০৫. পরিবৃত্তির নিয়মসমূহ

পঞ্চম অধ্যায় – পরিবৃত্তির নিয়মসমূহ

পরিবর্তিত অবস্থাসমূহের পরিণাম-প্রাকৃতিক নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবহার ও অব্যবহার-উড্ডয়ন ও দর্শনের অঙ্গসমূহ–পরিবেশানুগকরণ–সহসম্পর্কিত পরিবৃত্তি–ক্রমবৃদ্ধির ক্ষতিপূরণ ও সঞ্চয়ন–কৃত্রিম সহসম্পর্কসমূহ–বহুবিধ, অবর্ধিত বা লুপ্তপ্রায় ও নিম্নস্তরে সংগঠিত দেহগঠনসমূহের পরিবর্তনশীলতা—অসাধারণভাবে বিকশিত অঙ্গগুলি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল–গণীয় বৈশিষ্ট্যের তুলনায় প্রজাতিক বৈশিষ্ট্য আরও বেশি পরিবর্তনশীল–গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলি পরিবর্তনশীল–একই গণের প্রজাতিরা অনুরূপভাবে পরিবর্তিত হয়–বহু পূর্বে বিলুপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলির পূর্বানুবৃত্তি–সারাংশ।

.

আমি অনেক সময় বলেছি যে গৃহপালনাধীনে জীবদের ক্ষেত্রে একান্তই সাধারণ ও বহুবিধ এবং প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় একটু কম মাত্রায় পরিবৃত্তিসমূহ যেন আকস্মিকভাবে ঘটেছিল। এটি অবশ্যই একটি পুরোপুরি ভ্রান্ত অভিব্যক্তি, কিন্তু এটি প্রত্যেক বিশেষ পরিবৃত্তির কারণ সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতাকে স্বীকার করতে সাহায্য করে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে পিতামাতার মতো শিশুকে তৈরি করতে এককীয় পার্থক্য বা দেহগঠনের অল্প বিচ্যুতি সৃষ্টি করতে এটি জননতন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রাকৃতিক অবস্থার তুলনায় গৃহপালনাধীন অবস্থায় আরও পুনঃ পুনঃ সংঘটিত পরিবৃত্তি ও অঙ্গবিকৃতির ঘটনাটি এবং সীমিত বিস্তৃত প্রজাতিগুলির তুলনায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত প্রজাতিরা বেশি পরিবর্তনশীল–এই তথ্য থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা সাধারণত জীবন-পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত, যাতে প্রত্যেক প্রজাতি কয়েক বংশপরম্পরাব্যাপী প্রভাবিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আমি দেখাতে চেষ্টা করেছিলাম পরিবর্তিত অবস্থাসমূহ দু-ভাবে কাজ করে–প্রত্যক্ষভাবে সমগ্র সংগঠনে বা কেবলমাত্র কতিপয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর এবং অপ্রত্যক্ষভাবে জননতন্ত্রের মাধ্যমে। সমস্ত ক্ষেত্রে দুটি উপাদান রয়েছে–জীবের প্রকৃতি, যেটি দুটির মধ্যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এবং পরিবেশের প্রকৃতি। পরিবর্তিত পরিবেশসমূহের প্রত্যক্ষ ক্রিয়াটি নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট ফলাফল উৎপাদনের পথপ্রদর্শন করে। পরের ক্ষেত্রটিতে জৈবসংগঠন নমমীয় হয় বলে মনে হয় এবং এখানে অতিশয় হ্রাসবৃদ্ধিমূলক পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা রয়েছে। পূর্বের ক্ষেত্রটিতে জীবের প্রকৃতি এমন হয় যে একে কোন বিশেষ পরিবেশে রাখা হলে এটি সহজেই প্রভাবিত হয় এবং সমস্ত বা প্রায় সমস্ত এককরা একইভাবে রূপান্তরিত হয়।

জলবায়ু, খাদ্য ইত্যাদির মতো পরিবর্তিত অবস্থাসমূহ একটি সুনির্দিষ্ট প্রণালীতে কতখানি কাজ করেছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা খুবই কষ্টকর। বিশ্বাস করার যুক্তি আছে যে স্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রমাণ করার তুলনায় কালক্রমে ফলাফল বা। পরিমাণসমূহ বিরাটতর হয়েছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিন্তে সিদ্ধান্ত করতে পারি যে সমগ্র প্রকৃতি জীবদের মধ্যে আমাদের দেখা দেহগঠনের অসংখ্য জটিল সহ-অভিযোজনের জন্য এই প্রক্রিয়াটিকেই দায়ী মনে করা যেতে পারে না। নিম্নে বর্ণিত ঘটনাসমূহে পরিবেশ বা অবস্থা সম্ভবত অল্প কিছু সুনির্দিষ্ট ফলাফল সৃষ্টি করেছে : ই, ফরবেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে আরও উত্তরে বা আরও গভীর জলে বসবাসকারী একই প্রজাতির খোলকী প্রাণীদের তুলনায় উত্তর সীমান্তে এবং অগভীর জলে বসবাসকারী খোলকী প্রাণীদের দেহের রং উজ্জ্বলতর হয়; কিন্তু এটি নিশ্চয়ই সব সময় ঘটে না। মিঃ গোল্ড মনে করেন সমুদ্রতীরে অথবা দ্বীপসমূহে বসবাসকারী পাখিদের তুলনায় পরিষ্কার আবহাওয়ায়। বসবাসকারী একই প্রজাতির পাখিরা আরও বেশি উজ্জ্বল রঙের হয়, এবং ওলাস্টন স্থিরনিশ্চিত যে সমুদ্রের নিকটে বাসস্থান পতঙ্গদের রংকে প্রভাবিত করে। মকুইন-ট্যান্ডন উদ্ভিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে সমুদ্রতীরে জন্মানো উদ্ভিদের পাতাগুলি কিছু মাত্রায় শাঁসালো, কিন্তু অন্যত্র শাঁসালো নয়। এইসব অল্পভাবে পরিবর্তনশীল জীবরা ততদূর পর্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক, যতদূর অনুরূপ পরিবেশে আবদ্ধ প্রজাতির বৈশিষ্ট্যদের অন্যরূপ বৈশিষ্ট্য উপস্থিত করে।

একটি পরিবৃত্তি যখন কোন জীবের পক্ষে অল্পতমভাবে উপযোগী হয়, তখন এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের সঞ্চয়ীকৃত প্রক্রিয়ার জন্য কতখানি এবং জীবন-পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়ার জন্য কতখানি দায়ী তা আমরা বলতে পারি না। পশম উৎপাদনকারীদের ভালভাবেই জানা আছে যে আরও উত্তরে বসবাসকারী একই প্রজাতির প্রাণীদের ঘন ও উৎকৃষ্ট পশম হয়। কিন্তু এই পার্থক্যের জন্য শুষ্কতম অঞ্চলের অধিবাসীদের বহু বংশপরম্পরা ধরে সংরক্ষিত ও আনুকূল্যপ্রাপ্ত হওয়া কতখানি দায়ী এবং খুব খারাপ আবহাওয়া কতখানি দায়ী, তা কে বলতে পারে? কারণ আমাদের গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণীদের লোমের ওপর জলবায়ুর একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে বলেই মনে হয়।

জীবনের বহিঃস্থ পরিবেশে একই প্রজাতি থেকে উদ্ভূত একই রূপের ভ্যারাইটিদের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেখানে ভিন্নতার বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করা যায়। পক্ষান্তরে, আপাতঃ একই বহিঃস্থ পরিবেশে সৃষ্ট বিসদৃশ ভ্যারাইটিদের উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। আবার প্রত্যেক প্রকৃতিবিদের জানা অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে প্রজাতিরা সবচেয়ে বিপরীত ভিন্ন জলবায়ুতে বসবাস করলেও সঠিক থাকে বা মোটেই পরিবর্তিত হয় না। এইসব বিচার-বিশ্লেষণের পর পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতার তুলনায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার ওপর কম গুরুত্ব আরোপ করতে প্রভাবিত হয়েছি আমি, কারণ এইসব কারণগুলি আমাদের অজানা।

পরোক্ষ অর্থে বলা যেতে পারে যে জীবন-পরিবেশগুলি হয় প্রত্যক্ষভাবে অথবা অপ্রত্যক্ষভাবে কেবলমাত্র বিভিন্নতাই ঘটায় না, বরং এভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনকেও অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ জীবন-পরিবেশই এই বা ঐ প্রজাতিটি বাঁচবে কিনা তা নির্ধারণ করে। কিন্তু মানুষ নিজে যখন নির্বাচনী এজেন্ট, তখন আমরা স্পষ্টত দেখি যে পরিবর্তনের দুটি উপাদানই ভিন্ন; পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা কোনো পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়, কিন্তু, এটাই মানুষের ইচ্ছা বা পরিবৃত্তিসমূহকে বিশেষ দিকে পুঞ্জীভূত করে, এবং এটাই হচ্ছে পরের মাধ্যম যা প্রকৃতিতে যোগ্যতমের উদ্বর্তনের প্রশ্নটির উত্তর প্রদান করে।

প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঙ্গসমূহের বর্ধিত ব্যবহার ও অব্যবহারের পরিণামসমূহ

প্রথম অধ্যায়ে উল্লিখিত তথ্যসমূহ থেকে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে। আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার কোন কোন অঙ্গকে শক্তিশালী ও বৃদ্ধি করেছে এবং অব্যবহার এদের হ্রাস করেছে এবং এইসব রূপান্তরসমূহ আনুবংশিক বা বংশগত হয়েছে। মুক্ত প্রকৃতিতে তুলনা করার জন্য আমাদের কোন মানদণ্ড নেই, যার দ্বারা অবিরাম ব্যবহার ও অব্যবহারের ফলাফলসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করা যায়, কারণ পিতামাতা আকারদের সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না; কিন্তু অনেক প্রাণী এমন সব দেহগঠনের অধিকারী যেগুলিকে অব্যবহারের ফলাফল হিসেবে ভালভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন অধ্যাপক ওয়েন মন্তব্য করেছেন যে-কোন একটি পাখি উড়তে পারে না, এর থেকে বড় অংসগতি প্রকৃতিতে নেই; তথাপি কতিপয় পাখি এই অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার মোটা মাথাওয়ালা পাতিহাঁসরা জলের উপরতলে কেবল ডানা ঝাঁপটাতে পারে, এবং গৃহপালিত আইলেসবুরি পাতিহাঁসের মতো এদের ডানাগুলি প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে মিঃ কানিংহামের মতানুসারে তরুণ পাখিরা উড়তে পারে, কিন্তু বয়স্করা এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যেহেতু মাটিতে খাদ্যভক্ষণকারী বৃহৎ পাখিরা বিপদ থেকে আত্মরক্ষার সময় ছাড়া কদাচিৎ ওড়ে, সেহেতু এটি সম্ভবপর যে কতিপয় সামুদ্রিক দ্বীপে এখন বাস করে বা পূর্বে বাস করত এবং যেখানে শিকারী পাখিরা দখল নেয়নি এমন কতিপয় পাখির ডানাহীন অবস্থা অব্যবহারের ফলেই ঘটেছে। বাস্তবিকই উটপাখিরা মহাদেশসমূহে বসবাস করে এবং বিপদ থেকে আত্মরক্ষার জন্য উড়ে পালাতে পারে না, বরং অনেক চতুষ্পদ প্রাণীদের মতো দক্ষতার সঙ্গে শত্রুদের পদাঘাতের দ্বারা আত্মরক্ষা করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, উটপাখি গণের পূর্বপুরুষদের স্বভাব বাস্টার্ড গণের পূর্বপুরুষদের মতো ছিল এবং বংশপরম্পরায় এদের শরীরের আয়তন ও ভর বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে এদের পাগুলি বেশি ও ডানাগুলি কম ব্যবহৃত হয়েছিল, এভাবে চলেছিল যতদিন পর্যন্ত না এরা উড়তে অসমর্থ হয়েছিল।

কির্বি উল্লেখ করেছেন যে (এবং আমিও একই বিষয় লক্ষ্য করেছি) গোবর ভক্ষণকারী অনেক পুরুষ-বিটলদের পিছনের গোড়ালি অথবা পায়ের পাতা প্রায়শই ভেঙে যায়; তিনি তার নিজস্ব সংগ্রহের সতেরোটি নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন এবং দেখেছিলেন একটিতেও পুরনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। ওনাইটেস অ্যাপেলেস পতঙ্গের গোড়ালিটি এত স্বাভাবিকভাবে লুপ্ত হয়েছে যে পতঙ্গটির এই অঙ্গটি নেই বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্য কতিপয় গণে এটি থাকে, কিন্তু অবর্ধিত অবস্থায়। এটিউকাস অথবা ইজিপ্ট বাসীদের নিকট পরিত্র বিটলদের মধ্যে এটি ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত অঙ্গহানি আনুবংশিক বা বংশগত হতে পারে, এই বক্তব্য বর্তমানে চূড়ান্ত নয়; গিনিপিগদের ক্ষেত্রে অস্ত্রপোচারের বা অপারেশনের আনুবংশিক প্রভাবের উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ব্রাউন-সেকোয়াউ লক্ষ্য করেছিলেন, এই প্রবণতাটিকে অস্বীকার করতে আমাদের সতর্ক করে দেয়। অতএব এটিউকাসের পিছনের গোড়ালির সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং অন্য সবগুলিতে এদের লুপ্তপ্রায় অবস্থা অঙ্গহানির আনুবংশিক হওয়ার ঘটনা হিসেবে নয়, বরং দীর্ঘদিনের অব্যবহারের পরিণাম হিসেবে দেখাই বোধ হয় নিরাপদ হবে। কারণ দেখা যায় যে এমন অনেক গোবর-ভক্ষণকারী বিটলদের গোড়ালি লুপ্ত হয়ে গেছে, যা জীবনের প্রাথমিক অবস্থাতেই নিশ্চয় ঘটে থাকবে। অতএব গোড়ালির খুব একটা প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না অথবা পতঙ্গরা এটি অধিক ব্যবহার করতে পারে না।

কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা দেহগঠনের রূপান্তরকে অব্যবহারের ফলে ঘটেছে বলে সহজেই গণ্য করতে পারতাম। এগুলি সামগ্রিকভাবে বা মূলতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্যেই ঘটেছে। মিঃ ওলাস্টন একটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় আবিষ্কার করেছেন যে ম্যাডেইরাতে বসবাসকারী ৫৫০টি বিটল প্রজাতির মধ্যে ২২৩টি প্রজাতির (কিন্তু এখন আরও অনেক বেশি জানা গেছে) ডানাগুলি এত অসম্পূর্ণ যে এরা উড়তে পারে না। তিনি আরও আবিষ্কার করেছেন যে উনত্রিশটি স্থানীয় গণের মধ্যে কম করেও তেইশটি গণের সব প্রজাতিদেরও এরকম অবস্থা। আরও কয়েকটি বিষয় আছে, যথা–পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বিটলরা সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয় ও ধ্বংস হয়; ম্যাডেইরাতে মিঃ ওলাস্টন আরও লক্ষ্য করেছেন যে বাতাস শান্ত না হওয়া ও সূর্য অস্ত না-যাওয়া পর্যন্ত বিটলরা লুকিয়ে থাকে; তিনি লক্ষ্য করেছেন যে ম্যাডেইরার তুলনায় খোলা ডেসার্টাস ডানাহীন বিটলদের অনুপাত বেশি; মিঃ ওলাস্টন কর্তৃক দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত বিশেষভাবে অসাধারণ একটি ঘটনা হচ্ছে যে যারা অন্যত্র সংখ্যায় অত্যধিক ও যাদের ডানাগুলির ব্যবহার একান্ত প্রয়োজনীয়, এমন বিটলদের কোন কোন গোষ্ঠী এখানে প্রায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত; এই রকম কয়েকটি উদাহরণ আমাকে বিশ্বাস করায় যে এত সংখ্যক ম্যাডেইরা বিটলদের ডানাহীন অবস্থা সম্ভবতঃ অব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত প্রাকৃতিক নির্বাচন-প্রক্রিয়ার জন্যই মূলত ঘটেছে। কারণ হয় এদের ডানার সম্পূর্ণ বিকাশ না হওয়া, অথবা অলস স্বভাবের জন্য প্রত্যেক বিটল-এর কয়েক বংশ ধরে কম ওড়ার জন্যই এরকম হয়েছে, এবং সমুদ্রের দিকে তাড়িত না হলে বেঁচে থাকার ভাল সম্ভাবনা থাকত; এবং বিপরীতক্রমে সহজেই উড়তে পারা ঐ সব বিটলরা প্রায়শই সমুদ্রের দিকে ধাবিত হবে ও এভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হবে।

মাটি-ভক্ষণকারী নয় এবং কোলিওপটেরা ও লেপিড়পটেরার মতো ফুল-ভক্ষণকারী ম্যাডেইরা পতঙ্গরা, মিঃ ওলাস্টনের ধারণা, জীবনধারণের জন্য স্বভাবগতভাবে নিশ্চয় তাদের ডানা ব্যবহার করে, এমনকি ডানাগুলি হাস পায়নি বরং বর্ধিত হয়েছে। বিষয়টি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ যখন একটি নতুন পতঙ্গ দ্বীপটিতে আসে, তখন ডানার হ্রাস ও বৃদ্ধি ঘটাতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রবণতা বা ঝোঁকটি নির্ভর করবে বাতাসের সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে অথবা ওড়ার চেষ্টা না করে এবং না-ওড়ার মাধ্যমে বিরাট সংখ্যক একক বেঁচেছিল কিনা তার ওপর। সমুদ্রতীরের নিকট ডুবন্ত জাহাজের নাবিকদের মধ্যে যারা ভাল সাঁতারু তাদের পক্ষে ভাল হবে যদি তারা আরও একটু সাঁতার কাটতে সমর্থ হয়, বিপরীতে খারাপ সাঁতারুদের পক্ষে সবথেকে ভাল হল মোটেই সাঁতার কাটতে সমর্থ না-হওয়া এবং ডুবন্ত জাহাজের সঙ্গে আটকে থাকা।

ছুঁচো ও গর্তে বসবাসকারী কয়েক প্রকার ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের চোখ লুপ্তপ্রায় অবস্থায় থাকে এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে চামড়া ও লোমে ঢাকা থাকে। ক্রমশঃ কম। ব্যবহারের জন্য চোখগুলির এই অবস্থা সম্ভবতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাহায্যেই হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় ছুঁচোদের তুলনায় টুকোটুকো বা টেনোমিসদের মতো গর্তে বাসকারী একটি তীক্ষ্ণদন্তী (রোডেন্ট) প্রাণী স্বভাবের দিক থেকে আরও বেশি ভূগর্ভবাসী; এবং আমি একজন স্পেনবাসীর নিকট শুনেছিলাম যে এরা প্রায়শই অন্ধ হয়, তিনি প্রায়শই এদের ধরতেন। এদের একটিকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। তার শবব্যবচ্ছেদ করে দেখা গেল এদের অন্ধত্বের কারণ হচ্ছে চোখের ঝিল্লিতে প্রদাহ। চোখের বারংবার প্রদাহ যে কোন প্রাণীর পক্ষে ক্ষতিকর বলে এবং ভূগর্ভে বসবাসে অভ্যস্ত প্রাণীদের চোখের প্রয়োজন সীমিত বলে, চোখের পাতা এঁটে থাকা এবং পাতার ওপর লোমের বৃদ্ধি সমেত চোখের আয়তন হাস এরূপ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বা লাভজনক হয়ে থাকবে; এবং যদি তাই হয়, তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন অব্যবহারের প্রভাবকে সাহায্য করবে।

এটি সুবিদিত যে কার্নিওলা ও কেন্টাকি গুহায় বসবাসকারী সবচেয়ে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর ক্ষতিকর প্রাণীরা অন্ধ হয়। কাকড়াদের কতিপয় চোখ নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও চোখের বৃন্তটি বজায় থাকে, যেমন দূরবীনের গ্লাসগুলি নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও স্ট্যান্ডটি অবশিষ্ট থাকে। অন্ধকারে বসবাসকারী প্রাণীদের পক্ষে চোখগুলি অপ্রয়োজনীয় হলেও কোন না কোন ভাবে ক্ষতিকর হতে পারত–এটা ভাবা কষ্টকর বলে ধরে নেওয়া যায় যে এদের নষ্ট হওয়াটা অব্যবহারের ফলেই হয়েছে। অধ্যাপক শিলিমান অন্ধ প্রাণীদের মধ্যে একজাতীয় গুহা-হঁদুরের (নিওটোমা) দুটিকে গুহার মুখ থেকে আধ-মাইলের মধ্যে ধরেছিলেন, এরা গুহার ভিতরে নিশ্চয়ই ছিল না, এদের চোখগুলি ছিল উজ্জ্বল ও বড় আকারের; অধ্যাপক শিলিমান আমাকে জানিয়েছিলেন যে এদের একমাস ধরে ক্রমাগত উজ্জ্বল আলোয় রাখার পর এরা কোন কিছুর উপস্থিতি সম্বন্ধে ক্ষীণ অনুভূতি অর্জন করেছিল।

প্রায় একইরূপ আবহাওয়ায় চুনাপাথরের গভীর গুহার তুলনায় আরও সদৃশ জীবন পরিবেশ কল্পনা করা কষ্টসাধ্য। অতএব আমেরিকা ও ইউরোপের গুহাসমূহে অন্ধ প্রাণীদের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সৃষ্ট হওয়ার এই মতবাদ অনুসারে এদের জৈব সংগঠনে ও গঠনগত সৌসাদৃশ্যে অতি গভীর সদৃশতা আশা করা যেতে পারত। এটি নিশ্চয় এরূপ হয় না যদি আমরা দুটি দেশের দুটি সামগ্রিক প্রাণীকুলকে লক্ষ্য করি; শুধু পতঙ্গদের ক্ষেত্রেই সূচিওট মন্তব্য করেছেন, “ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ স্থানীয় বিষয় হিসেবে দেখা ছাড়া অন্য কোন আলোকে বিচার করতে আমরা এভাবে বাধাপ্রাপ্ত হই এবং ইউরোপ ও আমেরিকার প্রাণীকুলগুলির মধ্যে উপমার তুলনায় ম্যামথ গুহা (কেন্টাকিতে) ও কার্নিওলা গুহার মধ্যে অল্প কয়েকটি আকারের সদৃশতাকেও বিবেচনা করতে আমরা এভাবে বাধাপ্রাপ্ত হই।” আমার মতে, আমেরিকার অধিকাংশ সাধারণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। প্রাণীরা বহির্জগৎ থেকে বংশপরম্পরায় ধীরে ধীরে কেন্টাকি হার গভীরতর খাজের মধ্যে প্রচরণ করেছিল, যেমন ইউরোপের প্রাণীরা ইউরোপের গুহাগুলিতে করেছিল। স্বভাবসমূহের এরূপ ক্রমবিন্যাসের কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে; কারণ সূচিওট বলেছেন, “তদনুসারে আমরা ভূগর্ভস্থ প্রাণীকুলের ছোট ছোট শাখা হিসেবে দেখি, যারা ভৌগোলিকভাবে সীমিত পাশ্ববর্তী জায়গায় প্রাণীকুল থেকে ভূগর্ভের মধ্যে প্রবেশ করেছিল এবং যারা অন্ধকার জায়গায় বিস্তৃত হয়ে পার্শ্ববর্তী অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। সাধারণ আকারদের থেকে কম ভিন্ন প্রাণীরা আলো থেকে অন্ধকারে অবস্থান্তরের জন্য প্রস্তুত। এর পর আশা যাক তাদের সম্বন্ধে যারা গোধূলিলগ্নের সময়ে সৃষ্টি হয়েছে, এবং অবশেষে যারা অন্ধকারে বসবাসের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এবং যাদের গঠন সম্পূর্ণ অদ্ভুত ধরনের।” চিওট-এর এইসব মন্তব্য থেকে এটাই বোঝা উচিত যে এটি একই প্রজাতির ক্ষেত্রে নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অসংখ্য বংশের পর একটি প্রাণী ভূগর্ভের গভীরতম খাঁজগুলিতে পৌঁছেছিল, ফলে অব্যবহার তার চোখগুলিকে প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল এবং অন্ধত্বের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাকৃতিক নির্বাচন অন্যান্য পরিবর্তন ঘটিয়েছিল, যেমন শুঙ্গ অথবা পালপির দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি। এইসব রূপান্তর হওয়া সত্ত্বেও, আমেরিকার গুহাবাসী প্রাণীদের সঙ্গে ঐ মহাদেশের অন্যান্য অধিবাসীদের, এবং ইউরোপের গুহাবাসী প্রাণীদের সঙ্গে ঐ মহাদেশের অন্যান্য অধিবাসীদের, ঘনিষ্ঠ মিল দেখার আশা করতে পারি আমরা। এবং অধ্যাপক ডানার কাছ থেকে আমি শুনেছি যে আমেরিকার গুহাবাসী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে ঘটনা; ইউরোপের গুহাবাসী পতঙ্গদের কয়েকটি পার্শ্ববর্তী দেশের গুহাবাসী পতঙ্গদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এদের স্বতন্ত্র সৃষ্টির সাধারণ মতানুসারে দুটি মহাদেশের অন্ধ গুহাবাসী প্রাণীদের সঙ্গে অন্য অধিবাসীদের ঘনিষ্ঠ মিলগুলির সঙ্গত ব্যাখ্যা দেওয়া অতিশয় কষ্টকর হবে। এদের অন্য উৎপাদনগুলির অধিকাংশের সুবিদিত সম্পর্ক থেকে আমরা আশা করতে পারতাম যে উভয় গোলার্ধের গুহাগুলির অধিবাসীদের কয়েকটির ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হওয়া উচিত। গুহাগুলি থেকে বহু দূরে অন্ধকারাচ্ছন্ন পাহাড়ে ব্যাথিস্কয়ার একটি অন্ধ প্রজাতি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, এই একটি গণের গুহ-প্রজাতির দৃষ্টিশক্তি হারানোর সঙ্গে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় বসবাসের সম্ভবতঃ কোন সম্পর্ক নেই, কারণ এটি স্বাভাবিক যে ইতিমধ্যে দৃষ্টিশক্তি হারানো একটি পতঙ্গ অন্ধকারাচ্ছন্ন গিরিগুহায় সহজেই অভিযোজিত হয়ে থাকবে। অন্য একটি অন্ধ গণে (অ্যানফথ্যালমাস) এই অদ্ভুত ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায় যে প্রজাতিদের গুহা ছাড়া অন্য কোথাও এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি; এটি মিঃ মারে লক্ষ্য করেছিলেন। তবুও যারা ইউরোপ ও আমেরিকায় কয়েকটি গুহায় বাস করে, তারা ভিন্ন। কিন্তু এটি সম্ভবপর যে এই কয়েকটি প্রজাতির চক্ষুবিশিষ্ট পূর্বপুরুষরা উভয় মহাদেশে পূর্বে বিস্তৃত হয়ে থাকতে পারে এবং এর পর এদের বর্তমান নির্জন বাসস্থান ছাড়া অন্যত্র এরা বিলুপ্ত হয়েছে। অন্ধ মাছ অ্যামব্লিঅপসিস সম্পর্কে আগাসিজের মন্তব্য শুনে আমি বিস্মিত হই না যে গুহাবাসী প্রাণীদের কয়েকটি অতিশয় ব্যতিক্রমী বা অস্বাভাবিক হবে, এবং ইউরোপের সরীসৃপদের মধ্যে অন্ধ প্রোটিয়াসদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমি কেবল আশ্চর্যান্বিত হই যে এইসব অন্ধকারাচ্ছন্ন নির্জন স্থানগুলির অতি অল্প অধিবাসীদের মধ্যে কম কঠোর প্রতিযোগিতার জন্য আদিম জীবনের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত হয়নি।

পরিবেশানুগকরণ

ফুল ফোঁটার সময়, নিদ্রার সময়, বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টির পরিমাণ ইত্যাদির ব্যাপারে উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে স্বভাব বা প্রবৃত্তি বংশগত হয়, এবং পরিবেশানুগকরণ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যেহেতু এটি অতি সাধারণ ব্যাপার যে একই গণের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিরা ঠাণ্ডা ও গরম দেশে বসবাস করে, এবং যদি এটি সত্য হয় যে একই গণের সমস্ত প্রজাতি একই পিতামাতা আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তাহলে একটি দীর্ঘ উদ্ভব প্রক্রিয়ার সময় পরিবেশানুগকরণ নিশ্চয় সহজেই কার্যকরী হয়ে থাকবে। এটি সর্বজনবিদিত যে প্রত্যেক প্রজাতি তার নিজস্ব বাসস্থানের জলবায়ুতে অভিযোজিত হয়; মেরু বা এমন কি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের প্রজাতিরা উষ্ণ জলবায়ু সহ্য করতে পারে না, অথবা বিপরীতটিও ঘটে। আবার অনেক রসালো উদ্ভিদ আর্দ্র জলবায়ু সহ্য করতে পারে না। কিন্তু বিভিন্ন জলবায়ুতে বসবাসকারী প্রজাতিদের অভিযোজনের মাত্রাটিকে প্রায়শই অতিরঞ্জিত করা হয়। বিদেশ থেকে আনীত একটি উদ্ভিদ আমাদের জলবায়ু সহ্য করতে পারবে কি বা পারবে না তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে আমাদের অক্ষমতা থেকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আনীত অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদরা খুবই স্বাস্থ্যবান হয় দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি। এটা বিশ্বাস করার সঙ্গত কারণ আছে যে বিশেষ জলবায়ুতে অভিযোজনের তুলনায় অন্য জীবদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের বিস্তার ততখানি বা আরও বেশি সীমিত হয়। কিন্তু এই অভিযোজন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘনসন্নিবিষ্ট হোক বা না হোক, আমাদের নিকট প্রমাণ আছে যে অল্প কিছু উদ্ভিদ বিভিন্ন তাপমাত্রায় স্বাভাবিকভাবে অভ্যস্ত হয়েছে, অর্থাৎ এরা পরিবেশানুগ হয়েছে। ডঃ হুঁকার কর্তৃক সংগৃহীত হিমালয়ের বিভিন্ন উচ্চতায় জন্মানো একই প্রজাতির বীজ থেকে উদ্ভূত পাইন ও রোডোডেনড্রনের চারাগাছ একই দেশে ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন জৈবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল বলে দেখা গেছে। মিঃ খোয়াইটস আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি সিলোনে একই ঘটনা লক্ষ্য করেছিলেন; অ্যাজার্স থেকে ইংল্যান্ডে আনীত ইউরোপীয় উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে মিঃ এইচ. সি. ওয়াটসন একই ঘটনা লক্ষ্য করেছিলেন। অন্য অনেক ঘটনার কথাও উল্লেখ করা যায়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রামাণিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারত যেখানে দেখা যায় ঐতিহাসিক কাল ধরে উষ্ণতর থেকে শীতলতর অক্ষাংশে এদের বিস্তার ঘটেছিল, এবং তার বিপরীতও ঘটেছিল। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে জানি না যে এই প্রাণীরা এদের দেশজ জলবায়ুতে সঠিকভাবে অভিযোজিত হয়েছিল কিনা, যদিও যাবতীয় সাধারণ ক্ষেত্রে এটিই হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। অথবা আমরা জানি না প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় সঠিকভাবে উপযুক্ত হওয়ার জন্যে এদের নূতন বাসস্থানে পরবর্তী সময়ে এরা বিশেষভাবে পরিবেশানুগ হয়েছে কিনা।

আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি আদিম যুগে অসভ্য মানুষরা আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের নির্বাচন করেছিল এই কারণে যে এরা উপকারী ছিল এবং আটক অবস্থায় এরা সহজেই সন্তান উৎপাদন করত, এবং এই কারণে নয় যে এরা পরবর্তী সময়ে দূরবর্তী পরিবহণের জন্য সমর্থ হয়েছিল, অতিশয় ভিন্ন জলবায়ু কেবল সহ্য করার জন্য নয়, বরং এসব জলবায়ুতে সম্পূর্ণ উর্বর হওয়ার ব্যাপারে আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের সাধারণ ও অসাধারণ ক্ষমতা একটি যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যে এখন একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে অন্য প্রাণীদের একটা বিরাট সংখ্যাকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন জলবায়ু সহ্য করানো যেতে পারত। আমাদের গৃহপালিত কয়েকটি প্রাণীর কতিপয় বন্য কুল থেকে সম্ভবপর উৎপত্তির জন্য আগের যুক্তিটিকে বেশিদূর নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্মপ্রধান ও মেরু অঞ্চলের একটি নেকড়ের রক্ত আমাদের গৃহপালিত জাতগুলির মধ্যে সম্ভবতঃ মিশ্রিত হয়ে থাকতে পারে। নেংটি ও ধেড়ে ইঁদুরদের গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে না, কিন্তু এরা পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মানুষের দ্বারা পরিবাহিত হয়েছে এবং এখন অন্য যে-কোন রোডেন্টদের চেয়ে এদের বিস্তার অনেক বেশি, কারণ এরা উত্তরের ফারো ও দক্ষিণের ফকল্যান্ডের ঠাণ্ডা জলবায়ুতে এবং উষ্ণ অঞ্চলের অনেক দ্বীপে বেঁচে থাকে। অতএব যে-কোন বিশেষ জলবায়ুতে অভিযোজনকে জৈবসংগঠনের একটি সহজাত নমনীয়তার ওপর সহজেই আরোপ করা যেতে পারে, যা অধিকাংশ প্রাণীদের ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। এই মতানুসারে, মানুষের নিজের এবং তার গৃহপালিত প্রাণীদের অতিশয় ভিন্ন জলবায়ু সহ্য করার ক্ষমতা এবং বিলুপ্ত হাতি ও গণ্ডারদের একটি তুষারযুগের জলবায়ু সহ্য করার ঘটনাটি, অন্যদিকে এখন জীবন্ত প্রজাতিদের স্বভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় হওয়াকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা উচিত হবে না, বরং বিশেষ অবস্থায় জৈবসংগঠনের একটি অতি সাধারণ নমনীয়তা কার্যকরী হওয়ার উদাহরণ হিসেবেই দেখা উচিত।

প্রজাতিদের যে-কোন জলবায়ুতে পরিবেশানুগকরণ কেবল স্বভাবের জন্য কতখানি এবং ভিন্ন সহজাত জৈবসংগঠন সম্বলিত ভ্যারাইটিদের প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য কতখানি, এবং উভয়ই যুক্তভাবে কতখানি, এইসব প্রশ্ন নিতান্তই দুর্বোধ্য। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রাণীদের পরিবহণে অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার জন্য কৃষিসংক্রান্ত গ্রন্থগুলিতে, এমন কি চীনের প্রাচীন বিশ্বকোষে অনবরত উপদেশ ও উপমা থেকেই আমি বিশ্বাস করি যে স্বভাব বা অভ্যাসের কিছু প্রভাব আছেই। এবং যেহেতু এটি বিশ্বাসযোগ্য যে এদের জেলাসমূহে বিশেষভাবে উপযুক্ত দেহগঠনসমূহ সমস্ত জাত ও উপজাতগুলিকে নির্বাচন করতে মানুষ সমর্থ হয়েছে, তাই আমি মনে করি পরিণামটি নিশ্চয় স্বভাবের জন্যই হয়েছে। বিপরীতক্রমে বা অপরদিকে, যে কোন দেশে অতি সুন্দরভাবে অভিযোজিত দেহগঠন সমেত জন্মানেনা ঐ সব এককদের প্রাকৃতিক নির্বাচন অনিবার্যভাবে সংরক্ষণ করতে সচেষ্ট হবে। চাষযোগ্য উদ্ভিদ সংক্রান্ত অনেক ধরনের গবেষণামূলক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে অন্যদের তুলনায় কোন কোন বিশেষ ভ্যারাইটি বিশেষ বিশেষ জলবায়ু সহ্য করতে পারে। ইউনাইটেড স্টেটসে প্রকাশিত ফলের গাছ সংক্রান্ত বইগুলিতে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে যে কোন কোন ভ্যারাইটি উত্তরের এবং কোন কোন ভ্যারাইটি দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে চাষ করা যাবে; এবং এইসব ভ্যারাইটিদের অধিকাংশই সাম্প্রতিককালে উদ্ভূত হয়েছে বলে এদের জৈবসংগঠনগত পার্থক্য স্বভাবের জন্য হতে পারে না। জেরুজালেম আর্টিচোক বা হাতিচোক প্রজাতিটি ইংল্যান্ডে কখনও বীজ উৎপাদন করেনি এবং ফলে এর কোন ভ্যারাইটির উদ্ভব ঘটেনি–এটি প্রমাণ করার জন্য বলা হয় প্রজাতিটির পরিবেশানুগকরণ করা যেতে পারে না, কারণ চিরকাল যেমন ছিল এটি এখনও সেরকমই কোমল বা নমনীয়! একই উদ্দেশ্যে কিডনি বা ফ্রেঞ্চ বা বাকা বিনের ঘটনাটি প্রায়শই আরও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ বিংশতি বংশ ধরে তার কিডনি বিনগুলি এত অসময়ে বপন করবে যাতে করে বিরাট পরিমাণ বিন তুষারপাতের দ্বারা নষ্ট হয়, এবং তারপর আকস্মিক সংকরণ যত্ন সহকারে প্রতিরোধ করে কতিপয় জীবিতদের থেকে বীজ সংগ্রহ করবে, এবং তারপর পুনরায় একইরকম সতর্কতার সঙ্গে এইসব চারাগাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যেতে পারে না যে পরীক্ষাটি বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। অথবা এমনও মনে করা উচিত নয় যে কিডনি বিনের চারাগাছের দেহগঠনের পার্থক্য কখনও উদ্ভূত হয় না, কারণ অন্যদের তুলনায় এর কয়েকটি চারাগাছ আরও কত বেশি অনমনীয় সে। সম্বন্ধে বিস্তৃত লেখা প্রকাশিত হয়েছে; এবং এ বিষয়ে আমি নিজেও বিস্ময়কর উদাহরণসমূহ লক্ষ্য করেছি।

সামগ্রিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে স্বভাব অথবা ব্যবহার ও অব্যবহার কোন কোন ক্ষেত্রে দেহগঠন ও অবয়বের রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু পরিণামগুলি পরিবৃত্তিসমূহের প্রাকৃতিক নির্বাচনের সঙ্গে বহুলাংশে যুক্ত হয়েছে এবং কোন কোন সময় প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা পরাভূত হয়েছে।

সহসম্পর্কিত পরিবৃত্তি

এই অভিব্যক্তির মাধ্যমে আমি বোঝাতে চাই যে জীবের সমগ্র জৈবসংগঠনটি তার বৃদ্ধি ও বিকাশের পর্যায়কালে এমনভাবে সুসংবদ্ধ হয় যে যখন যে কোন অঙ্গে অল্প পরিবর্তন ঘটে তখন এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সঞ্চিত হয়, অন্য অঙ্গসমূহও রূপান্তরিত হয়। এটি একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার সম্বন্ধে অসম্পূর্ণরূপে কিছু জানা গেছে, এবং সন্দেহ নেই যে বিভিন্ন শ্রেণীর তথ্য এখানে সহজেই আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। এখন আমরা দেখব যে সরল বংশানুসৃতি প্রায়শই সহসম্পর্কের ভ্রান্ত বাহ্যরূপ প্রদান করে। সবচেয়ে স্পষ্ট আসল ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে, তরুণ অথবা লার্ভা অবস্থায় দেহের পরিবৃত্তিসমূহ বয়স্ক প্রাণীদের দেহগঠনকে স্বাভাবিকভাবে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করে। যেগুলি সমসংস্থ ও প্রাথমিক ভূণগতাবস্থায় দেহগঠনে অভিন্ন ও সদৃশ পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে প্রভাবান্বিত হয়, শরীরের এমন কতিপয় অঙ্গ সম্ভবতঃ সমরূপে পরিবর্তিত হতে স্পষ্টতঃ বাধ্য হয়। একই ভাবে পরিবর্তনশীল শরীরের বাম ও দক্ষিণ দিকে আমরা এটি লক্ষ্য করি; সামনের ও পিছনের পাগুলি এবং এমনকি চোয়াল ও অঙ্গগুলিও একত্রে পরিবর্তিত হয়, কারণ কয়েকজন অঙ্গ ব্যবচ্ছেদকারী বিশ্বাস করেন যে নিচের চোয়ালটি অঙ্গগুলির সঙ্গে সমসংস্থ। আমার ধারণা, এই প্রবণতাসমূহকে প্রাকৃতিক নির্বাচন মোটামুটি সম্পূর্ণরূপে জয় করতে পারে। এভাবে উল্লেখ করা যায় যে হরিণদের এক সময় একটা গোত্র ছিল যাদের কেবল। একদিকে একটি শিং থাকত; এবং জাতটি যদি কোনভাবে উপকারী হত, তাহলে এটি সম্ভবতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা স্থায়ী হয়ে থাকতে পারত।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতানুসারে, সমসংস্থ অঙ্গরা সংসস্থ হয়ে থাকতে চেষ্টা করে; এগুলি প্রায়শই বিকৃতাঙ্গ উদ্ভিদে দেখা যায় : এবং একটি নলের সঙ্গে পাপড়ির সংযুক্তির মতো, সাধারণ দেহগঠনে সমসংস্থ অঙ্গদের সংযুক্তির তুলনায় কোন কিছুই আরও সাধারণ নয়, শক্ত অঙ্গরা সম্ভবতঃ সংলগ্ন কোমল অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে পাখিদের ক্ষেত্রে শ্রেণীর (পেলভিস) আকারের বৈচিত্র্য তাদের বৃক্কের (কিডনি) আকারের লক্ষণীয় বৈচিত্র্য ঘটায়। অন্যরা মনে করেন মানব-মাতার শ্রোণীর আকারের চাপ শিশুর মাথার আকার তৈরিকে প্রভাবিত করে। এসক্লেজেলের মতে, সাপেদের শরীরের আকার ও গিলে খাওয়ার পদ্ধতি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নাড়িভুঁড়ির (ভিসেরা) কয়েকটির আকার ও অবস্থান নির্ধারণ করে।

বন্ধনের প্রকৃতি প্রায়শই সম্পূর্ণ অস্পষ্ট থাকে। এম. ইসিডোর জিওফ্রয় সেন্ট হিলারে জোরের সঙ্গে বলেছেন যে কোন কোন গঠনবিকৃতি বারংবার ও অন্যরা বিরলভাবে সহ-অবস্থান করে, যার সম্বন্ধে আমরা কোন যুক্তি খাড়া করতে অসমর্থ। বিড়ালদের ক্ষেত্রে, শরীরের রং সম্পূর্ণ সাদা ও চোখের রং নীল হওয়ার সঙ্গে বধিরতার, অথবা কচ্ছপের খোলক ও স্ত্রীলিঙ্গের মধ্যে, অথবা পায়রাদের পালকওয়ালা পা এবং পায়ের বাইরের আঙ্গুলের মধ্যে চামড়ার, অথবা শিশু পায়রাদের কমবেশি নরম পালকের সঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের পালকের রঙের, অথবা টার্কিশ কুকুরের লোম ও দাঁতের মধ্যেকার সম্পর্কের তুলনায় বিস্ময়কর ভূমিকা আর কী পালন করতে পারে। যদিও সন্দেহ নেই যে সমসংস্থতা বা অনুরূপতা এখানে একটি ভূমিকা পালন করে। সহসম্পর্কের পরবর্তী ঘটনাটি সম্পর্কে আমি মনে করি এটি কদাচিৎ আকস্মিক ঘটনা হতে পারে যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সেটাসিয়া (তিমি) ও এডেন্টাটা (আর্মাডিলোস, স্কেলযুক্ত পিঁপড়ে ভক্ষণকারী) নামে দুটি বর্গের অন্তর্গত প্রাণীদের অন্তস্ত্বকের আবরণী অতিশয় অস্বাভাবিক, এদের দাঁতগুলিও এইরূপে সামগ্রিকভাবে অতিশয় অস্বাভাবিক হয়, কিন্তু মির্ভাটের মতে এই নিয়মের অসংখ্য ব্যতিক্রম আছে যাদের মূল্য অতি অল্প।

কম্পোজিটাস ও আমবেলিফেরাস উদ্ভিদদের বাইরের ও ভিতরের ফুলের মধ্যে পার্থক্যের সহসম্পর্কের তুলনায় উপযোগিতা অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়াই সহসম্পর্ক ও পরিবৃত্তির নিয়মগুলির প্রয়োজনীয়তা দেখাতে উপযুক্তভাবে অভিযোজিত হয়েছে, এমন ঘটনা আমি জানি না। উদাহরণস্বরূপ, ডায়েসি ফুলের প্রান্ত ও মধ্য পুস্পিকাদের মধ্যে পার্থক্যটির সঙ্গে প্রত্যেকেই পরিচিত, এই পার্থক্যটি জনন-অঙ্গসমূহের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিলুপ্তির সঙ্গে প্রায়শই সংসর্গী হয়। কিন্তু এইসব উদ্ভিদের কয়েকটিতে বীজগুলিও আকারে ও গঠনে ভিন্ন হয়। এইসব পার্থক্য পুষ্পিকাদের ওপর মঞ্জরীপত্রাবরণীর চাপ বা এদের পারস্পরিক চাপের ওপর কোন কোন সময় নির্ভর করে, এবং কয়েকটি কম্পোজিটি উদ্ভিদের প্রান্তপুস্পিকাদের বীজগুলির আকার এই ধারণাকে সমর্থন করে; ডঃ হুঁকার আমাকে জানিয়েছেন যে আমবেলিফেরি গোত্রের ঘনতম মাথা-সমেত প্রজাতিদের ক্ষেত্রে এটি কখনই ঘটে না, সেখানে প্রান্ত ও মধ্য পুষ্পিকারা প্রায়শই ভিন্ন হয়। মনে করা যেতে পারত যে জনন-অঙ্গগুলি থেকে পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে প্রান্ত পাপড়িদের বিকাশবৃদ্ধি এদের অবলুপ্তির কারণ ঘটায়; কিন্তু এটি কদাচিৎ একমাত্র কারণ হতে পারে, কারণ কম্পোজিটি গোত্রের কয়েকটি উদ্ভিদে প্রান্ত ও মধ্য পুষ্পিকাদের বীজগুলি দলমণ্ডলের কোন পার্থক্য ছাড়াই ভিন্ন হয়। সম্ভবতঃ এইসব পার্থক্য প্রান্ত ও ভিতরের পুষ্টিকর খাদ্যের প্রবাহের পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অন্ততঃ অনিয়মিত ফুলেদের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে অক্ষের নিকটতম ফুলগুলি অতিশয় সমাঙ্গ হয়, অর্থাৎ অস্বাভাবিকভাবে প্রতিসাম্য অবস্থার হয়। এই ঘটনার একটি উদাহরণ হিসেবে এবং সহসম্পর্কের একটি চিন্তাকর্ষক ঘটনা হিসেবে আমি যোগ করতে পারি যে অসংখ্য পেলার্গোনিয়ামের পুষ্পগুচ্ছের মধ্য ফুলের ওপরের দুটি পাপড়ির কালো রং প্রায়শই নষ্ট হয়ে যায় এবং যখন এটি ঘটে তখন সংসক্ত মধুগ্রন্থিটিও প্রায় লুপ্ত হয়; এভাবে মধ্যফুল পেলোরিক বা সমাঙ্গ হয়। উপরের দুটি পাপড়ির কেবল একটির রং যখন অনুপস্থিত থাকে, তখন মধুস্থলী সম্পূর্ণ লুপ্ত হয় না, বরং খুব খর্ব হয়।

প্রান্তপুস্পিকারা পতঙ্গদের আকর্ষণ করে, ফলে এইসব উদ্ভিদের নিষেকের জন্য এটি অতিশয় লাভজনক ও প্রয়োজনীয় হয়, এর ওপর ভিত্তি করে দলমণ্ডলের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে স্পেনজেলের ধারণাটি অতিশয় সম্ভবপর; এবং যদি এরূপ হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন নিশ্চয় ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। বীজদের ক্ষেত্রে এটি অসম্ভবপর বলে মনে হয় যে আকারের ক্ষেত্রে এদের ভিন্নতাসমূহ কোনভাবে উপকারী হতে পারে, কারণ সেটি দলমণ্ডলের কোন ভিন্নতার সঙ্গে সর্বদা সহসম্পর্কযুক্ত হয় নাঃ তবুও আমবেলিফেরি উদ্ভিদগুলিতে এইসব ভিন্নতার আপাত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বাইরের ফুলের বীজগুলি কোন কোন সময় অর্থোপারমাস হয় এবং মধ্য ফুলের বীজরা কোয়েলোসপারমাস হয়–সেইজন্য অগ্রজ ডি ক্যান্ডেলে এইসব বৈশিষ্ট্য অনুসারে বর্গটির প্রধান প্রধান বিভাগগুলি সৃষ্টি করেছিলেন। অতএব সিস্টেম্যাটিস্টদের দ্বারা উচ্চমূল্য প্রাপ্ত দেহগঠনের রূপান্তরসমূহ পরিবৃত্তি ও সহসম্পর্কের নিয়মের দ্বারা হতে পারে, যেগুলি ছাড়া, যতদূর আমরা বিবেচনা করতে পারি, প্রজাতিদের পক্ষে অল্পতমও উপকার হয় না।

আমরা প্রায়শই ভুলবশতঃ দেহগঠনে সহসম্পর্কিত পরিবৃত্তির বিষয়টি আরোপ করতে পারি, যেটি আবার সমগ্র জাতিগোষ্ঠীতে অতি সাধারণ ব্যাপার এবং এটি প্রকৃতপক্ষে বংশানুসৃতির জন্য হয়; কারণ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এক আদিম পূর্বপুরুষ দেহগঠনের কোন একটি রূপান্তর অর্জন করে থাকতে পারে এবং কয়েক হাজার বংশের পর অন্য কতিপয় ও ভিন্ন রূপান্তর অর্জন করে থাকতে পারে; এবং বিচিত্র স্বভাব সমেত বংশধরদের একটি ভিন্ন গোষ্ঠীতে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়ে এই দুটি রূপান্তর কোন প্রয়োজনের জন্য স্বাভাবিকভাবে সহসম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকতে পারে। অন্য কোন সহসম্পর্ক আপাততঃ এমনভাবে হয়েছে যেখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবল কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আলফোনসে ডি ক্যান্ডেলে দেখিয়েছেন যে অবিদারী ফলে সপক্ষ বীজ কখনই দেখা যায় না; ক্যাপসুল বিদারিত না হলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বীজগুলি ক্রমশ সপক্ষল হওয়ার অসম্ভাব্যতার দ্বারা এই নিয়মটিকে আমার ব্যাখ্যা করা উচিত। কারণ একমাত্র ক্যাপসুল বিদীর্ণ হলেই বাতাস দ্বারা তাড়িত হওয়ার জন্য একটু বেশি উপযোগী বীজগুলি ব্যাপকভাবে বিস্তারের জন্য কম উপযোগী অন্যদের ওপর তুলনামূলক সুবিধা লাভ করতে পারত।

ক্রমবৃদ্ধির ক্ষতিপূরণ ও সঞ্চয়ন

অগ্রজ জিওফ্রয় ও গেটে একই সময়ে বৃদ্ধির সুষমতা ও ক্ষতিপূরণের নিয়মটি উপস্থাপন করেছিলেন; অথবা গেটে যেমন বলেছেন, সেটি হচ্ছে “একদিকে অপব্যয়ের জন্য প্রকৃতি অন্যদিকে সঞ্চয় করে দিতে বাধ্য হয়।” আমি মনে করি আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলির ক্ষেত্রে এটি কিছু পরিমাণে খাটে : পুষ্টিকর খাদ্য একটি অংশে বা অঙ্গে অতিরিক্তভাবে প্রভাবিত হলে সেটি কদাচিৎ অন্ততঃ অতিরিক্তভাবে অন্য অংশে প্রবাহিত হয়; এজন্যই বেশি দুধ দেয় ও সহজেই মোটা হয় এমন একটি গরু সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য। বাঁধাকপির একই ভ্যারাইটিরা প্রচুর ও পুষ্টিকর পাতা এবং প্রচুর তেলযুক্ত বীজ উৎপাদন করে না। আমাদের ফলগুলির বীজ কৃশ হলে ফলগুলি আকারে এবং গুণে বড় ও উৎকৃষ্ট হয়। আমাদের হাঁস-মুরগীর খামারে, মাথায় একটি বিরাট পালকগুচ্ছ সাধারণত হ্রাসপ্রাপ্ত ঝুঁটির সঙ্গে সংসর্গী হয় এবং হ্রাসপ্রাপ্ত ঝুঁটির সঙ্গে একটি বিরাট দাড়ি সংসর্গী হয়। প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতিদের ক্ষেত্রে নিয়মটি সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য হতে পারে না, কিন্তু অসংখ্য দক্ষ পর্যবেক্ষণকারী, বিশেষতঃ উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এর সত্যতায় বিশ্বাস করেন। তবে এখানে আমি কোন উদাহরণ দেব না, কারণ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিরাটভাবে ক্রমবিকশিত একটি অংশের এবং একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অব্যবহারের দ্বারা অন্য ও সংলগ্ন অঙ্গের হ্রাসপ্রাপ্তির, অন্যদিকে অন্য ও সংলগ্ন অঙ্গের অতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য একটি অংশের পুষ্টিকর খাদ্যের প্রকৃত প্রত্যাহারের ফলাফলগুলির মধ্যে তফাতের কোন পথ আমি কদাচিৎ লক্ষ্য করি।

ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে উপস্থাপিত কয়েকটি ঘটনা এবং এভাবে অন্য কতিপয় তথ্যকে আরও একটি সাধারণ সূত্রের সঙ্গে একত্রীভূত করা যেতে পারে। সূত্রটি হচ্ছে–প্রাকৃতিক নির্বাচন জীবের প্রত্যেক অংশকে সঞ্চয়ী করার চেষ্টা করছে; এ সম্পর্কেও আমার সন্দেহ আছে। জীবনের পরিবর্তিত পরিবেশে পূর্বে উপকারী একটি গঠন এখন কম উপকারী হলে তার জন্য এটির হ্রাসপ্রাপ্তি লাভজনক হবে, কারণ একটি অপকারী অঙ্গের গঠনে পুষ্টিকর খাদ্যের অপচয় না করে এটি এককটির ক্ষেত্রে লাভজনক হবে। সিরিপেড প্রাণীদের পরীক্ষার সময় আশ্চর্যান্বিত হয়ে আমি একটি ঘটনা লক্ষ্য করি এবং এর সদৃশ অন্য অনেক উদাহরণও উপস্থিত করা যেতে পারে। ঘটনাটি হল–একটি সিরিপেড প্রাণী যখন অন্য সিরিপেডের মধ্যে পরজীবী হিসাবে বাস করে এবং এভাবে সুরক্ষিত হয়, তখন সে তার নিজস্ব খোলক অথবা আবরণীটি সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলে। পুরুষ ইবলাদের ক্ষেত্রে ঘটনাটি এই রকম হয় এবং প্রোটিওলেপাসদের ক্ষেত্রে ঘটনাটি প্রকৃতই অসাধারণ : কারণ অন্য সকল সিরিপেডদের বাইরের খোলকটি (ক্যারাপাস) বিরাটভাবে বিকশিত মাথার তিনটি অতিশয় বিকশিত খণ্ড দিয়ে তৈরি এবং এটি বড় শিরা ও মাংসপেশী দ্বারা সজ্জিত; কিন্তু পরজীবী ও সংরক্ষিত প্রোটিওলেপাসের মাথায় সমগ্র অগ্রবর্তী অংশটি আঁকড়ে ধরার শুঙ্গের গোড়ায় সংযুক্ত কেবল অবর্ধক অঙ্গ হিসেবে হাসপ্রাপ্ত হয়। এখন একটি বিরাট ও জটিল দেহগঠন, যদিও অতিরিক্ত হয়, প্রজাতির প্রত্যেক পর্যায়ক্রমিক এককদের ক্ষেত্রে নিশ্চয় সুবিধাজনক হবে, কারণ জীবনসংগ্রামে–যাতে প্রত্যেক প্রাণীকেই অংশগ্রহণ করতে হয়-প্রত্যেকের পুষ্টিকর খাদ্য কম নষ্ট করে নিজেকে রক্ষা করার ভাল সম্ভাবনা থাকবে।

যে কোন উপায়ে অন্য কোন অংশের সমমাত্রায় বিরাটভাবে বিকশিত হওয়া ছাড়া যে মুহূর্তে এটি পরিবর্তিত স্বভাবসমূহের মাধ্যমে অতিরিক্ত হয়, তখন তার পরিণামে প্রাকৃতিক নির্বাচন জৈব সংগঠনের যে কোন অংশকে হ্রাস করতে চেষ্টা করবে। পক্ষান্তরে, কোন সংলগ্ন অঙ্গের হাসের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রয়োজন ছাড়া প্রাকৃতিক নির্বাচন একটি অঙ্গের বিরাটভাবে বিকাশ ঘটাতে সঠিকভাবে কৃতকার্য হতে পারে।

বহুবিধ, অবর্ধক বা লুপ্তপ্রায় ও নিম্নস্তরে সংগঠিত দেহগঠনসমূহ পরিবর্তনশীল হয়

ইসিডোর জিওফ্রয় সেন্ট হিলারের বক্তব্য অনুসারে ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের উভয় ক্ষেত্রেই এটি একটি নিয়ম বলে মনে হয় যে একই এককে যে কোন অংশ বা অঙ্গ যখন অসংখ্যবার পুনরাবৃত্ত হয় (যেমন সাপেদের কশেরুকায় ও বহু পুংকেশরযুক্ত ফুলের পুংকেশরে), তখন সংখ্যাটি পরিবর্তনযোগ্য হয়; অন্যথায় কম সংখ্যার একই অংশ বা অঙ্গটি স্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় হয়। পূর্বোক্ত বিশেষজ্ঞ ও কতিপয় উদ্ভিদবিজ্ঞানীর মত হচ্ছে, বহুবিধ অংশগুলি গঠনে পরিবর্তিত হতে ভীষণভাবে সম্ভাবনাযুক্ত হয়। অধ্যাপক ওয়েনের কথামতো বললে “উদ্ভিজ্জ পুনরাবৃত্তি” যেহেতু নিম্ন সংগঠনের একটি সূচকচিহ্ন, সেহেতু উপরোক্ত বক্তব্যগুলি প্রকৃতিবিদদের সাধারণ মতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যে প্রাকৃতিক মানদণ্ডে নিম্নবর্গের জীবরা উচ্চবর্গের জীবদের তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল। আমি সাময়িকভাবে ধরে নিচ্ছি যে এখানে নিম্নতার অর্থ হচ্ছে জীবটির কতিপয় অংশ বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষভাবে গঠিত, এবং যত সময় পর্যন্ত একই অঙ্গকে নানামুখী কাজ করতে হয়, তা থেকে আমরা বোধ হয় লক্ষ্য করতে পারি কেন এটি পরিবর্তনযোগ্য হবে, অর্থাৎ কেন প্রাকৃতিক নির্বাচন অতি যত্নসহকারে আকারটির প্রত্যেক অল্প বিচ্যুতির সংরক্ষণ বা বর্জন করবে না যখন প্রত্যঙ্গটিকে একটি বিশেষ কার্য। করতে হয়। একইভাবে যার দ্বারা অনেক কিছু কাটা যায় এমন একটি ছুরি যে কোন আকারের হতে পারে, অন্যদিকে বিশেষ কাজের জন্য একটি হাতিয়ার নিশ্চয় বিশেষ একটি আকারের হবে। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রত্যেক জীবের সুবিধার জন্য ও তাদের মাধ্যমেই কাজ করে থাকে।

এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে অবর্ধক বা লুপ্তপ্রায় প্রত্যঙ্গগুলি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। এ বিষয়টিতে আমরা পুনরায় ফিরে আসব; এবং আমি এখানে আরও বলব যে এদের অকার্যকারিতা থেকে মনে হয় পরিবর্তনীয়তা বা পরিবর্তনশীলতার উদ্ভব ঘটে এবং পরিণামে এদের দেহগঠনের বিচ্যুতিসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোন ক্ষমতা থাকে না।

নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতির একই প্রত্যঙ্গের তুলনায় যে কোন প্রজাতির অস্বাভাবিক মাত্রায় বা উপায়ে ক্রমবিকশিত প্রত্যঙ্গটি অতি পরিবর্তনশীল হতে প্রবণ হয়

উপরোক্ত বিষয়ে কয়েক বছর পূর্বে মিঃ ওয়াটারহাউসের মন্তব্যে আমি অতিশয় বিস্মিত হয়েছিলাম। অধ্যাপক ওয়েন-ও সম্ভবতঃ একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। অসংখ্য। উদাহরণ না দিলে উপরের প্রস্তাবের সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা ব্যর্থ হবে। ঐ সব উদাহরণ আমি নিজে সংগ্রহ করেছি এবং সেগুলি সম্ভবতঃ এখানে উপস্থিত করা যাবে না। আমি কেবল আমার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারি যে এটি একটি সার্বজনীন নিয়ম। ভুলভ্রান্তির কয়েকটি কারণ সম্বন্ধে আমি অবগত। বরং আমি এদের অনুমোদন করার আশা করি। এটি বোঝা উচিত যে যত অস্বাভাবিকভাবেই বিকশিত হোক না কেন, নিয়মটি কোন প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়। তা না হলে এটি অনেক নিকট সম্পর্কীয় প্রজাতির একই প্রত্যঙ্গের তুলনায় একটি বা কতিপয় প্রজাতিতে অস্বাভাবিকভাবে ক্রমবিকশিত হয়। এভাবে স্তন্যপায়ী শ্রেণীর মধ্যে একটি বাদুড়ের ডানা সবচেয়ে অস্বাভাবিক গঠনের হয়, কিন্তু নিয়মটি এখানে প্রযোজ্য হবে না, কারণ সমস্ত বাদুড়েরাই ডানার অধিকারী। এটি কেবল তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন একই গণের অন্য প্রজাতিদের তুলনায় কোন একটি প্রজাতির ডানা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়। কোন অস্বাভাবিক উপায়ে প্রদর্শিত গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির ক্ষেত্রে নিয়মটি কঠোরভাবে প্রযোজ্য। হান্টার কর্তৃক ব্যবহৃত গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য অভিধাটি একটি লিঙ্গের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু জননপ্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত নয় এমন বৈশিষ্ট্যসমূহের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিয়মটি পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য; তবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে অনেক কম প্রযোজ্য, কারণ এরা কদাচিৎ গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য উপস্থিত করে। এত সরলভাবে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া নিয়মটি কোন অস্বাভাবিক উপায়ে প্রদর্শিত হোক বা না হোক, এ সব বৈশিষ্ট্যের বিরাট পরিবর্তনশীলতার বা বিভিন্নতার জন্য হতে পারে। এ ব্যাপারে বোধহয় কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু নিয়মটি যে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, তা উভলিঙ্গী সিরিপেডদের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে; এই বর্গটি পরীক্ষা করার সময় আমি ওয়াটারহাউসের বক্তব্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, এবং আমি দৃঢ়নিশ্চিত যে নিয়মটি প্রায় সর্বদাই খাটে। ভবিষ্যতে আমি আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনার তালিকা দেব; আমি এখানে উদাহরণ দেব যেখানে নিয়মটি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য, শুধুমাত্র সেইগুলির। পদবিহীন সিরিপেডদের ওপারকিউলার ভালভৃগুলির গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এমন কি ভিন্ন গণগুলিতে এদের পার্থক্য বা ভিন্নতা নিতান্তই নগণ্য; কিন্তু পিরগোমা নামে একটি গণের কতিপয় প্রজাতির এই ভালভৃগুলি অতি বিস্ময়করভাবে ভিন্ন হয়; ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিদের সমরূপ ভালভৃগুলি কোন কোন সময় আকারে অসদৃশ হয়; এবং একই প্রজাতির এককদের পরিবর্তনের পরিমাণ এত বিরাট হয় যে এটি বলা অত্যুক্তি হবে না যে অন্য ভিন্ন গণের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতিদের তুলনায় একই প্রজাতির ভ্যারাইটিগুলির এইসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে উদ্ভূত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরস্পরের থেকে আরও বেশি ভিন্ন হয়।

পাখিদের ক্ষেত্রে, একই দেশে বসবাসকারী একই প্রজাতির এককরা অতি অল্পই পরিবর্তিত হয়–এটা আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি; এবং নিয়মটি নিশ্চয় এই শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নিয়মটি উদ্ভিদদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা তা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। উদ্ভিদের পরিবর্তনশীলতার বিভিন্ন আপেক্ষিক মাত্রার তুলনা করাটা উদ্ভিদদের বিপুল পরিবর্তনশীলতার দরুন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ বলেই রক্ষা, অন্যথায় বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে আমার বিশ্বাস দারুণভাবে নাড়া খেত।

যখন আমরা দেখি যে একটি প্রজাতির কোন অংশ বা অঙ্গ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বা উপায়ে বিকশিত হয়, তখন সন্তোষজনক সম্ভাবনাটি হচ্ছে–এটি প্রজাতির পক্ষে অতি প্রয়োজনীয়, তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে এটি স্পষ্টতঃ পরিবৃত্তির জন্য দায়ী। কেন এরূপ হওয়া। উচিত? একটি মতবাদ অনুসারে, আমরা এদের এখন যেমন দেখি, সেভাবে সমস্ত প্রত্যঙ্গ সমেত প্রত্যেক প্রজাতি স্বাধীনভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এর কোন ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাইনি। কিন্তু অন্য একটি মতবাদ অনুসারে, প্রজাতির গোষ্ঠীগুলি অন্য কোন প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। আমার মনে হয় এর থেকে কিছু সত্যের আলো পেতে পারি আমরা। প্রথমে আমাকে কিছু প্রাথমিক বক্তব্য বলতে দেওয়া হোক। আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে, যে কোন অংশ বা সমগ্র প্রাণীটি যদি অবহেলিত হয় এবং যদি কোন নির্বাচন প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে সেই অংশটি (উদাহরণস্বরূপ, কিং ফাউলের ঝুঁটি) অথবা সমগ্র জাতটি আর সমরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন থাকবে না : এবং বলা যেতে পারে জাতটি বংশোচিত বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। অবর্ধক বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গসমূহে এবং বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য অল্প বিশিষ্ট অঙ্গসমূহে এবং সম্ভবতঃ বহুরোপক গোষ্ঠীসমূহে, আমরা প্রায়শই এরূপ ঘটনা লক্ষ্য করি; কারণ এইসব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন হয় পূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি অথবা করতে পারেনি, এবং এভাবে জৈবসংগঠনটি অনিয়মিতভাবে বাড়া-কমা বা অস্থির অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু এখানে যা আমাদের আরও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে তা হল–আমাদের গৃহপালিত প্রাণীদের বর্তমানে অনবরত নির্বাচনের দ্বারা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এমন সব অঙ্গগুলিও স্পষ্টতঃ পরিবৃত্তির সম্ভাবনাযুক্ত হয়। পায়রাদের একই জাতের এককদের লক্ষ্য করুন, দেখবেন লোটনদের চঞ্চুতে, গিরাবাজদের চঞ্চু ও মাথা আর গলার ঝুঁটিতে, লক্কাদের হাঁটাচলা বা দাঁড়ানোর ভঙ্গি ও লেজ ইত্যাদিতে কী বিপুল পরিমান পার্থক্য রয়েছে। এইসব বৈশিষ্ট্যের প্রতি ব্রিটিশ পাখিরসিক বা পাখিপ্রেমিকরা এখন মনোনিবেশ করেছেন। এমন কি ছোট মুখওয়ালা লোটনের মতো একই উপজাতটির ক্ষেত্রেও প্রায় নিখুঁত পাখিদের প্রজনন করা অতিশয় কষ্টসাধ্য, অনেকেই মূলগত মান থেকে বিপথে গমন করে। সঠিকভাবে বলতে গেলে বলা যেতে পারে যে একদিকে কম নিখুঁত অবস্থায় পূর্বানুবৃত্তির প্রবণতা এবং নূতন পরিবর্তনগুলির দিকে সহজাত প্রবণতা, অন্যদিকে জাতটিকে নিখুঁত রাখতে স্থায়ী নির্বাচনের ক্ষমতার মধ্যে অনবরত একটি সংগ্রাম চলছে। পরিশেষে নির্বাচনই জয়ী হয়, এবং আমরা একটি ভাল। ছোট মুখওয়ালা স্ট্রেন থেকে একটি সাধারণ লোটন পায়রার মতো পাখি প্রজনন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ার আশা করি না। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন দ্রুত হারে চলতে থাকে, ততদিন পর্যন্ত রূপান্তরিত হচ্ছে এমন অঙ্গসমূহে অতি পরিবর্তনশীলতা সর্বদাই আশা করা যেতে পারে।

এখন আমাদের প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করা উচিত। একই গণের অন্য প্রজাতিদের তুলনায় যে কোন একটি প্রজাতির একটি প্রত্যঙ্গ যখন বিস্ময়করভাবে ক্রমবিকশিত হয়, তখন আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে ঐ প্রত্যঙ্গটি সেই সময় থেকে অস্বাভাবিক। পরিমাণে বা হারে রূপান্তরিত হয়েছে, যে সময় কতিপয় প্রতি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়। এই সময়টি অতিমাত্রায় দীর্ঘ হয় না, কারণ এজাতিরা কদাচিৎ একটি ভূতাত্ত্বিক যুগের বা পর্যায়ের বেশি স্থায়ী হয়। অস্বাভাবিক পরিমাণ রূপান্তরের অর্থ হচ্ছে পরিবর্তনশীলতার বা বিভিন্নতার একটি অস্বাভাবিকভাবে বিরাট ও দীর্ঘস্থায়ী পরিমাণ, যেটি প্রজাতির উপকারের জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা অবিচ্ছিন্নভাবে সঞ্চয়ীভূত। হয়েছে। কিন্তু যেহেতু অস্বাভাবিকভাবে ক্রমবিকশিত প্রত্যঙ্গ বা অঙ্গের পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা এত বিরাটভাবে এবং অধিক দূরবর্তী নয় এমন সময় পর্যন্ত নিরবিচ্ছন্নভাবে ঘটেছে, সেহেতু আরও দীর্ঘসময় ধরে প্রায় স্থায়ী এমন জৈবসংগঠনের অন্য প্রত্যঙ্গদের তুলনায় এরূপ প্রত্যঙ্গসমূহে আরও বিভিন্নতা বা পরিবর্তনশীলতা একটি সাধারণ নিয়ম অনুসারে তখনও আশা করতে পারতাম। আমি স্থিরনিশ্চিত যে এটাই হচ্ছে আসল ঘটনা। একদিকে প্রাকৃতিক নির্বাচন, অন্যদিকে পূর্বানুবৃত্তি ও বিভিন্নতা বা পরিবর্তনশীলতার প্রবণতার মধ্যে সংগ্রাম কালক্রমে বন্ধ হবে এবং অস্বাভাবিকভাবে বর্ধিত অঙ্গগুলি স্থায়ী হতে পারবে, এ সব বিষয়ে সন্দেহ করার কোন কারণ আমি দেখি না। অতএব যখন একটি অঙ্গ, যতই অস্বাভাবিক হোক না কেন, অসংখ্য রূপান্তরিত বংশধরে প্রায় একই অবস্থাকে বংশগতভাবে প্রেরণ করে, যেমন বাদুড়ের ডানা, তখন আমাদের তত্ত্বানুসারে এটি বিরাট সময় ধরে প্রায় একই অবস্থায় অবস্থান করে থাকবে এবং এভাবে এটি অন্য কোন দেহগঠনের তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল হবে না। এটি কেবলমাত্র সেই সব ক্ষেত্রে হয় যেখানে রূপান্তরটি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালের এবং এত অস্বাভাবিকভাবে বিরাট হয়েছে যে যাকে আমরা বলি উৎপাদনশীল পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা, তা তখনও উচ্চমাত্রায় উপস্থিত বা বজায় থাকে। কারণ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপায় ও মাত্রায় পরিবর্তনশীল এককদের নিরবচ্ছিন্ন নির্বাচন দ্বারা এবং পূর্বে ও কম রূপান্তরিত অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের প্রবণতাসম্পন্ন এককদের অনবরত বাতিলের দ্বারা পরিবর্তনশীলতা বা বিভিন্নতা তখনও পর্যন্ত কদাচিৎ স্থায়ী হবে।

গণীয় বৈশিষ্ট্যের তুলনায় প্রজাতিক বৈশিষ্ট্য আরও বেশি পরিবর্তনশীল

আগের রচনার শিরোনাম অংশটিতে আলোচিত পদ্ধতিটি বর্তমান বিষয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি সুবিদিত যে প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল। এটির অর্থ একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক : উদ্ভিদের বড় একটি গণের কতিপয় প্রজাতির ফুলের রং যদি নীল হয় এবং কয়েকটির রং লাল হয়, তাহলে রংটি কেবল প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যের হবে, এবং নীল প্রজাতির লাল প্রজাতিতে রূপান্তর বা বিপরীত ঘটনা দেখে কারও আশ্চর্য হওয়া উচিত হবে না; কিন্তু সব প্রজাতির ফুলের রং নীল হলে, রংটি গণীয় বৈশিষ্ট্যের হবে এবং তার পরিবর্তন আরও বেশি অস্বাভাবিক ধরনের হবে। আমি এই উদাহরণটি মনোনীত করেছি, কারণ অধিকাংশ প্রকৃতিবিদের দেওয়া এই ব্যাখ্যাটি এখানে প্রযোজ্য নয় যে প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ গণীয় বৈশিষ্ট্যের তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল, কারণ গণেদের শ্রেণীবিভাগের জন্য সাধারণভাবে ব্যবহৃত বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনায় কম শারীরবৃত্তীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গদের থেকে এদের গ্রহণ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই ব্যাখ্যা আংশিক হলেও অপ্রত্যক্ষভাবে সত্য, তবে শ্রেণীবিভাগ অধ্যায়ে আমি এ বিষয়ে ফিরে আসব। এই বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করা প্রায় অনাবশ্যক যে সাধারণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি গণীয় বৈশিষ্ট্যের তুলনায় অধিকতর পরিবর্তনশীল হয়; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক ইতিহাসের ওপর লেখাগুলিতে আমি বারংবার লক্ষ্য করেছি যখন একজন লেখক সবিস্ময়ে মন্তব্য করেন যে প্রজাতিদের একটি বিরাট গোষ্ঠীর সকলের ক্ষেত্রে সাধারণত অপরিবর্তনশীল গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ নিকটসম্বন্ধীয় প্রজাতিগুলির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হয়, তখন এটি একই প্রজাতির এককগুলিতে প্রায়শই পরিবর্তনশীল হয়। এবং এই ঘটনাটি দেখায় যে সাধারণতঃ গণীয় মূল্যের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যখন তার মূল্যে হাস পায় এবং কেবল প্রজাতিকে মূল্যের হয়, তখন এটি প্রায়শই পরিবর্তনশীল হয়, যদিও এর শারীরবৃত্তীয় গুরুত্ব একই থাকে। একই বক্তব্য কয়েকটি অঙ্গবিকৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্ততঃ ইসিডোর জিওফ্রয় সেন্ট হিলারে আপাত সন্দেহাতীতভাবে মনে করেন যে একই গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির একটি অঙ্গ সাধারণভাবে যত বেশি ভিন্ন হয়, এককগুলিতে তত বেশি অনিয়মিত আকার দেখতে পাওয়া যায়।

প্রত্যেক প্রজাতি স্বাধীনভাবে সৃষ্ট হয়েছে–এই সাধারণ মতানুসারে, একই গণের স্বাধীনভাবে সৃষ্ট অন্য প্রজাতির একই প্রত্যঙ্গ থেকে ভিন্ন এমন দেহগঠনের ঐ প্রত্যঙ্গ টি সেইসব প্রত্যঙ্গদের তুলনায় অধিক পরিবর্তনশীল কেন হবে, যেগুলো কতিপয় প্রজাতিতে সদৃশ? আমি বুঝতে পারি না এর কোন্ ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রজাতিরা কেবল স্পষ্টচিহ্নিত ও স্থায়ী ভ্যারাইটি–এই মতানুসারে আমরা প্রায়শই আশা করতে পারি যে এদের দেহগঠনের ঐ সব প্রত্যঙ্গ এখনও পরিবর্তিত হচ্ছে, যেগুলি আবার সাম্প্রতিককালের মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে এবং যা এভাবে ভিন্ন হয়েছে। অথবা ঘটনাটিকে অন্যভাবে ব্যক্ত করলে–যে লক্ষণগুলির দ্বারা একটি গণের সমস্ত প্রজাতি পরস্পরের সদৃশ হয় এবং নিকট সম্পর্কীয় গণগুলির থেকে এরা ভিন্ন হয়, এই লক্ষণগুলিকে গণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে; এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়েছে বলা যেতে পারে, কারণ এটি কদাচিৎ ঘটতে পারে যে প্রাকৃতিক নির্বাচন ঠিক একইরকম কমবেশি ব্যাপকভাবে ভিন্ন স্বভাবের কতিপয় প্রজাতিকে রূপান্তরিত করে থাকবে : যেহেতু এইসব সুপরিচিত গণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঐ সময়কালের পূর্বে বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়েছে যে সময় কয়েকটি প্রজাতি তাগের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয়নি বা যে কোন মাত্রায় অথবা কেবল অল্প মাত্রায় পৃথক বা ভিন্ন হয়েছে, এটি সম্ভবপর নয় যে এরা বর্তমানে পরিবর্তিত হবে। বিপরীতক্রমে, যে লক্ষণগুলির দ্বারা একই গণের অন্য প্রজাতিদের থেকে প্রজাতিদের পৃথক করা হয়, সেই লক্ষণসমূহকে প্রজাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে; এবং যেহেতু এইসব প্রজাতিক বৈশিষ্ট্য ঐ সময়কাল থেকে পরিবর্তিত হয়েছে এবং পৃথক হয়েছে যে সময়ে প্রজাতিরা একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, সেহেতু এটি সম্ভবপর যে এরা তখনও পর্যন্ত কিছু মাত্রায় পরিবর্তনশীল হবে–যে প্রত্যঙ্গগুলি দীর্ঘসময় ধরে অপরিবর্তনীয় রয়েছে, জৈবসংগঠনের সেই প্রত্যঙ্গগুলি তুলনায় অন্ততঃ আরও বেশি পরিবর্তনশীল হবে।

গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলি পরিবর্তনশীল।। আমি মনে করি যে কোন প্রকৃতিবিদই স্বীকার করবেন যে গৌণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি অতিশয় পরিবর্তনশীল। আরও স্বীকার করতে হবে যে একই গোষ্ঠীর প্রজাতিদের অন্যান্য প্রত্যঙ্গের তুলনায় এদের গৌণ যৌন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি পরস্পরের থেকে আরও ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্যালিনেসিয়াম পাখিদের গৌণ যৌন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান এমন পুরুষদের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণের সঙ্গে স্ত্রীদের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণের তুলনা করুন। এইসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মৌলিক পরিবর্তনশীলতার কারণটি স্পষ্ট নয়, কিন্তু আমরা দেখতে পারি কেন এরা অন্যদের তুলনায় স্থায়ী ও একইরূপের হয়ে থাকবে না, কারণ এরা যৌন নির্বাচন দ্বারা সঞ্চিত হয়েছে, যেটি এর কার্যকারিতায় সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় কম কঠোর হয়, কারণ এটি মৃত্যু ঘটায় না বরং কম আনুকূল্য প্রাপ্ত পুরুষদের অল্প কয়েকটি বংশধর উৎপাদন করতে সাহায্য করে। এরা অতিশয় পরিবর্তনশীল বলে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণ যাই হোক না কেন, যৌন নির্বাচন প্রক্রিয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়ে থাকবে এবং এভাবে একই গোষ্ঠীর প্রজাতিগুলিতে অন্য বিষয়গুলির তুলনায় পার্থক্যের বিরাটতর পরিমাণ প্রদান করতে সমর্থ হয়ে থাকবে।

এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে একই প্রজাতির দুটি লিঙ্গের মধ্যে গৌণ পার্থক্যগুলি দেহের সেই একই প্রত্যঙ্গসমুহেই সাধারণতঃ প্রদর্শিত হয়, যেগুলির দ্বারা একই গণের প্রজাতিরা পরস্পরের থেকে ভিন্ন হয়। এ বিষয়ে আমি দুটি উদাহরণ ব্যাখ্যা–সহ পেশ করব যা আমার কাছে আছে; এবং এইসব ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলি অতি অস্বাভাবিক ধরনের হয় বলে সম্পর্কটি কদাচিৎ আকস্মিক ধরনের হতে পারে। গোড়ালির সন্ধিগুলির একই সংখ্যা বিরাট সাংখ্যক বিটলদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য, কিন্তু ওয়েস্টউডের বক্তব্য অনুযায়ী এনগিডিদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি বিরাটভাবে ভিন্ন হয়; এবং এভাবে সংখ্যাটি একই প্রজাতির দুটি লিঙ্গে ভিন্ন হয়। পুনরায় ফোসোরিয়াল হাইমেনটেরাতে ডানার স্নায়ুবিন্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, কারণ এটি বিরাট গোষ্ঠীসমূহে সাধারণ ব্যাপার; কিন্তু কোন কোন গণে স্নায়ুবিন্যাস বিভিন্ন প্রজাতিতে এবং একইভাবে একই প্রজাতির দুটি লিঙ্গেও ভিন্ন হয়।

স্যার জে. লুবক সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন যে কতিপয় ক্ষুদ্র খোলকী প্রাণীরা এই নিয়মের সুন্দর উদাহরণ উপস্থিত করে। “উদাহরণস্বরূপ, পন্টেলা প্রাণীদের সামনের শুঙ্গ (অ্যান্টেনা) ও পায়ের পঞ্চম জোড়ায় যৌন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ মূলতঃ প্রদর্শিত হয়: এই অঙ্গগুলির দ্বারা প্রজাতিক পার্থক্যসমূহ প্রধানতঃ প্রদর্শিত হয়। আমার মতে এই সম্পর্কটির একটি স্পষ্ট অর্থ আছে, কারণ একই গণের সমস্ত প্রজাতিরা নিশ্চয় যেমন একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তেমনি এদের যে কোন প্রজাতির দুটি লিঙ্গ থাকে। ফলস্বরূপ, সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তেমনি এদের যে কোন প্রজাতির দুটি লিঙ্গ থাকে। ফলস্বরূপ, সাধারণ পূর্বপুরুষটির বা তার প্রথম বংশধরদের দেহের যে কোন প্রত্যঙ্গ যতই পরিবর্তনশীল হোক না কেন, প্রাকৃতিক অবস্থায় কয়েকটি জায়গায় কতিপয় প্রজাতিকে উপযোগী করতে এবং এভাবে একই প্রজাতির দুটি লিঙ্গ কে পরস্পরের নিকটে উপযোগী করতে অথবা স্ত্রীদের অধিকার করার জন্য অন্য পুরুষদের সঙ্গে সংগ্রামের পক্ষে উপযোগী করতে এটি অতিশয় সম্ভবপর যে এই প্রত্যঙ্গ টির পরিবর্তনসমূহের সুবিধাজনক অবস্থাটি প্রাকৃতিক এবং যৌন নির্বাচন গ্রহণ করবে।

প্রজাতিক বৈশিষ্ট্যগুলির আরও বেশি পরিবর্তনশীলতা, অথবা গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনায় প্রজাতি থেকে প্রজাতিকে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পৃথক করে–সব প্রজাতিরা যে বৈশিষ্ট্যসমূহের অধিকারী হয়–যে কোন প্রত্যঙ্গের পুনঃ পুনঃ অতি পরিবর্তনশীলতা যা তার স্বগোত্রীয়দের একই প্রত্যঙ্গের তুলনায় একটি প্রজাতিতে অস্বাভাবিক উপায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে–একটি প্রত্যঙ্গে অল্পমাত্রার পরিবর্তনশীলতা, যতই অস্বাভাবিক উপায়ে বৃদ্ধি হোক না কেন, যদি সেটি প্রজাতির সমগ্র গোষ্ঠীতে সাধারণ হয়–গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির বিরাট পরিবর্তনশীলতা এবং নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতিগুলিতে এদের বিরাট পার্থক্য–গৌণ যৌন এবং সাধারণ প্রজাতিক পার্থক্যসমূহ দেহগঠনের একই প্রত্যঙ্গসমূহে সাধারণতঃ প্রদর্শিত হয়–অতএব অবশেষে আমি সিদ্ধান্তে আসি যে এগুলি হচ্ছে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত প্রাকৃতিক নিয়ম। সবগুলি এইসব কারণে হয়–একই গোষ্ঠীর প্রজাতিরা একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার থেকে এরা অনেক সাধারণ বৈশিষ্ট্য বংশগতভাবে পেয়েছে–যে প্রত্যঙ্গগুলি সম্প্রতি ও বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে বংশগতভাবে পাওয়া ও পরিবর্তিত না হওয়া প্রত্যঙ্গগুলির থেকে সম্ভবত বেশিদিন ধরে পরিবর্তিত হতে থাকবে–সময়ের অতিবাহনে প্রাকৃতিক নির্বাচন পূর্বানুবৃত্তি ও আরও পরিবর্তনশীলতার প্রবণতাকে কমবেশি সম্পূর্ণরূপে দমন করেছে–যৌন নির্বাচন সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় কম কঠোর–একই প্রত্যঙ্গগুলির পরিবর্তনসমূহ প্রাকৃতিক ও যৌন নির্বাচন দ্বারা সঞ্চিত হয়েছে এবং এভাবে গৌণ যৌন উদ্দেশ্যে ও সাধারণ উদ্দেশ্যে অভিযোজিত হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রজাতিরা সদৃশ পরিবৃত্তিসমূহ উপস্থিত করে, যাতে একটি প্রজাতির একটি ভ্যারাইটি একটি নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতির একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রায়শই ধারণ করে, অথবা একটি আদিম পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলির যে কোনটিতে প্রত্যাবর্তন করে। আমাদের গৃহপালিত জাতসমূহের দিকে লক্ষ্য করলে এইসব বক্তব্য বা প্রস্তাব খুব সহজেই বোঝা যাবে। ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন দেশসমূহের পায়রাদের সবচেয়ে ভিন্ন জাতগুলি মাথার উল্টানো পালক ও পায়ের পাতার পালক সমেত উপ-ভ্যারাইটিদের সৃষ্টি করে, ঐ বৈশিষ্ট্যগুলি আদিম পাহাড়ি পায়রাদের ছিল না; তা হলে এগুলি হচ্ছে দুই বা আরও ভিন্ন জাতের সদৃশ পরিবৃত্তি বা পরিবর্তন। পাউটার পায়রাদের চোদ্দ বা এমনকি ষোলটি লেজপালক নিয়মিত উপস্থিত থাকাকে লক্কা পায়রার মতো অন্য একটি জাতের স্বাভাবিক দেহগঠন সূচিত করে এমন একটি পরিবর্তন হিসেবে ধরা যেতে পারে। আমি স্বীকার করি যে কেউ সন্দেহ করবে না এইসব সদৃশ পরিবৃত্তিগুলির কারণ হচ্ছে পায়রাটির কয়েকটি জাত একইরূপ অজ্ঞাত প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত একটি সাধারণ পিতামাতার থেকে একই দেহগঠন ও পরিবর্তনের প্রবণতা বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়। উদ্ভিদজগতেও আমরা সদৃশ পরিবৃত্তিগুলি লক্ষ্য করি, যেমন সুইডিস ওলকপি ও রুটা বাগার পরিবর্তিত কাণ্ডগুলিতে, যাকে শিকড় বলে ধরা হয়। কয়েকজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী এই উদ্ভিদদের একটি সাধারণ পিতামাতা থেকে চাষের মাধ্যমে উৎপন্ন ভ্যারাইটি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছেন; যদি এটি এরূপ না হয়, তাহলে ঘটনাটি দুটি তথাকথিত ভিন্ন প্রজাতির সদৃশ পরিবর্তনের একটি হবে; এবং এগুলির সঙ্গে তৃতীয় একটি যুক্ত করা যেতে পারে, যথা সাধারণ ওলকপি। প্রত্যেক প্রজাতির স্বাধীনভাবে সৃষ্ট হওয়ার সাধারণ মতানুসারে, বংশ সম্প্রদায়গতভাবে উদ্ভবের কারণের মধ্যে এবং একটি সদৃশ উপায়ে পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতার মধ্যে নয়, বরং সৃষ্টির তিনটি ভিন্ন অথচ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কাজের মধ্যেই এই তিনটি উদ্ভিদের স্ফীত হওয়া কাণ্ডের এই সাদৃশ্যের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়। বিরাট লাউ গোত্রে নাউডিন ও আমাদের দানা জাতীয় শস্যগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা সদৃশ পরিবৃত্তির অসংখ্য, একইরূপ ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। স্বাভাবিক পরিবেশে পতঙ্গদের ক্ষেত্রে একইরূপ ঘটনার বিষয়ে মিঃ ওয়ালশ অতি দক্ষতার সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনা করেছেন এবং তার সুষম পরিবর্তনশীলতার নিয়মের দ্বারা এদের শ্রেণীবিভাগ করেছেন।

তবে পায়রাদের ক্ষেত্রে আমরা অন্য একটি ঘটনা জানি। শ্লেটপাথরতুল্য নীল পাখিদের সব জাতের ডানায় দুটি কালো ডোরা দাগ, সাদা কটি, লেজের শেষে একটি ডোরা দাগ, বাইরের পালকের কিনারার নিচে সাদা দাগ মাঝেমাঝে আবির্ভূত হয়। এইসব চিহ্নগুলি পিতামাতা পাহাড়ি পায়রার বৈশিষ্ট্য বলে এ থেকে আমি ধরে নিই যে নিঃসন্দেহেই এটি একটি পূর্বানুবৃত্তির ঘটনা এবং কয়েকটি জাতে নূতন, তবুও সদৃশ পরিবৃত্তি বা পরিবর্তনের আবির্ভাবের ঘটনা নয়। আমার মনে হয় আমরা দৃঢ় সিদ্ধান্তেই আসতে পারি, কারণ আমরা দেখেছি এইসব রঙ্গিন চিহ্নগুলির দুটি ভিন্ন ও বিভিন্ন রঙের জাতের সঙ্করিত বংশধরে আবির্ভূত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, এবং এ ক্ষেত্রে বংশগতির নিয়মানুসারে কেবল সংকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাব ছাড়া কতিপয় চিহ্ন সমেত শ্লেটপাথরতুল্য নীল রঙের পুনরাবির্ভাব কেবলমাত্র জীবনের বহিঃপরিবেশ ঘটাতে পারে না।

এটি একটি অতি বিস্ময়কর ঘটনা যে সম্ভবতঃ শত শত বংশের পর লুপ্ত হওয়া বৈশিষ্ট্যসমূহ পুনরাবির্ভূত হবে। কিন্তু যখন একটি জাত কেবলমাত্র একবার অন্য কোন জাতের সঙ্গে সংকরিত হয়, তখন বংশধরটি মাঝেমাঝে অনেক বংশধরে বিদেশি জাতের বৈশিষ্ট্যে প্রত্যাবর্তনের প্রবণতা দেখায়–কেউ কেউ বলেন এক ডজন বা এমনকি এক কুড়ি বংশ ধরে। সাধারণভাবে বললে-বারো বংশ পরে একজন পূর্বপুরুষ থেকে রক্তের অনুপাত কেবলমাত্র ২০৪৮-এ ১ হয়, এবং তথাপি আমরা লক্ষ্য করি যে সাধারণ বিশ্বাস হল–বিদেশি রক্তের এই অবশিষ্টাংশ পুনরাবির্ভাবের একটি প্রবণতাকে ধরে রাখে। একটি বংশ, যা সংকরিত হয়নি এবং যাতে উভয় পিতামাতায় তাদের পূর্বপুরুষের কিছু বৈশিষ্ট্য লুপ্ত হয়েছে, তা বলবান বা দুর্বল যা-ই হোক, লুপ্ত বৈশিষ্ট্যের পুনর্জননের প্রবণতাটি, বহু সংখ্যক বংশপরম্পরা ধরে প্রেরিত হয়ে থাকবে–যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছিল। একটি জাতে লুপ্ত হওয়া কোন বৈশিষ্ট্য যখন বিরাট সংখ্যক বংশের। পর পুনরাবৃত্তি হয়, তখন সবথেকে সম্ভাব্য প্রকল্পটি এই নয় যে একটি একক বিগত শত বংশ দ্বারা অপসারিত একজন পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্যটি হঠাৎ গ্রহণ করে, বরং প্রত্যেক পর্যায়ক্রমিক বংশে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে এবং পরিশেষে অজ্ঞাত অনুকূল পরিবেশে বিকশিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গোলা পায়রাদের ক্ষেত্রে, যারা কদাচিৎ নীল বর্ণের পাখিরা জন্ম দেয়, এটি সম্ভবপর যে প্রত্যেক বংশে নীল পালক উৎপন্ন করার একটি প্রচ্ছন্ন প্রবণতা রয়েছে। বিরাট সংখ্যক বংশপরম্পরা ধরে এরূপ একটি প্রবণতার বংশগতভাবে প্রেরণের বিমূর্ত অসম্ভবতা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় অথবা অবর্ধক বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গদের একইরূপে বংশগতভাবে প্রেরণের তুলনায় বিরাটতর নয়। একটি অঙ্কুর সৃষ্টি করার জন্য কেবল একটি প্রবণতাই বাস্তবিক পক্ষে কোন কোন সময় বংশগতভাবে প্রেরিত হয়।

একই গণের সব প্রজাতিরা একটি সাধারণ পিতামাতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয় বলে আশা করা যেতে পারত যে এরা একটি সদৃশ বা অনুরূপ উপায়ে মাঝেমাঝে পরিবর্তিত হবে, যাতে করে দুই বা ততোধিক প্রজাতির ভ্যারাইটিরা পরস্পরের সদৃশ হবে অথবা একটি প্রজাতির একটি ভ্যারাইটি কোন কোন বৈশিষ্ট্যে, অন্য ও ভিন্ন প্রজাতির অনুরূপ হবে–আমাদের মতানুসারে এই অন্য প্রজাতিটি হচ্ছে একটি স্পষ্টচিহ্নিত ও স্থায়ী ভ্যারাইটি। কিন্তু অনুরূপ পরিবৃত্তির জন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্ভবতঃ অপ্রয়োজনীয় প্রকৃতির হবে, কারণ সমস্ত কার্যকরী গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ প্রজাতির বিভিন্ন স্বভাব অনুসারে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকবে। আরও আশা করা যেতে পারত যে একই গণের প্রজাতিদের মধ্যে বহু পূর্বে লুপ্ত হওয়া বৈশিষ্ট্যগুলির পুনরাবির্ভাব মাঝেমাঝে দেখা যাবে। তবে যেহেতু আমরা যে কোন প্রাকৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ পূর্বপুরুষদের জানি না, সেহেতু আমরা পূর্বানুবৃত্তিমূলক ও সদৃশ বা অনুরূপ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা না জানতাম যে পিতামাতা পাহাড়ি পায়রাদের পালকওয়ালা পা ও ঝুঁটি ছিল না, তাহলে আমরা বলতে পারতাম না আমাদের গৃহপালিত জাতসমূহে এইসব বৈশিষ্ট্যগুলি পূর্বানুবৃত্তিমূলক বা কেবল সদৃশ বা অনুরূপ পরিবৃত্তি কিনা; তবে চিহ্নের সংখ্যা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারতাম যে নীল রঙের পূর্বানুবৃত্তি একটি ঘটনা, যা এই রঙের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যা সম্ভবতঃ সরল পরিবৃত্তি থেকে সকলে একত্রে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন রঙের জাতগুলির সংকরণের পর প্রায়শই নীল রং এবং কতিপয় চিহ্নের আবির্ভাব থেকে আরও বিশেষভাবে আমরা এই সিদ্ধান্ত করতে পারতাম। পূর্বে অবস্থিত বৈশিষ্ট্যদের কোন ঘটনাগুলি পূর্বানুবৃত্তিমূলক এবং কোন্ ঘটনাগুলি নূতন অথচ সদৃশ বা অনুরূপ পরিবৃত্তি হবে, যদিও প্রাকৃতিক পরিবেশে এটি সন্দেহজনক বলে পরিত্যক্ত হবে, তথাপি, আমাদের তত্ত্বানুসারে, আমরা কোন কোন সময় লক্ষ্য করে থাকব যে একটি প্রজাতির পরিবর্তনশীল বংশধররা সেই। বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে, যেগুলি একই গোষ্ঠীর অন্য সদস্যদের মধ্যে ইতিমধ্যেই। বর্তমান রয়েছে। এবং সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় এটিই হচ্ছে ঘটনা।

পরিবর্তনশীল প্রজাতিদের তফাৎ বা প্রভেদ করার অসুবিধার কারণ হচ্ছে যে ভ্যারাইটিরা একই গণের অন্য প্রজাতিদের সম্ভবত নকল করে। দুটি ভিন্ন আকারের মধ্যে মধ্যবর্তী আকারগুলির একটি তুলনামূলক তালিকা দেওয়া যেতে পারত, যাদের সন্দেহজনক প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে; এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না এইসব নিকট সম্বন্ধীয় আকারদের স্বাধীনভাবে সৃষ্ট প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এটি দেখায় যে এরা পরিবর্তিত হওয়ার জন্য অন্যদের বৈশিষ্ট্যগুলির কয়েকটিকে ধারণ করেছে। কিন্তু সদৃশ বা অনুরূপ পরিবৃত্তির সবচেয়ে ভাল প্রমাণ অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গরা উপস্থিত করে, যেগুলি বৈশিষ্ট্যে সাধারণতঃ অপরিবর্তনীয় হয়, কিন্তু যা একটি নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতির একই প্রত্যঙ্গ বা অঙ্গের সঙ্গে কিছু মাত্রায় সদৃশ হওয়ার জন্য আকস্মিকভাবে পরিবর্তিত হয়। এইসব ঘটনার একটি দীর্ঘ তালিকা আমি সংগ্রহ করেছি, কিন্তু আগের মতো এখানে সেটি দিতে না পারার বিরাট অসুবিধা অনুভব করি আমি। আমি কেবল পুনরায় বলতে পারি যে এইসব ঘটনা নিশ্চয় ঘটে এবং এগুলিকে আমার অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য মনে হয়।

এখানে আমি একটি অদ্ভুত ও জটিল ঘটনার কথা বলব, যা বাস্তবিকপক্ষে কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে না, কিন্তু যেটি একই গণের কয়েকটি প্রজাতিতে, অংশত গৃহপালন এবং অংশত প্রাকৃতিক অবস্থায় দৃষ্ট হয়। এটি নিশ্চয় পূর্বানুবৃত্তির একটি ঘটনা। জেব্রার পায়ের মতো গাধার পায়ে কোন কোন সময় অতিশয় স্পষ্ট তির্যক ডোরা দাগ থাকে; জোরের সঙ্গে বলা হয় যে শাবকটির ক্ষেত্রে এগুলি অতিশয় সরল প্রকৃতির, এবং অনুসন্ধান থেকে আমি বিশ্বাস করি যে এটি সত্য। স্কন্ধের ডোরা দাগ কোন কোন সময় জোড়ায় হয়, এবং দৈর্ঘ্য ও নকশায় এগুলি অতিশয় পরিবর্তনশীল। কিন্তু ধবল রোগগ্রস্ত নয় এমন একটি সাদা গাধার পিঠে ও কাঁধে কোন ডোরা দাগ থাকে না বলে বর্ণিত হয়েছে : কালো রঙের গাধাদের এই ডোরা দাগ কোন কোন সময় খুব অস্পষ্ট হয় অথবা প্রকৃতপক্ষে লুপ্ত হয়। পালাসের কৌলান-এর কাঁধে জোড়া ডোরা দাগ দেখা গিয়েছে বলে শোনা যায়। মিঃ ব্লিথ হেমিওনাসের একটি নমুনার স্কন্ধে স্পষ্ট ডোরা দাগ দেখেছেন, যদিও সাধারণতঃ এদের একটিও থাকে না, এবং কর্ণেল পুলে আমাকে জানিয়েছেন যে এই প্রজাতির শাবকদের পায়ে সাধারণতঃ ডোরা দাগ থাকে এবং স্কন্ধে অস্পষ্টভাবে। জেব্রাদের মতো কোয়ারীদের শরীরেও ডোরা দাগ থাকে, কিন্তু পায়ে থাকে না; কিন্তু ডঃ গ্রে হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পায়ে জেব্রার মতো ডোরা দাগ সমেত একটি ছবি এঁকেছেন।

ইংল্যান্ডে, ঘোড়াদের ক্ষেত্রে, সবচেয়ে স্বতন্ত্র জাতগুলির পৃষ্ঠদেশে সব রঙের ডোরা দাগের অনেক উদাহরণ সংগ্রহ করেছি আমি : ডুন, মাউসড়ুন এবং চেসনাট ঘোড়াদের পায়ে তির্যক ডোরা দাগ থাকা বিরল নয়। ডুনদের ক্ষেত্রে স্কন্ধে একটি অস্পষ্ট ডোরা দাগ কোন কোন সময় দেখা যেতে পারে, এবং একটি পিঙ্গলবর্ণের ঘোড়ায় আমি একটি দাগ দেখেছি। আমার পুত্র যত্নসহকারে একটি পরীক্ষা করেছিল এবং প্রত্যেক স্কন্ধে এক জোড়া ডোরা দাগ এবং পায়ে ডোরা দাগ সমেত বেলজিয়ান ভারবাহী ঘোড়ার একটি ডুনের ছবি আমার জন্য এঁকেছিল। আমি নিজে একটি ডুন ডেভনশায়ার ছোট ঘোড়া দেখেছি এবং একটি ছোট ডুন ওয়েলস ঘোড়ার বর্ণনা শুনেছি, যাদের উভয়েরই প্রত্যেক স্কন্ধে তিনটি সমান্তরাল ডোরা দাগ আছে।

ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশের ঘোড়াগুলির কাটিওয়ার জাতটি এত সার্বজনীনভাবে ডোরা দাগ সম্বলিত যে ডোরা দাগ ব্যতীত একটি ঘোড়াকে বিশুদ্ধ জাত হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। আমি এটি কর্নেল পুলের কাছ থেকে শুনেছি, যিনি ভারত সরকারের জন্য এই জাতটি পরীক্ষা করেছিলেন। পৃষ্ঠদেশটি সর্বদা ডোরা সম্বলিত; পায়ে সাধারণতঃ তির্যক ডোরা আছে; এবং স্কন্ধের ডোরা দাগটি সাধারণ, যা কোন কোন সময় এক জোড়া, কোন কোন সময় তিনটি হয়; অধিকন্তু মুখমণ্ডলের পার্শ্বদেশও কোন কোন সময় ডোরা দাগ সম্বলিত হয়। শাবকে ডোরা দাগগুলি প্রায়ই সরলতম হয় এবং বয়স্ক ঘোড়াদের ডোরা দাগসমূহ কোন কোন সময় সম্পূর্ণরূপে তিরোহিত হয়। ধূসর ও পিঙ্গল বর্ণের কাটোয়ার ঘোড়াদের প্রথম জন্মানো শাবকদের শরীরে ডোরা দাগ কর্নেল পুলে লক্ষ্য করেছেন। মিঃ ডব্লিউ. ডব্লিউ. এডওয়ার্ড এর কাছ থেকে সংবাদ শুনে আমার সন্দেহ করার কারণ আছে যে ইংল্যান্ডের ঘোড়দৌড়ের ঘোড়াদের ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক ঘোড়াদের তুলনায় শাবকদের পৃষ্ঠদেশের ডোরা দাগ অতি সাধারণ। আমি সম্প্রতি নিজে একটি ধূসরবর্ণের ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার সঙ্গে একটি ধূসরবর্ণের ঘোটকী (একটি টুকোম্যান ঘোড়া এবং একটি ফ্লেমিশ ঘোটকীর বংশধর) প্রজনন করে একটি শাবক উৎপাদন করেছিলাম। এই শাবকটির বয়স যখন এক সপ্তাহ, তখন এর পিছনের এক-চতুর্থাংশে এবং কপালে জেব্রার মতো অসংখ্য সরু, কালো ডোরা দাগ ছিল এবং পায়ে অস্পষ্ট ডোরা দাগ ছিল। এই ডোরাগুলি শীঘ্রই সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়েছিল। আরও বিস্তৃতভাবে বলার চেষ্টা না করে আমি বলতে পারি যে ব্রিটেন থেকে পূর্ব চীনদেশ এবং উত্তরে নরওয়ে থেকে দক্ষিণে মালয় আর্কিপেলাগো পর্যন্ত সমস্ত দেশগুলির অতিশয় ভিন্ন জাতের ঘোড়াদের পায়ে এবং স্কন্ধে ভোরা দাগের ঘটনাসমূহ আমরা সংগ্রহ করেছি। পৃথিবীর সমস্ত অংশে ডুন ও মাউস ভুন ঘোড়াদের শরীরে এইসব ডোরা প্রায়শই দেখা যায়; ডুন পদটিতে অনেক রং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, বাদামি এবং কালোর মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ক্রীম রঙের কাছাকছি পর্যন্ত।

আমি অবগত আছি যে যিনি এ বিষয়ে লিখেছেন সেই কর্নেল হ্যাঁমিল্টন স্মিথ বিশ্বাস করেন যে ঘোড়ার কয়েকটি জাত কয়েকটি আদিম প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে–এদের মধ্যে ডুন ঘোড়া ডোরা দাগ সম্বলিত ছিল; এবং তিনি আরও বিশ্বাস করেন যে উপরে বর্ণিত বহিরাকৃতিগুলি সকলেই জুন স্টকের সঙ্গে অতি প্রাচীন কালে সংস্করণের ফলে উদ্ভূত হয়েছে। কিন্তু এই মতবাদটি দৃঢ়ভাবে বাতিল করা যেতে পারে, কারণ এটি একেবারেই অসম্ভব যে পৃথিবীর দূরতম অংশগুলিতে বসবাসকারী ভারী বেলজিয়ান ভারবহনকারী ঘোড়া, ওয়েলসের পনি ঘোড়া, নরওয়ের কব ঘোড়া, ল্যাঙ্কি কাটোয়ার জাত ইত্যাদিরা সকলে একটি অনুমতি আদিম কুলের সঙ্গে সংকরিত হয়ে থাকবে।

ঘোড়া গণের কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে সংকরণের ফলাফলসমূহের দিকে আমাদের এখন লক্ষ্য করা উচিত। রোলিন জোরের সঙ্গে দাবী করেন যে গাধা এবং ঘোড়া থেকে। উৎপূন্ন সাধারণ খচ্চরের পায়ে ডোরা দাগ থাকার বিশেষ প্রবণতা আছে; মিঃ গোসের মতানুসারে, ইউনাইটেড স্টেটস-এর দশটির মধ্যে প্রায় নয়টি খচ্চরের পায়ে ডোরা দাগ আছে। আমি একবার পায়ে ডোরা দাগ সম্বলিত একটি খচ্চর দেখেছিলাম, যাকে দেখলেই মনে হবে যে সেটি জেব্রার একটি সঙ্কর; এবং মিঃ ডব্লিউ. সি. মার্টিন ঘোড়ার ওপর তার চমৎকার গ্রন্থে এইরকম একটি খচ্চরের ছবি দিয়েছেন। গাধা এবং জেব্রার মধ্যে সঙ্করগুলির আমার দেখা চারটি রঙ্গিন ছবিতে শরীরের অবশিষ্টাংশের তুলনায় পাগুলিতে আরও বেশি সরল ডোরা দাগ ছিল; এদের মধ্যে একটির স্কন্ধে জোড়া ডোরা দাগ ছিল। একটি বাদামি ঘোটকী এবং পুরুষ কোয়াগ্না থেকে উদ্ভূত লর্ড মর্টনের বিখ্যাত। সঙ্করটির ক্ষেত্রে দেখা গেছে–একই ঘোটকী এবং কালো আরবীয় সায়ার থেকে পরবর্তী সময়ে উৎপন্ন সঙ্কর, এমন কি বিশুদ্ধ কোয়াগ্রার তুলনাতেও তার পায়ের চতুর্দিকে আরও বেশি সরল ডোরা দাগ ছিল। অবশেষে, এবং এটি একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ডঃ গ্রে (এবং তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি একটি দ্বিতীয় ঘটনাও জানেন) গাধা এবং হেমিওনাস থেকে উদ্ভূত একটি সঙ্করের ছবি এঁকেছিলেন; এবং যদিও গাধার পায়ে কেবল সাময়িকভাবে ডোরা দাগ থাকে এবং হেমিওনাসে একটিও থাকে না, এমনকি কাঁধেও ডোরা দাগ থাকে না, তা সত্ত্বেও সঙ্করটির চারটি পায়ে ডেভনশায়ারের ডুন এবং ওয়েলসের পনিদের মতো ডোরা দাগ ছিল, এমনকি তার মুখমণ্ডলের পাশগুলিতেও জেব্রার মতো ডোরা দাগ ছিল। এই শেষ ঘটনাটি সম্পর্কে আমি এত নিশ্চিত হয়েছিলাম, এমনকি একটি রঙ্গিন ডোরা দাগ যাকে সাধারণভাবে বলা হয় দৈবাৎ আবির্ভূত হয়নি, যে গাধা এবং হেমিওনাস থেকে উদ্ভূত এই সঙ্করটির মুখমণ্ডলে ডোরা দাগের উপস্থিতি সম্বন্ধে কর্নেল পুলেকে প্রশ্ন করতে আমি প্ররোচিত হয়েছিলাম যে সুস্পষ্ট ডোরা দাগ সম্বলিত কাটিয়ার ঘোড়াদের জাতটিতে মুখমণ্ডলের এরূপ ডোরা দাগ কখনও ছিল কিনা, এবং আমি ইতিবাচক উত্তর পেয়েছিলাম।

এইসব ঘটনায় আমাদের বলার কী আছে? আমরা ঘোড়া গণের কয়েকটি ভিন্ন প্রজাতিকে লক্ষ্য করি যারা সরল পরিবৃত্তির দ্বারা জেব্রার মতো পায়ে অথবা গাধার মতো কাঁধে ডোরা দাগ সম্বলিত হয়। আমরা লক্ষ্য করি ঘোড়াদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রবল হয় একটি ধূসর বাদামি রং আবির্ভূত হলে–একটি রং যা গণটির অন্য প্রজাতিদের সাধারণ রঙের কাছাকাছি। ডোরা দাগগুলির আবির্ভাব কখনোই আকারের কোন পরিবর্তন অথবা অন্য কোন নূতন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাবের সঙ্গে একসঙ্গে হয় না। সবচেয়ে স্বতন্ত্র প্রজাতির কয়েকটির মধ্য থেকে উদ্ভূত সঙ্করগুলিতে ডোরা দাগ অতি স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হওয়ার এই প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করি। পায়রাদের কয়েকটি জাতের ঘটনা এখন লক্ষ্য করুন : কোন ডোরা দাগ এবং অন্য চিহ্ন সমেত একটি নীলাভ রং একটি পায়রা থেকে (দুটি বা তিনটি উপ-প্রজাতি অথবা ভৌগোলিক জাত যার অন্তর্ভুক্ত) এরা উদ্ভূত হয়েছে, এবং যখন সরল পরিবর্তনের মাধ্যমে যে কোন জাত একটি নীলাভ রং ধারণ করে, তখন এই ডোরা দাগ ও চিহ্নগুলি অনিবার্যভাবে পুনরায় আবির্ভূত হয়, কিন্তু আকার অথবা বৈশিষ্ট্যের অন্য কোন পরিবর্তন ছাড়াই এটি ঘটে। যখন বিভিন্ন রঙের সবচেয়ে বয়স্ক এবং প্রকৃত জাতসমূহ সঙ্করিত হয়, তখন বর্ণসঙ্করগুলিতে নীলাভ রং এবং ডোরা দাগ ও অন্য চিহ্নগুলির পুনরাবির্ভাবের প্রবল প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করি। আমি বলেছি যে অতি আদিম বৈশিষ্ট্যগুলির পুনরাবির্ভাবের সবচেয়ে সম্ভবপর প্রকল্পটি হচ্ছে–দীর্ঘকাল আগে লুপ্ত বৈশিষ্ট্যের পুনরুৎপাদনে প্রত্যেক পর্যায়ক্রমিক বংশের তরুণদের একটি প্রবণতা রয়েছে এবং এই প্রবণতা অজানা কারণের জন্য কোন কোন সময় প্রাধান্যযুক্ত হয়, এবং আমরা এইমাত্র দেখেছি যে ঘোড়া গণের কয়েকটি প্রজাতির বয়স্কদের তুলনায় তরুণদের ডোরা দাগগুলি হয় সরলতম অথবা আরও সাধারণ বলে মনে হয়। পায়রাদের জাতগুলির দিকে লক্ষ্য করুন। এদের মধ্যে কয়েকটি কয়েক শতাব্দী ধরে বিশুদ্ধ প্রজাতি প্রজনন করেছে, এবং ঘটনাটি ঘোড়া গণের প্রজাতিদের সঙ্গে কত সদৃশ। হাজার বংশের পিছনের দিকে আমি সাহসের সঙ্গে তাকাই এবং জেব্রার মতো ডোরা দাগ সম্বলিত একটি প্রাণীকে দেখি, যেটি সম্ভবতঃ অতিশয় পৃথক দেহগঠনের হয় এবং যা মনে হয় আমাদের গৃহপালিত ঘোড়া, গাধা, হেমিওনাস, কোয়ারী এবং জেব্রার সাধারণ পূর্বপুরুষ (এক বা অধিক বন্য কুল থেকে উদ্ভূত হোক বা না হোক)।

যিনি বিশ্বাস করেন যে ঘোড়ার মতো প্রত্যেক প্রজাতি স্বাধীনভাবে সৃষ্ট হয়েছিল, তিনি সম্ভবতঃ জোরের সঙ্গে বলবেন যে প্রত্যেক প্রজাতি প্রাকৃতিক এবং গৃহপালনাধীন অবস্থায় এই বিশেষ উপায়ে পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতা নিয়ে সৃষ্ট হয়েছে, যাতে করে গণটির অন্যান্য প্রজাতির মতো ডোরা দাগ সম্বলিত হয়; এবং তিনি বিশ্বাস করেন যখন পৃথিবীর দূরতম অংশে বসবাসকারী প্রজাতিদের সঙ্গে সঙ্করিত হয়, প্রত্যেক প্রজাতির সঙ্করগুলির উৎপাদন করার একটি প্রবল প্রবণতা সমেত সৃষ্ট হয়েছে এবং যে ঐ সব সঙ্করগুলি এদের ডোরা দাগগুলিতে নিজেদের পিতামাতার সঙ্গে নয়, বরং গণটির অন্য প্রজাতিদের সঙ্গে সদৃশ হয়। আমার মনে হয় এই মত স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে একটি অসত্যের জন্য অথবা অন্ততঃ একটি অজানা কারণের জন্য সত্যকে বাতিল করা। এটি ঈশ্বরের কাজকে কেবলমাত্র উপহাস ও প্রবঞ্চনায় পরিণত করে; এটি মেনে নিলে আমাকে প্রাচীন এবং অজ্ঞ সৃষ্টিরহস্যবিদদের বক্তব্যও মেনে নিতে হবে যে জীবাশ্মীভূত খোলকীরা কখনোই বেঁচে ছিল না, বরং সমুদ্রতীরে বসবাসকারী খোলকীদের নকল করতে পাথরের উপর সৃষ্ট হয়েছিল।

সারাংশ

পরিবৃত্তির নিয়মগুলি সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতা খুবই গভীর। শত ঘটনার মধ্যে, একটিতেও আমরা কোন কারণ আরোপ করতে চেষ্টা করি না কেন এই অথবা ঐ প্রত্যঙ্গটি পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু তুলনা করার উপায় যখন আমাদের থাকে, তখন একই নিয়ম একই প্রজাতির ভ্যারাইটিদের মধ্যে অল্পতর পার্থক্য এবং একই গণের প্রগতিদের মধ্যে বিপুলতর পার্থক্য সৃষ্টি করতে কার্যকরী হয়েছে বলে মনে হয়। পরিবর্তিত পরিবেশ কেবলমাত্র হ্রাসবৃদ্ধিমূলক পরিবর্তনশীলতাই সাধারণতঃ ঘটায়, কিন্তু কোন কোন সময় এরা প্রত্যক্ষ এবং নির্দিষ্ট ফলাফলও প্রদান করে; এবং এগুলি কালক্রমে স্পষ্টচিহ্নিত হতে পারে, যদিও এই বিষয়ে আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। দেহগত বৈশিষ্ট্যগুলি সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে স্বভাব এবং অঙ্গগুলিকে শক্তিশালী করতে তাদের ব্যবহার এবং দুর্বল ও হ্রাস করতে তাদের অব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে বলেই মনে হয়। সমসংস্থ প্রত্যঙ্গগুলি একইভাবে পরিবর্তিত হতে চেষ্টা করে এবং সমসংস্থ প্রত্যঙ্গগুলি সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকতে চেষ্টা করে। শক্ত এবং বহিঃস্থ প্রত্যঙ্গগুলির রূপান্তর কোন কোন সময় নমনীয় এবং অন্তঃস্থ প্রতঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। যখন একটি প্রতঙ্গ বিরাটভাবে বিকশিত হয়, তখন সম্ভবতঃ সেটি পার্শ্ববর্তী প্রত্যঙ্গ থেকে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করে; এবং দেহগঠনের ক্ষতি ছাড়া রক্ষিত হতে পারে এমন প্রত্যেক প্রত্যঙ্গ রক্ষিত হয়। প্রাথমিক বয়সে দেহগঠনের পরিবর্তনসমূহ পরবর্তী সময়ে বিকশিত প্রত্যঙ্গদের প্রভাবিত করে এবং পারস্পরিক পরিবর্তনের অনেক ঘটনা নিঃসন্দেহেই ঘটে যার প্রকৃতি বুঝতে আমরা অসমর্থ। যৌগিক প্রত্যঙ্গগুলি সংখ্যায় এবং গঠনে পরিবর্তনশীল, বোধহয় কোন বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষভাবে বিশিষ্ট না হওয়া এরূপ প্রত্যঙ্গ থেকে এটি উদ্ভূত হয়েছে, সেইজন্য এদের রূপান্তর প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। এই একই কারণের জন্যই সম্ভবতঃ প্রকৃতির মানদণ্ডে উচ্চ বর্গের জীবগুলির তুলনায় নিম্ন বর্গের জীবরা আরও বেশি পরিবর্তনশীল হয় এবং উচ্চ বর্গের জীবগুলির সামগ্রিক দেহগঠন আরও বেশি কার্যক্রমে বৈশিষ্ট্যসূচক হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন অনুপকারী, অবর্ধক বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করে না এবং সেজন্য এই অঙ্গগুলি পরিবর্তনশীল। প্ৰজাতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ–অর্থাৎ সেইসব বৈশিষ্ট্য যা একটি সাধারণ পিতামাতা থেকে একই গণের কয়েকটি প্রজাতির উদ্ভবের সময় থেকে ভিন্ন হয়েছে–গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনায় আরও বেশি পরিবর্তনশীল, অথবা সেইগুলি যা দীর্ঘকাল ধরে বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত হয়েছে, এবং একই সময় থেকে। ভিন্ন হয়নি। এইসব মন্তব্যে বিশেষ প্রত্যঙ্গ অথবা অঙ্গগুলি তখনও পরিবর্তনশীল এটি আমরা উল্লেখ করেছি, কারণ এরা সম্প্রতিকালে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এভাবে ভিন্ন হয়েছে; কিন্তু দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা এ-ও দেখেছি যে একই নীতি সমগ্র এককে প্রযোজ্য হয়; কারণ একটি অঞ্চলে যেখানে একটি গণের অনেক প্রজাতি দেখা যায়-অর্থাৎ, যেখানে অনেক পরিবর্তন এবং পৃথকীকরণ হয়েছে, অথবা যেখানে নূতন প্রজাতিক আকারদের সৃষ্টির কাজ পুরোদমে চলেছে–সেই অঞ্চলে এবং এইসব প্রজাতির মধ্যে, আমরা এখন গড়ে অধিকাংশ ভ্যারাইটিদের দেখি। গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলি অতিশয় পরিবর্তনশীল এবং এরূপ বৈশিষ্টগুলি একই গোষ্ঠীর প্রজাতিদের মধ্যে অতিশয় ভিন্ন হয়। একই প্রজাতির দুটি লিঙ্গে গৌণ যৌন পার্থক্যসমূহ এবং একই গণের কতিপয় প্রজাতিতে সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য সৃষ্টি করার ব্যাপারে দেহের একই প্রত্যঙ্গের বিভিন্নতা নিশ্চয়ই সুবিধাজনক হয়েছে। ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির একই প্রত্যঙ্গ অথবা অঙ্গে র তুলনায় অস্বাভাবিক আকারে অথবা অসাধারণ উপায়ে বিকশিত যে কোন প্রত্যঙ্গ অথবা গণটির উদ্ভবের সময় থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণে নিশ্চয় রূপান্তরিত হয়ে থাকবে, এবং এভাবে আমরা বুঝতে পারি কেন এটি অন্য প্রত্যঙ্গগুলির তুলনায় আরও উচ্চ মাত্রায় তখনও প্রায়শই পরিবর্তনশীল হবে; কারণ পরিবর্তন হচ্ছে একটি দীর্ঘদিন ধরে ক্রিয়াশীল ও মন্থর প্রক্রিয়া। এইসব ক্ষেত্রে একটি কম রূপান্তরিত অবস্থায় পূর্বানুবৃত্তির এবং আরও পরিবর্তনশীলতার প্রবণতাটিকে অতিক্রম করার মতো সময় প্রাকৃতিক নির্বাচন পাবে না। কিন্তু যখন অস্বাভাবিকভাবে বিকশিত যে কোন অঙ্গ সমেত একটি প্রজাতি অসংখ্য রূপান্তরিত বংশধরদের পিতামাতা হয়-যা আমাদের মতে একটি অতি মন্থর প্রক্রিয়া এবং অনেক সময় নেয়–তখন প্রাকৃতিক নির্বাচন, যত অস্বাভাবিকভাবেই বিকশিত হোক না কেন, অঙ্গটিকে একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য প্রদান করতে সমর্থ হয়। একটি সাধারণ পিতামাতা থেকে একই দেহগঠন বংশগতভাবে প্রাপ্ত এবং একই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত প্রজাতিরা সদৃশ পরিবর্তনগুলিকে উপস্থিত করতে স্বাভাবিকভাবেই চেষ্টা করে, অথবা এই একই প্রজাতিরা এদের আদিম পূর্বপুরুষদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে হঠাৎ হঠাৎ প্রত্যাবর্তন করতে পারে। যদিও নূতন ও গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরসমূহ পূর্বানুবৃত্তি এবং সদৃশ বা অনুরূপ পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত হতে পারে না, তথাপি এরূপ, রূপান্তরগুলি প্রকৃতির সুন্দর এবং সমন্বয়পূর্ণ বৈচিত্র্যকে বর্ধিত করবে।

বংশধর এবং তাদের পিতামাতাদের মধ্যে প্রত্যেক অল্প পার্থক্যের কারণটি যাই হোক–এবং একটি কারণ নিশ্চয় আছে আমাদের বিশ্বাস করার কারণ আছে যে এটি হচ্ছে উপকারী পার্থক্যদের স্থায়ী সঞ্চয় যা প্রত্যেক প্রজাতির স্বভাব সম্পর্কে দেহগঠনের সমস্ত ও আরও গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরসমূহের উদ্ভব ঘটিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *