কি ভাবে পদবী এলো

কি ভাবে পদবী এলো

ভাষাতাত্ত্বিক অনেকেরই অভিমত যে সাধু সংস্কৃত শব্দ বাংলা দেশের স্বাভাবিক উচ্চারণে অচিরে অপভ্রংশিত হয়ে বিকৃত দেশজ রূপ নেয়। জাতি নামগুলিও এভাবে ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য ইত্যাদি থেকে বামুন কায়েত বদ্যির আটপৌরে পোশাকেই অধিক পরিচিত। কিন্তু তাদের পুনরায় পোশাকি পরিচ্ছদে উপস্থিত করা হয়েছে। অন্যান্য জাতিনামগুলির ক্ষেত্রে কিন্তু শিক্ষিত সমাজের মধ্যে সাধু সংস্কৃত রূপ ব্যবহারের একটা অনীহা দেখা যায়। যাঁরা লিখিত ভাষায় নিজেদের জাতিনাম ও পদবীকে সুসংস্কৃত রাখতে আগ্রহী তাঁরা নিশ্চয় অন্যান্য জাতির চলিত নাম বর্জনের দাবীকে অযৌক্তিক মনে করতে পারেন না। ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে উচ্চ জাতির নামগুলিও একদা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছিল। সুতরাং তথাকথিত মধ্য জাতিগুলির কোন কোনটির নাম আমূল পরিবর্তিত হয়ে বা শুদ্ধরুপে সমাজে উপস্থিত হলে আপত্তির কারণ নেই। বামুনকে আমরা যদি ব্রাহ্মণ লিখতে অভ্যস্ত হতে পারি, তা হলে তৌলিক, তন্তুবায়, কর্মকার, মোদক, যোগী, কংসকার লিখতে অসুবিধা কোথায়?

অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় এক পন্ডিত প্রশ্ন করেছেন মুদিকে গ্রোসার বলতে হবে কি না। মুদি জাতি নয়, বৃত্তি। অন্যত্র তিনি সুবিখ্যাত “মোদি”। তবে উল্লেখ করা যায় যে শিক্ষক বা অধ্যাপককে কোন অভিভাবক “মাস্টার” বললে কিঞ্চিৎ উষ্মা বা বিরক্তির উদ্রেক করে না কি? অথচ এটাই পুরোনো রীতি।

পদবীর ক্ষেত্রেও এ-কথা সমান সত্য। ব্রাহ্মণদের আদি পদবী শর্মা ও স্বামী আজ বাংলাদেশে প্রায় অনুপস্থিত। বাণভট্ট জাতীয় নামের শেষাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভট্ট পদবীর উৎপত্তি কিনা নিঃসন্দেহে বলা যায় না। লৌকিক শব্দকোষ মতে বিভিন্ন বংশের পরিচয়দাতা ছিলেন ভট্ট। অতএব আদি পদবী ভট্ট, তার সঙ্গে আচার্য যোগ করে ভট্টাচার্য প্রণীত- পদবী। অবশ্য একটি মত অনুযায়ী: ‘ভরত’ শব্দের আদি অর্থ ‘গল্প’; তা থেকে ভৰ্ত্ত এবং পরে ভট্ট। এই সূত্রে উল্লেখ করা যায়, প্রসিদ্ধ যে বৈজ্ঞানিক পৃথিবীকে সূর্যের চারপাশে ঘুরিয়েছিলেন, তাঁর নাম আর্যভট। আর্যভট্ট নয়। আর্যভট ছিলেন সুত বা চারণ। তাঁর রচনার নাম আর্যভটীয়। এই ভট বা ভাট পদবী বাংলার বাইরে দেখা যায়। মধ্যযুগেও যে ভট্ট আচার্যবিহীন ছিলেন তার দৃষ্টান্ত ভবদেবভট্ট।

একালে কোন পদবীকে চলতি রূপ থেকে মূল সাধু শোভন রূপে ফিরিয়ে আনা দোষণীয় বা উপহাসযোগ্য মনে হবে না, যদি আমরা স্মরণ রাখি যে সুদর্শন বন্দ্যোপাধ্যায় সুদর্শন বন্দ্যঘটি থাকলে, বা অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় অনিন্দ্য মুখুটি, তাঁদের সামাজিক মর্যাদার তারতম্য না ঘটলেও সাংস্কৃতিক ধ্বনিচিত্র নিশ্চয় অভিন্ন হত না। অবশ্য মুখুটি পদবীকে এখনো অনেকে রক্ষা করে চলেছেন, অনেকে অপরিবর্তিত রেখেছেন বাড়োরী পদবীকে। লৌকিক শব্দকোষের মতে বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদি গাঞি নাম অর্থাৎ পদবী বাড়ব থেকে বাড়বি (বাড়র?)। তা থেকে সম্ভবত বাড়োরি এবং বড়ুয়াও। এই শব্দকোষ মতেই চট্টোপাধ্যায়ের আদি পদবী চাটুতি, গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন গাঙ্গুর।

বড়ুয়া এখন বাড়রি বা বড়ু থেকে দূরত্বে অধিষ্ঠিত হলেও একদা ব্রাহ্মণ ও বড়ুয়া ছিল পাশাপাশি। দৃষ্টান্ত;

পুখুর পাড়েতে সদা ডোমের কুড়িয়া।

ঘন ঘন আইসে যায় ব্রাহ্মণ বড়ুয়া ৷৷

সম্ভবত বৌদ্ধযুগের অবসানে বড়ুয়া পৃথক হয়ে যায়। বহুসংখ্যক বড়ুয়া বৌদ্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেই কি? বঙ্গীয় ব্যাসোক্ত ব্রাহ্মণ সম্পর্কে ওম্যালীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা মিলবে এখানেই।

বাংলাদেশে গাঞি পদবীর উদ্ভব হলেও আর্যাবর্তে অর্থাৎ উত্তর- প্রদেশে দেখা দিয়েছিল শিক্ষাগত দ্বিবেদী ত্রিবেদী পদবী। সংস্কৃত উপাধ্যায় বিহারে ও বঙ্গদেশে ওঝা হয়ে দাঁড়ায়। বড় বড়ু বা বাড়ব এর সঙ্গে ওঝা, মুখটির সঙ্গে ওঝা, চট্ট বা চাটুতির সঙ্গে ওঝা যুক্ত হয়ে বাড়ুওঝা, চাটুওঝা, মুখুওঝা পদবীগুলি হয়ে দাঁড়ায় বাঁড়ুজ্যে, মুখুজ্যে ও চাটুজ্যে। অবশ্যই দেশজ উচ্চারণের ফলে। পরে সেগুলিকে সংস্কার করে বর্তমান চেহারায় নিয়ে আসা হয়। গাঙ্গুলি কিভাবে গঙ্গোপাধ্যায় হয়, অথবা গঙ্গোপাধ্যায় অপভ্রংশিত হয়ে কেন গাঙ্গুলি হবে, তার ভাষাতাত্ত্বিক কারণ ভাষাচার্চিক বলবেন। এই মধ্যপদলোপী পদবীর মধ্যবর্তী রূপ গঙ্গওঝা বা গাঙ্গুজ্যে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তবে গাঙ্গুর থেকে গাঙ্গুরি ও তৎপরে গাঙ্গুলি হওয়া সম্ভব। পরে এঁরাও উপাধ্যায় যুক্ত হন। বিহারীদের মধ্যে অবশ্য গঙ্গৌলী পাওয়া যায়। কিন্তু জন্ম তারিখ জানা যায় না। উপরন্তু তারা মূলগ্রামী মৈথিলী। রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অভিন্ন হবে কেন ? মৈথিলী আচার-অনুষ্ঠান ও গণ বিবাহপদ্ধতির কোন স্মৃতিচিহ্নও গাঙ্গুলিদের মধ্যে পাওয়া যায় না। উভয় অভিন্ন হলে বিবাহপদ্ধতির মধ্যে প্রতীকস্মৃতি পাওয়া যেত। একটি বিশিষ্ট মতে চাটুতি ওঝা যুক্ত হয়ে চাটুয্যা ও পরে চাটুজ্যে। গাঙ্গুলি কবে ওঝা হলেন গবেষণাসাপেক্ষ।

বাঙালীর পদবী সৃষ্টিতে একদিকে যেমন গ্রামের নামটিই প্রাধান্য পেয়েছে ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে, তেমনই অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে নামের শেষাংশ পদবীর উৎস। এছাড়া বহু পদবীর সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রীয় উপাধি থেকে। নামের অন্তিমাংশ থেকে সৃষ্ট পদবীগুলি যেমন কোন জাতিবিশেষের পরিচয় বহন করে না, তেমনই উপাধিবাচক পদবীও সকল জাতির মধ্যেই আছে। কোন উপাধিসূচক পদবী দেখে তা ব্রাহ্মণ পদবী অনুমান করা অজ্ঞতা। উচ্চনীচ সমস্ত স্তরের সব জাতির মধ্যেই এই পদবীগুলি থাকতে পারে। কারণ হিন্দুই হোক বা মোগলই হোক, কোন রাষ্ট্রই জাতি বিচার করে শাসক বা রাজকর্মচারী নিয়োগ করতেন না। বৌদ্ধ- যুগে তো জাতিভেদই শিথিল ছিল।

উপাধিসূচক পদবীর মধ্যে আছে রায়, চৌধুরী, সরকার, মজুমদার, হাজারী, হাজরা, তালুকদার, হালদার, খাঁ। খাঁ পদবী ব্রাহ্মণদের মধ্যেও আছে, অন্যান্য জাতির মধ্যেও। সামন্ত পদবী হিন্দুযুগের রাষ্ট্রীয় উপাধি, পরে পদবীতে রূপান্তরিত। ভুক্তির প্রধান রাজপ্রতিনিধি ছিলেন উপরিক, উপরিকেরা কখনো মহারাজ, কখনো মহাসামন্ত উপাধি ধারণ করতেন। সামন্ত উৎকল-ব্রাহ্মণদের পদবী, রাঢ়বঙ্গেও বহু ব্রাহ্মণের পদবী সামন্ত, কোথাও এটি ক্ষত্রিয় পদবী, আবার কায়স্থের মধ্যেও সামন্ত পাওয়া যায়। রোমিলা থাপর তাঁর “পাস্ট অ্যান্ড প্রেজুডিস” গ্রন্থে জানিয়েছেন, গুপ্তোত্তর যুগে যে-সব রাজকর্মচারী ভূমিদান পেত তারা সামন্ত ঠাকুর প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতো। “এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উপাধি ছিল সামন্ত। এর আদি অর্থ ছিল প্রতিবেশী, পরে পরিবর্তিত হয়ে অধস্তন শাসক হয়ে দাঁড়ায়।” মহারাষ্ট্রে সামন্ত ক্ষত্রিয় পদবী, বিহার ও ওড়িশায় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের পদবী। বর্ধমান বাঁকুড়া ও হুগলী জেলায় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় পদবী, নদীয়ায় কায়স্থ পরিবারে সামন্ত পদবী আছে, মেদিনীপুর ও হাওড়ায় নানা জাতির মধ্যেই এই পদবী পাওয়া যায়। সপ্তম শতকে ত্রিপুরার লোকনাথলিপির সাক্ষ্য, অনন্তনারায়ণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রাহ্মণ প্রদোষশর্মা মহাসামন্ত। বাঙালী সব ঠাকুর পদবী কিন্তু ট্যাগোর নয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুররা ঠাকুর হওয়ার অনেক আগে থেকেই ব্রাহ্মণদের মধ্যেও ঠাকুর পদবী প্রচলিত ছিল। রাষ্ট্রীয় উপাধি-উদ্ভূত পদবী প্রকৃতপক্ষে সমস্ত জাতির মধ্যেই থাকতে পারে। রায় সম্ভবত রাজ শব্দ থেকে আগত, যার দক্ষিণী রূপ রাও। রাজা বা রাজ শব্দ (রায়) প্রসঙ্গে স্মর্তব্য লাতিন Rex। Roy ইওরোপেও প্রচলিত। বহু ব্যক্তি অন্ত্যজ (?) পদবী ত্যাগ করে ‘রায়’ পদবী গ্রহণ করায় কারো কারো মধ্যে একটি অজ্ঞতা দেখা দিয়েছে এবং তাঁদের ধারণা জন্মেছে যে ‘রায়’ একটি অন্ত্যজ পদবী। ধারণাটি নিঃসন্দেহে হাস্যকর।

রাজশেখর বসুর মতে চৌধুরী চতুর্ধূরিন শব্দের অপভ্রংশ। অর্থাৎ চতুঃসীমানার অন্তর্গত অঞ্চলের শাসক বা রাজপ্রতিভূ। এ বিষয়ে পুরনো কোষ সাক্ষ্যও আছে। সে-কারণেই সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে জমিদারদের পদবী প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় চৌধুরী। কিন্তু জমিদারী প্রথা খুব প্রাচীন নয়, ইংরেজ আগমনের পরই তাঁদের উদ্ভব। চৌধুরী কিন্তু সর্বভারতীয় সর্বজাতির পদবী, এমন কি মুসলমানদেরও। অনেকের ধারণা এটি ফার্সি শব্দ, কিন্তু আগেই উল্লেখ করেছি রাজশেখর বসুর মতে এটি চতুর্ধূরিন শব্দ থেকে সৃষ্ট। এ সম্পর্কে আমার অনুমান অন্য। চৌথহারী বা চৌথ আদায়কারী শাসক বা রাজপ্রতিভূ বোঝায় এই পদবীটিতে। হারী বা হরণ শব্দের মূল অর্থ আদায় করা। সুতরাং চৌথহারী শব্দটির উচ্চারণ বিকৃতি থেকেও চৌধুরী পদবীর উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। চৌথ বা এক চতুর্থাংশ কর আদায়ের রীতি মহারাষ্ট্রীয় উদ্ভাবন নয়, এটি অতি প্রাচীন রীতি। ভূমিরাজস্বের পরিমাপ ষড়ভাগ নির্দিষ্ট হওয়ার ফলে কখনো কখনো রাজাকে বলা হয়েছে ষড়ভাগিন্‌, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কর প্রায় ক্ষেত্রেই ছিল এক-চতুর্থাংশ। মেগাস্থিনিসের বিবৃতিতেও। প্রাকমোগল যুগে রাজা বা সম্রাট ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের, বৌদ্ধ ও জৈন শ্ৰমণদের অগ্রহার ভূমি দান করতেন। অর্থাৎ দান গ্রহিতা আগ্রহারিক বা আগ্রহরী নিযুক্ত হতেন। বেতনের পরিবর্তে প্রদত্ত ভূমির উপসত্ত্ব ভোগ করা এবং তার উৎপন্ন শস্য থেকে সর্বাগ্রে রাজস্ব বা কর আদায় করার অধিকার দেওয়া হত আগ্রহারিকদের। আবার বীথীর অন্তর্ভুক্ত অগ্রহার ভূমির প্রধান পরিচালক পরিষদের মধ্যে ছিলেন অগ্রহারীণ। সুকুমার সেন জানিয়েছেন, ‘বর্ধমান জেলায় মল্লসারুল গ্রামে প্রাপ্ত বিজয়সেনের তাম্রশাসনলিপিতে একটি বীথী অধিকরণের সভ্যদের নামের তালিকা আছে।’ পরিষদের প্রধান সেখানে অগ্রহারীণ। তাদের দায়িত্ব ছিল সেই অর্থে মন্দির বা বৌদ্ধবিহার বা স্তূপ, জৈন তীর্থকেন্দ্র ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ, পূজা অনুষ্ঠানাদির ব্যয় নির্বাহ, শান্তিরক্ষা, শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা ও আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা হ্রাস পেয়ে এই পদটি হয়ে দাঁড়ায় রাজস্ব আদায়ের অর্থাৎ চৌথ আদায়কারীর পদ। চৌথহারী থেকেই এভাবে হিন্দি চৌধরী পদবী। তা থেকে বাংলা চৌধুরী।

সরকার বলতে বোঝায় মোগল আমলের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি। একালেও দেখা যাবে হিন্দিভাষীরা সরকারী আমলাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য “সরকার” বলে সম্বোধন করেন। অন্যদিকে হাজারী বা হাজরা মনসবদারী খেতাব থেকে সৃষ্ট হয়েছে। আবার হিন্দু সমাজের উপান্তবর্তী জাতির মধ্যেও এই উপাধিসূচক সরকার বা হাজরা পদবী মিলবে। ব্রাহ্মণ ইতিহাস মতে একটি বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ বংশের ২৬তম পুরুষের পদবী হাজরা। এ-ছাড়াও বহু, ব্রাহ্মণের পদবী হাজরা। কায়স্থাদি অন্যান্য জাতিরও। সে করণে কেউ কেউ মূল পদবীকে পুনরুদ্ধার করে এনে বসু হাজরা, ঘোষ হাজরা বা সেন হাজরা লিখতে শুরু করেছেন।

হালদার ও হাজরা উভয়ই মোগল আমলের পদবী। হাজরা মনসব-দারী উপাধী হাজারীর অপভ্রংশ, কিন্তু হালদার শব্দের প্রকৃত অর্থ জানা যায় না। সরলার্থে এটিকে গ্রহণ করা যায় না, কারণ ব্রাহ্মণ পদবী ত্যাগ করে এই পদবী গ্রহণের পিছনে নিশ্চয় তৎকালীন কোন মর্যাদাবোধ ছিল। সুতরাং লাঙল বা নৌকোর হালের সঙ্গে হালদারের কোন যোগ-সূত্ৰ নেই।

হালদার ও হাজরা উভয়ই মোগল আমলের পদবী। হাজরা মনসব-দারী উপাধী হাজারীর অপভ্রংশ, কিন্তু হালদার শব্দের প্রকৃত অর্থ জানা যায় না। সরলার্থে এটিকে গ্রহণ করা যায় না, কারণ ব্রাহ্মণ পদবী ত্যাগ করে এই পদবী গ্রহণের পিছনে নিশ্চয় তৎকালীন কোন মর্যাদাবোধ ছিল। সুতরাং লাঙল বা নৌকোর হালের সঙ্গে হালদারের কোন যোগ- সূত্ৰ নেই।

যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির বক্তব্য : ‘কৌটিল্যে চতুরঙ্গ বলের প্রত্যেকের দশ সেনার উপরে এক পদিক, দশ পদিকের উপর এক সেনাপতি, দশ সেনাপতির উপরে এক নায়ক। অর্থাৎ শত সেনা সেনা-পতির, সহস্র সেনা নায়কের অধীন থাকিত। সেনাপতি শতিক, নায়ক সাহস্রিক। ইহারা হাজারী, এখন উপাধি হাজরা।’ হাজারী পদবী বাঙালী অবাঙালী উভয়েরই আছে। পলাশির যুদ্ধে সিরাজের পক্ষে কাশ্মিরী মোহনলালের যে বন্ধু, কামানবাহিনীর সেনাপতি ছিল তার নাম নউএ সিং হাজারী।

রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রসঙ্গে উল্লেখনীয় যে পরবর্তী কালে ইংরেজ শাসকরাও রায়সাহেব, রায়বাহাদুর, নাইট (স্যার) প্রভৃতি উপাধি বিতরণ করেছিলেন। অনেকেই হয়তো জানেন না যে মহামহোপাধ্যায় ইংরেজ সরকারের দেওয়া খেতাব। এগুলির জন্য সেকালে অনেকেই প্রলুব্ধ ছিলেন, কিন্তু তাঁরা উপাধিগুলি নামের প্রথমেই ব্যবহার করতেন, পদবীতে পরিণত করেননি।

মোগলযুগে সরকারী চাকরির সূত্রেও বহু, পদবীর সৃষ্টি হয়। যেমন তালুকদার, চাকলাদার, মহলানবীশ, তরফদার, সেহানবীশ, খাস-নবীশ, পত্ৰনবীশ, বকশি, মুনশি, মুস্তাফী ইত্যাদি। একমতে বক্‌শি শব্দের মূল ছিল ‘ভিক্ষু’। বৌদ্ধ ভিক্ষুরাই ছিলেন অক্ষরজ্ঞান-সম্পন্ন, তুর্কী ও মোগোলদের ভাষায় ভিক্ষু, হয়ে দাঁড়ায় ‘বাক্‌শী। ফৌজের কাজে যারা হিসেব রাখতো, ফারসীতে তাদের বলা হ’ত বখ্‌শী। সৈন্য-দলের খাজাঞ্চী। ইংরেজী ক্লার্ক শব্দও এসেছে clerik থেকে, যার অর্থ সাধুসন্ন্যাসী। এরা ছিল অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, সুতরাং পরে যারা লেখার কাজ করতে শুরু করলো তারা হয়ে গেল ক্লার্ক। মজুমদার বোধ- হয় মজমা বা মৌজার অধিকর্তা, সেহানবীশ রাখতেন দৈনিক হিসাব, কারকুন জমিদারের গোমস্তা, শিকদার ছিলেন শান্তিরক্ষক, মুনশি ও মুস্তাফী ছিলেন কেরানী এবং বড়বাবু। খাস্তগীর? বিষয়ী পদবী যাঁর, তিনি বিষয়ী স্বভাবের মানুষ নন। এটি বিষয়পতি শব্দ থেকে খর্বিত ও খণ্ডিত। পোদ্দার অবশ্যই মহাজন বা ব্যাঙ্কার, অপরের অর্থ যিনি গচ্ছিত রাখতেন ও সেই টাকা ধার দিয়ে লাভের অঙ্ক বাড়াতেন। ঠিক এ-কালের ব্যাঙ্কের মতই। সে জন্যই প্রবাদবাক্য: পরের ধনে পোদ্দারি। পোতদার থেকেই পোদ্দার কিনা গবেষণসাপেক্ষ। এঁরা বোধহয় সোনারুপোর মান নির্ণয় করতেন। মুদ্রারও। চণ্ডীমঙ্গলে ‘পোতদার হইল যম, ঢাকায় আড়াই আনা কম’ বলতে সোনার খাদ বাদ দেওয়ার অথবা সুদের কথা বলা হয়েছে? অবশ্য তৎকালে স্বর্ণ- ব্যবসায়ী এবং মহাজন একই ব্যক্তি। নস্কর আসলে লস্কর, এ যুগের আর্মির হাবিলদার বা সার্জেন্ট। অথবা সিপাহী। লোকলস্কর কথাটি এ-প্রসঙ্গে মনে আসে। কয়াল আরবি শব্দ, অর্থ হিসাবরক্ষক।

মীরবহর হিন্দুরও পদবী। ফরিদপুর জেলার বসু-বংশীয়দের কারো কারো মীরবহর পদবী আছে বলে শুনেছি। মীরবহর ফার্সি শব্দ, কলকাতায় গঙ্গার একটি ঘাটের নাম ছিল মীরবহর ঘাট। আমির আল বহর মানে অ্যাডমিরাল অফ দি ফ্লীট। আমির আল বহর থেকেই মীরবহর।

এইসব উপাধি ও পদমর্যাদা থেকে উৎপন্ন পদবীর রাশি দেখলে সেকালের সমাজচিত্রটিও, দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ যুগের হিন্দু, সমাজের ছবি। অর্থাৎ কৃষিজীবী বাঙালীর গ্রামীণ সমাজে কিছু দরিদ্র টোলের পণ্ডিত, ঘটক, পাঠক, জ্যোতিষী, কিছু কবিরাজ, আর কিছু রাজস্ব আদায়কারী, হিসাবরক্ষক, শান্তিরক্ষক, বাদবাকি সকলেই কৃষি-জীবী রায়ত, কারুশিল্পী ও শ্রমিক। এর বাইরে গঞ্জ, নগর ও রাজধানী- কেন্দ্রিক রাজসেবা। উপরতলায় রায়, চৌধুরী, সরকার, হাজরা, মজুমদার ইত্যাদি, তার নীচে কেরাণী, বড়বাবু, সিপাহীসান্ত্রী, গোমস্তা ইত্যাদি। এর অধিকাংশই ছিল রাজসেবা। চাণক্যশ্লোকেও আছে তদধংরাজ- সেবায়াং। বাণিজ্যের অর্দ্ধেক উপার্জন রাজসেবায় ?

রায় চৌধুরী মজুমদার সরকার সামন্ত হাজরা প্রভৃতি উপাধি যাঁরা ধারণ করেন তাঁদের সকলেরই একটি আদি পদবী আছে। তাঁরা বাঁড়ুজ্যে চাটুজ্যে হতে পারেন, ঘোষ বসু মিত্র হতে পারেন, সেন দাম গুহ হতে পারেন, কীর্তি ভদ্র যশ হতে পারেন। এবং ব্রাহ্মণ কায়স্থ ছাড়াও যে-কোন জাতি হতে পারেন। তবে সাধারণত উচ্চজাতির মধ্যেই দেখা যায়, তপশীলীদের মধ্যে সংখ্যায় খুবই কম দেখা মেলে।

চতুর্বেদীর পৌত্র নিরক্ষর হলেও যেমন চতুর্বেদী বা চৌবে পদবীটি সযত্নে রক্ষা করে এসেছে, তেমনই এইসব নানাবিধ রাজসেবা করে কেউ একজন উপাধি বা চাকরির পদটিকে পদবীতে পরিণত করলেও তাঁর অধস্তন পুরুষরা পদবীটি ধারণ করেছেন, কিন্তু বৃত্তি হয়তো বদল হয়ে গেছে। মুনশি বিরাট জমিদার হয়ে গোমস্তা নিয়োগ করলেও মুনশিই থেকে যান। ঘটক প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক হয়ে গেলেও ঘটক, লেখক হয়েও পাঠকের নিস্তার নেই।

উপাধিসূচক বা পদমর্যাদা থেকে গড়ে ওঠা মোগলযুগের পদবী-গুলি যে উচ্চনীচ সব জাতির মধ্যেই পাওয়া যায় তার কারণ নবাব- বাদশাহরা জাতি বিচার করে চাকরি দিতেন না।

পদবীর উৎস সন্ধান করতে হলে আরেকবার বর্তমানে পরিচিত প্রচলিত পদবীগুলির দিকে তাকানো যাক। রায়, চৌধুরী, সরকার, মজুমদার, হাজরা, হালদার ইত্যাদি পদবী ব্রাহ্মণ থেকে শুরু করে কায়স্থাদি বহু, বর্ণহিন্দুর মধ্যেই আছে। এর মধ্যে কয়েকটি পদবী আবার তপশীলভুক্ত জাতির মধ্যেও প্রচলিত। তেমনই ঘোষ, দত্ত, গুহ, দেব প্রভৃতি যে-সব পদবী নামের বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে এসেছে সেগুলিও কায়স্থ ছাড়াও বহু, বর্ণহিন্দু, জাতির মধ্যেই পাওয়া যায়। আবার যে-কোন উপাধিবাচক পদবী বা মোগলযুগের রাজকর্মচারীর পদবাচক পদবী তপশীলীদের মধ্যেও পাওয়া যায়।

দাস কোন জাতিবাচক পদবী নয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণবকালে ব্রাহ্মণ শিষ্যরাও দাস পদবী ধারণ করেছেন। কায়স্থ ও বৈদ্যদের মধ্যেও দাস আছে। একদা অর্থাৎ পঞ্চাশ ষাট বছর আগেও কায়স্থদের মধ্যে দাস পদবীর বহুল প্রচলন ছিল, বর্তমানে প্রায় অদৃশ্য। দাস পদবীকে অপাঙক্তেয় করার আগে মনে রাখতে হবে আমাদের মহাভারতের রচনা-কারের নাম কাশীরাম দাস। বসু এবং মিত্র কায়স্থ ভিন্ন অন্য জাতির মধ্যে সংখ্যাল্প হলেও বর্তমান। বসুও মনে হয় বিশ্বাবসু, পৃথ্বিবসু জাতীয় নাম থেকেই এসেছে। তবে গ্রামের নাম থেকেও এই পদবীটি এসে থাকতে পারে। মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের নাম ছিল বসু, বর্তমান নাম বসুয়া, এবং সেই গাঞিনাম থেকেই ব্রাহ্মণদের গাঞিনাম বা পদবী বসুয়ারী। ‘তদ যৎ প্রথমমমৃতং তদ্বসব উপজীবন্তি অগ্নিনা সুখেন’, ২০৪।১ ছান্দোগ্য উপনিষদে বসবঃ হলেন গণদেবতা। ঋগ্বেদের আদিত্য মরুৎ অশ্বিদ্বয় ইন্দ্র উষা সকলেই বসু, মহাভারতাদি গ্রন্থে শিব ও কুবেরও বসু। আবার আটে অষ্টবসু। তবে এঁরা কেউই বাঙ্গালী কায়স্থ ছিলেন না। বীরভূমের ঘোষ বা ঘোষাল গ্রাম থেকে কি ঘোষ পদবী? অথবা ঈশ্বরঘোষ অনন্তঘোষ জাতীয় নাম থেকে! ঘোষ কায়স্থ ও গোপ পদবী। আবার ঘোষ গ্রাম থেকেই ঘোষাল। ঘোষ পদবী কায়স্থদের তুলনায় গোপদের মধ্যেই অধিক প্রচলিত। তবে রাধাকৃষ্ণ উপাখ্যানের আয়ান ঘোষের সঙ্গে ঘোষ পদবী যুক্ত নয়। কেউ কেউ মনে করেন ঘোষক থেকে ঘোষ। একটি মত অনুযায়ী: বৈষ্ণবকাব্যের আয়ান ঘোষের আয়ান আসলে অভিমন্যু নামের অপভ্রংশ।

অনেকের ধারণা দাস ও দাশ পৃথক পদবী। বৈদ্যদের মধ্যে বর্তমানে অতি প্রচলিত পদবী দাশ দাশগুপ্ত, সেন ও সেনগুপ্ত এবং গুপ্ত। এছাড়া আরো বহু, পদবী বৈদ্যদের মধ্যে আছে। যথা মল্লিক, বকশি, মজুমদার ইত্যাদি। প্রাচীন আমলে বৈদ্যদের কুণ্ডু, কর, দত্ত পদবীও ছিল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও বৈদ্যরা দাস বানান লিখতেন এবং যুগ্ম পদবীর প্রবর্তনও আধুনিককালে।

প্রকৃতপক্ষে জাতিভেদ অপেক্ষাকৃত আধুনিক। জাতিপরিচয় ছিল সেকালে, কিন্তু একালের মত উচ্চনীচ নির্দেশ প্রখর ছিল না। জাতি-পরিচয় ছিল বৃত্তি অনুযায়ী। ময়ূরভট্টের ধর্মপুরাণে কায়স্থ বৈদ্যাদির কোন বিশেষ স্থান নেই। তার প্রমাণ :

‘ক্ষত্রিয় বারুই বৈদ্য পোদ পাকমারা।

পরিল তাম্রের বালা কায়স্থ কেওরা৷।’

ব্রাহ্মণদের মধ্যে যেমন পিতার পদবী বাড়োরী এবং পূত্রের পদবী বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখা যায়, তেমনই বৈদ্যদের মধ্যে পিতার পদবী দাস, সেন বা গুপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পত্রের পদবী দাশগুপ্ত বা সেনগুপ্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত প্রচুর। দাস বানান পরিবর্তনে কেউ কেউ অসম্মতও ছিলেন। সেনগুপ্ত ও দাশগুপ্ত পদবী দুটি গ্রহণ ও অন্যান্য পদবী বর্জনের পিছনে হয়তো উদ্দেশ্য ছিল এই যে সংখ্যালঘু, জাতির সকলে পরস্পরকে পদবী থেকেই চিহ্নিত করতে সমর্থ হবেন। বর্তমানে ব্রাহ্মণ কুড়ি লক্ষ, কায়স্থ আঠারো লক্ষ, বৈদ্য মাত্র দু’ লক্ষ। অন্যান্য বহু জাতি অর্ধ লক্ষ থেকে এক লক্ষ। জনসংখ্যা বা সীমিত পদবীও জাতিপ্রাধান্য স্থির করে।

‘বাঙালীর ইতিহাসে’ লেখা হয়েছে, ‘বৈদ্য এবং কোন কোন ব্রাহ্মণ কুলজীতে আদিশূর এবং বল্লালসেনকে বলা হইয়াছে বৈদ্য। এ তথ্য একান্তই অনৈতিহাসিক। সেনেরা সিঃসন্দেহে ব্ৰহ্মক্ষত্রিয়; ইঁহারা এবং সম্ভবত শূরেরাও অবাঙালী।’

কায়স্থ সম্পর্কে বক্তব্য : ‘কোষকার বৈজয়ন্তী (একাদশ শতক) কায়স্থ অর্থে বলিতেছেন লেখক, এবং কায়স্থ ও করণ সমার্থক, ইহাও বলিতেছেন।…চান্দেল্লরাজ ভোজবর্মার অজয়গড় লিপিতেও করণ ও কায়স্থ সমার্থক বলিয়া ধরা হইয়াছে।’ লেখক বলতে কি বোঝায় তাও জানা দরকার। উক্ত মতে ‘করণ কথার মূল অর্থ, খোদাই যন্ত্র, কাটিবার যন্ত্র। এই অর্থে কর্‌ণি কথাটি আজও ব্যবহৃত হয়।’ অর্থাৎ যাঁরা লিপি খোদাই করতেন।

দাশ, সেন, গুপ্ত, মল্লিক বৈদ্যই নয়, বর্ণহিন্দু, বহু, জাতির মধ্যেই আছে। বল্লালসেন-এর পদবী সেন নয়। এবং নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি ব্রহ্মক্ষত্রিয় ছিলেন। গুপ্ত পদবীর সঙ্গেও গুপ্তযুগের সম্রাটদের কোন সম্পর্ক নেই। গুপ্ত যুগ বা সেন রাজা প্রভৃতি শব্দগুলি ঐতিহাসিকদের সৃষ্টি। গুপ্ত সম্রাটরা নিজেদের গুপ্ত সম্রাট হিসেবে উল্লেখ করেননি, বা সেনরাজারা নিজেদের সেন রাজা বলেননি। দাশগুপ্ত ও সেনগুপ্ত যুগ্ম পদবীর উদ্ভাবন ও প্রচলন সাম্প্রতিক হলেও ষষ্ঠ শতকের দামোদর লিপিতে ‘মহাসেনগুপ্ত’ নামটি পাওয়া যায়। এখানে অবশ্য সেনগুপ্ত কোন পদবী নয়, কারণ এই অংশকে বিচ্ছিন্ন করলে শুধুমাত্র মহা শব্দের কোন নাম হওয়া সম্ভব নয়। উল্লিখিত পদবী- গুলি ছাড়াও আরো অনেক পদবী বৈদ্যদের ছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে দেশজ বা অপভ্রংশ শব্দ থেকে যে-সব উদ্ভট বা শ্রুতিকটু পদবী সৃষ্টি হয়েছে তা ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য প্রভৃতি সকল জাতির মধ্যেই ছিল। কিন্তু কালক্রমে সেগুলিকে জাতিবাচক পরিচিত পদবীতে পরিবর্তিত করা হয়েছে। উপরন্তু প্রায় সব পদবীই বিভিন্ন বর্ণহিন্দু, জাতির মধ্যেই বর্তমান। এমন কি তপশীলভুক্ত জাতির মধ্যেও তাদের কোন কোনটিকে পাওয়া যাবে। আর্থিক সঙ্গতি থেকে ক্রমে ক্রমে শিক্ষা ও রুচি পরিবর্তিত হয়, তার ফলে পদবীকে সুসংস্কৃত রূপ দেওয়ার চেষ্টা অথবা জাতি- গোষ্ঠীর উদ্ভট পদবীরও কৌলীন্যপ্রাপ্তি ঘটে। মুষ্টিমেয় বাঙালী ফার্সি শিখে উন্নতি করেন, পরে ইংরেজী শিখে। বাঙালীর সর্বাঙ্গে বর্তমানে যে প্রসাধন লক্ষ্য করা যায় তার শুরু, এক শতাব্দীও নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *