2 of 2

ছারপোকা – হিমাংশু সরকার

ছারপোকা – হিমাংশু সরকার

সাইনবোর্ডটা বেশ বড়।

সাইনবোর্ডটা বেশ বড় করে লেখা আছে : রতনবাবুর দোকান। নিচে ছোট করে লেখা, নূতন ও পুরাতন দ্রব্যাদি কেনাবেচা হয়।

দোকানের প্রবেশ পথের দুদিকে দুটো সুদৃশ্য শোরুম। কাচের ওপর লেখা আছে, এখানে পুরাতন জিনিসের বদলে নূতন জিনিস পাওয়া যায়।

কেনাবেচা বেশ ভালই হয়।

আপনি হয়তো একটা পুরোন রেডিও দিয়ে নতুন রেডিও নিতে চান। অনায়াসেই তা পেতে পারেন। পুরাতন রেডিওর দাম ঠিক হল। নতুন রেডিওর দামের সঙ্গে যেটুকু ফারাক, সেটা দিয়ে দিলেই আপনি একটা নতুন রেডিও পেয়ে যাবেন।

আপনার দরকার একটা সেকেণ্ডহ্যাণ্ড রেফ্রিজিরেটর। তাও পাবেন।

নতুন একটা টিভি কেনার ইচ্ছা হল আপনার। চলে আসুন রতনবাবুর দোকানে। কোন অসুবিধা হবে না। পুরোন জিনিস বিক্রি করতে চান? তাও পারেন।

এই সব কারণেই রতনবাবুর দোকানে খদ্দেরের অভাব হয় না। সব সময়েই দু-একটি খদ্দের থাকে।

দোকানটা হয়েছে বছর দুয়েক।

কিন্তু এর মধ্যেই নাম ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। কাগজে বিবিধ ভারতীতে বিজ্ঞাপন। ব্যবসা রীতিমত জমে উঠেছে। অনেক দূর থেকেও লোকেরা আসে কেনাবেচা করতে।

কারণ দোকানে প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়। ইলেকট্রিক ইস্ত্রি থেকে আরম্ভ করে রেফ্রিজিরেটর।

রতনবাবুর বয়স পঞ্চাশের অনেক ওপরে। মাঝারি উচ্চতা। মাথায় একটা ছোট টাক। চেহারা গোলগাল। হাসিখুশি। দেখলেই মনে হয় ফুর্তিবাজ।

দোকানটা বেশ বড়।

সামনে দোকানে। পেছন দিকে ছোট্ট গোডাউন। সেদিকে আর একটা দরজা আছে। আছে পেছন দিকে একটা সরু গলি।

সেদিন যে কোন কারণেই হোক, দোকানে খদ্দের ছিল না। ঘড়িতে তখন আটটা বাজতে পঁচিশ মিনিট বাকি।

ঠিক আটটায় দোকানে তালা ঝুলিয়ে রতনবাবু ছুটবেন ট্রিংকাস বা ওই ধরণের কোন একটা বারে। কর্মচারীটা পেছনের ঘরে বসে বোধ হয় ঝিমোচ্ছে। দোকানে তালা পড়লে সেও বাড়ি ছুটবে।

হঠাৎ দোকানের সামনে একটা গাড়ি থামল। গাড়িটা বিদেশী। গাড়ির নাম্বার প্লেটের দিকে চোখ পড়ল তাঁর। গাড়িটা উত্তর প্রদেশের।

সোজা হয়ে দাঁড়ালেন রতনবাবু। অর্থাৎ রতন রায়।

গাড়ি থেকে নামল একজন দীর্ঘদেহী যুবক। চওড়া কাঁধ। সরু কোমর। পরিচ্ছদের ভেতর তার সুদৃঢ় পেশীবহুল শরীরের আভাস পাওয়া যায়। চোখে কালো চশমা। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চকচকে কালো চুল। পরনে দামী স্যুট। পায়ে আধুনিক ডিজাইনের উঁচু হিল-দেওয়া চকচকে জুতো।

যুবক লম্বা লম্বা পা ফেলে দোকানের সামনে এসে এক মুহূর্ত দাঁড়াল। মোরগের মতো ঘাড় তুলে দোকানের সাইনবোর্ডটা পড়ল। তারপর দোকানের সিঁড়ি ধরে দ্রুত দোকানে এসে ঢুকল। রতনবাবুকে দেখে মুখে ক্লার্ক গেবলের হাসি ছড়িয়ে দিল।

রতনবাবুর মনে হল, হাসিটা বড় ধারাল। একেবারে ভেতর পর্যন্ত বিঁধিয়ে দেয়।

যুবকের মুখের দিকে তিনি তাকালেন।

তাঁর মনে হল, মুখটা তাঁর চেনা। কোথায় যেন তিনি ওর মুখ দেখেছেন। চেষ্টা করলেন মনে করতে, কিন্তু মনে করতে পারলেন না। মৃদু হেসে বললেন, ‘আসুন।’

যুবক মুখে সেই বিশ্রী হাসিটা ঝুলিয়ে রেখে, ধীর পায়ে ঘুরতে ঘুরতে দোকানের সাজান জিনিসপত্রগুলো দেখতে লাগল।

রতনবাবু অভিজ্ঞ লোক। তাড়াতাড়ি পাশে এসে বললেন, ‘কোনটা চাইছেন?’

অদ্ভুত গম্ভীর কিন্তু মিষ্টি স্বরে যুবক উত্তর দিল, ‘দেখছি। দেখছি, আপনার দোকানে কি কি জিনিস আছে।’

‘কি চান বলুন। বলতে গেলে সব কিছুই পাবেন : প্রেসার কুকার, অ্যাটাচি কেস, স্টিলের আলমারি, ইলেকট্রিক হিটার, ফ্যান, রেফ্রিজিরেটর, টিভি—’

‘টিভি। ওই যে টিভিটা। কত দাম?’

রতনবাবু টিভি সেটটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। মুখে হাসি মাখিয়ে অভিজ্ঞ সেলসম্যানের মত বললেন, ‘এটা তো বাজারের সেরা জিনিস। বাজারে তো অনেক টিভি পাওয়া যায়। কিন্তু এর সামনে দাঁড়াতে পারে না। এখন সকলে এই কোম্পানির জিনিসই চাইছে। মাঝে মাঝে এ মাল পাওয়াই যায় না।’

যুবকের মুখের হাসি আর একটু গভীর হল। বলল, ‘জিনিসটা তো সেকেণ্ডহ্যাণ্ড। তাই না?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ। কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না। মাত্র এক মাস ব্যবহার করেছিলেন এর প্রাক্তন মালিক। হঠাৎ টাকার দরকার হওয়ায় এটা বিক্রি করতে বাধ্য হন। আসলে ভদ্রলোক ছিলেন একজন জুয়াড়ী।’

‘দামটা?’

‘হেঁ হেঁ হেঁ, এর নতুন দাম অনেক। ক্যাটলগ প্রাইসের সেভেন্টি পার্সেন্ট দেবেন।’

‘সেভেন্টি পার্সেন্ট! বলেন কি? সে তো অনেক দাম!’

মুখের হাসি অবিকৃত রেখে রতনবাবু বলেন, ‘কি আর করা যাবে। আমাকে অর্ধেক দামে কিনতে হয়েছে। থার্টি পার্সেন্ট না পেলে, এসটাব্লিশমেন্ট খরচা দিয়ে সংসার চলবে কি করে?’

যুবক পকেট থেকে একটা সোনার সিগারেট কেস বার করে একটা সিগারেট মুখে দিল। সিগারেট ধরাল।

রতনবাবু ভ্রূ কুঁচকে যুবকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বার বার তাঁর মনে হয়, মুখটা তাঁর চেনা চেনা।

যুবক সিগারেটে টান দিয়ে একটা ছোট টাইপরাইটার দেখিয়ে বলে, ‘এটাও তো সেকেণ্ডহ্যাণ্ড?’

‘নামেই সেকেণ্ডহ্যাণ্ড। আসলে ওটা নতুন। তবে সেকেণ্ডহ্যাণ্ডের দামেই পাবেন। নতুন দামের সেভেন্টি পার্সেন্ট।’

‘হুঁ। আমি যদি ওর চেয়ে ভাল কণ্ডিশানের একটা টাইপরাইটার আপনাকে বিক্রি করি, তাহলে আপনি কত দেবেন?’

‘আজ্ঞে!’

বোকার মত তাকিয়ে থাকেন রতনবাবু।

যুবকের মুখে বিচিত্র হাসি খেলা করে। হাসিটা অর্থপূর্ণ।

যুবকের মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রতনবাবুর মুখেও সেই বিচিত্র হাসি উঁকি দেয়। খুব কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে প্রশ্ন করেন, ‘ক’টা আছে?’

যুবক বলে ‘সময় হয়ে গেছে। আগে দোকানে ঝাঁপ ফেলে দিন।’

‘দাঁড়ান।’

রতনবাবু আগে দোকানের রোলিং সাটারটা টেনে দেন। তারপর ভেতরের ঘরে যান। ভেতরে কর্মচারীটা ঝিমোচ্ছিল। তাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশ দিয়ে দ্রুত ফিরে আসেন দোকানে।

‘এদিকে আসুন। এই এ দিকে। এখানে চেয়ার আছে।’

ওঁরা কাউন্টারের ধারে বসেন।

‘এবার বলুন।’

যুবক হাতের সিগারেটে টান দিয়ে বলে, ‘বলার কিছু নেই। আমি এ শহরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অন্ধকার জগতের নাগরিকদের কাছে আপনার দোকানের নাম এবং খ্যাতি শুনেছি। কিছুদিন কলকাতায় থাকব। তাই ভাবলাম, যদি ব্যবসা করতে হয় তো আপনার মত লোকের সঙ্গেই করা উচিত।’

একগাল হেসে রতনবাবু বললেন, ‘কিন্তু আপনার নামটা?’

বিস্মিত হয়ে যুবক বলল, ‘আপনি কি সত্যিই আমাকে এখনও চিনতে পারেননি?’

রতনবাবু আর একটু ভাল করে তাকান যুবকের দিকে : ‘আপনার মুখটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। চশমাটা যদি খোলেন—’

‘উঁহু। চশমা আমি কখনই খুলি না। চশমা দিয়েই আমায় চিনতে হয়। আমার নাম সোহনপাল সিং।’

দ্রুত উঠে গেলেন রতনবাবু। ক্যাশ-টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা পেপার কাটিং বার করে আনলেন। তাতে একটা ছয় বাই চার সাইজের ছবি।

ছবিটার সঙ্গে যুবকের চেহারাটা মিলিয়ে নিলেন রতনবাবু। বললেন, ‘দিন পাঁচেক আগে কাগজে আপনার এই ছবি ছাপা হয়েছিল। তাই বোধ হয় আপনাকে চেনা চেনা ঠেকছিল। এখানে লিখেছে, আপনি উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর জ্বালিয়ে উত্তরবঙ্গে এসেছেন।’

সোহনপাল হাসল। গর্বের হাসি।

রতনবাবু প্রশ্ন করেন, ‘কি কি জিনিস আছে, আপনার কাছে?’

‘আপনি কি কি জিনিস হ্যাণ্ডেল করতে পারেন তাই বলুন। টাইপরাইটার, টিভি, রান্নার ইউটেনসিলস্‌, গাড়ি চাইলে গাড়িও পাবেন। যদি হ্যাণ্ডেল করতে পারেন, তাহলে সোনা।’

‘বাঃ! বলেন কি? আপনি তো জিনিয়স!’

‘আমার নাম সোহনপাল। সারা ভারতবর্ষে একটাই সোহনপাল আছে। পুলিশ কোনও দিন আমার দশহাত দূরেও আসতে পারেনি। কিন্তু আমি আত্মচরিত বলতে বসিনি। আগে বলুন, কত পার্সেন্টে কাজ করতে পারবেন?’

একটু ভেবে রতনবাবু বলেন, ‘দশ। ম্যাক্সিমাম।’

‘দশ! বলেন কি? দিল্লী, বোম্বাই, কানপুর, পাটনা—সর্বত্র আমি তো পঁচিশ পার্সেন্টে কাজ করেছি।’

‘এটা কলকাতা। বাসের ভাড়া ত্রিশ পয়সা! বোম্বাইয়ে কত?’

‘বুঝলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে অন্তত কুড়ি পার্সেন্ট ছাড়তে হবে।’

‘সোহনপালের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারাটা সৌভাগ্যের কথা। কিন্তু কি করব বলুন! উপায় নেই। লাভ থাকে না।’

‘লাভ থাকে না? আপনি তো একটু আগেই বললেন যে, সেকেণ্ডহ্যাণ্ড মাল অর্ধেক দামে, মানে ফিফটি পার্সেন্ট দিয়ে কেনেন!’

রতনবাবু একগাল হেসে বললেন, ‘তখন আপনি ছিলেন খদ্দের। এখন খদ্দের আমি। বিশ্বাস করুন, কলকাতার বাজার দিল্লী-বোম্বাইয়ের মত নয়। বাজার সত্যিই খুব খারাপ। কোন মতেই দশ পার্সেন্টের বেশি দেওয়া যাবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হয়, আপনি দু-একদিন বাজার ঘুরে দেখুন না।’

সোহনপাল কোনও জবাব দেয় না। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রতনবাবুর মুখের দিকে।

রতনবাবুর অস্বস্তি হয়। কালো চশমার আড়ালে সোহনপালের চোখজোড়া দেখা যাচ্ছে না। কি ভাবছে, বোঝা যাচ্ছে না। জালটা ভাল করে ছড়িয়ে দেবার জন্যে বললেন, ‘ব্যাপার হল, সবচেয়ে আগে আপনার জিনিসের নমুনা দেখা দরকার। কি কি জিনিস এখন দিতে পারবেন?’

‘উপস্থিত টাইপরাইটার। পনেরোটা। একেবারে ফ্যাকট্রি থেকে বার করা। ব্র্যাণ্ড নিউ।

‘জিনিসটা দেখতে হবে তো।’

‘বেশ। বলুন, কখন দেখবেন!’

‘শুভস্য শীঘ্রম। আজ রাত এগারোটায়। পেছনে একটা দরজা আছে। সেই দরজায় ঠিক তিনটে টোকা দেবেন। আমি ভেতরে অপেক্ষা করব।’

সোহনপাল উঠে পড়ল : ‘বেশ, আমি রাত এগারোটা থেকে এগারোটা দশের মধ্যে আসব। কিন্তু অ্যাটলিস্ট ফিফটিন পার্সেন্ট হওয়া চাই।’

কথা শেষ করে সোহনপাল পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

এক বিচিত্র হাসি ফুটে উঠল রতনবাবুর মুখে। কর্মচারীটাকে এবার বিদায় করে দিতে হবে। বিজনেস ডিলের সময় ওর থাকার দরকার নেই।

ঠিক রাত এগারোটায় পেছনের দরজায় টোকা পড়ে তিনটে।

রতনবাবু সাবধানে দরজা ফাঁক করে দেখেন।

সোহনপালের মুখ।

হাতে ঝুলছে একটা ছোট্ট চকচকে বাক্স। টাইপরাইটারের কেস। পোর্টেবল।

রতনবাবু সব ক’টা দাঁত বিকশিত করে দরজা খুলে সরে দাঁড়াল। সোহনপাল ভেতরে এল। রতনবাবু আবার দরজটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলেন।

কাউন্টারের ওপর কেসটা রাখল সোহনপাল।

‘কেসটা পর্যন্ত ঝকঝক করছে। খুলে দেখুন।’

রতনবাবু কেসটা খুলে জিনিসটা দেখে খুশি হন। বিউটি! একেবারে নতুন। সত্যিই ফ্যাকট্রি থেকে বেরিয়েছে।

সোহনপাল বলে, ‘এই জিনিস চোদ্দটা বাড়িতে রেখে এসেছি। কাল নিয়ে আসব। ঠিক এই সময়।’

রতনলাল প্রশ্ন করে, ‘এর দামটা কি এখনই দিতে হবে?’

সোহনপাল হাসে, ‘ক্যাশ। আনমার্কড নোট।’

রতনবাবু ড্রয়ার খোলেন। বার করেন এক তাড়া নোট। গুণে গুণে একগোছা নোট সোহনপালের সামনে রাখে : ‘গুণে নিন।’

‘অবশ্যই। দিস ইজ বিজনেস।’

সোহনপাল মাথা নিচু করে গুণতে থাকে। অবাক হয়ে মুখ তুলে প্রশ্ন করে, ‘এ কি! এ তো টেন পার্সেন্ট হল মাত্র।’

রতনবাবু হাসতে লাগলেন। এ হাসিটা তাঁর আর সব হাসির থেকে আলাদা।

সোহনপাল বিরক্ত স্বরে প্রশ্ন করে, ‘তাহলে আপনি আমার সঙ্গে ব্যবসা করবেন না?’

‘না।’ পকেট থেকে হাতটা বার করে আনেন রতনবাবু। সে হাতে একটা পিস্তল, ‘আমরা আর কারও সঙ্গেই ব্যবসা করব না, চাঁদ।’

‘পিস্তল কি হবে?’

‘এটা আমার সিকিউরিটি। দুর্ধর্ষ সোহনপালের সঙ্গে কথা বলতে গেলে এটা দরকার হয়।’

সোহনপালের চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সে চেয়ারে বসে পড়ে।

রতনবাবু বলেন, ‘আমরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছি।’

‘আমরা?’ সোহনপাল ভ্রূ তুলে প্রশ্ন করে।

রতনবাবুর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। ‘হ্যাঁ, আমরা। আমি এ দোকানের মালিক নই। আমি কর্মচারী মাত্র।’

‘মালিক কে?’

‘ক্যালকাটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।’

‘পুলিশ?’

‘হ্যাঁ, চাঁদ। এটা একটা পুলিশ অপারেশান।’

রতনবাবুর ইচ্ছা হয় সোহনপালের চোখজোড়া দেখতে। তিনি পিস্তলটা দৃঢ়মুষ্টিতে চেপে ধরে বলেন, ‘এ দোকানের মালিক পুলিশ। যারা চুরি-ডাকাতির জিনিস এখানে বিক্রি করতে আসে, তারা পটাপট ধরা পড়ে। গোপনে পুলিশের কাছে খবর যায়। ব্যস। গত দু’বৎসরে বত্রিশটা বড় বড় চুরি ধরা পড়েছে। তার মানে বত্রিশটা বড় বড় গ্যাং।’

সোহনপাল কোন উত্তর দিল না। রাগে তার মুখ টসটস করছে। কোন রকমে নিজেকে সংযত করে বসে রইল।

রতনবাবু বেশ মজা পাচ্ছিলেন সমস্ত ব্যাপারটায়। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘আমাদের তালিকায় আছে, আরও সতেরোজন। এ ব্যবসা আর চালানো যাচ্ছে না। প্রথমত, খরচ পড়ছে অনেক। দ্বিতীয়ত, আস্তে আস্তে সকলে ব্যাপারটা বুঝে ফেলছে। আগামী মঙ্গলবার ১৫ই অক্টোবর খেলা শেষের বাঁশি বাজবে। দোকানে ঝাঁপ পড়বে, আর সেই সতেরোজন ঢুকবে ভেতরে। কেমন লাগছে শুনতে, সোহনপাল?’

উত্তরের জন্যে অপেক্ষা না করে, বেশ জোরে শব্দ করে হাসতে লাগলেন রতনবাবু। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘ইউনিক ব্যবস্থা, কি বলুন? আমি ডি-ডির এস-আই।’

সোহনপাল ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকে। কিন্তু সামনে পিস্তল। কিছু করতে যাওয়াটা বোকামি হতে পারে। শেষে কিছু না করতে পেরে একটা সিগারেট ধরাল।

রতনবাবু আবার বললেন, ‘কাগজে তোমার বিষয় বেশ অনেকখানি লিখেছে। তোমার কীর্তির শেষ নেই। তুমি খুব কম করে হলেও, দশ বৎসরের জন্যে টিনের কৌটোয় ঢুকবে।’

একগাল ধোঁয়া ছেড়ে সোহনপাল বলল, ‘জীবনে কোনদিন কেউ আমাকে বোকা বানাতে পারেনি। এই প্রথম ধোঁকা খেলাম।’

‘বলেছি তো এটা কলকাতা। বড় বড় সেয়ানারা সব শহর ঘুরে, এখানে এসে গ্যারাজ হয়ে যায়। এখানে এক সেরের ওপর সওয়া সের আছে।’

কথা শেষ করে আবার দাঁত বার করে হাসতে লাগলেন তিনি।

সোহনপাল স্থির হয়ে বসে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। দৃষ্টি তার বরাবরই রতনবাবুর মুখের ওপর।

রতনবাবুও অনেকক্ষণ সোহনপালের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘ভাল করে শোন। তোমার মুক্তির একটাই পথ আছে।’

‘মুক্তি!’

মন হল, কালো চশমার আড়ালে সোহনপালের চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠল। সে সোজা হয়ে বসল এবার। ঘন ঘন সিগারেট টানতে টানতে বলল, ‘মুক্তির পথ? কি সেটা?’

রতনবাবুর ইচ্ছা হল, সোহনপালের চোখদুটো দেখতে। কিন্তু কালো চশমার জন্যে কিছুই দেখা গেল না। বলল, ‘একটা সিগারেট ধরিয়ে ছুঁড়ে দাও।’

সোহনপাল আর একটা সিগারেট ধরিয়ে ছুঁড়ে দিল রতনবাবুর দিকে। অসামান্য দক্ষতায় সেটা লুফে নিলেন রতনবাবু। আরাম করে গোটাকতক টান দিয়ে বললেন, ‘যা বলছি, এবার মন দিয়ে শোন। চালাকি করার চেষ্টা করো না। আমার হাতের টিপ সম্পর্কে তোমার বোধ হয় কোন ধারণা নেই। তোমার নাকের ওপর একটা ছোট্ট দাবার ঘুটি রাখলে, আমি গুলি করে উড়িয়ে দিতে পারি। তোমার নাক স্পর্শও করবে না।’

সোহনপাল সামান্য হাসল, ‘তোমার হাতে পিস্তল। কাজেই আমি কোন রকম বোকামি করব না। আমি আমার মুক্তির উপায়টা জানবার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠেছি।’

সিগারেটে আরও কয়েকটা টান দিয়ে রতনবাবু বললেন, ‘আর দু’ বছর পর আমি অবসর নেব। অথচ জমার খাতা শূন্য। আমার সংসার না থাকলেও খরচ অনেক। পয়সা জমাবার কথা কোনও দিন মনে হয়নি। জমাইনি।’

‘কাহিনীটা শুনতে ভালই লাগছে!’

‘পেনশন একটা পাব। অতি সামান্য। তাতে আমার মদ খাওয়াও চলবে না। কাজেই বাঁচার জন্যে আমায় অন্য পথ ধরতেই হবে।’

‘মুক্তির উপায়টা বল।’

‘বলছি। তুমি যেমন নিজের ইচ্ছায় এসেছিলে, তেমনি আবার স্বাধীনভাবে চলে যেতে পার। শুধু⋯’

রতনবাবু কথাটা অসমাপ্ত রেখে সিগারেট টানতে লাগলেন।

সোহনপাল প্রশ্ন করল, ‘শুধু?’

‘শুধু ছোট্ট একটা শর্ত আছে।’

‘যেমন?’ সোহনপাল যেন আগ্রহে ফেটে পড়বে।

‘মুক্তিপণ।’ রতনবাবু যেন ফোলানো বেলুনে ছুঁচ ফোটালেন।

‘মুক্তিপণ।’

সোহনপাল অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল রতনবাবুর দিকে।

‘টাকার অঙ্কটা কত?’

‘সামান্য। মাত্র এক লাখ।’

‘এক লাখ?’

সোহনপালের ভ্রূ দুটো ধনুকের মত বেঁকে ওপরে উঠে গেল। বলল, ‘মুক্তিপণটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?’

‘মোটেই না। তুমি সারা উত্তর ভারত জুড়ে লুঠ করেছ। তোমার সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ বোধ হয় বিধাতাও জানেন না। এক লাখ টাকা তোমার কাছে চিনেবাদামের খোসা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওটা তুমি অনায়াসেই দিতে পারবে। সবই তো কালো টাকা। ক্যাশ দিতে অসুবিধা হবে না।’

সোহনপাল বলল, ‘আমার মত অনেকেই নিশ্চয় এর আগে এই ধরণের মুক্তিপণ দিয়েছে?’

‘ছ’ জন। তুমি সপ্তম। তবে সেগুলো দশ হাজারের ওপরে ওঠেনি।’

সোহনপাল বলল, ‘যদি আমি রাজী না হই?’

‘রাজী তুমি হবেই। কারণ টাকার পরিমাণটা তোমার কাছে কিছুই না। দ্বিতীয় কারণ হল, টাকা না দিলে আমি ওই টেলিফোনটা তুলে শুধু একটা ‘কোড’ ব্যবহার করব। দশ মিনিটের মধ্যে কতকগুলো ইউনিফর্ম পরা লোক আসবে। তুমি চালান হয়ে যাবে কমপক্ষে দশ বৎসরের জন্যে।’

সোহনপাল সিগারেটটা মাটিতে ফেলে জুততার ডগা দিয়ে চাপতে চাপতে বলল, ‘আমার বিষয় তো কোন কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। কিসে প্রমাণ হবে যে, আমি কিছু বিক্রি করতে এসেছিলাম?’

বাঁকা হাসি হেসে রতনবাবু বললেন, ‘তুমি কি আমাদের বোকা পেয়েছ নাকি। আমরা প্রফেশনাল। ছবি সমেত সব কিছু টেপ করা আছে।’

‘টেপ!’ সোহনপাল আঁতকে উঠল।

‘হ্যাঁ। দোকানের কর্মচারী সেজে যে লোকটা পেছনে বসে থাকে, আসলে সে একজন এ-এস-আই। তার কাজ হল আড়ালে থেকে ছবি তোলা এবং কথাবার্তা টেপ করা। প্রথমবার এসে তুমি যখন মাল বিক্রি করার প্রস্তাব করলে, তখন সে আড়ালে থেকে ছবি তুলেছে এবং সব কিছু টেপ করেছে।’

‘সহকারীটি এখন কোথায়?’

অর্থপূর্ণ হাসিতে মুখ ভরে গেল রতনবাবুর। বললেন, ‘এখন কি তাকে এখানে রাখা চলে? এখন তার ডিউটি অফ।’

সোহনপাল হঠাৎ উঠে সেই সামান্য পরিসরের মধ্যে পায়চারি শুরু করল। দেখলেই বোঝা যায়, সে দ্রুত চিন্তা করছে।

অনেকক্ষণ ধরে রতনবাবু তাকে দেখলেন। তারপর বললেন, ‘এত ভাববার কি আছে?’

সোহনপাল থামল। রতনবাবুর চোখের ওপর চোখ রেখে বলল, ‘ভাবছি, এই কলকাতার পুলিশ ডিপার্টমেন্টটা কি পরিমাণ কারাপ্ট হয়েছে। কি সাংঘাতিক অধঃপতন ঘটেছে।’

হঠাৎ রতনবাবুর কণ্ঠস্বর অত্যন্ত কর্কশ হয়ে গেল, ‘তোমার কাছে কি নীতি শিক্ষা করতে হবে নাকি?’

সোহনলাল দৃঢ়কণ্ঠে বলল, ‘আজ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তোমার মত অসৎ লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলেই ক্রিমিনালরা বুক ফুলিয়ে বেড়ায়। সারা শহরের সর্বত্র সাট্টা আর রেস চলছে। গলিতে গলিতে বিক্রি হচ্ছে চোলাই মদ। ভিক্টোরিয়া আর গঙ্গার ঘাটে খোলা আকাশের নিচে পতিতাবৃত্তি চলছে। স্মাগলাররা দেশময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’

‘তাই নাকি?’

‘হ্যাঁ। তোমরা পুলিশের কলঙ্ক।’

‘সাট আপ। ভূতের মুখে রাম নাম শুনতে চাই না। আমি তোমার সামনে যে প্রস্তাব রেখেছি, তাতে তুমি রাজী কি না বল।’

সোহনপাল ওঁর মুখের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে ব্যঙ্গের সুরে বলল, ‘তুমি নিজেকে প্রফেসনাল বল? তুমি নির্বুদ্ধিতার একটা প্রকাণ্ড গাছ।’

রতনবাবুর চোখে দপদপ করে আগুন জ্বলতে লাগল। মনে হল, এখুনি ট্রিগারে চাপ দেবেন।

সোহনপাল সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে বলে চলল, ‘ইউ ডোন্ট নো হোয়েন দি গেম ইজ ওভার। সত্যিই তুমি নির্বোধ। প্রচণ্ড লোেভ তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশের সমস্ত শিক্ষা, সমস্ত ট্রেনিং ব্যর্থ হয়ে গেছে। তুমি বুঝতেই পার নি, তোমার চারিদিকে কি বিপদ ঘনিয়ে এসেছে।’

‘বিপদ! আমার আবার কিসের বিপদ?’

‘তোমার সব খেলা শেষ হয়েছে নির্বোধ। তুমি যে এ ধরণের খেলা তলায় তলায় বেশ অনেকদিন ধরে খেলছ, সেটা তোমার ওপরওয়ালারা টের পেয়েছেন।’

হো হো করে হেসে উঠলেন রতনবাবু, ‘তোমার অনেক গুণ আছে। ব্লাফ? আমার সঙ্গে?’

‘দেখেছ? বিপদে পড়লেও তুমি সেটা বুঝতে পার না? তুমি কি এখনও বুঝতে পারছ না যে, তোমার খেলা খতম করার জন্যেই আমি এসেছি? আমি স্পেশাল এজেন্ট। আমি শুধু এই ধরণের কাজেই যাই। আমি চোরও নই, ডাকাতও নই। তোমার মত আরও অনেককে বোকা বানাবার জন্যে কাগজে ওই ধরণের ছবি আর পরিচয় ছাপা হয়েছিল।’

চঞ্চল হয়ে উঠলেন রতনবাবু। বললেন, ‘তাহলে তুমিও পুলিশ?’

‘আমি পুলিশের বাপ। স্পেশাল এজেন্ট। সি-বি-আই।’

এবার পিস্তলটা সোহনপালের বুক বরাবর তুলে ধরলেন রতনবাবু, ‘বটে! তাহলে তো তোমাকে মরতেই হবে।’

সোহনপাল ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসল, ‘তাহলেও, তুমি বাঁচবে না।’

‘কে বলল!’

‘আমি বলছি। পুলিশ তোমাকে ধরবেই ; সব পুলিশ তোমার মত নয়।’

‘কেন ধরবে আমায়? তোমায় খুন করার জন্যে আমি বলব, তুমি আমাকে পরিচয় দাওনি। তুমি আমাকে আক্রমণ করেছিলে, আমি আত্মরক্ষার জন্যে তোমায় খুন করেছি।’

‘তাতেও লাভ হবে না।’

‘হাসিও না।’

‘যত পার এখন হেসে নাও। কারণ আর কয়েক মিনিট পরেই, তোমার কান্নার পালা শুরু হবে। তুমি যে অপরাধ করেছ, তার জন্যে দীর্ঘ কারাবাস হবে। তবু তুমি একদিন মুক্তি পাবে। কিন্তু খুন আরও মারাত্মক অপরাধ। আমাকে খুন করলে হয় তোমার ফাঁসি হবে, নয় হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।’

‘কিন্তু কি করে প্রমাণ হবে যে তুমি সি-বি-আই’এর অফিসার, তা আমি জানতাম?’

‘শোনো গর্ধভ। বাইরে একটা ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেতর কয়েকজন ইলেকট্রনিক টেকনিসিয়ানের সঙ্গে বসে আছেন ডি-ডি ডি-সি শ্রীবিকাশ চৌধুরী। আজ পর্যন্ত তিনি যতজনকে ধরেছেন, মাত্র একজন ছাড়া সকলেরই সাজা হয়েছে।’

‘তাতে কি? তাতে তো প্রমাণ হবে না যে, তুমি আগে তোমার পরিচয় আমায় দিয়েছিলে।’

সোহনপাল এবার হাসল, ‘ইংরেজিতে একটা কথা আছে, জান? পেইং ওয়ান উইথ ওয়ান’স ওন কয়েন। তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তুমি যেমন সকলকে টেপরেকর্ডারের সাহায্যে ট্যাপ কর, ফাঁদে ফেল, তেমনি তোমাকেও টেপরেকর্ডারের সাহায্যে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।’

রতন অবিশ্বাসের সুরে বলল, ‘কি করে?’

‘গাড়ির ভেতর বিকাশ অ্যাণ্ড কোম্পানি আমাদের সমস্ত কথাবার্তা টেপ করছেন।’

‘সম্পূর্ণ ব্লাফ।’

‘তাহলে শোন। আজ যখন তুমি আমার সমস্ত কথাবার্তা টেপ করার জন্যে পেছনের ঘরে তোমার সহকারীকে নির্দেশ দিতে গেলে, তখন আমি তোমার ওই ফ্রিজের গায়ে, পিছন দিকে, চুম্বকওয়ালা একটা শক্তিশালী ‘বাগস্‌’ লাগিয়ে দিয়েছি।’

‘কি লাগিয়ে দিয়েছ?’

রতন যেন চমকে উঠেছেন।

সোহনপাল গলার স্বর উঁচু করে বলল, ‘বাগস্‌। ছারপোকা। একটা শক্তিশালী ইলেকট্রনিক প্রেরক যন্ত্র। ‘ট্রানজিস্টার’, ‘ইলেকট্রনিক’ এসব শব্দগুলো নিশ্চয় তুমি শুনেছ রতন রায়। বিদেশে ওই যন্ত্রটাকে ‘বাগস্‌’ বলে। ওর বাংলা হয় না। তবে অভিধানের সম্মান রক্ষার জন্যে আদর করে ওটাকে বাগস্‌ বলা যেতে পারে। আসলে যন্ত্রটা এত ক্ষুদ্র যে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে সে কাজ করতে পারে বলেই ওটাকে বাগস্‌ বলে।’

বিস্ময়ে রতন রায়ের চোখজোড়া ঠিকরে বেরিয়ে আসার জোগাড়। সে মৃদুস্বরে বলল, ‘আমি পরীক্ষা করব।’

‘কর ।’

রতন রায় ফ্রিজের পেছন দিকে হাত দিল এবং পর মুহূর্তে বিদ্যুতাহতের মত ছিটকে দূরে সরে গেল। শুকিয়ে গেল মুখের সমস্ত রক্ত। কাঁধদুটো ঝুঁকে পড়ল সামনে। চোখের আগুন আস্তে আস্তে নিভে এল।

সোহনপাল বলল, ‘পুলিশের ঘুষ খাওয়ার কাহিনী আমি জানি রতন রায়। কিন্তু এটা তার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। এটা হল ব্ল্যাকমেলিং। একজন মানুষ কত নিচে নামলে তবে এ কাজ করতে পারে, তা তোমার ধারণা নেই রতন রায়।

এ অপরাধের জন্যে শাস্তি তুমি পাবেই। তবু প্রায়শ্চিত্ত করে কিছু বছর পরে তুমি বেরোবে। কিন্তু আমাকে খুন করলে, সেটা হবে কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার। অপরাধের সংখ্যা বাড়বে। ফাঁসি নিশ্চিত। অতএব বোকামি করো না। তুমি নিজে পুলিশ। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ যে খেলা শেষ হয়েছে। তুমি হেরে গেছ। হেরে গেলে সেটা মেনে নিতে হয়। অস্ত্রটা আমায় দাও।’

কোন উত্তর দিতে পারলেন না রতন রায়। ধীরে ধীরে চেয়ারে বসে পড়লেন। হাত থেকে খসে পড়ল পিস্তলটা।

সোহনপাল ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিস্তলটা তুলল। পকেটে রেখে, রতন রায়কে সময় দেবার জন্যে একটা সিগারেট ধরিয়ে সামনের টেবিলে বসল।

অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে থাকার পর মুখ তুলে তাকালেন রতন রায়। তখন তার দু’চোখে জল টলটল করছে।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘ওদের ডাকার আগে আমার একটা কথার জবাব দেবে? তোমার আসল পরিচয় কি? তুমি কি সত্যিই সোহনপাল?’

সোহনপাল এবার লী সারভিসের মত সামনের সারির সব ক’টা ঝকঝকে দাঁত বার করে হাসতে লাগল। শব্দহীন, তীক্ষ্ণ, ধারাল হাসি।

রতন রায় বললেন, ‘বলতে আপত্তি কি?’

সোহনপাল বলল, ‘কোর্টে তো জানতেই পারবে।’

‘প্লিজ, প্লিজ বল।’

সোহনপাল চোখের কালো চশমাটা দেখিয়ে বলল, ‘আমার নাম হিমাদ্রি সরকার।’

রতন রায় চমকে উঠে বললেন, ‘আশ্চর্য!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *