২৪. জীবদেহগঠন—বায়ুবিন্যাস ব্যবস্থা

জীবদেহগঠন—বায়ুবিন্যাস ব্যবস্থা

“ব্রাহ্মণ বলিলেন, “হে প্রিয়ে! অতঃপর দেবমতনারদসংবাদনামক পুরাতন ইতিহাস কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। একদা মহর্ষি দেবমত দেবর্ষি নারদের সমীপে সমুপস্থিত হইয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “ভগবন্! শরীরী জন্মগ্রহণ করিবার সময় প্রাণাদি পঞ্চবায়ুর মধ্যে কোন্ বায়ু সৰ্ব্বপ্রথমে তাহার শরীরে সঞ্চারিত হয়?”

নারদ কহিলেন, “ব্রহ্মন্‌! শরীরী কোন কারণবিশেষদ্বারা জড়রূপে নিৰ্ম্মিত ও তন্মধ্যে অন্য কারণ আবির্ভূত হইলে সৰ্ব্বপ্রথমে প্রাণ ও অপবায়ু উহাতে সঞ্চারিত হয়। ঐ বায়ুদ্বয় দেবতা, মনুষ্য ও পশুপক্ষী প্রভৃতি সকলেরই শরীরে অবস্থিত থাকে।”

“দেবমত কহিলেন, “ভগবন্! কোন্ কারণ দ্বারা জড়দেহ নির্ম্মিত হয়? ঐ দেহ নিৰ্ম্মিত হইলে তাহার মধ্যে যে অন্য কারণের আবির্ভাব হয়, তাহাই বা কি এবং প্রাণ ও অপানবায়ু কিরূপে সৰ্ব্বপ্রথমে জড়দেহে সঞ্চারিত হয়?’

“নারদ কহিলেন ‘ব্রহ্মন্‌! পরমাত্মা দেহপরিগ্রহ করিতে অভিলাষী হইলে তাঁহার সঙ্কল্পপ্রভাবে শুক্ৰশোণিতরূপ পঞ্চভূতদ্বারা দেহের সৃষ্টি ও তন্মধ্যে জীবরূপে পরমাত্মার আবির্ভাব হয়। শুক্র গর্ভকোষে প্রবিষ্ট হইবামাত্র সর্ব্বপ্রথমে প্রাণবায়ু উহাতে সঞ্চারিত হইয়া উহা বিকৃত করে। শুক্র প্রাণবায়ুদ্বারা বিকৃত হইলেই উহাতে অপান-বায়ুর সঞ্চার হয়। এইরূপে জড়দেহ নিৰ্ম্মিত হইলে পরমাত্মা সেই দেহ ও তাহার কারণে নির্লিপ্ত হইয়া সাক্ষিস্বরূপ দেহমধ্যে অবস্থান করেন। সমান ও ব্যানবায়ুর প্রভাবে শুক্ৰশোণিতের সৃষ্টি ও কামপ্রভাবে ঐ পদার্থদ্বয়ের উদ্রেক হয়। ঐ দুই পদার্থ উদ্ৰিক্ত হইয়াই স্থূলদেহের সৃষ্টি করে। স্থূলদেহ সৃষ্ট হইলে তন্মধ্যে প্রাণ ও অপানবায়ুর ক্ৰিয়াদ্বারা জীবের ঊর্ধ্বগতি ও অধোগতি এবং ব্যান ও সমানবায়ুর প্রভাবে উহার তির্য্যগ্‌গতি ও ভেদবুদ্ধি হইয়া থাকে।

শান্তির লক্ষণ–পরমাত্মার পরিচয়

‘পরমাত্মা অগ্নিস্বরূপ, উঁহাতে সকল দেবতাই প্রতিষ্ঠিত আছেন, বেদ উহার আজ্ঞা। ঐ বেদপ্রভাবেই ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তির অতি উৎকৃষ্ট জ্ঞান জন্মিয়া থাকে। তম ও রজোগুণ সেই অগ্নিরূপী পরমাত্মার ধূম ও ভস্মস্বরূপ। জীবগণ সেই অগ্নিরূপী পরমাত্মাতে আহুতিরূপ অন্নাদি ভোজ্যদ্রব্য প্রদান করিয়া থাকেন। প্রাণ ও অপান ঐ হুতাশনরূপী পরমাত্মার আজ্যভাগদ্বয়স্বরূপ। উনি বিদ্যা, অবিদ্যা, উৎপত্তি, প্রলয় ও কার্য্য-কারণ প্রভৃতি দ্বন্দ্ব বিষয়সমুদয় নির্লিপ্ত হইয়া অবস্থান করেন। উনি যে সঙ্কল্পদ্বারা কাৰ্য্য ও কারণরূপে প্রকাশিত হয়েন, সেই সঙ্কল্পদ্বারাই কৰ্ম্মসমুদয় বিস্তৃত হয়। অতএব ঐ সঙ্কল্পকে রোধ করিতে পারিলেই পরমাত্মার যথার্থ ভাব অন্তঃকরণে প্রকাশিত হইয়া থাকে। কাৰ্য্য, কারণ ও শুদ্ধ ব্রহ্মের একতাসম্পাদনের নাম শান্তি। ঐ শান্তির উদয় হইলেই সনাতন ব্রহ্ম প্রকাশিত হয়েন।’ ”