০৯০. আমেরিকান জেলখানার ছবি

৯০

আমি ধরা পড়ে গেছি, ক্রিস হার্পার ভাবলো। আমেরিকান জেলখানার ছবিটার কথা ভাবতেই হিমশীতল এক অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হলো সে। সিনেটর সেক্সটন জানে আমি পিওডিএস সফটওয়্যার নিয়ে মিথ্যে বলেছি।

ক্রিস হার্পার গ্যাব্রিয়েলকে আবার নিজ অফিসে ফিরিয়ে এনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

তহবিল তছরুপের প্রমাণ, হার্পার ভাবলো। ব্লাকমেইল। খুবই জঘন্য।

হার্পার কিছুক্ষণ পায়চারি করলো। গ্যাব্রিয়েল বসে আছে চুপচাপ। তার গভীর কালো চোখ লক্ষ্য রাখছে, অপেক্ষা করছে। গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ ভাবভঙ্গী একটু নরম করলো।

“মি: হার্পার, নাসা প্রধানের মতো শক্তিশালী শত্রুর মোকাবেলা করতে আপনার দরকার আরো শক্তিশালী মিত্রের। সিনেটর সেক্সটনই কেবল এ মুহূর্তে আপনার বন্ধু হতে পারেন। পিওডিএস সফটওয়্যারের মিথ্যে বলাটা দিয়ে শুরু করা যাক। আমাকে বলুন কী হয়েছিলো।”

হার্পার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে জানে সময় এসেছে সত্যি কথাটা বলার।পিওডিএস খুব ভালোভাবেই লঞ্চ করেছিলো, সে বলতে শুরু করলো। পরিকল্পনা মতো স্যাটেলাইটটা ঠিক কক্ষপথেই স্থাপিত করা গিয়েছিলো।”

গ্যাব্রিয়েলকে বিরক্ত বলে মনে হলো। এগুলো সে জানে।”বলুন।”

“তারপরই সমস্যা দেখা দিলো। অনবোর্ড সফটওয়্যারটা কাজ করলো না।”

“আ…হ।”

“ঐ সফটওয়্যারটা ছাড়া পুরো সিস্টেমটাই তো অচল। কোনো কাজে লাগবে না।”

“কিন্তু সফটওয়্যার যদি কাজই না করলো,” গ্যাব্রিয়েল বললো, “তবে তো পিওডিএস একেবারেই বেকার।”

হার্পার মাথা নেড়ে সায় দিলো। “পরিস্থিতিটা খুব মারাত্মক। কারণ এতে করে পিওডিএসটা মূল্যহীন হয়ে পড়লো। নির্বাচন এগিয়ে আসতে থাকলে সেক্সটন নাসার সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠতে থাকেন …” সে আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“আপনাদের ভুলটা নাসা এবং প্রেসিডেন্টের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিলো।”

“এটা ঘটলো একেবারে বাজে একটা সময়ে। নাসা প্রধানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। আমি তাকে স্থা দিলাম পরবর্তী শাটল মিশনেই এটা আমি সারিয়ে তুলবো। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেলো। তিনি আমাকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন– মনে হচ্ছিলো আমাকে বরখাস্ত করা হবে। সেটা একমাস আগের কথা।

“তারপরও আপনি টিভিতে হাজির হলেন দুই সপ্তাহ পর, আর ঘোষণা দিলেন যে আপনি সেটা সারিয়ে তুলেছেন।”

হার্পার আফশোস করতে লাগলো। একটা ভয়াবহ ভুল। সেদিন আমি নাসা প্রধানের কাছ থেকে একটা টেলিফোন পেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন যে, আমার ভুল শোধরানোর একটা উপায় আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অফিসে চলে এসে তার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাকে তখন বললেন যে, একটা সংবাদ সম্মেলন করে আমি যেনো ঘোষণা দেই যে পিওডিএস-এর সফটওয়্যার মেরামতের কাজ রু হয়ে গেছে, এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা তথ্য-উপাত্ত পেতে শুরু করব। তিনি আমাকে বললেন পরে আমার কাছে সব খুলে বলবেন।”

“আর আপনি রাজি হলেন।”

“না, আমি ফিরিয়ে দিলাম তাকে। কিন্তু একঘণ্টা বাদে তিনি আমার আফিসে ফিরে এলেন। সঙ্গে হোয়াইট হাউজের সিনিয়র উপদেষ্টাকে নিয়ে!”

“কি?” গ্যাব্রিয়েল যারপরনাই অবাক হলো। “মারজোরি টেঞ্চ?”

একটা কুৎসিত প্রাণী, হার্পার ভাবলো, মাথা নেড়ে সায় দিলো। “সে এবং নাসা প্রধান আমাকে বোঝালেন যে আমার ভুলের কারণে নাসা এবং প্রেসিডেন্টের পতন হতে যাচ্ছে। মিস টেঞ্চ আমাকে বললেন সেক্সটনের নাসা’কে প্রাইভেটাইজেশন করার পরিকল্পনার কথাটি। তারপর টেঙ্ক আমাকে বললেন কীভাবে সবকিছু আবার ঠিকঠাক করা যাবে।”

গ্যাব্রিয়েল সামনের দিকে ঝুঁকে বললো, “বলুন।”

“মারজোরি টেঞ্চ আমাকে জানালেন যে হোয়াইট হাউজ সৌভাগ্যবশত একটা বিশাল উল্কাখণ্ডের খবর ইন্টারসেপ্ট করতে পেরেছে, যা মিলনের বরফের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। এরকম উল্কাখণ্ড নাসার জন্য বিশাল একটা আবিষ্কার হতে পারে।”

গ্যাব্রিয়েলকে খুবই বিস্মিমত দেখালো। “দাঁড়ান, তাহলে আপনি বলছেন, পিওডিএস এর আগেই অন্য কেউ জানতো যে ওখানে উল্কাখণ্ডটি রয়েছে?”

“হ্যাঁ। এই আবিষ্কারের সাথে পিওডিএস-এর কোনো সম্পর্ক নেই। নাসা প্রধান জানতেন উল্কাখণ্ডটির অস্তিত্বের ব্যাপারে। তিনি কেবল আমাকে বলেছিলেন যে, আমি যেনো বলি পিওডিএস দিয়েই আবিষ্কারটা কার হয়েছে।”

আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন।

“তারা যখন আমাকে এই প্রস্তাবটি দিয়েছিলো, আমার প্রতিক্রিয়া ঠিক এরকমই ছিলো। তারা আমাকে এটা বলেনি কীভাবে উল্কাটা তারা খুঁজে পেয়েছে। টেঞ্চ বলেছেন এটা কোনো ব্যাপার নয়। তাদের কথা মতো কাজ করলে আমার দ্বারা যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। নাসা রক্ষা পাবে আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক সাফল্য পাবেন।”

গ্যাব্রিয়েল দাশ বিস্মিত হলো। আপনি নিশ্চয় দাবিকরবেন না যে পিওডিএস দিয়েই আবিষ্কাটা হয়েছে।”

হপার মাথা নেড়ে সায় দির। “সংবাদ সম্মেলনটি ছিল মিথ্যা। আমাকে জোর করে সেটা করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। টেঞ্চ আর নাসা প্রধান খুবই নির্মম ছিলেন।”

“তাই আপনি রাজি হয়ে গেলেন।”

“আমার এ ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।

“সেটা না করলে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। তাছাড়া আমি যদি সফটওয়্যারটা নিয়ে তালগোল না পাকাতাম তবে পিওডিএস-ই উল্কাখণ্ডটি খুঁজে পেতো। তাই, আমার কাছে মনে হয়েছিল এটা একটা ছোট্ট মিথ্যা।”

“একটা ছোট্ট মিথ্যার সাহায্যে উল্কা খণ্ডের ব্যাপারে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেয়া আর কি। গ্যাব্রিয়েল বললো।

হার্পার দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললো, “তাই … আমি সেটা করেছি। সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছি পিওডিএস ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পর আমি ইওএস-এর ডিরেক্টরের কাছে ফোন করে জানাই যে পিওডিএস মিলনে আইস শেফের মধ্যে বেশি ঘনত্বের একটা বস্তু ধরতে পেরেছে। আমি তাকে এও জানালাম যে বটার ঘনত্ব দেখে মনে হচ্ছে সেটা একটা উল্কাখণ্ডই হবে। রোমাঞ্চিত হয়ে নাসা সেখানে একটা দলকে পাঠিয়ে দেয় খনন কাজের জন্য। এরপরই অপারেশনটা উল্টা পাল্টা হতে শুরু করে।”

“তাহলে, আজ রাতের আগে আপনি জানতেন না যে, উল্কাখণ্ডের ভেতরে ফসিল রয়েছে?”

“এখানকার কেউই সেটা জানতো না। আমরা সবাই চমকে গেছি। এখন, সবাই আমাকে অপার্থিবজীব আবিষ্কারের নায়ক বলে অভিহিত করছে। আমি জানি না কী বলবো আমি।”

গ্যাব্রিয়েল অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো। “যদি পিওডিএস উল্কাটি খুঁজে না পেয়ে থাকে তবে নাসা প্রধান কীভাবে জানতে পারলেন যেখানে উল্কাখণ্ডটি রয়েছে?”

“অন্যকেউ ওটা প্রথমে খুঁজে পেয়েছিলো।”

“অন্য কেউ কে?”

হার্পার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “একজন কানাডিয়ান ভূতত্ত্ববিদ, নাম চার্লস ব্রফি– এলিসমেয়ার আইল্যান্ডের একজন গবেষক। তিনি তার যন্ত্রপাতি দিয়ে ওটা খুঁজে পেয়েছিলেন। তারপর বেতার যন্ত্রের সাহায্যে কাউকে সেটা বলেছিলেন, তখন নাসা তার। বার্তাটি ইন্টারসেপ্ট করে ফেলে।”

গ্যাব্রিয়েল তাকিয়ে রইলো, “তাহলে সেই কানাডিয়ান কি তার কাছে থেকে উল্কাখণ্ডটির তথ্য চুরি করার জন্য নাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না?”

“না,” হার্পার বললো, শীতল অনুভূতি হলো তার। তিনি এরপরই মারা গিয়েছিলেন।”

৯১

মইকেল টোল্যান্ড চোখ বন্ধ করে জি-ফোর প্লেনের ইজিনের শব্দ শুনতে লাগলো। সে ওয়াশিংটনে ফিরে যাবার আগে উল্কাখণ্ডের ব্যাপারে আর একটুও ভাবতে চাচ্ছে না। কর্কির মতে কন্ড্রুইলই নির্ধারণ করে দেয় উল্কা হওয়া বা না হওয়াটা। মিলনের পাথরবটি অবশ্যই উকাণ্ড। প্রমাণগুলোতে যতোই সন্দেহজনক কিছু থাকুক না কেন উল্কাটা দেখতে বিশ্বাসযোগ্যই মনে হয়।

তাই হবে।

রাচেল এখন একটা বিষয় নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছে– উকটা সত্য কিনা এবং কারা তাদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিলা।

ভ্রমণের বেশিরভাগ সময়েই রাচেল টোল্যান্ডের পাশে বসেছে। টোল্যান্ড তার সাথে কথা বলতে উপভোগ করে। কয়েক মিনিট আগে সে রেস্ট রুমে চলে গেছে। এখন টোল্যান্ড একা। সে ভাবলো কতোদিন সে নারীসঙ্গ থেকে বঞ্চিত আছে– সিলিয়া ছাড়া অন্য মেয়েদের সংস্পর্শ আর কি।

“মি: টোল্যান্ড?”

টোল্যান্ড মুখ তুলে তাকালো।

পাইলট তাদের কেবিনে উঁকি মেরে বললো, “আপনি আমাকে বলেছিলেন যখন টেলিফোন নেটওয়ার্কের আওতায় আসবো তখন আপনাকে সেটা জানাতে? আপনি চাইলে আমি আপনাকে সংযোগ দিতে পারি।”

“ধন্যবাদ।” টোল্যান্ড উঠে ককপিটের দিকে চলে গেলো।

ককপিটের ভেতরে, টোল্যান্ড তার জাহাজের ক্রুদের কাছে ফোন করলো। সে তাদেরকে জানাতে চায় যে, সে আরো দুএকদিন আসতে পারবে না। অবশ্য এখানে কী সমস্যা হচ্ছে সেটা তাদেরকে বলার কোনো উদ্দেশ্য তার নেই।

ফোনটা বার কয়েক বাজলো, টোল্যান্ড অবাক হলো একটা রেকর্ড করা মেসেজ শুনতে পেয়ে। এটা তার এক জ্বর কণ্ঠেই। তাকে জোকার হিসেবেই সবাই ডাকে।

“হিয়া, হিয়া, এটা হলো গয়া,”কটা বললো। “আমরা দুঃখিত, এখানে এখন কেউ নেই বলে। কিন্তু একটা বিশাল উকুন আমাদেরকে অপহরণ করেছে। আসলে আমরা কিছুক্ষণের জন্য উপকূলে গেছি মাইকের ফাটাফাটি প্রামাণ্যচিত্রটার জন্য উৎসব করতে। আমরা কি গর্বিত! আপনি আপনার নাম্বার এবং নাম রেখে দিতে পারেন আর হয়তো আমরা আগামীকাল

দ্র হয়ে ফিরে এসে এটা জানতে পারবোচিয়াও! ইটি এগিয়ে যাও!”

টোল্যান্ড হাসলো, তুরা নেই। তারা আনন্দ করতে উপকূলে গেছে। কিন্তু টোল্যান্ড ধারণা করলো তারা জাহাজটা অবশ্যই নিরাপদ কোথাও নোঙর করে গেছে। সেটা একেবারে খালি করে যাবে না।

টোল্যান্ড একটা কোড নাম্বার চাপলো, কোনো ভয়েস মেইল মেসেজ আছে কিনা জানার জন্য।একটা মেসেজ আছে। ঐ একই তুর গলা।

“হাই, মাইক, ফাটাফাটি শো! তুমি হয়তো ভাবছো আমরা কোথায়। আমরা শুকনো উৎসব করছি না, হে। তুমি ঘাবড়ে যেও না, তাকে আমরা খুব নিরাপদ জায়গাতেই নোঙর করেছি। ভয় পেও না, জাভিয়া জাহাজেই আছে। সে বলেছে সে একা একাই পার্টি করবে। তুমি বিশ্বাস করতে পারো?”

টোল্যান্ড খুশি হলো যে, জাহাজে অন্তত একজন আছে। জাভিয়া খুবই দায়িত্ববান, পার্টি ফার্টি ধরণের নয়। একজন শ্রদ্ধেয় মেরিন বায়োলজিস্ট জাভিয়া খুবই স্পষ্টভাষী সত্যবাদী মেয়ে।

জোকারটার কথা শেষ হলে কণ্ঠটা আবার ভেসে এলো। “ওহ্, হ্যাঁ, জাভিয়ার কথা বলছি। তোমার মাথা অতো ভালো না। সে তোমাকে পেঁদাবে। কি যেনো ভুল বলেছে প্রামান্যচিত্রে। এইতো, তার কথা শোনেনা।”

জাভিয়ার ধারালো কঠটা কোনো গেলো। “মাইক, জাভিয়া বলছি, তুমি একজন ঈশ্বর, ইয়াদা, ইয়াদা। যেহেতু আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই ঠিক করেছি তোমার এই জঞ্জালটাকে দেখাশোনা করি। সত্যি বলতে কী, আসল কারণ হলো এইসব পাগল-ছাগল, যাদেরকে তুমি বিজ্ঞানী বলে ডাকো, তাদের কাছ থেকে রেহাই পেতেই আমি জাহাজে রয়ে গেছি। যাহোক তোমার প্রামাণ্যচিত্রটা দারুণ হয়েছে, কিন্তু আমাকে বলতেই হচ্ছে তুমি তোমার প্রামাণ্যচিত্র একটা বু-বুকরে ফেলেছে। হ্যাঁ, আমার কথা শুনছো। সেটা হলো মাইকেল টোল্যান্ডের মস্তি ফের বিরল একটি পাদ। ভয় পেও না। এই পৃথিবীর মাত্র তিন জন ব্যাপারটা খেয়াল করেছে। তেমন কিছু না, উল্কার পেট্রোলজিতে ছোট্ট একটা ভুল। আমি এটা উল্লেখ করছি তোমার চমকর রাতটা বরবাদ করার জন্য। যাহোক, আমি টেলিফোনটা বন্ধ রেখেছি কারণ ঐ শালার সাংবাদিকরা সারা রাত ধরেই ফোন করে যাচ্ছে। তুমি তো আজ রাতে স্টার হয়ে গেছে, তোমার ছোট্ট ভুলটা সত্ত্বেও। যাইহোক, তুমি ফিরে আসলে সেটা নিয়ে কথা বলা যাবে। চিয়াও।”

লাইনটা বন্ধ হয়ে গেলো।

মাইকেল টোল্যান্ড ভুরু তুললো। আমার প্রামান্যচিত্রে একটা ভুল আছে?

.

রাচেল সেক্সটন জি-ফোর-এর রেস্ট রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলো। তাকে খুবই বিবর্ণ দেখাচ্ছে। ইউএসএস শার্লট-এর টুপিটা খুলে সে তার চুলটা ছেড়ে দিয়েছে। ভালো, সে ভাবলো, এবার নিজেকে নিজের মতো লাগছে।

রাচেল নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো, গভীর ক্লান্তি সেখানে। কেউ তোমাকে বলে দেবে না তুমি কি পার কি পারো না। তার মা’র কথা মনে পড়লো। মা কেউ আমাকে হত্যা করতে চাইছে। আমাদের সবাইকে।

কিন্তু কে করতে পারে তা নিয়ে রাচেলের মনে অনেকক্ষণ ধরেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে।

লরেন্স এট্রম … মারজোরি টেঞ্চ… প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি।

সবারই উদ্দেশ্য আছে, সবারই জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জড়িত নন, রাচেল নিজেকে বললো। আশা করলো যে, যে প্রেসিডেন্টকে সে তার নিজের বাবার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা করে তিনি নির্দোষ। এই রহস্যময় ঘটনার একজন দর্শক মাত্র।

আমরা এখনও কিছুই জানি না।

না জানি কে … না জানি কেন …

রাচেল রেস্ট-রুম থেকে ফিরে এসে টোল্যান্ডকে সিটে না দেখে অবাক হলো। কর্কি পাশে বসে ঝিমোচ্ছে। রাচেল দেখলো মাইক ককপিট থেকে রেডিও ফোন নতে শুনতে বের হচ্ছে। তার চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

“কি হয়েছে?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো।

টোল্যান্ড যখন তার ফোন মেসেজের কথাটা রাচেলকে জানালো তার কণ্ঠটা খুব ভারি কোনোচ্ছে।

তার প্রামান্যচিত্রে একটা ভুল আছে?

রাচেলের মনে হলো টোল্যান্ড খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। হয়তো সেটা কিছুই না। “ভুলটা কি সেটা কি সে নির্দিষ্ট করে বলেছে?”

উল্কার পেট্রোলজিসংক্রান্ত।”

“পাথরের গঠন?”

যা। সে বলেছে এটা কেবল হাতে গোনা দুয়েকজন ভূতত্ত্ববিদই খেয়াল করেছে।”

রাচেল একটা দম নিয়ে নিলো। এবার সে বুঝতে পারলো। কন্ড্রুইল?”

“আমি জানি না। কিন্তু মনে এটা হচ্ছে খুব কাকতালীয় ব্যাপার।”

কর্কি চোখ ঘষতে ঘষতে তাদের কাছে এলো।”কী হয়েছে?”

টোল্যান্ড তার দিকে তাকালো।

কর্কি তার মাথা ঝাঁকালো। কন্ড্রুইল নিয়ে তো সমস্যা হচ্ছে না, মাইক। তা হতে পারে। তোমার সব ডাটাই তো নাসা থেকে এবং আমার কাছ থেকে এসেছে। এটা নিখুঁত।”

“আমি তাহলে আর কোনো পেট্রোলজিক ভুলটা করেছি?”

“সেটা কে জানে? তাছাড়া, একজন মেরিন জিওলজিস্ট কইলের ব্যাপারে কী জানবে?”

“আমার কোনো ধারণা নেই, কিন্তু সে যথেষ্ট তীক্ষ্ণবৃদ্ধির মেয়ে।”

“আমার মনে হয় ডিরেক্টর পিকারিংয়ের সাথে কথা বলার আগে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার।”

টোল্যান্ড কাঁধ ঝাঁকালো। আমি তাকে চার বার ফোন করেছি, মেশিন ছাড়া আর কেউ জবাব দেয়নি। সে হয়তো হাইড্রোল্যাব-এ আছে, ফোনের রিংয়ের শব্দ শুনতে পারছে না। সকালের আগে তো সে আমার মেসেজটা পাবেও না।” টোল্যান্ড থামলো, ঘড়িটা দেখলো। “যদিও ..”

“যদিও কি?”

টোল্যান্ড তার দিকে চোখ রাখলো। “তোমার বসের সাথে কথা বলার আগে জাভিয়ারের সঙ্গে কথা বলার কতটুকু দরকার আছে বলে মনে কর?”

“সে যদি কন্ড্রুইল সম্পর্কে কিছু বলতে পারে? আমি বলবো এটা জানা খুবই দরকার, মাইক।” রাচেল বললো। “যেই মুহূর্তে আমরা সব ধরণের স্ববিরোধী ডাটা পেয়ে যাবে তখনই কেবল পিকারিং আমাদেরকে একটা ভালো জবাব দিতে পারবেন। তার সাথে দেখা করার সময় কিছু জোড়ালো প্রমাণ নিতে পারলে তার জন্যেও কাজ করতে সুবিধার হবে।”

“তাহলে আমাদেরকে একটু থামতে হবে।”

“তোমার জাহাজে?” রাচেল বললো।

“সেটা নিউজার্সির উপকূলে আছে। ওয়াশিংটনে যাবার পথেই পড়বে। কর্কির কাছে উল্কাখণ্ডের একটা নমুনা রয়েছে, জাভিয়ার সেটা পরীক্ষা করেও দেখতে পারবে। জাহাজে চমৎকার একটা ল্যাব রয়েছে। আমার ধারণা সঠিক উত্তরটা পেতে এক টার বেশি লাগবে না।”

রাচেলের খুবই উদ্বিগ্ন বোধ হতে লাগলো। আবারো সমুদ্রের মুখোমুখি হওয়াটা ভীতিকাই তার জন্যে। একটা গ্রহনযোগ্য উত্তর, সে নিজেকে বললো। সম্ভাবনার আলো দেখতে পেলো সে। পিকারিং নিশ্চিতভাবেই একটা উত্তর চাইবে।

৯২

ডেল্টা-ওয়ান শক্ত মাটিতে ফিরে এসে খুশি হলো।

অনোর এয়ার ক্রাফটটা যদিও তার অর্ধেক শক্তিতে চলেছে, তারপরও মাত্র দুঘন্টাতে সমুদ্রের উপর দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে এসেছে। এতে করে ডেল্টা ফোর্স কন্ট্রোলারের অনুরোধে বাড়তি আরেকটা খুন করার সময় পেয়ে গেলো অনায়াসে।

এখন ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে, একটি প্রাইস্টে মিলিটারি রানওয়েতে, ডেল্টাফোর্স অরোরা ছেড়ে তাদের নতুন একটা বাহনে উঠে পড়লো– ওএইচ-৫৮ডি কিওয়া যুদ্ধ হেলিকপ্টার।

আবারো, কন্ট্রোলারের আয়োজন খুব সেরাই বলা যায়, ডেল্টা-ওয়ান ভাবলো।

আসলে কিওয়া হেলিকপ্টারের ডিজাইন করা হয়েছিলো লাইট অবজারভেশন হেলিকপ্টার হিসেবে, সেটাকে বড় করে, উন্নত সংস্করণ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে করে মিলিটারি আক্রমণ পরিচালনা করা যায়। কিওয়াতে লেজার গাইড প্রেসিশন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন আকাশ থেকে আকাশে স্ট্রিংগার মিসাইল এবং এজিএম-১১৪৮ হেলোফায়ার মিসাইল সিস্টেম। একসাথে ছয়টি টার্গেটে আক্রমণ চালাতে পারে এটি। খুব কম শক্রই আছে যারা। খুব কাছ থেকে এটাকে দেখার পর এটার গল্প বলার জন্য বেঁচে থাকে।

ডেল্টা-ওয়ান রোমাঞ্চ অনুভব করতে করতে কিওয়ার পাইলটের সিটে বসে গেলো। এটা চালানোর প্রশিক্ষণ তার আছে। তিন বার এটা দিয়ে সে গোপন অপারেশন করেছে। অবশ্য, কখনই সে প্রখ্যাত আমেরিকান অফিশিয়ালকে আক্রমণ করেনি। তার মনে হলো আজকের কাজের জন্য কিওয়া খুবই যথার্থ হয়েছে। এটার রোলস রয়েস এলিসন ইনজিন আর টুইন ব্রেড ‘নিরবে চলে, যাতে করে মাটিতে থাকা টার্গেট টেরই পায় না। আর এয়ার ক্রাফটা কোনো আলো ছাড়াই উড়তে পারে, এতে কালো রঙ পেইন্ট করা এবং কোনো লেখা টেখা নেই বলে এটা রাডার ছাড়া প্রায় অদৃশ্যই মনে হয়।

নিঃশব্দ কালো হেলিকপ্টার।

ষড়যন্ত্রকারী তাত্ত্বিকেরা এটা বলে যে নীরব কালো হেলিকপ্টারের আবিষ্কার বলে দেয় নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ঝটিকা বাহিনী যে রয়েছে এটা তারই প্রমাণ। এটা জাতিসংঘের অধীনে রয়েছে। অন্যেরা বলে এটা ভিন গ্রহের প্রাণীদের প্লেন। আর রাতের আকাশে এটাকে যারা দেখেছে তারা দাবি করে এটা নির্ঘাৎ ফ্লাইং-সসার বা উড়ন্ত পিরিচ–বহির্জীবদের নভোযান।

সব ভুল। কিন্তু সেনাবাহিনী এসব বিচিত্র চিন্তা ভাবনাকে পছন্দ করে। সাম্প্রতিক এক গোপন মিশনে ডেল্টা-ওয়ান কিওয়া কপ্টার ব্যবহার করেছিলো, যাতে সংযুক্ত করা হয়েছিলো অতি আধুনিক একটি প্রযুক্তি– হোলোগ্রাফিক অত্র, যার ডাক নাম এসএ্যান্ড এস। এসএ্যান্ডএস অর্থ হলো স্মোক এ্যান্ড মিরর, মানে ধোঁয়া এবং আয়না– একটি হলোগ্রাফিক। ছবি শত্রুর এলাকার আকাশে প্রক্ষেপ করলে বিমান বিধ্বংসী কামান দিয়ে শক্রর দল ভীত হয়ে গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের গোলাবারুদ এভাবে ভৌতিক কোনো বস্তুতে নিঃশেষ হবার পর আমেরিকা ওখানে আসল জিনিস পাঠায়।

ডেল্টা-ওয়ান এবং তার লোকেরা রানওয়ে থেকে উঠতে শুরু করতেই কন্ট্রোলারের কণ্ঠটা শুনতে পেলো নো। তোমাদেরকে আরেকটি টার্গেট ধরতে হবে। তাদের এই নতুন টার্গেটটার পরিচয় জেনে তারা ভড়কে গেছে। তারপরও কোনো প্রশ্ন করা তাদের কাজ নয়। তার দলটিকে একটি আদেশ দেয়া হয়েছে, আর তারা সেটা ঠিক ঠিক পদ্ধতিতেই বাস্তবায়ন করবে। পদ্ধতিটা খুবই ভয়ংকর।

আশা করি কন্ট্রোলার নিশ্চিত এটাই সঠিক কাজ।

কিওয়াটা শূন্যে উঠতেই ডেল্টা-ওয়ান দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে যাত্রা করলো। সে জীবনে মাত্র দুবার এফডিআর মেমোরিয়াল দেখেছে। কিন্তু আজই প্রথম সেটা আকাশ থেকে দেখবে।

৯৩

“উল্কাপিণ্ডটা আসলে এক কানাডিয়ান ভূ-তত্ত্ববিদ আবিষ্কার করেছিলেন?” গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ তরুণ প্রোগ্রামার ক্রিস হর্পারের দিকে চেয়ে রইলো বিস্ময়ে। আর সেই কানাডিয়ান এখন মৃত?”

হার্পার বিষণ্ণভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“কতোদিন ধরে আপনি এটা জানেন?” সে জানতে চাইলো।

“কয়েক সপ্তাহ আগে। মারজোরি টেঞ্চ এবং নাসা প্রধান আমাকে দিয়ে জোর করে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যে বক্তব্য দেয়ার পর পরই। তারা জানতো আমি আর আগের কথাতে ফিরে যেতে পারবো না, তাই তারা আমার কাছে সত্যি কথাটা বলেছিলো কীভাবে উল্কাপিণ্ডটি

তারা আবিষ্কার করেছে।”

উল্কা আবিষ্কারের ঘটনাটা ভবে পিওডিএস এর কাজ নয়! গ্যাব্রিয়েল জানে না, এইসব তথ্য প্রকাশ পেলে কি হবে, কিন্তু এটা নিশ্চিত, একটা কেলেংকারীর ব্যাপারই হবে সেটা। টেঞ্চের জন্য খারাপ সংবাদ। আর সিনেটরের জন্য সুসংবাদ।

“আমি আগেই বলেছি,” হার্পার বললো, তাকে খুব স্র দেখালো। একটা রেডিও। ট্রান্সমিশন ইন্টারসেপ্ট করার মধ্য দিয়ে উল্কাখণ্ডের খবরটি জানা গেছে। আপনি কি INSPIRE নামক একটি প্রোগ্রামের কথা শুনেছেন?”

গ্যাব্রিয়েল এটার সম্পর্কে একটু আধটু শুনেছে।

“এটা হলো,” হার্পার বললো, “উত্তর মেরুতে অবস্থিত নিচু ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও রিসিভার– বজ্রপাত, প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপ এবং ঝড়ের শব্দ কোনোর জন্য ব্যবহার করা হয়।”

“ঠিক আছে।”

“কয়েক সপ্তাহ আগে, INSPIRE–এর একটি রিসিভার এলিসমেয়ার আইল্যান্ড থেকে বার্তা ইন্টারসেপ্ট করে। খুবই নিচু ফ্রিকোয়েন্সিতে এক কানাডিয়ান ভূ-তত্ত্ববিদ সাহায্য চাইছিলেন।” হার্পার একটু থামলো। “সত্যি বলতে কী, ফিকোয়েন্সিটা এতো নিচু ছিলো যে। নাসার ভিএলএফ রিসিভার ছাড়া অন্য কেউ সেটা শুনতে পায়নি। আমার ধারণা কানাডিয়ান লোকটি লং-ওয়েভি করছিলো।”

“কী বললেন?”

“সবচাইতে নিচু ফ্রিকোয়েন্সিতে সম্প্রচার করা যাতে বেশি দূরের সঙ্গে যোগাযোগ করা। যায়। মনে রাখবেন তিনি ছিলেন জনমানবশূন্য এক জায়গায়।”

“মেসেজটাতে কী বলা হয়েছিলো?”

“তিনি বলেছিলেন যে, তিনি মিলনের আইস শেলফের নিচে খুবই বেশি ঘনত্বের কিছু পেয়েছেন। জিনিসটা আসলে বিশাল একটি উল্কা বন বলে তিনি মনে করছেন। তিনি রেডিওতে তার অবস্থানের কথাটা জানিয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন, কারণ প্রচণ্ড একটা ঝড় ধেয়ে আসছিলো। নাসারা–ঘাটি থিউল থেকে একটা প্লেন পাঠায় তাকে উদ্ধারের জন্য। তারা কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করার পর পাহাড়ের নিচে তাকে এবং তার সেডের কুকুরসহ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মনে হয় ঝড়ের কবল থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।

গ্যাব্রিয়েল কৌতূহল নিয়ে শুনে গেলো। “তাই আচমকা নাসা সেই উল্কাখণ্ডটির ব্যাপারে জেনে গেলে যা আর কেউ জানতো না?”

“একদম ঠিক। পরিহাসের ব্যাপার হলো, আমার পিওডিএস সফটওয়্যারটা যদি ঠিক থাকতো তবে উল্কাটা পিওডিএস স্যাটেলাইটই খুঁজে পেতো– কানাডিয়ানটারও কয়েক সপ্তাহ আগে।”

গ্যাব্রিয়েল একটু চুপ রইলো। “একটি উল্কাখণ্ড, তিনশ বছর ধরে বরফের নিচে যেটা চাপা পড়ে আছে, সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে দুবার আবিষ্কার করা হোতো?”

“আমি জানি। খুৰ কিছুতকিমাকার একটি ব্যাপার। কিন্তু বিজ্ঞান এমনই। ভোজ অথবা দূর্ভিক্ষ। নাসা প্রধান আমাকে বললেন, যেহেতু কানাডিয়ান লোক মারা গেছেন তাই আমরা যদি দাবি করি এটা আমরাই আবিষ্কার করেছি তবে সেটা নিয়ে কেউ সন্দেহ করবে না। উপরন্তু, ব্যর্থতার হাত থেকেও নাসা বেঁচে যাবে।”

“আর সেজন্যেই আপনি সেটা করেছেন?”

“আমার কোনো উপায় ছিলো না। আমি মিশনটা বরবাদ করে দিয়েছিলাম। সে একটু থামলো। “অবশ্য আজ রাতের প্রেসিডেন্টের সংবাদসম্মেলন থেকে জানতে পারলাম যে উষ্কখরে মধ্যে ফসিলও রয়েছে …”

“আপনি হতবাক হয়ে গিয়েছেন।”

“তার চেয়েও বেশি।

“আপনি কি মনে করেন, আপনাকে মিথ্যে বলার আগে নাসা প্রধান জানতেন ফসিলের কথাটি?”

“আমি কল্পনাও করতে পারছি না, অভাবে। নাসার প্রথম দলটি ওখানে যাবার আগে উল্কাখণ্ডটি অস্পর্শই ছিলে, দুশো ফুট বরফের নিচে। আমার মতে, নাসার প্রথম দলটি ওখানে গিয়ে খনন করে নমুনা সংগ্রহ করার আগে নাসার কোনো ধালাই ছিলো না তারা কী পেয়েছে।”

গ্যাব্রিয়েল উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলো যেনো। আপনি কি জবানবন্দী দেবেন, নাসা এবং হোয়াইট হাউজ আপনাকে দিয়ে পিডিএস সফটওয়্যারের ব্যাপারে মিথ্যে কথা বলিয়েছে?”

“আমি জানি না।” হার্পারকে খুব আতকিত দেখালো। আমি ভাবতেও পারছি না এই আবিষ্কারের ফলে নাসার কি পরিমাণ ক্ষতি হবে …?”

“ডক্টর হার্পার, আপনি এবং আমি দুজনেই জানি উখিওটি একটি চমৎকার আবিষ্কার। সেটা কীভাবে পাওয়া গেলো সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হলো আপনি আমেরিকান জনগণের কাছে পিওডিএস নিয়ে মিথ্যে বলেছেন। সত্য জানার অধিকার তাদের রয়েছে।”

“আমি জানি না। আমি নাসা প্রধানকে ঘৃণা করি, কিন্তু আমার সহকর্মীরা … তারা তো ভালো লোক।”

“আর তারা এটা জানার অধিকার রাখে যে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।”

“আর আমার বিরুদ্ধে যে তহবিল তছরুপের অভিযোগ আছে, সেটা?”।

“আপনি সেটা আপনার মাথা থেকে মুছে ফেলতে পারেন।” গ্যাব্রিয়েল বললো। “আমি সিনেটরকে বলবো যে, আপনি তহবিল তছরুপের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এটা নাসা প্রধান করেছেন যাতে আপনি পিওডিএস-এর ব্যাপারে চুপ থাকেন।”

“সিনেটর কি আমাকে রক্ষা করতে পারবেন?”

“অবশ্যই। আপনি তো কিছু করেননি। আপনি কেবল অর্ডার পালন করেছেন। তাছাড়া আপনি যা বললেন, তাতে করে সিনেটরের আর তহবিল তছরুপের ইস্যুটার দরকার পড়বে না। আমরা পুরো মনোযোগ দেব পিডিএস এবং উল্কা সংক্রান্ত ব্যাপারটা নিয়ে। একবার যদি সিনেটর কানাডিয়ান ভূতত্ত্ববিদের কথাটা চাউড় করতে পারেন তবে নাসা প্রধান আপনার বলা মিথ্যে নিয়ে আপনাকে হেয় করার ঝুঁকি আর নেবার চেষ্টা করবে না।”

হার্পারকে খুব বিচলিত দেখালো। সে ভাবছে কী করবে। গ্যাব্রিয়েল তাকে ভাবার জন্য সময় দিলো।

“আপনার কি পোষা কুকুর আছে, ডক্টর হার্পার?”

সে চোখ তুলে তাকালো। “কী বললেন?”

“আমার কাছে এটা অদ্ভুত মনে হয়েছে। আপনি আমাকে একটু আগে বলেছিলেন যে কানাডিয়ান ভূ-তত্ত্ববিদ রেডিওতে উখিণ্ডের ব্যাপারে এবং নিজের অবস্থান জানিয়ে সাহায্য চাইবার পরেই তার স্লেডের কুকুরসহ পাহাড় থেকে পড়ে গেছে?”

“একটা ঝড় বইছিলো সেখানে। সেটাই তো হবে।”

গ্যাব্রিয়েল কাঁধ ঝাঁকিয়ে তার সন্দেহটা প্রকাশ করলো। “আচ্ছা … ঠিক আছে।”

হার্পার তার দ্বিধাগ্রস্তটা আঁচ করতে পারলো। “আপনি কি বলছেন?”

“আমি জানি না। এই আবিষ্কারের সঙ্গে অনেক কাকতালীয় ব্যাপার জড়িয়ে আছে। একজন কানাডিয়ান ভূতত্ত্ববিদ উল্কাখণ্ডের অবস্থান রেডিওতে জানালো সেটা কেবল নাসাই ধরতে পারলো? তাঁর ডেল্টা পড়ে গেলো পাহাড় থেকে নিচে?” সে একটু থামলো। “আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, ভূতত্ত্ববিদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নাসার বিজয়টা পোক্ত করা হয়েছে।”

হার্পারের মুখ রক্তিম হয়ে গেলো। “আপনি মনে করছেন নাসা প্রধান খুন করেছেন।”

পাকা রাজনীতি। বিশাল টাকার ব্যাপার। গ্যাব্রিয়েল ভাবলো। “আমাকে সিনেটরের সাথে কথা বলতে দিন, তারপরে দেখি কি করা যায়। এখান থেকে কি পেছনের দরজা দিয়ে বের হওয়া যায়?”

.

গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ বি ক্রিস হার্পারকে রেখে ফায়ারক্ষেপের সিঁড়ি দিয়ে নাসা হেডকোয়ার্টারের পেছনের গলিতে এসে একটা ট্যাক্সি ধরে চলে গেলো।

“ওয়েস্ট্রক প্লেস, লাক্সারি এপার্টমেন্ট, সে ড্রাইভারকে বললো। সিনেটর সেক্সটনকে আরো সুখী করার জন্য যাচ্ছে সে।

৯৪

কোনোটা যে মেনে নেবে ভাবতে ভাবতে রাচেল জি-ফোরের ককপিটে উঠে দাঁড়ালো। কর্কি এবং টোল্যান্ড তার দিকে তাকালো। যদিও রাচেল আর এনআরওর ডিরেক্টর উইলিয়াম পিকারিং ঠিক করেছিলো বুলিং বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছাবার আগ পর্যন্ত তারা রেডিওতে যোগাযোগ করবে না, কিন্তু রাচেলের কাছে এখন যে তথ্যটা আছে সেটা অবশ্যই পিকারিং এক্ষুণি জানতে চাইবে। সে নিরাপদ সেলফোনে কল করলো, যা পিকারিং সবসময়ই বহন করে থাকে।

যখন পিকারিং লাইনে এলো, দেখা গেলো সে ভীষণ ব্যস্ত। “সাবধানে বলুন, প্লিজ। এই কানেকশনটার নিশ্চয়তা আপনাকে দিতে পারছি না।”

রাচেল বুঝতে পারলো, এনআরও’র বাকি সব সেলফোনের মতোই পিকারিংয়ের সেলফোনটাও ইনকামিং কল ডিটেক্ট করতে পারে। তাই এই সংলাপটা হবে অস্পষ্টভাবে, কোনো নাম বলা যাবে না। কোনো অবস্থানের কথাও জানানো হবে না।

আমার কাঠটাই তো আমার পরিচয়,” রাচেল বললো। সে আশা করছিলো এভাবে যোগাযোগ কার জন্য ডিরেক্টর অখুশী হবে। কিন্তু পিকারিংয়ের জবাব শুনে মনে হচ্ছে ইতিবাচকই।

“হ্যাঁ, আমি নিজেই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে যাচ্ছিলাম। আমাদের গন্তব্য বদলাতে হবে। আমি চিন্তিত আপনারা হয়তো কোনো ওয়েলকামিং পার্টির মুখোমুখি হবেন।”

রাচেল আচমকাই রেগে গেলো। কেউ আমাদেরকে নজরদারি করছে।

সে পিকারিংয়ের কণ্ঠে বিপদটা আঁচ করতে পারলো। রাচেলও গন্তব্য বদলাতে চাচ্ছে বলে সে খুশিই হলো বলে মনে হলো। যদিও দুজনের কারণ ভিন্ন।

“বিশ্বাসযোগ্যতার ইসুটা,” রাচেল বললো। “আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। হয় আমরা সেটা নিশ্চিত করবো, নয়তো নির্দিষ্টভাবে অস্বীকার করবো।”

“চমৎকার।এরকম হলে আমিও জোর দিয়ে লড়তে পারবো।”

“প্রমাণ করার প্রয়োজনেই আমাদেরকে একটু থামতে হবে। আমাদের একজনের কাছে। একটা ছোটখাট ল্যাব রয়েছে–”

“কোনো জায়গার নাম বলবেন না, প্লিজ। আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই।”

টেলিফোনেই তার পুরো পরিকল্পনার কথাটা বলে দেবে এরকম কোনো ইচ্ছেই রাচেলের নেই। “আপনি কি আমাদেরকে জিএএস-এসি-তে নামার ব্যবস্থা করতে পারেন?”

পিকারিং একটু চুপ থাকলো। রাচেল বুঝতে পারলো যে, জিএএস-এসি শব্দটার অর্থ বোঝার চেষ্টা করছে সে। এনআরও-তে এটার অর্থ হলো কোস্ট গার্ড গ্রুপ এয়ারস্টেশন আটলান্টিক সিটি। রাচেল আশা করলো ডিরেক্টর সেটা বুঝতে পারবে।

“হ্যাঁ,” অবশেষে বললো, “ব্যবস্থা করা যাবে। এটাই কি আপনাদের শেষ গন্তব্য?”

“না। আমাদের হেলিকপ্টার দরকার হবে।”

“একটা এয়ার ক্রাফট অপেক্ষা করবে।”

“ধন্যবাদ।”

“আমি আপনাকে অনুরোধ করব, কারো সাথে কথা বলবেন না। আপনার শত্রুরা খুবই শক্তিশালী।”

টেঞ্চ, রাচেল ভাবলো। তার ইচ্ছে করলো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যদি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারতো।

“আমি বর্তমানে গাড়িতে আছি, প্রশ্নবিদ্ধ মহিলার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। সে একটা নিরপেক্ষ জায়গাতে আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। এতে আরো অনেক কিছুই উন্মোচিত হবে।”

পিকারিং কোনো এক জায়গাতে টেঞ্চের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে?

পিকারিং বললো, “আপনার চূড়ান্ত অবস্থান-এর ব্যাপারে কারো সাথে আলোচনা করবেন না। আর রেডিওতে কোনো যোগাযোগও করবেন না।বুঝেছেন?”

“হ্যাঁ, স্যার। আমরা জিএএস-এসিতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।”

“ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা যাবে। আপনি আপনার গন্তব্যে পৌঁছার পর আমার সাথে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ চ্যানেলে যোগাযোগ করবেন। সে একটু থামলো। “সাবধানে থাকুন।” পিকারিং লাইনটা কেটে দিলো।

রাচেল একটু চিন্তিত হয়ে টোল্যান্ড আর কর্কির দিকে ফিরলো।

“গন্তব্য বদলাচ্ছ?” টোল্যান্ড উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

রাচেল মাথা নাড়লো উদাসভাবে। “গয়ায়”

কর্কি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমি এখনও কল্পনা করতে পারছি না যে নাসা এটা …” সে থেমে গেলো, তাকে কেমন জানি বিচলিত দেখালো।

খুব জলদিই আমরা জানতে পারবো, রাচেল ভাবলো।

সে ককপিটে গিয়ে রেডিও রিসিভারটা রেখে এসে জানালার পাশে বসলো। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রাচেল ভাবলো তারা টোল্যান্ডের জাহাজে যাঁ খুঁজে পাবে সেটা হয়তো তারা পছন্দ করবে না।

৯৫

উইলিয়াম পিকারিং তার সিডান গাড়িটা দিয়ে লিসবার্গ হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় এক ধরনের একাকীত্বে আক্রান্ত হলো, এখন প্রায় ২টা বাজে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। এতো রাতে অনেক বছর ধরেই সে গাড়ি চালায়নি।

মারজোরি টেঞ্চের খসখসে কণ্ঠটা এখন তার কানে বাজছে। এফডিআর মেমোরিয়ালে আমার সাথে দেখা করুন।

টেঞ্চের সাথে পিকারিংয়ের শেষ সাক্ষাতের কথাটা সে মনে করার চেষ্টা করলো–সুখকর কোনো স্মৃতি ছিলো না সেটা। দুমাস আগের ঘটনা। হোয়াইট হাউজে। টেঞ্চ পিকারিংয়ের বিপরীতে বসেছিলো। টেবিলের চারপাশে ছিলো, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যরা, জয়েন্ট চিফ, সিআইএ, প্রেসিডেন্ট হার্নি এবং নাসা প্রধান।

সিআইএ’র প্রধান বলেছিলেন, “জেন্টেলমেন, আমি আবারো এই কাউন্সিলে নাসার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য বলছি।”

একথাটাতে ঘরের কেউই অবাক হয়নি। কারণ কয়েকদিন আগে নাসার একটি আর্থ অবজারজি স্যাটেলাইটের তোলা তিন শত রেজুলেশনের কিছু ছবি নাসার ডাটাবেস থেকে এক হ্যাকার চুরি করেছিলো। ছবিতে উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত আমেরিকার এক গোপন প্রশিক্ষণ ঘাঁটির সন্ধান ছিলো। ঐ ছবিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসীরা চড়া দামে কিনে নেয়।

নাসার এসব কাজকর্ম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে, সিআইএ-র প্রধান বলেছিলেন।

“আমি বুঝতে পেরেছি,” প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন। “নাসার কিছু অবহেলা আর দুর্বলতার কারণে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আমি বলবো, নাসা প্রধান এক্সট্রম, তুমি নাসার নিরাপত্তা আরো জোরদার করবে।”

কিন্তু সিআইএ’র প্রধান তারপরও বললো, “মি: প্রেসিডেন্ট, নাসার কেবল নিরাপত্তা জোরদার করলেই হবে না, তার কর্মকাণ্ডের অতি প্রচারও বন্ধ করতে হবে। এইসব প্রচারের ফলে অনেক তথ্য ও প্রযুক্তি ফাঁস হয়ে পড়ে, যা আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।”

প্রেসিডেন্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন। কারণ তাঁর কাছে সুস্পষ্ট একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। আমেরিকার ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটিতে নাসা’কে একটি অংশ হিসেবে নতুন করে ঢেলে সাজান হোক। এরকম অনেক এজেন্সিকেই অতীতে ঢেলে সাজানো হয়েছিলো। কিন্তু হনি নাসাকে পেন্টাগনের অধীনে রাখার পক্ষে রাজি হননি। লরেন্স এক্সট্রমকে সেই মিটিংয়ে মোটেই হাসিখুশি দেখায়নি। সে কটমট করে সিআইএ’র প্রধানের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, “স্যার, নাসা যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে সেগুলো অসামরিক। আপনার ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি যদি আমাদের স্পেস টেলিস্কোপটা দিয়ে চিনকে পর্যবেক্ষণ করে সেটা আপনার ব্যাপার।”

সিআইএ’র প্রধান যেনো রেগে মেগে ফেটে পড়তে চাচ্ছিলো একথা শুনে।

পিকারিং নাসার প্রধানের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, “ল্যারি, প্রতিবছর নাসা কংগ্রেসের কাছে হাটুগেড়ে টাকা চায়। আপনারা খুব বেশি টাকা খরচ করে অপারেশন পরিচালনা করেন, আর তাদের বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়। আমরা যদি নাসা’কে ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলি তবে নাসাকে আর কংগ্রেসের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হবে মা। ব্ল্যাক বাজেটেই আপনাদের ফান্ড যোগার হয়ে যাবে। আপনারা পাবেন আপনাদের প্রয়োজনীয় টাকা আর ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি আশ্বস্ত থাকবে যে, নাসার প্রযুক্তিগুলো সুরক্ষিত আছে।”

এক্সট্রম মাথা ঝাঁকালো। “নীতিগতভাবে, আমি এই ব্রাশ দিয়ে নাসাকে রঙ লাগাতে পারি না। নাসা হলো মহাশূন্য বিজ্ঞানের জন্য। জাতীয় নিরাপত্তর সাথে এর কোনো লেনদেন নেই।”

সিআইএ’র ডিরেক্টর উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো, এটা প্রেসিডেন্ট যখন বসা থাকেন তখন কখনই করা হয় না। কেউ অবশ্য তাকে বাধাও দেয়নি। সেনা প্রধানের দিকে কটমট করে তাকালো। “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই? ল্যারি তারা একই জিনিস, ঈশ্বরের দোহাই লাগে। এই দেশকে কেবলমাত্র উন্নত প্রযুক্তিই নিরাপদে রেখেছে। আর আমরা জানি কিংবা না জানি, নাসাই এইসব প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর বিকাশে বড় ভূমিকা রেখে থাকে। দুঃখের বিষয়, আপনার এজেন্সি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো খবর ফাঁস করেই যাচ্ছে!”

ঘরে নিরবতা নেমে এলো।

এবার এক্সট্রম তার আক্রমণকারির দিকে চেয়ে কঠিনভাবে বললো, “তাহলে, আপনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, নাসার বিশ হাজার বিজ্ঞানীকে মিলিটারি ল্যাবে আঁটকে রেখে আপনাদের জন্য কাজ করতে বলা হবে? নাসা অনেক বড় বড় আবিষ্কার করেছে। আমাদের কর্মচারীরা চায় মহাশূন্যকে গভীরভাবে বুঝতে। আকাঙ্ক্ষা আর কৌতূহলই নাসা’র কর্মীদের পরিচালিত করে। সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের স্বপ্নে নয়।”

পিকারিং গলাটা পরিষ্কার করে বললো, “ল্যারি, আমি নিশ্চিত, ডিরেক্টর নাসার বিজ্ঞানীদেরকে নিযুক্ত করে তাদেরকে দিয়ে সামরিক স্যাটেলাইট বানাবেন না। নাসা যেমন আছে তেমনই থাকবে, কেবল আপনাকে ফান্ড বাড়িয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হবে।” পিকারিং প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে আবার বললো, “নিরাপত্তা খুবই ব্যয়বহুল, এই ঘরের আমরা সবাই সেটা জানি। নাসার তথ্য ফাঁস হয়, কারণ তাদের ফান্ডের স্বল্পতা রয়েছে। আমি প্রস্তাব করছি, এখনকার মতো নাসা যেমন আছে তেমনি থাকবে। কিন্তু তাদের বাজেট হবে আরো বড় আর তারা একটু বিচক্ষণতাও দেখাবে।” নিরাপত্তা কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য একমত পোষণ করে সায় দিলো।

প্রেসিডেন্ট হার্নি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন। সরাসরি পিকারিংয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বিল, আমাকে এটা জিজ্ঞেস করতে দাওঃ নাসা আগামী দশকে মঙ্গলে যাবার আশা করছে। ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি ব্ল্যাক বাজেটের বিশাল একটি অংশ মঙ্গল অভিযানে ব্যয় হতে দেখলে কী ভাববে– এমন একটা মিশন যাতে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো লাভ নেই?”

“নাসা যেমন চায় তেমনি করতে পারবে।”

“ধ্যাত্তারিকা,” হার্নি জবাব দিলেন। বাই তার দিকে তাকালো, কেন না হার্নি খুব কমই এরকম শব্দ ব্যবহার করেন।

“প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি একটা জিনিসই দেখেছি,” হার্নি বললেন, “সেটা হলো, যে ডলার নিয়ন্ত্রণ করে সেই দিক নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ করে। নাসা যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা। হয়েছে, সেরকম উদ্দেশ্য যাদের নেই, তাদের হাতে আমি নাসাকে ছেড়ে দিতে রাজি নই। নাসা বিদ্ধ বিজ্ঞানের জন্য কাজ করে, সামরিক বিজ্ঞানের জন্য নয়।”

হার্নি ঘরের চারদিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিলেন। তারপর আবার পিকারিংয়ের দিকে তাকালেন।

“বিল,” হার্নি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “নাসা বিদেশের সাথে যৌথভাবে প্রজেক্ট বাস্ত বায়ন করাতে আপনার ক্ষোভ রয়েছে জানি। এতে করে আপনি মনে করেন জাতীয় নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এটা ভেবে দেখেন, এতে করে নিদেনপক্ষে কেউ তো চায়না অথবা রাশিয়ার সাথে গঠনমূলক কাজ অতে পারছে। এই পৃথিবীর শান্তি সামরিক শক্তি বলে স্থাপন হয় না। এটা আসে তাদের দ্বারা যারা তাদের সরকারের মধ্যে মত পার্থক্য থাকা সত্তেও একসাথে কাজ করে। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তবে বলবো, নাসার যৌথ মিশন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যতোটুকু ভালো কাজ করতে পারে, সেটা বিলিয়ন ডলারের স্পাই স্যাটেলাইটের চেয়েও বেশি।”

পিকারিং ভেতরে ভেতরে রেগে গেলো। একজন রাজনীতিকের কতো বড় আস্পর্ধা আমার সাথে এভাবে কথা বলছে।

“বিল,” মারজোরি টেঞ্চ যেনো পিকারিংয়ের রাগটা বুঝতে পেরে বললো, “আমরা জানি আপনি আপনার মেয়েকে হারিয়েছেন। আমরা জানি এটা আপনার ব্যক্তিগত একটা ইসু।”

পিকারিং যেনো আরো তেঁতে গেলো এ কথাটা শুনে।

“কিন্তু সদস্যগণ,” টেঞ্চ বললো। “হোয়াইট হাউজে বানের জলের মতো প্রস্তাব আসছে মহাশূন্যকে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিতে। কিন্তু আপনারা যদি আমাকে নাসার করা সব ভুজটির কথা জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলবো, নাসা হলো ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির একজন বই। আপনারা আশীর্বাদ পেয়েছেন বলা যায়।”

গাড়িটা একটু ঝাঁকি খেলে পিকারিং বাস্তবে ফিরে এলো। সে ডিসি থেকে বের হতে যাচ্ছে। সে রাস্তার পাশে একটা মৃত হরিণ পড়ে থাকতে দেখলো। তার খুব অদ্ভুত অস্বস্তি বোধ হলো … কিন্তু সে গাড়ি চালিয়েই গেলো।

তার সাথে একজনের সাক্ষাত আছে।

৯৬

ফ্রাংকলিন ডিলানো রুজভেল্ট মেমোরিয়ালটা আমেরিকার সবচাইতে বড় মেমোরিয়াল। একটা পার্ক, জলপ্রপাত আর খোলা প্রাঙ্গণ রয়েছে সেখানে। মেমোরিয়ালটা চারটা আউটডোর গ্যালারিতে বিভক্ত।

মেমোরিয়ালের একমাইল দূরে, একটা কিওয়া হেলিকপ্টার আকাশের উপর এসে স্থির হলো। এটার বাতিগুলো মৃদু করে রাখা হয়েছে। এরকম একটা শহরে যেখানে ভিআইপি আর মিডিয়ার লোকজনের পরিপূর্ণ থাকে, সেখানে একটা হেলিকপ্টার ওড়া সাধারণ ঘটনাই। ডেল্টা-ওয়ান জানে হোয়াইট হাউজের চার পাশে যে বুদবুদের মতো নিরাপত্ত জাল রয়েছে, সেটাকে তারা বলে ডোম– এই ডোমের বাইরে তারা যতোক্ষণ থাকবে ততোক্ষণ খুব একটা নজরে আসবে না। তারা অবশ্য এখানে বেশিক্ষণ থাকবেও না।

কিওয়াটা ২১০০ ফুট উপরে রয়েছে, সেটা ঠিক এফডিআর-এর উপরে অবস্থান নেয়নি, একটু পাশে আছে। ডেল্টা-ওয়ান তার অবস্থান চেক করে দেখছে। সে তার বামে তাকালো, যেখানে ডেল্টা-টু নাইট ভিশন টেলিস্কোপ দিয়ে নিচে নজরদারী করছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মেমোরিয়ালের প্রবেশ মুখের একটা ছবি। পুরো এলাকাটা ফাঁকা।

এখন তারা অপেক্ষা করবে। এই হত্যাটি নীরবে নিভৃতে হবে না। কিছু লোক আহে যাদেরকে নীরবে নিভৃতে হত্যা করা যায় না। পদ্ধতির কথা না হয় বাদই দেয়া গেলো, তদন্ত আর ঘটনার পরিক্রমা এগুলো তো চলবে পুরো দমে। এইক্ষেত্রে, সবচাইতে ভালো আড়াল যেটা হবে সেটা হলো বিশাল একটা বিস্ফোরণ, আগুন আর ধোঁয়া। তাতে করে মনে হবে বিদেশী সন্ত্রাসীরা কাজটি করেছে। বিশেষ করে টার্গেট যখন হাই প্রোফাইলের কর্মকর্তা।

ডেল্টা-ওয়ান নাইট-ভিশনটা দিয়ে নিচে মেমোরিয়ালের একটা গাছের দিকে দেখলো। পার্কিং লট আর প্রবেশ পথটা খালি। এই ব্যক্তিগত মিটিংটা শহর অঞ্চলে হলেও, এই সময়ে একেবারেই জনমানবশূন্য। ডেল্টা-ওয়ান স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিজের অন্ত্রের কন্ট্রোলের দিকে তাকালো।

আজ রাতের অন্ত্রটা হবে হেলফায়ার সিস্টেম। একটি লেজার গাইডেড, এন্টি আরমুর মিসাইল।

সিডন, ডেল্টা-টু বললো।

ডেল্টা-ওয়ান ভিডিও মনিটরের পর্দায় তাকালো। একটা কালো লাক্সারি সিডান প্রবেশ পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হলো সরকারের মটর পুলের অতি পরিচিত গাড়িগুলোরই একটি। ড্রাইভার গাড়িটার হেডলাইট নিভিয়ে দিলো। গাড়িটা বার কয়েক চক্কর দিয়ে একটা গাছের কাছে গিয়ে পার্ক কালো। ডেল্টা-ওয়ান স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর তার সঙ্গী নাইট-ভিশনটা ড্রাইভারের জানালার কাছে ফোকাস করলো। একটু বাদেই লোকটার চেহারা দৃষ্টির গোচরে এলো।

ডেল্টা-ওয়ান একটু নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো।

টার্গেট নিশ্চিত, তার সঙ্গী বললো।

ডেল্টা-ওয়ান নাইট-ভিশন ক্রিনের দিকে তাকালো। টার্গেট নিশ্চিত।

ডেল্টা-টু একটু বাম পাশে সরে এসে লেজার ডেসিগনেটরটা সচল করে দিলো। সে লক্ষ্য স্থির করলো, ২০০ ফুট নিচে, সিডানের ছাদের ওপরে ছোট্ট একটা আলোর বিন্দু দেখা গেলো।

“টার্গেটকে চিহ্নিত করা হয়েছে,” সে বললো।

ডেল্টা-ওয়ান গভীর একটা দম নিয়ে ফায়ার করলো। হেলিকপ্টারের পা-দানীর নিচ থেকে একটা ফোঁস করে শব্দ হলো। একটা মৃদু আলোর রেখা মাটির দিকে ছুটে গেলো। এক সেকেন্ড বাদে, নিচে পার্ক করা গাড়িটা তীব্র আলো আর বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। দোমড়ানো মোচড়ানো ধাতুর টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। আগুনে পোড়া টায়ার জ্বলতে লাগলো।

“হত্যা সম্পন্ন হয়েছে, ডেল্টা-ওয়ান বললো, ইতিমধ্যেই সে কপ্টারটা ঐ এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। কন্ট্রোলারকে ফোন করো।”

.

দুই মাইলেরও কম দূরে, প্রেসিডেন্ট হার্নি শুতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তাঁর ঘরের জানালার কাঁচ লেক্সান বুলেট প্রুফ, আর সেটা এক ইঞ্চি পুরু। হার্নি বিস্ফোরণের শব্দটা শুনতে পাননি।

৯৭

কোস্টগার্ড গ্রুপ এয়ার স্টেশন আটলান্টিক সিটি, আটলান্টিক সিটির ইন্টারন্যাশনাল এয়ার পোর্টের উইলিয়াম জে হিউজেস ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনেস্ট্রেশন টেকনিক্যাল সেন্টারের নিরাপদ একটি জায়গায় অবস্থিত। এই গ্রুপের দায়িত্বে আছে আটলান্টিক সাগর উপকূল থেকে কেপ মের একুইরি পার্ক পর্যন্ত। প্লেনটা রানওমতে নামতেই চাকার ঘর্ষণের ফলে। ঝাঁকুনি হলে তাতে রাচেল সেক্সটন জেগে উঠলো। সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। রাচেল তার ঘড়িটা দেখলে।

২টা ১৩ মিনিট। তার মনে হলো সে বুঝি কয়েকদিন ধরে ঘুমিয়ে ছিলো।

প্লেনের ভেতরে একটা উষ্ণ কম্বল জড়িয়ে আছে রাচেল। মাইকেল টোল্যান্ডও তার পাশে এইমাত্র জেগে উঠলো। সে তার দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত হাসি দিলো।

কর্কি তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে ওখানে দেখে ভুরু তুললো। “আরে, তোমরা এখনও এখানে? আমি জেগে ওঠে আশা করেছিলাম গত রাতটা ছিলো একটা বাজে স্বপ্ন।

রাচেল জানে করি কেমন লাগছে। আমি আবারো সমুদ্রের কাছে ফিরে এসেছি।

প্লেনটা একটা জায়গায় থামলে রাচেল এবং বাকিরা ফাঁকা জনমানবশূন্য রানওয়েতে নেমে পড়লো। রাতটা গাঢ় হয়ে আসছে। উপকূলের বাতাস ভারি আর উষ্ণ বলে অনুভূত হলো, এলিসমেয়ার এর সাথে তুলনা করলে, নিউজার্সি হলো ক্রান্তীয় অঞ্চল।

“এখানে।” একটা কণ্ঠ বললো।

রাচেল এবং অনন্যরা তাকিয়ে দেখলো একটা ক্রিম রঙের এইচএইচ-৬৫ ডলফিন হেলিকপ্টার কাছেই অপেক্ষা করছে। ককপিটে বসে থাকা পাইলট তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো।

টোল্যান্ড রাচেলের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো, “তোমার কস্ দেখছি সত্যি কাজের লোক।”

তোমার কোনো ধারণাই নেই, সে ভালো।

কৰ্কি আক্ষেপ করলো। এখনই কোনো ডিনার খাওয়া হবে না?”

পাইলট তাদেরকে কপ্টারে ওঠাতে সাহায্য করলো, তাদের নাম ধাম কিছুই জিজ্ঞেস করলো না সে। পিকারিং তাকে স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে এই ফ্লাইটটা নিয়ে বাগাড় বা উচ্চবাচ্য করা যাবে না। তারপরও রাচেল দেখতে পেলো পিকারিংয়ের সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও তাদের পরিচয়টা খুব বেশিক্ষণ গোপন রইলো না। টেলিভিশন তারকা টোল্যান্ডের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকাতে পাইলট কার্পন্য করলো না।

পাইলট ককপিটে বসে ঘোষণা দিলো, “আমাকে বলা হয়েছে, আকাশে ওড়ার পরই আপনারা আমাকে আপনাদের গন্তব্যের কথাটা বলবেন, মাত্র একবার।”

টোল্যান্ড পাইলটকে গন্তব্যের কর্ণনা দিয়ে দিলো।

তার জাহাজটা তীর থেকে বারো মাইল দূরে আছে, রাচেল ভাবলো। কথাটা ভেবেই কেঁপে উঠলো সে।

পাইলট গন্তব্যের কো-অর্ডিনেশনটা নেভিগেশন যন্ত্রে টাইপ করে নিলো। এরপর সে ইনজিনটা চালু করলো।কপ্টারটা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ছুটে চললো।

“আমি জানি আমার এটা বলা উচিত নয়, পাইলট বললো, “কিন্তু আপনি অবশ্যই মাইকেল টোল্যান্ড, আমাকে বলতেই হচ্ছে, আজ রাতে আপনাকে দেখেছি, ভালই করেছেন। উল্কাখণ্ডটি, একদম অবিশ্বাস্য, আপনারাও নিশ্চয় বিস্মিত হয়েছেন!”

টোল্যান্ড ধৈৰ্য্য সহকারে মাথা নেড়ে বললো, “বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।”

“প্রামান্যচিত্রটা দারুণ হয়েছে! আপনি জানেন, সেটা টিভিগুলোতে বার বার প্রচার করা হচ্ছে। আজ রাতে কোনো পাইলটই টিভি ছেড়ে উঠতে চায়নি। আর আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসেছি এটা চালাতে। বিশ্বাস করতে পারছেন? আর আমি এখন সত্যিকারের টোল্যান্ডের সাথে ভ্রমণ করছি–

“আমরাও,” রাচেল বললো। “আর আমরা চাই আমাদের কথাটা কেবল আপনিই জানেন। অন্য কেউ যেনো আমাদের কথা না জানে।”

“অবশ্যই ম্যাম। আমাকে অর্ডার দেয়া হয়েছে সেরকমই। আমরা কি গয়ার দিকে যাচ্ছি?”

টোল্যান্ড উদাসভাবে মাথা নাড়লো। “হ্যাঁ।”

“আহ তাই নাকি। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি গয়া দেখতে পারবো।”

টোল্যান্ড রাচেলের দিকে ফিরলো। “তুমি ঠিক আছো? তুমি অবশ্য সাগর পাড়ে থাকতে পারো। আমি বলছি।”

“ধন্যবাদ, তার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।” টোল্যান্ড হাসলো। “আমি তোমাকে চোখে চোখে রাখব।”

“ধন্যবাদ।” রাচেল অবাক হলো টোল্যান্ডের আন্তরিক কথাবার্তা শুনে সে নিরাপদ বোধ করছে।

“টিভিতে তুমি গয়া দেখেছো, তাই না?”

সে সায় দিলো। “এটা … খুবই অদ্ভুত দেখতে।”

টোল্যান্ড হাসলো, “হ্যাঁ, সেটা খুবই আধুনিক ডিজাইনের ছিলো, কিন্তু সেটা কারো চোখে পড়েনি।”

“ভাবতে পারছি না কেন, রাচেল ঠাট্টা করে বললো। জাহাজটার কিম্ভুতকিমাকার ছবিটার কথা ভাবলো।

“এনবিসি এখন আমাকে নতুন জাহাজ নেবার জন্য বলছে। আর কয়েকটা সিজনের পরই হয়তো তারা আমার সাথে ওর বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবে।”

টোল্যান্ডের কথাটা খুবই বিষণ্ণ কোনোলো।

“তুমি নতুন জাহাজটাকে ভালবাসবে না?”

“আমি জানি না … গয়ার সাথে অনেক স্মৃতি আছে আমার।”

রাচেল নরম করে হাসলো। আমার মা সবসময়ই বলতেন, আজ হোক কাল হোক আমাদের অতীতকে বিদায় জানাতেই হবে।”

টোল্যান্ড তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। “হ্যাঁ, আমিও সেটা জানি।”

৯৮

‘ধ্যাত,” ট্যাক্সি ড্রাইভার ঘাড় ঘুরিয়ে গ্যাব্রিয়েলকে বললো। “মনে হচ্ছে সামনে একটা দুর্ঘটনা হয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য যাওয়া যাবে না।”

গ্যাব্রিয়েল বাইরে তাকিয়ে দেখলো জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়িগুলো ছোটাছুটি করছে। রাস্তায় কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তারা যানবাহনগুলো থামিয়ে দিচ্ছে।

“নির্যাত বড়সড় কোনো দুর্ঘটনা হয়েছে, ড্রাইভার বললো, এফডিআর মেমোরিয়ালের কাছে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে ইঙ্গিত করে।

গ্যাব্রিয়েল আগুনটার দিকে তাকালো। আর সময় পেলো না, এখন। তার দরকার এক্ষুণি সিনেটর সেক্সটনকে পিওডিএস এবং কানাডিয়ান ভূতত্ত্ববিদের খবরটা জানানো। নাসা উল্কাখণ্ডের আবিষ্কারের বিষয়ে যে সবার কাছে মিথ্যে বলেছে এই কেলেংকারীটাই সেক্সটনের ক্যাম্পেইনে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট। সব রাজনীতিক অবশ্য এটা এভাবে কাজে লাগাতে পারবে না। সে ভাবলো, কিন্তু এ হলো সিনেটর সেজউইক সেক্সটন। যে লোক অন্যের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে নিজের প্রচারণা কাজের প্রসার ঘটায়।

গ্যাব্রিয়েল সিনেটরের নেতিবাচক অনৈতিক আক্রমণগুলো নিয়ে সবসময় গর্বিত বোধ করে না। কিন্তু সেগুলো খুবই কাজে দেয়।

সেক্সটন এই ব্যাপারটাকে এমনভাবে ব্যবহার করবেন যে নাসা’র চরিত্র হনন তো হবেই, এমনকি সেটা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টকেও জড়িয়ে ফেলবে।

এফডিআর মেমোরিয়ালের সামনে জ্বলতে থাকা আগুনটা আরো উকুতে চলে গেলে গ্যাব্রিয়েল সেটা গাড়ি থেকে দেখতে পেলো। একটা গাছেও আগুন লেগে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত। ট্যাক্সি ড্রাইভার তার রেডিওটা চালু করে একটা চ্যানেল ধরার চেষ্টা করলো।

গ্যাব্রিয়েল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো। ক্লান্তিতে সে দূরে কোথাও চলে গেলো। সে যখন ওয়াশিংটনে প্রথম এসেছিলো, রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতো। হয়তো কোনো একদিন সে হোয়াইট হাউজেও কাজ করবে। এই মুহূর্তে, সে মনে করছে এই জীবনে যথেষ্ট রাজনীতি হয়েছে– মারজারি টেঞ্চের সাথে মুখোমুখি হওয়া, তার এ সিনেটরের অশ্লীল ছবিগুলো, নাসা’র মিথ্যে কথাগুলো …

রেডিওতে একজন নিউজকাস্টার বলছে একটা গাড়িবোমা হয়েছে, সম্ভবত সন্ত্রাসী কাজ।

আমাকে এই শহর থেকে বের হয়ে যেতে হবে, গ্যাব্রিয়েল এই প্রথম রাজধানীতে আসার পর এই কথাটা ভাবলো।

৯৯

কন্ট্রোলার খুব কমই শ্রান্ত হয়। কিন্তু আজ সেটা হলো। কোনো কিছুই পরিকল্পনা মতো হচ্ছে না– বরফের নিচে পাথরটা ট্র্যাজিক আবিষ্কার, সিক্রেটটা বজায় রাখার সমস্যা এবং এখন হত্যা খুনের তালিকা দীর্ঘ হওয়া।

কারোরই মরার কথা ছিল না…কেবল কানাডিয়ানটা ছাড়া।

এটা খুব পরিহাসের ব্যাপার যে, এই পরিকল্পনার সবচাইতে কঠিন অংশটা এখন খুব কমই সমস্যাসংকুল হিসেবে পরিগণিত হয়ে ওঠেছে।

পাথরটা অনুপ্রবেশ, একমাস আগেই করা হয়েছিলো, সেটাতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার সেটা স্থাপন করার পর, বাকি কাজটা করবে পিওডিএস স্যাটেলাইট।

কিন্তু ঐ শালার সফওয়্যারটা কাজ করলো না।

কন্ট্রোলার যখন জানতে পারলো সফটওয়্যারটা আসন্ন নির্বাচনের আগে আর ঠিক করা যাবে না, তখন পুরো পরিকল্পনাটাই হুমকীর মুখে পড়ে গেলো। পিওডিএস ছাড়া, উল্কাপিণ্ডটি চিহ্নিত করা যাবে না। কন্ট্রোলার কোনো এক উপায়ে নাসার কাউকে উল্কাপিণ্ডের অস্তিত্বের ব্যাপারে জানিয়ে দিলো। সমাধানটাতে প্রয়োজন পড়লো একজন কানাডিয়ান ভূ-তত্ত্ববিদের বেতার বার্তার সম্প্রচার। ভূ-তত্ত্ববিদকে, সংগত কারণেই, সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা করার দরকার ছিলো এবং তাঁর মৃত্যুটাকে একটা দুর্ঘটনার মতো করে দেখানো হয়েছিলো। একজন নির্দোষ ভূ-তত্ত্ববিদকে হেলিকপ্টার থেকে নিচে ফেলে দেয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিলো। এখন সবকিছু খুব দ্রুতই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

ওয়েলি মিং। নোরা ম্যাঙ্গোর। দু’জনেই মৃত।

সবচাইতে সাহসী খুনটা সংঘটিত হয়েছে এফডিআর মেমোরিয়ালের সামনে।

খুব শীঘ্রই এই তালিকায় যোগ দেবে রাচেল সেক্সটন, মাইকেল টোল্যান্ড আর ডক্টর মারলিনসন।

এছাড়া আর কোনো পথ নেই, কন্ট্রোলার ভাবলো, নিজের উদ্বিগ্নতা আর অনুশোচনা কাটাতে চাইলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *