১০. উপসংহার / নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি

দশম অধ্যায় – উপসংহার

স্বাধীন নবাবি আমল মুর্শিদাবাদের স্বর্ণযুগ, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কী ঐশ্বর্যে, আঁকজমকে, রাজনৈতিক স্থিরতায়, শিল্পবাণিজ্যের অগ্রগতিতে, শান্তিশৃঙ্খলায়, সাংস্কৃতিক বিকাশে মুর্শিদাবাদ এইসময় উন্নতির চরম শীর্ষে পৌঁছেছিল। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে যখন অস্তমান মুঘল সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলই রাজনৈতিক অরাজকতা ও অস্থিরতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ে বিপর্যস্ত, তখন কিন্তু এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাংলা তথা রাজধানী মুর্শিদাবাদ। এই সময় বাংলার নবাবদের পরিচালনায় একটি সুস্থ শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছিল এবং সব নবাবই— মুর্শিদকুলি থেকে আলিবর্দি পর্যন্ত সবাই— সেটি যথাযথভাবে রূপায়িত করেন। ফলে বাংলা তথা মুর্শিদাবাদে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, কোনও অস্থিরতা ছিল না, অরাজকতাও নয়। মুর্শিদাবাদের নবাবরা এমন রাজনৈতিক ও আর্থিক নীতি অনুসরণ করেন যাতে শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়, রাজনৈতিক স্থিরতা বজায় থাকে ও আর্থিক অগ্রগতি হয়। এই উন্নতিতে অবশ্য মুর্শিদাবাদের নবাবদের সঙ্গে হাত মেলায় শাসক শ্রেণির ওপরতলার একটি গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে নবাবদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। বস্তুতপক্ষে বাংলার পূর্বতন রাজধানী ঢাকা বা এমনকী প্রাচীন রাজধানী গৌড়েও বোধহয় নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদের মতো সব স্তরে এতটা শ্রীবৃদ্ধি দেখা যায়নি।

অষ্টাদশ শতকের একেবারে গোড়াতেই মুঘল সম্রাট ঔরংজেব মহম্মদ হাদি নামক তাঁর এক বিশ্বস্ত ও দক্ষ কর্মচারীকে, যিনি তখন হায়দরাবাদের দেওয়ান ছিলেন, দেওয়ান করে ও করতলব খাঁ উপাধি দিয়ে বাংলায় পাঠান। উদ্দেশ্য, করতলব বাংলার রাজস্ব বিভাগকে সুবিন্যস্ত করে বাংলা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করবেন এবং তা নিয়মিত ঔরংজেবকে দাক্ষিণাত্যে পাঠাবেন। বৃদ্ধ সম্রাট তখন দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে কুড়ি বছর ধরে জর্জরিত ও আর্থিক অনটনে ব্যতিব্যস্ত। বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই তাঁকে রাজস্ব পাঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অসহায় ঔরংজেবের একমাত্র ভরসা করতলব খাঁ ও বাংলার রাজস্ব। করতলব সম্রাটকে নিরাশ করেননি। তিনি বাংলার রাজস্ব বিভাগের সম্পূর্ণ সংস্কার করে মুঘল সম্রাটকে নিয়মিত রাজস্ব পাঠিয়ে গেছেন। কিন্তু করতলব রাজধানী ঢাকায় এসে দেখলেন, তখনকার সুবাদার ঔরংজেবের পৌত্র শাহজাদা আজিম-উস-শান নতুন দেওয়ানের প্রতি মোটেই সন্তুষ্ট নন কারণ এতদিন তিনি একচ্ছত্রভাবে বাংলার ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা ভোগ করছিলেন। করতলব এসে তাতে বাধার সৃষ্টি করবে। করতলবের প্রতি তাঁর অনীহা প্রায় শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। এমনকী তিনি করতলবের প্রাণনাশের চেষ্টাও করেন যদিও তা ব্যর্থ হয়।

করতলব বুঝতে পারেন যে ঢাকায় তিনি নিরাপদ নন। সর্বোপরি, ঢাকায় সুবাদার আজিম-উস-শানের উপস্থিতিতে তিনি তাঁর অভীষ্ট সিদ্ধ করতে পারবেন না, স্বাধীনভাবে কাজ করা তো দূরের কথা। তাই তিনি দেওয়ানি কার্যালয় ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত করলেন মখসুদাবাদে। এজন্য তিনি আজিম-উস-শানের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি কারণ তিনি জানতেন সম্রাট ঔরংজেব তাঁর ওপর খুবই সন্তুষ্ট, বিশেষ করে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার করে তিনি সম্রাটকে নিয়মিত অর্থ পাঠাতেন, এজন্য। করতলবের পক্ষে মখসুদাবাদকে বেছে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এটিকে তাঁর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান মনে করার কারণ এটি বাংলার প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ফলে এখান থেকে বাংলার প্রায় সব অংশের ওপরই সুষ্ঠুভাবে নজর রাখা যাবে, যা জাহাঙ্গিরনগর (ঢাকা) থেকে সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া যেহেতু তিনি মখসুদাবাদের ফৌজদারের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেজন্য তিনি ওখানে অনেক বেশি নিরাপদ। তিনি হয়তো এটাও ভেবেছিলেন যে গঙ্গা তীরবর্তী মখসুদাবাদ থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির ওপর ভালভাবে নজরদারি করা যাবে কারণ এই সময় তারা গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল। ১৭০৪ সালে মখসুদাবাদে দেওয়ানি স্থানান্তরিত করে তিনি দাক্ষিণাত্যে সম্রাট ঔরংজেবের কাছে বাংলার রাজস্ব ও নজরানা নিয়ে হাজির হলেন। সম্রাট সানন্দে এতে অনুমতি দিলেন। তাঁকে মুর্শিদকুলি খান উপাধি দিয়ে তাঁর নামানুসারে মখসুদাবাদের নতুন নামকরণ, মুর্শিদাবাদ, করতে দিতে সাগ্রহে রাজি হলেন। এভাবেই মুর্শিদাবাদের উৎপত্তি।

১৭০৭ সালে ঔরংজেবের মৃত্যুর সময়ই মুর্শিদকুলি বাংলার সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। ঔরংজেবের মৃত্যুর পরও তিনি দিল্লির মুঘল সম্রাটকে নিয়মিত বাংলার রাজস্ব পাঠাতে ভোলেননি। দিল্লির বাদশাহি মসনদে যিনিই বসুন না কেন, মুর্শিদকুলির নীতিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। মুঘল বাদশাহরাও নিয়মিত অর্থ পেয়ে খুশি, বাংলা নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন বা সামর্থ্য কোনওটাই তাঁদের ছিল না। ফলে মুর্শিদকুলি নিজের ইচ্ছেমতো বাংলার শাসন চালাতে পেরেছিলেন, দিল্লি থেকে কোনওরকমের হস্তক্ষেপ বা প্রতিবন্ধকতার প্রশ্ন ওঠেনি। মুঘল শাসনকাঠামোর রীতি ভেঙে ১৭১৬/১৭ সালে মুর্শিদকুলিকে দেওয়ানের সঙ্গে সুবাদারের পদেও নিযুক্ত করা হল। ফলে এতদিন ধরে যে রীতি চলে আসছিল—সব উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও মনসবদারদের দিল্লি থেকেই বাংলায় পাঠান হত— তার এখন সম্পূর্ণ অবসান হল। মুর্শিদকুলি এখন নিজের পছন্দমতো লোককে রাজকার্যে নিযুক্ত করতে লাগলেন— তাঁর নিজের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকদেরই প্রাধান্য দিলেন। তাতে এতদিন বাইরে থেকে আগত মনসবদার ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা বাংলা থেকে যে ধন নিষ্ক্রমণ করত, তা বন্ধ হয়ে গেল। এরপর থেকে বাংলা থেকে আহরিত ধনসম্পদ বাংলাতেই থেকে গেল এবং বাংলার ধনভাণ্ডার বৃদ্ধির সহায়ক হল।

তা ছাড়াও মুর্শিদকুলির শাসনতান্ত্রিক ও রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের ফলে বাংলায় এক নতুন মধ্যবিত্ত, ব্যাঙ্কিং-বাণিজ্যিক শ্রেণি ও বড় বড় জমিদার সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হল। এরা অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা তথা মুর্শিদাবাদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এদের বেশিরভাগেরই মুখ্য কর্মস্থল মুর্শিদাবাদ হওয়াতে, তার উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধিতে এদের যথেষ্ট অবদান ছিল। নবাব হিসেবে মুর্শিদকুলিও তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিছুটা শাসনবিভাগের প্রয়োজনে, কিছুটা মুর্শিদাবাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে তিনি অনেক প্রাসাদ, ইমারত, মসজিদ ও ঘরবাড়ি তৈরি করেন। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ প্রায় অজ পাড়াগাঁ থেকে প্রাণবন্ত একটি শহরে পরিণত হল। শুধু তাই নয়, নতুন রাজধানীর নবাবি দরবারে নানারকম জাঁকজমকেরও ব্যবস্থা করেন মুর্শিদকুলি। এই দরবারে একদিকে যেমন বড় বড় ব্যাঙ্কার-মহাজন, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন অভিজাতবর্গ অন্যদিকে অনেক বিদেশি, বিশেষ করে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির প্রতিনিধির, নিত্য আনাগোনা ছিল। নানা ধর্মীয় উৎসবে মুর্শিদকুলি সাধুসন্ত, ফকির, শেখ, সৈয়দ প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের লোকদের আপ্যায়িত করতেন এবং মুর্শিদাবাদকে হাজার হাজার আলোকমালায় সাজিয়ে তুলতেন।

পরবর্তী নবাব সুজাউদ্দিন রাজ্যশাসনের ভার—জগৎশেঠ, দেওয়ান আলমচাঁদ ও হাজি আহমেদ—এই ত্রয়ীর ওপর ছেড়ে দিলেও নিজে মুর্শিদাবাদের সৌন্দর্যায়নে যথেষ্ট সচেষ্ট ছিলেন। শৌখিন, বিলাসপ্রিয় এই নবাবের মুর্শিদকুলির নির্মিত প্রাসাদ ও ইমারতগুলি ছোট বলে মোটেই পছন্দ হয়নি। তাই তিনি নতুন নতুন প্রাসাদ, ভবন, উদ্যানবাটিকা নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। সিয়রের লেখক গোলাম হোসেন থেকে শুরু করে ইংরেজ কোম্পানির রাজস্ব অধিকর্তা স্যার জন শোর পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন যে সুজাউদ্দিনের সময় বাংলা তথা মুর্শিদাবাদের যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। এরপর নবাব সরফরাজ মাত্র কিছুদিন রাজত্ব করেছিলেন— আলিবর্দির হাতে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। মারাঠা আক্রমণ সত্ত্বেও আলিবর্দির রাজত্বের শেষদিকে বাংলা তথা মুর্শিদাবাদের প্রভূত উন্নতি হয়। মারাঠাদের কাছ থেকে শান্তি কিনে নেবার পর তিনি মারাঠা আক্রমণের ক্ষতচিহ্ন মুছে দিতে বদ্ধপরিকর হন এবং তাতে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেন। তার প্রমাণ হিসেবে মুজাফ্‌ফরনামার লেখক করম আলি জানিয়েছেন যে ওই সময় মুর্শিদাবাদ শহর অনেক বিস্তার লাভ করে। আলিবর্দির রাজত্বের শেষদিকে মুর্শিদাবাদ দরবারের জাঁকজমক ছিল দেখবার মতো। তখন পুণ্যাহের দিনে যে মহোৎসব হত, তা প্রায় প্রবাদে পরিণত হয়েছে। সিরাজদ্দৌল্লার পনেরো মাসের রাজত্বেও মুর্শিদাবাদের বৈভব ও জাঁকজমকে কোনওরকমের ঘাটতি ছিল না। আলিবর্দির নবাবি প্রাসাদ থাকা সত্ত্বেও তিনি মনসুরগঞ্জে নিজের পছন্দমতো বিশাল হীরাঝিল প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

মুর্শিদাবাদের নবাবদের ধনভাণ্ডারে যে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ সঞ্চিত ছিল তা ভাবলে অবাক হতে হয়। এ সম্পদ কিন্তু তাঁরা সঞ্চয় করেছিলেন দিল্লিতে প্রত্যেক বছর (১৭৪০-এর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত) ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাঠাবার পর। পলাশির যুদ্ধের পর ক্লাইভ মুর্শিদাবাদের কোষাগারে সঞ্চিত ধনরত্ন দেখে হতবাক হয়ে যান। এই ধনাগারে সোনা রুপো মিলে ২ কোটি টাকার মতো সঞ্চিত ছিল। তা ছাড়া বলা হয় যে সিরাজদ্দৌল্লার হারেমে যে ধনসম্পদ লুকোনো ছিল তার পরিমাণ কম করে ৮ কোটি টাকার মতো। শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদের অভিজাতবর্গের যা সঞ্চয় ছিল তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। আলিবর্দির কন্যা ও ঢাকার ছোট নবাব নওয়াজিস মহম্মদের পত্নী ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ থেকে সিরাজদ্দৌল্লা নাকি ৪ কোটি টাকা ও ৪০ লক্ষ মোহর বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। মুর্শিদাবাদের ব্যাঙ্কার-মহাজন-সওদাগরদের সম্পদের পরিমাণও কিংবদন্তি হয়ে আছে। জগৎশেঠদের ব্যবসার মূলধন ছিল ৭ কোটি টাকা এবং ধনসম্পদ ১৪ কোটি টাকার মতো। মুর্শিদাবাদ দেখে ক্লাইভ মন্তব্য করেছিলেন যে শহরটি লন্ডনের মতোই জনবহুল— লন্ডনের সঙ্গে তফাত শুধু এই যে মুর্শিদাবাদে এমন কিছু লোক আছে যারা লন্ডনের যে কোনও বাসিন্দার চাইতে অনেক অনেক বেশি ধনী।

নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদের শ্রীবৃদ্ধিতে শ্ৰেষ্ঠী-মহাজন-ব্যাঙ্কার-সওদাগরদেরও যথেষ্ট অবদান ছিল। মুর্শিদাবাদ একদিকে সুবে বাংলার রাজধানী, অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ-কাশিমবাজার অঞ্চল কাঁচা রেশম ও রেশমিবস্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎপাদন ও বাণিজ্যকেন্দ্র। ফলে শুধু ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই নয়, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের ব্যবসায়ী-সওদাগর-মহাজনরা এখানে এসে জমায়েত হত। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিন বণিকরাজা—জগৎশেঠ, উমিচাঁদ ও আর্মানি খোজা ওয়াজিদ। এঁদের বণিকরাজা বলা হয় এই কারণে যে এঁরা সওদাগর-ব্যাঙ্কার হলেও এঁদের জীবনযাত্রা ও ধরনধারণ ছিল রাজাদের মতো। এঁদের মধ্যে জগৎশেঠদের স্থায়ী আস্তানা ছিল মুর্শিদাবাদে, বাকিদের নয়। কিন্তু যেহেতু এঁরা তিনজনই মুর্শিদাবাদ দরবারের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং যেহেতু এঁদের রমরমা মুর্শিদাবাদের নবাব ও তাঁর দরবারের আনুকূল্যেই, এঁদের বেশির ভাগ সময়ই কাটত মুর্শিদাবাদে। তাই মুর্শিদাবাদের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে এই বণিকরাজাদের কথা এসে পড়বেই।

বাংলায় জগৎশেঠদের আদিপুরুষ মানিকচাঁদ মুর্শিদকুলির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরামর্শদাতা ছিলেন। মুর্শিদকুলি যখন ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে দেওয়ানি স্থানান্তরিত করেন, তখন তাঁর সঙ্গে মানিকচাঁদও ঢাকা ছেড়ে মুর্শিদাবাদ চলে আসেন। তারপর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নবাবের দাক্ষিণ্যে জগৎশেঠরা উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যান। মানিকচাঁদের উত্তরাধিকারী ফতেচাঁদ মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বংশপরম্পরায় জগৎশেঠ (সারা দুনিয়ার ব্যাঙ্কার) উপাধি পান। সিরাজদ্দৌল্লার আগে পর্যন্ত সব নবাবদের সঙ্গেই জগৎশেঠদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেটাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা আস্তে আস্তে বাদশাহি টাঁকশালে মুদ্রা তৈরির একচ্ছত্র অধিকার প্রায় কুক্ষিগত করে নেয়। নবাবি আমলে রাজস্বের দুই-তৃতীয়াংশ জমা নেবার অধিকারও ছিল তাঁদের। এ ছাড়া বাট্টার হার নির্ধারণ করা থেকে ঋণের জন্য সুদের হার নির্ণয় করা পর্যন্ত সবকিছুই তাঁদের করায়ত্ত ছিল। শুধু বাংলা বা মুর্শিদাবাদ নয়, সমগ্র উত্তর ভারতে টাকার বাজারে তাঁদের এমনই প্রতিপত্তি ছিল যে ইংরেজ কোম্পানির অনুরোধে তাঁরা একদিনেই সুদের হার শতকরা ১২ টাকা থেকে কমিয়ে শতকরা ৯ টাকা করে দিয়েছিলেন। তাঁদের এই ফতোয়া সমগ্র উত্তর ভারতেই কার্যকরী হয়েছিল। ইংরেজ কোম্পানির সরকারি ঐতিহাসিক রবার্ট ওরম থেকে শুরু করে বাংলায় ডাচ কোম্পানির সব ডাইরেক্টরা লিখেছেন যে জগৎশেঠরা তখনকার দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ব্যাঙ্কার ছিলেন। শেঠদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মতো। সিয়রের লেখক মন্তব্য করেছেন যে তাঁদের ধনসম্পদের কথা বলতে গেলে মনে হবে রূপকথা। আর এক বাঙালি কবি লিখেছেন, গঙ্গা যেমন শতমুখে জলরাশি এনে সমুদ্রে ফেলে তেমনি করে অজস্র ধনরত্ন এসে জমা হয় শেঠদের কোষাগারে।

শেঠদের মতো অন্য দুই বণিকরাজার— উমিচাঁদ ও খোজা ওয়াজিদ— ঐশ্বর্য, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার উৎসও ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের আনুকূল্য। উমিচাঁদ ও তাঁর ভাই দীপচাঁদ পাটনার দরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে বিহারের সেরা ব্যবসার একচেটিয়া অধিকার প্রায় কুক্ষিগত করে নেন। তা ছাড়া উমিচাঁদ খাদ্যশস্য ও আফিংয়ের ব্যবসাও একচেটিয়া করার চেষ্টা করেন। আর্মানি বণিক খোজা ওয়াজিদ বিহারের প্রায় সমগ্র অর্থনীতিকেই নিজের একচেটিয়া করে নেন। বিহারের সোরা ও আফিং-এর একচেটিয়া ব্যবসা এবং সুবে বাংলায় লবণ-এর ব্যবসায় একচ্ছত্র অধিকার ছিল তাঁর বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের মূল স্তম্ভ। তার যে বিরাট প্রভাব ও প্রতিপত্তি, এবং তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের যে দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি তার অন্যতম কারণ মুর্শিদাবাদের নবাবদের এবং দরবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। নবাবকে তাঁর প্রয়োজনে ওয়াজিদ সাগ্রহেই অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন, কখনও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না। আলিবর্দি তাঁকে ফখর-উৎ-তুজ্জার (বণিকদের গর্ব) উপাধি দিয়েছিলেন।

বণিক রাজাদের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের ইতিহাস আলোচনায় বেগমদের কথাও এসে যায়। এই বেগমদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই নানাভাবে মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে বেশ কিছুটা প্রভাব ফেলেছিলেন, কখনও ভাল, কখনও বা মন্দ। এঁদের কেউ কেউ ছিলেন ব্যক্তিত্বসম্পন্না, উদারচেতা ও সাহসী। আবার কেউ কেউ চাতুর্য, শঠতা ও খলচরিত্রের মূর্ত প্রতীক। মুর্শিদকন্যা ও সুজাউদ্দিনের বেগম জিন্নতউন্নেসা প্রথম দলের। স্বামী উড়িষ্যার ছোট নবাব সুজাউদ্দিনের নারীসম্ভোগে প্রচণ্ড রকমের আসক্তি দেখে তিনি তাঁকে ছেড়ে মুর্শিদাবাদে চলে আসেন। আবার এই সুজাউদ্দিনই যখন মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর মসনদ দখল করার জন্য সসৈন্যে মুর্শিদাবাদে হাজির হন এবং যখন মুর্শিদকুলির ইচ্ছানুযায়ী নবাব পদে অভিসিক্ত, জিন্নতউন্নেসা ও সুজাউদ্দিনের পুত্র সরফরাজ পিতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত, তখন এই জিন্নতউন্নেসাই পুত্র সরফরাজকে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করেন। সুজার শাসনকালে অবশ্য জিন্নতউন্নেসার অভিপ্রায় অনুযায়ীই অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকরী হত।

আলিবর্দির বেগম শরফুন্নেসার প্রভাব যে মুর্শিদাবাদের রাজনীতি ও শাসনপ্রক্রিয়ায় বেশ মঙ্গলদায়ক ও ইতিবাচক হয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি যে শুধু নিজের জীবন ও সম্মান বিপন্ন করে যুদ্ধক্ষেত্রেও স্বামী আলিবর্দির পাশে থেকেছেন তা নয়, স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাজকার্যও পরিচালনা করতেন। হতাশা ও প্রয়োজনের সময় তিনি স্বামীকে সাহস দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। কিন্তু তাঁর দুই কন্যা—ঘসেটি ও আমিনা বেগম—ছিলেন ভিন্ন চরিত্রের। ঘসেটি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী, চক্রী ও শ্লথ চরিত্রের। নিজে মসনদ দখল করার জন্য তিনি সিরাজদ্দৌল্লার বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে চক্রান্ত করেছিলেন। সঙ্গে দোসর তাঁর গুপ্ত প্রণয়ী ও তাঁর মৃত স্বামী নওয়াজিস মহম্মদের বিশ্বস্ত সহকারি হোসেন কুলি খান। আবার তাঁর ছোট বোন আমিনা বেগমের সঙ্গে যখন হোসেন কুলি অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন, তখন ঘসেটি আমিনার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ভাগ্যের পরিহাস, মীরণের নির্দেশে দু’জনকেই গঙ্গাবক্ষে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। এই দু’জনের উজ্জ্বল ব্যতিক্রম সিরাজ-পত্নী লুৎফুন্নেসা। পলাশির পরে শত্রুদের হাত থেকে পলায়মান স্বামীকে তিনি একা ছাড়েননি, সমস্ত বিপদ মাথায় নিয়ে শিশুকন্যার হাত ধরে তিনি স্বামীর অনুগামিনী হয়েছেন। পরে আমৃত্যু স্বামীর সমাধির পরিচর্যা করেছিলেন। অন্যদিকে মীরজাফরের পত্নী মুন্নি বেগম ছিলেন মুর্শিদাবাদের বেগমদের মধ্যে সবচেয়ে ধুরন্ধর। স্বামীর মৃত্যুর পরও বহুদিন ওয়ারেন হেস্টিংসের মতো ইংরেজদের সঙ্গে ভাব করে তিনি বকলমে মুর্শিদাবাদের নবাবি চালিয়েছিলেন।

মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ পলাশি। পলাশির ষড়যন্ত্র ও বিপ্লব সম্বন্ধে এতদিনের যে বক্তব্য—পলাশির পেছনে ইংরেজদের কোনও ‘পূর্ব-পরিকল্পনা’ ছিল না’, এটা একটা প্রায় ‘আকস্মিক ঘটনা’, ইংরেজরা প্রায় ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ বাংলা বিজয় করতে বাধ্য হয়’, বাংলার ‘অভ্যন্তরীণ সংকটই’ ইংরেজদের ডেকে আনে, ইত্যাদি— মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। পলাশি চক্রান্তের মূল নায়ক ইংরেজরাই। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মদত ছাড়া পলাশির ষড়যন্ত্র বা বিপ্লব কোনওভাবেই সম্ভব হত না। তারাই দরবারের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটি গোষ্ঠীকে একদিকে নানা প্রলোভন ও প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে, অন্যদিকে কাকুতি-মিনতি করে তাদের (ইংরেজদের) চতুর ‘পরিকল্পনায়’ সামিল করিয়েছিল। আসলে ওই সময় ইংরেজদের পক্ষে বাংলা বিজয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল কারণ তখন কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য, যেটা ১৭৩০-র দশক ও ১৭৪০-র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত রমরমিয়ে চলছিল, এক তীব্র সংকটের সম্মুখীন হয়। ফরাসিদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য ও আর্মানি বণিক খোজা ওয়াজিদের নেতৃত্বে হুগলি থেকে দেশীয়দের সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে ইংরেজ বাণিজ্য প্রচণ্ড মার খেতে শুরু করে। সেই ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার ও তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ছলে-বলে-কৌশলে বাংলা বিজয় ছাড়া ইংরেজদের আর কোনও পথ খোলা ছিল না।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা কাজে নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদে শুধু ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নয়, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বহু লোকের সমাগম হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই মুর্শিদাবাদ-কাশিমবাজার অঞ্চলে স্থায়ী আস্তানা করে নেয়। এভাবে বহু জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের সমাবেশের ফলে ওখানে একটি ‘কসমোপলিটন’ সমাজ গড়ে ওঠে। জৈন কবি নিহাল সিংহ সুন্দরভাবে এ সমাজের বর্ণনা দিয়েছেন। সামাজিক স্তরবিন্যাসে এখানে ওপরের তলায় ছিল অভিজাত ও অমাত্যবর্গ, বড় বড় ব্যাঙ্কার-মহাজন ও শ্রেষ্ঠীরা। মাঝখানে নানারকমের পেশা ও বৃত্তিতে নিযুক্ত এক ধরনের মধ্যবিত্ত ও ছোটখাট ব্যবসায়ী আর তলার দিকে কারিগর, দিনমজুর ইত্যাদি নিম্নবিত্তের মানুষ। অর্থনীতির দিকে থেকে নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদ-কাশিমবাজারে যে শ্রীবৃদ্ধি দেখা গেছে, তা এর আগে অন্য কোথাও চোখে পড়ে না। এ অঞ্চলের রেশম ও রেশমিবস্ত্রের শিল্প ও বাণিজ্যে নবাবি আমলেই সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছিল। মারাঠা আক্রমণের ফলে মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার অর্থনীতি খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বলে যে অভিমত তা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। অর্থনীতিতে মারাঠা আক্রমণের নেতিবাচক প্রভাব নিশ্চয় পড়েছিল তবে তা সাময়িক এবং কোনও কোনও অঞ্চলেই শুধু সীমাবদ্ধ ছিল, তার কোনও সুদূরপ্রসারী প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েনি। মারাঠা আক্রমণের বছরগুলোতেও এশীয় ও ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা কাশিমবাজার-মুর্শিদাবাদ অঞ্চল থেকে যে বিশাল পরিমাণ কাঁচা রেশম ও রেশমিবস্ত্র রফতানি করেছে তাই তার প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে এতদিনের যে বক্তব্য— ইউরোপীয়রাই সবচেয়ে বেশি পণ্য (কাঁচা রেশম ও রেশমিবস্ত্র সমেত) রফতানি করত এবং ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি টাকাপয়সা, সোনা-রুপো আমদানি করত— তা যথার্থ নয়। নবাবি আমলে এশীয়/ভারতীয় বণিকরাই সবচেয়ে বড় রফতানিকারক ছিল, ফলে তারাই বাংলায় সবচেয়ে বেশি টাকাপয়সা, সোনা-রুপো আনত, ইউরোপীয়রা নয়।

সংস্কৃতির দিক থেকেও নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদ খুবই উন্নত ছিল। বহু জাতি, বর্ণ, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ পাশাপাশি বাস করত এখানে। ফলে পরস্পরের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হত। মুর্শিদাবাদ হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, শিয়া, সুন্নি, আর্মানি ও ইউরোপীয় খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। তার ফলে মুর্শিদাবাদে একটি উদার ও মিশ্র সংস্কৃতির (composite culture) আবির্ভাব হয়। এই সময় হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বজায় ছিল, কোথাও কোনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। শিয়া, সুন্নিরাও পাশাপাশি শান্তিতে বাস করত। মুর্শিদাবাদের নবাবরা মুসলমান হলেও রাজকার্যে হিন্দুদেরই ছিল প্রাধান্য। এতে নবাবদের উদার মনোভাবেরই পরিচয় পাওয়া যায়। এই নবাবরা হিন্দু উৎসব হোলি এবং দেওয়ালি সাড়ম্বরে পালন করতেন। হিন্দুদের মুসলমানদের দরগায় সিন্নি দেওয়া বা মুসলমানদের হিন্দু মন্দিরে পুজো দেওয়া প্রায় স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বস্তুত অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি এই দুই ধর্মসংস্কৃতির সমন্বয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এই মিলনপ্রচেষ্টা থেকেই সত্যপীরের মতো ‘দেবতা’র জন্ম— যে ‘দেবতা’ হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই পূজ্য।

নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদের স্থাপত্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নতুন নতুন প্রাসাদ, ইমারত, মসজিদ, উদ্যানবাটিকা প্রভৃতি নির্মাণ করা নবাবদের প্রায় ‘হবি’তে পরিণত হয়েছিল। একদিকে এঁদের মানসিকতা ও সৌন্দর্যপ্রীতি, অন্যদিকে কোষাগারে প্রচুর ধনসম্পদ নতুন নতুন স্থাপত্য নির্মাণের সহায়ক হয়েছিল। মুর্শিদকুলির তৈরি কাটরা মসজিদ মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ। মোটামুটি এই সময় থেকেই মুর্শিদাবাদের স্থাপত্যশিল্পে মুঘল শৈলীর সঙ্গে স্থানীয় শৈলী ও শিল্পরীতির সংমিশ্রণ দেখা যায়। শৌখিন ও বিলাসপ্রিয় নবাব সুজাউদ্দিনের মুর্শিদকুলির প্রাসাদ ‘চেহেল সুতুন’ ছোট বলে পছন্দ হয়নি। তাই তিনি নিজের পছন্দমতো প্রাসাদ, ইমারত, উদ্যানবাটিক নির্মাণ করেন। তাঁর তৈরি উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি—ফর্হাবাগ বা সুখকানন। আলিবর্দি খানের জামাতা ও ঘসেটি বেগমের স্বামী, নওয়াজিস মহম্মদ, মোতিঝিলের বিখ্যাত প্রাসাদ তৈরি করেন। ওদিকে সিরাজদ্দৌল্লা মসনদে বসার আগেই হীরাঝিল বা মনসুরগঞ্জের প্রাসাদ নির্মাণ করে সেখানে বাস করতে থাকেন। ইমামবারাও তাঁর তৈরি। নবাবরা আবার তাঁদের সমাধিস্থলও তৈরি করে রাখতেন। আলিবর্দি, সিরাজদ্দৌল্লা, লুৎফুন্নেসা সবার সমাধিই খোশবাগে। মীরজাফর থাকতেন জাফরাগঞ্জের প্রাসাদে। এখানেই তাঁর, মীরণ ও তাঁদের বংশধরদের সমাধি। দুঃখের বিষয়, মুর্শিদাবাদের স্থাপত্যকর্মগুলির বেশিরভাগই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত, খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে।

পলাশির পর থেকেই মুর্শিদাবাদের গুরুত্ব কমতে থাকে। সিরাজদ্দৌল্লার পর মীরজাফর নতুন নবাব হলেও ইংরেজদের হাতের পুতুলমাত্র। ১৭৬০ সালে মীরকাশিম নবাব হয়ে মুঙ্গেরে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে গেলেন। ১৭৬৩-তে মীরজাফর আবার নবাব হন। ১৭৬৫ সালে কোম্পানি দেওয়ানি পেল। ১৭৬৬ সালে ক্লাইভ দেওয়ান হয়ে মুর্শিদাবাদে পুণ্যাহ করলেন। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস ইংরেজদের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য দেওয়ানি ও খালসার সব বিভাগগুলি কলকাতা নিয়ে গেলেন। ফলে মুর্শিদাবাদ থেকে বহু কর্মচারী কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হল। রাজধানী হিসেবে মুর্শিদাবাদের যেটুকু গুরুত্ব ছিল, ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট (Regulating Act) পাশ হওয়ার পর কলকাতা ইংরেজ গভর্নর জেনারেলের সদর দফতর হওয়ায় তাও নষ্ট হয়ে গেল। মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল ১৭৯৯ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এভাবে বাংলার রাজধানী থেকে মুর্শিদাবাদ শুধুমাত্র একটি জেলাশহরে পরিণত হয়। স্বাভাবিকভাবে মধ্য-অষ্টাদশ শতকে যে মুর্শিদাবাদের লোকসংখ্যা ছিল আনুমানিক দশ লক্ষ, তা ওই শতকের শেষদিকে অনেকটাই কমে যায়। ১৭৭০ সালের দুর্ভিক্ষও অবশ্য তার একটি অন্যতম কারণ।

নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি

ORIGINAL SOURCES (মূল সূত্র)

A. MANUSCRIPT SOURCES (পাণ্ডুলিপি)

1. India Office Records, British Library, London

Bengal Public Consultations

Bengal Letters Received

Bengal Secret and Military Consultations

Coast and Bay Abstracts

Despatch Books

European Manuscripts

Factory Records

Home Miscellaneous Series

Mayor Court’s Records, Calcutta

Original Correspondence

Orme Manuscripts

2. ALGEMEEN RIJKSARCHIEF, THE HAGUE, NETHERLANDS

Verenigde Oostindische Compagnie (VOC)

Overgekomen brieven en papiers and Inkomend briefbook, 1720-57 (Select Volumes)

Hoge Rgering van Batavia, 246 (Taillefert’s ‘Memorie’, 17 Nov. 1763)

3. Stadsarchief Antwerpen, Antwerp, Belgium

General Indische Compagnie (The Ostend Company), 5768

B. PRINTED SOURCES (মুদ্রিত আকরগ্রন্থ)

1. PERSIAN WORKS (ফারসি গ্রন্থ)

Gholam Hossein Khan, Seir Mutaqherin, vol. II, trans. Haji Mustafa, Second Reprint, Lahore, 1975.

Gulam Husain Salim, Riyaz-us-Salatin, trans. Maulavi Abdus Salam, Calcutta, 1904.

Inayat Allah, Ahkam-i-Alamgiri.

Karam Ali, Muzaffarnamah, in J. N. Sarkar, Bengal Nawabs, Calcutta, 1952.

Salimullah, Tarikh-i-Bangala, trans. Gladwin, Calcutta, 1788.

Shah Nawaz Khan, Maasir-ul-Umara, trans., H. Beveridge, Calcutta, 1952.

Tarikh-i-Mansuri, trans., H. Blochmann, Journal of the Asiatic Society. no. 2, 1867.

Yusuf Ali Khan, Tarikh-i-Bangala-i-Mahabatjangi, trans. Abdus Subhan, Calcutta, 1982.

2. WORKS IN EUROPEAN LANGUAGES (ইউরোপীয় ভাষায় লেখা গ্রন্থ)

(A) Published sources

Datta, K. K., ed., Fort William—India House Correspondence, vol. I (1748-56), Delhi, 1956.

Firminger, W. K., ed., The Fifth Report from the Select Committee of the House of Commons of the Affairs of the East India Company, 1812, 3 vols., Calcutta, 1917-18.

—, Historical Introduction to the Fifth Report, Calcutta, 1917.

Hill, S. C., Bengal in 1756-57, 3 vols., London, 1905.

Martin, Francois, Memories de Francois Martin, 1665-1696, ed., A. Martineau, Paris, 1931.

Records of Fort St. George: Diary and Military Consultations, Madras, 1912-25.

Sinha, N. K., ed., Fort William—India House Correspondence, vol. V (1767-9), Calcutta, 1959.

Wilson, C. R., ed., The Early Annals of the English in Bengal, 3 vols., London, 1895-1917.

Yule, H., ed., The Diary of William Hedges, 3 vols., London, 1887-9.

Van Dam, Pieter, Beschrijvinge vande Oost-Indische Compagnie, ed., F.W. Stapel & others, 4 books in 7 parts, The Hague, 1927-54.

(B) Travellers’ Account, Memoirss. etc. (পর্য্যটকদের বিবরণ, স্মৃতিকথা ইত্যাদি)

Bernier, F., Travels in the Mogul Empire, 1656-1658, ed. A. Constable, Oxford, 1934.

Bolts, William, Considerations on Indian Affairs, London, 1772.

Bowrey, Thomas, A Geographical Account of Countries Round the Bay of Bengal, 1669-1679, ed., R. C. Temple, Cambridge, 1905.

Dow, Alexander, History of Hindostan, vol. III, London, 1770.

Orme, Robert, Historical Fragments of the Mogul Empire, London, 1805.

—, History of the Military Transactions of the British Nation in Indostan, 3 vols., London, 1803.

Scrafton, Luke, Reflections on the Government of Indostan, London, 1763.

Stavorinus, J. S., Voyage in the East Indies, trans. S. H. Wilcoke, 3 vols., London, 1798.

Tavernier, Jean-Baptiste, Travels in India, 1640-1667, trans. V. Ball, London, 1889.

Vansittart, H., A Narrative of the Transactions in Bengal from 1760-1764, London, 1766.

Verelst, H., A View of the Rise, Progress and Present State of the English Government in Bengal, London, 1772.

Watts, William, Memoirs of the Revolution in Bengal, London, 1760.

(C) Secondary works (প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ)

(১) বাংলা

অনিরুদ্ধ রায়, মধ্যযুগের ভারতীয় শহর, কলকাতা, ১৯৯৯

আহমদ শরীফ, মধ্যযুগের সাহিত্যে সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ, ঢাকা, ১৯৭৭।

অক্ষয়কুমার মৈত্র, সিরাজদৌল্লা, কলিকাতা, ১৮৯৮।

কমল বন্দ্যোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদ থেকে বলছি, ১ম খণ্ড, কলিকাতা, ১৩৮০।

তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়, পলাশীর যুদ্ধ, কলিকাতা, ১৯৫৩।

নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদের ইতিহাস, কলিকাতা, ১৯০২।

—, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, কলিকাতা, ১৯০৩।

—, জগৎশেঠ, কলিকাতা, ১৯১২।

প্রতিভারঞ্জন মৈত্র, মুর্শিদাবাদ চর্চা, কলিকাতা, ১৩৮০।

রজতকান্ত রায়, পলাশীর ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ, কলকাতা, ১৯৯৪।

ভারতচন্দ্র, সত্যপীরের কথা, ভারতচন্দ্র গ্রন্থাবলী, কলিকাতা, ১৯৬৩।

সোমেন্দ্রলাল রায়, মুর্শিদাবাদের কথা ও কাহিনী, কলিকাতা, ১৯৬০৷

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, সিরাজদ্দৌল্লা, কলিকাতা, ১৯৪২।

শ্রীপারাবাত, মুর্শিদকুলী খাঁ, কলিকাতা, ১৯৯০।

(২) ইংরেজি

Arasaratnam, S., Merchants, Companies and Commerce on the Coromandel Coast, 1650-1740, New Delhi, 1986.

—, ‘The Indian Merchants and their Trading Methods’, Indian Economic and Social History Review, 3 (1966), 85-95.

Bagchi, A. K., The Political Economy of Underdevelopment, Cambridge, 1982.

—, ‘Reflections on Patterns of Regional Growth in India during the Period of British Rule’, Bengal Past and Present, XCV, 1976.

Banerjee, B. N. The Begams of Bengal, Calcutta, 1945.

Bayly, C. A., The Imperial Meridian: The British Empire and the World, 1780-1830, London, 1988.

—, Indian Society and the Making of the British Empire, Cambridge, 1987.

Bandyopadhyay, Sekhar, From Plassey to Partition, Orient Longman, 2004.

Bayly, C.A., and Sanjay Subrahmanyam, ‘Portfolio Capitalists and the Political Economy of Early Modern India’, Indian Economic and Social History Review, 25, 4 (1988), 403-24.

Bence-Jones, M., Clive of India, London, 1974.

Bhadra, Gautam, ‘The Role of Pykars in the Silk Industry of Bengal, 1765-1830’, Studies in History, 3, no. 2 (1987), 137-85; 4, nos. 1 & 2 (1988), 1-35.

—‘Social Groups and Relations in the Town of Murshidabad, 1765-1793’ Indian Historical Reveiw, pp. 312-38, 1976.

Bhattacharya, Bhaswati, ‘Between Fact and Fiction: Khoja Gregory Alias Gurgin Khan’, in Circumbulations in South Asian History, Essays in Honour of D. H. A. Kolff, Leiden, 2003, pp. 134-158.

Bhattacharya, S., The East India Company and the Economy of Bengal from 1704 to 1740, London, 1954.

Boxer, C. R., The Dutch Seaborne Empire, New York, 1965.

Bruijn, J. R., F.S. Gaastra and I. Schoffer, Dutch-Asiatic Shipping, 3 vols., The Hague, 1979-87.

Calkins, P. B. ‘The Formation of a Regionally Oriented Ruling Group in Bengal, 1700-1740’, Journal of Asian Studies, vol. XXIX, no. 4 (August 1970), 799-806.

—, ‘The Role of Murshidabad as a Regional and Sub-Regional Centre in Bengal’, in R. L. Park, ed., Urban Bengal, East Lansing, 1969.

Campbell, Glimpses of Bengal, Calcutta, 1907.

Chandra, Satish, ed., The Indian Ocean: Explorations in History, Commerce and Politics, New Delhi, 1985.

Chatterjee, Kumkum, Merchants, Politics and Society in Early Modern India, Bihar: 1733-1820, Leiden, 1996.

—, ‘Trade and Durbar Politics in the Bengal Subah, 1733-1757’, Modern Asian Studies, 26 (1992), 233-73.

Chatterjee, Tapan Mohan, The Road to Plassey, Bombay, 1960.

Chaudhuri, K. N., Asia before Europe, Cambridge, 1990.

—, Trade and Civilization in the Indian Ocean: An Economic History from the Rise of Islam to 1750, Cambridge, 1985.

—, The Trading World of Asia and the English East India Company, Cambridge, 1978.

—, ‘India’s International Economy in the Nineteenth Century’, Modern Asian Studies, II (1968).

—, ‘The Structure of the Indian Textile Industry in the Seventeenth and Eighteenth Centuries’, Indian Economic and Social History Review, XI (June-Sept. 1974), 127-82.

Chaudhury, Sushil, and Michel Morineau, eds., Merchants, Companies and Trade: Europe and Asia in Early Modern Era, Cambridge, 1999.

Chaudhury, Sushil, ‘Trading Networks of a Traditional Diaspora, Armenians in Indian Trade’, paper presented at the XIII International Economic History Congress, Buones Aires, Argentina, July 2002 and now being published.

—, ‘Armenians in Bengal Trade, circa. mid-Eighteenth Century’, paper presented at the International Seminar on ‘Armenians in Asian Trade, 16th-18th Century’, Paris, October 1998. Now being published by MSH, Paris.

—, ‘The Inflow of Silver to Bengal in the Global Perspective, c. 1650-1757’, paper presented at the XIIth International Economic History Congress, Madrid, August 1998, Session B-6, ‘Monetary History in Global Perspective, 1500-1808’, and now published in Global Connections and Monetary History, ed., Flynn, et al, Ashgate, 2003.

—, ‘Was there a Crisis in Mid-Eighteenth Century Bengal?‘, in Rethinking Early Modern India, ed., Richard B. Barnett, New Delhi, 2002.

—, The Prelude to Empire: Plassey Revolution of 1757, New Delhi, 2000.

—, From Prosperity to Decline: Bengal in the Eighteenth Century, New Delhi, 1995.

—, ‘International Trade in Bengal Silk and the Comparative Role of Asians and Europeans, circa. 1700-1757’, Modern Asian Studies, 29, 2, (1995), 373-86.

—, ‘European Companies and Bengal Textile Industry in the Eighteenth Century: The Pitfalls of Applying Quantitative Techniques’, Modern Asian Studies, 27, 2 (May 1993), 321-40.

—, ‘Sirajuddaula and the Battle of Plassey’, History of Bangladesh, vol. 1, Dhaka, 1992, 93-130.

—, ‘Trade, Conquest and Bullion: Bengal in the mid-Eighteenth Century’, Itinerario, vol. 15, no. 2 (1991), 21-32.

—, ‘Khwaja Wazid in Bengal Trade and Politics,’ Indian Historical Review, vol. XVI. nos. 1-2, 137-48.

—, ‘The Imperatives of Empire—Private Trade, Sub-Imperialism and the British Attack on Chandernagore, March 1757’, Studies in History, vol. VIII, no. 1 (Jan.-June 1992), 1-12.

—, ‘General Economic Conditions in Nawabi Bengal, 1690-1757’, History of Bangladesh, vol. 2, Dhaka, 1992, 30-66.

—, ‘European Trading Companies and Bengal’s Export Trade, 1690-1757’, History of Bangladesh, vol. 2, Dhaka, 1992, 183-224.

—, ‘Continuity or Change in the Eighteenth Century? Price Trends in Bengal, circa. 1720-1757’, Calcutta Historical Journal, vol. XV., nos. 1-2 (July 1990-June 1991), 1-27.

—, ‘Sirajuddaullah, English Company and the Plassey Conspiracy—A Reappraisal’, Indian Historical Review, vol. XXIII, nos. 1-2 (July 1986-Jan. 1987), 111-34.

—, ‘Merchants, Companies and Rulers: Bengal in the Eighteenth Century’, Journal of the Economic and Social History of the Orient, vol. XXXI (Feb. 1988), 74-109.

—, Trade and Commercial Organization in Bengal, 1650-1720, Calcutta, 1975.

—, ‘The Rise and Decline of Hughli—A Port in Medieval Bengal’, Bengal Past & Present, (Jan.-June 1967), 33-67.

Chicherov, A. I. India: Economic Development, Moscow, 1971.

Colebrook, H. T., Remarks on the Husbandry and Commerce of Bengal, Calcutta, 1804.

Curley, David, ‘Fair Grain Markets and Mughal Famine Policy in Eighteenth Century Bengal,’ Calcutta Historical Journal, 2 (1977), 1-26.

Dani, A.H., Muslim Architecture in Bengal, Dacca, 1961.

Das Gupta, Ashin, Merchants of Maritime India, Varorium, 1994.

—, Indian Merchants and the Decline of Surat, c. 1700-1750, Wiesbaden, 1979.

—, ‘Trade and Politics in 18th Century India’, in D. S. Richards, ed., Islam and the Trade of Asia, Oxford, 1967.

—, and M.N. Pearson, eds., India and the Indian Ocean, 1500-1800, Calcutta, 1987.

Datta, K.K., Alivardi and His Times, 2nd edn., Calcutta, 1963.

—, Survey of India’s Social Life and Economic Conditions in the Eighteenth Century, 1707-1813, Calcutta, 1961.

—, Studies in the History of Bengal Suba, 1740-1760, Calcutta, 1936.

Dimock, Edward C. Jr., ‘Hinduism and Islam in Medieval Bengal’, in Rachel van M. Baumer, ed., Aspects of Bengali History and Society, Honolulu, 1975.

Eaton, Richard M., The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760, Delhi, 1994.

Edwardes, Michael, The Battle of Plassey and the Conquest of Bengal, London, 1963.

—, Plassey: The Founding of an Empire, London, 1969.

Feldbaeck, Ole, ‘Cloth Production and Trade in Late Eighteenth Century Bengal’, Bengal Past & Present, vol. LXXXVI (July-Dec. 1967), 124-41.

Foster, William, ‘Gabriel Boughton and the Trading Privileges in Bengal’, Indian Antiquary, 40 (1911).

Furber, Holden, Rival Empires of Trade in the Orient, 1600-1800, Minneapolis and Oxford, 1976.

—, ‘Asia and West as Partners before “Empire” and After’, Journal of Asian Studies, 28 (1969).

—, John Company at Work, Cambridge, 1961.

—, Bombay Presidency in the mid-Eighteenth Century, Bombay, 1965.

Furber, Holden, and Kristof Glamann, ‘Plassey: A New Account from the Danish Archives’, Journal of Asian Studies, vol. XIX, no. 2 (February 1960).

Gaastra, F. S., “The Dutch East India Company and its Intra-Asian Trade in Precious Metals’, in W. Fischer, R.M. McInnis and J. Schneider, eds., The Emergence of a World Economy, pt. I, 1500-1800, Wiesbaden, 1986, 97-112.

Ghoshal, H. R., Economic Transition in the Bengal Presidency, 1793-1833, Patna, 1950.

Glamann, Kristof, Dutch Asiatic Trade, 1620-1740, Copenhagen, The Hague, 1958.

—, ‘Bengal and the World Trade about 1700’, Bengal Past & Present, vol. LXXVI, no. 142 (1957), 30-9.

Gupta, Brijen K., Sirajuddaullah and the East India Company, 1756-57, Leiden, 1962.

Habib, Irfan, ‘Merchant Communities in Pre-Colonial India,’ in J. D. Tracy, ed., The Rise of Merchant Empires: Long Distance Trade in the Early Modern Period, 1350-1750, Cambridge, 1990, 371-99.

—, ‘Studying a Colonial Economy—Without Perceiving Colonialism’, Modern Asian Studies, 19, 3 (1985), 355-81.

—, ‘The Technology and Economy of Mughal India’, Indian Economic and Social History Review, vol. XXVII, no. 1 (Jan.-March 1980), 1-34.

—, ‘Changes in Technology in Mughal India’, Studies in History, II, 1, 15-39.

—, Potentialities of Capitalistic Development in the Economy of Mughal India’, Journal of Economic History, 29 (March 1969).

—, The Agrarian System of Mughal India, Bombay, 1963.

Hill, S. C., Three Frenchmen in Bengal, London, 1905.

Hossain, Hameeda, The Company Weavers of Bengal, Delhi, 1988.

Irwin, J. and P. R. Schwartz, Studies in Indo-European Textile History, Ahmedabad, 1966.

Karim, Abdul, Murshid Quli and His Times, Dacca, 1963.

Khan, A. M., The Transition in Bengal, Cambridge, 1969.

Krishna, Bal, Commercial Relations between India and England, London, 1924.

Kumar, Dharma, ed., The Cambridge Economic History of India, vol. 2.

Little, J. H., The House of Jagat Seths, Calcutta, 1956.

Marshall, P. J., Bengal—The British Bridgehead, Cambridge, 1987.

—, East Indian Fortunes, Oxford, 1976.

—, ‘Private British Investment in Eighteenth Century Bengal, Bengal Past & Present, 86 (1967), 52-67.

Majumdar, P. C., The Musnud of Murshidabad, Murshidabad, 1905

Mclane, John, R., Land and Local Kingship in Eighteenth Century Bengal, Cambridge, 1993.

Meilink-Roelofz, M. A. P., Asian Trade Revolution and European Influence in the Indonesian Archipelago between 1500 to about 1630, The Hague, 1962.

Mitra, D. B., The Cotton Weavers of Bengal, Calcutta, 1978.

Mohsin, K. M., A Bengal District in Transition: Murshidabad, Dacca, 1973.

Moosvi, Shireen, The Economy of Mughal Empire, Delhi, 1987.

—, ‘The Silver Influx, Money Supply, Prices and Revenue Extraction in Mughal India’, Journal of the Economic and Social History of the Orient, XXX (1988), 47-94.

Nichol, J. D., ‘The British in India, 1740-63: A Study of Imperial Expansion into Bengal’, unpublished Ph. D. thesis, University of Cambridge, 1976.

Pearson, M. N., Merchants and Rulers in Gujarat, Berkeley and Los Angeles, 1976.

Perlin, Frank, ‘Proto-Industrialization and Pre-Colonial South Asia’, Past and Present, 98 (1983), 30-95.

—, ‘Pre-Colonial South Asia and Western Penetration in the Seventeenthto Nineteenth centuries: A Problem of Epistemological Status’, Review, 4(1980).

Prakash, Om, The European Commercial Enterprise in Pre-Colonial India, Cambridge, 1998.

—, ‘On Estimating the Employment Implications of European Trade for Eighteenth Century Bengal Textile Industry—A Reply’, Modern Asian Studies, 27, 2 (1993), 341-56.

—, The Dutch East India Company and the Economy of Bengal, Princeton, 1985.

—, ‘Asian Trade and European Impact: A Study of the Trade from Bengal, 1630-1729’, in Blair Kling and M. N. Pearson, eds., The Age of Partnership: Europeans in Asia before Dominion, Honolulu, 1979.

—, ‘Bullion for Goods: International Trade in the Economy of Early Eighteenth Century Bengal’, Indian Economic and Social History Review, XIII (1976), 159-87.

Ray, Aniruddha, The Marchant and the State: The French in India, 2 vols., New Delhi, 2004.

Ray, Indrani, ‘Dupleix’s Private Trade in Chandernagore’, Indian Historical Review, I (1974), 279-94.

—, ‘The French Company and the Merchants of Bengal, 1680-1730’, Indian Economic and Social History Review, 7 (1970).

Ray, Rajat Kanta, ‘Colonial Penetration and Initial Resistance: The Mughal Ruling Class, the English East India Company and the Struggle for Bengal’, Indian Historical Review, 12 (July 1985-Jan. 1986). 1-105.

Raychaudhuri, T. and Irfan Habib, eds., The Cambridge Economic History of India, vol. 1, Cambridge, 1982.

Richards, J. F., Precious Metals in Late Medieval and Early Modern Worlds, Durham, 1983.

—, ‘Mughal State Finance and the Pre-Modern World Economy’, Comparative Studies in Society and History, 23 (1981).

Sarkar, J. N., ed., History of Bengal, vol. II, Dhaka, 1948.

—, trans. and ed., Bengal Nawabs, Calcutta, 1952.

Saxe, Elizabeth Lee, ‘Fortune’s Tangled Web: Trading Networks of English Enterprises in Eastern India, 1657-1717’, unpublished Ph.D. Dissertation, Yale University, 1979.

Seth, M. J., Armenians in India from Earliest Times to the Present Day, Reprint, Calcutta, 1973.

Sinha, N. K., The Economic History of Bengal, 3 vols., Calcutta, 1958-65.

—, ed., History of Bengal, 1757-1905, Calcutta, 1967.

Steensgaard, Niels, ‘Asian Trade and World Economy from the 15th to the 18th Centuries’, in T. R. de Souza, ed., Indo-Portuguese History, New Delhi, 1984.

—, The Asian Trade Revolution of the Seventeenth Century, Chicago, 1974.

Subrahmanyam, Sanjay, The Portugese Empire in Asia, London, 1992.

—, The Political Economy of Commerce: Southern India, 1500-1650, Cambridge, 1990.

Taylor, J., A Sketch of the Topography and Statistics of Dacca, Calcutta, 1840.

Thompson, Virginia M., Dupleix and His Letters, 1742-54, New York, 1933.

Tracy, J. D., ed., The Rise of Merchant Empires, Cambridge, 1990.

Van Leur, J. C., Indonesian Trade and Society, The Hague, 1955.

Van Santen, H. W., De Verenigde Oost-Indische Compagnie in Gujarat en Hindusthan, 1620-60, Leiden, 1982.

Walsh, J. H. T., A History of Murshidabad District, Calcutta, 1902.

Wallerstein, Immanuel, The Modern World System, II: Mercantilism and the Consolidation of the World Economy, 1600-1750, New York, London, 1980.

Wink. Andre, ‘Al-Hind: India and Indonesia in the Islamic World-Economy, c. 700-1800’, in Itinerario, Special Issue, The Ancient Regime in India and Indonesia, 1988, 33-72.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *