০৯. বরুণ-সভাবিবরণ

৯ম অধ্যায়

বরুণ-সভাবিবরণ

দেবর্ষি নারদ কহিলেন, মহারাজ! দেবশিল্পী বিশ্বকর্ম্মা বরুণের অসীম প্রভাবসম্পন্ন, অত্যুন্নত ও শুক্ল প্রাকার-পরিবেষ্টিত যমসভার ন্যায় আয়ত এক অপূর্ব্ব সভা সলিলমধ্যে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। ঐ সভা ফলপুষ্পোপশোভিত রত্নময় রমণীয় বৃক্ষমালায় অলঙ্কৃত এবং নীল, সিত, লোহিত, কৃষ্ণ, শ্যামলবৰ্ণ বিতানে ও মঞ্জরীজালিধারী [নব নব পত্ৰযুক্ত] গুল্মসকলে সমাচ্ছন্ন। তথায় বিপুলকলেবর সুমধুর স্বরসংযোগশালী শত সহস্ৰ অনিৰ্দেশ্য [অজ্ঞাতনামা—যাহাদের নাম জানা যায় না, এইরূপ] বিবিধ বিহগগণ ইতস্ততঃ বিহার করিতেছে। সেই সভাস্থলী নাতিশীতোষ্ণ ও সুখস্পর্শবিশিষ্ট, বেশ্মাবলী [গৃহসমূহ] ও আসনসমূহ তাহার মনোহর শোভা সম্পন্ন করিয়াছে। বরুণদেব বিদ্যাম্বরধারী ও দিব্যাভরণভূষিত হইয়া স্বীয় সহধর্মিণী বারুণীদেবীসমভিব্যাহারে তথায় বিরাজ করেন। সেই স্থানে সুগন্ধি চন্দনচর্চিত দিব্যমাল্যধারী আদিত্যগণ, বাসুকি, তক্ষক, নাগ, ঐরাবত, কৃষ্ণ, লোহিত, প্রভূতবলশালী, পদ্মচিত্র, কম্বল, ধৃতরাষ্ট্র, অশ্বতর, বলাহক, মণিমান, কুণ্ডধার, কর্কোটক, ধনঞ্জয়, অণিমান, প্রহ্লাদ, মূষিকাদ, জনমেজয় ও অন্যান্য পতাকী ফণাবান মণ্ডলবিশিষ্ট বহুতর সর্প তথায় উপস্থিত হইয়া ভগবান বরুণদেবের উপাসনা করিয়া থাকেন। আর বিরোচনানন্দন বলি, মহারাজ নরক, সংহাদ, বিপ্রচিত্তি, কালখঞ্জ দানবীসকল, সুহনু, দুৰ্ম্মখ, শঙ্খ, সুমনা, সুমতি, ঘটােদর, মহাপার্শ্ব, ক্ৰন্থন, পিঠর, বিশ্বরূপ, স্বরূপ, বিরূপ, মহাশিরাঃ, দশগ্ৰীব, বালী, মেঘবাসাঃ, দশাবার, টিট্টিভ, বিটভূত, ইন্দ্ৰতাপন, সংহাদ, দিব্যকুণ্ডলধারী লব্ধবর বীরাগ্রণী জিতামৃত্যু দৈত্যদানবীসকল সুপরিচ্ছন্ন পরিচ্ছদ পরিধান ও দিব্যমালা ধারণপূর্ব্বক বরুণদেবকে উপাসনা করিতেছেন। আর চারি সমুদ্র, ভাগীরথী, কালিন্দী, বিদিশা, বেথা, বেগবাহিনী নর্ম্মদা, বিপাশা, শতদ্রু, চন্দ্ৰভাগ, সরস্বতী, ইরাবতী, বিতস্তা, দেবনদী সিন্ধু, গোদাবরী, কৃষ্ণবেথা, সরিদ্বরা, কাবেরী, কিম্পুনা, বিশল্যা, বৈতরণী, তৃতীয়া, জ্যোষ্ঠিলা, মহানদ, শোণ, চর্ম্মঘাতী, পৰ্ণাশা, মহানদী সরযূ, বারবত্যা, লাঙ্গলী, করতোয়া, আত্ৰেয়ী, মহানদ, লোহিত্য, লঘন্তী, গোমতী, সন্ধ্যা, ত্রিস্রোতসী ও অন্যান্য প্রখ্যাত নদী, তীর্থ সরোবর, কৃপ, বিগ্রহশালী প্রস্রবণ, দেহবিশিষ্ট তাড়াগ ও পল্বল সকল, দশদিক, মহী, মহীধরসমূদয় ও জলচর জীবসকল মহাত্মা বরুণের উপাসনা করিতেছে। গীতবাদ্যানুরক্ত গন্ধর্ব্ব ও অন্সরাগণ স্তুতিবাদ দ্বারা তাহার উপাসনায় প্রবৃত্ত হইয়াছে। রত্নসম্পন্ন পর্ব্বত ও রসসকল সুমধুর কথা-প্রসঙ্গে তথায় অধ্যাসীন রহিয়াছে। বরুণমন্ত্রি সুনাভ, গোনামক পুষ্কর পুত্র-পৌত্ৰগণে পরিবৃত হইয়া তাহার উপাসনা করিতেছেন। হে ধর্ম্মরাজ! এই সমস্ত মহাত্মারা বিগ্ৰহ পরিগ্রহণপূর্ব্বক বরুণদেবকে উপাসনা করিয়া থাকেন। আমি পর্য্যটন-প্রসঙ্গে পূর্ব্বে বরুণসভা সন্দর্শন করিয়াছিলাম, এক্ষণে কুবের-সভা বৰ্ণনা করিতেছি, শ্রবণ করুন।