০৬০. প্রেসিডেন্টদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র

৬০

হোয়াইট হাউজে আসা প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের আগমনের সাথে একটি গুদাম ঘরে যাবার ঘটনা জড়িত থাকে। সেখানে রয়েছে আগের প্রেসিডেন্টদের ব্যবহার করা মূল্যবান আসবাব আর ব্যবহার্য জিনিসপত্র। সেই জর্জ ওয়াশিংটন থেকেই শুরু হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্টকে সেখান থেকে একটা আসবাব বা ব্যবহার্য চার বছরের জন্য বেছে নিতে বলা হয়। বাদ থাকে কেবল লিনকনের বিছানাটা। সেটা চিরস্থায়ী একটি জিনিস। কিন্তু পরিহাসের ব্যাপার হলো অব্রাহাম লিনকন কখনও সেই বিছানাতে ঘুমাননি।

জাখ হার্নির ওভাল অফিসের বর্তমান ডেস্কটা তার আদর্শ হ্যারি ট্রুম্যানের। এই ডেস্কে বসে কাজ করতে পারলে হার্নি নিজেকে সম্মানিত বোধ করে।

“মি: প্রেসিডেন্ট?” ভার সেক্রেটারি অফিসে উঁকি দিয়ে ডাকলো। আপনার কলটা দেয়া হয়েছে।”

হার্নি হাত নেড়ে সায় দিলেন। “ধন্যবাদ তোমাকে।”

তিনি তার ফোনের কাছে গেলেন। দুজন মেক-আপম্যান তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।

হার্নি বোম চেপে তাঁর প্রাইষ্টে ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন। “লরেন্স? তুমি?”

“হ্যাঁ, আমি।” নাসার প্রধান বললো।

“সবকিছু ঠিক আছে তো?”

“ঝড় এখনও বইছে, কিন্তু আমার লোকেরা বলেছে সম্প্রচারে কোনো সমস্যা হবে না। এক ঘণ্টার মধ্যেই সেটা করা যাবে।”

“চমৎকার। তেজ ভালোই আছে, আশা করছি আমি।”

“অবশ্যই। আমার কর্মচারীরা প্রবল উত্তেজনা বোধ করছে। সত্যি বলতে কী, আমরা বিয়ার খেয়ে বিজয়টা উদযাপন করেছি।”

হার্নি হেসে ফেললেন। “শুনে খুশি হলাম। ঘোষণা দেবার আগে তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি। আজ রাতটা হবে অন্যরকম কিছু।”

“সেটাই, স্যার। আমরা এর জন্যে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেছি।”

হানি ইতস্তত করলেন। “তোমার কণ্ঠ শুনে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে।”

“আমার দরকার একটু রোদ আর সত্যিকারের বিছানা।”।

“আর এক ঘণ্টা। ক্যামেরার সামনে হাসি হাসি মুখে থেকো, তারপর আমরা প্লেন পাঠিয়ে তোমাকে ডিসি’তে নিয়ে আসবো।”

“সেটার জন্যই মুখিয়ে আছি,” নাসা প্রধান আবারো চুপ মেরে গেলো।

ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে হার্নি কথা শুনেই বুঝতে পারেন কী হচ্ছে। নাসা প্রধানের কণ্ঠটা তার কাছে কেমন জানি অ্যারকম মনে হলো। “তুমি নিশ্চিত সবকিছু ঠিকঠাক আছে?”

“একদম। সবকিছু ঠিক মতো চলছে।” সে বললো। “আপনি কি টোল্যান্ডের প্রামাণ্যচিত্রটা একটু দেখেছেন?”

“এই তো দেখলাম,” হার্নি বললেন। “দারুণ কাজ করেছে সে।”

“হ্যাঁ। তাকে এখানে ডেকে এনে ভালো কাজই করেছেন।”

“এখনও কি সিভিলিয়ানদের পাঠানোর জন্য ক্ষেপে আছো?”

“আরে না।” নাসা প্রধান বললো।

কথাটা শুনে হার্নির ভালো লাগলো। “ঠিক আছে, ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তোমাকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখতে পারবো।”

“ঠিক আছে, স্যার।

“এই, লরেন্স?” হার্নির কথাটা একটু আদ্র হয়ে গেলো। “তুমি অসম্ভব দারুণ কাজ করেছে। আমি সেটা কখনও ভুলবো না।”

.

হ্যাবিস্ফেয়ারের বাইরে, বাতাসে বিপর্যস্ত ডেল্টা-থৃ নোরা ম্যাঙ্গোরের উল্টে পড়ে থাকা ডেল্টা সোজা করে যন্ত্রপাতিগুলো ঠিকঠাক করতে যথেষ্ট বেগ পেলো। সবকিছু রেখে তার ওপর নোরার দেহটা রেখে দিলো সে। সে যখন ডেল্টা ঠেলতে যাবে তখনই তার দুই সঙ্গী হিমবাহের উপর থেকে উদয় হলো।

“পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে, ডেল্টা-ওয়ান চিৎকার করে বললো বাতাসের জন্য। “বাকি তিন জন নিচে পড়ে গেছে।”

ডেলটা-থৃ অবাক হলো না। সে জানে এর মানে কি। ডেল্টা ফোর্সের পরিকল্পনা ছিলো ঘটনাটিকে একটি দুর্ঘটনার মতো রূপ দিতে হবে। একটা দেহকে বরফে ফেলে রাখলে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে।

“ঝেরে ফেলবো?” সে জিজ্ঞেস করলো।

ডেল্টা-ওয়ান মাথা নাড়লো। “আমি ফ্রেয়ারগুলো নিয়ে যাচ্ছি, তোমরা দু’জন ডেল্টা ফেলে দাও।”

ডেল্টা-ওয়ান যখন খুব সাবধানে বিজ্ঞানীদের পদচিহ্নগুলো বরফ থেকে মুছে ফেলতে লাগলো তখন ডেল্টা-থ আর তার সঙ্গী ডেল্টা ঠেলতে ঠেলতে শেষ প্রান্তের দিকে নিয়ে গেলো। প্রান্তসীমায় পৌঁছে তারা জোরে একটা ধাক্কা মারতেই নোরা ম্যাঙ্গোর সমেত ডেল্টা নিরবে নিচে গড়িয়ে পড়লো। আছড়ে পড়লো সেটা আর্কটিক সাগরে।

ঝেড়ে সাফ করা, ডেল্টা-থৃ ভাবলো।

তারা ঘাঁটির দিকে ফিরে যাবার সময় বাতাসের তোড়ে বরফের ওপরে তাদের স্কি চিহ্নগুলো মুছে যেতে দেখে খুশি হলো।

৬১

শার্লোট নিউক্লিয়ার সাবমেরিনটা আর্কটিক সাগরে নোঙর করে রাখা আছে পাঁচ দিন ধরে। এখানে তার উপস্থিতিটা খুবই গোপনীয় একটি ব্যাপার।

এটাকে তৈরি করা হয়েছে কোনো কিন্তু নিজের উপস্থিতি জানান দিও না উদ্দেশ্যকে বাস্ত বায়ন করার জন্য। দৈর্ঘে এটা ৩৬০ ফুট, তার পেটটা একটা ফুটবল মাঠের সমান প্রশস্ত।

১৫৮ জন ক্রু নিয়ে ১৫০০ ফুট গভীরে যেতে পারে এটি। খুবই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই সাবমেরিনে। এটা ইউএস নেভির সাগরের ঘোড়া। এটার রয়েছে। ইলেক্ট্রোলাইসিস অক্সিজেন সিস্টেম, দুটো পারমাণবিক রিএ্যাক্টর এবং এর ইনজিনটা একবারের জন্যও পানি থেকে না ওঠে সাবমেরিনটাকে একুশবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করাতে পারে।

এই মুহূর্তে, একজন টেকনিশিয়ান একটি ভেঁতা শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলো, বার বার।শব্দটা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং অপ্রত্যাশিতও বটে।

“তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না আমি কী শুনতে পারছি,” সে তার ক্যাটালগ সহকারীকে বলে হেডফোনটা তার কানে লাগিয়ে দিলো।

তার সহকারী শব্দটা শুনে বিস্মিত হলো। “হায় ঈশ্বর। এটাতো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আমরা করবোটা কি?”

সোনারম্যান ইতিমধ্যেই তার ক্যাপ্টেনকে ফোন করতে শুরু করে দিয়েছে।

সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন যখন সোনার-রুমে এসে পৌঁছালো টেকনিশিয়ান লোকটা তখন। বড় স্পিকারে শব্দটা তাকে কোনোলো। ক্যাপ্টেন শুনলো, ভাবলেশহীনভাবে।

ধুপ। ধুপ। ধুপ।

ধুপ…ধুপ…ধুপ…

ধীরে ধীরে। শব্দটা ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে যেতে লাগলো।

“এটার অর্থ কি?” ক্যাপ্টেন জানতে চাইলো।

টেকনিশিয়ান গলাটা পরিষ্কার করে নিলো। “সত্যি বলতে কী, স্যার, এটা পানির উপর থেকে আসছে, আমাদের এখান থেকে তিন মাইল দূরে সেটা।”

৬২

সিনেটর সেক্সটনের বৈঠকখানার বাইরে ছায়া ঢাকা জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের দু’পা কাঁপতে লাগলো। এইমাত্র সে যা শুনেছে তার জন্যেই এই অবস্থা। পাশের ঘরের মিটিংটা এখনও চলছে। কিন্তু গ্যাব্রিয়েলের আর কিছু কোনোর দরকার নেই। সত্যটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।

প্রাইভেট স্পেস এজেন্সি থেকে সেক্সটন ঘুষ নিচ্ছেন। মারজোরি টেঞ্চ সত্যই বলেছে। গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। সে সেক্সটনকে বিশ্বাস করেছিলো। তারা জন্যে লড়াই করেছে। সে কীভাবে এটা করতে পারলো? গ্যাব্রিয়েল। সিনেটরকে জনসম্মুখে নিজের ব্যক্তি জীবন নিয়ে মিথ্যে বলতে দেখেছে, কিন্তু সেটা ছিলো রাজনীতি। এটাতো আইনের লঙ্ঘন। সে এখনও নির্বাচিত হয়নি, আর এরই মধ্যে হোয়াইট হাউজকে বিক্রি করতে শুরু করে দিয়েছে!

গ্যাব্রিয়েলের পেট মোচরাতে লাগলো, ভাবলো এখন কি করবে।

তার পেছনে একটা ফোন বাজছে, সেটা হলোওয়ের নিবরতা ভেঙে ফেললো। গ্যাব্রিয়েল অবাক হয়ে দেখে সেটা কাছের একটা ক্রোসেন্ট থেকে আসছে– আগত অতিথিদের রাখা। কোটের পকেটে থাকা কোনো সেলফোন।

“ক্ষমা করবেন, আমাকে,” টেক্সাসের লোকটা বললো। “এটা আমার ফোন।”

গ্যাব্রিয়েল শুনতে পেলো লোকটা তার দিকেই আসছে। সে সঙ্গে সঙ্গে হলওয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো। বাম দিকে একটা রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো সে। টেক্সাসের লোকটা ক্লোসেটের সামনে এসে পড়লো। গ্যাব্রিয়েল নিশ্চল ছায়া ঢাকা জায়গাতে দাঁড়িয়ে রইলো।

লোকটা ফোনে কথা বলছে, গ্যাব্রিয়েল শুনতে পেল।

“হ্যাঁ?… কখন?.সত্যি? আমরা টিভি ছেড়ে দেখছি। ধন্যবাদ।” লোকটা ফোন রেখে চলে গেলো। ফিরে গিয়েই বললো, “হেই! টিভিটা ছাড়। জাখ হার্নি নাকি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবে। আজ রাত আটটা বাজে। সব চ্যানেলে। হয় আমরা চায়নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কতে যাচ্ছি নয়তো, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এইমাত্র সাগরে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে।”

“তাহলে তো আবারো টোস্ট করার সময় এসে গেলো, কেউ একজন বললো।

সবাই হেসে ফেললো।

গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো রান্নাঘরটা একন ঘুরছে। আটটা বাজে। সংবাদ সম্মেলন? মনে হচ্ছে টেঞ্চ ধোকা দেয়নি। সে তাকে আটটার মধ্যে এফিডেফিটে স্বাক্ষর করতে বলেছিল। খুব বেশি দেরি হবার আগে সিনেটরর কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নাও, টেঞ্চ তাকে বলেছিল। গ্যাব্রিয়েলের ধারণা ছিল হোয়াইট হাউজ আগামীকালের পত্রিকায় খবরটা চাউড় করবে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারা টিভিতেই প্রথমে তথ্যটা প্রচার করবে।

প্রেসিডেন্ট এই নোংরা জিনিস নিয়ে টিভির পর্দায় আসবেন?

ঘরের সবাই টিভি দেখছে। ঘোষক বলছে, “হোয়াইট হাউজ এই জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো ধারণাই দেয়নি। নানা ধরণের অনুমান চলছে। কিছুকিছু রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার মনে করছেন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচনে দাঁড়ানো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবার ঘোষণা দিতে পারেন।”

ঘরের মধ্যে উৎফুল্ল ভাব দেখা গেলো।

অবাস্তব, গ্যাব্রিয়েল ভাবলো। এইসব নোংরা বিষয় নিয়ে বরং জীব হার্নি নতুন উদ্যমে নির্বাচনে নামতে যাচ্ছেন। তবে আজকের টিভি ভাষণে তিনি এসব প্রকাশ করতে যাচ্ছেন না। এটা নিশ্চিত। তিনি নিজের ইমেজ নষ্ট করবেন না। এই সংবাদ সম্মেলনটা অন্য কোনো বিষয়ে হবে।

সে তার হাত ঘড়িটা দেখলো। এক ঘণ্টারও কম সময় রয়েছে। তাকে এক্ষুণি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে জানে কার সাথে এখন কথা বলতে হবে তাকে। তার হাতে ধরা ছবির এনভেলপটা নিয়ে নিরবে এপার্টমেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো।

বের হবার সময় দেহরক্ষীকে দেখে মনে হলো সে স্বস্তি পেয়েছে। “ভেতরে খুব আনন্দ উল্লাস শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে বেশ ভালই দিয়েছেন।”

সে সৌজন্যবশত হেসে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো।

বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ক্যাবে উঠে পড়লো গ্যাব্রিয়ের। সে জানে সে কী করতে যাচ্ছে।

“এবিসি টেলিভিশন স্টুডিও,” ড্রাইভারকে বললো। “জলদি।”

৬৩

মাইকেল টোল্যান্ড হাত-পা ছড়িয়ে বরফের ওপর বিশ্রাম নেবার চেষ্টা করলো। তার হাত পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে। চোখের পাতা ভারি হয়ে গেলেও সে জোর করে খুলে রাখার চেষ্টা করছে।

বরফের ওপর এখন অদ্ভুত একটা নিরবতা নেমে এসেছে। রাচেল এবং কর্কি চুপ মেরে গেছে। বরফে আঘাত করাটা থেমে গেছে। হিমবাহ থেকে তারা যতোই দূরে সরে যাচ্ছে বাতাস ততোটাই শান্ত হয়ে উঠছে। টোল্যান্ড টের পেলো তার শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। তার শরীরের প্রধান প্রধান অঙ্গগুলো একে একে নিথর হয়ে যাবে।

হেরে যাওয়া এক যুদ্ধ, সে জানে।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কোনো যন্ত্রণা হচ্ছে না। সেই অধ্যায়টা সে পার করে এসেছে। টোল্যান্ডের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো।

সে টের পেলো তার মন পরাজয় মেনে নিয়েছে। সে উদালভাবে দূরের সাগরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ঠিক তখনই টোল্যান্ডের হেলুসিনেশন হতে লাগলো। অবাক করা হলেও সে হেলুসিনেশনে তাদের উদ্ধারের কোনো ছবি দেখলো না, কোনো উষ্ণতার অনুভবও করলো না। তার শেষ কিভ্রমটা খুবই আতংকজনক।

তাদের হিমশৈলের পাশেই বিশাল একটা লেভিয়াথান জেগে উঠলো, সমুদ্রপৃষ্ঠ চিড়ে সেটা বের হতে লাগলো। যেনো রূপকথার দানবের মতো– চকচকে, কালো আর ভয়ংকর। সেটার চারপাশে পানি গড়িয়ে পড়ছে। টোল্যান্ড জোর করে চোখের পাতা ফেললো। তার দৃষ্টিটা একটু পরিষ্কার হলো। দানবটা খুব কাছেই। তাদের বরফ খণ্ডের চারপাশে কোনো হাঙ্গর মাছের মতোই উদয় হয়েছে তাদের সামনে।

দানবটা থেকে ধাতব শব্দ হতে লাগলো। ঘরঘর শব্দ। যেনো বরফে দাঁত দিয়ে কামড়ানো হচ্ছে। কাছেই এগিয়ে আসছে সেটা।

রাচেল…

টোল্যান্ডের মনে হলো কেউ তাকে ধরে ফেলেছে।

তারপরই সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো।

৬৪

গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ বেশ হন্তদন্ত হয়েই এবিসি নিউজের প্রোডাকশন রুমে ঢুকলো। তারপরও ঘরের অন্যদের চেয়ে তার গতি একটু ধীর গতিরই মনে হলো। এই নিউজ-রুমটা চব্বিশ ঘণ্টাই সরগরম থাকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে। চোখ কটমট করে সম্পাদকরা একে অন্যের সাথে চিৎকার করে কথা বলছে, ফ্যাক্স আসছে, আর কোমল পানীয়ের ছড়াছড়ি চারদিকে।

গ্যাব্রিয়েল এবিসি-তে এসেছে ইয়োলান্ডা কোল’র সঙ্গে দেখা করতে।

এ সময়ে ইয়োলান্ডাকে তার নিজের কাঁচে ঘেরা অফিসেই পাওয়া যায়। আজ রাতে, অবশ্য ইয়োলান্ডাকে তার নিজের অফিসের বাইরেই দেখা গেলো। সে গ্যাব্রিয়েলকে দেখেই হাত নাড়লো। “গ্যাব!” ইয়োলান্ডা বাটিকের পোশাক আর কয়েক পাউন্ডের অলংকার পরে রয়েছে যেমনটি সে সব সময়ই পরে থাকে। সে সামনে এসে হাত নেড়ে বললো, “গলায় মেলো?”

ষোলো বছর ধরে ইয়োলান্ডা এবিসি’র কনটেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করছে। শক্ত সামর্থ্য শরীরের, সাহসী একজন নারী সে। যাকে সবাই আদর করে ‘আম্মিজান বলে ডাকে। রাজনীতিতে নারী এরকম এক সেমিনারে গ্যাব্রিয়েলের সাথে তার দেখা হয়েছিলো। সবাই যখন গ্যাব্রিয়েলকে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করছিলো তখন মাতৃসুলভ ভঙ্গীমায় ইয়োলান্ডা গ্যাব্রিয়েলকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলো। সেই থেকে গ্যাব্রিয়েল প্রতি মাসে একবার করে হলেও এখানে এসে তাকে হ্যালো বলে যায়।

গ্যাব্রিয়েল তাকে জড়িয়ে ধরলো।

ইয়োলান্ডা একটু পিছু হটে তার দিকে তাকালো। “তোমাকে তো একশ বছরের বয়স্ক দেখাচ্ছে, মেয়ে হয়েছে কি?”

গ্যাব্রিয়েল নিচু কণ্ঠে বললো, “আমি সাস্যায় পড়ে গেছি, ইয়োলান্ডা।”

“এটাতো কেমন জানি কথা হয়ে গেলো। তোমার প্রার্থীতে ভালোই করছে।”

“আমরা কি একটু নিরিবিলিতে কথা বলতে পারি?”

“খারাপ সময়ে এসে পড়েছ, হানি। আধ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেটা নিয়ে আমরা ভীষণ ব্যস্ত রয়েছি।”

“আমি জানি সংবাদ সম্মেলনটা কি নিয়ে হচ্ছে।”

ইয়োলান্ডা তার চশমাটার ফাঁক দিয়ে তাকালো। তাকে সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। “গ্যাব, হোয়াইট হাউজের আমাদের নিজস্ব সংবাদাতা কিন্তু একেবারে অন্ধকারে রয়েছে। তুমি বলছো সেক্সটনের নির্বাচনী প্রচারণা দলের কাছে আগাম খবর রয়েছে?”

“না, আমি বলছি আমার কাছে আগাম খবর রয়েছে। আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও। সব খুলে বলছি।”

ইয়োন্ডা লাল এনলেপটার দিকে তাকালো। “এটাতে হোয়াইট হাউজের। তুমি এটা পেলে কোত্থেকে?”

“আজ বিকেলে মারজোরি টেঞ্চের সাথে একটি প্রাইভেট মিটিং-এ।”

ইয়োলান্ডা কিছুক্ষণ চেয়ে বললো, “আসে, আমার সাথে।”

ইয়োলান্ডার কাছে ঘেরা অফিসে ঢুকে গ্যাব্রিয়েল একটু আশ্বস্ত হলো। ইয়োলান্ডা মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো। তার কাছে কোনো কিছুই অস্বাভাবিক ঠেকে না, দীর্ঘদিন ওয়াশিংটনে সাংবাদিকতা করার কারণে।

“ওহ্ গ্যাব, আমার মনে হচ্ছে তুমি আর সেক্সটন লেগে গেছে। অবাক করার কিছুই নেই। তার তো এ ব্যাপারে সুনাম রয়েছেই। আর তুমি হলে গিয়ে সুন্দরী এক মেয়ে। ছবিগুলোর ব্যাপারটা খারাপই। অবশ্য আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।”

এটা নিয়ে চিন্তিত নও?

গ্যাব্রিয়েল ব্যাখ্যা করে বললো যে, টেঞ্চ সেক্সটনকে স্পেস কোম্পানি থেকে ঘুষ নেবার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে আর গ্যাব্রিয়েলও এসএফএফ’র সাথে সিনেটরের থাবার্তা আড়ি পেতে শুনে ফেলেছে। এসব বলার পরও ইয়োলান্ডাকে তেমন বিস্মিত বলে মনে হলো না– যতক্ষণ না গ্যাব্রিয়েল তাকে বললো এ ব্যাপারে সে কী ভাবছে।

এবার ইয়োলান্ডাকে চিন্তিত মনে হলো “গ্যাব্রিয়েল, তুমি যদি ঘোষণা দাও যে তুমি সেক্সটনের সাথে শুয়েছে, তবে সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি, এটা হবে খুবই বাজে চাল। এটা নিয়ে তোমার অনেক ভেবে দেখতে হবে। তারপর ঠিক করবে কি করবে তুমি।”

“তুমি শুনছে না। আমার হাতে সে সময় নেই।”

“আমি ঠিকই শুনছি, সুইটহার্ট। সময় যতো কমই থাকুক, কিছু কাজ রয়েছে যা তোমার করা ঠিক হবে না। তুমি যা খুশি তাই করো। কিন্তু একজন ইউএস সিনেটরকে যৌন কেলেংকারীতে পচাতে পারে না। এটা আত্মঘাতি হবে। আমি তোমাকে বলছি মেয়ে, তুমি যদি কোনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এভাবে পথে নামিয়ে দাও, তবে তোমার উচিত হবে গাড়িতে করে যতদূর সম্ভব ডিসি থেকে দূরে চলে যেতে। তুমি চিহ্নিত হয়ে যাবে। একজন প্রার্থীকে তুলে ধরার জন্য অনেক লোককে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। বিশাল টাকা আর ক্ষমতাকে বিপদে ফেলা হবে– এরকম ক্ষমতার জন্য খুন পর্যন্ত করা যায়।”

গ্যাব্রিয়েল চুপ মেরে গেলো।

ব্যক্তিগতভাবে,” ইয়োলান্ডা বললো, “আমি মনে করি টেঞ্চ তোমাকে ভড়কে দিতে। চেয়েছিলো– যাতে করে তুমি বোকার মতো কিছু করে বসে। সম্পর্কের কথাটা স্বীকার করে নাও।” ইয়োলান্ডা লাল এনভেলপটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “তোমার আর সেক্সটনের এইসব ছবিগুলো একেবারেই মূল্যহীন হবে, যদি তুমি এ সম্পর্কের কথাটা অস্বীকার করো। হোয়াইট হাউজ জানে সেক্সটন এসব অস্বীকার করে উল্টো প্রেসিডেন্টকেই জোছুরির জন্য অম্মুিক্ত করে ফেলবেন। তাতে প্রেসিডেন্টের ক্ষতিই হবে।”

“আমিও সেটা ভেবেছি। কিন্তু ঘুষ নেবার ব্যাপারটা–”

“হানি। একবার ভাবো। হোয়াইট হাউজ যদি এ নিয়ে এখনও কিছু প্রকাশ করে না থাকে, তার মানে এটা করার কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। প্রেসিডেন্ট নেতিবাচক প্রচারুণীর ব্যাপারে ঘোর বিরোধী। আমার ধারণা এ্যারোস্পেস এজেন্সিকে বাঁচাতেই টেঞ্চ তোমাকে দিয়ে এটা করাতে চাচ্ছে। তোমার প্রার্থীর পিঠে তোমাকে দিয়েই ছুরি মারাতে চাচ্ছে।”

গ্যাব্রিয়েল কথাটা বিবেচনা করলো। তারপরও সন্দেহটা পুরোপুরি গেলো না। “ইয়োলান্ডা, প্রেসিডেন্ট যদি ঘুষ আর যৌনতা নিয়ে না-ই বলবেন, তবে তিনি আজ কী বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন?”

ইয়োলান্ডাকে খুব বিস্মিত মনে হলো। “দাঁড়াও দাঁড়াও, তোমার ধারণা তিনি সেক্সটন আর তোমাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন?”

“অথবা ঘুষ নিয়ে। অথবা দুটোই। টেঙ্ক আমাকে বলেছে আমি যদি আটটার মধ্যে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর না করি তবে প্রেসিডেন্ট আজ রাতে সেটা–”

ইয়োলান্ডা হেসে ফেললো। “ওহ্। প্লিজ! তুমি আমাকে খুন করে ফেলবে।”

গ্যাব্রিয়েল ঠাট্টার মেজাজে ছিলো না।”কি?”

“গ্যাব, শোনো, আমার কথাটা বিশ্বাস করো। জাখ হার্নি এসব নোংরা কথা বলবেন না, এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।”

“তাহলে ঘুষের কথাটা বলবেন। গ্যাব্রিয়েল বললো।

“তুমি কি নিশ্চিত, তিনি এটাই করতে যাচ্ছেন?” শক্তকণ্ঠে ইয়োলান্ডা বললো। “তুমি কি যথেষ্ঠ নিশ্চিত জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সামনে নিজের স্কার্ট খুলে দেখাবে? ভেবে দেখো। এরকম নির্বাচনী অনুদান আর ঘুষের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নেই। নির্বাচনী প্রচারুণীয়, বন্ধুভাবাপন্ন গোষ্ঠী টাকা দিয়ে সাহায্য করতেই পারে। হয়তো সেক্সটনের মিটিংটা একেবারেই বৈধ।”

“তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন, গ্যাব্রিয়েল বললো। “তাই না?”

“অথবা বলতে পারো, মারজোরি টেঞ্চ তোমাকে সেটা বিশ্বাস করিয়েছেন।”

গ্যাব্রিয়েল এবার ধন্দে পড়ে গেলো।

“আজকে হোয়াই হাউজ তোমাকে নিয়ে একটু খেলেছে।”

ইয়োলান্ডার ফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোনের কথাটা শুনে মাথা নাড়লো। মজার তো,” সে বললো। “আমি আসছি, ধন্যবাদ।

ইয়োলান্ডা ফোনটা রেখে ভুরু কুকালো “গ্যাব, মনে হচ্ছে আমার কথাটাই ঠিক।”

“কি হয়ছে?”

“ঠিক করে এখনও বলতে পারবো না– কিন্তু এটা বলতে পারবো, প্রেসিডেন্টের আজকের সংবাদ সম্মেলনটা যৌনতা কিংবা ঘুষ নিয়ে হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত।”

গ্যাব্রিয়েল যেনো আশার আলো দেখতে পেলো। “তুমি কি করে জানলে?”

“ভেতরের কেউ একজন এইমাত্র ফাঁস করে দিয়েছে, সংবাদসম্মেলনটা নাসা সম্পর্কিত।

গ্যাব্রিয়েল ধপাস করে বসে পড়লো। নাসা?”

ইয়োন্ডা চোখ টিপলো। “আজকের রাতটা সৌভাগ্যের রাত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট সেক্সটন চাপে পড়ে হয়তো আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কর্মসূচীটা স্থগিত করতে যাচ্ছেন।”

স্পেস স্টেশন বন্ধ করে দেবার জন্য সাংবাদিক সম্মেলন? গ্যাব্রিয়েল ভাবতে পারলো না।

ইয়োলান্ডা উঠে দাঁড়ালো। “আজকে টেঞ্চ যা করেছে, সেটা হয়তো পরিস্থিতিটা ঘুরিয়ে দেবার জন্য শেষ একটা প্রচেষ্টা ছিলো। যাহোক, আমাকে অনেক কাজ করতে হবে। এখানেই বসে থাক, এটা আমার উপদেশ। টেলিভিশন দেখো। আর ঐ এনভেলপটা আমার কাছে দাও।”

“কি?”

“এসব কিছু শেষ হওয়া পর্যন্ত এই ছবিগুলো আমার ডেস্কে তালা মারা থাকুক। আমি নিশ্চিত হতে চাই, তুমি বোকার মতো কিছু করে বসবে না।”

গ্যাব্রিয়েল এনভেলপটা দিয়ে দিলো তার কাছে।

ইয়োলান্ডা সেটা তার ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে তালা মেরে দিলো। “তুমি আমাকে ধন্যবাদ দেবে, গ্যাব। কসম খেয়ে বলছি। শক্ত করে বসে থাকো, মনে হচ্ছেভালো খবর আসছে।”

গ্যাব্রিয়েল একা বসে রইলো কাঁচে ঘেরা ঘটাতে। ইয়োন্ডার উৎসাহব্যঞ্জক কথাবার্তায়। তার মেজাজ কিছুটা ভালো হয়ে গেছে। গ্যাব্রিয়েল কেবল ভাবতে লাগলো আজকের দুপুরে টেঞ্চের তৃপ্তির হাসিটার কথা। গ্যাব্রিয়েল ভাবতেই পারছে না প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলনে বলবেনটা কি। কিন্তু সেটা নিশ্চয় সেক্সটনের জন্য ভালো হবে না।

৬৫

রাচেল সেক্সটনের মনে হলো তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

আগুনের বৃষ্টিতে ভিজছি আমি!

সে চোখ খুলতে চেষ্টা করলো, কিন্তু ধোঁয়াটে অবয়ব আর তীব্র আলো ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না। তার চারপাশেই বৃষ্টি হচ্ছে। গরম বৃষ্টি। ঝরে পড়ছে তার নগ্ন চামড়ার ওপরে। সে টাইলসের ওপর শুয়ে আছে। তার নাকে কেমিক্যালের গন্ধ লাগলো। হয়তো ক্লোরিন। সে হামাগুড়ি দেবার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। এক জোড়া শক্ত হাত তাকে জোর করে শুইয়ে দিলো।

“যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন, একটা পুরুষ কণ্ঠ তাকে বললো। কথা শুনে মনে হচ্ছে আমেরিকান।”খুব জলদিই এটা শেষ হয়ে যাবে।”

ক শেষ হবে? রাচেল ভাবলো।

যন্ত্রণা? আমার জীবন? সে ভালো করে তাকাতে চাইলো। ঘরটাতে তীব্র আলো। সে আঁচ করলো ঘরটা ছোট। নিচু ছাদের। গুমোট।

“আমি পুড়ে যাচ্ছি!” রাচেলের কথাটা ফিসফিসানি বলে মনে হলো।

“আপনি ভালই আছে,” কণ্ঠটা বললো। “এই পানিটা হলো হালকা গরম পানি, বিশ্বাস করুন।

রাচেল বুঝতে পারলো তার গায়ে পোশাক বলতে কিছুই নেই। কেবলমাত্র ভেজা অন্ত বাস পরে রয়েছে সে। এর জন্যে অবশ্য কোনো লজ্জা লাগলো না; তার মন অন্যসব প্রশ্নে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

রাচেল ভালো করে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন মানুষ আশে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার গায়েই নীলরঙের জাম্পসুট পরা। সে কথা বলতে চাইলো, কিন্তু ঠোঁট নাড়াতে পারলো না। তার মাস পেশী অসাড় হয়ে আছে।

“হতি পা নাড়াতে থাকুন, একটা লোক বললো। আপনার মাংসপেশীতে রক্ত চলাচল করার দরকার রয়েছে। ডাক্তারের মতো কথা বলছে লোকটা। “অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করার চেষ্টা করুন, যতটুকু পারেন।”

রাচেল নড়াতে পারছেনা।শক্ত হয়ে আছে সব। ব্যথাও হচ্ছে।

“আপনার হাত আর পা নাড়ল, লোকটা তাড়া দিয়ে বললো। “যত ব্যথাই লাগুক, রুন।”

রাচেল চেষ্টা করলো। প্রতিটি নড়াচড়াতে তার মনে হলো ছুরি দিয়ে যেনো গিটগুলোতে আঘাত করা হচ্ছে। রাচেল টের পেলো কেউ তাকে ইনজেকশন দিচ্ছে। ব্যথাটা সঙ্গে সঙ্গেই কমতে ওজু করলো। স্বস্তি ফিরে এলো। তার মনে হলো সে আবার নিঃশ্বাস নিতে পারছে।

এবার নতুন একটা অনুভূতি হলো তার, সারা শরীর জুড়েই– সব জায়গাতেই যেটা লাগছে–তী খেচা। লক্ষ লক্ষ সূচ যেনো সারা শরীরে বিদ্ধ হচ্ছে।

হায় ঈশ্বর, ব্যথা লাগছে। রাচেলের খুবই দূর্বল লাগছে। সে চোখ বন্ধ করে ফেললো, চারপাশ থেকে পালাবার জন্য।

অবশেষে, সূচ ফোঁটার যন্ত্রণাটা উধাও হয়ে গেলে গরম পানির বৃষ্টিটাও থেমে গেলো। রাচেল চোখ খুললো, সবকিছুই ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছে এখন।

তখনই সে তাদেরকে দেখতে পেলো।

কর্কি এক টোল্যাভ তার পাশেই শুয়ে আছে, গুটিসুটি মেয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায়। রাচেল বুঝতে পারলে তারাও তার মত যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে দিয়ে এসেছে।

মাইকেল টোল্যান্ডের বাদামী চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। সে যখন রাচেলকে দেখতে পেলো, ক্লান্তভাবে হাসলো।

রাচেল উঠে বসার চেষ্টা করলো। তারা তিন জনই অর্ধনগ্ন হয়ে ছোট একটা শাওয়ার রুমে পড়ে রয়েছে।

৬৬

শক্ত হাত তাকে তুলে ঠালো।

রাচেল টের পেলো শক্ত হাতগুলো তার শরীর মুছে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে দিচ্ছে। তাকে এক ধরণের মেডিক্যাল বেডে শোয়ানো হলো, সেখানে হাত-পা মেসেজ করে তাকে আরেকটা

ইনজেকশন দেয়া হলো।

“এডরেনালাইন,” কেউ একজন বললো।

রাচেল টের পেলো ওষুধটা তার শরীরের ধমনী আর শিরাতে জীবনী শক্তি দিয়ে দিচ্ছে। তার মাংসপেশীকে সজীব করে তুলছে। রাচেলের শরীরে রক্তচলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে এলো।

মৃত্যু থেকে ফিরে আসা।

সে আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কর্কি আর টোল্যান্ড কাছেই শুয়ে আছে, তাদের শরীরও মেসেজ করা হচ্ছে। তাদেরকেও ইনজেকশন দেয়া হলো। রাচেলের কোনো সন্দেহ নেই যে, এই রহস্যময় লোকগুলোই তাদের জীবন বাঁচিয়েছে। তাদের অনেকেই পানিতে ভিজে গেছে। রাচেলদেরকে সাহায্য করতে গিয়েই এমনটি হয়েছে। তারা কারা অথবা কিভাবে তাদেরকে খুঁজে পেলো সেটা সে বুঝতে পারলো না সে। এতে অবশ্য এখন কিছুই যায় আসে না। আমরা বেঁচে গেছি।

“আমরা কোথায় … আছি?” রাচেল কোনো মতে এই প্রশ্নটা করতে পারলো। তার খুব মাথা ব্যথা করছে।

যে লোকটা রাচেলকে মেসেজ করছে সে জবাব দিলো, “আপনারা এখন আছেন লস। এ্যাঞ্জেলেসের এক মেডিক্যাল ডেক-এ”

“ডেকএ!” কেউ একজন বললো।

রাচেল উঠে বসার চেষ্টা করলো। নীল রঙের জামা পরা একজন তাকে উঠে বসতে সাহায্য করে গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে দিলো। রাচেল চোখ ঘষে চেয়ে দেখলো ঘরে কেউ ঢুকছে।

আগত লোকটি শক্তিশালী এক আফ্রিকান-আমেরিকান ভদ্রলোক। হ্যান্ডসাম এবং কর্তৃত্বপরায়ণ। তার গায়ে খাকি পোশাক। “হ্যারল্ড ব্রাউন, সে ঢুকতে ঢুকতে বললো। তার কণ্ঠটা গভীর আর আদেশমূলক। “ইউএসএস শার্লট এর ক্যাপ্টেন। আর আপনারা?”

ইউএসএস শার্লট, রাচেল ভাবলো।

নামটা খুবই পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। “সেক্সটন ..” সে জবাব দিলো। “আমি রাচেল সেক্সটন।”

লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো। তাকে খুব ভালো করে দেখে নিলো। “তাইতো বলি, তাহলে আপনিই।”

রাচেল কিছুই বুঝতে পারলো না। সে আমাকে চেনে? রাচেল নিশ্চিত সে লোকটাকে চিনতে পারছে না। রাচেল লোকটার বুকে ইউএস নেভি’র ইগল পাখির থাবায় ধরা নোঙরের ছবিটার লোগো দেখতে পেলো।

এবার সে বুঝতে পারলো শার্লট নামটি।

“স্বাগতম আমাদের এখানে, মিস্ সেক্সটন, ক্যাপ্টেন বললো। “আপনি এই জাহাজের অনেক তথ্যই রিপোর্ট আকারে একাধিকবার দিয়েছেন। আমি জানি আপনি কে।”

“কিন্তু আপনারা এই পানিতে করছেনটা কি?” সে হুট করে বললো।

তার মুখটা কিছুটা শক্ত হয়ে গেলো। “সত্যি বলতে কী, মিস সেক্সটন, আমিও আপনাকে ঠিক একই প্রশ্নটা করতে যাচ্ছিলাম।”

“আমাকে এনআরওর ডিরেক্টর উইলিয়াম পিকারিংয়ের সাথে কথা বলতে হবে, সে ক্যাপ্টেনকে বললো। “একান্তে এবং এক্ষুণি।”

ক্যাপ্টেন ভুরু তুললো। বোঝাই যাচ্ছে নিজের জাহাজে অন্যের হুকুম তামিল করার সাথে সে মোটেও অভ্যস্ত নয়।

ক্যাপ্টেন কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার শরীরের তাপমাত্রা আগে স্বাভাবিক হোক, তারপর আমি এনআরও’র ডিরেক্টরের সাথে কথা বলিয়ে দেবো।”

“এটা খুবই জরুরি, স্যার। আমি–”

রাচেল একটু থামলো। তার চোখ পাশেই একটা দেয়াল ঘড়ির দিকে গেলো।

১৯:৫১

রাচেল পলক ফেললো। “ঘড়িটা কি… ঠিক আছে?”

“আপনি নেভির রণতরীতে আছেন, ম্যাম, আমাদের ঘড়ি ঠিকই থাকে।

“আর এটা … ইস্টার্ন টাইমে?”

“৭টা ৫১ মিনিট। আমরা নরফোক-এর বাইরে আছি।”

হায় ঈশ্বর! সে ভাবলো, অবাক হয়ে গেলো। এখনও আটটা বাজেনি? তাহলে তো প্রেসিডেন্ট এখনও উল্কার খবরটি ঘোষণা দেননি! তাঁকে থামানোর সময় এখনও রয়েছে। সে সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। “প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলার দরকার আমার, এক্ষুণি।”

ক্যাপ্টেন হতভম্ব হয়ে গেলো। “কোনে প্রেসিডেন্টের সাথে?”

“আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের।”

“আমার মনে হয় আপনি পিকারিং এর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন।”

“আমার হাতে সময় নেই। প্রেসিডেন্টকেই আমার দরকার।”

ক্যাপ্টেন একটুও নড়লো না। “আমি যতটুকু বুঝি, প্রেসিডেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই। আমার সন্দেহ, এ মুহূর্তে তিনি কোনো ফোন গ্রহন করবেন না।”

রাচেল সোজা হয়ে দাঁড়ালো। “স্যার, আপনাকে আমি বোঝাতে পারবো না ঘটনাটা কি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট খুব বড় একটি ভুল করতে যাচ্ছেন। আমার কাছে যে খবর রয়েছে সেটা তার জানা খুবই জরুরি। এখনই। আপনি আমাকে বিশ্বাস করুন।”

ক্যাপ্টেন তার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে ভেবে নিজের ঘড়িটা দেখে নিলো। “নয় মিনিট? এতো স্বল্প সময়ে তো আমি আপনাকে হোয়াইজ হাইজের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবো না। আমি কেবল রেডিও-ফোনের কথা প্রস্তাব করতে পারি। ওতে অবশ্য নিরাপত্তা নেই। আর এন্টেনাটা ঠিকঠাক করতে কিছু সময় লাগবে আমাদের–”

“এক্ষুণি করুন!”

.

হোয়াইট হাউজের টেলিফোন সুইচবোর্ডটা ইস্ট উইংয়ের নিচের তলায় অবস্থিত। তিন জন। সুইচ-বোর্ড অপারেটর সব সময় দায়িত্বে থাকে। এই মুহূর্তে দুজন বসে আছে। তৃতীয়। অপারেটর তাড়াহুড়ো করে বৃফিং রুমের দিকে চলে গেছে, সেই মেয়েটার হাতে একটা কর্ডলেস টেলিফোন সেট। সে কলটা ওভাল অফিসে দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই প্রেসবৃফিং দেবার জন্য রওনা হয়ে গেছেন। সে প্রেসিডেন্টের সহকারীদের সেলফোনে চেষ্টা করছে। কিন্তু সংবাদসম্মেলন শুরু হবার ঠিক আগেই সব ধরণের সেলফোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

এই মুহূর্তে ফোন করাটা যে সমীচীন নয় তা সবাই জানে। তারপরও হোয়াইট হাউজের লিয়াজো যখন বলে খুবই জরুরি, তখন উপায় থাকে না। প্রশ্নটা হলো, সে সময় মতো ওখানে পৌঁছতে পারবে কিনা।

.

ইউএসএস শার্লট এর ছোট্ট মেডিক্যাল অফিসে বসে কানে ফোন লাগিয়ে রাচেল সেক্সটন প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। টোল্যান্ড আর কর্কি পাশেই বসে আছে। তারা এখনও কাঁপছে। কর্কির গালে পাঁচটি সেলাই দেয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে বিশেষ এক ধরণের থিনসুলেট থার্মাল অন্তর্বাস পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার ওপরে রয়েছে নেভিদের মোটা উলের জামা আর বুট জুতা। হাতে গরম কফির মগ নিয়ে রাচেল দাঁড়িয়ে আছে, নিজেকে এখন পুরোপুরি মানুষের মতোই অনুভূত হচ্ছে তার।

“এতোক্ষণ লাগছে কেন?” টোল্যাভ তাড়া দিলো। “এখন তো সাতটা ছাপান্ন বাজে!”

রাচেল ভাবতেই পারছে না সে হোয়াইট হাউজের একজন অপারেটরকে রতে পেরেছে। রাচেলের কাছ থেকে সংক্ষেপে সব শুনে সে সহমর্মী হয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে লাইনটা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে।”

চার মিনিট, রাচেল ভাবলো। জলদি করো।

চোখ বন্ধ করে রাচেল অপেক্ষার সময়টা পার করতে চাইলো।

“তিন মিনিট বাকি আছে!” টোল্যান্ড বললো। তাকে খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে এখন।

রাচেল এবার সত্যি নার্ভাস হয়ে গেলো। এত দেরি হচ্ছে কেন? প্রেসিডেন্ট কেন তার ফোনটা নিচ্ছে না? এরকম ডাটা নিয়ে যদি জাখ হার্নি জনগণকে বলেন–

রাচেল রিসিভারটা সজোরে ঝাঁকালো। ফোনটা ধরুন।

.

অপারেটর যখন বৃফিং রুমে ঢুকলো, দেখতে পেলো মঞ্চের সামনে স্টাফরা জড়ো হয়ে আছে। সবাই বেশ উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে বিশ গজ দূরে প্রেসিডেন্টকে দেখতে পেলো। তিনি অপেক্ষা করছেন। মেক-আপ ম্যানরা এখনও তার মুখে একটু ঘষামাজা করে নিচ্ছে।

“একটু যেতে দিন!” অপারেটর বললো। ভীড় ঠেলে এগোবার চেষ্টা করলো সে। “প্রেসিডেন্টের জন্য ফোন আছে। এক্সকিউজ মি। আসছি!”

“দুমিনিটের মধ্যে লাইভ প্রচার শুরু হবে!” মিডিয়া সমন্বয়কারী জানালো।

অপারেটর এগোতে এগোতে বললো, “প্রেসিডেন্টের ফোন!”

তার সামনে পর্বত প্রমাণ বাঁধা এসে দাঁড়ালো। মারজোরি টেঞ্চ। “কী হচ্ছে?”

“আমার কাছে জরুরি,” অপারেটর নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললো, “… একটা ফোন আছে, প্রেসিডেন্টের জন্য।”

টেঞ্চ অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো।”এখন নয়। তুমি এটা দেবে না!”

“এটা রাচেল সেক্সটনের কাছ থেকে এসেছে। সে বলেছে এটা খুবই জরুরি।”

টেঞ্চের চেহারায় এখন রাগের চেয়েও বেশি বিহ্বলতা প্রকাশ পেলো। “এটা তো হাউজের লাইন, কর্ডলেস ফোনটার দিকে তাকিয়ে টেঞ্চ বললো, “এটা নিরাপদ নয়।”

“না, ম্যাম। সে রেডিও ফোন থেকে করেছে। সে বলছে এক্ষুণি তার প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে হবে।”

নব্বই সেকেন্ড বাকি।

টেঞ্চ শীতল চোখে তাকিয়ে বললো, “আমাকে দাও ফোনটা।”

অপারেটরের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। “মিস সেক্সটন প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন, সরাসরি। সে আমাকে বলেছে তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনটা স্থগিত রাখতে।”

টেঞ্চ অপারেটরের কাছে এগিয়ে এলো। নিচু স্বরে বললো, “শোনো, তুমি প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষের কন্যার কাছ থেকে আদেশ নিতে পারো না, আমার কাছে সেটা দিয়ে দেবে। বুঝতে পেরেছে।”

অপারেটর প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালো, তাকে এখন মাইক্রোফোন টেকনিশিয়ানরা ঘিরে রেখেছে।

ষাট সেকেন্ড বাকি! টিভি সুপারভাইজার চিৎকার করে বললো।

.

শালর্টে রাচেল সেক্সটন অস্থির হয়ে পায়চারী করছে। অবশেষে সে ফোনে একটা ক্লিক শব্দ শুনতে পেলো।

একটা ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠ কোনো গেলো। “হ্যালো?”

“প্রেসিডেন্ট হার্নি?” রাচেল উদগ্রীব হয়ে বললো।

“মারজোরি টেঞ্চ বলছি। আমি প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা। তুমি যেনো ফোন করে থাকে না কেন, হোয়াইট হাউজে এখন রঙ্গ-তামাশা করলে তার পরিণাম–”

হায় ঈশ্বর! “এটা রঙ্গ-তামাশা নয়! আমি রাচেল সেক্সটন। আমি আপনাদের এনআরও’র লিয়াজো এবং–”

“আমি জানি রাচেল সেক্সটন কে, ম্যাম। আমি এ ব্যাপারে সন্দেহ করছি যে আপনি রাচেল নন। আপনি একটি অরক্ষিত লাইনে ফোন করে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটাতে চাচ্ছেন।”

“শুনুন,” রাচেল ফুঁসে উঠলো। আমি আপনার সব স্টাফদের কাছে কয়েক ঘন্টা আগে উল্কাখণ্ডের ব্যাপারে বৃক্ষ করেছি। আপনি সামনের সারিতে বসেছিলেন। আর কোনো প্রশ্ন?”

টেঞ্চ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। “মিস্ সেক্সটন, এসবের মানে কী?”।

“এর অর্থ হলো, এক্ষুণি প্রেসিডেন্টকে থামান! তার কাছে উল্কা সম্পর্কিত যে তথ্য উপাত্ত আছে সেটাতে ভুল রয়েছে। আমরা এইমাত্র জানতে পেরেছি উল্কাণ্ডটি বরফের নিচে ঢোকানো। হয়েছে। জানি না কারা করেছে, কেন করেছে! কিন্তু এটা সত্য। প্রেসিডেন্ট মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছেন। আমার উপদেশ হলো–

“একটা মিনিট অপেক্ষা করুন!” টেঞ্চ নিচু কণ্ঠে বললো। “আপনি কি জানেন আপনি কি বলছেন?”

“হ্যাঁ! আমার সন্দেহ নাসা প্রধান এটি সাজিয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট হার্নি তার ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছেন। আমি তাকে ব্যাখ্যা করতে পারবো এখানে কি হয়েছে। কিন্তু আগে দশটা মিনিটের জন্য হলেও সংবাদসম্মেলনটা স্থগিত করুন। নুন, আমাদেরকে কে বা কারা খুন করার চেষ্টাও করেছে, ঈশ্বরের দোহাই!”

টেঞ্চের কণ্ঠটা শীতল হয়ে গেলো। মিস্ সেক্সটন, আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি। এই যদি আপনি জানেন তো সেটা কর্মচারীদের বৃফ করার আগেই ভাবা উচিত ছিলো।”

কী?” সেকি শুনছে না?

“আমি আপনার এই কাজকর্মে খুবই অবাক হচ্ছি। কী ধরণের ইন্টেলিজেন্সের লোক আপনি, রেডিও ফোন দিয়ে হোয়াইট হাউজে ফোন করেছেন? আবার বলছেন খুবই গোপনীয় ব্যাপার সেটা। অবশ্যই আপনি আশা করছেন এইসব কথাবার্তা কেউ ইন্টাসষ্ট করবে।”

“নোরা ম্যাঙ্গোর খুন হয়েছে এজন্যে। ডক্টর মিংও মারা গেছেন। আপনাকে সতর্ক করে দেবার দরকার–

“ব্যস, থামুন। আমি জানি না আপনি কী খেলা খেলছেন। একটু আগে আপনি নিজে তথ্যটার পক্ষে ছিলেন, এখন এমন কি হলো মত বদলিয়ে ফেললেন, আমি অবশ্য কল্পনা করতে পারি। যাহোক, এরকম অর্থহীন কথা বলতে থাকলে হোয়াইট হাউজ এবং নাসা এতো দ্রুত আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবে যে, আপনি আপনার সুটকেস গোছাতেও সময় পাবেন না। তার আগেই জেলে চলে যাবেন।”

রাচেল কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলো না।

“জাখ হার্নি আপনার প্রতি খুবই সদাশয়,” টেঞ্চ রেগে বললো। “আর সত্যি বলতে কী এসব হলো সেক্সটনের সস্তা নাটক। এটা এক্ষুণি বন্ধ করুন। তা না হলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। কসম খেয়ে বলছি।”

লাইনটা কেটে গেলো।

রাচেলের মুখটা হা হয়ে থাকলো, সেই সময়েই ক্যাপ্টেন দরজায় নক্‌ করলো।

“মিস সেক্সটন?” ক্যাপ্টেন উঁকি মেরে বললো। “আমরা কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেডিওর সিগনাল ধরতে পেরেছি। প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি এইমাত্র তার সংবাদ সম্মেলন শুরু করেছেন।”

.

হোয়াইট হাউজের বৃফিং রুমের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে জাখ হার্নি মিডিয়ার লাইটের উত্তাপটা টের পেলো আর তিনি জানতেন সারা পৃথিবী তাকে দেখছে। এই বৃফিং রুমে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। যারা টেলিভিশনে কিংবা রেডিওতে এই অনুষ্ঠানটা দেখছে না বা শুনছে না, তাদের কাছে এই সম্মেলনের কথাটা প্রতিবেশী, সহকর্মী এবং পরিবারের কাছ থেকে শুনে নিয়েছে। আটটার মধ্যে, কেবল গুহাবাসী ছাড়া সবাই প্রেসিডেন্টের ঘোষণার বিষয়-বস্তুটা নিয়ে অনুমান করতে শুরু করে দিয়েছে। সারা বিশ্বের লক্ষ-কোটি মানুষ টিভি সেটের সামনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

এই মুহূর্তে জাখ হার্নি তার অফিসের সত্যিকারের ওজনটা প্রথমবারের মতো ভালভাবে টের পেলেন। সংবাদ সম্মেলনটা শুরু হবার আগ মুহূর্তে হার্নির মনে হচ্ছে কোথাও কিছু একটা হয়তো হয়েছে। একটু আগে তিনি কিছু একটা দেখেছেন।

এটা অবশ্য খুবই তুচ্ছ একটি ব্যাপার, কিন্তু তারপরও…

তিনি নিজেকে বললেন সেটা ভুলে যেতে। এটা তেমন কিছুই না। তারপরও সেটা খচখচ করছে তার মনের মধ্যে।

টেঞ্চ।

কিছুক্ষণ আগে, হার্নি দূর থেকে দেখেছেন, মারজোরি টেঞ্চ কর্ডলেস ফোনে কথা বলছিলো। এটা অদ্ভুত, কেননা হোয়াইট হাউজের একজন অপারেটর তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তার মুখে উদ্বিগ্নতা দেখা গেছে। হর্নি টেঞ্চের ফোনালাপটার কিছুই শুনতে পাননি। কিন্তু তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, ফোনে সে ঝগড়া করছিলো কারো সাথে। টেঞ্চের কথা বলার সময় হার্নি তার চেহারায় যে রাগ দেখেছেন সেটা তিনি খুব কমই দেখেছেন। তিনি একটু থেমে টেঞ্চের চোখের দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন।

টেঞ্চ বুড়ো আঙুলটা দেখিয়ে বোঝালো সবকিছু ঠিক আছে। হার্নি কখনও টেকে এভাবে বুড়ো আঙুল দেখাতে দেখেননি। স্টেজে ওঠার আগে এটাই শেষ দৃশ্য, যা হার্নি দেখলেন।

.

এলিসমেয়ার আইল্যান্ডের নাসা’র হাবিস্কেয়ারের প্রেস এরিয়ার ভেতরে নাসা প্রধান লরেন্স এট্রম দীর্ঘ সিম্পোজিয়াম টেবিলের মাঝখানে বসে আছে। তার দু’পাশে নাসা অফিসিয়াল আর বিজ্ঞানীরা বসে রয়েছে। তাদের সামনে রাখা টিভি পর্দায় প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনটা লাইভ দেখাচ্ছে।

“শুভরাত্রি,” হার্নি বললেন, তাকে খুব আড়ষ্ট মনে হলো। “আমার প্রিয় দেশবাসী এবং এই বিশ্বে আমাদের বন্ধুরা …”

এক্সট্রম ডিসপ্লে করা বিশাল পাথরটার দিকে তাকালো। তার পেছনে বিশাল আমেরিকার পতাকা টাঙানো আছে, সেই সাথে নাসার লোগো। জাখ হার্নি পুরো বিষয়টাকে রাজনৈতিক খেলার অংশে রপান্তরিত করে ফেলেছেন। হার্নির এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না।

।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নাসা প্রধান এবং তার স্টাফদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। তারপর, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর সর্ব উত্তর থেকে নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্টের সাথে নাসা যোগ দেবে এই তথ্যটা বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য।

এক্সট্রম তার অংশের জন্য অপেক্ষা করার সময় মনে হলো নিজের ভেতরে এক ধরণের লজ্জা গেড়ে বসেছে। সে জানে এরকমটি তার হবে। সে এটা প্রত্যাশাই করেছিলো।

সে মিথ্যে বলেছে… অসত্যকে সমর্থন করেছে।

যাইহোক, মিথ্যেটাকে এখন আর অবান্তর মনে হচ্ছে না। এট্রমের মনে বড়সড় একটি ভার গেঁড়ে বসেছে।

.

এবিসি প্রোডাকশন রুমের টেলিভিশনের প্যানেলের সামনে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ একদল অপরিচিত লোকের সাথে দাঁড়িয়ে টিভি দেখছে। গ্যাব্রিয়েল তার চোখ বন্ধ করলো, প্রার্থনা। করলো তার নিজের নগ্নছবি যেনো না দেখতে হয়।

.

সিনেট সেক্সটনের ঘরের মধ্যে উত্তেজনা। তাঁর অতিথিরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাদের কৌতূহলেী চোখ টিভি পর্দার দিকে।

জাখ হার্নি টিভি পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন কিছু একটা ঘোষণা দিতে। তাকে একটু দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হলো।

তাঁকে আড়ষ্ট দেখাচ্ছে, সেক্সটন ভাবলেন তাকে কখনও আড়ষ্ট দেখা যায় না।

“তাকে দেখুন, কেউ চাপা কণ্ঠে বললো। “খবরটা খারাপই হবে।”

স্পেস স্টেশন? সেক্সটন ভাবলো।

হার্নি ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিলেন। বন্ধুরা আমার, কয়েকদিন ধরেই আমি অস্থির ছিলাম এই ভেবে যে, ঘোষণাটা কীভাবে দেয়া যায় …”

তিনটি সহজ শব্দের মধ্য দিয়ে। সেক্সটন নিজে নিজে বললেন। আমরা এটা হারিয়েছি।

হানি কিছুক্ষণ এই বলে চললেন যে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে নাসা’কে কীভাবে নির্বাচনের ইসু বানানো হয়েছে আর এখন সময় এসেছে এব্যাপারে কিছু বলার, সেই সাথে ক্ষমা চাওয়ার।

আমি এই মুহূর্তের ঘোষণাটা দেবার জন্য অন্য যেকোন সময় হলেই বেশি পছন্দ করতাম।” তিনি বললেন, “রাজনীতির কারণে হয়তো এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটার গায়েও সন্দেহের আচড় লেগে যেতে পারে, তারপরও আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে, সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা আপনাদের না জানিয়ে পারছি না।”

তিনি একটু হাসলেন। মনে হচ্ছে মহাশূন্যের জাদু এমন কিছু যা মানুষের শিডিউল মেনে ঘটে না … এমনকি কোনো প্রেসিডেন্টের বেলায়ও।”

সেক্সটনের ঘরের সবাই একসঙ্গে ধাক্কা খেলে কি?

“দু’সপ্তাহ আগে, হার্নি বললেন, “নাসা’র পিওডিএস স্ক্যানার এলিসমেয়র আইল্যান্ডের মিলনে আইস শেলফে একটা জিনিস খুঁজে পেয়েছে।”

সেক্সটন আর অন্যেরা একে অন্যের দিকে দ্বিধাগ্রস্তভাবে তাকালো।

“নাসার এই স্যাটেলাইটটা বিশাল একটি পাখিরও আবিষ্কার করেছে বরফের দুশো ফিট নিচে।” হার্নি এবার হাসলেন। “নাসা সমস্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পেরেছে পাথর খণ্ডটি আসলে একটি উল্কাপিণ্ড।”

“একটি উল্কাপিণ্ড?” সেক্সটন দাঁড়িয়ে গেলেন। এটা কোনো খবর হলো?”

“নাস আইস শেলফে নমুনা সগ্রহ করার জন্য একটি দল পাঠায়। ঠিক তখনই নাসা এটা ধরতে পারে …” তিনি থামলেন। সত্যি বলতে কী, তারা শতাব্দীর সেরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটি করতে পেরেছে।”

সেক্সটন অবিশ্বাসে টিভির সামনে চলে গেলেন। না… তার চোখে মুখে অস্বস্তি।

“লেডিস এ্যান্ড জেন্টেলমেন, হার্নি ঘোষণা দিলেন, “কয়েক ঘণ্টা আগে, নাসা বরফের নিচ থেকে আট ইন ওজনের উল্কাখণ্ডটি তুলে আনতে পেরেছে, যাতে রয়েছে …” প্রেসিডেন্ট আবারো থামলেন। “প্রাণীর ফসিল। কয়েক ডজন। বর্হিজীবের অস্তিত্বের অকাট্য এক প্রমাণ।

টিভি পর্দায় পাথরের ভেতরকার ফসিলের ছবি দেখানো হলো। প্রাণীদের ফসিল। অসাধারণ এক ছবি। পাথরে খোদাই করা যেনো।

সেক্সটনের ঘরে ছয় জন অতিথি আকে উঠলো তীব্র আতংকে। সেক্সটন বরফের মতো জমে দাঁড়িয়ে আছেন।

“বন্ধুরা আমার,” হার্নি বললেন, “আমার পেছনে যে ফসিলগুলো দেখছেন সেটা একশত নব্বই মিলিয়ন বছরের পুরনো। এটা বিখ্যাত উল্কা জাগাসল-এরই একটি খণ্ডাংশ, যা আর্কটিক সাগরে তিন শত বছর আগে পতিত হয়েছিলো। নাসা এই সংক্রান্ত বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্য এবং জনগণকে জানাবার আগে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য কয়েকজন সিভিলিয়ান বিজ্ঞানীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঘটনাস্থলে। এরকম একজন অতি পরিচিত ব্যক্তির তৈরি ছোট্ট একটি প্রামাণ্য চিত্র একটু পরেই আপনারা দেখতে পাবেন। তার আগে আমি তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কিছু বলার জন্য যার নেতৃত্বে নাসা এমন যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে পেরেছে। তিনি আর কেউ নন, নাসা প্রধান লরেন্স এক্সট্রম।”

উল্কার ছবিটা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে সেখানে ভেসে এলো নাসার বিজ্ঞানীদের টেবিলের ছবিটা, যার মাঝখানে বসে আছে বিশালদেহী লরেন্স এক্সট্রম।

“ধন্যবাদ, মি: প্রেসিডেন্ট।” সে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকালো। “এই মুহূর্তে আপনাদের সাথে থাকতে পেরে গর্বিত হচ্ছি। এটা নাসার সবচাইতে সেরা মুহূর্ত।”

এক্সট্রম পুরো আবিষ্কারটি এবং নাসা’র কার্যক্রম বিবৃত করে গেলো। নাসার বিজ্ঞানী এবং সিভিলিয়ান বিজ্ঞানীরাও যে আবিষ্কারটা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে সেটা প্রমাণ সহকারে তুলে ধরলো সে। মাইকেল টোল্যান্ডের প্রামান্যচিত্রটা যে এরপর দেখানো হবে সে ব্যাপারটাও উল্লেখ কলো সে।

.

এসব দেখে সিনেটর সেক্সটন টিভির সামনে হাটু গেড়ে ধপাস করে বসে পড়লেন।দুহাতের আঙুল দিয়ে তিনি মাথার চুল খামছে ধরলেন।না! ঈশ্বর! না!

.

মারজোরি টেঞ্চ বৃফিংরুমের হৈহল্লা ছেড়ে বিকর্ণ মুখে বের হয়ে নিজের ওয়েস্টউইংয়ের প্রাইভেট রুমে এসে পড়লো। উৎসব পালন করার কোনো মুড তার নেই। রাচেল সেক্সটনের ফোনটা ছিলো খুবই অপ্রত্যাশিত।

খুবই হতাশাজনক।

টেঞ্চ তার ডেস্কের ফোনটা তুলে হোয়াইট হাউজের অপারেটরকে ফোন করলো। “উইলিয়াম পিকারিং, এনআরও’র।”

টেঞ্চ একটা সিগারেট ধরিয়ে পায়চারি করতে লাগলো লাইনটা পাবার অপেক্ষায়। এসময়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও আজকের দিনের শুরুত্বের কারণে তাকে অফিসে পাবার সম্ভাবনাই বেশি বলে টেঞ্চ আন্দাজ করলো।

প্রেসিডেন্ট যখন রাচেলকে মিলনে তে পাঠাতে চাইছিলেন তখন সে তাকে বাধা দেয়নি বলে এখন নিজেকেই দুষলো। টেঞ্চ অবশ্য সায় দেয়নি। তার মনে হয়েছিলো এটা অযথা ঝুঁকি নেয়ার মতো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট খুব চাইছিলেন সেটা। রাচেলের কাছ থেকে হোয়াইট হাউজের কর্মচারীরা খবরটা শুনলে বেশি ফলদায়ক হবে প্রেসিডেন্টের এমন যুক্তিতে টেঞ্চ সায় দিয়েছিলো। আর এখন। রাচেল সেক্সটন তার মত বদলিয়েছে।

কুত্তিটা আমাকে অরক্ষিত লাইনে ফোন করেছে।

রাচেল সেক্সটনের উদ্দেশ্যটা ছিলো এই আবিষ্কারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ধ্বংস করা। যাহোক তার সেই উদ্দেশ্যটা এখনও পূরণ হয়নি। এটাই আশার কথা। টেঞ্চ জানে নাসা সম্পর্কে পিকারিংয়ের ধারণা কেমন। তার দরকার রাচেলের আগে পিকারিংয়ের সাথে যোগাযোগ করা।

“মিস টেঞ্চ?” ফোনের অপর প্রান্ত থেকে পরিষ্কার কটা বললো, “উইলিয়াম পিকারিং বলছি। আপনার জন্য কী করতে পারি?”

টেঞ্চ একটু ভেবে, আস্তে আস্তে বললো। “আপনার কি একটু সময় হবে, ডিরেক্টর?”

“আমার ধারণা আপনারা উৎসব উদযাপন করছেন। এটা একটা রাতই আপনাদের জন্য। দেখে মনে হচ্ছেনাসা এবং প্রেসিডেন্ট লড়াইয়ে আবার ফিরে এসেছে।

“আমি ক্ষমা চাইছি,” টেঞ্চ একটু ভালো যোগাযোগের আশায় বললো। “নাসা এবং হোয়াইট হাউজ আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি বলে।”

“আপনি জানেন, পিকারিং বললো, “যে, এনআরও নাসা’র কর্মকাণ্ডকে কয়েক সপ্তাহ আগেই ধরতে পেরেছিলো, আর সেটা খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্তও চালিয়েছিলো?”

টেঞ্চ ভুরু তুললো। “হ্যাঁ, আমি জানি। আর তারপরও–”

“নাসা আমাদেরকে বলেছিলো এটা কিছুই না। তারা বলেছিলো খুব কঠিন আবহাওয়ায় তারা কিছু গবেষণা কর্ম চালাচ্ছে ওখানে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কোনো যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করছে। আর কি।” পিকারিং থামলো এন্টু। “আমরা মিথ্যেটা মেনে নিয়েছি।”

“এটাকে মিথ্যা না বলাই ভালো, টেঞ্চ বললো।”এরকম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারকে বাধ্য হয়েই নাসা গোপন করবে, আশা করি আপনি সেটা বোঝেন।”

“জনগণের কাছ থেকে, সম্ভবত।”

টেঞ্চ আর কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় এলো। “আমার হাতে মাত্র মিনিট খানেক সময় আছে, কিন্তু আমার মনে হলো আপনাকে ফোন করে সাবধান করে দেই।”

‘আমাকে সাবধান করবেন?” পিকারিং যেনো তেঁতে উঠলো। “জাখ হার্নি কি নাসার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নতুন একজন এনআরও ডিরেক্টর নিয়োগ দেবার মনস্থির করেছেন?”

“অবশ্যই নয়। আমি আসলে আপনার একজন কর্মচারীর ব্যাপারে বলছিলাম। সে একটু থামলো। “রাচেল সেক্সটনের কথা বলছি। তার সাথে কি আজ সন্ধ্যায় কথা হয়েছে আপনার?”

“না। আজ সকালে তাকে আমি প্রেসিডেন্টের অনুরোধে হোয়াইট হাউজে পাঠিয়েছিলাম। এরপর আর তার দেখা পাইনি। তাকে নিশ্চয় আপনারা ব্যস্ত রেখেছেন।”

কথাটা শুনে টেঞ্চ স্বস্তি পেলো। যাহোক রাচেলের সাথে পিকারিংয়ের এখনও যোগাযোগ হয়নি। “আমার আশংকা কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি রাচেলের কাছ থেকে ফোন পাবেন।”

“ভালো। সেটাই আশা করছি। আমার আশংকা ছিলো জাখ হার্নি হয়তো রাচেলকে জনসম্মুখে এ ব্যাপারে অংশ নিতে বাধ্য করবেন, সেটা হয়নি বলে আমি খুব খুশি হয়েছি।”

“জাখ হার্নি খুবই ভদ্র একজন মানুষ,” টেঞ্চ বললো, “যা আমি রাচেল সেক্সটনের চেয়েও ভালো জানি।”

দীর্ঘ একটা নিরবতা নেমে এলো। আশা করি আমি এটা ভুল বুঝেছি।”

টেঞ্চ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “না, স্যার, আপনি তা করেননি। আমি ফোনে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না, তবে মনে হচ্ছে রাচেল সেক্সটন নাসার এই আবিষ্কারটাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আমি জানি না কেন। সে নাসার ডাটা বিশ্লেষন করে নাসার দাবির পক্ষে রায় দিয়েছে, তারপর, আচমকাই সে এটার বিরুদ্ধে চলে গেছে এখন। তার বক্তব্য নাসা জালিয়াত করছে, ধোকা দিচ্ছে।”

“কী বললেন?” পিকারিং অবাক হয়ে বললো।

“সংবাদ সম্মেলনের দু’মিনিট আগে সে আমাকে ফোন করে বলেছে সংবাদসম্মেলনটা বাতিল করতে।”

“কিসের জন্য?

“একেবারেই অবান্তর সেটা। সে বলছে ভাটার মধ্যে সে নাকি গুরুতর ভুল ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে।”

পিকারিং অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো, “ক্রটি?”

“হাস্যকর, তাই না, নাসা পুরো দু’সপ্তাহ ধরে এটা খতিয়ে দেখেছে এবং–”

“রাচেল যদি সংবাদ সম্মেলনটা বাতির করে দেবার কথা বলেই থাকে, আমার মনে হয় তার অবশ্যই কারণ রয়েছে। হয়তো, আপনার উচিত ছিলো তার স্থাটা কোনোর।”

“কী বলেন! টেঞ্চ কেশে উঠলো। “আপনি তো সংবাদ সম্মেলনটা দেখেছেন, তথ্য উপাত্তগুলোসহ বিজ্ঞানীদের অভিমতও দেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা সবাই এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আচমকা কেবল রাচেলই এখন উল্টা পাল্টা বলছে। সে এখন মত বদলালো কেন?”

“এটা সন্দেজনকই মনে হচ্ছে, মিস টেঞ্চ, কারণ আমি জানি রাচেলের সাথে তার বাবার সম্পর্কটা খুবই শীতল। আমি ভাবতেও পারছি না, এতোদিন প্রেসিডেন্টের হয়ে কাজ করার পর এভাবে আচম্‌কা সে কেন তার বাবার পক্ষে যায় এমন পদেক্ষপ নেবে।”

“উচ্চাকাঙ্ক্ষা, হয়তো? আমি আসলেই জানি না। হয়তো ফার্স্ট ডটার হবার সুযোগ নিচ্ছে…”

পিকারিংয়ের কণ্ঠটা আচমকাই শক্ত হয়ে গেলো। “মিস টেঞ্চ, আমার মনে হয় না এ কারণে।”

টেঞ্চ ভাবলো তাহলে কিসের জন্য রাচেল এমনটি করছে।

“তাকে আমার সাথে কথা বলতে দিন, পিকারিং বললো, “আমি নিজে মিস সেক্সটনের সঙ্গে কথা বলতে চাই।”

“আমার আশংকা, সেটা অসম্ভব,” টেঞ্চ জবাব দিলো।”সে হোয়াইট হাউজে নেই।”

“তাহলে সে কোথায়?”

“প্রেসিডেন্ট তাকে আজ সকালে মিলনে আইস শেলফে ডাটা পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। সে এখনও ফিরে আসেনি।”

পিকারিংয়ের কণ্ঠটা বিবর্ণ হয়ে গেলো এবার। “আমাকে তো বলা হয়নি–”

ডিরেক্টর, শুনুন, যেজন্যে আসলে আপনাকে ফোন করা। রাচেল যদি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাসার আবিষ্কারের ব্যাপারে তার অর্থহীন কথা বলে, আজগুবি তত্ত্ব হাজির করে, আপনি তাকে এ ব্যাপারে নিবৃত্ত করবেন। তাকে এখানে ডেকে এনে কারো কোনো ক্ষতি করার আগেই ডিটেনশনে আটকে রাখবেন। তারপর আমাকে ফোন করে জানাবেন। আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় রইলাম। গুডনাইট।”

এনআরওর ভবনের অফিসের জানালার সামনে, পিকারিং দাঁড়িয়ে বাইরের ভার্জিনিয়ার রাতকে দেখলো। টেঞ্চের ফোনটা খুবই ভয়াবহ কথা বলছে। সে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে।

“ডিরেক্টর?তার সেক্রেটারি তাকে বললো, “আপনার আরেকটা ফোন এসেছে।”

“এখন নয়।” পিকারিং উদাসভাবে বললো।

“রাচেল সেক্সটন করেছে।”

পিকারিং ঘুরে দাঁড়ালো। মনে হচ্ছে টেঞ্চ একজন জ্যোতিষী। “ঠিক আছে, আমার এখানে লাইনটা দিয়ে দাও, এখনই।

“আসলে, স্যার, এটা রেডিও ফোন থেকে এসেছে। এটা কি আপনি কনফারেন্স রুমে নিতে চান?”

রেডিও ফোনে? “কোত্থেকে সেটা এসেছ?”

সেক্রেটারি তাকে বললো।

পিকারিং চেয়ে রইলো। বিস্ময়ে সে দ্রুত ছুটে চললো কনফারেন্স রুমের দিকে। এটা এমন কিছু যা তাকে বুঝতেই হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *