৩২. ধৃতরাষ্ট্রের দৃষ্টিশক্তি—সকলের মৃত-আত্মীয়দর্শন

ধৃতরাষ্ট্রের দৃষ্টিশক্তি—সকলের মৃত-আত্মীয়দর্শন

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর ভগবান্ ভাস্কর ক্রমে। অস্তাচলচূড়াবলম্বী হইলে, তত্ৰত্য লোকসমুদয় সায়ংকালীন বিধি সমাপনপূৰ্ব্বক মহাত্মা ব্যাসদেবের নিকট সমুপস্থিত হইল। তখন অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র সমুদয় মহর্ষি ও পাণ্ডবগণের সহিত সমবেত হইয়া পবিত্রচিত্তে সেই গঙ্গাতীরে উপবেশন করিলেন। এবং গান্ধারী প্রভৃতি কৌরবরমণীগণ ও অন্যান্য লোকসমুদয় তথায় উপবিষ্ট হইলেন।

অনন্তর ভগবান বেদব্যাস ভাগীরথীর পবিত্ৰজলে অবগাহন করিয়া সংগ্ৰামনিহত কুরুপাণ্ডবপক্ষীয় বীরসমুদয় ও নানাদেশনিবাসী ভূপালদিগকে আহ্বান করিবামাত্র সেই জলমধ্যে পূর্ব্ববৎ কুরুপাণ্ডবসৈন্যের তুমুল শব্দ সমুত্থিত হইল। কিয়ৎক্ষণ পরে ভীষ্ম, দ্ৰোণ প্রভৃতি মহাবীরগণ ও তাঁহাদিগের সৈন্যসামন্তসমুদয়, পুত্র ও সৈন্যগণের সহিত মহারাজ বিরাট ও দ্রুপদ, দ্রৌপদীতনয়গণ, সুভদ্রানন্দন অভিমন্যু, মহাবীর ঘটোৎকচ, কর্ণ, শকুনি, দুৰ্য্যোধন, দুঃশাসন প্রভৃতি ধৃতরাষ্ট্রতনয়গণ, জরাসন্ধপুত্র সহদেব, মহাবীর ভগদত্ত, জলসন্ধ, ভূরিশ্রবা, শল্য, শাল্ব, অনুজের সহিত বৃষসেন, দুর্য্যোধনতনয় লক্ষ্মণ, ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্র, শিখণ্ডীর পুত্রগণ, অনুজের সহিত ধৃষ্টকেতু, অচল, বৃষক, নিশাচর অলায়ুধ এবং মহারাজ সোমদত্ত ও চেকিতান প্রভৃতি বীরসমুদয় সমুজ্জ্বল দিব্যমুর্ত্তি ধারণপূৰ্ব্বক সলিল হইতে সমুত্থিত হইলেন। পূৰ্ব্বে যে বীরের যেরূপ বেশ, যেরূপ ধ্বজ ও যেরূপ বাহন ছিল, তৎকালে তাহার কিছুই বৈলক্ষণ্য লক্ষিত হইল না। ঐ সময় তাঁহারা সকলেই নিরহঙ্কার, নিব্বৈর ও নিৰ্ম্মৎসর হইয়া দিব্যবস্তু, দিব্যকুণ্ডল ও দিব্যমাল্য ধারণপূৰ্ব্বক অপ্সরাগণের সহিত শোভা পাইতে লাগিলেন এবং গন্ধৰ্ব্বগণ তাঁহাদিগের নিকট গান ও বন্দিগণ স্তুতিপাঠ করিতে লাগিল।

তখন সত্যবতীপুত্র মহাত্মা বেদব্যাস তপোবলে অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে দিব্যচক্ষুঃ প্রদান করিলেন। অন্ধরাজ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন প্রভাবে দিব্যচক্ষুঃ লাভ করিয়া পরমাহ্লাদে পুত্রগণকে দর্শন করিতে লাগিলেন। পতিপরায়ণা গান্ধারী সংগ্রামনিহত পুত্রগণ ও অন্যান্য স্বরসমুদয়কে দর্শন করিয়া যারপরনাই সন্তুষ্ট হইলেন এবং তত্রত্য অন্যান্য লোকসমুদয় সেই অচিন্তনীয় লোমহর্ষণ অদ্ভুত কাণ্ড নিরীক্ষণ করিয়া অনিমেষলোচনে অবস্থান করিতে লাগিল।