০০৫. কর্ণবলবীর্য্যপ্রসঙ্গে জরাসন্ধপরাজয় কথা

৫ম অধ্যায়

কর্ণবলবীর্য্যপ্রসঙ্গে জরাসন্ধপরাজয় কথা

দেবর্ষি নারদ কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর মগধদেশাধিপতি জরাসন্ধ সূতপুত্রের বলবীর্য্যের বিষয় শ্রবণগোচর করিয়া রথারোহণপূর্বক তাঁহাকে যুদ্ধার্থ আহ্বান করিলেন। মহাবীর কর্ণও অবিলম্বে তাঁহার সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইলেন। সেই বিদ্যাস্ত্রবিশারদ বীরদ্বয়ের বহুক্ষণ ঘোরতর অস্ত্ৰযুদ্ধ হইল। পরিশেষে তাঁহাদিগের শর, শরাসন ও খড়্গ নিঃশেষিত হইলে তাঁহারা ভূতলে অবতীর্ণ হইয়া বাহুযুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। মহাবীর কর্ণ জরাসন্ধের সহিত বাহুযুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়া তাঁহার জরারাক্ষসীসংযোজিত দেহের সন্ধি বিশ্লেষিত করিয়া ফেলিলেন। তখন মহাবীর জরাসন্ধ স্বীয় শরীরের বিকার নিরীক্ষণ করিয়া বৈরভাব পরিত্যাগ ও কর্ণের প্রতি অতিমাত্র প্রীতিপ্রদর্শনপূর্বক প্রফুল্লমনে তাঁহাকে মালিনীনগরী প্রদান করিলেন।

“হে মহারাজ! সূতপুত্র অঙ্গদেশের অধিপতি ছিলেন এবং দুর্য্যোধনের আদেশানুসারে চম্পানগরী শাসন করিতেন, ইহা আপনার অবিদিত নাই। তিনি এইরূপে শস্ত্রবলে ভূমণ্ডলে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র আপনার হিতসাধনার্থ সূতপুত্রের নিকট তাঁহার সহজ কবচ ও কুণ্ডলযুগল প্রার্থনা করিলে সূতপুত্র দেবমায়ায় বিমোহিত হইয়া ইন্দ্রকে তৎক্ষণাৎ তৎসমুদয় প্রদান করেন। ঐ মহারথ সহজকবচকুণ্ডল বিহীন হওয়াতেই মহাবীর অর্জুন বাসুদেবের সমক্ষে তাঁহাকে বিনাশ করিয়াছেন। হে মহারাজ! মহাত্মা কর্ণ সামান্য বীর ছিলেন। না। ধনঞ্জয় রুদ্র, ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের, দ্রোণ ও কৃপাচার্য্যের অনুগ্রহে দিব্যাস্ত্রলাভ করিয়াই তাঁহার বিনাশসাধনে সমর্থ হইয়াছেন। বিশেষতঃ যদি ঐ মহাবীর পরশুরাম ও হোমধেনুবিনাশক্রুদ্ধ[হোমধেনুবিনাশে রুষ্ট] ব্রাহ্মণকর্তৃকঅভিশপ্ত না হইতেন, যদি তিনি কুন্তীর সমক্ষে অর্জুন ব্যতীত আর কোন পাণ্ডবকেই নিধন করিব না বলিয়া অঙ্গীকার না করিতেন, যদি দেবরাজ ইন্দ্ৰকর্তৃক দেবমায়া প্রকাশিত ও বাসুদেবের নীতি উদ্ভাবিত না হইত, যদি রথাতিরথ সংখ্যাসময়ে [রথ ও অতিরথের গণনাকালে] ভীষ্ম উঁহাকে অর্দ্ধরথ বলিয়া নির্দেশ ও মদ্ররাজ সমরকালে ঐ মহাবীরের তেজোহ্রাস না করিতেন, তাহা হইলে অর্জুনের হস্তে কখনই সেই সূৰ্য্যসন্নিভ সুর্য্যতনয়ের বিনাশ হইত না। হে ধর্মরাজ! আপনার ভ্রাতা কর্ণ এইরূপে অভিশাপগ্রস্ত ও বহু ব্যক্তিকর্তৃক বঞ্চিত হইয়া সমরে নিহত হইয়াছেন। অতএব এক্ষণে তাঁহার নিমিত্ত শোক প্রকাশ করা কর্তব্য নহে।”