০৮. যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে

০৮. যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে

এক.

আমার এক বন্ধু দ্বীন পালন শুরু করবার পর থেকে প্রচুর নিগ্রহের শিকার হতো– স্বয়ং তার পরিবার থেকে। টিপিক্যাল বাঙালি মুসলিম পরিবারগুলো যেরকম হয় সাধারণত–হয়তো তারা আদৌ দ্বীন পালন করে না, নতুবা দ্বীন পালন বাদ দিয়ে দ্বীনে নব-উদ্ভাবিত বিদআতে বুঁদ হয়ে থাকাই তাদের নিত্যকার রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। তারা শুক্রবার ছাড়া মসজিদের আশপাশে ঘেঁষবে না, শবে-বরাতে খাবার-দাবারের ধুম আয়োজনে মত্ত থাকবে ইত্যাদি; কিন্তু পরিবারের ভেতর থেকে দ্বীনটাকে সঠিকভাবে বুঝে এবং উপলব্ধি করে কেউ যদি তা পালন করতে যায়, তখন বাকি সদস্যরা রীতিমতো ক্যাওয়াজ লাগিয়ে দেন। তারা তখন মনে করেন, বাপ-দাদাদের পালিত ধর্মে এ আবার নতুন কী সংযোজন? এভাবে তো কোনোদিন কাউকে ধর্ম পালন করতে দেখিনি!

কিন্তু তাদের আসলে কে বোঝাবে যে, বাপ আর দাদারা কখনোই দ্বীনের জন্য। দলিল হতে পারে না। বাপ-দাদারা যে সর্বদাই সঠিক হবে, তাদের আনীত, পালিত রেওয়াজ যে সবসময় প্রশ্নাতীত থাকবে–এমন নিশ্চয়তা কোথাও দেওয়া নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব দলিল হননি, তার জন্য দলিল হয়েছে কুরআন এবং আল্লাহর বাতলে দেওয়া পদ্ধতি।

আমার বন্ধুটাকে ঘর থেকে প্রায়-ই বলা হতো, ‘নামাজ-কালাম শুধু আমাদের ছেলেটাই পড়ছে, দুনিয়ার আর কেউ তো পড়ছে না!’ ‘ধর্ম শুধু আমাদেরটাই বুঝতেছে, দুনিয়ার আর কেউ তো ধর্ম বোঝে না!’

কটাক্ষ আর কটু মন্তব্যের এমন ঘাত-অভিঘাতে জর্জরিত হয়ে আমার বন্ধুটা আমাকে মাঝেমধ্যেই বলত, আর পারছি না রে!

একটা মানুষের বিপরীতে দুনিয়া দাঁড়িয়ে যাওয়াটাও মেনে নেওয়া সহজ, কিন্তু ঘরের আপন মানুষগুলো যখন ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয়, যখন বাবা-মা আর ভাই-বোনেরা ঘৃণার ঝুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে কেবল সঠিকভাবে দ্বীনটাকে পালন করছে বলে, তখন সেই কষ্টটা আসলে সহ্যের বাইরে চলে যায়।

আমার বন্ধুই কেবল নয়, চারপাশের এমন আরো অনেক মানুষকেই আমি চিনি, যারা নিজ ঘরে নিগ্রহের স্বীকার হয় বা হচ্ছে কেবল ভুলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সঠিক দ্বীনটাকে আঁকড়ে ধরার জন্য। অনেকে আমার কাছে পরামর্শ চায়, কীভাবে তাদের বাবা-মাকে সঠিক দ্বীনটা বোঝানো যায়, কীভাবে পরিবারের মানুষগুলোকে হিদায়াতের রাস্তায় আনা যায়। পরিবারের সদস্যদের কথা আর আচরণের দ্বারা যে নিঃসীম কষ্টের ভেতর দিয়ে তারা দিন যাপন করে, তা আমি অনুধাবন করতে। পারি। সেই কষ্টের গভীরে বসবাস করেও আপন আপন লোকগুলোর হিদায়াতের জন্য তাদের আহাজারি সত্যই একটা সুন্দর হৃদয়ের স্বাক্ষর বহন করে।

দুই.

সত্যের সাথে অবহেলার, শুদ্ধতার সাথে অবজ্ঞার সম্পর্কটা চিরন্তন। আপনি মানুষকে ভুলের গহ্বর থেকে উদ্ধারের কাজে নামবেন, কিন্তু পাড়ি দেবেন না একটা কণ্টকাকীর্ণ পথ–তা হবে না।

যেদিন, যে উষালগ্নে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হলো, সেই সু-সংবাদ আবু লাহাবের কাছে বয়ে নিয়ে এসেছিলো তারই এক ক্রীতদাসী। বলাই বাহুল্য–আবু লাহাব ছিলো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচা। মৃতভাই আবদুল্লাহর ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্মের সংবাদে আবু লাহাব এতটাই প্রফুল্ল আর আনন্দিত হয় যে, যে দাসী নবিজির জন্মের সংবাদ বয়ে এনেছিলো তার কাছে, তাকে সাথে সাথেই মুক্ত করে দেয় সে। যে ভ্রাতুস্পুত্রকে এতটা ভালোবাসা দিয়ে বরণ করেছিলো আবু লাহাব, একদিন নিজেই পরিণত হলো সেই ভ্রাতুষ্পুত্রের সবচেয়ে বড় শত্রুতে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যের যে পয়গাম ধরায় এনেছিলেন, তাকে স্বাগত জানাতে অপারগ ছিলো আবু লাহাব, কারণ বাপ-দাদাদের পালিত দ্বীনকে তারা জ্ঞান করতো পবিত্র বিধান হিশেবে। সেই ভুলে ভরা দ্বীনকে তারা এতটাই পূত আর পবিত্র মনে করতো যে–তার বিপরীত যেকোনো কিছুকেই তারা তাদের ধর্মের জন্য হুমকি মনে করতো।

আপনি যখন সত্যের পথে হাঁটতে শুরু করবেন, তখন মিথ্যেরা দলবেঁধে আপনাকে আক্রমণ করতে আসবে। আপনি যে আসলে কতখানি কূপমণ্ডুক, আপনার জ্ঞান যে কতটা বিকৃত আর আপনি কী পরিমাণ বিভ্রান্ত–সেসব তখন আপনার চারপাশে নিয়ম করে বাজতে থাকবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কবি, গণক, জাদুকর, পাগল, বদ্ধ উন্মাদ-সহ কত যে অপবাদ, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই!

আপনার থাকতে হবে ত্যাগ স্বীকার করার অপরিসীম ধৈর্য। বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুর কথা চিন্তা করুন। ইসলামের সুমহান বার্তা পাওয়ার পর যখন ঈমান আনয়ন করলেন তিনি, তখন তার মনিব মাথার ওপর গনগনে সূর্যের তাপে মরুভূমির তপ্ত বালুতে তাকে শুইয়ে রাখতে এবং বুকের ওপর তুলে দিতো বিশালকায় পাথর। সূর্যের তাপ আর বুকের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথরের চাপের কাছেও নতি স্বীকার করতে রাজি হননি ইসলামের প্রথম মুআজ্জিন বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু। সে কী সীমাহীন যন্ত্রণা! কী ভারি দুঃখের ছিলো সেই দিনগুলো! কিন্তু বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুর ঈমানের কাছে বারেবারে পরাস্ত হয় নিষ্ঠুর-নির্দয় মনিব। আঘাত যত তীব্র হয়, বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুর কণ্ঠ থেকে ততটাই ভালোবাসা-মিশ্রিত সুরে ভেসে আসে ‘আহাদ আহাদ’ শব্দ! ঈমানের সে এক অনুপম, অনন্য দৃষ্টান্ত!

শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও আপনাকে সম্পদ আর প্রতিপত্তিও ত্যাগ করতে হতে পারে। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে সাহাবি আবদুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর ছিলো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-বাণিজ্য। মক্কায় তিনি পরিচিত ছিলেন একজন অসাধারণ সফল ব্যবসায়ী হিশেবে, কিন্তু ঈমান আনয়নের পর যখন মক্কাবাসী তাদের ওপর খড়গহস্ত হলো, আবদুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্য অনেক সাহাবির মতো, নিজের ব্যবসা, বসত-ভিটা, সম্পত্তি সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে আবিসিনিয়ায় চলে গেলেন।

কেবল ঈমানের জন্য, ইসলামের জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য আপনি ফেলে চলে যাচ্ছেন আপনার সফল ব্যবসা, ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি–দৃশ্যটা একবার ভাবুন তো!

ঈমানের পথে হাঁটবেন, সত্য আর ন্যায়ের পথে চলবেন, সঠিক দ্বীন চর্চা করবেন, কিন্তু শত্রু পাবেন না–এমনটা অসম্ভব। আপনাকে হয়তো আপনার পরিবার তিরস্কার করে, আপনার বাবা-মা অবজ্ঞা করে আর পাড়া-প্রতিবেশি কটু কথা শোনায়, কিন্তু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবিদের জন্য বিরূপ হয়ে উঠেছিলো গোটা দুনিয়াটাই। তাদের ত্যাগের সাথে আপনার-আমার ত্যাগ তো তুলনাতেই আসতে পারে না। সুতরাং, দ্বীনের পথে আপনাকে চর্চা করতে হবে ধৈর্য আর সীমাহীন সংযমের। আপনি যখন দাড়ি রেখে দেবেন, তখন আপন লোকেরাই আপনাকে বলবে, এই বয়সে দাড়ি কেন রাখতে হবে তোমায়?’ ‘তোমার বাপের মুখে তো দাড়ি নেই, তোমার মুখে দেখছি একহাত লম্বা দাড়ি। দাড়ি রাখার কি বয়স চলে গেছে? গোপনে গোপনে তারা আরো বলবে, ছেলেটা কি বখেই গেলো, নাকি? কাদের খপ্পরে পড়েছে কে জানে!

এতদিন বেপর্দায় চলতেন, ধামাকা জীবনযাপন করতেন, কিন্তু হঠাৎ করে যখন আপনি বোরকা-হিজাব পরা শুরু করবেন, যখন আপনি নন-মাহরাম কোনো পুরুষের সামনে আসতে চাইবেন না, কথা বলতে চাইবেন না, আপনার আপন মানুষেরা, হতে পারে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়স্বজন, আপনাকে বলবে, ‘এই বয়সে এত ঢেকেঢুকে চলতে হবে কেন? বিয়ের আগে একটু খোলামেলা। চলা উচিত।

‘এভাবে চোখ-মুখ ঢেকে রাখলে বিয়ে হবে? পুরুষ মানুষের চোখে না পড়লে বিয়ের প্রস্তাব কোত্থেকে আসবে?

যখন আপনি তাদের সামনে দ্বীনের সঠিক বিষয়টা তুলে ধরে ভুলটা শুধরাতে যাবেন, তারা তেড়েফুড়ে আপনাকে বলবে, ‘মাতব্বরি বাদ দাও। আমরা কি তোমার চাইতে কম বুঝি? দুই-চারটা বই পড়ে ওস্তাদ হয়ে গেছো? আমাদের বাপ-দাদারা সবাই ভুল আর দুনিয়ায় তুমি একাই কেবল সঠিক?

আপনি বুঝতে পারবেন–আপনার জন্য দুনিয়াটা তখন সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। আপনজনেরা মুখ ফিরিয়ে নেবে, আত্মীয়স্বজনেরা দূরে চলে যাবে, বন্ধুরা এড়িয়ে চলবে। হেনস্থা, অবজ্ঞা আর অবহেলার জাতাকলে পিষ্ট হয়ে আপনার মন বিষিয়ে উঠবে ভীষণভাবে।

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

একটাই উপায়–আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়ানো। আপনি যখন দেখবেন দুনিয়াশুদ্ধ লোক আপনার বিপরীতে, কিন্তু হৃদয়গহীনে যদি আপনার সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একটা মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়ে থাকে, চারপাশের কটুকথা, অবজ্ঞা অবহেলা, তিরস্কার-লাঞ্ছনা–কোনোকিছুই তখন আপনাকে আর আশাহত করতে পারবে না। আপনাকে দগ্ধ করতে পারবে না হতাশার অনলে। মানুষের চোখে নীচু হয়েও আপনি তখন গর্ব অনুভব করবেন এটা ভেবে যে–আল্লাহর পথে আছেন বলেই আপনার জন্য তারা বরাদ্দ করেছে এত ঘৃণা, চাষ করেছে এত বিদ্বেষ। মানুষের এতসব ঘৃণা-বিদ্বেষের বিপরীতে উপহারস্বরূপ যদি আখিরাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে জান্নাত দান করেন, ভাবুন তো কী এক মহাসাফল্য লাভ করবেন আপনি!

তিন.

সাধারণত একটা পর্যায়ে গিয়ে পরিবারের লোকেরা আপনার কথাকে গ্রাহ্য করতে চাইবে না। আপনি যতই তাদেরকে সঠিক পথে, সঠিক দ্বীনে আহ্বান করুন না কেন, তারা আপনাকে গুরুত্ব দিতে চাইবে না, যদি না পরিবারে আপনি ভালো রকমের অবদান রাখতে পারেন।

পরিবারে অবদান রাখা বলতে আর্থিকভাবে পরিবারে আপনি কেমন ভূমিকা রাখছেন সেটাকেই বোঝানো হয়েছে মূলত।

ধরা যাক আপনি একজন ফুল-টাইম বেকার। আপনাকে চলতে হচ্ছে বাবা কিংবা ভাইয়ের কাঁধে ভর করে। এমতাবস্থায় পরিবারে আপনার মন্তব্য কম গুরুত্ব বহন করবে। যেহেতু আপনি টাকা-পয়সা রোজগার করেন না, অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে হয় আপনাকে, তাই আপনি যতই ভালো কথা, জ্ঞানগর্ভ উপদেশ, সঠিক বার্তাই তাদের কাছে তুলে ধরুন না কেন–তাদের কাছে আপনার যাবতীয় জ্ঞান, যাবতীয় শুভাকাঙ্ক্ষার চাইতেও বড় হয়ে থাকবে আপনার বেকারত্ব। তাদেরকে যদি আপনি গিবত থেকে বাঁচতে বলেন, সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করেন, মিথ্যা বলা ছাড়তে বলেন, নিয়মিত সালাত আদায়ের তাগিদ দেন, মহিলাদের পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলতে বলেন, আপনি দেখতে পাবেন–এই সবকিছুকে তারা কেমন হালকাভাবে নিচ্ছে। এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেওয়া যাকে বলে।

কিন্তু অবদান রাখার দিক থেকে আপনি যদি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে উঠতে পারেন, অর্থাৎ যদি আর্থিকভাবে পরিবারে আপনার অবদান দৃশ্যত মুখ্য আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, আপনি অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করবেন যে–ওপরের দৃশ্যটা কীরকম ভোজবাজির মতো পাল্টে গেছে! তখন আপনার যাবতীয় ভালো কথা, ভালো উপদেশ, ভালো পরামর্শের আলাদা একটা মর্যাদা থাকবে। বাড়ির বড়রাও আপনার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে আর ছোটোরা তো আপনার বেঁধে দেওয়া রুটিনের বাইরে চলতেই পারবে না।

এটা আসলে মানুষের মনস্তত্ত্ব। মানুষ ক্ষমতাকে পছন্দ করে। যার হাতে ক্ষমতা থাকে, মানুষ তার কথা শুনতে আর মানতে চায়। সামথ্যৰ্বান মানুষের সান্নিধ্য মানুষ উপভোগ করে। যদিও এই ধারণার সাথে ইসলামের তেমন একটা সম্পর্ক নেই, কিন্তু আমি মনে করি, পারিবারিক আর সামাজিকভাবে দ্বীনের কাজ করার জন্য যেহেতু এটা ভালো একটা নিয়ামক হিশেবে কাজ করে, তাই আমাদের উচিত নিজ নিজ আর্থিক সামথ্য বাড়ানোর ব্যাপারেও মনোযোগী হওয়া।

আমি খেয়াল করে দেখেছি, আমার বেকারাবস্থায় পরিবারে আমার কথার গুরুত্ব ছিলো একরকম, আমার আর্থিক স্বচ্ছলতায় পরিবারে আমার গুরুত্ব হয়ে ওঠে অন্যরকম। আগে যেখানে কেউ আমার কথাকে তেমন গ্রাহ্য করতে চাইতো না, স্বাবলম্বী হওয়ার পরে এই মানুষগুলোই আমার কথাকে মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং ভুল-শুদ্ধ বাতলে দিলে তা পালনে তৎপর থাকে। অন্তত আর যা-ই হোক– ভুলটাকে ভুল হিশেবে মেনে নিতে আগের মতো কার্পণ্য কেউ আর করে না।

ঠিক একই ব্যাপার এলাকাতেও। আগে যেখানে সবাই নিতান্তই বেকার বলে অবহেলা করতে চাইতো, এখন তারাই অনেকটা সমীহ করে। দেখা হলেই ভালো-মন্দ জিগ্যেশ করে, হাসি মুখে কথা বলে, দু-চার কথা বলতে চাইলে বিমুগ্ধ শ্রোতার মতো সেসব শুনতে চায়।

সবকিছুর মূলে নিয়ামক একটাই–আর্থিক সচ্ছলতা।

তাই, আমরা যারা আমাদের পরিবার ও সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি, চিন্তা-ভাবনা করি, আমাদের উচিত নিজ নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানো। হালাল উপার্জন দিয়ে যখন আমরা আর্থিকভাবে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করতে পিরবো পরিবার আর সমাজে, তখন দ্বীনের কথা বলতে গিয়ে যে অবজ্ঞা-অবহেলা তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের, তা বহুলাংশেই হ্রাস পাবে, ইনশা আল্লাহ। আর হালাল উপার্জনের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলাটা অতি-অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইসলামও সমানভাবে এটাকে গুরুত্ব দেয়। মনে রাখতে হবে–হালাল উপার্জন আমাদের ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। আমরা যত ইবাদত-বন্দেগিই করি না। কেন, আমাদের উপার্জনের উৎসটা যদি অসৎ পন্থায় হয়ে থাকে, আমরা যে খাবার খাই, তা যদি অসৎ উপায়ে কেনা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের সকল ইবাদত, সকল দ্বীনি প্রচেষ্টাই বৃথা। আল্লাহর কাছে তার কানাকড়িরও মূল্য নেই। আর্থিকভাবে নিজেদের অবস্থান তৈরির জন্য আমাদের তাহলে কী করা উচিত?

আমাদেরকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। তার পাশাপাশি আমাদেরকে দক্ষতা অর্জনের পন্থাগুলোতেও রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি। চাকরির বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে আধুনিক বিশ্বে টেকনোলজি-নির্ভর জ্ঞানের অপরিসীম কদর। টেক দুনিয়ায় যারাই এগিয়ে, দিন দিন দুনিয়াকে তারাই পুরে নিচ্ছে হাতের মুঠোয়। আমরা যদি ফেইসবুক, গুগল, ইউটিউব আর টুইটারের দিকে তাকাই, এই কথার সত্যতা আমাদের সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গেলো মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উলটাপালটা বক্তব্যের কারণে ফেইসবুক আর টুইটার একযোগে ট্রাম্পের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়। দিনকয়েক আগেও যে ছিলো। পৃথিবীর সেরা পরাশক্তির সর্বাধিনায়ক, তার সাথে এরকম খবরদারি করার জন্য কতখানি সাহস আর নেপথ্যে কতখানি শক্তিমত্তার দরকার ভাবুন তো! টেকনোলোজির জ্ঞান আর দক্ষতা আপনাকে কেবল আর্থিক সক্ষমতার রাস্তাই দেখাবে না, একইসাথে মুসলিমদের উন্নয়নে আপনি রাখতে পারবেন প্রভূত অবদান। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, যোগ্যতা-দক্ষতায় আমাদের যত উন্নতি হবে, পশ্চিমা বিশ্বসহ ইসলামের শত্রুদের চোখ রাঙানি আর খবরদারির মাত্রাও ততই কমে আসবে। আগেই বলেছি–মানুষ আসলে ক্ষমতার পূজারি। যার হাতে ক্ষমতা থাকে, মানুষ তাকেই সমীহ করে।

তার মানে, আমাদের সবাইকে যে দলবেঁধে টেক দুনিয়ার পেছনে ছুটতে হবে তা নয়। ব্যক্তিগত পছন্দ আর রুচিশীলতার ওপর নির্ভর করছে আমরা কে কোন দিকে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবো। আমাদেরকে শিল্প-সাহিত্য, ব্যবসা, উদ্যোক্তাসহ নানান কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকতে হবে। যারা ভালো লিখতে পারে, তারা লেখালেখি সম্পর্কিত পড়াশোনা করবে; যাদের শখ নির্মাতা হওয়ার, তারা ভিডিও মেইকিং, ভিজুয়ালাইজেশানের ওপরে প্রশিক্ষণ নেবে। লক্ষ্য হবে হালাল কন্টেন্টগুলোকে চমৎকারভাবে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা। ডিজিটালাইজেশানের দুনিয়ায় সবাইকে প্রযুক্তিমুখী হতেই হবে। আজ নয়তো কাল। দক্ষ মানুষদের জন্য কাজের ক্ষেত্র দুনিয়াতে অভাব নেই। এসবের বাইরে আমাদের প্রাণ-বৈচিত্র আর কৃষি নিয়েও ভাবতে হবে। যাদের প্রচুর পরিমাণ আবাদি জমি-জমা আছে, তারা সেগুলোতে মৌসুমি ফসল, ফলমূল চাষ করতে পারে। রপ্তানি করা যায় এমন নানান ফল এবং খাদ্য দেশে অনেকেই উৎপাদন করছে। কৃষি আমাদের জন্য এক বিরাট সম্ভাবনা! পড়াশোনা করে চাকরিই করতে হবে’–এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পেশাকে বরণ করে নিতে আমাদের মাঝে কোনো কার্পণ্য থাকা চলবে না, তা যদি পার্কে পার্কে ঝালমুড়ি বেচতে হয়, তবু।

তরে স্মরণে রাখতে হবে–দুনিয়ার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের আখিরাত নষ্ট না করি। তাহলে আমরা দুনিয়া আর আখিরাত–দুটোকেই হারাবো।

দুনিয়ার পেছনে আমাদের ছুটবার মাত্রা কীরকম হওয়া উচিত তার একটা চমৎকার দিকনির্দেশনা আমরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর জীবন থেকে পাই। আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন মক্কার সফলতম একজন। ব্যবসায়ী। আমরা যেমন এখন ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ বলতে জেফ বেজোস, ইলন মাকসহ নানান ব্যক্তিকে চিনি, নবিজির সময়ে তখন আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুকে সেভাবে চিনতো সবাই।

ইসলাম গ্রহণের পর বাধ্য হয়ে অন্য সাহাবিদের সাথে তাকেও নিজের সকল সহায়-সম্পদ, সকল ব্যবসাপাতি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়। মক্কায় যিনি ছিলেন একজন সেরা ব্যবসায়ী, তাকে মদিনার মাটিতে পা রাখতে হলো একান্ত নিঃস্ব অবস্থায়! অবশ্য, অবস্থাটাকে তারা খুশি মনে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন।

মদিনার আনসার সাহাবিরা যখন মুহাজির সাহাবিদের সাথে নিজেদের সহায় সম্পদ ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন, তখন একজন আনসার সাহাবি এসে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুকে তার সম্পদের একাংশ দিতে চাইলেন যাতে মদিনায় জীবিকা নির্বাহে খুব বেশি অসুবিধে না হয়। তখন আনসার সাহাবিকে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ বলেছিলেন, আল্লাহ তোমার পরিবারে আর সম্পদে অঢেল বারাকাহ দিন, কিন্তু তোমার সম্পদের আমার কোনো দরকার নেই। তারচে বরং তুমি আমাকে বাজারটা দেখিয়ে দাও।

হিজরতের সময়ে যে যৎসামান্য টাকা সাথে এনেছিলেন, তাকে সম্বল করেই আব্দুর রহমান ইবনু আউফ নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে চাইলেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী। সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে কীভাবে নিজের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায়–সে ব্যাপারে তার চাইতে ভালো আর কে জানে! তাই তিনি আনসারি সাহাবির দয়ার আশ্রয়ে না থেকে, নিজের একটা কিছু দাঁড় করানোর জন্য বাজারের সন্ধান চাইলেন।

তার কিছুদিন পরেই একদিন খুশিমনে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। তার শরীরে তখন দামী সুগন্ধির গন্ধ। নবিজি বললেন, ‘কি হে আব্দুর রহমান, কী ব্যাপার?

তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি বিবাহ করেছি?

বিস্মিত হয়ে নবিজি বললেন, ‘মাশাআল্লাহ! মোহরানা কী দিয়েছো?

‘স্বর্ণ। একটা খেজুর আঁটির সমান।

‘বাহ, তাহলে এখন তো খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করা লাগে। যাও, একটা বকরি দিয়ে হলেও ওয়ালিমার ব্যবস্থা করো।’[১]

চিন্তা করুন, সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে আসায় আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর সামনে ছিলো মদিনায় বিনা পরিশ্রমে সম্পত্তি লাভের সুযোগ। সে সুযোগ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৈরি করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এমন সুযোগ গ্রহণ করলেন না। যোগ্যতা দিয়ে তিনি অর্জন করতে চেয়েছেন নিজের অবস্থান। দক্ষতার জায়গাটা তো তার চেনাই আছে। পথ খুঁজে পেলে লেগে পড়তে পারেন।

বিনা পরিশ্রমে সম্পদ লাভের চাইতে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ চেনা পথটার সন্ধানে নেমে গেলেন বরং। অর্পিত সম্পদের প্রস্তাবকে নাকচ করে তিনি জেনে নিলেন বাজারের রাস্তা। সেখানে গিয়ে সাধ্যমতো মালপত্র কিনে তা বিক্রি-বাট্টাতে লেগে গেলেন। আর আমরা তো জানি–যে লেগে থাকে এবং প্রাণান্তকর চেষ্টা করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাও তাকে সাহায্য করেন। অলস আর অকর্মণ্য। লোকের জন্য কখনোই আল্লাহর সাহায্য আসে না।

রিক্তহতে আসা একজন সাহাবি ওই সময়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বর্ণ দিয়ে মোহরানা পরিশোধ করে বিয়ে করছেন–মদিনার আনসারদের কাছেও তা ভারি আশ্চর্যের ছিলো বটে!

হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আমরা যারা বড় হতে চাই, নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে চাই, আব্দুর রহমান ইবনু আউফ আমাদের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণার নাম। নিজের দক্ষতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলেই তিনি সম্পদের প্রস্তাব নাকচ করে পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আমরাও যদি আমাদের দক্ষতার জায়গাগুলোকে পোক্ত করতে পারি, যদি নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারি জ্ঞানে-দক্ষতায়, আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো আমরাও নিজেদের পথটাকে খুঁজে নিতে পারবো অন্যের গলগ্রহ হয়ে না থেকে।

আব্দুর রহমান ইবনু আউফ দুনিয়া অর্জন করেছেন, কিন্তু হারিয়ে ফেলেননি অনন্ত সুখের আখিরাত। কেমন তাকওয়াবান, ঈমান আর আমলদার হলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দুনিয়াতেই জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা প্রদান করেন, ভাবা যায়?

দুনিয়াকে খুঁজতে কোনো অসুবিধে নেই তা যদি আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো হয়।

চার.

পরিবারে দাওয়াহ দেওয়ার ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু হলে চলবে না। দ্বীনের পথে হাঁটতে গেলে অনেক অপমান-অপবাদ-তিরস্কার ধেয়ে আসবে–এটাই অমোঘ নিয়তি। এটা মাথায় রেখেই আমাদেরকে চারপাশের পরিস্থিতি এবং পারিবারিক পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আমরা রাতারাতি পরিবার এবং আশপাশের সবাইকে পাক্কা ধার্মিক বানিয়ে ফেলতে তৎপর হয়ে পড়ি। তার ফলে, যখন দেখা যায় যে, কেউ। আমাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে না বা আমাদের কথাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তখন আমরা ব্যাপকভাবে হতাশ হয়ে পড়ি। নিকটজনেরা সদুপদেশে

সদিচ্ছা প্রদর্শন না করলে খারাপ লাগে বটে, তবে সেই খারাপ লাগা যেন। আমাদেরকে এমন কোনো অবস্থায় না নিয়ে যায়, যেখানে আমার দ্বীন পালনটাও কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, মানসিকভাবে আমাদেরকে শক্ত থাকতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে–ইচ্ছে হলেই আমি কাউকে দ্বীনের পথে টেনে আনতে পারবো না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও পারেননি। এটা হিদায়াতের ব্যাপার। আল্লাহ যাকে দেবেন, সে লাভ করবে; যাকে দেবেন না, সে বঞ্চিত হবে।

দাওয়াহ দিতে গেলে যদি তা ফলপ্রসূ না হয়, কেউ যদি সেই দাওয়াহ গ্রহণ না করে, হোক তা পরিবার কিংবা সমাজে–আমাদের ভেতরে তখন যে খারাপ লাগা তৈরি হয়, তা স্বাভাবিক। মক্কার মুশরিকদের এতভাবে তাওহিদের দাওয়াহ দেওয়ার পরও যখন তারা ফিরতে চাইলো না, ঔদ্ধত্য দেখালো, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বেশ বিমর্ষ হয়ে যান। মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি।

‘আরেকজন দ্বীনের দাওয়াহ কবুল করছে না বলে নিজে হতাশ হয়ে পড়া’ –এটা কোনো কার্যকরী পন্থা নয়। তাই মুশরিকদের বিমুখতায় যখন নবিজি ভেঙে পড়লেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেন, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নবিজিকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেন–

‘তারা ঈমান আনয়ন করছে না দেখে মনে হচ্ছে, আপনি তাদের জন্য পরিতাপ করতে করতে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবেন।’[২] ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নবিজিকে বলছেন, কেন আপনার এত হতাশ, বিমর্ষ আর বিধ্বস্ত হওয়া লাগবে? আপনার যা দায়িত্ব, তা তো আপনি পালন করেছেন। দ্বীনের যে দাওয়াহ পৌঁছানোর কথা, তা তো আপনি পৌঁছিয়েছেন। এখন কে। হেদায়াত পাবে আর কে পাবে না, তা নির্ধারণ করবেন আল্লাহ। যারা হিদায়াত পাচ্ছে, তাদের কথা ভেবে নিজের দেহ আর মনকে অশান্ত রাখবার কোনো দরকার নেই।

পরিবার আর সমাজ আমাদের কথা শুনছে না, আমাদের ডাকে সাড়া দেয় না, আমাদের দাওয়াহকে তারা প্রত্যাখ্যান করে, দ্বীন পালন করতে দেখলে আমাদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়–এসবকিছুকে একটা পরীক্ষা হিশেবে নেওয়া যাক। আমাদের দেখতে হবে যে–সঠিকভাবে, সঠিক পন্থায় তাদের কাছে আমরা। দ্বীনকে তুলে ধরতে পেরেছি কি না। যদি কোনো ঘাটতি থাকে এই কাজে, সেই ঘাটতি পূরণে মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের আহ্বানে কতজন সাড়া দিচ্ছে। তা কখনোই বিবেচ্য নয়। দুনিয়া থেকে আল্লাহর এমন অনেক নবি-রাসুল গত হয়েছেন, সারাজীবনে যাদের ডাকে একজন মানুষও সাড়া দেয়নি। সুতরাং সংখ্যা নয়, কাজ এবং কাজের ধারাবাহিকতাই আমাদের সামনে বিবেচ্য বিষয়।

———–
[1] সহিহুল বুখারি : ২০৪৮, ৩৭৮০; জামিউল মাসানিদ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২০৬; রাহমাতুল্লিল আলামিন : ২৬২; আর রাহিকুল মাখতুম : ১৬৮

[2] সুরা কাহফ, আয়াত : ৬

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *