৩৫. জনমেজয়ের পরলোকগত পিতার দর্শন

জনমেজয়ের পরলোকগত পিতার দর্শন

বৈশম্পায়ন বলিলেন, হে মহারাজ! এইরূপে মহাত্মা বিদুর স্বীয় তপোবলে সিদ্ধিলাভ ও রাজা ধৃতরাষ্ট্র মহর্ষি বেদব্যাসের প্রসাদবলে আত্মতুল্য রূপসম্পন্ন স্বীয় পুত্রগণের দর্শনলাভ করিয়াছিলেন। কুরুরাজ জন্মান্ধনিবন্ধন পূৰ্ব্বে কখনই পুত্রগণকে দর্শন করিতে সমর্থ হয়েন নাই, তৎকালে কেবল মহাত্মা কৃষ্ণদ্বৈপায়নের অনুগ্রহেই উঁহার পুত্রমুখ নিরীক্ষণ হইল। ঐ সময় মহর্ষির প্রভাবে অন্ধরাজের রাজধৰ্ম্ম, বেদ, উপনিষৎ ও বুদ্ধিনিশ্চয় বিষয়ে বিলক্ষণ অধিকার হইয়াছিল।

সৌতি কহিলেন, হে মহর্ষিগণ! মহাত্মা বৈশম্পায়ন এই কথা কহিলে, মহারাজ জনমেজয় তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, ব্ৰহ্মন্। আমি আপনার মুখে মহাত্মা কৃষ্ণদ্বৈপায়নের প্রভাব শ্রবণ করিয়া নিতান্ত চমৎকৃত হইলাম। এক্ষণে যদি বরদাতা মহর্ষি বেদব্যাস আমাকে আমার পিতার রূপ প্রদর্শন করেন, তাহা হইলে আমি অত্যন্ত উপকৃত ও কৃতার্থ হই এবং আপনার বাক্যেও আমার সমধিক আস্থা জন্মে। অতঃপর ঐ মহর্ষির প্রসাদবলে আমার অভিলাষ পূর্ণ হউক।

মহারাজ জনমেজয় এই কথা কহিবামাত্র তপঃপ্রভাবসম্পন্ন মহর্ষি বেদব্যাস তাঁহার প্রতি প্রসন্ন হইয়া পুর্ব্বের ন্যায় বয়োরূপসম্পন্ন অমাত্যগণপরিবৃত রাজা পরীক্ষিৎকে এবং শমীক ও তাঁহার পুত্র শৃঙ্গীকে পরলোক হইতে তথায় সমানীত করিলেন। তদ্দর্শনে জনমেজয়ের আহ্লাদের আর পরিসীমা রহিল না। অনন্তর তিনি সেই যজ্ঞ সমাপন করিয়া পিতাকে যজ্ঞান্তে স্নান করাইয়া স্বয়ং স্নানসমাপনপূর্ব্বক জরৎকারুপুত্র আস্তীককে কহিলেন, ভগবন্! এই যজ্ঞস্থলে শোকনাশন পিতা সমুপস্থিত হওয়াতে আমার এই যজ্ঞ অতি অদ্ভূত বলিয়া বোধ হইতেছে।

তখন আস্তীক কহিলেন, “মহারাজ! যাঁহার যজ্ঞে মহর্ষি দ্বৈপায়ন স্বয়ং সমুপস্থিত থাকেন, ইহলোক ও পরলোক উভয়লোকই তাঁহার হস্তগত হয়। এক্ষণে তুমি বিচিত্র উপাখ্যান, শ্রবণ করিয়া বিপুল ধৰ্ম্মলাভ করিলে, তোমার প্রভাবে সর্পসমুদয় ভস্মসাৎ হইল এবং তোমার সত্যবাক্যনিবন্ধন তক্ষক কথঞ্চিৎ মুক্তিলাভ করিল। এক্ষণে মহৎসংসর্গনিবন্ধন তোমার মনের সংশয় দূরীভূত হইয়াছে। তুমি ঋষিগণের যথোচিত পূজা করিয়াছ। চরমে নিশ্চয়ই তোমার, তোমার পিতার সালোক্য [সমান লোক—তুলা স্থান] লাভ হইবে। অতঃপর যাঁহারা পরমধার্ম্মিক ও সদ্ব্যবহারনিরত এবং যাঁহাদিগকে দর্শন করিলে পাপবিনাশ হয়, তুমি তাঁহাদিগকে নমস্কার কর।”

মহাত্মা আস্তীক এই কথা কহিলে, রাজা জনমেজয় তাঁহাকে যথোচিত সম্মান করিয়া পূজা করিতে লাগিলেন।