১০. সেকালের রাজা একালের মন্ত্রী

সেকালের রাজা একালের মন্ত্রী

আমাদের বড় মুশকিল হয়েছে যে গণতন্ত্র নামে একটি শব্দের কল্পিত ভাস্বর জগৎ আমাদের সম্মুখে অযথা এক স্বাধীন সুখের হাতছানি দেয়। আমাদের আরও বিপদ, সেকালের রাজাদের পুনরায় পছন্দ করে ফেলা ধিক্কার জাগাবে বিশ্ববাসীর মনে। কিন্তু শুধুমাত্র ভোটের দিনটি গত হলেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তথাকথিত সেই গণতন্ত্রের মৌখিক আশ্বাস আর সুখস্মৃতিগুলি বহন করা–সেও বড় ক্লান্তি আনে। বাস্তব ক্ষেত্রে অবক্ষীণ রাজতন্ত্রের সমস্ত দোষের সঙ্গে বিপন্ন গণতন্ত্রের সমস্ত দোষ জুড়ে দিলে যে দোষপুঞ্জ তৈরি হয় তার সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার বিংশ শতাব্দীর ভারত-সন্তানেরা পেয়েছে। পরমাণু বোমার কুফল পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে যেমন একটি উষর ক্ষেত্র বেছে নেওয়া হয়, তেমনি গণতন্ত্রের কুফল পরীক্ষার জন্য এমন বৃহত্তর এবং সহিষ্ণু ক্ষেত্র ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। অথচ অদ্ভুত কথা ‘গণতন্ত্র’ ‘গণতন্ত্র বলে যেসব মানুষেরা বিস্ময়-মুকুলিত নেত্রে উদ্বাহু নৃত্য করছেন তারাও জনেন না যে তারা কোন রাজত্বে বাস করছেন। একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই–

শ্রীচৈতন্যের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রূপ গোস্বামী ললিতমাধব বলে একটি নাটক লিখেছিলেন। নাটকের নায়িকা রাধা বৃন্দাবন ছাড়া অন্য কোথাও কৃষ্ণের সঙ্গে মিলন সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু নাটকীয় ঘটনাক্রমে তাঁকে ঐশ্বর্যপুরী দ্বারকায় থাকতে হয়েছিল এবং সেখানে কৃষ্ণের সঙ্গে তার মিলনও ঘটেছিল। দীর্ঘায়িত মিলনের চটক ভাঙতেই রাধার যখন মনে হল–এ তো সেই মধু বৃন্দাবন নয়, এ তো দ্বারকা! দেবী একানংশা–যিনি রাধা-কৃষ্ণ মিলনের প্রধান সহায় ছিলেন তিনি রাধাকে আশ্বস্ত করে বললেন, “বাছা রাধে, তুমি এখনও সেই বৃন্দাবনেই আছ, তবে যে এই অন্যরকম দেখছ–সে আমার মায়া।”

প্রসঙ্গে ফিরে এসে বলি আমরাও সেই রাজতন্ত্রেই আছি, তবু যে মাঝেমধ্যে গণতন্ত্রের মতো কিছু দেখি, সে মায়ামাত্র এবং সে মায়া সৃষ্টি করেন দলনেতারা। সেই রাজা, রাজমন্ত্রী, রাজসেবক–”তারা সবাই অন্য নামে” এই ভারতভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর সেই বিশ্বসেন কী দেবদত্ত কিংবা বসুভূতি, তারা অনেকেই সুন্ধরা কী মালিনীতে দলগীতি গেয়ে উজ্জয়িনীর বিজন-প্রান্তে না হলেও, সল্টলেকে কানন-ঘেরা বাড়ি পেয়েছেন। জীবনের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের যে রূপ আমরা দেখতে পাই তাতে অন্তত এটুকু পরিষ্কার যে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র সেকালের রাজতন্ত্রেরই চক্ষু-ধৌত করা এক পরিশীলিত রূপ। তাছাড়া ভাবনা-চিন্তা, প্রগতি–তাই বা কতটুকু; কিংবা সামন্ততন্ত্র, ধনিক-শ্রেণি–এইসব নিন্দাপঙ্কে যে গণতন্ত্রের শতদল গজিয়ে উঠেছে তাতে যেন কীটের সংখ্যাই বড় বেশি, অন্তত শোভা-সৌরভের চেয়ে।

আধুনিকতার মধ্যে রাজনৈতিকভাবে যেটুকু সম্ভব হয়েছে তা হল, আমরা প্রাচীন রাজাদের মতো মন্ত্রীদের ঈশ্বরের অংশ বলে মনে করি না। অবশ্য তাই বা হলফ করে বলি কী করে, রাজনৈতিক নেতাদের অনেককেই তো দেখলাম–অনেকে তারা দেবতাদের চেয়েও বেশী পুজো পান। সেকালে রাজারা বংশানুক্রমে রাজা হতেন। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রেও আমরা বংশানুক্রমে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখেছি এবং মানুষের মনেও সেই বংশোহ এতটাই আছে যে, তবংশীয়দের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না দেখা পর্যন্ত নিজেরাও যেন সংরক্ষিত বোধ করেন না। তবে এই ঘটনা মনে পড়লে বর্তমান লেখক মুগ্ধ এবং বিহ্বলচিত্তে বাল্মীকি-রামায়ণের একটি দৃশ্য স্মরণ করে। মহারাজ দশরথ গতায়ু হয়েছেন, রাম-লক্ষ্মণ বনবাসী, ভরত-শত্রুঘ্ন মামার বাড়িতে। অরাজক রাজ্যের ধ্বংস অনিবার্য। তাই অযোধ্যায় মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হলেন রাজ্যের পরিচালকমণ্ডলী– কিংমেকার্স, রামায়ণ যাকে বলেছে ‘রাজকর্তারঃ। তাঁরা সবাই ব্রাহ্মণ–মার্কণ্ডেয়, মৌল্য, বামদেব, কশ্যপ, কাত্যায়ন জাবালি ইত্যাদি। এঁরা বশিষ্ঠকে চেয়ারম্যান করে যে মিটিং করেছিলেন, তাতে প্রথম এবং শেষ অ্যাজেন্ডা ছিল–মহারাজ দশরথ স্বর্গস্থ। রাম-লক্ষ্মণ পূর্বেই রাজ্য ত্যাগ করেছেন। ভরত-শত্রুঘ্নও রাজধানীতে নেই। অতএব এই বিশাল সাম্রাজ্য যাতে শুধু নেতার অভাবে নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্য ইক্ষাকুবংশের অন্য কাউকে আজই রাজা করা হোক ইক্ষাকুনমিহাদ্যৈব কশ্চিদ্রাজা বিধীয়তাম। লক্ষণীয়, মন্ত্রীদের অনেকেরই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা নিজে কেউ রাজা হতে চাননি কিংবা অপর কাউকেই রাজা করতে আগ্রহী নন, তারা চান ইক্ষাকুবংশেরই একজন। মনে রাখা দরকার, রাজ্য-পরিচালকেরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত গণতান্ত্রিক কায়দায় বারবার উচ্চারণ করেছেন রাজ্য আমাদের; কিন্তু তবু বাস্তবে, মন্ত্রীরা যেহেতু অনেকেই ইক্ষাকুবংশের ওপরে ব্যক্তিগতভাবে অনুরক্ত ছিলেন, তাই তাঁরা ভেবে নিলেন জনগণের আস্থাও থাকবে ইক্ষাকুদের ওপরেই। অতএব রাজা হলেন ভরত, ঠিক যেমনটি এখনও হয় ভারতবর্ষে, যদি বা দুর্দৈববশে অন্য কেউ মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী হয়েও যান, তবে মনে হয় যেন তিনি সেই বংশানুক্রমী রাজার গচ্ছিত সম্পত্তি ভোগ করছেন। সেই বংশের কনিষ্ঠটি যদি তবলাও বাজান, তবু তারই জন্য অন্যান্যরা অপেক্ষা করে বসে থাকেন–কবে তিনি আসবেন, পূর্বের ন্যস্ত ভার তিনি কবে বুঝে নেবেন। একেবারে নবিস হিসেবে তবু ভরতের হয়তো বা কিঞ্চিৎ ভয়-ডর ছিল এবং দ্বিতীয় কল্পে রামচন্দ্রের পাদুকায় চামর দুলিয়ে কোনোমতে চোদ্দ বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু আধুনিক যুগে গণতন্ত্রের চামর দুলিয়ে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের রাজত্ব নির্ভীকভাবে চালানো যায়, কেননা প্রধানমন্ত্রীকে যাঁরা সাময়িকভাবে প্রধানমন্ত্রী করেন বা করেছেন, তারা সবাই জনগণের প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধি মাত্রেই যে-কোনো সময়, যে-কোনো অবস্থায় জনগণের অন্তরের কথাটি তারাই জানেন–অন্তত তত্ত্বগতভাবে তাই। তবু এঁদের কথা পরে।

আমাদের গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যদি সেকালের শতাশ্বমেধী সম্রাটদের তুলনা হয়, তাহলে অন্যান্য প্রদেশের স্বদলীয় মুখ্যমন্ত্রীরা প্রায় করদ রাজার মতো। আবার প্রদেশ-বিশেষে যদি অন্য দল থাকে তবে সেই ভিন-দলের মুখ্যমন্ত্রী স্বাধীন রাজার মতোই। প্রাচীনেরা বলেন, যে সমস্ত রাজারা মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে ইতিকর্তব্যতা নির্ণয় করেন তারা নাকি উত্তম নরপতি আর যাঁরা নাকি নিজের স্ববুদ্ধি অনুযায়ী নিজেই সমস্ত কর্তব্যের দায়িত্ব নিয়ে কাজে প্রবৃত্ত হন তারা নাকি মধ্যম নরপতি। আমাদের দেশে পি-এম ওয়ান্টস্ দি’ আর ‘সি-এম ওয়ান্টস্ দি’ শুনতে শুনতে কান পচে গেছে, তবু কিন্তু আমাদের লোক-দেখানো পার্লামেন্ট-অ্যাসেমব্লি আছে, যেখানে পি-এম, সি-এমদের মতো প্রায় নির্বিবাদে সমর্থন করার জন্যই কত-শত জনপ্রতিনিধি থাকেন বীণাদণ্ড কোণাভিঘাতে, বীণাদণ্ডে ছড়ের আঘাত দিলে সেটি যেমন বাজে, প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের দুড়ের আঘাতে আমাদের প্রতিনিধিরাও তেমনি বাজেন।

বেচারা! অন্যান্য সাধারণ মন্ত্রীদের জন্য আমার মায়া লাগে, কেননা তাদের অবস্থা ঠিক সেকালের মন্ত্রীদের মতোই অপরিবর্তিত। সাধে কী আর ভাসের অবিমারক নাটকে এক মন্ত্রী বড় দুঃখ করে বলেছে কষ্টং হি অমাত্যত্বং নাম–মন্ত্রীগিরি বড় দুঃখের; যদি ভালো কিছু হয় নাম হবে রাজার (মানে পি-এম, সি-এমদের) আর যদি খারাপ কিছু হয় তবে নাম হবে মন্ত্রীর। বিশেষত রাজা কিংবা আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা অন্য মন্ত্রীদের কথা বড় শোনেন না–প্রায়ঃ পথ্য-পরাঙ্মুখ বিষয়িনো ভূপা ভবষ্যাত্মনা। কিন্তু দারুণ যে লোকনিন্দা, সে শুধু শুনতে হয় সাধারণ মন্ত্রীদেরই নির্দোষাণ সচিবান্ ভজত্যতিমহান্ লোকাপবাদজ্বরঃ। বেচারা এখন এবং তখনকার মন্ত্রীরা, আপন দপ্তরের কৃতিত্বটুকুও পর্যন্ত যেখানে তারা পি এম-সি এমদের দিয়ে ঘোষণা করান, সেখানে তাদের এই নৈর্ব্যক্তিকতা যে-কোনো নিষ্কাম রাধাভাব অর্থাৎ “তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও আমি যত দুখ পাই হে”–এমনি কোন ভাব থেকে আসছে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা বাণভট্টের মতে এই ধরনের রাজভক্তরা যেন–কন্দুকঃ করতল-তাড়ণেষু, যেন প্রভুর হাতে-রাখা একটি বল, কখন কোন দিকে ছুঁড়ে ফেলেন তার ঠিক নেই। অবশ্য করতলগত কন্দুক যখন বিক্ষুব্ধ হয়ে গড়াতে আরম্ভ করে, তখন এই সব সাধারণ মন্ত্রীদের তবৈবাস্মি’ রাধাভাবও ছুটে যায়। এতে যা ফল হয় সেটিকে আমাদের নীতিশাস্ত্রকারেরা গোকর্ণের সঙ্গে তুলনা করে বুঝিয়েছেন। গোরু ইচ্ছানুসারে তার কান এদিক-ওদিক ঘুরাতে পারে। নীতিশাস্ত্র মতে, যাঁরা আপন ন্যায়-নীতির শৈথিল্যবশত এখন এই দলে তখন সেই দলে যোগদান করেন তাদের কোনো মূল্যই নেই; কেননা তাদের অবিশ্বস্ততা প্রমাণিত। আমাদের দেশে কিন্তু এই গোকর্ণবৎ মানুষ ছাড়া রাজনীতিই হয় না।

যে-কোনো গণতন্ত্রে সুস্থির একটি বিরোধী দল সেই গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের পরিচয় দেয় কিন্তু আমাদের দেশে কী কেন্দ্রে কী রাজ্যে বিরোধী দলগুলির অবস্থা ঠিক প্রাচীনকালের শত্রু রাজগুলির মতো। কৌটিল্য কিংবা অন্যান্য রাজনীতিবিদেরা যেসব নীতি-নিয়ম শত্রুরাজার ওপর প্রয়োগ করার জন্য বলেছেন, সমাসীন সরকারি দল সেই সব নীতি বিরোধী দলীয় নেতাদের ওপর প্রয়োগ করেন। অক্ষরে অক্ষরে হয়তো সব খাটে না, কিন্তু তবু মনোভাবটি মেলে। তাছাড়া গোকর্ণবৎ দলবলের খেলায় যিনি শক্তিমত্তের দলে যোগ দিলেন, তারা তো বাঁচলেন কিন্তু যাঁরা রইলেন তাঁদের মধ্যে চালানো হয় শ্ববরাহ’-নীতি। বিরোধী দলের অন্তঃকলহে দুই প্রধানের একজন যদি ক্ষমতায় কিঞ্চিৎ ন্যূন হন, তবেই এই নীতিটি চলে ভালো। ব্যাধ যখন শুয়োর মারতে গিয়ে সুবিধে করতে পারে না, তখন সে একটা কুকুরের সঙ্গে শুয়োরের লড়াই লাগিয়ে দেয়। ব্যাধ যেহেতু শুয়োরও খায় এবং কুকুরও খায়, তাই যে-কোনো একজন হীনবল হলেই ব্যাধের লাভ। আমাদের বিরোধী দলগুলির মধ্যে শুয়োর-কুকুরের লড়াই বাধাতে হয় না, তা আপনিই আছে, কাজেই অন্যতরকে কিঞ্চিৎ মদত দিয়ে সরকারি দল আখেরে লাভ করেন ভালোই। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কোনো কেন্দ্র-বিরোধী দল যদি প্রদেশ-বিশেষে সরকার গঠন। করেন, তাহলেও কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক সম্পর্ক হয় ঠিক শত্রুর মতোই। ভিন দলের প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীটি যেহেতু ঠিক ছোট্ট রাজ্যের স্বাধীন রাজাটির মতোই, তাই তার ব্যবহারে কৌশলের থেকে শুষ্কবৈরিতাই প্রকট হয় বেশি। শুষ্কবৈরিতা মানে, যে শত্রুতায় শুধু নিন্দাবাদে ক্রোধশান্তি হয় মাত্র, যদিও লাভের অঙ্ক শূন্য। কিন্তু আমরা যদি মহাভারতের বৃহস্পতির মতো মঙ্গলকামী দেবরাজকে বলি–মহারাজ! যে শত্রুকে তুমি বন্ধও করতে চাও, তাকে প্রকাশ্যভাবে শত্রু বলে চিহ্নিত করো না। শত্রুর ওপর রাগ, কিংবা তার থেকে ভয় এবং তার বিনাশে আনন্দ–এগুলো মনের মধ্যে চেপে রাখবে। সবচেয়ে বড় কথা শত্রুর ওপর শুধু নিন্দারোপণের কণ্ঠায়াস–মানে মুখরতা বর্জন করবে। বৈতংশিক, মানে যারা পাখি ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা নাকি পাখির মতো একই ধরনের শব্দ করে পাখি ধরার চেষ্টা করে, অর্থাৎ কি না পাখিকে নিজের প্রতি বিশ্বস্ত করে তারপর তার বিনাশ সাধন করে। রাজাও শত্রুর সঙ্গে এই বৈতংশিক বৃত্তি অবলম্বন করে শত্রুকে জব্দ করবেন কেননা শুধুমাত্র কলহ করে যারা অপকারীর শাস্তি-বিধান করতে চান তারা বাচ্চা ছেলেরও বাড়ান জাতু কলহেনেচ্ছেনিয়ন্তুমপকারিণঃ। বালৈ রাসেবিতং হ্যেত যদমবর্ষা যদক্ষমা ৷৷ তবে আমাদের এখানে সদসৎ কর্ম নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যে যে উতোর-চাপান চলে তা হরু ঠাকুর কিংবা ভোলা ময়রাকেও হার মানাবে, যদিও এতে সমস্যার সমাধান হয় না তবু গায়ের ঝাল মিটিয়েই শান্তি।

কেন্দ্রে যে দল সরকার গঠন করেছেন সেই দলই যদি প্রদেশগুলিতে রাজ্য-শাসন করেন তবে সেই প্রাদেশিক দলনেতা বা মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা অনেকটা প্রাচীন করদ সামন্ত রাজাদের মতো। বিস্তারের প্রয়োজন নেই, তবে বাণভট্টের বর্ণনামতো কখনও এঁরা শোকবিহ্বল সম্রাট অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে সান্ত্বনা দিতে রাজধানীতে যান, কখনও বা উৎসব উপলক্ষে সপরিবারে যোগ দেন মহারাজকুলে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিংবা আনন্দিত হলে এঁরাও ক্ষুব্ধ কিংবা আনন্দিত হন–ঠিক এমন বর্ণনাই আছে প্রভাকরবর্ধন-যশোমতীর পুত্রজন্মে কিংবা রাজ্যবর্ধনের যুদ্ধযাত্রায়। আবার প্রভাকরবর্ধন মারা গেলেনরেন্দ্রঃ স্বয়ংসমর্পিত-স্কন্ধৈগৃহীত্ব শবশিবিকাং শিবিসমঃ সামন্তৈঃ পৌরৈশ্চ–অর্থাৎ আপনিই তারা কাঁধ এগিয়ে দেন সরস্বতী তীরে শ্মশানভূমিতে মহারাজকে নিয়ে যাবার জন্য। পিতার মৃত্যুতে শোকার্ত রাজ্যবর্ধন খাবার খেতে নারাজ হলে সেই সামন্ত-দলের অনুরোধেই তিনি আবার খাবার খান। কিন্তু সব যখন ঠিক হয়ে গেল, হর্ষদেব রাজত্ব চালাচ্ছেন তখন মহাসামন্ত নৃপতিরা যে রাজদ্বারে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের অবস্থাও কিন্তু এখনকার সমদলীয় নেতা-মহানেতাদের মতোই। তাদের অনেকে পায়নি প্রবেশাধিকার–কৈশ্চিৎ প্রবেশম্ অলভমানৈঃ, অনেকে বসে ছিল মাথা হেঁট করে, পায়ের নখ দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটছিল সময় কাটছে না আর কী। আবার যে সব প্রতিহারীরা প্রার্থীদের অনুনয়-বিনয় সংকলন করে সদাসর্বদা ভেতরে-বাইরে যাওয়া-আসা করছিল তাদের কাছে কেউ কেউ বারবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন–অশ্রান্তৈঃ পুনঃ পুন পৃচ্ছদ্ভিঃভদ্র, আজই দেখা হবে তো, দেখা দেবেন তো মহারাজ দাস্যতি দর্শং পরমেশ্বরঃ? এইভাবেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছিলেন দূর দূর দেশ থেকে আসা হর্ষের ক্ষমতা-নত মহাসামন্তেরা, আর ছিলেন সেই সব সামন্ত-রাজারাও, যাঁরা এসেছিলেন হর্ষের প্রতাপানুরাগে মুগ্ধ হয়ে, ঠিক যেমনটি আজও যান প্রধানমন্ত্রীর আসন-ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে দলনেতারা কিংবা হাজারো মন্ত্রীরা। এঁদের সর্বাঙ্গীণ অবস্থা সুষ্ঠু বর্ণনা করার জন্য আমাদের রুয্যকের লেখা অলংকারসর্বস্ব থেকে একটি শ্লোক ধার নিতে হবে—

মহারাজ-চক্রবর্তীর আশ্রয়রস নাকি মানুষের পক্ষে জীয়ন্তে মরণ ভেলসজীবং জনাং মরণম্ অবনীশাশ্রয়রসঃ। এই আশ্রয়ে নাকি ঘুম ছাড়াই দুঃস্বপ্ন দেখা যায়। পাহাড় ছাড়াই গড়িয়ে ফেলে দেয় মানুষকে (এরকম আকছার দেখা যায় আমাদের সরকারে কিংবা দলে)। মন্ত্রী-মহামন্ত্রীদের দেখলে জরা ছাড়াই কম্প আসে শরীরে। অন্ধকার না থাকলেও কেমন যেন ভয়-ভয় করে। অস্ত্রশস্ত্রের কোনো আঘাত ছাড়াই দুঃখ লাগে, আবার এ যেন শেকল দিয়ে না-বাঁধা এক বন্ধন বিগতনিগড়া বন্ধনধৃতিঃ–যাতে বাঁধা পড়েন আমাদের দলীয় কর্মীরা।

ভারতীয় শাসনতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীরা যে রাজাধিরাজের আসনে বসেন কিংবা প্রাদেশিক ভিলের যে ছোট্ট স্বাধীন রাজাটি–তাঁদের এত ক্ষমতার মূলে কিন্তু তাদের অনুগামীদের আশ্রয়রসঃ’। অনুগামীদের মধ্যে প্রধান পুরুষ হলেন আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় সক্রিয় দলকর্মীরা আর তৃতীয় যাঁরা, তাঁরা কখনও মধুর বচনে, স্মিতহাস্যে সময় বুঝে মানুষ দেখে’ দলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করেন, সময়ে নিরপেক্ষ থাকেন এবং অসময়ে অন্য দলের প্রতি পূর্বরাগ প্রকাশ করেন, এক কথায় সবচেয়ে বুদ্ধিমান স্বার্থী, যাঁরা ব্যবহৃত হতে ভালোবাসেন এবং দলনেতারাও যাঁদের সময়মতো ব্যবহার করেন। প্রাজ্ঞ রাজসভার কবির ভাষায় এরা যেন এক একটি সচল পাপোশজঙ্গমঃ পাদপীঠঃ, অপরের পায়ের ধুলোয় ধূসর হয়ে ওঠে যাদের উত্তমাঙ্গ, চাটুকারিতায় যেন পুরুষ-কোকিল বুদ্ধিজীবী, না রাজোপজীবী? পুংস্কোকিলঃ কাকু-কণিতেষু, নেতৃবৃন্দের বাণী শুনে সুখকর আওয়াজ করতে পারে ঠিক ময়ূরের মতো, নীচ তোষামোদে একটি কুকুর নীচ-চাটুকরণেষু। নেতৃবর্গের মন ভোলাতে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গির ক্লেশ স্বীকার করে–ঠিক যেন বেশ্যা–বেশ্যাকায়ঃ করণবন্ধক্লেশে। ব্যাবসাদার-ঠিকাদার, না নীতিহীন পরজীবী–মাথা দোলায় যেন কৃকলাস, কখনও বা শরীর কুঁকড়িয়ে থাকে যেন জাহক (এক জাতের বিড়াল)।

এখনকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, দলীয় কর্মী এবং সুবিধাভোগী ভক্তবৃন্দযাঁদের আপন কোনো মত নেই, ব্যক্তিত্ব নেই, জনহিতকর কোনো প্রবৃত্তি নেই, উলটো দিক দিয়ে দলপ্রধানের ব্যক্তিত্বে যাঁরা সত্তামাত্র নির্ভর, দলের মতই যাঁদের মত এবং দলের হিতই যেখানে জনহিতের রূপ নেয়–এঁদের দেখলে বাণভট্টের মুখ দিয়ে নিশ্চয় বেরিয়ে আসত–এইরকম দাসবৃত্তি যাদের, তারাও যদি মানুষের মধ্যে গণ্য হয় তাহলে নির্বিষ টোড়াসাপও জাতসাপের মধ্যে গণ্য হবে আর শুকনো মরা ধানও চালের সেরা কলমা চালের মধ্যে গণ্য হবে–রাজিলোহপি বা ভোগী, পুলাকোহপি বা কলমঃ। তার থেকে, রাজসুখের ঠাকুর তোমার পায়ে নমো নমঃ, দূরে থাক আমার সুখ আর ঐশ্বর্য–তিষ্ঠতু দূরে এবং সাশ্রীঃ, দরকার নেই আমার সেই বিলাসে যার জন্য আমার শরীরের ওপর দিকটা মাটির দিকে নোয়াতে হবেদৰ্থ উত্তমাঙ্গং গাং গমিষ্যতি। বরঞ্চ এক লহমার জন্যে হলেও, বাণভট্টের আক্ষেপ, মানুষ তার মনুষ্যত্ব দেখাক, ত্রিলোকের রাজ্যাধিকার উপভোগের লোভেও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন করে অবনত হওয়া–সে তো মনস্বীর পথ নয়।

স্বাধীনতার পর থেকে যে হাজার হাজার জনপ্রতিনিধি দেখেছি এবং তাদের যা চরিত্র, অপিচ নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত আপন আপন নেতাদের প্রতি দলীয় কর্মীদের যে পরিমাণ প্রাণঢালা বিশ্বাস তাতে কাউকেই আদ্যিকালের রাজসেবক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। মন্ত্রী তো অনেক দূরের কথা, বিভিন্ন দলীয় কর্মীদের যে স্তরভেদ এবং তাদের যে কর্মপদ্ধতি তাতে কোথাও মেলে সকাম লোলুপতা কোথাও বা শক্তিসাধনা। তাছাড়া ব্রহ্মা বিষ্ণুপদং হরিহরপদ–এই নিয়মে মন্ত্রিত্ব না হলেও অন্য কোনো বড়ো পদই দলীয় নিত্যকর্মপদ্ধতির চরম সোপান–তা সে পদ দলের মধ্যেই হোক নয়তো বা সরকারে। আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা! তাদের মতো বুদ্ধিমান মানুষ আর কে আছে, তারা নিজেদের অজ্ঞাতসারেই প্রাচীন মনুমহারাজের পদ্ধতিতে কাজ করেন। মনু বলেছেন বালক হলেও, ভূমিপতি রাজাদের অবমাননা কোর না, কেননা তারা মানুষবেশী দেবতা বটে। আমাদের প্রতিনিধিরা রাজতন্ত্রে বড়ই ঘৃণা করেন, কিন্তু হাজারো অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানেন–মন্ত্রীপুত্রদের দাপট কম নয়, বিশেষত কোন মন্ত্রীপুত্র কখন রাজা, থুড়ি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসেন, কিংবা শাসকদলের আপন দলে কোন মন্ত্রীপুত্র কখন এক নম্বর হয়ে বসেন–তা তো বলা যায় না–অতএব সাধু সাবধান।

অথচ নির্বাচিত প্রতিনিধি আর দলীয় কর্মীবৃন্দ–এঁরাই ভারতীয় গণতন্ত্রে সর্বস্ব। প্রধানত এঁদেরই গরিমা গানে মুগ্ধ হয়ে প্রধান-মুখ্য এবং অপরাপর মন্ত্রীরা কস্তুরীমৃগের মতো আপন গন্ধে আপনি দিশেহারা হন। বাণভট্টকে আমরা বারংবার উদ্ধার করেছি এবং আবারও করব এবং তা করব শুধু এইজন্যেই যে, বাণভট্ট রাজসভার কবি। রাজা হর্ষদেবের দানমানও তিনি কম পাননি। যাঁরা বলেন রাজসভার কবিমাত্রেই রাজার তোষামুদির জন্য কবিতা লেখেন তাদের জানাই–ক্ষুদ্রচেতা সুযোগসন্ধানী রাজভৃত্যদের কথা বলতে তিনি একটুও ভয় পাননি। অন্তত আজকের নেতারা, তাদের চেয়ে বড়ো নেতাদের সামান্যতম সমালোচনা করতে যতখানি ভয় পান, তাঁদের চেয়ে বাণভট্টের বক্তব্য অনেক বেশি মিলে যাবে, দলের অনুগামীরা মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীদের যা বানান সেই সম্পর্কে। বাণ বলছেন–স্তুতিবাদীদের পাল্লায় পড়ে রাজারা (এতদ্দেশে প্রধানমুখ্য এবং অপরাপর মন্ত্রীরা) মনে করেন তাঁদের হাত-দুটোর মধ্যে আরও দুটো হাত লুকানো আছে নারায়ণ আর কী! কপালের মাঝখানে ত্বগন্তরিত আছে যেন আর একটি মর্মভেদী জ্ঞানচক্ষু–যা অন্যের নেই–শিব আর কী। অনুগামীরা রাজাকে বোঝায়–মহারাজ, আপনি যে মদ্যপান করেন সেটা তো আর পানাসক্তি নয়, সেটা স্ট্যাটাসের জন্য না করলে নয়। আপনি যে ইন্দ্রিয়পরতন্ত্র নন তার প্রমাণ আপনি নিজের স্ত্রীকে পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন; আর নৃত্য-গীত-বেশ্যাভিসক্তি–এ তো রসিকতা, বৈদগ্ধ্য। বড় মানুষের কথা (সার্থকনামা বিশেষজ্ঞদের কথা) যে আপনি শোনেন না সেটাই প্রমাণ করে যে আপনি অপরের বুদ্ধিমতো চলেন না। কর্মচারীদের ওপরে যে আপনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন, তার মানেই কর্মচারীদের ব্যক্তিস্বাধীনতা বেড়েছে, তারা এখন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে রাজসেবা করছে–অজিত-ভৃত্যতা সুখোপসেব্যত্বমিতি। মহা মহা অপরাধীদের দোষ দেখতে না পাওয়াটাই তো মহানুভবত্ব। অন্যের ক্ষমতার সঙ্গে এঁটে ওঠার উপায় না থাকলেই প্রকাশ পায় ক্ষমাগুণ। সবচেয়ে বড় কথা, দলীয় কর্মীদের সমর্থন-বন্দনা আর স্কৃতিবাদকেই মন্ত্রীরা সরকারের সুখ্যাতি বলে মনে করেন বন্দিজনখ্যাতি যশ ইতি।

আমি ভেবেছিলাম–আমার বোধহয় ভুলই হল, কেননা কোথায় সেই তথাকথিত স্বচ্ছন্দচারী রাজারা আর কোথায় আজকের গণতন্ত্রের মুক্তিমাখা মহান ভারতীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু মজা হল বাণভট্টের সঙ্গে প্রাথমিক গণতন্ত্রের সূত্ৰধার জন স্টুয়ার্ট মিলের দেখা হয়নি কোনোদিন। একজন সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাগে বসে কাদম্বরী-হর্ষচরিত লিখেছেন, আর একজন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে বসে রিপ্রেসেন্টিটিভ গভর্নমেন্ট’ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন। অথচ কবির সমস্ত আক্ষেপের প্রতিধ্বনি পাওয়া যাবে মিলের বক্তব্যে–কেননা তিনি জানতেন আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শুধুমাত্র সংখ্যাধিক্যের জোরে এমন ক্ষমতা থাকে যা অপব্যবহার করা যায় ঠিক রাজতন্ত্রের মতই। বেন্থামকে উদ্ধার করে তিনি একে বলেছেন, ‘Sinister interest of the holders of power’. তাছাড়া রাজসভার কবির সঙ্গে মিলের তফাত কোথায় যখন শুনি–The moment a man or a class of men, find themselves with power in their hands, the man’s individual interest or the class’s separate interest acquires an entirely new degree of impor tance in their eyes. Finding themselves worshipped by others they become worshippers of themselves and think them selves entitled to be counted at a hundred times the value of other people.

কাজেই দলীয় কর্মীরা তাদের স্বাভাবিক সমর্থনের বৃত্তিতে আপন নেতা এবং মন্ত্রীদের যে অমানুযোচিত কীর্তিকলাপ উদ্ভাবন করেন তাতেই মন্ত্রী-পুবেরা এমন মানসিক অবস্থা লাভ করেন, যে তাঁরা যে মাঝে মাঝে দর্শন দেন তাতেই মনে হবে যেন অনুগ্রহ করছেন, তারা যে দৃষ্টিপাত করেন সেটিই মনে হবে যেন উপকার করছেন, তাঁরা যে কাউকে সম্ভাষণ করেন, তাতে মনে হবে যেন সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন। তারা যাকে আজ্ঞা দেন সে মনে করে যেন বর-লাভ করল। দলীয় কর্মীদের অকুণ্ঠিত বন্দনা-গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের মন্ত্রীরা তাকেই অভিনন্দিত করেন, তাদের সঙ্গেই আলাপ করেন–তমভিনন্দতি, তমালপন্তি–তাকেই পাশে রাখেন, তাকেই বাড়িয়ে তোলেন, তাদের সঙ্গেই সুখে থাকেন, তাদেরই দানমান দিয়ে থাকেন–তত্র বর্ষন্তি, তাদেরই বন্ধু বলে মনে করেন, তাদের কথাই শোনেন–তস্য বচনং শৃন্বস্তি, সেখানেই ধনবৰ্ষা করেন, তাদেরই আদর করেন, তাদেরই সমস্ত বিশ্বাসের পাত্র বলে মনে করেন–যারা দিবারাত্রি, সবসময়, অন্য কাজ ফেলে দিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে উপাস্য দেবতার মতো কেবল স্তব করেন অথবা সেই নেতার মাহাত্ম উদ্ভাবন করেন–যোহহর্নিশ উপরচিতাঞ্জলিঃ অধিদৈবতমিব বিগতান্যকৰ্ত্তব্যঃ স্তৌতি, যো বা মাহাত্ম্যম্ উদ্ভাবয়তি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *