০২. বাংলায় মুসলমান রাজ্যের বিস্তার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – বাংলায় মুসলমান রাজ্যের বিস্তার

আমিন খান ও তুগরল খান

১২৭১ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে দিল্লির সুলতান বলবন আমিন খান ও তুগরল খানকে যথাক্রমে লখনৌতির শাসনকর্ত্তা ও সহকারী শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করেন। তুগরল বলবনের বিশেষ প্রীতিভাজন ছিলেন। লখনৌতির সহকারী শাসনকর্ত্তার পদে নিযুক্ত হইয়া তুগরল জীবনের সর্বপ্রথম একটি গুরুদায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার প্রাপ্ত হইলেন। আমিন খান নামেই বাংলার শাসনকর্ত্তা রহিলেন। তুগরলই সর্বেসর্বা। হইয়া উঠিলেন।

জিয়াউদ্দীন বারনির ‘তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী’ গ্রন্থ হইতে জানা যায় যে তুগরল “অনেক অসমসাহসিক কঠিন কর্ম” করিয়াছিলেন। তারিখ-ই-মুরারক শাহী’তে লেখা আছে যে, তুগরল সোনারগাঁওয়ের নিকটে একটি বিরাট দুর্ভেদ্য দুর্গ নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা ‘কিলা-ই-তুগরল’ নামে পরিচিত ছিল। এই দুর্গ সম্ভবত ঢাকার ২৫ মাইল দক্ষিণে নরকিলা (লরিকল) নামক স্থানে অবস্থিত ছিল। মোটের উপর, তুগরল যে পূর্ববঙ্গে অনেক দূর পর্যন্ত মুসলিম রাজত্ব বিস্তার করিয়াছিলেন, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। বারনির গ্রন্থ হইতে জানা যায় যে, তুগরল জাজনগর (উড়িষ্যা) রাজ্য আক্রমণ করিয়াছিলেন। ঐ সময়ে রাঢ়ের নিম্নার্ধ অর্থাৎ বর্তমানে মেদিনীপুর জেলার সমগ্র অংশ এবং বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার অনেকাংশ জাজনগর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তুগরল জাজনগর আক্রমণ করিয়া লুণ্ঠন চালাইলেন এবং প্রচুর ধনরত্ন ও হস্তী লাভ করিয়া ফিরিয়া আসিলেন।

জিয়াউদ্দীন বারনির গ্রন্থ হইতে ইহার পরবর্তী ঘটনা সম্বন্ধে যাহা জানা যায়, তাঁহার সারমর্ম নীচে প্রদত্ত হইল।

জাজনগর-অভিযান হইতে প্রত্যাবর্তনের পর তুগরল নানা প্রকারে দিল্লির কর্তৃত্ব অস্বীকার করিলেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এই অভিযানের লুণ্ঠনলব্ধ সামগ্রীর এক-পঞ্চমাংশ দিল্লিতে প্রেরণ করিবার কথা, কিন্তু তুগরল তাহা করিলেন না। বলবন এতদিন পাঞ্জাবে মঙ্গোলদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন বলিয়া বাংলার ব্যাপারে মন দিতে পারেন নাই। এই সময় তিনি আবার লাহোরে সাংঘাতিক অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। সুলতান দীর্ঘকাল প্রকাশ্যে বাহির হইতে না পারায় ক্রমশ গুজব রটিল তিনি মারা গিয়াছেন। এই গুজব বাংলা দেশেও পৌঁছিল। তখন তুগরল স্বাধীন হইবার সুবর্ণসুযোগ দেখিয়া আমিন খানের সহিত শত্রুতায় লিপ্ত হইলেন; অবশেষে লখনৌতি নগরের উপকণ্ঠে উভয়ের মধ্যে এক যুদ্ধ হইল। তাহাতে আমিন খান পরাজিত হইলেন।

এদিকে বলবন সুস্থ হইয়া উঠিলেন এবং দিল্লিতে আসিয়া পৌঁছিলেন। তাঁহার অসুস্থ থাকার সময়ে তুগরল যাহা করিয়াছিলেন, সেজন্য তিনি তুগরলকে শাস্তি দিতে চাহেন নাই। তিনি তুগরলকে এক ফরমান পাঠাইয়া বলিলেন, তাঁহার রোগমুক্তি যেন তুগরল যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করেন। কিন্তু তুগরল তখন পুরোপুরিভাবে বিদ্রোহী হইয়া গিয়াছেন। তিনি সুলতানের ফরমান আসার অব্যবহিত পরেই এক বিপুল সৈন্যসমাবেশ করিয়া বিহার আক্রমণ করিলেন; বলবনের রাজত্বকালেই বিহার লখনৌতি হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বতন্ত্র প্রদেশে পরিণত হইয়াছিল। ইহার পর তুগরল মুগীসুদ্দীন নাম গ্রহণ করিয়া সুলতান হইলেন এবং নিজের নামে মুদ্রা প্রকাশ ও খুবা পাঠ করাইলেন। তাঁহার দরবারের জাঁকজমক দিল্লির দরবারকেও হার মানাইল।

বাংলা দেশে তুগরল বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছিলেন। তাঁহার প্রকৃতি ছিল উদার। দানেও তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। দরবেশদের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যয়নির্বাহের জন্য তিনি একবার পাঁচ মণ স্বর্ণ দান করিয়াছিলেন, দিল্লিতেও তিনি দানস্বরূপ অনেক অর্থ ও সামগ্রী পাঠাইয়াছিলেন। বলবনের কঠোর স্বভাবের জন্য তাঁহাকে সকলেই ভয় করিত, প্রায় কেহই ভালোবাসিত না। সুতরাং বলবনের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া তুগরল সমুদয় অমাত্য, সৈন্য ও প্রজার সমর্থন পাইলেন।

তুগরলের বিদ্রোহের খবর পাইয়া বলবন তাঁহাকে দমন করিবার জন্য আনুমানিক ১২৭৮ খ্রীষ্টাব্দে আউধের শাসনকর্ত্তা মালিক তুরমতীর অধীনে একদল সৈন্য পাঠাইলেন, এই সৈন্যদলের সহিত তমর খান শামলী ও মালিক তাজুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন আর-একদল সৈন্য যোগ দিল। তুগরলের সৈন্যবাহিনীর লোকবল এই মিলিত বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি ছিল, তাহাতে অনেক হাতি এবং পাইক (হিন্দু পদাতিক সৈন্য) থাকায় বলবনের বাহিনীর নায়কেরা তাহাকে সহজে আক্রমণ করিতেও পারিলেন না। দুই বাহিনী পরস্পরের সম্মুখীন হইয়া কিছুদিন রহিল, ইতিমধ্যে তুগরল শত্রুবাহিনীর অনেক সেনাধ্যক্ষকে অর্থ দ্বারা হস্তগত করিয়া ফেলিলেন। অবশেষে যুদ্ধ হইল এবং তাহাতে মালিক তুরমতী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হইলেন। তাঁহার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হইয়া পলাইতে লাগিল, কিন্তু তাহাদের যথাসর্বস্ব হিন্দুরা লুঠ করিয়া লইল এবং অনেক সৈন্য–ফিরিয়া গেলে বলবন পাছে শাস্তি দেন, এই ভয়ে তুগরলের দলে যোগ দিল। বলবন তুরমতাঁকে ক্ষমা করিতে পারেন নাই, গুপ্তচর দ্বারা তাঁহাকে হত্যা করাইয়াছিলেন।

ইহার পরের বৎসর বলবন তুগরলের বিরুদ্ধে আর-একজন সেনাপতির অধীনে আর-একটি বাহিনী প্রেরণ করিলেন। কিন্তু তুরগল এই বাহিনীর অনেক সৈন্যকে অর্থ দ্বারা হস্তগত করিলেন এবং তাঁহার পর তিনি যুদ্ধ করিয়া সেনাপতিকে পরাজিত করিলেন।

তখন বলবন নিজেই তুগরলের বিরুদ্ধে অভিযান করিবেন বলিয়া স্থির করিলেন। প্রথমে তিনি শিকারে যাওয়ার ছল করিয়া দিল্লি হইতে সমান ও সনামে গেলেন এবং সেখানে তাঁহার অনুপস্থিতিতে রাজ্যশাসন ও মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো সম্পর্কে সমস্ত ব্যবস্থা করিয়া কনিষ্ঠ পুত্র বুগরা খানকে সঙ্গে লইয়া আউধের দিকে রওনা হইলেন। পথিমধ্যে তিনি যত সৈন্য পাইলেন, সংগ্রহ করিলেন এবং আউধে পৌঁছিয়া আরো দুই লক্ষ সৈন্য সগ্রহ করিলেন। তিনি এক বিশাল নৌবহরও সংগঠন করিলেন এবং এখানকার লোকদের নিকট হইতে অনেক কর আদায় করিয়া নিজের অর্থভাণ্ডার পরিপূর্ণ করিলেন।

তুগরল তাঁহার নৌবহর লইয়া সরযূ নদীর মোহানা পর্যন্ত অগ্রসর হইলেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি বলবনের বাহিনীর সহিত যুদ্ধ না করিয়া পিছু হটিয়া আসিলেন। বলবনের বাহিনী নির্বিঘ্নে সরযূ নদী পার হইল, ইতিমধ্যে বর্ষা নামিয়াছিল, কিন্তু বলবনের বাহিনী বর্ষার অসুবিধা ও ক্ষতি উপেক্ষা করিয়া অগ্রসর হইল। তুগরল লখনৌতিতে গিয়া উপস্থিত হইলেন, কিন্তু এখানেও তিনি সুলতানের বিরাট বাহিনীকে প্রতিরোধ করিতে পারিবেন না বুঝিয়া লখনৌতি ছড়িয়া চলিয়া গেলেন। লখনৌতির সম্ভ্রান্ত লোকেরা বলবন কর্ত্তৃক নির্যাতিত হইবার ভয়ে তাঁহার সহিত গেল।

বলবন লখনৌতিতে উপস্থিত হইয়া জিয়াউদ্দীন বারনির মাতামহ সিপাহশালার হসামুদ্দীনকে লখনৌতির শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিলেন এবং নিজে সেখানে একদিন মাত্র থাকিয়া সৈন্যবাহিনী লইয়া তুগরলের পশ্চাদ্ধাবন করিলেন।

বারনি লিখিয়াছেন, তুগরল জাজনগরের (উড়িষ্যা) দিকে পলাইয়াছিলেন; কিন্তু বলবন তুগরলের জলপথে পলায়নের পথ বন্ধ করিবার জন্য সোনারগাঁওয়ে গিয়া সেখানকার হিন্দু রাজা রায় দনুজের সহিত চুক্তি করিয়াছিলেন। লখনৌতি বা গৌড় হইতে উড়িষ্যা যাইবার পথে সোনারগাঁও পড়ে না। এইজন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক বারনির উক্তি ভুল বলিয়া মনে করিয়াছেন, কেহ কেহ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে দ্বিতীয় জাজনগর রাজ্যের অস্তিত্ব কল্পনা করিয়াছেন, আবার কেহ কেহ বারনির গ্রন্থে ‘হাজীনগর’-এর স্থানে ‘জাজনগর’ লিখিত হইয়াছে বলিয়া মনে করিয়াছেন। কিন্তু সম্ভবত বারনির উক্তিতে কোনোই গোলযোগ নাই। তখন ‘জাজনগর’ বলিতে উড়িষ্যার রাজার অধিকারভুক্ত সমস্ত অঞ্চল বুঝাইত, সে সময় বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা এবং হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার অনেকাংশ উড়িষ্যার রাজার অধিকারে ছিল। সেইরূপ ‘সোনারগাঁও’ বলিতেও সোনারগাঁওয়ের রাজার অধিকারভুক্ত সমস্ত অঞ্চল বুঝাইত; তখনকার দিনে শুধু পূর্ববঙ্গ নহে, মধ্যবঙ্গেরও অনেকখানি অঞ্চল এই রাজার অধীনে ছিল। বলবন খবর পাইয়াছিলেন যে তুগরল জাজনগর রাজ্যের দিকে গিয়াছেন, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরার্ধ পার হইলেই তিনি ঐ রাজ্যে পৌঁছিবেন, কিন্তু বলবনের বাহিনী তাঁহার নাগাল ধরিয়া ফেলিলে তিনি পূর্বদিকে সরিয়া গিয়া সোনারগাঁওয়ের রাজার অধিকারের মধ্যে প্রবেশ করিয়া জলপথে পলাইতে পারেন, তখন আর তাঁহাকে ধরিবার কোনো উপায় থাকিবে না। এইজন্য বলবনকে সোনারগাঁওয়ের রাজা রায় দনুজের সহিত চুক্তি করিতে হইয়াছিল।

এখন প্রশ্ন এই যে, এই রায় দনুজ কে? ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পূর্ববঙ্গে দশরথদেব নামে একজন রাজা ছিলেন, ইহার পিতার নাম ছিল দামোদরদেব। দশরথদেব ও দামোদরদেবের কয়েকটি তাম্রশাসন পাওয়া গিয়াছে। দামোদরদেব ১২৩০-৩১ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং অন্তত ১২৪৩-৪৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁহার পরে রাজা হন দশরথদেব, দশরথদেবের তাম্রশাসন হইতে জানা যায় তাঁহার ‘অরিরাজ–দনুজমাধব’ বিরুদ ছিল। বাংলার কুলজীগ্রন্থগুলিতে লেখা আছে যে লক্ষ্মণসেনের সামান্য পরে দনুজমাধব নামে একজন রাজার আবির্ভাব হইয়াছিল। বলবন ১২৮০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনো সময়ে রায় দনুজের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। সুতরাং ‘অরিরাজ-দনুজমাধব’ দশরথদেব কুলজীগ্রন্থের দনুজমাধব এবং বারনির গ্রন্থে উল্লিখিত রায় দনুজকে অভিন্ন ব্যক্তি বলিয়া গ্রহণ করা যায়।

রায় দনুজ অত্যন্ত পরাক্রান্ত রাজা ছিলেন। তিনি বলবনের শিবিরে গিয়া তাঁহার সহিত দেখা করিয়াছিলেন এই শর্তে যে তিনি বলবনের সভায় প্রবেশ করিলে বলবন উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাঁহাকে সম্মান দেখাইবেন। বলবন এই শর্ত পালন করিয়াছিলেন।

যাহা হউক, বলবনের সহিত আলোচনার পর রায় দনুজ কথা দিলেন যে তুগরল যদি তাঁহার অধিকারের মধ্যে জলে বা স্থলে অবস্থান করেন অথবা জলপথে পলাইতে চেষ্টা করেন, তাহা হইলে তিনি তাঁহাকে আটকাইবেন। ইহার পর বলবন ৭০ ক্রোশ চলিয়া জাজনগর রাজ্যের সীমান্তের খানিকটা দূরে পৌঁছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক বারনির এই উক্তিকেও ভুল মনে করিয়াছেন, কিন্তু তখনকার ‘সোনারগাঁও রাজ্যের পশ্চিম সীমান্ত হইতে ‘জাজনগর’ রাজ্যের পূর্ব সীমান্তের দূরত্ব কোনো কোনো জায়গায় কিঞ্চিদূর্ধ্ব ৭০ ক্রোশ (১৪০ মাইল) হওয়া মোটেই অসম্ভব নয়।

জাজনগরের সীমার কাছাকাছি উপস্থিত হইয়া বলবন তুগরলের কোনো সংবাদ পাইলেন না, তিনি অন্য পথে গিয়াছিলেন। বলবন মালিক বেক্তকে সাত-আট হাজার ঘোড়সওয়ার সৈন্য দিয়া আগে পাঠাইয়া দিলেন। বেতর চারিদিকে গুপ্তচর পাঠাইয়া তুগরলের খোঁজ লইতে লাগিলেন। অবশেষে একদিন তাঁহার দলের মুহম্মদ শের-আন্দাজ এবং মালিক মুকদ্দর একদল বণিকের কাছে সংবাদ পাইলেন যে তুগরল দেড় ক্রোশ দূরেই শিবির স্থাপন করিয়া আছেন, পরদিন তিনি জাজনগর রাজ্যে প্রবেশ করিবেন। শের-আন্দাজ মালিক বেক্তরূসের কাছে এই খবর পাঠাইয়া নিজের মুষ্টিমেয় কয়েকজন অনুচর লইয়াই তুগরলের শিবির আক্রমণ করিলেন। তুগরল বলবনের সমগ্র বাহিনী আক্রমণ করিয়াছে ভাবিয়া শিবিরের সামনের নদী সাঁতরাইয়া পলাইবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু একজন সৈন্য তাঁহাকে শরাহত করিয়া তাঁহার মাথা কাটিয়া ফেলিল। তখন তুগরলের সৈন্যেরা শের-আন্দাজ ও তাঁহার অনুচরদের আক্রমণ করিল। ইঁহারা হয়তো নিহত হইতেন, কিন্তু মালিক বেতস্ তাঁহার বাহিনী লইয়া সময়মত উপস্থিত হওয়াতে ইঁহারা রক্ষা পাইলেন।

তুগরল নিহত হইলে বলবন বিজয়গৌরবে লুণ্ঠনলব্ধ প্রচুর ধনসম্পত্তি এবং বহু বন্দী লইয়া লখনৌতিতে প্রত্যাবর্তন করিলেন। লখনৌতির বাজারে এক ক্রোশেরও অধিক দৈর্ঘ্য পরিমিত স্থান জুড়িয়া সারি সারি বধ্যমঞ্চ নির্মাণ করা হইল এবং সেই-সব বধ্যমঞ্চে তুগরলের পুত্র, জামাতা, মন্ত্রী, কর্মচারী, ক্রীতদাস, সৈন্যাধ্যক্ষ, দেহরক্ষী, তরবারি-বাহক এবং পাইকদের ফাঁসি দেওয়া হইল। তুগরলের অনুচরদের মধ্যে যাহারা দিল্লির লোক, তাহাদের দিল্লিতে লইয়া গিয়া তাহাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সামনে বধ করা হইবে বলিয়া বলবন স্থির করিলেন। অবশ্য দিল্লিতে লইয়া যাওয়ার পর বলবন দিল্লির কাজীর অনুরোধে তাহাদের অধিকাংশকেই মুক্তি দিয়াছিলেন। লখনৌতিতে এত লোকের প্রাণ বধ করিয়া বলবন যে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার সমর্থকদেরও মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করিয়াছিল।

এই হত্যাকাণ্ডের পরে বলবন আরো কিছুদিন লখনৌতিতে রহিলেন এবং এখানকার বিশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করিলেন। তাঁহার পর তিনি তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র বুগরা খানকে লখনৌতির শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিলেন। বুগরা খানকে অনেক সদুপদেশ দিয়া এবং পূর্ববঙ্গ বিজয়ের চেষ্টা করিতে বলিয়া বলবন আনুমানিক ১২৮২ খ্রীষ্টাব্দে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করিলেন।

নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ (বুগরা খান)

বলবনের কনিষ্ঠ পুত্রের প্রকৃত নাম নাসিরুদ্দীন মাহমুদ, কিন্তু ইনি বুগরা খান নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তুগরলের বিরুদ্ধে বলবনের অভিযানের সময় ইনি বলবনের বাহিনীর পিছনে যে বাহিনী ছিল, তাহা পরিচালনা করিয়াছিলেন। বলবন তুগরলের স্বর্ণ ও হস্তীগুলি দিল্লিতে লইয়া গিয়াছিলেন, অন্যান্য সম্পত্তি বুগরা খানকে দিয়াছিলেন। বুগরা খানকে তিনি ছত্র প্রভৃতি রাজচিহ্ন ব্যবহারেরও অনুমতি দিয়াছিলেন।

বুগরা খান অত্যন্ত অলস এবং বিলাসী ছিলেন। লখনৌতির শাসনকর্ত্তার পদে অধিষ্ঠিত হইয়া তিনি ভোগবিলাসের স্রোতে গা ভাসাইয়া দিলেন। পিতা দূর বিদেশে, সুতরাং বুগরা খানকে নিবৃত্ত করিবার কেহ ছিল না।

এইভাবে বৎসর চারেক কাটিয়া গেল। তাঁহার পর বলবনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মঙ্গোলদিগের সহিত যুদ্ধে নিহত হইলেন (১০ ফেব্রুয়ারি, ১২৮৫ খ্রী)। উপযুক্ত পুত্রের মৃত্যুতে বলবন শোকে ভাঙিয়া পড়িলেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পীড়িত হইয়া শয্যা গ্রহণ করিলেন। বলবন তখন নিজের অন্তিম সময় আসন্ন। বুঝিয়া বুগরা খানকে বাংলা হইতে আনাইয়া তাঁহাকে দিল্লিতে থাকিতে ও তাঁহার মৃত্যুর পরে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করার জন্য প্রস্তুত হইতে বলিলেন। অতঃপর বুগরা খান তিন মাস দিল্লিতেই রহিলেন। কিন্তু কঠোর সংযমী বলবনের কাছে থাকিয়া ভোগবিলাসের তৃষ্ণা মিটানোর কোনো সুযোগই মিলিতেছিল না বলিয়া বুগরা খান অধৈর্য হইয়া উঠিলেন। এদিকে বলবনেরও দিন দিন অবস্থার উন্নতি হইতেছিল। তাঁহার ফলে একদিন বুগরা খান সমস্ত ধৈর্য হারাইয়া বসিলেন এবং কাহাকেও কিছু না বলিয়া আবার লখনৌতিতে ফিরিয়া গেলেন। পথে তিনি পিতার অবস্থার পুনরায় অবনতি হওয়ার সংবাদ পাইয়াছিলেন, কিন্তু আবার দিল্লিতে ফিরিতে তাঁহার সাহস হয় নাই। লখনৌতিতে প্রত্যাবর্তন করিয়া বুগরা খান পূর্ববৎ এদেশ শাসন করিতে লাগিলেন।

ইহার অল্প পরেই বলবন পরলোকগমন করিলেন (১২৮৭ খ্রী)। মৃত্যুকালে তিনি তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্রের পুত্র কাইখসরুকে আপনার উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করিয়া গিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার উজীর ও কোতোয়ালের সহিত কাইখসরুর পিতার বিরোধ ছিল, এইজন্য তাঁহারা কাইখসরুকে দিল্লির সিংহাসনে না বসাইয়া বুগরা খানের পুত্র কাইকোবাদকে বসাইলেন। এদিকে লখনৌতিতে বুগরা খান স্বাধীন হইলেন এবং নিজের নামে মুদ্রা প্রকাশ ও খুত্বা পাঠ করাইতে সুরু করিলেন।

কাইকোবাদ তাঁহার পিতার চেয়েও বিলাসী ও উদ্ধৃঙ্খল প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি সুলতান হইবার পরে দিল্লির সন্নিকটে কীলোখারী নামক স্থানে একটি নূতন প্রাসাদ নির্মাণ করিয়া চরম উজ্জ্বলতায় মগ্ন হইয়া গেলেন। মালিক নিজামুদ্দীন এবং মালিক কিওয়ামুদ্দীন নামে দুই ব্যক্তি তাঁহার প্রিয়পাত্র ছিল, ইহাদের প্রথমজন প্রধান বিচারপতি ও রাজপ্রতিনিধি এবং দ্বিতীয়জন সহকারী রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হইল এবং ইহারাই রাজ্যের সর্বময় কর্ত্তা হইয়া দাঁড়াইল। ইহাদের কুমন্ত্রণায় কাইকোবাদ কাইখসরুকে নিহত করাইলেন, পুরাতন উজীরকে অপমান করিলেন এবং বলবনের আমলের কর্মচারীদের সকলকেই একে একে নিহত বা পদচ্যুত করিলেন।

কাইকোবাদ যে এইরূপে সর্বনাশের পথে অগ্রসর হইয়া চলিতেছেন, এই সংবাদ লখনৌতিতে বুগরা খানের কাছে পৌঁছিল। তিনি তখন পুত্রকে অনেক সদুপদেশ দিয়া পত্র লিখিলেন। কিন্তু কাইকোবাদ ( বোধ হয় পিতার “উপযুক্ত পুত্র” বলিয়াই) পিতার উপদেশ কর্ণপাত করিলেন না। বুগরা খান যখন দেখিলেন যে পত্র লিখিয়া কোনো লাভ নাই, তখন তিনি স্থির করিলেন দিল্লির সিংহাসন অধিকার করার চেষ্টা করিবেন এবং এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি এক সৈন্যবাহিনী লইয়া অগ্রসর হইলেন।

পিতা সসৈন্যে দিল্লিতে আসিতেছেন শুনিয়া কাইকোবাদ তাঁহার প্রিয়পাত্র নিজামুদ্দীনের সহিত পরামর্শ করিলেন এবং তাঁহার পরামর্শ অনুযায়ী এক সৈন্যবাহিনী লইয়া বাংলার দিকে অগ্রসর হইলেন। সরযূ নদীর তীরে যখন তিনি পৌঁছিলেন তখন বুগরা খান সরযূর অপর পারে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন।

ইহার পর দুই-তিন দিন উভয় বাহিনী পরস্পরের সম্মুখীন হইয়া রহিল। কিন্তু যুদ্ধ হইল না। তাঁহার বদলে সন্ধির কথাবার্তা চলিতে লাগিল। সন্ধির শর্ত স্থির হইলে বুগরা খান তাঁহার দ্বিতীয় পুত্র কাইকাউসকে উপঢৌকন সমেত কাইকোবাদের দরবারে পাঠাইলেন। কাইকোবাদও পিতার কাছে নিজের শিশুপুত্র কাইমুরকে একজন উজীরের সঙ্গে উপহারসমেত পাঠাইলেন। পৌত্রকে দেখিয়া বুগরা খান সমস্ত কিছু ভুলিয়া গেলেন এবং দিল্লির উজীরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া তাহাকে আদর করিতে লাগিলেন।

দুষ্ট নিজামুদ্দীনের পরামর্শে কাইকোবাদ এই শর্তে বুগরা খানের সহিত সন্ধি করিয়াছিলেন যে বুগরা খান কাইকোবাদের সভায় সাধারণ প্রাদেশিক শাসনকর্ত্তার মতোই তাঁহাকে অভিবাদন করিবেন ও সম্মান দেখাইবেন। অনেক আলাপ আলোচনা ও ভীতিপ্রদর্শনের পরে বুগরা খান এই শর্তে রাজী হইয়াছিলেন। এই শর্ত পালনের জন্য বুগরা খান একদিন বৈকালে সরযূ নদী পার হইয়া কাইকোবাদের শিবিরে গেলেন। কাইকোবাদ তখন সম্রাটের উচ্চ মসনদে বসিয়াছিলেন। কিন্তু পিতাকে দেখিয়া তিনি আর থাকিতে পারিলেন না। তিনি খালি পায়েই তাঁহার পিতার কাছে দৌড়াইয়া গেলেন এবং তাঁহার পায়ে পড়িবার উপক্রম করিলেন। বুগরা খান তখন কাঁদিতে কাঁদিতে তাঁহাকে আলিঙ্গন করিলেন। কাইকোবাদ পিতাকে মসনদে বসিতে বলিলেন, কিন্তু বুগরা খান তাহাতে রাজী না হইয়া পুত্রকে লইয়া গিয়া মসনদে বসাইয়া দিলেন এবং নিজে মসনদের সামনে করজোড়ে দাঁড়াইয়া রহিলেন। এইভাবে বুগরা খান “ম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর কাইকোবাদ মসনদ হইতে নামিয়া আসিলেন। তখন সভায় উপস্থিত আমীরেরা দুই বাদশাহের শির স্বর্ণ ও রত্নে ভূষিত করিয়া দিলেন। শিবিরের বাহিরে উপস্থিত লোকেরা শিবিরের মধ্যে আসিয়া দুইজনকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে লাগিল, কবিরা বাদশাহদ্বয়ের প্রশস্তি করিতে লাগিলেন, এক কথায় পিতাপুত্রের মিলনে কাইকোবাদের শিবিরে মহোৎসব উপস্থিত হইল। তাঁহার পর বুগরা খান নিজের শিবিরে ফিরিয়া আসিলেন।

ইহার পরেও কয়েকদিন বুগরা খান ও কাইকোবাদ সরযূ নদীর তীরেই রহিয়া গেলেন। এই কয়দিনও পিতাপুত্রে সাক্ষাৎকার ও উপহারবিনিময় চলিয়াছিল। বিদায়গ্রহণের পূর্বাহে বুগরা খান কাইকোবাদকে প্রকাশ্যে অনেক সদুপদেশ দিলেন, সংযমী হইতে বলিলেন এবং মালিক নিজামুদ্দীন ও কিওয়ামুদ্দীনকে বিশেষভাবে অনুগ্রহ করিতে পরামর্শ দিলেন, কিন্তু বিদায় লইবার সময় কাইকোবাদের কানে কানে বলিলেন যে, তিনি যেন এই দুইজন আমীরকে প্রথম সুযোগ পাইবামাত্র বধ করেন। ইহার পর দুই সুলতান নিজের নিজের রাজধানীতে ফিরিয়া গেলেন।

বিখ্যাত কবি আমীর খসরু কাইকোবাদের সভাকবি ছিলেন এবং এই অভিযানে তিনি কাইকোবাদের সঙ্গে গিয়াছিলেন। কাইকোবাদের নির্দেশে তিনি বুগরা খান ও কাইকোবাদের এই মধুর মিলন অবিকলভাবে বর্ণনা করিয়া ‘কিরান-ই-সদাইন’ নামে একটি কাব্য লিখেন। সেই কাব্য হইতেই উপরের বিবরণ সংকলিত হইয়াছে।

কাইকোবাদের সঙ্গে সন্ধি হইবার পরে বুগরা খান-আউধের যে অংশ তিনি অধিকার করিয়াছিলেন, তাহা কাইকোবাদকে ফিরাইয়া দেন। কিন্তু বিহার তিনি নিজের দখলেই রাখিলেন।

দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করিবার পথে কাইকোবাদ মাত্র কয়েকদিন ভালোভাবে চলিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার পর আবার তিনি উচ্ছঙ্খল হইয়া উঠেন। তাঁহার প্রধান সেনাপতি জলালুদ্দীন খিলজী তাঁহাকে হত্যা করান (১২৯০ খ্রী)। ইহার তিনমাস পরে জলালুদ্দীন কাইকোবাদের শিশুপুত্র কাইমুকে অপসারিত করিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ইহার পর বৎসর হইতে বাংলার সিংহাসনে বুগরা খানের দ্বিতীয় পুত্র রুকনুদ্দীন কাইকাউসকে অধিষ্ঠিত দেখিতে পাই। কাইকোবাদের মৃত্যুজনিত শোকই বুগরা খানের সিংহাসন ত্যাগের কারণ বলিয়া মনে হয়।

রুকনুদ্দীন কাইকাউস

মুদ্রার সাক্ষ্য হইতে দেখা যায়, রুকনুদ্দীন কাইকাউস ৬৯০ হইতে ৬৯৮ হি বা ১২৯১ হইতে ১২৯৮-৯৯ খ্রী পর্যন্ত লখনৌতির সুলতান ছিলেন। তাঁহার রাজত্বকালে বিশেষ কোনো ঘটনার কথা জানা যায় নাই।

কাইকাউসের প্রথম বৎসরের একটি মুদ্রায় লেখা আছে যে ইহা ‘বঙ্গ’-এর ভূমি-রাজস্ব হইতে প্রস্তুত হইয়াছে। সুতরাং পূর্ববঙ্গের কিছু অংশ যে কাইকাউসের রাজ্যভুক্ত ছিল, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। এই অংশ ১২৯১ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বেই মুসলমানগণ কর্ত্তৃক বিজিত হইয়াছিল। পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণী অঞ্চলও কাইকাউসের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্ভবত এই অঞ্চল কাইকাউসের রাজত্বকালেই প্রথম বিজিত হয়, কারণ প্রাচীন প্রবাদ অনুসারে জাফর খান নামে একজন বীর মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম ত্রিবেণী জয় করিয়াছিলেন। কাইকাউসের অধীনস্থ রাজপুরুষ এক জাফর খানের নামাঙ্কিত দুইটি শিলালিপি পাওয়া গিয়াছে, তন্মধ্যে একটি শিলালিপি ত্রিবেণীতেই মিলিয়াছে। ইহা হইতে মনে হয়, এই জাফর খানই কাইকাউসের রাজত্বকালে ত্রিবেণী জয় করেন। বিহারেও কাইকাউসের অধিকার ছিল, এই প্রদেশের শাসনকর্ত্তা ছিলেন খান ইখতিয়ারুদ্দীন ফিরোজ আতিগীন নামে একজন প্রভাবপ্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি।

কাইকাউসের সহিত প্রতিবেশী রাজ্যগুলির কী রকম সম্পর্ক ছিল, সে সম্বন্ধে কিছু জানা যায় না। তবে দিল্লির খিলজী সুলতানদের বাংলার উপর একটা আক্রোশ ছিল। জলালুদ্দীন খিলজী মুসলিম ঠগীদের প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত না করিয়া নৌকায় বোঝাই করিয়া বাংলা দেশে পাঠাইয়া দিতেন, যাহাতে উহারা বাংলা দেশে লুঠতরাজ চালাইয়া এদেশের শাসক ও জনসাধারণকে অস্থির করিয়া তুলে।

শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ

রুকনুদ্দীন কাইকাউসের পর শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ লখনৌতির সুলতান হন। ৭০১ হইতে ৭২২ হি বা ১৩০১ হইতে ১৩২২ খ্রী–এই সুদীর্ঘ একুশ বৎসর কাল তিনি রাজত্ব করেন। তাঁহার রাজ্যের আয়তন ছিল বিরাট। তাঁহার পূর্ববর্তী লখনৌতির সুলতানরা যে রাজ্য শাসন করিয়াছিলেন, তাঁহার অতিরিক্ত বহু অঞ্চল –সাতগাঁও, ময়মনসিংহ ও সোনারগাঁও, এমন-কি সুদূর সিলেট পর্যন্ত তাঁহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছিল। ইনি অত্যন্ত পরাক্রান্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন নরপতি ছিলেন, কিন্তু ইহার সম্বন্ধে খুব কম তথ্যই জানা যায়। ইহার বংশপরিচয়ও আমাদের অজ্ঞাত। ইন্বতার মতে ইনি বুগরা খানের পুত্র। কিন্তু মুদ্রার সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা ইবুবক্তৃতার মত ভ্রান্ত বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে। যতদূর মনে হয় রুকনুদ্দীন কাইকাউসের আমলে যিনি বিহারের শাসনকর্ত্তা ছিলেন, সেই ইখতিয়ারুদ্দীন ফিরোজ আতিগীনই কাইকাউসের মৃত্যুর পরে শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ নাম লইয়া সুলতান হন। ইতিপূর্বে বলবন বুগরা খানকে সাহায্য করিবার জন্য “ফিরোজ” নামক দুইজন যোগ্য ব্যক্তিকে বাংলা দেশে রাখিয়া গিয়াছিলেন। তন্মধ্যে একজন ফিরোজকে বুগরা খান কাইকোবাদের নিকট পাঠাইয়া দিয়াছিলেন; অপরজন বাংলাতেই ছিলেন, ইনিও আমাদের আলোচ্য শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের সহিত অভিন্ন হইতে পারেন।

শিলালিপির সাক্ষ্যের সহিত প্রাচীন কিংবদন্তীর সাক্ষ্য মিলাইয়া লইলে দেখা যায়, শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের আমলেই সর্বপ্রথম সাতগাঁও মুসলিম শক্তি কর্ত্তৃক বিজিত হয়; এই বিজয়ে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব করেন ত্রিবেণী-বিজেতা জাফর খান; এই জাফর খান অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন, শিলালিপিতে ইনি “রাজা ও সম্রাটদের সাহায্যকারী” বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন; ত্রিবেণী ও সাতগাঁও বিজয়ের পরে জাফর খান এই অঞ্চলেই পরলোকগমন করেন; ত্রিবেণীতে তাঁহার সমাধি আছে।

শিলালিপির সাক্ষ্য হইতে জানা যায়, শ্রীহট্ট বা সিলেটও শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের রাজত্বকালেই প্রথম বিজিত হইয়াছিল এবং সিলেট-বিজয়ের ব্যাপারে শেষ জলাল মুজাররদ কুন্যায়ী (কুন্যার অধিবাসী) নামে একজন দরবেশ বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন। শাহ জলাল নামে একজন দরবেশ মুসলমানদের সিলেট অভিযানে নেতৃত্ব করিয়াছিলেন বলিযা প্রাচীন প্রবাদও আছে। এই শেখ জলাল বা শাহ জলাল বিখ্যাত দরবেশ শেখ জালালুদ্দিন তব্রিজী (১২৯৭-১৩৪৭ খ্রী) হইতে ভিন্ন ব্যক্তি।

কিংবদন্তী অনুসারে সাতগাঁও ও সিলেটের শেষ হিন্দু রাজাদের নাম যথাক্রমে ভূদেব নৃপতি ও গৌড়গোবিন্দ; উভয়েই নাকি গোবধ করার জন্য মুসলিম প্রজাদের পীড়ন করিয়াছিলেন এবং সেই কারণে মুসলমানরা তাহাদের রাজ্য আক্রমণ ও অধিকার করিয়াছিল। এই-সব কিংবদন্তীর বিশেষ কোনো ভিত্তি আছে বলিয়া মনে হয় না।

শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের অন্তত ছয়টি বয়ঃপ্রাপ্ত পুত্র ছিলেন বলিয়া জানা যায়। ইঁহাদের নাম-শিহাবুদ্দীন বুগড়া শাহ, জলালুদ্দীন মাহমুদ শাহ, গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ, নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম শাহ, হাতেম খান ও কলু খান। ইঁহাদের মধ্যে হাতেম খান পিতার রাজত্বকালে বিহার অঞ্চলের শাসনকর্ত্তা ছিলেন বলিয়া শিলালিপি হইতে জানা যায়। শিহাবুদ্দীন, জলালুদ্দীন, গিয়াসুদ্দীন ও নাসিরুদ্দীন পিতার জীবদ্দশাতেই বিভিন্ন টাকশাল হইতে নিজেদের নামে মুদ্রা প্রকাশ করিয়াছিলেন। ইহা হইতে কেহ কেহ মনে করিয়াছেন যে ইঁহারা পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়াছিলেন। কিন্তু এই মত যে ভ্রান্ত, তাহা মুদ্রার সাক্ষ্য এবং বিহারের সমসাময়িক দরবেশ হাজী আহমদ য়াহয়া মনেরির মলফুজৎ’ (আলাপ-আলোচনার সগ্রহ)-এর সাক্ষ্য হইতে প্রতিপন্ন হয়। প্রকৃত সত্য এই যে, শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ তাঁহার ঐ চারিজন পুত্রকেও রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসনকর্ত্তার পদে নিয়োগ করিয়াছিলেন এবং তাঁহাদের নিজ গ্রামে মুদ্রা প্রকাশের অধিকার দিয়াছিলেন।

আহমদ য়াহয়া মনেরির ‘মলফুজৎ’-এর মতে ‘কামরু’ (কামরূপ)-ও শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল এবং তাঁহার শাসনকর্ত্তা ছিলেন গিয়াসুদ্দীন। এই মলফুজৎ হইতে জানা যায় যে গিয়াসুদ্দীন অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী ও উদ্ধত প্রকৃতির এবং হাতেম খান একান্ত মৃদু ও উদার প্রকৃতির লোক ছিলেন। ‘মলফুজৎ’-এর সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করিলে মনে হয়, শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের রাজধানী ছিল সোনারগাঁওয়ে।

চর্তুদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ হইতেই বাংলার সুলতানের মুদ্রায় পাণ্ডুয়া (মালদহ জেলা) নগরের নামান্তর ‘ফিরোজাবাদ’-এর উল্লেখ দেখা যায়। সম্ভবত শামসুদ্দীন ফিরোজশাহের নাম অনুসারেই নগরীটির এই নাম রাখা হইয়াছিল।

বাহাদুর শাহ ও নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম শাহ

শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনা সম্বন্ধে তিনজন সমসাময়িক লেখকের বিবরণ পাওয়া যায়। ইঁহারা হইলেন জিয়াউদ্দীন বারনি, ইসমি এবং ইবনবতা। এই তিনজন লেখকের উক্তি এবং মুদ্রার সাক্ষ্য হইতে যাহা জানা যায়, তাঁহার সংক্ষিপ্তসার নীচে প্রদত্ত হইল।

শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র শিহাবুদ্দীন বুগড়া শাহ সিংহাসনে আরোহণ করিলেন। কিন্তু তাঁহার ভ্রাতা গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ শিহাবুদ্দীনকে পরাজিত ও বিতাড়িত করিয়া লখনৌতি অধিকার করিলেন। গিয়াসুদ্দীন বাহাদুরের হাতে শিহাবুদ্দীন বুগড়া ও নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম ব্যতীত তাঁহার আর সমস্ত ভ্রাতাই নিহত হইলেন। শিহাবুদ্দীন ও নাসিরুদ্দীন দিল্লির তৎকালীন সুলতান গিয়াসুদ্দীন তুগলকের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। শিহাবুদ্দীন বুগড়া সম্ভবত সাহায্য প্রার্থনা করার অব্যবহিত পরেই পরলোকগমন করিয়াছিলেন, কারণ ইহার পরে তাঁহার আর কোনো উল্লেখ দেখিতে পাই না। বারনি লিখিয়াছেন যে লখনৌতির কয়েকজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি গিয়াসুদ্দীন বাহাদুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হইয়া গিয়াসুদ্দীন তুগলকের সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন। গিয়াসুদ্দীন তুগলক এই সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিলেন এবং তাঁহার পুত্র জুনা খানের উপর দিল্লির শাসনভার অর্পণ করিয়া পূর্ব ভারত অভিমুখে সসৈন্যে যাত্রা করিলেন (জানুয়ারি, ১৩২৪ খ্রী)। প্রথমে তিনি ত্রিহুত আক্রমণ করিলেন এবং সেখানকার কর্ণাট-বংশীয় রাজা হরিসিংহদেবকে পরাজিত ও বিতাড়িত করিয়া ঐ রাজ্যে প্রথম মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা করিলেন। ত্রিহুতে নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিত তাঁহার সহিত যোগদান করিলেন। গিয়াসুদ্দীন তুগলক তাঁহার পালিত পুত্র তাতার খানের অধীনে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নাসিরুদ্দীনের সঙ্গে দিলেন। এই বাহিনী লখনৌতি অধিকার করিয়া লইল।

গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ ইতিমধ্যে লখনৌতি হইতে পূর্ববঙ্গে পলাইয়া গিয়াছিলেন এবং গিয়াসপুর (বর্তমান ময়মনসিংহ শহরের ২৫ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে) অবস্থান করিতেছিলেন। শত্রুবাহিনীর অগ্রগতির খবর পাইয়া তিনি ঐ ঘাঁটি হইতে বাহির হইয়া লখনৌতির দিকে অগ্রসর হইলেন।

অতঃপর দুই পক্ষে যুদ্ধ হইল। ইসমি এই যুদ্ধের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়াছেন। গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর প্রচণ্ড আক্রোশে তাঁহার ভ্রাতা নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম-পরিচালিত শত্রুবাহিনীর বাম অংশে আক্রমণ চালাইতে লাগিলেন। তাঁহার আক্রমণের মুখে দিল্লির সৈন্যেরা প্রথম প্রথম ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িতে লাগিল, কিন্তু সংখ্যাধিক্যের বলে তাহারা শেষপর্যন্ত জয়ী হইল। গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর তখন পূর্ববঙ্গের দিকে পলায়ন করিলেন। হয়বউল্লার নেতৃত্বে দিল্লির একদল সৈন্য তাঁহার অনুসরণ করিল। অবশেষে গিয়াসুদ্দীনের ঘোড়া একটি নদী পার হইতে গিয়া কাদায় পড়িয়া গেলে দিল্লির সৈন্যেরা তাহাকে বন্দী করিল। . গিয়াসুদ্দীন বাহাদুরকে তখন লখনৌতিতে লইয়া যাওয়া হইল এবং সেখানে দড়ি বাঁধিয়া তাঁহাকে গিয়াসুদ্দীন তুগলকের সভায় উপস্থিত করা হইল।

গিয়াসুদ্দীন তুগলক বাংলাকে তাঁহার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করিয়া নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিমকে লখনৌতি অঞ্চলের শাসনভার অর্পণ করিলেন; তাতার খান সোনারগাঁও ও সাতগাঁওয়ের শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত হইলেন। নাসিরুদ্দীনের নিজের নামে মুদ্রা প্রকাশ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাতে সার্বভৌম সম্রাট হিসাবে প্রথমে গিয়াসুদ্দীন তুগলকের এবং পরে মুহম্মদ তুগলকের নাম থাকিত।

গিয়াসুদ্দীন তুগলক বাংলা দেশ হইতে লুণ্ঠিত বহু ধনরত্ন এবং বন্দী গিয়াসুদ্দীন বাহাদুরকে লইয়া দিল্লির দিকে রওনা হইলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি দিল্লিতে পৌঁছিতে পারেন নাই। তাঁহার পুত্র জুনা খান দিল্লির উপকণ্ঠে তাঁহার অভ্যর্থনার জন্য যে মণ্ডপ নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাহাতে প্রবেশ করিবামাত্র তাহা ভাঙিয়া পড়িল এবং ইহাতেই তাঁহার প্রাণান্ত হইল (১৩২৫ খ্রী)।

ইহার পর জুনা খান মুহম্মদ শাহ নাম লইয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করিলেন। ইতিহাসে তিনি মুহম্মদ তুগলক নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করিলেন। লখনৌতি অঞ্চলের শাসনভার কেবলমাত্র নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম শাহের অধীনে না রাখিয়া তিনি পিণ্ডার খিলজী নামে এক ব্যক্তিকে নাসিরুদ্দীনের সহযোগী শাসনকর্ত্তা রূপে নিয়োগ করিয়া দিল্লি হইতে পাঠাইয়া দিলেন এবং পিণ্ডারকে ‘কদর খান’ উপাধি দিলেন; মালিক আবু রেজাকে তিনি লখনৌতির উজীরের পদে নিয়োগ করিলেন। গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহকেও তিনি মুক্তি দিলেন এবং তাঁহাকে সোনারগাঁওয়ে তাতার খানের সহযোগী শাসকর্ত্তারূপে নিয়োগ করিয়া পাঠাইলেন; ইতিপূর্বে তিনি তাঁহার অভিষেকের সময়ে তাতার খানকে ‘বহরাম খান’ উপাধি দিয়াছিলেন। মালিক ইজুদ্দীন য়াহিয়াকে তিনি সাতগাঁওয়ের শাসনকর্ত্তার পদে নিয়োগ করিলেন।

ইহার দুই বৎসর পর যখন মুহম্মদ তুগলক কিসলু খানের বিদ্রোহ দমন করিতে মুলতানে গেলেন (৭২৮ হি = ১৩২৭-২৮ খ্রী), তখন লখনৌতি হইতে নাসিরুদ্দীন ইব্রাহিম গিয়া তাঁহার সহিত যোগদান করিলেন এবং কিসলু খানের সহিত যুদ্ধে দক্ষতার পরিচয় দিলেন। ইহার পর নাসিরুদ্দীনের কী হইল, সে সম্বন্ধ কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না।

গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ ১৩২৫ খ্রী হইতে ১৩২৮ খ্রী পর্যন্ত বহরম খানের সঙ্গে যুক্তভাবে সোনারগাঁও অঞ্চল শাসন করেন। এই কয় বৎসর তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রকাশ করেন; সেই-সব মুদ্রায় যথারীতি সম্রাট হিসাবে মুহম্মদ তুগলকের নামও উল্লিখিত থাকিত। অতঃপর মুহম্মদ তুগলক যখন মুলতানে কিসলু খানের বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন, তখন গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর সুযোগ বুঝিয়া বিদ্রোহ করিলেন। কিন্তু বহরাম খানের তৎপরতার দরুন তিনি বিশেষ কিছু করিবার সুযোগ পাইলেন না। বহরাম খান গিয়াসুদ্দীনের বিদ্রোহের সংবাদ পাইবামাত্র সমস্ত সেনানায়ককে একত্র করিলেন এবং এই সম্মিলিত বাহিনী লইয়া গিয়াসুদ্দীনকে আক্রমণ করিলেন। তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিয়া গিয়াসুদ্দীন পরাজিত হইলেন এই যমুনা নদীর দিকে পলাইতে লাগিলেন। কিন্তু বহরাম খান তাঁহার সৈন্যবাহিনীকে পিছন হইতে আক্রমণ করিলেন। গিয়াসুদ্দীনের বহু সৈন্য নদী পার হইতে গিয়া জলে ডুবিয়া গেল। গিয়াসুদ্দীন স্বয়ং বহরাম খানের হাতে বন্দী হইলেন। বহরাম খান তাঁহাকে বধ করিয়া তাঁহার গাত্রচর্ম ছাড়াইয়া লইয়া মুহম্মদ তুগলকের কাছে পাঠাইয়া দিলেন। মুহম্মদ তুগলক সমস্ত সংবাদ শুনিয়া সকলকে চল্লিশ দিন উৎসব করিতে আদেশ দিলেন এবং গিয়াসুদ্দীন ও মুলতানের বিদ্রোহীর গাত্রচর্ম বিজয়-গম্বুজে টাঙাইয়া রাখিতে আদেশ দিলেন।

ইহার পর দশ বৎসর কদর খান, বহরাম খান ও মালিক ইজুদ্দীন য়াহিয়া মুহম্মদ তুগলকের অধীনস্থ শাসনকর্ত্তা হিসাবে যথাক্রমে লখনৌতি, সোনারগাঁও ও সাতগাঁও অঞ্চল শাসন করেন। এই দশ বৎসরের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে নাই। ১৩৩৮ খ্রীষ্টাব্দে বহরম খান পরলোক গমন করিবার পর তাঁহার বৰ্মরক্ষক ফখরুদ্দীন সোনারগাঁওয়ে বিদ্রোহ করিলেন। এই ঘটনা হইতেই বাংলার ইতিহাসের একটি নূতন অধ্যায় সুরু হইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *