২৭. যুধিষ্ঠিরাদির আশ্রমভ্রমণ—তাপসতৃপ্তিসাধন

যুধিষ্ঠিরাদির আশ্রমভ্রমণ—তাপসতৃপ্তিসাধন

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর শর্ব্বরী প্রভাত হইলে, ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির পূর্ব্বাহ্ণকৃত্যসমুদয় সমাপন করিয়া জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্রের আজ্ঞানুসারে অন্তঃপুরকামিনী, ভৃত্য, পুরোহিত ও ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে আশ্রমসমুদয় অবলোকনে অভিলাষী হইয়া ইতস্ততঃ পর্য্যটন করিতে করিতে দেখিলেন, মুনিগণ স্নানাহ্নিকক্রিয়া সমাপনপূৰ্ব্বক বেদীমধ্যে অগ্নি প্রজ্বলিত করিয়া আহুতি প্রদান করিতেছেন। বেদীসমুদয় বানের [বন্য] পুষ্প, ফলমূল ও আজ্য[ঘৃতাহুতি]ধূমে পরিপূর্ণ হইয়াছে। মৃগগণ অশঙ্কিতচিত্তে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতেছে। ব্রাহ্মণগণের বেদাধ্যয়নশব্দ, ময়ূরগণের কেকারব, দাত্যূহ[ডাহুকপাখী]দিগের কলরব, কোকিলগণের কুহুরব ও অন্যান্য পক্ষিগণের শ্রুতিসুখকর সুমধুর নিস্বনে আশ্রম-অঞ্চল পরিপূর্ণ হইয়াছে। তখন রাজা যুধিষ্ঠির তাপসগণের নিমিত্ত সমানীত কাঞ্চনময় কলস, উডুম্বর, অজিন, মাল্য, স্রুক, স্রব, কমণ্ডলু, স্থালী, লৌহপাত্র ও অন্যান্য নানাবিধ পাত্রসমুদয় তাঁহাদিগকে অর্পণ করিতে লাগিলেন। ঐ সময় যে তাপস যাহা প্রার্থনা করিলেন, ধৰ্ম্মরাজ তাঁহাকে তাহাই প্রদান করিলেন।

এইরূপে রাজা যুধিষ্ঠির আশ্রমের চতুর্দ্দিক পরিভ্রমণপূৰ্ব্বক বহুতর ধন দান করিয়া পুনরায় ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রমে সমাগত হইয়া দেখিলেন, অন্ধরাজ স্নানাহ্নিক ক্রিয়া সমাপন করিয়া গান্ধারীর সহিত একত্র সমাসীন রহিয়াছেন। মনস্বিনী কুন্তী শিষ্যার ন্যায় অতি বিনীতভাবে তাঁহাদিগের অনতিদূরে অবস্থান করিতেছেন। তখন ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ভীমসেনাদি ভ্রাতৃগণ, ও অন্যান্য পরিবারবর্গের সহিত ধৃতরাষ্ট্রের নিকট সমুপস্থিত হইয়া তাঁহাকে অভিবাদনপূৰ্ব্বক তাঁহার আদেশানুসারে কুশাসনে সমাসীন হইলেন। কৌরবেন্দ্র ধৃতরাষ্ট্র সেই আত্মীয় পরিবারবর্গে পরিবেষ্টিত হইয়া দেবগণসমাবৃত বৃহস্পতির ন্যায় অতি মনোহর শোভা ধারণ করিলেন।

অনন্তর শতকূপ প্রভৃতি কুরুক্ষেত্রনিবাসী ঋষিগণ এবং শিষ্যসমবেত ভগবান্ বেদব্যাস তথায় সমুপস্থিত হইলেন। উঁহারা উপস্থিত হইবামাত্র রাজা ধৃতরাষ্ট্র, ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ও ভীমসেনাদি সকলে গাত্রোত্থান করিয়া উঁহাদের অভিবাদন করিলেন। তখন বেদব্যাস ধৃতরাষ্ট্রকে আসনপরিগ্রহ করিতে আদেশপূৰ্ব্বক সমাগত ব্রাহ্মণগণকে কুশাসনে উপবেশন করাইয়া স্বয়ং উপবেশন করিলেন।