৭.
এক বছরের মধ্যে আমজাদ আসিফ সাহেবের কনস্ট্রাকশান ফার্ম ও অন্যান্য ব্যবসার চরম উন্নতি করেছে। সেই সঙ্গে আনান ও তার ভালবাসা গভীর থেকে আরো গভীরতর হয়েছে।
এর মধ্যে একদিন আসিফ সাহেবের বন্ধুর ছেলে আমের ফোন করে জানাল, কয়েকদিনের মধ্যে ফিরছে।
রাতে খাওয়ার টেবিলে আসিফ সাহেব আমেরের পরিচয় ও ফেরার কথা দু’মেয়েকে জানিয়ে বললেন, তার সঙ্গে আনানের ছোটবেলা থেকে বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে। খুব ইচ্ছা ছিল, আমের আসার আগে রুমালীর বিয়ে দেয়ার। জানি না, আল্লাহ আমার সে আশা পূরণ করবেন কিনা। আমের আসার পর যদি বিয়ের কথা তুলে, দেরি করতে পারব না। কারণ বিলে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে কথা ছিল, ফিরে আসার পরপর বিয়ে হবে।
বাবার কথা শুনে আনান চমকে উঠল। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। খাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
রুমালী ব্যাপারটা লক্ষ্য করে খুব আতঙ্কিত হল। মুখ নিচু করে খেতে শুরু করল।
আসিফ সাহেব আনানকে আমজাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেখেছেন। তাই কথাটা বলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিলেন কোনো পরিবর্তন হয় কিনা জানার জন্য। তার অবস্থা দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে না বোঝার ভান করে বললেন, টিকিট এখনো ওকে হয় নি। হলে কবে আসবে ফোন করে জানাবে।
আনান দু’এক লোকমা খেয়েছিল। আর খেতে পারল না। উঠে টলতে টলতে চলে গেল।
রুমালী জানত আনান আমজাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে বেড়াতে যায়। তাদের গভীর সম্পর্কের কথা জানত না। এখন তার অবস্থা দেখে ও তাকে না খেয়ে ঐভাবে চলে যেতে দেখে বাবাকে বলল, আমেরের আসার কথা শুনে আনানের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছ? ও বোধ হয় তাকে বিয়ে করতে রাজি নয়।
আনানের পরিবর্তন দেখে আসিফ সাহেব রেগে আছেন। রাগের সঙ্গে বললেন, তোরা দু’বোন আমাকে পাগল না করে ছাড়বি না। তারপর তিনিও আর খেলেন না। উঠে চলে গেলেন।
রুমে এসে আনানের মনে চিন্তার ঝড় বইতে লাগল। অনেক রাত পর্যন্ত কি করবে না করবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে শেষে সিদ্ধান্ত নিল, ফোনে আমজাদের সঙ্গে আলাপ না করে কাল সামনাসামনি করবে।
.
পাঁচটার সময় আমজাদ অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে আনানকে দেখে সালাম বিনিময় করে বলল, না জানিয়ে হঠাৎ এলে যে?
তুমি খুশী হও নি?
এত খুশী হয়েছি যে, তোমাকে নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়াতে ইচ্ছা করছে। তারপর জিজ্ঞেস করল, গাড়ি এনেছ?
গাড়ি নিয়ে এলে তোমার সঙ্গে আকাশে উড়ব কি করে?
আমার তো জিনেদের মতো শক্তি নেই যে, তোমাকে নিয়ে আকাশে উড়ব। এই গাড়িতেই ওঠ, যে দিকে দুচোখ যায়, সেদিকেই যাব।
গাড়ি চলতে শুরু করার পর আনান বলল, তোমার সঙ্গে খুব জরুরী আলাপ করতে এসেছি। কোনো হোটেলে চল, কিছু খাওয়াও হবে আর জরুরী আলাপও হবে।
হোটেলে গিয়ে শুধু খাব। আলাপটা গাড়িতেই সেরে নাও।
সে আলাপ গাড়িতে করা যাবে না।
আমি কিন্তু জানি, কি জরুরী আলাপ করতে এসেছ।
দুষ্টুমী করবে না।
দুষ্টুমি নয়, সত্যি বলছি।
কই, বলতে শুনি।
তুমি যখন ছোট ছিলে তখন তোমার বাবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। সেই ছেলে কয়েকদিনের মধ্যে বিলেত থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করে ফিরছে। ফেরার কিছুদিনের মধ্যে তোমাদের বিয়ে হবে। কথা শেষ করে আমজাদ তার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে গাড়ি চালাতে লাগল।
আনান খুব অবাক হলেও তার মুখে হাসি দেখে আহত স্বরে বলল, একথা জেনেও তুমি হাসছ? আর কাল বাবার মুখে শোনার পর থেকে দুশ্চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারি নি।
সেদিন তুমি আমাকে বুদ্ধ বলেছিলে মনে আছে?
মনে থাকবে না কেন? সেদিন বুন্ধুর মতো কাজ করেছিলে, তাই বলেছিলাম।
এখন কিন্তু তুমিও বুন্ধুর পরিচয় দিচ্ছ।
হেঁয়ালী না করে সাফ সাফ বল, বুন্ধুর মতো কি পরিচয় দিলাম।
তার আগে বল, আল্লাহ্ রাজি থাকলে আমরা শুধু দু’জন দুজনার, কথাটা একশ পার্সেন্ট ঠিক কিনা?
অফকোর্স।
তা হলে আমেরের কথা জানা সত্ত্বেও কেন হাসছি বুঝতে পারা তোমার উচিত ছিল। তা না করে বুন্ধুর মতো কথা বললে।
ঠিক আছে, আমি না হয় বুন্ধু। এবার ব্যাপারটা খুলে বল।
তোমার বাবা গতকাল আমার অফিসে এসে যখন আমেরের পরিচয় দিয়ে তার ফেরার কথা ও তার সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা বললেন তখন ভেটো দিলাম, ব্যাস কাজ হয়ে গেল।
আনান ভেংচি কেটে বলল, ভেটো দিলাম ব্যাস কাজ হয়ে গেল। খুলে না বললে বুঝবো কি করে?
আমজাদ হেসে উঠে বলল, ভেটো দিয়ে বললাম, “চাকরি দেয়ার সময় রুমালীর সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখন আমি রাজি না হয়ে বলেছিলাম, আমার মনের মতো যে মেয়ের মন তেমন মেয়ে পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে করব। নচেৎ জীবনে বিয়েই করব না। প্রায় দেড় বছর আগে গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা যাওয়ার পথে আনানকে দেখে কেন যেন মনে হয়েছিল, ওর মন আমার মনের মতো। তারপর তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে বুঝতে পারলাম আমার অনুমান সত্য। তাই ওকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। অবশ্য সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আনানের মনের খবর নিই। সেও আমার সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছে। এখন আমেরের সঙ্গে যদি আনানের বিয়ে দেন, তা হলে আমাকে চিরকুমার থাকতে হবে। তা ছাড়া আনান আমাকে ছাড়া কিছুতেই অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। যদি আপনি জোর করে কিছু করতে চান, তা হলে সে আমার কাছে পালিয়ে আসবে। আমি যদি আপনার সম্মান রাখার জন্য ফিরিয়ে দিই, তা হলে সে হয়তো সুইসাইড করবে। এখন কি করবেন চিন্তা করে দেখুন।
আমার কথা শুনে উনি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “একদিকে আমার ওয়াদা ও মান সম্মান, আর একদিকে তোমার ও আনানের জীবন মরণ সমস্যা। কি করব ভেবে কিছু ঠিক করতে পারছি না।”
আমি বললাম, “ছেলে হিসাবে বাবাকে সাহায্য করা উচিত। তাই বলছি, ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন, ইনশাআল্লাহ্ সুষ্ঠু মীমাংসা করতে পারব বলে আশা করি। অবশ্য আমার উপর যদি বিশ্বাস থাকে আপনার।”
উনি আবার অনেকক্ষণ চিন্তা করে বললেন, “তোমার উপর বিশ্বাস আছে বলেই তোমাকে ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেছি। তাই তোমার কথা মেনে নিলাম।”
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছ, সবকিছু জেনেও কেন তোমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছি?
সত্যিই, তোমার কোনো তুলনা হয় না।
থাক, অত পাম দিতে হবে না। তোমার দুশ্চিন্তা দূর করতে পেরেছি এটাই আমার সৌভাগ্য।
কথাটা ঠিক বল নি।
তুমি ঠিক করে দাও।
আল্লাহ্ আমাদের দুজনের দুশ্চিন্তা দূর করে ধন্য করলেন। সে জন্যে তার পাক দরবারে শত কোটি শুকরিয়া জানান উচিত।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আমজাদ বলল, তোমার ও কোনো তুলনা হয় না।
তুমিও কিন্তু পাম দিচ্ছ?
আগে তুমি দিয়েছ, তাই আমিও দিলাম।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আনান বলল, গাড়ি শুধু চলতেই থাকবে, থামবে? ক্ষিধে পাই নি বুঝি? কোথায় এসেছি খেয়াল করেছ?
কোথায় আবার? সাভারে। তারপর একটা হোটেলের সামনে গাড়ি পার্ক। করল।
হোটেলে নাস্তা খেয়ে ফেরার পথে আনান বলল, কিভাবে মিমাংসা করবে ভেবেছ?
রুমালী ও আমের যাতে একে অপরকে পছন্দ করে সে ব্যবস্থা করব।
প্ল্যানটা খুব ভালো; কিন্তু কাজে পরিণত করা খুব দুরূহ।
যতই দুরূহই হোক, আল্লাহ্ রাজি থাকলে পারব। তারপর তাকে কি করতে হবে বলে জিজ্ঞেস করল, কী, পারবে না?
এতো সামান্য ব্যাপার, তোমাকে পাওয়ার জন্য এর থেকে হাজার গুণ কঠিন কিছু হলেও করতাম। প্রয়োজনে জীবনের বিনিময়েও।
আমজাদ রাস্তার সাইডে গাড়ি ফুল ব্রেক করে দাঁড় করাল।
.. হঠাৎ ফুল ব্রেক করায় গাড়ি বেশ জোরে ঝাঁকুনি খেতে আনান টাল সামলাতে না পেরে আমজাদকে জড়িয়ে ধরে ভয়ার্তরে বলর, কী ব্যাপার? এভাবে গাড়ি দাঁড় করালে কেন?
আমজাদ একটু রাগের সঙ্গে বলল, তোমার জীবনের বিনিময়ে সারা দুনিয়ার রাজতুও চাই না। প্রমিস কর, “আর কখনো এরকম কথা বলবে না।”
ঠিক আছে, প্রমিস করলাম।
আমজাদ তাকে সরে বসতে বলল।
আনানের এতক্ষণ খেয়ালই নেই, তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আমজাদের কথা শুনে লজ্জায় এতটুকু হয়ে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়ে বলল, সরি।
আমজাদ শুধু মৃদু হাসল। কোনো কথা না বলে গাড়ি ছেড়ে দিল। তারপর একেবারে তাদের বাসায় এসে গাড়ি থামাল।
.
রুমালী ভার্সিটি থেকে ফিরে খাওয়ার পর ঘুমিয়েছিল। বিকেলে উঠে চা খাওয়ার সময় কাজের বুয়াকে জিজ্ঞেস করল, আনান কোথায়? চা খেতে এল না যে?
ছোট আপা কলেজ থেকে এখানে ফেরেন নাই।
বাবা ফিরেছে?
না, উনিও ফেরেন নাই।
রুমালী মোবাইলে আনানকে ফোন করল।
আনান ইচ্ছা করে মোবাইল বন্ধ করে বাসায় রেখে গেছে। তাই রিপ্লাই না পেয়ে রুমালী চিন্তা করল, ওর কোনো বিপদ হল নাতো? তাড়াতাড়ি বাবাকে মোবাইলে ফোন করে আনানের কথা জানাল।
আসিফ সাহেব বললেন, তুই চিন্তা করিস না। কোনো বান্ধবীর বাসায় গেছে হয়তো। মনে হয় মোবাইল সঙ্গে নিতে ভুলে গেছে। তারপর লাইন কেটে দিলেন।
রুমালী আনানের রুমে গিয়ে দেখল, মোবাইলটা টেবিলের উপর রয়েছে। কিছুটা স্বস্তি পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
সন্ধ্যের পর গাড়ির শব্দ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এল।
ততক্ষণ আমজাদ ও আনান গাড়ি থেকে নেমে ড্রইংরুমে এসেছে।
আনানের সঙ্গে আমজাদকে দেখে রুমালী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই ওনার সঙ্গে কোথায় গিয়েছিলি? মোবাইলে ফোন করে না পেয়ে বাবার কাছেও ফোন করেছিলাম। পরে অবশ্য জানতে পারলাম তুই মোবাইল বাসায় ভুলে ফেলে গেছিস। খুব চিন্তা হচ্ছিল, কোথাও থেকে একটা ফোন করে জানাতে পারতিস। যা, বাবাকে এক্ষুনি ফোন কর।
সরি আপা, ভুল হয়ে গেছে। তবে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলে চিন্তা করতে হত না।
আবার জ্যাঠামী হচ্ছে। যা, বাবাকে ফোন কর।
আনান আমাজাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি বস, বাবাকে ফোন করেই আসছি।
আনান আমাজাদকে তুমি করে বলতে শুনে রুমালী আর একবার অবাক হল। সে চলে যাওয়ার পর আমজাদকে বলল, আপনার কাছে মোবাইল রয়েছে দেখছি। আপনিও তো ওকে বাসায় একটা ফোন করতে বলতে পারতেন।
সরি, আমারও ভুল হয়েছে। আমি মনে করেছিলাম ও বাসায় জানিয়ে গেছে। তারপর বলল, বসুন না, কিছুক্ষণ আলাপ করা যাক। ওদের কথা শুনে রুমালী বুঝতে পারল, ওরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ভাবল, আমেরের কথা জেনেও আনানের কি উচিত হয়েছে ওর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া? ওদের ব্যাপারটা বাবা জেনে গেলে কি পরিস্থতি হবে না-না, আমজাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে আনানকে নিষেধ করে দিতে হবে।
ওরা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। আমজাদ বলল, কী এত ভাবছেন? নিজেও দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর আমাকেও দাঁড় করিয়ে রাখবেন?
রুমালী যেন এতক্ষণ বাস্তবে ছিল না। আমজাদের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, না-না, তা কেন? তারপর একটা সোফায় বসে তাকেও বসতে বলল।
আমজাদ বসে বলল, মনে হচ্ছে, আমার সঙ্গে আনান বেড়াতে গিয়েছিল বলে খুব অসন্তুষ্ট হয়েছেন। অবশ্য হওয়ারই কথা। কয়েকদিনের মধ্যে ওর জন্য নির্বাচিত পাত্র ব্যারিস্টারী পাশ করে বিলেত থেকে ফিরছেন জেনেও আমার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া উচিত হয় নি, তাই না?
রুমালী অবাক হলেও রেগে উঠে বলল, এসব কথা আপনাকে কে বলেছে, আনান।
আনান আজ বেড়াতে গিয়ে বলেছে ঠিক, তবে গতকাল আপনার বাবা বলেছেন।
তারপরও ওকে নিয়ে আপনি বেড়াতে গেলেন?
কি করব বলুন, আমরা একে অপরকে ভীষণ ভালবাসি। ও যেমন আমাকে ছাড়া বাঁচবে না, আমিও তেমনি ওকে ছাড়া বাঁচব না। তা ছাড়া আপনার বাবার এত ঐশ্বর্যের লোভ সামলাতে পারি নি।
রুমালী রেগে লাল হয়ে বলল, আপনার মতো ছোটলোক, ইতর ও লোভীকে বাবা যে কেন অত বড় পোষ্টে চাকরি দিয়েছেন বুঝতে পারছি না।
এতটুকু শুনেই রেগে গেলেন? আনানকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার আরো অনেক কারণ আছে, সেগুলো শুনে তা হলে কী করবেন?
রুমালী চিৎকার করে উঠল, এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান, নচেৎ দারোয়ান ডাকতে বাধ্য হব।
আমজাদ হাসতে হাসতে বলল, এক পাল্লায় আপনাকে আর এক পাল্লায় আপনার রাগ দিয়ে ওজন করলে রাগের পাল্লা অনেক নিচে নেমে যাবে।
রুমালী এতো রেগে গেল যে, কাঁপতে লাগল। কোনো কথা বলতে পারল না।
আমজাদ মোলায়েম স্বরে বলল, আপনি আনানের আপা হিসাবে আমারও আপা। প্লীজ আপা, বেশি উত্তেজিত হবেন না। আপনি আনানের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী। রাগলে আপনাকে আরো বেশি সুন্দরী দেখায়। তাই একটু রাগাবার জন্য এসব বলেছি। এত বেশি রেগে যাবেন জানলে রাগাতাম না। তারপর উঠে তার কাছে এসে হাঁটুগেড়ে বসে দু’কান ধরে মিনতিস্বরে বলল, প্লীজ আপা, এবারের মতো মাফ করে দিন। প্রমিস করছি, আর কোনোদিন রাগাব না।
আনান বাবাকে ফোন করে নামার সময় তাদের কথাবার্তা শুনে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এখন আমজাদের কাণ্ড দেখে মুখে ওড়না চাপা দিয়ে হাসি থামাবার চেষ্টা করল।
ঠিক এই সময়ে আসিফ সাহেব রুমে ঢুকে আমজাদকে ঐ অবস্থায় দেখে হো হো করে হেসে উঠে আমজাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কি এমন অন্যায় করেছ যে, রুমালী তোমাকে ঐভাবে কান ধরিয়ে শাস্তি দিচ্ছে?
বাবা আসার আগেই রুমালী নিজের ভুল বুঝতে পেরে খুব লজ্জা পেয়েছে। বাবাকে হাসতে দেখে ও তার কথা শুনে সেও হাসতে হাসতে বলল, সত্যি বাবা, তুমি ও আনান ওকে ঠিকই চিনেছ, আমি চিনতে পারি নি। কিন্তু ও এত জিনিয়াস, আজ নিজেই চিনিয়ে দিল। তারপর তার দুটো হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলল, আপা বলে যখন ডেকেছ তখন আপার আগে ও পরের ভুল ত্রুটিগুলো মনে না রেখে মাফ …
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আমজাদ বলল, মাই ডিয়ার আপা, সেন্টেন্সটা পুরো বললে মনে ব্যথা পাব। আসলে তুমি ভুল-ক্রটি একটুও কর নি। যাতে তুমি রেগে গিয়ে ঐসব বলে আমাকে অপমান কর, সেজন্যে তোমার সঙ্গে অভিনয় করেছি। এতএব আমি দোষী আর তুমি নির্দোষ।
তার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
আনান হাসতে হাসতে সিঁড়ি থেকে নেমে এসে বলল, জানিস আপা, ও না এক এক সময় আমার সঙ্গে এমন মিথ্যে অভিনয় করে, মনে হয় হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য।
রুমালী মিষ্টি ধমকের স্বরে বলল, তুই আবার বড়দের মাঝে এলি কেন? তোর কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। যা ভাগ।
আহা, কি আমার বড় রে, আমজাদের অভিনয় ধরতে পারলি না। তারপর আমজাদকে বলল, আমার সঙ্গে দেখা না করে যাবে না। কথা শেষ করে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
আসিফ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোমরা আলাপ কর, আমি আসছি। তারপর চলে গেলেন।
সাহেব চলে যাওয়ার পর আমজাদ বলল, আমি ও আনান খুব বড় বিপদে পড়েছি। একমাত্র আপনি ছাড়া অন্য কেউ এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না।
এই গাধা, আপা ডেকে এতক্ষণ তুমি করে বলছিলে, এখন আবার আপনি কেন?
ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দাও।
ঠিক আছে। তারপর বলল, তোমাদের আবার কিসের বিপদ? অভিনয় করছ তো?
না আপা, অভিনয় করছি না, সত্যি বলছি।
তা হলে বল কি বিপদ, সাধ্যমতো উদ্ধার করার চেষ্টা করব।
শুধু চেষ্টা করব বললে হবে না, প্রমিস করতে হবে।
আচ্ছা পাগল তো? বিপদের কথা না বলেই প্রমিস করতে বলছ? বিপদ যদি কঠিন হয় অথবা উদ্ধার করা আমার সাধ্যের বাইরে হয়, তা হলে তো প্রমিস করে কোনো লাভ হবে না?
বিপদটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হলেও উদ্ধার করা তোমার পক্ষে খুবই সহজ। তাই তো প্রমিস করতে বলছি।
ঠিক আছে, প্রমিস করলাম। এবার বিপদের কথাটা বল।
আমজাদ পকেট থেকে একটা ফটো বের করে রুমালীর হাতে দিয়ে বলল, ভালো করে দেখে এই ছেলেটার সম্পর্কে কমেন্ট কর। তারপর বিপদের কথা বলব।
রুমালী অনেকক্ষণ ধরে ফটোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল, দারুন হ্যান্ডসাম, নিখুঁত চেহারা, নাতিদীর্ঘ পেটাই শরীর, কোথাও এতটুকু মেদ নেই, খাড়া নাক, বড় বড় চোখ, চওড়া ললাট, ললাটের নিচে ভ্রমর কালো জোড়া ভ্র। তারপর কপাল কুঁচকে বলল, নাহ, কমেন্ট করার মতো আর কিছু দেখছি না।
ছেলেটা ভালো না মন্দ কিছু বললে না যে?
ফটো দেখে ভালো না মন্দ বলা মুস্কিল। অনেক ক্ষেত্রে ফটো দেখে ভালো মনে হলেও বাস্তবে কেউ বদরাগী, কেউ খুঁতখুতে, কেউ লোভী, আবার কেউ হিংসুটে ও চরিত্রহীন হয়।
তোমার কথা অবশ্য ঠিক, তবে যার মধ্যে ঐসব বদগুণ থাকে, তাদের চেহারার মধ্যে কিছু না কিছু লক্ষণ থাকে। সে রকম কিছু আছে কিনা আর একবার ফটোটা ভালো করে দেখ।
আর দেখা লাগবে না, ভালো করেই দেখেছি। সেরকম কিছু আমার নজরে পড়ে নি। ছেলেটা কে বল তো?
ওর নাম আমের। রুমালী আমেরকে কখনো দেখে নি। এমন কি কয়েকদিন আগে বাবার কাছে না শুনলে ঐ নামও কখনো শুনে নি। তাই ভাবল, এ হয়তো অন্য আমের। জিজ্ঞেস করল, তোমার আত্মীয়?
না।
পরিচিত কেউ
না।
তা হলে তার ফটো তোমার কাছে কেন? আর কেনই বা আমাকে দেখিয়ে কমেন্ট করালে।
বলব, সবই বলব। তার আগে বল, ছেলেটা পছন্দ করার মতো কি না?
হ্যাঁ, যে কোনো মেয়ে দেখলেই পছন্দ করবে।
তা হলে তোমারও পছন্দ। ফজলামী করবে না।
আপার সঙ্গে কেউ ফাজলামী করে? কথার পিঠে কথা আসে। তাই জিজ্ঞেস করেছি। বল না তোমার পছন্দ কিনা?
আবার ফাজলামী? কান মলে দেব কিন্তু?
আমজাদ মাথাটা তার দিকে ঝুঁকিয়ে বলল, আগে পছন্দ হয়েছে কিনা বলে তারপর না হয় কান মলে দিও।
রুমালী হাসতে হাসতে বলল, আপা হয়ে ছোট ভাইয়ের কাছে কেউ মুখে একথা বলে? তুমি এত জিনিয়াস হয়েও বুঝতে পারছ না কেন?
আমজাদ মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলল, অসংখ্য ধন্যবাদ। এবার বিপদের কথা বলছি শোন, এই আমের আমার ও আনানের মাঝখানে। দাঁড়িয়ে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে যাচ্ছে। তুমি ওকে সরিয়ে নিলেই আমাদের বিপদ কেটে যাবে।
রুমালী রেগে উঠে বলল, এই কথাটা বলার জন্য এত ভূমিকার দরকার ছিল না। শোন, তোমার ও আনানের মাঝখানে আমের দাঁড়াই নি, বরং আমের ও আনানের মাঝখানে তুমি দাঁড়িয়েছ।
তোমার কথা অবশ্য ঠিক। তবে কি জান আপা, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আমি বা আনান কেউ-ই আমেরের কাথা জানতাম না। আমরা তো অনেক আগেই একে অপরের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছি। তাই তুমি যদি আমেরকে কাছে টেনে না নাও, তা হলে আমাদের কি পরিণতি হবে ভেবে দেখ। আমি তকদীরের কথা ভেবে হয়তো সবর করে চিরকুমার থাকতে পারব; কিন্তু আনান কি পারবে? সে হয়তো কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে। বড় বোন হয়ে ছোট বোনের জন্য কিছু করা কি তোমার উচিত নয়? সমাজে এমন অনেক ঘটনা দেখা যায়, বড় বোনের সঙ্গে যে ছেলের প্রেম হয়েছে, সেই ছেলেকে ছোট বোন ভালবেসেছে জেনে বড় বোন ছোট বোনকে সুখী করার জন্য নিজের প্রেম বিসর্জন দিয়ে তার প্রেমিকের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছে। এটা ঠিক সেরকম কেস না হলেও ছোট বোনকে সুখী করার জন্য তুমি এতটুকু করবে না? আমের সব দিক দিয়ে তোমার উপযুক্ত। তা ছাড়া তুমি নিজেই স্বীকার করেছ তাকে তোমার পছন্দ। আর তুমি ওনার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী। তোমার কাছ থেকে একটু ঈশারা পেলে উনি বিনাবাক্যে হুমড়ি খেয়ে তোমার পায়ে এসে পড়বেন।
আমজাদের শেষের কথা শুনে ও বলার ভঙ্গি দেখে রুমালী হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল, সে যদি আনানকেই বিয়ে করতে চায়?
আনানকে তিনি কখনো দেখেন নি, পরিচয়ও হয় নি। আর আসার পর তোমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে পর্যন্ত আনান ওনার সঙ্গে ফেস করবে না। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর, তুমি যদি ওনাকে কাছে টানার অগ্রভূমিকা নাও, তা হলে ভুলেও আনানের খোঁজ করবেন না।
তুমি শুধু জিনিয়াস নও, ভীষণ তাঁদোড় ও ফাজিলের গাছ। মানুষকে কনভেন্স করার ক্ষমতাও তোমার অসাধারণ। কিন্তু একথা ভুলে যাচ্ছ কেন, আমের জানে আনান তার বাগদত্তা। তিনি যদি ভালো ছেলে হন, তা হলে আমি যতই সুন্দরী হই না কেন আনানকে বাদ দিয়ে বিনাবাক্যে আমার পায়ে হুমড়ী খেয়ে পড়বেন না। আর যদি মন্দ ছেলে হন, তা হলে সম্পত্তির লোভে হয়তো পড়তে পাড়েন।
আমেরের ফটো দেখে ও সাহেবের মুখে ওনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়েছে এরকম ছেলে লাখে একটা আছে কিনা সন্দেহ।
আর তিনি যদি আমাকে পছন্দ না করেন?
তোমাকে পছন্দ করবে না মানে? একশবার করবে, হাজারবার করবে। তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে লাখে নয়, কোটিতেও আছে কিনা সন্দেহ।
রুমালী হাসতে হাসতে বলল, থাক, অত আর পাম দিতে হবে না। সব পাম। আমাকে দিলে আনানকে কি দেবে?
ওকে পাম দেয়া লাগে না। পাম ছাড়াই দেড় বছর আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখন কিনারে ওঠার জন্য বিয়ের প্রহর গুনছে।
সত্যিই তুমি ত্যাদোড় ও ফাজিলের গাছ। তা না হলে প্রেমিকার বড় বোনের সঙ্গে কেউ এভাবে ফাজলামী করতে পারে?
আগে আমি এরকম ছিলাম না, আনানের প্রেমে পড়ে হয়েছি। এবার তা হলে নিশ্চিত হতে পারি, আমেরকে তুমি আমাদের মাঝখান থেকে কাছে টেনে নিচ্ছ
রুমালী হেসে ফেলে বলল, এক্ষুনি সে কথা বলতে পারব না, ভেবে চিন্তে বলতে হবে।
আমজাদ কিছু বলতে যাচ্ছিল, আসিফ সাহেব ও আনানকে পাশাপাশি নামতে দেখে থেমে গেল। নেমে আসার পর দাঁড়িয়ে উঠে বলল, আমার মিশন সাকসেসফুল। আমের যেদিন আসবে। সেদিন শুধু রুমালী আপা একা রিসিভ করার জন্য এয়ারপোর্টে যাবে।
আসিফ সাহেব আমজাদের দুটো হাত ধরে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, কগ্র্যাচুলেশন মাই সান। তুমি আমাকে অনেক বড় দুশ্চিন্তার হাত থেকে রক্ষা করেছ। বল, তুমি কি চাও! যা যাইবে তাই দেব।
কথাটা ফিরিয়ে নিন, যা পারবেন না, তা বলা উচিত নয়।
কি বলছ তুমি? আমাকে চিনতে তা হলে ভুল করেছ। একবার বলেই দেখ না, দিতে পারি কিনা।
তা হলে ওয়াদা করুন।
ওয়াদা করলাম, যা চাইবে তাই দেব।
আমি গরিবের ছেলে। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন। বিত্ত বৈভব কি জিনিস জানি না। তাই আপনার ঐশ্বর্যের লোভে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আনানকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। এখন আপনি যখন যা চাইব তাই দেবেন বলেছেন তখন আর আনানকে বিয়ে করব না। আপনার সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে দলিল করে দিন।
আসিফ সাহেব উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললেন, মাই চাইল্ড, মনে রেখ, যে লোক বাংলাদেশের শুধু শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন নয়, শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ীদেরও একজন, তার মনটাও সেইরকম শ্রেষ্ঠ। কালই সবকিছু তোমার নামে দলিল করে দেব।
আজ পর্যন্ত কারো কাছে আমি হার স্বীকার করি নি। আজ আপনার কাছে হেরে গেলাম। এই কথা বলে আমজাদ ওনার দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল, মায়ের পেটে থাকতে বাবা মারা গেছেন। তাই বাবা কি জিনিস জানি না, বাবার স্নেহ আদর-ভালবাসা কি জিনিস জানি না। যে দিন আপনার মরহুমা স্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেদিনই আপনাকে চিনেছি। সেই থেকে বাবার স্নেহ-মায়া মমতা পাচ্ছি। স্বল্প জ্ঞানের কারণে আপনাকে পরীক্ষা করে অনেক বড় অন্যায়। করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন বাবা।
আসিফ সাহেব তাকে বুকে জড়িয়ে ভিজে গলায় বললেন, আমার ছেলে বেঁচে থাকলে আমাকে কতটা ভক্তি শ্রদ্ধা করত জানি না; কিন্তু তোমার কাছ থেকে যা পেয়েছি তার তুলনা হয় না।
আমজাদের অভিনয় আনান ধরতে পারলেও রুমালী পারে নি। তাই খুব রেগে গিয়ে মনে মনে যা তা বলে গালাগালি করেছে। এখন তার কথা শুনে ভীষণ অনুতপ্ত হয়ে ভাবল, আনান খুব ভাগ্যবতী। তাই ওর মতো ছেলেকে পেয়েছে। বাবা থেমে যেতে মেকী রাগের সঙ্গে বলল, তুমি ওকে ক্ষমা করো না বাবা। কিছুক্ষণ আগে আমার সঙ্গে অভিনয় করে আমাকেও রাগিয়ে দিয়েছিল। এখন আবার অভিনয় করে তোমাকেও রাগাতে চেয়েছিল। ও একটা তাঁদোড় ছেলে। ক্ষমা করলে বারবার তাঁদড়ামী করে সবাইকে ভোগাবে।
রুমালী থেমে যেতে আনান বলল, হ্যাঁ বাবা, আপা ঠিক কথা বলেছে। আমার সঙ্গে ও মাঝে মাঝে তাঁদড়ামী করে। ওকে তুমি ক্ষমা করো না।
আনন্দে আসিফ সাহেবের চোখ থেকে পানি পড়ছিল। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে কান্নামুখে হাসি ফুটিয়ে প্রথমে রুমালীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুইও কি কম তাঁদোড়? এত করে বললাম আমাজদকে পছন্দ কর, কিছুতেই করলি না। তারপর আনানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুইও কম ত্যাদোড় না, আমেরের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করা আছে জানার পরও আমাজদকে বিয়ে করতে চাস। তারপর তাদের তিনজকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ছেলেমেয়েদের ভুল-ত্রুটি বাবা ক্ষমা করবে না তো কে করবে? তারা ক্ষমা করে, ছেলেমেয়েদের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করার জন্য। তাই তোদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম ভবিষ্যতে যেন তাঁদড়ামী আর না করিস।
Leave a Reply