1 of 4

১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প

ইঁদুর আর নেউলের গল্প

শাহরাজাদ বলে, যো হুকুম, জাঁহাপনা? এবার আপনাকে ইঁদুর আর নেউলের গল্প শোনাচ্ছি :

একটি স্ত্রীলোক ক্ষীরার বিচির ডাল বিক্রি করতো। একদিন এক খদের এসে ফরমাস দিয়ে গেলো, ডাক্তার তাকে ক্ষীরার বিচির ডাল খেতে বলেছে। শুনলাম, মেয়ে, তোমার কাছে নাকি ভালো জাতের ডাল পাওয়া যায়। তা আমাকে সেরা পাঁচেক বানিয়ে দাও।

মেয়েটি বলে, কাল এসো পাবে।

সেদিন সে খুব যত্ন করে ডালগুলো বানিয়ে একটা ডালায় করে তক্তপোশের নিচে রেখে দিলো।

ঐ পাড়ারই অন্যবাড়ির একটা নেউল এক ফাঁকে তার ঘরে ঢুকে খানিকটা ডাল খেয়ে পালিয়ে গেলো। সকালবেলায় মেয়েটি যখন ডালা বের করে দেখে ডালের দানা অনেক কম। মেয়েটি গজ গজ করতে থাকে, ইঁদুরগুলোর মুখে আগুন—মুখে আগুন। সব খেয়ে কেটে শেষ করে দিলো। বেড়ালটা যদিন বেঁচে ছিলো একটু শান্তিতে ছিলাম। যেই সে মরে গেলো, আমনি তোদের দৌরাত্ম্য আরম্ভ হয়েছে। দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি। এখন আমি খদেরকে কি বলি?

ঘরের পিছনে আডি পেতে নেউল সব শুনলো মেয়েটির কথা। তাহলে মেয়েছেলেটা ইঁদুরগুলোকেই সন্দেহ করেছে

এইভাবে প্রায় রোজই মেয়েটি ডাল তৈরি করে রেখে দেয়। আর রোজই নেউলটা এসে খানিকটা সাবাড় করে দিয়ে যায়।

মেয়েটি তো রেগে কাই। ঝাঁঝালো কণ্ঠে গালাগালী দিতে থাকে—ওরে ইদুরের বাচ্চা ইঁদুর, আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন, তাই আমি দেখবো। সারা রাত আজ আমি জেগে বসে থাকবো, দেখি বা ধন কখন তুমি আসো।

নেউল দেখলো এই মউকা। সে ইদুরের কাছে গিয়ে বললো, ইঁদুর ভায়া ইঁদুর ভায়া, কেমন আছো?

ইঁদুর বলে এই চলে যাচ্ছে আর কি?

—তোমাকে একটা সুখবর দিতে এলাম, ভাই। আজ রাতে তোমাদের মালকিন ক্ষীরার বিচির ডাল তৈরি করেছে। বড় মজাদার খানা। তা তোমায় কানে কানে বলি, তক্তপোশের তলায় একটা ডালায় করে রেখে দিয়েছে। ইচ্ছে করে তো খেয়ে আসতে পারো। আমি এইমাত্র খেয়ে এলাম, বডিয়া চিজ।

ইঁদুর বলে, তুমি আমার সত্যিকারের দোস্ত। তা না হলে এমন সুখবর কেউ দেয়? আমি এখুনি যাচ্ছি। খেয়ে আসি চারটে।

ইঁদুর মনের আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কোনও দিকে দৃকপাত না করে সে তক্তপোষের তলায় ঢুকে কুট কুট করে ডালের দানা খেতে থাকে। এদিকে নেউলটা ঘরের দাওয়া দিয়ে মালকিনের সামনে দিয়ে চলে যায়। মালকিন ভাবে নেউলটা ঘর থেকে বেরুলো না তো। একটা লাঠি হাতে ঘরে ঢুকে দেখে মহা আনন্দে ইঁদুর তার এত পরিশ্রমের ডালগুলো খেয়ে শেষ করছে। লাঠির একঘায়ে ইঁদুর ধরাশায়ী হয়। ওদিকে নেউল হাততালি দিয়ে নেচে ওঠে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *