২৭. কিম্পুরুষবর্ষ জয়

কিম্পুরুষবর্ষ জয়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! মহাবীর অর্জ্জুন ধবলগিরি অতিক্রম করিয়া ক্ষত্রিয়ান্তকর ভয়ঙ্কর সংগ্রাম দ্বারা দ্রুমপুত্ররক্ষিত কিম্পরুষবর্ষ পরাজয় ও অধিকার করিলেন। তৎপরে সসৈন্যে গুহ্যকপালিত হাটকদেশে উপস্থিত হইলেন, তথায় গুহ্যকদিগের নিকট জয়লাভ করিয়া তিনি মানস-সরোবর ও সমস্ত ঋষিকন্যা অবলোকন করিতে লাগিলেন। তৎপরে মানস-সরোবরের নিকটস্থ হইয়া হাটকের চতুস্পার্শ্ববর্তী গান্ধর্ব্বরক্ষিত দেশ-সকল অধিকার করিলেন। সেই সমস্ত গন্ধর্ব্ব নগর হইতে তিনি তিত্তিরি, কল্মষ ও মণ্ডুক নামে প্রচুর অশ্বরত্ন করম্বরূপ লাভ করিলেন।

অনন্তর অর্জ্জুন উত্তর হরিবর্ষে সমুপস্থিত হইয়া জয়লাভ করিবার নিমিত্ত ইচ্ছা করিলেন। এই অবসরে মহাবীৰ্য্য মহাকায় মহাবল দ্বারপালসকল অর্জ্জুন-সন্নিধানে উপনীত হইয়া হৃষ্টান্তঃকরণে কহিল, “হে কুন্তীনন্দন মহাভাগ অর্জ্জুন! আপনি এই গন্ধর্ব্ব-নগরী অধিকারে কদাচ সমর্থ হইবেন না, অবিলম্বে এ স্থান হইতে প্ৰস্থান করুন। এই নগরী অপৰ্যাপ্ত সৈন্যসামন্তসম্পন্ন। যিনি এই নগরে প্রবেশ করেন, তিনি নিঃসন্দেহে সামান্য মনুষ্য নহেন। এক্ষণে আমরা আপনার প্রতি প্রীত ও প্রসন্ন হইয়াছি। যখন আপনি এই নগরে প্রবেশ করিয়াছেন, তখন আপনার জয়লাভই হইয়াছে। হে অর্জ্জুন! এ স্থলে কোন বিষয়ই জেতব্য লক্ষিত হয় না। এই দেশের নাম উত্তর-কুরু। এ স্থানে যুদ্ধের প্রসঙ্গও নাই। আপনি নগরপ্রবেশ করিয়াছেন, তথাপি স্থানপ্রভাবে কোন বস্তুই আপনার প্রত্যক্ষ হইতেছে না। এ স্থলে কোন বিষয়েই মনুষ্যমাত্রের সাক্ষাৎকারলাভের সম্ভাবনা নাই। এক্ষণে আপনার যদি কোন কার্য সংসাধন করিবার অভিলাষ থাকে, বলুন, আজ্ঞা পাইলে আমরাই সমস্ত অনুষ্ঠান করিব।”

তখন অর্জ্জুন হাস্যমুখে প্রত্যুত্তর করিলেন, “আমি ধীমান ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের আধিপত্য স্থাপন করিতে ইচ্ছা করিয়াছি; অতএব যদি তোমাদিগের এই প্রদেশ সকল নরলোকের সঞ্চার-বিরুদ্ধ হয়, তাহা হইলে ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে যৎকিঞ্চিৎ কর প্রদান কর।” তখন দ্বারপালেরা অর্জ্জুনকে দিব্য বস্ত্ৰ, দিব্য আভরণ, দিব্য অজিন ও মহার্হ ক্ষৌমবস্ত্র এই সমস্ত বস্তু কর প্রদান করিলেন।

অনন্তর অর্জ্জুন উত্তর-কুরু পরাজয় করিয়া পরিশেষে অন্যান্য অনেকানেক ক্ষত্রিয় ও দস্যুগণের সহিত সংগ্রাম আরম্ভ করিলেন এবং তাহাদিগকে পরাজিত ও হস্তগত করিয়া বহুবিধ ধন, রত্ন এবং ময়ুরসদৃশ, শুকশ্যাম [শুকাবৎ শ্যামবর্ণ], বেগশালী অশ্ব-সকল গ্রহণ করিলেন। তৎপরে তিনি চতুরঙ্গিণী সেনা-সমভিব্যাহারে পুনরায় রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থে উপস্থিত হইলেন এবং যুধিষ্ঠিরকে বাহনের সহিত সমস্ত ধন প্ৰদান করিয়া তাহার আদেশানুসারে গৃহে প্রবেশ করিলেন।