০৬. সাংঘাতিক সব কাণ্ড শুরু

॥ ৬ ॥

এইবার আমাদের কাহিনিতে সাংঘাতিক সব কাণ্ড শুরু হবে।

সবই এই পাশা খেলাকে কেন্দ্র করে। সাধু বাংলায় একে বলে দ্যূতক্রীড়া। এই খেলাটা ছিল কেমন, তা আমরা এখন জানি না। একটা মাত্র ঘুঁটি। একবার দান ফেললেই জয়-পরাজয় বোঝা যায়।

এই খেলায় অনেক টাকাপয়সা, বিষয়সম্পত্তি বাজি ধরতে হয়। প্রথমবার যুধিষ্ঠির বললেন তাঁর গলার সোনার হারে একটা বহুমূল্য মণি আছে, যেটা সমুদ্র থেকে পাওয়া, সেটাই বাজি। দুর্যোধনও অনেক মণিমাণিক্য ও স্বর্ণমুদ্রা বাজি ধরলেন। একবার দান ফেলেই জিতে গেলেন শকুনি।

যুধিষ্ঠির বুঝে গেলেন, শকুনি কিন্তু একটা জোচ্চুরি করেছেন। সেটা বুঝেও তিনি আবার খেলতে গেলেন কেন?

যুধিষ্ঠির আবার খেলতে রাজি হলেন, কারণ, তিনি ভাবলেন, পরের বার ঠিক জিতবেন। জুয়া খেলায় এ রকমই হয়।

এরপর বারবার প্রচুর ধনরত্ন, ঘোড়া, রথ, এক লক্ষ দাস-দাসী এইসব পণ রাখলেন যুধিষ্ঠির, প্রত্যেকবার হারলেন। রাজধানী, রাজ্য সব গেল। একেবারে সর্বস্বান্ত!

যুধিষ্ঠিরের পাশে তাঁর চার ভাই বসে আছেন। দাদার উপর তাঁদের এমনই প্রবল ভক্তি যে, একবারও আপত্তির টুঁ শব্দও করেননি কেউ। এখনকার দিনে এটা আমাদের বড্ড বাড়াবাড়ি মনে হয়। আমাদের দাদাকে আমরা যতই ভক্তি করি আর ভালবাসি, তবু এ রকম সাংঘাতিক ভুল করতে দেখলে কি একবারও সাবধান করে দেব না?

যুধিষ্ঠিরের তখনও খেলার নেশা যায়নি। কিছুদিন আগেই তিনি ছিলেন বিরাট এক রাজ্যের রাজা, এখন পথের ভিখারি। শকুনি ঠাট্টা করে বললেন, “এবার আর কী বাজি রাখবেন?

জুয়ার নেশায় উন্মত্ত হয়ে যুধিষ্ঠির বললেন, “আমার ভাই নকুল আমার খুব প্রিয়। তাকেই বাজি রাখলাম।”

এবারেও শকুনি জিতলেন। পরের বার সহদেবকেও তাই।

দুই ভাই ক্রীতদাস হয়ে গেল। শকুনি বললেন, “এরা তো আপনার সৎভাই৷ আপনার মায়ের পেটের ভাইদের বোধ হয় বাজি রাখবেন না!”

যুধিষ্ঠির রেগে গিয়ে বললেন, “মূর্খ, সব ভাই-ই আমার কাছে সমান। তুমি এই বলে আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারবে না।”

শকুনি বললেন, “রাজা, জুয়া খেলার সময় অন্য পক্ষকে রাগাবার জন্য তো এ রকম কথা বলাই হয়। এবার তা হলে?”

যুধিষ্ঠির বললেন, “যিনি পণের অযোগ্য, সেই মহাবীর অর্জুনকেই আমি পণ রাখছি।”

এক দানেই জিতে গেলেন শকুনি।

যুধিষ্ঠির বললেন, “আমাদের বিপদে-আপদে সব সময় যার উপর বেশি ভরসা করি, সেই ভীমকে বাজি রাখছি।”

এবারও হেরে গিয়ে যুধিষ্ঠির নিজেকেই বাজি রাখলেন এবং সঙ্গে-সঙ্গে হারলেন।

কাছাকাছি ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, বিদুর প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে দেখছেন। ধৃতরাষ্ট্র দেখতে পান না বলে সকলে তাঁকে শোনাচ্ছেন সব কিছু।

এ কী সাংঘাতিক খেলা, রাজ্যহারা পঞ্চপাণ্ডবই এখন কৌরবদের ক্রীতদাস!

এতেও শেষ নয়, শকুনি যুধিষ্ঠিরকে বললেন, “রাজা, আপনার নিজের কিছু ধনসম্পদ বাকি থাকতেই আপনি নিজেকে পণ ধরেছেন, এটা তো ঠিক নয়।”

যুধিষ্ঠির অবাক হয়ে বললেন, “বাকি আছে? কিছুই তো বাকি নেই।”

শকুনি বললেন, “কেন, দ্রৌপদী? তাকে পণ রেখে যদি জেতেন। তা হলে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন।”

যুধিষ্ঠির বললেন, “রূপে-গুণে যাঁর তুলনা নেই, সেই দ্রৌপদীকে পণ রাখলাম।”

এবারেও যুধিষ্ঠির জিততে পারলেন না।

সভার একদিকে যেমন দুঃখের দীর্ঘশ্বাস পড়ল, অন্যদিকে দুর্যোধন আর তার বন্ধুরা আনন্দে খলখল করে হেসে উঠলেন।

দুর্যোধন প্রতিকামী নামে একজন অনুচরকে বললেন, “যাও, তুমি দ্রৌপদীকে এই সভায় ডেকে নিয়ে এসো।”

প্রতিকামীর মুখে সব শুনে দ্রৌপদী বললেন, “তুমি আগে যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞেস করে এসো যে, তিনি কি আগে আমাকে পণ করেছেন, না নিজে হেরে যাবার পর?”

প্রতিকামী ফিরে এলে যুধিষ্ঠির কোনও উত্তর না দিয়ে মুখ নিচু করে বসে রইলেন।

দুর্যোধন প্রতিকামীকে বললেন, “তুমি আবার যাও, দ্রৌপদীকে বলো, সে নিজে এসে যেন সভায় এই প্রশ্ন করে।”

প্রতিকামী আবার যেতেই দ্রৌপদী বললেন, “যুধিষ্ঠির উত্তর না দিলেও ওখানে তো ভীষ্ম, দ্রোণের মতো গুরুজনরা রয়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করো, যুধিষ্ঠির নিজে হেরে যাবার পর আমাকে পণ রাখতে পারেন কি না।”

দুর্যোধনের আর এত কচকচি সহ্য হচ্ছে না। ধৈর্য হারিয়ে দুঃশাসন ছুটে গিয়ে চুলের মুঠি ধরে দ্রৌপদীকে টানতে-টানতে নিয়ে এলেন সেই সভায়।

কী বীভৎস কাণ্ড! পাণ্ডবদের রানি, তাঁকে কি অন্তঃপুর থেকে এইভাবে সভায় আনা যায়? অনেকে লজ্জায় মুখ নিচু করে রইল।

আর দুর্যোধনের দল হইহই করে বলতে লাগলেন, “রানি কোথায়? জুয়ায় হেরে ও তো এখন দাসী।”

এই সময় কর্ণও এই দলে ভিড়ে দ্রৌপদীকে অনেক খারাপ-খারাপ কথা বলেছিলেন, যা তাঁর মতো বীরপুরুষের পক্ষে মোটেই উচিত হয়নি। হয়তো স্বয়ংবর সভায় দ্রৌপদী তাঁকে অপমান করেছিলেন বলে সেই রাগ তিনি পুষে রেখেছিলেন।

ভাইদের একে-একে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে যখন, তখনও কোনও ভাই আপত্তি করেননি। এখন দ্রৌপদীর এই অপমান ভীমের সহ্য হল না, রাগের চোটে তিনি যুধিষ্ঠিরের হাতটা পুড়িয়ে দেবার কথা বলতেই অর্জুন তাড়াতাড়ি তাঁকে শান্ত করলেন।

দুর্যোধনের এক ভাই বিকর্ণ বলল, “সত্যি তো, যুধিষ্ঠির নিজে হেরে যাবার পর দ্রৌপদীকে পণ রাখার অধিকার আর তাঁর থাকে কি না, এই প্রশ্নের মীমাংসা হোক। দাসের তো কোনও অধিকারই থাকার কথা নয়।”

অনেকে মিলে ধমক দিয়ে বিকর্ণকে চুপ করিয়ে দেওয়া হল।

ভীষ্ম বারবার বলতে লাগলেন, “ধর্মের বিচার অতি সূক্ষ্ম। এ প্রশ্নের ঠিক উত্তর দেওয়া যাচ্ছে না।”

পাণ্ডবরা এখন দাস, তাঁদের রাজপোশাক ছেড়ে দাসের পোশাক পরতে হবে। পাঁচভাই পোশাক বদলে ফেললেন। দ্রৌপদী পোশাক বদলাবার জন্য অন্তঃপুরে যাওয়া দরকার। দুঃশাসন সে সুযোগ না দিয়ে তাঁর পোশাক ধরে টানাটানি শুরু করলেন সেখানেই।

এই বিপদে দ্রৌপদী কৃষ্ণের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। কৃষ্ণ তাঁর বন্ধু, তাঁর সহায়। এই লজ্জা থেকে কৃষ্ণ নিশ্চয়ই তাঁকে বাঁচাবেন।

যাত্রা, থিয়েটার, সিনেমায় এই জায়গাটায় দেখা যায় যে দুঃশাসন যতই দ্রৌপদীর শাড়ি ধরে টানাটানি করুন, কিছুতেই শাড়ি ফুরোচ্ছে না, অদৃশ্য থেকে কৃষ্ণ একটা লাটাই থেকে অনবরত শাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এ দৃশ্য কিন্তু মহাভারতে নেই।

শ্রীকৃষ্ণ তখন কাছাকাছি ছিলেন না। আর দ্রৌপদীও শাড়ি পরতেন না। তখনকার নারীরা পরতেন ঘাঘরা আর কাঁচুলি। তবে একটা অলৌকিক ব্যাপার হয়েছিল নিশ্চয়ই, ধর্ম নামে এক দেবতা নানারকম পোশাকে দ্রৌপদীর শরীর ঢেকে দিয়েছিলেন। দুঃশাসনই একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েন।

দ্রৌপদীর এই লাঞ্ছনা দেখে ভীম বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, যুদ্ধের সময় তিনি এই দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত পান করবেন। আর দুর্যোধনেরও অসভ্য ব্যাপার দেখে ভীম বললেন, “গদার আঘাতে দুর্যোধনের ঊরু যদি ভেঙে না দিই তা হলে আমার নামই মিথ্যে!”

এবার সবাই বুঝল, ভীম আর অর্জুন মহাবীর। তাঁদের সামনে যেভাবে দ্রৌপদীর অপমান করা হল, এর প্রতিশোধ তাঁরা নেবেনই। ঘোর যুদ্ধ হবে। তখন কৌরবরা কি রক্ষা পাবেন?

এবার ধৃতরাষ্ট্রও বুঝলেন যে, পাশা খেলা চলছিল, বেশ ছিল, কিন্তু সভার মধ্যে দ্রৌপদীকে ডেকে এনে যে লাঞ্ছনা দেওয়া হল, তার ফল ভয়াবহ হতেই পারে।

ছেলেকে বকুনি দিয়ে তিনি দ্রৌপদীকে কাছে ডেকে বললেন, “পাঞ্চালী, তুমি আমার সব পুত্রবধূদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমার কাছে একটি বর চাও।”

চোখ থেকে কান্না মুছে দ্রৌপদী বললেন, “তা হলে আপনার বরে আমার স্বামী যুধিষ্ঠিরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করুন, আর আমার ছেলেকেও যেন কেউ দাসপুত্র না বলে।”

ধৃতরাষ্ট বললেন, “তাই হবে। তুমি আর একটা বর চাও।”

দৌপদী বললেন, “যদি আর একটা বর দিতে চান, তা হলে ভীমসেন, ধনঞ্জয়, নকুল আর সহদেবকেও দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দিন মহারাজ।”

ধৃতরাষ্ট্র বললেন, “তা হবে। তুমি আর একটা বর চাও। তোমাকে শুধু দু’টো বর দিয়েই আমার তৃপ্তি হচ্ছে না।”

দ্রৌপদী বললেন, “আমি আর বর চাই না, তাতে আমার লোভের প্রকাশ হতে পারে। যা পেয়েছি তাই যথেষ্ট। আমার স্বামীরা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে আবার কীর্তি লাভ করবেন।”

তখন ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে ডেকে বললেন, “তোমার মঙ্গল হোক। সমস্ত ধনরত্ন নিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যাও। আগের মতনই ভাইদের নিয়ে রাজ্য শাসন করো৷ দুর্যোধনের নিষ্ঠুর ব্যবহার মনে রেখো না। ক্ষমা করে দিয়ো।

যাক, সবই ভালয়-ভালয় মিটে গেল। যুধিষ্ঠির তাঁর সঙ্গে দ্রৌপদী ও অন্য ভাইদের নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে চললেন।

তবু কিন্তু শান্তি ফিরে এল না।

দুর্যোধন তাঁর বন্ধুদের নিয়ে অন্য এক জায়গায় গজরাতে লাগলেন, “এ কী করলেন বাবা? হাতের মুঠোয় সবকিছু পেয়ে কেউ ছেড়ে দেয়? শত্রুকে যে-কোনও উপায়ে হোক, শেষ করতেই হয়। পাণ্ডবরা এরপর কোনও না-কোনও সময়ে প্রতিশোধ নেবেই।”

আবার একটা বুদ্ধি বের করে দুর্যোধন বাবার কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “আমরা আর-একবার খেলতে চাই। এবারে আর টাকাপয়সা ইত্যাদির পণ নেই। একবারই খেলা হবে। যারা হারবে, তারা বারো বছরের জন্য বনবাসে যাবে, আর এক বছর অজ্ঞাতবাসে থাকতে হবে। তার মানে, তারা এমন ভাবে লুকিয়ে থাকবে, যাতে তাদের কোথাও দেখা না যায়। পাণ্ডবরা যদি তেরো বছর পর ফিরেও আসে, ততদিনে আমরা আমাদের এত শক্তি বাড়িয়ে ফেলব যে, ওরা আর কিছুই করতে পারবে না।”

ধৃতরাষ্ট্র রাজি হয়ে বললেন, “ডাকো-ডাকো, শিগগির পাণ্ডবদের ফিরিয়ে আনো।”

কৌরবদের মা গান্ধারী যদিও নিজে অন্ধ না হয়েও চোখে কাপড় বেঁধে রাখতেন, কিন্তু তিনি মোটেও পুত্রস্নেহে অন্ধ ছিলেন না। দুর্যোধনের অন্যায় আর পাপ কাজের জন্য তাঁকে তিনি ত্যাগ করতেও রাজি। আবার দুর্যোধনের এই কু-মতলবের কথা জেনে তিনি স্বামীর কাছে এসে অনেক অনুরোধ করলেন এই অন্যায় খেলা বন্ধ করার জন্য। এর ফলে ভবিষ্যতে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ধৃতরাষ্ট্র তা শুনলেন না, বললে, “যা হওয়ার তা হবেই।”

পাণ্ডবরা তখনও নিজেদের রাজ্যে পৌঁছননি, তার মধ্যেই এক দূত গিয়ে বলল, “রাজা ধৃতরাষ্ট্র আবার আপনাদের একবার খেলার জন্য ডেকেছেন।”

যুধিষ্ঠির বুঝতে পারলেন যে, আবার তিনি এক বিরাট বিপদে পড়তে চলেছেন, তবু ফিরে এলেন ধৃতরাষ্ট্রের আহ্বানে।

শকুনি তো দুর্যোধনের মামা, সেই হিসেবে যুধিষ্ঠিরেরও মামা। তাই ভালমানুষ সেজে তিনি যুধিষ্ঠিরকে বললেন, “আগের বার যে আমার জামাইবাবু তোমাদের সব কিছু ফিরিয়ে দিয়েছেন, সেটা কিন্তু ভাল কাজ করেছেন। এবারের পণ খুব সরল। আমরা যদি হারি, তা হলে সকলে মিলে বারো বছরের জন্য বনবাসে চলে যাব, আর এক বছর অজ্ঞাতবাস, তখন ধরা পড়ে গেলে আবার বারো বছর বনবাস। তোমরা যদি হারো, তা হলে তোমাদেরও এটা মানতে হবে।”

সেখানে অন্য যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, সকলে মনে-মনে ভাবলেন, যুধিষ্ঠিরের কিছুতেই এ খেলা উচিত নয়। শকুনিকে তিনি হারাতে পারবেন না। শকুনি যদি জোচ্চুরিও করেন, সেটা ধরার মতো জ্ঞানও তাঁর নেই।

কিন্তু কেউ-ই যুধিষ্ঠিরকে নিষেধ করলেন না। যুধিষ্ঠির এই শর্তে রাজি হয়ে গেলেন।

প্রথমবার ঘুঁটি ফেলেই শকুনি বলে উঠলেন, “এই আমি জিতলাম।”

কৌরবপক্ষ উল্লাসে ফেটে পড়লেন। মাথা নিচু করে রইলেন পাণ্ডবরা। তবে যুধিষ্ঠির ছাড়া অন্য চার ভাই মনে-মনে কঠোর প্রতিজ্ঞা করলেন, ফিরে এসে কৌরবপক্ষের সবাইকে ধ্বংস করবেন, শকুনিকেও বাদ দেবেন না।

এবার তো বনবাসে যেতেই হয়।

জতুগৃহ থেকে পালাবার সময় জননী কুন্তী ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। এখন তাঁর অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে, তিনি থাকবেন তাঁর দেওর বিদুরের বাড়িতে। দ্রৌপদী যাবেন পঞ্চস্বামীর সঙ্গে। এঁরা সবাই গুরুজনদের প্রণাম করে বিদায় চাইলেন। সকলেরই চোখে জল।

পাণ্ডবরা রাজধানী ছেড়ে চলে যাবার পর অস্ত্রগুরু দ্রোণ দুর্যোধনকে বললেন, “হেমন্তকালে তালগাছের ছায়া বেশিক্ষণ থাকে না। তুমি যে এত আনন্দ-স্ফূর্তি করছ তাও ক্ষণস্থায়ী। এর মধ্যে যা পারো, দান আর ভোগ করে নাও! তেরো বছর পর তুমি আর কি সময় পাবে!”

পঞ্চপাণ্ডব প্রথমেই এলেন কাম্যক বনে। সে এক নিবিড়, ভয়াল অরণ্য। সেখানে পৌঁছতে না-পৌঁছতেই ঝামেলা হল, এক বিকট চেহারার রাক্ষস তেড়ে এল তাঁদের দিকে। তার গর্জনে বনের পশুরা ভয়ে পালাতে লাগল দিগ্বিদিকে।

অর্জুন, ধনুক-বাণ হাতে নিলেন। ভীম একটা গাছ উপড়ে নিয়ে ছেঁটে ফেললেন ডালপালা। যুধিষ্ঠির সেই রাক্ষসকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে? কী চাও?”

সেই রাক্ষস বলল, “আমার নাম কির্মীর। আমি বকরাক্ষসের ভাই, যাকে ব্রাহ্মণ সেজে গিয়ে ভীম বধ করেছে। হিড়িম্বও আমার বন্ধু ছিল। আজ আমি তার প্রতিশোধ নেব। ভীমকে খাব।”

কিন্তু ভীমকে খাওয়া কি সোজা কথা? অর্জুনের সাহায্য লাগল না, ভীম একাই কিছুক্ষণ ঘোর যুদ্ধের পর সেই রাক্ষসের সব হাড়গোড় ভেঙে দিলেন।

এরপর আর কোনও রাক্ষস ভয়ে তাঁদের কাছে এল না।

পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর সঙ্গে-সঙ্গে অনেক ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতও এসেছেন। তাঁরা এঁদের ছেড়ে থাকতে চান না। কিন্তু এত মানুষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করাও তো খুব সমস্যার ব্যাপার, দ্রৌপদী এসব কী করে সামলাবেন?

তখন ধৌম্য ঋষি যুধিষ্ঠিরকে বললেন, “সূর্যদেবতার জন্যই আমরা বেঁচে থাকার সব অন্ন পাই, তুমি সূর্যের স্তব করো, আমি মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছি।”

যুধিষ্ঠির স্নান করে এসে শুদ্ধ মনে সূর্যদেবতার পুজো করতে লাগলেন। এক সময় সূর্যদেবতার আবির্ভাব হল।

তিনি বললেন, “রাজা তোমাদের কী অভাব, তা আমি জানি। বনবাসের বারো বছর আমি তোমাদের অন্নের ব্যবস্থা করব।”

তিনি দ্রৌপদীকে একটা তামার তৈরি পাত্র দিয়ে বললেন, “তুমি যখন যা রান্না করবে, এই পাত্রে রাখবে। তারপর সকলকে খেতে দেবে। সকলেই ঠিকঠাক খেতে পাবে।”

এত মানুষ, অথচ একটা মাত্র পাত্রের খাবার? দ্রৌপদীর সঙ্গে যুধিষ্ঠিরও রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে চাইলেন এই অলৌকিক ব্যাপার। সত্যিই, দ্রৌপদী অনেক কিছু রান্না করে রাখলেন ওই একটি পাত্রে। তারপর পরিবেশন করতে লাগলেন। অত মানুষ, তবুও ফুরোয় না। একেবারে শেষে যুধিষ্ঠির আর দ্রৌপদী নিজেরা যখন খাওয়া শেষ করলেন, অমনি পাত্রটা একেবারে শূন্য হয়ে গেল।

যাক, মিটে গেল ওঁদের খাদ্যসমস্যা।

এর মধ্যে একদিন সদলবলে কৃষ্ণ এসে হাজির।

পাশা খেলাকে কেন্দ্র করে এত কাণ্ড যে ঘটে গিয়েছে তা তিনি কিছুই জানতেন না। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে যখন কৃষ্ণ উপস্থিত ছিলেন, সেই সময় শাল্ব নামে এক রাজা দ্বারকা আক্রমণ করেন। এই রাজা আবার কিছু-কিছু জাদু জানেন। কৃষ্ণ যখন ছিলেন না, তখন শাল্ব দ্বারকার অনেক কিছু ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। ফিরে গিয়ে কৃষ্ণ প্রবল যুদ্ধে সেই শাল্বকে তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে দু’ টুকরো করে দেন।

তারপর পাণ্ডবদের এই নিদারুণ খবর শুনেই তিনি কাম্যক বনে ছুটে এসেছেন। তিনি বারবার আফশোসের সঙ্গে বলতে লাগলেন, ঠিক সময় খবর পেলে তিনি কিছুতেই এই অন্যায় পাশা খেলা হতে দিতেন না। তা হলে এই সর্বনাশও হত না।

কৃষ্ণকে কাছে পেয়ে সবাই তাঁদের দুঃখ ও রাগের কথা জানাতে লাগলেন।

কৌরবরা সবচেয়ে বেশি অপমান করেছেন দ্রৌপদীকে, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। দ্রৌপদী কাঁদতে-কাঁদতে মুখ ঢেকে বললেন, “হে কৃষ্ণ, আমার স্বামী নেই, সন্তান নেই, বন্ধু নেই, ভাই নেই, পিতা নেই, তুমিও নেই! ওরা সব যখন আমাকে নির্যাতন করেছে, তখন কেউ বাধা দিতে যায়নি। কর্ণ আমায় যে উপহাস করেছিল, তা এখনও আমার বুকের মধ্যে জ্বলছে। কৃষ্ণ, তুমি আমার আপনজন, বন্ধু, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে না?”

কৃষ্ণ বললেন, “যারা তোমাকে অপমান করেছে, তারা কেউ নিস্তার পাবে না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তুমি আবার রাজেন্দ্রাণী হবে। যদি আকাশ ভেঙে পড়ে, যদি হিমালয় ছোট হয়ে যায়, পৃথিবী খণ্ড-খণ্ড হয়, সমুদ্রও শুকিয়ে যায়, তা হলেও আমার এই কথা মিথ্যে হবে না।”

তেরো বছর পর ফিরে গিয়ে যুদ্ধ হবে, ভীমের অত ধৈর্য নেই। দ্রৌপদীও প্রতিশোধ নেবার জন্য এক্ষুনি ফিরে যেতে চান, সে-কথা ওঁরা বারবার বলতে লাগলেন যুধিষ্ঠিরকে। যুধিষ্ঠিরের জন্যই যে সকলকে বনবাসের কষ্ট পেতে হল, তাও শোনাতে ছাড়লেন না।

যুধিষ্ঠির বললেন, “হ্যাঁ, দোষ আমারই, তোমরা আমায় গঞ্জনা দিতেই পারো। আমিই দুর্যোধনের রাজ্য জয় করে নেওয়ার ইচ্ছেতে পাশা খেলতে রাজি হয়েছিলাম। শকুনি কৌশল করে আমাকে হারিয়েছেন। আমরা সবাই দুর্যোধনের দাস হয়ে গিয়েছিলাম, দ্রৌপদীই উদ্ধার করেছে আমাদের। তারপরও আমি আর একবার পাশা খেলায় রাজি হয়ে তোমাদের এই দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছি। এজন্য ভীম, তুমি আগেই আমাকে শাস্তি দিলে না কেন? আমাকে কেন বাধা দিলে না? এখন যে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, বারো বছর বনে থাকব আর এক বছর অজ্ঞাতবাসে, এ প্রতিজ্ঞা আমি ভাঙতে পারব না!”

তা হলে তেরো বছরের আগে কিছুই করা যাবে না!

কৌরবরা এর মধ্যে শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তাঁদের দলেও বড়-বড় বীর আছেন, সুতরাং পাণ্ডবদেরও সেই মতো অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা দরকার। যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, “তুমি পাহাড়ে যাও, বিভিন্ন দেবতার তপস্যা করে তাঁদের বর নিয়ে এসো।”

ঘুরতে-ঘুরতে অর্জুন হিমালয় আর গন্ধমাদন পার হয়ে ইন্দ্রনীল নামে এক পর্বতে উপস্থিত হলেন। সেখানে দেখা পেলেন দেবরাজ ইন্দ্রের। তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার পর অর্জুন শিবের আরাধনায় বসলেন।

একদিন সেখানে এক কিরাত তার স্ত্রী ও অন্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হল। পাহাড়-জঙ্গলে তো এরকম কিরাত জাতি থাকেই। হঠাৎ একটা বিরাট বুনো শুয়োর অর্জুনের দিকে তেড়ে এল। অর্জুন সেটাকে মারার জন্য ধনুকে তির জুড়তেই কিরাত বলে উঠল, “এই বরাহটাকে আমিই আগে মারব ঠিক করেছি।”

অর্জুন সেকথা গ্রাহ্য করলেন না। কিরাত আর তিনি একই সঙ্গে তির ছুড়লেন, দু’জনের তিরেই বরাহের মৃত্যু হল।

সামান্য একজন কিরাতের এই আস্পর্ধা দেখে রেগে গেলেন অর্জুন। তিনি বললেন, “তুমি মৃগয়ার নিয়ম জানো না? একজন তির ছুড়লে অন্য কেউ কিছু করতে পারে না। আজ আমার হাতে তোমার মৃত্যু অবধারিত।”

কিরাত হেসে বলল, “আমরা তো এই বনে-জঙ্গলেই থাকি। তুমি এখানে কেন এসেছ? কী চাও?”

উত্তর না দিয়ে অর্জুন তির ছুড়লেন তার দিকে। কিরাত দু’ পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে রইল, তার কিছুই হল না।

এরপর মহাবীর অর্জুন আরও অজস্র তির ছুড়লেন, তাঁর তূণীরের সব তির প্রায় ফুরিয়ে গেল, তবুও কিরাতের শরীরে একটা আঁচড়ও লাগল না। তখন তির-ধনুক বাদ দিয়ে খড়্গ আর অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে গেলেন, তাতেও কিছু ফল হল না। শেষ পর্যন্ত অর্জুন মুষ্ট্যাঘাত অর্থাৎ ঘুসি মারতে গেলেন। তখন কিরাত তাঁকে বুকে চেপে ধরে রইল একটুক্ষণ, তারপর শুইয়ে দিল মাটিতে।

অর্জুন কখনও পরাজিত হন না, শেষ পর্যন্ত তাঁকে হার স্বীকার করতে হল এক অচেনা কিরাতের কাছে? রাগে-দুঃখে তিনি তক্ষুনি মহাদেবের পূজা করতে বসলেন।

তখন দারুণ অবাক হয়ে অর্জুন দেখলেন, তিনি মহাদেবের নামে যে ফুল-মালা উৎসর্গ করছেন, সবই পড়ছে কিরাতের মাথায়।

ইনিই স্বয়ং শিব? অর্জুন এবার তাঁর পায়ে গিয়ে পড়লেন।

শিব তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমার মঙ্গল হোক। তুমি কী বর চাও?”

অর্জুন বললেন, “কৌরবের সঙ্গে আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। আপনার কাছে যে সাংঘাতিক পাশুপত অস্ত্র আছে, তা আমাকে দিন।”

শিব খুশি মনে অর্জুনকে সেই অস্ত্র দিয়ে তার ব্যবহারও শিখিয়ে দিলেন।

এর পর অর্জুনের বাবা ইন্দ্র নিজের রথ পাঠিয়ে ছেলেকে নিয়ে এলেন স্বর্গলোকে।

আমরা জানি যে, মানুষ মৃত্যুর পরেই শুধু স্বর্গে যেতে পারে। কিন্তু সেকালে কিছু-কিছু মানুষ স্বর্গে গিয়ে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আবার ফিরে আসতে পারত। অর্জুনকে আরও অনেক দেবতা নানারকম অস্ত্র দিলেন। সেখানে গন্ধর্ব চিত্রসেনের বাড়িতে থাকার সময় অর্জুন নাচ-গান শিখেও কাটালেন কিছুদিন।

এদিকে অর্জুন নেই বলে পাণ্ডবদের মন খারাপ। ভীম মাঝে-মাঝেই ফুঁসে-ফুঁসে ওঠেন, যুদ্ধ শুরু করে দিতে চান। যুধিষ্ঠির শান্ত করেন তাঁকে।

এর মধ্যে অনেক মুনি-ঋষি এসে তাঁদের নানারকম গল্প শোনান, তাতেই অনেক সময় কেটে যায়। তারপর যুধিষ্ঠির ঠিক করলেন, এক বনে আর বেশি দিন থাকবেন না। ঘুরে-ঘুরে বেড়াবেন। কিছু-কিছু ঋষিও চললেন তাঁদের সঙ্গে। খাওয়ার তো চিন্তা নেই, এঁরা সঙ্গে আসায় একটা লাভ হল এই, যে-কোনও নতুন জায়গায় গেলে সেখানকার ইতিহাস ও অনেক রকম কাহিনি বলে দিতে পারেন।

সে তো গল্পের পর-গল্প, অনেক গল্প।

ঘুরতে-ঘুরতে একসময় পাণ্ডবরা বদরিকাশ্রমে এসে থাকতে লাগলেন কয়েক দিন। এর মধ্যে হঠাৎ একটা দারুণ সুন্দর পদ্মফুল হাওয়ায় উড়তে-উড়তে এসে দ্রৌপদীর সামনে পড়ল। দ্রৌপদী সেই পদ্মের সুগন্ধ নিয়ে ভীমকে বললেন, “আমার খুব ইচ্ছে করছে, এই রকম আরও অনেক পদ্ম পেতে। তুমি আমার জন্য এনে দিতে পারবে না?”

ভীম সঙ্গে-সঙ্গে রাজি। দ্রৌপদীকে খুশি করার জন্য তিনি সব কিছু করতে পারেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেজেগুজে বেরিয়ে পড়লেন ভীম। ঘুরতে-ঘুরতে তিনি চলে এলেন গন্ধমাদন পর্বতের কাছে। এই পাহাড়ে নানারকম গাছ, লতা-পাতা আর কতরকমের যে ফুল ফুটে থাকে, তার ইয়ত্তা নেই। তা হলে এখান থেকেই সেই পদ্মটা উড়ে যাওয়া সম্ভব।

অনেক দিন পর ভীমের মনে বেশ একটা ফুরফুরে ভাব এল। দাদার দোষে রাজ্য হারিয়ে বনে-বনে থাকতে হচ্ছে, সে জন্য কত কষ্ট হচ্ছে দ্রৌপদীর, প্রায়ই সে মন খারাপ করে থাকে, এবার এই পদ্মফুল নিয়ে গেলে সে খুশি হবে। সেখানে একটা সরোবর আছে বটে, কিন্তু ঠিক সেরকম পদ্ম নেই, যে-পদ্মের অনেক পাপড়ি। জলে নেমে ভীম কিছুক্ষণ দাপাদাপি করার পর আবার এগোলেন সেই পদ্মের সন্ধানে।

পাহাড়ের মাঝখানে একটা পথ ধরে একটু এগোতেই ভীম দেখলেন, সেই পথের মধ্যে একটা হনুমান শুয়ে আছে। পথটা সরু, হনুমানটিকে না সরালে এগনো যাবে না। ভীম কাছে এসে এক হুংকার দিলেন। হনুমানটা চোখ পিটপিট করে বলল, “তুমি কে হে? আমি অসুস্থ, বেশ ঘুমিয়ে ছিলাম, তুমি আমাকে জাগালে কেন?”

ভীম নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “তুমি কে? পথ ছেড়ে দাও!”

হনুমানটি বলল, “দেখতেই তো পাচ্ছ, আমি একটি বানর। এই পথ দিয়ে দেবলোক যাওয়া যায়, কোনও মানুষ যেতে পারে না। তুমি যাবার চেষ্টা করলেই তোমার মৃত্যু হবে।”

ভীম বললেন, “মৃত্যু হবে কি না সে আমি বুঝব। তুমি পথটা তো ছাড়ো!”

হনুমান বলল, “আমি পথ ছাড়ব না। তুমি যদি যেতে চাও তো আমাকে ডিঙিয়ে যাও!”

ভীম বললেন, “কোনও জীবিত প্রাণীকে ডিঙিয়ে যেতে নেই। সরো, সরে যাও।”

হনুমান বলল, “আমি অসুস্থ, বুড়ো হয়েছি। নড়াচড়া করতে পারি না। তুমি আমার ল্যাজটা ধরে টেনে সরিয়ে দাও!”

ভীম অবজ্ঞার সঙ্গে তার ল্যাজ ধরে এক টান মারলেন। এক চুলও সরাতে পারলেন না। তারপর দু’ হাত ধরে টানাটানি শুরু করলেন। তাঁর সারা গা ঘামে ভিজে গেল। কিছুতেই না পেরে ধপাস করে বসে পড়লেন।

তখন ভীম হাত জোড় করে বললেন, “বুঝতে পারছি, আপনি সাধারণ কেউ নন। আমায় ক্ষমা করুন। সত্যি করে বলুন, আপনি কে?”

ইনি হলেন রামায়ণের সেই মহাবীর হনুমান। রামের আশীর্বাদে তিনি অমর। ইনি আবার এক হিসেবে ভীমের বড় ভাই, কারণ, হনুমান পবনের পুত্র আর ভীমেরও জন্ম পবনদেবের আশীর্বাদে। দু’জনে অনেক গল্প হল। হনুমান বললেন, “এই পথ দিয়ে মানুষের যাওয়া নিষেধ, তাই তোমাকে আটকেছিলাম। কিন্তু তুমি তো ভীম, তোমাকে কে আটকাবে? তুমি যে পদ্ম খুঁজতে এসেছ, তা কাছেই একটা নদীতে পাবে।”

হনুমানকে প্রণাম করে ভীম এগিয়ে গেলেন। একটু পরে দেখতে পেলেন এক বড় নদী, তার জল অতি স্বল্প আর নির্মল, সেখানে ফুটে আছে এই অপরূপ সুন্দর পদ্মফুল। এই জায়গাটা যক্ষরাজ কুবেরের, তাঁর প্রচুর ধনসম্পদ আর অনেক সৈন্যসামন্ত। ভীমকে দেখে সেই সৈন্যরা এসে বলল, “এখানে কুবেরের অনুমতি না নিয়ে কেউ নদীতে নামতে পারে না।”

ভীম শান্ত ভাবে বললেন, “ক্ষত্রিয়রা কারও কাছে কিছু চায় না। তা ছাড়া পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীতে নামার অধিকার সকলেরই থাকে।”

তবু তারা ভীমকে বাধা দিতে এলে ভীম অবহেলার সঙ্গে তাদের ছুড়ে-ছুড়ে ফেলতে লাগলেন। অনেকে হতাহত হল। একজন গিয়ে খবর দিল কুবেরকে।

কুবের সহাস্যে বললেন, “দ্রৌপদীর জন্য ভীম পদ্মফুল নিতে এসেছে, নিক না। বাধা দিয়ো না।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *