০৮. যমসভা-বৃত্তান্ত

৮ম অধ্যায়

যমসভা-বৃত্তান্ত

নারদ কহিলেন, হে মহারাজ! দেবশিল্পী বিশ্বকর্ম্মা বৈবস্বত যমের যে সভা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তদ্বিষয় বর্ণনা করিতেছি, অবহিত হউন। ঐ কামরূপিণী, সূৰ্য্যসদৃশ তেজঃসম্পন্না, নাতিশীতোষ্ণা, মনোহারিণী সভা শত যোজন বিস্তীর্ণ। উহাতে শোক, জরা, ক্ষুধা, পিপাসা, দৈন্য, ক্লম প্রভৃতি কোন অপ্ৰিয়ই নাই। তথায় দিব্য, মর্ত্য, কাম্য যাবতীয় বস্তু, সরস সুস্বাদু মনোহর প্রচুর চব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় প্রভৃতি ভক্ষ্যদ্রব্য, সুগন্ধি মাল্য, কামফল পাদপাবলী এবং সুস্বাদ শীত ও উষ্ণ সলিল সমুদয় সর্ব্বদাই প্ৰস্তুত রহিয়াছে।

হে রাজন! পরম পবিত্র রাজর্ষি ও দেবর্ষিগণ ঐ সভায় আগমন করিয়া হৃষ্টচিত্তে যমের উপাসনা করেন। যযাতি, নহুষ, পুরু, মান্ধাতা, সোমাক, নৃগ, রাজর্ষি, ত্ৰসদস্যু, কৃতবীৰ্য্য, শ্রুতিশ্রবাঃ, বেগ, অরিষ্টনেমি, সিদ্ধকৃতবেগ, কৃতি, নিমিষ, প্রতদন, শিবি, মৎস্য, পৃথুলাক্ষ, বৃহদ্ৰথ, বার্ত, মরুত্ত, কুশিক, সাঙ্কাশ্য, সাঙ্কৃতি, ধ্রুব, চতুরশ্ব, সদশ্বোর্মি, মহারাজ কার্তবীর্য্য, সুরথ, ভরত, সুনীত, নিশঠ, নল, সুমনাঃ, দিবোদাস, অম্বরীষ, ভগীরথী, ব্যশ্ব, সদশ্ব, বধ্র্যশ্ব, বেগবান পৃথুশ্ৰবাঃ, পৃথদশ্ব, বসুমনাঃ, মহাবল ক্ষুপ, বৃহদণ্ড, বৃষসেন, মহারথ, পুরুকুৎস, আর্ক্টিষেণ, দিলীপ, মহাত্মা উশীনর, ঔশীনরি, শর্যাতি, শুদ্ধাত্মা শরভ, অঙ্গ, রিষ্ট, বেণ, দুষ্মন্ত, সৃঞ্জয়, জয়, ভাঙ্গাসুরি, সুনীথ, নিষদ, বিহীনর, করন্ধম, বাহ্লীক, সুদ্যুম্ন, মহাবল মধু, ঐল, মরুত্ত, কপোতরোমা, কৃতক, সহদেব, অর্জ্জুন, সাশ্ব, কৃশাস্ব, মহারাজ শশবিন্দু, দাশরথি রাম, লক্ষ্মণ, প্ৰতর্দ্দন, অলৰ্ক, কক্ষসেন, গয়, গৌরাশ্ব, জামদগ্ন্যি রাম, নাভাগ, সগর, ভূরিদ্যুম্ন, মহাশ্ব, পৃথাশ্ব, জনক, ভূপতি বৈণ, বারিষেণ, পুরুজিৎ, জনমেজয়, ব্ৰহ্মদত্ত, ত্রিগর্ত, রাজা উপরিচর, ভীমজানু, গৌরপৃষ্ঠ, ইন্দ্ৰদ্যুম্ন, নল, গয়, পদ্ম, মুচুকুন্দ, ভূরিদ্যুম্ন, পৃথুলাশ্ব, প্রসেনজিৎ, অরিষ্টনেমি, সুদ্যুম্ন, অষ্টক, মৎস্যবংশীয় শত নরপতি, নীপবংশীয় শত ভূপাল, হয়বংশীয় শত রাজা, ধৃতরাষ্ট্ৰীয় শত জন, জনমেজয়বংশীয় অশীতি জন, ব্ৰহ্মদত্তবংশীয় শত জন, ঈরিবংশীয় শত জন, ভীষ্মবংশীয় দ্বিশতজন, ভীমবংশীয় শত জন, প্ৰতিবিন্ধ্যকবংশীয় শত জন, নাগবংশীয় শত জন, পলাশবংশীয় শত জন ও কুশকাশ প্রভৃতি শত জন এবং রাজেন্দ্ৰ শান্তনু, তোমার পিতা পাণ্ডু, উশঙ্গ ব, শতরথ, দেবরাজ, জয়দ্ৰথ, মন্ত্রিসমবেত বুদ্ধিমান রাজর্ষি বৃষদর্ভ ও অনেকানেক ভূরিদক্ষিণ মহৎ অশ্বমেধানুষ্ঠান দ্বারা স্বৰ্গগত শশবিন্দুবংশীয় সহস্ৰ সহস্ৰ জন ঐ সভায় গমন করিয়া ভগবান যমের উপাসনা করেন। হে রাজন! এই সমস্ত রাজর্ষিগণ পরমপবিত্ৰ, কীর্তিমান ও বহুশ্রুত। অগস্ত্য, মতঙ্গ, কাল, মৃত্যু, সকল যজ্বা, সিদ্ধগণ, সমুদয় যোগশরীরী এবং মূৰ্তিমান অগ্নিষ্বাত্ত, ফেনপ, উষ্মপ, স্বধাবান, বর্হিষদ প্রভৃতি পিতৃগণ, কালচক্ৰ, সাক্ষাৎ ভগবান বহ্নি, দুষ্কৃতকর্ম্ম মনুষ্যগণ, দক্ষিণায়ন, মৃত্যুগণ, কালানয়নে নিযুক্ত যমের পুরুষগণ, শিংশপপলাশ সমুদয় ও কাশকুশাদি সকল ঐ সভায় ভগবান যমের উপাসনা করেন। এতদ্ভিন্ন অন্যান্য অনেকে আসিয়া ধর্ম্মরাজের উপাসনা করিয়া থাকেন, তাহাদের নামের ও কর্মের সংখ্যা করা নিতান্ত দুঃসাধ্য। হে কুন্তিনন্দন! দেবশিল্পী বিশ্বকর্ম্মা বহুকাল তপস্যা করিয়া ঐ পরমরমণীয় সভা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। ঐ সভা যথেচ্ছ গমন করিতে পারে, উহাতে ভয়ের সম্পর্ক নাই এবং উহা স্বীয় তেজঃপ্রভাবে যেন সতত প্রজ্বলিত হইতেছে।

হে রাজন! উগ্ৰতপাঃ, সুব্রত, সত্যবাদী, শান্তস্বভাব, বিশুদ্ধ, পরমপবিত্র ও শূন্যাসীন সন্ন্যাসিগণ এবং ভাস্বরকলেবর, দিব্যাম্বর, বিচিত্রাঙ্গদ, চিত্রমাল্য, উজ্জ্বল কুণ্ডল প্রভৃতি নানাবিধ ভূষণে ভূষিত, পুণ্যশালী অন্সরা ও গন্ধর্ব্বগণ তথায় গমন করিয়া থাকে। নৃত্য, গীত, বাদ্য, হাস্য, পুণ্য, গন্ধ ও শব্দ এবং দিব্য মাল্যসমুদয় তথায় সতত সমুপস্থিত থাকে। সহস্ৰ সহস্ৰ দিব্যরূপধারী মনস্বী ধার্মিকগণ মহাত্মা যমের উপাসনা করেন। হে মহারাজ! মহাত্মা ধর্ম্মরাজের সভা এই প্রকার, এক্ষণে নলিনমালাশালিনী বরুণের সভা বর্ণনা করিব।