১.১ নিউক্লিয়াসের খোঁজে

পর্ব ১ নিউক্লিয়াস

নিউক্লিয়াসের খোঁজে

শ্রাবণ মাসের ৬ তারিখ শুক্রবার, ২১ জুলাই ১৯৭২। মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবে অঝোরে। কিন্তু অবাক করা সকাল। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, কোথাও সাদা, কোথাও ধূসর। কিন্তু রোদ আছে।

মাত্র সাত মাস হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে। মনটা ফুরফুরে থাকার কথা। ভোর থেকেই মুহসীন হলে উত্তেজনা। ছাত্রলীগের তিন দিনের সম্মেলন শুরু হবে। কয়েকজন সঙ্গীসাথি নিয়ে রওনা দিলাম। পল্টন ময়দানে হাজি চান মিয়া ডেকোরেটরের বানানো বিশাল শামিয়ানার নিচে শুরু হলো সম্মেলন কাঁটায় কাঁটায় ১০টায়। শুরুতে ছিল কিছু আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধন করার কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরীর বাবার। তিনি আসেননি। তার বড় ভাই অধ্যাপক রূপেন চৌধুরী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু তিনি পল্টনে না এসে চলে গেছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ওখানে সম্মেলন চলছে ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের। উদ্বোধন ছাড়াই শুরু হলো আমাদের সম্মেলন।

আ স ম আবদুর রব আর শাজাহান সিরাজ ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তারা কিছু কথাবার্তা বললেন। তারপর ঘণ্টাখানেকের বিরতি। ওই সময় লাল মলাটের একটা বুকলেট বিলি করা হলো। রাজনৈতিক রিপোর্ট। আমরা তখন দিল্লি-মস্কোর চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখার চেষ্টা করছি। পুস্তিকায় তার ছাপ আছে। এক জায়গায় মন্তব্য ছিল, ‘পীত সাম্রাজ্যবাদী চীন।’ এই শব্দচয়ন আমাদের অনেকেরই ভালো লাগেনি। কিন্তু চোখ আটকে গেল অন্য একটি বাক্যে, ‘১৯৬২ সাল থেকেই ছাত্রলীগের ভেতরে একটি নিউক্লিয়াস বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল।’

১৯৬৯ সালের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখেছি, ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি স্রোতধারা। একটির কেন্দ্রে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ ফজলুল হক মনি, অন্যটির মধ্যমণি ছাত্রলীগের আরেক সাবেক নেতা সিরাজুল আলম খান। আমি কেমন করে জানি সিরাজুল আলম খানকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ঘরানার মধ্যে ঢুকে গেছি। আমি জানতাম এমন একটা প্রক্রিয়ার কথা, যেখানে আমরা সরাসরি স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের কথা বলতাম। অন্য গ্রুপের বন্ধুরা আমাদের নিয়ে মশকরা করত। বলত, পাতিবিপ্লবী।

বিজ্ঞানে নিউক্লিয়াস বলতে যা বোঝায়, রাজনীতিতে তার রূপ হয়তো আলাদা। এটা এমন একটা প্রক্রিয়া, যাকে একজন বা একটি ছোট গ্রুপ সঞ্চালন করে, নিয়ন্ত্রণ করে। তখন থেকেই জানি, শেখ মুজিব হলেন আসল নেতা। তার সবচেয়ে আস্থাভাজন শিষ্য হলেন সিরাজুল আলম খান। আমরা শেখ মুজিবকে বলি বঙ্গবন্ধু আর সিরাজুল আলম খানকে বলি সিরাজ ভাই। স্বাধীনতার পর তিনি কলকাতা থেকে ফিরে এলেন। তখন লক্ষ করলাম, অনেকেই তাকে ‘দাদা। বলতে শুরু করেছে। দাদা’ শব্দটির ব্যাপারে আমার অ্যালার্জি ছিল। উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিনকে দাদা নামে সম্বোধন করা হতো।

আমার ধারণা ছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেন, অন্তত প্রকাশ্যে। কিন্তু সিরাজুল আলম খানকে দিয়ে তিনি অনেক কাজ করান। সিরাজ হলেন বঙ্গবন্ধুর ডান হাত। কিন্তু যখন শুনলাম বঙ্গবন্ধু পল্টনের সম্মেলনে অতিথি হিসেবে না এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে গেছেন, তখন বিষম ধাক্কা খেলাম মনে। এটা কী হলো? এমনটা হবে তা তো আগে কেউ বলেনি?

দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়। ছাত্রলীগের এই সিরাজপন্থী গ্রুপ থেকে তৈরি হলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। সংক্ষেপে জাসদ। জাতীয় সমাজতন্ত্র তো হিটলারের আদর্শ ছিল! এই নামের ভূত আমাদের ঘাড়ে চাপল কেন? এর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। কিন্তু নিউক্লিয়াস শব্দটি চাউর হতে থাকল। জানতে পারলাম, এটি ছিল তিনজনের একটি চক্র বা সেল। সিরাজুল আলম খান ছাড়াও আরও ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমদ। বাহাত্তর সালেই এই নিউক্লিয়াস ভেঙে যায়। আবদুর রাজ্জাক থেকে যান আওয়ামী লীগে। কাজী আরেফের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৮৪ সালের দিকে।

.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছাত্রত্ব শেষ হলো ১৯৭৫ সালে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তার বছরখানেকের মধ্যেই আমি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিই। আমি বুঝলাম, এটা আমার পথ নয়। কিন্তু রাজনীতির প্রতি আগ্রহ রয়েই গেল। সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে। আমার পরিচয় ১৯৭০ সালের শুরুর দিকে। তাকে আমি অনেকবার বলেছি, ‘আপনার কাজ, আপনার অভিজ্ঞতার কথা লিখুন।’ সবাই জানুক। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো লিখতে পারি না।’ আসলেও তাই। তিনি বলেন, অন্যেরা লেখে। অথবা অন্যেরা লেখে, তিনি দেখে দেন কখনো-সখনো।

১৯৬৭-৬৯ সালে আমি ঢাকা কলেজে পড়েছি। আমার ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে যারা বেশি রকম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল, তারা হলো শেখ কামালউদ্দিন, রেজাউল হক মুশতাক ও নিজামুদ্দিন আজাদ। মুশতাক ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিল। আজাদ ছিল কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। কামাল ছাত্রলীগের হলেও সে কোনো পদে ছিল না। শেখ মুজিবের ছেলে হিসেবে তার অন্য রকম একটি পরিচিতি দাঁড়িয়ে যায়। ওই সময় শেখ মুজিব কারাবন্দী থাকায় কামালের ওপর আমাদের সবার মমতা ছিল।

আজাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে আমি ছাত্র ইউনিয়নে ভিড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনসত্তরের গণ-আন্দোলন আমাকে অনেক বদলে দিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই ১৯৭০ সালে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আজাদ শহীদ হয়। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কামালকেও আমরা হারাই। মুশতাক তত দিনে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি আর যুক্ত ছিল না। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল বরাবর।

১৯৮৩ সালে আমি জাসদকে নিয়ে একটি গবেষণার কাজ শুরু করি। অক্টোবরের এক সকালে মুশতাককে সঙ্গে নিয়ে আবদুর রাজ্জাকের ধানমন্ডির বাসায় যাই। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা, সাধারণ সম্পাদক। শেখ হাসিনা দলের সভাপতি। তাঁদের মধ্যকার রসায়নটি কাজ করেনি। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেন। আরেক বহিষ্কৃত নেতা মহিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে তিনি তৈরি করলেন বাকশাল নামে আরেকটি দল। রাজ্জাক সাহেবের বাসায় লোকজনের ভিড়। একজনের পর একজন আসছেন আর যাচ্ছেন। জননেতাদের বোধ হয় এমনই জীবন। আমি দেখলাম, যে উদ্দেশ্যে আসা, অর্থাৎ তার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া, সেটি এই হট্টগোলের মধ্যে সম্ভব নয়। তাঁকে নিয়ে চলে এলাম মুশতাকের ভূতের গলির বাসায়। সেখানে তার সঙ্গে কথা হলো চার-পাঁচ ঘণ্টা। তিনি মেলে ধরলেন নিউক্লিয়াস-বৃত্তান্ত :

“এটা ঠিক যে আমরা নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলাম। চিন্তাটা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সালে তার একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করানো হয়। সিরাজ ভাই রূপকার, বিষয়টা এমন নয়। আমাদের মধ্যে কাজ ভাগ করা ছিল। সিরাজ ভাই ছিলেন আমাদের থিওরেটিশিয়ান। আমি রিক্রুটিংয়ের কাজ দেখতাম। আরেফ ছাত্রলীগের মধ্যে আমাদের চিন্তার প্রসার ঘটাত। এরপর চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আবুল কালাম আজাদ। আমরা আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে শপথ নিই, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার পেছনে ছুটব না। বিয়ে করব না। আমাদের না জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ স্কুলপড়ুয়া একটা নাবালিকাকে বিয়ে করলে আমরা তাকে বহিষ্কার করি। মুজিব ভাইকে সামনে রেখেই আমরা এটা শুরু করি। তিনিই আমাদের নেতা। এ ব্যাপারে তাকে আমরা কিছুটা জানিয়েছিলাম ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৯ সালে তাকে ডিটেইল জানানো হয়।

আমাদের সেলটির নাম দেওয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। নামটি গোপন ছিল। কাজকর্ম হতো খুবই গোপনে।

আমরা ‘বিপ্লবী বাংলা’ নামে হাতে লেখা একটা বুলেটিন বের করি সাইক্লোস্টাইল করে এর কপি করা হতো। দুটো সংখ্যা বেরিয়েছিল।

সিরাজ ভাইকে আমরা নেতা মানতাম। তবে তার পারসোনাল লাইফের অ্যানার্কি আমরা পছন্দ করতাম না।”[১]

১৯৬৪ সালের পুরো সময়টা সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাক কাটিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। আবুল কালাম আজাদও তখন কারাগারে। তারা কী ধরনের স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছিলেন, তা নিয়ে তারা কেউই মুখ খোলেননি। যত দূর জানা যায়, তাঁদের মধ্যে একটা ককাস গড়ে উঠেছিল। এটাকেই ১৯৭১ সালের পর তাঁরা নাম দিয়েছেন নিউক্লিয়াস।

‘নিউক্লিয়াস’ শব্দটি একাত্তরের আগে কখনো শোনা যায়নি বা আলোচনায় আসেনি। কাজী আরেফ আহমদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল ঢাকা শহরের মধ্যেই, প্রধানত জগন্নাথ কলেজকে কেন্দ্র করে। বৃহত্তর পরিসরে অন্যান্য জেলা শহরের ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগের সুযোগ তখন ছিল না। তবে এটা ঠিক যে এই ‘ককাস’ পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে একটি প্রভাববলয় তৈরি করতে পেরেছিল।

.

সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত জীবনের ‘অ্যানার্কি’ বলতে আবদুর রাজ্জাক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দেননি। আমিও জানতে চাইনি। তবে তাকে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প চালু ছিল। মোদ্দা কথা, তার চালচলন আর দশজনের মতো ছিল না। তাকে অনেকেই আড়ালে-আবডালে ‘কাপালিক’ নামে ডাকতেন। কীভাবে এ নাম চালু হয়েছিল, তা জানার জন্য একদিন তাকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম।

আপনাকে তো অনেকেই ‘কাপালিক’ বলে। এটা কেন বলে?

‘ওই যে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছে না? ওই নিয়েই বোধ হয়।’

বঙ্কিমচন্দ্রের একটি উপন্যাসে ‘কাপালিক’ নামে একটি চরিত্র আছে। সে শবসাধনা করে। মানে, লাশ নিয়ে জীবনযাপন। তার সঙ্গে আপনার মিল কোথায়?

সিরাজুল আলম খান আর কথা বাড়াননি। [২]

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে আধুনিক বাংলা উপন্যাসের পথিকৃৎ হিসেবে মনে করা হয়। তার একটি জনপ্রিয় উপন্যাস হলো কপালকুণ্ডলা। এ উপন্যাসের একটি চরিত্র হলো কাপালিক। কাপালিক আর দশজন মানুষের মতো নয়। সে মৃতদেহ নিয়ে তান্ত্রিক সাধনা করে। তবে তার আছে প্রচণ্ড আকর্ষণশক্তি। এ উপন্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলো নবকুমার। প্রথমবার কাপালিক দর্শনে নবকুমারের মনের ভাব বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্কিম লিখেছেন :

“…কটিদেশ হইতে জানু পর্যন্ত শার্দূলচৰ্ম্মে আবৃত। গলদেশে রুদ্রাক্ষমালা, আয়ত মুখমণ্ডল শ্মশ্রুজটাপরিবেষ্টিত। সম্মুখে কাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছিল–সেই অগ্নির দীপ্তি লক্ষ্য করিয়া নবকুমার সে স্থলে আসিতে পারিয়াছিলেন। নবকুমার একটা বিরাট দুর্গন্ধ পাইতে লাগিলেন; ইহার আসন প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহার কারণ অনুভূত করিতে পারিলেন। জটাধারী এক ছিন্নশীর্ষ গলিত শবের ওপর বসিয়া আছেন। আরও সভয়ে দেখিলেন যে, সম্মুখে নরকপাল রহিয়াছে, তন্মধ্যে রক্তবর্ণ দ্রব পদার্থ রহিয়াছে। চতুর্দিকে স্থানে স্থানে অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে–এমন কি, যোগাসীনের কণ্ঠস্থ রুদ্রাক্ষমালা মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্থিখণ্ড গ্রথিত রহিয়াছে। নবকুমার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া রহিলেন। অগ্রসর হইবেন, কি স্থান ত্যাগ করিবেন, তাহা বুঝিতে পারিলেন না। তিনি কাপালিকদিগের কথা ত ছিলেন। বুঝিলেন যে, এ ব্যক্তি কাপালিক।” [৩]

এ অঞ্চলে কাপালিক নামে একটি সম্প্রদায় আছে। তারা মহাদেব বা শিবকে আদর্শ মনে করে। তাদের জীবনযাত্রা অন্যদের থেকে আলাদা। কঠোর কৃচ্ছসাধনই জীবনের ব্রত। তারা গৃহী নয়, সন্ন্যাসী। তারা অনেকেই শ্মশানচারী।

সিরাজুল আলম খানের কাপালিক নাম হওয়ার একটি প্রেক্ষাপট পাওয়া যায় ঢাকা কলেজে তাঁর সতীর্থ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছ থেকে। ওই সময় কলেজে কপালকুণ্ডলা নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। নারী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কোনো নারী পাওয়া যায়নি বা আনা হয়নি। ছেলেদের কলেজ। ‘কপালকুণ্ডলা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। যদিও কাপালিক’ ওই নাটকের আলাদা একটি চরিত্র, অনেকে তখন থেকেই সিরাজকে কাপালিক নামে ডাকা শুরু করে।

সিরাজুল আলম খান কখন খান, কখন ঘুমান, তার ঠিকঠিকানা নেই। চালচলনে খ্যাপাটে, বোহিমিয়ান, লম্বা চুল-দাড়ি-গোঁফ, অতি সাধারণ বেশভূষা, কম কথা বলা–এসব তাঁকে একধরনের বিশিষ্টতা দিয়েছিল। এর আকর্ষণ-বিকর্ষণ শক্তি দুই-ই ছিল। অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলতেন। আবার অনেকেই সম্মোহিত হতেন।

সিরাজুল আলম খানের চালচলন অনেকেই পছন্দ করতেন না। উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর ১৯৫৭ সালে ঢাকা কলেজের হোস্টেল পুরান ঢাকার বান্ধব কুটির থেকে নিউমার্কেটের কাছে কলেজ চত্বরে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে কেউ তার রুমমেট হতে রাজি হচ্ছিল না। শেষমেশ এগিয়ে আসেন মাগুরার মাহফুজুল হক (নিরো)। তিনি সিরাজকে তাঁর কামরায় থাকতে বলেন। নিরো ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক ছিলেন।

সিরাজুল আলম খান ছিলেন অন্তর্মুখী। সাধারণ মানুষকে একটা ধারণা দেওয়া হতো, তিনি প্রচারবিমুখ। এখন অবস্থা পাল্টেছে। অনেক বছর ধরেই তিনি তাঁর নিউক্লিয়াস-তত্ত্ব প্রচার করছেন, নিজে লিখছেন না। তবে ডিকটেশন দিয়ে অন্যদের দিয়ে লেখাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাঁর উদ্যোগে ও প্রশ্রয়ে ছাপা হয়েছে অগুনতি বই, বেশির ভাগই আধা ফর্মা বা এক ফর্মার, সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে ‘নিউক্লিয়াসের বিবরণ। তিনি দাবি করছেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত-লেখক কামরুদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক আহমদ শরীফ নিউক্লিয়াসের পরামর্শদাতা ছিলেন। ঢাকা ছাড়িয়ে তাদের এই নেটওয়ার্ক জেলা পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছিল।

.

তথ্যসূত্র

১. আবদুর রাজ্জাক।

২. সিরাজুল আলম খান

৩. বঙ্কিম রচনাবলী : উপন্যাস সমগ্র, মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৭৮, পৃ. ৬

৪. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

৫. সিরাজুল আলম খান

৬. ওই

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *