৪৭. দুৰ্য্যোধনের প্রতি শকুনির সান্ত্বনা

দুৰ্য্যোধনের প্রতি শকুনির সান্ত্বনা

শকুনি দুৰ্য্যোধনের পরিতাপবাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “দুৰ্য্যোধন! পাণ্ডবেরা আপন অংশ ভোগ করিতেছে, তদর্শনে তোমার যুধিষ্ঠিরের প্রতি এরূপ ক্রোধাবিষ্ট হওয়া নিতান্ত অবিধেয়। বিশেষতঃ তাহারাও বিবিধ বিধানজ্ঞ। হে অরিন্দম! পূর্ব্বেও তুমি তাহাদিগের প্রতি অনেকবিধ উপায় প্রয়োগ করিয়াছিলে, কিন্তু কিছুতেই কৃতকাৰ্য্য হইতে পার নাই! পরিশেষে তাহাদিগকে অংশ প্রদানে পরিতুষ্ট করিয়া পদত্যাগ করিতে হইয়াছিল। তাহারা দ্রৌপদীকে ভাৰ্য্যা, সপুত্র দ্রুপদকে ও তেজস্বী কেশবকে পৃথিবী লাভের সহায় পাইয়াছে। এবং পৈতৃক অংশ লাভ করিয়া আত্মপ্ৰতাপে সেই অংশ বৰ্দ্ধিত করিয়াছে, তাহাতে তোমার পরিবেদনার বিষয় কি? ধনঞ্জয় হুতাশনকে পরিতুষ্ট করিয়া গাণ্ডীব ধনু, অক্ষয় তৃণীরদ্বয় ও দিব্য অস্ত্রসমুদয় লাভ করিয়াছে এবং সেই কার্ম্মুকের সাহায্যে ও আপনার বাহুবীৰ্য্যে সমস্ত মহীপালকে বশংবাদ রাখিয়াছে, তাহাতেই বা তোমার পরিদেবনার বিষয় কি? খাণ্ডবদাহকালে ময়দানবকে অগ্নিদাহ হইতে পরিত্রাণ করিয়া তাহারা সেই সভা নির্ম্মাণ করাইয়াছে, ময়দানবের আজ্ঞানুবর্তী কিঙ্করনামক রাক্ষসেরা তাহা বহন করিয়াছে, তাহাতেই বা তোমার পরিবেদনার বিষয় কি? তুমি যে কহিলে, “আমার সহায় নাই’, কেবল তোমার ভ্রান্তি মাত্র; কারণ ভ্রাতৃগণ তোমার অনুগত এবং মহাধনুৰ্দ্ধর দ্রোণ, তাহার পুত্র, রাধেয়, মহারথ গৌতম, আমি, আমার সহোদরগণ ও রাজা সৌমদত্তি, আমরা সকলেই তোমার সহায়; তুমিও এই সকল সহায়সম্পন্ন হইয়া অখণ্ড ভূমণ্ডল জয় কর।”

শকুনির পাশক্রীয়ার কূটমন্ত্র

দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে রাজন! আপনি অনুমতি করুন, আমি আপনাকে ও পূর্বোক্ত মহারথদিগকে সহায় করিয়া অদ্যই সেই পাণ্ডবদিগকে পরাজয় করিব। তাহারা পরাজিত হইলেই অখণ্ড ভূমণ্ডল, সমস্ত মহীপাল ও সেই মহাধন সভা আমার অধিকৃত হইবে।” শকুনি কহিলেন, “হে রাজন! ধনঞ্জয়, বাসুদেব ভীমসেন, যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেব ও সপুত্র দ্রুপদকে পরাজয় করা দেবগণেরও সাধ্যায়ত্ত নহে। ইঁহারা সকলেই মহারথ, মহাধনুৰ্দ্ধর কৃতাস্ত্র ও যুদ্ধদুৰ্ম্মদ! হে রাজন! যে উপায় দ্বারা যুধিষ্ঠিরকে জয় করিতে পরিবে, আমি তাহা বিশেষরূপে জানি, এক্ষণে শ্রবণ করিয়া সেই উপায় অবলম্বন কর।” দুৰ্য্যোধন জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাতুল! যে উপায় দ্বারা সুহৃদগণের ও অন্যান্য মহাত্মাদিগের মনোযোগে তাহাদিগকে পরাজয় করিতে পারিব, বলুন, সে উপায় কি প্রকার?” শকুনি কহিলেন, “রাজা যুধিষ্ঠির দ্যূতপ্রিয়, কিন্তু তাহাতে তাঁহার নৈপুণ্য নাই, অতএব পাশক্রীড়ার নিমিত্ত তাঁহাকে আহ্বান কর। তিনি আহূত হইলে নিবৃত্ত হইতে পরিবেন না। আমি অক্ষক্রীড়ায় সাতিশয় দক্ষ, ত্ৰিভুবনে আমার তুল্য ক্রীড়াশীল আর কেহই নাই। অতএব তুমি তাঁহাকে দ্যূতে আহ্বান কর, আমি তোমার নিমিত্ত অক্ষকৌশলে তাহার সেই প্ৰদীপ্ত রাজলক্ষ্মী গ্ৰহণ করিব; কিন্তু এই বিষয়ে তোমার পিতাকে অবগত করাও, তাহার অনুজ্ঞা লইয়া তাঁহাদিগকে পরাজয় করিব, সন্দেহ নাই।” দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে মাতুল! আপনিই পিতাকে রীতিমত নিবেদন করুন, আমি সেই দুৰ্দ্ধৰ্ষ ভূমিপালকে জানাইতে পারিব না।”