৩১. নকুল দিগ্বিজয়

নকুল দিগ্বিজয়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! মহাবীর নকুল যেরূপে বাসুদেবজিত দিকসকল জয় করিলেন, সেই বিজয়বৃত্তান্ত এক্ষণে বর্ণন করিতেছি, অবধান করুন। নকুল খাণ্ডবপ্রস্থ হইতে বিনির্গত হইয়া সেনাগণ সমভিব্যাহারে পশ্চিমাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। প্রস্থানসময়ে বীরগণের সিংহনাদ ও রথচক্রের ঘর্ঘরধ্বনি দ্বারা মেদিনীমণ্ডল কম্পিত হইতে লাগিল। নকুল গোকুলসঙ্কুল, রোহিত্যকদেশে প্রয়াণ করিলেন। তথায় মহাশূর মত্তময়ুরগণসমভিব্যাহারে তাহার তুমুল সংগ্রাম উপস্থিত হইল। পরিশেষে তিনি মরুভূমি সৈরােষক ও বহুধান্যসম্পন্ন মহৌখদেশ সম্পূর্ণ অধিকার করিতে লাগিলেন। তৎপরে প্রবল যুদ্ধানল প্রজ্বলিত করিয়া আক্রোশনামক রাজর্ষিকে বশীভূত করিলেন। তদনন্তর দশার্ণ, শিবি, ত্ৰিগর্ত, অম্বষ্ঠ, মালব, পঞ্চকপট, মধ্যমকেয়, বাটধান ও দ্বিজগণকে পরাজয় করিয়া প্ৰস্থান করিলেন। পুনরায় প্রত্যাগমন করিয়া পুষ্করারণ্যবাসী উৎসবসঙ্কেতনামক—গণকে পরাজয় করিতে লাগিলেন। তৎপরে সমুদ্রতীরস্থ ও জনপদবাসী শূদ্ৰ আভীরগণ, যাহারা সরস্বতী নদী আশ্রয় করিয়া মৎস্য দ্বারা পর্ব্বতবাসী সমস্ত পঞ্চনদ, অমর-পর্ব্বত, উত্তরাজ্যোতিষ, দিব্য কটপুর ও দ্বারপালকে বলপূর্ব্বক বশীভূত করিলেন। ‘অনন্তর শাসন হেতু [বিনাযুদ্ধে কেবল আদেশ দ্বারা] রামঠ, হারাতৃণ ও প্রতীচ্য-ভূপালদিগকে আপনার বশে আনিলেন। তৎপরে তথায় অবস্থান করিয়াই বাসুদেবের নিকট দূত প্রেরণ করিলেন। বাসুদেব ও যাদবগণ তাঁহার শাসন গ্ৰহণ করিলেন। অবশেষে শাকলে উপস্থিত হইয়া মদ্রদিগের নগর অধিকার করিয়া মাতুল শল্যকে প্রীতিপূর্ব্বক বশীভূত করিলেন। মাদ্রীসূত নকুল শল্য কর্তৃক সৎকৃত হইয়া প্রভূত রত্ন গ্রহণপূর্ব্বক প্রস্থান করিলেন। পরিশেষে সাগরগর্ভস্থ পরম-দারুণ স্নেচ্ছ, পহ্নব, বর্ব্বর, কিরাত, যবন ও শকদিগকে বশীভূত ও তাহাদিগের নিকট হইতে উৎকৃষ্ট দ্রব্যজাত সংগ্ৰহ করিয়া অবশিষ্ট অন্যান্য পার্থিবদিগকে জয় করিলেন।

এইরূপে নকুল দিগ্বিজয় করিয়া প্রত্যাগমন করিলেন। সহস্ৰ করভ [পূর্ণযৌবনপ্রাপ্ত বলশালী হন্তী] তাহার মহাধনকোষ অতিকষ্টে বহন করিতে লাগিল!

দিগ্বিজয়পৰ্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।