ে ছলকে পড়ল ডক্টর পিপার। তুমি কী…?

কোন আইডিয়া?

কীসের রিপোর্ট এটা?

প্রোডাকশন রিপোর্ট। বেসিক কস্ট এ্যানালাইসিস।

ব্রিঙ্কারহফ কী পেয়েছে সংক্ষেপে বর্ননা করল সে।

স্ট্র্যাথমোরকে কল করেছ নাকি?

হ্যাঁ। বলল ক্রিপ্টোর সব একেবারে ঠিক আছে। ট্রান্সলেটার কাজ করছে পূর্ণ শক্তিতে। বলল আমাদের ডাটাতেই গন্ডগোল থাকার কথা।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়? রিপোর্ট গ্লিচ করেছে। ভাবে একটু জাব্বা, তোমার কী মনে হয়? গ্লিচ করেনি?

তাই মনে হয়।

তার মানে স্ট্র্যাথমের মিথ্যা বলছে?

কথা সেটা না। আসলে এর আগে কখনোই আমার ডাটা ভুল আসেনি। দ্বিতীয় পথে চেষ্টা করার কথা ভাবছিলাম।

ওয়েল, বলল জাব্বা, তোমাকে হতাশ করার জন্য বলছি না, কিন্তু আমি নিশ্চিত গন্ডগোলটা ডাটাতেই।

তাই মনে কর?

আমার চাকরিটাকে বাজি ধরতে পারি। ট্রান্সলেটারের ভিতরে সবচে বেশি সময় নিয়েছে একটা ফাইল- তিন ঘন্টা। এর মধ্যেই ডায়াগনোস্টিক্স, বাউন্ডারি প্রোব আর সব ঝামেলা ছিল। আঠারো ঘন্টা ধরে অচল থাকার মানে একটাই। ভাইরাস। সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

ভাইরাস?

হ্যাঁ। রিডান্ড্যান্ট সাইকেল। কিছু একটা প্রসেসরে ঢু মেরেছে, বানিয়েছে লুপ, কাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

আসলে ব্যাপার অন্য কোথাও। স্ট্র্যাথমোর টানা ছত্রিশ ঘন্টায় ক্রিপ্টো ছেড়ে কোথাও যায়নি। কোন ভাইরাসের সাথে লড়ছে নাতো?

হাসল জাব্বা, স্ট্র্যাথমোর ছত্রিশ ঘন্টা ধরে সেখানেই পড়ে আছে? পুওর বাস্টার্ড! সম্ভবত স্ত্রী বলে দিয়েছে বাড়িতে যাওয়া যাবে না। বেচারার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে নাকি সে।

একটু থামে মিজ। এ কথাটা সেও শুনেছে। মহিলা প্যারানয়েড নয়ত?

মিজ, লম্বা আরো একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে বলল জাব্বা, স্ট্র্যাথমোরের খেলনাটায় যদি কোন ভাইরাস থেকেই থাকে তাহলে আমাকে কল করত সে। স্ট্র্যাথমোর দক্ষ, কিন্তু ভাইরাসের অ-আ-ক-খও জানে না। ট্রান্সলেটারই তার সবেধন নীলমণি। যদি সেখানে কোন নড়চড় হয় সাথে সাথে আতঙ্কে জমে গিয়ে প্যানিক বাটন চেপে ধরবে- আর এখানে তার একটাই মানে। আমি। মোজারেলায় লম্বা করে টান দেয় জাব্বা, তার উপর, ট্রান্সলেটারের গায়ে কোন ভাইরাস থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। গান্টলেটের মত প্যাকেজ ফিল্টার আমি আর একটাও লিখিনি। এর ভিতর দিয়ে খারাপ কিছুই যেতে পারবে না।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে মিজ দম ফেলল, আর কোন চিন্তা?

ইয়াপ! তোমার ডাটা নষ্ট।

তুমি আগেই বলেছ কথাটা।

ঠিক তাই।

এবার মুখ ঝামটা দিল মহিলা, তুমি কি কোন কিছুর বাতাস পাচ্ছ না? কোন কিছুই না?

এবার খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল জাব্বা, মিজ… শুনে রাখ। স্কিপজ্যাকের দিন চলে গেছে। এখন এসব ভাবার সময় নেই। নিরবতা দেখে একটু মোলায়েম হল তার কণ্ঠস্বর, স্যরি, মিজ। পুরো ব্যাপারটা আচ পেয়েছ তুমি, মানছি! আগে আগেই তুমি স্কিপজ্যাকের কথা বলেছিলে, ব্যর্থ হয়েছে স্ট্র্যাথমোর। সেসব অনেক আগের কথা। এখনো তাকে তুমি পছন্দ কর না। সেটাও সত্যি।

এর সাথে স্কিপজ্যাকের কোন সম্বন্ধ নেই। শান্তভাবে বলল সে।

হ্যাঁ, অবশ্যই, ভাবে জাব্বা, শোন, মিজ, স্ট্র্যাথমোরের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই কোন পথেই। আই মিন, লোকটা ক্রিপ্টোগ্রাফার. তারা আসলে সবাই আত্মকেন্দ্রীক মানুষ। তারা কাল তাদের ডাটা দিবে। প্রতিটা ডাটা ভবিষ্যতের পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।

তাহলে কী বলছ তুমি?

আমি বলছি আর সবার মত স্ট্র্যাথমোরও একটা সাইকো। কিন্তু এ কথাটাও সত্যি সে ট্রান্সলেটারকে নিজের স্ত্রীরচে অনেক অনেক বেশি ভালবাসে। কোন সমস্যা হলে সে আমাকে ডাকত তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তাহলে তুমি বলছ আমার ডাটাতেই যত গন্ডগোল?

কথাটার প্রতিদ্ধণি হচ্ছে নাকি প্রতিবার?

হেসে ফেলল বিগ ব্রাদারের চালক।

দেখ, মিজ, আমাকে একটা কাজের আদেশ দাও। তোমাদের মেশিনগুলো আবার চেক করে দেখার জন্য সোমবারে আসছি। এর মধ্যে আমাদের চলে যাওয়াটাই সবচে ভাল হয়। আজ শনিবারের রাত। বাসায় যাও, আরাম করে একটা ঘুম দাও বা আর যা করার ইচ্ছা কর।

দীর্ঘশ্বাস পড়ল এবার, চেষ্টা করছি, জাব্বা। বিশ্বাস কর, সে চেষ্টাই করছি।

অধ্যায় : ৫২

ক্লাব এমব্রুজো– ইংরেজিতে ওয়্যারলক- সাতাশ নাম্বার বাস স্ট্যান্ডের সামনে অবস্থিত। দেখে ড্যান্স ক্লাব মনে হয় না। চারধারে উঁচু দেয়াল। দেয়ালের উপরে ভাঙা বিয়ারের কাঁচ। যে কেউ যদি অবৈধভাবে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে পিছনে ফেলে যেতে হবে বেশ খানিকটা মাংস।

যাবার সময় ডেভিড বেকার নিজেকে ভালভাবে বুঝিয়েছে যে সব কাজে সব সময় পার পাওয়া যায় না। এবার স্ট্র্যাথমোরকে কল করে ব্যর্থতার খবরটা দিতে হবে। যতটা সম্ভব করেছে সে। এবার ঘরে যাবার পালা।

কিন্তু ক্লাবের প্রবেশপথের গাদাগাদি দেখে আশা ছাড়ল না সে কেন যেন। এত পাঙ্ক আগে কখনো দেখেনি একত্রে। সর্বত্র লাল-সাদা-নীল।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বেকার। অপশনগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছে মনে মনে। শনিবারের রাতে সে আর কোথায় থাকবে? নিজের ভাল ভাগ্যকে অভিশাপ দিতে দিতে নেমে গেল বাস থেকে।

ক্লাব এমব্রুজোর প্রবেশপথটা পাথুরে করিডোর। সরু।

আমার পথের বাইরে, হোঙ্কা! কনুই দিয়ে গুতা দিয়ে বলল এক পা ও পিছন থেকে।

নাইস টাই, বেকারের টাই ধরে কে যেন বেমক্কা টান মারল একটা।

ইয়ে করতে চাও? সেই পুরনো অশ্লীল কথাটা বলল আরেকজন। যেন মৃতের পুনরুত্থানে চলে এসেছে বেকার।

সামনে চওড়া একটা ঘর। পুরোটা জায়গা এ্যালকোহল আর গায়ের গন্ধে ভুরভুর করছে। বিচিত্র দৃশ্য। শত শত দেহ এক তালে দোলায়িত হচ্ছে। কাঁধে কাঁধে হাত। মাথাগুলো যেন একেবারেই নড়বড়ে। উপর থেকে তীব্র মিউজিক আঘাত হানছে সব সময়। মানুষের উত্তাল তরঙ্গায়িত সমুদ্র।

দূরে, উপরে উফারগুলো ধ্বক ধ্বক করছে। সবচে বড় নাচিয়েও সেটার ত্রিশ। ফুটের মধ্যে যেতে নারাজ।

যেদিকে তাকায় সে- শুধুই লাল-সাদা-নীল। শরীরগুলো এত বেশি জাপ্টাজাল্টি করে আছে যে কে কানে কী পরেছে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। ব্রিটিশ পতাকার কোন দেখা নেই। চিড়েচ্যাপ্টা না হয়ে সামনে যাবে সে ভাবনা ভাবাও দূরাশা। তার উপর পাশেই কে যেন হড়হড় করে বমি করছে।

লাভলি! ভাবে সে। স্প্রে দিয়ে পেইন্ট করা হলওয়েতে চলে যায় সে।

হলটা সরু আয়না বসানো টানেলে গিয়ে পড়েছে। শেষ মাথায় চেয়ার টেবিল পাতা। আরো কাছে গিয়ে দেখতে পায় গ্রীষ্মের আকাশ মাথার উপর। মিউজিকের পিলে চমকানো আওয়াজ আর নেই।

অবাক দৃষ্টিগুলোকে এড়িয়ে মিশে গেল বেকার আরেক জনসমুদ্রে। কাছের খালি টেবিলটায় ধপ করে একটা চেয়ার দখল করল সে টাইয়ের নটটা আলগা করেই। সকালে স্ট্র্যাথমোরের কলটা যেন এসেছিল অনেক কাল আগে। আজকালের কথা নয় সেটা।

টেবিল থেকে খালি বিয়ারের বোতলগুলো হাতে ঠেলে দিয়ে মাথা এলিয়ে দিল সে; মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য, ভাবতে ভাবতে।

.

কান্ট্রি রোড ধরে এগিয়ে আসছে একটা ফিয়াট ট্যাক্সি। পাঁচ মাইল দূরে ষ্ট্যাক্সিতে বসে আছে ওয়্যার রিমের লোকটা।

এমব্রোজো, বলল সে।

যাত্রিকে আরো একবার আয়নায় দেখে নিল ড্রাইভার। নড করল।

এমব্রোজো, নিজেকে শোনায় লোকটা, প্রতি রাতে বিচিত্র মানুষের সমাবেশ।

অধ্যায় : ৫৩

পেন্টহাউস অফিসে টকোগেন নুমাটাকা নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। শুয়ে আছে ম্যাসেজ টেবিলে। পার্সোনাল ম্যাসুস কাজ করছে ঘাড়ের উপর। শোল্ডার ব্লেডের উপর বাড়তি মাংসগুলোয় নরম আলতো হাত বুলাচ্ছে মেয়েটা। আস্তে আস্তে হাত চলে যাচ্ছে টাওয়েলে মোড়ানো নিজের অংশে।

আরো নেমে গেল হাত পিছলে চলে গেল তোয়ালের নিচে। নুমাটাকা খেয়াল করেনি তেমন। তার মন এখন অন্য কোথাও।

প্রাইভেট লাইনটা কখন বেজে উঠবে সে আশাতেই আছে। এখনো বাজেনি।

দরজায় নক করল কে যেন।

এন্টার। গরগর করে উঠল নুমাটাকা।

টাওয়েল থেকে হাত সরিয়ে নিল ম্যাসুস।

সুইচবোর্ড অপারেটর ঢুকেছে। সম্মানিত চেয়ারম্যান?

ম্পিক।

আবার বাউ করল অপারেটর, ফোন এক্সচেঞ্জের সাথে কথা বলেছি আমি। কান্ট্রি কোড ওয়ান থেকে এসেছে ফোনটা। ইউনাইটেড স্টেটস।

নুমাটাকা নড় করল। ভাল খবর। কলটা স্টেটস থেকে এসেছে! হাসল সে। জিনিয়াস।

ইউ এসের কোথা থেকে?

তারা ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করছে, স্যার।

ভেরি ওয়েল। আরো খবর পেলে জানিও।

আবার বাউ করে চলে গেল অপারেটর।

নুমাটাকা টের পায় মাসলগুলো হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। কান্ট্রি কোড ওয়ান। ভাল খবর-সন্দেহ নেই।

অধ্যায় : ৫৪

সুসান ফ্লেচার বাথরুমে ঢুকেই আস্তে আস্তে এক থেকে পঞ্চাশ পর্যন্ত গুণল। মাথা দপদপ করছে। আর কিছুক্ষণ, বলে সে নিজেকে, আর কিছুক্ষণ। হেলই নর্থ ডাকোটা।

হেলের প্ল্যান কী ভেবে পায় না সুসান। সে কি কোডটা এ্যানাউন্স করে দিবে? নাকি বিক্রি করার চেষ্টা করবে?

আর থাকতে পারছে না সে। সময় চলে এসেছে। যেতে হবে স্ট্র্যাথমোরের কাছে।

বাথরুম থেকে মাথা বের করে তাকায় ক্রিপ্টোর দূরপ্রান্তের কাঁচের দিকে। হেল এখনো দেখছে কিনা তা বোঝার কোন উপায় নেই। স্ট্র্যাথমোরের অফিসের যেতে হবে। দ্রুত। খুব বেশি তড়িঘড়ি করলে সমস্যা। বুঝে ফেলতে পারে হেল। দরজা খুলে বেরিয়ে আসার আগেই সে একটা কণ্ঠ শুনতে পায়। পুরুষ কণ্ঠ।

কণ্ঠগুলো আসছে ভেন্টিলেশন শ্যাফট দিয়ে। ফ্লোরের কাছ দিয়ে। দরজা খুলে ভেন্টের কাছে চলে গেল সে। নিচের জেনারেটরের গুমগুম শব্দে ঢাকা পড়ে যায় কণ্ঠ। মাঝেমাঝেই।

শব্দটা কি সাবলেভেল ক্যাটওয়াক থেকে আসছে? একটা কণ্ঠ বেপরোয়া। রাগান্বিত। ফিল চার্ট্রাকিয়ান নয়ত?

তুমি আমাকে বিশ্বাস করনা?

আরো গভীর কিছু শব্দ এল, উই হ্যাভ এ ভাইরাস!

এবার তীব্র আওয়াজ।

জাব্বাকে কল করতে হবে।

এরপর কোন শব্দ নেই একেবারেই।

লেট মি গো!

এরপর যে শব্দ এল সেটা ঠিক মানবীয় নয়। আতঙ্কে জমে গিয়ে কেউ এমন শব্দ করতে পারে। অত্যাচারে অত্যাচারে যেন মরে যাচ্ছে কোন জন্তু। ভেন্টের পাশে জমে যায় সুসান। শব্দটা তেমনি এলেবেলেভাবে শেষ হয়ে গেল যেভাবে শুরু হয়েছিল।

এরপর শুধুই নিরবতা।

একটু পরই হরর ছবির মত বাথরুমের আলো একটু ম্লান হয়ে গেল। স্নান হয়ে হারিয়ে গেল। সুসান ফ্লেচার দাঁড়িয়ে আছে।

দাঁড়িয়ে আছে নিঃসীম অন্ধকারে।

অধ্যায় : ৫৫

তুমি আমার সিটে বসে আছ, এ্যাসহোল!

অবাক হল বেকার। কেউ কি এ দেশে স্প্যানিশে কথা বলে না?

কামানো মাথাওয়ালা এক তীক্ষ্ণ চোখের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পাশে। মাথার অর্ধেকটা লাল, অর্ধেকটা লালচে। পচা ডিমের মত দেখাচ্ছে।

আই সেইড ইউ আর ইন মাই সিট, এ্যাসহোল।

প্রথমেই তোমার কথা শুনতে পেয়েছি।

উঠে দাঁড়ায় বেকার। খামাখা ঝগড়া বাধানোর কোন ইচ্ছা নেই তার। যাবার সময় হয়ে গেছে।

আমার বোতলগুলো কোথায় রেখেছ তুমি? আরো ভারি কণ্ঠে প্রশ্ন করল কিশোর। নাকে একটা রূপালি পিন।

সেগুলো খালি ছিল।

সেগুলো আমার ইয়ের মত খালি?

মাই এ্যাপোলোজিস।

তুলে আন সেগুলো!

চোখ পিটপিট করল বেকার, ইউ আর কিডিং, রাইট?

বেকারের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, ওজনে অন্তত পঞ্চাশ পউিট বেশি হবে ছেলেটারচে।

আমাকে কি ইয়ের কসম, ফাজলামি করছি মনে হয়?

কোন জবাব দিল না বেকার।

তুলে আন!

বেকার ঘুরে চলে যাচ্ছিল, পথরোধ করল বাচ্চা বাচ্চা ছেলেটা, আমি বলছি (নিখুঁত অশ্লীল গালি) তুলে আন সেগুলোকে!

মজা দেখার জন্য আস্তে আস্তে ঘুরে তাকায় আশপাশের পাঙ্কেরা।

তুমি কিন্তু আসলেই কাজটা করতে চাও না, কিড! ঠান্ডা সুরে বলল বেকার।

সাবধান করে দিচ্ছি শেষবারের মত। এটা আমার টেবিল। এখানে আসি প্রতি রাতে। এখন, ভালয় ভালয় তুলে আন সেগুলো!

এবার ছুটে পালাল বেকারের ধৈর্য। এখন কি তার স্মোকিতে সুসানের সাথে থাকার কথা নয়? সাইকোটিকদের সাথে এখানে, স্পেনে সে কী করছে?

হঠাৎ কী থেকে কী হয়ে গেল, হাতের নিচে হাত দিয়ে একটানে তুলে আনল সে পুচকে ছোঁড়াটাকে। দড়াম করে নামিয়ে আনল টেবিলে। দেখ, বোচা নাকের নরকের কীট! এখনি তোকে এখান থেকে ন্যাজ গুটিয়ে পালাতে হবে। একটু টেরবেটের দেখলে সোজা নাক থেকে সেফটি পিনটা খুলে এনে মুখ সেলাই করে দিব।

ছেলেটার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

একটা মুহূর্ত ধরে রেখে বেকার ছেড়ে দিল। ভয়ে কেচো. হয়ে যাওয়া ছেলেটার দিক থেকে এক বারের জন্যও চোখ না ফিরিয়ে উবু হয়ে বোতলগুলো তুলে আনল সে। তুলে আনল টেবিলে।

এবার কী বলবি তুই? প্রশ্ন তুলল বেকার।

কোন কথা নেই ছেলেটার মুখে।

ইউ আর ওয়েলকাম! বলল বেকার। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পথ চলতি বিলবোর্ড এই দুদিনের বাচ্চা! ভাবে সে।

গো টু হেল! চিৎকার করল ছেলেটা। এ্যাস ওয়াইপ?

নড়ল না বেকার। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেটা প্রতিরাতে : এখানে আসে। এখান থেকে কোন খবর বের করা যেতে পারে।

আই এ্যাম স্যরি, বলল বেকার বেসুরো মোলায়েম কণ্ঠে, তোমার নামটা জানা হল না।

টু-টোন। হিসহিস করল সে। যেন প্রাণঘাতী কোন অভিশাপ দিচ্ছে।

টু-টোন? মুখ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বেকার, আন্দাজ করতে দাও, ভোমার চুলের কারণে?

না, শিট। শার্লকের কারণে।

দারুণ নাম। তুমিই দিয়েছ?

ড্যাম স্ট্রেইট, বলল গর্বের সুরে, আমি এটাকে প্যাটেন্ট করে নিব।

তার মানে ট্রেডমার্ক করে নিবে?

একটু যেন দ্বিধায় পড়ে গেছে বাচ্চাটা।

নামের জন্য ট্রেডমার্ক বসানো হয়, বুঝিয়ে বলল বেকার, হাসি ঠেকাতে ঠেকাতে, প্যাটেন্ট নয়।

যাই হোক।

আশপাশের টেবিল থেকে আধমাতাল আধ ড্রাগ-এডিক্ট তরুণগুলো তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যালিয়ে। মজা নিচ্ছে।

নিজেকে ঝেড়ে উঠে বসল টু-টোন। সবার হাসির পাত্র হতে চায় না।

আমার কাছ থেকে কোন (আবার গালি) পেতে চাও?

একটু ভাবে বেকার। আমি চাই তোমার চুলগুলো ধুয়ে নিয়ে ভাষাটাকে আরো একটু মানুষ মানুষ ভাব দাও। নেমে যাও কোন না কোন কাজে। আখেরে কাজে দিবে। কিন্তু প্রথম দেখাতেই এত কিছু বলে দেয়া যায় না। আমার কিছু ইনফরমেশন দরকার।

… ইউ। দারুণ ইনফরমেশন, কী বল?

আমি একজনের খোঁজ করছি।

আই এ্যাইন্ট সিন হিম।

হ্যাভেন্ট সিন হিম। শুধরে দিল বেকার। ভাষা নিয়ে ফাজলামি বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না সে।

পাশ থেকে যেতে থাকা এক ওয়েট্রেসকে হাতের ইশারায় ডাকল বেকার। দুটা এ্যাগুলিয়া বিয়ার এনে একটা ধরিয়ে দিল টু-টোনের হাতে। যেন শক খেয়েছে ছেলেটা। একবার তাকায় বিয়ারের দিকে, আরেকবার বেকারের চোখে চোখে।

তুমি আমার উপর অত্যাচার চালাবে, মিস্টার?

একটা মেয়েকে খুজছি।

এবার বিচ্ছিরি একটা হাসি দিল টু-টোন খ্যাক খ্যাক করে, এমন এ্যাকশন ড্রেস নিয়ে কোন মেয়েকে পাবে না এটা দিব্যি করে বলতে পারি।

আমার এ্যাকশনের ইচ্ছা নেই মোটেও। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। হয়ত তুমি সহায়তা করতে পারবে।

ইউ এ কপ?

মাথা নাড়ল বেকার।

ইউ লুক লাইক এ কপ।

কিড, আমি মেরিল্যান্ড থেকে আসছি। আমি যদি পুলিশের লোক হতাম তাহলে এতোক্ষণে তুমি নাস্তানাবুদ হয়ে যেতে। এটুকু কি বুঝতে পারছ না।

প্রশ্নটা যেন আঘাত করল ছেলেটাকে।

আমার নাম ডেভিড বেকার। অফার করল বেকার।

সরে যাও, ফ্যাগ বয়।

বেকার হাতে হাত তুলে নিল।

আমি সহায়তা করতে পারি, কিন্তু খরচ হবে তোমার।

কত?

হান্ড্রেড বাক।

আমার কাছে শুধু পেসেতা আছে।

যাই থাক! এটাকে একশো পেসেতা বানিয়ে নাও।

ঝাঁকি খেল বেকার। কোথায় একশো বাক বা ডলার আর কোথায় একশো পেসেতা। একশো পেসেতার মূল্য মাত্র পঁচাত্তর সেন্ট। আমেরিকান কারেন্সিতে পচার পয়সা। বাইরের টাকার ব্যাপারে তার কোন ধারণাই। ডিল। বলল বেকার। টেবিলে রাখল বোতলটা।

ওকে। আমি মেয়েটার বর্ণনা দিচ্ছি। এখানেও থাকতে পারে সে। চুলের রঙ লাল-সাদা-নীল।

ঝামটা দিল টু-টোন। এটা জুডাস ট্যাবুর এ্যানিভার্সারি। সবাই।

তার গায়ে একটা ব্রিটিশ পতাকাওয়ালা টি শার্টও আছে। এককানে খুলির দুল।

টু-টোনের চেহারায় বিচিত্র ভাব খেলা করল। দেখেই বেকারের চোখেমুখে আশা ঝিকিয়ে ওঠে। একটু পরই টু-টোনের হাবভাব বদলে যায়।

বোতলটা ঠাস করে নামিয়ে রাখে টু-টোন। তারপর আকড়ে ধরে বেকারের কলার।

সে এ্যাডওয়ার্ডোর, এ্যাসহোল! আমি দেখে নিব! তুমি তাকে একটা ফুলের টোকা দিলেও খুন করে ফেলবে!

অধ্যায় : ৫৬

মিজ মিল্কেন অফিস ছাড়িয়ে কনফারেন্স রুমে রাগে গজগজ করতে করতে পায়চারি করছে। বিশাল কাঠের টেবিল ছাড়াও অত্যন্ত দামি আসবাবে সাজানো ঘরটায় পেইন্টিংও আছে বেশ কয়েকটা।

একগ্লাস পানি নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে মিজ।

তরলটা সিপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় সে। ভেনেশিয়ান ব্লাইন্ডের ভিতর দিয়ে চাঁদের আলো খেলা করছে টেবিলের উপর। তার প্রায়ই মনে হয় এটা ডিরেক্টরিয়াল অফিস হতে পারত, ফন্টেইনের সামনের কামরাটা নয়।

বাইরে সব দেখা যাচ্ছে। দেখা যায় পার্কিং লট, ক্রিপ্টোর গম্বুজটা তিন একর কৃত্রিম বনের মাঝ থেকে মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেটাও দেখা যায়। এমনভাবে সেটাকে বসানো হয়েছে পাইনের বনে যেন এন এস এর বেশিরভাগ জানালা থেকেই সেটা দেখা না যায়।

মিজের মাঝে মাঝে মনে হয় ডিরেক্টরিয়াল কনফারেন্স রুমটা কোন রাজার রাজ্য শাসনের দরবার হবার উপযুক্ত। ফন্টেইনকে এখানে অফিস নিয়ে আসার অনুরোধ জানালেও সোজা জবাব দিয়েছে ডিরেক্টর, পিছনে না।

ফন্টেইন এমন কোন লোক না যাকে পিছনদিকে পাওয়া যাবে।

মিজ তুলে ধরল ব্লাইন্ডগুলো। তাকাল পাহাড়ের দিকে। তারপর কেমন করে যেন দৃষ্টি চলে গেল ক্রিপ্টোর প্রতি। দিন বা রাত- সব সময় জ্বলজ্বলে একটা গর্বিত অবয়ব। কিন্তু আজ কী যেন একটা মিলছে না।

একেবারে শূণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

অবাক হয়ে হাতের শক্তি আরো বাড়িয়ে নিয়ে আবার তাকায় সে। সেখানে কিছুই নেই।

হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে ক্রিপ্টো।

অধ্যায় : ৫৭

ক্রিপ্টোর বাথরুমে কোন জানালা নেই। সুসান ফ্লেচারের চারধারে জাঁকিয়ে বসা অন্ধকারটা তাই একেবারে খাপে খাপ মিলে যায়। শান্ত হবার চেষ্টা করছে সে। চেষ্টা করছে নিজেকে ফিরে পেতে। কিন্তু মনের কোন গহীন থেকে যেন উঠে আসছে জান্তব একটা আতঙ্ক। ভেন্টিলেশন শ্যাফট থেকে ভেসে আসা বীভৎস চিৎকারটা এখনো ভেসে আছে শূণ্যে।

আতঙ্কে জমে গিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্যভাবে পায়চারি করে সে। পায়চারি করতে করতে বারবার ধাক্কা খায় একেকটা দরজার দিকে, একেকটা সিঙ্কের গায়ে। না পেরে শেষে মনোযোগ দিল। ভেবে বের করবে এ ঘরের ছবি। গার্বেজ ভরা ক্যানে ধাক্কা খেয়ে টের পেল, চলে এসেছে টাইলস লাগানো দেয়ালে। দেয়াল ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দরজার দিকে। চেষ্টা করছে হ্যাঁন্ডেলটার নাগাল পাবার জন্য। একটানে খুলে ফেলে বেরিয়ে এল ক্রিপ্টো ফ্লোরে।

দ্বিতীয়বারের মত জমে থাকল সেখানে।

মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে ক্রিপ্টো যেমন ছিল এখন আর তেমন লাগছে না। ট্রান্সলেটারের আলো চলে গেছে। চলে গেছে উপরের অটোম্যাটিক লাইট, এমনকি দরজাগুলোর কি প্যাডও জ্বলজ্বল করছে না।

সামনে তাকায় সুসান। আলো আছে। ট্র্যাপডোর থেকে আসছে সেটা। নিচের ইউটিলিটি লাইটিঙের স্নান, বিন্ন, লালচে আভা। সেদিকে ঘুরে গেল সে। বাতাসে ওজোনের হালকা গন্ধ।

কেন যেন ট্র্যাপড়োরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুসান যেভাবে পোকামাকড় এগিয়ে যায় আলোর দিকে। একেবারে কাছে চলে এল। উঁকি দিল নিচে। লালচে আলোর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাদাটে কুয়াশা। সুসান জানে ক্রিপ্টো চলছে। ব্যাকআপ পাওয়ারে। নিচে তাকায় সে। অবাক হয়ে যায় একটা অবয়ব দেখে।

নিচে হেলান দিয়ে আছে স্ট্র্যাথমোর।স্বয়ং কমান্ডার! তাকিয়ে আছে। ট্রান্সলেটারের আরো গভীরে।

কমান্ডার!

কোন জবাব নেই।

সিঁড়িতে নেমে যায় সুসান। স্কার্টের ভিতরে এসে হুড়মুড় করে ঢুকছে নিচের গরম বাতাস। মইয়ের ধাপগুলো পিচ্ছিল। গ্রেটেড ল্যান্ডিংয়ে নেমে আবার চিৎকার ছাড়ে।

কমান্ডার?

ঘুরছে না স্ট্র্যাথমোর। এখনো বিস্ময়ের ভাব তার চোখেমুখে। তাকিয়ে আছে একদিকে। অন্য কোনখানে মন নেই।

ব্যানিস্টারের দিকে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায় সুসান। প্রথমদিকে বাষ্পের ঝাক ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। তারপর সে দেখতে পায়। একটা গড়ন। ছ তলা নিচে।

আরো সরে যায় কুয়াশা। আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে গড়নটা। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের একটা জটিল আকার পড়ে আছে। পুরোপুরি কালো। এবড়োথেবড়ো। পড়ে আছে মেইন পাওয়ার সাপ্লাই জেনারেটরের উপর। ফিল চার্ট্রাকিয়ান।

পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সিস-সেকের তরুণ ছেলেটা।

কিন্তু একেবারে পাথর করে দেয়া গড়নটা চার্ট্রাকিয়ানের নয়।

আলো ছায়ার খেলার মধ্যে নিজের পেশীবহুল শরীরটা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে কেউ একজন।

গ্রেগ হেল।

অধ্যায় : ৫৮

বাচ্চামত ছেলেটা আরো ভীষণভাবে চোখমুখ পাকিয়ে বেকারকে শাসাচ্ছে, মেগান আমার বন্ধু এডোয়ার্ডোর! ওর কাছ থেকে দূরে থাকবে তুমি!

কোথায় সে?

.. ইউ।

জরুরি প্রয়োজন! হাত নাড়ল বেকার। বাচ্চাটার হাতা টেনে ধরল সে। সে আমার একটা আঙটি পরে আছে। আমি সেটার জন্য তাকে পে করব। অনেক!

টু-টোন এবার হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হল যেন, তুমি বলতে চাও ঐ বিকটদর্শন স্বর্ণের জিনিসটা তোমার?

দেখেছ?

নড করল টু-টোন।

কোথায় সেটা?

কোন ধারণা নেই। হাসল টু-টোন, মেগান সেটাকে হক করার জন্য এসেছিল এখানে।

মানে বিক্রি করার জন্য?

ভয় পেয়োনা, ম্যান। বেচতে পারেনি। জুয়েলারির ব্যাপারে তোমার স্বাদত খাসা! একেবারে শিটের মত।

তুমি নিশ্চিত? কেউ কিনেনি?

তুমি কি আমার উপর ইয়ে করছ? চারশো বাক? আমি বললাম বাবা ভালয় ভালয় পঞ্চাশ দিয়ে দিব। তাতে তার হবে না। প্লেনের টিকেট কাটার ধান্ধায় আছে। এখুনি।

কোথায় যাবার জন্য?

(আবার গালি) কানেক্টিকাটে। হাত ঝাড়ল টু-টোন, এ্যাডি বুমিন।

কানেক্টিকাট?

শিট, ইয়া। মা আর বাবার ম্যানশনে চলে যাবে পাততাড়ি গুটিয়ে। স্প্যানিশ ফ্যামিলির উপর মন উঠে গেছে তার থ্রি স্পাইক ভাইয়েরা কোন (আবার) সাহায্যেই আসতে পারছে না। একটু ইয়ের গরম পানিও নেই।

কখন যাচ্ছে?

টু-টোন চোখ পাকিয়ে তাকাল, কখন? হাসল সে, এরমধ্যে চলে গেছে। কয়েক ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। আঙটিটা ঝুলিয়ে দেয়ার সবচে ভাল জায়গা। ধনী ট্যুরিস্টে গিজগিজ করে কিনা! ক্যাশটা পেয়ে গেলেই উড়াল দিবে।

বেকারের শরীর বেয়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি উঠে আসছে। এটা অবশ্যই কোন না কোন অসুস্থ ঠাট্টা, তাই না? উঠে দাঁড়াল সে সাথে সাথে, তার লাস্ট নেম কী?

টু-টোন মাথা ঝাঁকিয়ে বসে থাকল।

কোন ফ্লাইট ধরে যাবে?

রোচ কোচ ধরনের কী যেন বলল।

রোচ কোচ?

হ্যাঁ। উইকএন্ড রেড আই সেভিল, মাদ্রিদ, লা গার্ডিয়া। এ নামেই ডাকে তারা। কলেজের ছেলেপেলে এটাতেই চেপে বসে কারণ এটা সস্তা। পিছনে বসে বসে গাঁজা টানে তাতে আর সন্দেহ কী?

গ্রেট! ভাবে বেকার। চুলের ভিতর দিয়ে একটা হাত চালিয়ে দিচ্ছে সে। কখন যাবার কথা?

রাত দুটায়। প্রতি শনিবার। এতক্ষণে আটলান্টিকের উপরে কোথাও ভাসছে সে।

বেকার ঘড়িটা চেক করে নেয়। একটা পয়তাল্লিশ। টু-টোনের দিকে বিভ্রান্ত

দৃষ্টিতে তাকায় সে। তুমি বলেছিলে এটা টু এ এম ফ্লাইট?

মনে হয় তোমাকে কেউ ইয়ে করেছে, বুড়ো হাবড়া?

কিন্তু এখন তো মাত্র পৌনে দুটা!

পাঙ্কটা নড় করল হাসতে হাসতে। ভোর চারটার আগে আমি সাধারণত এতটা নেশায় পড়িনা।

এয়ারপোর্টে যাবার সবচে দ্রুত রাস্তা কোনটা?

বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড।

বেকার পকেট থেকে একটা হাজার পেসেতার নোট বের করে নামিয়ে রাখল টেবিলে।

হেই ম্যান, থ্যাঙ্কস! বলল টু-টোন, যদি মেগানকে দেখ তাহলে বলো আমি হাই বলেছি।

কিন্তু শেষ কথাটা শোনেনি বেকার। চলে গেছে সে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে টু-টোন তাকায় ড্যান্স ফ্লোরের দিকে। ওয়্যার রিম গ্লাস পরা লোকটা যে তাকে ফলো করছে সেটা খেয়াল করেনি সে।

 ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে কোন গাড়ি নেই।

হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিবে বেকার এমন সময় দেখল সে ওয়াকি টকি হাতের কলার লোকটাকে।

ট্যাক্সি।

এত সকালে? জিজ্ঞেস করল লোকটা।

এখন রাত দুটা বাজে, সকাল হল কী করে?

তাইতো। ট্যাক্সি দরকার?

এখনি।

কথা বলল লোকটা ওয়াকিটকিতে।

বিশ মিনিট।

বিশ মিনিট?

আবার চেষ্টা করে কলার। গালভরা হাসি দিয়ে তাকায় বেকারের দিকে। পয়তাল্লিশ মিনিট!

ক্ষেপে গিয়ে হাত ছুঁড়ে দেয় বেকার শূণ্যে। পারফেক্ট!

ছোট একটা ইঞ্জিনের শব্দে ফিরে তাকায় বেকার। আওয়াজটা চেইন সর মত। একটা কমবয়েসি ছেলে অন্যদিকে পুরনো ভেসপা চালু করার চেষ্টা করছে।

তাকাল সে ভেসপার দিকে। আমি এ কাজ কী কবে করছি! নিজেকেই জিজ্ঞেস করে সে। আমিতো মোটরসাইকেল ঘৃণা করি।

হেই! আমার এয়ারপোর্টে যাওয়া দরকার।

ফিরেও তাকাল না ছেলেটা। তার পিছনসিটে মেয়ে বসেছিল একটা। স্কার্ট উঠে আছে অনেক উপরে। কোন ভ্রূক্ষেপ নেই তার।

দশ হাজার পেসেতা দিব।

ছেলেটা ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল।

বিশ হাজার!

তাকাল অবহেলায়। তারপর ইতালিয়তে কথা বলে উঠল।

আশায় ঝিকিয়ে উঠল বেকারের চোখের তারা। কড়া ইটালিয়ানে সেও জবাব দিল সাথে সাথে।

এয়ারপোর্টো! পার ফেভোরে! সুলা ভেসপা! ভেন্টি মাইল পেসেটে!

ভেন্টি মাইল পেসেটে? লা ভেসপা?

সিনকোয়ান্টা মাইল! ফিফটি থাউজ্যান্ড!

ইতালিয় ছেলেটা হেসে উঠল, ভো লা প্লাটা টাকা কোথায়?

পকেট থেকে তৎক্ষণাৎ পাঁচটা দশ হাজার পেসেতার নোট বের করল বেকার।

টাকার দিকে তাকাল ইটালিয়ান। তাকাল গার্লফ্রেন্ডের দিকে। টাকাটা খপ করে নিয়ে নিয়েই ব্লাউজে গুঁজে ফেলল মেয়েটা।

গ্রাজি! তাকাল ইতালিয়। তারপর ভেসপার চাবি ছুঁড়ে দিল বেকারের হাতে। তারপরই দুজনে হাত ধরাধরি করতে করতে চলে গেল বিল্ডিংয়ের ভিতরে।

থাম! চিৎকার করে উঠল বেকার, আমি শুধু একটা রাইড চাচ্ছিলাম। পুরো ভেসপা নয়!

অধ্যায় : ৫৯

সুসান হাত বাড়িয়ে দেয় কমান্ডার স্ট্র্যাথমোরের দিকে। উপরে উঠে আসে দুজনেই। নিচে পড়ে আছে চার্ট্রাকিয়ানের লাশ, এখানেই কোথাও পালানোর চেষ্টা করছে হেল। কোন সন্দেহ নেই, গ্রেগ হেলই ফেলে দিয়েছে চার্ট্রাকিয়ানকে।

ক্রিপ্টো নিজেই নিজের পাওয়ারে চলে। মেইন সুইচবোর্ড জানতেও পারবে না, ক্রিপ্টোর পাওয়ার বোর্ড। উঠে এসে সুসান সেই দরজাটার অন্ধকার কি-প্যাডে হাত চালায় খুলে ফেলার জন্য। একচুলও নড়ল না দরজা। বিশাল এই ক্রিপ্টোতে আটকা পড়ে আছে সুসান। বিশাল এক খাঁচা এটা। বিশাল।

মেইন পাওয়ার আউট হয়ে গেছে, বলল স্ট্র্যাথমোর, আটকা পড়ে গেছি আমরা।

ব্যাকআপ পাওয়ার সাপ্লাই করা হয়েছে ট্রান্সলেটারের জন্য। ফ্রেয়ন ঠিক না থাকলে আস্তে আস্তে যে তাপ সৃষ্টি হবে তা ভাবাও যায় না। ত্রিশ লাখ প্রসেসর যে

তাপ উঠিয়ে আনবে তা অনায়াসে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। গলিয়ে দিতে পারে সিলিকন চিপগুলোকে। এ কথাটা কেউ বিবেচনায় আনতে চায় না। পাগলের মত দরজার কি প্যাডে হাত নাড়ায় সুসান। না। কাজ হবে না। এ্যাবোর্ট রান!বলল সে। ট্রান্সলেটার যদি ডিজিটাল ফোট্রেসের খোঁজ করা শেষ করে তাহলেই হয়ত ভাল পাওয়ার পাওয়া যাবে।

ইজি, সুসান? কাঁধে হাত রাখে স্ট্র্যাখমোর। আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে।

এরপরই টের পায় সুসান। বাস্তবে চলে এসেছে সে। মনে পড়ে গেল কী বলার জন্য গিয়েছিল কমান্ডারের কাছে।

কমান্ডার, গ্রেগ হেলই নর্থ ডাকোটা। কথাটা যেন বুঝতে পারল না কমান্ডার। একটু চুপ করে থেকে বলল, কী যা তা বলছ?

হেল…ফিসফিস করল সুসান, হেলই নর্থ ডাকোটা।

ট্রেসার? ট্রেসার দিয়ে হেলকে ধরতে পেরেছ?

ট্রেসার ফিরে আসেনি। হেল সেটাকে এ্যালবার্ট করে দিয়েছে।

আশা করছে সুসান, সবকিছুর ব্যাখ্যা জানতে চাইবে স্ট্র্যাথমোর।

না। অসম্ভব। এনসেই টানকাডো কখনোই গ্রেগ হেলকে বিশ্বাস করতে পারে না।

কমান্ডার, এর আগেও স্কিপজ্যাকের কল্যাণে আমাদের ডুবিয়েছে গ্রেগ হেল। তখন থেকেই তাকে বিশ্বাস করে টানকাড়ো।

কোন কথা খুঁজে পাচ্ছেনা যেন স্ট্র্যাথমোর।

এ্যাবোর্ট ট্রান্সলেটার, মিনতি ঝরে পড়ল এবার সুসানের কণ্ঠে, আমরা নর্থ ডাকোটার সাথে আটকা পড়ে আছি। সিকিউরিটি ডাকুন। এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

স্ট্র্যাথমোর হাতে তুলে নিল হাত। যেন আরো একটু ভাবতে চায়।

ট্র্যাপডোরের দিকে তাকায় সুসান নার্ভাসভাবে। বরফের গায়ে আগুনের মত করে লালচে আলো এগিয়ে আসছে সেখান থেকে।

কামঅন, কল সিকিউরিটি! কমান্ডার, এ্যাবোর্ট ট্রান্সলেটার! গেট আউট অফ হিয়ার!

হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেল যেন স্ট্র্যাথমোর। ফলে মি! বলেই গটগট করে চলে গেল ট্র্যাপডোরের দিকে।

কমান্ডার, হেল ভয়ঙ্কর! সে-

কিন্তু অন্ধকারে হারিয়ে গেল স্ট্র্যাথমোর। পিছনে চলতে হবে, টের পেল সুসান। ট্রান্সলেটারের চারধারে একটা পাক খেয়ে চলে গেল সে ট্র্যাপডোরের দিকে। আগুন আগুন আলোর গর্তটায় চোখ রাখল।

অন্ধকারে দেখতে পেল না সুসান, শক্ত হয়ে উঠেছে স্ট্র্যাথমোরের চোখমুখ।

হাত এগিয়ে নেয় কমান্ডার। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। এবার কাজ করার পালা। নামিয়ে আনল সে ভারি পাল্লাটা। কান ফাটানো শব্দ উঠল নিরব ক্রিপ্টোতে।

ডালাটা নামিয়েই বাটারফ্লাই দিয়ে লক করে দিল সে সাবলেভেলকে। এখন কেউ চাইলেও ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। কিছুতেই না।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সুসান।

সে বা কমান্ডার ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর, কেউ শুনতে পায়নি পদশব্দ।

শব্দটা আসছে নড থ্রির দিক থেকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *