০৭. প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বটিতে বিবিধ আপত্তি

সপ্তম অধ্যায় – প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বটিতে বিবিধ আপত্তি

আয়ুষ্কাল–রূপান্তরগুলি অপরিহার্যভাবে যুগপৎ নয়–আপাতভাবে প্রত্যক্ষ উপকারের নয় এমন রূপান্তর–প্রগতিমূলক বিকাশ–ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াগত গুরুত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি সবচেয়ে বেশি স্থায়ী–উপকারী গঠনসমূহের জায়মান ধাপগুলি বিচার করতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পূর্বানুমিত অসামৰ্থ-প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে উপকারী গঠনসমূহের অর্জনকে বাধা-দানের কারণসমূহ–পরিবর্তিত প্রক্রিয়াসমূহের সঙ্গে দেহগঠনের ক্রমবিন্যাস–একই শ্রেণীর সদস্যদের ব্যাপকভাবে পৃথক অঙ্গগুলি এক এবং একই উৎস থেকে বিকশিত বিরাট এবং আকস্মিক রূপান্তরসমূহে অবিশ্বাসের সঙ্গত কারণ।

.

আমার মতবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তি নিয়ে আলোচনায় আমি এই অধ্যায়ে মনোনিবেশ করব। এর দ্বারা পূর্বের আলোচনাগুলির কয়েকটি স্পষ্টতর হতে পারে। কিন্তু সবগুলি আলোচনা করা অপ্রয়োজনীয়, কারণ বিষয়টিকে ভালভাবে না বুঝেই লেখকরা বেশ কিছু আপত্তি উপস্থিত করেছেন। যেমন একজন বিখ্যাত জার্মান প্রকৃতিবিদ স্বপ্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে আমার তত্ত্বের দুর্বলতম অংশটি হচ্ছে–সব জীবকে আমি অসম্পূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করি। আমি প্রকৃতই যা বলেছি তা হচ্ছে-সকলে সেইরকম নিখুঁত নয় যেরকম এদের জীবন-পরিবেশে হওয়া উচিত; এবং পৃথিবীর অনেক অংশে অসংখ্য দেশীয় আকারগুলির বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিকট বশ্যতা স্বীকারের মাধ্যমে ঘটনাটি দেখানো হয়েছে। এমনকি এরা যদি কোন এক সময়ে এদের জীবন-পরিবেশে নিখুঁতভাবে অভিযোজিত হয়ে থাকে, তাহলেও পরিবেশ পরিবর্তিত হলে এরূপ থাকতে পারে না, যদি না তারা নিজেরাও এরূপে পরিবর্তিত হয়; এবং কেউ প্রশ্ন তুলবে না যে প্রত্যেক দেশের অধিবাসীদের সংখ্যা ও প্রকারগুলির সঙ্গে ঐ দেশের ভৌত অবস্থাসমূহের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

জনৈক সমালোচক কিছু নিখুঁত গাণিতিক পরীক্ষার দ্বারা জোরের সঙ্গে সম্প্রতি বলার চেষ্টা করেছেন যে দীর্ঘ আয়ুষ্কাল সমস্ত প্রজাতির পক্ষে প্রচণ্ড উপকারী এটি বোঝাতে প্রাকৃতিক নির্বাচনে বিশ্বাসীরা এমনভাবে তাঁদের বংশতালিকা বিন্যস্ত করেন” যে নিজেদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় সমস্ত বংশধরদের জীবন দীর্ঘতর হয়। আমাদের সমালোচক কল্পনা করতে পারেন না যে একটি দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ অথবা একটি নিম্নতর প্রাণী কোন শীতপ্রধান জলবায়ুর দেশে বিস্তৃত হতে পারে ও প্রত্যেক শীতে ধ্বংস হতে পারে, এবং তথাপি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত সুবিধাগুলির জন্য নিজেদের বীজ ও ডিমগুলির দ্বারা বছরের পর বছর এরা বেঁচেও থাকে। মিঃ ই, রে ল্যানকেষ্টর সম্প্রতি এই বিষয়টি আলোচনা করেছেন এবং তার বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত করেছেন যে আয়ুষ্কাল সাধারণতঃ প্রত্যেক প্রজাতির দেহের সাংগঠনিক মান ও জননপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং সাধারণ ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এবং এটি সম্ভবপর যে এই শর্তগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বহুলাংশে নির্ধারিত হয়েছে।

অনেকে বলেছেন যে, যেহেতু ইজিপ্টের কোন উদ্ভিদ ও প্রাণী গত তিন অথবা চার হাজার বছর ধরে পরিবর্তিত হয়নি, অতএব সম্ভবতঃ পৃথিবীর কোন অংশে তারা কেউ। নেই। কিন্তু মিঃ জি. এইচ. লিউস বলেন যে এই ধরনের যুক্তি নিতান্তই অতিশয়োক্তি, কারণ ইজিপ্টে র স্মৃতিস্তম্ভগুলিতে অথবা মমিতে বিচিত্রত গৃহপালিত প্রাচীন জাতগুলি বর্তমানে জীবিতদের খুবই সদৃশ এবং প্রায় একই রূপের। তথাপি সমস্ত প্রকৃতিবিদরা স্বীকার করেন যে এরূপ জাতগুলি এদের আদিম রূপসমূহের রূপান্তরের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছে। তুষারযুগের প্রারম্ভ থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় অবস্থানকারী অনেক প্রাণী তুলনামূলকভাবে বলশালী হয়ে থাকবে, কারণ এরা জলবায়ুর বিরাট বিরাট পরিবর্তনের প্রভাবাধীন হয়েছে এবং বিরাট বিরাট দূরত্ব প্রচরণ করেছে; অন্যথায়, ইজিপ্টে গত কয়েক হাজার বছর ধরে জীবন-পরিবেশ, যতদূর আমরা জানি, পুরোদস্তুর একইরকম রয়েছে। তুষারযুগ থেকে অল্প রূপান্তর অথবা রূপান্তর না হওয়ার ঘটনাটি তাদের পক্ষে সুবিধাজনক হয়ে থাকবে যারা বিকাশের একটি সহজাত ও প্রয়োজনীয় নিয়মে বিশ্বাস। করে, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন অথবা যোগ্যতমের উদ্বর্তনের তত্ত্বটির বিরুদ্ধে শক্তিহীন, যার অর্থ একটি উপকারী প্রকৃতির পরিবৃত্তি অথবা এককীয় পার্থক্য উদ্ভূত হলে এরা সংরক্ষিত হবে; কিন্তু এটি শুধুমাত্র কোন কোন অনুকূল অবস্থায় কার্যকরী হবে।

তাঁর গ্রন্থের জার্মান অনুবাদের শেষের দিকে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ব্রন প্রশ্ন করেছেন–প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বানুযায়ী কেমন করে একটি ভ্যারাইটি পিতামাতা প্রজাতির পাশাপাশি বেঁচে থাকে? অল্প পার্থক্যমূলক জীবন-স্বভাব অথবা পরিবেশিগুলিতে যদি উভয়েই মানিয়ে নেয়, তাহলে তখন তারা একত্রে বসবাস করতে থাকবে; এবং যাদের পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা অদ্ভুত প্রকৃতির বলে মনে হয়, এবং আকার, অস্বাভাবিক বর্ণহীনতা ইত্যাদি সমেত শুধু অস্থায়ী পরিবর্তন-সহ বহুরূপক। প্রজাতিদের যদি আমরা একদিকে স্থাপন করি, তাহলে উচ্চ অথবা নিম্নভূমি, শুষ্ক অথবা আর্দ্র জেলাগুলির মতো স্বতন্ত্র অঞ্চলে বসবাসকারী আরও স্থায়ী ভ্যারাইটিদের সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়। এটা যতদূর সম্ভব আমি আবিষ্কার করেছি। এছাড়াও প্রাণীদের ক্ষেত্রে, যারা অতিশয় বিচরণশীল এবং স্বাধীনভাবে সংকরিত হয়, তাদের ভ্যারাইটিরা সম্ভবতঃ স্বতন্ত্র অঞ্চলসমূহেই সাধারণতঃ সীমাবদ্ধ থাকে।

ব্রন আরও বলেন যে ভিন্ন প্রজাতিরা কখনও একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যে পরস্পরের থেকে। ভিন্ন হয় না, বরং বহু অংশেই হয়; এবং তিনি প্রশ্ন করেন–কেমন করে এটি সবসময়। সম্ভব যে শরীরের অনেক প্রত্যঙ্গ একই সময়ে পরিবৃত্তি ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে। রূপান্তরিত হয়েছে? কিন্তু মনে করার কোন প্রয়োজন নেই যে প্রতিটি জীবের সমস্ত প্রত্যঙ্গ যুগপৎ রূপান্তরিত হয়েছে। পূর্বে বলা হয়েছে যে কোন উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে অভিযোজিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রূপান্তরসমূহ প্রথমে একটি প্রত্যঙ্গে এবং পরে অন্য প্রত্যঙ্গে অল্পভাবে ক্রমিক পরিবর্তন দ্বারা অর্জিত হয়ে থাকবে; এবং যেহেতু এরা একত্রে বংশগতভাবে প্রেরিত হবে, তাই আমাদের মনে হবে যে এরা যুগপৎ উদ্ভূত হয়েছে। তবে উপরের আপত্তিটির সর্বোত্তম উত্তর সেই সব গৃহপালিত জাতগুলির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়, যারা কোন বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য প্রধানতঃ মানুষের নির্বাচন ক্ষমতার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। ঘোড়দৌড়ের এবং মালবহনের ঘোড়া অথবা গ্ৰেহাইণ্ড এবং ম্যাস্টিফ কুকুরদের দিকে লক্ষ্য করুন। এদের সমগ্র কাঠামো এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলি রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু যদি আমরা এদের রূপান্তরের ইতিহাসের প্রতিটি ধাপ খুঁজে বের করতে পারতাম এবং পরবর্তী ধাপগুলি খুঁজে বের করা যেত, তাহলে আমরা বিরাট এবং যুগপৎ পরিবৃত্তিসমূহ দেখতে পেতাম, কিন্তু প্রথমে একটি প্রত্যঙ্গ এবং পরে অন্য প্রত্যঙ্গটি অল্পভাবে রূপান্তরিত এবং উন্নত হয়। এমনকি যখন কেবলমাত্র একটি বৈশিষ্ট্যকে মানুষ নির্বাচন করে, যার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে আমাদের চাষযোগ্য উদ্ভিদগুলি, তখন অনিবার্যভাবে দেখা যাবে যে যদিও এই একটি প্রত্যঙ্গ, ফুল অথবা পাতা যা-ই হোক না কেন, বিরাটভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং অন্য সব প্রত্যঙ্গ অল্প রূপান্তরিত হয়েছে। এটি অংশত পারস্পরিক বৃদ্ধির নীতিতে এবং অংশত অতি পরিচিত স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনে আরোপ করা যেতে পারে।

ব্রন এবং সম্প্রতি ব্রোকা আরও গুরুতর একটি আপত্তি উপস্থিত করেছেন। আপত্তিটি হল–যারাই অধিকারী হোক না কেন, অনেক বৈশিষ্ট্যের আপাতভাবে কোন মূল্য নেই এবং সেজন্য এরা প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না। ব্রন শশক ও ইঁদুরের বিভিন্ন প্রজাতির কান ও লেজের দৈর্ঘ্য, অনেক প্রাণীর দাঁতের এনামেলের জটিল ভাজ এবং এরূপ অসংখ্য ঘটনার কথা উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন। একটি প্রশংসনীয় প্রবন্ধে উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলোচনা করেছেন নাজেলি। তিনি স্বীকার করেছেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচন খুবই কার্যকরী, কিন্তু তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে উদ্ভিদদের গোত্রগুলি অঙ্গসংস্থানীয় বৈশিষ্ট্যে পরস্পরের থেকে মূলতঃ পৃথক হয়, যা সম্ভবত প্রজাতিদের মঙ্গলের পক্ষে সম্পূর্ণরূপে অপ্রয়োজনীয়। ফলস্বরূপ তিনি প্রগতিমূলক এবং আরও নিখুঁত বিকাশের দিকে একটি সহজাত প্রবৃত্তিতে বিশ্বাস করেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি কলাগুলিতে কোষগুলির এবং কাণ্ডের ওপর পাতার বিন্যাস উল্লেখ করেছেন, যেগুলিতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হয়ে থাকতে পারে না। এগুলির সঙ্গে আরও কিছু যোগ করা যেতে পারে, যেমন ফুলের অংশগুলিতে সংখ্যাগত বিভাগ, ডিম্বকগুলির অবস্থান, বীজের আকার, যখন এগুলি ছড়িয়ে পড়ার কাজে লাগে না, ইত্যাদি।

উপরের আপত্তিটি বেশ জোরালো। তা সত্ত্বেও প্রথমেই আমাদের সিদ্ধান্ত করতে অতিশয় সতর্ক হওয়া উচিত যে কোন কোন দেহগঠন প্রত্যেক প্রজাতির বর্তমানে অথবা পূর্বে উপকারী হয় অথবা হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ, সবসময় মনে রাখা উচিত যে যখন একটি প্রত্যঙ্গ পরিবর্তিত হয়, তখন কোন অস্পষ্ট কারণের জন্য অন্য প্রত্যঙ্গগুলিও রূপান্তরিত হয়, যেমন একটি প্রত্যঙ্গে কম অথবা বেশি পুষ্টিকর খাদ্যের প্রবাহ, পারস্পরিক চাপ, প্রথমে বিকশিত একটি অংশ, পরবর্তী সময়ে অন্য অংশকে বিকশিত হতে প্রভাবিত করে ইত্যাদি এবং অন্য কারণগুলির মাধ্যমে যা সহ-সম্পর্কের অনেক রহস্যজনক ঘটনার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, যা আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি না। সংক্ষেপে, বৃদ্ধির নিয়মগুলির মধ্যে এই মাধ্যমগুলিকে একত্রে দলবদ্ধ করা যেতে পারে। তৃতীয়তঃ, জীবনের পরিবর্তিত পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও নির্দিষ্ট ক্রিয়া এবং সুপরিচিত স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনগুলিকে আমাদের স্বীকার করা উচিত, যাতে করে পরিবেশের প্রকৃতি আপাতভাবে একটি গৌণ ভূমিকা পালন করে। কুঁড়ির পরিবর্তনগুলি, যেমন সাধারণ গোলাপের ওপর মস গোলাপের আবির্ভাব, পিচ গাছে মধুর আবির্ভাব স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনের ভাল উদাহরণ উপস্থিত করে। কিন্তু এমনকি এইসব ক্ষেত্রেও জটিল গলসৃষ্টিতে এক বিন্দু বিষের ক্ষমতার কথা যদি আমরা মনে রাখি, তাহলে আমরা। নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে ওপরের পরিবর্তনগুলির পরিবেশের কোন পরিবর্তনের দরুন প্রাণরসের প্রকৃতিতে কোন স্থানীয় পরিবর্তনের প্রভাব নয়। এককীয় প্রতিটি অল্প পরিবর্তন এবং হঠাৎ হঠাৎ উদ্ভূত আরও স্পষ্টচিহ্নিত পরিবর্তনের অন্য কোন ফলপ্রদ কারণ অবশ্যই থাকবে; এবং অজ্ঞাত কারণটি অনবরত ক্রিয়া করলে, এটি প্রায় নিশ্চিত যে প্রজাতির সমস্ত এককগুলি একইভাবে রূপান্তরিত হবে।

এই গ্রন্থের পূর্বের সংস্করণগুলিতে আমি স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনশীলতার জন্য রূপান্তরের গুরুত্ব ও বারংবার সংঘটনকে কম গুরুত্ব দিয়েছিলাম, যা প্রত্যেক প্রজাতির জীবন-স্বভাবের সঙ্গে এত ভালভাবে অভিযোজিত হয়েছে যে এরূপ অসংখ্য দেহগঠনে এই কারণ আরোপ করা অসম্ভব। বর্তমানে আমি আর বিশ্বাস করতে পারি না যে একটি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া অথবা গ্ৰেহাউণ্ড কুকুরের ভালভাবে অভিযোজিত আকারটি, যা মানুষের দ্বারা নির্বাচনের পদ্ধতিকে ভালভাবে বোঝার পূর্বে প্রবীণ প্রকৃতিবিদদের মনে বিপুল বিস্ময় উৎপাদন করেছিল, তাকে এইরূপে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

পূর্ববর্তী বক্তব্যগুলির কয়েকটির ব্যাখ্যা করা সময়োপযোগী হতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তথাকথিত অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এটি লক্ষ্য করার কদাচিৎ প্রয়োজন হয় যে এমনকি উচ্চতর ও সুপরিচিত প্রাণীদেরও এমন অনেক দেহগঠন আছে যা এত উচ্চমাত্রায় বিকশিত যে সেগুলির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কেউ সন্দেহ করে না; তথাপি এদের ব্যবহার নির্ধারিত হয়নি অথবা সম্প্রতি নির্ধারিত হয়েছে। যেহেতু গঠনের পার্থক্য হিসাবে–যদিও নিতান্তই তুচ্ছ এবং কোন বিশেষ ব্যবহার নেই–ইঁদুরদের কয়েকটি প্রজাতির লেজ ও কানের দৈর্ঘ্যের বিষয়ে ব্রন উল্লেখ করেছেন, সেহেতু আমি উল্লেখ করতে পারি যে ডঃ স্ক-এর মতানুসারে, সাধারণ ইঁদুরের বহিঃকর্ণের স্নায়ুগুলি অস্বাভাবিকভাবে বিন্যস্ত, যা থেকে বোঝা যায় এগুলি স্পর্শানুভূতি সংক্রান্ত অঙ্গ হিসাবে কাজ করে; সুতরাং কানগুলির দৈর্ঘ্য কখনই সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হতে পারে না। বর্তমানে আমরা আরও দেখি যে কয়েকটি প্রজাতির ক্ষেত্রে লেজটি ধারক-অঙ্গ হিসেবে অতিশয় প্রয়োজনীয় এবং এর ব্যবহার এর দৈর্ঘ্যের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।

উদ্ভিদের প্রসঙ্গে, নাজেলির প্রবন্ধ সম্পর্কে নিচের বক্তব্যের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখব আমি। এটা অনস্বীকার্য যে অর্কিডের ফুলগুলি অসংখ্য ধরনের গঠনের হয়, যা কয়েক বছর পূর্বেও কোন বিশেষ কার্য ব্যতিরেকে কেবলমাত্র অঙ্গ-সংস্থানীয় পার্থক্য হিসেবেই বিবেচিত হত; কিন্তু এখন জানা গেছে যে পতঙ্গদের দ্বারা প্রজাতিদের নিষেকের জন্য এগুলি অতিশয় উপকারী এবং সম্ভবতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই এগুলি অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতিকাল পর্যন্ত কেউ কল্পনাও করেনি যে দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদসমূহে পুংকেশর ও স্ত্রীকেশরের বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এবং এদের বিন্যাসের কোন উপকার থাকতে পারে, কিন্তু এখন আমরা জানি যে এদেরও ব্যবহার আছে।

উদ্ভিদের কোন কোন সমগ্র গোষ্ঠীতে ডিম্বকগুলি খাড়া অবস্থায় থাকে এবং অন্যগুলিতে এরা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে; অল্প কয়েকটি উদ্ভিদের ডিম্বাশয়ে একটি ডিম্বক পূর্বাবস্থায় এবং দ্বিতীয় একটি ডিম্বক দ্বিতীয়াবস্থায় থাকে। প্রথমেই মনে হয় এই অবস্থানগুলি সম্পূর্ণ অঙ্গ-সংস্থানমূলক অথবা এদের কোন শারীরবৃত্তীয় তাৎপর্য নেই। ডঃ হুঁকার আমার দৃষ্টিআকর্ষণ করেছেন যে একই ডিম্বাশয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে উপরের ডিম্বকগুলি এবং অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে কেবল নিচের ডিম্বকগুলি নিষিক্ত হয়; এবং তিনি ইঙ্গিত দেন যে এটি সম্ভবতঃ ডিম্বাশয়ে পরাগ-নালিকার প্রবেশের দিকের উপর নির্ভর করে। যদি এইরূপ হয়, এমনকি যখন একই ডিম্বাশয়ে একটি খাড়া এবং অন্যটি ঝুলন্ত হয়, তাহলে ডিম্বকগুলির অবস্থান তাদের যে কোন অল্প বিচ্যুতির নির্বাচন থেকে উদ্ভূত হয়, যা নিষেকক্রিয়ায় এবং বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে।

ভিন্ন ভিন্ন বর্গের অন্তর্গত কতিপয় উদ্ভিদ স্বভাবগতভাবে দু-ধরনের ফুল উৎপাদন করে–সাধারণ গঠনেরটি খোলা এবং অন্যটি বন্ধ ও অসম্পূর্ণ। এই দু-ধরনের ফুল কোন সময় গঠনে বিস্ময়করভাবে ভিন্ন হয়, তবুও দেখা যেতে পারে যে একই গাছে এরা পরস্পরের সঙ্গে মিশে আছে। সাধারণ এবং খোলা ফুলগুলি আন্তঃসঙ্করিত হতে পারে এবং এই প্রক্রিয়া থেকে নিশ্চিতরূপে উদ্ভূত উপকার এইরূপে নিরাপদ হয়। তবে বন্ধ ও অসম্পূর্ণ ফুলগুলি স্পষ্টতই আরও বেশি উপকারী হয়, কারণ এরা চমৎকারভাবে অল্প পরাগরেণু ব্যবহার করে সার্থকতার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বীজ উৎপাদন করে। এ ধরনের ফুল প্রায়শই অতিশয় ভিন্ন হয়। অসম্পূর্ণ ফুলের পাপড়িগুলি প্রায়শই অবর্ধিত অবস্থায় থাকে এবং পরাগরেণুগুলি আকারে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ওনোনিস কলুমনা প্রজাতিতে একান্তর পুংকেশরগুলির পাঁচটি অঙ্কুর অবস্থায় থাকে; এবং ভাইওলার কতিপয় প্রজাতিতে তিনটে পুংকেশর এই অবস্থায় থাকে, দুটি সঠিক প্রক্রিয়ার জন্য বজায় থাকে, কিন্তু আকারে অতিশয় ছোট হয়। ভারতীয় একটি ভায়োলেটের (নামটি অজ্ঞাত, কারণ উদ্ভিদটি কখনও নিখুঁত ফুল উৎপাদন করে না) বন্ধ ফুলগুলির ত্রিশটির মধ্যে ছয়টিতে, বৃত্যাংশগুলির স্বাভাবিক পাঁচটির পরিবর্তে তিনটি হ্রাস পেয়েছে। এ.ডি.জুসিউর মতানুসারে ম্যালফিগিয়েসি গোত্রের একটি সেকসনে বন্ধ ফুলগুলি আরও বেশি রূপান্তরিত হয়েছে, কারণ বৃত্যাংশগুলির বিপরীতে অবস্থিত পাঁচটি পুংকেশরের প্রতিটিই পুপ্তপ্রায় অবস্থায় থাকে, একটি পাপড়ির বিপরীতে অবস্থিত ষষ্ঠ পুংকেশরটিই শুধু বর্ধিত হয়; এবং এই পুংকেশরটি এইসব প্রজাতির সাধারণ ফুলগুলিতে অনুপস্থিতি থাকে; গর্ভমুণ্ডটি লুপ্তপ্রায় হয় এবং ডিম্বাশয় তিনটি থেকে দুটিতে হ্রাস পায়। এখন যদিও কতিপয় ফুলকে খুলতে এবং ফুল বন্ধের ফলে অপর্যাপ্ত হওয়া পরাগরেণুর পরিমাণ হাস করতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকতে পারে, তবুও কদাচিৎ উপরের বিশেষ রূপান্তরগুলির যে কোন একটিকে এইভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে, কিন্তু পরাগরেণু হ্রাস পাওয়া ও ফুলগুলির বন্ধ হওয়ার সময় প্রত্যঙ্গদের কার্যসংক্রান্ত। নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে বৃদ্ধির নিয়মগুলি নিশ্চয় অনুসৃত হয়ে থাকবে।

বৃদ্ধির নিয়মগুলির গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণসমূহ অনুধাবন করা এত প্রয়োজনীয় যে আমি অন্য ধরনের কতিপয় ঘটনার কথা বলব, যথা, একই উদ্ভিদের আপেক্ষিক অবস্থানের পার্থক্যের জন্য একই অঙ্গ অথবা প্রত্যঙ্গের পার্থক্যসমূহ। স্ক্যান্ট-এর মতানুযায়ী, স্প্যানিশ চেসনাট উদ্ভিদের এবং কোন কোন ফির বৃক্ষের পাতার কোণগুলির অপসৃতি প্রায় আনুভূমিক ও খাড়া শাখাগুলিতে ভিন্ন হয়। সাধারণতঃ রু্য এবং অন্য কয়েকটি উদ্ভিদের একটি ফুল, সাধারণতঃ মধ্যের অথবা শীর্ষেরটি, প্রথমে খোলে, এবং এর পাঁচটি বৃত্যাংশ ও পাঁচটি পাপড়ি থাকে এবং ডিম্বাশয় পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়; অন্যথায় এই উদ্ভিদদের অন্য সব ফুলে এগুলি চারটি করে থাকে। ব্রিটিশ এ্যাক্সো উদ্ভিদে সর্বোচ্চ ফুলগুলিতে সাধারণতঃ দুটি বৃতিখণ্ড থাকে, কিন্তু অন্য অঙ্গগুলি চারটি করে থাকে; অন্যথায় পার্শ্ববর্তী ফুলগুলির বৃতিখণ্ড তিনটি এবং অন্য অঙ্গগুলি পাঁচটি। অসংখ্য কম্পোজিটি এবং আমবেলিফেরী গোত্রের উদ্ভিদদের (এবং অন্য কতিপয় উদ্ভিদে) পরিধি ফুলে দলমণ্ডলগুলি মধ্যের ফুলের দলমণ্ডলগুলির তুলনায় অধিকতর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সম্ভবতঃ এটি জনন-অঙ্গগুলির প্রায় লুপ্ত হওয়ার সঙ্গে প্রায়শই সম্পর্কযুক্ত। এটি আরও অদ্ভুত বিষয় যে পরিধির ও মধ্যের এ্যাকিন বা বীজগুলি কোন কোন সময় আকারে, রঙে এবং অন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়। কার্থামাস উদ্ভিদে এবং অন্য কোন কোন কম্পোজিটি উদ্ভিদে মধ্যস্থ এ্যাকিনগুলি শুধুমাত্র একটি প্যাপাস দ্বারা সজ্জিত; এবং হিওসেরিস উদ্ভিদে একই মাথা-জাতীয় পুষ্পবিন্যাস তিনটি ভিন্ন আকারের এ্যাকিন উৎপাদন করে। টাউশ-এর মতানুসারে, কোন কোন আমবেলিফেরিতে বহিঃস্থ বীজরা অর্থোসপারমাস এবং মধ্যস্থরা কোলোসপারমাস হয়, এবং এটিকে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে পৃথকীকরণের উপযোগী একটি বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন ডি ক্যান্ডেলে। ফিউমারিয়েসি গোত্রের একটি গণের উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ব্রউন, যার পুষ্পমঞ্জরীর নিচের দিকের ফুলগুলিতে ডিম্বাকার, পশুকাযুক্ত, একবীজী নাটলেট থাকে; এবং পুষ্পমঞ্জরীর উপর দিকের ফুলগুলিতে বর্শাকৃতি, দুটি ভালভযুক্ত এবং দুইবীজী সিলিকিউ থাকে। এইসব ক্ষেত্রে পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে সচেষ্ট পূর্ণ বিকশিত প্রান্তপুষ্পিকা ছাড়া, যতদূর আমরা বিচার-বিবেচনা করতে পারি, প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে না, অথবা সম্পূর্ণ গৌণ কোন ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। এইসব রূপান্তর প্রত্যঙ্গগুলির আপেক্ষিক অবস্থান এবং আন্তঃপ্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে; এবং কদাচিৎ সন্দেহ করা যেতে পারে যে যদি একই উদ্ভিদের সমস্ত ফুল ও পাতা একই অন্তঃ এবং বহিঃ-পরিবেশের প্রভাবাধীন হয়, যেমন ফুল ও পাতাগুলি কোন কোন অবস্থানে হয়, তাহলে সকলে একইভাবে রূপান্তরিত হয়ে থাকবে।

অন্যান্য অসংখ্য ক্ষেত্রে আমরা গঠনের রূপান্তরগুলি সম্বন্ধে জেনেছি। এগুলিকে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা উন্নত গুরুত্বসম্পন্ন বলে বিবেচনা করেছেন এবং যা একই উদ্ভিদের শুধু কতিপয় ফুলকে প্রভাবিত করে অথবা যা একই পরিবেশে অতি নিকটে জন্মানো ভিন্ন উদ্ভিদে ঘটে। যেহেতু উদ্ভিদের পরিবৃত্তিগুলির ক্ষেত্রে এগুলির সম্ভবতঃ বিশেষ কোন ব্যবহার নেই, তাই এরা প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে না। এর কারণ সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ, শেষের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে আমরা আপেক্ষিক অবস্থানের মতো কোন নিকটতম মাধ্যমের ওপর এটি আরোপ করতে পারি না। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। এটি নিতান্তই সাধারণ ঘটনা যে একই গাছের ফুলগুলি অভিন্নভাবে ট্রেটামেরাস, পোন্টামেরাস ইত্যাদি হয়, তাই এ ব্যাপারে আমি কোন উদাহরণ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি না; কিন্তু যেহেতু প্রত্যঙ্গগুলি যখন কতিপয় হয়, তখন সংখ্যাসূচক পরিবর্তনগুলি তুলনামূলকভাবে বিরল হয়, সেহেতু আমি উল্লেখ করতে পারি যে ডি ক্যান্ডেলের মতানুসারে, পাপাভার ব্র্যাক্টিয়েটাম-এর ফুলগুলিতে হয়। চারটি পাপড়ির সঙ্গে দুটি বৃত্যাংশ থাকে (যা পোস্তগাছের পক্ষে সাধারণ) অথবা তিনটি বৃত্যংশ ও চারটি পাপড়ি থাকে। অধিকাংশ গোষ্ঠীর ফুলের কুঁড়ির পাপড়িদের ভাঁজ হওয়ার উপায়টি অতিশয় স্থায়ী অঙ্গসংস্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়; কিন্তু অধ্যাপক আসা গ্রে বলেন যে মিমুলাস গণের কয়েকটি প্রজাতির ক্ষেত্রে পুষ্পপত্রবিন্যাসটি এ্যান্টিরিনিডির মতো রিন্যানথিডিতেও প্রায়ই একইরূপ হয়। পূর্ববর্তী গোষ্ঠীটিতে গণটি অন্তর্ভুক্ত। অগাস্টিন সেন্ট হিলারে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলির কথা বলেছেন: জ্যানথোজাইলন গণটি একটি ডিম্বাশয় সম্বলিত রুটেসি গোত্রের একটি বিভাগের অন্তর্গত হয়, কিন্তু কতিপয় প্রজাতিতে হয় একটি অথবা দুটি ডিম্বাশয় সম্বলিত ফুলগুলি একই গাছে এবং এমনকি একই প্যানিকলে দেখা যেতে পারে। হেলিয়ানথেমাম গণে বীজকোষটি এক অথবা তিন কোষ্ঠীয় বলে বর্ণিত হয়েছে; এবং হেলিয়ানথেমাম মিউটাবিলিতে, “ফলত্বক ও ডিম্বকবাহী গর্ভপত্রের মাঝখানে মোটামুটি বড় একটি পর্দা বিস্তৃত থাকে”–এইরূপ বর্ণিত হয়েছে। স্যাপোনারিয়া অফিসিন্যালিস-এর ফুলগুলিতে প্রান্তিক এবং কেন্দ্রিক উভয় অমরাবিন্যাস ডঃ মাস্টার্স লক্ষ্য করেছেন। সর্বশেষে, সেন্ট হিলারে গমফিয়া ও অধ্যাপক ব্রউন ও লিয়াফরমিস-এর বিস্তারের দক্ষিণ প্রান্তের দিকে দুটি আকার লক্ষ্য করে এদের দুটি ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে সন্দেহ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে এদের একই ঝোপে জন্মাতে দেখেছিলেন; অতঃপর তিনি তার মতামত ব্যক্ত করেন, “তাই কখনো খাড়া অক্ষ, কখনো স্ত্রী-স্তবকের অংশ (gynobase) দ্বারা সংযুক্ত, একইরকম এক-একটিতে কিছু প্রকোষ্ঠ ও গর্ভদণ্ড থাকে।”

এইভাবে আমরা লক্ষ্য করি যে উদ্ভিদদের অসংখ্য অঙ্গসংস্থানীয় পরিবর্তনকে প্রত্যঙ্গগুলির পারস্পরিক ক্রিয়াবিক্রিয়া এবং বৃদ্ধির নিয়মের ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের ওপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু প্রগতিমূলক বিকাশ অথবা উৎকর্ষতার দিকে একটি সহজাত প্রবণতা সংক্রান্ত নাজেলির তত্ত্বানুসারে এটি একান্তই স্পষ্ট যে এইসব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদরা বিকাশের উচ্চস্তরের দিকে উন্নতি করেছে। বলা যেতে পারে। বিপরীতক্রমে, একই উদ্ভিদের উল্লিখিত প্রত্যঙ্গগুলির ব্যাপকভাবে ভিন্ন অথবা পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনাটি থেকে আমার সিদ্ধান্ত করা উচিত যে এরূপ রূপান্তর আমাদের শ্রেণীবিভাগে যতই প্রয়োজনীয় বলে মনে হোক না কেন, উদ্ভিদের নিজের পক্ষে এগুলি নিতান্তই অল্প প্রয়োজনীয়। একটি অপ্রয়োজনীয় অংশের প্রাপ্তি প্রাকৃতিক মানদণ্ডে একটি জীবকে উচ্চপর্যায়ে উন্নত করে বলে কদাচিৎ মনে করা যেতে পারে; এবং ওপরে বর্ণিত অসম্পূর্ণ, বন্ধ ফুলগুলির ক্ষেত্রে যদি কোন নূতন নীতি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এটি নিশ্চয় প্রগতিমূলক হওয়ার তুলনায় বিপ্রতীপগতিমূলক। হবে; এবং এভাবে এটি অনেক পরজীবী এবং নিচুস্তরের প্রাণীদের ক্ষেত্রেও ঘটবে। ওপরের বিশেষ রূপান্তরগুলির রোমাঞ্চকর কারণটি সম্বন্ধে আমরা অজ্ঞ; কিন্তু অজ্ঞাত কারণটি যদি দীর্ঘসময় ধরে প্রায় সমরূপে কাজ করে, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে ফলাফলটি প্রায় সমরূপ হবে; এক্ষেত্রে একই প্রজাতির সমস্ত এককরা একইভাবে রূপান্তরিত হবে।

প্রজাতির উপকারের জন্য উপরোক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি অপ্রয়োজনীয় এই তথ্যানুসারে, এদের মধ্যে সংঘটিত যে কোন অল্প পরিবর্তন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সঞ্চিত হয়ে ও বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে কার্যকরী নির্বাচনের মাধ্যমে বিকশিত একটি দেহগঠন যখন প্রজাতির কোন উপকারে আসে না, তখন সাধারণতঃ সেটি পরিবর্তনশীল হয়, যেমন আমরা অন্ধুরাবস্থায় অঙ্গগুলিকে দেখি–কারণ এটি নির্বাচনের একই ক্ষমতার দ্বারা আর নিয়ন্ত্রিত হবে না। কিন্তু জীবের এবং পরিবেশের প্রকৃতি অনুসারে প্রজাতির পক্ষে অনুপকারী রূপান্তরগুলি যখন ঘটেছে, তখন এরা প্রায়শই একই অবস্থায় অসংখ্য, অথচ রূপান্তরিত, বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়ে থাকতে পারে, এবং আপাতভাবে প্রায়শই প্রেরিত হয়েছে। এদের শরীর লোম, পালক অথবা আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত হোক বা না-ই হোক, বিরাট সংখ্যক স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি সরীসৃপদের পক্ষে এটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না, তথাপি সমস্ত স্তন্যপায়ীদের মধ্যে লোম, সমস্ত পাখিদের মধ্যে পালক এবং সমস্ত প্রকৃত সরীসৃপদের মধ্যে আঁশ বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছে। বিভিন্ন সম্বন্ধযুক্ত আকারদের ক্ষেত্রে সাধারণ যে কোন দেহকাঠামো শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে অতিশয় মূল্যবান বলে আমাদের দ্বারা বিবেচিত হয়, এবং ফলস্বরূপ প্রায়শই ধরে নেওয়া হয় যে এটি প্রজাতিদের পক্ষে অতিশয় প্রয়োজনীয়। যেমন আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে, গুরুত্বপূর্ণ বলে আমাদের মনে হয় এরূপ অঙ্গসংস্থানীয় পার্থক্যসমূহ, যথা পাতাদের বিন্যাস, ফুল অথবা ডিম্বাশয়ের বিভাগসমূহ, ডিম্বকদের অবস্থান ইত্যাদি প্রথমে অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাসবৃদ্ধিমূলক পরিবর্তন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, যা একদিন না একদিন জীবের এবং পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রকৃতি অনুযায়ী এবং ভিন্ন এককদের মধ্যে আন্তঃসংকরণের মাধ্যমে স্থায়ী হয়েছিল, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নয়; কারণ এইসব অঙ্গসংস্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলি প্রজাতির সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে না বলে এগুলির যে কোন অল্প বিচ্যুতি এই পরবর্তী মধ্যমটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত অথবা সঞ্চিত হয়ে থাকতে পারে না। এর থেকে আমরা এক অদ্ভুত পরিণামে পৌঁছাই যে প্রজাতির পক্ষে অতি অল্প গুরুত্বসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি শ্রেণীবিভাজনকারীদের নিকট অত্যাধিক প্রয়োজনীয় হয়; কিন্তু শ্রেণীবিভাগের জৈবিক নীতিটি আলোচনার সময় আমরা এগুলির প্রয়োজনীয় বিষয়টি দেখব। প্রথমে যতটা মনে। হয়, এটি ঠিক ততটা প্রহেলিকাময় নয়।

প্রগতিমূলক বিকাশের দিকে জীবদের একটি সহজাত প্রবণতার কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ যদিও আমাদের হাতে নেই, তথাপি এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের অবিরাম ক্রিয়াবিক্রিয়ার মাধ্যমে অবশ্যই ঘটে, যেটি আমি চতুর্থ অধ্যায়ে দেখাতে চেষ্টা করেছি। জীব সংগঠনের একটি মান সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত প্রদত্ত সর্বোত্তম সংজ্ঞাটি হচ্ছে–কোন্ মাত্রায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বিশিষ্ট অথবা ভিন্ন হয়েছে; এবং এই লক্ষ্যের দিকে প্রাকৃতিক নির্বাচন চেষ্টা করে, যাতে করে প্রত্যঙ্গগুলি দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের কাজ করতে সমর্থ হয়।

বিশিষ্ট প্রাণীতত্ত্ববিদ মিঃ সেন্ট জর্জ মিভার্ট, মিঃ ওয়ালেস এবং আমার নিজের প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের বিরুদ্ধে আমার নিজের এবং অন্যদের দ্বারা উপস্থাপিত সমস্ত আপত্তিগুলি সম্প্রতি সংগ্রহ করেছেন এবং প্রশংসনীয় দক্ষতা ও মনোবলের সাহায্যে সেগুলির ব্যাখ্যা করেছেন। এভাবে যথাবিহিত বিন্যাস দ্বারা এগুলি একটি দূরূহ ব্যুহ সাজায়; এবং নিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য ও বিচার বিশ্লেষণ উপস্থাপিত করা মিঃ মিভার্টের পরিকল্পনায় নেই বলে যুক্তি ও স্মরণশক্তির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না পাঠকের, যিনি উভয় দিকের সাক্ষ্যপ্রমাণাদি বিচার করতে ইচ্ছুক হতে পারেন। বিশেষ বিষয়গুলি আলোচনার সময় মিঃ মিভার্ট প্রত্যঙ্গদের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যবহার ও অব্যবহারের প্রভাবগুলিকে উপেক্ষা করেছেন, যেটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি উল্লেখ করেছি এবং অন্য যে কোন লেখকের তুলনায় আমার ‘গৃহপালনাধীনে পরিবর্তন’ প্রবন্ধে বিস্তৃতভাবে তা আলোচনা করেছি। তিনি এভাবে প্রায়শই ধরে নেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতিরেকে পরিবর্তনে আমি কিছুই আরোপ করিনি, অন্যথায় আমার জানা অন্য কোন গবেষণামূলক কাজের তুলনায় এইমাত্র উল্লিখিত প্রবন্ধে আমি অসংখ্য সুপ্রতিষ্ঠিত ঘটনাসমূহ সংগ্রহ করেছি। আমার বিচার-বিশ্লেষণ বিশ্বাসযোগ্য না হতে পারে, কিন্তু মিভার্টের বইটি যত্ন সহকারে পাঠ করে এবং একই বিষয়ে আমি যা বলেছি প্রতিটি অনুচ্ছেদে তার তুলনা করে, এখানে উপনীত সিদ্ধান্তসমূহের সাধারণ সত্যতা সম্পর্কে আমি পূর্বে কখনও এত বেশি দৃঢ় প্রত্যয় অনুভব করি নি, কিন্তু বিষয়টি এত জটিল যে কিছু ভুল হতে পারে।

মিঃ মিভার্টের সমস্ত আপত্তিগুলি বর্তমান গ্রন্থে আলোচিত হবে অথবা হয়েছে। অনেক পাঠকের মনে দাগ কেটেছে বলে মনে হওয়া নূতন বিষয় হচ্ছে, “প্রাকৃতিক নির্বাচন উপকারী দেহগঠনের জায়মান ধাপগুলির উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে অসমর্থ।” নির্দিষ্ট ক্রিয়ার কোন পরিবর্তনের সঙ্গে প্রায়শই সংশ্লিষ্ট থাকা বৈশিষ্ট্যগুলির ক্রমবিন্যাসের সঙ্গে বিষয়টি নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত–উদাহরণস্বরূপ, একটি পটকার ফুসফুসে রূপান্তর বিষয়টি দুটি শিরোনামে গত অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও মিঃ মিভার্ট কর্তৃক উত্থাপিত কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করব আমি এবং সেইগুলি বেছে নেব যেগুলি সবচেয়ে ব্যাখ্যামূলক। স্থানাভাবে অন্যগুলি আলোচনা করা যাবে না।’

অত্যুচ্চ দৈহিক উচ্চতা, অতিশয় লম্বা গলা, সামনের পা, মাথা এবং জিভ সমেত জিরাফের দৈহিক কাঠামো উঁচু গাছের শাখাপল্লব খাওয়ার জন্য সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে। একই দেশে বসবাসকারী পায়ে ক্ষুর সমেত অথবা অন্য আনগুলাটা (ক্ষুরযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী) প্রাণীদের তুলনায় সহজেই এরা এভাবে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে, এবং অভাবের সময় এটি এদের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। দক্ষিণ আমেরিকার নিয়াটা গবাদি পশু আমাদের দেখায় দেহগঠনের একটি অল্প পার্থক্য কেমন করে এই সময়ের মধ্যে একটি প্রাণীর জীবনরক্ষার জন্য একটি বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। এই গবাদি পশুরা ঘাস ও বৃক্ষশাখাপল্লবাদি ছিঁড়ে খেতে পারে, কিন্তু নিচের চোয়াল বেরিয়ে থাকার জন্য প্রায়শই সংঘটিত খাবার সময় এরা গাছের শাখাপল্লব, জলীয় ঘাস ইত্যাদি টেনে ছিঁড়ে খেতে পারে না, এইসব খাদ্যে সাধারণ গবাদি পশু ও ঘোড়ারাই প্রাধান্য বিস্তার করে; এবং এদের মালিকরা এদের খাবার না-যোগালে নিয়াটা গবাদি পশুরা ধ্বংস হয়। মিঃ মিভার্টের আপত্তিগুলি আলোচনার পূর্বে, কেমন করে প্রাকৃতিক নির্বাচন সমস্ত সাধারণ ক্ষেত্রে কাজ করে তা পুনরায় ব্যাখ্যা করা সুবিধাজনক হতে পারে। দেহগঠনের বিশেষ বিষয়ে মনোনিবেশ না করে মানুষ সবচেয়ে দ্রুতগামী এককদের সরলভাবে সংরক্ষণ ও প্রজনন করে তার কয়েকটি রূপান্তর ঘটিয়েছে-যেমন ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া। এবং গ্ৰেহাউণ্ড কুকুর, অথবা বিজয়ী পাখিদের প্রজননের মাধ্যমে সৃষ্ট লড়াইয়ের মোরগ। এভাবে প্রকৃতিতেও হয়, যেমন সদ্যজাত জিরাফের এককরা, যারা সবচেয়ে উঁচু গাছের শাখাপল্লব খেত এবং অভাবের সময় অন্যদের তুলনায় এক অথবা দুই ইঞ্চি বেশি উপরে উঠতে সমর্থ হত, তারা প্রায়শই সংরক্ষিত হয়ে থাকবে; কারণ এরা সারা দেশ জুড়ে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে থাকবে। একই প্রজাতির এককরা তাদের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আপেক্ষিক দৈর্ঘ্যে প্রায়শই ভিন্ন হয়, এটি প্রাকৃতিক ইতিহাসের অনেক গ্রন্থে দেখা যাবে, যেখানে যত্নসহকারে পরিমাপ দেওয়া আছে। বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের নিয়মগুলির জন্য এইসব অল্প আনুপাতিক পার্থক্যসমূহ সমস্ত প্রজাতির ক্ষেত্রে অল্পতম, অনুপকারী এবং অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু সম্ভবপর জীবনস্বভাবের কথা বিবেচনা করলে মনে হয় সদ্যজাত জিরাফের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম হবে, কারণ যাদের শরীরের এক বা কয়েকটি অঙ্গ সাধারণের তুলনায় কিছুটা লম্বাটে হয়, সেইসব এককরাই সাধারণতঃ বেঁচে থাকবে। এরা আন্তঃসঙ্করিত হতে থাকবে এবং বংশধর উৎপাদন করতে থাকবে। এরা একই শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি বংশগতভাবে পেতে থাকবে অথবা একইভাবে পুনরায় পরিবর্তিত হতে চেষ্টা করে চলবে; অন্যথায় একই বিষয়ে কম আনুকূল্যপ্রাপ্ত এককদের ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে।

আমরা এখানে দেখি যে প্রতি জোড়াকে পৃথক করার প্রয়োজন নেই, যেমন একটি জাতকে পদ্ধতিগতভাবে উন্নতি ঘটানোর জন্য মানুষ করে থাকে : প্রাকৃতিক নির্বাচন এদের স্বাধীনভাবে আন্তঃসঙ্করণের সুযোগ দিয়ে সমস্ত উৎকৃষ্ট এককদের সংরক্ষণ করবে ও এভাবে পৃথক করবে, এবং সমস্ত নিকৃষ্ট এককদের ধ্বংস করবে। দীর্ঘদিন ধরে কার্যকরী এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে, যাকে আমি মানুষের দ্বারা অচেতন নির্বাচন বলেছি, প্রত্যঙ্গগুলির বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যবহারের বংশগত প্রভাবের সংযুক্তির পর আমি স্থিরনিশ্চিত যে একটি সাধারণ ক্ষুরবিশিষ্ট চতুষ্পদ প্রাণীই একটি জিরাফে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিঃ মিভার্ট দুটি আপত্তি উপস্থিত করেছেন। একটি হচ্ছে যে দেহের বৃদ্ধি জনিত আকারটির জন্য নিশ্চয় বেশি খাদ্যের যোগান প্রয়োজন হবে, এবং তিনি একে ‘অতি সমস্যামূলক, কেননা এরপর উদ্ভূত অসুবিধাগুলি অভাবের সময় সুবিধাগুলির সমান শক্তির তুলনায় আরও বেশি হবে না’ হিসাবে বিবেচনা করেছেন, কিন্তু যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকায় জিরাফের সংখ্যা প্রকৃতই অত্যধিক, এবং যেহেতু পৃথিবীর বৃহত্তম এ্যান্টেলপদের কয়েকটি একটি মহিষের তুলনায় লম্বা ও সেখানে সংখ্যায় অধিক, শরীরের আয়তন বিবেচনা করে কেন আমরা সন্দেহ পোষণ করব যে মধ্যবর্তী ক্রমিক ধাপগুলি পূর্বে থাকতে পারত, এখন যার খুব অভাব। বর্ধনশীল শরীরের আকারের প্রতি স্তরে, খাদ্য যোগানের নিকট পৌঁছাতে সমর্থ হওয়া, যে খাদ্যগুলি দেশটির অন্য ক্ষুরওয়ালা চতুষ্পদ প্রাণীদের নাগালের বাইরে, সদ্যজাত জিরাফের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় সুবিধাজনক হয়ে থাকবে। অথবা বিষয়টি আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয় যে শরীরের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত আয়তন সিংহ ছাড়া অন্যান্য শিকারি পশুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে, এবং মিঃ চাউন্সে রাইট-এর মতানুসারে, এদের লম্বা গলা সিংহের বিরুদ্ধে ওয়াচ টাওয়ারের মতো কাজ করবে। যেমন স্যার এস. বেকার বলেন যে এই কারণটির জন্য জিরাফের তুলনায় অন্য কোন প্রাণী অলক্ষ্যে শিকারের নিকটবর্তী হতে পারে না। এই প্রাণীটি স্ট্যাম্পের মতো শিং সমেত মাথাটা ভীষণভাবে ঘুরিয়ে আত্মরক্ষা করে এবং আক্রমণের জন্য নিজের লম্বা গলাটি ব্যবহার করে। প্রত্যেক প্রজাতির সংরক্ষণ যে কোন একটি সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের দ্বারা কদাচিৎ নির্ধারিত হতে পারে, শুধুমাত্র ছোট এবং বড় সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের সংযুক্তি দ্বারাই এটি ঘটতে পারে।

মিঃ মিভার্ট এরপর প্রশ্ন করেছেন (এটি তাঁর দ্বিতীয় আপত্তি)–যদি প্রাকৃতিক নির্বাচন এত শক্তিশালী এবং যদি বৃক্ষাদির শাখাপল্লব ভক্ষণ এত বড় একটি সুবিধা হয়, তাহলে কেন জিরাফ ছাড়া অন্য কোন ক্ষুরওয়ালা চতুষ্পদ প্রাণী লম্বা গলা ও সুউচ্চ আকার লাভ করেনি, কেন উট, শুয়ানাকো এবং ম্যাক্রাউচেনিয়া অথবা গোষ্ঠীটির অন্য কোন সদস্যের একটি লম্বা শুড় নেই? যেখানে পূর্বে জিরাফের অসংখ্য দল বসবাস করত, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে উত্তর দেওয়া কষ্টকর নয় এবং চমৎকার উদাহরণ সহযোগে এই উত্তর দেওয়া যেতে পারে। ইংল্যান্ডের প্রত্যেক তৃণভূমিতে, যেখানে বৃক্ষগুলি জন্মায়, আমরা দেখি, নিচের শাখাগুলিকে গবাদি পশু ও ঘোড়ারা একটি উচ্চতা পর্যন্ত খেয়েছে, এবং উদাহরণস্বরূপ, ভেড়ার দলকে যদি এখানে রাখা হয়, এদের গলা অল্প লম্বা হলে কি সুবিধা হবে? প্রত্যেক জেলায় যে কোন এক প্রকারের প্রাণী। অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি উচ্চতা পর্যন্ত গাছের পাতা ইত্যাদি খেতে নিশ্চয়ই সমর্থ হবে; এবং এটি প্রায় সমভাবে নিশ্চিত যে এই একটিমাত্র প্রকারের গলাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এবং বেশি ব্যবহারের ফলেই দীর্ঘায়িত হয়ে থাকতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাবলা জাতীয় এবং অন্য গাছের উচ্চ শাখা-পাতা ইত্যাদি খাওয়ার প্রতিযোগিতা জিরাফের সঙ্গে জিরাফেরই হবে, অন্য কোন ক্ষুরওয়ালা প্রাণীর সঙ্গে নয়।

কেন পৃথিবীর অন্যান্য অংশে একই বর্গের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রাণীরা শুড় অথবা লম্বা গলা অর্জন করেনি, এই প্রশ্নটির উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া যেতে পারে না; কিন্তু এরূপ একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর আশা করা তেমনই অযৌক্তিক, যেমন অযৌক্তিক কেন মানুষের ইতিহাসের কোন ঘটনা একটি দেশে ঘটে না অথচ অন্যত্র ঘটে–এমন প্রশ্ন করা। বিভিন্ন পরিবেশ সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ, যা প্রত্যেক প্রজাতির সংখ্যা এবং বিস্তার নির্ধারণ করে, এবং আমরা অনুমান করতে পারি না দেহের কোন্ পরিবর্তনগুলি কোন নূতন দেশে তার বৃদ্ধির অনুকূল হবে। তবে আমরা সাধারণভাবে দেখতে পারি যে লম্বা গলা ও শুড়ের বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিশেষ উচ্চতার শাখাপল্লবাদিতে পৌঁছানোর জন্য (গাছে না উঠে, যার পক্ষে ক্ষুরওয়ালা প্রাণীরা অনুপযুক্ত) শরীরের আয়তন বৃদ্ধির দরকার; এবং আমরা জানি যে কোন কোন অঞ্চলে অল্প কিছু বৃহৎ চতুষ্পদ প্রাণী থাকে, যেমন দক্ষিণ আমেরিকায়, অথচ দক্ষিণ আফ্রিকায় এরা সংখ্যায় সুপ্রচুর। কেন এটি এরূপ হবে আমরা জানি না, অথবা বর্তমানের তুলনায় কেন উত্তর-টার্শিয়ারী যুগ এদের অবস্থানের পক্ষে অনুকূল হবে না। কারণ যাই হোক না কেন, আমরা দেখতে পারি যে জিরাফের মতো এত বিরাট চতুস্পদ প্রাণীর বিকাশের জন্য কোন কোন অঞ্চল ও সময় অন্য অঞ্চল ও সময়ের তুলনায় অধিকতর অনুকূল হয়ে থাকবে।

একটি প্রাণীর কোন কোন অঙ্গের বিশেষভাবে এবং বিরাটভাবে বিকাশের জন্য এটি অতিশয় অপরিহার্য যে অন্য কতিপয় প্রত্যঙ্গ রূপান্তরিত এবং সহ-অভিযোজিত হবে। যদি শরীরের প্রত্যেক প্রত্যঙ্গ অল্পভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে তা থেকে এমনটা হয় না যে প্রয়োজনীয় প্রত্যঙ্গগুলি সর্বদা সঠিক দিকে এবং সঠিক মাত্রায় পরিবর্তিত হবে। আমাদের বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণীদের ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে আমরা জানি যে প্রত্যঙ্গগুলি একটি ভিন্ন মাত্রায় ও উপায়ে পরিবর্তিত হয় এবং কোন কোন প্রজাতি অন্যদের তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল। এমনকি উপযুক্ত পরিবর্তনগুলি উদ্ভূত হলেও এটি এরূপ হয় না যে প্রাকৃতিক নির্বাচন এদের ওপর কাজ করতে সমর্থ হবে এবং একটি অঙ্গ সৃষ্টি করবে যা প্রজাতির পক্ষে উপকারী হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোন দেশে অবস্থানকারী এককদের সংখ্যা যদি শিকারি পশুদের দ্বারা, আন্তঃ অথবা অন্তঃ-পরজীবী ইত্যাদিদের দ্বারা মূলত ধ্বংসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, যা হয় বলেই মনে হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন খাদ্য সংগ্রহের জন্য যে কোন একটি বিশেষ অঙ্গকে রূপান্তরিত করার জন্য অল্পভাবে কাজ করতে সমর্থ হবে, অথবা বৃহত্তাবে হাস করবে। শেষতঃ, প্রাকৃতিক নির্বাচন একটি মন্থর প্রক্রিয়া, এবং স্পষ্ট কোন প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য একই অনুকূল পরিবেশগুলি নিশ্চয় দীর্ঘস্থায়ী হবে। এরূপ সাধারণ ও অস্পষ্ট যুক্তির আশ্রয় না নিলে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি না কেন পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে ক্ষুরওয়ালা প্রাণীরা উচ্চ গাছের পল্লবাদি ভক্ষণের জন্য দীর্ঘায়িত গলা অথবা অন্য কোন উপায় অর্জন করেনি।

উপরোক্ত ধরনের আপত্তি অনেক লেখকই উপস্থিত করেছেন। প্রত্যেকটি ঘটনায়, এখনই উল্লিখিত সাধারণ কারণটি ছাড়া আরও বিভিন্ন কারণ সম্ভবতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে দেহগঠনসমূহ অর্জনে কিছু কিছু ভূমিকা পালন করেছে, যেটি কোন কোন প্রজাতির ক্ষেত্রে উপকারী হবে বলে মনে করা হয়। জনৈক লেখক প্রশ্ন করেছেন–উটপাখি কেন ওড়ার ক্ষমতা অর্জন করেনি? একটু ভাবলেই বোঝা যাবে যে বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রকাণ্ড শরীর চালনা করার জন্য এই পাখিটিকে ভয়ঙ্কর শক্তি প্রদান। করতে কী বিপুল পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হবে। মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে বাদুড় এবং সীলমাছরা বসবাস করে, কিন্তু কোন স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী বসবাস করে না; তথাপি যেহেতু এইসব বাদুড়দের কয়েকটি অদ্ভুত ধরনের প্রজাতি বর্তমান বাসস্থানে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে থাকবে, সেজন্য স্যার সি, লিয়েল প্রশ্ন করেন এবং উত্তর হিসেবে কয়েকটি কারণও নির্ধারণ করেন, কোন সীল ও বাদুড়রা ঐ সব দ্বীপে বসবাস করার উপযুক্ত আকারের জন্ম দেয় না। কিন্তু প্রথমে সীলদের অবশ্যই উপযুক্ত আকারের স্থলচর মাংসাশী প্রাণীতে এবং বাদুড়দের স্থলচর পতঙ্গভূক প্রাণীতে রূপান্তরিত হতে হবে; পূর্বেরটির জন্য কোন শিকার থাকবে না; বাদুড়দের জন্য ভূমিজ পতঙ্গগুলি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে, কিন্তু এগুলিকে সরীসৃপ ও পাখিরা ইতিমধ্যেই শিকার হিসেবে খেয়ে থাকবে, যারা অধিকাংশ মহাসামুদ্রিক দ্বীপগুলিতে বসবাস করতে শুরু করেছে। এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। একটি পরিবর্তনশীল প্রজাতির পক্ষে উপকারী প্রত্যেক ধাপের সঙ্গে যুক্ত দেহাঙ্গের ক্রমবিন্যাসগুলি কেবলমাত্র কোন কোন বিচিত্র পরিবেশেই আনুকূল্যপ্রাপ্ত হবে। অগভীর জলে, তারপর ছোট নদী অথবা হ্রদগুলিতে মাঝেমাঝে খাদ্য শিকারের দ্বারা একটি যথাযথ স্থলচর প্রাণী খোলা সমুদ্রে ঘোরাফেরা করার জন্য সম্পূর্ণরূপে একটি স্থলচর প্রাণী হিসেবে অবশেষে রূপান্তরিত হয়ে থাকবে। কিন্তু সীলমাছেরা একটি স্থলচর আকারে ক্রমিক পুনঃরূপান্তরের জন্য মহাসামুদ্রিক দ্বীপগুলিতে অনুকূল পরিবেশ পাবে না। যেমন আগে দেখানো হয়েছে যে বাদুড়রা সুপরিচিত উড়ন্ত কাঠবিড়ালির মতো বাতাসের মধ্য দিয়ে গাছ থেকে গাছে লাফানোর জন্য প্রথমে ডানাগুলি শত্রুদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য অথবা পড়ে যাওয়া এড়ানোর জন্য অর্জন করেছে; কিন্তু যখন প্রকৃত উড্ডয়ন ক্ষমতা একবার অর্জিত হয়, তখন কখনও অন্ততঃ উপরোক্ত উদ্দেশ্যগুলির জন্য বাতাসের মধ্য দিয়ে ভেসে যাওয়ার কম দক্ষ ক্ষমতায় পুনঃরূপান্তরিত হবে না। বাস্তবিকপক্ষে, অনেক পাখির মতো বাদুড়দের। ডানাগুলিও অব্যবহারের ফলে আকারে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে অথবা সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়েছে; কিন্তু এক্ষেত্রে এটি প্রয়োজনীয় হবে যে এরা পাখি অথবা অন্য স্থলচর প্রাণীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য কেবলমাত্র পিছনের পাগুলির সাহায্যে ভূমির উপর দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার ক্ষমতা প্রথমে অর্জন করে থাকবে; এবং এভাবে একটি পরিবর্তনের জন্য বাদুড়রা সম্ভবত অনুপযুক্ত। এইসব অনুমানভিত্তিক মন্তব্য করা হয়েছে শুধুমাত্র এটা দেখানোর জন্য যে দেহ অঙ্গের যে কোন উত্তরণ, যার প্রতিটি ধাপ হিতকর, হচ্ছে। অতিশয় জটিল একটি ব্যপার; এবং কোন বিশেষ ক্ষেত্রে উত্তরণ না হওয়া কোন অদ্ভুত ব্যাপার নয়।

শেষতঃ, একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন করেছেন, অন্যদের তুলনায় কিছু প্রাণীর মানসিক ক্ষমতা কেন বেশি বিকশিত হয়েছে, যখন এইসব বিকাশ সকলের পক্ষেই সুবিধাজনক হতে পারত? এপ-বানররা কেন মানুষের মতো মানসিক ক্ষমতা অর্জন করেনি? এগুলির বিভিন্ন কারণ দেখানো যেতে পারত, কিন্তু যেহেতু এগুলি কল্পনামূলক এবং এদের আপেক্ষিক সম্ভাব্যতা পরিমাপ করা যেতে পারে না, সেহেতু এর উত্তর দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। পরের প্রশ্নটির কোন সঠিক উত্তরে আশা করা উচিত হবে না, কেননা কেউ এইসরলতম সমস্যাটির সমাধান করতে পারবে না যে বর্বরদের দুটি জাতের মধ্যে একটি কেন অন্যটির তুলনায় সভ্যতার উচ্চ শিখরে উঠেছে, এবং আপাতভাবে মনে হয়। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মানসিক ক্ষমতার জন্যই এরূপ হয়েছে।

মিঃ মিভার্টের অন্য সব আপত্তির বিষয়ে আমরা ফিরে আসব। আত্মরক্ষার জন্য পতঙ্গরা প্রায়শই বিভিন্ন বস্তুর সদৃশ বা অনুরূপ হয়, যেমন সবুজ অথবা পচা পাতা, শুকনো শাখাপল্লব, লাইকেন বিন্দু, ফুল, কাটা, পাখির বিষ্ঠা এবং জীবন্ত পতঙ্গ; কিন্তু শেষের বিষয়টিতে আমি পরে আসব। সদৃশতা বা অনুরূপতা প্রায়শই বিস্ময়করভাবে ঘনিষ্ঠ হয় এবং শুধুমাত্র রঙের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, বরং আকারে এবং কোন কিছুকে ধরে থাকার পদ্ধতিতেও প্রসারিত হয়। শুয়াপোকারা এই প্রকার সদৃশতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ উপস্থিত করে–এরা যে গাছে যায় সেই গাছের মৃত ডালপালার মতো। গতিহীনভাবে অবস্থান করে। পাখিদের বিষ্ঠার মতো এইসব বস্তুর অনুকরণের ঘটনাগুলি বিরল ও ব্যতিক্রমী হয়। এই বিষয়ে মিঃ মিভার্ট মন্তব্য করেন, “ডারউইনের তত্ত্বানুযায়ী যেহেতু অনির্দিষ্ট পরিবর্তনের একটি অবিরাম প্রবণতা রয়েছে এবং যেহেতু ক্ষুদ্র জায়মান পরিবর্তনগুলি সমস্ত দিকেই হবে, সেহেতু এরা নিশ্চয় পরস্পরকে প্রশমিত করতে চেষ্টা করবে এবং প্রথমে এরূপ অস্থায়ী রূপান্তরগুলি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে যে, যদি না এটি দেখতে অসম্ভব কষ্টকর হয় যে কেমন করে এইরূপ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সূচনাগুলির অনির্দিষ্ট স্পন্দনশীলতা একটি পাতা, বাঁশ অথবা অন্য বস্তুর মতো যথেষ্ট অনুকরণযোগ্য সাদৃশ্য সৃষ্টি করতে পারে, যাতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হয় এবং স্থায়িত্ব দান করতে পারে।”

তাহলেও আগের সব ঘটনায় পতঙ্গরা তাদের প্রাথমিক অবস্থায় নিঃসন্দেহেই প্রায়শই ভ্রমণ করা অঞ্চলগুলিতে সাধারণভাবে দৃষ্ট কোন বস্তুর সঙ্গে কিছুটা প্রাথমিক ও আকস্মিক সাদৃশ্য উপস্থিত করেছিল। এটি কোন মতেই অসম্ভবপর নয়, কারণ চারিদিকে অসংখ্য রকমের বস্তু রয়েছে এবং পতঙ্গদেরও রং ও আকার অতি বিচিত্র। যেহেতু প্রথম আরম্ভের জন্য কোন প্রাথমিক সদৃশতার প্রয়োজন হয়, সেহেতু আমরা বুঝতে পারি কেমন করে বৃহত্তর ও উচ্চতর প্রাণীরা আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ বস্তুদের সদৃশ হয় না (যতদূর আমি জানি, একটিমাত্র মাছ ছাড়া), শুধুমাত্র তাদের চতুর্দিকে থাকা বস্তুগুলির উপরিতলের সদৃশ হয় এবং সেটাও প্রধানতঃ রঙের ক্ষেত্রেই হয়। একটি পতঙ্গ একটি মৃত পল্লব অথবা একটি চা-পাতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয়েছিল এবং এটি বিভিন্ন উপায়ে অল্পভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল, এটি ধরে নিলে বোঝা যায় যে সব পরিবর্তন কোন এরূপ বস্তুর মতো হতে পতঙ্গটিকে সাহায্য করে এবং এভাবে তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, সেরকম সমস্ত পরিবর্তন সংরক্ষিত হবে, যখন অন্য পরিবর্তনগুলি অবহেলিত হবে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হবে; অথবা এইসব রূপান্তর পতঙ্গদের অনুকরণীয় বস্তুর সঙ্গে কম সদৃশ করলে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। প্রকৃতপক্ষে মিঃ মিভার্টের আপত্তিতে জোরালো যুক্তি থাকতে পারত, যদি আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতিরেকে, কেবলমাত্র অস্থির পরিবর্তনশীলতার সাহায্যে উপরের সাদৃশ্যগুলি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করতাম; কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই নেই।

‘অকৃতিতে উৎকর্ষতার শেষ ছাপগুলি সম্পর্কে মিঃ মিভার্টের আপত্তিতে কোন জোরালো যুক্তি আমি দেখি না; যেমন মিঃ ওয়ালেস একটি ভ্রমণ-ছড়ির (walking stick) মতো পতঙ্গের (সেরোজাইলাম ল্যাসেরেটাস) উদাহরণ দিয়েছেন, যা লতানে মস অথবা জনগারম্যানিয়ার ওপর জন্মানো একটি ছড়ির’ সদৃশ হয়। এই সাদৃশ্য এত ঘনিষ্ঠ যে জনৈক স্থানীয় ডিয়াক উল্লেখ করেছিলেন যে বৃক্ষপত্রবৎ উপবৃদ্ধি প্রকৃতই মস ছিল। পাখি ও অন্যান্য শত্রুরা পতঙ্গ শিকার করে, যাদের দৃষ্টিশক্তি সম্ভবতঃ আমাদের তুলনায় তীক্ষ্ণতর, এবং অন্যদের দৃষ্টি থেকে অথবা ধরা পড়া থেকে রক্ষা পেতে পতঙ্গ দের সাহায্য করে–এরকম সাদৃশ্যের প্রত্যেকটি ধাপ এদের সংরক্ষণে সাহায্য করতে চেষ্টা করবে; এবং সদৃশতা যত বেশি নিখুঁত হবে, পতঙ্গদের পক্ষে তা তত বেশি মঙ্গলকর হবে। উপরোক্ত সেরোজাইলাসটি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত সেই গোষ্ঠীর প্রজাতিদের মধ্যে পার্থক্যের প্রকৃতি বিবেচনা করলে এই পতঙ্গটির ক্ষেত্রে কোন কিছুই অসম্ভবপর নয়, পতঙ্গটির পৃষ্ঠদেশ অনিমিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং কম-বেশি সবুজ রঙের হয়; কারণ প্রত্যেক গোষ্ঠীতে বৈশিষ্ট্যগুলি, যা কতিপয় প্রজাতিতে পৃথক হয়, সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল হয়, অন্যথায় গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি, অথবা যা সমস্ত প্রজাতিতে সাধারণ, সবচেয়ে বেশি স্থায়ী হয়।

গ্রীনল্যান্ডের তিমি পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রাণীগুলির মধ্যে একটি, এবং তিমির টাকরার হাড়টি অথবা তিমি হাড়টি এর সবচেয়ে চমৎকার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি। তিমির টাকরার হাড় ওপরের চোয়ালের প্রত্যেক ধারে এক সারি প্রায় ৩০০ প্লেট অথবা ল্যামিনা দ্বারা তৈরি, যেগুলি মুখের লম্বা অক্ষের সঙ্গে তির্যকভাবে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে। অবস্থিত। প্রধান সারির মধ্যে কয়েকটি উপসারি আছে। সমস্ত প্লেটের প্রান্ত ও ধারগুলিতে শক্ত কাটা থাকে, যারা সমগ্র বিশাল প্যালেটকে আবৃত করে রাখে এবং জল টানতে ও ছাড়তে সাহায্য করে, এবং এরূপে ক্ষুদ্র শিকার ধরে যার ওপর এরা বেঁচে থাকে। গ্রীনল্যান্ড তিমির মধ্যের এবং দীর্ঘতম ল্যামিনাটি দশ, বার, এমনকি পনের ফুট লম্বা হয়, কিন্তু সেটাসিয়ানদের বিভিন্ন প্রজাতিতে দৈর্ঘ্যের ক্রমপরিবর্তন রয়েছে; স্কোর্সবির মতানুযায়ী, মধ্য ল্যামিনাটি একটি প্রজাতিতে চার ফুট, অন্য একটিতে তিন, এবং অন্য আর একটিতে আঠারো ইঞ্চি লম্বা, এবং ব্যালানোপ্টে রা রসট্রেটা-তে মাত্র। নয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। তিমি হাড়ের প্রকৃতি বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্ন রকম হয়।

তিমির টাকরার হাড়টি (baleen) সম্পর্কে মিঃ মিভার্ট মন্তব্য করেন যে যদি এটি “উপকারী হিসেবে এত বিরাট আকার ও বিকাশ একদা প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে কার্যকারিতার সীমার মধ্যে এর সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারাই ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু এরূপ উপকারী বিকাশের আরম্ভ কিভাবে হয়?” উত্তরে প্রশ্ন করা। যেতে পারে-টাকরার হাড় সমেত তিমিদের আদিম পূর্বপুরুষরা কেন একটি হাঁসের ল্যামেলেটেড ঠোঁটের মতো মুখের অধিকারী হয় না? তিমির মতো হাঁসরা কাদা ও জল তুলে ছিটিয়ে জীবনধারণ করে, এবং গোত্রটিকে কোন কোন সময় ক্রিবলেটর্স অথবা সিফটার (ছাঁকনি) বলা হয়। আশা করি এটি বললে আমাকে ভুল বোঝা হবে না যে তিমিদের পূর্বপুরুষরা একটি হাঁসের চঞ্চুর মতো পাতলা পাত সমেত মুখের প্রকৃতই অধিকারী ছিল। আমি শুধু দেখাতে চাই যে এটি অবিশ্বাস্য নয়, এবং গ্রীনল্যান্ডে তিমির টাকরার হাড়ের অসংখ্য প্লেটগুলি সূক্ষ্ম ক্রমিক ধাপ দ্বারা এভাবে ল্যামেলাগুলি থেকে বিকশিত হয়ে থাকবে, যার প্রত্যেকটিই তার অধিকারীর পক্ষে উপকারী।

একটি সোভেলার হাঁসের (স্প্যাটুলা ক্লিপিয়েটা) চক্ষুটি একটি তিমির মুখের তুলনায় আরও সুন্দর ও জটিল গঠনের। ওপরের চোয়াল প্রত্যেক ধারে একখানি চিরুনির মতো ১৮৮টি পাতলা, নমনীয় ল্যামেলা দ্বারা তৈরি, যা তীক্ষ্মতার জন্য তির্যকভাবে ঢালু এবং মুখের লম্বা অক্ষের সঙ্গে তির্যকভাবে অবস্থিত। এগুলি তালু থেকে উদ্ভূত এবং চোয়ালের পার্শ্বে নমনীয় ঝিল্লি দ্বারা যুক্ত থাকে। মাঝখানেরগুলি দীর্ঘতম, দৈর্ঘ্যে প্রায় এক ইঞ্চির এক-তৃতীয়াংশ এবং এরা কিনারার নিচে ১৪ ইঞ্চি বাইরে থাকে। এদের পাদদেশে তির্যক ও আড়াআড়িভাবে যুক্ত ল্যামেলার একটি অতিরিক্ত ছোট সারি থাকে। এইসব কতিপয় বিষয়ে এরা একটি তিমির টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির সদৃশ হয়। কিন্তু চঞ্চুর প্রান্তদেশের দিকে এরা অতিশয় ভিন্ন হয়, কারণ এরা সোজাভাবে নিচের দিকের পরিবর্তে ভিতরের দিকে প্রসারিত। সোভেলার-এর সমগ্র মাথাটি, যদিও তুলনামূলকভাবে কম ভারী, মাঝারি ধরনের বৃহৎ ব্যালানপটেরা রসট্রেটার মাথার দৈর্ঘ্যের এক-অষ্টাদশাংশ হয়, এই প্রজাতির টাকরার হাড়টি মাত্র নয় ইঞ্চি লম্বা হয়; অর্থাৎ যদি সোভেলার-এর মাথা ব্যালানপটেরার মাথার সমান করতে হয়, তাহলে ল্যামেলাগুলি ছয় ইঞ্চি লম্বা হবে, অর্থাৎ তিমির এই প্রজাতির টাকরার হাড়ের দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ। সোভেলার হাঁসের নিচের চোয়ালের হাড় ওপরের মত সমদৈর্ঘ্যের ল্যামেলা দ্বারা তৈরি, কিন্তু সূক্ষ্মতর; এবং এইভাবে সজ্জিত হওয়ার জন্য এটি একটি তিমির নীচের চোয়াল থেকে স্পষ্টভাবে ভিন্ন, এবং তিমির ব্যালিন থাকে না। অন্যদিকে, এই সমস্ত নীচের ল্যামেলার প্রান্তগুলি সূক্ষ্ম কাটার ন্যায় বস্তু দিয়ে তৈরি, অতএব এরা এইরকম অদ্ভুতভাবে টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির সদৃশ হয়। পেট্রেল-দের গোত্রের একটি সদস্য প্রিয়ন গণটিতে উপরের চোয়ালটি ল্যামেলা দ্বারা যুক্ত, যা অতিশয় বিকশিত এবং কিনারার নিচে প্রসারিত; এইরূপে এই পাখির চথুটি এ বিষয়ে একটি তিমির মুখের সদৃশ হয়।

অতিশয় উন্নত গঠনের সোভেলারের (বেলচার মতো অঙ্গধারী হাঁস) চঞ্চু থেকে (মিঃ স্যালভিনের প্রেরিত তথ্য এবং নমুনাগুলি থেকে আমি জেনেছি) অবিরাম জল কাদা ছিটানোর উপযুক্ততার বিষয়ে মার্গানেট্টা আর্মাটা চক্ষুটির মাধ্যমে এবং কোন কোন বিষয়ে আই স্পনসার চথুটির মাধ্যমে সাধারণ হাঁসের চঞ্চুর দিকে আমরা অগ্রসর হতে পারি। পরের প্রজাতিটির ল্যামেলাগুলি সোভেলারদের ল্যামেলাগুলির তুলনায় স্থূলতর হয় এবং চোয়ালের হাড়ের পার্শ্বগুলিতে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে, এরা প্রত্যেক ধারে সংখ্যায় মাত্র ৫০টি এবং মোটেই কিনারার নিচে নির্গত হয় না। এদের মাথাগুলি– বর্গাকার এবং ধারটি স্বচ্ছ শক্ত কলা দ্বারা এমনভাবে তৈরি যাতে এরা খাদ্য পেষাই করতে পারে। নিচের চোয়ালটির হাড়ের ধারগুলি অসংখ্য সূক্ষ্ম শিরা বা আল দ্বারা আড়াআড়িভাবে কর্তিত, যারা অতি অল্প নির্গত হয়। যদিও একটি সিফটার (ছাঁকনি) হিসেবে সোভেলার (বেলচাধারী)-এর চথুটির তুলনায় এদের চঞ্চু নিকৃষ্টতর, তথাপি প্রত্যেকেই জানেন যে, এই পাখিটি এই উদ্দেশ্যে একে অনবরত ব্যবহার করে। মিঃ স্যালভিন-এর কাছ থেকে আমি শুনেছি এমন আরও কয়েকটি প্রজাতি আছে যাদের ল্যামেলাগুলি সাধারণ হাঁসের তুলনায় কম উন্নত; কিন্তু জল-কাদা ছিটানোর জন্য এরা এদের চঞ্চুগুলি ব্যবহার করে কি না, আমি জানি না।

একই গোত্রের অন্য গোষ্ঠীর দিকে লক্ষ্য করা যাক। ইজিপ্সীয় রাজহংসীর চঞ্চটি (চেনালোপেক্স) সাধারণ হাঁসের চঞ্চুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠাভাবে সদৃশ; কিন্তু ল্যামেলাগুলি সংখ্যায় অল্প অথবা পরস্পরের থেকে এত স্পষ্টভাবে পৃথক নয়, অথবা ভিতরের দিকে এভাবে নির্গত নয়; তা সত্ত্বেও মিঃ ই, বার্টলেট আমাকে জানিয়েছেন যে এই রাজহংসীটি ‘কোণ দিয়ে জল বের করার জন্য একটি হাঁসের মতো নিজের ঠোঁট ব্যবহার করে। এর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ঘাস, যা এরা সাধারণ হাঁসের মতো খায়। এই পরের পাখিটির উপরের চোয়ালের ল্যামেলাগুলি (হাড় ইত্যাদির পাতলা স্তর বা আবরণ) সাধারণ হাঁসের তুলনায় বেশি মোটা, প্রায় যুক্ত, প্রত্যেক ধারে সংখ্যায় ২৭টি, এবং উপরের দিকে দাঁতের মতো নবে (ফুলে ওঠা অংশ) শেষ হয়। তালুটি গোলাকার শক্ত নব দ্বারা আচ্ছাদিত। নিচের চোয়ালের ধার করাতের ন্যায় খাজ-কাটা, যা হাঁসের চোয়ালের ধারের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট, মোটা ও তীক্ষ্ণ। সাধারণ রাজহংসীরা জলকাদা ছিটাতে পারে না, কিন্তু শাকপাতা কাটতে-ছিঁড়তে এরা এদের চঞ্চটি ব্যবহার করে। এই কাজের জন্য এটি এত সুন্দরভাবে অভিযোজিত যে এটি প্রায় অন্য যেকোন প্রাণীর তুলনায় সুন্দরভাবে ঘাস কাটতে পারে। মিঃ বাৰ্টলেট-এর কাছ থেকে আমি শুনেছি যে রাজহংসদের অন্য কয়েকটি প্রজাতি আছে, সাধারণ রাজহংসের তুলনায় যাদের ল্যামেলাগুলি কম উন্নত।

এভাবে আমরা দেখি যে সাধারণ রাজহংসের মতো তৈরি এবং কেবলমাত্র ঘাস খাওয়ার জন্য অভিযোজিত একটি চঞ্চু সম্বলিত হাঁস গোত্রের একটি সদস্য অথবা এমনকি কম উন্নত ল্যামেলা সমেত চঞ্চু সম্বলিত একটি সদস্য অল্প পরিবর্তনগুলির দ্বারা ইজিপ্সীয় রাজহাঁসের মতো একটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে, সেখান থেকে সাধারণ পাতিহাঁসের মতো কোন প্রজাতিতে, অবশেষে সোভেলার-এর মতো একটি প্রজাতিতে যার চঞ্চটি শুধুমাত্র কাদাজল ছিটানোর জন্যই অভিযোজিত হয়ে থাকবে; কারণ এই পাখিটি শক্ত খাদ্য অধিকার করতে ও ছিঁড়তে বঁড়শির মত অগ্রভাগ ছাড়া এর চঞ্চটির কোন অংশকে কদাচিৎ ব্যবহার করতে পারত। আমি আরও বলতে পারি, একটি রাজহাঁসের চঞ্চটির কোন অংশকে কদাচিৎ ব্যবহার করতে পারত। আমি আরও বলতে পারি, একটি রাজহাঁরে চথুটিও অল্প পরিবর্তন দ্বারা একটিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারত, যার চঞ্চুতে মার্গানসের (একই গোত্রের একটি সদস্য) চঞ্চুর মতো স্পষ্ট এবং বাঁকা দাঁত থাকে, যা জীবন্ত মাছ ধরতে ব্যাপকভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।

তিমির বিষয়ে ফিরে আসা যাক। হাইপারুডন বাইডেন-এর কার্যক্ষম প্রকৃত দাঁত নেই, কিন্তু লেসপেডের মতানুসারে এর তালুটি অমসৃণ এবং ছোট, অসমান, শক্ত হর্ন যুক্ত। অতএব মনে করা অসম্ভব নয় যে কতিপয় আদি সিটেসিয়ান আকারের কয়েকটির তালুতে একইরূপ হর্ন ছিল, তা সুবিন্যস্তরূপে স্থাপিত ছিল এবং রাজহাঁসের চঞ্চুর নবগুলির মতো তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে ও ছিঁড়তে সাহায্য করেছিল। যদি এরূপ হয়, তাহলে অস্বীকার করা যায় না যে বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণগুলি পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ল্যামেলায় রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে এবং ইজিপ্সীয় রাজহংসের মত বিকশিত হয়ে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে এরা বিভিন্ন বস্তুকে ধরা ও জল ছিটানো উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকবে। এরপর এগুলি গৃহপালিত হাঁসের ল্যামেলার মত ল্যামেলাতে এবং এইভাবে ক্রমান্বয়ে আরও রূপান্তরিত হয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না এটি সোভেলার-এর ল্যামেলার মতো হয়ে উঠেছে, যাতে করে এটি শুধুমাত্র জল ছিটানোর যন্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হতে পারবে। এই অবস্থা থেকে যেখানে ল্যামেলাগুলি ব্যালেনপটেরা রসট্রাটার টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ হবে, এখনও পর্যন্ত সেটাসিয়ানদের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারা ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি গ্রীনল্যান্ড তিমির টাকরার হাড়ের বিশাল প্লেটগুলির দিকে অগ্রসর হয়। অথবা সন্দেহ করার কারণ নেই যে এই বিন্যাসের প্রতিটি ধাপ কোন কোন আদিম সেটাসিয়ানদের ক্ষেত্রে, যাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি কার্যপ্রণালী বিকাশের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মন্থরভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনই কার্য-উপযোগী হয়ে থাকতে পারত, যেমন হাঁস গোত্রের বিভিন্ন বর্তমান সদস্যদের চঞ্চুতে ক্রমবিন্যাসগুলি হয়েছে। স্মরণ রাখা উচিত যে হাঁসের প্রতিটি প্রজাতিকে কঠোর অস্তিত্বের সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয় এবং এদের দেহকাঠামোর প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন এদের জীবন-পরিবেশের সঙ্গে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়ে থাকবে।

প্রিউরোনেক্টিডি অথবা চেপ্টা মাছরা তাদের অপ্রতিসম দেহের জন্য সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এরা একদিকে শুয়ে ঘুমোয়-অধিক সংখ্যক প্রজাতি বাঁদিকে, কিন্তু কতিপয় ডানদিকে; মাঝেমাঝে বিপরীত ঘটনাও ঘটে। নিচের অথবা বিশ্রামপৃষ্ঠটি প্রথম দর্শনে একটি সাধারণ মাছের ভেনট্রাল পৃষ্ঠের মতো মনে হয় : এটির রং সাদা, উপরের পৃষ্ঠের তুলনায় অনেক বিষয়ে কম বিকশিত, পার্শ্ব পাখনাগুলি প্রায়শই ছোট আকারের। কিন্তু চোখগুলি অতি অদ্ভুত প্রকৃতির হয়, কারণ এরা উভয়েই মাথার উপর দিকে অবস্থিত। তবে ছোটবেলায় এরা পরস্পর মুখোমুখী থাকে, তখন দেহটি প্রতিসম হয় এবং উভয় পৃষ্ঠ সমানভাবে রঞ্জিত হয়। নিচের দিকের প্রকৃত চোখটি শীঘ্রই উপরের দিকে মাথার চতুর্দিকে ধীরে ধীরে চলতে আরম্ভ করে; কিন্তু করোটির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, যা আগে মনে করা হত। এটি সুস্পষ্ট যে নিচের চোখটি যদি এভাবে না ঘোরে, তাহলে মাছটি তার স্বভাবমতো একদিকে শুয়ে থাকলে এটি ব্যবহার করতে পারত না। নিচের চোখটির বালুময় তলদেশে ঘষে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নিজেদের জীবন স্বভাবের জন্য চেটাল ও অপ্রতিসম গঠনের দ্বারা প্লিউরোনেক্টিডি মাছেরা যে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে, তা কতিপয় প্রজাতির, যথা সোল, ফ্লাউন্ডার প্রভৃতির সহজলভ্য হওয়া থেকে স্পষ্ট। শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং ভূমি থেকে খাদ্য খাওয়ার জন্যই সম্ভবতঃ প্রধান সুবিধাগুলি অর্জিত হয়েছিল। তবে, স্কিওডসে মন্তব্য করেছেন, গোত্রটির বিভিন্ন সদস্যরা ‘হিপোগ্লোসাস পিনগুইস থেকে, যা ডিম পরিত্যাগ করার পর আকারটিকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় পরিবর্তন করে না, সোল পর্যন্ত, যা সম্পূর্ণরূপে একদিকে নিক্ষিপ্ত হয়, ক্রমিক উত্তরণ প্রদর্শনকারী আকারদের একটি দীর্ঘ সারি’ উপস্থিত করে।

মিঃ মিভার্ট এই বিষয়টি ধরেছেন এবং বলেছেন যে চোখের অবস্থানের একটি আকস্মিক স্বতঃস্ফূর্ত রূপান্তর কদাচিৎ কল্পনাসাধ্য। এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারপর তিনি আরও বলেছেন : ‘চলাচল যদি পর্যায়ক্রমিক হয়, তাহলে কেমন করে মাথার অন্যদিকে ঘোরার ক্ষণিক সময়ে একটি চোখের এরূপ চলাচল এককটির পক্ষে উপকারী হয়, তা বাস্তবিকই স্পষ্ট নয়। এমনকি মনে হয় যে এরূপ একটি সদ্যজাত রূপান্তর বরং নিশ্চয় ক্ষতিকর হয়ে থাকবে। তিনি নিশ্চয়ই মাম (Malm) কর্তৃক ১৮৬৭ সালে প্রকাশিত বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণগুলিতে এই আপত্তির একটি উত্তর পেয়ে থাকবেন। অতি শৈশবে এবং যখন প্রতিসম অবস্থায় থাকে, তখন মাথার বিপরীতদিকে অবস্থিত চোখগুলি সমেত প্রিউরোনেক্টিডিরা তাদের শরীরের অত্যধিক গভীরতার জন্য, পার্শ্ব পাখনাগুলির ছোট আকারের জন্য এবং পটকা না থাকার জন্য দীর্ঘসময় লম্বালম্বি অবস্থানে থাকতে পারে না। অতএব পরিশ্রান্ত হওয়ার পর তলদেশের একদিকে পতিত হয়। মাম-এর পর্যবেক্ষণানুসারে, এরূপ বিশ্রামের সময় এরা উপরের দিকে দেখার জন্য নিচের চোখটিকে উপরদিকে ঘোরায় এবং এত সবলভাবে তা করে যে চোখটি অক্ষের উপরের অংশটিকে শক্তভাবে চাপ দেয়। সাধারণভাবে দেখা যায় যে এর ফলশ্রুতিতে চোখগুলির মধ্যেকার কপালটি, প্রস্থে অস্থায়ীভাবে সঙ্কুচিত হয়। মাম একবার দেখেছিলেন একটি শিশু মাছ সত্তর ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বের মাধ্যমে নিচের চোখটিকে ওঠায় ও নামায়।

আমাদের মনে রাখা উচিত যে এই প্রাথমিক বয়সে করোটিটি কোমলাস্থিময় ও নমনীয় হয়, সেজন্য এটি মাংসপেশীর প্রক্রিয়ায় নতিস্বীকার করে। উচ্চতর প্রাণীদের ক্ষেত্রে জানা গেছে যে এমনকি শৈশবাবস্থার পরেও, চামড়া বা মাংসপেশী ব্যাধি অথবা কোন দুর্ঘটনার ফলে স্থায়ীভাবে সংকুচিত হলে, করোটিটি তার প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। লম্বা কানওয়ালা খরগোশদের ক্ষেত্রে, যদি একটি কান সামনের ও নিচের দিকে আলগাভাবে ঝোলে, তাহলে তার ওজন করোটির সব হাড়গুলিকে একই পার্শ্বে সামনের দিকে টানে, যার একটি ছবি আমি দেখেছি। মাম বলেন যে পার্চ, স্যালমন এবং অন্য কতিপয় প্রতিসম বা সুষম মাছের নূতন শাবকদের তলদেশে বা পাদদেশে মাঝেমাঝে একদিকে বিশ্রাম নেওয়ার স্বভাব থাকে; এবং তিনি লক্ষ্য করেছেন যে এরা প্রায়শই এদের নিচের চোখটিকে উপরের দিকে দেখার জন্য সঙ্কুচিত করে এবং তার ফলে করোটিটি বেঁকে যায়। তবে, এই মাছগুলি শীঘ্রই লম্বালম্বি অবস্থায় নিজেদের রাখতে সমর্থ হয়, ফলে কোন স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি হয় না। বিপরীতক্রমে প্লিইরোনেক্টিডিদের ক্ষেত্রে, যতই বয়স বাড়ে, শরীরের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চেটালো অবস্থার জন্য এরা স্বভাবগতভাবে ততই একদিকে বিশ্রাম নেয়, এবং মাথার আকৃতিতে এবং চোখগুলির অবস্থানে একটি স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি হয়। উপমাটি বিচার করলে বোঝা যায়–বিচ্যুতির প্রবণতাটি নিঃসন্দেহেই বংশগতির নীতি অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে। অন্য কয়েকজন প্রকৃতিবিদের বিপক্ষে, স্কিওড়টে বিশ্বাস করেন যে গ্লিউরোনেক্টিডিরা এমনকি ভূণেও সম্পূর্ণরূপে সুষম নয়; এবং যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বুঝতে পারি কেন শৈশব অবস্থায় কোন কোন প্রজাতি স্বভাবগতভাবে বাঁদিকে পতিত হয় ও বিশ্রাম নেয় এবং অন্য প্রজাতিরা ডান দিকে। উপরের মতবাদটির সমর্থনে মাম আরও বলেন যে বয়স্ক ট্র্যাকিপটেরাসে। আর্টিকাস, যা প্লিউরোনেক্টিডিদের সদস্য নয়, জলের তলদেশে বাঁদিকে ফিরে বিশ্রাম নেয় এবং জলে কোনাকুনিভাবে সাঁতার কাটে; এবং এই মাছটির মাথার দুটি দিক কিছু পরিমাণে অসমান। মাছের বিষয়ে সুবিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ডঃ গুনথার, মামের প্রবন্ধের সারাংশ লেখার পর উপসংহারে মন্তব্য করেন যে লেখক প্লিউরানেক্টিডিদের অস্বাভাবিক অবস্থার অতি সরল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

এভাবে আমরা দেখি যে মাথার একদিক থেকে অন্যদিকে চোখটির ঘোরার প্রথম ধাপগুলি স্বভাবের জন্য হয় বলে মনে করা যেতে পারে, যাকে মিঃ মিভার্ট ক্ষতিকর হবে বলে মনে করেন এবং যা একক এবং প্রজাতির পক্ষে উভয় চোখ দিয়ে উপরের দিকে দেখার চেষ্টা এবং তলদেশে একদিকে বিশ্রামের চেষ্টার জন্য নিঃসন্দেহেই উপকারী। হয়। কয়েক প্রকার চেপ্টা মাছের মুখ নিচের পৃষ্ঠের দিকে বক্র হওয়া, এর ওপর চোয়ালের হাড়গুলি আরও বলবান ও কার্যকরী হওয়া, ডঃ ট্রাকুএয়ারে অনুমান অনুযায়ী, অন্যদিকের তুলনায় ভূমিতে সহজে খাদ্য গ্রহণ করার জন্য মাথার চক্ষুহীন দিক–এইসব বিষয়গুলিকে আমরা ব্যবহারের আনুবংশিক প্রভাবের ফল হিসাবে বিবেচনা করতে। পারি। বিপরীতক্রমে, পার্শ্ব পাখনাগুলি সমেত শরীরের সমগ্র নিম্নার্ধের কম বিকাশের জন্য দায়ী অব্যবহার; যদিও ইয়ারেল মনে করেন যে এইসব পাখনাগুলির হ্রাসপ্রাপ্ত আকার মাছটির পক্ষে সুবিধাজনক হয়, কারণ ‘উপরের বড় পাখনাগুলির তুলনায় এগুলির কাজ করার কম সুযোগ থাকে। বোধহয় প্লেআইস মাছের দুটি চোয়ালের উপরের অর্ধাংশে চার থেকে সাতটি অনুপাতে কম সংখ্যক দাঁত থাকা এবং নিম্নর্ধাংশে পঁচিশ থেকে ত্রিশটি দাঁত থাকা অব্যবহারের ফলেই হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। অধিকাংশ মাছ ও অনেক অন্য প্রাণীদের ভেন্ট্রাল বা অঙ্কীয় বা উপরের দিকের পৃষ্ঠের রংহীন অবস্থা দেখে আমরা যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করতে পারি যে চেপ্টা মাছের ঐদিকে। রঙের অনুপস্থিতি, ডান বা বাঁ যেদিকেই হোক না কেন, যা সবচেয়ে নিচের দিকে থাকে, আলোর অভাবের জন্য হয়। কিন্তু এটি অনুমান করা যেতে পারে না যে সোলের উপরের দিকে ছোট ছোট ফুটকির মতো অদ্ভুত চিহ্ন, যা সমুদ্রের বালুময় পৃষ্ঠের মতো, অথবা যেমন সম্প্রতি পাউচেট দেখিয়েছেন, পারিপার্শ্বিক উপরিতল অনুযায়ী কয়েকটি প্রজাতির গাত্রবর্ণ পরিবর্তন করার ক্ষমতা, অথবা টার্বোটের ওপরের পৃষ্ঠে অস্থিময় টিউবারকলদের উপস্থিতি আলোর জন্য হয়। এখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্ভবতঃ এদের জীবন-স্বভাবে এইসব মাছের আকারকে এবং অন্য অনেক বৈশিষ্ট্যকে অভিযোজিত করতে ভূমিকা পালন করে। আমি আগেই বলেছি যে আমাদের মনে রাখা উচিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যবহারের এবং সম্ভবতঃ এগুলির অব্যবহারের আনুবংশিক। প্রভাবসমূহ প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা শক্তিশালী হবে। কারণ সঠিক দিকে সমস্ত স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন এরূপে সংরক্ষিত হবে; এভাবে সেইসব এককরা সংরক্ষিত হবে যারা যে কোন একটি অঙ্গের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও উপকারী ব্যবহারের প্রভাবসমূহকে উচ্চমাত্রায় বংশগতভাবে প্রেরণ করে। প্রত্যেক বিশেষ ক্ষেত্রে, ব্যবহারের প্রভাবসমূহে কতখানি আরোপ করা যায় এবং কতখানি প্রাকৃতিক নির্বাচনে আরোপ করা যায়, তা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব।

দেহাঙ্গের অন্য একটি উদাহরণ আমি দিতে পারি, যার উৎপত্তি হয়েছে কেবলমাত্র ব্যবহার ও স্বভাবের জন্য। আমেরিকার কতিপয় বানরের লেজের প্রান্তভাগ চমৎকার ও নিখুঁতভাবে আঁকড়িয়ে ধরতে সক্ষম অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে এবং এটি তাদের পঞ্চম হাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জনৈক সমালোচক, যিনি মিঃ মিভার্টের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত, এই দেহাঙ্গটির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, “এটি বিশ্বাস করা অসম্ভব যে, যে কোন বয়সে আঁকড়িয়ে ধরার প্রথম দৃষ্ট জায়মান প্রবণতাটি এর অধিকারী এককদের জীবন রক্ষা করতে পারত, অথবা বংশধর পাওয়া ও পালন করার সম্ভাবনাকে আনুকূল্য প্রদান করতে পারত।” কিন্তু এরূপ বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবতঃ স্বভাবই এ-কাজ সম্পাদনের পক্ষে যথেষ্ট। এবং এর প্রায় নিশ্চিত অর্থ হল যে এর ফলে। তাদের অল্প বা বৃহৎ কিছু উপকার অবশ্যই ঘটবে। ব্রেহম আফ্রিকার একটি বানরশাবক (সার্কোপিথেকাস) দেখেছিলেন, যে তার মাকে নিচের দিকে হাত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধরে ছিল এবং একই সময়ে বঁড়শির মতো করে নিজের ছোট লেজটি দিয়ে মায়ের লেজটি আঁকড়িয়ে ধরে ছিল। অধ্যাপক হেল্প কয়েকটি মেঠো ইঁদুরকে (মুস মেসোরিয়াস) আটক করে রেখেছিলেন, যাদের গঠনগতভাবে আঁকড়িয়ে ধরার জন্য লেজ ছিল না; কিন্তু তিনি প্রায়শই লক্ষ্য করতেন যে এরা খাঁচায় রাখা গুল্মের শাখাপ্রশাখাগুলিকে লেজ দিয়ে পাকিয়ে ধরত এবং এভাবে আরোহণ করার চেষ্টা করত। ডঃ গুনথার-এর কাছ থেকে এরূপ একটি ঘটনার বিবরণ শুনেছিলাম, যিনি একটি ইঁদুরকে ঝুলে থাকতে দেখেছিলেন। মেঠো ইঁদুররা যদি আরও বৃক্ষবাসী হয়, তাহলে এদের লেজ সম্ভবতঃ গঠনগতভাবে আঁকড়িয়ে ধরার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যেমন একই বর্গের কিছু সদস্যের ক্ষেত্রে হয়। শৈশবাবস্থায় এদের স্বভাবসমূহ বিবেচনা করে কেন সাঁকোপিথেকাসদের এরূপ ছিল না, তা বলা কষ্টকর। তবে এটি সম্ভবপর যে এই বানরদের লম্বা লেজ আঁকড়িয়ে ধরার অঙ্গের তুলনায় লম্বা লাফ দেওয়ার জন্য ভারসাম্যমূলক অঙ্গ হিসেবে আরও উপকারী হতে পারে।

সমগ্র স্তন্যপায়ী শ্রেণীতে স্তন্যগ্রন্থি থাকা একটি সাধারণ ঘটনা এবং এটি এদের বাঁচার জন্য অপরিহার্য; সুতরাং নিশ্চয় এগুলি কোন দূর অতীতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এদের উদ্ভব পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে কিছু জানি না। মিঃ মিভার্ট প্রশ্ন করেছেন, “এটা কি আদৌ সম্ভব যে নিজের মায়ের দুর্ঘটনাজনিত অতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অন্তস্তক থেকে অতি অল্প পুষ্টিকর রস হঠাৎ চুষে খেয়ে কোন প্রাণীর শাবকেরা ধ্বংসের হাত থেকে কখনও রক্ষা পেয়েছে। এমনকি যদি তা ঘটত, তাহলেও এরূপ একটি পরিবর্তনের চিরস্থায়ীত্বের সম্ভাবনা ছিল কি?” ঘটনাটি এখানে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়নি। অধিকাংশ বিবর্তনবাদীরা স্বীকার করেন যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা একটি মারসুপিয়াল আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে, এবং যদি তা-ই হয়, তাহলে স্তনগ্রন্থিগুলি প্রথমে মারসুপিয়াল থলির মধ্যে উদ্ভূত হয়ে থাকবে। মাছের ক্ষেত্রে (হিপোক্যাম্পাস) এরকম প্রকৃতির একটি থলির মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয় এবং কিছু সময়ের জন্য বাচ্চা পালিত হয়; আমেরিকার প্রকৃতিবিদ মিঃ লক হুড শাবকের বিকাশ সম্বন্ধে যা দেখেছেন তা থেকে বিশ্বাস করেন যে এটি থলির কিউটেনিয়াস গ্রন্থির রস দ্বারা পুষ্ট হয়। এখন স্তন্যপায়ীদের আদিম পূর্বপুরুষদের সম্বন্ধে, এটি কি অন্ততঃ সম্ভবপর নয় যে শাবকরা এভাবে পুষ্ট হয়ে থাকবে? এবং এই ঘটনাটিতে, এককরা, যারা দুধের প্রকৃতির সমগোত্রীয় হওয়ার জন্য কোন মাত্রায় অথবা পদ্ধতিতে সবচেয়ে পুষ্টিকর রস নিঃসরণ করে, একটি নিকৃষ্টতর রসনিঃসরণকারী এককদের তুলনায় পরিশেষে ভালভাবে পুষ্ট অসংখ্য বংশধর লালনপালন করে থাকবে; এবং এরূপে ত্বকীয় গ্রন্থিগুলি, যেগুলি স্তনগ্রন্থির সমগোত্রীয়, উন্নত হয়ে থাকবে অথবা আরও কার্যকরী হয়ে থাকবে। এটি বিশিষ্টতার ব্যাপক অর্থে নীতিটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে থলিটির কোন একটি স্থানের উপর অবস্থিত গ্রন্থিগুলি অন্য অবশিষ্টাংশদের তুলনায় আরও ভালভাবে বিকশিত হয়ে থাকবে; এরপর এরা একটি স্তন সৃষ্টি করে থাকবে, কিন্তু প্রথমে কোন স্তনবৃন্ত ছাড়াই; যেমন আমরা স্তন্যপায়ী শ্রেণীর নিচের দিকে অর্নিথোরিনকাসে দেখি কোন্ মাধ্যমের দ্বারা একটি জায়গার উপর গ্রন্থিগুলি অন্যদের তুলনায় বিশিষ্টতর হয়েছে, অংশত বৃদ্ধির ক্ষতিপূরণ, ব্যবহারের প্রভাব অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কিনা, তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না।

শিশুরা একই সময়ে নিঃসরিত রস পান করতে সমর্থ না হলে স্তনগ্রন্থিগুলির বিকাশ কোন উপকারে আসবে না এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারবে না। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কেমন করে শিশু-স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সহজাত স্বভাবনুযায়ী স্তনটি চুষতে শেখে, যখন এটি জানা আছে যে কেমন করে ডিমের অভ্যন্তরে শাবক মুরগীরা তাদের বিশেষভাবে অভিযোজিত চক্ষু দ্বারা মৃদু আঘাত করে ডিমের খোলস ভাঙ্গতে শিখেছে অথবা খোলস ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টা পর কেমন করে খাবার কুড়াতে শিখেছে। এইসব ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে সম্ভবপর সমাধান হল–যে স্বভাবটি আরও বেশি বয়সে অনুশীলনের দ্বারা প্রথমে অর্জিত হয়েছিল এবং পরে প্রাথমিক বয়সে বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছিল। কিন্তু শাবক ক্যাঙ্গারুরা চুষতে পারে না, এরা কেবল মায়েদের স্তনবৃন্তে আটকিয়ে থাকে, যে মায়েরা নিজেদের অসহায়, অর্ধসৃষ্ট বংশধরদের মুখে দুধ ঢেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এ বিষয়ে মিঃ মিভার্ট উল্লেখ করেছেন, “বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে, শ্বাসনালীতে দুধ প্রবেশের ফলে শাবকরা নিশ্চয় শ্বাসরুদ্ধ হবে। কিন্তু একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। স্বরযন্ত্রটি এত লম্বা যে এটি নাসিকার প্রবেশদ্বারের পিছনের প্রান্ত পর্যন্ত উঠে আসে এবং এভাবে ফুসফুসে অবাধে বায়ু প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দেয়, যখন এই লম্বা স্বরযন্ত্রের প্রত্যেক পাশ দিয়ে দুধ অবাধে প্রবেশ করে এবং এটির পিছনের খাদ্যনালীতে নিরাপদে পৌঁছায়।” এরপর মিঃ মিভার্ট। প্রশ্ন করেন কেমন করে প্রাকৃতিক নির্বাচন বয়স্ক ক্যাঙ্গারুদের (এবং অন্য অধিকাংশ স্তন্যপায়ীদের, এটি ধরে নিয়ে যে এরা একটি মারসুপিয়াল আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে), “এই অন্ততঃ সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ এবং অক্ষত দেহগঠনটিকে অপসারণ করেছিল? উত্তরে বলা যেতে পারে যে বহু প্রাণীর ক্ষেত্রে অত্যাধিক প্রয়োজনীয় কণ্ঠস্বরকে ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বরযন্ত্র নাসাপথে প্রবেশ না করে, এবং অধ্যাপক ফ্লাওয়ার আমাকে জানিয়েছেন যে একটি প্রাণীর শক্ত খাদ্য গেলার ব্যাপারে এই দেহগঠনটি বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।

আমরা এখন অল্প কথায় প্রাণীজগতের নিম্নতর বিভাগগুলির বিষয়ে আলোচনা করব। একিনোডার্মাটা বা কণ্টকত্বকী প্রাণীদের (তারামাছ ও সাগর-কুশান ইত্যাদি) একটি অদ্ভুত অঙ্গ আছে যাকে বলা হয় পেডিসেলরিয়া, যা ভালভাবে বিকশিত হওয়ার পর একটি ট্রাইড্যাক্টিল বা চিমটে বা সাঁড়াশি দ্বারা তৈরি অর্থাৎ সুন্দরভাবে একত্রে সংযুক্ত এবং মাংসপেশী দ্বারা চালিত একটি নমনীয় দণ্ডের শীর্ষে স্থাপিত করাতের মতো খাঁজকাটা তিনটি বাহু দ্বারা গঠিত হয়। এই সাঁড়াশিগুলি যে কোন বস্তুকে ভালভাবে আটকিয়ে ধরতে পারে। আলেকজান্দার আগাসিজ একটি একিনাস বা সাগর-কুশান দেখেছিলেন যেটি দ্রুতগতিতে একের পর এক সাঁড়াশির দ্বারা বিষ্ঠার কণাগুলিকে শরীরের নিচের কোন রেখা পর্যন্ত পাঠায় যাতে করে তার খোলসটি অপরিচ্ছন্ন না হয়। কিন্তু নিঃসন্দেহেই এটি সমস্ত নোংরা বস্তুকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কাজও করে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে আত্মরক্ষা।

পূর্বের অনেক বিষয়ের মতোই এই অঙ্গগুলি সম্পর্কেও মিঃ মিভার্ট প্রশ্ন করেন: “এরূপ দেহাঙ্গের প্রথম অবর্ধিত বা অপরিপুষ্ট উৎসগুলির প্রয়োজনীয়তা কী হবে এবং কেমন করে এরূপ জায়মান কোরকোদগমণ্ডলি একটিও একিনাসের জীবন রক্ষা করে থাকতে পারে?” তিনি আরও বলেন, এমনকি হঠাৎ আটকানোর ঘটনাটি মুক্তভাবে চলন্ত দণ্ডটি ছাড়া উপকারী হয়ে থাকতে পারে না, অথবা চোয়ালগুলি না ভেঙ্গে পরেরটি কার্যকরী হতে পারে না, তথাপি অতিক্ষুদ্র অনির্দিষ্ট পরিবর্তনসমূহ দেহগঠনের এইসব জটিল সমন্বয়গুলির যুগপৎ উদ্ভব ঘটাতে পারে না; এটি অস্বীকার করা কোন। চমকপ্রদ ধাঁধাকে সমর্থন করার তুলনায় কম নয়। মিঃ মিভার্টের কাছে এটি ধাঁধা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু পাদদেশে নিশ্চলভাবে স্থাপিত অথচ আটকানোর প্রক্রিয়ায় সমর্থ ট্রাইড্যাক্টিল সাঁড়াশিগুলি নিশ্চয় কোন কোন তারামাছে আছে। এই বিষয়ে বহু তথ্য সরবরাহের জন্যে যাঁর কাছে আমি সবচেয়ে বেশি ঋণী সেই মিঃ আগাসিজ আমাকে অবহিত করেছেন যে আরও কতিপয় তারামাছ আছে যাদের সাঁড়াশির তিনটি বাহুর মধ্যে একটি অন্য দুটিকে ধরে রাখার জন্যে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে; এবং আবার অন্য অনেক গণ আছে, যেখানে তৃতীয় বাহুটি সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়েছে। এম. পেরিয়ার-এর বর্ণনা মতো একিনোনিউআস-এর খোলসটিতে দু-ধরনের পেডিসেলারিয়া থাকে, একটি একনাস-এর পেডিসেলারিয়ার মত, অন্যটি স্প্যাটানগাস-এর পেডিসেলারিয়ার মত; এবং এই ঘটনাগুলি সর্বদাই অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, কারণ এরা একটি অঙ্গের দুটি অবস্থার একটির বিলুপ্তির মাধ্যমে আপাতভাবে আকস্মিক সংক্রমণ বা উত্তরণের উপায়সমূহ প্রদান করে।

এইসব অদ্ভুত অঙ্গগুলি কোন্ কোন্ ধাপের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে সে সম্পর্কে মিঃ আগাসিজ তার নিজস্ব গবেষণা ও মুলারের গবেষণা থেকে সিদ্ধান্ত করেন যে তারামাছ ও সামুদ্রিক আর্চিন (সাগর-কুশান) উভয়েরই পেডিসেলারিয়াগুলিকে রূপান্তরিত কাঁটা হিসেবে দেখা উচিত। এককটিতে এদের উদ্ভবের পদ্ধতি থেকে এবং প্রজাতি ও গণের সরল দানা থেকে সাধারণ কাটা ও নিখুঁত ট্রাইড্যাক্টিল পেডিসেলারিয়া পর্যন্ত ক্রমপরিবর্তনের ধাপসমূহের একটি লম্বা ও নিখুঁত সারি থেকে এটি সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে। ক্রমপরিবর্তনগত ধাপগুলি এমনকি সেই পদ্ধতিটিতেও প্রসারিত হয়, যে পদ্ধতিটিতে এদের ধরে রাখার জন্য চুনযুক্ত দলগুলি সমেত সাধারণ কাটা ও পেডিসেলারিয়াগুলি খোলসে গ্রন্থিলভাবে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তিগুলি দেখানোর জন্য প্রয়োজন যে সাঁড়াশি বা চিমটে হচ্ছে শুধুমাত্র “রূপান্তরিত শাখাবিভক্ত কাঁটা,” তারামাছের কোন কোন গণে এদের দেখা যেতে পারে। এরূপে আমরা নিম্নভাগে সংযুক্ত তিনটি সমদূরত্বে, করাতের ন্যায় খাঁজকাটা চলন্ত শাখা সমেত স্থায়ীভাবে গ্রথিত কাটা এবং ওপরের দিকে একই কাটার উপর তিনটি অন্য চলন্ত শাখা দেখি। এখন যখন একটি কাটার শীর্ষ থেকে পরেরটির উদ্ভব হয়, প্রকৃতপক্ষে এরা একটি অসূক্ষ্ম ট্রাইড্যাক্টিল সাঁড়াশি বা চিমটে সৃষ্টি করে এবং এদের একই কাটার ওপর তিনটে নিচের শাখা সমেত দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পেডিসেলারিয়ার বাহুগুলি ও একটি কাটার চলন্ত শাখাগুলির মধ্যে সনাক্তকরণ অভ্রান্ত হয়। এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে সাধারণ কাটাগুলি আত্মরক্ষার জন্যে ব্যবহৃত হয়; এবং তাই যদি হয়, তাহলে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই যে যেগুলিতে খাঁজ-কাটা ও চলন্ত শাখা আছে সেগুলি একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়; এবং যে মুহূর্তে এরা একত্রে সংযুক্ত হয়ে একটি আঁকড়িয়ে ধরা ও আটকানোর যন্ত্র হিসাবে কাজ করেছে, তখনই এরা এরূপে আরও দক্ষতার সঙ্গে কার্যকরী হবে। একটি সাধারণ নিশ্চল কাটা থেকে একটি নিশ্চল পেডিসেলারিয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ক্রমবিন্যাসগত ধাপ উপকারী হবে।

তারামাছেদের কোন কোন গণে, নিশ্চল হওয়া অথবা গতিহীন অবলম্বনের উপর স্থাপিত হওয়ার পরিবর্তে এই অঙ্গগুলি একটি নমনীয় এবং মাংসপেশী সম্বলিত অথচ ছোট দণ্ডের শীর্ষে স্থাপিত; এবং এক্ষেত্রে এরা সম্ভবতঃ আত্মরক্ষার পরিবর্তে কিছু অতিরিক্ত কার্য সম্পাদন করে। সামুদ্রিক আর্চিনগুলিতে (সাগর-কুশান), ধাপগুলি অনুসৃত হতে পারবে যার দ্বারা একটি নিশ্চল কাটা খোলসে গ্রন্থিলভাবে যুক্ত হয় এবং এরূপে গতিশীল হয়। পেডিসেলারিয়া (সাঁড়াশি)-দের বিকাশের উপর মিঃ আগাসিজের চমৎকার পর্যবেক্ষণগুলির একটি সংক্ষিপ্তসার প্রদান করার ইচ্ছা আছে আমার। তাঁর কথা অনুযায়ী, তারামাছদের পেডিসেলারিয়াগুলি (সাঁড়াশি) এবং একিনোডার্মাটার (কণ্টকদেহী প্রাণী) অন্য একটি গোষ্ঠী অফিউরিয়ানদের হুকগুলির মধ্যে সম্ভবপর সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপ এরূপে দেখা যেতে পারে; এবং পুনরায় সামুদ্রিক আর্চিনের (সাগর-কুশান) পেডিসেলারিয়া (সাঁড়াশি) এবং একই বিরাট শ্রেণীর অন্তর্গত হলোথুরিয়ার নোঙর (হুক)-গুলির মধ্যেও এগুলি দেখা যেতে পারে।

কোন কোন যৌগিক প্রাণী অথবা জুফাইটদের (যেভাবে এদের নামকরণ করা হয়েছে), যেমন পলিজোয়াদের শরীরে এ্যাভিকুলারিয়া নামে একটি অদ্ভুত অঙ্গ থাকে। এগুলি বিভিন্ন প্রজাতিতে গঠনে অতিশয় ভিন্ন হয়। অতি নিখুঁত অবস্থায় এরা একটি ক্ষুদ্রকায় শকুনির মাথা ও চঞ্চুর সদৃশ হয়, যেগুলি গলার ওপর স্থাপিত এবং বিচলনে সমর্থ, একইভাবে নিচের চোয়াল বা ম্যান্ডিবলকেও বিচলনে সমর্থ। আমার দেখা একটি প্রজাতির একই শাখার ওপর এ্যাভিকুলারিয়াগুলি সামনের এবং পিছনের দিকে প্রায়শই যুগপৎ আন্দোলিত হয়, তখন নিচের চোয়াল পাঁচ সেকেন্ড ধরে প্রায় ৯০ কোণে বিস্তৃতভাবে খোলা থাকে এবং এগুলির আন্দোলন সমগ্র পলিজোয়াকে কঁপায়। একটি উঁচ দিয়ে চোয়ালগুলি স্পর্শ করা হলে এরা সেটিকে এত শক্ত করে ধরে যে শাখাঁটি আন্দোলিত হতে থাকে।

মূলতঃ প্রাণীজগতের ব্যাপকভাবে পৃথক বিভাগগুলিতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিকশিত অঙ্গগুলির অসুবিধার প্রসঙ্গেই মিঃ মিভার্ট প্রমাণস্বরূপ এই ঘটনাটি উপস্থিত করেছেন, অঙ্গগুলি হচ্ছে পলিজোয়ার এ্যাভিকুলারিয়া এবং একিনোডার্মাটার পেডিসেলারিয়া, যেগুলিকে তিনি মূলতঃ একইরূপ” বলে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু গঠনটি প্রসঙ্গে আমি ট্রাইড্যাক্টাইল পেডিকুলারিয়া ও এ্যাভিকুলারিয়ার মধ্যে সাদৃশ্য দেখি না। বরং পরেরটি ক্রাস্টেসিয়ানদের দাঁড়া অথবা সাঁড়াশির সঙ্গে গভীরভাবে সদৃশ হয়; এবং এই সদৃশতাকেও মিঃ মিভার্ট একইরকম যথাযথভাবে একটি বিশেষ অসুবিধা। হিসাবে প্রমাণস্বরূপ উপস্থিত করতে পারেন; অথবা এমনকি একটি পাখির মাথা ও চঞ্চুর সঙ্গে এদের সদৃশতাকেও। মিঃ বাস্ক, ডঃ স্মিট এবং ডঃ নিটসের মতো প্রকৃতিবিদরা, যাঁরা এই গোষ্ঠীগুলিকে যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ করেছেন, বিশ্বাস করেন যে এ্যাভিকুলারিয়াগুলি জুফাইট গঠনকারী জুঅয়েড এবং এদের কোষগুলির প্রতিরূপ; কোষটির বিচলনশীল ঠোঁট অথবা ঢাকনাটি এ্যাভিকুলারিয়ামটির নিচের এবং বিচলনশীল ম্যান্ডিবলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে, মিঃ বাস্ক একটি জুঅয়েড এবং একটি এ্যাভিকুলারিয়াসের মধ্যে বর্তমানে অবস্থিত কোন ক্রমবিন্যাসগত ধাপ আছে কিনা। জানেন না। অতএব কল্পনা করা অসম্ভব যে কার্যোপযোগী কোন্ ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির দ্বারা একটিকে অন্যটিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারত : কিন্তু এর দ্বারা কোন মতেই এটি বোঝায় না যে এরূপ ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বিদ্যমান থাকেনি।

যেহেতু কাস্টোসিয়ানদের (খোলকী প্রাণীদের) সাঁড়াশিগুলি পলিজোয়ার এ্যাভিকুলারিয়ার সঙ্গে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয় এবং দুটিই সাঁড়াশির মতো কাজ করে, তাই এটি দেখানো সময়োপযোগী হতে পারে যে প্রথমটির ক্ষেত্রে কার্যোপযোগী ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির দীর্ঘ সারি এখনও বর্তমান। প্রথম এবং সরলতম ধাপটিতে, প্রত্যঙ্গের শীর্ষ দেহখণ্ডটি হয় প্রশস্ত সর্বশেষ দেহখণ্ডটির বর্গাকার শীর্ষের দিকে অথবা সমগ্র পার্শ্বের উল্টোদিকে বন্ধ হয় এবং এরূপে একটি বস্তুকে আঁকড়িয়ে ধরতে সমর্থ। হয়; কিন্তু প্রত্যঙ্গটি তখনও চলনের একটি অঙ্গ হিসাবে কার্যোপযোগী থাকে। এর পর আমরা দেখি যে প্রশস্ত সর্বশেষ দেহখণ্ডটির একটি কোণ (corner) অল্প স্পষ্ট, কোন কোন সময় অনিয়মিত দাঁতগুলি দ্বারা সজ্জিত এবং এগুলির সামনে শীর্ষ দেহখণ্ডটি বন্ধ। হয়। এর আকার এবং শীর্ষ দেহখণ্ডটির আকারের সঙ্গে এই প্রক্ষেপণটির আয়তন বৃদ্ধির দ্বারা অল্প রূপান্তরিত ও উন্নত সাঁড়াশিগুলি বেশি বেশি নিখুঁত হয়, যতক্ষণ না আমরা অবশেষে গলদা চিংড়িমাছের দাঁড়ার মতো একটি যন্ত্র পাই; এবং এইসব ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বাস্তবে খুঁজে বের করা যেতে পারে।

এ্যাভিকুলারিয়া ছাড়া, পলিজোয়াতে অদ্ভুত একটি অঙ্গ থাকে, যাকে বলা হয় ভাইব্রেকিউলা। এটি সাধারণতঃ লম্বা লোম দ্বারা তৈরি, যেগুলি গতিশীল এবং সহজেই উত্তেজিত হয়। আমার পরীক্ষিত একটি প্রজাতির ভাইব্রেকিউলাটি অল্প বাঁকা ছিল এবং বাইরের ধারটি ছিল ক্রকচ; এবং একই পলিজোয়া সম্প্রদায়ে এদের প্রতিটি প্রায়শই যুগপৎ বিচলনশীল হয়; এরূপে লম্বা দাঁড়ের মতো কাজ করে, এরা আমার অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অবজেক্ট-গ্লাসের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে গিয়েছিল। একটি শাখা এর মুখের ওপর রাখার পর ভাইব্রেকিউলাটি জট পাকিয়ে গিয়েছিল এবং মুক্ত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। মনে করা হয় যে এরা আত্মরক্ষার জন্য কাজ করে, এবং মিঃ বাস্ক বলেছেন, “যখন এদের টেন্টাকলগুলি বাইরে থাকে তখন কোষগুলির সূক্ষ্ম অধিবাসীদের, যা ক্ষতিকর হতে পারত সেগুলোকে অপসারণ করে পলিজোয়া সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যত্নসহকারে এবং ধীরগতিতে গমন করার” জন্য টেন্টাকলগুলি ব্যবহৃত হয়। ভাইব্রেকিউলার মতোই এ্যাভিকুলারিয়াটিও সম্ভবতঃ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এরা ক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণীদের ধরে ও বধ করে-মনে করা হয় যে এরা জলের প্রবাহের দ্বারা জুঅয়েডদের টেন্টাকলের নাগালের মধ্যে এসে পড়ে। কোন কোন প্রজাতিতে এ্যাভিকুলারিয়া এবং ভাইব্রেকিউলা উভয়ই থাকে, কোন কোন প্রজাতিতে এ্যাভিকুলারিয়া এবং অল্প কয়েকটিতে কেবলমাত্র ভাইব্রেকিউলা থাকে।

এটি কল্পনা করা সহজ নয় যে একটি ব্রিসল্স অথবা ভাইব্রেকিউলাম এবং একটি পাখির মাথার মতো একটি এ্যাডিকিউল্যারিয়াম-এর তুলনায় দুটি বস্তু আকৃতিতে আরও ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়; তথাপি এরা প্রায় নিশ্চিতরূপে সমরূপ এবং একই সাধারণ উৎস, যেমন এদের কোষ সমেত, একটি জুঅয়েড থেকে বিকশিত হয়েছে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি কেমন করে এইসব অঙ্গগুলি, যেমন মিঃ বাস্ক আমাকে জানিয়েছেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে ক্রমে ক্রমে রূপান্তরিত হয়। এরূপে লেপ্রালিয়ার কয়েকটি প্রজাতির এ্যভিকুলারিয়ার গতিশীল ম্যান্ডিবলটি (চোয়াল) একটি ব্রিস-এর মতো এত প্রসারিত হয় যে ওপরের স্থির চঞ্চটির উপস্থিতি এর এ্যাভিকুলারিয়ার মতো প্রকৃতি নির্ধারণ করতেই শুধু সাহায্য করে। ভাইব্রেকিউলিয়ামটি এ্যাভিকুলারিয়া ধাপটির মধ্য দিয়ে অতিক্রম না করে কোষগুলির ঠোঁট থেকে প্রত্যক্ষভাবে উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু এটি বোধহয় আরও সম্ভবপর যে এরা এই ধাপটি অতিক্রম করেছে, কারণ রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপগুলির রূপান্তরকালীন সময়ে জুঅয়েড-এর অন্তর্গত কোষটির অন্য অংশগুলি কদাচিৎ তৎক্ষণাৎ তিরোহিত হয়ে থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইব্রেকিউলাটির নিম্নভাগে খাঁজ-কাটা আলম্ব থাকে, যা সম্ভবতঃ স্থির চঞ্চুকে সূচিত করে; যদিও এই আলম্বটি কোন কোন প্রজাতিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ভাইব্রেকিউলার উদ্ভবের এই মতবাদ, যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক; কারণ যদি মনে করা হয় যে এ্যভিকুলারিয়া সম্বলিত সমস্ত প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল, উচ্চ কল্পনাশক্তিসম্পন্ন কেউ কখনও চিন্তা করবে না যে একটি পাখির মাথা অথবা একটি বাঁকাচোরা বাক্স বা ফণার সদৃশ একটি অঙ্গের অংশ হিসেবে প্রথমে অবস্থিত ছিল। এটি লক্ষ্য করা অতিশয় চিত্তাকর্ষক যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন দুটি অঙ্গ এরূপে একটি সাধারণ উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছে; এবং কোষটির চলন্ত ঠোঁটটি জুঅয়েডের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় বলে, বিশ্বাস করা কষ্টকর নয় যে সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপ, যেগুলির সাহায্যে ঠোঁটটি প্রথমে একটি এ্যাভিকুলারিয়ামের নিচের ম্যান্ডিবলে (চোয়ালে) এবং তারপর একটি দীর্ঘায়িত ব্রিস-এ রূপান্তরিত হয়েছিল, এভাবে বিভিন্ন রূপে ও বিভিন্ন অবস্থায় সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল।

উদ্ভিদজগতে মিঃ মিভার্ট কেবলমাত্র দুটি ঘটনার কথা প্রমাণস্বরূপ উত্থাপন করেছেন–অর্কিডের ফুলগুলির গঠন এবং আরোহী গাছগুলির চলন। প্রথমটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এদের উৎপত্তির ব্যাখ্যাটি সম্ভবতঃ পুরোপুরি অসন্তোষজনক–গঠনগুলির জায়মান, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রারম্ভগুলির ব্যাখ্যা করতে একেবারেই অপ্রতুল, যেগুলি তখনই উপকারে আসে যখন এরা কিছু পরিমাণে বিকশিত হয়। এই বিষয়টি নিয়ে আমি অন্যত্র বিশদভাবে আলোচনা করেছি বলে এখানে অর্কিড ফুলের সবচেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলির শুধুমাত্র একটির বিষয়ে বিস্তৃতভাবে বলব, যেমন এদের পলিনিয়া। অতিশয় বিকশিত একটি পলিনিয়াম (পরাগসমষ্টি) পরাগরেণুপুঞ্জের দ্বারা তৈরি, যা একটি স্থিতিস্থাপক দণ্ড অথবা কডিকল-এ আটকিয়ে থাকে এবং সেটি একটি আঠালো বস্তুপুঞ্জে আটকিয়ে থাকে। এভাবে পতঙ্গদের দ্বারা পলিনিয়াটি এক ফুল থেকে অন্য। ফুলের গর্ভমুণ্ডে বাহিত হয়। কোন কোন অর্কিডে পরাগরেণুপুঞ্জের কোন কডিকল থাকে না এবং রেণুগুলি সূক্ষ্ম সূতার দ্বারা বাঁধা থাকে; কিন্তু যেহেতু এগুলি অর্কিড়ে থাকে, তাই এর আলোচনা এখানে দরকার নেই; তথাপি আমি উল্লেখ করতে পারি যে অর্কিডেসি শ্রেণীর নিম্নভাগে, সিপ্রিপেডিয়ামে, আমরা দেখতে পাই সূত্রগুলি প্রথমে সম্ভবত কিভাবে বিকশিত হয়েছিল। অন্য অর্কিডগুলিতে সূত্রগুলি পরাগরেণুপুঞ্জের একটি প্রান্তে জড়িয়ে থাকে এবং এটি কডিকলের প্রথম অথবা জায়মান চিহ্ন তৈরি করে। এভাবেই কর্ডিকলের উৎপত্তি হয়েছে। এগুলি যখন বেশ দীর্ঘ এবং যথেষ্ট বিকশিত হয়, তখনও বন্ধ্যা পরাগরেণুপুঞ্জে এদের সাক্ষ্য পাওয়া যায়, যা মধ্য এবং শক্ত। অংশগুলিতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় কখনও কখনও আবিষ্কার করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ কডিকলের প্রান্তে সংযুক্ত অল্প পরিমাণ আঠালো বস্তুটি সম্পর্কে ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির একটি দীর্ঘ সারির বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে, যার প্রত্যেকটিই উদ্ভিদটির পক্ষে সাধারণভাবে উপকারী হয়। অন্য বর্গের অন্তর্গত অধিকাংশ ফুলে গর্ভমুণ্ড অল্প আঠালো বস্তু নিঃসরণ করে। এখন কোন কোন অর্কিডে এইপ্রকার আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়, কিন্তু তিনটির মধ্যে শুধুমাত্র একটি গর্ভমুণ্ড অধিক মাত্রায় আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে; এবং সম্ভবতঃ অধিক নিঃসরণের ফলে এই গর্ভমুণ্ডটি বন্ধ্যা হয়। একটি পতঙ্গ এই প্রকারের একটি ফুল পরিদর্শন করার সময় কিছু আঠালো পদার্থ ঘষে তুলে নেয় এবং এভাবে একই সময়ে কিছু পরাগরেণু অন্যত্র নিয়ে যায়। এইসরল অবস্থা থেকে–যা অংসখ্য সাধারণ ফুলের থেকে অল্পই ভিন্ন হয়–শুরু করে অসংখ্য ক্রমবিন্যাসগত ধাপ থাকে, থাকে সেইসব প্রজাতি যাদের পরাগপুঞ্জগুলি খুব ছোট, মুক্ত কডিকলে শেষ হয়, আবার অন্য কিছু প্রজাতিতে বন্ধ্যা কডিকলটি অধিক রূপান্তরিত হলেও আঠালো পদার্থটিতে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে। এই পরের ঘটনাগুলিতে আমরা অতিশয় বিকশিত এবং নিখুঁত অবস্থায় একটি পলিনিয়াম দেখি। যিনি নিজে অর্কিড ফুলগুলিকে ভালভাবে পরীক্ষা করবেন, তিনি ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির উপরোক্ত সুরির অবস্থান অস্বীকার করবেন না। সারিগুলি এরকম-একটি সাধারণ ফুলের অল্প পৃথক গর্ভমুণ্ড সমেত, সূত্রগুলি দ্বারা একত্রে বাঁধা পরাগরেণুর একটি পুঞ্জ থেকে, পতঙ্গ দ্বারা বাহিত হওয়ার জন্য সুন্দরভাবে অভিযোজিত একটি অতি জটিল পলিনিয়াম পর্যন্ত; অথবা তিনি অস্বীকার করবেন না যে কয়েকটি প্রজাতিতে সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বিভিন্ন পতঙ্গদের দ্বারা এদের নিষিক্তকরণের জন্য প্রত্যেক ফুলের সাধারণ গঠন সাপেক্ষে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রটিতে এবং অন্যান্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে অনুসন্ধানটি পিছনের দিকে করা যেতে পারে এবং জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে একটি সাধারণ ফুলের গর্ভমুণ্ডটি কিভাবে আঠালো হয়। কিন্তু যেহেতু আমরা জীবদের কোন গোষ্ঠীর পূর্ণ ইতিহাস জানি না, তাই প্রশ্ন করা যেমন অনর্থক, তেমনি এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করাও বৃথা।

এখন আমরা রোহিণী গাছগুলির বিষয়ে আলোচনা করব। এগুলিকে একটি দীর্ঘ সারিতে বিন্যস্ত করা যেতে পারে, যেমন একটি আলম্বের চতুর্দিকে সরলভাবে কুণ্ডলী পাকায় এমনগুলি থেকে শুরু করে সেইগুলি পর্যন্ত যাদের আমরা পাতা রোহিণী বলি, এবং সেইগুলি পর্যন্ত যাদের আকর্ষ আছে। শেষোক্ত দুটি ক্ষেত্রে কাণ্ডগুলি সাধারণতঃ (কিন্তু সর্বদা নয়) কুণ্ডলী পাকানোর ক্ষমতা হারিয়েছে, যদিও এদের আবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা বজায় আছে, ঐ ক্ষমতাটি আকর্ষের থাকে। পাতা রোহিণী থেকে আকর্ষবাহী পর্যন্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি আশ্চর্যজনকভাবে অতিশয় নিকটবর্তী এবং কোন কোন, উদ্ভিদে গতানুগতিকভাবে হয় এই শ্রেণীতে না-হয় অন্য শ্রেণীতে রাখা যেতে পারে। কিন্তু সরল কণ্ডলীকারী থেকে পাতা রোহিণী পর্যন্ত শ্রেণীগুলিতে একটি প্রধান গুণ যুক্ত হয়েছে, যা হল স্পর্শ সংবেদনশীলতা, যার দ্বারা পাতা অথবা ফুলগুলির বৃন্ত অথবা এদের রূপান্তরিত আকর্ষগুলি স্পর্শকারী বস্তুকে আঁকড়ে ধরা এবং বস্তুটির দিকে বাঁকার জন্য উত্তেজিত হয়। এইসব উদ্ভিদ সম্পর্কে যিনি আমার লেখা পড়বেন, তিনি স্বীকার করবেন যে সরল কুণ্ডলীকারক এবং আকর্ষবাহীদের মধ্যে কার্যপ্রক্রিয়ায় ও গঠনে সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপ প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রজাতির পক্ষে অত্যন্ত উপকারী হয়। যেমন, পাতা আরোহীতে রূপান্তরিত হওয়াটা একটি কুণ্ডলীকারক গাছের পক্ষে স্পষ্টতঃ প্রভূত উপকারী হয়, এবং এটি সম্ভবপর যে লম্বা বৃন্তযুক্ত পাতা সমেত প্রত্যেক কুণ্ডলীকারক গাছ একটি পাতা আরোহীতে রূপান্তরিত হয়ে থাকবে-যদি বৃন্তগুলি স্বল্পতম মাত্রাতেও প্রয়োজনীয় স্পর্শ-সংবেদনশীলতার অধিকারী হয়।

যেহেতু পেঁচানো হচ্ছে একটি অবলম্বনকে ধরে ওপরে ওঠার সরলতম উপায় এবং এটি আমাদের ক্রমমালার ভিত্তিস্বরূপ, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করা যেতে পারে কেমন করে উদ্ভিদরা জায়মান অবস্থায় এই ক্ষমতা অর্জন করেছিল এবং পরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নত হয়েছিল ও বৃদ্ধি পেয়েছিল। পেঁচানোর ক্ষমতাটি নির্ভর করে, প্রথমতঃ, কচি অবস্থায় অতিশয় নমনীয় কাণ্ডের ওপর (কিন্তু আরোহী নয় এমন বহু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য); এবং দ্বিতীয়ত, পরিধির বেড়ের সকল বিন্দুতে অনবরত একই বিন্যাসে, একটির পর অন্যটির পর্যায়ক্রমিক বাঁকের ওপর। এই চলনটির দ্বারা কাণ্ড সবদিকে বাঁকে এবং পাকিয়ে পাকিয়ে উঠতে থাকে। একটি কাণ্ডের নিচের অংশটি যখন কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত পায় এবং বাধা পায়, উপরে অংশটি তখনও বাঁকতে থাকে ও ঘুরতে থাকে এবং এভাবে অবলম্বনটিকে পাকিয়ে পাকিয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। আবর্তন চলন প্রত্যেক বীটপের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর বন্ধ হয়। যেহেতু উদ্ভিদদের ব্যাপকভাবে ভিন্ন অনেক গোত্রে কেবলমাত্র একটি প্রজাতি এবং একটি গণ আবর্তন ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং এভাবে বল্লী হয়, তাই বলা যায় এরা নিশ্চয় এটি স্বাধীনভাবে অর্জন করেছে, কোন সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়নি। সুতরাং আমি বলেছিলাম যে এই ধরনের একটি চলনের অল্প কিছু প্রবণতা যে উদ্ভিদগুলি আরোহী হয়নি তাদের ক্ষেত্রে বিরল নয় এবং এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজ করার ও উন্নত হওয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। আমি যখন এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম তখন শুধু একটি অসম্পূর্ণ ঘটনার কথা জানতাম, যথা একটি মৌরান্ডিয়ার কচি পুষ্পদণ্ডগুলি পাকানো উদ্ভিদের কাণ্ডের মত অল্প ও অনিয়মিতভাবে আবর্তিত হয়, কিন্তু এই স্বভাবকে একেবারেই কাজে লাগায় না। ঠিক এর পরই ফ্রিজ মুলার আবিষ্কার করেছিলেন যে একটি এ্যালিস্মা এবং একটি লাইনামের কচি কাণ্ডগুলি–যে উদ্ভিদগুলি আরোহী হয় না এবং প্রাকৃতিক তন্ত্রে ব্যাপকভাবে ভিন্ন-সাধারণ অবস্থায় আবর্তিত হয়, যদিও অনিয়মিতভাবে; এবং তিনি বলেন যে তার ধারণা এটি অন্যান্য উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও ঘটে। এইসব অল্প বিচলন বিবেচ্য উদ্ভিদগুলির পক্ষে কোন উপকারে আসে বলেই মনে হয়; তবে আরোহীদের ক্ষেত্রে এদের অন্ততঃ কোন ব্যবহার নেই, যেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া, আমরা দেখতে পারি যে এইসব উদ্ভিদের কাণ্ড নমনীয় হয় এবং যদি ওপরে উঠতে পরিবেশ এদের সাহায্য করে থাকত, তাহলে অল্প এবং অনিয়মিতভাবে আবর্তনের স্বভাবটি বৃদ্ধি পেত এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবহৃত হত, যে পর্যন্ত না এরা অতিশয় বিকশিত পেঁচানো প্রজাতিতে রূপান্তরিত হত।

পাতা ও ফুলের বৃন্ত ও আকর্ষের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে প্রায় একই মন্তব্য প্রযোজ্য, যেমন বল্লী উদ্ভিদগুলির আবর্তনমূলক চলন সম্পর্কে প্রযোজ্য। ব্যাপকভাবে ভিন্ন গোষ্ঠীদের অন্তর্গত বিরাট সংখ্যক প্রজাতিরা এই প্রকার সংবেদনশীলতা গুণের অধিকারী হয় বলে জায়মান অবস্থায় অনেক উদ্ভিদে এটি দেখতে পাওয়া যাবে, যারা আরোহী হয়নি। এটাই হচ্ছে ঘটনাঃ আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে উপরের মৌরাণ্ডিয়ার কচি পুষ্পদণ্ডগুলি নিজেরাই অল্পভাবে সেইদিকে বেঁকেছিল যেদিকে এটি স্পর্শিত হয়েছিল। অক্সালিসের কয়েকটি প্রজাতিকে মোরেন লক্ষ্য করেছিলেন, যাদের পাতা ও বৃন্তগুলি বিশেষভাবে উজ্জ্বল রৌদ্রে ঘুরেছিল, যখন এদের শান্তভাবে এবং পুনঃপুনঃ স্পর্শ করা হয়েছিল অথবা যখন উদ্ভিদটিকে নাড়া দেওয়া হয়েছিল। অক্সালিসের অন্য প্রজাতির ক্ষেত্রে আমি পুনরায় এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলাম এবং একই ফল পেয়েছিলাম; এদের কয়েকটিতে চলন স্পষ্ট ছিল, কিন্তু কচি পাতায় এটি স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল, অন্যগুলিতে এটি অতিশয় অল্প ছিল। এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ হফমেইস্টারের মতানুসারে, সমস্ত উদ্ভিদের কচি বীটপ ও পাতাগুলি নাড়ানোর পর চলনশীল হয়; এবং আরোহী উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে, যেমন আমরা জানি, কেবল বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় দণ্ড ও আকর্ষগুলি সংবেদনশীল হয়।

এটি মোটেই সম্ভবপর নয় যে স্পর্শ অথবা নাড়ানোর জন্য উদ্ভিদের কচি ও বর্ধনশীল অঙ্গগুলিতে উপরে বর্ণিত অল্প চলন এদের পক্ষে কার্যপ্রক্রিয়াগত কোন উপকারে লাগতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন উদ্দীপকে সাড়া দেওয়ার জন্য উদ্ভিদরা চলনক্ষমতার অধিকারী হয়, যা এদের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; যেমন, আলোর দিকে এবং আরও কদাচিৎ বিপরীতদিকে, অভিকর্ষের বিপরীতদিকে এবং কদাচিৎ অভিকর্ষের দিকে। কোন প্রাণীর স্নায়ু ও মাংসপেশী যখন বিদ্যুৎপ্রবাহ অথবা স্ত্রিকনিন গ্রহণ দ্বারা উত্তেজিত হয়, তখন ফলশ্রুতিমূলক চলনটিকে আপতিক ফল বলা যেতে পারে, কারণ স্নায়ু ও মাংসপেশীগুলি এই উদ্দীপক দ্বারা বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয় না। এভাবে প্রাণীদের ক্ষেত্রে মনে হয় যে কোন উদ্দীপকে সাড়া দেবার চলনক্ষমতা থাকলেও, স্পর্শ : ও নাড়ানোর দ্বারা এরা আপতিকভাবে উত্তেজিত হয়। সুতরাং স্বীকার করতে তেমন কোন অসুবিধা নেই যে পাতা আরোহী ও আকর্ষবাহীদের ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে সেই প্রবণতা যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণ করেছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটি সম্ভঘপর যে এটি কেবল সেই সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকবে, যেগুলি ইতিমধ্যেই আবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করেছিল এবং এভাবে বল্লী হয়েছিল।

আমি ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি কেমন করে উদ্ভিদরা বল্লী হয়েছিল, যথা অল্প এবং অনিয়মিত আবর্তনমূলক চলনের দিকে প্রবণতার বৃদ্ধি দ্বারা, যা প্রথমে এদের। পক্ষে আদৌ উপকারী ছিল না; এই চলন এবং একটি স্পর্শ অথবা নাড়ানোর জন্য চলন, যা চলনক্ষমতার আপতিক ফল, অন্য ও উপকারী উদ্দেশ্যগুলির জন্য অর্জিত হয়েছিল। আরোহী উদ্ভিদদের ক্রমিক বিকাশের সময় ব্যবহারের বংশগত প্রভাবের দ্বারা প্রাকৃতিক নির্বাচন সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত করার ঝুঁকি আমি নেব না; কিন্তু আমরা জানি যে কোন কোন পুনরাবৃত্তিমূলক চলন, যেমন উদ্ভিদদের সুপরিচিত নিদ্রা, স্বভাব দ্বারা চালিত হয়।

একজন দক্ষ প্রকৃতিবিদের দ্বারা যত্নসহকারে নির্বাচিত বিভিন্ন ঘটনার আলোচনা আমি যথেষ্ট করেছি। করেছি এটি প্রমাণ করতে যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা উপকারী দেহগঠনসমূহের জায়মান ধাপগুলির ব্যাখ্যা করা যায় না; এবং আমি দেখিয়েছি যে এই বিষয়ে তেমন কোন অসুবিধা নেই। পরিবর্তিত ক্রিয়াবিক্রিয়াগুলির সঙ্গে প্রায়শই যুক্ত, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং যা এই গ্রন্থের আগের সংস্করণগুলিতে যথেষ্টভাবে আলোচিত হয়নি, দেহগঠনের ক্রমবিন্যাসগুলির ওপর একটু বিস্তৃতভাবে বলার সুযোগ এভাবে উপস্থিত হয়েছে। এখন আমি পূর্বোল্লিখিত ঘটনাগুলি সংক্ষেপে পুনরাবৃত্তি করব।

জিরাফদের প্রসঙ্গে, কতিপয় বিলুপ্ত উঁচু রোমন্থক প্রাণীর অনবরত সংরক্ষণ, যাদের গলা ও পা ইত্যাদি লম্বা ছিল এবং যারা গড় উচ্চতার কিছুদূর পর্যন্ত পাতা ইত্যাদি ছিঁড়ে খেতে পারত, এবং এত উঁচুতে পাতা ছিঁড়ে খেতে পারত না এমন প্রাণীদের অনবরত ধ্বংসসাধন এই অসাধারণ চতুষ্পদ প্রাণীটির উদ্ভবের পক্ষে যথেষ্ট হয়ে থাকবে; কিন্তু বংশানুসৃতি এবং সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার একত্রে এদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে সমন্বয় সাধনের জন্য সাহায্য করে থাকবে। বিভিন্ন বস্তুকে অনুকরণকারী অনেক পতঙ্গদের ক্ষেত্রে, এই বিশ্বাসটিতে কোন অসম্ভাব্যতা নেই যে কোন সাধারণ বস্তুর সঙ্গে একটি আকস্মিক সাদৃশ্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজের ভিত্তি ছিল, যখন থেকে অল্প পরিবর্তনগুলি আকস্মিক সংরক্ষণের মাধ্যমে নিখুঁত হয়েছিল, যা সদৃশতাকে আরও নিকটবর্তী করেছিল এবং এটি সেই সময় পর্যন্ত ঘটতে থাকবে যে সময় পর্যন্ত পতঙ্গটি পরিবর্তিত হবে এবং সেই সময় পর্যন্ত আরও নিখুঁতভাবে সদৃশ হতে থাকবে যে সময় পর্যন্ত এটি তীক্ষ্ণদৃষ্টিসম্পন্ন শত্রুদের হাত থেকে পালাতে সমর্থ হবে। তিমিদের কয়েকটি প্রজাতিতে তালুর ওপর ছোট শিঙের মতো অনিয়তাকার বিন্দু তৈরির প্রবণতা রয়েছে; এবং সম্ভবত যে সমস্ত অনুকূল পরিবর্তনগুলিকে সংরক্ষণ করা প্রাকৃতিক নির্বাচনের সম্পূর্ণ আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি রাজহংসের চঞ্চুর ল্যামেলাযুক্ত নব বা দাঁতের মতো নব বা দাঁতে এই বিন্দুগুলি প্রথমে রূপান্তরিত হয়েছিল, এরপর গৃহপালিত হাঁসেদের মতো ছোট ল্যামেলায়, তারপর সোভেলার হাঁসের নিখুঁত ল্যামেলার মতো ল্যামেলায়, এবং অবশেষে গ্রীনল্যান্ড তিমির মুখের মধ্যে অবস্থিত টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির মতো বিশাল প্লেটে রূপান্তরিত হয়েছিল। হাঁস গোত্রটিতে ল্যামেলাগুলি প্রথমে দাঁত হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তারপর অংশত দাঁত হিসাবে ও অংশত জল ছেটানোর যন্ত্র হিসাবে, এবং অবশেষে শুধুমাত্র শেষোক্ত উদ্দেশ্যটির জন্যই ব্যবহৃত হয়।

হর্নের উপরোক্ত ল্যামেলা অথবা তিমির হাড়ের মতো এইসব দেহগঠনের ক্ষেত্রে, আমরা যতদূর বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারি, স্বভাব অথবা ব্যবহার এগুলির বিকাশের পক্ষে অল্প কিছু করে থাকতে পারে বা কিছুই না-ও করে থাকতে পারে। অন্যদিকে, একটি চেপ্টা মাছের নিচের চোখটির মাথার ওপরের দিকে গমন এবং আত্মরক্ষামূলক একটি লেজের সৃষ্টি বংশানুসৃতির সঙ্গে প্রায় সামগ্রিকভাবে অনবরত ব্যবহারের ফলেই হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। উচ্চতর প্রাণীদের স্তনগ্রন্থিগুলি প্রসঙ্গে সবচেয়ে সম্ভবপর অনুমানটি হচ্ছে যে একটি মাসুপিয়াল থলির সমগ্র পৃষ্ঠের ওপর ত্বক সংক্রান্ত গ্রন্থিগুলি প্রাথমিকভাবে একটি পুষ্টিকর রস নিঃসরণ করত, এই গ্রন্থিগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াগতভাবে উন্নত হয়েছিল ও একটি সীমাবদ্ধ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল এবং এভাবে একটি স্তনগ্রন্থি সৃষ্টি হয়ে থাকবে। একটি অঙ্গের শেষ এবং সর্বশেষ অংশটির, যা প্রথমে কেবলমাত্র গমনক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হত, অল্প কার্যকরী রূপান্তরের দ্বারা খোলকী প্রাণীদের সাঁড়াশিগুলির বিকাশ হয়েছিল–এটি যেভাবে বোঝা যায়, সেভাবেই বোঝা যায় কেমন করে কোন কোন আদিম একিনোর্ডাম-এর শাখাবহুল কাঁটাগুলি, যা আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হত, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রাইড্যাক্টাইল পেডিসেলারিয়াতে রূপান্তরিত হয়েছিল। পলিজোয়ার এ্যাভিকুলারিয়া ও ভাইব্রেকিউলাতে আকৃতিগতভাবে বহুলাংশে ভিন্ন অঙ্গসমূহ থাকে যারা একই উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছিল; এবং ভাইব্রেকিউলার ক্ষেত্রে, আমরা বুঝতে পারি কেমন করে পর্যায়ক্রমিক ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি উপকারী হয়ে থাকতে পারে। অর্কিডের পলিনিয়ার ক্ষেত্রে, যা পরাগরেণুকে বাঁধার কাজে প্রথমে ব্যবহৃত হওয়া সূত্রগুলির কডিকলগুলিকে আটকিয়ে রাখে কিনা খুঁজে বের করা যেতে পারে; এবং ধাপগুলি, যার দ্বারা আঠাল পদার্থ সেইভাবে নিঃসৃত হয়ে থাকতে পারে যেভাবে সাধারণ ফুলের গর্ভমুণ্ড থেকে আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং এখনও হুবহু এক না হলেও প্রায় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, সেভাবেই কডিকলের মুক্ত প্রান্তে আটকিয়ে থাকত; আলোচ্য উদ্ভিদদের এইসব ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি স্পষ্টতঃ উপকারী ছিল। আরোহী উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে, সম্প্রতি যা। বলা হয়েছে আমি আর তার পুনরাবৃত্তি করব না।

অনেকে বলেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন যদি এতই শক্তিশালী হয়, তাহলে কোন কোন প্রজাতিতে কেন এই অথবা ঐ দেহগঠনটি অর্জিত হয় না, যা থেকে প্রজাতিটি স্পষ্টতই লাভবান হতে পারত। প্রত্যেক প্রজাতির অতীত ইতিহাস এবং পরিবেশ সম্পর্কে, যা বর্তমানে তাদের সংখ্যা ও বিস্তার নির্ধারণ করে, আমাদের অজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে, এইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আশা করা অযৌক্তিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সাধারণ কারণ এবং অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ আরোপ করা যেতে পারে। এভাবে একটি প্রজাতিকে জীবনের নূতন স্বভাবসমূহে মানিয়ে নিতে হলে, অনেক সমন্বয়মূলক রূপান্তর প্রায় অপরিহার্যরূপে প্রয়োজনীয় হয়, এবং এটি প্রায়শই ঘটে থাকতে পারে যে অপরিহার্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি সঠিক উপায়ে অথবা সঠিক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়নি। অসংখ্য প্রজাতি সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে গিয়ে ধ্বংসকারী উপাদানগুলির দ্বারা নিশ্চয় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকবে, যেগুলির সঙ্গে কয়েকটি দেহগঠনের কোন সম্পর্ক ছিল না, আমরা কল্পনা করি যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকবে, কারণ প্রজাতির পক্ষে সেটি লাভজনক হয়েছে বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু জীবনসংগ্রাম এই দেহগঠনের ওপর নির্ভর করে নি, তাই এগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকতে পারে না। অসংখ্য ক্ষেত্রে, অদ্ভুত প্রকৃতির জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশ একটি গঠনের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়; এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশসমূহ কদাচিৎ একত্র হতে পারে। যে কোন একটি দেহগঠন, যাকে আমরা ভুলবশতঃ হলেও একটি প্রজাতির পক্ষে উপকারী বলে মনে করি, তা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সকল পরিবেশে অর্জিত হয়ে থাকবে এই বিশ্বাসটি, যেভাবে আমরা এর কার্যপ্রণালীর উপায় সম্বন্ধে বুঝতে পারি তার বিরোধী। মিঃ মিভার্ট অস্বীকার করেননি যে প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন কিছু সম্পাদন করেনি; কিন্তু এর মাধ্যমগুলির দ্বারা আমার ব্যাখ্যাত ঘটনাসমূহ বিচার-বিবেচনা করতে

গিয়ে তিনি একে “স্পষ্টতই অপ্রতুল” হিসেবে মনে করেছেন। তার প্রধানতম যুক্তিগুলি আলোচনা করা হয়েছে, অন্যগুলি পরে আলোচনা করা হবে। অন্যান্য উপাদানগুলির দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষমতার অনুকূলে যে-সব যুক্তি রয়েছে, সেগুলির তুলনায় মিঃ মিভার্টের যুক্তিগুলি নিতান্তই দুর্বল। আমি আরও বলতে বাধ্য যে আমার দ্বারা এখানে উল্লিখিত ঘটনা ও যুক্তিসমূহের কয়েকটি একই উদ্দেশ্যে : মেডিকো চিরারজিক্যাল রিভিউ’-তে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সুযোগ্য প্রবন্ধে উত্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রায় সব প্রকৃতিবিদরাই কোন না কোন প্রকারের বিবর্তনকে স্বীকার করেন। মিঃ মিভার্ট বিশ্বাস করেন যে প্রজাতিগুলি “কোন আভ্যন্তরীণ শক্তি অথবা প্রবণতা দ্বারা পরিবর্তিত হয়, তবে সে বিষয়ে কোন কিছু জানা থাকার দাবি তিনি করেননি। সব বিবর্তনবাদীরাই স্বীকার করবেন যে পরিবর্তনের জন্য প্রজাতিদের একটি ক্ষমতা আছে; কিন্তু আমার মনে হয় সাধারণ পরিবর্তনশীলতার প্রবণতার বাইরে কোন আভ্যন্তরীণ শক্তিকে খুঁজে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই, বিভিন্নতার জন্য মানুষের দ্বারা নির্বাচনের সাহায্যে অসংখ্য সু-অভিযোজিত গৃহপালিত জাতের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমবিন্যস্ত ধাপগুলির দ্বারা প্রাকৃতিক জাত অথবা প্রজাতিগুলি সমভাবে সৃষ্টি হবে। চূড়ান্ত ফলটি, সংগঠনের পক্ষে সাধারণভাবে অগ্রগমন হবে, কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রত্যাগমন ঘটবে।

মিঃ মিভার্ট আরও বিশ্বাস করেন এবং কয়েকজন প্রকৃতিবিদ তাঁর সঙ্গে একমত যে নূতন প্রজাতিরা “আকস্মিকভাবে এবং যুগপৎ ঘটা রূপান্তরগুলির ফলেই আবির্ভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মনে করেন যে তিন আঙ্গুলযুক্ত বিলুপ্ত হিপারিওন এবং ঘোড়ার মধ্যে পার্থক্য আকস্মিকভাবেই ঘটেছিল। তিনি বিশ্বাস করতে অসুবিধা বোধ করেন যে পাখির ডানা “একটি স্পষ্টচিহ্নিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধরনের আকস্মিক রূপান্তরের দ্বারা না হয়ে অন্য কোন উপায়ে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বাদুড় ও টেরোড্যাক্টাইলদের ডানা সম্বন্ধেও একই মতবাদ স্পষ্টভাবে পেশ করেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত, যা ক্রমমালায় বড়সড় ভাঙ্গন অথবা বিচ্ছিন্নতারই ইঙ্গিত দেয়, তা আমার অসম্ভব বলেই মনে হয়।

যাঁরা ক্রমিক ও মন্থর বিবর্তনে বিশ্বাস করেন, তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন যে বিশেষ পরিবর্তনগুলি অন্য যে কোন পরিবর্তনের মতো আকস্মিক ও বিরাট হয়ে থাকতে পারে, যা আমরা প্রকৃতিতে, এমনকি গৃহপালনেও লক্ষ্য করি। কিন্তু যেহেতু প্রজাতিরা প্রাকৃতিক অবস্থার তুলনায় গৃহপালনাধীনে অথবা চাষযোগ্য অবস্থায় আরও পরিবর্তনশীল হয়, সেহেতু এটি সম্ভবপর নয় যে এরূপ বিরাট ও আকস্মিক পরিবর্তনসমূহ প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রায়শই ঘটেছে, যেটি গৃহপালনাধীন অবস্থায় মাঝেমাঝে উদ্ভূত হয় বলে জানা গেছে। শেষোক্ত পরিবর্তনগুলির কয়েকটিকে পুনরাবৃত্তিমূলক হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, এবং এভাবে পুনরাবির্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলি যে অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে ক্রমিক উপায়ে প্রাপ্ত হয়েছিল–এমনটা হওয়া অসম্ভব নয়। আরও বেশি সংখ্যককে অঙ্গবিকৃতিমূলক বলে নিশ্চয় চিহ্নিত করা যেতে পারে, যথা ছয়টি আঙ্গুলযুক্ত মানুষ, শজারু মানুষ (porcupine men), অ্যানকন ভেড়া, নিয়াটা গো-মহিষাদি ইত্যাদি; এবং এরা প্রাকৃতিক প্রজাতির থেকে বৈশিষ্ট্যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় বলে এরা আমাদের বিষয়টিতে অল্পই আলোকপাত করে। আকস্মিক পরিবর্তনের এই ঘটনাগুলি ব্যতিরেকে, অবশিষ্টাংশের কয়েকটি, যদি এদের প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া যায়, এদের পিতামাতার নমুনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বড়জোর সন্দেহজনক প্রজাতি সৃষ্টি করবে।

গৃহপালিত জাতগুলিতে মাঝেমাঝে যেমনটা ঘটে তেমনভাবে প্রাকৃতিক প্রজাতিগুলি আকস্মিকভাবে পরিবর্তিত হয় কিনা সে ব্যাপারে আমার সংশয় এবং মিঃ মিভার্ট কর্তৃক কথিত অদ্ভুত উপায়ে এদের পরিবর্তিত হওয়ার ব্যাপারে আমার পরিপূর্ণ অবিশ্বাসের যুক্তিগুলি নিম্নরূপ। আমাদের অভিজ্ঞতানুসারে, সুচিহ্নিত এবং আকস্মিক পরিবর্তন আমাদের গৃহপালনাধীন উৎপাদনে এককভাবে এবং যথেষ্ট দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত হয়। প্রাকৃতিক অবস্থায় যদি এরূপ ঘটে, তাহলে এদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এরা ধ্বংসের দুর্ঘটনামূলক কারণের দ্বারা এবং পরে আন্তঃসংকরণ দ্বারা লুপ্ত হতে বাধ্য হবে; এবং গৃহপালনাধীন অবস্থায় এটি এরূপ হয় বলে জানা গেছে, যদি না এই ধরনের আকস্মিক পরিবর্তনগুলি মানুষের যত্নের দ্বারা বিশেষভাবে সংরক্ষিত এবং পৃথকীকৃত হয়। অতএব মিঃ মিভার্টের প্রদর্শিত উপায়ে কোন নূতন প্রজাতিকে হঠাৎ আবির্ভূত হতে হলে সমস্ত উপমার বিরুদ্ধাচরণ করে এটি করার জন্য ধরে নিতে হবে যে আশ্চর্যজনকভাবে পরিবর্তিত কতিপয় একক একই জেলায় যুগপৎ আবির্ভূত হয়েছিল। মানুষের দ্বারা অচেতন নির্বাচনের বিষয়টির মতো এই প্রতিবন্ধকটি যে কোন অনুকূল দিকে কম-বেশি পরিবর্তিত হওয়া অসংখ্য এককদের সংরক্ষণের মাধ্যমে এবং বিপরীতদিকে পরিবর্তিত হওয়া বিরাট সংখ্যক এককদের ধ্বংসসাধনের দ্বারা ক্রমিক বিবর্তন তত্ত্বের সাহায্যে দূর করা যায়।

প্রায় নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে যে অনেক প্রজাতি অতি ক্রমান্বয়িক উপায়ে উদ্ভূত হয়েছে। বিরাট প্রাকৃতিক গোত্রদের প্রজাতি এবং এমনকি গণগুলি এত ঘনিষ্ঠভাবে একত্রে সম্বন্ধযুক্ত যে এদের পৃথক করতে খুব অসুবিধা হয়। প্রত্যেক মহাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে, নিম্নভূমি থেকে উচ্চভূমির দিকে অগ্রসর হলে, আমরা গভীর সম্পর্কযুক্ত অথবা প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতিদের দলগুলির সাক্ষাৎ পাই; এটি আমরা কোন কোন স্বতন্ত্র মহাদেশেও দেখি, আমাদের মতে যারা আগে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু এইসব এবং নিচের মন্তব্যগুলি করে, আমি সেই বিষয়গুলি উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি যেগুলি এর পর আলোচিত হবে। একটি মহাদেশের চতুর্দিকের দ্বীপগুলি লক্ষ্য করুন। দেখবেন এদের অধিবাসীদের কয়েকটিকে সন্দেহজনক প্রজাতির স্তরে উন্নীত করা যেতে পারে। এটি এরূপ হয় যদি আমরা অতীতের দিকে তাকাই এবং ইতিমধ্যে লুপ্ত হয়েছে এমন প্রজাতির সঙ্গে একই অঞ্চলের মধ্যে এখনও টিকে থাকা প্রজাতিগুলির তুলনা করি, অথবা যদি আমরা একই ভূতাত্ত্বিক গঠনস্তরের উপস্তরগুলিতে সঞ্চিত জীবাশ্ম প্ৰজাতিদের তুলনা করি। বাস্তবিকই এটি স্পষ্ট যে অসংখ্য প্রজাতি অন্য প্রজাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত, যারা এখনও বেঁচে আছে অথবা সম্প্রতিকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিল; এবং কদাচিৎ এটি সমর্থন করা যাবে যে এইসব প্রজাতি আকস্মিকভাবে অথবা অপ্রত্যাশিতভাবে বিকশিত হয়েছে। অথবা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, যখন স্বতন্ত্র প্রজাতির পরিবর্তে আমরা সম্পর্কিত প্রজাতিদের বিশেষ অঙ্গ গুলি লক্ষ্য করি, তখন ব্যাপকভাবে ভিন্ন দেহগঠনগুলিকে একত্রে সংযুক্তকারী অসংখ্য এবং চমৎকার সূক্ষ্ম ক্রমবিন্যাসগত ধাপসমূহকে খুঁজে বের করা যেতে পারে।

বহু সংখ্যক ঘটনা বোধগম্য হয় শুধুমাত্র এই নীতি অনুযায়ী যে অতিশয় ছোট ছোট ধাপগুলির মাধ্যমে প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, বৃহত্তর গণগুলির অন্তর্গত প্রজাতিরা পরস্পরের সঙ্গে অধিকতর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং ক্ষুদ্রতর গণগুলির অন্তর্গত প্রজাতিদের তুলনায় বিরাট সংখ্যক ভ্যারাইটিদের উপস্থিত করে। প্রজাতিকে কেন্দ্র করে ভ্যারাইটিরা যেমন দলবদ্ধ হয়, তেমনি পূর্বোক্তটিও ছোট ছোট গোষ্ঠীতে দলবদ্ধ হয় এবং এরা ভ্যারাইটিদের সঙ্গে অন্য সাদৃশ্য উপস্থিত করে, যা দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছিল। এই একই নীতি অনুযায়ী আমি বুঝতে পারি কেমন করে প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যগুলি গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনায় আরও বেশি পরিবর্তনশীল হয় এবং কেমন করে অসাধারণ মাত্রায় অথবা উপায়ে উদ্ভূত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি একই প্রজাতির অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলির তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল হয়। এরূপ অসংখ্য ঘটনা উপস্থিত করা যেতে পারত, যেগুলি সকলে একই দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে।

যদিও অনেক অনেক প্রজাতি সেই সব ধাপগুলির মারফৎ নিশ্চয় উৎপন্ন হয়েছে যেগুলি সূক্ষ্ম ভ্যারাইটিদের পৃথক করার ধাপসমূহের তুলনায় বৃহত্তর নয়, তথাপি উল্লেখ করা যেতে পারে যে কোন কোন প্রজাতি একটি ভিন্ন আকস্মিক উপায়ে উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া এরূপ স্বীকারোক্তি করা উচিত নয়। এই মতবাদের পক্ষে উত্থাপিত মিঃ চাউন্সে রাইট কর্তৃক প্রদর্শিত অস্পষ্ট এবং কিছু মাত্রায় ভুল উপমা, যথা অজৈব পদার্থের হঠাৎ কেলাস গঠন অথবা এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শ্বে বহুপাশ্বসমন্বিত গোলকের পতন, কদাচিৎ আলোচনার যোগ্য হয়। তবে এই শ্রেণীর তথ্যগুলি, যথা আমাদের ভূতাত্ত্বিক গঠনস্তরগুলিতে জীবনের নূতন ও স্বতন্ত্র আকারদের হঠাৎ আবির্ভাব, আকস্মিক উদ্ভবের বিশ্বাসকে প্রথম দর্শনে সমর্থন করে। কিন্তু এই সাক্ষ্যপ্রমাণের মূল্য পৃথিবীর ইতিহাসের অতীত যুগগুলির সম্পর্কে ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডের  নিখুঁততার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে। যদি রেকর্ডটি অসম্পূর্ণ হয়, যা অনেক ভূতাত্ত্বিক জোরের সঙ্গে উল্লেখ করেন, তাহলে এটি কোন অদ্ভুত ব্যাপার নয় যে নূতন আকারগুলি সম্ভবতঃ হঠাৎই আবির্ভূত হয়েছে।

যদি না আমরা স্বীকার করি যে রূপান্তরগুলি এত বিস্ময়কর যে বিষয়ে মিঃ মিভার্ট ওকালতি করেছেন, যেমন পাখি অথবা বাদুড়দের ডানার হঠাৎ উদ্ভব অথবা একটি হিপারিওনের একটি ঘোড়ায় হঠাৎ রূপান্তর, আমাদের ভূতাত্ত্বিক গঠনস্তরগুলির সংযোজকদের অভাবের ওপর হঠাৎ রূপান্তরে বিশ্বাসের দ্বারা কোন আলোকপাত করা যায় না। কিন্তু এই ধরনের আকস্মিক পরিবর্তনের ধারনার বিরুদ্ধে ভূণবিজ্ঞান প্রবলভাবে প্রতিবাদ করে। এটি সর্বজনবিদিত যে পাখি ও বাদুড়ের ডানা এবং ঘোড়া অথবা অন্য চতুষ্পদ প্রাণীদের পাণ্ডলিকে প্রাথমিক জ্বনাবস্থায় পার্থক্য করা যায় না, এবং অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধাপের দ্বারা এরা ভিন্ন হয়। আমাদের বর্তমান প্রজাতিদের পূর্বপুরুষদের অল্প বয়সের পর পরিবর্তিত হওয়ার দ্বারা এবং নূতনভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলিকে নিজেদের বংশধরদের মধ্যে সমরূপ বয়সে বংশগতভাবে প্রেরণ করার দ্বারা সমস্ত ধরনের ভূণগত সাদৃশ্যকে বিবেচনা করা যেতে পারে, যে প্রসঙ্গে আমরা পরে আলোচনা করব। এরূপে ক্রুণটি প্রায় অপ্রভাবিত অবস্থায় থাকে এবং প্রজাতিদের অতীত অবস্থানের রেকর্ড হিসাবে থাকে। অতএব বর্তমানের প্রজাতিরা তাদের উদ্ভবের প্রাথমিক ধাপগুলিতে প্রায়শই একই শ্রেণীর অন্তর্গত আদিম এবং লুপ্ত আকারগুলির সদৃশ হয়। ভূণগত সদৃশতার মতবাদ অনুসারে এবং বস্তুত যে কোন মতবাদ অনুযায়ী এটি অবিশ্বাস্য যে একটি প্রাণী উপরে উল্লিখিত বক্তব্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও আকস্মিক রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে গিয়েও ভূণাবস্থায় কোন আকস্মিক রূপান্তরের একটি চিহ্নও বহন করবে না; এর গঠনের প্রত্যেক ক্ষুদ্র অংশ অচেতনভাবে সূক্ষ্ম ধাপগুলির দ্বারা উদ্ভূত হয়েছে।

যিনি বিশ্বাস করেন যে কোন কোন প্রাচীন আকার, যেমন ডানাবিশিষ্ট কোন প্রাণী, আভ্যন্তরীণ শক্তি অথবা প্রবণতার মাধ্যমে হঠাৎ রূপান্তরিত হয়েছিল, তিনি সমস্ত উপমার বিরুদ্ধ!চারণ করে মনে করতে বাধ্য হবেন যে অনেক একক যুগপৎ পরিবর্তিত হয়েছিল। এটি অনস্বীকার্য যে গঠনগুলির এরূপ আকস্মিক ও বিরাট পরিবর্তন সেইসব পরিবর্তনের থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় যেগুলি অধিকাংশ প্রজাতি স্পষ্টত অতিক্রম করেছে। তিনি আরও বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে একই জীবের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশে সুন্দরভাবে অভিযোজিত অনেক গঠন আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে; এবং এরূপ জটিল ও আশ্চর্যজনক সহ-অভিযোজনের একটিরও ব্যাখ্যা দিতে তিনি সমর্থ হবেন না। তিনি স্বীকার করিতে বাধ্য হবেন যে এইসব বিরাট এবং আকস্মিক রূপান্তরের কোন চিহ্নই ভূণে নেই। আমার মতে, এসব স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে অলৌকিকের রাজ্যে প্রবেশ করা এবং বিজ্ঞানকে পরিত্যাগ করা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *