1 of 2

১.১৪ সীমান্ত চিন্তা

সীমান্ত চিন্তা

(ক)

ভারতের পূর্বসীমান্তের কথা বলছি। বহু জাতি উপজাতি, নদনদী, পর্বত উপত্যকা নিয়ে গঠিত সেই ভূমি। বৈচিত্রের শেষ নেই সেখানে। যেন অন্য এক ভারত অল্প পরিসরের ভিতর। সৌন্দর্যে সমস্যায় ভরা। দ্রুত বদলে চলেছে দৃশ্যপট। তার সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া আমার অসাধ্য। সে চেষ্টাও করব না। যোগ্যতর কারও জন্য রইল সে কাজ। বিচিত্র দৃশ্যপটের দুয়েকটি অংশ বেছে নিয়ে আমি অল্প কিছু বলবার চেষ্টা করব। উদাহরণ হিসেবে শুধু মেঘালয় আর নাগাল্যান্ডের উল্লেখ থাকবে।

খাসি জয়ন্তিয়া গারো পাহাড় নিয়ে মেঘালয়। রাজধানী শিলঙের সঙ্গে বাঙালিরা পরিচিত। সেখানে প্রথম গিয়েছিলাম ১৯৩২ সালে, আমি তখন ছেলেমানুষ। তারপর সামান্য সময়ের জন্য দুয়েকবার গেছি। ওখানে কিছুদিন থাকবার সুযোগ হয়েছিল ১৯৮৫ সালের বসন্তে।

মেঘালয় নামটি নতুন। ঐ অঞ্চলের সঙ্গে বাইরের, বিশেষত আসাম ও শ্রীহট্টের, যোগাযোগ কিন্তু অনেকদিনের। সেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল ব্যবসা চাকরি আর পর্যটনের ভিতর দিয়ে। এসব কিছু নতুন কথা নয়, সকলেরই জানা আছে। সমতল ভূমির বাঙালির সঙ্গে খাসি পাহাড়ের ভাবের আদানপ্রদানের কথা কিন্তু আমরা অনেকেই তেমন জানি না। অথচ জানবার যোগ্য বিষয় সেটা।

এবার শিলঙে দেখা হয়েছিল শ্রীহিপশন রায়ের সঙ্গে। তিনি ‘সেঙ খাসি’ আন্দোলনের এক নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এটি একটি ধর্মীয় আন্দোলন।

এর পটভূমি হিসেবে দুয়েকটি কথা বলে নেওয়া যাক। ১৮৪১ সালে টমাস জোন্স। নামে একজন প্রেসবিটেরিয়ান মিশনারি চেরাপুঞ্জিতে আসেন। শুধু খৃস্টধর্মের প্রচারেই নয়, ঐ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার গঠনেও তাঁর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সেখানকার মানুষের জন্য তিনি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন খৃস্টধর্মকে অবলম্বন করে রোমান লিপিতে। এইভাবে সেখানে রোমানলিপির প্রতিষ্ঠা হ’ল। তার আগে বাংলা লিপির কিছু ব্যবহার লক্ষ করা গেছে কাগজপত্রে।

মিশনারিদের কাজকর্মের ফলে খাসি পাহাড়ের সবাই ইংরেজ আমলে খৃস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এমন নয়। অনেকেই করেননি। প্রতিরোধী শক্তিও ছিল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেঙ খাসি আন্দোলন। এর উদ্ভব উনিশ শতকের শেষদিকে। ১৮৯৯ সালে সেঙ খাসির প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল ব্রাহ্মসমাজের একটি গৃহে।

সে যুগে সেঙ খাসি আন্দোলনের উপর ব্রাহ্ম ও হিন্দুধর্মের প্রভাব সুস্পষ্ট। এই আন্দোলনের প্রথম যুগে নেতাদের ভিতর ছিলেন জীবন রায়, তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের সমবয়সী। তাঁর ছেলে শিবচরণ রায় রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক। ইনি সংস্কৃত ও বাংলা শেখেন, ভগবদগীতা খাসি ভাষায় অনুবাদ করেন। খাসির সঙ্গে হিন্দুধর্মের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এরা স্বীকার করতেন অনায়াসে।

আজ কিন্তু অবস্থার কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে খৃস্টধর্মের সঙ্গে সেঙ খাসির পার্থক্য তো জন্মসূত্রেই আছে। হিন্দুধর্মের সঙ্গেও খাসি ধর্ম অভিন্ন নয়, বরং তার স্বাতন্ত্র্যই স্বীকার্য, এ যুগের খাসি নেতাদের বক্তব্যে এই সুরটাই প্রাধান্য পেয়েছে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই, এটাই স্বাভাবিক। বুঝতে অসুবিধা হয় না, সামাজিক ও রাজনীতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোথাও মিল আছে। এ বিষয়ে আপত্তি করবার অধিকার অর্জন করেননি হিন্দুরা। খাসি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে কতটা যোগ তাঁরা রেখেছেন?

খাসিদের সঙ্গে প্রতিতুলনায় এবার নাগাদের কথায় আসা যাক। কোহিমায় যাবার সুযোগ হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিথ্যে এক বক্তৃতা উপলক্ষে।

খাসি ও গারো পাহাড়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বহুদিনের, কিন্তু নাগাদের সঙ্গে আমাদের অপরিচয়ের দূরত্বটাই প্রধান। সভ্য লোকালয়ের অনেক দূরে এঁদের বাস, নরমুণ্ড শিকারে এঁরা পারদশী, অনেকেই আবার নগ্নতায় অভ্যস্ত, এইরকম কিছু অস্পষ্ট ধারণা নাগা নামটির সঙ্গে যুক্ত।

নাগাদের ভিতর আও, আঙ্গামি, সেমা ইত্যাদি বিভিন্ন উপজাতি আছে। এইসব উপজাতির মধ্যে ভাষাগত ও অন্যান্য পার্থক্য লক্ষণীয়। উনিশ শতকে বিদেশী মিশনারি এবং ইংরেজ সৈন্য ও প্রশাসকদের সঙ্গে নাগাদের যোগাযোগ ঘটে, সেই সূত্রে বিভিন্ন উপজাতি সম্বন্ধে নানা বিবরণ পাওয়া যায়। তারপর অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। নাগাদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা সেই পুরনো বিবরণ থেকে পাওয়া, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কল্পনা। ঐসব বিবরণ একেবারে মিথ্যা ছিল এমন নয়। তবে নাগাদের চরিত্র সম্বন্ধে তা থেকে কোনও অদৃষ্টি আমরা লাভ করিনি।

যেমন ধরা যাক, নগ্নতা! নাগাদের কোনও কোনও উপজাতি সম্বন্ধে বিবরণে এটা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কল্পনায় দৃশ্যটাকে আমরা ক্লেদাক্ত করে দেখি। নাগাদের ভিতর নগ্নতা যদি বা ছিল, সৌন্দর্যবোধের অভাব কখনও ছিল না। সেটা আমরা খেয়াল করি না। তা ছাড়া তাঁদের চরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য সত্যভাষণ, কাপট্যের অভাব। সে যুগের পর্ববেক্ষকেরা আরও লক্ষ করেছিলেন, বহিরাগতদের অনুকরণে বস্ত্র পরিধানের ফলে নাগাদের মধ্যে ব্যাধি বৃদ্ধি পায়। তার কারণও বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে। এটা ভেবে দেখবার মতো বিষয়।

নরমুণ্ড শিকার সমর্থনযোগ্য নয়। নাগাদের ভিতর এককালে এটা প্রচলিত ছিল। তবে ইউরোপীয় সভ্য মানুষ যুদ্ধবিগ্রহের ভিতর দিয়ে যত নরহত্যা করেছে, নাগাদের ভিতর অনুপাতে তার চেয়ে বেশি কিছু ঘটেনি। কথাটা বলেছেন পশ্চিমী এক সমাজতত্ত্ববিদ। নিরপেক্ষ বিচারে এটা একেবারে তুচ্ছ কথা নয়।

যাই হোক, পুরনো বিবরণ থাক, এসব আজ প্রধান প্রশ্ন নয়। নাগাভূমির সমাজে আমাদের চোখের সামনে যে পরিবর্তন ঘটছে, যে সব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সে দিকেই। এখন বিশেষভাবে মন দেওয়া দরকার।

ছোট একটা ঘটনা দিয়ে কথা শুরু করি কোহিমা যাবার পথে একজন অধ্যাপকের মুখে ঘটনাটি শোনা গেল। মনে রাখা দরকার যে, ওখানকার ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত স্থানীয় নাগা, আর অধ্যাপকেরা অধিকাংশই বহিরাগত। ঘটনাটি এই রকম। একটি নাগা ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরের ভিতর ঢুকে দুয়েকটি ছাত্রকে মারধোর করে গেছে। আক্রমণকারী। ছেলেটি নিজে ছাত্র নয়, তবে ছাত্রদের কাছে সে অপরিচিত নয়। এই ঘটনার পর। স্বভাবতই উত্তেজনা দেখা দেয়। ছাত্র এবং অধ্যাপকদের এক মিলিত সভায় ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হয়। অধ্যাপকেরা বলেন, পুলিসকে ঘটনাটা জানানো দরকার।

এ পর্যন্ত কাহিনীতে কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এই রকম আরও ঘটতে দেখেছি, এমনকি শান্তিনিকেতনে, শ্রীনিকেতনেও। সুরুলের ছেলে শ্রীনিকেতনের ছাত্রদের, কিংবা বোলপুরের ছেলে শান্তিনিকেতনে, মারপিট করে যায়। ছাত্ররা তখন দল বেঁধে এসে দাবি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুলিসকে বলতে হবে বাইরের গুণ্ডা ছেলেকে যেন অবশ্য শায়েস্তা করা হয়। অধ্যাপকেরা কেউ কেউ হয়তো নিচু গলায় মত প্রকাশ করেন যে, ছেলেদের নিজেদের ভিতর একটা মিটমাট হওয়া দরকার, শুধু পুলিসী হস্তক্ষেপে কাজ হবে না। কিন্তু থানায় নালিশ জানাবার পক্ষেই অধিকাংশের দৃঢ় অভিমত। মেনে নিতে হয়। কাগজে অনেক সময় তিক্ত অভিযোগ শোনা যায় যে, পুলিসকে জানাতে দেরি হয়েছিল বলেই ব্যাপারটা এতদূর গড়াল।

এইখানে এসেই কোহিমার ঘটনায় বৈশিষ্ট্য দেখা গেল। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিসে খবর পাঠাতে রাজি। কিন্তু নাগা ছাত্রদের অভিমত অন্যরকম। ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করতে হবে সমাজের ভিতরেই। পুলিস তো বাইরের প্রতিষ্ঠান। নাগা ছেলেদের ধারণায় ব্যক্তিমাত্রই কোনও গ্রাম ও উপজাতির অন্তর্ভুক্ত, এমনকি অধীনে। গ্রামসমিতির সামনে আক্রমণকারী ছেলেটিও মিথ্যা বলবে না। বিচারের ব্যবস্থাও আছে সেখানেই। স্থির হ’লঅভিযোগ জানানো হবে গ্রাম সমিতির কাছে।

নাগাভূমিতে গ্রামসমিতি এখনও মৃত নয়। সেখানে যৌথ জীবন, উপজাতীয় সংহতি ও সততা এখনও ভেঙে যায়নি। কিন্তু এসবই ভাঙবার মুখে। সেই ভাঙনের দৃশ্যটা নাগাল্যান্ডে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখা যায়, চোখের ওপর ঘটছে।

ওখানে গত কয়েক বছরে পাহাড়ের গা ধরে নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে, মাইলের পর মাইল, সরকারি অর্থে। কোটি কোটি টাকা ঢালা হয়েছে নাগাভূমির উন্নয়নের নামে। এর ফলে বেড়ে উঠেছে নতুন ঠিকাদার গোষ্ঠী। নাগাল্যাণ্ডে এই রীতি, ঠিকা দিতে হবে স্থানীয় মানুষকে। অথচ নাগারা মজুর খাটাবার কাজে অভ্যস্ত নন। তাই ঠিকা নিয়েও তাঁরা কাজটা তুলে দেন অন্য কোনও ঠিকাদারকে যিনি সমতলবাসী। টাকা ভাগ হয়ে যায় এই দ্বিতীয় ব্যক্তির সঙ্গে। এখন অবশ্য কিছু কিছু নাগা নিজেরাই ঠিকা ব্যবসায়ে ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। নাগা সমাজের ভিতর প্রবল হয়ে উঠেছে এক নতুন বৈষম্য।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দলীয় রাজনীতি। পুরনো সমাজে এ ব্যাপারটা ছিল না। কিন্তু অনভ্যস্ত নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগারাও আজ অভ্যস্ত। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনীতির নেতাদের যোগ ঘটেছে। সমতলভূমিতে আমরা যে দুর্নীতি দেখি চারদিকে তার প্রবেশ ঘটেছে নাগাভূমিতেও। এই সবের চাপে ভেঙে পড়ছে পুরনো উপজাতীয় সমাজ। দিনে দিনে দূর্বল ও বিকৃত হচ্ছে গ্রাম সমিতি। আজকের নাগা যুবক একই সঙ্গে এই নতুন শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট এবং এর দৌরাত্ম্যে বিক্ষুব্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় একটি নাগা যুবক বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, নাগাদের স্বাধীন রাষ্ট্রস্থাপনের অধিকারের সপক্ষে। শ্রোতাদের ভিতর ভিন্ন অঞ্চলের মানুষও অনেক ছিলেন। নানারকম প্রশ্ন হচ্ছিল। একজন বললেন, ‘আপনারা তো ভারতীয় সংবিধান মেনে নিয়েই নির্বাচনে যোগ দিয়েছিলেন। সংবিধানে ভারত থেকে বেরিয়ে যাবার অধিকার নেই। সেই অধিকার এখন আপনি চাইছেন কী করে?’ নাগা যুবকটি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা নির্বাচনে যোগ দিয়েছি বটে, তবে সেটা টাকার খেলার টানে।’

নাগারা অধিকাংশই খৃস্টান। সেঙ খাসি ধরনের অন্দোলন সেখানে চোখে পড়ে না। কিন্তু বৃটিশ শাসকদের প্রতি তাঁদের একটা খণ্ডিত মনোভাব ছিল। সমতলভূমির মানুষদের নাগারা অবিশ্বাসের চোখে দেখতেন। বিদেশী শাসনকে অনেকে মন্দের ভালো বলে মেনে নিয়েছিলেন। তাতে আন্তরিক সমর্থন ছিল না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় দেখা গেল ফিভজার সহানুভূতি ইংরেজের দিকে নয়, বরং নেতাজীর আই এন এ অর্থাৎ আজাদ হিন্দ ফৌজের পক্ষে। যুদ্ধের পর এই ফিজোই আবার ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পথে পা বাড়ালেন। এতেও খুব আশ্চর্য হবার কিছু কি আছে?

সম্প্রতি সেঙ খাসির প্রতিনিধি গিয়েছিলেন আন্তজাতিক ধর্ম সম্মেলনে। তাঁদেরও মনে আছে উপজাতীয় ধর্মকে উদার মানবিকতার সঙ্গে মেলাবার আকাঙ্ক্ষা। অথচ প্রতিবেশী সমতলবাসীর সঙ্গে পার্বত্য সমাজের সম্পর্ক বিরোধ-সহযোগের বৈপরীত্যে অশান্ত। এগিয়ে থাকা মধ্যবিত্তের সঙ্গে উঠতি মধ্যবিত্তের সংঘর্ষ আমরা আরও দেখেছি। কিন্তু সীমান্তে পরিস্থিতি আরও জটিল। উপজাতীয় যুবকেরা ক্রমে শিক্ষিত হয়ে উঠছেন। ভারতের বৃহত্তর জীবনে তাঁরা ধীরে ধীরে স্থান করে নেবেন। সেই সুযোগ তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় হবারই কথা। কিন্তু এই আকর্ষণের মধ্যেও প্রচ্ছন্ন আছে একটা উদ্বেগ। নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন উপজাতীয় অস্তিত্বের বিপন্নতাবোধ।

সীমান্তের কঠিন সমস্যা। কোনও সহজ সমাধান নেই। ধৈর্য সহানুভূতি ও দূরদৃষ্টি চাই। সীমান্ত আমাদের শিক্ষা দেয় সারা দেশের সমস্যাকেই নতুন চোখে দেখতে, নতুন। সমন্বয়ের ভাবনা ভাবতে। উত্তরপূর্ব সীমান্ত অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের জাতীয় সংহতি এখনও অসম্পূর্ণ।

(খ)

এ প্রবন্ধের উপলক্ষ উত্তর-পূর্ব-সীমান্ত। কিন্তু মূল প্রশ্ন সেখানে আবদ্ধ নয়।

আমাদের সংবিধানে সকল নাগরিকের জন্য কয়েকটি মৌল অধিকারের কথা বলা আছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি জীবিকা সংক্রান্ত কিছু সমান অধিকারের কথাও সংবিধানে স্থান পেয়েছে। চাকরি, ব্যবসায়, সম্পত্তির লেনদেন–এই সবকিছুতে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি আছে। অবশ্য পরমুহূর্তেই আবার এইসব ব্যাপারে, বিশেষ উদ্দেশ্যে, বাধা-নিষেধ আরোপ করবার অধিকারও রাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে।

উপজাতি-অধুষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সমতলবাসীদের জমি কিনবার অধিকার এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। চাকরির ব্যাপারে আঞ্চলিক উপজাতির বিশেষ অধিকার স্বীকৃত। অর্থাৎ ঐসব অঞ্চলে বাইরের ভারতীয়দের জীবিকা ও বসবাসের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে আইনের দ্বারা। বাধা পাচ্ছে কেবল সমতলবাসীই নয়, নেপালিদের বিরুদ্ধেও কোনো কোনো অঞ্চলে বিরূপতা দেখা গেছে। বাধানিষেধের বেড়া উঠছে দিকে দিকে। প্রতিবন্ধ স্থাপিত হচ্ছে দেশময় অবাধ গতিবিধির পথে। মনে হতে পারে যে, সংবিধানের শব্দার্থের না হোক, ভাবার্থের সঙ্গে বিরোধ আছে এইসব প্রতিবন্ধের।

উপজাতিদের দৃষ্টিতে কিন্তু এইসব বাধানিষেধ আবশ্যক। নিজ-নিজ বাসভূমিতে উপজাতিরা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আশা করে। সমতলবাসী মানুষ দলে দলে পার্বত্যাঞ্চলে বসতিস্থাপন করলে তারাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে। উপজাতিদের নিজস্ব অঞ্চল বলে তবে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। ভারতে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এই ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে আমাদের উপজাতীয় বন্ধুরা ত্রিপুরার উদাহরণ তুলে ধরেন। সমতলের মানুষ বড়ো সংখ্যায় ত্রিপুরায় প্রবেশ করার পর সেখানকার উপজাতি নানাভাবে বঞ্চিত ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যত্র প্রধান উপজাতিরা এবার সতর্ক।

উপজাতীয় বন্ধুদের মনে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সেটা একেবারে অবাস্তব নয়। তবু একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তাঁরা কী চান? তাঁরা কি তাঁদের ঐতিহ্য, তাঁদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে চান? সমতলবাসীদের ঠেকাতে পারলেই কি সেই বৈশিষ্ট্য রক্ষা পাবে? অথবা শ্রদ্ধা দেখানো হবে সেই ঐতিহ্যকে? এ প্রসঙ্গে গান্ধীজীর ‘হিন্দ স্বরাজ’ বইটির কথা মনে পড়ে। গান্ধী এইরকম একটা মৌল প্রশ্নই তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা কি শুধু ইংরেজ তাড়াতে চাই? ইংরেজকে তাড়িয়ে সরকারি ক্ষমতা ভারতীয়দের হাতে এল, আর ইংরেজের সমাজ ও সংস্কৃতির অনুকরণে আমরা গড়ে তুললাম আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি, সেটাই কি হবে স্বাধীনতা?

গান্ধীজী যা-যা ভয় করেছিলেন, ভারত এগিয়ে গেছে সেই পথেই। তিনি চেয়েছিলেন গ্রামভিত্তিক এক মহাসমাজ যেখানে নগরেরও স্থান থাকবে, কিন্তু আধিপত্য থাকবে না। তিনি যেমন চেয়েছিলেন তেমন হয় নি। এ প্রজন্মেই গড়ে উঠেছে এমন এক ভারত, আমলাদের সঙ্গে যেখানে ব্যবসায়ীদের বৈধ ও অবৈধ বন্ধন, রাজনীতি যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত, সংস্কৃতি যেখানে পশ্চিমের এক প্রবল এবং অগভীর অনুকরণ। আমাদের গ্রামও আজ এই নগরকেন্দ্রিক রাজনীতি ও সংস্কৃতির দ্বারা আক্রান্ত।

এদেশে গ্রামের অবক্ষয় আরম্ভ হয়েছে বহুদিন আগেই। এই অবক্ষয়ে উদ্বিগ্ন হয়েই গান্ধীজী লিখেছিলেন তাঁর ‘হিন্দ স্বরাজ’। উপজাতীয় অঞ্চলে কিন্তু গ্রামীণ অথবা আঞ্চলিক সমাজ এতটা ভেঙে পড়েনি বহুদিন পর্যন্ত। এটাকে স্বীকার করে নিয়েই। ভারতীয় সংবিধানে যোগ করা হয়েছে কিছু সংশোধনী ধারা। উপজাতীয় প্রদেশে গ্রামসমিতি আর জিলাসমিতিকে দেওয়া হয়েছে এমন কিছু অধিকার, ভারতের অন্যত্র যেটা নেই। নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম অথবা মেঘালয়ে গ্রাম ও জিলা সমিতিকে ভিত্তি করে বৃহত্তর সমাজ গড়ে তুলবার অন্তত একটা কল্পনা উঁকিঝুঁকি মারে সংবিধানের নতুন সংযোজনে।

অথচ অস্বীকার করা যায় না একথা, গ্রাম ও জিলা সমিতির প্রতিষ্ঠা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে উপজাতীয় রাজ্যেও। মেঘালয় থেকে উদাহরণ নেওয়া যাক।

শিলং-এ এক আলোচনাসভায় মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক। ইনি নিজে খাসি, রাজনীতি করেন, একসময় মন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় উপকৃত হলাম। তিনি বললেন, জিলাসমিতি ক্ষমতা হারাচ্ছে, রাজ্যসরকারের ক্ষমতা বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব দেওয়া আছে জিলাসমিতির হাতে। কিন্তু সে দায়িত্ব বহন করবার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই সমিতির। কাজেই রাজ্যসরকারের হাতে গিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।

সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নিয়মকানুন নির্ধারণ করবার ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী দেওয়া আছে জিলার স্তরে। কিন্তু এরই মধ্যে একটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। জটিলতাটা এইরকম। মেঘালয়ে উপজাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে ছেলে নয়, মেয়ে! বিয়ের পর মেয়ে যায় না মাকে ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে সংসার করতে, ছেলে আসে মেয়ের বাড়িতে। উত্তরাধিকারসূত্রে যদিও সম্পত্তি লাভ করে না ছেলে, তবু একটা প্রশ্ন থাকে। ছেলে যদি নিজে চাকরি করে অথবা ব্যবসায়ে টাকা জমায় তবে সেই সম্পত্তির স্বত্ত্বাধিকারী কে হবে? আর তার উত্তরাধিকারীই বা কে? স্বোপার্জিত অর্থের অধিকারী হবেন যিনি উপার্জন করেছেন তিনি নিজে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে ছেলে। এটাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনকানুন তাহলে পুরনো উপজাতীয় ঐতিহ্যের দ্বারা পরিচালিত হবে না। এক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করবে। রাজ্যের বিধানসভা। এইরকম একটা চিন্তাই প্রাধান্য পেয়েছে। বাস্তব ঘটনার ঝোঁক এই দিকে, জিলাসমিতি ক্ষমতা হারাচ্ছে।

আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীগোষ্ঠী পরস্পরকে আশ্রয় করে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, উত্তর-পূর্ব সীমান্তের পার্বত্য অঞ্চলেও। রাজ্যসরকারের ক্ষমতা বাড়ছে। রাজনীতিতে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে একই সঙ্গে। মেঘালয়ের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী নিজেই আমাকে সরলভাবে বললেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি অর্থ এবং অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছেন, এ ছাড়া রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না। সমতলভূমির সঙ্গে উপজাতীয় সমাজের মৌল পার্থক্য কমে আসছে ক্রমে ক্রমে।

নাগাল্যাণ্ড দাবি জানাচ্ছে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় চাই। দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে খাসি, মিজো অথবা নাগা শিক্ষিত যুবকের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিশেষ পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। সর্বত্রই ডিগ্রীধারী যুবক চাইছেন একটি সরকারি চাকরি অথবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অফিসারের কাজ। অনুমান করা যায়, উপজাতীয় ছেলেরাও আমলাতন্ত্রের সেবায় নিযুক্ত হবেনক্রমবর্ধমান সংখ্যায়। সমতলবাসীকে হয়তো ঠেকানো কঠিন হবে না, কিন্তু। উপজাতীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য রক্ষা পাবে না তাতে। নাগরিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী, ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও ব্যবসায়–এই সবই এগিয়ে আসছে ভারতের সীমান্ত সমাজেও।

একথা কেউ হয়তো বলবেন, এটাই এযুগের ধারা, এর বিরুদ্ধে কাজ করা এক অবাস্তব চিন্তা। যেটা অনিবার্য কে মেনে নেওয়াই ভালো। বাস্তবকে স্বীকার করে নিয়েই আজকের উপজাতীয় যুবক বৃহত্তর সমাজে এবং ইতিহাসে তাঁর স্থান করে নেবেন।

বাস্তবের দাবি মান্য। কিন্তু কাকে বলব বাস্তব? কী সম্ভব আর কী নয়, সেটা নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টির প্রসারের ওপর। কালের অতিনিকট সীমানার ভিতর যেটা সম্ভব নয়, দূরতর সময়ের সীমার মধ্যে সেটাও সম্ভব। দুর্ভিক্ষ যখন দেখা দেয়, তখন লঙ্গরখানা খোলাই হয়ে ওঠে সেই মুহূর্তের কাজ কিন্তু খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াবার দিকে। মনোযোগ দেওয়াটাই ভবিষ্যতের কর্তব্য। উপস্থিত মুহূর্তকে উপেক্ষা করলে তাকে বলি কল্পনাবিলাস! কিন্তু ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও যদি সমান সত্য বলে না জানি তবে উপস্থিতটাই বড়ো হয়ে উঠে আমাদের একেবারে গ্রাস করে। কাজেই উপস্থিত বাস্তবকে অবহেলা না করেও মানুষের চিন্তার সীমান্তকে বিস্তৃত করতে হয় দূর থেকে দূরতর ভবিষ্যতের দিকে। আমাদের পরিকল্পনার পরিধির ভিতর সাজিয়ে নিতে হয় সময়ের একাধিক বৃত্ত। বাস্তববোধের সঙ্গে আদর্শের বিরোধচিন্তায় আছে শুধু চিত্তার দারিদ্র।

এ যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা বলে গেছেন, সুস্থ সমাজের ভিত্তিতে থাকা চাই সৎ প্রতিবেশী ভাবনা। এখানে পাই পল্লীর আদর্শ রূপ। প্রতিবেশীকে নিয়ে পল্লী। এই অর্থেই পল্লীসংগঠন দিয়ে শুরু করতে হয় সুস্থ সমাজগঠন। এই চিন্তা নিয়েই আরম্ভ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন। এরই সঙ্গে এসে যায় আরেকটি কথা। গান্ধী ঠিকই বুঝেছিলেন, পল্লীর এই আদর্শ রূপ রক্ষা করা যাবে না আর্থিক পুনর্গঠন ছাড়া, আর সেই পুনর্গঠনের একটা মূল কথা বিকেন্দ্রীকরণ।

প্রত্যক্ষ বাস্তবের ঝোঁক বিপরীত দিকে। তাই আমাদের কাছে এসব মনে হয় অবাস্তব কথা। অথচ আমাদের চোখের সামনেই ভেঙে পড়ছে সমাজ- শুধু পুরনো সমাজ নয়, বর্তমান সমাজও–এই প্রত্যক্ষ বাস্তবের আঘাতে। এটাকেই যদি একমাত্র বাস্তব বলে জানি তবে মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনকে বেশিদিন রক্ষা করবার আশাটাই অবাস্তব।

ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, এই শতাব্দীতে বড়ো করে এটাই চোখে পড়ে। কিন্তু এরই পাশে ধীরে ধীরে রূপ গ্রহণ করছে এক নতুন প্রযুক্তি। তাতে নিহিত আছে অন্য এক সম্ভাবনা, বিকেন্দ্রিত সমাজের সম্ভাবনা। সেই দিকে আমাদের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করতে চাইছেন কিছু দূরদ্রষ্টা সমাজবিজ্ঞানী। কে জানে, তাঁরাই হয়তো হবেন ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। সেই দূরের ভবিষ্যতে আমরা হঠাৎ গিয়ে পৌঁছোতে পারব না। তবু তাকেও আমদের চিন্তার পরিধির ভিতর রাখতে হবে।

দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি আজকের রূঢ় বাস্তব। তাই বলে কি আমরা তাকেই স্থায়ী সত্য বলে মেনে নেব? বরং এই বিশ্বাসই রাখতে হবে যে, রাজনীতিরও পুনর্গঠন সম্ভব। দ্বিদলীয় অথবা বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা ত্যাগ করে একদলীয়তার আশ্রয় নিলেই দুর্নীতি দূর হয় না। এর প্রমাণ ছড়িয়ে আছে সমাজতান্ত্রিক তথা রাষ্ট্রতান্ত্রিক দেশগুলিতে। একদলীয় শাসনব্যবস্থায় পাই কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার এক চরম প্রকাশ। গান্ধী ও মানবেন্দ্রনাথ সহ কিছু প্রকৃষ্ট চিন্তানায়ক বলেছেন নির্দলীয় গণতন্ত্রের কথা। সেটা এই মুহূর্তে অবাস্তব চিন্তা বলে অনেকের কাছে গণ্য। অথচ এটাও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সমাজের ভিত্তিতে। যে আদর্শ পল্লীর কথা চিন্তা করা হয়েছে, তার সঙ্গে দলীয়তার কোনো রকমেই শেষ অবধি। সামঞ্জস্য হয় না। বন্ধু সমাজেও মতের পার্থক্যের স্থান থাকবে, কিন্তু দলীয়তা হতে পারে না কোনো আদর্শপল্লী অথবা প্রতিবেশীগোষ্ঠীর ভিত্তি। শেষ অবধি শ্ৰেয় সমাজসংগঠনের ভিত্তিতে থাকবে নির্দলীয় গণতন্ত্র।

এই সব কথাই বোঝা সম্ভব অনুত্তেজিত যুক্তির আলোতে। আমাদের সীমান্তবাসী বন্ধুরা জানেন, উপজাতীয় অতীতে প্রত্যাবর্তন আর সম্ভব নয়। তবুও সেই অতীত। থেকেও কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার আছে। সীমান্তের বন্ধুদের কাছে সেই অতীত কিছু দূরস্মৃতি নয়। তারই সঙ্গে যুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে পাওয়া যাবে ভবিষ্যতের নতুন চিত্র। শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, আঞ্চলিক স্বয়ম্ভরতার প্রতি মনোযোগ, পল্লীসংগঠন—এই সবই। অপেক্ষাকৃত সহজে হতে পারে সীমান্ত অঞ্চলে। এই মুহূর্তের বাস্তবকে মেনে নিয়েই উপজাতীয় যুবকেরা অবশ্য স্থান করে নেবেন ভারতের বৃহত্তর সমাজে। কিন্তু তাঁদের ঐতিহাই তাঁদের প্রস্তুত করেছে আরো সার্থক এক ভূমিকার জন্য। সে বিষয়ে তাঁরা সচেতন হলেই সকলের পক্ষে মঙ্গল।

সীমান্তচিন্তাই হয়ে উঠতে পারে আমাদের সমাজচিন্তার নবসীমান্ত।

সমাজ সংস্কৃতি স্মৃতি (১৯৮৭)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *