০৫. সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি : অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তথ্যের ভূমিকা

সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি : অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তথ্যের ভূমিকা

সুবলচন্দ্র মিত্র তাঁর সরল বাঙ্গালা অভিধান-এ সুকতলা শব্দটির নিম্নরূপ সংজ্ঞা দিয়েছেন : ‘জুতার ভিতরে তলার উপরকার চামড়াবিশেষ’। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জর্জ স্টিগলারের (১৯৬১, ১৯৮২) কল্যাণে পাদুকার অন্তর্দেশ থেকে সুকতলা অর্থনীতির তত্ত্বের জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। স্টিগলার নিজে সুকতলা বা shoe-leather শব্দটি ব্যবহার করেননি। কিন্তু সমঝদাররা অধ্যাপক স্টিগলার কর্তৃক উদ্ভাবিত তথ্যের অর্থনীতির নাম দিয়েছেন সুকতলার অর্থনীতি।

১. সুকতলার অর্থনীতি

প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির একটি অপরিহার্য পূর্ব-অনুমান এই যে ক্রেতা কোনো খরচা ছাড়াই বাজারের সব পণ্য সম্পর্কে সব তথ্য জানে। এর ফলে কোনো বিক্রেতা বাজারের সর্বনিম্ন দামের চেয়ে বেশি দাম হাঁকলে ক্রেতারা সটকে পড়বে। অর্থনৈতিক তত্ত্ব তাই ভবিষ্যদ্বাণী করে যে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হবে। অর্থনীতির ভাষায় বাজারে বিদ্যমান এ দামকে বলে সমস্থিতি (equilibrium) মূল্য। তত্ত্ব বলছে, সব বিক্রেতা একই সমস্থিতি মূল্যে পণ্য বিক্রয় করবে । অথচ এ বিষয়ে তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তব জীবনের কোনো মিল নেই। একই মানের সমরূপ নাইকির জুতো বা অ্যাডিডাস ব্রান্ডের টি-শার্ট বা লিভাই কোম্পানির জিন্স ভিন্ন ভিন্ন দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হয়। একই পণ্যের দাম সব দোকানে এক হয় না। ক্রেতারা এ কথা জানে। তবু বেশি দামে সমরূপ পণ্য বিক্রিতে কোনো অসুবিধা হয় না।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একই পণ্যের দামের ভিন্নতা গতানুগতিক অর্থনৈতিক তত্ত্বের জন্য একটি প্রহেলিকা। স্টিলার (১৯৬১, ১৯৮২) হচ্ছেন প্রথম অর্থনীতিবিদ, যিনি এই প্রহেলিকার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, পণ্যের মূল্যের দুটো উপাদান রয়েছে। একটি হলো সমস্থিতি মূল্য; অপরটি হলো পণ্যটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ব্যয়। দেখা যায়, একই পণ্য ঢাকার গুলশানের দোকানপাটের তুলনায় বঙ্গবাজারে অনেক কম দামে বেচা হয়। অথচ গুলশান বাজারে বেশি দাম দিয়ে একই পণ্য কেনার লোকের অভাব নেই। এর কারণ হলো, কোথায় একই পণ্য কম দামে পাওয়া যায়। তা জানতে হলে অনুসন্ধান করতে হবে। দাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে দোকান থেকে দোকানে হেঁটে খোঁজ নিতে হবে। এই ধরনের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জুতার সুকতলা ক্ষয় হয়ে যাবে। ফলে জুতা বেশি দিন টিকবে না। নতুন জুতা কেনার জন্য বাড়তি খরচ হবে। তবে কম দামে পণ্য বা সেবা কেনার বাড়তি খেসারত শুধু জুতা কেনার জন্য দিলেই চলবে না। অনুসন্ধান করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যাদের আয় বেশি তাদের সময়ের দামও বেশি। তাই তারা সস্তা পণ্যের খোঁজে সময় নষ্ট না করে বেশি দামে পণ্য বা সেবা কিনে অবসরে অতিরিক্ত সময় কাটাতে পছন্দ করেন। যাদের আয় কম তাদের সময়ের দামও কম। তাই তাঁরা অল্প কম দামে জিনিস কেনার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে দ্বিধা বোধ করেন না। তারা অনেক দূরের বাজারে সস্তা পণ্য কেনার জন্য হেঁটে যাবেন, দোকান থেকে দোকানে খুঁজবেন এবং যত সময়ই লাগুক না কেন সবচেয়ে সস্তা দামে জিনিসটি কিনবেন। মূল্য ও পণ্যের মান সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য যে বাড়তি খরচ এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট করতে হয়, অর্থনীতিবিদেরা তারই নাম দিয়েছেন সুকতলার ব্যয় (shoe-leather cost)।

অনেকে আশা করেছিলেন যে ইন্টারনেটের নাটকীয় সম্প্রসারণের ফলে বাজারে না ঘুরেও অতি সহজে ক্রেতারা ইন্টারনেট থেকে দাম সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে যাবে। তাই ক্রেতারা বেশি দামে কোনো জিনিস কিনবে না এবং এর ফলে বাজারে একই পণ্যের বিক্রেতাদের মধ্যে দামের ফারাক কমে যাবে। বাস্তব জীবনে তা-ও ঘটেনি। এর একটি বড় কারণ হলো যে, সব ক্রেতা বাজার সম্পর্কে সমান ওয়াকিবহাল নন। ফলে বাজারে পণ্যের দামে তারতম্য থেকে যায়। মাইকেল আর বে, জন মরগান ও পেট্রিক শেল্টনের (২০০৬) একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে ১৯০১ থেকে ২০০৫ সময় কালে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাজারেই একই পণ্য এক দামে বেচা হয়নি। অর্থাৎ বিক্রেতাভেদে মূল্যের ফারাক হ্রাসের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।

তথ্য-অর্থনীতি সম্পর্কে গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন যে সুকতলা ক্ষয় (সময়সহ অনুসন্ধানের আনুষঙ্গিক ব্যয়) সম্পর্কে তথ্য জানা গেলে বাজারের দাম সম্পর্কে কোনো রহস্য থাকবে না। যেহেতু ক্রেতাভেদে সুকতলা ব্যয় ভিন্ন হয়। সুকতলার ব্যয়ের তারতম্যের জন্য বাজারে একই পণ্য ভিন্ন দামে বিক্রি হতে পারে।

কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ল। ক্রেতা ও বিক্রেতা কখনো সব তথ্য জানে না। দেখা গেল যে, অনেক ক্ষেত্রেই বিক্রেতারা যা জানে ক্রেতারা কখনো তা জানে না, আর ক্রেতাদের অনেক গুমর বিক্রেতাদের কাছে অজানা থেকে যায়। অর্থনীতিবিদেরা এ পরিস্থিতির নাম দিয়েছেন information asymmetry বা অপ্রতিসম তথ্য। যেখানে তথ্য সম্পর্কে উভয় পক্ষের (যথা ক্রেতা-বিক্রেতার) জ্ঞান সমান নয়, সেখানেই তথ্যের অপ্রতিসাম্য দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে যিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি কুক্ষিগত করবেন তিনিই বাজারে ফায়দা লুটবেন। বাজার-অর্থনীতিতে তথ্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাই স্টিভেন ডি লেভিট ও স্টিফেন জে ডুবনার (২০০৫, ৬৭) লিখেছেন, ‘Information is a beacon, a cudgel, an olive branch, a deterrent, depending on who wields it and how. Information is so powerful that the assumption of information even if the information does not actually exist, can have a sobering effect.’ বাজারে তথ্যের বহুমুখী ভূমিকা রয়েছে। তথ্য কখনো পণ্য ও মূল্য সম্পর্কে সংকেত (beacon) হিসেবে কাজ করে। আবার তথ্য কখনো লাঠালাঠি বা দর-কষাকষির অস্ত্র (cudgel)। তথ্য কখনো কখনো ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করে (olive branch)। আবার তথ্যই হচ্ছে বাজারে এক পক্ষের প্রাধান্যের প্রতিরোধক (deterrent)। বাজারে তথ্যের কী প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করবে কার কাছে তথ্য রয়েছে এবং সে কীভাবে তা প্রয়োগ করছে। তথ্য এত শক্তিশালী যে তথ্য না থাকলেও তথ্য সম্পর্কে অনুমানও বাজারে হিতকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

অর্থনীতির বিভিন্ন কুশীলবের ক্ষেত্রে তথ্যের অপ্রতিসাম্যের প্রভাব তুলে ধরেছেন তিনজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ। এঁরা তিনজনই অর্থনীতিতে অবদানের জন্য ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এরা হলেন জর্জ একারলফ (George Akerlof), মাইকেল স্পেন্স (Michael Spence) এবং জোসেফ ই স্টিগলিজ (Joseph E. Stiglitz)।

জর্জ একারলফ (২০০১) একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বাজারে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে অপ্রতিসম তথ্যের প্রভাব তুলে ধরেন। তাঁর মতে, তথ্যের অপ্রতিসাম্যের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় পুরোনো গাড়ির বাজারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরোনো গাড়িকে লেমন’ বা লেবু বলা হয়ে থাকে। পুরোনো গাড়িকে লেবু বলার দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, লেবু হচ্ছে একটি সস্তা ফল, যা নেহাতই তুচ্ছ। সমাজের যাচ্ছেতাই লোকদের বা নিম্ন বর্গের নাগরিকদেরও তাই লেবু বলা হয়ে থাকে। কাজেই বাজে মাল অর্থে পুরোনো গাড়িকে লেবু বলা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, লেবু টক এবং লেবু খেলে অনেকক্ষণ মুখে বিস্বাদ থেকে যায়। পুরোনো গাড়ি কিনলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠকতে হয় এবং এই তিক্ততা ক্রেতার মনে অনেক দিন থাকে। যে কারণেই হোক, ক্রেতারা পুরোনো গাড়ি কেনাকে লেবুর মতো অপ্রিয় মনে করে।

পুরোনো গাড়ির কোনো সমস্যা আছে কি না এবং থাকলে সমস্যার প্রকৃতি কী তা শুধু বিক্রেতাই জানে। কিন্তু ক্রেতা এ সম্পর্কে অন্ধকারে। তথ্যের অভাবে ক্রেতার পক্ষে এ বাজারে তার জন্য সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এখানে বাজার অনুপস্থিত বা বিকৃত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, পুরোনো গাড়ির বাজার-অর্থনীতির একটি প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন সমস্যা। এ ধরনের মূল্যায়ন মোটেও সঠিক নয়। টিম হারফোর্ড (Tim Harford, ২০০৬, ১১৩) যথার্থই লিখেছেন, ‘What Akerlof described is not a market where some people get ripped off; it is much more serious than that. He described a market that should exist and simply doesn’t because of the corrosive force of inside information.’ (একারলফ এমন একটি বাজারের কথা বলছেন না, যেখানে কোনো কোনো ক্রেতা প্রতারিত হয়; যদিও বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন একটি বাজারের কথা বলছেন, যার অস্তিত্ব থাকা উচিত; কিন্তু ভেতরের লোকদের গোপন তথ্য অপব্যবহারের ক্ষয়কারী প্রভাবের ফলে এ বাজার একেবারেই অনুপস্থিত)।

আসলে এটি হচ্ছে একটি ব্যাপক সমস্যা। অপ্রতিসম তথ্যের প্রভাব বাজারে বিভিন্ন আকারে দেখা যায়। নিচে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো :

• বিমার বাজারে প্রভাব : যথেষ্ট তথ্যের অভাবে ক্রেতারা বিমা কোম্পানিকে প্রতারণা করতে পারে।

• ব্যাংক ব্যবসাতে প্রভাব : আমানতকারীরা ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অপ্রতুল জ্ঞানের জন্য আমানত হারাতে পারে অথবা তথ্যের অভাবে অযোগ্য ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।

• শ্রমবাজারে প্রভাব : নিয়োগকারী চাকরিপ্রার্থীর উপযুক্ততা সম্পর্কে বা শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে যথেষ্ট জানে না। তাই অনুপযুক্ত লোক নিয়োগ দিয়ে ঠকার সম্ভাবনা আছে।

• ভাগ চাষের ওপর প্রভাব : ভালো ভাগচাষি নির্বাচিত হলে বেশি ফিরতি পাওয়া যায় অথচ অপ্রতুল তথ্যের কারণে উপযুক্ত ভাগচাষি নির্বাচন সম্ভব হয় না। অপ্রতুল তথ্যের ভিত্তিতে সব চুক্তির ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

• সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ঋণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উন্নয়নশীল দেশে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে ঋণের কার্যকর বাজার নেই বা বাজার অনেক দুর্বল। কাজেই এসব ক্ষেত্রে বাজারভিত্তিক সমাধান কাজ করে না। তবে তথ্য না থাকলে বাজার সব সময় একেবারে অকার্যকরও হয়ে যায় না; বাজারের কার্যকারিতা কমে যায়।

অপ্রতিসম তথ্যের ক্ষেত্রে দুভাবে বাজার কাজ করতে পারে। একটি পদ্ধতি হলো, যাদের কাছে তথ্য রয়েছে তারা যাদের কাছে তথ্য নেই তাদের সংকেত দিয়ে বাজারে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে পারে। এই পদ্ধতি মাইকেল স্পেন্সের (২০০১) সংকেত (signaling) তত্ত্ব নামে পরিচিত। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, বাজারে যাদের কাছে তথ্য আছে তারা, যাদের কাছে তথ্য নেই তাদের তথ্য দিয়ে প্রণোদনা (incentive) সৃষ্টি করতে পারে। এ দ্বিতীয় পদ্ধতির প্রধান প্রবক্তা হলেন জোসেফ ই স্টিগলিজ।

স্পেন্সের সংকেত-তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য পুরোনো গাড়ির বাজারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন, বাজারে লক্কড় গাড়ি কিনে বারবার ঠকে গিয়ে ক্রেতারা পুরোনো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিল। এ অবস্থায় পুরোনো গাড়ি বেচতে হলে বাজারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হবে। ক্রেতাদের আশ্বাস দিতে হবে, তাদের ঠকানো হবে না। এবং তাদের সব সঠিক তথ্য জানানো হবে। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতারা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। তবে শুধু বিজ্ঞাপন ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। তাই বিক্রেতারা শহরের নামীদামি এলাকায় বাহারি শো-রুম বা বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে পারে। এতে ক্রেতারা ভাববে, যে প্রতিষ্ঠান এত পয়সা খরচ করে চটকদার দোকান সাজিয়েছে সে দু-চারটি বাজে গাড়ি গছিয়ে সটকে পড়বে না। যদি প্রতিষ্ঠানটি তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবে তার আর ক্রেতার অভাব থাকে না। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর জন্য সময় লাগতে পারে। তেমনি শ্রমবাজারে যেসব শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী সহজে চাকরি পেতে চায়, তারা সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে নিয়োগকর্তাকে তার যোগ্যতা সম্পর্কে সংকেত প্রদান করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে শিক্ষা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় না, শিক্ষা ব্যক্তির সহজাত (inherent) গুণাবলি সম্পর্কে সংকেত প্রদান করে ।

স্পেন্সের তত্ত্ব অনুসারে যাদের কাছে তথ্য রয়েছে তারা নিজেরাই বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্য পক্ষকে তথ্য জানিয়ে সংকেত প্রদান করে। স্টিগলিজ (২০০১) বলছেন যে যাদের কাছে তথ্য নেই, তারা, যাদের কাছে তথ্য রয়েছে তাদের সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসা-বিমার সমস্যা বিবেচনা করা যেতে পারে। যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ধরনের রোগীদের সংখ্যা কমাতে পারলে বিমার খরচ খুবই কমে যাবে। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধিতে কারা আক্রান্ত তা শুধু রোগীরাই জানে। তারা বিমা কোম্পানির ডাক্তারদের কাছে তাদের রোগ লুকিয়ে রাখে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের বাদ না দিতে পারলে বিমার প্রিমিয়াম এত বেড়ে যাবে যে অপেক্ষাকৃত সুস্থ-সবল ব্যক্তিরা বিমার জন্য এত চড়া দাম দিতে চাইবে না। এতে প্রিমিয়ামের হার আরও বেড়ে যাবে এবং বিমা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হবে। এর একটি সমাধান হতে পারে, চিকিৎসা ব্যয় বিমা কোম্পানি ও বিমা-গ্রহীতার মধ্যে ভাগাভাগি করা। স্বল্প চিকিৎসা-ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানি উচ্চ হারে ব্যয় বহন করবে। চিকিৎসা-ব্যয় বেশি হলে রোগীর হিস্‌সা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে যাদের দুরারোগ্য ব্যাধি রয়েছে তাদের খরচ বেশি হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের নিরুৎসাহিত করা যাবে। এ সমস্যাকে বিরূপ নির্বাচন (adverse selection) বলা হয়ে থাকে। তথ্যের অপ্রতুলতার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাহকদের সবচেয়ে কম দামে বিমা-সুবিধা প্রদান হচ্ছে বিরূপ নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকির ভিত্তিতে প্রিমিয়ামের তারতম্য করে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রিমিয়ামের হারের তারতম্য করে বিমা কোম্পানি গ্রাহকদের তথ্য প্রদানে উৎসাহিত করতে পারে।

মাইকেল স্পেন্স ও জোসেফ স্টিগলিজ প্রমাণ করেছেন যে তথ্যের অভাব সত্ত্বেও বাজার কাজ করে। তবে তার অর্থ এই নয় যে বাজার পরিপূর্ণরূপে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, বিমা বাজারে নৈতিক ঝুঁকির (moral hazard) সমস্যা উল্লেখ করা যেতে পারে। বিমার উদ্দেশ্য হলো ঝুঁকি হ্রাস করা। কিন্তু বিমার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায়। গাড়ির চালকেরা বিমা না থাকলে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালায়। বিমা থাকলে তারাই বেপরোয়া গাড়ি চালায় আর মনে মনে ভাবে যে দুর্ঘটনা হলে খেসারত দেবে বিমা কোম্পানি। এ ধরনের মনোভাব থাকলে বিমা-ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করবে না।

তাত্ত্বিক দিক থেকে তথ্য-অর্থনীতি কতগুলি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। প্রথমত, অনুমান করা হতো যে অপ্রতুল তথ্যের ফলে বাজারে লেনদেন খরচ বাড়ে। অপরিপূর্ণ তথ্য সত্ত্বেও বাজারের অদৃশ্য হাত ঠিকই কাজ করে। তবে স্টিগলিজ মনে করেন যে তথ্যের অভাবে বাজারে অ্যাডাম স্মিথের কল্পিত অদৃশ্য হাতের অস্তিত্ব নেই কিংবা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হাতের মতো অসার। তথ্য-অর্থনীতি শুধু সুকতলার খরচার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক খরচ করেও অনেক সময় তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্য ছাড়া বা অপূর্ণাঙ্গ তথ্যের ভিত্তিতে অনেক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। বাজারের সঙ্গে তাই সব সময় বাস্তবতার যোগাযোগ থাকে না। চাহিদা ও জোগান বাজারের বড় নিয়ামক হলেও একমাত্র নিয়ন্ত্রক নয়। তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে বাজার গড়ে না উঠলে চাহিদা আর জোগানের সমস্থিতির প্রশ্নই ওঠে না। প্রশ্ন হলো, এ ধরনের সমস্যা কত ব্যাপক? এ সম্পর্কে স্টিগলিজের (২০০১, ৪৮৬) জবাব নিম্নরূপ : ‘Perhaps most importantly, under the standard paradigm, markets are Pareto-efficient, except when there one of a limited number of market failures occurs. Under the imperfect information paradigm, markets are almost never Pareto-efficient.’ (হয়তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রচলিত তাত্ত্বিক কাঠামোতে বাজার সব সময়ই (অর্থনীতিবিদ) প্যারেটোর নিরিখে সবচেয়ে দক্ষ। শুধু কালেভদ্রে বাজার ব্যর্থ হলে এটি ঘটে না। অপূর্ণাঙ্গ তথ্যের তাত্ত্বিক কাঠামোতে, বাজার প্রায় কখনোই প্যারেটোর নিরিখে দক্ষ নয়।) অপূর্ণাঙ্গ তথ্যভিত্তিক বাজারে তাই সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতা কার্যকর হয় না।

দ্বিতীয়ত, তথ্য-অর্থনীতির প্রবক্তারা বাজার-মৌলবাদীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তারা এ কথা মানতে রাজি যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক ব্যর্থতা থাকতে পারে। তবে সরকার ব্যর্থ হলেই বাজার সফল হবে, এর নিশ্চয়তা নেই। তাই তথ্য-অর্থনীতি ঘরানার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বাজারভিত্তিক সমাধানগুলি উন্নয়নশীল দেশসমূহে কাজ করবে না; কারণ, এসব দেশে অনেক ক্ষেত্রে বাজার নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে বাজার থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বল। এর ফলে বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলির দাওয়াই উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যার সমাধান করেনি বরং তাকে জটিল করেছে। এসব দাওয়াই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মন্দাকে তীব্রতর করে কোটি কোটি মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। বাজারভিত্তিক সমাধান দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রত্যাহারের হিড়িক থামানোর জন্য স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে বড় বড় কলকারখানা দেউলিয়া হয়ে যায়। অভূতপূর্ব বেকার সমস্যা ও মূল্যস্ফীতি এমন আতঙ্কের সৃষ্টি করে যে বৈদেশিক বিনিয়োগ দ্রুত পালিয়ে যায়। একই ধরনের ধারণা রাশিয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। বলা হয় যে সমাজতন্ত্রের শৃঙখল রাশিয়ার অর্থনীতিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানকে চটজলদি বিরাষ্ট্রীয়করণ করা গেলেই উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটি ঘটল; রাশিয়াতে দারিদ্র্যের হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেল আর বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে বেশির ভাগ কলকারখানা চলে গেল মাস্তানদের দখলে। এর প্রধান কারণ হলো বাজার না থাকলে বা বাজার দুর্বল হলে বাজারভিত্তিক সমাধান উপকার করে না, বরং অপকার করে।

প্রশ্ন ওঠে, এত সব দুর্বলতা সত্ত্বেও মূলধারার অর্থনীতির বিশ্লেষণ এখনো চাহিদা আর জোগানের সূত্রের গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে কেন? নব্য ধ্রুপদি অর্থনীতিকে কেন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে না? এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সব ধরনের বাজারে তথ্যের অপ্রতুলতা বা অপ্রতিসাম্য একই ধরনের নয়। যেমন ধরুন, মাছের বাজারে বা চালের বাজারে যে তথ্য পাওয়া যায় তা চাহিদা-জোগানভিত্তিক বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট। তাই গতানুগতিক অর্থনীতিক বিশ্লেষণ পুরোপুরি বাতিলের দরকার নেই। দ্বিতীয়ত, যেসব বাজারে তথ্যের অপূর্ণাঙ্গতার মাত্রা কম, সেখানেও গতানুগতিক পদ্ধতি কাজ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, গতানুগতিক পদ্ধতি শ্রম, বিমা, অর্থ ও মুদ্রার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজারের জন্য লাগসই নয়।

স্টিগলিজের (২০০১, ৫২৪) মতে, অর্থনীতির মূল ধারাতে নব্য ধ্রুপদি বিশ্লেষণ টিকে থাকার একটি বড় কারণ হলো, এই ধরনের ব্যাখ্যা কায়েমি স্বার্থবাদীদের মদদ জোগায়। স্বচ্ছতা কায়েমি গোষ্ঠীগুলির মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। করপোরেশনগুলির ব্যবস্থাপকেরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে তাদের দুষ্কর্ম ঢেকে রাখার জন্য অবগুণ্ঠন সৃষ্টি করে। যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মন্দা দেখা দেয় তখন শিল্পোন্নত দেশগুলি অর্থনীতিতে স্বচ্ছতার জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে। কিন্তু নিজেদের দেশে যখন মন্দা দেখা দেয় তখন অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে। সব ধরনের তথ্যের ক্ষেত্রে সবার সমান প্রবেশাধিকার না থাকলে অনেক সময় বাজার গড়ে ওঠে না বা কার্যকরভাবে কাজ করে না। তবে এ প্রক্রিয়া কাজ করে নীরবে।

২. অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ব্যক্তির ভূমিকা

অর্থনীতিতে ব্যক্তির অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা রয়েছে। বাজার তাঁকে সন্তুষ্ট না করলে তিনি বিশেষ বাজার থেকে বের হতে পারেন। তিনি বাজারে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। আবার তিনি তাঁর মুনাফা বাড়ানোর জন্য জুতার সুকতলা ক্ষয় করে তথ্য সংগ্রহ করে সবচেয়ে সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে ভোটারদের অধিকার অনেক সীমিত। কোনো দেশে বাস করলে সে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। অবশ্য গণতান্ত্রিক দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্বাচন হয়। তবে শুধু নির্বাচনের দিনটিতেই (যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়) ভোটাররা এক দিনের বাদশাহ হন। আর নির্বাচন ছাড়া অন্য সময় জনগণের সার্বভৌমত্ব দুবৃত্তদের সর্বময় কর্তৃত্বে রূপান্তরিত হয়। তাই সুকতলা ক্ষইয়ে তথ্য সংগ্রহ করে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজনীতিতে নিষ্ক্রমণের সুযোগ নেই। অর্থাৎ রাজনীতিতে অসম আচরণ, প্রতারণা বা বৈষম্য থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এদের প্রতিরোধ করতে হবে। তাই রাজনীতিতে শুধু সুকতলা নয়, গোটা জুতাকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।

৩. জুতার রাজনীতি

জুতার রাজনীতি তাত্ত্বিকেরা আবিষ্কার করেননি। পরিস্থিতির উত্তাপে জুতার রাজনীতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম নেয়। শুধু জুতাই রাজনৈতিক প্রতিবাদের একমাত্র অস্ত্র নয়। প্রতিবাদের ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ডিম (বিশেষ করে পচা ডিম) বা পাই (pie) নামধারী পিঠার মতো সামগ্রীও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার সবচেয়ে জনপ্রিয় অস্ত্র হচ্ছে পাদুকা। জুতা সব সময় সঙ্গেই থাকে। অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে হলে তা আগে থেকে জোগাড় করতে হয়। জুতার ক্ষেত্রে এ বালাই নেই। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় জুতাকে কলুষিত গণ্য করা হয়; কেননা, হিন্দুদের জন্য গরুর চামড়া ও মুসলমানদের জন্য শূকরের চামড়া অপবিত্র। তাই কাউকে জুতা দেখালে বা মারলে তা অত্যন্ত হীন অপমান হিসাবে গণ্য করা হয়। গত দশকে জুতা নিক্ষেপের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে :

• ২০০৮ সালে ইরাকি সাংবাদিক মুন্তাদার আলজায়েদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের দিকে পর পর দুবার জুতা নিক্ষেপ করেন। তবে বুশ বা দিকে ঝুঁকে পড়ায় তার গায়ে লাগেনি।

• ২০০৮ সালে সিন্ধু প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী আরবাব গোলাম রহিম ও ২০১০ সালে পাকিস্তানর রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি জুতা নিক্ষেপের শিকার হন।

• ভারতে ২০০৯ সালে জুতা নিক্ষেপে আক্রান্ত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম ও বিরোধী দলের নেতা এল কে আদভানি।

• ২০০৯ সালে ইরানের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমেদ নেজাদকে লক্ষ্য করে পাদুকা নিক্ষিপ্ত হয়।

• ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়বাওয়ের দিকে জুতা ছোঁড়া হয়।

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল বুশকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ। সাংবাদিক মুন্তাদার আলজায়েদি জুতা ছুঁড়ে রাতারাতি একজন জীবন্ত কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত হন। অবশ্য ঘটনার পর তাঁকে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বুশকে হামলার জন্য তাঁর তিন বছরের জেল হয়েছে। সাজা মওকুফ হওয়ায় তিনি নয় মাস পর মুক্ত হন। বর্তমানে তিনি ইরাকে এতিমদের জন্য একটি বেসরকারি ফাউন্ডেশন চালাচ্ছেন। বুশ অপমানিত হলেও এ নিয়ে খুব উচ্চবাচ্য করলেন না। মজার ব্যাপার হলো, ঘটনাটি শুধু রাজনৈতিক থাকল না। তুরস্কের বেয়দান নামে এক জুতা কারখানা দাবি করল যে আলজায়েদি যে জুতা ছুঁড়েছিল তা তাদের কোম্পানির জুতা। তারা এ জুতার নাম দিল ‘বুশ শু’। এই ব্রান্ডের জুতা বিক্রি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে গেল। প্রথম বছরে প্রায় ৪ লাখ জোড়া বুশ শু বিক্রয় হলো।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে এ কথা অনুমান করা ঠিক হবে না যে জুতা সব সময়ই অপমানের প্রতীক। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় জুতা নিয়েই আত্মমর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো দেশপ্রেমিকেরা। ঝগড়াটি ছিল জুতা নিয়ে নয়, জুতার ধরন নিয়ে। ইংরেজদের বক্তব্য ছিল, পশ্চিমা ধরনের বুট পরে অফিস-আদালতে যাওয়া যাবে, কিন্তু বাঙালিদের তালতলার চটি পরে অফিস-আদালতে যাওয়া যাবে না। চটি জুতা খুলে বাইরে রেখে অফিসে ঢুকতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সব সময়ই তালতলার চটি পরতেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৮ জানুয়ারি বিদ্যাসাগর মহাশয় চটি জুতা পায়ে দিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটির অফিসে ঢুকতে গেলে তাঁকে জুতা খুলতে বলা হয়। বিদ্যাসাগর অপমানিত বোধ করে বাড়ি ফিরে যান। অবশ্য তিনি ক্রোধে কারও প্রতি চটি জুতা ছুঁড়ে মারেননি। ভেবেচিন্তে এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক Blanford সাহেবকে লিখলেন : ‘Having had occasion to visit the Library of the Asiatic Society of Bengal, I called on 28th January last, and as I wore native shoes, I was not admitted, unless I would have my shoes behind, I felt so much affronted that I came back without an expostulation. …Besides if persons so wearing the shoes of the English pattern, though coming on foot, could be admitted with shoes on, I could not make out why persons of the same status in life and under similar circumstances should not be admitted, simply because they happened to wear native shoes.’ (ইন্দ্র মিত্র, ২০০০, ৭২১)।

সাহেবরা জবাব দিলেন যে ভারতীয় প্রথা হচ্ছে, জুতা বাইরে রেখে ঘরে ঢুকতে হয়। বিদ্যাসাগর প্রত্যুত্তরে বললেন, যে ঘরে ফরাশে বসতে হয় সেখানে বাইরে জুতা রাখা রেওয়াজ। যে ঘরে চেয়ারে বসতে হয় সেখানে জুতা বাইরে রাখার দরকার নেই। যদি বুট নিয়ে ঢোকা যায়, তবে চটি জুতা নিয়ে প্রবেশ বিধেয় না হওয়ার কোনো কারণ নেই। পাদুকা সম্পর্কে মহা বিতর্কে সাহেবরা শেষ পর্যন্ত বিদ্যাসাগরের যুক্তি মেনে নেন। এ সময় বিদ্যাসাগর সংস্কৃতে নিম্নোক্ত শ্লোকটি রচনা করেন :

বিদ্বত্বঞ্চ জুততঞ্চ নৈব তুল্যং কদাচন।
স্বদেশে পূজ্যতে বিদ্যা জুতা সর্বত্র পূজ্যতে ॥

 (বিনয় ঘোষ, ১৯৯৩, ৩৫৫)।

বিদ্যা ও জুতার তুলনা চলে না। বিদ্যার পূজা চলে স্বদেশে আর জুতা সর্বত্র পূজ্য। আজ একবিংশ শতাব্দীতে জুতা মর্যাদার প্রতীক নয়। স্বদেশি ও বিদেশি জুতার প্রভেদ ঘুচে গেছে। জুতা আজ অপমানের আর প্রতিরোধের অস্ত্র।

যেখানে সুকতলা ক্ষয় করেও সমাধান মেলে না, সেখানেই শুরু হয় জুতার রাজনীতি। রাজনৈতিক অসন্তোষ পরিমাপ করার জন্য বিলাতের সাপ্তাহিক Economist একটি নতুন সূচক উদ্ভাবন করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে Shoe Thrower’s Index বা জুতা ছোঁড়ার সূচক (The Economist, February ১২, ২০১১)। এই সূচক নিম্নরূপে পরিমাপ করা হয়ে থাকে : (১) ২৫ বছর বা তার কম বয়সী জনসংখ্যার মোট জনসংখ্যায় হিস্‌সা (সূচকে ওজন ৩৫ শতাংশ) (২) কত বছর ধরে সরকার ক্ষমতায় আছে (সূচকে ওজন ১৫ শতাংশ) (৩) দুর্নীতি (সূচকে ওজন ১৫ শতাংশ), (৪) গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি (সূচকে ওজন ১৫ শতাংশ) (৫) মাথাপিছু আয় (সূচকে ওজন ১৫ শতাংশ), (৬) লেখায় ও মতপ্রকাশে বাধানিষেধ (সূচকে ওজন ৫ শতাংশ), এবং (৭) ২৫ বয়সের কম মোট জনসংখ্যা (সূচকে ওজন ৫ শতাংশ)। এই সূচকে অনুমান করা হয়েছে যে এর প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে রাজনৈতিক অসন্তোষের ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক অসন্তোষ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই যেখানে জনসংখ্যায় তরুণদের হিস্সা বেশি, সেখানে সহিংস রাজনীতির আশঙ্কা বেশি। শুধু হিস্সা নয়, তরুণদের মোট সংখ্যাও একটি নিয়ামক। অনুরূপভাবে একই দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে, দুর্নীতির মাত্রা উঁচু হলে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করলে অসন্তোষ বাড়ে। মজার ব্যাপার হলো, মাথাপিছু আয় বাড়লেও অসন্তোষ বাড়ে, কেননা এসব দেশে মানুষের প্রত্যাশা দ্রুত বাড়তে থাকে। ইকোনমিস্ট আরব লিগের ১৭টি সদস্য-রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিমাপ করার জন্য জুতা ছোঁড়ার সূচক প্রাক্কলন করেছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সারণি ৫.১-এ দেখা যাবে।

সারণি ৫.১
আরব লিগের সদস্য-রাষ্ট্রে রাজনীতিতে জুতা ছোড়ার সূচক (Shoe Thrower’s Index)

আরব লিগের সদস্য-রাষ্ট্রে রাজনীতিতে জুতা ছোড়ার সূচক (Shoe Thrower’s Index)

সূত্র : Economist, February 2011

জুতা ছোঁড়ার সূচকের পরিমাণ যেখানে বেশি, সেখানে রাজনৈতিক অসন্তোষের সম্ভাবনা তত বেশি। ইকোনমিস্ট-এর সূচক অনুসারে মধ্যপ্রাচ্যে কাতার, কুয়েত ও যুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে স্থিতিশীল। আর সর্বাধিক অস্থিতিশীল হচ্ছে ইয়েমেন, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া ও ইরাক। তবে অপেক্ষাকৃত অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, আলজেরিয়া ও জর্ডান। আগামী দিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাবে, রাজনৈতিক অসন্তোষ সম্পর্কে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু নির্ভরযোগ্য। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ধধাপে টেকে না।

৪. উপসংহার

সুকতলার অর্থনীতি আমাদের শিখিয়েছে যে অর্থনীতিতে অনেক সিদ্ধান্ত অজ্ঞতার ভিত্তিতে নিতে হয়। তবে লেনদেনে উভয় পক্ষের জ্ঞানের মধ্যে তারতম্য থাকে। যে লেনদেনটি সম্পর্কে বেশি জানে, সে, যে কম জানে তাকে ঠকানোর চেষ্টা করে। কাজেই বাজারভিত্তিক অর্থনীতিকে কার্যকর করতে হলে তথ্যের অপ্রতিসাম্য-ভিত্তিক প্রতারণা কমাতে হবে। কাজটি শক্ত, তবে একেবারে অসম্ভব নয়। সব তথ্যের অপ্রতিসাম্য দূর করা না গেলেও অনেক ক্ষেত্রে তা কমানো যাবে। জুতার রাজনীতির উৎস শুধু তথ্যের অপ্রতিসাম্য নয়। এখানেও কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠীদের ক্ষমতার তারতম্য রয়েছে। ক্ষমতা কেউ ছাড়তে চায় না। সুকতলার অর্থনীতির কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাধান মিললেও জুতার রাজনীতির হিল্লে সহজে হবে বলে মনে হয় না।

আপাতদৃষ্টিতে সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি দুটি বিচ্ছিন্ন সমস্যা মনে হতে পারে। তবে গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে এ কথা স্পষ্ট হবে যে সমস্যা দুটির উৎস অভিন্ন। যেখানেই তথ্যের অবাধ প্রবাহ বিঘ্নিত হয় সেখানেই সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতির সমস্যা প্রকট হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিবিড় সংযোগ রয়েছে। অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করে, যাতে সরকারের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা না বাঁধতে পারে। পক্ষান্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণকে সরকারি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ দিতে হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারও জনগণের দাবিদাওয়া জানতে চায়। প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশে জুতার রাজনীতির প্রয়োজন নেই; কারণ, সরকার নিজেই জনগণের দাবিদাওয়া পূরণ করতে চায়। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সচেষ্ট থাকে। স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পরিবেশে অর্থনীতিতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ গুরুত্ব লাভ করে। অর্থনীতিতে তাই সুকতলার ব্যয় কমে আসে।

অনেক সমাজবিজ্ঞানীই মনে করেন যে গণতন্ত্র হচ্ছে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিষেধক। তথ্যের অবাধ প্রবাহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত করে। অধ্যাপক সেন (১৯৯৯) তাই মনে করেন যে গণতান্ত্রিক দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। গণতান্ত্রিক দেশে খাদ্যাভাব দেখা দিলে তা লুকিয়ে রাখা যায় না। কাজেই যখনই দুর্ভিক্ষের অশনিসংকেত দেখা দেবে তখনই এ সমস্যা সমাধানের দাবিতে জনমত গড়ে উঠবে। গণতান্ত্রিক সরকারকে যেভাবেই হোক খাদ্য সংগ্রহ করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এ দায় নেই। এ ধরনের সরকার দুর্ভিক্ষের খবর চেপে রাখে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয় না। গত ছয় দশকে চীনের সঙ্গে ভারতের অভিজ্ঞতা তুলনা করলেই এ প্রবণতা বোঝা যাবে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর ভারতে খাদ্যাভাব কখনো কখনো দেখা দিলেও কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। যেভাবেই হোক ভারত সরকারকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। অথচ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও চীনে ১৯৫৮-৬২ সময়কালে দুর্ভিক্ষে ৩ কোটি লোক মারা যায়। ১৯৪৩ সালে বাংলার মহামন্বন্তরে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। সেনের মতে, চীনে গণতন্ত্র থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। ভেতর ও বাইরের জনমতের চাপে চীন সরকার পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আরও তৎপর হতে বাধ্য হতো। গণতন্ত্র ভারতে দুর্ভিক্ষের সমস্যার সমাধান করেছে। জুতার রাজনীতির পক্ষে এটি করা সম্ভব ছিল না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির পৃষ্ঠপোষক। অপ্রতিসম তথ্যের ভিত্তিতে বাজারে যেসব বিচ্যুতি ঘটে তা অপসারণের জন্য রাষ্ট্র উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তথ্য যত সুলভে পাওয়া যাবে বাজারে প্রতিযোগিতা তত বাড়বে।

এই প্রেক্ষিত থেকে গণতন্ত্র শুধু একটি বিমূর্ত আদর্শ নয়। গণতন্ত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের একটি কার্যকর হাতিয়ারও বটে। নিঃসন্দেহে সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতির অনেক সমস্যার সমাধান গণতন্ত্রের পক্ষে সম্ভব। প্রশ্ন হলো, গণতন্ত্র এসব সমস্যার সমাধান করছে না কেন?

গণতন্ত্রের অবশ্যই বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব সম্ভাবনার বাস্তবায়ন করতে হলে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অথচ গণতন্ত্র নিজেই এই মুহূর্তে সমস্যায় জর্জরিত। এই প্রসঙ্গে অ্যান্টনি গিডেন্স (১৯৯৯, ৭১) যথার্থই লিখেছেন, “The crisis of democracy comes from its not being democratic enough.’ (গণতন্ত্রের সংকটের মূল কারণ হচ্ছে গণতন্ত্র নিজেই যথেষ্ট গণতান্ত্রিক নয়।) কথাটা হেঁয়ালির মতো শোনালেও এটিই হলো সত্য। গণতন্ত্রের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদদের অপরিণামদর্শী ও স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ডের ফলে গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। রাজনীতির ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে হাজির হচ্ছে না।

বিশ্বব্যাপী রাজনীতিকে আজ অবজ্ঞা ও সন্দেহের চোখে দেখা হয়। বিভিন্ন দেশে রাজনীতি সম্পর্কে যেসব মূল্যায়ন দেখা যায়, তার কয়েকটি নমুনা নিচে উদ্ধৃত হলো :

• There is nothing so bad that politics cannot make it worse. (পৃথিবীতে এমন কোনো মন্দ নেই, যা রাজনীতির পাল্লায় পড়ে আরও খারাপ হবে না)।

• In politics, the truth is strictly optional and that also seems to be true in parts of media. (রাজনীতিতে সত্য হচ্ছে নেহাত ঐচ্ছিক, কোনো কোনো গণমাধ্যম সম্পর্কেও এ উক্তি প্রযোজ্য)। Never believe anything in politics until it has been officially denied (যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারিভাবে অস্বীকার না করা হয়, ততক্ষণ রাজনীতিতে কোনো গুজবে কান দেবেন না)।

• There is no distinctly native American criminal class except Congress. (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস ছাড়া কোনো মার্কামারা অপরাধী শ্ৰেণী নেই)।

• The reason that economy is in such a mess is that politicians care far more about keeping their jobs than about helping you to keep yours. (অর্থনীতির বেহাল অবস্থার কারণ হলো, রাজনীতিবিদেরা আপনার চাকরি বাঁচানোয় সহায়তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত নিজের চাকরি টিকিয়ে রাখতে)।

ওপরের উদ্ধৃতিগুলি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ভোটারদের অসন্তোষের সামান্য নমুনা মাত্র। এ ধরনের অজস্র উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশেই ভোটাররা তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সুখী নন। অথচ ভোটাররা চাইলেই রাজনৈতিক পদপ্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন ও যোগ্যতম প্রার্থীদের নির্বাচন করতে পারেন। তবু ভোটাররা কেন বারবার অনুপযুক্ত প্রার্থীদের নির্বাচন করছেন? এতে প্রমাণিত হয়, সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য তথ্য প্রয়োজনীয় হলেও তা যথেষ্ট নয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং তাকে কায়েমি স্বার্থের প্রভাবমুক্ত হতে হবে।

.

উল্লেখিত রচনাবলি (Works Cited)

একারলফ, জর্জ এ (Akerlof, George A)। ২০০১। ‘Behaviorial Macroeconomics and Macroeconomic Behavior’. Nobel Memorial Lecture. Stockholm: Nobel Foundation.

গিডেন্স, অ্যান্টনি। (Giddens, Anthony)। ১৯৯৯। The Third Way. Camridge: Polity Press.

ঘোষ, বিনয়। ১৯৯৩ (পুনর্মুদ্রণ)। বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ। কলকাতা : ওরিয়েন্ট লংমেন্স লিমিটেড।

বে, মাইকেল আর; জন মরগ্যান ও প্যাট্রিক শল্টেন (Baye, Michael R; John Morgan and Patrick Sholten)। ২০০৬। ‘Information, Search and Price dispersion’, Indiana: Kelley School of Business.

মিত্র, ইন্দ্র। ২০০০। করুণা-সাগর বিদ্যাসাগর। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

লেভিট, স্টিভেন ডি এবং স্টিফেন জে ডুবনার (Levitt, Steven D. and Stephen, J. Dubner). ২০০৫। Freakonomics. New York: Harper Collins.

স্টিগলার, জর্জ (Stigler, George)। ১৯৬১। The Economics of Information’. The Journal of Political Economy, June, 1961.

–। ১৯৮১। ‘The Process and Progress of Economics’. Nobel Memorial Lecture. Stockholm: Nobel Foundation.

স্টিগলিজ, জোসেফ ই (Stiglitz, Joseph E)। ২০০১। Information and the change in the Paradigm in Economics’. Nobel Memorial Lecture. Stockholm: Nobel Foundation.

সেন, অমর্ত্য (Sen, Amartya)। ১৯৯৯। Development as Freedom. New York: Alfred A. Knopf.

স্পেন্স, মাইকেল এ (Spence, Michaek A.)। ২০০১। Signalling in Retrospect and the informational structure of market’. Nobel Memorial Lecture. Stockholm: Nobel Foundation.

হারফোর্ড, টিম (Harford, Tim)। ২০০৬। The Underground Economy. London: Little Brown Book Company.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *