৫. পরিশিষ্ট

পরিশিষ্ট

পরিশিষ্ট ১

জয় বাংলা
(কথিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের প্রচারপত্র)
[অক্টোবর ১৯৭০]

সাধারণ নির্বাচন অত্যাসন্ন।

এই নির্বাচন ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং বাংলার মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের একমাত্র পরীক্ষা। আর সে পরীক্ষার ভিত্তি হলো ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা।

এই নির্বাচনকে গণভোট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গণভোটের অর্থ কেবল ক্ষমতাসীন পরিষদের ৩০০ জনের মধ্যে ১৫০ জনের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নয়, তার সঙ্গে সারা দেশের মোট ভোটের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও বটে। তাহলেই সে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে জাতির পক্ষ থেকে রায় বলে গণ্য করা হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ তথা যুবসমাজের দায়িত্ব সবচেয়ে অধিক, কারণ আমাদের মতো অনুন্নত দেশে ছাত্ররাই সবচেয়ে বেশি প্রগতিবাদী ও সংগ্রামী। সে জন্যই সাধারণ মানুষের কাছে ছাত্ররা শ্রদ্ধার পাত্র।

প্রত্যেক ছাত্রকে নিজ দায়িত্বে অত্যন্ত স্পষ্ট ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে।

.

প্রত্যেক ছাত্রের কর্তব্য নিম্নরূপ :

ক. প্রত্যেককে নিজ নিজ থানা কার্যক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে হবে।

খ. সমকক্ষ একাধিক ছাত্র এক থানার অধিবাসী হলে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে একই থানায় কাজ করতে হবে।

গ. প্রতিটি সভা-সমিতি ও কর্মিসভায় যোগ দিয়ে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করতে হবে।

ঘ. কেবল বক্তৃতা বা বিবৃতির মধ্যে কাজকে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্দোলন-উৎসাহী কর্মী সৃষ্টি করতে হবে।

ঙ. উৎসাহী কর্মীদের নিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা, আন্দোলনের গতিধারা আপসমূলক মনোভাব সৃষ্টির পরিবর্তে সংগ্রামী মনোভাবের অনুপ্রেরণা, সর্বোপরি ভবিষ্যৎ আন্দোলন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য থানাভিত্তিক ও গ্রামভিত্তিক কর্মীদের নিয়ে একটি সাংগঠনিক রূপ দিতে হবে। এই সংগঠন কেবল আন্দোলন পরিচালনার জন্যই গঠন করতে হবে।

চ. এই সংগঠন সর্বদা ঢাকা থেকে ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

.

এই সংগঠনের দায়িত্ব নিম্নরূপ

ক. ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতার দ্বারা আদর্শ ও আন্দোলনের প্রতি ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করবে।

খ. গ্রামে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা, কৃষকদের সমস্যাভিত্তিক আলোচনা ও সমাধানের রূপরেখা নির্ধারণ করে এবং কৃষকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করবে।

গ. শ্রমিকদের মধ্যে অনুরূপভাবে আলোচনা করবে ও শ্রমিকদের সংগঠিত করবে।

ঘ. শিক্ষিত সমাজের মধ্যে, অর্থাৎ শিক্ষক, বিভিন্ন অফিসের কর্মচারী, উকিল মোক্তারদের মধ্যেও রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা করবে।

ঙ. প্রতিটি স্কুলের কমপক্ষে একজন শিক্ষককে আদর্শে অনুপ্রাণিত করে সে অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে।

চ. বেকার যুবকদের সংগঠিত করতে হবে।

ছ. প্রয়োজনীয় প্রচারপত্র ও প্রাচীরপত্র বিলি করবে।

.

সংগঠন নিম্নরূপভাবে গড়তে হবে

ক. প্রতিটি থানায় ৫, ৭ বা ৯ সদস্যবিশিষ্ট যুবকদের নিয়ে কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি সমগ্র থানার দায়িত্বভার পালন করবে।

খ. থানা কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩, ৫ বা ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হবে।

গ. থানা ও ইউনিয়ন কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রতিটি গ্রামে এক বা একাধিক যুবককে গ্রামের দায়িত্ব দিতে হবে।

ঘ. এই কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের, অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বরের আগে অবশ্যই গঠিত হতে হবে।

.

উল্লিখিত গঠিত কমিটির প্রতি নির্দেশ

ক. জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও যেকোনো কারণে ৬ দফা ও ১১ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণীত না হলে বাঙালির মুক্তি আন্দোলনই হবে পরবর্তী কর্মসূচি এবং পশ্চিমা শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর সঙ্গে সেখানেই প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু।

খ. সে সংগ্রাম নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীকালে অসহযোগ, ট্যাক্স বন্ধ, পণ্য বর্জন ইত্যাদি আন্দোলনে পরিণত হবে এবং আরও পরে রক্ত দেওয়া ও রক্ত নেওয়ার পর্যায়ে উপনীত হবে। সে জন্য প্রত্যেককে মানসিক ও দৈহিক দিক থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

গ. ৬ দফা ও ১১ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণীত হলেও বাংলা ও বাঙালির স্বাধীন সত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরূপভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

ঘ. পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত না হলে বাংলা ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকবে না।

.

কেন নির্বাচন চাই

ক. জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা প্রমাণ করতে হবে, বাংলার মানুষ একবাক্যে ৬ দফা ও ১১ দফার পক্ষে।

খ. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও ৬ দফা ও ১১ দফা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী স্বীকার না করলে দেশবাসী জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট হবে যে পশ্চিমারা বাঙালিকে গোলাম হিসেবে শাসন করতে চায় এবং দেশবাসী বুঝবে যে সে ক্ষেত্রে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামই একমাত্র খোলা পথ।

গ. বিশ্বের মানুষ ও বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বুঝবে যে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় না মানার অর্থ বাংলার সাত কোটি মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা। এবং সে ক্ষেত্রে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সমর্থনদান করতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নীতিগতভাবে বাধ্য। বর্তমান বিশ্বে বিশ্বজনমতের সমর্থন ছাড়া মুক্তিসংগ্রাম প্রায় অসম্ভব।

ঘ. নির্বাচন অর্থ, জনমত অর্থ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থ হলে অনিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করা যায়। এ ক্ষেত্রে অনিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি দেশবাসীর যে সমর্থন তা স্বপ্রমাণিত। আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে লিপ্ত, অর্থাৎ বাংলা ও বাঙালির সার্বিক মুক্তি আন্দোলন–এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল বক্তব্য চারটি :

১. বিশ্বের মানচিত্রে ৫৬ হাজার বর্গমাইলবিশিষ্ট একটি আবাসভূমির স্বীকৃতি।

২. সাত কোটি মানুষের বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সভ্যতার পরিপূর্ণ বিকাশ।

৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির রূপরেখা নির্ণয়।

৪. প্রতিটি মানুষের জাগ্রত গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

ওপরে বর্ণিত আদর্শ কর্মসূচি ও সংগঠন মোতাবেক সারা দেশে আগামী দিনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং এ দেশে বর্তমানে প্রতিটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও শ্রমিক সংগঠনের নির্দেশে আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে।

জাতীয় নেতার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস, আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, সর্বোপরি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেক কর্মীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

শত প্রতিবন্ধকতা, লোভ-লালসা, আত্মকলহ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ আমাদের ধ্যানধারণা, ‘জয় বাংলা’ কেবল একটি স্লোগান নয়, ‘জয় বাংলা একটি আদর্শ। জয় বাংলা আমাদের মূল উৎস। জয় বাংলা’ আমাদের চলার পথের শেষ প্রান্ত। জয় বাংলা।

.

পরিশিষ্ট ২

বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ১২ দফা দাবি
[নভেম্বর ১৯৭৫]।

১. আমাদের বিপ্লব নেতা বদলানোর জন্য নয়। এই বিপ্লব গরিবের স্বার্থের জন্য। এত দিন আমরা ছিলাম ধনীদের বাহিনী। ধনীরা তাদের স্বার্থে আমাদের ব্যবহার করেছে। ১৫ আগস্ট তার প্রমাণ। তাই এবার আমরা ধনীদের দ্বারা ধনীদের স্বার্থে অভ্যুথান করিনি। আমরা বিপ্লব করেছি। আমরা জনতার সঙ্গে এক হয়ে বিপ্লবে নেমেছি। আমরা জনতার সঙ্গে থাকতে চাই। আজ থেকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী হবে গরিবশ্রেণির স্বার্থরক্ষার একটি গণবাহিনী।

২. অবিলম্বে রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

৩. রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।

৪. অফিসার ও জওয়ানদের ভেদাভেদ দূর করতে হবে, অফিসারদের আলাদাভাবে নিযুক্ত না করে সামরিক শিক্ষা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ণয় করতে হবে।

৫. অফিসার ও জওয়ানদের একই রেশন ও একই রকম থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. অফিসারদের জন্য আর্মির কোনো জওয়ানকে ব্যাটম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা চলবে না।

৭. মুক্তিযুদ্ধ, গত অভ্যুত্থান ও আজকের বিপ্লবে যেসব দেশপ্রেমিক ভাই শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ব্রিটিশ আমলের আইনকানুন বদলাতে হবে।

৯. সব দুর্নীতিবাজের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিদেশে যারা টাকা জমিয়েছে, তাদের টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে।

১০. যেসব সামরিক অফিসার ও জওয়ানকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

১১. জওয়ানদের বেতন সপ্তম গ্রেড হতে হবে এবং ফ্যামিলি অ্যাকমডেশন ফ্রি হতে হবে।

১২. পাকিস্তানফেরত সামরিক বাহিনীর লোকদের ১৮ মাসের বেতন দিতে হবে।

নিবেদক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপ্লবী সৈনিকবৃন্দ

.

পরিশিষ্ট ৩
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি

গত ২৬, ২৭, ২৮ ও ৩১ অক্টোবর ১৯৭৬ তারিখে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির বর্ধিত সভায় আমাদের বিগত দিনের কার্যাবলির সফলতা বিফলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুলভ্রান্তির ওপর বিশদ আলোচনা ও পর্যালোচনা। অনুষ্ঠিত হয়। সুদীর্ঘ পর্যালোচনায় যে বিষয়গুলো বেরিয়ে আসে তা নিম্নরূপ :

১. আমাদের পার্টির সংগঠন (COC, SC, ECC) ও সর্বস্তরের ফোরাম ও গণসংগঠনের মধ্যে মারাত্মক ধরনের স্থবিরতা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থবিরতার অর্থই হলো গতিহীনতা। গতিহীনতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো সংগঠনের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের অভাব। অস্থিরতার মূল কারণ হলো সঠিক বিপ্লবী চেতনা ও উপলব্ধির কোনো বিমূর্ত রূপ নেই। তত্ত্ব ও প্রয়োগের সমন্বয় অর্থাৎ তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রয়োগ এবং প্রয়োগের ভিত্তিতে তত্ত্বকে সমৃদ্ধ করা, অন্য কথায় বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণই হলো বিপ্লবী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বিপ্লবকে তার নিজস্ব গতিতে বিকশিত হতে না দিয়ে তাৎক্ষণিকতার দ্বারা অভিভূত ও পরিচালিত হয়ে বিপ্লব সাধনের মনোভাবই হলো অস্থিরতা। মনে রাখতে হবে, অন্ধবিশ্বাসপ্রবণতা (DOGMATISM) যেমন মার্ক্সবাদ নয়, ঠিক তেমনি শুধুমাত্র প্রয়োগও (PRACTICE) মার্ক্সবাদ নয়। যেকোনো বস্তুর মধ্যে বিকাশের শর্ত হিসাবে দ্বন্দ’ কাজ না করলে স্থবিরতা ও অস্থিরতা নেমে আসা খুবই স্বাভাবিক। পার্টি সংগঠন, গণসংগঠন এবং সেই সঙ্গে জনগণ প্রতিমুহূর্তেই একেকটি বস্তুরূপ গ্রহণ করে। পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠনসমূহের স্থবিরতা ও অস্থিরতা কাটিয়ে উঠে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে উভয়কে গতিশীল ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে নিম্নলিখিত মার্ক্সীয় পন্থসমূহ অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে : ক. পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠনসমূহের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের কথা

স্মরণ রেখেই (উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক পরস্পর সম্পূরক) তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহকে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও পরিচালনা করতে হবে। আরও বিস্তারিতভাবে বলা যেতে পারে যে পার্টির অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমগ্র সংগঠনের, নেতৃত্বের সঙ্গে নেতৃত্বের, নেতৃত্বের সঙ্গে কর্মীদের উঁচু স্তরের সঙ্গে নিম্নস্তরে; পার্টির সঙ্গে জনগণের, পার্টির সঙ্গে গণসংগঠনসমূহের এবং অনুরূপভাবে গণসংগঠনের অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বন্দ্বসমূহের স্বাভাবিক বিকাশধারাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা ও পরিচালনার মাধ্যমেই কেবলমাত্র একটি সঠিক, স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত শক্তির সৃষ্টি হতে পারে। আর সেই গতিই হলো একটি সঠিক মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী পার্টির প্রাণ। সংগঠনের অভ্যন্তরে মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সমালোচনা-আত্মসমালোচনা অর্থাৎ ‘ঐক্য-সমালোচনা-ঐক্য এবং ‘ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য এই নীতির ভিত্তিতেই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

খ. গণসংগঠনসমূহে স্থবিরতা নেমে আসার মূল কারণ হিসেবে আমরা লক্ষ করেছি গণসংগঠনসমূহের স্ব স্ব ‘স্বাধীন অস্তিত্বের ক্রম বিলুপ্তি এবং ক্রমবর্ধমান হারে পার্টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, পরস্পরের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের অভাব, কর্মীদের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগতা, গণসংগঠনসমূহের বাস্তব, স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত ভূমিকার অনুপস্থিতি ইত্যাদি।

এমতাবস্থায় প্রতিটি গণসংগঠনকে সঠিক ভিত্তির ওপর, স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড়াতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই পার্টি সংগঠনের লেজুড়সর্বস্ব হয়ে থাকা চলবে না। পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠনের মধ্যে মূল রাজনৈতিক লাইনের ভিত্তিতে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে মাত্র।

২. আমাদের রাজনৈতিক লাইন এবং কেন্দ্র কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা ও সিদ্ধান্তসমূহ মূলত সঠিক কিন্তু রাজনৈতিক লাইনের সঠিক উপলব্ধি ও প্রয়োগক্ষেত্রে ব্যর্থতা এবং সংগঠনের অভ্যন্তরে ও বাহিরে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সংগ্রামের অভাবে সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত কেন্দ্রিকতা ও গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা গড়ে ওঠেনি এবং জনগণের মধ্যে আন্দোলনের বিস্তৃতির পরিবর্তে সংগঠন ও নেতৃত্ব ক্রমশ সংকুচিত হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সংগঠন বা সংগঠনসমূহে স্থবিরতা নেমে এসেছে এবং অস্থিরতা কাজ করছে। যার ফলে আমরা বহু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহের চরিত্র ও কারণ নিম্নরূপ :

ক. আমাদের রাজনৈতিক লাইন সঠিক হওয়া সত্ত্বেও এর সঠিক উপলব্ধির অভাবেই পার্টির নীতিমালা এবং সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে। রাজনৈতিক লাইনের সঠিক উপলব্ধির অভাব কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতা, সংগঠক ও কর্মী বাহিনীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে বলে বৈঠক মনে করে। সঠিক জ্ঞানের বিকাশ সম্পর্কে মার্ক্সীয় বিজ্ঞান বলে : U+P+R। এখানে U হলো UNDERSTANDING (পড়া, শোনা, দেখা), P হলো PRACTICE (বাস্তব প্রয়োগ) এবং R হলো REALISATION (উপলব্ধি)। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক লাইন সম্পর্কে নিছক একটি সাধারণ ধারণা নিয়ে আমরা প্রয়োগক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা আমাদের সেই ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি সাধারণ উপলব্ধির জন্ম নিয়েছে মাত্র।

খ. কমরেড মাও সেতুং আমাদের শিখিয়েছেন যে রাজনৈতিক লাইনের সঠিক উপলব্ধির ওপরই বিপ্লবের সফলতা নির্ভর করে। আর সঠিক রাজনৈতিক লাইনের ভিত্তিতে সঠিক আন্দোলন ও সঠিক সংগঠন গড়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের নির্ধারিত রাজনৈতিক লাইনের সঠিক উপলব্ধির অভাবহেতু আমাদের মতো অনুন্নত পুঁজিবাদী দেশের অর্থনীতিতে পেটি-বুর্জোয়া অর্থনীতির প্রাধান্য যে সবচেয়ে বেশি (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পৃথক দলিলে প্রকাশিত হবে) এ কথা আমরা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছি। অর্থনীতিতে পেটিবুর্জোয়া প্রাধান্যপূর্ণ একটি দেশে যে ধরনের সংগঠন ও আন্দোলন হওয়া উচিত, তা-ও আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। এমতাবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত সাংগঠনিক শক্তি গড়ে উঠেছে, তা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। এই একই কারণে বিপ্লবের অগ্রগামী বাহিনীরূপে শ্রমিকশ্রেণিকে (কারখানা শ্রমিক ও খেতমজুরদেরকে) মারাত্মকভাবে অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে। কারখানা শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করা এবং আন্দোলনে টেনে। আনার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের অপরিহার্যতা অনুভব করা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের সর্বহারা বিপ্লবী চেতনাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শ্রমিক সংগঠন এবং ক্ষেতমজুর সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক ও খেতমজুরদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের মধ্যে শ্রেণিচেতনা গড়ে তোলার বাস্তব প্রক্রিয়া (যা সাম্যবাদ-এর বিভিন্ন সংখ্যায় বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করা হয়নি বলেই আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সত্যিকার সম্পৃত্তি ঘটেনি।

গ. কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে এবং খেতমজুরসহ গরিব ও মাঝারি কৃষকদের (পেটি-বুর্জোয়া) নিয়ে সংগঠন গড়ার যে প্রক্রিয়া নির্দেশ করা হয়েছে (সাম্যবাদ-এর বিভিন্ন সংখ্যায় দ্রষ্টব্য), তা-ও আমরা বাস্তব উপলব্ধির অভাবে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারিনি। পেটি বুর্জোয়াদের অন্যান্য অংশকে যথোপযুক্ত সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলনের সহযোগী করে তুলতেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

ঘ. সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ এবং সংশোধনবাদবিরোধী ব্যাপক জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতেও আমরা সমর্থ হইনি।

ঙ. আমাদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী দ্বন্দ্বের মূল কথাই হলো ‘পুঁজি বনাম শ্রম’ অর্থাৎ ‘বুর্জোয়া বনাম সর্বহারা-আধা সর্বহারা শিল্প শ্রমিক ও ক্ষেতমজুর-পেটি বুর্জোয়া’–এই রাজনৈতিক লাইনের আলোকে শত্রু-মিত্র সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সঠিক সংগঠন ও আন্দোলন রচনা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বুর্জোয়ারা অর্থাৎ সরকার এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখলদার ও তাদের সহযোগীরা আমাদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী আমাদের প্রধান শত্রু। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস, লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ও সংশোধনবাদীরা আমাদের মতাদর্শগত সংগ্রামের লক্ষ্যস্থল (DIRECTION OF THE MAIN BLOw)। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মতাদর্শগত সংগ্রাম সর্বদাই অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজ ও জনমতের ওপর সর্বাধিক, তাদেরকে আমাদের মিত্র হিসাবে সংগঠন ও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। লেনিন এ কারণেই শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর (WORKERS PEASANTS ALLIANCE) ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এছাড়াও সাম্রাজ্যবাদের পতন ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগে যেহেতু বুর্জোয়ারা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারে না, সেহেতু বুর্জোয়ারা কোনো না কোনো সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তি বা শক্তিসমূহের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য। এই কারণে আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার দিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। এমনকি এ কথাও কোনো সময় বিস্মৃত হলে চলবে না যে যেকোনো প্রকার বৈদেশিক অর্থাৎ ভারত-রুশ চক্রের আধিপত্যবাদী সম্প্রসারণবাদী ও সংশোধনবাদী হামলা অথবা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী কালো হাত যখন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইবে, তখন জাতীয় বুর্জোয়াদেরকে মিত্র হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সংশোধনবাদবিরোধী সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যের ভিত্তি হবে শ্রমিক-কৃষকের ঐক্য, আমাদের দেশের জন্য যার রূপ হবে ‘জনগণের ঐক্য’। এই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলনকে এমনভাবে রচনা করতে হবে, যেন অতীতের ন্যায় আন্দোলনের সুফল একচেটিয়াভাবে কেবল বুর্জোয়ারাই ভোগ না করে, বরং শ্রমিক-কৃষকের নেতৃত্বেই বেশি শক্তিশালী হয়।

এককথায় বলতে গেলে আমাদের আন্দোলনের বর্তমান ধারাকে আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি অর্থাৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক শক্তিভিত গড়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিটি আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক শক্তিভিত গড়ে না তোলার চিন্তা সুবিধাবাদ’, আবার সমাজতান্ত্রিক শক্তিভিত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাদ দেওয়া বাম। হঠকারিতা’। লেনিনের মত অনুসারে এবং আমাদের দেশের বাস্তব প্রয়োজন অনুযায়ী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর্যায়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসম্পূর্ণ অংশ সম্পন্ন করার জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এমনভাবে রচনা করতে হবে যেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষিত ও সুসংগঠিত হয় এবং তার অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক অনুভূতি, চেতনা ও শক্তিভিত গড়ে ওঠে এবং সর্বহারা শ্রেণির নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

কিন্তু উপরোক্ত সবগুলো দিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে আমাদের রাজনৈতিক লাইনকে আমরা আমাদের বিগত দিনের সংগঠন ও আন্দোলনের মধ্যে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছি। (এই বৈঠক বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধতর উপলব্ধির আলোকে সংগঠন ও আন্দোলনের যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, তা একটি পৃথক দলিলে প্রকাশ করা হবে)।

৩. এই বৈঠক আরও মনে করে যে আমাদের রাজনৈতিক লাইনের সমৃদ্ধতর উপলব্ধি কার্যকর করতে, এই উপলব্ধির আলোকে প্রণীত সঠিক আন্দোলন ও সংগঠনের রূপরেখাকে বাস্তবায়িত করতে এবং সংগঠনের অভ্যন্তরে স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক গতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অবস্থিত দ্বন্দ্বসমূহকে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও পরিচালনা করতে নেতৃত্বের বর্তমান কাঠামো (সর্বস্তরের) যথোপযুক্ত ও পর্যাপ্ত নয়। তাই এই বৈঠক আগামী কাউন্সিল সভার অনুমোেদন সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি, স্ট্যান্ডিং কমিটি ও জরুরি স্ট্যান্ডিং কমিটিকে বাতিল ঘোষণা করে। জেলা, মহকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ফোরামসমূহও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফ্রন্টসমূহের সমন্বয় সাধনের জন্য বিভিন্ন ফ্রন্ট থেক প্রতিনিধি নিয়ে সর্বস্তরে কেবলমাত্র একটি করে সমন্বয় কমিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়। এই বৈঠক বর্তমান স্থবিরতা ও অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা করে গতিশীল ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান উপলব্ধির ভিত্তিতে সংগঠনের একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে। তিনি এ ব্যাপারে পার্টির যেকোনো সদস্যের বা একাধিক সদস্যের সহযোগিতা নিতে পারবেন এবং যেকোনো দায়িত্ব যেকোনো সদস্য বা একাধিক সদস্যের ওপর অর্পণ করতে পারবেন। কোনো মার্ক্সবাদীই সমস্যাকে এড়িয়ে যায় না এবং এড়িয়ে যাওয়া উচিতও নয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রস্তাবাবলি সুপারিশ আকারে পেশ করা হলো :

১. উপরোক্ত পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠনের ক্ষেত্রে গতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে :

ক. পার্টি পরিচালনার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে একটি ক্ষুদ্র ‘পরিচালনা পরিষদ’ কাজ করবে। এই পরিচালনা পরিষদের উদ্দেশ্য হবে রাজনৈতিক লাইনের ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করা এবং বাংলাদেশের সর্বত্র তড়িৎগতিতে রাজনৈতিক লাইন এবং নীতি ও কৌশলসমূহকে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে প্রতিফলিত করা।

১. ৩১ তারিখে (COC) বর্ধিত সভায় ‘একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়। যে একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়, তিনি ২৬, ২৭, ২৮ তারিখে (CoC) বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকলেও ৩১ তারিখে অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে পারেননি। সে কারণে খসড়া প্রস্তাবের তিন নং ধারার একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত’সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি তাঁর মত দিতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৩ সদস্যবিশিষ্ট এক সভায় তিনি নিজেই একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্তকরণ বিষয়ে তাত্ত্বিক দিক উল্লেখ করে আপত্তি উত্থাপন করেন। উক্ত ২৩ জনের এই বৈঠক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে মনে করে যে একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্তকরণ সংক্রান্ত বিষয়টি তাত্ত্বিক দিক থেকে অপর্যাপ্ত অর্থাৎ একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্তকরণ সিদ্ধান্তটি প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত তাত্ত্বিক ভিত্তিহীন। এই সভা ৩১ তারিখের ‘একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্তকরণ প্রশ্নটিকে সংগঠনের সর্বস্তরের মতামতের জন্য খসড়া প্রস্তাবে উল্লেখ করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

২. বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিচালনা পরিষদ গঠন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফ্রন্টসমূহের স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন ও স্বকীয়তা বজায় রেখে ফ্রন্টসমূহের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা ও সমন্বয় সাধনের জন্য সকল ফ্রন্ট থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে।

খ. আমাদের সংগঠনসমূহের মধ্যে গতি সঞ্চার।

গ. জনগণের নিকট থেকে জনগণের নিকট (FROM MASS TO MASS) এই নীতির ভিত্তিতে পার্টিকে সর্বহারার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এবং জনগণ ও জনজীবনের সঙ্গে পার্টি নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পার্টির ভেতরের প্রতিটি নেতা ও সদস্যকে কোনো না কোনো ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নির্দিষ্ট কোনো না কোনো এলাকায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।

২. আমাদের সমস্ত গণসংগঠন যেমন জাসদ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ (ক্ষেতমজুর সমিতিসহ) প্রভৃতি স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত ভূমিকা ও স্বকীয়তা বজায় রাখবে। গণসংগঠনসমূহ যেন কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক লাইন ভঙ্গ না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। স্বাধীন, স্বকীয় ও স্বায়ত্তশাসিত ভূমিকা বজায় রাখার জন্য গণসংগঠনসমূহকে অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে :

ক. পার্টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর সকল প্রকার নির্ভরশীলতা সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।

খ. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে হবে। মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে যে আন্তর্জাতিকতাকে বাদ দিয়ে যেমন মার্ক্সবাদ হয় না, তেমনি কেবলমাত্র জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেও মার্ক্সবাদ বলা যায় না। মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী আন্দোলনের মূল কথা হলো, ‘মর্ম হবে আন্তর্জাতিক, কিন্তু রূপ হবে জাতীয়’ (THE CONTENT IS INTERNATIONAL, BUT FORM IS NATIONAL)

গ. গণসংগঠনসমূহকে স্বাধীনভাবে প্রতিটি বিষয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ও জাতীয় ভিত্তিতে আন্দোলন রচনা ও পরিচালনা করতে হবে।

ঘ. গণসংগঠনসমূহকে নিজস্ব সাহিত্য ও প্রচারধর্মী কাজ যেমন স্ব স্ব ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র, নীতিনির্ধারণী পুস্তিকা ও প্রচারপত্র, পোস্টার, দেয়ালপত্রিকা ইত্যাদি নিজ নিজ দায়িত্বে করতে হবে।

ঙ. নিজস্বভাবে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে সংগঠনের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে হবে। অর্থসংক্রান্ত ব্যাপার কোনোক্রমেই পার্টি নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল হওয়া চলবে না।

৩. আমাদের নির্ধারিত রণনীতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সাহিত্য ও প্রকাশনার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি শক্তিশালী সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করা হবে। এই বোর্ড শুধুমাত্র তাত্ত্বিক ভিত্তিমূলক সাহিত্য ও প্রকাশনার দায়িত্বেই নিয়োজিত থাকবে।

৪. অন্যান্য বিশেষ প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও ফ্রন্ট গড়ে তোলা হবে।

৫. যেকোনো প্রকার ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৬. উপরোক্ত ব্যবস্থাসমূহ তিন মাসের জন্য কার্যকরী থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বা অনুরূপ কোনো সময়ের মধ্যে সংগঠন ও আন্দোলনের সত্যিকার প্রতিনিধিত্বমূলক কাউন্সিল আহ্বান করা হবে এবং সামগ্রিক অবস্থার পূর্ণ পর্যালোচনা করে সমস্ত ব্যাপারে ব্যাপক ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

ওপরে বর্ণিত পর্যালোচনা থেকে এ কথা সহজেই অনুমেয় যে দেশ, জাতি ও সংগঠনের বর্তমান নাজুক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও সারা দেশ থেকে আগত সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়েই এ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে, তবুও আমরা মনে করি যে এই সিদ্ধান্তসমূহের তাত্ত্বিক সঠিকতা, প্রয়োজনীয়তা ও প্রায়োগিক বাস্তবতা বিচারের দায়িত্ব কেবল যারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদেরই নয়, বরং সংশ্লিষ্ট সকলের। পার্টি, গণসংগঠন এবং সমস্ত সদস্যের সমষ্টিগত জ্ঞানই (COLLECTIVE KNOWLEDGE) হবে আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রাথমিক শর্ত। তা না হলে আদর্শগত কেন্দ্রিকতা ও গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ কোটারিগত সিদ্ধান্তে পরিণত হবে। সুতরাং আগামী ৩০শে নভেম্বর সকল সদস্য (থানা পর্যন্ত), কাউন্সিলের সকল সদস্য এবং গণসংগঠনের থানা পর্যায় পর্যন্ত সকল কমিটি ও সদস্য ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্টিগতভাবে ওপরের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে লিখিত মতামত স্ব স্ব সংগঠনের চ্যানেলের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে প্রেরণ করবেন। মৃত্যুজনিত বা মারাত্মক ধরনের অসুখ ছাড়া অন্য কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি বা কমিটি মতামত পাঠাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কমিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মতামত প্রেরণের সময় মনে রাখত হবে যেন মতামত যথাযথ বাস্তব, সংক্ষিপ্ত এবং পরামর্শমূলক হয়।

.

পরিশিষ্ট ৪
যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন

আ স ম আবদুর রব: ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে জাসদের একটি অংশের সভাপতি। আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৪

আখতার হুসেন : শিশুসাহিত্যিক। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

আবদুর রাজ্জাক: ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সাবেক মন্ত্রী। অক্টোবর ১৯৮৩

আবু আলম মো. শহীদ খান : ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। সাবেক স্থানীয় সরকারসচিব। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

আবু করিম : ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। সাবেক তথ্যসচিব। ১৯ অক্টোবর ২০১৮

আবু হেনা : চিকিৎসক। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। ১৫ এপ্রিল ২০১৬

আমানউল্লাহ : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক। ১৬ অক্টোবর ২০১৯

আমির হোসেন আমু : ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগের সাবেক নেতা। সাবেক মন্ত্রী জাতীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। ৪ জুন ২০১৯

আশরাফ হোসেন : ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের সংগঠক। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে জামালপুরের একটি আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০ নভেম্বর ২০১৮

এম এ করিম: ছাত্রলীগ, বিএলএফ ও জাসদের সংগঠক। পরমাণু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ১১ মে ২০২০

এস এম ইউসুফ : ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি, আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সদস্য, আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, অধুনা লুপ্ত বাকশালের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২১ অক্টোবর ২০১৫

কামাল উদ্দিন আহমেদ: ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। তিতুমীর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি। বর্তমানে ব্যবসায়ী। ৯ জুন ২০১৯

খায়ের এজাজ মাসুদ: ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। আইনজীবী। ১৬ জুলাই ২০১৯

খোদা বখশ চৌধুরী : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। ২ অক্টোবর ২০১৮

জাফরুল্লাহ চৌধুরী : চিকিৎসক। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি। ১ আগস্ট ২০১৮

তোফায়েল আহমেদ : ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী। জাতীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বদিউল আলম : ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে সাংবাদিক। ৮ জুন ২০১৯

মনিরুল ইসলাম : ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। জাতীয় শ্রমিক জোটের এক অংশের সাবেক সভাপতি। মে-জুন ২০১৪।

মনিরুল হক চৌধুরী: ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য। ১৩ অক্টোবর ২০১৮

পংকজ ভট্টাচার্য : পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মোজাফফর) সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ঐক্য ন্যাপ-এর সভাপতি এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানস পাল : নির্বাহী সম্পাদক, ত্রিপুরা টাইমস, আগরতলা। প্রদায়ক, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং দ্য লাইমস (ইতালি)। দ্য আই উইটনেস: টেলস ফ্রম ত্রিপুরা’স এথনিক কনফ্লিক্টবইয়ের লেখক। ১৬ জুন ২০২০

মাহবুব তালুকদার : বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব। নির্বাচন কমিশনার। ৪ মে ২০১৭

মাহমুদুর রহমান মান্না: ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক। ৬ জুন ২০১৯

মাজহারুল হক টুলু : জাসদের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুবিনুল হায়দার চৌধুরী : জাসদের বিপ্লবী পার্টি গড়ার প্রক্রিয়ার সংগঠক। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে বাসদের (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মো. কামালউদ্দিন : ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি, মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি। সাবেক রাষ্ট্রদূত। ২৮ এপ্রিল ২০২০

মোস্তাফা জব্বার : দৈনিক গণকণ্ঠএর সাবেক স্টাফ রিপোর্টার। বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। ১৬ নভেম্বর ২০১৯

মোস্তফা মোহসীন মন্টু : ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। আওয়ামী যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান। গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ১৭ অক্টোবর ২০১৮

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : বিমানবাহিনীর সাবেক করপোরাল। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সংগঠক। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রায়হান ফিরদাউস: ছাত্রলীগের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ :নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রেজাউল হক মুশতাক : ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। বর্তমানে ব্যবসায়ী। ১৯ এপ্রিল ২০১৮

শামসুজ্জামান খান : বাংলা একাডেমির সভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। ১৯ অক্টোবর ২০১৯

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন : ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। প্রথম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। সাবেক মন্ত্রী। ৯ অক্টোবর ২০১৫

শাহজাহান সিদ্দিকী : ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের সংগঠক আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের সাবেক নেতা আবদুর রহমান সিদ্দিকীর সন্তান। ১৯ নভেম্বর ২০১৮।

শরীফ নুরুল আম্বিয়া : ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি। ১১ জানুয়ারি ২০১৯

শেখ শহীদুল ইসলাম : ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সাবেক মন্ত্রী। জাতীয় পার্টির একটি অংশের সাধারণ সম্পাদক। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সলিল কাহালি: জামালপুর হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক। ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের কর্মী। ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

সিরাজুল আলম খান : ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মুজিববাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক, জাসদের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৪-১৭, ২৮-৩০ এপ্রিল ও ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সুমন মাহমুদ : ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক। সাবেক সাংবাদিক। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সৈয়দ রেজাউর রহমান : ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। আওয়ামী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। আইনজীবী। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬।

স্বাধীন আশরাফুজ্জামান : ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের সংগঠক আখতারুজ্জামান মতি মিয়ার সন্তান। ভাষাসৈনিক মতি মিয়া ফাউন্ডেশনের (জামালপুর) উদ্যোক্তা। ১৮ নভেম্বর ২০১৮

.

পরিশিষ্ট ৫
গ্রন্থপঞ্জি

আহমদ, কামরুদ্দীন (১৯৮২), স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা।

আহমদ, কামরুদ্দীন (২০১৮), বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

আহমদ, ফয়েজ (১৯৯৪), আগরতলা মামলা: শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা

আহমদ, মহিউদ্দিন (২০১৪), জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

আহমদ, মহিউদ্দিন (২০১৬), বিএনপি: সময়-অসময়, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

আহমদ, মহিউদ্দিন (২০১৬), আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০, প্রথমা প্রকাশন,ঢাকা

আহমদ, মহিউদ্দিন (২০১৭), আওয়ামী লীগ: যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

আহমদ শরীফকে লেখা নির্বাচিত পত্রাবলি (২০১৭), সংকলন ও সম্পাদনা : নেহাল করিম, বাংলা একাডেমি, ঢাকা

আহাদ, অলি (২০০৪), জাতীয় রাজনীতি: ১৯৪৫ থেকে ৭৫, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি., ঢাকা।

ইমাম, এইচ টি (২০১৪), বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা

ইসলাম, মনিরুল (২০১৩), জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র, জ্যা পাবলিকেশনস, ঢাকা।

উবান, মেজর জেনারেল (অব.) এস এম (২০০৫), ফ্যান্টামস অব চিটাগাং: দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ, ঘাস ফুল নদী, ঢাকা

উল্লাহ, মাহফুজ (২০১৮), স্বাধীনতার প্রথম দশকে বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সেল একাডেমি, ঢাকা।

উল্লাহ, মাহফুজ (২০১৬), পাঠকের চোখে জাসদ, মধ্যমা, ঢাকা

খসড়া থিসিস (পরিমার্জিত), জানুয়ারি ১৯৭৬

ঘোষ, শিবদাস (১৯৮৯), কেন ভারতবর্ষের মাটিতে এসইউসিআই একমাত্র সাম্যবাদী দল, এসইউসিআই, কলকাতা।

জলিল, মেজর এম এ (১৯৮৩), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাতীয় কমিটির সদস্যদের প্রতি

তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (১৯৮৫), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, পঞ্চদশ খণ্ড, ঢাকা

ধ্রুবতারা, সম্পাদনা : স্বাধীন আশরাফুজ্জামান, ভাষাসৈনিক মতি মিয়া ফাউন্ডেশন, জামালপুর

বঙ্কিম রচনাবলী : উপন্যাসসমগ্র, মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৭৮

বাগমার, আবদুল আজিজ (২০০৬), স্বাধীনতার স্বপ্ন : উন্মেষ ও অর্জন, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (১৯৭২), সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট, শাজাহান সিরাজ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিপ্লবের পর্যায় (খসড়া থিসিসের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা), সম্পাদনাঃ রায়হান আলম, অক্টোবর ১৯৭৫

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত: তথ্য ও দলিল, আসাম ও মেঘালয় (২০১৭), গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : হারুন হাবীব, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা

বেগম, সাহিদা (২০০০), আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা : প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র, বাংলা একাডেমি, ঢাকা

বৈদ্য, ডা. কালিদাস (২০০৫), বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব, কর্মকার বুক স্টল, কলকাতা

মোহাম্মদ ফরহাদ স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ (২০০১), আকণ্ঠ বিপ্লব পিপাসা, ঢাকা

রহমান, আখলাকুর (১৯৭৪), বাংলাদেশের কৃষিতে ধনতন্ত্রের বিকাশ, সমীক্ষণ পুস্তিকা, ঢাকা

রহমান, শেখ মুজিবুর (২০১২) অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ইউপিএল, ঢাকা

রগণা, হায়দার আকবর খান (২০০৫), শতাব্দী পেরিয়ে, তরফদার প্রকাশনী, ঢাকা

রায়, খোকা (১৯৮৬), সংগ্রামের তিন দশক, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ঢাকা

শরীফ, আহমদ (১৯৭০), স্বদেশ অন্বেষা, খান ব্রাদার্স, ঢাকা

শরীফ, আহমদ (১৯৯৮), বিশ শতকে বাঙালী, ঈক্ষণ, ঢাকা; ১৯৯৯,

নবজাতক, কলকাতা; ২০০১, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা।

শরীফ, আহমদ (২০১৩), বাংলা বাঙালি বাংলাদেশ, সংকলক : নেহাল করিম, মহাকাল, ঢাকা

সাম্যবাদ-দুই, তিন, চার, ছয়

সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্রকে রুখে দাঁড়ান, জঙ্গি জনতার ঐক্য গড়ে তুলুন, জাসদ-ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগ-কৃষক লীগ-বিপ্লবী গণবাহিনী

সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ, শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা

সেন, নির্মল (২০১২), আমার জবানবন্দি, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা।

হক, মুহাম্মদ শামসুল (২০১৮), আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি, ইতিহাসের খসড়া, চট্টগ্রাম হাসান, মোরশেদ শফিউল (২০১৪), স্বাধীনতার পটভূমি : ১৯৬০ দশক, অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা

Banerjee, Sashanka S. (2011), India, Mujibur Rahman, Bangladesh Liberation and Pakistan, Aparajta Sahitya Bhaban, Narayanganj

Blood, Archer K (2006), The Cruel Birth of Bangladesh: Memoirs of an American Diplomat, UPL, Dhaka

Dalim, Shariful Haq (2015), Bangladesh: Untold Facts, Jumhoori Publications, Lahore

Government of Pakistan (1959), Commission on National Education, Karachi

Hossain, Kamal (2013), Bangladesh: Quest for Freedom and Justice, UPL, Dhaka

Karim S. A. (2009), Sheikh Mujib : Triumph and Tragedy, UPL, Dhaka

Raghavan, Sinha (2013), 1971: A Global History of the Creation of Bangladesh, Harvard University Press, Massacusetts

Raina, Ashoka (1981), Inside Raw: The Story of India’s Secret Service, Vikas Publishing House, New Delhi

Ramesh, Jairam (2018), Interwined Lives: P. N. Haksar and Indira Gahdhi, Simon & Schuster India, New Delhi

Rehman, I (2017), Himalayan Challenges: India’s Conventional Deterrant and the Role of Special Operations Forces along the Sino-Indian Border, Naval War College Review, Winter 2017

Sinha, D & Balakrishnan, R (2016), Employment of India’s Special Operations Forces, ORE Issue Brief, No. 150, June 2016

Sisson, Richard & Rose, Leo (1990), War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California Press, California

Sobhan, Rehman (2016), Untranqil Recollection: The Years of Fulfilment. Sage, New Delhi The Untold Story of Dr. Abu Hena, interview by Anwar Parvez

Halim, Probe, Issue 5, Volume 13, December 2014

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *