১০. কুবের সভাসমৃদ্ধি কীর্তন

১০ অধ্যায়

কুবের সভাসমৃদ্ধি কীর্তন

নারদ কহিলেন, হে রাজন! ধনাধিপতি কুবেরের সভা দীৰ্ঘে শত যোজন ও প্রস্থে সপ্ততি যোজন বিস্তীর্ণ। ঐ আবরণশালিনী সভা শশধর ও কৈলাসশিখরের ন্যায় শ্বেতবর্ণ। কুবের বহু দিবস তপস্যা করিয়া ঐ সভা প্ৰাপ্ত হইয়াছেন। গুহ্যকগণ নিরন্তর উহা বহন করায় বোধ হয় যেন শূন্যমার্গেই অবস্থিতি করিতেছে। মহামূল্য বিবিধ রত্ন উহার বিচিত্ৰ শোভা বিস্তার করিয়াছে, দিব্য গন্ধে সকলেরই নাসারন্ধচরিতার্থ হইতেছে। উন্নত হিরন্ময় প্রাসাদে উহার এক অপূর্ব্ব শ্ৰী সম্পাদিত হইয়াছে। তাদৃশী মনোহারিণী সভা প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। উহা বিদ্যুন্মালার ন্যায় হেমময় অবয়ব দ্বারা বিচিত্ৰ হইয়াছে। ঐ সভামধ্যে শ্ৰীমান মহারাজ কুবের বিচিত্র বসন-ভূষণ ধারণপূর্ব্বক সহস্ৰ সহস্ৰ স্ত্রীগণপরিবৃত হইয়া সূর্য্যসদৃশ সমুজ্জ্বল, পরম-পবিত্র, বিচিত্র আস্তরণে আবৃত ও দিব্য পাদপীঠসংযুক্ত মহামূল্য আসনে উপবিষ্ট থাকেন। মনোহর শীতলসমীরণ উহার মন্দারবন পরিলোড়ন [বিমর্দ্দন]-পূর্ব্বক বহুবিধ সুরভি কমল, কহ্লার প্রভৃতি এবং অলকাপুরী ও গন্ধ বহন করিয়া তাঁহার সেবা করিয়া থাকে। হে মহারাজ! এ সভায় দেবগণ গন্ধর্ব্ব ও অন্সরাগণে পরিবৃত হইয়া দিব্যতানে গান করিয়া থাকেন। মিশ্রকেশী, রম্ভা, ও শুচিস্মিতা চিত্ৰসেনা, চারুনেত্ৰা ঘৃতাচী, মেনকা, পুঞ্জিকন্তুলা, বিশ্বাচী, সহজন্য, প্রস্লোচা, উর্ব্বশী, ইরা, বর্গ, সৌরভেয়ী, সমীচী, বুদবুদা, লতা ও অন্যান্য সহস্ৰ সহস্ৰ নৃত্যগীতবিশারদ গন্ধর্ব্ব ও অন্সরাবর্গ কুবেরের উপাসনা করেন। সেই সভা দিব্য বাদ্যে, নৃত্যগীতে ও গন্ধর্ব্বস্পরাসমূহে পরিপূর্ণ হইয়া কমনীয় শোভায় শোভিত হইয়াছে। মণিভদ্র, ধনদ, শ্বেতভদ্র, গুহ্যক, কশেরক, গণ্ডকুণ্ডু, মহাবল, প্রদ্যোত, কুস্তুম্বুরু, পিশাচ, গজকৰ্ণ, বিশালক, বরাহকর্ণ, তামৌষ্ঠ, ফলকক্ষ, ফলোদক, হংসচুড়, শিখাবর্ত, হেমনেত্র, বিভীষণ, পুষ্পানন, পিঙ্গলক, শোণিতোদ, প্রবালক, বৃক্ষবাষ্পানিকেত, চীরবাসাঃ ও অন্যান্য শত সহস্ৰ যক্ষ সেই সভায় অধ্যাসীন হয়। ভগবতী কমলালয়া নিয়ত তথায় অবস্থিতি করেন; নলকুবেরও তাঁহাতে উপবিষ্ট হইয়া থাকে। আমার ও মদ্বিধ অনেক ব্যক্তির কতশত বার তথায় অধিষ্ঠান হইয়াছে। ব্রহ্মর্ষিগণ, দেবর্ষিগণ, রাক্ষসসমূহ ও অন্যান্য মহাবল গন্ধর্ব্বসমূহ সভামধ্যে ধনেশ্বরের উপাসনা করেন। শূলহস্ত ভগবান, ভবানীপতি বিগতক্লমা ভগবতী কাত্যায়নীসমভিব্যাহারে বামন, বিকট, কুব্জ, লোহিতাক্ষ, মহাবর প্রভৃতি মেন্দোমাংসাশন শত সহস্র ভূতগণে পরিবৃত হইয়া তথায় বিরাজমান হয়েন।

বায়ুর ন্যায় মহাবেগশালী নানা প্রহরণে পরিবৃত হইয়া মহাবল পুরন্দর সর্ব্বদা সখা কুবেরের সহ আসীন থাকেন। বিশ্বাবসু, হাহা, হূহূ, তুম্বুরু, পর্ব্বত, শৈলুষ, গীতজ্ঞ চিত্ৰসেন ও চিত্ররথ প্রভৃতি গন্ধর্ব্বপতি এবং অন্যান্য গন্ধর্ব্বগণ ধনেশ্বরের উপাসনা করেন। বিদ্যাধরাধিপতি চক্ৰবৰ্মা অনুজগণের সহিত তাঁহার সন্নিহিত থাকিয়া উপাসনা করিয়া থাকেন। শত শত কিন্নর এবং ভগদত্ত প্রভৃতি রাজারাও তথায় ধনেশ্বরের উপাসনায় লিপ্ত হয়েন। কিম্পূরুষাধিপতি দ্রুম, রাক্ষসাধিপতি মহেন্দ্র, গন্ধমাদন, কুবেরের ভ্রাতা বিভীষণ, যক্ষ, গন্ধর্ব্ব ও বহুসংখ্যক নিশাচর সমভিব্যাহারে তাহার উপাসনা করেন। হিমালয়, পারিপাত্ৰ, বিন্ধ্য, কৈলাস, মন্দর, মলয়, দুর্দ্দুর, মহেন্দ্র, গন্ধমাদন, ইন্দ্রকীল, সুনাভ, দিব্য, গিরিদ্বয় এবং মেরু প্রভৃতি অন্যান্য অনেক পর্ব্বতগণ ধনাধিপতির উপাসনা করিয়া থাকেন। নন্দীশ্বর, ভগবান মহাকাল শঙ্কুকৰ্ণ প্রভৃতি দিব্য সভ্যগণ, কাষ্ঠ, কটীমুখ, দন্তী, তপোধিক বিজয়া, শ্বেতবর্ণ মহাবল নিনাদকারী বৃষভ, অন্যান্য রাক্ষসগণ ও পিশাচবৰ্গ কুবেরের উপাসনা করেন। পুলস্ত্যনন্দন কুবের সর্ব্বদাই ভূতপরিবৃত ভগবান ভবানীপতিকে প্ৰণিপাত করিয়া আজ্ঞানুবর্তী হইয়া তাহার সমীপে গমন করেন; মহাদেবও কখন কখন তাহার প্রতি সখ্যভাব অবলম্বন করিয়া থাকেন। নিধিপ্রধান শঙ্খ ও পদ্ম সমুদয় রত্ন গ্রহণ করিয়া তাহার উপাসনা করেন। হে মহারাজ! আমি মনোহারিণী অন্তরীক্ষাগামিনী সেই সভা কতবার নিরীক্ষণ করিয়াছি। এক্ষণে ব্ৰহ্মার সভা বর্ণনা করি, শ্রবণ করুন।