০৪৮. ভীষ্মদর্শনপ্রসঙ্গে পরশুরামপ্রভাব-প্রকাশ

৪৮তম অধ্যায়

ভীষ্মদর্শনপ্রসঙ্গে পরশুরামপ্রভাব-প্রকাশ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! অনন্তর ভগবান বাসুদেব, মহারাজ যুধিষ্ঠির, ভীমসেন, অর্জ্জুন, নকুল, সহদেব ও কৃপাচার্য্য প্রভৃতি বীরগণ পতাকাধ্বজপরিশোভিত বায়ুবেগগামী নগরাকার রথে আরোহণপূর্ব্বক অবিলম্বে কুরুক্ষেত্রে যাত্রা করিলেন। ইতিপূর্বে ঐ স্থানে অসংখ্য ক্ষত্রিয় কলেবর পরিত্যাগ করিয়াছেন। ঐ ভীষণ স্থান রাশি রাশি কেশ, মজ্জা, অস্থি, মৃত মাতঙ্গগণের

পর্ব্বতাকার দেহ, নরকপাল, সহস্র সহস্র চিতা, অসংখ্য বর্ম্ম ও শস্ত্র এবং প্রভূত রাক্ষসগণে পরিবৃত হইয়া মৃত্যুর [যমের] উৎকৃষ্ট পানভূমির[পান-স্থান—যে স্থানে অনেকে মিলিত হইয়া পানীয় পান করে] ন্যায় শোভা পাইতেছিল। ভীষ্মদর্শনার্থী যুধিষ্ঠির প্রভৃতি মহাত্মারা তথায় উপস্থিত হইয়া রথ হইতে অবরোহণপূর্ব্বক সেই সমরাঙ্গন দর্শন করিতে করিতে গমন করিতে লাগিলেন। ঐ সময় মহাবাহু বাসুদেব যুধিষ্ঠিরসমীপে পরশুরামের পরাক্রম বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! ঐ যে দূরপ্রদেশে পাঁচটি হ্রদ দৃষ্ট হইতেছে, উহার নাম রামহ্রদ। ভগবান ভার্গব একবিংশতিবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করিয়া ক্ষত্রিয়গণের শোণিতদ্বারা ঐ পাঁচ হ্রদ পরিপূর্ণ ও পিতৃগণকে পরিতৃপ্ত করিয়াছিলেন। এক্ষণে ঐ মহাত্মা কর্ম্মত্যাগী হইয়াছেন।”

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে যদুনন্দন! তুমি কহিলে যে, ভগবান্ ভার্গব একবিংশতিবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয়া করিয়াছিলেন, কিন্তু আমাদের ঐ যুদ্ধে কোটি কোটি ক্ষত্রিয় নিহত হওয়াতে ঐ বিষয়ে আমার সন্দেহ হইতেছে। তিনি একবার ক্ষত্রিয়গণকে সমুলে নির্মুল করিলে পুনরায় কিরূপে তাহাদের উৎপত্তি ও বৃদ্ধি হইল? আর তিনি কি নিমিত্তই বা পুৰ্ব্বে কুরুক্ষেত্রে বারংবার ক্ষত্রিয়গণকে বিনাশ করিয়াছিলেন? তুমি এই সকল বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিয়া আমার সংশয় দূর কর। আমরা তোমার নিকট হইতেই শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করিয়া থাকি।”