১৩. ভীমের কটুক্তি ক্ষমাপণার্থ যুধিষ্ঠির-নিবেদন

ভীমের কটুক্তি ক্ষমাপণার্থ যুধিষ্ঠির-নিবেদন

বৈশম্পায়ন বলিলেন, রাজা যুধিষ্ঠির এই কথা কহিলে ধীমান বিদুর ধৃতরাষ্ট্রের নিকট গমন করিয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “রাজন! আমি প্রথমতঃ যুধিষ্ঠিরের নিকট আপনার বাক্য কীৰ্ত্তন করিবামাত্র তিনি এবং অর্জ্জুন উভয়ে আপনার বাক্যে যথেষ্ট সমাদর প্রদর্শনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “আমাদিগের রাজ্য, ধন বা প্রাণ যাহাতে জ্যেষ্ঠতাতের অভিলাষ হয়, তিনি তাহাই গ্রহণ করিতে পারেন। কিন্তু মহাবীর বৃকোদর পূর্ব্বতন দুঃখসমুদয় স্মরণ করিয়া আপনার বাক্যে অতিকষ্টে সম্মত হইলেন। ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ও মহাত্মা অৰ্জ্জুন তাঁহারা উভয়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করিয়া বৃকোদরকে সম্মত করিয়াছেন। পরিশেষে ধৰ্ম্মরাজ অনেক অনুনয় করিয়া কহিয়াছেন যে, মহাবীর বৃকোদর পূৰ্ব্বকৃত বৈর স্মরণ করিয়া আপনার প্রতি যে কিছু অন্যায় আচরণ করিয়াছেন, তাহাতে যেন আপনি দুঃখিত না হন।

‘ঐ মহাবীর সতত ক্ষত্রিয়ধর্ম্ম ও যুদ্ধেই ব্যাপৃত থাকেন; এই নিমিত্তই উনি অদ্যাপি ক্রোধ সংবরণ করিতে পারেন নাই। যাহা হউক, এক্ষণে বৃকোদরের নিমিত্ত আমি ও অর্জ্জুন আমরা উভয়ে জ্যেষ্ঠতাতের নিকট এই প্রার্থনা করিতেছি যে, তিনি যেন অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাদিগের বিশেষতঃ ভীমের প্রতি প্রসন্ন হন। তিনি এই রাজ্য ও আমাদিগের প্রভু; অতএব পুত্র ও বান্ধবদিগের ঔর্দ্ধদেহিক কার্য্যার্থ তাহার যাহা অভিরুচি হয়, তিনি তাহাই করুন। তিনি রত্ন, গাভী, দাস, দাসী, মেষ ও ছাগ প্রভৃতি যাহা দান করিতে বাসনা করেন, তাহাই গ্রহণ করিয়া অনায়াসে ব্রাহ্মণ, অন্ধ ও দীন-দরিদ্রদিগকে প্রদান করুন। তিনি অন্নদান, পানীয়দান ও গোসমুদয়ের জলপানার্থ নিপানদান [পথিপার্শ্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানীয় জলের আধার স্থাপন] প্রভৃতি অসংখ্য পুণ্যকাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করুন। হে কৌরবেন্দ্র! রাজা যুধিষ্ঠির ও মহাত্মা ধনঞ্জয় আমাকে এই কথা কহিয়াছেন, এক্ষণে আপনার যাহা অভিরুচি হয়, করুন।”