১৮. তাঁরা বৃদ্ধা হলেন

তাঁরা বৃদ্ধা হলেন

“বুইলি বাবু, সে এয়চিল বটে কাস্টমার। পালে পালে, যুদ্ধের সময়, নেঙড়ো, ইয়া ল্যাম্পপোস্টের মতো লম্বা, অ্যায়সা বুকের আড়া। গলার আওয়াজ সে কী গুমগুমে। য্যানো চিড়িয়াখানায় বাঘ হুমকোচ্চে। সে কবেকার কতা। আমাদের তকন সোমত্থ কাঁচা বয়েস। তারপর থেকে এই অ্যাদ্দিনে কত কাস্টমার এলো গ্যালো কিন্তু সেই নেঙড়োদের মতো একটাকেও আর দেকতে পেলুম না।”

রামবাগানের ভীষণ পুরনো বাড়িটার ছাদ। ছাদে শুকিয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া গঙ্গাজলের ট্যাঙ্ক। ট্যাঙ্কের গায়ে হেলান দিয়ে বসা বুড়িদি। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। সামনে রাখা ওল্ড মঙ্কের আধখালি গেলাস। প্লেটে চানাচুর, শশা, পেঁয়াজ। বুড়িদিকে ঘিরে গোল হয়ে বসা আমরা দু’-চারজন। আধখাওয়া গ্লাসটা তুলে নিয়ে ছোট একটা চুমুক দিল বুড়িদি। ফের শুরু করল— “কিন্তু আপশোস একটাই, বুইলি। এই যে মিনসেগুলো অ্যাতোবার আমাদের ঘরে এলো, বসলো কিন্তু এই গোটা রামবাগান-সোনাগাছি…কোনও আঁটকুড়ির পেটে একটা বাচ্চা দিয়ে গ্যালো না!” হতাশা ঝরে পড়ল বুড়িদির গলায়।

আমি। যৌনকর্মীদের নিজস্ব একটি সামাজিক সংগঠনের ‘অ্যান্টি ট্র্যাফিকিং’ অর্থাৎ পাচার বিরোধী প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর। কিছুদিন হল জয়েন করেছি। এলাকার ঘাঁতঘোঁত জানি না ভাল করে, তার ওপর বহিরাগতও বটে। ফস করে একটা আনকা প্রশ্ন করে বসলাম, ‘আচ্ছা বুড়িদি, এই নেঙড়োরা কারা?” একে তো পেটে বড় বড় তিনটে পাটিয়ালা পেগ। তার ওপর এরকম নির্বোধের মতো প্রশ্ন। ভয়ংকর বিরক্তি আর হতাশা মেশানো চোখে আমার দিকে তাকালেন, যার একটাই মানে হতে পারে— এটা কে রে? তারপর গলায় বিরক্তিটা ঝরে পড়ল—“আরে মুখ্যু, এটা বুইলিনি? সেই যে যুদ্ধ করতে এয়চিলো সব… যকন হাতীবাগানে জাপানী বোম পড়লো… ইয়া ধুমসো ধুমসো আবলুস কালো চ্যায়রা…।”

এতক্ষণে হৃদয়ঙ্গম হল। টমি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরে আসা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান সৈন্যদল। বুড়িদির অননুকরণীয় অ্যাকসেন্টে যারা নিগ্রো থেকে ‘নেঙড়ো’তে পরিণত হয়েছে।

প্রজেক্টের কাজটা শেষ হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর হল। অনেকদিন যাওয়া হয়নি ওদিকটায়। জানি না অসাধারণ সুরেলা গলায় ইন্দুবালা, আঙুরবালা, ছোটটেঁপির ঠুমরি-গজল আর গর্ভে বিশালদেহী, প্রবল বলশালী, ঘোর কৃষ্ণকায় অনার্য সন্তান ধারণ না করতে পারার আক্ষেপ নিয়ে বুড়িদি আজও টিকে আছেন কি না।

“বোঝলেন দাদা, এইবার পোলাডার একডা বিয়া দিমু। বয়স তো হইলো। আঠাইশ ছাড়াইসে এই বৈশাখে।” পাশে দাঁড়ানো প্রতিমাদি বলে চলেছেন ছেলের কথা। প্রতিমাদি পঞ্চাশোর্ধ। কালীঘাট লাইনপাড়ায় তবলাগলিতে একচিলতে ঘুপচি ঘর। পুরনো যৌনকর্মী। সেই কবে এঘাট, ওঘাট, বহুঘাটের জল খেয়ে ভাসতে ভাসতে এসে উঠেছিলেন এই এঁদোখাল থুড়ি বুড়িগঙ্গার পাড়ে। এখন লাইন ছেড়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে বাপি। কালীঘাটের গলিতে বেড়ে ওঠা জবালার সন্তান। ওরকম একটা পরিবেশে বড় হয়েও মদ গাঁজা তো দুরস্থান, একটা সুপুরির কুচিও মুখে তোলেনি কোনওদিন। পাড়ায় কখনও কেউ একটা মুখখারাপ করতে শোনেনি ওকে। দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। পজিশন মিডফিল্ডার। বাঁ পায়ে দুরন্ত সোয়ার্ভিং কিক। বাঁক খেয়ে ঢুকে যেত নেটে। ঠিক রোনাল্ডিনহোর মতো। স্বপ্ন দেখত রোনাল্ডিনহো হবে। সাও-পাওলার ঘিঞ্জি বস্তি থেকে উঠে গিয়ে স্বপ্নের ব্রাজিল টিমে। ভাবা যায়! রোনাল্ডিনহো পারলে বাপি পারবে না কেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, তারপর ইন্ডিয়ার জার্সি… সব হবে একদিন। হবেই হবে।

রোজ কাকভোরে উঠে জার্সি, বুট কাঁধে লেকের মাঠে দৌড়োত বাপি। বাবুদা-খোকনদাদের কোচিং ক্যাম্পে। ওরাও ভরসা দিতেন খুব— “তোর হবে, হবেই। খেলাটা কিন্তু ছাড়বি না কিছুতেই। যত কষ্টই হোক।” তা সেই অ্যাতো কষ্টের মধ্যেও কিন্তু পাড়ার স্কুলে মাধ্যমিকটা পাস করে ফেলেছিল বাপি। কিন্তু ওই যে বলে… তরতরিয়ে ছুটতে থাকা রোনাল্ডিনহো হবার স্বপ্নটায় চিড় খেয়ে গেল একদিন। লেক মাঠে ইন্টার স্কুলে টুর্নামেন্টে অপোনেন্টের মারকুটে ডিফেন্ডারের লঙ স্টাড বুটের একটা সলিড চার্জ। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে তিন টুকরো বাঁ পায়ের সিনবোন। সঙ্গে সেই কোন ছোটবেলা থেকে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা স্বপ্নটাও, খতম ফুটবল কেরিয়ার। ওই সিনেমার ভাষায় যাকে বলে— ‘দ্য এন্ড!’

বাপি এখন বাঁ-পাটা সামান্য টেনে টেনে হাঁটে। দিনের বেলা যৌনকর্মীদের স্বশাসিত সংস্থায় অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাজ করে। আর সন্ধের পর পেঁকো দুর্গন্ধ উঠে আসা খালপাড়ের নাইটস্কুলে পাড়ার পুঁচকেগুলোকে পড়ায়। ওর মধ্যেই কোনটার পায়ে বল একটু বেশি রকম কথা শুনেছে দেখলেই ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দেয় লেকের মাঠে। বাবুদাদের কোচিং ক্যাম্পে। নিজেও পৌঁছে যায় মাঝেসাঝে। ছুটিছাটার দিনে। সস্তা কেরোসিন কাঠের আলমারি থেকে নামিয়ে আনা রং জ্বলে যাওয়া মলিন ট্রাকস্যুট আর তাপ্পি মারা স্পোর্টস সু। তিন টুকরো হয়ে যাওয়া সিনবোন কেড়ে নিয়েছে বাঁ-পায়ের বাঁক খাওয়ানো ব্যানানা কিক আর রোনাল্ডিনহো হয়ে ওঠার স্বপ্ন। কিন্তু কাড়তে পাড়েনি সবসময় ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ভারী মিষ্টি হাসিটা আর উজ্জ্বল দুটো চোখ। সেই চোখের দৃষ্টি এখন মাঝমাঠে। বল নিয়ে দৌড়োচ্ছে কুচোকাঁচাগুলো। ঘামে ভেজা মুখগুলো চকচক করছে ভোরবেলার রোদে। ময়দান মার্কেটের সস্তা জার্সি লেপটে রয়েছে গায়। সেদিকে তাকিয়ে বাপির উজ্জ্বল চোখ দুটো উজ্জ্বলতর। “আমার হয়নি, ওদের হবে না? হবেই। কী বলেন দাদা?”

সেই কবে পরনে জিন্স, একতারা দোতারার বদলে হাতে গিটার মানুষটি গেয়ে উঠেছিলেন ‘আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু-আনা।’ সত্যিই তো, বাকি দু-আনা পেয়ে যাওয়ার আশা ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারে বাপি।

আর এদিকে প্রতিমাদি। স্বপ্নভঙ্গের পরেও স্বপ্ন দেখে চলেছেন। “বাপিডার বিয়া দিমু। বৌমা আইবো। নাতিপুতি হইবো। আমারে ডাকবো—‘ঠাম্মা, ঠাম্মা,’ ঘরে চিল্লাচিল্লি, দুষ্টামি… হেইসব না হইলে হয়? আপনেই কয়েন। ও দাদা, একডু বোঝান না পোলাডারে। হ্যায় তো ঘাড়ই পাতে না। ঘেঁটি শক্ত কইরা থাকে। কয় ‘ওসব হইবোখান।’ আপনে দ্যাহেন না একডু। যদি…।”

আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা সবাই জীবনে কখনও না কখনও, কোথাও না কোথাও অন্তত একবারের জন্য হলেও প্রতিমাদিদের দেখা পেয়েছেন। না পেলেও হতাশ হবেন না কারণ প্রতিমাদিরা সর্বত্র বিরাজমান। শুধু চোখকান খোলা রেখে খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা।

“দ্যাকো বাপু, রোজ গন্ডা গন্ডা মানুষ চড়িয়ে খাই। তোমার কতবাত্তা শুনলে বোঝা যায় তুমি ঠিক আর পাঁচজনের মতো নও।” নীলমণি মিত্র লেনে প্রজেক্ট সোনাগাছির অফিসে বসে কথাটা আমার উদ্দেশে ছুড়ে দিলেন মিনুদি। কথাটা আগেও দু’-চারবার বলেছেন, গুরুত্ব দিইনি তেমন। এবার আর কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, “তা হলে কার মতো মিনুদি?” চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিকে দেখে নিলেন মিনুদি। একসময় সোনাগাছি কাঁপানো ডাকসাইটে সুন্দরী। যৌবন থাকতে থাকতেই ভালমতন গুছিয়েগাছিয়ে নিয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। ষাট টপকেছেন বছর পাঁচেক হল। বর্তমানে সংস্থায় ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো ভালবেসেই কাজটা করেন। দুপুরবেলার কর্মব্যস্ত প্রজেক্ট অফিস। লোকজনের আনাগোনা। আমার প্রশ্নের জবাবে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন, “সে একেনে নয়, আমার ফেলাটে এসো একদিন। সব বলবোখন।” কথাকটা বলেই প্রসঙ্গান্তরে চলে গেলেন মিনুদি। আমার কৌতূহলটা বেড়ে গেল কয়েকগুণ।

দিনতিনেক বাদে অফিসের কাজ সেরে পৌঁছে গেছিলাম অবিনাশ কবিরাজ রোয়ে মিনুদির ফ্ল্যাটে। সচ্ছলতার ছাপ গোটা ঘর জুড়ে। “বসো” সামনে সোফাটার দিকে আঙুল দেখালেন মিনুদি। “এবার বলো, আমি কার মতো।” বাঁধভাঙা কৌতূহল প্রশ্ন হয়ে উঠে এল আমার গলায়।

বলেছিলেন মিনুদি। সে অনেক, অনেককালের কথা। একাত্তর সাল। শ্রাবণ মাস। ঘোর বর্ষা। বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে অবিনাশ কবিরাজ রো, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, ইমামবক্স লেন… গোটা সোনাগাছি। সেই দুর্যোগের রাতে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। গোটা চত্বর জুড়ে সার্চলাইটের আলো, হাঁকডাক আর ভারী বুটের দাপাদাপি। ঠিক তখনই বন্ধ ঘরের দরজায় ‘খুট, খুট’। দরজা খুলেছিলেন সন্ত্রস্ত মিনুদি। না, পুলিশ নয়। অন্য একজন। একমাথা ঝাঁকড়া চুল। একগাল দাড়ি। বড় বড় দুটো চোখ। মিনুদিরই বয়েসি। পরনের পাঞ্জাবি-পাজামা ভিজে চুপচুপে। কাঁধে ঝোলাব্যাগ। দৌড়জনিত পরিশ্রমে হাঁপাচ্ছে বেদম। হাপরের মতো ওঠানামা করছে রোগা রোগা বুকের খাঁচাটা। যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন মিনুদি। হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে ঘরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন ছেলেটাকে। সোজা খাটের তলাটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন, “চুপচাপ ঢুকে যাও। নীচে!”

গোটা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ব্যর্থমনোরথ পুলিশবাহিনী ফিরে যাবার পরও দিন-তিনেক মিনুদির ঘরে থেকে গেছিল ছেলেটা। যাবার দিন দরজায় পা দেবার মুখে জিজ্ঞেস করেছিল মিনুদি— “চ্যায়রা দেকলেই বোঝা যায় নেকাপড়া জানা ভদ্দরনোকের ছেলে। এতিপেতি গুন্ডাবদমাশ নও। জেনেবুঝে এরকম খতরনাক লাইনে এয়চো ক্যানো? কে তোমাদের ম্যাস্টার? কোন আবাগীর ব্যাটা মাতা খারাপ কোচ্চে তোমাদের?” জবাবে মিষ্টি হেসে কাঁধের ঝোলাটা থেকে একটা কাগজের কাটিং বের করে মিনুদির হাতে দিয়েছিল ছেলেটা। একটা ছবি। ছবির ওপর আঙুল দেখিয়ে বলেছিল—“ইনি। তোমার কাছে রেখে দাও এটা।” বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেছিল ঘর ছেড়ে।

“সেই মাস্টারের ছবিটা দেকবে ভাই?” বলতে বলতে খাটের তলায় ঝুঁকে পড়েছিলেন মিনুদি। টেনে বের করে এনেছিলেন একটা পুরনো তোরঙ্গ। পাট করে রাখা শাড়ির ভাঁজে বিবর্ণ, মলিন, হলুদ হয়ে যাওয়া পেপার কাটিং। একটা ফটো। শীর্ণকায় ছোটখাটো চেহারা। চোয়াল বসা হাসি মুখ। মোটা ফ্রেমের চশমার পিছনে উজ্জ্বল একজোড়া চোখ, তলায় ক্যাপশন— ‘শোককে ক্রোধ আর ক্রোধকে ঘৃণায় পরিণত করুন!’

“শুনেচিলুম শুয়োরের বাচ্চারা হাসপাতালে মেরে ফেলেচিল ওনাকে… অ্যাতোগুলো বছর কেটে গ্যালো ভাই। অ্যাকোনো মাঝেমধ্যেই রাতবিরেতে ধড়ফড় করে উঠে বসি বিছানায়। ওই বুঝি সে দরজায় কড়া নাড়লো…।” খাটে বসা মিনুদি। মাথা নিচু। থরথর কাঁপছে শরীরটা। এ বড় জটিল, কঠিন সময়। শোক সামলানোর। মিনুদিকে দিতে হবে সেটা। আর একটিও কথা না বলে বেরিয়ে এসেছিলাম ঘর থেকে।

রবীন্দ্র সরণী যেখানটায় সোনাগাছি লেনে বাঁক নিয়েছে ঠিক তার মুখে দেয়ালে হেলান দিয়ে পাথরের মতো মুখে বসে আছেন আঙ্গুরিদি। আঙ্গুরি বেগম। রোজই থাকেন। সেই কোন ছেলেবেলায় উত্তর চব্বিশ পরগনার অজগ্রাম থেকে পাচার হয়ে এসে ঢুকে পড়েছিলেন ইমাম বক্স লেনের গলিতে। আর বেরোনো হয়নি। যৌবন শুষে নিয়ে চলে গেছে খদ্দের। বুড়ো বয়সে এলাকার বেশির ভাগ যৌনকর্মীর যে পরিণতি, তাই বর্তেছিল আঙ্গুরিদির কপালে। জোয়ান মেয়েদের ঘরে আসা কাস্টমারদের মদ-সিগারেট-চানাচুর-চাট এনে দিয়ে হাতে যা বাঁচত, তিল তিল করে জমানো সেই টাকায় রাস্তার ধারে চায়ের দোকান দিয়েছিলেন একটা। দোকানটা চালাতেন আঙ্গুরিদির বাবু। একদিন ভোরে উঠে দেখেছিলেন সমস্ত পুঁজিপাটা নিয়ে বাবু হাওয়া। আঙ্গুরিদির বুকফাটা আর্তনাদে দু’রাত্তির আশপাশের পাঁচ-দশটা বাড়ির মেয়েরা দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি।

আঙ্গুরিদি। ছেঁড়াখোঁড়া শাড়ি। মলিন, নোংরা। কঙ্কালসার চেহারা। কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখ থেকে গড়িয়ে নামা জল শুকিয়ে গেছে কবেই। নির্বাক, শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সামনে। আঙ্গুরিদিকে যতবার দেখি ততবারই মাথার মধ্যে গিটারের টুংটাং আর গুনগুনিয়ে ওঠা দুখজাগানিয়া সেই ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর—

সময় দেখবি সব ভোলায় দুলিয়ে
আনকোরা রঙগুলো বুলিয়ে বুলিয়ে
মেলায় কাটার দাগ, জোড়া লাগে ফাটা
জটিলতা হয়ে যায় খুব সাদামাটা।
তোর বুঝি উড়ে গেছে খাঁচাখোলা পাখি
উড়ে গেছে হৃদয়ের আকাশে অপার
সময়ে দেখবি সব জোড়া লেগে যাবে
চুপ কর বোকা মেয়ে, কাঁদিসনে আর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *