০৭. ইন্দ্ৰসভা-বর্ণন

৭ম অধ্যায়

ইন্দ্ৰসভা-বর্ণন

নারদ কহিলেন, হে কুরুনন্দন! দেবরাজ ইন্দ্ৰ বহু প্ৰযত্নসহকারে বিশ্বকৰ্মা দ্বারা আপন সভা নির্ম্মাণ করান। ঐ সভার প্রভা সূৰ্য্যের ন্যায়, উহা শতযোজন বিস্তীর্ণ সাৰ্দ্ধ শত-যোজন দীর্ঘ ও পঞ্চ যোজন উন্নত। উহা শূন্যমার্গে স্থির এবং যথা ইচ্ছা! গমনাগমন করিতে পারে। উহাতে জরা, শোক, ক্লম, আতঙ্ক প্রভৃতি কিছুই নাই। মধ্যে মধ্যে উত্তমোত্তম গৃহ, আসন ও দিব্য পাদপসমুদয় শোভা পাইতেছে। অসামান্য রূপলাবণ্যসম্পন্ন শ্রীমান্‌ যশস্বী অমররাজ ইন্দ্র দিব্য কিরীট, বিদ্যাম্বর, লোহিতাঙ্গদ ও বিচিত্র মাল্য ধারণপূর্ব্বক শচীসমভিব্যাহারে ঐ সভায় মহার্হ আসনে উপবিষ্ট থাকেন।

গৃহবাসী যাবতীয় দেবগণ ও দিব্যরূপধারী দিব্যালঙ্কারশোভিত সিদ্ধ ও সাধ্যগণ, হেমমাল্যধারী তেজস্বী মরুত্বদগণ, ও অন্যান্য দেবগণ এবং অমল, পাপরহিত, অগ্নির ন্যায় জাজ্জ্বল্যমান, তেজস্বী ও শোকজ্বরারহিত দেবর্ষিগণ অনুচরগণসমভিব্যাহারে প্রত্যহ ঐ সভায় আগমন করিয়া মহেন্দ্রের উপাসনা করেন। মহর্ষি পরাশর, পর্ব্বত, সাবৰ্ণি, গালিব, শঙ্খ, লিখিত, গৌরবশিরাঃ, ক্ৰোধন দুর্ব্বাসা, শ্যেন, দীর্ঘতমা, পবিত্ৰপাণি, যাজ্ঞবল্ক্য, ভালুকি, উদ্দালক, শ্বেতকেতু, তাণ্ড্য, ভাণ্ডারিনি, হবিষ্মান, গরিষ্ঠ, মহারাজ হরিশ্চন্দ্ৰ, হৃদ্য, উদারশাণ্ডিল্য, পারাশৰ্য্য, কৃষীবল, বাতস্কন্ধ, বিশাখ, বিধাতা, কাল, করালদন্ত, ত্বষ্টা, বিশ্বকর্ম্ম ও তুম্বুরু এবং অযোনিজ ও যোনিজগণ, বায়ুভক্ষণসকল ও হুতাশি-সমুদয় সর্ব্বলোকেশ্বর পুরন্দরের উপাসনা করেন। সহদেব, সুনীথ, মহাতপাঃ বাল্মীকি, সত্যবাক, শমীক, সত্যপ্রতিজ্ঞ প্ৰচেতাঃ, মেধাতিথি, বামদেব, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, মরুও মরীচি, মহাতপঃ স্থাণু, কান্ধীবান, গৌতম, তাক্ষ্য, মহর্ষি বৈশ্বনর, কালকবৃক্ষীয়, অশ্রাব্য, হিরন্ময়, সংবৰ্ত্ত, দেবহব্য, বীৰ্য্যবান, বিশ্বকসেন, কৰ্থ, কাত্যায়ন, গার্গ্য, কৌশিক, দিব্য অপ, সমুদয়, ওষধিসকল, শ্রদ্ধা, মেধা, সরস্বতী, অর্থ, ধর্ম্ম, কাম, বিদ্যুৎ সমুদয়, জলবাহ, মেঘগণ, বায়ুগণ, স্তনয়িত্বগণ, পূর্ব্বদিক, যজ্ঞবাহ সপ্তবিংশতিসংখ্যক পাবকগণ, অগ্নিসমবেত সোম, ইন্দ্ৰসমবেত অগ্নি, মিত্র, সবিতা, অৰ্য্যমা, ভগ, বিশ্বদেবগণ, গুরু, সাধ্যগণ, শুক্ৰ, বিশ্বাবসু, চিত্ৰসেন, সুমনাঃ, তরুণ, যজ্ঞসকল, দক্ষিণাসকল, গ্ৰহগণ, তারাসমুদয় ও যজ্ঞবাহ মন্ত্রগণ ঐ সভায় সমুপস্থিত থাকেন। অপ্সরাগণ ও মনোরম গন্ধর্ব্বসকল বিবিধ নৃত্য, গীত, বাদ্য, হাস্য, মঙ্গলস্তুতিপাঠ ও বিক্রমপ্রকাশ দ্বারা বলবৃত্ৰনিসূদন ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করেন। তেজস্বী ব্রহ্মর্ষিগণ, হুতাশনের ন্যায় জাজুল্যমান রাজর্ষিগণ ও দেবর্ষিগণ দিব্যমাল্যাদি ধারণপূর্ব্বক চন্দ্রসদৃশ মনোরম বিমানে আরোহণ করিয়া সর্ব্বদা ঐ সভায় যাতায়াত করেন। বৃহস্পতি ও শুক্ৰ তথায় নিত্য সমুপস্থিত হয়েন। চন্দ্রের ন্যায় প্রিয়দর্শন ও ব্ৰহ্মার ন্যায় প্রভাসম্পন্ন এই সমস্ত ব্যক্তি, অন্যান্য মহাত্মাগণ, ভৃগু ও সপ্তর্ষিমণ্ডল তথায় আগমন করিয়া থাকেন। হে রাজনী! আমি এই নলিনরাজিবিরাজিত ইন্দ্রসভা পূর্ব্বে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছি। এক্ষণে যমের সভা বৰ্ণনা করিতেছি, শ্রবণ করুন।