০৮. অম্বিকা-অম্বালিকা-অনামিকা মাতা

অম্বিকা-অম্বালিকা-অনামিকা মাতা

শান্তনু সত্যবতীর জ্যেষ্ঠ পুত্র কুরুরাজ চিত্রাঙ্গদ সমনামীয় গন্ধর্বরাজ চিত্রাঙ্গদের সঙ্গে সমনামের কারণে ভয়ংকর যুদ্ধে অবতীর্ণ হন ও মৃত্যুবরণ করেন। চিত্রাঙ্গদের মৃত্যুর পর ভীষ্ম অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর বয়স্ক বিচিত্রবীর্যকে দিয়ে চিত্রাঙ্গদের প্রেতকার্যগুলি অনুষ্ঠান করে বিচিত্রবীর্যকে কুরুরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। ভীষ্মের উপদেশে চলতে থেকে পৈতৃক রাজ্য শাসন করতে থাকলেন (বিচিত্রেতি। অপ্রাপ্তযৌবনম্‌, অতএব বালং কিশোরম্‌ ভারতকৌমুদী)

বিচিত্রবীর্য যৌবনে পদার্পণ করেছেন, বুদ্ধিমানদের মধ্যে প্রধান হয়েছেন তা দেখে ভীষ্ম তাঁকে বিবাহ করাবার ইচ্ছা করলেন। তারপর ভীষ্ম শুনতে পেলেন অপ্সরার মতো সুন্দরী কাশীরাজের তিনটি কন্যাই একসঙ্গে স্বয়ংবরা হবে। মাতা সত্যবতীর অনুমতি নিয়ে সারথিবিহীন রথে উঠে ভীষ্ম কাশীরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। শান্তনুনন্দন ভীষ্ম সেখানে গিয়ে দেখলেন সকল দেশ থেকে এসে রাজারা সেই সভায় সমবেত হয়েছেন, সেই কন্যা তিনটিও এসেছে।

তখন পরিচয়ের জন্য রাজাদের নামকীর্তন করতে থাকলে, সেই পরমসুন্দরী কন্যারা শান্তনুপুত্র ভীষ্মকে বৃদ্ধ ও একাকী দেখে ‘ইনি বৃদ্ধ’ এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়েই যেন তার কাছ থেকে সরে গেল। ভীষ্ম পরম ধার্মিক, তাতে আবার বৃদ্ধ হয়েছেন, শরীরের মাংসগুলি শিথিল হয়ে পড়েছে এবং চুল পেকেছে; তবুও এ নির্লজ্জ এখানে এসেছে কেন? মিথ্যা প্রতিজ্ঞ বলে জগতে সকলে একে কী বলবে; আর ভীষ্ম অনর্থক ব্রহ্মচারী বলে জগতে প্রসিদ্ধ হয়েছে।

নিকৃষ্ট রাজগণ পরস্পর এইরূপ বলতে থেকে হাস্য করতে লাগলেন; তখন ভীষ্ম তাদের কথা শুনে ক্রুদ্ধ হলেন। তখন প্রভাবশালী ভীষ্ম সেই কন্যা তিনটিকে প্রার্থনা করলেন এবং তাঁদের রথে তুলে নিয়ে বীরতেজে দীপ্তি পেতে থেকে জলদগম্ভীর স্বরে রাজগণকে বলতে লাগলেন— “রাজগণ, গুণবান বীরকে আহ্বান করে এনে কন্যাকে শক্তি অনুসারে অলংকৃত করে এবং ক্ষমতা অনুযায়ী যৌতুক দিয়ে অনেকে সেই কন্যা দান করে থাকেন। অন্য লোকেরা বরদত্ত দুটি গোরুর সঙ্গে কন্যাদান করে থাকেন।

‘কেউ কেউ নির্দ্দিষ্ট ধন নিয়ে কন্যা দান করেন; অন্য দল বলপূর্বক কন্যা হরণ করেন। অপর লোকেরা কন্যাকে সম্মত করে বিবাহ করেন; অন্য কেউ কেউ অসতর্ক কন্যাকে রমণ করে সেই কন্যা লাভ করেন এবং অন্য লোকেরা যজ্ঞে প্রবৃত্ত থেকে কন্যা গ্রহণ করেন। “তোমরা দু’জনে দাম্পত্য ধর্ম আচরণ করো” এই বলে কন্যা দান করলে সেই আর্য বিধান অনুসরণ করে কেউ কেউ ভার্যা লাভ করেন। পণ্ডিত বর্ণিত এই বিবাহকেই অষ্টম বিবাহ বলে জানবে।

কিন্তু ক্ষত্রিয়েরা স্বয়ংবরেরই প্রশংসা করেন এবং তাই করে থাকেন। কেন-না ধর্মবাদীরা বলেন যে, বিপক্ষগণকে পরাভূত করে যে কন্যাকে হরণ করা হয়, সেই ভার্যাই ক্ষত্রিয়ের পক্ষে প্রশস্ত। অতএব হে রাজগণ, আমি বলপূর্বক এই কন্যা ক’টিকে এখান থেকে হরণ করতে চাই, আপনারা শক্তি অনুসারে জয় বা পরাজয়ের জন্য চেষ্টা করুন। রাজগণ, আমি যুদ্ধের জন্য কুতনিশ্চয় হয়ে রইলাম। ভীষ্ম অন্য রাজাকে এবং কাশীরাজকে এইরূপ বলে নিজেই কন্যা তিনটিকে রথে তুলে নিয়ে পুনরায় রাজগণকে আহ্বান করে সেই কন্যাগুলিকে নিয়ে সত্বর প্রস্থান করতে লাগলেন।

তখন সকল রাজাই ক্রুদ্ধ হয়ে আপন আপন বাহু মর্দন করে ওষ্ঠ দংশন করতে থেকে সভা থেকে উঠে পড়লেন। তাঁরা অঙ্গের অলংকারগুলি খুলে ফেলে বর্ম পরতে লাগলেন। রাজারা যখন অলংকারগুলি খুলে রাখতে লাগলেন, তখন সেগুলি বিদ্যুতের মতো চমকাতে লাগল। ক্রোধে ও অধৈর্যে রাজাদের ভ্রূযুগল কুটিল হয়ে পড়ল এবং নয়নযুগল রক্তবর্ণ হল। এই অবস্থায় তাঁরা সারথিসজ্জিত এবং উৎকৃষ্ট অশ্বযুক্ত সুন্দর সুন্দর রথে আরোহণ করে, অস্ত্র তুলে একাকী দ্রুতগামী ভীষ্মের পিছনে পিছনে ধাবিত হলেন। তারপর বহুসংখ্যক রাজার সঙ্গে ভীষ্মের তুমুল ও লোমহর্ষক যুদ্ধ আরম্ভ হল। প্রথমে রাজারা একসঙ্গে দশ হাজার বাণ নিক্ষেপ করে ভীষ্মকে আক্রমণ করলেন। ভীষ্ম সেই বাণগুলি উপস্থিত হতে না হতেই মধ্যপথেই সেগুলি কেটে ফেললেন।

তারপর সেই রাজারা একত্রে সকল দিক থেকে ভীষ্মকে ঘিরে ধরে মেঘ যেমন পর্বতের উপর বারিবর্ষণ করে, সেই রকম ভীষ্মের উপর শরবর্ষণ করতে লাগলেন। তখন ভীষ্ম সকল রাজার নিক্ষিপ্ত বাণগুলি নিবারণ করে প্রত্যেক রাজাকে তিনটি তিনটি বাণে বিদ্ধ করলেন। তখন প্রত্যেক রাজা পাঁচটি করে বাণে ভীষ্মকে বিদ্ধ করলেন। মহাশক্তিশালী ভীষ্মও আরও দুটি করে বাণে রাজাদের প্রতিবিদ্ধ করলেন। শর ও শক্তি প্রভৃতি অস্ত্র সমাচ্ছন্ন সেই তুমুল যুদ্ধ দেবাসুর যুদ্ধের ন্যায় প্রত্যক্ষদর্শী জনসাধারণ ও বীরগণের ভয় জন্মাতে লাগল। তখন ভীষ্ম বিপক্ষদের শতসহস্র ধনু ধ্বজ, বর্ম ও মস্তক ছেদন করে ফেললেন। সেই যুদ্ধে শত্রুগণও রথচারী ভীষ্মের আত্মরক্ষা ও লঘুহস্ততা প্রভৃতি অমানুষিক কর্ম দেখে তাঁর প্রশংসা করতে লাগল। তদনন্তর সর্বশস্ত্রনিপুণ ভীষ্ম বিপক্ষগণকে পরাভূত করে কন্যাদের নিয়ে হস্তিনাপুর চলে গেলেন।

তারপর অসাধারণ শক্তিশালী মহারথ শাল্বরাজা, শান্তনুনন্দন ভীষ্মের পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন। একটি হস্তী হস্তিনীর পিছনে যেতে লাগলে, অপর প্রবল হস্তী যেমন দন্তদ্বারা সেই হস্তীর পিছনে আঘাত করে, শাল্বও তেমনই ভীষ্মকে আঘাত করে কন্যাগুলির পিছনে যাবার চেষ্টা করলেন। মহাবাহু শাল্বরাজা স্ত্রীলাভ করবার ইচ্ছা করছিলেন। সুতরাং তিনি ক্রোধ প্রণোদিত হয়ে ভীষ্মকে বললেন—“থামো, থামো।” তখন ভীষ্ম, শাল্বরাজার বাক্যে উত্তেজিত হয়ে ধূমহীন অগ্নির মতো ক্রোধে জ্বলতে থেকে উন্মুক্ত বাণ ও ধনু ধারণপূর্বক ললাট কুঞ্চিত করে ক্ষত্রিয়ের ধর্ম অনুসারে নির্ভয়ে ও স্থিরচিত্তে শাল্বরাজার দিকে নিজের রথ ফেরালেন। ভীষ্ম ফিরে দাঁড়িয়েছেন দেখে সেই রাজারা সকলেই যুদ্ধের জন্য ভীষ্ম ও শাল্বের সম্মিলনে দর্শক শ্রেণিভুক্ত হলেন। একটি গাভির জন্য দুটি বলবান বৃষ যেমন গর্জন করতে থেকে পরম্পর অভিমুখী হন, সেই রকম বল ও বিক্রমশালী ভীষ্ম ও শাল্ব পরস্পরের অভিমুখী হলেন।

একটি গাভির জন্য দুটি বলবান বৃষ যেমন গর্জন করতে থাকে তেমনই ভীষ্ম ও শাল্বরাজা পরস্পরের দিকে দ্রুত অগ্রসর হলেন। তারপর নরশ্রেষ্ঠ শান্ধরাজা শীঘ্রগামী বহুসংখ্যক বাণদ্বারা শান্তনুনন্দন ভীষ্মকে আচ্ছন্ন করে ফেললেন। প্রথমে শাল্বরাজই প্রহার করেছেন দেখে বিপক্ষ রাজারা ‘সাধু সাধু’ বলে উঠলেন। যুদ্ধে শাল্বরাজের লঘুহস্ততা দেখে রাজারা শাল্বের প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন শত্রুনগর-বিজয়ী ভীষ্ম বিপক্ষ রাজগণের সেই সকল কথা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন— “থাক থাক।” ক্রুদ্ধ অবস্থাতেই তিনি সারথিকে বললেন— “যেখানে ওই শাল্বরাজ আছেন, সেইখানে যাও। গরুড় যেমন সর্পবধ করেন, আমি আজ সেইভাবে শাল্বরাজকে বধ করব।” তারপর ভীষ্ম বরুণাস্ত্র সন্ধান করে এবং তাঁর আঘাতে শাল্বরাজার চারটি ঘোড়াকেই দুর্বল করে দিলেন। তারপর নরশ্রেষ্ঠ শান্তনুনন্দন ভীষ্ম কন্যা ক’টিকে হরণ করবার জন্য ইন্দ্র অস্ত্র দ্বারা শাল্বরাজার ঘোড়াগুলিকে মেরে ফেললেন। ভীষ্ম এইভাবে জয় করে শাল্বরাজের জীবনমাত্র অবশিষ্ট রেখে তাঁকে ছেড়ে দিলেন। পরাজিত শাল্বরাজ আপন রাজধানীতে চলে গেলেন।

এদিকে অসাধারণ বিক্রমী ধর্মাত্মা ভীষ্ম নিজে অক্ষত শরীরে থেকে যুদ্ধে শত্রুদের পরাভূত করে নানাবিধ বন, নদী, পর্বত ও বৃক্ষসমূহকে অতিক্রম করে পুত্রবধূর ন্যায় এবং কনিষ্ঠা ভগিনীর ন্যায় কাশীরাজের কন্যাগণকে নিয়ে এলেন। আপন কন্যা যেমনভাবে থাকে তেমনভাবেই মহাবীর ভীষ্ম সেই কন্যাগণকে নিয়ে কুরুদেশে গেলেন এবং ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের সন্তোষের জন্য তাঁদের রাজধানীতে নিয়ে এলেন। ভীষ্ম বিক্রমপ্রকাশ পূর্বক আনীত সেই তিনটি কন্যাকেই ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যর হস্তে দান করার ইচ্ছা করলেন। বিমাতা সত্যবতীর সঙ্গে পরামর্শ করে ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের বিবাহের উপক্রম করলেন।

কিছুদিন পরেই বিবাহ হবে। এমন সময়ে কাশীরাজের জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বা সহাস্যমুখে ভীষ্মকে এসে বললেন— “আমি মনে মনে পূর্বে শাল্বরাজকে পতিত্বে বরণ করেছিলাম। তিনিও আমাকে পত্নী করবেন বলে স্বীকার করেছিলেন এবং আমার পিতারও এইরূপ ইচ্ছা ছিল। সুতরাং আমি স্বয়ংবরে শাল্বরাজকেই বরণ করতাম। হে ধর্মজ্ঞ, আপনি এইসব জেনে যথার্থ ধর্মের অনুসরণ করুন।”

ভীষ্ম তখন বেদপারদর্শী ব্রাহ্মণদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক কতর্ব্য নিশ্চয় করে কাশীরাজের জ্যেষ্ঠা কন্যাকে শান্ধরাজার কাছে যাবার জন্য অনুমতি প্রদান করলেন। আর অম্বিকা ও অম্বালিকাকে যথানিয়মে বিচিত্রবীর্যের হাতে সমপর্ণ করলেন। রূপ ও যৌবনগর্বিত ধর্মাত্মা বিচিত্রবীর্য অম্বিকা ও অম্বালিকার পাণিগ্রহণ করেই অত্যন্ত কামাসক্ত হয়ে পড়লেন। অম্বিকা এবং অম্বালিকার শরীরের কান্তি বৃহতীপুষ্পের ন্যায় শ্যামবর্ণ, কেশকলাপ কুঞ্চিত ও নীলবর্ণ নখসমূহ কিছু উন্নত ও রক্তবর্ণ এবং নিতম্বযুগল ও স্তনযুগল স্থূল ছিল। তাঁরা লোকের সম্মান-গৌরব বুঝতেন, শুভলক্ষণযুক্ত ছিলেন এবং বংশের মঙ্গলসূচনা করতেন। এহেন অম্বিকা ও অম্বালিকা বিচিত্রবীর্যকে আপনাদের অনুরূপ পতি লাভ করেছেন মনে করে, যথানিয়মে তাঁর শুশ্রূষা করতে লাগলেন। এদিকে অশ্বিনীকুমারের ন্যায়রূপ বিচিত্রবীর্য সকল রমণীরই চিত্ত উদ্বেলিত করতে লাগলেন।

যুবক বিচিত্রবীর্য রাজা সেই অম্বিকা ও অম্বালিকার সঙ্গে সাত বৎসর অধিক পরিমাণে বিহার করে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলেন। তখন বন্ধুগণ বিশ্বস্ত চিকিৎসকদের মিলিত হয়ে তাঁর রোগের প্রতিকার করার জন্য বিশেষ চেষ্টা করলেন; কিন্তু তাঁদের অগ্রাহ্য করে সূর্য যেমন অস্তাচল গমন করেন, বিচিত্রবীর্য তেমনই যমালয়ে গমন করলেন। তখন ধর্মাত্মা ভীষ্ম অত্যন্ত চিন্তাকুল ও শোকাকুল হয়ে পুরোহিতগণ ও কুরুবংশীয় প্রধান প্রধান লোকের সঙ্গে মিলিত হয়ে সত্যবতীর অনুসারে সেই বিচিত্রবীর্য রাজার সমস্ত প্রেতকার্য করালেন।

পুত্রবধূর সন্তান জন্মের জন্য নিয়োগ প্রথা গ্রহণ

বিচিত্রবীর্যের মৃত্যুর পর পুত্রশোক কাতরা সত্যবতী বিধবা পুত্রবধূদের সান্ত্বনা দিয়ে কীভাবে কুরুবংশ রক্ষা করা যায় তাই পরামর্শ করতে লাগলেন। তিনি ভীষ্মকে বললেন—‘ভীষ্ম, ধার্মিক ও যশস্বী শান্তনু রাজার পিণ্ড যশ ও বংশ এখন তোমার পরেই প্রতিষ্ঠিত হল। আমার পুত্র তোমার ভ্রাতা ছিল, আর সে বলবান এবং তোমার অত্যন্ত প্রিয়ও ছিল; অথচ সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ বাল্যবয়সেই অপুত্রক অবস্থায় স্বর্গে গিয়েছে। তোমার সেই ভ্রাতার এই দুটি মহিষী; এরা একে কাশীরাজের কন্যা শুভলক্ষণান্বিতা এবং রূপযৌবন সম্পন্না, তাতে আবার পুত্রকামনাও করছে।

তয়োরুৎপাদয়াপত্যং সন্তানায় কুলস্য নঃ।

মন্নিয়োগামহ্না-বাহা! ধর্মং কর্তুমিহার্হসি।। আদি : ৯৭ : ১১ ।।

“অতএব তুমি আমাদের বংশরক্ষার জন্য আমারই আদেশে এদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করো এবং তা করে ধর্ম অর্জন করো।”

অথবা নিজেই রাজ্যে অভিষিক্ত হও। ভরতবংশকে শাসন করো এবং ধর্মানুসারে দার- পরিগ্রহ করো; কিন্তু পিতৃপুরুষদের নরকে নিমগ্ন কোরো না।

সত্যবতীর এই নির্দেশ শুনে ভীষ্ম বললেন, “মা, আপনি শ্রেষ্ঠ ধর্মের কথা বলেছেন, এ- বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি আবারও আপনার কাছে সত্য প্রতিজ্ঞা করছি। আমি ত্রিভুবন পরিত্যাগ করতে পারি, কিংবা দেবগণের রাজত্বও পরিত্যাগ করতে পারি অথবা এই দুটির থেকে অধিক যদি কিছু থাকে তাও পরিত্যাগ করতে পারি কিন্তু কোনও প্রকারেই সত্য পরিত্যাগ করতে পারি না। পথিবী গন্ধ ত্যাগ করতে পারে, জল আপন রস পরিত্যাগ করতে পারে, তেজ নিজের রূপ পরিত্যাগ করতে পারে এবং বায়ুও স্পর্শগুণ ত্যাগ করতে পারে এবং সূর্য আলোক ত্যাগ করতে পারেন, অগ্নি উষ্ণতা ত্যাগ করতে পারেন; কিন্তু আমি কোনও প্রকারেই সত্য ত্যাগ করতে পারি না।”

অত্যন্ত প্রভাব ও পরাক্রমশালী পুত্র ভীষ্ম এই কথা বললে, মাতা সত্যবতী ভীষ্মকে বললেন, “সত্য পরাক্রম ভীষ্ম, তুমি যে ছয়ভাবে সত্যে অবস্থান করো তা আমি জানি। তুমি ইচ্ছা করলে আপন ক্ষমতার বলেই অন্য ত্রিভুবন সৃষ্টি করতে পারো। তথাপি আপৎ- কালের কর্তব্য দেখো এবং এই বিশালভার বহন করো। যাতে তোমার বংশের সূত্র না নষ্ট হয়। বন্ধুবৰ্গও সন্তুষ্ট থাকে, তেমন কার্য করো।”

তখন ভীষ্ম সত্যবতীকে পরামর্শ দিলেন যে, বিচিত্রবীর্যের ভার্যাদের ক্ষেত্রজ পুত্ৰ উৎপন্ন করতে হবে কারণ ক্ষেত্রজ পুত্ৰ পরিণেতার পুত্ররূপেই গণ্য হয়। তখন ভীষ্ম মাতা সত্যবতীর নিকট ঋষি উতথ্য, তাঁর পত্নী মমতা, দেবর বৃহস্পতি ও উতথ্যের পুত্র দীর্ঘতমার কাহিনি বিস্তৃত ভাবে বর্ণনা দিলেন। দীর্ঘতমা কীভাবে বলিরাজার পত্নী সুদেষ্ণাকে ক্ষেত্রজ পুত্র উপহার দিয়েছিলেন তা বিবৃত করলেন।

তখন সত্যবতী বললেন যে ভীষ্ম যা বলেছেন তা সত্য। তিনি সকুণ্ঠে লজ্জিত হাস্যরুণ মুখে ভীষ্মকে জানালেন যে ঋষি পরাশরের সঙ্গমে তাঁর কানীন পুত্র ব্যাসদেবের জন্মকাহিনি। আরও জানালেন, জন্মমুহূর্তে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বেদব্যাস তাঁর মাতাকে কথা দিয়েছিলেন যে মাতা স্মরণ করলেই তিনি চলে আসবেন। ভীষ্ম অনুমতি প্রদান করলে সত্যবতী তাঁর পুত্র বেদব্যাসকে আহ্বান করবেন, বেদব্যাসই বিচিত্রবীর্যের ভার্যাদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করবেন।

ভীষ্ম ব্যাসদেবের জন্মকাহিনি শুনে অত্যন্ত প্রীত হলেন। বেদব্যাসের নাম করামাত্রই ভীষ্ম কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন “যে লোক কাজ করার পূর্বে ধর্ম, অর্থ, কাম, এই তিনটির পর্যালোচনা করে এবং যে লোক অর্থ ও অর্থের ফল, ধর্ম ও ধর্মের ফল এবং কাম ও কামের ফল আর ওই সকলের বিপরীত অনর্থ প্রভৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পর্যালোচনা করে কার্যে প্রবৃত্ত হয়, সেই লোকই বুদ্ধিমান। অতএব মা, আপনি আমাদের বংশের হিতকর মঙ্গলজনক অথচ ন্যায়সংগত এই যে কথা বললেন তা আমার অত্যন্ত অভিপ্রেত।” ভীষ্ম এই বিষয়ে অঙ্গীকার করলে সত্যবতী মহর্ষি বেদব্যাসকে স্মরণ করলেন।

মাতা সত্যবতী স্মরণ করেছেন জানতে পেরেই বুদ্ধিমান বেদব্যাস বেদপাঠ করতে করতে সকলের অজ্ঞাতে ক্ষণকালের মধ্যে সেখানে আবির্ভূত হলেন। সত্যবতী বহুকাল পরে পুত্রকে দেখে যথাবিধানে স্বাগত প্রশ্নদ্বারা তাঁর সম্মান করে বাহুযুগল দ্বারা আলিঙ্গন করে স্তন্যদুগ্ধে তাঁকে অভিষিক্ত করে আনন্দাশ্রু মোচন করতে লাগলেন।

প্রথম পুত্র মহর্ষি বেদব্যাসও আপন কমণ্ডলুস্থিত তীর্থজল দ্বারা স্নেহকাতরা মাতা সত্যবতীকে অভিষিক্ত করে অভিবাদন করে বললেন, “হে ধর্মতত্ত্বজ্ঞে, আপনি যা অভিপ্রায় করেছেন, আমি তাই করতে এসেছি। অতএব আমাকে উপদেশ দিন, আমি আপনার কোন প্রিয় কার্য সম্পাদন করব। তারপর রাজপুরোহিত যথাবিধানে মন্ত্রপাঠ করে মহর্ষি ব্যাসের পূজা করলেন; মহর্ষিও সেই পূজা গ্রহণ করলেন।

ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম

বেদব্যাস উপবেশন করেছেন দেখে মাতা সত্যবতী তাঁর স্থায়ী মঙ্গলের বিষয় জিজ্ঞাসা করে এবং তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে এই কথা বললেন, “হে কবি, পুত্র সকল মাতা ও পিতার সহকারী হয়েই জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং পিতা যেমন পুত্রদের স্বামী, মাতাও তেমনই তাঁদের স্বামিনী। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হে ব্রহ্মর্ষি, মহর্ষি পরাশর শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারেই তোমাকে আমার গর্ভে উৎপাদন করেছেন; সুতরাং তুমি যেমন আমার জ্যেষ্ঠপুত্র, বিচিত্রবীর্যও তেমনই আমার কনিষ্ঠ পুত্র ছিল। তারপর এক পিতা বলে ভীষ্ম যেমন বিচিত্রবীর্যের ভ্রাতা এক মাতা বলে তুমিও তেমনই বিচিত্রবীর্যের ভ্রাতা।

“কিন্তু যথার্থবিক্রমী এই শান্তনুনন্দন ভীষ্ম সত্যরক্ষা করবেন বলে সন্তান উৎপাদন করার ইচ্ছা করেন না এবং রাজ্যশাসনের ইচ্ছাও করেন না। অতএব প্রজাবর্গের প্রতি দয়াবশত অন্যান্য সকলের রক্ষার জন্য এবং পুত্রবধূ দুটির প্রতি স্নেহবশত আমি যা বলব তা তুমি শোনো; তারপর ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের মঙ্গলের জন্য এবং আমাদের বংশরক্ষার জন্য এই ভীষ্মের অনুরোধ ও আমার আদেশে তুমি কনিষ্ঠ ভ্রাতার ভার্যা দুটি— দেবকন্যার তুল্য রূপ ও যৌবনসম্পন্না এই দুটি নারীর গর্ভে সন্তান উৎপাদন করো। বিচিত্রবীর্যের উপযুক্ত পুত্রসন্তান বংশরক্ষার জন্য প্রয়োজন।”

বেদব্যাস বললেন, “মা সত্যবতী, আপনি ঐহিক ও পারত্রিক দ্বিবিধ ধর্মই জানেন এবং ধর্মে আপনার মন সন্নিবিষ্ট আছে। অতএব আপনার আদেশে আমি আপনার অভীষ্ট সম্পাদন করব। ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের জন্য মিত্র ও বরুণ দেবতার তুল্য পুত্র আমি উৎপাদন করব। অতএব আমি যেমন নির্দেশ করি তেমন ভাবে সেই রানিরা দুজনে এক বৎসর যাবৎ যথানিয়মে ব্ৰত আচরণ করুন। তারপর তারা দুজনেই শুদ্ধ হবেন। ব্রত আচরণ না করে কোনও রমণীই আমার কাছে আসতে পারে না।” সত্যবতী বললেন, “বৎস, রানিরা যাতে সদ্যই গর্ভ ধারণ করেন, তুমি তাই করো; কারণ অরাজক রাজ্যে বৃষ্টি হয় না এবং দেবতারাও প্রসন্ন হন না। দ্বৈপায়ন, আমরাই বা কী করে অরাজক রাজ্য রক্ষা করতে পারব। অতএব তুমি শীঘ্র রানিদের গর্ভ উৎপাদন করো; ভীষ্ম সেই সন্তানদের রক্ষা করবেন। “বেদব্যাস বললেন, “মা, যদি এখনি আমার অকালে পুত্র উৎপাদন করতে হয়, তবে রানিরা যেন আমার বিকৃত রূপ সহ্য করেন; তাঁদের এটাই প্রধান ব্রত হবে। অম্বিকাদেবী যদি আমার শরীরের গন্ধ, রূপ, বেশ এবং এই বিকৃত দেহ সহ্য করতে পারেন, তবে অদ্যই তিনি উৎকৃষ্ট গর্ভ ধারণ করবেন।” তেজস্বী বেদব্যাস সত্যবতীকে এই কথা বলে রানিদের সঙ্গে সঙ্গম করার ইচ্ছায় তখনই অন্তর্হিত হলেন।

তারপর সত্যবতী নির্জনে পুত্রবধূর কাছে গিয়ে তাঁর কাছে হিতকর এবং ধর্ম ও যুক্তিসংগত কথা বলতে লাগলেন। অম্বিকা, আমি তোমার কাছে যে ধর্মসংগত কথা বলছি, তা তুমি শোনো। আমার ভাগ্য নষ্ট হয়েছে বলে নিশ্চয় ভরতবংশের উচ্ছেদ উপস্থিত হয়েছে। ভীষ্ম, আমাকে এবং পিতৃবংশীয় লোকদের শোকার্ত দেখে এই ভরতবংশের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত বুদ্ধিই দিয়েছেন। কিন্তু বৎসে, সে বুদ্ধি তোমারই আয়ত্ত; অতএব তুমি আমার অভীষ্ট সম্পাদন করো এবং বিনষ্ট ভরতবংশের পুনরায় উদ্ধার করো। সুন্দরী, তুমি ইন্দ্রের তুল্য পুত্র প্রসব করো, সেই আমাদের বংশের এবং রাজ্যের বিশাল ভার বহন করবে।” সত্যবতী অম্বিকাকে সম্মত করিয়ে দেবতা, মুনি, ব্রাহ্মণ ও অতিথিদের ভোজন করালেন।

তারপর সত্যবতী, যথাসময়ে ঋতুস্নাতা পুত্রবধূ অম্বিকাকে শয়নগৃহে প্রবেশ করাতে করাতে মৃদুস্বরে বললেন, “অম্বিকা, তোমার একটি দেবর আছে। সে আজ তোমাকে লক্ষ্য করে এই গৃহে প্রবেশ করবে; অতএব তুমি সাবধান হয়ে তার প্রতীক্ষা করতে থাকো। সে রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের সময় আসবে।” অম্বিকা শাশুড়ির সেই কথা শুনে মনোহর শয্যায় শয়ন করে দেবর ভীষ্মকে এবং দেবরস্থানীয় কুরুবংশীয় প্রধান পুরুষদের চিন্তা করতে লাগলেন।

তারপর অম্বিকার জন্য প্রথম নিযুক্ত সত্যবাদী বেদব্যাস এসে সেই ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন সেই ঘরটি উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত ছিল। বেদব্যাসের পিঙ্গলবর্ণের জটা ও দাড়ি এবং দুটি উজ্জ্বল চোখ দেখে অম্বিকা ভয়ে দুই চোখ বন্ধ করে ফেললেন। মাতা সত্যবতীর প্রিয় কার্য করার জন্য সেই অবস্থাতেই বেদব্যাস অম্বিকার সঙ্গে রমণে প্রবৃত্ত হলেন। সমস্ত রমণ-প্রক্রিয়ায় অম্বিকা একটি বারও চোখ খুললেন না এবং রমণকারী পুরুষটির দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারলেন না। তারপর বেদব্যাস ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলে মাতা সত্যবতী তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “ব্যাস, এর গর্ভে গুণবান রাজপুত্র হবে তো?” ত্রিকালজ্ঞ বেদব্যাস মাতার কথা শুনে দৈবপ্রেরিত হয়ে বললেন, “মা, এই বালকটি দশ হাজার হস্তীর তুল্য বলবান, বিদ্বান, রাজর্ষিশ্রেষ্ঠ, অত্যন্ত ভাগ্যবান, অত্যন্ত উৎসাহী এবং বিশেষ বুদ্ধিমান হবে। এই মহাত্মার একশত পুত্র হবে। কিন্তু মায়ের দোষে এই বালকটি জন্মান্ধ হবে।” বেদব্যাসের এই কথা শুনে সত্যবতী পুত্র বেদব্যাসকে বললেন, “তপোধন, অন্ধ লোক কুরুবংশের উপযুক্ত রাজা হবে না। অতএব যে ভরতবংশকে রক্ষা এবং পিতৃবংশের বৃদ্ধি করতে পারবে, এমন আর-একটি কুরুবংশের রাজা জন্মিয়ে দাও।” “তাই হবে” এই কথা বলে বেদব্যাস চলে গেলেন। এদিকে সেই অম্বিকাদেবীও যথাকালে একটি অন্ধ পুত্র প্রসব করলেন।

তারপর সত্যবতী দেবী পুত্রবধূ অম্বালিকাকে পূর্বের মতো বলে কয়ে সম্মত করে পুনরায় বেদব্যাসকে আহ্বান করলেন। তারপর বেদব্যাস পূর্বের মতো বিকৃত আকারে এসে অম্বালিকাকে ধরলেন; অম্বালিকাও তাঁর পিঙ্গলবর্ণ দাড়ি, জটা ও দুই চোখ দেখে ভয়ে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গেলেন। তখন বেদব্যাস তাঁকে ভীত ও পাণ্ডুবর্ণ দেখে বললেন, “সুন্দরী, আমার বিকৃত মূর্তি দেখে তুমি যখন পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গেলে, তখন তোমার এই পুত্র পাণ্ডুবর্ণই হবে এবং তার ‘পাণ্ডু’ এই নামই হবে।” মহর্ষি বেদব্যাস সেই কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। সত্যবতী, বেদব্যাসকে দেখে প্রশ্ন করলেন, “পুত্র, আমার কাছে বলো—এই গর্ভে সুলক্ষণসম্পন্ন পুত্র হবে তো?” তখন বেদব্যাস সেই বালকটির পাণ্ডুবর্ণের কথা মাতাকে বলে আরও বললেন, “এই বালক যথাকালে অত্যন্ত বিক্রমশালী ও জগদ্‌বিখ্যাত হবে; কিন্তু ওর মায়ের দোষে পাণ্ডুবর্ণ হবে। সেই বালকের আবার মহাধনুর্ধর পাঁচটি পুত্র হবে।” বেদব্যাস মাতাকে এই কথা বলে নমস্কার করে তখন প্রস্থান করার উপক্রম করলেন। তখন মাতা সত্যবতী বেদব্যাসের কাছে পুনরায় আর একটি পুত্র প্রার্থনা করলেন; বেদব্যাসও চলতে থেকে মাতাকে বললেন, তাই হবে। তারপর, অম্বালিকাদেবী যথাসময়ে পাণ্ডুবর্ণ এবং সমস্ত রাজলক্ষণান্বিত একটি পুত্র প্রসব করলেন। সে বালক আপন কান্তিতে জ্বলছিল। এই বালকটির পাণ্ডবনামধারী মহাধনুর্ধর পাঁচটি পুত্র জন্মেছিল।

অনামিকা মাতা— ধার্মিকশ্রেষ্ঠ বিদুরের জন্ম

তারপর, সত্যবর্তী আবার ঋতুকালে জ্যেষ্ঠা বধূ অম্বিকাকে বেদব্যাসের জন্য নিযুক্ত করলেন। কিন্তু দেবকন্যাতুল্যা অম্বিকা, বেদব্যাসের সেই বিকট আকৃতি ও শরীরের বিকট গন্ধ স্মরণ করে শাশুড়ির আদেশ পালন করলেন না। কিন্তু অপ্সরার ন্যায় পরমসুন্দরী আপন দাসীটিকে আপনারই অলংকারে সাজিয়ে দিয়ে তাকেই সেখান থেকে বেদব্যাসের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বেদব্যাস উপস্থিত হলে সেই দাসী প্রত্যুদ্‌গমন করে অভিবাদন জানাল; তারপর তাঁর অনুমতিক্রমে রমণগৃহে প্রবেশ করে তাঁকে যথেষ্ট আদর ও পরিচর্যা করল। বেদব্যাস নির্জন স্থানে সেই দাসীর কাছে মৌখিক অনুরাগ জানিয়ে এবং তাঁর অঙ্গস্পর্শ ও কাম সম্ভোগ করে সন্তুষ্ট হলেন। বেদব্যাস সেই আনন্দমগ্না দাসীর সঙ্গে সহবাস করে ওঠবার সময়ে তাকে বললেন, “তুমি আমার অনুগ্রহে আজ থেকে দাসী থাকবে না আর হে শুভলক্ষণে, কোনও শ্রেষ্ঠ পুরুষই এই গৰ্ভরূপে তোমার উদরে এসেছেন। ইনি ধার্মিক এবং জগতে সমস্ত বুদ্ধিমানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হবেন।” বেদব্যাসের সেই পুত্রই বিদুর নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং মহাত্মা ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর ভ্রাতা বলে পরিচিত ছিলেন। মহাত্মা মাণ্ডব্যমুনির অভিসম্পাতে স্বয়ং ধর্ম এসে রাজনীতিজ্ঞ ও কামক্রোধশূন্য হয়ে বিদুররূপে জন্মেছিলেন। বেদব্যাসও অম্বিকার প্রতারণা এবং শূদ্রার গর্ভে নিজের পুত্রোৎপত্তির বিষয়ে সমস্ত বৃত্তান্ত সত্যবতীকে জানালেন। বেদব্যাস এইভাবে ধর্মের নিকট অনুনী হয়ে পুনরায় মাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে গর্ভের বিষয় জানিয়ে সেখানেই অন্তর্হিত হলেন। বেদব্যাসের ঔরসে বিচিত্রবীর্যের ভার্যাদের গর্ভে দেববালকতুল্য এবং কুরুবংশের বৃদ্ধিকারী তিনটি বালক এইভাবে জন্মেছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *