০৯. মুরগি তোমার আন্ডার খোঁজে

তখন টেলিভিশনে পাণ্ডিব বহতার মুরগি তোমার আন্ডার খোঁজে প্রোগ্রামের কথা তাদের মনে পড়ে, তারা গাড়িকে ধরে, আমাদেরকে বল কি করতাছে।

: আমার বিজ্ঞাপন এজেন্সিকে ট্যাকা দিয়া দিছি, তারা করছে, কেউ কিছু বলতে পারতেছে না—আমরা সুন্দরীদের খুঁজে বের করব!

: এন্ড উই উইল পিক সাম অফ দেম, এন্ড বিল্ড এ লিটিল ডল হাইজ অন.. মে বি সামহোয়ার।

গান্ডিব বলে, অন দা পান্থকুঞ্জা.. উই উইল টেক লিজ অফ ইট ফ্রম মিস্টার কোকা।

তখন এন্ড্রু এল বাউটপের মনে হয় যে, এই দেশে গভার্নেন্স একটা সমস্যা, গুড গভার্নেন্সের বড় অভাব, সে বলে যে, এইটা নিয়া কি কিছু করা যায় না?

: যাবে না কেন? আমরা বলতে পারি যে, তোমরা নেজামত চালাও, আমাদের দেওয়ানিটা দিয়া দেও, আমরা চালাই, টাটা আসতেছে, ধাবি গ্রুপ আসতেছে, ভাই এইটা ফ্রি মার্কেট ইকোনমি!

মিস্টার বাউটপ বিষয়টা বোঝে না, সে বলে, হোয়াটস দ্যাট?

অন্বন্তরির ইতিহাস কিছু জানা ছিল, সে চমৎকৃত হয়, দ্যাট উইল বি একসিলেন্ট, এবং গাণ্ডিব বহতার মনে হয় যে, তিনটা সার্ভিংয়ের পর মার্টিনি হয়তো মথায় উঠতে শুরু করেছে, সে বলে, ইউ আর গোয়িং টু ফর মাই ফ্রেন্ডস।

চানমিঞা কোন একটা খালি টেবিলে বসে ঢাকার বিএমড়ায়ু ক্লাবের পাঁচ সদস্যের এইসব কথাবার্তা শোনে, অথবা শোনে না, কারণ সে ইংরেজি কথা বোঝে না, সে তাদের শুধু দেখে, তারা গ্লাসের কিনারায় জিভ আর ঠোট লাগায়া সাদা রঙের মার্টিনি চেটে খায়, এবং সে গাণ্ডিব বহতার নীল রঙের গাড়িটা চুরি করে। তখন মামুনকে জুলি হয়তো বলে যে, চানমিঞা লেদুর সঙ্গে তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল এবং মামুন অধিক শোকে পাথর হয়া থাকে, সে চানমিঞার প্রসঙ্গে যেতে চায় না, কস্তার কথা বরং জিগাস করে, তোমার কস্তা সাহেবের কি খবর? জুলির হয়তো মামুনের জন্য খারাপ লাগে, সে বোঝে যে, মামুন এখন একটা গভীর খাদের মধ্যে পড়ে আছে, যেকোন খড়কুটা পেলেই সে আকড়ায়া ধরবে, কিন্তু জুলি কোন লাইফ লাইন তার দিকে ছুড়ে দেয় না, খুবই নির্দয় হয়া থাকে, তখন মামুন বলে, একদিন আমাদের বাসায় যাইবা?

: কেন?

: এমনি।

: আচ্ছা যাব একদিন।

: আইজই চল, এখনই।

জুলি রাজি হয় না, সে বলে যে, লেদু ভাই আসলে একদিন সে যাবে ভূতের গল্লিতে, লেদু আর মামুনের সাথে।

. : প্রমিজ?

জুলির হয়তো বেদনা হয়, তার মন হয়তো কান্দে নত মুখে জানালার সামনে বসে থাকা মামুনের জন্য, সে বলে, যাব।

: কস্তার খবর বল।

জুলি কিছু বলে না, কিংবা হয়তো বলে, কস্তার কোন খবর নাই; প্রকৃতপক্ষে তার মা মিসেস মেরি জয়েস ক্লার্ক একদিন মিজ রোজালিন ডি কস্তার বাসায় গেলে, মিজ ডি কস্তা এই বৈবাহিক সম্বন্ধের প্রস্তাব দেয়, এবং মিসেস ক্লার্কের কিছু করার থাকে না, কারণ জুলির বিয়া দেওয়া দরকার, কিন্তু ভাল পাত্র কোথায়, কে করবে তার মেয়েকে বিয়া? কস্তা ভাল একটা ছেলে, কি বলে সে না করবে, কেন করবে? যদিও জুলিকে নিয়া তার ভয় হয়, কিন্তু জুলিরও না করার মত কিছু থাকে না, সে তার মার ক্লান্ত মুখের দিকে তাকায়া বলে, তোমার যা ভাল মনে হয় কর মম! ফলে পিউস কস্তু ওয়াশিংটন ডি.সি.-র এম স্ট্রিটের পুরান বইয়ের দোকানে একটা চক্কর দিয়া ৩২/৩৪ অথবা ৩৬ নম্বর মেট্রো বাস ধরে ওয়ার্ড সার্কেলে দি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি-তে তার ক্যাম্পাসে ফেরে এবং সেন্টিনিয়াল হলের তার রুমমেট ইন্দোনেশিয়ার আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র হোতামো যখন তাকে খবরটা দেয়, তোমার মা ফোন করেছিল, কস্তার মনে হয় যে, তার মা খামাখা তাকে বিপর্যস্ত করছে, তার জন্য যন্ত্রণা তৈরি করছে; হোতোমোর উৎসাহেই তারা তাদের হোস্টেলের রুমে ন্যাশনাল বেল কম্পানির টেলিফোনটা আনে, হোততামোই টেলিটাউনে যায় সিয়ার্স থেকে হ্যান্ডসেট কিনা নিয়া আসে, এবং সে-ই সেটা রাইত দিন ব্যবহার করে, প্রত্যেক মাসে দেড় দুইশ ডলার বিল দেয়, কস্তার কোন ফোনই আসে না, তখন তার মা রোজালিন একদিন ফোন করে প্রথম জুলির কথা তাকে বলে, মেয়েটা ভাল চিন্তা করে দেখ।

সে চিন্তা করে দেখে, বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মায়ার্স বিল্ডিংয়ে তার জুরিসপ্রুডেন্সের একটা ক্লাস ছিল, জাস্টিস রিসার্চ এর উপরে; সেদিন ক্লাস করে বিস্তার লাইব্রেরির পাশ দিয়া সে আধো-অন্ধকারের ভিতরে হলে ফেরে, এই ফল সেমিস্টারে সে ৬ ক্রেডিট আওয়ারের দুইটা সাবজেক্ট নেয়, ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অক্টোবরের পর থেকেই গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে, রাস্তায় তার পায়ের নিচে পড়ে ওক আর মেপলের বিষপ্ন শুকনা পাতা মুড়মুড় করে গুড়া হয় এবং যেহেতু তার মা ফোন করেছিল সে সকাল বেলা কলব্যাক করে, তার মা ফোন রিসিভ করে বলে, এখন তার ওইখানে কয়টা বাজে?

: সকাল দশটা।

আমাদের এখানে এখন রাইত আটটা, আমরা টেলিভিশন দেখতেছি, রোজালিন ডি কস্তা বলে, এবং তখন পিউস কস্তার অস্থিরতা দেখা দেয়, সে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়া নেব্রাস্কা এভিনিউ এবং লাফবড়ো রোড ধরে হেমন্তের রইদের ভিতর দিয়া এলোমেলোভাবে হাঁটে, পটোম্যাকে পাড়ে আসে-নদীর ধার দিয়া মানুষের বানানো সিএন্ডও ক্যানেলের পাশে অনেক মোটা মহিলা জগিং করে—সে যখন লিটিল ফলসের কাছে পটোম্যাকের চেইন ব্রিজের উপরে যায়া পানির দিকে তাকায়া বসে, রইদ তখন চড়া এবং গাঢ় হয়া ওঠে। তার মা আবার রাইতে ফোন করলে সে বলে যে, জুলিতে মেয়ে ভালই, কিন্তু তারতো লেখাপড়াই এখনো শেষ হইলো না, কবে হবে কে জানে!

রোজালিন তাকে বোঝায়, লেখাপড়া শেষ হবে, তুই ভাবিস না, কত দিন আর বসে থাকবি, বয়স বাড়তেছে না তর; এবং তখন জুলি তাদের বাসায় বসে ব্যর্থ শিয়াল মামুনের সঙ্গে কথা বলে, আপনে আমাকে আপনাদের বাসায় নিয়া যাইতে চান কেন? এই কথা শুনে মামুন মনে হয় বোকা হয়া যায়, এই মেয়েটা শেষ পর্যন্ত এই রকম? এত ঢং মারার কোন মানে হয় না; সে কি বোঝেই না মামুন কেন এইসব বলে? ফলে মামুন চুপ করে থাকে এবং জুলিকেই আবার নীরবতা ভাঙ্গা লাগে, লেদু ভাই দেখি আসে না!

: আমাদের বাসায় চল, বেড়ায়া আসবা।

: ঈদে যাব, রোযার ঈদে যায়া সেমাই খাব।

: ঈদ বহু দূর জুলি, তুমি জান!

জুলি বলে যে, কস্তা তাকে ওয়াশিংটন থেকে ফোন করেছিল, মামুনের তেমন আগ্রহ হয় না, তবু পিউস কস্তাকে নিয়া জুলি তার গল্প বানায়, হয়তো কস্তা তাকে ফোনে এসব কিছু বলে, অথবা হয়তো এত কিছু বলে নাই, তবু.জুলি মামুনকে শোনায়; হয়তো বলতে ভালই লাগে তার, অথবা হয়তো সম্ভাব্য স্বামীর গল্প সে করে মামুনের গায়ে পানি ঢালার জন্য, এবং মামুন মিঞার মনে হয় যে, মেয়েটার বুদ্ধির শেষ নাই।

মামুন বলে, কস্তার গল্প শুনে আমার লাভ কি?

: ক্ষতি কি? এইরকম করেন না, শোনেন-আমরা টেনলিটাউনে মেট্রো স্টেশনের কাছে থাকব, হয়তো ভেনেস স্ট্রিটে কিংবা আলবেমারল স্ট্রিটে, অথবা একটু দূরে ম্যাকুম্ব স্ট্রিটে, এখান থেকে কস্তার ইউনিভার্সিটিতে হেঁটে যাওয়া যায়, সাটল বাসও আছে, আড়াইশতিনশ ভুলারে হয়তো বেসমেন্টের একটা রুম আমরা পায়া যাব; ম্যাকুম্ব থেকে কাঁচা বাজারের দোকান জায়ান্ট হাতের নাগালের ভিতরে, খুবই সুবিধা, সঙ্গে লাগান কনভিনিয়েন্স স্টোর জি সি মারফি, আমি হয়তো চাইলে এই দোকানের সেলস কাউন্টারেও কাজ করতে পারব, কস্তা তার লেখাপড়া শেষ না করা পর্যন্ত আমাকে কাজ করতে হবে, প্রথমে আমরা পুরান হোটেল ফার্নিচার কিনা হয়তো কাজ চালায়া নেব, আলেকজান্দ্রিয়ার কিং স্ট্রিটে ওয়্যার হাউজ আছে, ভাল পুরান ফর্নিচার পাওয়া যায়, কস্তুা ইউ-হল এর ভ্যানে করে নিয়া আসতে পারবে, আমি হয়তো বিকালে ম্যাকুম্বের কোনার ভিতরের ক্যাকটাস রেস্টুরেন্ট এ বার-এও কাজ করতে পারব, বারে কাজ করলে পয়সা বেশি, তারপর একটু পয়সা কড়ি হলে-কাছেই ল্যাংলি সেন্টারে একটা দোকান আছে, নাম সামসার—সেখান থেকে হয়তো একটা নতুন ড্রেসিং টেবিল কিনা ফালাব, এইটা আমার শখ, বাচ্চা হলে একটা নতুন বেবিকট-ও কিনব এখান থেকে, আলেকজান্দ্রিয়ার ওয়্যার হাউজে হয়তো বাচচাদের খাট পাওয়া যাবে না, নতুনই কিনব তার জন্য আমাদের ম্যাকুশ স্ট্রিটের বাসার কাছেই উইসকনসিন এভিনিউ এবং ম্যাসাচুসেটস এভিনিউ এর কোনায় ওয়াশিংটন ক্যাথিড্রাল, খুবই সুন্দর গোধিক আর্কিটেকচারে তৈরি, রবিবারে কাজ না করলে হয়তো প্রার্থনায় যোগ দিতে পারব, হয়তো কখনো একটু দূরে যাব বেড়াতে, ক্যাপিটল হিলের মল এলাকায়, কিংবা উডলি পার্ক ন্যাশনাল জুতে, কিংবা আরো একটু দূরে আর্লিংটন সেমিটারিতে, প্রেসিডেন্ট কেনেডির কবর দেখে আসব, কিংবা ক্রিস্টাল সিটি অথবা পেন্টাগন সিটিতে যাব, অথবা গ্রে-হাউন্ড বাসে করে নিউ ইয়র্কেই, তখন উডওয়ার্ড লোথ্রপ কিংবা জে সি পেনিতে উইন্টার সেল দিলে লাইনে খাড়ায়া কস্তার জন্য হয়তো একটা টার্টেল নেক জাম্পার কিনব, দুই জোড়া দাস্তানাও কিনতে পারি, ভিতরে উলের লাইনিং দেওয়া, এভাবেই চলে যাবে দেখেন মামুন ভাই, জীবনটা খুবই ছোট, কোন অসুবিধা হবে না। জুলি হয়তো মামুনকে এইসব কথা বলে কান্দায় কিন্তু চানমিঞা যখন আসে তখন তাকে বলে, তোমার চুরি করা গাড়িতে একদিন চড়তে চাই!

: চড়ামু।

: কবে?

চানমিঞা হয়তো তখনো গাণ্ডিব বহতার গাড়িটার খোঁজ পায় নাই, সে বলে যে, সে তার জন্য একটা ভাল গাড়ি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যেনতেন একটা গাড়িতে তো তাকে চড়ান যায় না, কারণ সে হচ্ছে টিচারের মেয়ে, টিচারের মেয়ের একটা ইচ্ছা হইছে, সে একটা হাউস করছে, চুরি করা গাড়িতে চড়ার জন্য, একটা ভাল গাড়িতে আনাই লাগে, না হইলে টিচারের ইজ্জত থাকে না, তার মেয়ের ইজ্জত থাকেনা, চানমিঞারও না! তখন জুলি বলে, তুমি গাড়ি চুরি কর, তোমার খারাপ লাগে না, আর আমি চড়তে চাওয়ায় এভাবে বলতেছ?

: আমি বলি নাই যে আমার খারাপ লাগে, আমি মাঙ্কি বয়, আমার কিছুতে খারাপ লাগে না!

: এভাবে বল কেন? হোয়াই ইউ আর লাইক দিস!

চানমিঞার তখন কি বলার থাকে? কিছু থাকে না; জুলি বলে, আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি, আমার বিয়া হয়ে যাচ্ছে পিউস কস্তার সঙ্গে, তোমার কি কস্তাকে মনে আছে? তোমাদের এক বছর না দুই বছর সিনিয়র ছিল। চানমিঞার হয়তো কস্তার কথা মনে পড়ে না, অথবা পড়ে, কিন্তু সে সুবিধামত একটা ভাল গাড়ি খুঁজে পায় না, ফলে সে যখন আবার আসে তখন জুলি তাকে বলে যে, তার আর চানমিঞার গাড়িতে চড়ার ইচ্ছা নাই, তুমি একটা সুবারুই আনো না দেখি, না হয় মারুতি-সুজুকিই আনো, তোমার গাড়িতে চড়ে আমি একটু মামুনদের বাসায় ঘুরতে যাব।

: কেন?

: মামুন ধরছে, তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।

তখন জুলি আবার বলে, তোমাকে কি বলেছি যে আমার বিয়া হয়ে যাচ্ছে? এবং চানমিঞা বুঝতে পারে না জুলি এরকম কেন করে, সে ঘরের ভিতরে ছায়ার মধ্যে ডুবে থাকে, জুলি তখন স্টিভেন আর্নল্ডের আনা একটা বই বের করে আনে, বইটার নাম ইস্লোসেন্ট ইরেনদিরা এন্ড আদার স্টোরিজ লেখক গ্যাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, এবং সে বলে, বইটা নিয়া যাও, এইখানে একটা গল্প আছে, ডেথ কন্সটান্ট বিয়ন্ড লাভ, এইটা পইড়া দেখ।

: আমি এত কঠিন ইংরেজি পড়তে পারি না।

তখন জুলি বলে যে, এইটা খুব মজার একটা গল্প, সম্ভবত কলম্বিয়ার এক বয়স্ক সিনেটর, নাম অনেসিমো সানচেজ, এক কিশোরীর প্রেমে পড়ে এবং তাকে পাইতে চায়, তখন মেয়েটার বদমাইশ বাপ সেটা বুঝতে পারে, সে এই সুযোগে কিছু সুবিধা আদায়ের ধান্দা করে, মেয়েটার নাম লরা ফারিনা, তার বাপ তখন একটা চেস্টিটি বেল্ট পরায়া চাবি নিজের কাছে রেখে মেয়েটাকে সিনেটরের কাছে পাঠায়া দেয়। তারপর সিনেটর দেখে যে, মেয়েটা তালা লাগানো, তখন সে জিগাস করে, চাবি কোথায়? এবং মেয়েটা বলে, আমার বাপের কাছে। চানমিঞা এই গল্প শোনে এবং বলে, এইটা কিম গল্প কিছুই বুজলাম না, কারণ তখন সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকার বিএমড়ার ক্লাবের পাঁচ সদস্য কথাবার্তা বলার সময় তাদের কাছে গাণ্ডিব বহতার গাড়ি চুরির খবর আসে, হয়তো বেল ক্যাপ্টেন এসে খবর দেয়, হয়তো কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার নিজেই আসে খবর নিয়া, গাণ্ডিব বহতার স্থানীয় বাঙ্গালি ড্রাইভার হাউমাউ করে একটু বেশিই কান্দে, ছার আমি একটু বাথরুমে গেছিলাম, আইসা দেখি গাড়ি নাই, এবং পার্কিং সিকিউরিটি গার্ড হাবিবুর রহমানও যখন তার বানানো গল্প বলে, আমিতো এত কিছু খেয়াল করি নাই, ভাবছি গাড়িতে ড্রাইভার আছে, ড্রাইভার যে গাড়ি ফালায়া রেখে গেছে তাতো বুঝতে পারি নাই, তখন তারা হয়তো ভাবে যে, কোন রকমে হয়তো সময়টা পার হয়া যাবে, এবং চানমিঞা হোটেলে কিংবা থানায় ফোন করে জানায়া দেবে গাড়ি কোথায় আছে; কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ থাকে না, কারণ রমনা থানা থেকে দ্রুত পুলিশ এসে হাজির হয়, সিআইপি কাম ফরেন ইনভেস্টারের কেস, দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন, এদের সিকিউরিটি দিতে না পারলে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসবে না, চীন কিংবা ভিয়েনামে চলে যাবে, সাংঘাতিক ব্যাপার, ফলে কোন উপায় নাই, গাফিলতি হলে হয়তো হোম মিনিস্টার স্বয়ং গোয়া দিয়া বাস্তু ঢুকায়া দেবে-পুলিশ গান্ডিব বহতার বাঙ্গালি ড্রাইভার এবং হাবিবুর রহমানকে বেন্ধে রমনা থানায় নিয়া যায়। তখন গান্ডিব বহতাকে হয়তো ঘাসির বিন আহরাম তার সাদা বিএমডারু-তে করে লিফট দেয়-আসো চন্সি যখন পাওয়া গেছে, পৌছায়া দেই-এবং ঘাসিরের খুব মজা লাগে, সে বলে, সো নট অনলি চিপ লেবার বাট দে অলসো হ্যাভ কার খিভস!

: ইয়েস, একচুয়েলি উই ফরগট এবাউট ওয়ান ক্লাস, হু উড প্রবাবলি নট বি টোটালি আন্ডার আওয়াব কন্ট্রোল!

: হু, কার থিভস?

: ইয়েস, উই আর ফরেন ইনভেস্টারস, হাউ ডেয়ার দে স্টিল আওয়ার প্রপার্টি।

চানমিঞারও হয়তো মনে হয়েছিল যে, বেশি ঝামেলা হবে না, কিন্তু রমনা থানায় নিয়া ড্রাইভার এবং হাবিবুর রহমানের পাছায় দুইটা বাড়ি দিতেই তারা ভরভরায়া সব পুলিশকে বলে দেয়, ফলে পুলিশ রমনা পার্কের গেট অরুণোদয়ের কাছে সাদা পোশাকে পাহারা বসায়। পুলিশের র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিন বা র‍্যাবকে বিষয়টার সঙ্গে দ্রুত যুক্ত করা হয়, র‍্যাব-২ তাদের ডাটা বেজ ঘেটে তিনটা সম্ভাব্য গাড়ি চোরের প্রোফাইল পায় এবং গাড়ি চুরির দুই ঘন্টার মধ্যে তারা খৈমনের ৩৬নম্বর ভূতের গল্লিতে যায়া হাজির হয়, এবং দেখে যে, মন্দিরের কোনায় নীল রঙের বিএমড়াটা খাড়ায়া আছে, চানমিঞা র‍্যাবের কথা শুনে জুলিকে নিয়া লং ড্রাইভে যাওয়ার যোগাড়যন্ত্র বাদ দিয়া ভাগে; খৈমন র‍্যাবকে বলে যে, এই গাড়ি তার পোলার না, মহল্লার লোকেরাও কাপটি মেরে থাকে, তারা কিছু দেখে নাই, জানেও না কিছু, ফলে এই গাড়ির আর মালিক খুঁজে পাওয়া যায় না। দুই ঘন্টার মধ্যে গাড়ি ফেরত পায়া গান্ডিব বহতা বেজায় খুশি হয়, ভেরি গুড, থ্যাঙ্ক ইউ, সে বলে, বাট চোরটাকে ধরেন, আমি তারে দেখতে চাই। ফলে খৈমন হয়তো জীবনে এই প্রথম ভেঙ্গে পড়ে, তার কি পোলা কি হয় গেল, তার মনে হয় যে, তার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল, কিন্তু সে ভাবেই নাই যে, চানমিঞা একদম গাড়ি চোরই হয়া যাবে। তখন খৈমন নুরানি। বিলকিসের বাড়িতে যায়া কান্দে, নুরানি বিলকিস উপমা তাকে সান্ত্বনা দেয়, কি করবি, তামান জিন্দেগি পোলা পোলা কইরা কাটাইলি, পোলার চিন্তা বাদদে, আল্লারে ডাক, নামাজ যা কর।

খৈমন শরীরে চাদ্দর জড়াইতে শুরু করে, কেনা লাগে না, নুরানি বিলকিস তাকে একটা পুরান খয়েরি রঙের চাদর দেয়, খৈমন সেটা তার দেহের উপরের অংশে জড়ায়া দৌড়ঝাপ করে; তখন নুরানি বিলকিস তাকে ধর্মের কথা শোনায়।

: কব্বরে জিগাইব, মার রান্নুকা, কি কবি?

: মানে কি?

: তুমার প্রভু কে?

খৈমন বলে, কমু আল্লা, এবং সে ঠোঙ্গা বানায়া ঠাটারি বাজারে নিয়া। যায় বেচতে।

নুরানি বিলকিস বলে, কব্বরে জিগাই, ওয়ামা দীনুকা?

: মানি কি?

: তুমার ধর্ম কি?

খৈমন বলে, কমু ইসলাম, এবং সে ঠাটারি বাজার যায় ঠোঙ্গা বেচা পয়সা উঠাইতে।

নুরানি বিলকিস বলে, কব্বরে জিগাইব, ওয়ামা নবিয়ুকা?

: মানে কি?

: তুমার নবি কে?

খৈমন বলে, কমু হযরত মোহাম্মাদ, এবং সে বনগ্রাম থেকে নুরানি বিলকিসের গম ভাঙ্গায় আনে।

তখন একদিন খৈমন ঘরে ফিরা দেখে যে, চানমিঞা ঘরের চৌকির উপরে শুয়ে বান্দরদের নিয়া খেলে, একটা বান্দর তার কানের ভিতর আঙ্গুল দিয়া সুড়সুড়ি দেয়, সে মারতে গেলে বান্দরের ছুটে পালায়, তখন চানমিঞাকে ঘরে দেখে খৈমনের জান শুকায়া যায়, তরে র‍্যাবে ধরব, ক্রসফায়ার কইরা মাইরা ফালাইব, তুই ভাইগা যা চানমিঞা!

: কৈ যামু আমি?

তখন আরেকদিন খৈমনের হাতে ইনোসেন্ট ইরেনদিরা বইটা পড়ে, সে দেখে যে, বইয়ের মলাটে একটা নীল বিছানার উপরে অর্ধনগ্ন একটা মাইয়ালোক আধশোয়া হয়া আছে, তার কোমরে একচিলতা লেসের স্কার্ট, দুই হাতের মাঝখানে উন্মুক্ত দুই স্তন ছোট সাইজের একজোড়া কদুর মত ঝোলে, এই বিছানার কাছে একটা সবুজ রঙের ঢোলা আলখাল্লা পারে ছাতি মাথায় দিয়া বসে আছে এক বুড়ি; খৈমন নুরানি বিলকিস উপমাকে বলে, ঘরে ল্যাংটা মায়ালোকের ছবিঅলা বই লয়া আহে, কতো কি করি?

নুরানি বিলকিস শুনে আতঙ্কিত হয়, সে বলে, কচ কি তুই! ফলে খৈমন চানমিঞাকে বলে, এই ল্যাংটা মাইয়ালোকের ছবিঅলা বই কইখন আইনা রাখছ?

: টিচারের মাইয়া দিছে।

: কে দিছে?

: জুলি।

খৈমন চানমিঞার টিচারের কথা মনে করতে পারে, সে ভেবে দেখে ব্যাপারটা কি, তার এই এতিম পোলাটা কোনখান দিয়া কোনখানে। যাইতাছে; পিছনে লাগছে র‍্যাব, এদিকে জুলি তাকে এইরকম একটা বই দেয়! এবং সে যখন বলে, তুই তাইলে গাড়ি চুরি করচ? চানমিঞা চুপ করে থাকে।

: ট্যাকা কি কুরচ? একটা ট্যাকাওতো ঘরে আলছু না?

: ট্যাকা অখনো পাইনিকা, পামু।

খৈমন তার ছেলের সামনে কেন্দে ফেলে, তুই ভাইগা যা বাবা! তখন। চানমিঞার কিছু বলার থাকে না, কোথায় যাবে সে? চানমিঞা তখন আরফান আলিকে ধরে, সার্জেন্ট রফিককে ধরে, তারাও তাকে পালায়া থাকার কথা বলে, কিন্তু চানমিঞার তখন পালানোর সময় কোথায়? যদিও তার পিছনে তখন শুধু র‍্যাব না, লেগে ছিল খরকোসও। মামুনদের বাসার ছাদের উপরে বান্দরের ইটা খায়া কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর খরকোস আবার খাড়া হয়, একটা লাল রঙের নিসান সানি কিনা সেটা এনে মন্দিরের গল্লির মুখে এমনভাবে ফালায়া রাখে যেন সেটার কোন মালিকই নাই, একদিন যায়, দুই দিন যায়, কি কেউ তার গাড়ি ধরে না, মামুনদের বাসায় খরকোস শুয়ে বসে থাকে, কিন্তু কিছু ঘটে না, তখন তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় আরজু হোটেলে ফিরা যাওয়ার সময় সে দেখে যে, মন্দিরের কাছে দেওয়ালের উপরে লাইন দিয়া বান্দরেরা বসে আছে, তার ভয় হয়, রাগও, একটা অস্ত্র থাকলে ব্রাশ ফায়ার করে দেওয়া যেত, তখন সে গাড়ির কাছে যায়া দরজা খুলে গাইল দিয়া ওঠে, মগগের ফোয়া হল, এবং তখন দেওয়ালের উপরে বসে থাকা একটা বান্দর বিদুৎবেগে দুই কেজি বাটখারার সাইজের একটা ঝামা ইটা ছুড়ে মারে, ইটটা এসে খরকোসের কানের উপরে লাগে, ভুম্, এবং খরকোস মন্দিরের সামনে রাস্ত রি ধূলার মধ্যে পড়ে যায়। খরকোস মামুন একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝে যে, এর একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার, সে সাতকানিয়ায় ফোন করে, জিপিটুজিপি, এবং তার বিশ্বস্ত চাকর অথবা গোমস্তা অথবা সহকারী আবু জাফরকে বলে একটা আবুলকাসেম৪৭ পাঠায়া দেওয়ার জন্য, ওড়া জাফরগিয়া, তঅত্তে আবুলখাসেম খউয়া আছে? তখন খরকোসের নির্দেশানুযায়ী আবু জাফর ব্যবস্থা করে, সাতকানিয়া থেকে খরকোসের টয়োটা গাড়িতে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে গ্রিনলাইন কম্পানির নাইট কোচে করে ঢাকা; ছত্তর কিংবা জর্জ আবুলকাসেম৪৭টা নিয়া যাবে, হয়তো দুইজনেই যাবে, তারা খুরকোসকে সেটা পৌছায়া দিয়া চলে আসবে-খুবই জরুরি বিষয়। তখন বিকাল বেলী ছত্তর এবং জর্জকে যখন কাজের বুয়া ভাত খেতে দেয়, আসমানতারা সেটা দেখে এবং আসিয়া যখন তাকে বলে যে, খরকোস খবর দিয়েছে, ছত্তর এবং জর্জ মিঞা ঢাকা যাবে, তখন আসমানতারা হুরে জান্নাত তার ব্যাগ গুছায়া তৈরি হয়-ছত্তর ও জর্জ গাড়িতে উঠতে যায়া দেখে যে, গাড়ির ভিতরে আসমানতারা এবং তারা বলে, অনে খডে যান দের

: আই ঢাকা যাইয়্যুম!

খরকোসের চাকরদের কিছু করার থাকে না, কারণ খরকোসের চাকরেরা আসমানতারারও চাকর, খরকোসও তার চাকর; আসমানতারা তাদেরকে ধমকায়, ওড়া ছত্তরগিয়া আর লগে খ্যারেনডিসি ন গরিস, আঁই কইয়্যি যাইয়ুম-হাইয়ুম।

এই ঝামেলায় পড়ে আবু জাফর তার মোবাইল ফোনে খরকোসকে ধরার চেষ্টা করে, কানেশন পায় না, পায় না তো পায়ই না, ফলে আসমানতারাকেসহ গাড়ি রওনা হয়, এবং আবু জাফর যখন রাইত বারটার পরে খরকোসকে পায় তখন অনেক দেরি হয়া যায়, দুই সঙ্গির সাথে আসমানতারা তার আগেই গ্রিনলাইন পরিবহণের এসি বাসে করে চট্টগ্রাম ছাড়ে। তখন খরকোস মোবাইল ফোনে বাসের ভিতরে ছত্তরকে ধরে, ইত্তার তুয়ারা খডে?

: ফেনি পার ন হই।

: আসমানতারা খডে?

: ঘুমাদ্দে!

ছত্তর তাকে বলে যে, সব ঠিক আছে, কোন সমস্যা নাই; কিন্তু ব্যাপারটা তেমন ছিল না, কারণ গ্রিনলাইন পরিবহণের এসি বাসে করে একটা আবুলকাসেম ঢাকায় যাওয়ার খবর চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭ এর কমান্ডিং অফিসার লে: কর্ণেল আনোয়ারুল আজিমের কাছে পৌছায়, সোর্স জানায়। যে, টুকরা করা একটা আবুলকাসেম পাওয়া যাবে একটা তোশকের ভিতরে। বাসের দুলুনিতে সারাটা রাস্তা আসমানতারা ঘুমে কেদোর মত ইয়া থাকে এবং ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট পার হওয়ার পর বাস যখন গতি বাড়ায় এবং আব্দুস ছত্তর এবং জর্জ মিঞা ভাবে যে, বিপদ হয়তো আর নাই এবং তাদের চোখ বুজে আসে, তখন কুমিল্লা বাইপাসের উপরে র‍্যাবের একটা টহল দল ওয়্যারলেসে বার্তা পায়া বাস থামায়। র‍্যাব বাসের নিচের হোন্ড থেকে গোল করে জড়ান এবং দড়ি দিয়া বান্ধা তোশকটা টেনে নামালে কিভাবে যে ছত্তর এবং জর্জ বাস থেকে নেমে অন্ধকারের ভিতরে হাওয়া হয়া যায় সেটা বিস্ময়কর একটা ব্যাপার, তখন তোশকের মালিক খুঁজতে যায়া র‍্যাব আসমানতারাকে পায় এবং র‍্যাব হেফাজতে আসমানতারা তার জিপিটুজিপি-তে খরকোসকে ফোন করে, খরকোস তার আগেই ছত্তরের কাছ থেকে ঘটনা জেনেছিল, ফলে সে আসমানতারার ফোন করার কারণ বুঝতে পারে, সে বলে, র‍্যাব খডে?

আসমানতারা বলে যে, সে র‍্যাবের গাড়িতে বসে আছে, তখন আসমানতারার জিপিটুজিপি-তে খরকোসের সঙ্গে র‍্যাবের ক্যাপ্টেন মুজিবরের কথা হয়, খরকোস সরাসরি আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়, আমি হোটেল আরজুতে আছি, সুট নম্বর এ-থ্রি, আমাকে পাইলে আসমানতারাকে ছাইড়া দিতে হবে; ক্যাপ্টেন মুজিব রাজি হয়, নারীর জন্য পুরুষ কি না করতে পারে, দুর্ধর্ষ স্মাগলারও প্রেমিকার জন্য কেমন নরম হয়া যায়, তখন তার রিতার কথা মনে পড়ে, রিতা এখন কি করে? হয়তো ঘুমায়, তেরাবেঁকা হয় হয়তো বিছনায় বেহুশ হয়া আছে সে। ক্যাপ্টেন মুজিব রাজি হয়, কারণ খরকোসকেই তাদের দরকার, আসমানতারার কোন দরকার নাই, ঢাকার র‍্যাব-২ এর হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে, র‍্যাব-২ এর একটা দল তক্ষণি হোটেল আরজুতে যায়া দেখে যে খরকোস মামুন ওরফে আইবেক ওরফে কুতুবউদ্দিন আইবেক এবং তার চাকর আবুল হোসেন ওরফে আবুইল্যা পলাতক র‍্যাব-২ এর ডেপুটি কমান্ডার মেজর শহিদুজ্জামান আসমানতারাকে দিয়া আবার ফোন করায়, খরকোস তাকে জিগাস করে, তুই কেন আছ?

অসিমানতারা বলে, আঁই গম আছি, চিন্তা ন হইগো, তুই খডে?

: কইর ন ফারি খডে!

: ভাগি যঅও গৈ!

আসমানতারা যখন জিগাস করে, কেন আছ তুই, খরকোস বলতে পারে না সে কেমন আছে, ফলে খৈমন তখন জুলির দেওয়া বই নিয়া চানমিঞাকে জেরা করে, চানমিঞার তখন বইয়ের গল্পটার কথা মনে পড়ে এবং সে নারীশিক্ষা মন্দিরের গল্লিতে মায়া মিসেস ক্লাকের দোতলার ড্রয়িংরুমের কোনায় ছায়ার মধ্যে বসে থাকে-জুলি তার দিকে তাকায়-চানমিঞা হচ্ছে তার বাপ ময়না মিঞার প্রতিলিপি, লম্বা শরীরে তার খাড়া নাক, গণ্ডদেশের উঁচা হাড়, গভীর তরল কালো চোখ, পাকানো দড়ির মত হাতের পেশি—এই লোকটা একটা গাড়ি চোর! চানমিঞা জুলিকে বলে যে, তার জন্য একটা বিএমডাব্লিউ সে যোগাড় করেছিল, কিন্তু পুলিশ তার পিছনে লাগায় শেষ পর্যন্ত তাকে চড়ানো হয় নাই; জুলি তাকে বলে, তুমি কি মনে কর যে তোমার চুরি করা গাড়িতে চড়ার জন্য আমি মরে যাচ্ছি।

চানমিঞা ভ্যাবাচেকা খায়া থাকে, এ কেমুন মাইয়ালোক? সে ভাবে এবং জুলি তাকে বলে যে, পিউস কস্তার সঙ্গে তার এনগেজমেন্ট হয়া গেছে, দুই/একমাসের ভিতরে কস্তা দেশে আসলে তাদের বিয়া হয়া যাবে।

তখন জুলি বলে, তুমি কি বইটা পড়ছো? ও তুমিতো আবার ইংরেজি পড়তে পরি না!

চালমিঞা চুপ করে থাকে।

: তুমি কেন লেখাপড়া করল না চনিমি, কেন করলা না বল? আমার মা তোমাকে এত ভালবাসতো, তুমি তাকে দুঃখ দিলা!

চনিমি হয়তো ভাবে যে, কি হইতাছে এইসব? জুলি বলে, তোমাকে একটা বই দিলাম, আমার দুঃখ তুমি সেইটা পড়তে পারলা না, বুঝলা না।

তখন চানমিঞার ছায়ার ভিতরকরি চোখে আলো জেগে ওঠে, সে জুলিকে বলে যে, সে তাকে একটা ড্রেস বানায়া দিতে চায়, হয়তো তার বিয়া উপলক্ষেই দেবে, এবং এ জন্য জুলির কোমরের মাপ তার দরকার, তোমার কোমরের মাপটা আমাকে দিবা, সে বলে, এবং জুলি কাগজের ঠোঙ্গায় তার একটা পেন্টি দিয়া দেয়; চানমিঞা র‍্যাব এবং খরকোসের চোখে ধূলা দিয়া এইসব করে, সে জুলির ফুলতোলা নাইলনের পেন্টি নিয়া যায়া জিঞ্জিরার এক কামারকে দেয়, কামার চানমিঞার নির্দেশ এবং পেন্টির মাপ অনুযায়ী স্টিলের পাত দিয়া একটা কাঅলা চেস্টিটি বেল্ট বানায়-দেহ বর্জ্য ত্যাগের জন্য নিচের দিকে ব্যবস্থা রাখে। সম্ভবত পিউস দেশে আসার পরিকল্পনা করার একমাস আগে চানমিঞা টিকাটুলির ইলিসিয়াম রেস্ট হাউজের কাছে একটা নাভানা ইলুদ ক্যাব নিয়া অপেক্ষা করে এবং দেখে যে, জুলি হেঁটে তার বাসার দিকে যায়, তখন চানমিঞা দরজা খুলে নেমে জুলির হাত ধরে তাকে টেনে ক্যাবের ভিতরে ঢুকায়, জুলি ভিতরে ঢুকে বসে এবং বলে, কি কর তুমি?

জুলি দুই দিন নিখোঁজ থাকে, তারপর নারীশিক্ষা মন্দিরের গল্লিতে তাদের বাসায় ফেরে, এবং যখন সে কলিং বেল টেপে তার ভয় হয় যে, তার মাকে সে আদৌ জীবিত দেখবে কিনা। কিন্তু মিসেস ক্লার্ক দরজা খুলে জিগাস করে, কোথায় ছিলা তুমি?

: চানমিঞা আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।

মিসেস ক্লার্ক হয়তো তার ঘরে যায় অনেকক্ষণ শুয়ে থাকে, তারপর জুলি খাবার তৈরি করে তার মাকে ডেকে এনে টেবিলে বসায়, চিরুনি দিয়া তার এলোমেলো পাকা চুল আঁচড়ায়া একটা রাবার ব্যান্ড লাগায়া দেয়, আমার কিছু হয় নাই মা, সে বলে, চানমিঞাকেতো তুমি চেনো, সে তোমাকে ভালবাসে, সে আমার কিছু করে নাই মা! কিন্তু মিসেস ডি কস্তা যখন বিয়ার দিন ঠিক করতে আসে, জুলি নানান অজুহাত খাড়া করে, এখনই না আরো কয়েক দিন যাক, এবং সেদিন রাইতে তার মা মেরি, জুলির বানানো ভেজিটেবল স্যুপ খেতে খেতে যখন বলে, প্লিজ ডোন্ট ডু দিস টু মি, আই এ্যাম টায়ার্ড জুলি ইউ শুড নো, তখন জুলি ফ্লোরেন্স তার রুগ্ন মায়ের একটা হাত ধরে বলে যে, সে নান হয় শ্রীপুর চলে যেতে চায়, এবং মিসেস ক্লার্ক তার স্যপের বাটি রেখে উঠে যায় বিছানায় শুয়ে পড়ে হয়তো জুলি তার মায়ের জন্য উদ্বিগ্ন হয়, সে এসে বিছানার পাশে বসে এবং বলে, আমার কিছু করার নাই মা, আই ক্যানট ম্যারি কস্তা!

: বাট হোয়াই? হোয়াই আর ইউ ডুয়িং দিস!

জুলি তার মায়ের একটা হাত টেনে নিয়া তার কোমরে স্থাপন করে, মিসেস মেরি জায়েস জুলির লং স্কার্টের উপর দিয়া একটা মাঝারি আকারের প্যাড লকের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে, তার আতঙ্ক দেখা দেয়, কি এটা?

: চেস্টিটি বেল্ট!

: হোট ডু ইউ সে?

জুলি বলে, আমি এই অবস্থায় কস্তাকে বিয়া করতে পারি না, আই ওয়ান্ট টু বিকাম এ নান মম!

: লকের চাবি কোথায়?

: চানমিঞার কাছে।

তখন মিসেস ক্লার্ক কান্দে-ও মাই গড, ইউ আর ওনলি পানিশিং মি, ঠিক আছে চানমিঞা আসুক-তার বুড়া ক্লান্ত গালের উপর দিয়া তপ্ত অশ্রু গড়ায়া পড়ে, এবং তখন খরকোসকে ধরতে না পেরে র‍্যাব-২ এর মেজর শহিদ খুবই চেতে, সে আসমানতারাকে ছাড়ে না, রমনা থানার মাধ্যমে কোর্টে হাজির করে আবার রিমান্ডে নিয়া আসে, আসমানতারার মধ্যে কোন ভয় কিংবা অন্য কোন বিকার দেখা যায় না, সে র‍্যাবের মেজর শহিদ কিংবা ক্যাপ্টেন আনিস যা বলে তাই করে; কিন্তু খরকোসের কোন পাত্তা নাই-সে তখন চনিমিঞাকে শায়েস্তা করা নিয়া ব্যস্ত হয়া থাকে। লেক্সাসটা চুরি করার পর চানমিঞা হয়তো খরকোস সম্পর্কে জানতে পারে, হয়তো সার্জেন্ট রফিক তাকে বলে যে, খরকোস কোন বড় চোরটোর হবে, ডাকাইত কিংবা স্মাগলারও হইতে পারে, ডেঞ্জেরাস লোক মনে হয়, ওর জিনিসে হাত দিও না, এবং চানমিঞা আর হাত দেয় নাই, খরকোসের দ্বিতীয় গাড়িটা সে ধরে নাই, যদিও খরকোস সেটা মন্দিরের গল্লির সামনে ইচ্ছা করে তিন/চাইর দিন ফালায়া রাখে; অবশ্য তার বান্দর বাহিনী এই অসভ্যতা সহ্য করতে পারে নাই, বাংলাদেশের এই ধূসর বান্দরেরা বন্ধুত্বের মূল্য বোঝে, বন্ধুর জন্য তাদের প্রাণ কান্দে, ফলে তারা খরকোসের মাথা ইটা মেরে ফাটায়া দেয়।

খরকোসের জানাই ছিল যে, র‍্যাব হয়তো তার ফালায়া রাখা লাল গাড়ির উপর নজর রাখবে, কিন্তু চানমিঞাতো এই গাড়ি ধরেই না, তখন একদিন রাইতে গাড়িটা হাওয়া হয়া যায়, সকাল বেলা দেখা যায় যে, মন্দিরের গলির মোড়ে সেটা নাই; মেজর শহিদ তার লোকজনদের গাইল পাড়ে, কি করো তোমরা অপদার্থ সব! মন্দিরের গল্লির মোড় থেকে খরকোসই হয়তো গাড়িটা সরায়, চানমিঞার প্রেমিকার খোঁজ পাওয়ার পর সে বৃহস্পতিবার রাইতে তার লাল নিসান সানিটা নারীশিক্ষা মন্দিরের গল্লির মোড়ে নিয়া যায়া পাতে, সঙ্গে সে একই রঙের আরো একটা নিসান সানি ফালায়া রাখে-এইটা ছিল বিলাইয়ের আসা যাওয়ার পথের ধারে একসঙ্গে দুইটা ইদুর বেন্ধে রাখার মত-তখন র‍্যাব-২ এর মেজর শহিদ তার সোর্সের মাধ্যমে খবর পায় যে, লাল নিসানটার সন্ধান পাওয়া গেছে এবং র‍্যাব-২ এর একটা দল অকুস্থলে যায়া দেখে যে হুবহু একইরকম দুইটা গাড়ি। তারা বিভ্রান্ত হয়, কিন্তু গাড়ির নম্বর দেখে বোঝে যে, এর একটা খরকোসের এবং তারা কাছেই অবস্থান নিয়া গাড়িটার উপরে নজরদারি শুরু করে; তখন সেদিন চানমিঞা জুম্মা নামাজের পর ভাত খায়া তাদের গোপন চিলাকোঠায় একটা ঘুম দিয়া উঠে জুলিদের বাসায় যায়। খরকোসও হয়তো আবুইল্যার সঙ্গে কোথাও যায়া দেখা করে, আঁরা আর ঢাকা ন থাইক্কম, যাইয়ুম গৈ, সে বলে এবং আসমানতারার সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবে। তখন বিকাল কিংবা সন্ধ্যায় সে ঝাড়দারের বেশে আরজু হোটেলে যায় ঢোকে, হোটেলের লোকজন কাস্টমার এবং টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখা নিয়া ব্যস্ত হয়া ছিল, ছদ্মবেশী ঝাড়দারকে তার খেয়াল করে না। খরকোস নির্বিঘ্নে ভিতরে ঢুকে চাইর তলায় সুইট এ-থ্রি এর দরজায় যায় টোকা দেয় এবং আসমানতারা দরজা খুলে দেখে যে, শলার ঝাড় হাতে লুঙ্গিগেঞ্জি পরা দাড়িঅলা ঝাড়দার খাড়ায়া, সে যখন বলে, আমার ঘর ঝাড় দেওয়া লাগবে না, লম্বা দাড়ি গজানো ঝাড়দার তার কোমরে বান্ধা গামছা খুলে মুখ মুছে বলে, আঁই খরকোস; তখন আসমানতারা পথ ছেড়ে দিলে খরকোস ভিতরে যায় বসে এবং আশ্চর্য হয়া দেখে, ঘরের ভিতরে দেওয়ালের পাশে কাঠের পুরান খাঁচাটা রাখা, খাঁচা দেখে খরকোস বিচলিত হয়, আপ্লুত হয় এবং বলে, খাঁচা কত্‌থুন আইন্নোদে?

: সাতকাইন্নাত্‌থুন!

আসমানতারা বলে যে, আবু জাফর ট্রাকে করে খাঁচাটা পৌছায়া দিয়া যায়, তখন গামছা লুঙ্গি পরা ছদ্মবেশী খরকোস হয়তো ভাবে, একবার শুয়ে দেখি এবং সে আল্লাদ করে যায়া খাঁচার ভিতরে ভাঁজ হয়া শোয়, র‍্যাবের ধাওয়া খাওয়া এবং মিসেস জোবেদা রহমানের বাসার চিলাকোঠায় বান্দরের গুয়ের গন্ধের ভিতরে ঘুমায়া ক্লান্ত হয়া থাকা খরকোস আরামে হয়তো চোখ বোজে, এবং তখন আসমানতারা যায় খাঁচার দরজা লাগায়া দেয়।

: ইন ক্যান খরদ্দে তুঁই!

তারপর আসমানতারা যখন খাঁচায় আটকা পড়া খরকোসকে বলে, চুল আমরা সাতকানিয়া চলে যাব, চানমিঞা জুম্মা নামাজের পর বিকালে জুলিদের বাসায় যায়া মিসেস ক্লার্কের বিছানার পাশে খাড়ায় এবং বলে, টিচার আমি চানমিঞা, তখন মিসেস মেরি জয়েস ক্লার্ক সারাদিন পর তার চোখের উপর থেকে হাত সরায়, সে চোখ মেলে তাকায় এবং বলে, চানমিঞা ইউ টেক জুলি, তুমি জুলিকে নিয়া যাও!

চানমিঞা বলে, আমি আসব টিচার, এবং সে জুলিদের বাসা থেকে বের হয়া দেখে, গল্লির মোড়ে দুইটা ধূসর রঙের নিসান সানি পড়ে আছে-রঙকানা পোলাটা বোঝে না যে দুইটাই লাল রঙের গাড়ি–তার ভিতরে গাড়ি চোরের স্বভাব জেগে ওঠে, অন্যের মাল লোপাট করার স্পৃহা আকুলিবিকুলি করে, তখন খাঁচার ভিতরে খরকোস দুই হাত মাথার দুই পাশে দিয়া চোখ বন্ধ করে রাখে, মনে হয় মায়ের জরায়ুতে থাকা ভ্রূণের মত আরেকটা জন্মের জন্য সে নিজেকে গোল করে আনে–খাঁচা তার মা হয়।

1 Comment
Collapse Comments
পর্দা করা ফরজ May 26, 2022 at 1:39 am

Extraordinary

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *