প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড
চতুর্থ খণ্ড
পঞ্চম খণ্ড

৪.১০ সেনাবাহিনী আর বিপ্লবী জনতার লড়াই

দশম পরিচ্ছেদ

১.

আর্সেনালের সামনে যখন সেনাবাহিনী আর বিপ্লবী জনতার লড়াই চলছিল তখন একটি ছেলে হাতে একটা ফুলের ডাল নিয়ে মেনিলো মাতাত থেকে ছেঁড়া জামা-প্যান্ট পরে আসছিল। পথে সেই এই ডালটা কুড়িয়ে পায়। ফুলগুলো ছিঁড়ে দিয়ে সে ডালটা রেখে দেয়। পথ চলতে চলতে সে একটা পুরনো দোকানের সামনে একটা পিস্তল দেখল। একটি মহিলা দোকানের সামনে বসেছিল। এই ছেলেটি হল গাভ্রোশে। সে পিস্তলটা দেখেই হাতের ডালটা ফেলে দিয়ে পিস্তলটা তুলে নিয়ে মহিলাটিকে বলল, মাদাম, এটা আমি ধার নিলাম তোমার কাছ থেকে।

এদিকে তখন ভীতসন্ত্রস্ত নগরবাসীরা র‍্যু আমেনল দিয়ে ছুটে পালাচ্ছিল। তারা পালাবার সময় দেখল একটা ছেলে একটা পিস্তল ঘোরাতে ঘোরাতে গান করছে।

গাভ্রোশে লড়াই করতে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখল তার পিস্তলে ঘোড়া নেই। সে নির্বিকারভাবে গান করে যেতে লাগল। কোনও ভয় বা ত্রাসের চিহ্ন নেই তার চোখে-মুখে। প্যারিসের বিভিন্ন জায়গায় প্রচলিত লোকগীতিগুলো তার জানা আছে। সে একবার একটা ছাপাখানায় কিছুদিন কাজ করে। চঁসিয়ে লর্মিয়া নামে একজন ভদ্রলোকের বাড়িতে ফাইফরমাস খাটার কাজও করে।

কিন্তু গাভ্রোশে তখনও জানত না সেদিন ঝড়ের রাতে সে যে ছেলে দুটিকে আশ্রয় দেয় তার বাসার মধ্যে সে ছেলে দুটি আসলে তারই দুটি ছোট ভাই। সেদিন সন্ধ্যায় সে তার ভাইদের আশ্রয় দিয়ে সেই রাতেরই শেষদিকে তার বাবাকে জেলখানার পাঁচিল থেকে উদ্ধার করে।

তার বাবাকে উদ্ধার করার পরই সে তার সেই হাতির পেটের বাসাটায় ছুটে চলে যায়। গিয়ে সেই ছেলে দুটিকে বলে, এখন তোমরা যাও, তোমাদের বাবা-মা’র দেখা না পেলে সন্ধের সময় আবার তোমরা আমার কাছে চলে আসবে। আমি তোমাদের রাতের খাওয়া আর শোবার জায়গা দেব।

ছেলে দুটি তখন চলে যায় গাভ্রোশের কাছ থেকে। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। তাদের পুলিশ ধরে কোনও জেলে নিয়ে গেছে না অন্য কোনও দুষ্কৃতকারী তাদের ধরে নিয়ে গেছে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, তা জানে না সে। তার পর থেকে প্রায় দশ-বারো সপ্তা কেটে গেছে। কিন্তু ছেলে দুটোর আর দেখা পায়নি সে। সে মাঝে মাঝে মাথা চুলকাতে চুলকাতে তাদের কথা না ভেবে পারে না।

পিস্তল ঘোরাতে ঘোরাতে পঁত অন শৌতে এসে পড়ল গাভ্রোশে। সে দেখল রাস্তাটার দু পাশে এত দোকানের মধ্যে শুধু একটা দোকানই ভোলা আছে। দোকানটা মিষ্টির। কিন্তু গাভ্রোশে দেখল তার পায়জামার পকেটে পয়সা নেই। কিছু করার আগে কিছু খাওয়া দরকার। কিন্তু খাবার কেনার পয়সা না থাকায় সে হতাশ হল।

আবার তার পথে এগিয়ে চলল গাভ্রোশে। মিষ্টির দোকানে দেখা আপেলের মণ্ডটার কথা ভাবতে লাগল সে। যেতে যেতে তার সামনে দেখল ভালো পোশাকপরা একদল ভদ্রলোক আসছে। তাদের দেখে গাভ্রোশের মনে হল লোকগুলো ধনী। ওদের চেহারাগুলো খুব মোটা। মনে হয় ওদের সব টাকা শুধু পেটেই যায়।

.

২.

প্রকাশ্য রাজপথে পিস্তলটা ঘোরাতে ঘোরাতে এগিয়ে চলল গাভ্রোশে। প্রতিটি পদক্ষেপে সে যেন এক নতুন উদ্যম লাভ করছে। তার মনের তেজ বেড়ে যাচ্ছে। সে আপন মনে বলতে লাগল, সব ঠিক আছে। আমার বাঁ পা-টায় একটা ক্ষত আছে। আমার বাতও আছে। তবু আমি ভালোই আছি। শহরের যত সব ভুভদ্রলোকদের আমি গান গেয়ে শোনার আর তারা তা শুনবে। আমার পিস্তলটায় একটা ঘোড়া থাকলে ভালো হত। বুলভার্দে এখন জোর হাঙ্গামা চলছে। এখন আমাকে সেখানে যেতে হবে। হে যুবকগণ, এগিয়ে যাও, বিশ্বাসঘাতকদের রক্তপাত করো। আমি দেশের কাজে জীবন দেব। আমার সুন্দরী প্রেমিকা লিলিকে আর হয়তো দেখতে পাব না আমি। কিন্তু তাতে কী হয়েছে! লড়াই আমাকে করতেই হবে। স্বৈরাচার অনেক সহ্য করেছি।

এমন সময় জাতীয় রক্ষীবাহিনীর এক অশ্বারোহী পথ দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যেতে যেতে তার ঘোড়াটা পড়ে গেল। লোকটা ঘোড়াসুদ্ধ পড়ে যাওয়ায় গাশ্লোশে লোকটাকে ও তার ঘোড়াটাকে ধরে তুলে দিল। পিস্তলটা মাটিতে নামিয়ে রাখল। তার পর তারা উঠে পড়লে গাভ্রোশে পিস্তলটা কুড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। র‍্যু দ্য ফোরিগনের অবস্থাটা তখন শান্ত ছিল। চারজন মহিলা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পরচর্চা করছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল রাস্তার ঝাড়ুদার আর তিনজন ছিল বাড়ির গিন্নি। এই তিনজনের নাম ছিল মাদাম পাতাগন, মাদাম ভালেম আর মাদাম বাপ্ত। তারা জিনিসপত্রের দাম আর দেশের অবস্থার কথা আলোচনা করছিল।

তাদের কথা শুনতে শুনতে গাজশে একসময় বলল, কি বুড়ি মেয়েরা, রাজনৈতিক আলোচনা করছ কেন?

তখন চারজন মহিলাই তাকে গালাগালি করতে লাগল একযোগে। তারা বলল, আর একটা পাজি বদমাশ।

একজন বলল, ওর হাতের মধ্যে ওটা কী? পিস্তল?

আর একজন বলল, এই বয়সে ছেলেটা পিস্তল নিয়ে ঘোরাফেরা করছে?

একজন বলল, ওরা আইনের বিরোধিতা করেই সবচেয়ে খুশি হয়।

গাভ্রোশে তার হাতের আঙুল দিয়ে তার নাকটা নাড়া দিতে লাগল।

ঝাড়ুদার মেয়েটি বলল, একটা নোংরা পাজি ছেলে।

মাদাম পাতাগন নামে মহিলাটি বলল, শহরে গোলমাল যে হচ্ছে এটা ঠিক। সেদিন দেখি আমাদের পাশের বাড়ির এক বালকভৃত্য একটা পিস্তল নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। সেদিন মাদাম বাপ্তা বলল পঁতয়ে বিপ্লব বেধে গেছে। আজ আবার দেখি এই খুদে দানবটা একটা পিস্তল নিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় র‍্যু দে সেলিসতিন অঞ্চলটা কামানে ভরে আছে। এই সব পাজি ছোকরাদের দমন করতে হয় সরকারকে। একদিন পথে রানিকে গাড়িতে করে যেতে দেখে মায়া হল। তার ওপর দেখ তামাকের দামটা কেমন যাচ্ছে বেড়ে। যাই হোক, আমি ওই ছোঁড়াটার ফাঁসি যেন দেখতে পাই।

গাভ্রোশে ঠাট্টা করে মহিলাটিকে বলল, তোমার নাকটা লাফাচ্ছে, টিপে ধরো।

এরপর সেই ঝাড়ুদার মেয়েটিকে বলল, শোন মাদার স্ট্রিটকর্নার, বিপ্লবীদের গালাগালি করা তোমাদের কখনও উচিত না। আজ তোমাদের জন্যই আমরা পিস্তল ধরেছি। তোমরা যাতে ভালোভাবে খাওয়া-পরা করতে পার তার জন্যই এই বিপ্লব।

এবার পেছন ফিরে গাভ্রোশে দেখল, মাদাম পাতাগন ঘুষি পাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলছে, তুই একটা অবৈধ সন্তান কারও না কারও।

গাভ্রোশে বলল, আমি তা গ্রাহ্য করি না।

এরপর সে হাঁটতে হাঁটতে লামগমন হোটেলের সামনে গিয়ে হাঁক দিয়ে বলতে লাগল, কই হে ছোকরারা, বেরিয়ে এস, সবাই যুদ্ধে চল।

এই বলে সে তার পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে দুঃখ করতে লাগল। সে বলল, আমি এখন কাজ করতে চাই, কিন্তু তুমি তো কাজ করবে না।

পথের ধারে একটা রোগা কুকুরকে দেখে তার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সে ওর্মে সেন্ট গার্ডের দিকে এগিয়ে চলল।

.

৩.

কিছুদিন আগে একটা সেলুনের নাপিত গাভ্রোশের দুটি ভাই আশ্রয় চাইতে এলে তাদের তাড়িয়ে দেয় সন্ধের সময়। নাপিতটা তখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকের দাড়ি কামাচ্ছিল। দাড়ি কামাতে কামাতে সে সেই সৈনিকের সঙ্গে নেপোলিয়নের গল্প করছিল। এ যেন ক্ষুর আর তরবারির সংলাপ। নাপিতটা বলল, মঁসিয়ে, নেপোলিয়ন অশ্বারোহী হিসেবে কেমন ছিলেন?

লোকটি বলল, তিনি কখনও ঘোড়া থেকে পড়ে যাননি। পতন কাকে বলে তা জানতেন না।

আমার মনে হয় তার অনেক ভালো ভালো ঘোড়া ছিল।

যেদিন তিনি আমাকে একটা ক্রস উপহার দেন সেদিন তার ঘোড়াটাকে খুঁটিয়ে দেখি। সেটা ছিল একটা সাদা মাদী ঘোড়া। কানদুটো ঢালা ঢালা। মাথাটা সরু, তারকাচিহ্নিত ঘাড়টা লম্বা।

নাপিতটা বলল, খুব ভালো ঘোড়া তো।

হ্যাঁ, এই ঘোড়াটা সম্রাটের ছিল।

একটু থেমে সে আবার বলতে লাগল, সম্রাট নেপোলিয়ন জীবনে মাত্র একবার র‍্যাটিসবনে আহত হন।

কিন্তু আপনি নিশ্চয় জীবনে অনেকবার আহত হন।

সে কথা বলতে? ম্যারেঙ্গোতে কয়েকবার তরবারির আঘাত, অস্টারলিৎসে ডান হাতে আর নেনাতে ডান জানুতে একটা করে গুলির আঘাত। ফ্রিডল্যান্ডে একটা বেয়নেটের আঘাত পাই। এ ছাড়া মসকোয়াতে সাত-আটটি বর্শার আঘাত। লুৎজেনে বোমা ফেটে একটা আঙুল উড়ে যায়। ওয়াটারলুতেও জানুতে একটা আঘাত পাই।

নাপিতটি সব শুনে বলল, চমৎকার। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করা কত গৌরবের! তাছাড়া আমার মতে শয্যাগত অবস্থায় ধীরে ধীরে ওষুধ খেয়ে মরার থেকে কামানের একটা গোলা লেগে এক মুহূর্তে মরা অনেক ভালো।

সৈনিকটি বলল, তুমি ঠিকই ভেবেছ।

তার কথা শেষ না হতেই জানালার কাঁচের উপর একটা জোর শব্দ হতে চমকে উঠল দু জনে। নাপিত বলল, এবার গুলিগোলা শুরু হয়ে গেল।

সৈনিকটি কিন্তু জানালার কাছে মেঝের উপর থেকে একটা বড় পাথর কুড়িয়ে দেখাল। বলল, এই তোমার গুলি।

নাপিত জানালার কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখল, গাভ্রোশে পাথর ছুঁড়ে ছুটে পালাচ্ছে। সে তখন বলতে লাগল, শয়তানটা পালাচ্ছে। আমি ওর কী করেছি?

.

৪.

গাভ্রোশে মার্শে সেন্ট জাতে এসে দেখল পুলিশবাহিনীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এঁজোলরাস, কুরফেরাক, কমবেফারে আর ফুলির নেতৃত্বে সশস্ত্র একদল যুবক সেখানে লড়াই করছিল। তাদের হাতে ছিল বন্দুক আর তরবারি। গাভ্রোশে তাদের কাছে যেতেই কুরফেরাক তাকে ডাকল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দলে যোগ দিল গাভ্রোশে। কমবেফারের বেল্টে একটা পিস্তল ছিল।

এই যুবকদল যখন মার্শে সেন্ট জাঁ থেকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ছাত্র, শ্রমিক, শিল্পী প্রভৃতির এক বিরাট জনতা তাদের পিছু পিছু যেতে লাগল। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ ছিল। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত দেখাচ্ছিল তার দেহটিকে। গাভ্রোশে বলল, এ লোকটি কে?

কুরফেরাক বলল, এমনি একজন বৃদ্ধ লোক।

আসলে লোকটি ছিল মুঁসিয়ে মেবুফ।

কুরফেরাক প্রথমে মঁসিয়ে মেবুফকে দেখে। মেরিয়াসের সঙ্গে এর আগে মঁসিয়ে মেবুফকে দেখেছে কুরফেরাক। তাই তাকে চিনতে পারল। দেখল তার মাথায় টুপি নেই, অথচ মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে।

কুরফেরাক মেবুফে’র কাছে গিয়ে বলল, মঁসিয়ে মেবুফ, আপনি বাড়ি যান।

কেন?

লড়াই চলছে।

আমি তা গ্রাহ্য করি না।

তরবারি, গুলি নিয়ে লড়াই হচ্ছে।

খুব ভালো কথা। কোথায় যাচ্ছ তোমরা?

আমরা সরকারের উচ্ছেদ ঘটাতে যাচ্ছি।

ভালো।

মঁসিয়ে মেবুফ এই বলে তাদের দলে যোগ দেয়। সেই থেকে একটা কথাও বলেনি মেবুফ। সে ভালো করে পথ হাঁটতে পারছিল না। তা দেখে একজন শ্রমিক এসে তাকে একটা হাত দেয়। সেই হাত ধরে তাড়াতাড়ি পথ চলতে থাকে মেবুফ।

বিপ্লবী জনতার ভিড় ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। র‍্যু দে চিলেত্তেতে লম্বা চেহারা পাকা চুলওয়ালা একজন লোক বিপ্লবীদের দলে এসে যোগদান করল। তার বলিষ্ঠ চেহারাটা দেখে এঁজোলরাস ও তার বন্ধুরা মুগ্ধ হল। গাভ্রোশে তখন সকলের আগে আগে যাচ্ছিল। দু পাশের বন্ধ দোকানগুলোর দিকে তার দৃষ্টি থাকায় সে নবাগতকে দেখেনি।

ওরা যাচ্ছিল কুরফেরাকের বাসাটার পাশ দিয়ে। কুরফেরাক তার বাসায় গিয়ে তার টাকার থলে, মাথার টুপি আর একটা স্যুটকেস নিয়ে বেরিয়ে এল। মেরে ভুভা নামে একটি মেয়ে কুরফেরাককে বলল, আমার বাসায় একজন লোক আপনার খোঁজ করছে।

এমন সময় শ্রমিকের ছেঁড়া পোশাক পরা মেয়েদের মতো দেখতে একটি যুবক এসে কুরফেরাককে বলল, আমি মঁসিয়ে মেরিয়াসকে খুঁজছি।

কুরফেরাক বলল, সে এখানে নেই।

সন্ধেবেলায় আসবে তো?

আমি জানি না। আমি নিজেও হয়তো ফিরব না।

কেন ফিরবেন না?

ফিরব না।

কোথায় যাবেন?

সে খোঁজে তোমার দরকার কী?

আপনার বাক্সটা আমায় বয়ে নিয়ে যেতে দেবেন?

আমি ব্যারিকেডে যাচ্ছি।

আমিও যাব আপনার সঙ্গে।

যেতে পার, রাস্তা সবার জন্যই ভোলা আছে।

কুরফেরাক তার বন্ধুদের কাছে চলে গেল। তার বাক্সটা একজনের হাতে দিয়ে দিল। পরে দেখল অচেনা যুবকটি তার অনুসরণ করছে।

বিক্ষুব্ধ জনতা এক জায়গা যাব বলে আর এক জায়গায় যায়। বাতাসের বেগে যেন তারা উড়ে যায় এখানে-সেখানে। কোনও কারণ না জেনেই র‍্যু মেরি হয়ে র‍্যু সেন্ট ভেনিসে গিয়ে পৌঁছল তারা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *